Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কে কথা কয় – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প311 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৬. উজবেক মরমী কবি নদ্দিউ নতিম

    আপনার নামই মতিন উদ্দিন?

    জি।

    উজবেক মরমী কবি নদ্দিউ নতিমের বিষয়ে প্রবন্ধগুলো আপনার লেখা?

    জি।

    আরো নতুন কিছু এনেছেন?

    উনার মৃত্যুচিন্তা নিয়ে ছোট একটা প্রবন্ধ এনেছি। চার-পাঁচ স্লিপের মতো হবে।

    একটু বসুন, হাতের কাজ সারি।

    মতিনের সামনে ভোরের স্বদেশ পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক আজহার উল্লাহ সাহেব বসে আছেন। তার পেছনে দেয়ালে কম্পিউটার কম্পোজ করে নোটিশ টানানো আছে। নোটিশে বড় বড় অক্ষরে লেখা–

    অকারণে বসে থেকে
    আমাকে বিরক্ত করবেন না।

    সময়ের মূল্য আছে।

    আজহার উল্লাহ সাহেবের বয়স ষাটের উপর। তার মাথার চুল আইনস্টাইনের মতো ঝাকড়া ও ধবধবে সাদা। তার হাত কাঁপা রোগ আছে। কলম হাতে নিলে তার হাত কাঁপে। কলম রেখে দিলে হাত কাঁপা বন্ধ হয়ে যায়। উনি কিছুক্ষণ পরপর কলম হাতে নিচ্ছেন এবং কলম টেবিলের উপর রেখে কাকলাসের মতো চেহারার একজনের সঙ্গে ঝগড়া করছেন। মতিন অন্যদিকে তাকিয়ে থাকলেও এই দুজনের কথাবার্তা আগ্রহ নিয়ে শুনছে। কাকলাসের মতো চেহারার লোকটির নাম মঞ্জু। আজহার উল্লাহ সাহেব তাকে ডাকছেন। মনঝু নামে এবং ঝুর উপর যথেষ্ট জোর দিচ্ছেন।

    আজহার উল্লাহ বললেন, আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা না করে এই কবিতা তুমি স্ত্রী মনে করে মেকাপ করতে দিলে? সাহিত্য পাতাটা কে দেখে? আমি দেখি?–কি তুমি দেখ?

    আপনি দেখেন। বড় সাহেব নোট লিখে দিয়েছেন, এই কবিতা যেন ছাপা হয়।

    সবকিছুতে বড় সাহেব নাক গলালে তো চলবে না।

    সেটা বড় সাহেবকে বলেন। আমাকে বলে লাভ কী?

    মনঝু, তুমি গলা নামিয়ে কথা বলো। আমার সঙ্গে চিৎকার করবে না।

    আমাকে দেখলেই তো আপনার রাগ উঠে। আমি চলে যাই। কবিতাটা অফ করে দেই।

    যাও অফ করে দাও। আলতু-ফালতু জিনিস লিখে পাঠালেই ছাপতে হবে? কবিতার নাম কি–শ্রীকৃষ্ণ ডট কম। এর অর্থ কী?

    আধুনিক কবিতার আধুনিক নাম।

    নামের অর্থ তো থাকতে হবে। কবিতাটা পড়।

    আপনি তো কবিতাই অফ করে দিচ্ছেন। পড়ার দরকার কী?

    তোমাকে পড়তে বলছি পড়।

    যত দোষ নন্দ ঘোষ শ্রীকৃষ্ণ পিতা
    দুধ পড়ে ভিজে গেছে ভগবত গীতা।

    আর পড়তে হবে না। স্টপ। কবিতা অফ। আমি যতদিন এই পত্রিকায় আছি ততদিন দুধ পড়ে ভিজে গেছে ভগবত গীতা ছাপা হবে না।

    বড় সাহেবের সঙ্গে কথা বলে নেবেন? একটা টেলিফোন করেন। শেষে উনি হৈচৈ করবেন। আমাকে দুষবেন।

    আর কথা নাই। কবিতা অফ করতে বলেছি অফ। ঐ জায়গায় অন্য কোনো ম্যাটার দিয়ে দাও। তুমি নিজেও আমার সামনে থেকে অফ হও। দরজা চাপিয়ে দিয়ে যাও, আমি এই ভদ্রলোকদের সঙ্গে একান্তে কিছু কথা বলব।

    মতিন অন্যদিকে ফিরে ছিল, এখন আজহার উল্লাহর দিকে তাকাল। মানুষটাকে যথেষ্টই ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে। ভদ্রলোক দুপা তুলে উঁচু হয়ে চেয়ারে বসে আছেন। মতিন এর আগে কাউকে এভাবে বসতে দেখে নি। এই গরমেও তিনি হলুদ রঙের মোটা চাদর গায়ে দিয়ে আছেন। গায়ের চাঁদরের অর্ধেকটা মাটিতে ঝুলছে। তিনি মতিনের দিকে তাকিয়ে বললেন, চা খাবেন?

    মতিন বলল, জি-না।

    লেখাটা দিন।

    মতিন লেখা দিল। তিনি লেখার উপর কিছুক্ষণ চোখ বুলিয়ে লেখাটা ড্রয়ারে রাখতে রাখতে ক্লান্ত গলায় বললেন, নদ্দিউ নতিম নামে কোনো উজবেক কবি নাই। আপনিই সেই উজবেক কিংবা উজবুক কবি। ঠিক না?

    মতিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে শান্ত গলায় বলল, ঠিক।

    আজহার উল্লাহ ক্লান্ত গলায় বললেন, লেখকরা সম্পাদকদের ধোঁকা দিতে পছন্দ করে। আপনি ধোঁকা দিয়েছে। থব ভালো না। লেখাটা যখন আমি ছাপালাম তখন কিন্তু আপনি পাঠকদের ধোঁকা দিলেন। কাজটা ঠিক হয়েছে?

    ঠিক হয় নাই।

    আমি বৃদ্ধ মানুষ, বাইরের সাহিত্য সম্পর্কে জ্ঞান নাই। পড়াশোনার সুযোগ নাই, সময়ও নাই। যে কারণে আপনার ফাজলামি ধরতে পারি নাই। আপনার যুবা বয়স। আপনার প্রবন্ধ পড়লে বোঝা যায় প্রচুর পড়াশোনাও আছে। আপনার মতো মানুষ এমন কাজ কেন করবে? লেখালেখি আপনার কাছে একটা। খেলা, তাই না?

    জি।

    আপনি কি পোলাপান যে আপনি খেলা খেলবেন? লেখালেখি নিয়ে খেলা?

    মতিন চুপ করে রইল। আজহার উল্লাহ চেয়ার থেকে পা নামিয়ে হতাশ এবং বিষণ্ণ গলায় বললেন, (এইবার তুমি তুমি করে) আমি আমার মেয়ের কাছে তোমার লেখার প্রশংসা করেছি। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। ফিজিক্স। সাহিত্য-টাহিত্য পছন্দ করে না। তাকে জোর করে পড়িয়েছি। তাকে বলেছি, দেখো মা, কী রকম পড়াশোনা জানা লোক।

    আপনি কখন জানলেন যে, নদ্দিউ নতিম বলে কেউ নেই?

    সেটা তোমার জানার প্রয়োজন নাই। তোমার আগের দুটি লেখার সম্মানির টাকাটা নিয়ে যাও।

    টাকা লাগবে না।

    অবশ্যই লাগবে। টাকার প্রয়োজন আছে। আমরা একটা প্রবন্ধের জন্যে মেক্সিমাম এক হাজার টাকা দেই। বিশেষ বিবেচনায় তোমার জন্যে পনেরশ টাকা করে বিল করেছিলাম। বিল পাশ হয়েছে, টাকা নিয়ে যাও।

    নদ্দিউ নতিমের মৃত্যুচিন্তা লেখাটা কি ফেরত নিয়ে যাব?

    আজহার উল্লাহ হাই তুলতে তুলতে বললেন, না। আবর্জনা ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হয়। আবর্জনা পকেটে নিয়ে ঘুরতে হয় না।

    আপনার টেবিলের ড্রয়ার তো ডাস্টবিন না।

    যাবতীয় লেখা নামক আবর্জনা এই ড্রয়ারে রাখি, কাজেই ড্রয়ারটা ডাস্টবিন।

     

    মতিনের পাঞ্জাবির পকেটে তিন হাজার টাকা। সবই একশ টাকার নোট। অনেকগুলি নোট। পকেট ভারি হয়ে আছে। টাকাগুলির জন্য মতিন এক ধরনের অস্বস্তিতে ভুগছে। তার মন বলছে, দ্রুত টাকাগুলির একটা ব্যবস্থা করে ঝাড়া হাত-পা হয়ে যাওয়া প্রয়োজন। এতে মন খানিকটা শান্ত হবে। মতিন ট্যাক্সি নিয়ে নিল। ঘণ্টা চুক্তিতে ট্যাক্সি। চারশ টাকা ঘণ্টা। তিন হাজার টাকায় সাত ঘণ্টা ট্যাক্সি তার সাথে থাকবে। খারাপ কী? সে রওনা হলো তার দুলাভাইয়ের ফার্মেসির দিকে। নিউ সালেহা ফার্মেসি।

    নিউ সালেহা ফার্মেসির মালিক হাবিবুর রহমান ক্যাশিয়ারের চেয়ারে বসে আছেন। তার শরীর খারাপ। হঠাৎ করে প্রেসার বেড়েছে। নিচেরটা হয়েছে একশ পাঁচ। উপরেরটা দুশ। প্রেসারের ওষুধ কিছুক্ষণ আগে খেয়েছেন। ওষুধের অ্যাকশান এখনো শুরু হয় নি। ঘাড় ব্যথা করছে। মাথা ঝিমঝিম করছে। তার উচিত চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকা। শশায়ার ব্যবস্থা এখানে আছে। ফার্মেসির পেছনে সিঙ্গেল খাট পাতা। খাটে শীতলপাটি বিছানো। মাথার উপর সিলিং ফ্যানও আছে। হাবিবুর রহমানের দিনে শোয়ার অভ্যাস নেই বলে শুতে যাচ্ছেন না। মনে মনে আল্লাহু শাফি এই বলে দোয়া পড়ছেন। জিগিরের মতো এই দোয়া পড়লে শরীরের রোগবালাইয়ের দ্রুত আরাম হয়।

    মতিন বলল, দুলাভাই, কেমন আছেন?

    হাবিবুর রহমান বিরক্ত গলায় বললেন, ভালো না।

    শরীর খারাপ না-কি?

    হুঁ।

    প্রেসার?

    হুঁ।

    আপনার ব্যবসার অবস্থা কী?

    ভালো।

    ব্যবসার অবস্থা ভালো হলে প্রেসার উঠল কেন?

    রাতে ঘুম হয় না। তোমার বোন সারা রাত কোঁ কোঁ করে! একটু পর পর বাথরুমে যায়। মাথায় পানি ঢালে। বিছানায় যে স্থির হয়ে থাকবে তা-না, সারাক্ষণ নড়াচড়া।

    অন্য ঘরে ঘুমালেই পারেন।

    হাবিবুর রহমান বিরক্ত গলায় বললেন, এটা কেমন কথা? বউ ফেলে অন্য ঘরে ঘুমাব কেন?

    সারাদিন কাজে কর্মে থাকেন, রাতের ঘুমটা তো আপনার দরকার।

    যত দরকারই হোক, বউ এক ঘরে আমি অন্য ঘরে, এটা কেমন কথা?

    হাবিবুর রহমান হাত বাড়িয়ে চোখে এক কর্মচারীকে ইশারা করলেন। সে ব্লাড প্রেসারের যন্ত্রপাতি ফিট করতে লাগল। হাবিবুর রহমান বললেন, কোনো। কাজে এসেছ?

    মতিন বলল, জি-না। বকবক করতে এসেছি।

    চাকরি-বাকরি কিছু পেয়েছ?

    না।

    ব্যবসা-বাণিজ্য করবে? ব্যবসা-বাণিজ্য করলে ক্যাশ দিয়ে সাহায্য করতে পারি।

    না। আপনি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকুন তো দুলাভাই। আপনার প্রেসার মাপা হচ্ছে।

    হাবিবুর রহমান চোখ বন্ধ করে ফেললেন। এবারে তাঁর প্রেসার নরমাল পাওয়া গেল। তিনি আরামের নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, তুমি এসে ভালোই করেছ। তোমার সঙ্গে অতি জরুরি কথা আছে।

    বলুন শুনি।

    ভেতরে চল। সবার সামনে এইসব কথা বলা ঠিক না। তৌহিদার বিবাহ নিয়ে কথা বলব। তার জন্য একটা ভালো সম্বন্ধ এসেছে। ছেলে ব্যাংকে চাকরি করে। ম্যানেজার, ঝালকাঠিতে পোস্টিং।

    মতিন বলল, তার বিয়ে নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলবেন কেন? আমি তো তৌহিদার গার্জিয়ান না।

    হাবিবুর রহমান জবাব না দিয়ে ফার্মেসির পেছনে রওনা হলেন। মতিন। গেল তার পেছনে পেছনে।

     

    হাবিবুর রহমান খাটে পা তুলে বসেছেন। মতিন বসেছে তার সামনে। তবে মুখোমুখি বসা না। তাকে হাবিবুর রহমানের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতে হচ্ছে।

    মতিন, তুমি দুপুরের খাওয়া খেয়ে এসেছ?

    না।

    এখানে খাবে?

    বললে খাব।

    এখানে খাওয়ার দরকার নাই। বাসায় চলে যাও। আজ আমি নিজে বাজার করে দিয়ে এসেছি। ফ্রেশ মাছ আছে।

    কী মাছ?

    খইলশা মাছ, টাকি মাছ আর ছোট চিংড়ি। কচুর লতি দিয়ে চিংড়ি মাছ রাঁধতে বলেছি, টাকির ভর্তা করতে বলেছি। খইলশা মাছের বিষয়ে কিছু বলে আসি নাই। জানি না কীভাবে রাঁধবে।

    খইলশা মাছের বিষয়ে ডিরেকশান দিতে ভুলে গেছেন কী জন্যে?

    মনে ছিল না। এখন মনে হলো। একটা ভুলই হয়েছে। খইলশা মাছ পাতলা ঝোল দিয়ে রাঁধতে হয়, তাতে ধনিয়া পাতা দিতে হয়। যদি পোড়াপোড়া করে তাহলে আর মুখে দেয়া যাবে না।

    টেলিফোন করে দেখেন বেঁধে ফেলেছে কি-না।

    বাদ দাও।

    মতিন বলল, বাদ দেবেন কেন? এটা তো একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শখ করে একটা মাছ কিনেছেন। রান্নার ত্রুটির জন্যে সেই মাছ যদি মুখে দিতে না পারেন সেটা খারাপ না?

    হাবিবুর রহমান টেলিফোন করলেন। জানা গেল খইলশা মাছ ঝোল দিয়ে রান্না করা হয়েছে। ঝোলে ধনিয়া পাতাও দেয়া হয়েছে। হাবিবুর রহমান শঙ্কামুক্ত মানুষের তৃপ্তির হাসি হাসলেন।

    মতিন বলল, এখন আপনার জরুরি কথাটা বলুন। তৌহিদার বিয়ে হচ্ছে ঝালকাঠির এক ছেলের সঙ্গে?

    হাবিবুর রহমান বললেন, ঝালকাঠির ছেলে না। ছেলের বাড়ি নরসিংদী। পোস্টিং ঝালকাঠিতে। ছেলের এক খালু জিয়ার আমলে মন্ত্রী ছিলেন।

    বিয়েটা কবে?

    ভাদ্র মাসে বিয়ে হয় না, বিয়েটা হতে হবে শ্রাবণ মাসে। অর্থাৎ এই মাসে। জুলাই মাসে। আমরা একটা তারিখ ঠিক করেছি। ২৮ জুলাই। শুক্রবার। বাদ জুমা বিয়ে পড়ানো হবে।

    ভালো তো। আমি উপস্থিত থাকব, কোনো সমস্যা নেই।

    হাবিবুর রহমান বিরক্ত গলায় বললেন, সমস্যা নেই এটা কীভাবে বললে? তোমার আপা ঠিক করেছে তৌহিদার সঙ্গে তোমার বিয়ে দিবে। তৌহিদার কানে সে কী মন্ত্র দিয়েছে আল্লাপাক জানেন। আমি যদি এখন তৌহিদার গলায় পাড়া দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি তবু সে ঝালকাঠির ছেলেকে কবুল বলবে না।

    এখন উপায়?

    উপায় একটাই। বিয়ে ২৮ তারিখেই হবে। এবং তুমি বিয়ে করবে। আপত্তি আছে?

    না, আপত্তি কী জন্যে!

    হাবিবুর রহমান দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললেন, তোমার আপা এবং ঐ গাধি মেয়ে কী ভুল যে করতে যাচ্ছে তা তারা জানে না। ওদের ব্যাপার ওরা বুঝবে। আমার দায়িত্ব বিয়ে করিয়ে দেয়া। আমি দিলাম। কাজি ডেকে আনব, পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে হবে। ঠিক আছে?

    জি ঠিক আছে।

    তোমার আপাকে জানিয়ে দেই যে ২৮ তারিখেই বিবাহ?

    জানিয়ে দেন। আর ঐ ঝালকাঠির ছেলেকে পুরোপুরি No করে দেয়াও ঠিক হবে না। ও Standby থাকুক। কোনো কারণে যদি আমার সঙ্গে বিয়ে না হয়…।

    হাবিবুর রহমান তীক্ষ্ণ গলায় বললেন, হবে না কেন? এই বিষয়ে তোমার কি কোনো Second thought আছে?

    মতিন বলল, আমার কোনো Second thought নেই, তৌহিদার তো থাকতে পারে। শেষ মুহূর্তে সে যদি মনে করে, বেকার ছেলে বিয়ে না করে ব্যাংকার বিয়ে করা ভালো, তখন যেন হাতে Option থাকে।

    এটা খারাপ বলো নাই।

    মতিন বলল, দুলাভাই, আপনি কিছু মনে না করলে খাট থেকে নামুন। চক্ষণ ঘুমাব। শীতলপাটি দেখে ঘুমুতে ইচ্ছা করছে। আমি আপনার এই ঘরটার একটা নাম দিলাম! ঘুম-ঘর।

    ঘর অন্ধকার। মাথার উপর সিলিং ফ্যান। বাইরে মেঘলা দিন। বাতাস আর্দ্র ও শীতল। ঘুমুবার জন্যে আদর্শ ব্যবস্থা। মতিনের ঘুম আসছে না। সে এপাশ এপাশ করছে। সে অনেকবার লক্ষ করেছে, আয়োজন করে ঘুমাতে গেলেই তার ঘুম আসে না। তখন নদ্দিউ নতিম সাহেব ভর করেন। মাথার ভেতর এলোমেলো শব্দ নাচানাচি করে। এখন যেমন ঘুম-ঘর মাথায় ঘুরছে–

    ঘুম-ঘরে শুয়ে আছি
    ঘুম ঘুম চোখে–ডিঙ্গি বাই।
    সিলিং-এ সিলিং ফ্যান ঘুম গান গায়–
    শীতলপাটিটি ছিল ঘুমের নদীতে
    আমার হৃদয়ে তবু কোনো নিদ্ৰা নাই–।।

    অর্থহীন লাইন। এর হাত থেকে মুক্তির একমাত্র উপায়, কারো সঙ্গে কথা বলা। মুখোমুখি কথা না, টেলিফোনে কথা। মুখোমুখি কথা বলা পরিশ্রমের কাজ। তখন যার সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে তার মুখের ভাব, চোখের ভাবের প্রতি লক্ষ রাখতে হয়। তার বডি ল্যাংগুয়েজ পরীক্ষা করতে হয়। সামনা সামনি কথা বলা মানে জটিল ভাইবা পরীক্ষা দেয়া। এরচে টেলিফোন নিরাপদ। কোনো এক পর্যায়ে কথাবার্তা যদি আর চালাতে ইচ্ছা না করে তাহলে লাইন কেটে দিলেই হলো। পরে দেখা হলে বলা, ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছিল। সঙ্গে চার্জার ছিল না। মোবাইল টেলিফোন আমাদের দ্রুত মিথ্যাবাদী বানাচ্ছে।

    হ্যালো নিশু।

    হুঁ।

    কী করছ?

    আমি কী করছি সেটা ইম্পোর্টেন্ট না। তুমি কী করছ?

    আমি ঘুম-ঘরে শুয়ে আছি।

    কী বলতে চাও পরিষ্কার করে বলো। ঘুম-ঘর মানে কী?

    আমার দুলাভাই তার ফার্মেসির পেছনে একটা ঘুম-ঘর বানিয়েছেন। অত্যন্ত আরামদায়ক ব্যবস্থা। ঘরে পা দিলেই ঘুম এসে যায় বলে আমি ঘরের নাম দিয়েছি ঘুম-ঘর।

    খুব ভালো। ঘুম-ঘরে শুয়ে ঘুমাও। যদি কখনো ঘুম ভাঙে বাবার সঙ্গে দেখা করো। বাবা কোনো একটা জরুরি বিষয় নিয়ে তোমার সঙ্গে কথা বলবেন।

    জরুরি বিষয়টা কী তুমি জানো?

    জানি, কিন্তু বাবার কাছ থেকেই শোন।

    ভালো কথা, তোমার বিয়ের পাত্র কি পাওয়া গেছে?

    পাওয়া গেছে। যে-কোনো একদিন বিয়ে করে ফেলব। বাবা ধুমধাম করতে চাচ্ছেন। আমি বাবাকে বোঝানোর চেষ্টা করছি–ধুমধামে টাকা নষ্ট করা। অর্থহীন।

    মানব সভ্যতা বিকাশের প্রধান কারণ কিন্তু অর্থহীন কর্মকাণ্ডের প্রতি মানুষের প্রবল আগ্রহ।

    জ্ঞানের কোনো কথা তোমার কাছে শুনতে আমি রাজি না। তুমি জ্ঞানী না। তুমি মূর্খদের একজন।

    মানলাম। ঘুম-ঘর নিয়ে কয়েক লাইন কবিতা লিখেছি–শুনবে?

    না। আমি তোমার জন্যে কিছু কাগজপত্র জোগাড় করেছি। বাবার কাছে রাখা আছে। উনার কাছ থেকে নিয়ে নিও।

    কী কাগজপত্র?

    তুমি Autistic children সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলে, সেই বিষয়ের কাগজপত্র।

    আমি তোমার কাছে কোনো কাগজপত্র চাই নি। তারপরেও তোমাকে ধন্যবাদ।

    আমি পেপারগুলি পড়েছি। Autistic children-দের কিছু বিষয় আমার কাছে দারুণ ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে। যেমন ধর, ওরা হাসে না।

    তাই না-কি?

    হ্যাঁ, ওরা হাসে না। একটা সেকেন্ড টেলিফোনটা ধরে রাখ, ওদের বিষয়ে সবচে ইন্টারেস্টিং জিনিসটা তোমাকে পড়ে শুনাই।

    দরকার নেই। অবশ্যই দরকার আছে। শোন, আমি পড়ছি–

    Autistic child might be obsessed with learning all about, train schedules, light houses, cars, vaccum cleaners. Often they show great interest in numbers, symbols, science, advanced math…

    অ্যাই, তুমি কি আমার কথা শুনছ?

    শুনছি, তবে মন দিয়ে শুনছি না।

    Autistic বেবিরাও কিন্তু কখনো কোনো কথা মন দিয়ে শুনে না। তুমি কি জানো Mozart Autistic ছিল?

    মতিন লাইন কেটে দিল। সে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ঘুমিয়ে পড়ল। তৎক্ষণাৎ শুরু হলো স্বপ্ন দেখা। যেন সে ক্লাসে বসে আছে। বিরাট বড় ক্লাস। নানান বয়সের অসংখ্য ছাত্রছাত্রী। যিনি ক্লাস নিচ্ছেন তার চেহারা দৈত্যের মতো। তিনি। পাঞ্জাবি পরে আছেন, তারপরেও কোনো এক অদ্ভুত কারণে তাঁর খালি গা দেখা যাচ্ছে। ভদ্রলোকের বুকভর্তি সাদা লোম। গালে চাপদাড়ি। তবে গালের দাড়ি বুকের ললামের মতো সাদা না। মেহেদি দিয়ে রাঙানো। দৈত্যাকৃতির এই লোকটির কণ্ঠস্বরও দৈত্যের মতো। ক্লাসরুম গমগম করছে। দৈত্যের হাতে বেত। সে বাতাসে কয়েকবার বেত নাচাল। শাঁ শাঁ শব্দ হলো। তারপর ক্লাসের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছে যে প্রমাণ করতে পারে God বা ঈশ্বর বলে কিছু নেই? এই পৃথিবী, এই সৌরজগৎ, এই গ্যালাক্সি আপনাআপনি সৃষ্টি হয়েছে। আছে কেউ? যদি কেউ থাকে সে যেন এগিয়ে আসে। আমার কাছে চক আছে, ডাস্টার আছে, সে যেন প্রমাণ করে। একটাই শর্ত। প্রমাণ করতে না পারলে আমি তাকে শাস্তি দেব। আছে কেউ? আছে? সাহস দেখাও। উঠে আস।

    কে যেন যাচ্ছে বোর্ডের দিকে। কে সে? আরে কমল না! করছে কী এই ছেলে? মতিন ঘুমের মধ্যে চেঁচিয়ে উঠল–স্টপ। স্টপ। কমল ফিরে এসো। এই দৈত্য তোমাকে মারবে।

    কমল ফিরছে না। তাকে উল্টো করে ফিরে এসো বলা দরকার। তখন হয়তো বুঝবে। মতিন প্রাণপণে চেঁচালো, সোএ রেফি! সোএ রেফি! লমক সোএ রেফি। কমল ফিরে এসো।

    মতিনের ঘুম ভেঙে গেল।

    তার বুক ধড়ফড় করছে। ঘামে সারা শরীর ভেজা। তৃষ্ণায় ফুসফুস ছোট হয়ে গেছে এমন অবস্থা। মতিন ভীত গলায় বলল, পানি খাব। কেউ তার কথা শুনল না। চারদিকে অস্বাভাবিক নীরবতা। ফার্মেসির কর্মচারীদের কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে না। এমন কি হতে পারে তার স্বপ্ন এখনো ভাভে নি? এখনো সে স্বপ্ন দেখে যাচ্ছে। খোলা দরজা দিয়ে দৈত্যটা আবার ঢুকবে।

    তার স্বপ্নে মাঝে মাঝে এই ব্যাপারটা ঘটে। স্বপ্নের মধ্যেই মনে হয় স্বপ্ন শেষ হয়েছে। সে জেগে উঠেছে, অথচ স্বপ্ন তখনো চলছে।

    সে যে সত্যি জেগেছে তার প্রমাণ কী? গায়ে চিমটি কেটে দেখবে? পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে সিগারেট ধরাবে? জ্বলন্ত সিগারেট দিয়ে গায়ে ছ্যাকা দেবে?

    মতিন পকেটে হাত দিল। পকেট থেকে বের হলো হলুদ রঙের খাম। যামের মুখ বন্ধ। খাম এখনো খোলা হয় নি। উপরে লেখা করিয়ার সার্ভিস। প্রেরক আশরাফ। আশরাফ তাকে চিঠি পাঠিয়েছে, সে না পড়ে পকেটে নিয়ে ঘুরছে, তা হয় না। অবশ্যই এটা স্বপ্ন। তবে খামের উপর কুরিয়ার সার্ভিস লেখা এবং একটা নাম্বার লেখা। স্বপ্নে এত ডিটেল থাকার কথা না।

    মতিন, ঘুম ভেঙেছে?

    হাবিবুর রহমান ঘরে ঢুকলেন। তার হাতে চায়ের কাপ। তিনি চায়ের কাপ। বিছানার পাশে রাখতে রাখতে বললেন, চা খাও।

    মতিন বলল, কয়টা বাজে?

    সন্ধ্যা ছয়টা। তুমি তো ম্যারাথন ঘুম দিয়ে দিলে। ঘুম আরামের হয়েছে?

    ঘুম আরামেরই হয়েছে, তবে আরো কিছুক্ষণ ঘুমাব। আপনার ফার্মেসি নয়টার সময় বন্ধ হয় না? আপনি আপনার কর্মচারীদের বলে দিয়ে যান তারা যেন আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে তারপর দোকান বন্ধ করে।

    তুমি সত্যি সত্যি আবার ঘুমাবে?

    হ্যাঁ। একটা মোমবাতি দিতে পারবেন?

    মোমবাতি দিয়ে কী করবে?

    আমার বন্ধুর একটা চিঠি এসেছে। তার চিঠি মোমবাতি জ্বালিয়ে পড়তে হয়। ইলেকট্রিকের আলোয় পড়া যাবে না।

    হাবিবুর রহমান বিস্মিত হয়ে বললেন, কেন?

    ও থাকে নাইক্ষ্যংছড়ি নামের একটা জায়গায়। গহীন বন। তার ওখানে ইলেকট্রিসিটি নেই। সে মোমবাতির আলোয় চিঠি লেখে।

    সে মোমবাতির আলোয় চিঠি লেখে বলে তোমাকেও মোমবাতির আলোতে চিঠি পড়তে হবে?

    মতিন হাই তুলতে তুলতে বলল, হ্যাঁ। কবি নদ্দিউ নতিমের একটি কাব্যগ্রন্থ আছে নাম দুপুরের শিশির। এর কবিতাগুলি তিনি মশাল জ্বেলে মশালের আগুনে লিখেছিলেন। সেই কারণে তার কবিতা পড়তে হয় মশাল জ্বেলে।

    ঢাকা শহরে তুমি মশাল পাবে কোথায়?

    মতিন বলল, এইখানেই তো সমস্যা। মশালের অভাবে উনার দুপুরের শিশির কাব্যগ্রন্থটা পড়া হয় নি।

    তোমার কাজকর্ম এবং কথাবার্তার বেশির ভাগই আমি বুঝি না। তোমার যে বন্ধু জঙ্গলে থাকে সে-ই কি প্রতিমাসে তোমাকে টাকা পাঠায়?

    হ্যাঁ। মোমবাতি এনে দিন তো দুলাভাই, চিঠিটা পড়ি। দুদিন ধরে এই চিঠি পকেটে নিয়ে ঘুরছি। মোমবাতির অভাবে পড়তে পারছি না। চিঠির কথা ভুলেও গিয়েছিলাম। ভাগ্যিস দৈত্যকে দেখে ভয় পেয়ে পকেটে হাত দিয়ে চিঠির সন্ধান পেয়েছি। দৈত্য না দেখলে চিঠি পড়তে আরো দেরি হতো।

    হাবিবুর রহমান দৈত্যের কথা জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করলেন না। জিজ্ঞেস করলেই আরো কিছু উদ্ভট কথা শুনতে হবে। দরকার কী!

    চিঠিতে আশরাফ লিখেছে–

    হ্যালো মতিন,

    তোর চিঠি পেয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে জবাব দেয়া হয় নি। ট্রি হাউস বানানোয় ব্যস্ত ছিলাম। প্রায় এক মাসের পরিশ্রমে দেখার মতো একটা ট্রি হাউস বানিয়েছি। রেইনট্রি গাছের উপর বাসা। দড়ির সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয়। টু বেডরুম ফ্ল্যাট বলতে পারিস। বারান্দাও আছে। বারান্দাটা বেশ বড়। ওয়াল্ট ডিজনীর সুইস ফ্যামিলি রবিনসনে যে ট্রি হাউস আছে আমারটা তার কাছাকাছি। তুই দেখলে খুবই মজা পাবি।

    তোকে বলেছিলাম না একটা পাহাড়ে কলার চাষ করেছি। এই প্রজেক্ট কাজ করে নি। কলা ভালো হয় নি। কলার কারণে দুনিয়ার বাঁদর এসে উপস্থিত হয়েছে। বদররা আমার কলাবাগান তছনছ করে বিদায় হয়েছে, তবে দুটা রয়ে গেছে। তারা আমার লগ হাউসের আশেপাশে থাকে। দূর থেকে আমাকে অনুসরণ করে। আমি যখন নদীতে গোসল করতে যাই এরা আমার পেছনে পেছনে আসে। আমি বাঁদর দুটির নাম দিয়েছি। একটার নাম মাসি, আরেকটার নাম পিসি।

    দুটিই মেয়ে বাঁদর বলে এই নামকরণ। দুটি মেয়ে বদর একসঙ্গে জোট বাঁধল কেন বুঝতে পারছি না। বাদর দুটি টের পেয়েছে যে তাদের নাম আছে। তারা ডাকলে সাড়া দেয়, তবে আমার খুব কাছে আসে না।

    তুই শুনলে খুশি হবি যে, আমি শঙ্খ নদীর পাড় ঘেষে আরো সত্তর একরের মতো জমি নব্বই বৃছরে জন্যে লিজ নিয়েছি। এখানে আমি কফি বাগান করব। আমাকে যা করতে হবে তা হলো ভালো জাতের কফি গাছের চারা। জোগাড় করা।

    আমি ভালোই আছি। সুখে আছি। বিশাল জায়গায় মহারাজার মতো ঘুরে বেড়ানোয় আনন্দ আছে। পাহাড়ি লোকজন আমাকে তেমন অপছন্দ করে বলে মনে হয় না। এক মুরং হেডম্যানের সঙ্গে আমার ভালো সখ্য হয়েছে। তাকে আমি জানিয়েছি যে, আমার ইচ্ছা একটা পাহাড়ি মেয়ে। বিয়ে করা। সে যেন পাত্রী খুঁজে দেয়।

    মতিন, আমি কিন্তু ঠাট্টা করছি না। ঢাকা শহরের চটপটি খাওয়া এবং পিৎজা খাওয়া কোনো মেয়ে জঙ্গলে এসে থাকতে পারবে না। আমার প্রয়োজন পাহাড়ি মেয়ে। যে আমার মতোই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কঠিন পরিশ্রম করবে।

    তুই আমার সঙ্গে কবে জয়েন করবি? চলে আয় ব্যাক টু দ্য নেচার। ট্রি হাউসটা তোকে ছেড়ে দেব। গাছের উপর থাকা। গাছের উপর ঘুমানো। এখানে এলে নদ্দিউ নতিমের কিছু বৃক্ষ-কবিতা লিখে ফেলতে পারবি।

    ভালো কথা, আমার টাকা নিয়মিত পাচ্ছিস তো? তুই আমার বেতনভুক্ত কর্মচারী, এটা মনে রাখবি।

    আমার কিছু বই দরকার। Medicinal Plants-এর উপর বই এবং ক্যাকটাসের উপর বই। Medicinal Plants-এর উপর বাংলায় লেখা বইগুলি অখাদ্য। একটা বইয়ের নাম লিখে দিচ্ছি, কাউকে দিয়ে বাইরে থেকে আনাতে পারিস কি-না দেখ–

    A Study on Medicinal Plants
    M. S. Hindra Junior

    বিষাক্ত গাছের উপর কোনো বইপত্র চোখে পড়লেও পাঠাবি।

    ঐদিন কী হয়েছে শোন, আমি ছোট্ট একটা টিলায় উঠে দেখি টিলা ভর্তি বেগুনি রঙের ফুল। ফুলে গন্ধ আছে কি-না। দেখার জন্যে একটা ফুল ছিড়তেই হাতে জ্বলুনি শুরু হলো। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে হাত ফুলে ঢোল। মানুষের আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়, আমার হাত ফুলে কলাগাছ।

    আচ্ছা শোন, তুই কমল নামের একটি বাচ্চাকে নিয়ে অনেক কথা লিখেছিস। তুই কি এখনো তার হাউস টিউটর? তুই তোর ছাত্রকে নিয়ে চলে আয় না। আমিও দেখি ছেলেটার বিশেষত্ব কী?

    আজ এই পর্যন্তই। ভালো থাকিস।

    ইতি–
    তোর কঠিন গাধা

    আশরাফ তার নামের ইংরেজি বানান লেখে Ass Rough. যার বাংলা পাড়ায় কঠিন গাধা।

    মতিন চিঠি খামে ভরল। বালিশের নিচে রেখে ঘুমোবার আয়োজন করল। তার মন বলছে এখন ঘুমালেই সে গহীন জঙ্গলের স্বপ্ন দেখবে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleজলপদ্ম – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article কালো যাদুকর – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }