Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    খুনির রং – অনীশ দেব

    লেখক এক পাতা গল্প539 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    স্টার অফ ডেভিড – রাজেশ বসু

    আদিগন্ত সবুজ পাহাড়ের মধ্যে হঠাৎ হঠাৎ উপত্যকা। কোথাও চায়ের খেত। কোথাও বা মশলার। দূর দৃশ্যপটে উঁকি দিচ্ছে আনাইমুদি শৃঙ্গ। অসংখ্য ঝরনার কাটাকুটি গোটা অঞ্চল জুড়ে। এরই মধ্যে নির্জন সবুজের মধ্যে লালটালিওলা একটি বাংলো। সবুজ রং করা কাঠের বেড়ায় ফুটদেড়েকের সাইনবোর্ড—”হেভেন’স অ্যাবোড”। এখনও বিকেলের আলো নিভে আসেনি। বিশ—ত্রিশগজ তফাত থেকেও লেখাটা পড়তে পারল বব। ভালো নাম দিয়েছে বটে উন্নিবুড়ো। হাসি পেল ওর। ওইসব স্বর্গ—নরকের কনসেপ্টে নেই সে। কয়েকঘণ্টা পর ওই নামটাই খোরাক হয়ে যাবে। হেভেন হয়ে যাবে হেল। লালমুখোরা আর আসছে না। কেস খাবে বুড়ো। খাক শালা! দরকার ছিল খুব। সামান্য সরকারি আমলা হয়ে কম তো কামায়নি। এই মুন্নারেই এরকম গোটা তিনেক বাংলো নাবিয়েছে শালা। পোনমুড়িতেও বানাচ্ছে একটা। সেখানেই আছে এখন। কাল ফিরবে। টাকা কামিয়ে আশ মিটছে না বুড়ো শকুনের। কাজটা নিত না বব, উন্নিবুড়ো সিনে আছে জেনে আর না করেনি। তাছাড়া টাকার অঙ্কটা যথেষ্টই বেশি। গোটা একটা চা বাগান কিনে ফেলা যায়।

    থুতু ফেলল বব। চারিপাশটা দেখে নিল ভালো করে। ঘর—ফিরতি পাখির দল ছাড়া প্রাণের স্পন্দন নেই কোথাও। এমনিতেই এদিকটা খুব নির্জন। তা—ও আবার বছরের শেষ দিন। তিন ‘ম’ নিয়ে ফুর্তি করার দিন। কয়েকটা বুড়োহাবড়া যা পড়ে আছে ঘরের মধ্যে। দিন গুনছে পরপারে যাওয়ার। এই শীতে টিকে গেলে নেক্সট সিজনের শুরুতেই টসকাবে। একটু চিন্তা করল সে। উন্নিবুড়োর অতিথিটিও এই গোয়ালের। ক’দিন পরে এমনিই পটল তুলত। বেকার সময়টাকে এগিয়ে আনার কী ছিল কে জানে! আসলে সব—ই বিজনেস। উন্নির মুখে কালি লেপতে চান ম্যাম। রাইভ্যাল রাখতে চান না। —সত্যি মাইরি! পাত্তি কী চিজ! বুড়ি থুত্থুড়ি হয়ে মরতে চললি, এখনও মাল্লুর ধান্দা। সাদা চামড়ার জাতটাই আসলে এরকম, লাইফে লেনদেন ছাড়া কিছু বোঝে না। এ দেশেও সেই বীজ বুনে দিচ্ছে।

    আবার থুতু ফেলল বব। তিনপেগ খেয়েছে মাত্র। অবশ্য পুরোটাই নিট। মুখটা কেমন টক লাগছে। থুতু উঠছে বারেবারে। নার্ভাস হয়ে গেল নাকি? ধুস। সব কাজের—ই শুরু আছে। জলে একবার নেমে পড়ে কুমিরের ভয় করলে চলে না। জ্যাকেটের ভিতরের পকেটে হাত রাখল সে। শীতল ধাতব স্পর্শ। মগজটাকেও এমন সলিড আর কুল রাখতে হবে। কয়েক মিনিটের তো কাজ। বুড়োসাহেবটা ছাড়া ”হেভেনস অ্যাবোড” বিলকুল ফাঁকা। মিয়াম্মা নামে একটা বউ রান্নাবান্না করে। কাজ সেরে অনেক আগেই হাপিস হয়েছে সে। একদম ফাঁকা গোল। চোখ বুজেও নেট করা যায়।

    বাইক লক করে এগিয়ে চলল বব। হ্যান্ডেলে ঝোলানো কেকের প্যাকেটটা হাতে নিয়েছে। এটা হল এনট্রিপাস। অন্ধকার নামছে চুইয়ে চুইয়ে। হেভেন’স অ্যাবোড ঝাপসা হয়ে গিয়েছে। চারিপাশ খুব ভালো করে জরিপ করে নিল সে। ফলস চাপদাড়িটা দেখে নিল হাত দিয়ে। থোবড়াটা একটু চেঞ্জ করে নেওয়াই বেটার। কাঠের গেট খুলে নুড়ি বিছানো পথ বেয়ে গাড়িবারান্দায় এসে দাঁড়াল সে। তিনধাপ হোয়াইট মার্বেলের সিড়ি বেয়ে মেন দরজা। একবার পিছনে চাইল। কেউ কোত্থাও নেই। কুল সিন। তবু হঠাৎই বুকের ভিতর একডজন মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন স্টার্ট নিয়েছে যেন। উঁহু, নার্ভাস হলে চলবে না। চোয়াল শক্ত করে কলিংবেলের সুইচে চাপ দিল বব। শীতকাল বলে একটা সুবিধা, উলেন গ্লাভস পরাই আছে হাতে। ফিংগারপ্রিন্ট উঠে যাওয়ার সমস্যা নেই।

    এক দুই তিন… সেকেন্ড গুনছিল বব। বত্রিশের মাথায় ভাবছিল আবার টুং টাং ঘণ্টা বাজাবে কিনা, তক্ষুনি খট করে দরজাটা খুলল।

    ”হুম ওয়ান্ট?”—প্রত্যাশামতোই বুড়োসাহেব দরজা খুলেছে। জলহস্তীর মতো বিশাল চেহারা। ম্যাম বলেছিল নব্বুইয়ের কাছাকাছি বয়স। দেখে কিন্তু অতটা মনে হচ্ছে না। সোজা দাঁড়িয়েছে একদম। হাতে লাঠিও নেই। এই শীতেও প্লেন নাইটড্রেস। জাস্ট একটা সিল্কের গাউন। মাল টানছিল মনে হয়, মুখে ভালোই গন্ধ। ববের ইচ্ছে করছিল, এখনই কাজটা সেরে দেয়। কিন্তু সেটা রিস্কি হয়ে যাবে। দরজা খুলে রেখে অ্যাটলিস্ট খুন—টুন করা চলে না। তা সে যতই সেক্লুডেড প্লেস হোক না কেন। কথায় বলে দেওয়ালেরও কান আছে। তাছাড়া ম্যাম নীল রঙের একটা মেটাল স্টার দিয়েছেন, কেন কে জানে, গুলি চালানোর আগে সেটা নিয়েও একটু নকশা দেখানো আছে। পুরনো কী ক্ষার আছে কে জানে!

    ”গুড ইভনিং স্যার। উন্নিসাব এটা পাঠিয়ে দিলেন—হ্যাপি নিউ ইয়ার স্যার।” হাতের প্যাকেটটা দেখিয়ে ইংরেজিতে উত্তর দিল বব।

    ”ওহ দ্যাটস নাইস।” বলে হাতির পায়ের মতো হাতটা বাড়িয়ে প্যাকেটটা নিয়েছে বুড়ো। দরজা প্রায় বন্ধ করে আর কি।

    ”স্যার একটা কাজ আছে, গ্যাস সার্ভিস করে যেতে হবে। জাস্ট আ রুটিন চেক। ডোন্ট ওরি স্যার। স্পেয়ার ওনলি টেনমিনিটস।” গলা না কাঁপিয়ে ঢোঁক—ফোক না গিলে মোটামুটি স্মার্টলিই বলল বব।

    ”ক্যুরিয়ার কাম গ্যাস মেকানিক?” ভুরু কপালে উঠেছে বুড়োর।

    ”ইয়েজ স্যার। কনফেকশনারিটা আমার ভাইয়ের, তাই…”

    ”ও কে! ক্যারি অন।” দরজার পাশ থেকে সাদা জলহস্তী সরে গেল। ঘরে ঢুকে পড়ল বব। এটা ড্রয়িংরুম। বেশ সাজানো—গোছানো ছিমছাম। দেশি বিদেশি জিনিস ভরিয়ে বেশ একটা ককটেল ডেকরেশন করেছে উন্নিবুড়ো। ডলার টানার কায়দা আর কি।

    ”সোজা গিয়ে ডানদিকের লাস্টরুমটা কিচেন।” জলহস্তী নির্দেশ দিল গমগমে গলায়। ধপাস করে বসেছে বিশাল একটা আর্মচেয়ারে। সামনেই টি—উডের প্যাঁচালো টেবিল। বুড়ো মাল—ই গিলছিল। স্কচ রাম না হুইস্কি কে জানে! টেবিলের উপরেই রয়েছে ছিপিখোলা বোতলটা। হেবি দেখতে। ঢাউস একটা সেন্টের শিশি যেন। জলটল নেই। ডাইরেক্ট বোতল থেকে মারছে। লিভারের জোর আছে বটে। হয়তো বা ওটারও। কয়েকহাত তফাতে এলসিডি টিভির স্ক্রিনে বৃষ্টিভেজা নায়ক—নায়িকার উদ্দাম নৃত্য। হিন্দি মিউজিক চ্যানেল। সাউন্ড প্রায় শোনাই যাচ্ছে না। দরকারও নেই। ঢুলুঢুলু চোখে নায়িকা আর তার সঙ্গিনীদের ললিত লোভন লীলা গিলছে। ববের পদ্মিনীর মুখটা মনে পড়ল। পরক্ষণেই ওর শরীরের না ঢাকা জায়গাগুলো। চোদ্দোমাস চরকি হয়ে ঘুরছে। এখনও নাকাব সরাতে পারল না। পেমেন্টটা হাতে আসুক, তখন দেখবে কত জোর পদ্মিনীর।

    নাঃ, দেরি করে লাভ নেই। সদর দরজাটা বন্ধ করে দিল বব। বুড়ো ফিরেও চাইল না। বড্ড নিরিমিষি কাজ। শিকড় উপড়ানো একটা গাছকে কাটতে হবে। জ্যাকেটের বুকপকেট থেকে মেটালের নীল তারাটা বের করল ও। লোকটার কোনো খেয়াল নেই। ভারতীয় সুন্দরীর নিতম্বদুলুনি দেখছে তন্ময় হয়ে। দ্যাখ ব্যাটা। শেষবারের মতো দ্যাখ। সোজা গিয়ে টেবিলের উপরে নিজের বাঁ পাটা রাখল বব। স্টারটা একদম লোকটার নাকের ডগায় ধরেছে।

    ”এটা চিনতে পারেন স্যার?” ম্যামের শিখিয়ে দেওয়া কথাগুলো বলল সে।

    ভুরু কুঁচকে গেল বুড়োর। মুখের জ্যামিতি দ্রুত পাল্টাচ্ছে। গল্প আছে তো!

    ”হেই…ইউ ব্লাডি সোয়াইন…” চাপা হুঙ্কার দিয়ে উঠল জলহস্তী। আর দেরি নয়। স্টারটা পকেটে পুরে চট করে টেবিলের উপরে রাখা টিভির রিমোটটা উঠিয়ে নিল বব। ফুল ভল্যুমে তুলে দিল টিভির সাউন্ড। এটা করার খুব প্রয়োজন হয়তো ছিল না। এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনও বসতি নেই। তবু, রিস্ক নিচে চায় না সে। কিন্তু ফোল্ডিং ছুরিটা বের করতে যাওয়ার আগেই প্রতিরোধটা এল। চোয়ালের উপর নেমে এল হাতির পায়ের মতো হাতটা। শেষ মুহূর্তে ছিটকে গিয়েও পাঞ্চটা এড়াতে পারল না সে। কানের পাশে হাতুড়ির মতো পড়ল ঘুষিটা। চার—পাঁচ সেকেন্ডের জন্যে পুরো ব্ল্যাকআউট। সংবিৎ ফিরতে না ফিরতেই জলহস্তি ভিতরের ঘরের দিকে ছুটেছে। জ্যাকেট থেকে ছ’ইঞ্চির ফোল্ডিং চাকুটা টক করে বের করে পেলল বব। তারপর যতটা জোর আছে ঠুসে দিল লোকটার পিঠে। বিকট চিৎকার করে একটা পাক খেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ল জলহস্তীটা। পিঠের ডানদিক দিয়ে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসছে।

    টলমল পায়ে উঠে দাঁড়াল বব। বুকের মধ্যে এরোপ্লেন ছুটছে এবার। বুড়োর তাগদ আছে বটে। তবুও উঠে বসার চেষ্টা করছে। চোখের নীল মণিদুটো থেকে যেন আগুন ঠিকরে বেরোচ্ছে। বব আবার চাকু তাক করল। হাত কাঁপছে খুব। চারহাত তফাতেও লোকটার বুকটা নিশানায় ধরতে পারছে না। যা থাকে কপালে, প্রায় আন্দাজেই লাফিয়ে পড়ল সে। লোকটা চিত হয়ে পড়ল এবার। চাকু বুকের বাঁ—দিক ঘেঁষেই গেঁথে গিয়েছে। একটানে তুলে ফেলল সেটা। চাপকলের মতো রক্ত বেরিয়ে আসছে শরীর থেকে। গা ঘুলিয়ে উঠল ববের। মানুষের শরীরে কত রক্ত থাকে মাইরি! জলহস্তী তবুও ঘসটে ঘসটে দেওয়ালের দিকে এগোচ্ছে। পাগলের মতো আর একবার চাকু চালাল বব। মুচড়ে উঠল অতবড় শরীরটা। এতক্ষণে দম শেষ। একটা হাত দেওয়ালে রেখে পুরো পাথর।

    চাকু গুটিয়ে পকেটে চালান করল বব। এবার নিজেই দম নিতে পারছে না। সত্যিই একটা মানুষকে খুন করে ফেলল সে! আচমকাই পিছনে প্রবল কাঁপুনি। চমকে উঠেছিল বব। দুঃ শালা! মোবাইল বাজছে। ফোনটা হাতে নিল বব। কী কপাল মাইরি—পদ্মিনী কলিং! ওয়েট হানি। একঘণ্টার মধ্যেই আসছি। লাইনটা কাটল না। নট আনসারড দেখাক। বলবে বাইক চালাচ্ছিল, শুনতে পায়নি। টিভিটা অফ করে দিয়ে বেরিয়ে পড়ল এবার। দরজার হ্যাজবোল্টটা টেনে দিল বাইরে থেকে। চারিদিক শান্ত নিঝুম। কে বলবে এইমাত্র একটা সাংঘাতিক কাণ্ড হয়ে গেল। দরজা পেরিয়ে কাঠের গেটের মুখে থোকা থোকা নীল ফুলের বেড। উন্নিবুড়ো লাইট দিয়ে ডেকরেট করে রেখেছে। ঢোকার সময় নজর করেনি। এখন পাতাসুদ্ধু কয়েকটা ফুল ছিঁড়ে ফেলল বব। পদ্মিনী ফুল ভালোবাসে। একঘণ্টার মধ্যেই ফুলটা ওর চুলে গুঁজে দেবে সে।

    ২

    টিভি চালিয়ে বসেছিলেন স্টেফানিয়া। রাত এখন ঠিক বারোটা। গোটা উপত্যকা ঘুমিয়ে পড়েছে। তিনিই কেবল জেগে আছেন। সারাদিন ধরে একটাই খবর ব্রেকিং নিউজ করে দেখিয়ে যাচ্ছে চ্যানেলগুলো। পরশু সন্ধেবেলায় কে পি উন্নিকৃষ্ণনের প্রাইভেট কটেজে একজন বিদেশি ট্যুরিস্ট মার্ডার হয়েছেন। এমন ঘটনা এ তল্লাটে এই প্রথম। স্বভাবতই পুলিশ সিরিয়াসলি বিষয়টা নিয়ে পড়েছে। রুদ্রাণী চক্রবর্তী নামে একজন মহিলা পুলিশ অফিসারের চার্জে মনে হয় কেসটা। অল্পবয়সি মেয়েটি খুব কেতা নিয়ে বলছিল, এক সপ্তাহের মধ্যে নাকি কালপ্রিটকে ধরে ফেলবে। হাসি পাচ্ছিল স্টেফানিয়ার। পুলিশের দৌড় কদ্দূর ভালোরকম জানা আছে তাঁর। ক্লান্ত হয়ে এইমাত্র চ্যানেল বদলেছেন। লোকাল একটা রোমান্টিক মুভি হচ্ছে। থিম সেই একই। বড়লোকের মেয়ে। ফুটপাথের ছেলে। ভিলেন বাবা। স্নেহশীলা মা। সর্বত্যাগী বন্ধু। ন্যায়পরায়ণ পুলিশ। আর হার্ডকোর ভিলেন। অন্যদিন ফিরেও তাকান না। ঘুম আসছে না বলে একটু আগে ওটাতেই স্থির হয়েছেন। ভাষার অসুবিধা নেই। বিদেশি হলেও মালয়ালাম ভাষাটা আয়ত্ব করেছেন বহুকাল আগে। চল্লিশ বছরের উপর এ দেশে আছেন। এসেছিলেন নান হয়ে। কনভেন্টে পড়াতেন। মনে অন্য জিদ ছিল। ক্রমে কনভেন্ট থেকে বেরিয়ে এসে এতবড় বিজনেস দাঁড় করিয়েছেন। চা—বাগান। রেস্তোরাঁ, পার্লার। কী না! এবং পুরোটাই নিজের পায়ে। একলা হাতে। স্টেফিম্যাম বলতে মুন্নারের সবাই চেনে তাঁকে। এখন অবশ্য সব গুটিয়ে নিচ্ছেন ধীরে ধীরে। বিয়ে করেননি। স্থানীয় একটি ছেলেকে দত্তক নিয়েছিলেন। সে এখন পূর্ণ যুবক। বিদেশের পাঠ শেষ করে কয়েকদিনের মধ্যেই দেশে ফেরার কথা।

    ধপ করে একটা শব্দ হল কাছেই। কেউ যেন ব্যালকনিতে লাফিয়ে পড়ল। বালিশের নিচে রাখা পিস্তলে হাত রাখলেন স্টেফানিয়া। টর্চও আছে সঙ্গে। সেটাও নিলেন অন্যহাতে। কে জানে, মনটা কু ডাকছে খুব। আসলে বাঘ একবার রক্তের স্বাদ পেয়ে গেলে মুশকিল।

    দুড়ুম করে খুলে গেল দরজাটা। পিস্তল রেখে মাথার উপরের সুইচ বোর্ড টিপে পরপর সবক’টা লাইট জ্বালিয়ে দিলেন স্টেফানিয়া। নরম আলোতে ভরে গেল গোটা ঘর। প্রথমে আগন্তুকের মুখটা স্পষ্ট হচ্ছিল না। পায়ে পায়ে হেঁটে মুখোমুখি দাঁড়াতে দেখতে পেলেন এবার। বাঘ না হলেও বাঘের বাচ্চচা তো বটেই। বব ডায়াজ। রবার্টের ছেলে। লোকটা স্মাগলিং করত। স্টেফানিয়া সোজা পথে এনেছিলেন। গতবছর হঠাৎই কী একটা জ্বরে ভুগে চলে গেল। ছেলেটা খুব ন্যাওটা ছিল তাঁর। ম্যাম বলতে অজ্ঞান। লেখাপড়া শিখিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুই হল না। রক্তের দোষ আর কি।

    ”ম্যাম, কাজটা ঠিক করলেন না আপনি!” ধমকের স্বরে বলল বব।

    ”এতরাতে এভাবে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকেছ এই কথাটা বলতে?” পাল্টা ধমক দিলেন স্টেফানিয়া।

    ”মালটা ফেক। সব কাচ।” ব্রেসলেটটা জ্যাকেটের পকেট থেকে তুলে ধরে দেখাল বব। জিনিসটা পরশু সকালে নিজে হাতে দিয়েছিলেন ছেলেটিকে। বলেছিলেন, তোর গার্লফ্রেন্ডকে দিস। হতভাগা নিশ্চয় বিক্রি করতে গিয়েছিল। কিন্তু একলাখ পঁচিশ হাজার টাকা দিয়ে কেনা জিনিসটা নকল নাকি! সত্যি দেশ বটে এই ভারতবর্ষ! এখানে পয়সা ফেললেও খাঁটি জিনিসটি পাওয়া মুশকিল।

    ”তুমি ভুল করছ বব। ওটা যদি সত্যিই নকল হয়, সেটা আমিও জানতাম না। তাছাড়া ওটা তোমার বান্ধবীকে দিয়েছি। বিক্রির জন্যে দিইনি। তার জন্যে ভালো অ্যামাউন্টের অ্যাডভ্যান্স পেয়েছ তুমি। পুরোটা পেতে ধৈর্য ধরতে হবে।” ঠান্ডা স্বরে বললেন স্টেফানিয়া। এতক্ষণ ঘুম পাচ্ছিল না। হঠাৎই যেন দু’চোখের পাতা ভারী হয়ে আসছে। বুকের বাঁ দিকে টিসটিস ব্যথাটাও সময় বুঝে জানান দিচ্ছে।

    ”বাজে কথা রাখ বুড়ি। আমার টাকা চাই। পুরোটাই। —অ্যান্ড অ্যাট দিজ ভেরি মোমেন্ট।” স্টিলের আলমারিটার দিকে তাকাচ্ছে। চেস্টের ড্রয়ারগুলো খুলে ফেলল ফটফট করে।

    একটু চিন্তা করলেন স্টেফানিয়া। এই বাড়িটা তাঁর সবসময়ের থাকার জন্যে নয়। মনখারাপের সময় চলে আসেন। লোকালয় থেকে একটু দূরে বাড়িটা সেই জন্যেই তৈরি। একলা থাকবেন বলে আজকে চাকরবাকরদেরও সব ছুটি দিয়ে দিয়েছেন। বব নিজের লোক বলে বিষয়টা জানে। সুযোগটা কাজে লাগাতে এসেছে। কিন্তু মুশকিল হল, এই মুহূর্তে সত্যিই তেমন টাকাপয়সা নেই। তাছাড়া আলমারির চাবিটাও সঙ্গে আনতে ভুলে গিয়েছেন। কিন্তু ববের যা মূর্তি, বিশ্বাস করবে কি?

    ”কী হল বুড়ি…?” মুখ খারাপ করছে বব। স্টেফানিয়া দেখলেন হাতে কখন একটা চকচকে চাকু উঠে এসেছে তার। ঘরময় ঘুরছে সে। লাথি মারল আলমারিতে। মাঝে মাঝেই দৃশ্যপট থেকে সরে যাচ্ছে সে। ফিরে আসা মাত্রই স্টেফানিয়া ভাবছেন সোজা শু্যট করে দেয় ফ্রাস্কেনস্টাইনটিকে। কিন্তু নিজের ঘরে রক্তপাত চান না। মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে।

    ”বব বিশ্বাস করো, এই মুহূর্তে আমার কাছে তোমাকে দেওয়ার মতো টাকা নেই। ঠিক আছে। কাল অফিসে এসে পুরোটাই নিয়ে যেও।” বললেন স্টেফানিয়া।

    ”বব ডায়াজ অত বুদ্ধু না। ফিরে গেলেই তো পুলিশকে ফোন করবি, তাই না?” দাঁত চেপে বলল বব। রাগে কাঁপছে সে। রিডিংটেবিলে রাখা ফুলদানিটা ছুড়ে মারল আলমারিতে। পোর্সেলিনের দামি ফুলদানি ভাঙল ভীষণ শব্দ করে। ফুলদানির নীলফুলগুলো বব—ই এনেছিল পরশু। ভালো লেগে যাওয়াতে রেখে দিয়েছিলেন স্টেফানিয়া। জুতোর মসমস শুনে মনে হচ্ছে সেগুলোকে পিষছে পা দিয়ে। পরক্ষণেই আবার তেড়ে এল তার দিকে। একদম সোজাসুজি দাঁড়িয়েছে। কী ভয়ঙ্কর লাগছে চব্বিশ বছরের ছেলেটাকে। ঠোঁটের কষ বেয়ে লালা গড়াচ্ছে। চোখ দুটো যেন রক্তপিপাসু ভ্যাম্পায়ারের মতো জ্বলছে। ঝট করে হাত বাড়িয়ে লাইটটা নিবিয়ে দিলেন স্টেফানিয়া। দ্রুত ঠিক করেছেন কী করবেন। অন্ধকার ঘরে হায়েনার মতো হুঙ্কার করে উঠল ছেলেটা। সেকেন্ডের মধ্যে পাঁচ—ব্যাটারির টর্চের তীব্র আলো ফেলেছেন ওর চোখে। ক্ষণিকের জন্যে ঘাবড়ে গিয়েছে ছোঁড়া। সেই সুযোগে বাঁ—হাতে ধরা পিস্তলের ট্রিগারে চাপ দিলেন। ভীষণ শব্দে গুলি ছুটল। প্রতিক্রিয়ায় পিছনে বালিশের উপরে ছিটকে পড়লেন তিনি।

    ৩

    ঠিক একঘণ্টার মধ্যে চলে এল পুলিশ। এত রাতেই। এদেশে কিছু উন্নতি হয়েছে তাহলে। সিনেমাহলের শো ছাড়া পাংচুয়ালিটির আর কোনও নিদর্শন এ দেশে এখনও দেখেননি স্টেফানিয়া। আশ্চর্য হওয়ারই কথা। ফোনে ‘কামিং উইদিন অ্যান আওয়ার’ শুনে হাসি—ই পেয়েছিল। ভারতীয়দের জানা আছে তাঁর। কিন্তু অবাক কাণ্ড। ঠিক তাই এসেছে। এবং তিনজন সঙ্গী নিয়ে স্বয়ং রুদ্রাণী চক্রবর্তী। ছিপছিপে শ্যামলা—শ্যামলা এই মেয়েটিকেই টিভিতে দেখেছিলেন স্টেফানিয়া। নিচের ঘরে বসে অপেক্ষা করছিলেন তিনি। দরজা খুলে দিতে সরাসরি প্রশ্ন করল মেয়েটি, ”ম্যাম, আপনিই ফোন করেছিলেন?”

    ”ইয়েজ। একটা স্কাউন্ড্রেল আমার ঘরে ড্যাগার নিয়ে ঢুকে পড়েছিল। টাকা ডিম্যান্ড করছিল। আই হ্যাড নো অপশন বাট টু শু্যট হিম। আই থিংক হি ইজ…” চুপ করে গেলেন স্টেফানিয়া।

    ”এ তো সিরিয়াল কিলিং শুরু হয়ে গেল দেখছি।” ভুঁড়িওলা বয়স্ক কনস্টেবলটি উঠেছে।

    ”বডি কোথায়?” নিজের পরিচয় দিয়ে বলল রুদ্রাণী চক্রবর্তী।

    ”আপস্টেয়ার্স। ইন মাই বেডরুম।” স্থির গলায় বললনে স্টেফানিয়া। ”ব্যালকনির দরজা ঠিকমতো লক ছিল না। লোকটা ধাক্কা মেরে ঢোকে। আওয়াজেই ঘুম ভেঙে যায় আমার। তাও চুপ করে থাকি। বোঝার চেষ্টা করি, উদ্দেশ্যটা কী। লাইট পর্যন্ত জ্বালাইনি। প্রথমে সে আমার চেস্টের ড্রয়ারগুলো খোলে। খুব কশাসলি। কিছু না পেয়ে আমাকে জাগায়। আলমারির চাবি চায়। যেটা আমার কাছে সত্যিই ছিল না। বাট হি ডিডন’ট বিলিভ। ড্যাগার নিয়ে তেড়ে আসে। ভয় পেয়ে শু্যট করে দিই আমি। ভাগ্যিস আর্মসটা সঙ্গে ছিল। আসলে টিভিতে মিস্টার উন্নিকৃষ্ণনের কটেজে মার্ডারটা দেখার পর থেকে কেমন একটা ভয় করছিল। নিজের রিভলভারটা সঙ্গে রেখেছিলাম তাই।”

    থামলেন স্টেফানিয়া। যা বলেছেন যথেষ্ট। পুওর বব। মোটেই ঠকাতেন না ওকে। হতভাগাটা বুঝল না। মাথা নিরেট হলে যা হয়। রুদ্রাণী মেয়েটি কী বুঝেছে সে—ই জানে। একটা নোটবুক বের করে স্টেটমেন্টটা লিখে ফেলল খসখস করে। তারপর দলবল নিয়ে উঠে গেল উপরে।

    স্টেফানিয়া বুঝতে পারছিলেন না কী করবেন। বুকের ভিতরে অস্বস্তি হচ্ছে কেমন। ধীরে ধীরে উপরেই উঠে এলেন। —সেই ভয়ানক দৃশ্য! খাটের ঠিক পাশটিতে চিত হয়ে পড়ে আছে বব। বিস্ফারিত নিথর চোখের মণিদুটি সোজা সিলিংয়ের দিকে চেয়ে আছে। চাকুটা পড়ে আছে পাশেই। গুলি সম্ভবত বুকেই লেগেছিল। আঘাতের তীব্রতায় খাট থেকে নিচে ছিটকে পড়ে ছিল সে। দৃশ্যটা সহ্য করতে পারলেন না স্টেফানিয়া, ড্রেসিংটেবিলের সামনে রাখা ছোট্ট টুলটায় বসে পড়লেন ধপ করে।

    ”ম্যাম মনে হচ্ছে লোকটি আপনার চেনা?” রুদ্রাণী মেয়েটি নিজেই খচাখচ ফোটো তুলছিল, স্টেফানিয়াকে দেখে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করেছে।

    ”ইয়েজ। এখন মনে হচ্ছে, আমি চিনি ওকে। —বব। বব ডায়াজ। হোয়াট অ্যান আয়রনি! আমারই চা—বাগানে কাজ করত!” ধীরে ধীরে বললেন স্টেফানিয়া। ছেলেটাকে চেনেন না বলাটা ডাহা মিথ্যে হয়ে যাবে। আরও কিছু বলতেন, হঠাৎই জিনিসটা চোখে পড়ল তাঁর। খাটের পায়ার কাছে পড়ে আছে সেই তারাটা। নীল পেইন্টটা নিজেই লাগিয়েছিলেন। হতভাগা পরশু ফেরত দেয়নি। বলেছিল, বাড়িতে ফেলে এসেছে। কে জানে, কী মতলব ছিল। এখন দেখা যাচ্ছে সঙ্গেই ছিল। জ্যাকেটের পকেট থেকে বেরিয়ে গিয়ে থাকবে। তিনি এগিয়ে যাচ্ছিলেন তারাটা তুলতে।

    ”উহু, কোনও জিনিসে হাত দেবেন না।” রুদ্রাণী বলে উঠেছে। চটপট একটা সেলোফিনে তারাটা সাবধানে মুড়ে পকেটস্থ করে ফেলল।

    স্টেফানিয়া বললেন, ”কী আশ্চর্য! ওটার সঙ্গে এই ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই। স্টারটা আমার বালিশের নিচেই ছিল। এসব হামলায় পড়ে গিয়ে থাকবে। আপনি হয়তো জানেন না, আমি ইহুদি। দিজ ইজ স্টার অফ ডেভিড। আমাদের ধর্মের প্রতীক।”

    রুদ্রাণী যেন শুনলই না। অন্যদিকে মন। পাশে এসে বলল, ”ম্যাম, এই ফুল আপনি কোথায় পেলেন?”

    ”কোন ফুল?”

    ”এই তো, মনে হচ্ছে ফ্লাওয়ার ভাসে ছিল।”

    ”প্লিজ সামনে আসুন। আই হ্যাভ অ্যাকিউট গ্লুকোমা।” বলতে হল স্টেফানিয়াকে। সাইডভিশন অনেকদিন আগেই হারিয়েছেন।

    ”গ্লুকোমা!—স্যরি ম্যাম, আই ডিডন’ট নো।” বলে রুদ্রাণী সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। হাতে সেই নীল ফানেলশেপ ফুলটা। নাম কুরিঞ্জি। অনেকে নীলা কুরিঞ্জিও বলে থাকে। বব এনেছিল কোত্থেকে। কে জানে, উন্নিকৃষ্ণনের বাড়ি থেকেই কিনা! সে নানা উপায়ে ফুলটুল চাষ করে থাকে। মনে হচ্ছে ফুলটা না নেওয়াই উচিত ছিল। রুদ্রাণী যদিও একটু অন্যমনস্ক হঠাৎ। গালে তর্জনি ঠেকিয়ে কী ভাবল একটু। বলল, ”ম্যাম আমি ভেবেছিলাম আপনি পোলিশ। গ্লিনস্কি টাইটেলটা পোলিশ বলে জানতাম।”

    ”ঠিক—ই। আমরা পোলিশ জিউ। কোনো এক সময়ে আমরা পোল্যান্ডে থাকতাম বটে।”

    ”আচ্ছা ম্যাম একটা প্রশ্ন—বিছানায় আপনি কোনদিকে মাথা দিয়ে শুয়েছিলেন?” মেয়েটির আচমকা বেখাপ্পা প্রশ্নের শেষ নেই।

    ”কেন? বালিশ যে দিকে রয়েছে, সেখানেই।” বললেন স্টেফানিয়া। মেয়েটির মনের গতি—প্রকৃতি বুঝতে পারছেন না।

    এবার সে বলল, ”চলুন ম্যাম। আমরা পাশের রুমে বসি। কথা আছে। ইটস ভেরি ইম্পট্যান্ট।”

    উপরে দুটিই ঘর। পাশেরটি হ্যাজবোল্ট আঁটা ছিল। রুদ্রাণী চক্রবর্তী নিজেই খুলে ভিতরে ঢুকে লাইট জ্বালিয়েছে। এ ঘরটা মূলত স্টাডি। বইপত্রে ঠাসা। দু—তিনটি চেয়ার আর ছোট একটা বিছানা রাখা আছে। স্টেফানিয়া সোজা গিয়ে বিছানায় বসে পড়লেন।

    ”ম্যাম একটা কথা জানতে চাই, জিদেক স্মালকি নামে কাউকে চেনেন আপনি?” রুদ্রাণী একটা বেতের চেয়ার টেনে বসেছে একদম মুখোমুখি।

    প্রশ্নটা আসতে পারে এমন একটা আশঙ্কা ছিলই। এই মেয়েটির বাড়ি কলকাতায়। সর্বভারতীয় পরীক্ষা দিয়ে এসেছে চাকরি নিয়ে। খুব শার্প। আসলে ঘরছাড়া মানুষেরা সবসময়—ই এমন হয়। একটু ভাবলেন স্টেফানিয়া। তারপর মাথা নাড়লেন, ”না তো।”

    ”আর ইউ সিওর?” মোবাইল বের করে একটা ফোটো সিলেক্ট করে ধরল সে। স্টেফানিয়া অনিচ্ছাসত্ত্বেও দেখলেন। সেই কুমড়োর মতো মুখ। ঢুলুঢুলু চোখ। গালের বাঁ—দিকে গভীর ক্ষতচিহ্ন। বয়সের ভারে সেটা অনেকটা বুজে এলেও ওটা দেখেই ক্রিস্টমাসের পার্টিতে চিনতে পেরেছিলেন জানোয়ারটাকে। সে কি চিনেছিল? নিশ্চয় না। তাহলে কখন লেজ তুলে পালাত। যা হোক, এখন অবশ্য না—চেনার—ই অভিনয় করতে হবে।

    রুদ্রাণী বলল, ”ম্যাম, দিজ ইজ মিস্টার স্মালকি। ইনিই উন্নিকৃষ্ণনের কটেজে পরশু সন্ধেয় খুন হয়েছিলেন। ইনসিডেন্টালি ইনিও পোলিশ। আপনার দেশের লোক।”

    ”বুঝলাম। কিন্তু এটা জেনে আমি কী করব?”

    ”কিছুই না। আপনি তো যা করার করেছেন। উননব্বুই বছরের জিদেক স্মালকিকে খুন করার পিছনে বব ডায়াজের তো কোনও মোটিভ থাকতে পারে না, টাকার লোভ ছাড়া। — যে লোভটা আপনিই দেখিয়েছিলেন!”

    স্টেফানিয়ার বুকের ভিতরটা ধড়াস করে উঠল। এমন একটা কিছু আন্দাজ করেছিলেন। সুতরাং নার্ভাস হলেন না। মুখে কোনও বিস্ময় বা ভয়ের রেখাই ফুটল না তাঁর। তিরাশি বছরের দীর্ঘ জীবনের শুরুটাই এমন ছিল যে অ্যাড্রিনালিন গ্রন্থি সিক্রেশন করে করে কবেই শুকিয়ে হেজে গিয়েছে। হাই তুললেন একটা। বালিশ নিয়ে বিছানায় আধশোয়া হয়ে ব্যঙ্গের সুরে বললেন, ”দ্যাখো ভাই, তোমার কমিশনার আমার বন্ধুস্থানীয়। আমাকে শ্রদ্ধা করেন। একজন সিনিয়র সিটিজেনের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয়, আশা করি জানা আছে তোমার।”

    ”অবশ্যই ম্যাম। আদারওয়াইজ আপনি এখন থানায় থাকতেন।” গলায় বেশ পুলিশি টোন এনে বলল রুদ্রাণী।

    ”আপনার বক্তব্যের অসঙ্গতিগুলিই আমি পয়েন্ট—আউট করছি। এক, ফুলদানিতে যে ফুল পাওয়া গেছে, সেটা কুরিঞ্জি। আপনার নিশ্চয় জানা আছে, বারো বছর অন্তর এই ফুল ফোটে এখানে। আমি যতদূর জানি এই মুহূর্তে এ তল্লাটে মিস্টার উন্নিকৃষ্ণনের কটেজেই এই ফুল ফুটেছে। ফুলটা যে ওখানকার—ই সেটা আমরা পরীক্ষা করলেই জানতে পারব। সম্ভবত বব—ই ওটা এনেছে এখানে।”

    ”দুই, আপনার অ্যাকিউট গ্লুকোমা। যে জন্যে সাইড—ভিশন আপনার নেই বললেই চলে। একটু আগেই তার প্রমাণ পেয়েছি আমি। কথা হল, তাই যদি হয় তবে অন্ধকারে ববের চেস্টের ড্রয়ার হাতড়ান দেখলেন কী করে? চেস্টটা কিন্তু বিছানার একদম ডানদিকের দেওয়ালে।”

    ”তিন—ববের বডিটা লক্ষ করেছেন? বিশেষ করে ওর চোখদুটো। আচমকা তীব্র লাইট কারও চোখে পড়লে আইবলস ওইভাবে বিস্ফারিত হয়। এখানেও আপনি মিথ্যে বলেছেন। আসলে ঘটনা হল, ববের সঙ্গে আপনার ভালোমতোই বচসা হয়। তার প্রমাণ ভাঙা ফুলদানি। ঘরে প্রোব্যাবলি তখন লাইট জ্বলছিল। আপনি—ই সম্ভবত বেডসুইচ অফ করে লাইট নিবিয়ে দেন। বব সম্ভবত আপনার মাথার উপরের সুইচটা অন করতে যায়। আপনি বালিশের নিচ থেকে পাঁচব্যাটারির টর্চটা আচমকাই ওর চোখে মারেন। ববের চোখ বিস্ফারিত হয়। সে চমকে ওঠে। সেই মুহূর্তেই ফায়ার করেছিলেন আপনি। মনে রাখবেন মৃত্যুর পর মানুষের চোখের মণি স্থির হয়ে যায়। এবং সেই অবস্থাতেই থাকে। দু’হাত তফাত থেকে পাঁচব্যাটারির তীব্র আলো আচমকা চোখে না পড়লে কারওর চোখের মণির অবস্থা ওইরকম হয় না ম্যাম। টর্চটা বিছানাতেই পাওয়া গেছে। এবং আনফরচুনেটলি নিভু—নিভু অবস্থায়। ঘটনার আকস্মিকতায় নেবাতেও ভুলে গেছিলেন আপনি। যতই হোক, প্রফেশন্যাল তো নন। তবে হ্যাঁ, এই বয়সেও আপনার অ্যামবিডেক্সটিরিটির প্রশংসাই করতে হয়।”

    ”তোমার কল্পনাশক্তি আছে বটে। কিন্তু মিস্টার উন্নির কটেজে যে খুন হয়েছে সেটাতে আমাকে জড়াচ্ছ কীভাবে?”

    ”ঠিক। সে বিষয়েই আসছি।” বেশ আত্মবিশ্বাসী স্বরে বলল রুদ্রাণী চক্রবর্তী, ”আপনি হয়তো শুনেছেন, অপরাধী যতই চালাক হোক না কেন, কোথাও না কোথাও একটা ভুল সে করে যাবেই। বব ডায়াজ যেমন করেছিল। জিদেক স্মালকির নাড়ি পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে কিনা সেটা নিশ্চিন্ত না হয়েই বেরিয়ে পড়েছিল। বাট, দ্য ফ্যাক্ট ওয়াজ—সে বেরিয়ে যাওয়ার পর কোনওভাবে সামান্য একটু চেতনা এসেছিল স্মালকির। তাতেই হত্যাকারী সম্বন্দে একটা হিন্ট রেখে যায় সে। কী জানেন?—একটা সিক্স—পয়েন্টেড স্টার। নিজের রক্ত দিয়েই মার্বেলের সাদা দেওয়ালে এঁকে দেয় সে। সত্যি বলতে চিহ্নটা প্রথমে আমাদের ভীষণ অদ্ভুত লেগেছিল। কিন্তু জাস্ট একটু আগে আপনিই আমাকে অন্ধকারের মধ্যে আলোর রেখাটা দেখালেন।” পকেট থেকে সেলোফেনে মোড়া নীল তারাটা নিয়ে দেখাল রুদ্রাণী।

    ”আমার বিশ্বাস, এটা আদৌ আপনার বালিশের নিচে ছিল না। ওটা ববের পকেট থেকেই পড়ে গিয়ে থাকবে। ফিংগারপ্রিন্ট নিলেই সেটা জানা যাবে। সে এসেছিল জিনিসটা আপনাকে ফেরত দিতে। —কেন? সেটা আপনিই ভালো বলতে পারবেন। জিনিসটা যে আপনার আগেই স্বীকার করে ফেলেছেন কিন্তু। নীল রংটা সম্ভবত নতুন। এটা কেন করা হয়েছিল বলবেন ম্যাম? কিংবা কেনই বা বব এটা পকেটে বয়ে বেড়াচ্ছিল?”

    স্টেফানিয়া চুপ। বাকশক্তি হারিয়েছেন।

    ”আরও আছে।” পকেট থেকে ব্রেসলেটটা বের করেছে রুদ্রাণী, ”আমার অনুমান এটিও আপনার। ছ’মাস আগে লোকাল একটি দোকানে অর্ডার দিয়ে জিনিসটি আনিয়েছিলেন আপনি। গতকাল দোকানের মালিক আমায় ফোন করে বলে, একটি অল্পবয়সি ছেলে এটি বিক্রি করতে এসেছিল। সন্দেহ হওয়াতে তারা বলে দেয় হিরেগুলো আসল নয়। ছেলেটি চেঁচামেচি করে ফিরে যায়। —ছেলেটি যে বব তাতেও কোনও সন্দেহ নেই। একটু আগে এটা ওর পকেট থেকেই পাওয়া গেছে। এবং ওটা যে হারিয়েছে বা চুরি গিয়েছে এমন কথাও এখনও আপনি বলেননি ম্যাম। তবে কি ধরে নেব ওটা আপনি জিদেক স্মালকিকে খুনের পারিশ্রমিক হিসাবে দিয়েছিলেন। এবং বুদ্ধু বব সেটা বিক্রি করতে গিয়ে আরও বোকা বনে যায়। নিডলেস টু সে, সেই জন্যেই মাঝরাতে প্রতিশোধ নিতে আসে এখানে। আমার বিশ্বাস যে অস্ত্রটি এখানে পাওয়া গিয়েছে সেটা দিয়েই সে স্মালকিকে খুন করেছিল। ফরেনসিক রিপোর্টে সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে।”

    থামল রুদ্রাণী। স্টেফানিয়া ধীরে ধীরে বললেন, ”তোমার কোনও কথার উত্তর আমি দেব না। প্রতিবাদও করব না। কেবল একটা কথা বলি, স্টারটা কেন নীল রং করেছিলাম।”

    ”ম্যাম আপনাকে বলতে হবে না। আমাকেই শেষ করতে দিন। আমার কল্পনাশক্তি কী বলে শুনুন।” রুদ্রাণী শুরু করেছে আবার—’তবে আগে জিদেক স্মালকি নিয়ে একটু বলার আছে। ভাববেন না তার ইতিহাস ঘাঁটিনি আমরা। পোল্যান্ডের ক্রাকো শহরে থাকত সে। হিটলার যখন ইহুদি নিধন যজ্ঞ শুরু করে তখন একাধিক পোলিশ জিউকে সে নাৎসিবাহিনীর হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলে। এইভাবে প্রচুর অর্থও সে রোজগার করে। পরে মিত্রশক্তির কাছে হিটলারের পতন হলে সে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। রাষ্ট্রপুঞ্জ তার নামে হুলিয়াও বের করেছিল। অস্ট্রিয়ায় নাম ভাঁড়িয়ে থাকাকালীন ধরাও পড়ে সে। কিন্তু উপযুক্ত সাক্ষীর অভাবে শেষ পর্যন্ত ছাড়া পেয়ে যায়। আমার কল্পনাশক্তি বলছে, আপনি নিজেও সম্ভবত এই লোকটির শিকার হয়েছিলেন। স্টারটিকে নীল রং করার কারণ লোকটিকে তার দুষ্কর্মের কথা স্মরণ করানো। সেসময় পোলিশ ইহুদিদের নীল রঙের তারা ঝুলিয়ে রাস্তায় বেরোতে হত। —আশা করি, ঠিক বলছি ম্যাম?’

    স্টেফানিয়া কিছু শুনতে পাচ্ছিলেন না। তিনি বিড়বিড় করছিলেন, ”তখন আমার মাত্রই চোদ্দো বছর বয়স। ১৯৪৩ সাল। জিদেক আমাদের পরিবারের সকলের বন্ধু ছিল। সবাই ভালোবাসতাম ওকে। বাবার কাঠের দোকানেই সে কাজ করত। কিন্তু ভেড়ার ছদ্মবেশে সে যে একটি নেকড়ে ছিল, কে জানত! এস—এস আর্মি আর ব্লু—শার্টের দল যখন ক্রাকো শহরে ইহুদি ধরা শুরু করল, তখন আমরা পালাচ্ছিলাম। জিদেক—ই পথ দেখাচ্ছিল। কিন্তু ওর ভিতরের শয়তানটাকে চিনতে পারিনি। শহর থেকে দূরে একটা গোলাবাড়িতে আমাদের রেখে সে চলে যায় খাবার আনতে। কিছুক্ষণ পর ফিরে আসে এস—এস আর্মির কুত্তাগুলোকে নিয়ে। প্রথমে পরিবারের পুরুষ সদস্যদের ধরে নিয়ে চালান করে দেয় ওরা। রেখে দেয় মা আর আমাকে। তারপর শুরু হয় পাশবিক অত্যাচার। ভাবতে বমি পায়, জিদেকও ছিল সেই দলে। একসপ্তাহ ধরে লাগাতার অত্যাচারের পর আমাদের ঠাঁই হয় সব্যিবরের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে। মা সেখানেই মারা যান। আমি কইমাছের প্রাণ নিয়ে কীভাবে যেন বেঁচে যাই। প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, জীবনে কখনও সেই নরকের কীটের দেখা পেলে এই চরম অমানুষিকতার প্রতিশোধ নেব। মিস্টার উন্নিকৃষ্ণন আমার কাছে আসেন মাঝে—মধ্যে। যেদিন জানতে পারি কুত্তাটা ওঁরই কটেজে গেস্ট হয়ে উঠেছে, নিজেকে স্থির রাখতে পারিনি। প্রতিহিংসার আগুনে ছটফট করেছি। শরীরে সামর্থ্য থাকলে কাজটা আমিই করতাম।—তবে বিশ্বাস করো, ববকে আমি মারতে চাইনি। সে আমাকে ভুল বুঝেছিল।”

    চুপ করলেন স্টেফানিয়া। আর মিথ্যে বলতে চান না। একটা ঢাকতে দশটা বলতে হচ্ছে। দিক এরা, যা শাস্তি দেয় দিক।

    রুদ্রাণী বলল, ”আমি জানি ম্যাম। সেটা আইনের উপরেই ছেড়ে দিন।”

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপিশাচ দেবতা – অনীশ দাস অপু
    Next Article বাড়িটায় কেউ যেয়ো না – অনীশ দেব

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }