Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    খুনির রং – অনীশ দেব

    লেখক এক পাতা গল্প539 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    হন্তারক – উল্লাস মল্লিক

    আজ বিজুকে মার্ডার করব ৷ তারপর ওর মুণ্ডুটা ছিঁড়ে লম্বা একটা হাই কিক মেরে পাঠিয়ে দেব পার্কের ওদিকে ৷

    আমার পকেটে ন’ইঞ্চি ফলার একটা ছুরি ৷ কোমরে গোঁজা ওয়ান শটার ৷ আগে কোনোদিন মেশিন চালাইনি ৷ ক্ষুর-টুর দু-একবার চালিয়েছি বটে, কিন্তু মেশিন এই প্রথম ৷ বিজুকে দিয়েই বউনি হবে ৷ ফার্স্ট বুকে নল ঠেকিয়ে দানা ভরে দেব ৷ দানা খেয়ে ওর চোখমুখ যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাবে, বুক ধরে ঝুঁকে পড়বে সামনে; তখন চকচকে ফলাটা পেটে ঢুকিয়ে এদিক থেকে ওদিকে টেনে দেব একবার ৷

    পার্কের এই কোণে ক’টা ঝাঁকড়া ঝাউগাছ ৷ সামনে পোস্টের মাথায় একটা বাল্ব ঝুলছিল ৷ একটু আগেই ইট মেরে সেটার গতি করে দিয়েছি ৷ ফলে জায়গাটা অন্ধকার গুহার মতো ৷ সন্ধে থেকে সেই গুহার মধ্যে পজিশন নিয়ে বসে আছি ৷ সঙ্গে একটা ডাবল এক্সের নিপ আর কাগজে মোড়া চানাচুর ৷ চন্নোমেত্ত খাওয়ার মতো অল্প অল্প চুমুক দিচ্ছি ৷ নেশা লেগে গেলে চলবে না ৷ খুব বিউটিফুল একটা হাওয়া দিচ্ছে ৷ এইরকম হাওয়ায় চড়ে যাওয়ার চান্স থাকে ৷ আজ কিন্তু হাত পা মাথা ঠিক রাখা খুব দরকার ৷

    সামনে একটা ফাঁকা ঘাস-জমি ৷ বাচ্চারা খেলে খেলে টাক ফেলে দিয়েছে ৷ শেষ প্রান্তে দুটো স্লিপ আর দোলনা ৷ ধারে ধারে ক’টা সিমেন্টের বেঞ্চ ধৈর্য ধরে ওয়েট করছে ৷ বাতিকগ্রস্ত কয়েকটা বুড়ো হাঁটাহাঁটি করছে ফাঁকা জমিটায় ৷ ওদের কেটে পড়ার সময় হয়ে গিয়েছে ৷ একটা, দুটো করে হাজির হচ্ছে রাধাকেষ্টর দল ৷ এরপর পার্কটা ওদের আন্ডারে চলে যাবে ৷ মোটামুটি শান্তিপূর্ণ বখরা ৷ বিকেলটা বাচ্চা আর মায়েদের, সন্ধেটা বুড়ো-বুড়িদের, সন্ধের পর থেকে রাত আটটা-সাড়ে আটটা পর্যন্ত কুঞ্জবন ৷ তারপর রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জুড়ে বসে আমার মতো কিছু হরিপদ মাল ৷ জলটল খায়, গাঁজা টানে ৷

    আমাদের এই ছন্নছাড়া এলাকায় পার্কটা ঝি-এর নাকে হিরের নাকছাবির মতো ৷ অনেকদিন ভেস্টেড হয়ে পড়ে ছিল জমিটা ৷ বনতুলসী, গাবজ্যারেন্ডা আর কুলেকাঁটার জঙ্গল ৷ সেকেন্ড ব্রিজটা হতে কলকাতা শহর হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ল আর সঙ্গদোষে বখে গেল আমাদের এলাকাটা ৷ বড় বড় বাড়ি উঠল আর ফ্যামিলিগুলো সব ছোট ছোট হয়ে গেল ৷ ঘরে ঘরে ঢুকে গেল হট ছবি আর কোল্ড ড্রিংক্স ৷ ফিরিওলার মতো চার পাশে ছোঁক ছোঁক করে প্রোমোটারের দল ৷ সবুজ মাঠগুলোয় এখন ঝকঝকে ফ্ল্যাটবাড়ি ৷ পাড়ার কয়েকপিস মাথা একটা মালদার প্রোমোটারকে ধরে এই পার্কটা বাগিয়ে নিয়েছে ৷

    একটা ছেলে আমার সামনে দাঁড়িয়ে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে ৷ এগুলো ফেকু পার্টি, এই সময় জোটে ৷ বেঞ্চে কোনো জোড়ের পাশে বসে উদাস মুখে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে কিংবা বারবার ওদের সামনে দিয়ে হেঁটে যায় ৷ ভাবখানা এই, যেন হাওয়া খাচ্ছে ৷ বিজুও এই দলে ৷ শালা ভদ্দরলোক ৷ মাল খাই না, গাঁজা টানি না, কিন্তু কেউ প্রেম করলে লুকিয়ে কথা শুনি ৷ আমরা মালখোর, আমাদের মন পরিষ্কার ৷ কাউকে ঝাড়ার হলে সামনা সামনি ঝাড়ব ৷ আর বিজু হারামির বাচ্চা পিছন থেকে বাম্বু গুঁজবে ৷

    আমার পিছন দিকে কিছুটা রেলিং কেউ হাওয়া করে দিয়েছে ৷ সেই ফাঁক গলে একটা কুকুর ঢুকে পড়েছে ৷ আমার সামনে দাঁড়িয়ে ল্যাজ নাড়ছে কুকুরটা ৷ বিজুও মানিকবাবুর সামনে দাঁড়িয়ে এমনি করে ল্যাজ নাড়ত ৷ আমি দুটো চানাচুর ছুড়ে দিই কুত্তাটার দিকে ৷

    মানিকবাবুর মারুতি ভ্যান রোডে ভাড়া খাটে ৷ আমিই চালাতুম গাড়িটা ৷ মানিকবাবু সরল-সিধে আদমি ছিল ৷ হারামির বাচ্চাটা নাগাড়ে চুকলি কেটে বিষিয়ে দিয়েছে ওকে ৷ চাকা এক কিলোমিটার গড়ালে মালিকের সাত টাকা চাই ৷ কেউ পার্টির সঙ্গে বেশি রফা করলে সেটা তার ৷ মালিককে তার হক বুঝিয়ে দিলেই হল ৷ এটাই লাইনের নিয়ম ৷ বিজু শুয়ারটা প্রথম থেকে মানিকবাবুর কান ভারী করত ৷ এ লাইনে কোন শালা দু নম্বরি করে না, বুকে হাত দিয়ে বলুক দেখি৷

    বিজুকে অনেকবার সাবধান করে দিয়েছি ৷ তবু শালা কথা শুনল না ৷ মরণ নেহাতই ওর কপালে আছে ৷ সবারই পয়সার দরকার ৷ তোর পেট আছে, আমার নেই? কবজির জোর থাকলে কাজ জুটিয়ে নে ৷ অপরের আহার ছিনিয়ে নিতে গেলে সে থাবা মারবেই ৷

    দুটো বুড়ো সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে ৷ একজন তেড়ে নিন্দে করছে ছেলের বউয়ের ৷ উল্টো দিক থেকে আসছে একজোড়া লায়লা-মজনু ৷ মেয়েটা মাথা হেঁট করে ওড়নার খুঁট আঙুলে জড়াচ্ছে ৷ ছেলেটা হাত-পা নেড়ে কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা করছে মেয়েটাকে ৷ দেখেই বোঝা যায় নতুন তুলেছে ৷ কাছে আসতে দেখি মেয়েটার সাইড ফেসটা অনেকটা চুমকির মতো ৷ চুমকির কথা মনে পড়তেই মাথার মধ্যে রাগটা চড়াক করে ওঠে ৷ বোতল থেকে একসঙ্গে অনেকটা গলায় ঢেলে দিই ৷

    চুমকি ছিল আমার শান্তির জায়গা ৷ সারাদিন গাড়ি চালিয়ে, ইঞ্জিনের হিটে শরীর সেঁকে, প্যাসেঞ্জারের সঙ্গে খিটিমিটি করে সন্ধেবেলা চুমকির কাছে যেতুম ৷ ব্যস, তখন সব কিছু ভ্যানিশ ৷ চুমকির কাছাকাছি থাকলে কী শান্তি! কিন্তু খুব বেশি কাছে যেতে দিত না ও ৷ আসলে হেভি নীতিবাগীশ তো ৷ তা ছাড়া ওকে তো আমার মনের কথাটা জানানোই হয়নি ৷ এই সিচুয়েশনে কোনো মেয়েই বেশি অ্যালাও করবে না ৷ ওরা ইনসিওরেন্সের মতো নিরাপত্তার গ্যারান্টি চায় ৷ চুমকিকে বহুবার বলতে গিয়েও খেই হারিয়ে ফেলেছি ৷ আসল কথাটা জানানো হয়নি ৷ কীভাবে শুরু করব? আমি তোমাকে ভালোবাসি ৷ পেয়ার করি ৷ লাভ করি! নাঃ, হচ্ছে না ৷ যাই বলি না কেন কেমন যেন পাতি হয়ে যাচ্ছে ব্যাপারটা৷ শালা, আমার মতো ছেলে, কত লোককে চমকাচ্ছে, কত খিস্তি ছোটাচ্ছে, সে এই সামান্য কথাটা বলতে পারছে না ৷

    চুমকির বাবা-মা আমাকে ঠিক গিলতে পারছিল না ৷ আমি নেহাত মস্তান টাইপ, যেখানে- সেখানে ঝাড়পিট করে বেড়াই, তাই মুখের উপর কিছু বলতে পারেনি ৷ বাপটা তো হেঁপু রুগি, সারাদিন ফুসফুসে বাড়তি একটু বাতাস নেওয়ার জন্যে খাবি খাচ্ছে ৷ একদিন আমাকে ধরল,— তা তুমি কী ঠিক করলে, গাড়িই চালাবে? বলতে বলতে কাশির দমক এসে গেল ৷ একটু সামলে নিয়ে ফের শুরু করে,— আসলে লাইনটা তো ঠিক… ৷ এই পর্যন্ত বলে ফের কাশে ৷ মনে হল এবার ইচ্ছা করে কাশছে ৷ বলতে চাইছে— লাইন তো ঠিক ভদ্দরলোকের নয় ৷

    আমি বললুম, দেখি কী করা যায় ৷

    দেখো, দেখো ৷ এখন কত ভালো ভালো লাইন বেরোচ্ছে ৷ তা তুমি কম্পিউটার শেখো না কেন! চারদিকে তো দেখছি সবাই খুব কম্পিউটার শিখছে ৷

    পার্কে এখন বুড়ো-বুড়ো কেউ আর নেই ৷ কংক্রিটের বেঞ্চগুলো নওজোয়ানদের পেয়ে চনমনে হয়ে উঠেছে ৷ ওদিকে ছাতিম গাছটার নীচে দু’পিস এসে বসেছে ৷ পুরনো পাপী ৷ প্রায়ই দেখি এখানে ৷ মনে হচ্ছে জোর খিচাইন লেগেছে ওদের ৷ কথা শুনতে পাচ্ছি না, কিন্তু হাত-পা নাড়া দেখে বুঝতে পারছি মেয়েটা খুব তোড় করছে ছেলেটাকে ৷ ছেলেটা একটু ভেবলু টাইপের ৷ কেসটা হ্যান্ডেল করতে পারছে না ৷ চুমকি একদিন একটা ব্যাপারে এমনই খচে গিয়েছিল আমার উপর ৷ কিন্তু আমিও শালা ওস্তাদ ড্রাইভার ৷ ঠিক পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেলুম ৷ আধ ঘণ্টার মধ্যে চুমকি গলে জল৷ বলল, সরি ৷

    আমি বললুম, ঠিক আছে, আমি কিছু মাইন্ড করিনি ৷

    চুমকি বলল, সত্যি বলছ!

    বললুম, মা কালীর দিব্যি ৷ তোমার উপর রাগ করতে পারি না ৷

    কেন, রাগ করতে পারো না কেন?

    নিখুঁত পাস দিয়েছে চুমকি ৷ বলটা শুধু ফাঁকা গোলে ঠেলে দেওয়া ৷ কিন্তু ক্যালাস স্ট্রাইকারের মতো অমন সুযোগটা উড়িয়ে দিলুম ৷ কোনওরকমে তুতলে মুতলে বললুম, আসলে আমি তোমাকে খুব…

    চুমকি খুব আগ্রহ নিয়ে আমার মুখের দিকে তাকাল—আমাকে খুব কী!

    তখন ঘাবড়ে গিয়ে আমি কথা হারিয়ে ফেলেছি ৷ এদিকে চুমকি বার বার তাগাদা দিচ্ছে, কী হল বলবে তো!

    শেষে মরিয়া হয়ে বলে ফেলি, আমি তোমাকে একদিন গাড়ি করে বেড়াতে নিয়ে যাব ৷

    চুমকি খানিকক্ষণ অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে ৷ ক্রমশ থমথমে হয়ে ওঠে ওর চোখমুখ ৷ একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে, যদি কোনোদিন তোমার নিজের গাড়ি কেনার মুরোদ হয় তো চাপব ৷

    বিজু যে পিছনে লেগেছে বুঝতে পারি মাসখানেক আগে ৷ সেদিন হোল-ডে প্যাসেঞ্জার নেই ৷ সারাদিন গাড়ির মধ্যে বসে ভেপে যাচ্ছি ৷ এদিকে সন্ধেবেলা আমার চুমকির সঙ্গে প্রোগ্রাম; ‘ম্যায় হুঁ না’ দেখতে যাব ৷ তারপর ‘নিরালা’ রেস্টুরেন্টে মোগলাই চিকেন কষা খাব ৷ চুমকিকে বলে দিতে হবে কথাটা ৷ আর ফেলে রাখা ঠিক হবে না ৷ শুনছি দেবু লাইন লাগিয়েছে চুমকির পিছনে ৷ সত্যদা পার্টির ঘ্যাম নেতা ৷ সেই সত্যদার পাতা চাটে দেবু ৷ কোনো প্রোমোটারই সত্যদার পারমিশন ছাড়া এলাকায় ঢুকতে পারে না ৷ দিন দিন লাল হয়ে যাচ্ছে সত্যদা ৷ সেইসঙ্গে দেবুর গায়েও লাল না হোক গোলাপি আভা লাগছে ৷ দেবুর গায়ে পার্টির স্ট্যাম্প আছে, দেবুর বাড়িতে এক্সট্রা ঘর আছে, দেবুর ঝকঝকে মোটর সাইকেল আছে ৷ আমার বাড়িতে বাতের ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে ঠাকুরের নাম নেওয়া মা, সিন্থেটিক শাড়ি পরে পাড়ার কে জি ইস্কুলে ‘ব্যা ব্যা ব্ল্যাক শিপ’ শেখাতে যাওয়া বোন, আর পোলিও-পা নিয়ে ল্যাকপ্যাক করা ভাই ৷ এসব ভাবলেই টেনশন বাড়ে ৷ ঠিক করেছি, যা থাকে কপালে, বলেই দেব ৷ আর চুমকিকেও বলি, সবই তো বুঝিস! তবু মুখ দিয়ে বলাবে ৷ শুনে কী শান্তি কে জানে! তো সেদিন বসে বসে দু’বান্ডিল বিড়ির ছাদ্দ করে সন্ধেবেলা মানিকবাবুকে গিয়ে বললুম, টাকা দিন, ব্রেক-শুগুলো নষ্ট হয়ে গেসল, নতুন লাগিয়েছি ৷

    মানিকবাবু বলল, দেখি পুরনোগুলো ৷

    আন্দাজ করেছিলুম মানিকবাবু চাইতে পারে ৷ ব্যবস্থা করাই ছিল, গ্যারেজ থেকে জোগাড় করা পুরনো মাল গছিয়ে দিলুম ৷

    মানিকবাবু ভুরু কুঁচকে একটু দেখল ৷ শালা বমকে গেছে ৷ কিন্তু টাকাও দিল না ৷ বলল, কাল টাকা নিয়ে যাস ৷

    পরে শুনি বিজু রাত্তিরবেলা গ্যারেজে গাড়ি নিয়ে গিয়ে ব্রেক-শু-গুলো টেস্ট করিয়েছিল ৷

    মানিকবাবুকে ভালো বলতে হয়; এর পরও আমাকে গাড়ি চালাতে দিয়েছে ৷ কিন্তু সেদিন পুরো প্ল্যানটা ধসে গেল৷ হেভি গোঁসা খেয়ে গেল চুমকি ৷ স্ট্রেট জানিয়ে দিল ঠ্যালাচালক, রিকশাচালক, মারুতিচালক সব একই ক্যাটাগরির ৷

    হঠাৎ দেখি বিজু পার্কে ঢুকছে ৷ শিরদাঁড়া টান টান করে বসি ৷ কিন্তু সঙ্গে ওটা কে! হ্যাঁ ঠিকই দেখেছি; একটা মেয়ে ৷ শুনেছিলুম বটে বিজু নাকি একটা মাল তুলেছে ৷ খবরটা তাহলে সত্যি ৷ মেয়েটা না কি একটা উকিলের মেয়ে, পাড়ায় নতুন আমদানি ৷ মেয়েটাকে দেখে মাথার মধ্যে রাগটা ফের চড়াক করে ধাক্কা দেয় ৷ বোতল থেকে বেশ বড় একটা চুমুক মারি ৷

    বিজু মেয়েটাকে নিয়ে পার্কের শেষ প্রান্তে একটা বেঞ্চের উপর বসেছে ৷ ওদের পিছনে দেবদারু গাছের সারি ৷ কচি কলাপাতা রঙের নতুন পাতায় আলো পড়ে ঝলমল করছে ৷ বিজু আজ খুব ফ্যাশান মেরে জিন্স আর গেঞ্জি পরেছে ৷ হাতে পয়সা এসেছে, এখন মাঞ্জা তো দেবেই ৷ দাঁড়া শালা, তোর ফ্যাশান ফুটিয়ে দিচ্ছি ৷ কিন্তু মেয়েটা জুটে তো মহা ফ্যাসাদ হল দেখছি! শালা হল্লা মচালেই কেস কেলো হয়ে যাবে ৷ যাকগে, ফার্স্ট চেষ্টা করব মেয়েটাকে ভাগিয়ে দিতে, গড়বড় করলে দুটোকেই ঝেড়ে দেব ৷

    বিজুর সঙ্গে এক ক্লাসে পড়তুম ৷ খেলাধুলো, মেয়ে-ইস্কুলের সামনে জটলা করা, প্রথম সিগারেট টানা— সবই একসঙ্গে ৷ সেই বিজু এত বড় গদ্দারি করবে ভাবতে পারিনি ৷ সমানে পিন মেরে গিয়েছে মানিকবাবুকে ৷ হপ্তাখানেক আগে সেদিন দুটো লং ট্রিপ মেরেছি ৷ ভালোই কামানি হয়েছে ৷ চাঁদুর ঠেকে গিয়ে দু’পেগ চাপিয়েও নিয়েছি ৷ বাড়ি ফিরছিলুম বেশ মুড নিয়ে ৷ ক’দিন ধরেই ভাবছি চুমকিকে একটা সিটি গোল্ডের হার দেব ৷ চৌরাস্তার মোড়ে একটা ভাড়া পেলুম ৷ দুটো লোক, সঙ্গে একটা মেয়েছেলে; সন্তোষপুর যাবে ৷ তখন আমার পকেট গরম ৷ অন্য সময় হলে সিওর কাটিয়ে দিতুম ৷ কিন্তু এখন আমার পয়সার দরকার ৷ চুমকির ব্যাপারটা ফেলে রাখা যাবে না ৷ দেবু স্ট্রেট লাইনে ঢুকে পড়েছে ৷ কিন্তু আমি সিওর, চুমকিকে শুধু বলার অপেক্ষা ৷ বললেই ও রাজি হয়ে যাবে ৷ চুমকি শুধু আমার মুখ থেকে শুনতে চায় ৷ কিন্তু ওকে তুলব কোথায়! একটা ঘরে সাতজন মেম্বারের সঙ্গে পোলট্রির মুরগির মতো গাদাগাদি করে থাকি৷ ইমিডিয়েট একটা ঘর তুলতে হবে ৷ তো সেদিন মেয়েছেলে দেখে বুঝলুম ভালো খেঁচে নেওয়া যাবে ৷ বেশ চড়িয়ে রেট বললুম ৷ পার্টিও রাজি হয়ে গেল ৷

    সন্তোষপুরের দিকে গাড়িটা ছুটছিল ৷ দু’পাশে অন্ধকার মাঠ ৷ হঠাৎ পিছন থেকে গলায় ছুরি ধরে গাড়ি থামাতে বলল ৷ তারপর আমাকে পুরো ছেঁকে নিয়ে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল তিনজন ৷ ফিরে এসে মানিকবাবুকে সব বললুম ৷ মানিকবাবু গম্ভীর মুখে শুনল ৷ শেষে বলল, ঠিক আছে দেখছি, তুই গাড়ি গ্যারেজ কর ৷

    পরদিন সকালে গিয়ে দেখি গ্যারেজ ফাঁকা ৷ মানিকবাবু বলে দিল, তোকে আর গাড়ি চালাতে হবে না ৷

    সেই গাড়ি এখন বিজু চালাচ্ছে ৷ বহুত স্ক্যানডাল ছড়িয়েছে আমার নামে ৷ আমি আর গাড়ি পাচ্ছি না ৷ মা আমার দিকে আজকাল কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকায় ৷ বোন সেদিন বলল, দাদা তোর নামে কী সব বিচ্ছিরি কথা শুনছি ৷

    চুমকির কাছে গেলুম একদিন ৷ ও সেজেগুজে কোথায় একটা যাচ্ছে ৷ খুব ব্যস্ত ৷ কথা বলার সময়ই হল না ৷

    কাজের ধাক্কায় চারদিকে ঘুরি ৷ দেখি দেবুর মোটর সাইকেলের পিছনে চুমকি ৷ ঝড়ের মতো আমার পাশ দিয়ে চলে যায় ৷ চুমকিকে বলাই হল না কথাটা ৷ মনে মনে খিস্তি পাড়ি নিজেকে ৷

    এখান থেকে দেখছি খুব লেকচার দিচ্ছে বিজু ৷ শালা কথার মাস্টার! মেয়ে পটাতে ওস্তাদ ৷ নে, যত পারিস বাতেলা ঝেড়ে নে, একটু পরেই তো ফুটে যাবি ৷

    ফের একটা চুমুক মেরে নিজেকে চাঙ্গা করি ৷ চুমকির জন্য দুঃখটা বুকের মধ্যে ঘাই মারে ৷ চুমকিও আমাকে ভুল বুঝল ৷ চুমকি, তোমার দিব্যি, টাকাটা সেদিন সত্যিই চোট হয়ে গেসল ৷ আমাকে আর একটু সময় দিলে পারতে ৷ তোমাকে ছুঁয়ে বলছি, তোমাকে আমি খুব… ৷

    যাঃ শালা, মাতাল হয়ে গেলুম নাকি! ফালতু চিন্তা ঝেড়ে ফেলে সোজা হয়ে বসি ৷ রাত বাড়ছে, একটা-দুটো করে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে বেঞ্চগুলো ৷

    বিজু এখনও মেয়েটাকে নিয়ে বসে আছে ৷ অন্ধকার গুহা থেকে বেরিয়ে আসি আমি ৷ এখান থেকে সোজা দেখা যাচ্ছে ওদের ৷ ঝলমলে ঝাউপাতার ব্যাকগ্রাউন্ডে বসে আছে দুজন ৷ পকেটে হাত ঢুকিয়ে মেশিনটা একবার ছুঁয়ে দেখি ৷

    আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি চিৎ হয়ে শুয়ে আছে বিজু ৷ মর্নিং ওয়াকে আসা মানুষজন ভিড় জমিয়েছে লাশটাকে ঘিরে ৷ চারপাশে চাপ চাপ রক্ত ৷ মুখটা হাঁ, চোখ দুটো ঠিকরে বেরিয়ে আসছে ৷ মুখের ওপর ভন ভন করছে মাছি ৷

    নাহ, আর সময় নেওয়া ঠিক হবে না ৷ একটু পরেই রাজ্যের মাতাল আর গেঁজেল এসে জুটবে ৷ আমি কায়দা করে পাশ কাটিয়ে পিছনের দিকে চলে যাই ৷ তারপর বেড়ালের পায়ে এগোতে থাকি ওদের দিকে ৷ এখনও দুজনে খুব মুডে গল্প করে যাচ্ছে ৷

    ওদের পিছনে একটা খুব মোটা গাছ আড়াল করে আমি এগোই ৷ তারপর গুঁড়িটার গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ি৷

    হঠাৎ শুনতে পাই বিজু বলছে, আমি তোমাকে খুব…

    মেয়েটা খিলখিল করে হাসছে, খুব কী?

    বিজু তোতলাচ্ছে, আসলে খুব… কী বলব…

    আমি আর এগোতে পারি না ৷ পা দুটো পাথরের মতো ভারী হয়ে গেছে ৷ ছুরিটা শক্ত করে ধরে গাছের গুঁড়িতে ফলাটা ঠেকাই ৷ আমার ঠোঁটগুলো আর বশে নেই, বিড় বিড় করে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে ৷

    কানে আসছে মেয়েটার হাসি আর বিজুর তোতলামি, আমি তোমাকে…

    প্রচণ্ড চাপে ছুরির ফলাটা বেঁকে যাচ্ছে আর আমার অবাধ্য ঠোঁটদুটো বলছে, বলে ফেল নারে শালা, বল, তাড়াতাড়ি বল, দেরি হয়ে যাচ্ছে ৷

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপিশাচ দেবতা – অনীশ দাস অপু
    Next Article বাড়িটায় কেউ যেয়ো না – অনীশ দেব

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }