Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    খুনে ক্যানিয়ন – কাজী মায়মুর হোসেন

    কাজী মায়মুর হোসেন এক পাতা গল্প162 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    খুনে ক্যানিয়ন – ৭

    সাত

    ভোর হবার আগেই রওনা হবার প্রস্তুতি নিল বেনন। ব্যস্ত শহরটা যেন পড়ে আছে ধূসর মৃত একটা লাশের মত। এখনও ঘুম ভেঙে জেগে ওঠেনি এলডোরাডো। মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে বন্ধ হওয়া কোলাহলমুখর ড্যান্স হল আর সেলুনগুলো এখন নীরব, নিথর, নির্জন। আলো হাসি আর মানুষের চিৎকার চেঁচামেচি নেই। মাতালরা পড়ে আছে অলিগলিতে। একটা নেড়ি কুত্তা গভীর মনোযোগে ময়লার স্তূপে খাবার খুঁজছে। রাতে প্রহরার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক ডেপুটি ঘুমঘুম চোখে পায়চারি করছে বোর্ডওয়াক ধরে। দিনরাত চলে স্ট্যাম্প মিল। সেটার আওয়াজ ছাড়া চারপাশে অন্য কোন শব্দ নেই। যেদিন ওই মিল বন্ধ হয়ে যাবে সেদিন মৃত্যুঘণ্টা বাজবে এই খনি শহরের।

    পশ্চিমমুখী একটা ওয়্যাগন ট্রেইল ধরে এগোল বেনন। পাহাড়ী একটা ক্যানিয়নের ভেতর দিয়ে এঁকেবেঁকে এগিয়েছে পথটা। পেছনে পড়ে গেল শহরটা। স্ট্যাম্প মিলের সার্বক্ষণিক আওয়াজটা আস্তে আস্তে ক্ষীণ হতে হতে মিলিয়ে গেল দূরত্বের সঙ্গে। খনিজ বহনকারী পথটা গেছে রুক্ষ ন্যাড়া ঢিবি আর একাকী প্রহরীর মত দাঁড়িয়ে থাকা টিলাগুলোকে পাশ কাটিয়ে। ওয়্যাগনের ট্র্যাক অনুসরণ করছে বেনন। সামনে ধীরে ধীরে ওপরে উঠেছে ট্রেইল। আপনাআপনিই ঘোড়ার গতি হাঁটার পর্যায়ে চলে এল।

    একটা বাঁক ঘুরতেই নিচে দেখা গেল বিস্তীর্ণ প্রান্তর। দূরে পাহাড়শ্রেণী আর মরুভূমি সুদূরবর্তী কুয়াশাচ্ছন্ন ঘাসজমির সঙ্গে মিলেমিশে আছে। এখানে থামল বেনন, ঘোড়া থেকে নেমে একটা সিগার ধরাল।

    সামনে চওড়া একটা দিগন্ত বিস্তৃত উপত্যকা, দেখলে মনে হয় রংচঙে একটা কম্বল কেউ বিছিয়ে রেখেছে মাটিতে। এখানে ওখানে এবড়োখেবড়ো জমি, উঁচু সমতল, খাদ-নতুন সূর্যের লাল রশ্মিতে লাল আর হলদে রঙের ছড়াছড়ি চারদিকে। একনজরেই বুঝল বেনন, গরু চরানোর জন্যে উপত্যকাটা আদর্শ। আরও ভাল করে তাকাতেই নদীটা দেখতে পেল ও। উপত্যকার কোথাও কোথাও দেখা যাচ্ছে সরু একটা রূপালী নদী-গলিত রূপার তারের মত, এঁকেবেঁকে চলে গেছে দৃষ্টিসীমার ওপারে। বুঝতে দেরি হলো না, ওটাই জিলা নদী। বেনন অনুভব করল, খুনে ক্যানিয়ন খুঁজে বের করা যতটা কঠিন হবে বলে ধারণা করছিল তার চেয়ে কঠিন হবার সম্ভাবনাই বেশি। বিশাল একটা গোলকধাঁধার মত অঞ্চল এটা।

    ওয়্যাগন রোড সামনে চিহ্ন হারিয়েছে, বাঁক নিয়ে চলে গেছে দু’দিকে, ক্যানিয়নের ভেতর দিয়ে রুক্ষ পাথুরে উঁচু জমির দিকে। ক্রমেই বাড়ছে দিনের উত্তাপ। পাহাড়ী উচ্চতা থেকে আড়াআড়ি একটা পথ বড় বড় পাথর আর পাথুরে ঢালু তাক এড়িয়ে নামতে শুরু করল বেনন। নিচে টিলার ঢেউ, একের পর এক টিলা পাহাড়ের গায়ে এসে মিশেছে। ওপ্রান্তে মিশেছে গিয়ে ঘাসজমির সঙ্গে। সবুজ জমি। ড্রগুলোতে জন্মেছে ওক আর পাইন গাছ। গরু চরানোর জন্যে এরচেয়ে ভাল জায়গা আর হয় না, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো এ পর্যন্ত একটা গরুও বেননের চোখে পড়েনি।

    দুপুরে ছায়াময় একটা ড্রতে বিশ্রাম নিতে থামল ও। ঘোড়াটার স্যাডলের বাঁধন ঢিলে করে দিয়ে একটা জুনিপার গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বাঁধল ওটাকে। যথেষ্ট ঘাস আছে, পেট ভরে খেতে পারবে জন্তুটা। এবার কম্বল বিছিয়ে আরাম করে শুলো বেনন, ঘুমিয়ে পড়ল দেখতে দেখতে।

    ঘোড়ার নাক ঝাড়ার আওয়াজে ঘুম ভাঙল ওর। উঠে বসে ঘোড়াটার দিকে তাকাল। মাথা উঁচু করে আছে ওটা, কান খাড়া। দ্রুত উঠে দাঁড়াল বেনন, সতর্ক হয়ে কান পাতল। ঘোড়ার খুরের খটাখট আওয়াজ শুনতে পেল। ঘোড়ার কাছে গিয়ে স্যাডলের বাঁধন শক্ত করল ও, স্যাডলে ওঠার আগেই ড্রতে এসে হাজির হলো দুই অশ্বারোহী। ওকে দেখেই পরস্পরের কাছ থেকে সরে গেল তারা, বেননের দু’পাশে ঘোড়া থামাল। চুপ করে বসে আপাদমস্তক মাপতে শুরু করল ওকে।

    কঠোর চেহারার লোক তারা, দীর্ঘ সময় স্যাডলে কাটিয়ে অভ্যস্ত। রোদে পোড়া চেহারা। পরনে পাঞ্চারদের পোশাক। স্যাডল হর্নের পাশে ঝুলছে গোল করে পেঁচিয়ে রাখা ল্যাসো। দু’জনেরই কোমরে ঝুলছে সিক্সগান। স্যাডল বুটে শোভা পাচ্ছে উইনচেস্টার রাইফেল।

    ‘হাওডি,’ শান্ত গলায় সম্ভাষণ জানাল বেনন। বুঝতে পারছে এরা ওর প্রতি বিরূপ হলে ভাল বিপদেই পড়েছে ও। একজনকে গুলি করতে গেলে অন্যজন পাশ থেকে সহজেই ওকে গেঁথে ফেলতে পারবে।

    রোদে পোড়া চেহারার লোকটা কিছুক্ষণ তার ফ্যাকাসে নীল চোখে বেননকে দেখল, তারপর সংক্ষিপ্ত হাওডি জানাল।

    ‘এদিকের কোন র‍্যাঞ্চে কাজ করো?’ আলাপ চালানোর জন্যে জিজ্ঞেস করল বেনন।

    ‘ইমপেরিয়াল ক্যাট্ল কোম্পানি,’ জানাল নীল চোখ।

    ‘এটা আইসিসি রেঞ্জ। এখানে বহিরাগতদের প্রশ্রয় দিই না আমরা।’ বলল তার সঙ্গী।

    বিনয়ী হাসি হাসল বেনন। ‘আমি কাজ খুঁজছি। নামটা রন। রন জনসন।’ বেননের ক্যান্টলের পেছনে বাঁধা গিটারটা দেখল রোদে পোড়া লোকটা। চিন্তিত স্বরে বলল, ‘…রন জনসন। …গিটারের সুর বড় মিষ্টি। …আমাকে লোকে রিয়ো বলে ডাকে।’ সঙ্গীকে দেখাল। ‘ওর নাম র‍্যাবিট।’

    আস্তে করে মাথা দুলিয়ে সায় দিল র‍্যাবিট।

    ‘কাজের লোক দরকার তোমাদের র‍্যাঞ্চে?’ র‍্যাঞ্চটা দেখার একটা অদম্য ইচ্ছে পেয়ে বসেছে বেননকে। মাসে তিরিশ ডলারের কাউবয় নয় এরা, সেটা এদের আচরণ আর অস্ত্র ঝোলানোর কায়দা থেকেই বোঝা যাচ্ছে স্পষ্ট। পাঞ্চাররা :৪৫ কোল্ট আর স্যাডলে রাইফেল নিয়ে গরু দেখাশোনা করতে বের হয় না। তাছাড়া এ পর্যন্ত একটা গরুও চোখে পড়েনি ওর।

    ‘জিজ্ঞেস করতে দোষ নেই,’ বলল র‍্যাবিট। ‘তুমি রেড কেলটনের সঙ্গে দেখা করে দেখতে পারো। সে-ই বস্।’

    ‘তাকে কোথায় পাওয়া যাবে?’

    রিয়ো বলল, ‘সে নিয়ে চিন্তা নেই, আমার পেছনে থাকো, তা হলেই তার দেখা পেয়ে যাবে তুমি।’

    জায়গায় ঘোড়াটাকে ঘুরিয়ে নিল সে, স্যাডলে উঠল বেনন, রিয়োর পাশাপাশি ড্র ধরে এগোল। র‍্যাবিট আসছে ওদের পেছনে। পাহারা দিচ্ছে? মনে প্রশ্ন জাগল বেননের। অস্বস্তি বোধ হচ্ছে। মনে হচ্ছে বন্দি ও। চাক বা না চাক রেড কেলটনের সঙ্গে দেখা করতে যেতেই হবে ওকে। চাকরির খোঁজ করছে বলাতে এরা জোর না খাটিয়ে নিয়ে চলেছে ওকে নিজেদের আস্তানায়।

    ঠোঁটের আগায় প্রশ্ন এসে জমে আছে, কিন্তু রিয়োর দিকে একবার তাকিয়ে সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলল বেনন। এদের ভাব দেখে যা মনে হচ্ছে তাতে এখন প্রশ্ন করে এদের মনে সন্দেহের উদ্রেক না করাই উচিত কাজ হবে। আইসিসির লোক চোখ সরু করে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে, অন্য কোনদিকে খেয়াল নেই। লোকটা যুদ্ধংদেহী ভাব দেখাচ্ছে না, কিন্তু তার আচরণে বন্ধুত্বের কোন প্রকাশও নেই।

    বেশ সামনে একটা উইণ্ডমিলের পাখাগুলো দেখা যাচ্ছে, সূর্যের আলো প্রতিফলিত হচ্ছে ওটার ঘুরন্ত ব্লেড থেকে। আরও কিছুক্ষণ পর একটা র‍্যাঞ্চ হাউসের আকৃতি স্পষ্ট হলো। অ্যাডোবির তৈরি, চারপাশের ধূসরতার সঙ্গে মানিয়ে গেছে। নিচু চারকোনা বাড়িতে র‍্যাঞ্চ হাউস। বেনন আন্দাজ করল মাঝখানে একটা প্যাশিয়ো থাকবে। বাইরের দিকের জানালাগুলো ছোট ছোট স্প্যানিশ গ্রিল দিয়ে দুর্ভেদ্য করা হয়েছে। বাড়িটার পেছনে অন্যান্য বাড়ির আকৃতি দেখা যাচ্ছে।

    অজান্তেই ভ্রূ কুঁচকে উঠল বেননের। দেখে পরিত্যক্ত, মৃত এবং অবহেলিত মনে হচ্ছে জায়গাটাকে। মনেই হয় না এটা একটা বড় র‍্যাঞ্চের হেডকোয়ার্টার। তার দিয়ে ঘেরা একটা জায়গায় যে কটা ঘোড়া দেখতে পেল তাতে বুঝতে অসুবিধে হয় না যে লোকের অভাব নেই র‍্যাঞ্চে। অস্বাভাবিক।

    র‍্যাঞ্চ হাউস পাশ কাটিয়ে ডানদিকের একটা অ্যাডোবি ব্যারাকের সামনের উঠানে চলে এল ওরা। বাড়িটা দেখে ওটা বাঙ্ক হাউস হবে বলে ধারণা করল বেনন। র‍্যাঞ্চ হাউসের পেছন দিকটা বামদিকে। সামনে একটা করাল। গেটের পাশে কাঠের একটা চৌবাচ্চা।

    চৌবাচ্চার সামনে ঘোড়া থেকে নামল ওরা। দরজা পেরোনোর সময় মাথা নিচু করল এক দীর্ঘদেহী লোক, তারপর বেরিয়ে এল বাঙ্ক হাউস থেকে। হাড্ডিসার মানুষ সে, চেহারায় ভাবের কোন প্রকাশ নেই। উঁচু চোয়ালের হাড়ের সঙ্গে সেঁটে আছে চামড়া। চওড়া ব্রিমের স্টেটসনের তলা দিয়ে বের হয়ে আছে লালচে চুল। এ লোকই রেড কেলটন হবে, আন্দাজ করল বেনন। লাল একটা ফ্ল্যানেলের শার্ট তার পরনে, লম্বা গলায় জড়ানো স্কার্ফটাও লাল। বোঝা যায় লাল রংটা তার পছন্দের রং। নিচু করে বাঁধা দুটো সিক্সগান ঝুলছে তার ঊরুর পাশে। খুবই অস্বাভাবিক! এর ভঙ্গি বলে দিচ্ছে এ গানম্যান। সাধারণ ফোরম্যান কখনও দুটো অস্ত্র এভাবে বহন করে না।

    বেননের হাত ছুঁয়ে দীর্ঘদেহীর দিকে ওর মনোযোগ আকর্ষণ করল রিয়ো। গোড়ালি উঁচু ধুলোতে নেমে পড়ল সে ঘোড়া থেকে।

    এবড়োখেবড়ো অ্যাডোবির দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট রোল করল রেড কেলটন, ওদের এগিয়ে আসতে দেখছে।

    ‘এ রন জনসন, রেড,’ থেমে দাঁড়িয়ে পরিচয় করিয়ে দিল রিয়ো। ‘কাজ খুঁজছে। গিটার আছে ওর সঙ্গে।’

    একে পেলে কোথায় তোমরা?’ কর্কশ স্বরে জিজ্ঞেস করল রেড।

    ‘কয়োটি ক্রীকের পেছনে একটা ড্রয়ে।’

    ‘এলডোরাডো থেকে আসছি,’ জানাল বেনন। ‘জুয়াড়ীরা আমার সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়েছে। অবশ্য বেশি কিছু ছিল না আমার।’

    বেননের দিকে তাকাল রেড। লোকটার চোখ ধূসর নাকি সবুজ তা ঠিক ধরতে পারল না বেনন। তবে সন্দেহ নেই যে তার দৃষ্টি তীক্ষ্ণ, কিছুই নজর এড়াচ্ছে না।

    ‘তা হলে কাজ খুঁজছ তুমি,’ মন্তব্যের সুরে বলল রেড। সিগারেটে টান দিল। ‘তা আইসিসিতে কি কাজের খোঁজেই এসেছ?’

    ‘তা নয়,’ জানাল বেনন। ‘বরং আইসিসিই আমাকে খুঁজে নিয়ে এসেছে বলে আমার ধারণা।’

    ঠোঁট প্রসারিত করল রেড। ওটাকেই হাসি বলে ধরতে হবে। চোখ দুটোয় বিরাজ করছে শীতল দৃষ্টি। ‘মালপত্র বাঙ্ক হাউসে রেখে অপেক্ষা করো। পরে তোমার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

    স্যাডল খুলে করালের পোলের সঙ্গে লটকে রাখল বেনন। রোলটা কাঁধে নিয়ে এক হাতে গিটারটা বহন করে বাঙ্ক হাউসের দিকে পা বাড়াল। ভেতরে ঢুকে অবাক হতে হলো ওকে। পেছনের দিকে একটা টেবিল ঘিরে বসে আছে বেশ কয়েকজন রাইডার। তাস পেটাচ্ছে তারা। অথচ এসময়ে রেঞ্জে নানা কাজে তাদের ব্যস্ত থাকার কথা।

    একটা খালি বাঙ্কে রোল বিছিয়ে তার ওপর ওয়ারস্যাক আর গিটার রাখল বেনন, বাইরে বেরিয়ে এসে বাঙ্ক হাউসের বারান্দার ছায়ায় দাঁড়িয়ে একটা সিগার ধরাল। ওর পাশে এসে দাঁড়াল রিয়ো। বিরাট একটা শকুনের মত করালের উঁচু খুঁটির ওপর বসে আছে রেড কেলটন।

    বেননের উল্টোদিকে র‍্যাঞ্চ হাউসের পেছন দেয়াল। ওখানে সরু সরু জানালা দেখা যাচ্ছে একটু পরপর। একটা দরজাও আছে। বন্ধ।

    দরজাটা খুলে যেতে চোখ বিস্ফারিত হলো বেননের। একটা মেয়ে বেরিয়ে এসেছে বাইরে। চমৎকার শারীরিক সৌন্দর্য মেয়েটির। মুখটা চাঁদের মত গোল। মাথায় সাদা একটা স্ট্র হ্যাট। ওটার তলা দিয়ে দেখা যাচ্ছে তার সোনালী চুলের গোছা। ডানে বামে একবারও না তাকিয়ে করালের খুঁটির ওপর বসে থাকা কেলটনের দিকে এগোল সে দৃঢ় পায়ে। সাদা একটা সিল্কের পোশাক তার পরনে। দেহের প্রতিটি খাঁজভাঁজ পরিষ্কার ফুটে উঠেছে। তীক্ষ্ণ নাসা আর ছোট্ট চিবুক উঁচু করে হাঁটছে সে। চমৎকার লাগল বেননের দেখতে। কৌতূহল বোধ করছে। এমন একটা অস্বাভাবিক র‍্যাঞ্চে এরকম একটা মেয়ে কী করছে বুঝে উঠতে পারল না।

    বেননের চোখ অনুসরণ করল মেয়েটাকে। করালের খুঁটির সামনে গিয়ে দাঁড়াল মেয়েটি, চোখ তুলে রেড কেলটনের দিকে তাকাল। কী কথা হলো শুনতে পেল, না বেনন। কিন্তু বুঝতে পারল মেয়েটি কোন কারণে অসন্তুষ্ট। রাগের সঙ্গে হাত নাড়ছে সে, ঝট করে ঘুরে দাঁড়িয়ে আবার র‍্যাঞ্চ হাউসের দিকে ফিরে চলল।

    ‘সদ্য প্রস্ফুটিত একটা গোলাপের মতই সুন্দর,’ মৃদু স্বরে বলল বেনন।

    ‘আর কাঁটাও অত্যন্ত বেশি,’ যোগ করল রিয়ো। ‘চোখের পলক না ফেলে তোমাকে বা আমাকে গুলি করে দিতে পারবে এমন এক মেয়ে ও।’

    ‘আমার তা মনে হয় না,’ বলল বেনন, ‘আর এত সুন্দরী মেয়ে এখানে কেন সে প্রশ্নও জাগছে আমার মনে।’

    ‘চেরোকিও মনে করেছিল ও গুলি করবে না,’ বলল রিয়ো। ‘বাড়াবাড়ি করতে গিয়েছিল সে। বিনা দ্বিধায় গুলি করে দেয় রিয়া।’

    ‘ওর নাম তা হলে রিয়া।’

    ‘হ্যাঁ।’ মাটিতে থুতু ফেলল রিয়ো। ‘ও একটা র‍্যা সাপের মতই বিপজ্জনক।’

    দু’জন দু’জন করে রেঞ্জ থেকে ফেরত আসছে ধূলিধূসরিত কাউবয়রা, উঠানে এসে ঘোড়া থেকে নামছে। এদের দেখে রুক্ষ কঠোর লোক বলেই মনে হচ্ছে। একটু পরই বাবুর্চি সাপারের ঘণ্টা বাজাল। অন্যান্যদের সঙ্গে খাবার ঘরে তাড়াহুড়ো করে গিয়ে ঢুকল বেনন। সেই ভোরে নাস্তা করার পর পেটে আর কিছু পড়েনি ওর।

    সাপার শেষে বাঙ্ক হাউসে হাজির হলো ও। ওয়ারব্যাগ আর গিটার এক পাশে সরিয়ে ওয়ারব্যাগের বাঁধন পরীক্ষা করে দেখল। অবাক হলো না যখন দেখল গিঁঠটা পাল্টে গেছে, ওর দেয়া গিঠ নেই। ও যখন খেতে গেছে তখন কেউ একজন ব্যাগটা খুলে ভেতরের জিনিসপত্র ঘেঁটেছে। ওয়ান্টেড পোস্টারটা ছিল, সেটা নিশ্চয়ই সে দেখেছে। এখন অপেক্ষা করে দেখতে হবে ঘটনা কোন্‌দিকে মোড় নেয়। রেড কেলটন কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় তার ওপর নির্ভর করছে পরবর্তী পদক্ষেপ। সত্যিকার কোন ক্যাটল কোম্পানি কখনও এমন কাউকে ভাড়া করবে না যাকে ধরে দেয়ার জন্যে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।

    দিনের আলো কমে আসতে কে যেন কয়েকটা স্টেবল বাতি জ্বেলে দিল। সিলিঙের হুক থেকে ঝুলছে লণ্ঠনগুলো, হলুদ আলো ছড়চ্ছে। তাসের আড্ডা জমে গেল টেবিল ঘিরে। মাথা ঝুঁকিয়ে দরজা দিয়ে বাঙ্ক হাউসে ঢুকল রেড কেলটন। বেননকে দেখে তার সামনে থামল। আপাদমস্তক নজর বুলিয়ে নিয়ে বলল, ‘রন, তোমাকে হায়ার করা হলো। খাবার খরচ বাদ দিয়েও মাসে ষাট ডলার করে পাবে তুমি।’

    খুশির ছাপ ফুটিয়ে তুলল বেনন চেহারায়। ‘দারুণ! অনেক ধন্যবাদ তোমাকে। শেষ যে কাজটা করছিলাম সেখানে আমাকে মাসে তিরিশ ডলার করে দিত। দক্ষ লোকও সহসা ষাট ডলার করে পায় না। ‘

    ‘আর আমরা দক্ষ লোক ছাড়া চাকরিতেই নিই না,’ শুকনো গলায় বলল রেড। ‘অনেকে বলবে আমরা গানম্যান ভাড়া করি।’ তাসের টেবিলের দিকে পা বাড়াল রেড।

    ভাবনায় ডুবে গেল বেনন। ইমপেরিয়াল ক্যাটল কোম্পানিতে অস্বাভাবিক কিছু একটা অবশ্যই ঘটছে। র‍্যাঞ্চ হলে গরু রাখা হত। এখানে গরু নেই। র‍্যাঞ্চের ফোরম্যান দুটো সিক্সগান ঝোলায়। বেতন দেয়া হয় দ্বিগুণ! কিছুই সাধারণ র‍্যাঞ্চের সঙ্গে মিলছে না।

    বেননের চিন্তার জাল ছিন্ন করল রিয়ো। ‘রন, ছেলেরা তোমার গিটার শুনতে চাইছে।’

    ‘নিশ্চয়ই।’ হাসল বেনন।

    পরদিন সকালে অন্য সবার সঙ্গে হুড়োহুড়ি করে ঘোড়ায় স্যাডল চাপাল বেনন। নীরবে রেঞ্জে টহল দিতে বের হলো ওরা। ভোর হতে না হতেই সূর্য তার তাপ ঢালতে শুরু করেছে। মেজাজ খারাপ করে দেয়ার মত পরিবেশ। ধুলোয় আর ঘামে মিশে চটচটে হয়ে গেল ওদের দেহ এক ঘণ্টা পুরো হবার আগেই।

    ঘুরতে বেরিয়ে বুঝতে পারল বেনন, জীবনে কোন দিন এত বড় আর উর্বর এলাকা ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখেনি ও। কথাটা রিয়োকে বলল ও।

    রিয়ো জবাবে বলল, ‘গরু আছে কি নেই তা নিয়ে তোমার দুশ্চিন্তার কোন কারণ তো আমি দেখছি না। সর্বোচ্চ বেতন পাচ্ছ তুমি। সেটাতেই সন্তুষ্ট থাকা উচিত।’

    ‘গরুই নেই তো কাউবয়ের কাজ করব কী? বিনা কারণে কয়দিন আমাকে বেতন দেবে রেড?’

    ‘রেডের কাজ রেঞ্জ পরিষ্কার রাখা। কোন লোককে এই এলাকায় ঘুরঘুর করতে দেখলে তাকে খেদানো। সেই দায়িত্বই আমাদের পালন করতে হবে।’

    চুপ করে গেল বেনন। ওদের মাঝে আর কোন কথা হলো না।

    সারাদিন রাইড করে একটা কয়োটি আর এক ঝাঁক ম্যাগপাই ছাড়া আর কোন জীবিত প্রাণীর দেখা পেল না বেনন। মাথার ওপর ঘুরে ঘুরে উড়ল শকুনের দল। এত বড় এলাকায় একটা গরুও নেই।

    র‍্যাঞ্চে ফিরে সাপার সারল ওরা সন্ধ্যায়, তারপর করালের খুঁটিতে অন্য গানম্যানদের সঙ্গে বসল সিগার ফুঁকতে। রিয়োর অনুরোধে গিটার হাতে তুলে নিতে হলো বেননকে। ঘনায়মান অন্ধকারে গিটারের রিনিঝিনি চমৎকার একটা আবহ সৃষ্টি করল।

    একটু পরে খুলে গেল র‍্যাঞ্চ হাউসের সেই দরজাটা। সোনালীচুলো রিয়া বের হয়ে এল। এখন তার পরনে হাঁটু পর্যন্ত চেরা একটা রাইডিং স্কার্ট। সরু কোমরে ঝুলছে একটা গানবেল্ট। চামড়ার হোলস্টার থেকে বেরিয়ে আছে সিক্সগানের হাতির দাঁতের তৈরি বাঁট।

    বেননকে বিস্মিত করে সরাসরি ওর দিকে এগিয়ে এল মেয়েটা। ওর সামনে থামল। ব্রিটিশ সুর বাজল তার মিষ্টি কণ্ঠে। ‘তুমি বড় চমৎকার গিটার বাজাও, মিস্টার। গান গাও না কেন সঙ্গে?’

    মনে মনে বলল বেনন, গান গাইলে আশপাশের বোবা প্রাণীগুলো ভয় পেয়ে দিগ্বিদিকে ছুটে পালাবে।

    ‘নাম কী তোমার, মিস্টার?’ আবার জিজ্ঞেস করল রিয়া।

    খুঁটি থেকে নেমে হ্যাট খুলে মাথা নিচু করে সম্মান দেখাল বেনন, তারপর বলল, ‘ছেলেরা আমাকে রন নামে ডাকে।’

    ‘আমি রিয়া ফ্রিংস্,’ বলল সুন্দরী। ‘বাসায় আসবে একটু? প্যাশিয়োতে বসে তোমার গিটার শুনতে খুব ইচ্ছে করছে।

    বেনন আঁচ করল ব্যাপারটা রেড কেলটন পছন্দ করবে না। কী করবে বুঝতে না পেরে একবার রিয়া আরেকবার গানম্যানদের দিকে তাকাল ও। কারও চেহারায় কোন অভিব্যক্তি নেই।

    ‘বাসায় গিয়ে গিটার শোনাতে পারলে খুশিই হব, ম্যাম,’ শেষে বলল বেনন। মেয়েটা ঘুরে দাঁড়ানোয় পা বাড়াল তার পেছনে। উঠানের মাঝখানে পৌঁছেছে ওরা, এমন সময়ে বাঙ্ক হাউসের কোনা ঘুরে বেরিয়ে এল রেড কেলটনের দীর্ঘ শরীর। ধীর পায়ে ওদের বাধা দিতে এগিয়ে এল সে।

    ‘যাচ্ছ কোথায়, রন?’ ঠিক বেননের সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল।

    ‘মিস রিয়া গিটারের বাজনা শুনতে চায় বলে তার সঙ্গে র‍্যাঞ্চ হাউসে যাচ্ছি।’

    কড়া চোখে রিয়াকে দেখল রেড।

    পাল্টা শীতল দৃষ্টিতে তাকাল রিয়া।

    ‘ম্যাম,’ কর্কশ স্বরে বলল রেড, ‘কোন লোককে র‍্যাঞ্চ হাউসে ঢুকতে দিতে নিষেধ করা হয়েছে আমাকে।’

    ‘নিজের চরকায় তেল দাও, কেলটন,’ শীতল স্বরে বলল রিয়া। ‘কাকে আমি দাওয়াত দেব সেটা একান্তই আমার ব্যাপার। দরকার হলে এব্যাপারে তোমার বসের সঙ্গে কথা বলব আমি।’

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমাসুদ রানা ৪৪৮ – মৃত্যুঘণ্টা
    Next Article মৃত্যু উপত্যকা – কাজী মায়মুর হোসেন

    Related Articles

    কাজী মায়মুর হোসেন

    অদৃশ্য ঘাতক – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৬৮ – স্বর্ণলিপ্সা

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    ধাওয়া – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মৃত্যু উপত্যকা – কাজী মায়মুর হোসেন

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৪৮ – মৃত্যুঘণ্টা

    July 25, 2025
    কাজী মায়মুর হোসেন

    মাসুদ রানা ৪৫৮ – মহাপ্লাবন

    July 25, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }