Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    কোলকাতা কেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবী – এম আর আখতার মুকুল

    এম আর আখতার মুকুল এক পাতা গল্প509 Mins Read0

    কোলকাতা কেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবী – ৭

    সনাতনপন্থীরা ১৮৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত করলেন ‘ধর্মসভা’

    কিন্তু এর পাশাপাশি একথাও বলতে হয় যে, ১৮৩০ খ্রীষ্টাব্দ নাগাদ রামমোহন রায় কর্তৃক ব্রাহ্ম সমাজ স্থাপন, ঊনবিংশ শতাব্দীর এই ত্রিশ দশকেই ডি রোজারিওর নেতৃত্বে ইয়ং বেংগল আন্দোলন, লর্ড বেন্টিংক কর্তৃক সতীদাহ আইন পাস (১৮২৯ খ্রীঃ) এমনকি রামকৃষ্ণ এবং বিবেকানন্দের উদ্যোগে হিন্দুধর্মের সংস্কার সাধনের প্রচেষ্টা এবং আরও পরবর্তীতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কর্তৃক বিধবাবিবাহ সমর্থন এসবের কোন কিছুই এই সনাতন ধর্মের গোঁড়ামির ভিত্তিকে শিথিল করতে পারেনি। ১৮৩০ খ্রীষ্টাব্দে সনাতনপন্থীরা মূল হিন্দুধর্ম রক্ষার উদ্দেশ্যে গঠন করলেন ‘ধর্মসভা’।

    পশ্চিমবংগের বিশিষ্ট মার্কসীয় গবেষক বিনয় ঘোষ এ সম্পর্কে স্বীয় মন্তব্য, প্রকাশকালে লিখেছেন, “… … হিন্দু শাস্ত্রকাররা (প্রাচীন ও মধ্যযুগের এলিটশ্রেণী) বলেন যে, জন্মের দ্বারাই ‘বর্ণ’ ঠিক হয়, অর্থাৎ কুল জন্মগত। ব্রাহ্মণের পুত্র ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়ের পুত্র ক্ষত্রিয়, বৈশ্যের পুত্র বৈশ্য, শূদ্রের পুত্র শূদ্র, এটাই হিন্দু সমাজের চিরস্থায়ী জাতিবর্ণগত ব্যবস্থা এবং স্বয়ং ভগবানই এই ব্যবস্থার প্রবর্তক। ভগবান নিজেই বর্ণ সৃষ্টি করেছেন। তিনি মুখ থেকে ব্রাহ্মণ, বাহু থেকে ক্ষত্রিয়, উরু থেকে বৈশ্য এবং পদযুগল থেকে শূদ্র সৃষ্টি করেন।

    “হিন্দু ধর্ম চতুবর্ণের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং হিন্দু সমাজ ‘বর্ণাশ্রমী সমাজ’। হিন্দু সমাজের এই ভিত আজ পর্যন্ত কোনো সংস্কারক অথবা কোনো শাসক ভাঙতে পারেননি, বৌদ্ধ, জৈন, হিন্দু, মুসলমান অথবা খ্রীষ্টান ইংরেজরা, কেউ না। সংস্কারকদের মানবতার বাণী, রাষ্ট্রীয় আইন-কানুন শিক্ষার অগ্রগতি ইত্যাদির ফলে তার গায়ে খানিকটা আঁচড় লেগেছে ঠিকই, কিন্তু ভিত্তিতে ফাটল ধরেনি। বর্তমান বিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকেও বোঝা যায়, একথা কতখানি সত্য।”

    তাই একথা ভাবলে আজ আশ্চর্য হতে হয় যে, ১৮২৪ খ্রীষ্টাব্দে কোলকাতায় প্রতিষ্ঠিত সংস্কৃত কলেজে প্রায় ৩০ বছর পর্যন্ত বিধর্মী তো দূরের কথা, ব্রাহ্মণ ছাড়া হিন্দু সম্প্রদায়েরই ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রদের সংস্কৃত শিক্ষার অধিকার পর্যন্ত দেয়া হয়নি। এই কলেজের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে ছিলেন বর্ধমানের মহারাজা, শোভাবাজারের রাজ পরিবারের গোপী মোহন দেব ও রাজকান্ত দেব, ধনশালী রাধামাধব, রামকমল সেন ও রসময় দত্ত প্রমুখ। শেষ পর্যন্ত প্রায় ৩০ বছর পর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের প্রচেষ্টায় প্রথমে ১৮৫১ সালের জুলাই মাসে কায়স্থদের এবং পরে ১৮৫৪ সালের ডিসেম্বর মাসে অন্যান্য সম্প্রদায়ের হিন্দুদের সংস্কৃত বিদ্যা শিক্ষার অধিকার দেয়া হয়।

    তবুও একটা কথা থেকে যায়। আইন পাস করেও যেমন হিন্দুদের মধ্যে বিধবা বিবাহ আজও পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি তেমনি সকল বর্ণের হিন্দুদের সংস্কৃত শিক্ষার লক্ষ্যে পরিবেশ সৃষ্টিতে বহু বছর সময়ের প্রয়োজন হয়েছিলো।

    প্রায় দুই শতাব্দী ধরে ভারত উপমহাদেশে ‘বাবু’ হচ্ছে একটি বহুল প্রচলিত শব্দ। কালের ব্যবধানে এই বাবু থেকেই ‘বাঙালি বাবু’। আর এই বাঙালি বাবুই হচ্ছে সে আমলের ইতিহাস বিখ্যাত বাবু সমাজ। বিশ্বের নানা ভাষায় লিখিত উপন্যাস সাহিত্য আর ইতিহাসে এই ‘বাবু সমাজের’ উল্লেখ রয়েছে। আজও পর্যন্ত উপমহাদেশের অবাঙালি প্রধান এলাকাগুলোতে ‘বাবু সমাজ’ বলতে বাঙালি বর্ণ হিন্দুদেরই বোঝানো হয়ে থাকে। সে আমলে বিশেষ করে অষ্টাদশ শতাব্দীতে কোলকাতা কেন্দ্রিক এঁদের সংস্কৃতিকেই ‘বাবু কালচার’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বলাই বাহুল্য যে, ইংরেজদের বদৌলতেই সে আমলে এই বাবু সমাজের সৃষ্টি হয়েছিলো এবং এঁরা চিরকালই ছিলেন ইংরেজদের বশংবদ। তাঁদের ইতিহাস শুধু রোমাঞ্চকরই নয় কোন কোন ক্ষেত্রে অবিশ্বাস্য বলে মনে হয়। কোলকাতার প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও গবেষক ডক্টর অতুল সুর (রচিত গ্রন্হের সংখ্যা ১৩১) অষ্টাদশ শতাব্দীর এই ‘বাবু সমাজ’ সম্পর্কে সম্প্রতি এক চাঞ্চল্যকর মূল্যায়ন করেছেন। তিনি লিখেছেন, “অষ্টাদশ শতাব্দীর কলকাতায় যে অভিজাত শ্রেণীর অভ্যুত্থান ঘটেছিল, তাঁরা পয়সা করেছিলেন দেওয়ানী, বেনিয়ানী ও ব্যবসা-বাণিজ্যে। গোড়ার দিকে অবশ্য অনেকে ঠিকাদার ও চাকুরী করেও পয়সা উপার্জন করেছিল। কলকাতায় ঠাকুর বংশের প্রতিষ্ঠাতা পঞ্চানন কুশারী জাহাজে মাল ওঠানো নামানোর ঠিকাদারী করতেন। তাঁর ছেলে জয়রাম কলকাতার কালেকটর বাউচারের অধীনে আমিনের চাকুরী করতেন। বনমালী সরকার ইংরেজদের ডেপুটি ট্রেডার ছিলেন। নন্দরাম সেন কালেকটরের সহকারী ছিলেন। গোবিন্দ মিত্রও তাই। শেঠ-বসাকরা ব্যবসা করতেন। রতু সরকার ও শোভরাম বসাকও তাই। শোভারাম ইংরেজদের সঙ্গে সুতা ও বস্ত্রের কারবার করে কোটিপতি হয়েছিলেন। শতাব্দীর মধ্যাহ্ণে গোকুল মিত্র নুনের একচেটিয়া ব্যবস্থা ও ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর হাতী ও ঘোড়ার রসদ সরবরাহ করে প্রভূত অর্থ উপার্জন করেছিলেন। পাথুরিয়া ঘাটার মল্লিক পরিবারের প্রতিষ্ঠাতাদ্বয় শুকদেব মল্লিক ও নয়নচাঁদ মল্লিক পয়সা করেছিলেন তেজারতি কারবার করে। সিঁদুরিয়া পট্টিতে নয়নচাদের সাতমহল বাড়ি ছিল। নয়নচাদের ছেলে নিমাই চাঁদ নুনের ও জমিজমার ফাটকা করে তিন কোটি টাকার মালিক হয়েছিলেন। চোরবাগানের রাজেন্দ্র মল্লিকের পিতামহ ব্যবসা বাণিজ্যে নিযুক্ত থেকে প্রভূত অর্থ উপার্জন করেছিলেন। অগাধ ধনের মালিক হিসাবে অষ্টাদশ শতাব্দীতে খ্যাতি ছিল গৌরী সেনের। সামান্য অবস্থা থেকে আমদানী রপ্তানির কারবারে তিনি অসাধারণ ধনশালী হয়েছিলেন। অষ্টাদশ শতাব্দীর আর এক বিশিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন মহারাজ রাজবল্লভ। হেষ্টিংস-এর দৌলতে যারা বড়লোক হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন কাশিমবাজার রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা কৃষ্ণকান্ত নন্দী বা কান্তবাবু ও পাইকপাড়ার রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা গঙ্গাগোবিন্দ সিংহ। কৃষ্ণকান্ত নন্দী মুদীর দোকানে কাজ করতেন বলে বাঙলার জনসমাজে কান্ত মুদী নামে পরিচিত ছিলেন। ফারসী ও যৎসামান্য ইংরেজী জানতেন, এবং সেজন্য ইংরেজ কুঠিতে মুহুরীর কাজ পেয়েছিলেন। সিরাজের ভয়ে ভীত ওয়ারেন হেষ্টিংসকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেন। হেষ্টিংস যখন গভর্নর জেনারেল তখন হেষ্টিংস-এর ব্যক্তিগত ব্যবসায় মুৎসুদ্দী হয়ে হেষ্টিংস-এর সকল রকম দুষ্কার্যের সহায়ক হন – অত্যন্ত চতুর ও ফন্দীবাজ লোক ছিলেন ও কাশিমবাজার রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। যে সকল সুযোগসন্ধানী ও স্বার্থান্ধ বঙ্গসন্তান অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষার্ধের বাংলার ইতিহাস কলঙ্কিত করে গেছেন তিনি তাঁদের অন্যতম। ১৭৯৩ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি বেঁচে ছিলেন। এখানেই শেষ নয়। ৮২ বছর বয়স্ক গবেষক ডঃ অতুল সুর এ সম্পর্কে আরও লিখেছেন, গঙ্গা গোবিন্দ সিংহ রাজস্ব আদায়কারী রেজা খাঁর অধীনে কানুনগোর কাজ করতেন। …… পাঁচসালা বন্দোবস্তের সময় রাণী ভবানীর জমিদারীর (নাটোর এলাকায়) কিয়দংশ হস্তগত করেন ও পাইক পাড়ার রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। জমিদার হিসাবে অত্যাচারী ও প্রজাপীড়ক ছিলেন। কোম্পানীর অধীনে চাকুরী করে আর যারা প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন ভূর্কেলাসের মহারাজ জয়নারায়ণ ঘোষাল। অষ্টাদশ শতাব্দীর আর বড় লোক ছিলেন বালাখানার চুড়ামণি দত্ত। ধনগরিমায় তিনি ছিলেন নবকৃত দেবের প্রতিদ্বন্দ্বী।

    সংক্ষেপে এই হচ্ছে কোলকাতা কেন্দ্রীক বাবু সমাজ গঠনের পূর্ব ইতিহাস। পশ্চিম বাংলার প্রখ্যাত গবেষক পূর্ণেন্দু পত্রী মহাশয়ের ভাষায় বলতে হলে, “গোবিন্দ রামদের (ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গের এককালীন সেনাপতি ও পরবর্তীতে কোলকাতার ইংরেজ জমিদার হলওয়েলের অত্যাচারী ও ভয়ঙ্কর প্রকৃতির ডেপুটি) যুগ শেষ হলো। ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে লাগল অন্য যুগ। কলকাতার বনেদী পাড়ায় জন্ম নিতে লাগল নতুন এক সম্প্রদায়, ইতিহাসে যাকে নাম দিয়েছে ‘বাবু’। আঠারো শতকের শেষ ভাগের আগেও “বাবু” শব্দটা ছিল মর্যাদাসূচক। কিন্তু তখনও তার বহুল প্রচলন ঘটেনি। ঘটেছিল আঠারো শতকের শেষ পর্ব থেকে।….. পলাশী যুদ্ধের পরের কলকাতায় বাঙলার বা বাঙালির পতন অভ্যুদয়ের ইতিহাসের নায়কের ভূমিকা নিয়েছে এই বাবু সমাজ। (পুরানো কলকাতার কথাচিত্র : ২য় সংস্করণঃ দে’জ পাবলিশিংঃ কলকাতা)।

    বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, কালীপ্রসন্ন সিংহ ওরফে ‘হুতোম প্যাচা’ (১৮৪০-১৮৭০ খ্রীঃ) সর্ব প্রথম তাঁর সাহিত্যকর্মে এই বাবু সমাজের উল্লেখ করেন। তিনি এদের কর্মকাণ্ডকে শ্লেষাত্মক ভাষায় তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি লিখেছেন, “কোম্পানীর বাংলা দখলের কিছু পরে, নন্দন কুমারের ফাঁসি হবার কিছু পূর্বে আমাদের বাবুর প্রপিতামহ নিমকের দাওয়ান ছিলেন, সেকালে নিমকের দাওয়ানীতে বিলক্ষণ দশ টাকা উপায় ছিল, সুতরাং বাবুর প্রপিতামহ পাঁচ বৎসর কর্ম করে মৃত্যুকালে প্রায় বিশ লক্ষ টাকা রেখে যান, সেই অবধি বাবুরা বনেদী বড় মানুষ হয়ে পড়েন। কিন্তু হিন্দু ধর্ম ও শ্রেণী স্বার্থের প্রতি সদাজাগ্রত, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ভিন্ন মতাবলম্বী। তিনি কালী প্রসন্ন সিংহ ওরফে হুতোম প্যাঁচাকে তীব্র ভাষায় কটাক্ষ করে গেছেন। বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছেন, “হুতোমি ভাষা দরিদ্র, ইহার তত শব্দধন নাই; হুতোমি ভাষা নিস্তেজ, ইহার তেমন বাধন নাই; হুতোমি ভাষা অসুন্দর এবং যেখানে অশ্লীল নয়, সেখানে পবিত্রতাশূন্য; হুতোমি ভাষায় কখন গ্রন্থ প্রণীত হওয়া কর্তব্য নহে। যিনি হুতোম প্যাঁচা লিখিয়াছিলেন, তাঁহার রুচি ও বিবেচনার আমরা প্রশংসা করি না। প্রায় এক শতাব্দী পরে পশ্চিম বাংলার প্রখ্যাত গবেষক ডক্টর অসিত কুমার বন্দোপাধ্যায় কিন্তু বঙ্কিমচন্দ্রে বক্তব্য সম্পর্কে একমত হতে পারেননি। কালীপ্রসন্ন সিংহের সাহিত্য কর্ম সম্পর্কে ডঃ বন্দোপাধ্যায় চমৎকার উক্তি করেছেন। তিনি লিখেছেন, বলা বাহুল্য বঙ্কিচন্দ্রের এ মন্তব্যের অনেকটাই যুক্তিসংগত নয়। ১৮৬২ সালে যখন সাহিত্য ক্ষেত্রে বঙ্কিমচন্দ্রের আবির্ভাব হয়নি, তখন কলকাতায় চলতি বুলি অবলম্বন করে এ রকম ব্যাংগ-বিদ্রুপে পূর্ণ অতিশয় শক্তিশালী গদ্যরচনার প্রয়াস বাস্তবিক বিকর। (বাংলা সাহিত্যের সম্পূর্ণ ইতিবৃত্তঃ সংশোধিত ৪র্থ সংস্করণঃ মডার্ণ বুক এজেন্সী, কলিকাতা)।

    যা হোক আলোচনার সুবিধার্থে এরকম এক প্রেক্ষাপটে এদেশে ইংরেজদের সমর্থক গোষ্ঠী কোলকাতার এই ‘বাবু সমাজের’ বুদ্ধিজীবী শ্রেণীতে পরিণত হওয়ার সংক্ষিপ্ত ইতিহাসের উল্লেখটা অপরিহার্য মনে হয়। ১৬৯৩ খ্রীষ্টব্দের কথা। তখন এদেশে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর সবেমাত্র শ্রীবৃদ্ধি শুরু হয়েছে। লণ্ডন থেকে কোম্পানীর ডিরেক্টররা এমর্মে কোলকাতায় কাউন্সিলকে চিঠি লিখলো যে, কোলকাতায় অবস্থানকারী ইংরেজদের যাবতীয় কলহ ও বিবাদ মেটানোর জন্য মাদ্রাজের সেন্ট জর্জ কোর্টের অনুকরণে কোলকাতাতেও একটি বিচারালয় স্থাপন করতে হবে। প্রায় এক বছর পরে কোলকাতা থেকে যে জবাব পাঠানো হলো, তা থেকে সে আমলের রাজনৈতিক পরিস্থিতির একটি চিত্র পাওয়া সম্ভব। ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর স্থানীয় কর্মকর্তাদের বক্তব্য হচ্ছে যে, কোলকাতায় এখন এক নাজুক পরিস্থিতি বিরাজমান। যতদিন পর্যন্ত দিল্লীর প্রতিনিধি হিসাবে বাংলায় শক্তিশালী নবাব আর দেওয়ান রয়েছেন, ততদিন পর্যন্ত এ ধরনের একটি পৃথক বিচারালয় স্থাপন বুদ্ধিমত্তার পরিচয় হবে না। উপরন্তু কোম্পানীর প্রবীণ কর্মচারী জব চার্ণক-এর মৃত্যু হওয়ায় কোম্পানীর কার্য পরিচালনায় বেশ কিছুটা অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছে। ১৬৯৬ খ্রীষ্টাব্দের ১৪ই মার্চ লণ্ডন থেকে জবাব এসে পৌঁছলো। আপাততঃ কোলকাতায় বিচারালয় স্থাপন না করলেও যাঁরা কোম্পানীকে ফাঁকি দিয়ে অর্থ উপার্জনের প্রচেষ্টা করবে তাদের গ্রেফতার করে বিচারের জন্য মাদ্রাজে পাঠাতে হবে। এ ধরনের অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নামে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করার জন্য কোম্পানীর কোলকাতাস্থ কাউন্সিলকে ক্ষমতা দেয়া হলো।

    এর প্রায় ৩০ বছর পরের কথা। ১৭২৬ খ্রীষ্টাব্দে লণ্ডন থেকে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর বোর্ড অব ডিরেক্টরস এ মর্মে নির্দেশ পাঠালো যে, অবিলম্বে কোলকাতায় একটি কোর্ট স্থাপন করতে হবে। প্রস্তুতিকর্মে আরও তিন বছর গত হবার পর ১৭২৯ খ্রীষ্টাব্দে কোলকাতার রাইটার্স বিল্ডিং-এর (সচিবালয়) পূর্ব দিকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা ব্যয়ে এ্যামবেসাডার্স হাউস নামে বাড়িটি ক্রয় করে স্থাপিত হলো ‘মেয়র্স কোর্ট’। অবশ্য ১৭২৭ খ্রীষ্টাব্দে নবাব মুর্শিদ কুলী খাঁর মৃত্যু হবার পরই কেবলমাত্র এ ধরনের একটি বিচারালয় স্থাপনে ইংরেজরা সাহসী হয়ে ছিলো।

    কোর্টকে ঘিরে বাঙালি হিন্দুদের ইংরেজী শিক্ষার প্রয়াস

    মেয়র্স কোর্টের অস্তিত্ব বজায় ছিলো মাত্র ৪৫ বছরের মতো। ১৭৭৪ খ্রীষ্টাব্দে মেয়র্স কোর্ট যখন ওল্ড কোর্ট সাউস স্ট্রীটে, তখন এর অবলুপ্তি ঘোষণা করা হলো। এর জায়গায় ১৭৭৪ খ্রীষ্টাব্দেই জন্ম হলো সুপ্রিম কোর্টের।

    কোলকাতার ‘বাবু সমাজে’ কিভাবে ইংরেজী শিক্ষার সুত্রপাত হলো, তা সঠিকভাবে অনুধাবনের লক্ষ্যেই ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর উদ্যোগে কোলকাতায় প্রথমে মেয়র্স কোর্ট এবং পরবর্তীকালে সুপ্রিম কোর্ট স্থাপনের ঘটনার উল্লেখ করতে হলো। প্রখ্যাত সাংবাদিক ও গবেষক বিনয় ঘোষ এ সম্পর্কে লিখেছেন, লক্ষ্য করা গিয়েছিল যে, এই সময় থেকেই ইংরেজী ভাষা জ্ঞান কাম্য এবং প্রয়োজনীয় মনে হতে লাগল। আধাশিক্ষিত কয়েকজন ইউরেশীয় (এ্যাংলো ইণ্ডিয়ান) এবং সুপ্রিম কোর্টের বৃটিশ এ্যাটর্ণি ও উকিলদের ক’জন বাঙালি অবাঙালি উদ্যোগী দালাল—এরাই হল আমাদের দেশের প্রথম ‘প্রসিদ্ধ ও পরিপূর্ণ ইংরেজী বিদ্বান ও শিক্ষক। এই শিক্ষকদের বেতন ছিল ষোল টাকার একটি পয়সা কম নয়। এদের ইংরেজী বিদ্যার পুঁজি বলতে পকেট নোট বুকে টুকে রাখা কয়েক ডজন শব্দ। দেশের ভুঁইফোড় অভিজাতরা এদের কাছে ইংরেজী শিখতে আসত, তাদের শিক্ষা সীমাবদ্ধ থাকত মুখস্থ করা কয়েকটা শব্দে। ইংরেজী ভাষায় যা তারা প্রকাশ করতে অক্ষম হত তা তারা প্রকাশ করত নানা রকম সংকেত চিহ্নের সাহায্যে। প্রকাশের ব্যর্থতা পূরণের উপায় হিসাবে দেশীয়দের অনেকেই আশ্রয় নিত বিচিত্র অঙ্গভঙ্গির। ইউরোপীয় প্রভুদের কাছে এই ভাবেই তাদের বক্তব্য বোধগম্য হত। ইংরেজী ভাষায় এই সামান্য দখল নিয়েই কিন্তু মুৎসুদ্দিরা যথেষ্ট পরিমাণে ধনার্জন করতে পেরেছিলেন যা’ সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করে তাঁদের নবীন নাগরিক অভিজাত শ্রেণীতে প্রতিষ্ঠিত করল। ইংরেজী শিক্ষা আমাদের মতো ঔপনিবেশিক দেশের আধুনিক বুদ্ধিজীবীদের যা প্রায় অপরিহার্য উপাদান বলা চলে এইভাবেই তার শুরু। এর পেছনে প্রধান অনুপ্রেরণা ছিল ব্রিটিশ বণিক এবং শাসকদের সেবা করার এবং আর্থিক লাভের। এই অনুপ্রেরণা ক্রমে বাড়তে থাকল – আরো প্রবল হয়ে উঠল ঊনবিংশ শতাব্দীতেই ইংরেজী শিক্ষার গুণগত ও পরিমাণগত প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে। ১৮১৭ সালে কলকাতায় হিন্দু কলেজ স্থাপনা থেকেই শুরু হলো ইংরেজী শিক্ষার প্রসার।” (বাংলার বিদ্বৎসমাজঃ ২য় সংস্করণ ১৯৭৮ প্রকাশ ভবন কলিকাতা)।

    এখানে একটা কথা মনে রাখা বাঞ্ছনীয় হবে যে, বড় লাট হিসেবে ওয়ারেন হেষ্টিংস ১৭৭৪ খ্রীষ্টাব্দে কোলকাতায় সুপ্রীম কোর্ট স্থাপনের সময়, এই নগরীকেই বৃটিশ ভারতের রাজধানী হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা প্রদান করেছিলেন এবং১৯১২ সাল পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিলো। ফলে, ইংরেজ-ভারতের রাজধানী কোলকাতাকে কেন্দ্র করে (১৯০৫ সালের বংগভংগ পর্যন্ত) ইংরেজদের সম্পূরক শক্তি হিসেবে বাঙালি বর্ণ হিন্দু মধ্যবিত্ত এবং বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের অবিশাস্য ধরনের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি সূচিত হয়েছিলো বলা যায়।

    এই প্রেক্ষিতে বাস্তব ইতিহাস হচ্ছে এই যে, ১৮১৭ খ্রীষটাব্দে কোলকাতায় সংস্কৃত কলেজ (পরবর্তীকলে ক্যালকাটা প্রেসিডেন্সী কলেজ) স্থাপিত হওয়ার পর ১৮৩৫ খ্রীষটাব্দ পর্যন্ত বেশকিছু বর্ণহিন্দু ছাত্র ইংরেজী শিক্ষা লাভ করলেও তখন সরকারী ভাষা ছিলো ফার্সী। অন্যদিকে ১৮৩৪ খ্রীষটাব্দের পূর্ব পর্যন্ত ক্যালকাটা মাদ্রাসাতে পূর্ণ কোর্সের ইংরেজী শিক্ষার কোন ব্যবস্থাই ছিলো না। এধরনের এক পরিস্থিতিতে যেসব বর্ণ হিন্দু ছাত্র বেশ কিছু বছর ধরে ইংরেজীর মাধ্যমে কলেজ শিক্ষা সম্পূর্ণ করেছে, তারা সরকারী চাকরি লাভের জন্য আবেদন-নিবেদন দাখিল করতে আরম্ভ করলো।

    ১৯৩৫ সালের ২রা ফেব্রুয়ারী ইংরেজী শিক্ষা সংক্রান্ত এক সরকারী বৈঠকে লর্ড মেকলে এ মর্মে বক্তব্য রাখলেন যে, “ভারতবর্ষে শাসকশ্রেণী কথা বলেন ইংরেজী ভাষাতে। উচ্চ শ্রেণীভুক্ত দেশীয়রাও সরকারী কাজকর্মে কথা বলেন এই ভাষাতেই। বাণিজ্যের ভাষা হিসেবে ইংরেজী সম্ভবতঃ প্রতিষ্ঠা লাভ করবে প্রাচ্যের সাতসমুদ্রেই।”

    এধরনের সুস্পষ্ট বক্তব্যের দরুন হিন্দু শিক্ষিত শ্রেণী খুবই উৎসাহিত বোধ করলেন এবং ধরেই নিলেন যে, এখন থেকে ইংরেজ শাসক শ্রেণীর মুখের ভাষা ইংরেজী ভারতীয় দেশীয় প্রজাদের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    এরপরেই ১৯৩৫ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারী কোলকাতার গণ্যমান্য বর্ণ হিন্দুরা অবিলম্বে ফার্সীর পরিবর্তে ইংরেজীকে সরকারী ভাষা করার দাবীতে কর্তৃপক্ষের কাছে এক গণদরখাস্ত দাখিল করে। এই দরখাস্তে রাধাকান্ত ব্যানার্জি, প্রশান্ত কুমার ঠাকুরসহ মোট ৬,৯৪৭ জনের দস্তখত ছিলো।

    লর্ড বেন্টিংক ১৯৩৫ সালের ৭ই মার্চ প্রকাশ্যে ঘোষণা করলেন যে, “শিক্ষার উদ্দেশ্যে যে অর্থ আলাদা করে রাখা হয়েছে, তার একমাত্র সার্থক নিয়োজন হবে ইংরেজী শিক্ষাতে।”

    এক কথায় বলতে গেলে, ১৮১৭ খ্রীষ্টাব্দে কোলকাতার হিন্দু কলেজ স্থাপনা থেকে বাঙালি বর্ণ হিন্দুদের মধ্যে ইংরেজী শিক্ষার যে প্রসার শুরু হয়েছিলো, ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিপ্লব চলাকালীন সময়ে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে তার মাত্রা বহুগুণে বৃদ্ধি পেলো। ১৮১৭ থেকে ১৮৫৭-এই চল্লিশ বছরে হিন্দু কলেজ, ডাফস্কুল ও কোলকাতার অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ইংরেজী বিদ্যার্জন যাঁরা সমাপ্ত করেন তাঁদের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১২ শতের মতো। এঁদের মধ্যে শতকরা ৯৫ জনই ছিলেন বাঙালি বর্ণ হিন্দু। গবেষক বিনয় ঘোষ লিখেছেন, “দেখা গেল এমনকি গোঁড়া ব্রাহ্মণরাও তাঁদের সন্তানদের নবদ্বীপের টোলের বদলে কলকাতার ইংরেজী শিক্ষালয়ে পাঠাতেই অধিকতর আগ্রহী।……. আসল কারণ হল বৃটিশ শাসকদের অধীনে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জনের তাগিদ।”

    এরপরের ইতিহাস সংক্ষেপে বলতে গেলে বলতে হয় যে, অতঃপর দলে দলে বাঙালি বৰ্ণ হিন্দুদের চাকরি লাভ এবং বাঙালি নিম্ন বর্ণের হিন্দু, বাঙালি মুসলমান এবং অন্যান্য প্রদেশের সকল সম্প্রদায়ের ললাটে শুধু বঞ্চনা।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅপারেশন আলেপ্পো – এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ
    Next Article ইসলাম বিতর্ক – এম. এ. খান
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.