Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    খুনে ক্যানিয়ন – কাজী মায়মুর হোসেন

    কাজী মায়মুর হোসেন এক পাতা গল্প162 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    খুনে ক্যানিয়ন – ১২

    বারো

    পালানোর কোন উপায়ই মাথায় আসছে না। বিচারের ভয় পাচ্ছে না বেনন। পরিচয় প্রকাশ পেলে সে প্রশ্ন আর উঠবে না। কিন্তু তাতে বেন স্টার্ককে ধরা অসাধ্য হয়ে ওঠার সমূহ সম্ভাবনা আছে। নানা দিকে তার অজস্র চর রয়েছে। আফসোস হচ্ছে ওর। লক্ষ্যের প্রায় কাছে পৌঁছে গিয়েছিল ও। ক্যানিয়নে হাজির হয়ে বেন স্টার্কের পরিচয় জানার সুযোগ হাতের মুঠোয় চলে এসেছিল। সব ভণ্ডুল হয়ে গেল ওভারহোলসারের আইনী হস্তক্ষেপে।

    রিয়া মেয়েটার কথা মনে আসতেই রিয়োর দেখানো গোপন আস্তানাটার কথা মনে পড়ল ওর। ফ্রস্টি তার লোকদের নিয়ে দ্রুত অদৃশ্য হয়ে যেতে চাইলে ওই ক্যানিয়নের চেয়ে ভাল জায়গা আর হয় না। মেয়েটাকে নিয়ে ওরা কি ওখানেই লুকিয়েছে? যতই ভাবল ততই বেনন নিশ্চিত হলো যে সে সম্ভাবনাই বেশি।

    বেশ কিছুক্ষণ পর মাথা থেকে সমস্ত চিন্তা দূর করে দিল বেনন, মাটিতে শুয়ে পড়ল কাত হয়ে। উদ্ধার পাবার কোন উপায় যখন নেই তখন খামোকা মাথা ঘামিয়ে ওটাকে কষ্ট দিয়ে লাভ নেই। ঘুমিয়ে পড়ল ও মিনিট খানেক পর।

    দরজার আড়া খোলার আওয়াজে ঘুম ভাঙল ওর। চোখ পিটপিট করতে করতে উঠে বসল। দরজাটা খোলা হতেই উজ্জ্বল আলোর বন্যায় ভেসে গেল ঘরটা। ভেতরে ঢুকল দুই ডেপুটি।

    ‘দাঁড়াও, জনসন!’ খেঁকিয়ে উঠল প্রথম ডেপুটি।

    উঠল বেনন, আড়মোড়া ভাঙল, তারপর দু’দিনের না কামানো খোঁচা খোঁচা দাড়ি চুলকাতে চুলকাতে বলল, ‘তোমরা যদি ভেবে থাকো আমাকে আউট-ল বলে চালিয়ে দিতে পারবে তা হলে ভুল ভাবছ।’

    ‘বলে কী,’ ঘোঁৎ করে উঠল ডেপুটি। ‘আমরা তো ভাবছি তোমাকে ফাঁসিতে চড়ানো যায় কিনা।’

    দু’পাশে দু’জন ডেপুটিকে প্রহরী নিয়ে ঘর থেকে বের হলো বেনন। র‍্যাঞ্চ হাউসের দিকে ওকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সামনের দরজাটা ভেড়ানো। লাথি দিয়ে ওটা খুলে ভেতরে ঢুকল সামনের ডেপুটি। একজনের পেছনে আরেকজন, গাছপালা দিয়ে সাজানো প্যাশিয়ো পেরিয়ে এগোল তারা। একটা দরজা দিয়ে ভেতরে ঢোকার পর কার্পেটের ওপর বেননকে দাঁড় করানো হলো।

    কৌতূহলী চোখে ঘরের চারপাশে নজর বুলাল বেনন। লিভিং রূম এটা। অ্যাডোবির দেয়ালগুলো ঢেকে দেয়া আছে নাভাহো ইণ্ডিয়ানদের রংচটা কম্বল দিয়ে। আসবাবপত্র সব ওক কাঠের তৈরি। পাথরের ফায়ারপ্লেসের ওপরের ম্যান্টলে ঝুলছে ক্রস করে রাখা দুটো খাটো তরোয়াল।

    সামনের ডেপুটি এক পাশে সরে দাঁড়াল। ওভারহোলসারের মুখোমুখি হলো বেনন। একটা চেয়ারে বসে আছে লোকটা-এতই পিঠ খাড়া করে যে খুঁটির কথা মনে পড়ে যায়। তার পেছনে ফ্ল্যানারিকে দেখা গেল। একটা সিগারেট ঠোঁটের কোণে ঝুলিয়ে অনুৎসাহী চোখে ঘটনা কী হয় দেখছে সে।

    তীক্ষ্ণ সমালোচনার চোখে বেননকে আপাদমস্তক দেখল ওভারহোলসার।

    ‘দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছ তুমি!’ নাক কুঁচকে বলে উঠল সে। ‘শুধুই একটা ইঁদুর ছাড়া আর কিছু নও। ইঁদুরও তোমার চেয়ে ভাল।’

    চুপ করে থাকল বেনন।

    ‘তুমি একটা কাপুরুষ,’ বলে চলল মার্শাল। ‘কঠিন কাজ দেখলে পালানো তোমার অভ্যেস। শেষ পর্যন্ত কী করলে তুমি? একদল আউট-লর সঙ্গে ভিড়ে গেলে। ওরা যখন বিপদে পড়ল তখন ওদের ফেলেও পালালে। একটা ইঁদুরও কোণঠাসা হলে লড়াই করে, কিন্তু সেটুকু সাহসও তোমার নেই।’ ঘৃণার সঙ্গে থুতু ফেলল ওভারহোলসার। ‘তোমার মত একটা মেরুদণ্ডহীন কাপুরুষকে আমি ব্যাজ পরার সুযোগ দিয়েছিলাম ভাবলে নিজের বিবেচনা বোধের ওপর আস্থা হারাচ্ছি আমি।’

    চুপ করেই আছে বেনন, বুঝতে পারছে খামোকা গায়ের ঝাল ঝাড়ার লোক নয় ওভারহোলসার, ভিন্ন কোন মতলব আছে তার।

    ওর ধারণাই সঠিক। শটগানের গুলির মত ওভারহোলসারের মুখ দিয়ে বের হলো প্রশ্নটা।

    ‘বেন স্টার্ক কে? কোথায় সে?’

    কাঁধ উঁচু করল বেনন। ‘কোথায়? আমার ধারণা ব্রিটিশ মেয়েটার সঙ্গে।’

    ‘ওরা কোথায়?’ এক পর্দা চড়ল মার্শালের স্বর।

    শ্রাগ করে হাসল বেনন। ‘একটা চুক্তিতে আসতে চাও?’

    নাক দিয়ে আওয়াজ করল ওভারহোলসার, চেহারায় ঘৃণার ছাপ সুস্পষ্ট। ‘চুক্তি? তোমার মত নোংরা একটা কাপুরুষের সঙ্গে?’ ডেপুটিদের দিকে তাকাল। ‘নিয়ে যাও হারামজাদাকে!’

    দপ করে মনের আশা নিভে গেল বেননের। ও ভেবেছিল মেয়েটাকে উদ্ধার করতে চেয়ে ওর সাহায্য নিতে বাধবে না ইউ এস মার্শালের। আন্দাজ করতে পারছে মেয়েটাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, এটা একটা বড় সুবিধে নিয়ে আসতে পারে ভেবেছিল ও। কিন্তু দেখা যাচ্ছে ওর সাহায্য নেয়ার কোন ইচ্ছে নেই ওভারহোলসারের।

    ভারী একটা হাতের ধাক্কায় পাশ ফিরল বেনন। প্যাশিয়োতে আবার নিয়ে আসা হলো ওকে প্রহরা দিয়ে। ফিরতি পথ ধরে তিক্ত মনে ভাবল বেনন, আবার সেই অ্যাডোবি দোজখে ফিরতে হবে।

    ভেতরে পুরে দিয়ে দরজা বন্ধ করে চলে গেল ডেপুটিরা। দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসে একটা সিগারেট ধরাল বেনন। মনটা আরও খারাপ হয়ে গেছে। যতটা ভেবেছিল তার তুলনায় অনেক কম তামাক আছে ফ্ল্যানারির দেয়া প্যাকেটে।

    এক ঘণ্টা অন্তত পেরিয়ে গেল, তারপর বাইরে ফ্ল্যানারির পরিচিত গলার আওয়াজ পেল ও। আড়া নামিয়ে দরজা খোলা হলো। ভেতরে ঢুকল উজ্জ্বল আলো আর এক ঝলক মিষ্টি তাজা বাতাস।

    ‘মার্শালের মেজাজ খুব খারাপ,’ দরজায় দাঁড়িয়ে মন্তব্যের সুরে বলল ফ্ল্যানারি।

    ক্লান্ত চোখে তাকে দেখল হতাশ বেনন। মুক্তি পাবার কোন উপায় দেখছে না। কারও সাহায্য পাবে সে আশাও মন থেকে তিরোহিত হয়েছে। ‘আমাকে দেখে তার মেজাজ বোধহয় আরও খারাপ হয়েছে?’ জানতে চাইল।

    ‘তা হয়েছে।’ বেননের পাশে আরাম করে বসল ফ্ল্যানারি। ‘সন্ধ্যায় খুনে ক্যানিয়ন সাফ করে ফেলা হয়েছে। পাঁচ আউট-লকে জীবিত ধরা হয়েছে। সেই সঙ্গে আছে এক গাদা মেক্সিকান মেয়ে। ওভারহোলসার জানে না জীবিত আউট- লদের মধ্যে বেন স্টার্ক আছে কিনা। মারা গেছে কিনা তাও জানা যায়নি। বেন স্টার্ক যদি বেঁচে গিয়ে থাকে তা হলে সে ব্রিটিশ মেয়েটাকে নিজের সুবিধের জন্যে ব্যবহার করবে। ওভারহোলসার চিন্তিত। মনে করছে সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি জটিল হতে বাধ্য। বেন স্টার্ক নিজের মুক্তির পথ পরিষ্কার করতে মেয়েটাকে ব্যবহার করবেই। তার কথা না শুনলে হয়তো বন্দি মেয়েটাকে সে হত্যাও করতে পারে।’ বেননের দিকে তাকাল ফ্ল্যানারি। মেয়েটাকে উদ্ধার করার ব্যাপারে তুমি কোন সাহায্যে আসবে কিনা জানতে চাইছে ওভারহোলসার।’

    ‘সাহায্যে আসব, যদি ষাঁড়টা আমাকে ছাড়ে। মেয়েটার কাছে ওকে নিয়ে যেতে পারব। হয়তো বেন স্টার্কের দেখাও ওখানে পাবে সে।’

    ‘তার মানে স্টার্ক ধরা পড়েনি!’

    শ্রাগ করল বেনন। ‘আমাকে যদি না ছাড়ে তা হলে পাঁচজন বন্দি আউট-ল আছে, তাদের জিজ্ঞেস করে দেখুক ওভারহোলসার, কে তাকে মানা করেছে!’

    ‘জানের ভয় থাকা সত্ত্বেও মুখ খুলছে না তারা।’ এতক্ষণে কাজের কথায় এল ফ্ল্যানারি, ‘মার্শালকে আমি রাজি করিয়েছি। সে তোমার কথা শুনতে রাজি আছে। যদি তুমি তাকে মেয়েটার কাছে নিয়ে যেতে পারো তা হলে তোমার ব্যাপারে সে হয়তো বিশেষ বিবেচনা করতে রাজি হবে। হয়তো আইনের সামনে দাঁড়াতে হবে না তোমাকে, মুক্তি পেয়ে যাবে।’

    সিগারেটে টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়ল বেনন। ও চুপ করে আছে দেখে ফ্ল্যানারি বলল, ‘তুমি কি চাও একটা অসহায় মেয়ে বেন স্টার্কের কব্জায় পড়ে মারা যাক?’

    ‘কখন রওনা হচ্ছি আমরা?’ বেননও সরাসরি কাজের কথায় এল।

    ‘বিকেলে। কথা দিচ্ছি তোমার পক্ষে আমি নিজে সাক্ষ্য দেব।’

    উঠে দাঁড়াল ফ্ল্যানারি। বেনন তাড়াতাড়ি বলল, ‘যাবার আগে আমি শেভ করতে চাই। লোকে আমার অসাধারণ চেহারাটা ঠিক মত দেখতে পাবে না ভাবলে মনটা দমে যায় আমার।’

    বেননের চেহারাটা একবার দেখল ফ্ল্যানারি। মুখে ফুটে উঠল শয়তানীর হাসি। তারপর বলল, ‘মানুষের ঘাড়ের ওপর ঘোড়ার মুখ-অসাধারণ তো বটেই!’

    ‘শেভ,’ গম্ভীর চেহারায় আবার বলল বেনন।

    ‘এসো,’ বলে দরজার দিকে হাতের ইশারা করল ফ্ল্যানারি।

    তার পেছনে পেছনে অ্যাডোবি বন্দিশালা থেকে বেরিয়ে এল বেনন।

    .

    পাহাড়ী এলাকা ধরে এগিয়ে চলেছে ছয় অশ্বারোহী। সূর্যের খরউত্তাপে দগ্ধ হচ্ছে চারদিক। মাঝে মাঝে ক্যানিয়নের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় ছায়া পাওয়া যাচ্ছে। সবার আগে আগে চলেছে ইউ এস মার্শাল ওভারহোলসার। তার পেছনে বেনন, দু’হাত হাতকড়িতে আটকানো। ও-ই একমাত্র ঘোড়সওয়ার যার কাছে কোন অস্ত্র নেই।

    ‘এখানে!’ পাথরের দেয়ালে গজানো পাইন গাছটার পাশে থেমে জানাল বেনন।

    ঘোড়া থামাল ওভারহোলসার। ভ্রূ কুঁচকে বেননকে দেখল। চোখ বোলাল দেয়ালের গায়ে। এমন ফাটল ওরা আগেও পার হয়ে এসেছে আগে। এটা দেখেও বিশেষ কিছু মনে হচ্ছে না। বড়জোর একজন লোক ঘোড়া নিয়ে ভেতরে ঢুকতে পারবে। তারপরই সরু হয়ে গেছে দু’দিকের দেয়াল।

    ‘ভেতরে কোন ক্যানিয়ন নেই,’ ঘড়ঘড়ে গলায় বলল ওভারহোলসার। ‘মিছে কথা বলেছ নিশ্চয়ই?’

    ‘না,’ বলল বেনন। ‘ভেতরে ঢোকো।’

    চোখে স্পষ্ট সন্দেহ নিয়ে রাশ দোলা দিয়ে ভেতরে ঢুকল মার্শাল। তার পেছনে অন্যান্যরা। সামান্য পথ অতিক্রম করতেই শেষ হয়ে গেল ফাটল। আবার থামতে বলল বেনন। জানাল ব্লাইণ্ড ক্যানিয়নে ঢোকার পথটা কোথায়।

    পেছনে থমকে দাঁড়াল চার ডেপুটি।

    ‘বন্দিদের আমরা ওখানেই পাব?’ জিজ্ঞেস করল ওভারহোলসার।

    ‘পাওয়া উচিত,’ জানাল বেনন। মনে মনে প্রার্থনা করল যাতে ওর ধারণা সঠিক হয়। জানে ভাগ্যের ওপর জুয়া খেলছে ও। রিয়োর ক্যানিয়নে আউট- লদের আশ্রয় নেয়ার খুব জোরাল কারণ বলতে এই যে, এটা এই এলাকায় লুকানোর সবচেয়ে ভাল জায়গা। পানি আছে ক্যানিয়নে, যেটা আশ্রয় হিসেবে জায়গাটাকে আদর্শ করে তুলেছে। বন্দি আটকে রাখতে এর চেয়ে উপযুক্ত স্থান আর হয় না। ভ্রূ কুঁচকাল বেনন। ওর ধারণা যদি ভুল হয়ে থাকে তা হলে হারাবার তেমন কিছু নেই ওর। এমনিতেই পরিচয় না দিয়ে উদ্ধার পাবার উপায় না হলে ব্যর্থ হয়ে যাবে ওর অ্যাসাইনমেন্ট। বেন স্টার্কের লোকের অভাব নেই। ইউ এস ডেপুটিদের ভেতরে তার লোক আছে কিনা কে জানে!

    ‘গর্তের ভেতর ঢুকতে হবে,’ জানাল বেনন। ‘একটা বাঁক নিতে হবে। মন দিয়ে শোনো। একটা ঘোড়া কোনরকমে ঢুকতে পারবে একবারে। প্রহরী রাখবে ওরা। একজন একজন করে আয়েস করে তোমাদের খতম করতে পারবে সে। দু’জন লোক ঠিক জায়গায় অবস্থান নিলে ক্যাভালরির এক ডজন যোদ্ধাকে ঠেকিয়ে রাখা কোন ব্যাপারই নয় ওই ক্যানিয়নে।’

    ‘তা হলে দেখা যাচ্ছে ভেতরে ঢোকা সম্ভব নয়,’ মতামত জানানোর সুরে বলল ওভারহোলসার। ‘বাইরে অবস্থান নেব আমরা। খাবারে টান পড়লে ওদের আত্মসমর্পণ করতেই হবে।’

    হাসল বেনন। ‘তাতে এক সপ্তাহ, এমনকী এক মাসও লেগে যেতে পারে। তার চেয়ে অনেক ভাল বুদ্ধি আছে উদ্দেশ্য সফল করার।’

    ‘বলে ফেলো।’

    ‘আউট-লরা জানে না ধরা পড়েছি আমি। আমাকে ছেড়ে দাও। একটা অস্ত্র দাও। আগে আগে ভেতরে ঢুকব আমি। এমন ব্যবস্থা করতে পারব যাতে তোমাদের আগমনে ওরা বিস্মিত হয়ে পড়ে।

    ‘হ্যাঁ, তোমাকে ছেড়ে দিয়ে বোকা বনি আর কী!’ চাপা গলায় ধমকে উঠল ওভারহোলসার। ‘বিশ্বাস করার উপায় নেই তোমাকে। কাপুরুষ একটা বিশ্বাসঘাতক কেঁচো তুমি। হয়তো সব কথাই মিথ্যে বলেছ। হতে পারে ওখানে কোন বন্দিই নেই। হয়তো দেয়ালের উল্টোদিকে আরেকটা গর্ত আছে, ওপথে হাওয়া হয়ে যেতে পারবে তুমি। একবার আমার হাত থেকে তুমি পালিয়েছ, জনসন। দ্বিতীয়বার সেই সুযোগ তোমাকে আমি দিতে পারি না।’

    ‘ক্যানিয়নটা চারপাশ থেকে পাহাড় দিয়ে ঘেরা,’ বলল বেনন। মাথার ওপর উঁচু হয়ে থাকা দেয়ালটা দেখল। ‘বিশ্বাস না হলে দেয়ালের ওপর উঠে চারপাশটা দেখে নিতে পারো। বলো তোমার কোন ডেপুটিকে।’

    একটু দ্বিধা করল ওভারহোলসার, তারপর সিদ্ধান্ত নিল। বন্দিদের উদ্ধার করতে হবে। সেই সঙ্গে পারলে বেন স্টার্ককে ধরতে হবে। স্টার্কের দল ধ্বংস করতে পারলে সেটা হবে তার জীবনের সবচেয়ে বড় কাজ। কিন্তু তা করতে গিয়ে যদি ব্রিটিশ মেয়েটা মারা যায় তা হলে ওয়াশিংটন তা ভাল ভাবে নেবে না। নড করল সে, ঘোড়া থেকে নেমে স্পার খুলে ফেলল, তারপর ইশারায় এক ডেপুটিকে স্পার খুলে অনুসরণ করতে বলল।

    ঘোড়া থেকে বেননকেও নামানো হয়েছে। হাতকড়ি খুলে দেয়া হলো ওর হাত থেকে। কব্জি ডলে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করল ও।

    বেননকেও সঙ্গে নিল ওভারহোলসার। পাশাপাশি তিনজন ওরা দেয়ালের খাঁজ ভাঁজ ব্যবহার করে দেয়াল বেয়ে উঠতে শুরু করল। খুব একটা কষ্ট হচ্ছে না উঠতে। গুঁড়ো ধুলো পড়ছে নিচে অপেক্ষমাণ ডেপুটিদের মাথায়।

    আগে ওপরে উঠল বেনন। দেয়ালের মাথায় উঠে চারপাশে তাকাল। মেসার মাথার মত সমান একটা ভূমি দেখা যাচ্ছে। এখানে ওখানে পড়ে আছে বড় বড় বোল্ডার। ওগুলোর পেছনে মাথা তুলেছে কয়েকটা পাহাড়ের চুড়ো, উঁচু পাহাড় গোল হয়ে ঘিরে আছে চারপাশ। সামান্য পশ্চিমের পাহাড়ে একটা ফাঁকা জায়গা। ওদিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে একটা ক্যানিয়নের চিহ্ন।

    ঘন ঘন শ্বাস নিতে নিতে বেননের পাশে দাঁড়াল ওভারহোলসার। ফাঁকা জায়গাটা দেখাল বেনন। সাবধানে পা বাড়াল তিনজন ওদিকে। কাছে গিয়ে ক্রল করে এগোল। স্টেটসন খুলে ফেলেছে প্রত্যেকে। পেটে ভর দিয়ে আরও একটু সামনে বাড়তে হলো, তারপর নিচে দেখা গেল দেয়াল আর পাহাড় ঘেরা ক্যানিয়নটা। পেছনের দিকে সবুজের চিহ্ন। চ্যাপারাল গাছের নিচে আগুন জ্বালানো হয়েছে। হালকা বাতাসে ভেসে উঠছে ক্ষীণ ধোঁয়া। লোকজন নড়েচড়ে বেড়াচ্ছে। স্কার্ট পরা একটা আকৃতি দেখে ওভারহোলসারের পেটে কনুই দিয়ে গুঁতো দিল বেনন।

    বিরক্ত চেহারায় মাথা ঝাঁকাল মার্শাল।

    ‘ছয়টা ঘোড়া ঘাস খাচ্ছে,’ বলল বেনন। ‘তার মানে পাঁচ ডাকাত। পাঁচটা অস্ত্র। জিনিসগুলোর ব্যবহার খুব ভাল করেই জানা আছে তাদের।’

    মার্শালের হাতের ইশারায় পিছাতে শুরু করল ও। বেশ খানিকটা পিছিয়ে উঠে দাঁড়াল ওরা। ঘড়ঘড়ে গলায় ওভারহোলসার বলল, ‘জীবনে বোধহয় এই প্রথম কোন একটা ভাল কাজ করলে তুমি, রন জনসন।’

    আনমনে মাথা দোলাল বেনন। অন্য ব্যাপারে ও চিন্তিত। আগুনের ধারে লাল চুলের এক লোককে দেখেছে ও। লোকটা রেড কেলটন না হয়ে যায় না। অথচ তাকে ও মারা যেতে দেখেছে। জিলা নদীতে ডুবে মারা যাওয়ার কথা তার।

    দেয়াল থেকে নামল ওরা। গুলি খাওয়ার জোর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘোড়া নিয়ে গর্তের ভেতর দিয়ে এগোল বেনন। মাথার ওপর আকাশটাকে একটা নীল ফিতের মত দেখাচ্ছে। সামনে ক্যানিয়নের সরু মুখটা সাদা লাগছে দেখতে।

    সূর্যের আলোয় বেরিয়ে এসে থমকে থামতে হলো ওকে। ঘোড়ার রাশ টেনে ধরে চরম উত্তেজনার মাঝে একটা মুহূর্ত পার করল।

    কড়া গলায় খেঁকিয়ে উঠেছে ক্যানিয়ন মুখের কাছে অবস্থান নেয়া প্রহরী।

    ঘাড় ফেরাতেই লোকটাকে দেখতে পেল বেনন। চোখে সন্দেহ নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে লোকটা। তার হাতের উইনচেস্টার রাইফেল ওর বুক লক্ষ্য করে তাক করা।

    ‘ট্রিগার থেকে হাত সরাও,’ শান্ত গলায় বলল বেনন, ‘আমি স্টার্কের দলের লোক।’

    চেহারায় কোন পরিবর্তন এল না প্রহরীর, চেঁচিয়ে উঠল অস্ত্র না নামিয়ে, ‘একে তুমি চেনো, রেড?’

    চ্যাপারালের নিচ থেকে বেরিয়ে এল রেড কেলটন, লম্বা লম্বা পদক্ষেপে এগিয়ে এল। বিস্মিত চোখে দেখল বেনন, লোকটা আসলেই রেড কেলটন। অর্থাৎ ভুল ভেবেছিল ও, মারা যায়নি আউট-ল।

    মাঝপথে থেকে বেননের উদ্দেশে চোখ টিপল লোকটা। ‘আরে, রন জনসন!’ প্রহরীর দিকে তাকাল। ‘এ আমাদের লোক।’

    ‘তোমাকে না আমি সেতু থেকে পড়ে যেতে দেখেছি?’ জিজ্ঞেস করল বেনন।

    ধীরে ধীরে প্রসারিত হলো রেডের ঠোঁট জোড়া। ‘ঠিকই দেখেছ। শালাদের বোকা বানিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিই আমি। সান ফিলিপে আমার জন্ম, গালফের কাছে। ওশহরের যেকোন বাচ্চা মাছের মত সাঁতার কাটতে জানে। …তুমি পালালে কি করে?’

    গল্প বেননের তৈরি করাই আছে। বলে দিল। সাঁতরে নদী পথে ক্যানিয়ন থেকে সরে এসেছে ও। তারপর আইসিসি রেঞ্জে গিয়ে দেখল আইনের লোক গিজগিজ করছে। তখন সে একটা ঘোড়া চুরি করে পালিয়ে এসেছে।’

    আগুনের ধারে আউট-লদের স্যাডলগুলো স্তূপ করে ফেলে রাখা হয়েছে। পনি থেকে স্যাডল খুলে অন্য ঘোড়াগুলোর সঙ্গে ঘাস খেতে ছেড়ে দিল ওরটাকে। রেডের পাশে চ্যাপারালের ছায়ায় বসে চারপাশে দেখল। রেড ছাড়াও চারজন আউট-ল রয়েছে ক্যানিয়নে। তাদের একজন ক্যানিয়নের মুখের কাছে বোল্ডারের পেছনে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে। অন্য তিনজন আগুনের ধারে বসে নোংরা তাস পেটাচ্ছে। রিয়াকে পাহারা দেয়ার কেউ নেই। কেউ মনোযোগ দিচ্ছে না মেয়েটার দিকে। তার দরকারও নেই, এই বক্স ক্যানিয়নে একজন প্রহরী থাকাই যথেষ্ট। পালাবার কোন পথ নেই।

    উঠে দাঁড়িয়ে মেয়েটার দিকে পা বাড়াল বেনন। ক্লান্ত দেখাচ্ছে রিয়াকে। মাটিতে বসে আছে মেয়েটা। আড়ষ্ট। চিন্তিত দেখাল তাকে। শীতল চোখে বেননকে দেখল। বেনন মাথা থেকে হ্যাট খুলে বাউ করার পরও কোনরকম জবাব দিল না।

    ‘ভাল বিপদেই আছো তুমি,’ নিচু স্বরে বলল বেনন।

    জবাব দিল না মেয়েটা, অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিল।

    সরে এল বেনন, আবার রেডের পাশে এসে বসল। ধীরে ধীরে বয়ে চলেছে সময়। আচরণ দেখে বুঝতে পারছে সময় কাটানোই আউট-লদের বড় সমস্যা। এটা রিয়ার জন্যে বিপদ হয়ে দেখা দিতে পারে। কোন একজনের মাথায় যদি মেয়েটাকে নিয়ে ফুর্তি করার চিন্তা আসে তা হলে অন্যান্যরাও যোগ দেবে হয়তো।

    রেডের ভাবসাব দেখে মনে হলো কারও কাছ থেকে নির্দেশ পাবার অপেক্ষায় আছে। আউট-লদের টুকরো-টাকরা কথা থেকে জানা গেল যে অবশিষ্ট আউট-লরা বুরো পাহাড়ের কাছে কিকিং হর্স নামের এক শহরে গিয়ে জড়ো হয়েছে। বরাবরের মতই স্টার্কের ব্যাপারে কোন কথা হলো না। কেউ যেন জানেই না কোথায় আছে সে। তবে এটা বোঝা গেল যে এখনও তার নির্দেশেই চলছে দলটা। খুনে ক্যানিয়নে খুন বা বন্দি হয়নি লোকটা 1

    রাতে শেষ প্রহরে পাহারা দেয়ার দায়িত্ব পড়ল বেননের ওপর

    মাঝরাতের পরই তৃতীয় আউট-ল ঘুম থেকে তুলে দিল ওকে, সে নিজে গিয়ে শুয়ে পড়ল নিভন্ত আগুনের পাশে অন্যান্য আউট-লদের সঙ্গে।

    বিরাট একটা হাই তুলে বুটজুতো পরে নিয়ে ক্যানিয়নের মুখের কাছে গিয়ে বোল্ডারের আড়ালে দাঁড়াল বেনন। একটা সিগারেট ধরাল নিশ্চিন্তে। পার হয়ে যাচ্ছে সময়। ঘুমাচ্ছে আউট-লরা। রিয়াকে কিছুটা দূরে একটা ঝোপের আড়ালে শোবার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে।

    সিগারেটটা শেষ করে বুটের তলায় পিষে নেভাল বেনন, নিঃশব্দে চলে এল ক্যানিয়নে ঢোকার মুখের কাছে। অন্ধকারে সরু পথটা ধরে পা বাড়াল।

    পাইন গাছের কাছে পৌছতেই নিচু গলার নির্দেশ শুনে থামতে হলো ওকে। ছায়ার ভেতর থেকে অস্ত্র তাক করে বেরিয়ে এল এক ডেপুটি।

    কাছের একটা অগভীর ড্রতে রাখা হয়েছে ল-ম্যানদের ঘোড়াগুলো। ঘুমাচ্ছে অন্য চারজন। প্রহরী ডেপুটির ডাকে দ্রুত উঠে তৈরি হয়ে নিল তারা। সংক্ষেপে ক্যানিয়নের পরিস্থিতি জানাল বেনন।

    ‘এখনই আমরা আক্রমণ করব,’ ওর কথা শেষ হতে সিদ্ধান্ত নিল ওভারহোলসার। বেননকে দেখিয়ে এক ডেপুটিকে বলল, ‘ওর গানবেল্ট নিয়ে নাও।’

    ‘না!’ আপত্তির সুরে বলল বেনন। ‘নিরস্ত্র অবস্থায় ওই ক্যানিয়নে ঢুকতে রাজি নই আমি।’

    ‘তুমি রাজি কি অরাজি তার ওপর তোমার যাওয়া নির্ভর করছে না,’ শীতল স্বরে জানাল ওভারহোলসার। ‘এমনও হতে পারে যে তুমি বিপক্ষের হয়ে গুলি ছুঁড়তে শুরু করবে। সে ঝুঁকি আমি নিতে পারি না। নিশ্চয়ই তুমি ভাবছ না যে তোমাকে বিশ্বাস করার মত বোকামি করব আমি?’

    অস্বস্তিকর নীরবতার মাঝ দিয়ে গানবেল্ট খুলে ডেপুটির হাতে দিল বেনন। ‘এটা যদি কোন ফাঁদ হয়ে থাকে,’ সাবধান করল ওভারহোলসার, ‘তা হলে মনে কোরো তোমার কপাল মন্দ। পুরোটা পথ তোমার শিড়দাঁড়ায় তাক করা থাকবে আমার সিক্সগান। একটু বেচাল দেখলেই পিঠে গুলি খাবে তুমি।’

    একজন ডেপুটিকে ঘোড়া পাহারার দায়িত্বে রেখে অন্য তিনজনকে নিয়ে সামনে বাড়ল ওভারহোলসার, প্রত্যেকের কনুইয়ের ভাঁজে উইনচেস্টার রাইফেল। আগে আগে চলেছে নিরস্ত্র বেনন। সরু পথটা শেষ করে ক্যানিয়নের মুখের কাছে চলে এল ওরা। উজ্জ্বল চাঁদটাকে ঢেকে দিয়েছে টুকরো টুকরো মেঘ। আকাশের গায়ে উন্মুক্ত নক্ষত্রগুলোকে দেখাচ্ছে হিরের টুকরোর মত জ্বলজ্বলে। সমতলে দেখা যাচ্ছে ঘোড়াগুলোর ছায়া-কয়েকটা এখনও ঘাস খাচ্ছে। ওগুলোর মাথার ওপর দিয়ে চক্কর মেরে নিঃশব্দে উড়ে গেল একটা রাতজাগা পাখি I

    মার্শালের নিচু গলার নির্দেশে ছড়িয়ে গেল ল-ম্যানদের দলটা, এগোচ্ছে নিঃশব্দে। কান খাড়া হয়ে গেল ঘোড়াগুলোর। অগ্রসরমান লোকগুলোর কাছ থেকে দূরে সরে গেল ওগুলো। কয়েকটা নাক ঝেড়ে আপত্তি জানাল।

    আক্রমণটা সহজই হবে, আন্দাজ করতে পারল

    পারল বেনন। ঠিক ওভারহোলসারের পেছনে আছে ও। একটু একটু করে পিছিয়ে পড়ছে। ওভারহোলসার ওকে দ্রুত এগোতে হাতের ইশারা করল, কিন্তু পাত্তা দিল না বেনন। ও নিশ্চিত ভাবে জানে যে ওকে গুলি করতে গিয়ে লড়াইয়ে জেতার সুযোগটা হাতছাড়া করবে না ওভারহোলসার। একটা গুলি করলেই সতর্ক হয়ে যাবে আউট-লরা।

    লড়াই শুরু হবার আগেই সরে পড়তে হবে, বুঝতে পারছে ও।

    এক ডেপুটির পায়ের ধাক্কায় ঠোক্কর খেয়ে ঠনাৎ ঠন আওয়াজ করল একটা পাথর। ঝোপের পেছন থেকে উঠে দাঁড়াল রিয়া। চাঁদের আলোয় আবছা ভাবে সে দেখতে পেল ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে কয়েকজন লোক। কুঁজো হয়ে আছে। হাতে রাইফেল। তাদের ভাবভঙ্গি বোধহয় মেয়েটার কাছে সুবিধের মনে হলো না। হয়তো ভেবেছে ভিন্ন কোন আউট-ল দল আক্রমণ করছে। সেক্ষেত্রে বিপদ আরও বাড়বে তার। ভয়ার্ত আর্তচিৎকার বেরিয়ে এল মেয়েটার কণ্ঠ থেকে, যেন ছুরি দিয়ে রাতের নিস্তব্ধতা চিরে দিল তার চিৎকার। টিলাগুলোর গায়ে বাড়ি খেয়ে প্রতিধ্বনি উঠল। তারপরই নরক ভেঙে পড়ল ক্যানিয়নে। রাতের আঁধারে দেখা দিল আগুনের স্ফুলিঙ্গ। থরথর করে কেঁপে উঠল ক্যানিয়ন গোলাগুলির ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত প্রচণ্ড আওয়াজে। সিক্সগানের আওয়াজ ছাপিয়ে উঠছে উইনচেস্টার রাইফেলের তীক্ষ্ণ হুঙ্কার। এক নাগাড়ে বুলেট ওগরাচ্ছে দু’পক্ষের অস্ত্র। বাতাসে শিস কেটে ছুটে যাচ্ছে অসংখ্য বুলেট।

    মাটিতে শুয়ে পড়ল বেনন। অস্ত্র ছাড়া কিছুই করার নেই ওর। অস্ত্রের গর্জন আরও বাড়ল। সাবধানে মাথা একটু উঁচু করে সামনে তাকাল ও। দুই আউট- লর মৃতদেহ পড়ে আছে নিভে যাওয়া আগুনের পাশে। পেছনের চ্যাপারাল গাছের কাছ থেকে আগুনের ঝিলিক তুলে ছুটে আসছে বুলেট। ঝোপ লক্ষ্য করে গুলি করতে করতে ক্রল করে সামনে বাড়ছে ডেপুটিরা। তাদের ঠেকানোর জন্যে চ্যাপারালের কাছ থেকে হুঙ্কার ছাড়ছে জীবিত তিন আউট-লর অস্ত্র।

    বুঝতে পারল বেনন, পালাতে যদি হয় তো এখনই উপযুক্ত সময়। মার্শাল আর তার ডেপুটিরা মহা ব্যস্ত হয়ে আউট-লদের কোণঠাসা করতে চাইছে। সরে পড়া যায়, কিন্তু সমস্যা হলো অস্ত্র আর ঘোড়া ছাড়া এই বিরান ভূমিতে ওর টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।

    সমস্যার সমাধান দ্রুতই হয়ে গেল। ক্ষীণ একটা আর্তচিৎকার শুনতে পেল ও। চাঁদের উজ্জ্বল আলোয় একজন ডেপুটিকে ঝাঁকি খেতে দেখল বেনন। মাটিতে পানি থেকে তোলা মাছের মত দাপাচ্ছে লোকটা। তাকিয়ে থাকল বেনন। ডেপুটি চিৎ হলো, তারপর নড়ল না আর। লোকটার মুখ হাঁ হয়ে আছে।

    ক্রল করে লোকটার দিকে এগোল বেনন। যতটা পারে তাড়াহুড়ো করছে। রাগী ভোমরার মত গুঞ্জন তুলে মাথার ওপর দিয়ে ছুটে চলেছে আউট-লদের বুলেটগুলো। স্থির দেহটার কাছে পৌঁছে দ্রুত হাতে গানবেল্ট খুলে নিজে পরে নিল ও, তারপর উঠে দাঁড়িয়ে কুঁজো হয়ে দৌড় দিল ক্যানিয়নের মুখ লক্ষ্য করে।

    লেজ তুলে ঝড়ের গতিতে ওকে পাশ কাটাল আউট-লদের আতঙ্কিত ঘোড়ার পাল। বেননের কানের পাশ দিয়ে গেল একটা বুলেট। আরেকটা পায়ের কাছে পাথরে লেগে ছিটকে গেল। কে গুলি করছে দেখার জন্যে থামল না বেনন, গর্তের মুখের ভেতর ঢুকে দৌড় থামাল, একটুক্ষণ থামল দম ফিরে পাবার জন্যে।

    মেঝেতে পড়ে আছে ছোট ছোট পাথরের টুকরো, ওগুলোর ওপর দিয়ে হোঁচট খেতে খেতে এগোল ও ফাটলের দিকে। মনের ভেতরটা কেমন যেন খচখচ করছে। ক্যানিয়নে যা ঘটল তার মধ্যে কী যেন খুব অস্বাভাবিক। ঠিক মনে পড়ল না ওর কী সেটা। একটু চেষ্টা করতেই মনে পড়ে গেল। মেয়েটা ক্যানিয়নের ভেতরে চিৎকার করে উঠেছিল। ওই চিৎকারেই সচেতন হয়ে ওঠে আউট-লরা।

    অমন চিৎকার করার কোন উপযুক্ত কারণ নেই। ভয়ে চিৎকার করবে তেমন মেয়ে নয় রিয়া। কঠিন পরিস্থিতিতেও তাকে শান্ত থাকতে দেখেছে ও আইসিসি র‍্যাঞ্চে। বরফের মত শীতল মেয়েটার আচরণ। অত্যন্ত স্থির চিত্তের মেয়ে সে। হতে পারে বন্দি অবস্থায় তার মানসিকতা এতই খারাপ অবস্থায় ছিল যে নার্ভাস হয়ে পড়েছিল সে। এছাড়া চিৎকারের পেছনে আর কোন যুক্তি নেই। সামনে আরও অনেক বেশি জরুরী কাজ পড়ে থাকায় এ ব্যাপারে আর মাথা ঘামাল না ও।

    দেয়ালের গর্ত দিয়ে বেরিয়ে এসে থামল ও। চিন্তা করছে। একটা ঘোড়া দরকার ওর। যেভাবে হোক ঘোড়া জোগাড় করতে হবে।

    নিঃশব্দে ড্র’র দিকে এগোল ও। ডেপুটিদের পনি ওখানেই রাখা আছে। ছায়ায় ছায়ায় এগোতে এগোতে ও লক্ষ করল সিগারেটের আগুন উজ্জ্বল হচ্ছে আবার কমে যাচ্ছে। একটা বোল্ডারের পাশে আয়েস করে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছে প্রহরী ডেপুটি। তার মনে কোন সন্দেহ নেই যে সে সম্পূর্ণ নিরাপদ।

    বেশ খানিকটা ঘুরে লোকটার পেছনে গিয়ে দাঁড়াল বেনন নিঃশব্দে। মৃত ডেপুটির কাছ থেকে পাওয়া সিক্সগানটা দিয়ে ঘাড়ে একটা জোরাল বাড়ি মারতেই জ্ঞান হারিয়ে ধপ করে পড়ে গেল ওভারহোলসারের প্রহরী। ‘সত্যি আমি দুঃখিত,’ বিড়বিড় করে বলল বেনন। ‘কিন্তু তাই বলে তো আর আমি হাঁটতে পারি না।’

    ড্র ধরে একটু সামনে বাড়তেই ঘোড়াগুলোর দেখা পেয়ে গেল ও। ছয়টা স্যাডল একটার ওপর আরেকটা সাজিয়ে রাখা হয়েছে, তার পেছনে বেঁধে রাখা হয়েছে জন্তুগুলোকে। পছন্দ করে মার্শালের ডান ঘোড়াটাই বেছে নিল বেনন, ওটাই সেরা। এবার স্যাডল বেঁধে নিয়ে বাকি ঘোড়াগুলোকে তাড়িয়ে নিয়ে চলল ও। একটু পরই ফাটল থেকে বেরিয়ে এল। পাছায় চাপড় খেয়ে দিগ্বিদিকে ছুটল অন্য ঘোড়াগুলো। সহজে ওগুলোকে ধরে ওর পিছু নিতে পারবে না ওভারহোলসার। আপাতত তার দিক থেকে কোন ঝামেলার আশঙ্কা নেই।

    .

    পরদিন কিকিং হর্স শহরে পৌঁছে গেল বেনন। অতি ছোট শহর, পাহাড়ের ওপরে। গ্রাম বললেই চলে। একটা ক্রীকের দু’ধারে ছোট ছোট কয়েকটা বাড়ি। শহরে একটাই মাত্র রাস্তা, সেটাও সরু। বাড়িগুলোর মাঝখানে আছে বেশ কিছু ছাপরা। একটা সেলুনও আছে শহরে। সেটার সামনে বেঁধে রাখা হয়েছে বেশ অনেকগুলো ঘোড়া। ডান ঘোড়াটাকে একটা চৌবাচ্চা থেকে পানি খাইয়ে সেলুনের সামনের রেইলে বাঁধল ও, তারপর ঢুকল সেলুনে।

    সেলুনের পেছনের বার কাউন্টারের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে ঝুনঝুনে এক বুড়ো। গোঁফ ছাঁটে না সে। ঠোঁট ঢেকে দিয়েছে গোঁফের বাড়বাড়ন্ত। পরনের কাপড় নোংরা। প্যান্ট এতই ময়লা যে শক্ত হয়ে গেছে ধুলো আর শুকনো ঘামে।

    চারপাশে চোখ বোলাল বেনন। সেলুনের ভেতরে দশ-বারোজন কঠোর চেহারার লোক আছে। কেউ কেউ মদ গিলছে, অন্যরা তাসের টেবিলে তাস পেটাচ্ছে। বাতাসে সিগারের ধোঁয়ার কটু গন্ধ। মেঘের মত ভেসে আছে ঘন ধোঁয়া। চাপা স্বরে কথা বলছে সবাই। আইসিসির কয়েকজন গানম্যানকে চিনতে পারল বেনন।

    গম্ভীর চেহারায় বারে দাঁড়িয়ে ড্রিঙ্কের অর্ডার দিল ও। ছোট একটা জগ থেকে টিনের কাপে করে মদ পরিবেশন করল বুড়ো বারটেণ্ডার। চুমুক দিয়ে আরেকটু হলে বিষম খাচ্ছিল বেনন। মদটা এত কড়া যে গলা দিয়ে নামার সময় মনে হলো আগুন ধরে গেছে ভেতরে।

    পরিচিত শুষ্ক কণ্ঠস্বর কানে যেতে ঘুরে তাকাল ও। দেখল ওর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আইসিসির নতুন ফোরম্যান-বিতাড়িত ফ্রস্টি।

    ‘আরে,’ অলস গলায় বলল বেনন, ‘ফ্রস্টি দেখছি! আমি তো ভেবেছিলাম এতক্ষণে তোমার লাশে কমি কিলবিল করছে।’

    ‘আর আমি ভেবেছিলাম ক্যানিয়নে শেষ হয়েছ তুমি,’ জবাবে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল ফ্রস্টি। ‘দেখা যাচ্ছে আমরা দু’জনই বেঁচে আছি। ফাঁসুড়েদের হাত থেকে বাঁচলে কী করে?’

    ‘নদীতে ভেসে ভাটিতে চলে আসি,’ জবাব দিল বেনন। ফ্রস্টির কিছুই ওর ভাল লাগছে না। লোকটার চেহারায় বিদ্রূপের ছাপ। চোখ দুটোয় শীতল দৃষ্টি। ওকে যেন মাপছে সে। ‘আমাকে দেখে যে চেহারা করেছ তাতে মনে হচ্ছে তোমার মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছি আমি,’ শুকনো গলায় বলল বেনন।

    ‘হয়তো তাই হয়ে দাঁড়িয়েছ তুমি,’ চাপা স্বরে বলল ফ্রস্টি। আর একটা কথাও না বলে ঘুরে দাঁড়িয়ে মনোযোগ দিল তাসের টেবিলের দিকে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমাসুদ রানা ৪৪৮ – মৃত্যুঘণ্টা
    Next Article মৃত্যু উপত্যকা – কাজী মায়মুর হোসেন

    Related Articles

    কাজী মায়মুর হোসেন

    অদৃশ্য ঘাতক – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৬৮ – স্বর্ণলিপ্সা

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    ধাওয়া – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মৃত্যু উপত্যকা – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৪৮ – মৃত্যুঘণ্টা

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৮ – মহাপ্লাবন

    July 25, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }