Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    খুনির রং – অনীশ দেব

    লেখক এক পাতা গল্প539 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    দুই-এ পক্ষ – ইন্দ্রনীল সান্যাল

    মালব্যনগরের অ্যাসাইনমেন্ট চুকিয়ে দিল্লি ফেরামাত্র প্রতিরক্ষামন্ত্রী রঞ্জিত গগৈ প্রথমা লাহিড়ীকে তলব করলেন। ‘প্র্যাট, তোকে আবার কলকাতা যেতে হবে।’

    প্রথমা ভারত সরকারের এলিট ইনটেলিজেন্স উহং ‘কাইমেরা’র সদস্য। র, সিবিআই, আর্মি, নেভি বা এয়ারফোর্স কাইমেরার অস্তিত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়। শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক অপরাধ মোকাবিলার জন্যে রঞ্জিত নিজের হাতে কাইমেরা তৈরি করেছেন।

    ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি থেকে পাশ করার পর প্রথমার পোস্টিং হয় আর্মিতে। পড়াশোনায় তুখোড়, কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার হাতের তালুর মতো জানে, সার্টিফায়েড হ্যাকার, মার্শাল আর্টে পটু। রঞ্জিতের ব্যক্তিগত অনুরোধে সে আর্মি থেকে কাইমেরায় জয়েন করে।

    প্রথমা বলল, ‘এই তো বেঙ্গল থেকে ফিরলাম। আবার কেন?’

    ‘মাননীয় রাষ্ট্রপতি অরুণ চ্যাটার্জির কার্ডিয়োলজিস্টের নাম ডক্টর চঞ্চল দুবে। পানিহাটিতে ওঁর একটা হার্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট আছে। নাম ”চঞ্চল’স হসপিটাল ইন পানিহাটি” বা ”চিপ”। রাষ্ট্রপতির স্ত্রী একটা মানথলি ম্যাগাজিন এডিট করেন। তার নেক্সট ইস্যুর জন্যে চঞ্চলের ইন্টারভিউ চাইছেন।’

    প্রথমা বুঝতেও পারেনি, ইন্টারভিউ নেওয়ার মতো সোজা ব্যাপার থেকে কত জটিল ঘটনা ঘটতে চলেছে…

    দুই

    পেনেটিতে, গঙ্গার ধারে দশ বিঘে জমির ওপরে গড়ে উঠেছে চিপ। চারটে পাঁচতলা হাসপাতাল বিল্ডিং ছাড়াও রয়েছে ডাক্তারদের বাংলো, সিস্টার—স্টাফ—রোগীর বাড়ির লোকেদের থাকার জন্যে কোয়ার্টার। গঙ্গার শোভা, নীল আকাশ আর সবুজ মাঠ দেখলে হৃদয় আপনিই ভালো থাকে।

    খোদ চঞ্চলের হৃদয় এই মুহূর্তে ভালো নেই। হার্টব্লকের কারণে বুকে পেসমেকার বসানো হয়েছে। অনেক ফোনাফুনির পরে চঞ্চলের সাক্ষাৎকারের অনুমতি পেয়েছে প্রথমা।

    সে প্রথমবার ফোন করেছিল পেসমেকার বসানোর তিনদিন আগে। সাক্ষাৎকারের প্রস্তাব শুনে হাসপাতালের ‘অরএমও’ ডক্টর বিকাশ দত্ত ফোন কেটে দেন। দ্বিতীয়দিন ফোন ধরে চঞ্চলের বউ গায়ত্রী। সে ধৈর্য ধরে সবটা শোনে এবং অপারেশনের পরে সময় দেয়। আজ সেই কাঙ্ক্ষিত দিন।

    চঞ্চল শুয়ে রয়েছেন নিজের বাংলোর বেডরুমে। মাস্টারবেডের বদলে আইসিসিইউয়ের রেলিং লাগানো বেড। বেডের মাথার দিক পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রিতে ভাঁজ করা। পেসমেকার বসানোর পরে চঞ্চল সম্পূর্ণ সুস্থ। তবে বেডরেস্টে রয়েছেন। বেডের পাশে রাখা হয়েছে অক্সিজেন সিলিন্ডার, আইভি স্যালাইনের পাউচ এবং স্ট্যান্ড, কার্ডিয়াক মনিটর।

    ‘তোমার নাম প্রথমা, আমার পদবি দুবে। তুমি ”এক” আর আমি ”দুই”। কী ইন্টারেস্টিং ব্যাপার বলো তো!’ প্রাথমিক আলাপের পরে বললেন চঞ্চল।

    প্রথমা মৃদু হাসল। বেডের ডানপাশে বসে থাকা বছর তেরোর কিশোরের মাথায় হাত বুলিয়ে চঞ্চল বললেন, ‘চিপ আমার প্রথম সন্তান। আর এ আমার দ্বিতীয় সন্তান। শাশ্বত।’

    শাশ্বত টুকটুকে ফরসা। ভাসাভাসা চোখ, গালে সদ্য ফোটা দাড়ির আভাস, ল্যাকপ্যাকে চেহারা। বয়ঃসন্ধির চৌকাঠে পা রেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছে। অ্যান্টেনাওয়ালা, রেডিয়ো হার্ডওয়্যার লাগানো ঢাউস ল্যাপটপে সে সোশাল নেটওয়ার্কিং করছে। কি—বোর্ডের ওপরে হাত চলছে বিদ্যুতের গতিতে।

    বেডের বাঁপাশে রাখা চেয়ারে বসে স্মার্টফোনের রেকর্ডার অন করে প্রথমা। স্মার্টফোন আর ইয়ারপ্লাগ বেডের বাঁদিকে রেখে সাক্ষাৎকার শুরু করে। ‘রাষ্ট্রপতির কার্ডিয়োলজিস্ট মানে এই মুহূর্তে ভারতবর্ষের একনম্বর কার্ডিয়োলজিস্ট। এই সাফল্যের রহস্য কী?’

    ‘জীবনে একমিনিট সময়ও নষ্ট করিনি। জীবনের সব পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়েছি।’ ক্লান্ত গলায় বললেন চঞ্চল।

    সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে গলায় বিষণ্ণতার সুর। সুযোগ বুঝে দ্বিতীয় প্রশ্নটি করে প্রথমা ‘কোনও রিগ্রেট আছে নাকি?’

    ‘আছে। পেশাদার জগতে প্রথম হতে গিয়ে পরিবারকে সময় দিতে পারিনি। এটাই একমাত্র রিগ্রেট।’

    ‘আপনার স্ত্রীও কি ডাক্তার?’

    ‘গায়ত্রী হোমমেকার হিসাবেই হ্যাপি।’

    ‘ছেলের কোন ক্লাস?’

    ‘শাশ্বতর এখন ক্লাস সেভেন। দিনরাত ভিডিয়ো গেম খেলে আর সোশাল নেটওয়ার্কিং করে। হাফইয়ার্লিতে গাডডু খেয়েছে। আমি ওকে বলি ভিডিয়ট। ভিডিয়ো গেমার আর ইডিয়টের কম্বিনেশান।’

    মন্তব্য শুনে বাবার দিকে রাগি চোখে তাকায় শাশ্বত। চঞ্চল বলেন, ‘ভারচুয়াল ধাষ্টামো বন্ধ করে পড়াশোনায় মন দে। আমাদের ফ্যামিলি তিন জেনারেশানের কার্ডিয়োলজিস্ট। তোকেও কার্ডিয়োলজিস্ট হতে হবে। সামনের মাসেই মেডিক্যাল এন্ট্রান্সের প্রিপারেটরি কোর্সে ভর্তি করে দেব।’

    কি—বোর্ডের উপরে চলতে থাকা শাশ্বতর হাত মুহূর্তের জন্যে থমকায়। সে বলে, ‘দুটো কথা মনে রাখো! এক নম্বর, ভারচুয়াল ইজ রিয়্যাল। নাম্বার টু, আমি বড় হয়ে কার্ডিয়োলজিস্ট হব না। সফটওয়্যার প্রোগ্রামার হব।’

    ‘দু—দুবার সাইকায়াট্রিক কাউন্সেলিং করিয়েও কোনো লাভ হল না।’ ছেলের চুল ঘেঁটে দিলেন স্নেহময় বাবা, ‘ভারচুয়ালকে কেউ রিয়্যাল বলে? অনুভূতিহীন জোম্বি তৈরি হচ্ছে একটা!’

    বাবা—ছেলের কচকচি থেকে বেরোতে পরের প্রশ্নে ঢুকে পড়ে প্রথমা। ‘এত বড় হাসপাতাল সামলান কী করে?’

    ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেশন আমি সামলাই না। তার জন্যে মেডিক্যাল সুপারিনটেন্ডেন্ট ডক্টরলক্ষ্মণ মিশ্র আছে। সে আমার পেসমেকার বসিয়েছে। আমার থেকে বছর পাঁচেকের জুনিয়ার।’

    চঞ্চলের কথার মধ্যে ঘরে ঢুকল লক্ষ্মণ। ছ’ফুট লম্বা, শ্যামলা গায়ের রং, একমাথার কোঁকড়া চুল, মোটা গোঁফ। অ্যাপ্রনের পকেট থেকে স্টেথোস্কোপ বার করে প্রথমাকে বলল, ‘আপনার ইন্টারভিউয়ের কথা গায়ত্রী এক্ষুনি আমাকে বলল। আগে জানলে অ্যালাও করতাম না। আপনাকে আর সময় দেওয়া যাবে না। চঞ্চল নিডস অ্যাবসলিউট রেস্ট।’

    প্রথমা বলল, ‘আমার আর পাঁচ মিনিট লাগবে…’

    ‘বাই দ্য ওয়ে, আপনি স্মার্টফোন আর ইয়ারপ্লাগ বেডে রেখেছেন কেন? ওগুলো সরান।’

    ‘সরি!’ বিছানা থেকে যন্ত্র সরিয়ে প্রথমা ভাবে, শাশ্বতর কম্পিউটার বিছানায় থাকলে অসুবিধে নেই। আমার স্মার্টফোন থাকলেই দোষ! যত্তসব!

    পালস দেখে, প্রেশার মেপে লক্ষ্মণ বলল, ‘সব প্যারামিটার স্টেবল আছে। তোমার কিছু লাগবে?’

    ‘চাঁদুকে পাঠিয়ে দাও। ওষুধ খাব।’

    ‘আমি এখানেই আছি স্যার।’ প্রথমাকে চমকে দিয়ে বেডের পিছন থেকে উঠে দাঁড়াল বছর পঁচিশের এক যুবক। সে মেঝেয় চাদর পেতে শুয়েছিল। তার উপস্থিতি টের পাওয়া গেল।

    চঞ্চল প্রথমাকে বললেন, ‘চাঁদু আমার ড্রাইভার কাম পারসোনাল সেক্রেটারি। টু—ইন—ওয়ান। চাঁদু, ওষুধ দে।’

    লক্ষ্মণ বেরিয়ে যাওয়ার আগে বলল, ‘তোমার ইন্টারভিউ শেষ হলে গায়ত্রী খাবার নিয়ে আসবে।’

    ‘খাবার না পিণ্ডি! যত্তসব ন্যাকামো!’ স্বগতোক্তি করেন চঞ্চল।

    বউয়ের উপরে এত রাগ কেন। ঝগড়া হয়েছে নাকি? ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক না গলিয়ে প্রথমা বলল, ‘কবে থেকে পুরোদমে প্র্যাকটিস শুরু করছেন?’

    ‘গতকাল সন্ধেবেলা আইসিসিইউ থেকে ফিরলাম। এখন দু’দিন রেস্ট।’ বুকের বাঁদিকে হাত বোলাচ্ছেন চঞ্চল।

    ‘এই নিন ওষুধ’, চঞ্চলের হাতে ট্যাবলেট আর জলের গেলাস তুলে দিয়েছে চাঁদু। ট্যাবলেট মুখে ফেলে একঢোক জল খেয়ে গেলাস ফেরত দেয় চঞ্চল। চাঁদু জিজ্ঞাসা করে, ‘দেবীমাতার ক্যাপসুলটা দেব?’

    ‘ওর ক্যাপসুল আমি খাব না!’ ঘাড় নাড়েন চঞ্চল।

    দেবীমাতার নাম শুনে প্রথমা ভাবে, কার্ডিয়োলজিস্টেরও গুরুমা আছে? তার চিন্তার মধ্যে চঞ্চল বুকের বাঁদিকে মালিশ করতে করতে বলেন, ‘চাঁদু…লক্ষ্মণকে ডাক…’

    ‘কী হল?’ প্রথমা উৎকণ্ঠিত। চঞ্চল কুলকুল করে ঘামছেন। মুখ ফ্যাকাশে, শ্বাস চলছে দ্রুত গতিতে।

    চাঁদু চিৎকার করে বলল, ‘স্যারের শরীর খারাপ লাগছে!’ চিৎকার শুনে দৌড়ে ঘরে ঢুকল লক্ষ্মণ আর গায়ত্রী। বছর চল্লিশের গায়ত্রীকে মা—মা দেখতে। টুকটুকে ফরসা, বেঁটেখাটো, গিন্নিবান্নি টাইপ।

    গায়ত্রী আর লক্ষ্মণকে দেখে শুকনো জিভ দিয়ে ঠোঁট চেটে চঞ্চল বললেন, ‘স—ব শে—ষ—হ—য়ে—গে—ল…’

    পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রিতে হেলিয়ে রাখা বেড মেঝের সমান্তরাল করে দেয় লক্ষ্মণ। চঞ্চলের নাকে অক্সিজেনের নল গোঁজে। হাতে স্যালাইনের সুচ ঢোকায়। প্রথমা আর শাশ্বতকে ধাক্কা মেরে বেডের পাশ থেকে সরায়, ল্যাপটপ বেড থেকে সরিয়ে পাশের টেবিলে রাখে, কার্ডিয়াক মনিটরের তার চঞ্চলের শরীরে জুড়ে দেয়। চাঁদু মোবাইল ফোনে অ্যাম্বুলেন্স ডাকছে।

    মনিটর হঠাৎ জ্যান্ত হয়ে উঠে সবুজ জীবনরেখা দেখাতে শুরু করেছে। পিঁকপিঁক করে হৃদয়ের শব্দ শোনাচ্ছে।

    মনিটারের দিকে তাকিয়ে প্রথমা দেখল ঢেউয়ের মতো জীবনরেখা একলহমায় স্ট্রেটলাইন হয়ে গেল। শিশুর হাতে আঁকা মাটি আর আকাশের মধ্যেকার দিগন্তরেখার মতো সোজা।

    অ্যাম্বুলেন্সের হুটারের শব্দ শোনা যাচ্ছে। গায়ত্রী স্বামীর নিস্পন্দ বুকের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।

    তিন

    ‘দেখুন ম্যাডাম, ব্যাপারটা সিরিয়াস,’ প্রথমার দিকে তাকিয়ে বলল পানিহাটি থানার অফিসার ইনচার্জ পুলক দাস, ‘ডক্টর চঞ্চল দুবের আনন্যাচরাল ডেথ নিয়ে ওঁর স্ত্রী গায়ত্রী দুবে এবং ওঁর কোলিগ ডাক্তার লক্ষ্মণ মিশ্র পানিহাটি থানায় আলাদা দুটো এফআইআর করেছে। গায়ত্রীর অভিযোগ দেবীমাতার বিরুদ্ধে। লক্ষ্মণের অভিযোগ আপনার বিরুদ্ধে। দুটি এফআইআর—এই ধারা তিনশো দুই দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ”কালপেবল হোমিসাইড অ্যামাউন্টিং টু মার্ডার।” দেবীমাতা বা আপনাকে আমি আপাতত জেরা করার জন্যে থানায় নিয়ে যাচ্ছি না। কিন্তু আপনি আমাকে হেল্প করুন।’

    ‘আমি আপনাকে কীভাবে হেল্প করব?’ নিরীহ মুখে জানতে চায় প্রথমা।

    ‘দেখুন ম্যাডাম, আমার কাছে হোম ডিপার্টমেন্ট থেকে অলরেডি খবর চলে এসেছে যে আপনি কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী। কোন ডিপার্টমেন্ট, সেটা জানার অধিকার নাকি আমার নেই। প্লাস, আমার উপরে চাপ আছে, যেন অ্যাজ আর্লি অ্যাজ পসিবল আপনাকে ছেড়ে দিই। কিন্তু কেসটা র্যাপ আপ না করে কী করে ছাড়ি বলুন!’

    প্রথমা মাথা নিচু করে ভাবছে। নিজেকে নিয়ে নয়। চঞ্চলকে নিয়ে। অ্যাম্বুলেন্সে চাপিয়ে চিপ—এর আইসিসিইউতে নিয়ে গিয়েও তাঁকে বাঁচানো যায়নি। লক্ষ্মণ ডেথ ডিক্লেয়ার করেছে সকাল এগারোটায়। এখন রাত আটটা। কান্নাকাটি, চিৎকার, থানায় ফোন, পুলিশ আসা, পোস্ট—মর্টেমের জন্যে বডি বারাসাত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, ময়না তদন্তের রিপোর্ট টেলিফোন মারফত আনঅফিশিয়ালি জানতে পারা—এইসব করতে করতে সন্ধে সাতটা বেজেছে। চঞ্চলের সেলাই করা দেহ এখন চিপ—এর রিসেপশানে রাখা রয়েছে। আগামিকাল সৎকার হবে। প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া অনেকক্ষণ এসে গেছে। রাষ্ট্রপতির কার্ডিয়োলজিস্টের মৃত্যু মানে ধুন্ধুমার মিডিয়া সার্কাস।

    প্রথমা আর পুলক বসে রয়েছে চঞ্চলের বাংলোর ড্রয়িং রুমে। কপালে হাত দিয়ে প্রথমা বলল, ‘হার্টের রুগির মৃত্যুকে ”আনন্যাচরাল ডেথ” কেন বলা হচ্ছে?’

    ‘দু—দুটো এফআইআর হয়ে গেছে। মিডিয়ার চাপ আছে। আমাকে প্রসিড করতেই হবে,’ শ্রাগ করে পুলক, ‘পোস্ট—মর্টেম যিনি করেছেন তিনি ফোনে জানিয়েছেন যে পেসমেকার বন্ধ হয়ে হার্টব্লকের ফলে মৃত্যু। লিখিত রিপোর্ট কাল দেবেন। ভিসেরার কেমিক্যাল অ্যানালিসিস রিপোর্টের প্রাইমারি ফাইন্ডিং আর কিছুক্ষণের মধ্যে ফোনে জানাবেন।’

    প্রথমা বলল, ‘সময় নষ্ট করে লাভ নেই। গায়ত্রীকে ডাকুন। অভিযোগকারিণীকে দিয়ে জেরা শুরু করা যাক।’

    চার

    ড্রয়িং রুমে ঢুকে গায়ত্রী বলল, ‘ইনস্পেক্টর দাস, আমাকে ডেকেছেন?’

    গায়ত্রী সিঁদুর মুছে ফেললেও সিঁথির লাল আভা যায়নি। পরনে নীল, মেরুনপেড়ে শাড়ি। কান্নাকাটির ফলে চোখ জবাফুলের মতো লাল। পুলক বলল, ‘আপনি বসুন।’

    ‘আপনি কেন মনে করছেন যে আপনার স্বামীকে খুন করা হয়েছে?’ সরাসরি গায়ত্রীকে প্রশ্ন করে প্রথমা।

    আঁচলের খুঁট আঙুলের ফাঁকে নিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে গায়ত্রী বলে, ‘দেবীমাতার নাম শুনেছেন?’

    ‘বিখ্যাত নিউ—এজ গুরুমা,’ বলে প্রথমা, ‘যোগব্যায়াম, প্রাণিক হিলিং, রিফ্লেক্সোলজি, বিপাসনা, নেচারোপ্যাথির খিচুড়ি বানিয়ে ”আর্ট অফ লাইফ” নামে বিক্রি করে। এক মাসের সেশানের জন্যে কোটিপতিরা লাইন দেয়। এলাহাবাদে বিশাল আশ্রম, অন্যান্য রাজ্যেও হেলথ হাব আছে। আছে নিজস্ব এফএম এবং টিভি চ্যানেল।’

    ‘গত ছ’মাস ধরে দেবী আমার বরের মাথা খাচ্ছে।’ নিচু গলায় বলে গায়ত্রী।

    ‘দেবী কেন চঞ্চলের মাথা খাবেন? কীভাবেই বা খাবেন?’

    ‘চঞ্চল মোটা হয়ে যাচ্ছিল। পেশেন্ট দেখাকালীন দুবার মাথা ঘুরে পড়ে যায়। তখন ও দেবীকে চিপ—এ আমন্ত্রণ জানায়, ”আর্ট অফ লাইফ” সেশান করার জন্যে। দেবীকে পাশের বাংলোয় থাকতে দেয়। অন্য হার্ট পেশেন্টের সঙ্গে দেবীর সেশানে যোগ দেয়। একমাস সেশান করার পরে চঞ্চল অনেকটা রোগা হয়। মাথা ঘোরাটা কমেনি। কেন না ওটা হার্ট ব্লকের জন্যে হচ্ছিল। আলটিমেটলি পেসমেকার বসাতেই হল। মাঝখান থেকে আমার সববোনাশ হয়ে গেল।’

    ‘সববোনাশ বলতে?’

    ‘দেবীমাতা ওঁকে এমন বশ করে ফেলেছে যে ওর ”আর্ট অফ লাইফ”—এর জন্য প্রচুর টাকা তো চঞ্চল দিয়েছেই, উপরন্তু সম্পত্তির অর্ধেক দেবীমাতার বুজরুকি আর্টের নামে উইল করে দিয়ে গেছে। এতে নাকি অনেক মানুষের উপকার হবে! ছেলেটার নাম প্রাণে ধরে কাটতে পারেনি। চঞ্চল মারা যাওয়ার পরে চিপ—এর মালিক এখন দেবী। আমি সন্দেহ করব না এটা মার্ডার?’

    কফিতে চুমুক দিয়ে পুলক বলল, ‘কিন্তু দেবী তো প্লেস অফ অকারেন্সে ছিলেনই না!’

    ‘ঘটনাস্থলে না থেকেও মার্ডার করা যায়, মিস্টার দাস। আজকাল নানা সাসটেইনড রিলিজ ক্যাপসুল বেরিয়েছে। খাওয়ার অনেক পরে অ্যাকশন শুরু হয়। চঞ্চল নিয়মিত দেবীর দেওয়া হারবাল ক্যাপসুল খেত।’

    ‘ইন্টারেস্টিং!’ প্রথমা গায়ত্রীকে বলে, ‘আপনি ডক্টর লক্ষ্মণ মিশ্রকে পাঠিয়ে দিন। আর দেবীকে বলে রাখুন, আমরা ওঁর সঙ্গে কথা বলব।’

    পাঁচ

    ‘দেখুন, আমার হাতে একদম সময় নেই। চিপ—এর ম্যানেজমেন্ট সামলানো একটা হেডেক। তার কর্ণধারের অন্ত্যেষ্টি সামলানো আর একটা। এর মধ্যে আমাদের আর জ্বালাবেন না।’ ড্রয়িং রুমে ঢুকে সোফায় বসে পুলকের দিকে তাকিয়ে বলল লক্ষ্মণ।

    ‘চঞ্চল তো প্রাক্তন কর্ণধার হয়ে গেলেন। বর্তমান কর্ণধার কে? আপনি?’ টুক করে প্রশ্ন ছোড়ে পুলক।

    ‘ট্যালেন্ট আর লেবারকে প্রায়রিটি দিলে সেটাই হওয়া উচিত। কিন্তু দেশটার নাম ভারতবর্ষ। এখানে ভড়ং আর বুজরুকির জয় হয়। আপনি দেবীমাতার নাম শুনেছেন?’

    ‘না শুনে উপায় আছে? টিভি খুললেই তাঁর ছবি।’

    ‘একদিকে মডার্ন মেডিসিন। অন্যদিকে ইন্ডিয়ান মিস্টিসিজম। এই দুই পক্ষের গাঁটছড়া বেঁধে দেবী চিপ—কে ইন্টারন্যাশনাল ওয়েলনেস হাবে বদলে দিতে চায়। যেখানে মেডিসিন বা সার্জারি ছাড়াই হৃদযন্ত্র ভালো থাকবে। দেবীর মোটো হল, ”বাই দ্য বাইপাস।”

    ‘দেবী চাইলেই তো আর বদল ঘটবে না! তার জন্যে চঞ্চলের অনুমতি প্রয়োজন।’

    ‘চঞ্চল উইল করে চিপ—এর অর্ধেক মালিকানা দেবীর নামে করে দিয়েছে। আমি এখন ওই ফ্রডটার বেতনভুক কর্মচারী! কী হিউমিলিয়েটিং!’

    ‘বাকি অর্ধেক মালিকানা তো শাশ্বতর নামে। অত হিউমিলিয়েশানের কী আছে?’

    ‘শত এখনও জুনিয়র। সম্পত্তির অর্ধেক ওর নামে থাকলেও ওর লিগাল গার্জেন সেটা হ্যান্ডল করবে। চঞ্চল কাকে লিগাল গার্জেন করে গেছে কে জানে!’

    প্রথমা স্যান্ডউইচ খেতে ব্যস্ত ছিল। এতক্ষণে মুখ খুলল। ‘চঞ্চলের পেসমেকার বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ কী হতে পারে?’

    লক্ষ্মণ প্রথমার দিকে তাকিয়ে আঙুল নেড়ে বলে, ‘আপনি চঞ্চলের বেডে স্মার্টফোন আর ইয়ারপ্লাগ রেখেছিলেন। আপনি কি জানেন যে এ থেকে পেসমেকার ড্যামেজ হতে পারে?’

    ‘তাই আপনি আমার নামে এফআইআর করেছেন?’

    ‘পেসমেকারের সাইজ বিস্কুটের মতো।’ রাগি গলায় বলে লক্ষ্মণ, ‘বুকের ডানদিকে কলার বোনের তলায়, চামড়ার নীচে বসানো থাকে। পেসমেকার থেকে একটা তার ধমনি দিয়ে চলে যায় দক্ষিণ নিলয় ও দক্ষিণ অলিন্দে। পেসমেকারে ইমপালস তৈরি হলে, তারবাহিত হয়ে সেই ইমপালস হৃদয়ে পৌঁছে তাকে ঠিক ছন্দে নাচায়। স্মার্টফোন সরাসরি পেসমেকারের ওপরে কোনো এফেক্ট করে না। কিন্তু ইয়ারপ্লাগের ম্যাগনেট পেসমেকারের ইমপালস জেনারেশানে ব্যাগড়া দিয়েছে। সেটাই চঞ্চলের মৃত্যুর কারণ।’

    প্রথমার মনে সংশয় বাসা বাঁধছে। তার জন্যে যদি চঞ্চল মারা গিয়ে থাকেন, তাহলে সে নিজেকে কখনও ক্ষমা করতে পারবে না।

    পুলক নিচু গলায় লক্ষ্মণকে বলল, ‘আপনি যান। দেবীকে পাঠিয়ে দিন।’

    ছয়

    ‘নমস্কার। আমাকে এখানে ডাকা হয়েছে?’ ড্রয়িং রুমে ঢুকে সবার দিকে তাকিয়ে হাত জড়ো করল দেবীমাতা। পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি লম্বা। জিনস এবং নামাবলির কুর্তি পরা দেবীকে দেখে পুলক উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘বসুন।’

    সোফায় বসল দেবী। প্রথমা তার হাতে এক কাপ কফি তুলে দিয়ে বলল, ‘গায়ত্রী অভিযোগ করেছেন যে আপনি সাসটেইনড রিলিজ ক্যাপসুল খাইয়ে চঞ্চলকে হত্যা করেছেন।’

    ‘ভিসেরার কেমিক্যাল অ্যানালিসিসের রিপোর্ট এলেই সত্যিটা বোঝা যাবে।’ কফিতে চুমুক দেয় দেবী।

    ‘চঞ্চলের শেষ উইল অনুযায়ী ওঁর অবর্তমানে, যাবতীয় সম্পত্তির অর্ধেক মালিক আপনি। গায়ত্রীর অভিযোগ, এটাই আপনার খুন করার মোটিভ।’

    ‘অর্থ নিয়ে কথা বলা আমার জীবনদর্শনের বিরোধী।’

    এরমধ্যে পুলকের ফোন এসেছে। সে মোবাইলে নিচু গলায় কথা বলছে। ফোন কেটে বলল, ‘সেন্ট্রাল ফরেনসিক রিসার্চ ল্যাবরেটরি থেকে জানাল, ভিসেরার কেমিক্যাল অ্যানালিসিস করে কোনো পয়জন পাওয়া যায়নি। চাঁদুর দেওয়া যে দুটো ওষুধ উনি খেয়েছিলেন, সেগুলো ব্লাড প্রেসার কমানোর ওষুধ। রক্তে তাদের মাত্রা স্বাভাবিক।’

    ‘গায়ত্রীর সাসটেইনড রিলিজ পয়জন ক্যাপসুলের তত্ত্ব তা হলে বাতিল!’ তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে দেবী, ‘আমি এবার উঠি?’

    প্রথমা বলে, ‘চঞ্চল চাঁদুকে বলছিলেন যে আপনার হারবাল ক্যাপসুল উনি আর খাবেন না।’

    দেবীমাতা একপরদা গলা চড়িয়ে বলল, ‘পেসিং—এর দুদিন আগে পর্যন্ত চঞ্চল হারবাল ক্যাপসুল খেয়েছে। পেসিং—এর পরে খেয়েছে কি না জানি না। আইসিসিইউতে আমি যাইনি।’

    ‘আপনি এবার আসতে পারেন।’ নমস্কার করে প্রথমা। তাকে পাত্তা না দিয়ে পুলকের দিকে তাকিয়ে দেবী বলে, ‘লক্ষ্মণের মুখে শুনলাম যে এই জার্নালিস্ট মেয়েটি চঞ্চলের বেডে স্মার্টফোন এবং ইয়ারপ্লাগ রেখেছিল। আমার ‘হেলদি হার্ট উইদাউট ডক্টর’ বইতে পরিষ্কার বলা আছে যে পেসমেকারের তিন সেন্টিমিটারের মধ্যে ম্যাগনেট থাকলে সেটা ইমপালস জেনারেশানে প্রবলেম করে। অন্যদের জেরা করা বন্ধ করে আপনি আগে একে জেরা করুন। চঞ্চলের মৃত্যুর কারণ খুঁজে পাবেন।’

    পুলক বলল, ‘আপনি চাঁদুকে পাঠিয়ে দিন।’

    সাত

    দেবী ঘর থেকে বেরোতেই প্রথমা হঠাৎ চনমনে। আগেকার সেই মনমরা ভাব আর নেই। একটুকরো কাগজে খসখস করে একলাইন লিখে পুলকের হাতে ধরিয়েছে। চাঁদু ঘরে ঢুকতেই তাকে কড়া গলায় বলল, ‘তুমি সারাদিন স্যারের সঙ্গে থাকতে?’

    ‘হ্যাঁ।’

    ‘চঞ্চল যে সেকেন্ড উইল করেছিলেন, সেটা তুমি জানতে?’

    চাঁদু মুখ খোলার আগে পুলক শাশ্বতকে বলল, ‘বাথরুমটা কোথায়?’

    ‘আমি দেখিয়ে দিচ্ছি,’ বলল চাঁদু।

    ‘আমার কথার উত্তর না দিয়ে পালানোর চেষ্টা কোরো না!’ চাঁদুকে ধমক দেয় প্রথমা। শাশ্বত ব্যাজার মুখে পুলককে নিয়ে ড্রয়িং রুম থেকে বেরোয়।

    শাশ্বতর ল্যাপটপের সামনে বসে প্রথমা বলল, ‘আমি চিরকুটে বড়বাবুকে লিখেছিলাম যে উনি যেন শাশ্বতকে নিয়ে কিছুক্ষণের জন্যে বাইরে যান। তুমি বড়বাবুকে বাথরুম দেখাতে গিয়ে কেসটা ঘেঁটে দিচ্ছিলে। আমি যে প্রশ্নটা করেছি, তার উত্তর দাও।’

    ‘হ্যাঁ,’ মাথা নিচু করে বলে চাঁদু।

    ‘তুমি দুটো উইলের কথাই জানতে?’

    ‘দুটো নয়,’ এদিক—ওদিক দেখে নিচু গলায় চাঁদু বলে, ‘উইল আসলে তিনটে।’

    ‘ভুল বকছ কেন?’ ল্যাপটপের ওয়েব হিস্ট্রি ঘাঁটছে প্রথমা।

    ‘ভুল বকছি না। তিনটে উইলেরই একজন সাক্ষী আমি, আর অন্যজন আরএমও বিকাশ দত্ত। উনি স্যারের ছোটবেলার বন্ধু।’

    ‘লাস্ট উইল, মানে তিন নম্বর উইলটা কবে হয়েছে?’

    ‘গতকাল রাতে। আইসিসিইউ থেকে বাড়ি আসার আগে স্যার এই উইলটা করেছেন।’

    ‘এই উইলে উত্তরাধিকারী কে?’

    ‘প্রথম আর তিন নম্বর উইলে কোনো তফাত নেই। স্যার মরে যাওয়ার পরে সব সম্পত্তির মালিক এখন আবার গিন্নিমা আর খোকাবাবু।’

    ওয়েবহিস্ট্রি ঘাঁটতে ঘাঁটতে প্রথমা বলল, ‘কার্ডিয়োট্রনিক্স।’

    তাকে অবাক করে দিয়ে চাঁদু বলল, ‘ঠিক বলেছেন।’

    ‘কী ঠিক বলেছি?’ প্রথমা জানতে চায়।

    ‘স্যারের বুকে কার্ডিয়োট্রনিক্স কোম্পানির পেসমেকার বসানো হয়েছে। ওটাই এখন ওয়ার্ল্ডের বেস্ট।’

    ‘কার্ডিয়োলজিস্টের সঙ্গে থেকে তুমিও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হয়ে গেলে নাকি?’ প্রাণখোলা হাসে প্রথমা।

    শাশ্বত আর পুলক ড্রয়িংরুমে ফেরত এসেছে। প্রথমাকে ল্যাপটপ ঘাঁটতে দেখে শাশ্বত গলা তুলে বলল, ‘ল্যাপটপ পারসোনাল জিনিস। অন্যেরটা ইউজ করা উচিত নয়।’

    ‘বিপদের সময় অন্য লোকের জিনিস ইউজ করতে হয়।’ কি—বোর্ডে প্রথমার আঙুল চলছে। তাকে ঠেলে সরানোর চেষ্টা করছে শাশ্বত। বলছে, ‘আপনার কেন বিপদ হবে? বিপদ তো দেবীমাতার।’

    ‘কেন?’ ল্যাপটপ পুলকের হাতে তুলে দিয়ে বলে প্রথমা।

    ‘আমি ওই হারবাল ক্যাপসুল কেমিক্যাল অ্যানালিসিসের জন্যে মুম্বাইয়ের ফার্মাকোলজি ল্যাবে পাঠিয়েছিলাম। রিপোর্টে বলছে, হারবাল ক্যাপসুল হাইডোজ স্টেরয়েডে ভরপুর। রিপোর্ট দেখার পর বাবা আর ওই মেয়েটার মধ্যে বিরাট বাওয়াল হয়!’

    চাঁদু বলে, ‘তারপর থেকেই স্যার আর দিদিমণির দেওয়া ওষুধ খাননি। গতকাল রাতের উইলটাও ওই কারণে করেন।’

    ‘নতুন উইলের কথা কে কে জানে?’

    ‘স্যার, উকিলবাবু, ডাক্তার বিকাশ দত্ত, খোকাবাবু আর আমি। আমি কিন্তু কাউকে বলিনি।’ কাঁচুমাচু মুখে বলে চাঁদু।

    ‘আমিও বলিনি,’ ভাঙা গলায় বলে শাশ্বত।

    ‘তুমি যে কাউকে বলোনি এটা আমি জানি,’ শাশ্বতর মাথায় হাত বুলিয়ে প্রথমা বলল, ‘চাঁদু, সবাইকে একবার স্যারের বেডরুমে ডাকো। ফাইনাল কথাবার্তা বলে আমি উঠব।’

    আট

    ‘বেশি সময় নেব না। সংক্ষেপে বলি।’ চঞ্চলের বেডের চারপাশের চেয়ারে বসে থাকা গায়ত্রী, লক্ষ্মণ আর দেবীর দিকে তাকিয়ে বলে প্রথমা। চাঁদু বেডের পিছনে, মেঝেয় বসেছে। শাশ্বত পুলকের পাশে বসে ল্যাপটপ নেওয়ার জন্যে ছোঁকছোঁক করছে। পুলক ল্যাপটপ হাতছাড়া করেনি।

    ‘চঞ্চল মারা গেলে কার লাভ?’ সবার দিকে তাকিয়ে জানতে চায় প্রথমা। ‘গায়ত্রী এবং লক্ষ্মণ মনে করছে দেবীর লাভ। কেন—না চঞ্চলের যাবতীয় সম্পত্তির মালকিন এখন দেবী।’

    ‘টাকাপয়সা নিয়ে কথা বলা আমার অপছন্দ। তাও বলি, দেবীমাতা ট্রাস্টের টাকার অভাব নেই।’ নরম গলায় বলে দেবী।

    ‘আপনার হারবাল ক্যাপসুলে স্টেরয়েড মেশানো থাকে। এই তথ্য ফাঁস হয়ে গেলে ট্রাস্টের উপরে মানুষের ট্রাস্ট চলে যাবে। চলে যাবে আপনার কোটি টাকার সম্পত্তি। মিডিয়ার কাছে মুখ খোলার আগে চঞ্চলকে সরিয়ে দেওয়া খুন করার পক্ষে বিরাট বড় মোটিভ।’

    ‘শাট আপ! বেশি কথা বললে তোমার জিভ ছিঁড়ে নেব!’ হুঙ্কার ছাড়ে দেবী।

    পুলক চেঁচায়, ‘বেশি কথা বললে এক্ষুনি আপনার হাতে হাতকড়া পরিয়ে মিডিয়ার সামনে দিয়ে প্রিজন ভ্যানে তুলব।’ দেবী চুপ করে যায়।

    প্রথমা বলে, ‘অন্যদের মোটিভে আসা যাক। দেবী মনে করে, সম্পত্তি হাতছাড়া হওয়ার ক্ষোভে গায়ত্রী ওঁকে খুন করেছেন। তাছাড়া চঞ্চল মরে যাওয়ায় লক্ষ্মণেরও তো লাভ হল।’

    ‘আমার আবার কী লাভ?’ হাতা গুটিয়ে সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে লক্ষণ। ‘চিপ—এর সুপারইনটেন্ডেট হিসেবে আর কত দিন থাকবেন? রাষ্ট্রপতির হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হতে গেলে যদি কারও হৃদয় থামিয়ে দিতে হয়, তবে তাই সই! এর থেকে বড় মোটিভ আর হয় না।’

    লক্ষ্মণ বলে, ‘কিন্তু চঞ্চল তো সবকিছু দেবীমাতার নামেই করে গেছে। আমি কেন চঞ্চলকে মারতে যাব? তিন নম্বর উইলের কথা তো আমি জানিই না!’

    মৃদু হাসে প্রথমা, ‘মোটিভ ভুলে গিয়ে এবার আমরা কজ অব ডেথে ঢুকি। চঞ্চলের মৃত্যু স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক? অস্বাভাবিক হলে এটা কি হত্যা?’

    ‘দিস ইজ মার্ডার! অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে আপনাকে পালাতে দেব না!’ গর্জন করে লক্ষ্মণ। পুলককে বলে, ‘আমি আপনাকে বলেছিলাম যে ইয়ারপ্লাগের ম্যাগনেট থেকে পেসমেকার ডিঅ্যাকটিভেটেড হয়েছে। আপনি এই জার্নালিস্টকে অ্যারেস্ট করুন!’

    ‘আপনি ভুল বলেছিলেন!’ পুলক কিছু বলার আগেই প্রথমার গলা বেডরুম জুড়ে চাবুকের মতো আছড়ে পড়ল, ‘কেন, সেটা জানার জন্যে আপনাকে চঞ্চলের বেডে একবার শুতে হবে। চাঁদু, স্যারের বেডটা পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রি করে দাও।’

    চাঁদু বেডের হেডএন্ড তুলে দিল। লক্ষ্মণ লালচোখে প্রথমাকে মেপে নিয়ে বিছানায় আধশোওয়া হল। প্রথমা বলল, ‘ধরে নিন, আপনি চঞ্চল। আমি জার্নালিস্ট। আমার পুরনো জায়গায় বসছি। স্মার্টফোন আর ইয়ারপ্লাগ পুরনো জায়গায় রাখছি।’

    বেডের বাঁ পাশের চেয়ারে বসে প্রথমা লক্ষ্মণকে বলল, ‘পেসমেকার বসানো থাকে বুকের ডানদিকে। ইয়ারপ্লাগের ম্যাগনেট কাজ করে তিন সেন্টিমিটারের মধ্যে। আপনার বাঁদিকে থাকা ইয়ারপ্লাগ এখন আপনার বুকের ডানদিকে বসানো পেসমেকারের থেকে অন্তত দু’ফুট দূরে। আমার ইয়ারপ্লাগের ম্যাগনেট থেকে চঞ্চলের পেসমেকার বন্ধ হয়নি।’

    লক্ষ্মণের বডি ল্যাঙ্গোয়েজে আগের আগ্রাসী ভাব আর নেই। বিড়বিড় করে সে বলল, ‘তা হলে? চঞ্চল কীভাবে মারা গেল?’

    ‘সেটা জানার চেষ্টা করা যাক!’ লক্ষ্মণকে ছেড়ে শাশ্বতকে নিয়ে পড়েছে প্রথমা, ‘খোকাবাবু, তোমার ল্যাপটপের ওয়েব হিস্ট্রিতে কার্ডিয়োট্রনিক্সের লিঙ্ক কেন রয়েছে?’

    ‘তুমি আমার ল্যাপটপ ফেরত দাও।’ পুলককে মিনতি করে শাশ্বত।

    শাশ্বতর কবজি ধরে বেডের ডানপাশে এনে প্রথমা লক্ষ্মণকে বলে, ‘আমি ডাক্তারি বুঝি না। ভুল বললে সংশোধন করে দেবেন। পেসমেকারের প্রাণভোমরা একটা মাইক্রোচিপ। তাতে পেশেন্ট এবং তার রোগ সংক্রান্ত যাবতীয় ডেটা ভরা থাকে। মাইক্রোচিপ থেকে এই ডেটা ওয়্যারলেস রেডিয়ো সিগন্যালের মাধ্যমে ট্রান্সমিটেড হয়। দরকার পড়লে, বুকের চামড়া না কেটে, পেসমেকারে হাত না দিয়ে, পেশেন্টের হার্টরেট বাড়ানো বা কমানো হয় এই মাইক্রোচিপের সাহায্যে। তাই তো?’

    লক্ষ্মণ নিঃশব্দে ঘাড় নাড়ে।

    ‘চঞ্চলের ডানদিকে বসে, রেডিয়ো হার্ডওয়্যার লাগানো ল্যাপটপের মাধ্যমে শাশ্বত রেডিয়ো সিগন্যাল ইন্টারসেপ্ট করেছে। তারপর সেই ডেটার সাহায্যে কার্ডিয়োট্রনিক্সের সার্ভারে ঢুকে চঞ্চলের পেসমেকারের ইমপালস জেনারেশান বন্ধ করে দিয়েছে।’

    পুলক বলল, ‘বুঝলাম না। একটু সহজ করে বলুন।’

    ‘চেষ্টা করছি,’ বলে প্রথমা, ‘মোবাইল ফোন চুরি হলে, এয়ারটাইম প্রোভাইডারকে খবর দিলে ওরা যেভাবে চুরি যাওয়া সিমকার্ড ডিঅ্যাকটিভেট করে দেয়, এটা সেই পদ্ধতি। শাশ্বত একজন ধুরন্ধর হ্যাকার।’

    পুলক বলল, ‘এবার বুঝলাম। আমি এই ল্যাপটপ কলকাতার পুলিশের সাইবার ক্রাইম সেলে পাঠাচ্ছি। ওরা হার্ডডিস্ক থেকে সব ডেটা উদ্ধার করে দেবে।’

    শাশ্বতর গালে ঠাস করে চড় মেরে তাকে জড়িয়ে ধরে গায়ত্রী। কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘কেন এইরকম করলি? কেন?’

    গায়ত্রীর কোলে মাথা রেখে চোখের জল মুছিয়ে দিচ্ছে শাশ্বত। কৈশোরের ভাঙা গলায় বলছে, ‘বাবাটা খালি বলত, ”তোকে কার্ডিয়োলজিস্ট হতে হবে।” আমার ভালো লাগত না মা। বাবাটা আমাকে পাগলের ডাক্তারের কাছে পাঠিয়েছিল। স্কুলের বন্ধুরা এই নিয়ে আমায় ”বুলি” করে। আমার ভালো লাগে না মা। তুমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। সফটওয়্যার নিয়ে পড়াশোনা করতে আমাকে এনকারেজ করো। ডাক্তার হওয়ার কথা বলে ”বুলি” করো না। ”জোম্বি” বলে গালাগাল দাও না। আর তাছাড়া বাবা তোমাকে খুব কাঁদিয়েছে। আই নিউ ইট মা। তুমি চোখের জল আড়াল করেছ ঠিকই, বাট আমার থেকে গোপন করতে পারোনি।’

    প্রথমা নরম গলায় বলে, ‘শাশ্বত, তুমি কি জানো যে তুমি যা করেছ, সেটা মার্ডার?’

    ‘মার্ডার কেন হবে? দিস ইজ হার্ট হ্যাকিং।’ ভাসাভাসা চোখে নিষ্পাপ দৃষ্টি মেলে বলে শাশ্বত, ‘কার্ডিয়োট্রনিক্সের সার্ভারের সিকিয়োরিটিতে কিছু লুপহোল ছিল। সেটা ধরিয়ে দিয়ে আমি ওদের মেইল করে দিয়েছি। যাতে ওরা ভুলটা কারেকশান করে নেয়।’

    পুলক প্রথমাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘এটা যে শাশ্বতর কাজ এটা আপনার কখন মনে হল?’

    ‘লক্ষ্মণ বলেছিল ম্যাগনেট থেকে পেসমেকারের ড্যামেজ হয়। দেবী যখন বলল যে পেসমেকারের তিন সেন্টিমিটারের মধ্যে ম্যাগনেট থাকলে তবেই ড্যামেজ হবে, তখনই আমি নিজেকে সন্দেহের তালিকার বাইরে রাখি। কেননা আমার ইয়ারপ্লাগ অনেক দূরে ছিল। কাছে ছিল শাশ্বতর ল্যাপটপ। ‘চিপ’ শব্দটা বারবার শুনে হঠাৎ মনে হল, পেসমেকারেও তো চিপ থাকে। শাশ্বতর দৃষ্টিতে চঞ্চলের প্রতি ঘৃণাই আমাকে বাধ্য করে ওর ল্যাপটপে নাক গলাতে। আপনাকে ওই চিরকুট দেওয়ার আসল কারণ হল, আমি শাশ্বতকে মেশিন থেকে তুলতে চেয়েছিলাম।’

    দেবী চুপ করে বসে আছে। চাঁদু মেঝের দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে। পাখির মায়ের মতো দুই পক্ষ দিয়ে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে গায়ত্রী। শাশ্বত মায়ের কোলে বসে আছে।লক্ষ্মণের মাথা নিচু। পুলক পানিহাটি থানায় ফোন করছে।

    একদল পরাজিত মানুষকে পিছনে ফেলে প্রথমা ঘর থেকে বেরোল। অডিয়োভিশুয়াল আর প্রিন্ট মিডিয়া—এই দুই পক্ষের নজর বাঁচিয়ে তাকে ‘চিপ’ থেকে বেরিয়ে দিল্লি ফিরতে হবে। সামনে অনেক কাজ।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপিশাচ দেবতা – অনীশ দাস অপু
    Next Article বাড়িটায় কেউ যেয়ো না – অনীশ দেব

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }