Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কে কথা কয় – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প311 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০২. চিঠি এসেছে হাতে হাতে

    চিঠি এসেছে হাতে হাতে। যে ভদ্রলোক চিঠি নিয়ে এসেছেন তিনি অস্থির প্রকতির তিনি হয় একজন গুরুত্বপূর্ণ লোক, আর তা না হলে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবেন। তার মতো একজন মানুষ ডাকপিয়নের ভূমিকায় নেমেছে। এটা তিনি নিতে পারছেন না। ভদ্রলোকের চেহারা সুন্দর। গোলগাল মুখ। গায়ের রঙ দুধেআলতায়। বয়স ত্রিশ পঁয়ত্রিশ। হালকা নীল রঙের হাওয়াই শার্ট পরেছেন। তাঁকে শার্টটায় খুব মানিয়েছে।

    মতিন চিঠিটা হাতে নিয়ে বলল, ঠিক আছে। চিঠি রিসিভ করলাম।

    অতি গুরুত্বপূর্ণ মানুষটি ভুরু কুঁচকে বললেন, শুধু রিসিভ করলে হবে না। আমার সামনে চিঠি পড়বেন। এবং চিঠির জবাব দেবেন। সেই জবাব আমি নিয়ে যাব।

    এখনই চিঠি পড়তে হবে?

    অবশ্যই।

    মতিন হাই তুলতে তুলতে বলল, আমি তো ভাই এখন চিঠি পড়তে পারব। আমার চিঠি পড়ার নির্দিষ্ট সময় আছে। আমি রাতে শোবার আগে আগে চিঠি পড়ি। অন্য সময় পড়ি না।

    এখন পড়বেন না?

    না। আর শুনুন, এভাবে আঙুল তুলে আমার সঙ্গে কথা বলবেন না। আঙুল তুলে কথা আমার পছন্দ না। একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকেই আঙুল তুলে কথা বলা মানায়, আর কাউকে মানায় না।

    গুরুত্বপূর্ণ মানুষটা এবার চুপসে গেল। মতিনের মনে হলো, ফুলানো একটা গ্যাস বেলুন থেকে খানিকটা গ্যাস বের হয়ে গেল। আরো কিছু গ্যাস বের করতে পারলে ভালো হতো। সেই সুযোগ কি এই লোক দেবে?

    মিস্টার মতিন, এটা একটা আর্জেন্ট লেটার। স্যার আমাকে জবাবটা হাতে হাতে নিয়ে যেতে বলেছেন।

    মতিন বলল, জবাব না নিয়ে গেলে উনি কি আপনাকে মারবেন? চড় থাপ্পড় ঘুসি?

    এইসব আপনি কী বলছেন? আমি একজন লইয়ার। স্যারের জুনিয়র।

    লইয়াররা চড় থাপ্পড় খায় না? ধরুন এখন যদি আমি আপনার গালে ঠাশ করে একটা চড় দিয়ে বসি, আপনি কী করবেন? মামলা করবেন? মামলাটা কোন ধারায় হবে?

    আমি আপনার কথাবার্তা কিছুই বুঝতে পারছি না। আপনি এই ভঙ্গিতে কথা বলছেন কেন?

    মতিন বলল, আপনি গাড়ি নিয়ে এসেছেন? লোকটা হতাশ গলায় বলল, জি।

    তাহলে গাড়িতে বসুন। অপেক্ষা করুন। আমি হাত-মুখ ধোব। নাশতা খাব। চা খাব। তারপর আপনার স্যারের আর্জেন্ট লেটার পড়ে জবাব লিখে দেব। আমি চাই না আপনার মতো গুরুত্বপূর্ণ একজন লইয়ার তার বসের কাছে। চড় থাপ্পড় খাক। আপনার নাম কী?

    আহমেদ ফারুক।

    আহমেদটাকে সামনে এনেছেন কেন? আহমেদ পেছনে থাকার কথা না? আপনার বাবা-মা নিশ্চয়ই আপনার নাম রেখেছিলেন ফারুক আহম্মেদ। আপনি স্টাইল করে আহম্মেদকে করেছেন আহমেদ। এবং সেই আহমেদ নামের সামনে নিয়ে এসেছেন। ঘোড়ার পেছনে থাকে গাড়ি। আপনার বেলায় সামনে গাড়ি পেছনে ঘোড়া।

    মতিন সাহেব, আমি আপনার সঙ্গে কোনো কথাবার্তা বা আগ্রুমেন্টে যাব। আমি গাড়িতে অপেক্ষা করি না। আপনি জবাবটা দিয়ে দিন।

    আপনি আমার ঘরেও অপেক্ষা করতে পারেন। তবে আপনার মতো মানুষ আমার এখানে বসে আরাম পাবেন না। সারাক্ষণ ভুরু কুঁচকে থাকবেন। ঘরে ফ্যানও নেই। এরচে এসি চালিয়ে গাড়িতে বসে গান শোনা ভালো। না-কি আমার এখানেই বসবেন?

    আমি গাড়িতেই অপেক্ষা করব।

    গাড়িতে চা পাঠাব? আমাদের মেস বাড়িতে লেবু চা ভালো বানায়।

    থ্যাংকস, চা লাগবে না।

    মতিন অনেক সময় নিয়ে দাড়ি শেভ করল। গোসল সারল। মেসের মনেজারের কাছ থেকে পত্রিকা এনে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পত্রিকা পড়ল। সে কোনোদিন পত্রিকার এডিটরিয়াল পড়ে না। আজ সে তাও পড়ল। আহমেদ ফারুক নামের রাজপুত্র টাইপ মানুষটাকে যতটা সম্ভব দেরি করানো যায়। আহমেদ ফারুক সাহেবের একটা শিক্ষা হোক। তেমন কোনো কারণ ছাড়াই লোকটাকে প্রথম থেকেই তার অপছন্দ হচ্ছিল।

    নাশতা শেষ করে পর পর দুকাপ চা খেয়ে মতিন চিঠি পড়তে বসল।

    প্রিয় নদ্দিউ নতিম,

    আপনার বিষয়ে পরে আমি এবং আমার স্ত্রী কিছু চিন্তাভাবনা করেছি। যে নদ্দিউ নতিম নামের একটি ফিকটিসাস ক্যারেক্টর তৈরি করে তাকে নিয়ে প্রবন্ধ ছাপতে পারে সে অবশ্যই Creative person.

    আমি এবং আমার স্ত্রী খুবই আনন্দিত হবো যদি আপনি আমাদের অফার গ্রহণ করেন। আপনার পক্ষে কি এ মাসের সতেরো তারিখ থেকে কাজ শুরু করা সম্ভব? আমি উনিশ তারিখ কাঠমাণ্ডু যাচ্ছি। তার আগেই ছেলের বিষয়টা ঠিক করে যেতে চাচ্ছি।

    আপনি যদি অফার গ্রহণ করতে সম্মত হন তাহলে আমার জুনিয়র ফারুক সাহেবকে জানিয়ে দেবেন। আমার ছেলে কমল অতি অল্প যে কয়জন মানুষকে পছন্দ করে ফারুক তাদের একজন। আমার ছেলে সম্পর্কে কিছু জানতে চাইলে সে আপনাকে বলতে পারবে।

    আপনি ভালো থাকুন।

    বিনীত–
    এস, ইমরান

    আহমেদ ফারুক গাড়িতে বসে ছিলেন না। তিনি গাড়ির চারপাশে হাঁটাহাঁটি করছিলেন। তার হাতে সিগারেট। তবে জ্বলন্ত সিগারেট না। আগুন ছাড়া সিগারেট। তিনি সিগারেট ছাড়ার চেষ্টা করছেন। সিগারেট ছাড়ার প্রথম ধাপ যখন সিগারেটের তৃষ্ণা চাপবে তখন আগুনবিহীন সিগারেট ঠোঁটে দিয়ে টানতে হবে। মতিনকে আসতে দেখে ফারুক আগ্রহ নিয়ে তাকালেন। মতিনের হাতে কোনো খাম বা কাগজ দেখা যাচ্ছে না। ফারুকের ভুরু কুঁচকে গেল। এই উদ্ভট মানুষটা কি এখনো চিঠি পড়ে নি? তার ফাজলামি ধরনের গা-জ্বালানো কথা আরো কিছুক্ষণ শুনতে হবে?

    মতিন বলল, আপনার কি সিগারেট ধরানোর জন্যে দেয়াশলাই লাগবে?

    না লাগবে না। আপনি চিঠির জবাব এনেছেন?

    এনেছি।

    কই দিন। আমার অনেক দেরি হয়ে গেছে।

    মতিন বলল, আমাকে একটু পল্লবী নামিয়ে দিতে পারেন?

    কোথায়?

    পল্লবী। মীরপুরের পরে। আমার বড় বোনের বাসা। দুপুরে তার ওখানে আমার খাওয়ার কথা।

    পল্লবী নামিয়ে দিতে হবে?

    নামিয়ে যে দিতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। আমি একটা সিএনজি ট্যাক্সি নিয়ে চলে যাব। যদিও এই মুহূর্তে ট্যাক্সি ভাড়া দেয়ার সামর্থ্য আমার নেই। সেটাও সমস্যা না। ট্যাক্সি ভাড়া বড় আপা দিয়ে দেবে। তবে তার সামান্য মন খারাপ হবে এই ভেবে যে, তার আদরের ভাইটার ট্যাক্সি ভাড়া দেবার সামর্থ্যও নেই।

    আপনি গাড়িতে উঠুন।

    ধন্যবাদ। আপনি সিগারেটটা যদি না খান আমাকে দিয়ে দিতে পারেন। আজ নাশতার পর সিগারেট খাওয়া হয় নি। সিগারেটের প্যাকেটে চারটা সিগারেট ছিল। প্যাকেটটাই খুঁজে পাচ্ছি না।

    ফারুক হাতের সিগারেট দিয়ে দিল। গম্ভীর গলায় বলল, সিগারেট এখানেই শেষ করুন। গাড়িতে এসি চলবে। তখন সিগারেট খাওয়া যাবে না।

    মতিন সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলল, আপনার স্যারের ছেলের বিষয়টা বলুন।

    ফারুক বিরক্ত গলায় বলল, কী বিষয় বলব?

    সে কি ভয়ঙ্কর?

    মেজাজ খারাপ হলে যে-কোনো মানুষই ভয়ঙ্কর হয়। হয় না? বেশিরভাগ মানুষই মেজাজ কন্ট্রোল করতে পারে। যারা Autistic children, কিংবা যাদের ডাউন সিনড্রম আছে তারা মেজাজ কন্ট্রোল করতে পারে না।

    ডাউন সিনড্রম আবার কী?

    এটাও একধরনের অসুখ। ডাউন সিনড্রমে শিশুরা একটা বাড়তি ক্রোমোজম নিয়ে জন্মায়। এখন আপনি নিশ্চয়ই আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না, ক্রোমোজম কী?

    ক্রোমোজম কী?

    ডিটেইলে আপনাকে বলতে পারব না। আমি নিজেও জানি না। সব মানষের থাকে ৪৬টা করে ক্রোমোজম। ২৩টা সে পায় বাবার কাছ থেকে, ২৩টা পায় মার কাছ থেকে।

    মতিন বলল, ক্রোমোজমের প্রসঙ্গ থাক। মূল জায়গায় আসুন–ছেলে কি ভয়ঙ্কর?

    যখন রেগে যায় তখন।

    ভয়ঙ্কর হলে কী করে? কামড়ায়?

    বেশির ভাগ সময় অ্যাপিলেপটিক সিজার হয়ে যায়, তবে মাঝে মধ্যে আশেপাশের মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।

    কখন তার মেজাজ খারাপ হয়?

    বলা মুশকিল। তার অপছন্দের কিছু ঘটলেই মেজাজ খারাপ হয়।

    কী কী তার অপছন্দ?

    উঁচু শব্দ অপছন্দ। মেঝেতে চেয়ার টানার শব্দ, চায়ের কাপে চামচের শব্দ।

    সব শব্দ বন্ধ? কাজকর্ম কীভাবে চলে, ইশারায়?

    সব শব্দ বন্ধ না। উঁচু শব্দ বন্ধ।

    মেজাজ যখন খারাপ হয় তখন তা ঠিক করার উপায় কী?

    গান বাজালে মেজাজ ঠিক হয়। সে সুগন্ধ খুব পছন্দ করে। তাও সব সুগন্ধ না। যেমন ধরুন লেবু। সে লেবু বা লেবু ফুলের গন্ধ সহ্যই করতে পারে না।

    মতিন সিগারেটে শেষ টান দিয়ে বলল, কোন ধরনের গান সে পছন্দ করে? রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুল, না-কি ভাটিয়ালি?

    ফারুক গম্ভীর গলায় বলল, আপনার কথা বলার ভঙ্গির মধ্যে ঠাট্টা-ভাব আছে। আমি কিন্তু ঠাট্টা করছি না।

    মতিন বলল, আমি এইভাবেই কথা বলি। কী গান ঐ ছেলে পছন্দ করে?

    ফারুক বলল, ললা নোটের যে-কোনো মিউজিকই তার পছন্দ। তবে সে হাই নোটস নিতে পারে না। উঠুন গাড়িতে উঠুন।

    মতিন গাড়িতে উঠল। ফারুক বলল, আপনি কি কমলের সঙ্গী হবার প্রস্তাবটা নিচ্ছেন?

    মতিন হাই তুলতে তুলতে বলল, না। ঐ পাগলা ছেলের কামড় খাওয়ার। কোনো শখ আমার নেই। এখন কি আপনি গাড়ি থেকে আমাকে নামিয়ে দেবেন?

    না। আপনাকে পল্লবীতে নামিয়ে দেব।

    থ্যাংক য়্যু। শুরুতে আপনাকে আমার যতটা খারাপ মানুষ মনে হয়েছিল। আপনি তত খারাপ না। আপনার স্যারকে বলবেন–আমি চাকরিটা নেব। সতেরো তারিখ বোচকা-বুচকি নিয়ে উপস্থিত হবো।

     

    মতিনের বড়বোনের নাম সালেহা। বয়স চল্লিশের উপরে।

    চিররুগ্ন মহিলা। সপ্তাহে তিনদিন তিনি বিছানায় শুয়ে থাকেন। কখনো তিনি জ্বরে কাতর। কখনো বুকে ব্যথা। অমাবস্যা পূর্ণিমাতে বাতের যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে থাকেন। তাকে তখন প্রায় কোলে করে বাথরুমে আনা নেয়া করতে হয়। তার ডিসপেপসিয়াও আছে। জাউ ভাত ছাড়া কিছুই খেতে পারেন না। ষােল বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল, স্বামীর সঙ্গে চব্বিশ বছর কাটিয়ে তিনি এখন ক্লান্ত। সংসারে কোনো সন্তান আসে নি। এই নিয়েও সালেহার মনে তেমন। কোনো দুঃখবোধ আছে বলে মনে হয় না। তৌহিদা নামের যে মেয়েটি তার দেখাশোনা করে তাকে তিনি প্রায়ই বলেন–আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। আমার শরীরের যে অবস্থা ছেলেমেয়ে হলে উপায় কী হতে বল!

    তৌহিদা সালেহার স্বামী হাবিবুর রহমানের মামাতো বোন। সে অনেক দিন। ধরে তার ভাইয়ের সংসারে আছে। ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় এসেছিল, এখন। সে লালমাটিয়া কলেজে পড়ে। আগামী বছর বিএ পরীক্ষা দেবে। মেয়েটির গায়ের রঙ ময়লা হলেও সে অত্যন্ত সুশ্রী। তার কলেজের বান্ধবীরা প্রায়ই তার বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে সালেহার কাছে আসে। তিনি তাদের সবাইকে বলেন, তৌহিদার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। আমার ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে। ওর বিয়ে নিয়ে তোমাদের ভাবতে হবে না।

    তৌহিদা চুপচাপ ধরনের মেয়ে। সে নিজের মনে সংসারের সব কাজ সামাল দেয়। যথাসময়ে কলেজে যায়। তার কলেজ বাসার খুব কাছে না। হেঁটে যেতে আধঘণ্টার মতো লাগে। সে হেঁটে যায় আসে। কলেজে যাওয়া-আসার জন্য ভাইয়ের কাছে বাড়তি টাকা চাইতে তার খুবই লজ্জা লাগে।

    হাবিবর রহমান একটা ফার্মেসির মালিক। ফার্মেসির আগে নাম ছিল নিউ হাবিব ফার্মেসি। বিয়ের পর পর স্ত্রীর নামে ফার্মেসির নামকরণ করেছেন। এখন নাম নিউ সালেহা ফার্মেসি। বছর দুই আগে একটা দরজির দোকান করেছেন। তার নাম নিউ সালেহা টেইলারিং। প্রতিটি দোকানের নামের আগে তিনি নিউ ব্যবহার করেন। কারণ নিউ শব্দটা তার জন্যে লাকি। তার তিনটি বেবিটেক্সি আছে (দি নিউ সালেহা পরিবহন)। প্রতিদিন একেকটা বেবিটেক্সি থেকে তিনি তিনশ টাকা করে পান।

    হাবিবুর রহমানকে একজন সফল মানুষ বলা যেতে পারে। সফল মানুষরা চিররুগ্ন স্ত্রী নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে না। হাবিবুর রহমান সতুষ্ট। তার কোনোরকম বদ নেশা নেই। রাত নয়টায় তিনি দোকান বন্ধ করে বাসায় চলে আসেন। এশার নামাজ পড়ে রাতের খাবার শেষ করে টিভি দেখতে বসেন। কোনো বিশেষ অনুষ্ঠান দেখেন তা না। টিভিতে যা চলে তা-ই তার ভালো লাগে। তবে সাড়ে দশটা বাজতে না বাজতেই তাঁর হাই উঠতে থাকে। রাত এগারোটার দিকে বেবিটেক্সির ড্রাইভাররা তাঁকে দিনের ভাড়া দিয়ে যায়। তিনি টাকা স্টিলের আলমারিতে তুলে ঘুমাতে যান। এক ঘুমে তাঁর রাত কাটে। তিনি সুখী মানুষদের দলে।

     

    মতিন তার বোনের বাসার কলিংবেল টিপছে। অনেকক্ষণ ধরেই টিপছে, দরজা খুলছে না। মতিনের মনে হলো বাসায় তার বড়বোন ছাড়া কেউ নেই। বড়বোন। বিছানায়। বিছানা থেকে নামতে পারছেন না বলে দরজা খুলছে না। আধঘণ্টা ধরে কলিংবেল টেপার অর্থ হয় না। সে কী করবে বুঝতে পারছে না। দুটা কাজ করা যায়–এক. ফিরে যাওয়া, দুই. কোনো একটা চায়ের দোকান থেকে এককাপ চা খেয়ে নব উদ্যমে কলিংবেল টেপা শুরু করা। দুটার কোনটা করবে এই সিদ্ধান্ত নিতে নিতেই দরজা খুলল। দরজার ওপাশে তৌহিদা। সে সঙ্গে সঙ্গে মাথা নিচু করে ফেলল। যেন সে এক বিরাট লজ্জায় পড়েছে। মতিন বলল, মিস তৌ, কী খবর?

    তৌহিদা অস্পষ্ট গলায় বলল, ভালো।

    আমার আপার অবস্থা কী? সে কি নতুন কোনো ব্যাধিতে আক্রান্ত? না কি এখনো পুরনো অসুখ নিয়েই আছে?

    তোহিদা জবাব দিল না। মতিন বলল, চট করে চা খাওয়াও। বেশিক্ষণ থাকব না। আপাকে চোখের দেখা দেখেই বিদায়। আপা কই?

    তৌহিদা কাপা কাঁপা গলায় বলল, বুবু বাসায় নাই।

    কোথায় গেছে?

    ভাইজান উনাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছেন। বুবুর বুকে ব্যথা, ইসিজি করবেন।

    ঘরে শুধু তুমি আর আমি?

    তৌহিদা এই প্রশ্নের জবাব দিল না। তার কেমন জানি লাগছে। মনে হচ্ছে। ঘরবাড়ি দুলছে। মাথার ভিতর ভোঁ ভোঁ শব্দ হচ্ছে। খুবই পিপাসা পাচ্ছে। তার উচিত এক্ষুনি ছুটে গিয়ে ঠাণ্ডা একগ্লাস পানি খাওয়া। পানি খেয়েই মতিন নামের মানুষটার জন্যে চা বানানো। কিন্তু সে নড়তেও পারছে না। তার পা ভারি হয়ে। আছে। মতিন নামের মানুষটা আশেপাশে থাকলেই তার এরকম হয়। স্বামীর আশেপাশে দাঁড়ালে কি সব মেয়ের এরকম হয়? মতিন অবশ্যি এখনো তার। স্বামী না। কিন্তু একদিন তো হবে।

    মতিন বলল, কী হলো মিস তৌ! তুমি এরকম জম্বির মতো হয়ে গেছ কেন? জম্বি কী জানো?

    না।

    মৃত মানুষ আবার জীবন ফিরে পেলে যা হয় তার নাম জম্বি।

    তৌহিদা মানুষটার দিকে তাকিয়ে আছে, কিন্তু তার কথা বুঝতে পারছে না। মৃত মানুষ জীবিত মানুষ এইসব কী বলছে!

    মতিন বলল, বসো। আপা যখন নেই তখন তোমার সঙ্গেই কথা বলি। এত দূরে বসতে হবে না। আমার কাছে বসো। খালি বাসা, কেউ দেখবে না।

    তৌহিদার শরীর ঝনঝন করছে। মানুষটা এইসব কী বলছে–খালি বাসা, কেউ দেখবে না। কী কেউ দেখবে না? আচ্ছা এই মানুষটা কি তার গায়ে হাত দিতে চায়? গায়ে হাত দিতে চাইলে সে কি নিষেধ করবে? নিষেধ করা মোটেই ঠিক হবে না। কারণ মানুষটা তার স্বামী। স্বামীরা যখন ইচ্ছা তখন তার স্ত্রীর গায়ে হাত দিতে পারে।

    মিস তৌ!

    জি।

    তোমার কি শরীর খারাপ?

    জি-না।

    এরকম ঘামছ কেন?

    জানি না।

    আপা কতক্ষণ আগে গেছেন বলো তো?

    জানি না।

    জানি না বলে তৌহিদা চমকে উঠল। সে অবশ্যই জানে। কেন জানবে না। আধঘণ্টা আগে গিয়েছে। তাহলে সে কেন বলল–জানে না?

    মিস তৌ!

    জি।

    আমার কাজ আছে, আমি উঠলাম। আপাকে বলবে আমি একটা চাকরি পেয়েছি। পার্মানেন্ট কিছু না। টেম্পোরারি। তবে বেতন ভালো। মাসে পনেরো হাজার। বলতে পারবে না?

    জি পারব।

    তৌহিদা মুখে বলেছে জি পারব, কিন্তু কী পারবে এটা সে এখন বুঝতে পারছে না। মানুষটা বলেছে আমার কাজ আছে আমি উঠলাম। তাহলে একটু আগে কেন বলল, খালি বাসা কেউ দেখবে না? মানুষটা চা খেতে চেয়েছিল। এখন কি সে চা খেতে চাচ্ছে না? সে উঠে দাঁড়িয়েছে। তৌহিদা এখন যদি বলে, চা না খেয়ে আপনি যেতে পারবেন না, তাহলে কি খুব খারাপ হবে? কেন খারাপ হবে? তৌহিদা অবশ্যই তাকে চা খেতে বলবে। শুধু যে বলবে তা-না, সে মানুষটার হাত ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে তাকে বসিয়ে দেবে। মানুষটা বসে যাবার পরও সে তার হাত ছাড়িয়ে নেবে না। একজন স্ত্রী তার স্বামীর হাত ধরে। বসে থাকবে, এর মধ্যে দোষের কিছু নেই।

    মিস তৌ, তুমি দরজা লাগিয়ে দাও, আমি যাচ্ছি।

    তৌহিদা চাপা গলায় শুধু বলল, জি আচ্ছা। মতিন চলে যাবার পরের এক ঘণ্টা সে তার নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদল।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleজলপদ্ম – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article কালো যাদুকর – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }