Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    খুনির রং – অনীশ দেব

    লেখক এক পাতা গল্প539 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    তুমি জানো না – অমলেন্দু সামুই

    তোমাকে আমি প্রায়ই চিঠি লিখি ৷ সপ্তাহে অন্তত তিনখানা ৷ কাজের ফাঁকে-ফাঁকে যখনই সময় পাই— তখনই মনে-মনে কথার পর কথা সাজিয়ে রাখি ৷ তারপর বাড়ি ফিরে দরজায় খিল লাগিয়ে আমার হালকা নীল রঙের প্যাডখানা টেনে নিই৷ চিঠি লেখার জন্যে তুমি হালকা নীল রং খুব পছন্দ করতে ৷ এখন তোমার পছন্দ আমারও পছন্দ হয়ে গেছে ৷ তোমাকে সাদা কাগজে চিঠি লেখার কথা ভাবতেই পারি না ৷ তোমার কাগজের রঙে রং মিলিয়ে লিখতে খুব ভালো লাগে ৷ ভালো লাগে বলেই আমি হালকা নীল রঙের প্যাড ব্যবহার করি ৷ যখনই তোমাকে চিঠি লিখতে বসি— তখনই মনে পড়ে তোমার সেই স্বপ্ন-ঘেরা বাড়ির কথা ৷ কথাটা তুমি প্রায়ই বলতে ৷ বলতে— বেশ সুন্দর একখানা বাড়ি হবে ৷ শহরে নয়— গাঁয়ে ৷ অনেক দূরে, আকাশের গায়ে দু-চারটে পাহাড় দেখা যাবে ৷ কাছেই থাকবে ক্ষীণতনু খরস্রোতা নদী ৷ সেই নদীর কাছে একটা একতলা বাড়ি ৷ সামনে থাকবে ছোট একটা গেট ৷ তার ওপর মাধবীলতার আবরণ ৷ অর্ধচন্দ্রাকৃতি গেটের নীচে ডানদিকে থাকবে ছোট একটা সবুজ রঙের লেটারবক্স ৷ তার গায়ে হলুদ অক্ষরে লেখা থাকবে ‘শিউলিবাড়ি’ ৷ তোমার নামে বাড়ির নাম ৷ তোমার হয়তো মনে নেই, আমি বলেছিলাম, লেটারবক্সের রং হোক হলুদ— তার ওপর নাম সবুজ রঙে ৷ তাহলে বেশ কিছুটা দূর থেকেই বাড়ির নাম, মালিকের নাম চোখে পড়বে ৷ তুমি বলেছিলে, না, সবুজের ওপর হলুদ লেখাই আমার ভালো লাগে ৷ লেখা দেখার জন্যে তাহলে সবাইকে খুব কাছে আসতে হবে ৷ কাছে এলেই দেখতে পাবে— গেট থেকে লাল সুরকির পথটা সোজা বাড়িটার পায়ের কাছে পৌঁছে গেছে ৷ পথের একদিকে সাদা ফুলের মেলা, অপরদিকে রঙিন ফুলের বাসর ৷ সুন্দর সাজানো-গোছানো দুটি বাগিচা ৷ তুমি ‘বাগান’ বলতে না— ‘বাগিচা’ ৷

    এর আগে যে-চিঠিখানা তোমাকে লিখেছিলাম— তাতে বলেছি— তোমার স্বপ্নে-ঘেরা বাড়ি তৈরি হয়ে গেছে ৷ বাংলাদেশের মধ্যেই ছোট একটা পাহাড়ি জায়গা ৷ কাছে নদীও আছে ৷ কিন্তু লোকবসতি খুব কম ৷ হোক কম— তুমি নিরালাই বেশি পছন্দ করতে ৷ বলতে, সেখানে আমি তো কথা বলব না— শুধু হৃদয় দিয়ে অনুভব করব ৷ বুদ্ধি দিয়ে, বিবেক দিয়ে কোনোকিছু বিচার করব না ৷ হৃদয়ের কাছে যা কাম্য— তা-ই হবে আমার কাজ ৷

    আমি তোমার কথা শুনে হাসতাম ৷ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট হয়েও তুমি বড় বেশি ছেলেমানুষি করতে৷ আমি কিন্তু ওগুলো প্রাণভরে উপভোগ করতাম ৷ তাই তোমার গাম্ভীর্য আমায় ব্যাকুল করে তুলত ৷ মনের মধ্যে নানা প্রশ্নের ঢেউ তুলে তোমার গাম্ভীর্যের কারণ খুঁজতাম— কিন্তু পরক্ষণেই তুমি হাসির ঢেউয়ে সবকিছু ভাসিয়ে দিতে ৷ আমার খুব ভালো লাগত ৷ ভালো লাগত তোমার স্বপ্ন, ভালো লাগত তোমার কথা, ভালো লাগত তোমার সবকিছু ৷ আজও ভালো লাগে ৷ গভীর রাতে ঘরের আলো নিভিয়ে যখন বিছানার ওপর কর্মক্লান্ত দেহটা এলিয়ে দিই— হয়তো জানলা দিয়ে একঝলক চাঁদের আলো আলনাটার পায়ের কাছে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে— তখন তোমার পুরোনো কথাগুলো আমার কানের কাছে মধুর স্বরে যেন গান শোনাত ৷ তোমার কণ্ঠস্বর এত মিষ্টি, উচ্চারণ-ভঙ্গি এত সুন্দর ছিল যে, তুমি কথা বললেই মনে হত গান গাইছ ৷ অথচ তোমাকে আমি কোনোদিন গান গাইতে শুনিনি ৷ তুমি আবৃত্তি করতে ৷ বিশেষ করে কবিগুরুর প্রেমের কবিতাগুলো তোমার কণ্ঠে শুনতে ভারী ভালো লাগত ৷

    আজ যদি তুমি এখানে আসতে— দেখতে তোমার স্বপ্ন-ঘেরা বাড়িকে আমি বাস্তবে রূপায়িত করেছি ৷ ঠিক যেখানে যা চেয়েছিলে তুমি— সব সেইভাবেই সাজিয়ে রেখেছি ৷ আলনায় নতুন কেনা আটপৌরে শাড়ি, তার পাশে আমার ধুতি— তোমার শায়া-ব্লাউজ—আমার গেঞ্জি-জামা— সব পাশাপাশি গুছিয়ে রেখেছি ৷ যদি কোনোদিন তুমি এসে পড়ো— তাহলে অবাক হয়ে যাবে ৷ মনে হবে—এই বাড়িতেই থাকতে তুমি ৷ তোমার প্রয়োজনের সব জিনিসই আমি কিনে রেখে দিয়েছি ৷ তুমি এলে তোমার এতটুকু অসুবিধে হবে না ৷ কিন্তু তুমি আসবে কি? জানি না— আজও তুমি আমাকে ক্ষমা করতে পেরেছ কি না ৷ একটা মিথ্যাকে সত্য জেনে তুমি আমাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছ ৷ অথচ আমাকে জিগ্যেস করবার প্রয়োজনও মনে করোনি ৷ যদি জিগ্যেস করতে— তাহলে জানতে পারতে কতখানি ভুল তুমি করেছিলে ৷ কিন্তু তুমি নিজের অভিমান নিয়েই পড়ে রইলে ৷ আমার সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করলে না ৷

    যেদিন তোমাদের বাড়ির দরজা থেকে আমাকে ফিরে আসতে হয়েছিল— সেদিন মুহূর্তের জন্যে এই পৃথিবীটাকে বড় কঠিন বলে মনে হয়েছিল ৷ মায়া-মমতা-ভালোবাসা— সবকিছু যেন বইয়ের ভাষা— বাস্তবের এতটুকু ছাপ নেই ৷ পাশাপাশি দুটো মানুষ যেন প্রয়োজনের জন্যেই কাছাকাছি থাকছে ৷ অন্তরের টান এতটুকু নেই ৷ বড্ড শক্ত মনে হয়েছিল তোমাদের বাড়ির সামনেকার সবুজ ঘাসগুলো ৷ তোমাদের বাড়ির দরজা থেকে আমার মেস—পাঁচ মিনিটের পথও নয়— কিন্তু মনে হয়েছিল, ওইটুকু পথ পেরোতে আমার বেশ কয়েক বছর সময় লেগে গেল ৷ সেদিন মনে হয়েছিল— আমার বেঁচে থাকাটা নিরর্থক ৷ কার জন্যে— কীসের জন্যে বাঁচব— কথাটা আবার নতুন করে ভাবতে হয়েছিল ৷

    তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে— আমরা কয়েকজন ছাত্র তোমার বাবার কাছে পড়তে আসতাম ৷ তোমার বাবা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার ছিলেন ৷ আর আমরা একটা ডিগ্রির লোভে বারবার তোমার বাবার কাছে আসতাম ৷ তুমি বোধহয় তখন থার্ড-ইয়ারে পড়ছ ৷ আর তোমার বোন পাপিয়া সবে কলেজে ভরতি হল ৷

    প্রথম দিনই তোমার বাবা তোমার সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন ৷ বললেন, এটি হল আমার বড় মেয়ে, নাম শিউলি ৷ এর সঙ্গে আলাপ করে রাখো ৷ কারণ আমার লাইব্রেরির চাবি এর কাছেই থাকে ৷

    কথাটা বলার ধরনে আমরা সবাই হেসে উঠেছিলাম ৷ আমরা মানে— আমি, চন্দন সোম, অনিরুদ্ধ চৌধুরী আর কৌশিক গুপ্ত ৷

    চন্দন সোম অকস্মাৎ প্রশ্ন করে বসেছিল, আপনি কী খেতে ভালোবাসেন?

    প্রশ্নটা তোমাকে করা হচ্ছে বুঝতে পেরেও তুমি একটু অবাক হওয়ার ভান করেছিলে ৷ চোখ দুটো একটু নাচিয়ে বলেছিলে, আমি?

    চন্দন সোম বলেছিল, হ্যাঁ—আপনি ৷

    তুমি বলেছিলে, কেন বলুন তো?

    তাহলে রোজ সেই জিনিসটা নিয়ে আসব— আর আপনি আমাদের বেশি করে বই দেবেন ৷

    ওভাবে আমি বই দিই না ৷ পড়াশুনোয় যার মনোযোগ বেশি, সে-ই বেশি বই পাবে ৷

    তোমার বাবা হেসে বলেছিলেন, আমার মেয়েটি কিন্তু খুব কড়া ৷ বই নিয়ে খেলা করতে দেখলেই রেগে যাবে ৷

    আরও দু-চারটে হালকা কথাবার্তার পর তোমার বাবা বললেন, এটাকে তোমরা নিজের বাড়ি বলেই মনে করো ৷ যখনই সময় পাবে চলে আসবে, আমার লাইব্রেরিতে বসে পড়াশুনো করবে ৷ কোনোরকম সঙ্কোচ কোরো না ৷

    বলা বাহুল্য, প্রাথমিক আলাপে যে-সঙ্কোচ আমাদের ছিল—দু-চারদিনের মধ্যেই সেটা আমরা কাটিয়ে উঠেছিলাম ৷ আমাদের মধ্যে আমিই ছিলাম একটু লাজুক প্রকৃতির ৷ তাই বোধহয় তোমার দৃষ্টি আমার ওপর আগে পড়েছিল ৷ আরা আসতাম— কোনোদিন তোমার বাবা থাকতেন— কোনোদিন হয়তো থাকতেন না ৷ আমরা সোজা লাইব্রেরি-ঘরে চলে যেতাম ৷ তুমি কোমরে কাপড় গুঁজে সারা ঘরে দৌড়াদৌড়ি করে বেড়াতে ৷ এখানে এ-বইটা রাখা, ওখান থেকে সেই বইটা নামানো— শাড়ির আঁচল দিয়ে বইগুলো মুছে যথাস্থানে রাখা— আমরা বইয়ের পাতা খুলে পড়ার চেষ্টা করতাম— আর তার মাঝে লীলায়িত ভঙ্গিতে তুমি ঘুরে বেড়াতে ৷ ওদের কথা জানি না— আমি কিন্তু তোমার উপস্থিতিতে বইয়ের পাতায় মনঃসংযোগ করতে পারতাম না ৷ তোমার আলতা-রাঙানো পায়ের দিকে তাকিয়ে থাকতাম ৷

    তোমাদের বাড়িতে একটা জিনিস লক্ষ করেছিলাম— তোমার মাকে কোনোদিন আমরা দেখিনি ৷ অথচ অনুভব করতে পারতাম— তিনি আছেন ৷ তোমার মাকে আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করত ৷ তোমাদের যাওয়া-আসায় যখন দরজার ভারী পরদাটা একটু নড়ে উঠত, সেই ফাঁক দিয়ে আমি তোমার মাকে দেখতে চেষ্টা করতাম ৷ তুমি জানো— আমার মা খুব ছেলেবেলায় মারা গেছিলেন ৷ তাই বোধহয় মা সম্বন্ধে অত দুর্বলতা ৷

    একদিন— মনে আছে— সন্ধ্যার সময় আমি তোমাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম ৷ তারিখটাও আমার মনে আছে ৷ কলিংবেলের আওয়াজে দরজা খুলে দাঁড়িয়েছিলে তুমি ৷ আমার ভালোও লেগেছিল, আবার ভয়ও করছিল ৷ ভালো লেগেছিল কারণ ভালো লাগাটা ছিল স্বাভাবিক ৷ আমাদের মধ্যে কথাবার্তা বেশি না হলেও—তোমার সম্বন্ধে আমি কেমন যেন একটু দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম ৷ তোমাদের বাড়ি থেকে ফিরে এসে ঘরের আলোটা নিভিয়ে শুয়ে পড়তাম বটে, কিন্তু ঘুম আসত অনেক দেরিতে ৷ অন্ধকার ঘরের মধ্যে আমি যেন তোমাকে দেখতে পেতাম ৷ তুমি কথা বলছ, হাসছ— কিন্তু চোখ দুটি ব্যথা-মলিন ৷ মনে হয়, কী যেন তুমি বলতে চাও— অথচ বলতে পারছ না ৷ আমি মনে-মনে হাতড়ে মরতাম— কেন অমন সুন্দর চোখদুটি সবসময় ব্যথায় ভরে থাকে? বড্ড জানতে ইচ্ছে করত ৷ অথচ তোমাকে জিগ্যেস করতেও ভয় হত, লজ্জা করত ৷ আমার মনে হত— আমার দুঃখের সঙ্গে তোমার ব্যথাভরা-চোখের কোথায় যেন মিল আছে ৷ আর সেই মিল খুঁজতে গিয়ে কত রাত আমি না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিয়েছি ৷

    সেদিন সন্ধ্যায় তোমাদের বাড়িতে আমি একাই গিয়েছিলাম ৷ তুমি দরজা খুলে দাঁড়িয়েছিলে, আমাকে সামনে দেখতে পেয়ে বললে, ভেতরে আসুন ৷

    আমি বললাম, স্যার— ৷

    বাড়ি নেই ৷

    তাহলে আমি বরং যাই ৷ পরে আসব’খন ৷

    ওমা, চলে যাবেন কেন?— ভুরু দুটো একটু কাঁপিয়ে ঠোঁটের কোণে সূক্ষ্ম হাসির রেশ টেনে তুমি বলেছিলে, ভেতরে আসুন ৷

    আমি ভেতরে এসেছিলাম ৷ বুকের ভেতরটা একটা অজানা আনন্দে থরথর করে কাঁপছিল ৷ তোমার কাছাকাছি এলেই ওটা হত ৷ তোমার নির্দেশমতো একটা চেয়ারে বসলাম ৷ তুমি বললে, আপনি এসেছেন ভালোই হয়েছে— একা-একা বোর হয়ে যাচ্ছিলাম ৷

    একা-একা কেন?

    বা রে—বাবা-মা-পাপিয়া— সব চলে গেল যে!

    চলে গেল? কোথায়?

    বালিগঞ্জে ৷ পিসিমার বাড়িতে ৷

    ও—তাই বলো ৷ আনি ভাবলাম বুঝি— ৷

    দাঁড়ান— চা তৈরি করে আমি ৷ চা খেতে-খেতে গল্প করা যাবে ৷

    বলে তুমি চলে গেলে ৷ হঠাৎ মনটা আমার খুশিতে ভরে উঠল ৷ তোমাদের অত বড় বাড়ি ৷ অথচ তুমি-আমি ছাড়া কেউ নেই ৷ মনে-মনে এইরকমই একটা সুযোগ আমি যেন চেয়েছিলাম ৷ একা-একা তোমাকে অনেকগুলো কথা বলবার জন্যে মনের ভেতরটা ছটফট করতে লাগল ৷ অথচ ভয়ও করছিল ৷ যদি তুমি আমাকে ভুল বোঝো! আমার স্বাভাবিক চাওয়াকে যদি হ্যাংলামো ভাবো ৷ বলব কি বলব না— মনস্থির করতেই বেশ কিছুটা সময় কেটে গেল ৷ তুমি চা নিয়ে ঢুকলে ৷ এক পলক তাকিয়েই বুঝতে পারলাম, এই অবসরে তুমি মুখে একবার পাউডারের পাফটা বুলিয়ে নিয়েছ ৷ চোখে আর-একবার কাজলের সূক্ষ্ম রেখা টেনেছ ৷ বুঝতে পারলাম, আমার কাছে তুমি নিজেকে সুন্দরতর করে তোলার চেষ্টা করেছ ৷ সেই মুহূর্তে নিশ্চিত হলাম যে, আমার প্রতিধ্বনি তোমার হৃদয়েও বাজে ৷ যে-কথাগুলো এতক্ষণ মনের জোরে সংগ্রহ করছিলাম— সেই কথাগুলো খুব স্বাভাবিকভাবেই তোমাকে বলে ফেললাম ৷ লক্ষ করলাম, আমার কথা শুনতে-শুনতে বারবার তুমি ওপরের দাঁত দিয়ে নীচের ঠোঁটটা চেপে ধরলে, ভুরু দুটো কী এক চঞ্চলতায় থরথর করে কাঁপতে লাগল, চোখের দৃষ্টি আরও গভীর হল— তোমার দু-গালে সূর্যাস্তের রং ধরল ৷

    সেদিন আর পড়া হল না ৷ নিস্তব্ধতার মধ্যে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে আমি চলে এলাম ৷ এর আগে বহুদিন আমি রাত্রে ঘুমোতে পারিনি, কিন্তু সেদিন না ঘুমোতে পারার মধ্যে এক স্বর্গীয় আনন্দ উপভোগ করেছিলাম ৷ মনে হয়েছিল, এ-জীবনে বেঁচে থাকার একটা অর্থ আছে, একটা আনন্দ আছে ৷ একজন নারীর কাছে নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার মধ্যে যে এত সুখ আছে, তা কে জানত!

    তারপর থেকে তোমাদের বাড়িতে আমার যাওয়াটা খুব স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে গেল ৷ তোমার বাবা ভাবলেন, আমি বুঝি পড়াশোনায় অধিক মনোযোগী হয়েছি ৷ কিন্তু তোমার মুখে সবসময় একটা দুষ্টু হাসি খেলা করত ৷ সকলের চোখ এড়িয়ে তুমি ইশারায় আমাকে একটু বেশিক্ষণ থাকতে বলতে ৷ আমি যখন রসিকতা করে তোমার সঙ্গে আমার বর্তমান সম্পর্কের কথা বলতাম, তুমি কটাক্ষ করে আমাকে শাসন করার ভঙ্গি করতে— আমার খুব ভালো লাগত ৷ ভালো লাগত, বোধহয় তুমি বলেই ৷

    এমনিভাবে আমরা আরও কিছু এগোলাম ৷ বাড়ির সীমানার বাইরেও আমাদের দেখা হতে লাগল ৷ কোনোদিন হেদুয়া, কোনোদিন কলেজ স্কোয়ার, কোনোদিন বা আরও একটু দূরে— বালিগঞ্জ লেকে ৷ মাঝে একদিন তোমার সঙ্গে তোমার বোন পাপিয়াও এসেছিল ৷ পাপিয়াকে আমার খুব ভালো লাগত ৷ অমন বোন যদি আমার একটা থাকত! পাপিয়া মাঝে-মাঝে তোমার সামনে আমাকে ‘জামাইবাবু’ বলে সম্বোধন করত ৷ তুমি নকল রাগে তার চুল টেনে দিতে ৷

    একদিন তুমি বলেছিলে, সুদীপ্ত, এভাবে আর থাকতে পারছি না ৷ একটা কিছু করা দরকার ৷

    আমি বুঝতে না পেরে বলেছিলাম, কীসের কী করা দরকার?

    অসভ্য! যেন জানে না!

    সত্যি বলছি বুঝতে পারছি না ৷

    জানি— তার মানে আমার মুখ থেকে কথাটা শুনতে চাও ৷ বেশ বাবা— তাই বলছি ৷ —বলে তুমি আনমনে ঘাসের শিষ চিবোতে লাগলে ৷ সেদিনের আবহাওয়াটা ভারী সুন্দর ছিল ৷ সকাল থেকেই দিনটা মেঘলা ৷ দুপুরের দিকে একপশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে ৷ বিকেলে কিছুক্ষণের জন্যে সূর্যের মুখও দেখা গেছিল ৷ আকাশে নীল মেঘের খেলা ৷ বালিগঞ্জ লেকটাকে সেদিন সুন্দরী তরুণীর মতো মনে হচ্ছিল ৷

    আমি বললাম, কই— বলো ৷

    তুমি আধো-আধো স্বরে বললে, এভাবে আর তোমার অপেক্ষায় বসে থাকতে ভালো লাগে না ৷ কখন তুমি আসবে আর আমি সারাদিন ধরে ঘড়ির কাঁটা দেখতে-দেখতে পাগল হয়ে যাই ৷ দুপুরটাকে কী বড় লাগে!

    .

    আমি কী করব বলো ৷ তবুও তো এখন আমি পড়াশোনার নামে রোজই যাই ৷ আগে যে সপ্তাহে দু-তিনদিন যেতাম— তখন ভালো লাগত কী করে?

    আহা— তখন আমি এসব ভাবতাম! তখন তো তুমি শুধু বাবার ছাত্র ছিলে ৷

    আর এখন?

    এখন— আমারও ছাত্র হয়েছ ৷

    তাহলে আমাকে কী করতে হবে আদেশ করুন, মাস্টারমশাই ৷

    তোমাকে যাতে সবসময় দেখতে পাই— সেই ব্যবস্থা করো ৷

    অর্থাৎ?

    তুমি বাবার কাছে যাও ৷

    সেদিনই রাত্রে তোমার বাবাকে আমি সব কথা খুলে বলেছিলাম ৷ বলেছিলাম, আপনার জ্যেষ্ঠা কন্যাটিকে আমি চাই ৷ তোমার বাবা আপত্তি করেননি ৷ বলেছিলেন, বেশ তো— তার জন্যে এত তাড়া কীসের! পরীক্ষা হয়ে যাক— তারপর একদিন এ-বিষয়ে আলোচনা করা যাবে’খন ৷

    কিন্তু সেই সুযোগ আর এল না ৷ একটা মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তুমি আমাকে দূরে সরিয়ে দিলে ৷ একবার জিগ্যেস করবার প্রয়োজনও অনুভব করলে না ৷ তুমি হয়তো জানতে না যে, তোমার বোন পাপিয়ার সঙ্গে চন্দন সোমের ঘনিষ্ঠতা অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়েছিল ৷ পড়াশোনার ফাঁকে-ফাঁকে আমরা যেমন একসঙ্গে থাকবার সুযোগ খুঁজতাম— ওরাও তাই করত ৷ কিন্তু নিজেদের নিয়ে আমরা বড় বেশি ব্যস্ত ছিলাম বলে ওদের ঘনিষ্ঠতা আমাদের চোখে পড়েনি ৷ চোখে না পড়লেও পাপিয়া চন্দন সোমকে ভালোবাসত, ভালোবাসত গভীরভাবেই ৷

    তোমার হয়তো ব্যাপারটা বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে ৷ গোড়া থেকেই বলি ৷ একদিন সন্ধ্যার সময় তোমাদের বাড়িতে গিয়ে দেখি, তুমি বাড়ি নেই ৷ পাপিয়া একটা চেয়ারে বসে ম্যাগাজিনের পাতা ওলটাচ্ছে ৷ আমায় দেখে একগাল হেসে বলল, বসুন, সুদীপ্তদা— দিদি একটু বেরিয়েছে ৷

    কোথায় গেছে?

    আসবে এখুনি ৷ বসুন না ৷

    বসলাম ৷ অপেক্ষা করতে-করতে ক্রমে ধৈর্যহারা হয়ে পড়লাম ৷ পাপিয়া বুঝতে পেরে বলল, একটা গল্প বলুন, সুদীপ্তদা— গল্প বলতে-বলতে দিদি এসে যাবে নিশ্চয়ই ৷

    একটা গল্প বলতে শুরু করলাম ৷ গল্প বলতে-বলতে হঠাৎ টেবিলের তলায় একটা খাম নজরে পড়ল ৷ নিচু হয়ে তুলে নিলাম ৷ পাপিয়া দেখতে পেয়ে তড়িৎগতিতে উঠে এল : ওটা আমার চিঠি— দিয়ে দিন, সুদীপ্তদা ৷

    মজা করার জন্যে বললাম, দাঁড়াও— কে দিয়েছে দেখি ৷

    ভালো হচ্ছে না কিন্তু— ওটা আমার পারসোনাল লেটার— আপনি পড়বেন না ৷

    পারসোনাল লেটার! তাহলে তো একবার পড়ে দেখা দরকার ৷

    পাপিয়া আমার হাত থেকে খামখানা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করল ৷ আমিও একবার এ-হাতে একবার ও-হাতে নিয়ে সেটাকে ঘোরাতে লাগলাম ৷

    প্লিজ, সুদীপ্তদা— দিয়ে দিন ৷

    কে লিখেছে বলো?

    আগে দিন— তারপর বলছি ৷

    উঁহু— অত বোকা আমি নই ৷ আগে বলো— তারপর দেব ৷

    কথা বলতে-বলতেই ছোঁ মেরে আমার হাত থেকে খামখানা কেড়ে নিতে গেল পাপিয়া ৷ আমি সেই মুহূর্তে হাতটা পেছনদিকে সরিয়ে নিলাম ৷ টাল সামলাতে না পেরে পাপিয়া আমার বুকের ওপর পড়ে গেল ৷

    পারলে না তো! — আমি হো-হো করে হেসে উঠলাম ৷

    আপনি ভীষণ অসভ্য! পরের চিঠি দেখতে আছে বুঝি?

    ঠিক সেই মুহূর্তে তোমার আবির্ভাব হয়েছিল ঘরের মধ্যে ৷ সেদিন বুঝিনি— কিন্তু আজ বুঝতে পারি— আমাদের ওভাবে দেখে তোমার মনে একটা নোংরা সন্দেহ উঁকি দিয়েছিল ৷ সন্দেহের সঙ্গে ছিল ঈর্ষা ৷ তাই অস্বাভাবিক গম্ভীর গলায় বলেছিলে, পাপিয়া— আজ লেখাপড়া নেই?

    আছে তো ৷ দেখ না দিদি— সুদীপ্তদা আমার চিঠি দিচ্ছে না ৷

    সুদীপ্ত, চিঠিখানা দিয়ে দাও পাপিয়াকে ৷

    সেদিন তোমার এই আদেশকে আমি খুব স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছিলাম ৷ তাই চিঠিটা ফেরত দিতে-দিতে বলেছিলাম, নেহাত তোমার দিদির আদেশ— তাই দিলাম— নইলে না-পড়ে কিছুতেই দিতাম না ৷

    পাপিয়া এক হাতে বুকের কাপড় ঠিক করতে করতে অপর হাত দিয়ে খামখানা আমার হাত থেকে নিল ৷

    তুমি আবার বললে, পাপিয়া— যাও— গিয়ে পড়াশুনো করো ৷

    পাপিয়া তোমার দিকে অপলক তাকিয়ে ঘর থেকে চলে গেল ৷ বোধহয় তোমার কণ্ঠস্বরের অস্বাভাবিক রূঢ়তায় সে চমকে উঠেছিল ৷

    পাপিয়া চলে যেতে আমি চেয়ার থেকে উঠে এসে বলেছিলাম, কোথায় গিয়েছিলে? আমি এদিকে সন্ধে থেকে এখানে বসে আছি ৷

    সন্ধে থেকে এসে বসে আছ?

    সন্ধে থেকেই তো! পাপিয়াকে জিগ্যেস করে দ্যাখো ৷

    থাক— আর জিগ্যেস করতে লাগবে না ৷ তোমাকে দেখেই বুঝতে পারছি ৷

    আমি একটু হেসে বলেছিলাম, জানো—কাল তোমার বাবাকে বলেছিলাম— ৷

    তুমি উত্তর দিলে, পরে শুনব’খন, সুদীপ্ত— আজ আমি বড় টায়ার্ড ৷

    আমি আর তোমাকে জোর করিনি ৷ সেদিন যদি ঘুণাক্ষরেও অনুমান করতে পারতাম যে, ওটা তোমার ক্লান্তি নয়— সন্দেহ—তাহলে হয়তো তোমাকে আমি বোঝাবার চেষ্টা করতাম ৷ কিন্তু সেটুকু অনুমান করার মতো সুযোগ তুমি আমাকে দাওনি ৷ তাই তোমাকে বিশ্রাম করবার অবকাশ দিয়ে আমি চলে এসেছিলাম ৷

    এই ঘটনার পর বেশ কয়েকটা দিন কেটে গেল ৷ আপতদৃষ্টিতে তুমি আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠেছিলে ৷ লেকে বেড়াতে-বেড়াতে তুমি বলেছিলে, জানো— আমার ভারী ভালো লাগে ভাবতে— বেশ সুন্দর একটা এল-শেপের বাড়ি হবে ৷ সামনে থাকবে ছোট একটা গেট ৷ গেটের ওপর থাকবে মাধবীলতা ৷ সেখান থেকে লাল সুরকি ঢালা রাস্তাটা সোজা চলে যাবে বাড়িটার পায়ের কাছে ৷ রাস্তার দু-দিকে থাকবে ফুলের বাগিচা ৷ একদিকে সাদা, আর একদিকে রঙিন ফুলের মেলা৷ গেটের কাছে একটা লেটার বক্স ৷ সবুজ রঙের ৷ তার ওপর হলুদ রঙে ঠিকানা লেখা থাকবে ৷

    সেদিনই মনে-মনে ঠিক করে ফেলেছিলাম, পরীক্ষাটা হয়ে গেলে তোমার মনের মতো করে একখানা বাড়ি তৈরি করব ৷ উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া কিছু টাকা আমার ছিল ৷ সেই টাকা দিয়ে তোমার স্বপ্ন আমি সফল করে তুলব ৷ কিন্তু তুমি তখন সন্দেহের দোলায় দুলছ ৷ ঈর্ষার জ্বালায় জ্বলছ ৷ পাপিয়া আর আমাকে একসঙ্গে দেখলেই তোমার চোখদুটো জ্বলে উঠত ৷

    তারপর একদিন সেই ভয়ঙ্কর দিনটা এগিয়ে এল ৷ মনে আছে, কী-একটা উপলক্ষে সেদিন আমাদের সবাইয়ের নেমন্তন্ন ছিল তোমাদের বাড়িতে ৷ হইহই করে আমরা সন্ধ্যার মধেই এসে পড়েছিলাম ৷ তোমার আবৃত্তি, পাপিয়ার গান আসরটাকে বেশ জমিয়ে রেখেছিল ৷ তারপর খাওয়ার সময় এল ৷ আমরা চার বন্ধু একসঙ্গে খেতে বসেছিলাম ৷

    চন্দন তোমাকে বলেছিল, আপনারাও আমাদের সঙ্গে বসে পড়ুন ৷ মিথ্যে রাত বাড়িয়ে লাভ কী ৷

    তুমি উত্তর দিয়েছিলে, মেয়েদের এখন খেতে নেই ৷ সবাইকে খাইয়ে তারপর খেতে হয় ৷

    চন্দন বলল, আপনি দেখছি এখনও সেই পুরাকালে পড়ে আছেন ৷

    তুমি হেসে জবাব দিলে, ভুলে যাবেন না, খাওয়ার ব্যাপারটা সেই পুরাকালেও ছিল ৷

    অস্বীকার করছি না ৷ তবে পুরাকালে তো অনেক কিছুই ছিল, তার সবগুলোই কি আপনি মানেন?

    তুমি ঈষৎ কটাক্ষে বলেছিলে, যেমন?

    পুরাকালে তো মেয়েরা পরপুরুষের সঙ্গে কথা বলত না ৷

    সেটা মানতে পারলে ভালোই হত দেখছি— তাহলে এভাবে ঝগড়া করতে হত না ৷

    আমরা সকলে হেসে উঠলাম ৷ চন্দন বলল, তাহলে হার স্বীকার করলেন তো?

    এখনও করিনি ৷ ঝগড়াটা মুলতুবি রইল ৷ পরে একদিন বোঝাপড়া করা যাবে’খন ৷

    তোমার নিশ্চয় মনে আছে, আর আমার তো চিরকাল মনে থাকবে, সেদিন তুমি আমার সঙ্গে একটা কথাও বলোনি ৷ ইচ্ছে করেই বলোনি ৷ নিজেকে জোর করে কাজের মধ্যে ব্যস্ত রেখেছিলে ৷ এমনকী, পরিবেশন করার সময় একবারও মুখ ফুটে জিগ্যেস করোনি, আমার কোনওকিছুর প্রয়োজন আছে কিনা ৷ ব্যাপারটা সকলেরই চোখে পড়েছিল ৷ পরের দিন পাপিয়ার মৃত্যুর খবরটা দিতে এসে চন্দনও আমাকে বলেছিল ৷ আর সেইজন্যেই আমার সঙ্গে তোমার কথা-না-বলাটা আরও বেদনাদায়ক হয়ে উঠেছিল আমার কাছে ৷

    পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠতে বেশ দেরি হয়েছিল ৷ আর ঘুম ভাঙার পর তোমার কথাই প্রথম মনে পড়েছিল ৷ এরকম প্রায়ই হয় আমার ৷ ঘুম ভাঙার পরেও যখন বিছানায় পড়ে থাকি— তখন শুধু তোমার কথাই মনে হয় ৷ সেদিনও হয়েছিল ৷ আগের রাত্রে তোমার কথা-না-বলা থমথমে মুখখানা বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল ৷

    আগের রাতে খাওয়ার শেষে যখন পাপিয়া আমায় ডাকল, সুদীপ্তদা— আসুন, আপনাকে একটা জিনিস দেখাব ৷ তখন মুহূর্তের জন্যে তোমার চোখদুটো জ্বলে উঠেছিল ৷ আমিনা-দেখার ভান করে পাপিয়ার সঙ্গে ওর ঘরে গিয়েছিলাম ৷ তোমরা দু-বোন একই ঘরে শুতে ৷ দেখেছিলাম খুব সুন্দর সাজানো-গোছানো মেয়েলি ঘর একখানা ৷ আর ঢুকতেই নাকে একটা অপরিচিত গন্ধ এসে লেগেছিল ৷ হতে পারে ওটা তোমাদের চুলের গন্ধ, হতে পারে ওটা পুরোনো কোনো সেন্টের গন্ধ ৷ এমনকী শুকনো ফুলের গন্ধ হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই ৷

    ঘরে পা দিতেই পাপিয়া বলল, বসুন ৷

    আমি বসলাম ৷ পাপিয়া দরজা ভেজিয়ে দিল ৷ তারপর বলল, কেন ডেকেছি বুঝতে পারছেন?

    বললাম, ওই যে কী একটা দেখাবে বললে ৷

    ছাই দেখাব ৷— বলে আঙুল দিয়ে বালিশের ওপর দাগ কাটতে লাগল ৷ আমি বেশ অসহায় বোধ করলাম ৷ ঠিক এইভাবে এত রাতে অনাত্মীয়া কোনো যুবতী মেয়ের সঙ্গে দরজা বন্ধ করে কথা বলতে আমি অভ্যস্ত নই ৷ নিজের চঞ্চলতা ঢাকার জন্যে পাশবালিশটা কোলের ওপর টেনে নিলাম ৷

    আমি চুপ করে রইলাম ৷ মনের উত্তেজনা বাড়তে লাগল ৷

    পাপিয়া বলল, আমার কথাগুলো শুনে আপনি যদি আমাকে একটা খারাপ মেয়ে ভাবেন— তাহলে দোষ দেওয়ার মতো কিছু নেই ৷ কিন্তু অনেক ভেবে দেখলাম— আপনি ছাড়া আমার কোনো গতি নেই ৷ কথা দিন— আমাকে সাহায্য করবেন ৷

    ভেতরে-ভেতরে আমি ঘামতে শুরু করলাম ৷ তবুও যথাসম্ভব শান্ত কণ্ঠে বললাম, আগে সব কথা খুলে বলো ৷

    আপনি বাবাকে বলে আমার আর চন্দনের বিয়ের ব্যবস্থা করে দিন ৷

    পাপিয়ার স্পষ্ট কথায় একটু চমকে উঠেছিলাম ৷ কিন্তু ব্যাপারটা জানা ছিল বলে বেশ স্বাভাবিকভাবেই বললাম, বেশ তো— তার জন্যে এত তাড়া কেন? ধীরে-সুস্থে একদিন বললেই হবে ৷

    না— আর দেরি করা যায় না ৷

    কেন? দেরি করা যায় না কেন! আগে তোমার দিদির বিয়ে হোক— তারপর তো— ৷

    দিদির কথা জানি না ৷ কিন্তু আমার এখুনি বিয়ে হওয়া উচিত ৷

    মনের মধ্যে একটা ছোট্ট সন্দেহ দানা বেঁধে উঠল ৷ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পাপিয়ার দেহটা দেখতে লাগলাম ৷

    পাপিয়া মাথা নিচু করল ৷ বলল, হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বুঝেছেন— আমি মা হতে চলেছি ৷

    বালিশ ফেলে দিয়ে তড়িদাহতের মতো উঠে দাঁড়িয়েছিলাম : কী বলছ তুমি পাপিয়া?

    আপনি আমাকে বাঁচান, সুদীপ্তদা ৷

    চন্দন জানে?

    হ্যাঁ ৷

    কী বলছে ও?

    ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে চায় ৷

    স্কাউন্ড্রেল ৷

    একটা তীব্র ঘৃণায় সারা দেহটা রি-রি করে উঠল আমার ৷ ভাবতে লজ্জা হল— চন্দন আমারই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ৷ পাপিয়াকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্যে বললাম, তুমি কিছু ভেবো না পাপিয়া, আমি এখুনি চন্দনকে ডেকে সব বুঝিয়ে বলছি ৷

    ঠিক সেই মুহূর্তে দরজা খুলে চন্দন ঘরে ঢুকল ৷

    আমাকে বুঝিয়ে বলার কিছু নেই সুদীপ্ত ৷ পাপিয়া যদি আমার কথা শুনত— তাহলে এসব কিছুই হত না ৷ আমি ওকে অনেক বলেছি— ডাক্তার সরকার আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু— কাকপক্ষীতেও টের পাবে না ৷

    পাপিয়া গর্জে উঠল, থাক— তোমাকে আর বীরত্ব দেখাতে হবে না ৷ যদি ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারতাম যে, শুধুমাত্র ক্ষণিক আনন্দের জন্যে তুমি— ৷

    আর বলতে পারল না পাপিয়া— ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল ৷

    চন্দন আমাকে বলল, তুই নীচে যা, সুদীপ্ত— আমি ওকে একটু বোঝানোর চেষ্টা করি ৷

    চন্দনের দিকে অপলক তাকিয়ে বারান্দায় পা দিলাম আমি ৷ ওদের ব্যাপার— ওদের মধ্যে বোঝাপড়া হওয়াই ভালো ৷ কয়েক পা এগিয়েছি, চন্দনের কণ্ঠস্বর কানে এল, কেন তুমি সুদীপ্তকে এ-কথা বললে?

    আর দাঁড়ালাম না ৷ হনহন করে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামতে লাগলাম ৷ সিঁড়ির মুখে তোমার সঙ্গে দেখা ৷ তুমি মুখ ঘুরিয়ে নিলে ৷ আমি চলে এলাম ৷

    .

    পরের দিন সকালে চন্দন এসে খবর দিল— পাপিয়া আত্মহত্যা করেছে ৷ চমকে উঠলাম খবরটা শুনে ৷ কয়েক মিনিট আমি কোনো কথা বলতে পারিনি ৷ ঘৃণিত দৃষ্টিতে চন্দনের দিকে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিলাম ৷

    চন্দন বলল, নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে, সুদীপ্ত ৷ কিন্তু পাপিয়া যে এতখানি ছেলেমানুষি করে ফেলবে ভাবতেও পারিনি ৷

    গম্ভীর গলায় বললাম, পাপিয়ার আত্মহত্যাকে তাহলে তুমি নিছক একটা ছেলেমানুষি ভাবছ?

    তা ছাড়া আর কী ভাবব বলো ৷ ওর মতো বুদ্ধিমতী মেয়ে— এভাবে হঠাৎ— ৷

    আরও অনেক কথা বলেছিল চন্দন ৷ কিন্তু সেসব শোনার মতো মনের অবস্থা আমার ছিল না ৷ চন্দনের সঙ্গে তোমাদের বাড়িতে যখন এসে পৌঁছলাম— তখন পুলিশ এসে পড়েছে ৷ তোমার বাবা পাথর হয়ে একটা সোফায় বসে আছেন ৷ চারিদিকে এক নিদারুণ স্তব্ধতা ৷

    পুলিশ গতানুগতিক পদ্ধতিতে সবাইকে কিছু-কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করে পাপিয়ার দেহ নিয়ে চলে গেল শবব্যবচ্ছেদের জন্যে ৷

    সকলে জানল— পাপিয়া আত্মহত্যা করেছে ৷ চন্দনের কাছেই শুনলাম, তোমার ধারণা পাপিয়ার আত্মহত্যার জন্যে পরোক্ষভাবে আমিই দায়ী ৷ আমিই নাকি তাকে অকাল মাতৃত্বদানে কলঙ্কিত করেছি ৷ আমাদের এতদিনের মেলামেশা— এত ভালোবাসার পর তুমি যে আমার সম্বন্ধে এরকম একটা বিশ্রী ধারণা করে বসবে বিশ্বাস করতে পারিনি ৷ তাই সেই মুহূর্তেই ছুটে এসেছিলাম তোমার কাছে ৷ সেদিনও তোমাদের বাইরের ঘরের দরজাটা বন্ধ ছিল ৷ মনের মধ্যে তীব্র একটা উত্তেজনা নিয়ে কলিংবেল বাজিয়েছিলাম ৷ তুমি এসে দরজা খুলে দাঁড়িয়েছিলে ৷

    তোমাকে দেখে একরাশ আশা নিয়ে কথা শুরু করলাম, এই যে, শিউলি— শুনলাম তুমি নাকি চন্দনের কাছে বলেছ— ৷

    আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই তুমি রূঢ়ভাবে বলেছিলে, তোমার সঙ্গে আমার কোনো কথা নেই ৷ বলে সশব্দে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল ৷

    দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দে কয়েক সেকেন্ডের জন্যে আমার হৃৎপিণ্ড বুঝি স্তব্ধ হয়ে গেছিল ৷ চোখের সামনে থেকে তোমাদের বাড়িটা মুছে গিয়ে একরাশ গাঢ় অন্ধকার জমা হয়ে গেছিল ৷ কয়েক সেকেন্ড মাত্র ৷ তারপর পা চালালাম মেসের উদ্দেশে ৷ তোমাদের বাড়ির দরজা থেকে আমার মেস— পাঁচ মিনিটের পথও নয়— কিন্তু মনে হয়েছিল ওইটুকু পথ পেরোতে আমার বেশ কয়েক বছর সময় লেগে গেল ৷

    কিছুদিনের বিরতি দিয়ে আবার আমি তোমার কাছে গিয়েছিলাম ৷ গিয়ে শুনলাম, তুমি একটা স্কুলের চাকরি নিয়ে বিহারের কোন এক গ্রামে চলে গেছ ৷ বুঝেছিলাম, তুমি আমাকে এড়ানোর জন্যেই ওভাবে চলে গেছ ৷ আমার সঙ্গ তুমি চাও না— তাই তোমার এই অসহায় পলায়ন ৷ তোমার ঠিকানায় অনেক চিঠি দিয়েছিলাম ৷ কিন্তু একটাও জবাব আসত না ৷ মাঝে-মাঝে তোমার বাবার কাছে যেতাম ৷ তিনি তখন একেবারে ভেঙে পড়েছেন ৷

    বলতেন, বুঝলে সুদীপ্ত— শেষ জীবনে কোথায় একটু শান্তিতে দিন কাটাব ভেবেছিলাম— কিন্তু ভগবান তা চাইল না ৷ এক মেয়ে আত্মহত্যা করল— আর-এক মেয়ে আমাকে ছেড়ে চলে গেল ৷

    আমি তোমার মায়ের কথা বলতে চেয়েছিলাম ৷ কিন্তু দেখলাম, তিনি সযত্নে প্রসঙ্গটা এড়িয়ে গেলেন ৷ পরে অবশ্য জেনেছি— কেন তোমরা তোমাদের মাকে এড়িয়ে চলতে, কেন তিনি রান্নাঘরের বাইরে আসতেন না ৷ কিন্তু সে-কাহিনি এখানে অবান্তর ৷ তা ছাড়া তুমি তো সবই জানো, তোমাকে নতুন করে শোনাবার মতো কিছুই নেই ৷

    তুমি চলে যাওয়ার পর বেশ কিছুদিন বিশ্রী এক অবসাদের মধ্যে দিয়ে সময় কাটতে লাগল ৷ মাঝে-মাঝে ইচ্ছে হত— তোমার কাছে চলে যাই, তোমাকে সব বুঝিয়ে বলি ৷ কিন্তু অভিমান এসে পথ আটকে দাঁড়াত ৷ এতদিনেও আমি যখন তোমার বিশ্বাস অর্জন করতে পারিনি, তখন এই ক্ষণিক চেষ্টায় সেটা কি ফিরিয়ে আনতে পারব? তাই তোমাকে শুধু চিঠিই লিখতাম ৷ রোজ ভাবতাম, আজ তোমার চিঠি আসবে ৷ আজ না এলে কাল নিশ্চয় আসবে ৷

    তোমার চিঠির প্রতীক্ষায় থেকে-থেকে যখন একেবারেই আশা ছেড়ে দিয়েছি— তখন হঠাৎ তোমার একখানা চিঠি এল ৷ সেটাই তোমার শেষ চিঠি ৷ তারপর আরও একবছর কেটে গেছে ৷ তোমার কোনো সন্ধান পাইনি ৷

    তুমি লিখেছিলে, তোমার চিঠিখানাই উদ্ধৃত করছি :

    আমার সুদীপ্ত,

    তুমি যখন আমার এই চিঠিখানা পাবে তখন আমি স্কুলের চাকরি ছেড়ে দিয়েছি— ছেড়ে দিয়ে কোথায় যাব— এখনও কিছু ঠিক করিনি ৷ শুধু অনুরোধ, আমাকে খোঁজার বৃথা চেষ্টা কোনোদিন কোরো না ৷ সন্ধান তুমি পাবে না ৷ পেলেও আমি ধরা দেব না ৷ এতদিন একা-একা নিজেকে প্রশ্নে-প্রশ্নে ক্ষতবিক্ষত করেছি— ধিক্কার দিয়েছি— কিন্তু এতটুকু শান্তি পাইনি ৷ মনের কথা মনে চেপে রাখলে বুঝি কোনো দিনও শান্তি পাওয়া যায় না ৷ তাই তোমার কাছে তোমার এই স্বীকৃতি ৷ আশা আছে, এখন বুঝি একটু শান্তি পাব ৷ তোমরা সবাই জানো, পাপিয়া আত্মহত্যা করেছে ৷ কিন্তু আমি জানি— তাকে হত্যা করা হয়েছে ৷ হ্যাঁ সুদীপ্ত, আমি পাপিয়াকে খুন করেছি ৷ খুন করেছি, ঈর্ষায় অন্ধ হয়ে ৷ সেদিন যখন অত রাত্রে পাপিয়ার ঘর থেকে তোমাকে বের হতে দেখলাম তখন সারা মাথায় যেন আগুন জ্বলে উঠল ৷ তুমি আর কাউকে ভালোবাসবে— অথচ আমার সঙ্গে ভালোবাসার অভিনয় করবে— কিছুতেই সহ্য করতে পারছিলাম না ৷ তাই সকলের অজান্তে পাপিয়ার জলের গ্লাসে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিলাম ৷ আমি জানতাম, রোজ রাত্রে শোওয়ার আগে ওর জল খাওয়ার অভ্যেস আছে ৷ তাই ওকে মারার জন্যে আমাকে নতুন কোনো পথ বাছতে হয়নি ৷ এক গ্লাস জল আর ছ’টা ঘুমের ট্যাবলেট ৷ দেখলে তো, পাপিয়ার সে-ঘুম আর কোনোদিন ভাঙল না!

    আজ আমি বুঝেছি— আমার সন্দেহ কতখানি ভুল ছিল ৷ আমার সন্দেহ যদি সত্যি হত, তাহলে আমি এখানে চলে আসার পরও সপ্তাহে দু-খানা করে তোমার চিঠি আসত না ৷ কিন্তু ভুল শোধরাবার আর সময় নেই ৷

    জানতাম, আমি স্বীকার না করলে কেউ কোনোদিন বুঝতেও পারবে না যে, পাপিয়া আত্মহত্যা করেনি, তাকে খুন করা হয়েছিল ৷ কিন্তু নিজের মনের সঙ্গে যুদ্ধ করে-করে পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি ৷ এখন তুমি ইচ্ছে করলে আমার এই চিঠিখানা পুলিশের হাতে দিয়ে আমাকে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারো— আমি আর কোনও কিছুতেই ভয় পাই না ৷ সবকিছুর জন্যে তৈরি হয়ে আছি ৷ ইতি—

    তোমার শিউলি ৷

    না শিউলি, তোমার এই চিঠিখানা আমি পুলিশকে দেখাইনি ৷ কোনোদিন দেখাতেও পারব না ৷ সকলে যা জেনেছে— সেটাই সত্যি হয়ে বেঁচে থাকুক ৷ কিন্তু তুমি আর আমাকে এভাবে কষ্ট দিও না ৷ তোমাকে আমি আজও চাই ৷ হ্যাঁ— তুমি খুনি জানা সত্বেও আমি তোমাকে চাই ৷ এভাবে আমার সঙ্গে আর লুকোচুরি খেলো না ৷ যেখানেই থাকো— ফিরে এসো ৷ ফিরে এসো আমার কাছে— তোমার স্বপ্ন-ঘেরা বাড়িতে ৷

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপিশাচ দেবতা – অনীশ দাস অপু
    Next Article বাড়িটায় কেউ যেয়ো না – অনীশ দেব

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }