হারিয়ে যাওয়ার আগে – ৩
৩
সুপর্ণার বিয়েতে নিমন্ত্রিত ছিলো প্রান্তিক। শুধু নিমন্ত্রিত বললে ভুল হবে, বেশ কিছু কাজের দায়িত্বও পেয়েছিলো ও। তাই সকাল থেকে সুপর্ণা আর সৌজন্যের বুক করা বিশাল গেস্টহাউসটা দায়িত্ব নিয়ে সাজানোর কাজে মন দিয়েছিলো প্রান্তিক। ডেকোরেশন ম্যানেজারের সঙ্গে প্রান্তিকও দাঁড়িয়ে থেকে সুন্দর করে সাজিয়েছিলো সুপর্ণার বিবাহবাসর। সৌজন্য ছেলেটিকেও মন্দ লাগেনি প্রান্তিকের। তবে সুপর্ণার মত অতটা মিশুকে নয়, একটু ইন্ট্রোভার্ট । লাঞ্চের আগেই একটা অর্ধ পরিচিত কন্ঠস্বর কানের কাছে এসে বলেছিলো, সব এনার্জি অন্যের বিয়েতে খরচ করে দিলেন যে, নিজের বিয়ের জন্যও কিছু তুলে রাখুন। চমকে পিছন ফিরতেই দেখেছিলো, পেঁয়াজখোসা রঙের হালকা সিফনের আঁচল উড়িয়ে হাসছে ঈশা। প্রান্তিক ফিসফিস করে বলেছিলো, এই বিয়ে বাড়িতেই কি আরেকটা বিয়ের প্ল্যান করা আছে নাকি? সাজগোজ দেখে তো মনে হচ্ছে, দুজন কনে রেডি আছে। ঈশা মুখ ভেঙচে বলেছে, না মশাই, পাত্র একটাই, তাই দ্বিতীয় কনের আপাতত সুযোগ নেই শুনলাম। চলুন তো, অনেক কাজ হয়েছে, এবারে খেয়ে নেবেন চলুন।
ঈশা প্রায় জোর করেই প্রান্তিককে নিয়ে এসে বসিয়েছিলো লাঞ্চ টেবিলে। সন্ধ্যাতারা অ্যাপার্টমেন্টে প্রান্তিক যেহেতু একেবারেই নতুন তাই কাউকেই চেনে না। ওদের অফিস কলিগরা আসবে সেই সন্ধেবেলায়। তাই অপরিচিতদের মধ্যে একটু অস্বস্তিই হচ্ছিল। ঈশা বেশ মিশুকে মেয়ে, সেটা সকলের সঙ্গে ওর কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছিল। একজন মধ্যবয়স্ক মহিলাকে এনে প্রান্তিককে বললো, আমার মা, শ্রীমতী শ্রেয়া রায়। আমার মত নন, ভীষণ রাশভারী মহিলা। মাঝে মাঝে রীতিমত কনফিউশনে পড়ে যান, আমার মত এমন ফিচেল মেয়েটা কি করে ওনার পেট থেকে বেরোলো এই ভেবে! ইনি হলেন শ্রীমান সুফল রায়ের সুযোগ্য পত্নী। সুফল রায় হলেন আমার পিতৃদেব, প্রমোটারি করেন সঙ্গে ইন্টিরিয়র ডেকোরেশনের বিজনেস। লাইক এ বিজি বিজনেসম্যান। আর আমার মাতৃদেবী হলেন লাইক এ প্রপার হাউজ ওয়াইফ। আমি হলাম ওনাদের অবাধ্য কন্যা। যে পড়াশোনাটাকে ছেলেখেলা করে ফ্যাশন ডিজাইনার হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। শ্রেয়াদেবী একটু ইতস্তত করে বললেন, তুই থামবি ঈশা। এনাকে তো চিনলাম না, আগে ওনার পরিচয়টা করিয়ে দে।
ঈশা জিভ কেটে বললো, ইনি হলেন প্রান্তিক ব্যানার্জী। মেট্রোরেলের ইঞ্জিনিয়ার। সুপর্ণাদির ভাই কাম কলিগ। ইনিই সুপর্ণাদির ফ্ল্যাটটা কিনলেন। শ্রেয়াদেবী একটু হেসে বললেন, ওহ তুই সেদিন এনার কথাই বলেছিলি, সুপর্ণার ফ্ল্যাটটা তাহলে ইনিই কিনেছেন?
প্রান্তিক শ্রেয়ার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বললো, প্লিজ আন্টি, আমায় আপনি নয় তুমি বলুন।
ভদ্রমহিলা একটু অবাক হয়ে বললেন, তোমরা এখনকার যুগের ছেলেমেয়েরা পায়ে হাত দিয়ে নিচু হয়ে প্রণাম করো? আশ্চর্য হলাম! আমি তো হ্যালো বলবো বলে হাত বাড়াতে যাচ্ছিলাম। যাইহোক, বহুদিন পরে আবার কাউকে মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদের সুযোগটুকু যখন পেলাম তখন এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না। শ্রেয়াদেবী প্রান্তিকের মাথায় হাত দিয়ে বললেন, ভালো থেকো বাবা, গুরুজনদের সম্মান করো। শ্রেয়া বললেন, তোমরা গল্প করো আমি একবার দত্ত গিন্নির সঙ্গে দেখা করে আসি, উনি হাত নেড়ে ডাকছেন অনেকক্ষণ ধরেই। উনি চলে যেতেই, ঈশা বেশ রাগত স্বরে বললো, আগে যদি জানতাম আপনি আমায় এভাবে ইনসাল্ট করাবেন, তাহলে আমি কখনো মাকে আপনার সঙ্গে পরিচয়ই করাতাম না। প্রান্তিক হকচকিয়ে বললো, কে আবার কাকে অপমান করালো! আমি কি করলাম?
ঈশা প্রান্তিকের সামনের চেয়ারে ধপ করে বসে বললো, আপনি মশাই, জলজ্যান্ত আপনি। এই যে মা একটু আগে দায়িত্ব নিয়ে আমায় অপমান করছিলো সেটা বুঝেও না বোঝার মত মুখ করে মুচকি মুচকি হাসছিলেন কেন শুনি?
প্রান্তিক আরেকটু হেসে বলেছিলো, কি মুশকিল! সে আপনি যদি কাউকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম না করেন সেটা আপনার নিজস্বতা, সকলে যে এক হবে এমন তো কোনো মানে নেই।
ঈশা ঠোঁটটা কামড়ে বললো, সেটাই তো আমার মাকে কে বোঝাবে? দেখলেন না কেমন বললো, তোমরা এখনকার ছেলেমেয়েরা প্রণাম করো? এরপর বাড়ি ঢুকেই আরেকবার বলবে, যাক এখনও সবাই প্রাশ্চাত্যের সব কালচারকে ধুয়ে মুছে নিয়ে আসেনি, নিজেদের একটু আধটু রেখেও দিয়েছে। প্রান্তিক হেসে বললো, বুঝলাম আমি একটা চূড়ান্ত ভুল করেছি, যার জন্য আপনাকে মায়ের কাছে বেশ কিছু গোছানো কথা শুনতে হবে, তো আপনিই বলুন, পেনাল্টি ভরতে আমি রাজি।
ঈশা ওর থুতনির আকর্ষণীয় তিলটাকে হাসির মাধ্যমে হাইলাইট করে বললো, আমার ডিজাইন করা একটা পাঞ্জাবি আজ সন্ধেতে আপনাকে পরতে হবে।
প্রান্তিক একটু সংকুচিত হয়ে বলেছিলো, পাঞ্জাবিতে আমি বড্ড আনকম্ফোর্টেবল, ব্লেজার বরং বেস্ট। আমি তো টিশার্ট পরেও বিয়ে বাড়ি যাই।
ঈশা অভিমানী গলায় বলেছিলো, বুঝলাম, আমার কাজের ওপরে আপনার একেবারেই ভরসা নেই। বেশ, তবে থাক। ওদের কথার মাঝেই টেবিলে প্লেট এসে গিয়েছিলো।
তোপসে ফ্রাইয়ে কামড় দিয়ে ঈশা বলেছিলো, মাই ফেভারিট ডিস এটা।
প্রান্তিক এমন মুখরোচক মেনু পেয়েও খাচ্ছিলো কম, ঈশাকে দেখছিলো বেশি। মনে মনে ভাবছিলো, একবার ক্লাস ইলেভেনে ওর মনে হয়েছিলো, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য প্রিপারেশন না নিয়ে কবি হলে বেশ হয়।
ফেডেড জিন্স, শর্ট পাঞ্জাবি, এলোমেলো চুল, কয়েকদিনের না কাটা দাড়ি, কাঁধে শান্তিনিকেতনী ঝোলা…এমন একটা দারুণ কম্বিনেশন থাকবে পোশাকে ও চেহারায়। ঝোলায় থাকবে একটা ডায়েরি আর পার্কার পেন, যখন ইচ্ছে হবে বেখেয়ালে ওই ডায়রিতে কাটবে আঁকিবুঁকি, লিখবে কিছু এলোমেলো অক্ষর। পরে সবাই ওই ডায়েরির পাতাটা খুলে দেখবে অসাধারণ শব্দের আর ছন্দের মেলবন্ধন ঘটেছে। জন্ম হয়েছে একটা নিখুঁত কবিতার। এমনই এক কবি হওয়ার ইচ্ছে মাথাচাড়া দিয়েছিলো প্রান্তিকের মধ্যে। কিন্তু জয়েন্ট দেবার চাপে সে সুপ্ত ইচ্ছেটার বিকাশ ঘটেনি কখনোই। আজ ঈশার চোখের পলক গুনতে গুনতে মনে হচ্ছে যদি ও কবি হতো তাহলে এখুনি লিখে ফেলতে পারতো দুচার লাইন কবিতা। ওই কপালে পড়া অবাধ্য চুলের গোছাকে শাসন করতে পারতো ওর কবিতা দ্বারা, অথবা চিবুকের তিলটাকে চুম্বন করতে পারতো কালো অক্ষরের স্পর্শে। এমন একটা কাব্যের নায়িকাকে সামনে পেয়েও কিছুই যে করার নেই প্রান্তিকের, শুধু নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকা ছাড়া। তাই প্রান্তিকের পাতে ভাত, ভেজ ডাল, তোপসে ফ্রাই, চিংড়ির মালাইকারি পড়া সত্ত্বেও ও কিছুতেই তেমন মনোনিবেশ করতে পারছিলো না। ঈশা কিন্তু মনের সুখে খেয়ে যাচ্ছিল। মজা করে বললো, বুঝতেই পারছেন, দুপুরে এই মেনু তাহলে রাতে কি হবে! তবে রাতে একটু গর্জাস সাজবো তো, এখনকার মত এলোমেলো নয়, তাই এত ভালো করে গুছিয়ে খেতে পারবো না। প্রান্তিকের খুব বলতে ইচ্ছে করছিলো, আবার গর্জাস সাজ! এই এলোমেলো সাজেই চোখের পলক ফেলতে পারেনি প্রান্তিক, রাতে কি তবে পাগল হয়ে যাবে! কথাগুলো বলতে গিয়েও সামলে নিয়েছে নিজেকে। ঈশা হয়তো ওকে ভুল বুঝবে। ভাববে, সুন্দরী মেয়ে দেখে হ্যাংলামি করছে। প্রান্তিক নিজেও জানে না ঈশাকে দেখলে ওর এমন একটা অদ্ভুত অনুভূতি কেন হচ্ছে! কলেজে, পাড়ায়, অফিসে, যাতায়াতের পথে কম সুন্দরী মেয়ে তো ও দেখেনি, কখনো এমন তো হয়নি। বরং বন্ধুরা মেয়েদের সম্পর্কে প্রান্তিকের উদাসীনতা দেখে মজা করেই বলেছে, তোর সব কলকব্জা ঠিক আছে তো রে! নাকি জিম টিম করে সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলো শেষ হয়ে গেছে!
শরীরচর্চাটা প্রান্তিকের নেশা, আরেকটা নেশাও অবশ্য ওর আছে সেটা হলো একাকীত্ব উপভোগ করা। একাকীত্ব উপভোগ করার সময় ওর কানে থাকে হেডফোন আর তাতে প্রিয় কোনো গান, সঙ্গে এক কাপ কড়া কফি। আর তেমন কোনো নেশা ওর কোনোদিনই তীব্র নয়। বন্ধুদের সঙ্গ দিতে সিগারেট খেয়েছে বা ড্রিংকও করেছে। দুটোর কোনোটার স্বাদই ওর তেমন লাগেনি। বরং ভোরের সূর্যকে লুকিয়ে আধো অন্ধকারে ফাঁকা রাস্তায় মর্নিং ওয়াক বা হালকা পায়ে দৌড়াতে ওর অনেক বেশি ভালো লাগে। এহেন শরীর সচেতন, নেশাবিহীন প্রান্তিককে কেউ কখনো মেয়েদের দেখে হ্যাংলামি করতে দেখেনি। সেই প্রান্তিকেরই মনের মধ্যে যে কিসের এমন অদলবদল ঘটে গেলো তা স্বয়ং অন্তর্যামীই জানেন। ঈশাকে দেখার পর থেকে সেই ভীষণ চেনা প্রান্তিককে যেন ও নিজেই চিনতে পারছে না। ঈশার সামনে একটু সাবধানেই থাকতে হবে ওকে। এমন আলটপকা কথা বলা যাবে না। কে জানে কোন কথাতে কি মনে করবে ঈশা তারপর হয়তো ওর সঙ্গে মিনিমাম বন্ধুত্বটুকুও নষ্ট করে দিলো, তখন প্রান্তিক কি করবে! সত্যি বলতে কি ঈশার জন্যই সেদিন সুপর্ণার প্রস্তাবটা এক কথায় মেনে নিয়েছিলো ও। এত টাকা লোন নিয়ে কিনে ফেলেছিলো ফ্ল্যাটটা।
ঈশার সঙ্গে গভীর সম্পর্ক না হোক ওকে যেন চোখের দেখা দেখতে পায় প্রান্তিক, নাহলে এই সন্ধ্যাতারার ফ্ল্যাটটা একেবারেই অর্থহীন হয়ে যাবে। ঈশা যেন ওর একঘেয়ে মধ্যবিত্ত জীবনে আচমকা লটারি পাওয়ার স্বপ্ন। ঈশা যেন ভিড় করে আসা অচেনা অনুভূতির উত্তেজনা। মনের মধ্যে হঠাৎ অনুভূত এই অচেনা অজানা অনুভূতিটুকুকে কিছুতেই এত তাড়াতাড়ি নিজের ভুলভাল কাজের জন্য শেষ করে দেবে না প্রান্তিক। বরং খুব কৃপণের মত একটু একটু করে খরচ করবে ও ঈশার সঙ্গে কাটানো এই ছোট ছোট মুহূর্তগুলোকে।
ঈশা বললো, আরে আপনি না খেয়ে কি এত আকাশকুসুম ভাবছেন বলুন তো? বেশি ভাববেন না বুঝলেন! ভাবা একটা রোগ, একবার পেয়ে বসলে আর কিছুতেই ছাড়ে না। প্রান্তিক একটু হেসে বললো, পাঞ্জাবীটা কোথায় পাবো? মিস ঈশার ডিজাইন করা পাঞ্জাবিটা কি এখন পাওয়া যাবে? শর্ত একটাই, আমি কিন্তু কিনবো ওটা।
ঈশা ঠোঁটটা টিপে বললো, কি মুশকিলের কাস্টমার বলুন তো? আমি বিক্রি করবো না আর এদিকে আমি কিনবো কিনবো বলে লাফাচ্ছে! না মশাই, আমি বেচবো না পাঞ্জাবি।
ঘাবড়ে গিয়ে প্রান্তিক বললো, এমা আপনি রাগ করলেন বুঝি! তখন অতবার বললেন, আপনার ডিজাইন করা পাঞ্জাবি পরাবেন আমায় আজ রাত্রে, এখন এমন রাগ করলে হয়! এটুকুতে রাগ তো আমাদের বাড়ির পুচকে বেড়ালটাও করে না।
ঈশা বাচ্চাদের মত হেসে বলেছিলো, আমি বেড়াল? আপনি আমায় বেড়ালের সঙ্গে তুলনা করলেন? জানেন আমার মাও বলে, আমি নাকি মাছ খেকো বেড়াল। যত মাছই দাও আমার বিরক্তি নেই।
প্রান্তিক ঈশার প্রাণখোলা হাসির দিকে তাকিয়ে বলেছিলো, লাকি ম্যান।
ঈশা হাসি থামিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলেছিল, হু? হু ইস দ্য লাকি ম্যান?
প্রান্তিক স্বপ্রতিভভাবে বলেছিলো, আপনার বয়ফ্রেন্ড।
ঈশা মুচকি হেসে বলেছিলো, না মশাই এখনো সেই সৌভাগ্য কারোর হয়নি। ভাগ্য গণনা চলছে, দেখা যাক কাকে শেষ পর্যন্ত আপনার বলা লাকি ম্যান করা যায়।
ঈশা এনগেজড নয় জেনে প্রান্তিকের ইচ্ছে করছিলো বিয়েবাড়ির লনেই দুর্গাপুজোর ভাসান ডান্সটা নেচে নিতে। নিজের উচ্ছসিত মনটাকে লাগাম পরিয়ে বললো, সে কি! সুন্দরীরা এমন ফ্রি ঘোরে বুঝি! আমার তো জানা ছিলো না।
ঈশা কৌতুকের ছলে বলেছিলো, কজন সুন্দরীকে আপনি চেনেন বলবেন? কাফি জানকারি আছে দেখছি আপনার তাদের সম্পর্কে।
প্রান্তিক হেসে বলেছিলো, ফেসবুকে ইদানীং কাউকেই সিঙ্গল দেখি না কিনা তাই বললাম।
ঈশা মজার ঢঙে বললো, বুঝলাম, তাই আপনি মূর্তিমান সিঙ্গল ফেসবুকে পাত্রী খুঁজতে গিয়েছিলেন?
শুনুন, ইদানীং ছেলেমেয়ে সব ভীষণ চালাক বুঝলেন! যারা সিঙ্গল তারাও বাড়তি উৎপাত এড়াতে এনগেজড লিখে রাখে ফেসবুক অ্যাকাউন্টে। নাহলেই মেসেঞ্জারে সিঙ্গল খুঁজতে আসা পাব্লিকগুলো খেয়েছো, ঘুমিয়েছো করে করে খাইয়ে আর ঘুম পারিয়ে মোটা করে দেবার দায়িত্ব নিয়ে নেয় স্বেচ্ছায়। তাই সোশ্যাল মিডিয়ার স্ট্যাটাস থেকে দূরে থাকুন। প্রচুর ফেক গল্প থাকে। আপনার যদি একান্তই বিয়েথা’র শখ থাকে আমায় বলবেন, আমি পাত্রী খুঁজে দেবো।
বেশ অভিভাবকের ঢঙে শেষ কথাটা বলেছিলো ঈশা।
তারপর হঠাৎ বললো, এ বাবা! তিনটে বেজে গেল, পাওয়ার ন্যাপ না নিলে রাতে ক্লান্ত লাগবে। আমি চললাম। প্রান্তিক তাকিয়ে দেখছিলো, দামাল বসন্ত বাতাসটাকে। একমুঠো বুনো ফুলের গন্ধ ছড়িয়ে দিয়ে ঈশা চলে গিয়েছিলো পাওয়ার ন্যাপ নিতে। প্রান্তিকও আরেকটু এদিক ওদিক দেখে নিয়ে ফিরেছিলো নিজের ফ্ল্যাটে। এটাকে নিজের ফ্ল্যাট বলতে বেশ লাগছে প্রান্তিকের। দরজাটা খুলে ভিতরে ঢুকে পড়লে যেন একান্ত নিজের মহল। তিলোত্তমার চিৎকার চেঁচামেচি, ঠাসাঠাসি ভিড় সবকিছুকে পিছনে ফেলে এ যেন ওর একার রাজ্য। কেউ কেউ শুনলে হয়তো হাসবে, মাত্র আটশো স্কোয়ার ফিটের ফ্ল্যাটকে প্রান্তিক রাজত্ব বলছে?
হ্যাঁ বলছে, কারণ এ রাজত্বের রাজা ও একা। ছোট হোক রাজত্ব শুধু স্বাধীনতাটুকু কাম্য ছিলো ওর। সুপর্ণা আর ঈশা দুজনকে যে কি বলে ধন্যবাদ জানাবে প্রান্তিক ও নিজেও জানে না তার ভাষা। ওরা দুজনে ছিলো বলেই, আজ ও ‘সন্ধ্যাতারা’ কমপ্লেক্সের একজন মেম্বার। মাত্র একমাস পজেশন পেয়েছে ও, তাতেই ফ্ল্যাটটাকে নিজের ভাবতে শুরু করেছে রীতিমত।