হারিয়ে যাওয়ার আগে – ৫
৫
কি হলো সুপর্ণা উত্তর দিচ্ছ না যে! ফ্ল্যাটটা এত কম দামে বিক্রি করাটা কি খুব জরুরি ছিলো? থাকলে কি ক্ষতি হতো, এখুনি তো টাকার দরকার আমাদের ছিলো না? তাছাড়া বিক্রি করার আগে তো সেভাবে পরামর্শ নাওনি তুমি? সৌজন্য একটু রাগত স্বরেই কথাটা বললো।
হাতের মেহেন্দির দিকে স্থির হয়ে তাকিয়ে আছে সুপর্ণা। সুপর্ণা ভেবেছিলো পার্লারে গিয়ে মেহেন্দি করে আসবে কিন্তু ঈশাই জেদ করে বললো, কিছুতেই না। তোমার বিয়েতে এটা আমার পার্সোনাল গিফট হবে। মেয়েটা এত সুন্দর এঁকেছে, অপলক তাকিয়ে আছে সুপর্ণা। একগাদা জবরজঙ্গল নয়, ভীষণ ছিমছাম আর স্মার্ট আঁকা। আঁকতে আঁকতে ঈশা ফিক ফিক হাসছিলো আর বলছিলো, সৌজন্যদার নামটা স্টাইল করে লিখে দিলাম তোমার হাতের মধ্যে। সুপর্ণা দেখেছিলো, এস অক্ষরের দুপাশে সুন্দর করে হৃদয় চিহ্ন এঁকেছে ঈশা। দেখে একটু লজ্জাই পেয়েছিলো সুপর্ণা। সৌজন্যকে তো আজ থেকে ভালোবাসে না সুপর্ণা, সে যেন একটা যুগ।
যখন সুপর্ণার অ্যাটেনশন গ্রো করার জন্য সৌজন্য সব রকম চেষ্টা করতো। তারপর ওদের জুটিকে কলেজে সেরা লাভ কাপেলের তকমা দিয়েছিলো। বন্ধুরা বলতো ওদের আন্ডারস্ট্যান্ডিং নাকি মারাত্মক। বাইরে যাওয়ার পরও সৌজন্য অত কাজের মধ্যে ঠিক নিয়ম করে ওকে ভিডিও কল করতে ভুলতো না। সেই সৌজন্য, যার জন্য সরকারি চাকরি, নিজের গোছানো ফ্ল্যাট, মহানগরীর টান সব ছেড়ে পাড়ি দিতে যাচ্ছে কোনো এক অজানা দেশে, হয়তো আর ফেরা হবে না এই পরিবেশে। তবুও নিজের সবকিছুর থেকে সৌজন্যকে আপন করে পাওয়াটা ওর কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। গত পরশু ওদের রেজিস্ট্রি ম্যারেজ হয়ে গেছে। আজ একটা জয়েন্ট রিসেপশনের ব্যবস্থা করেছে দুজনে। সুপর্ণার প্রথম খটকাটা লেগেছিলো, যখন আজকের খরচের হিসেব কষতে কষতে সৌজন্য বলেছিলো, তাহলে তোমার গেস্ট মোট দুশো জন মত তাই তো?
আমার তো দেড়শো। তাহলে দুশো প্লেটের দাম তুমি পেমেন্ট করে দিও আমায়। আর গেস্ট হাউসের ভাড়ার অর্ধেকটা।
সুপর্ণা ঠিক করেই রেখেছিলো, সৌজন্যকে বলবে, বিয়ে যখন দুজনে মিলে করছি তখন যা খরচ হবে দুজনে সমান সমান ভাগ হবে। সে তুমি যত বড়লোকই হও না কেন! তোমার বউও কম যায় না। প্রান্তিকের দেওয়া ফ্ল্যাট বিক্রির টাকাটার অর্ধেক দিয়ে দেবে সৌজন্যকে। কিন্তু চমকে গিয়েছিলো জার্মানি ফেরত সম্পূর্ণ অচেনা সৌজন্যকে দেখে। বিয়ের মত আনন্দের অনুষ্ঠানে ও সুপর্ণার গেস্ট আর নিজের গেস্টদের প্লেট প্রতি খরচের হিসেব করতে বসেছে! অথচ সুপর্ণা জানে সৌজন্য একটা অতি আকর্ষণীয় স্যালারি আর্ন করে। যেটা এই মুহূর্তে অনেক ভারতীয়ই স্বপ্নে দেখে।
মনের মধ্যে খটকাটা নিয়েই এগোচ্ছিলো সুপর্ণা। মনে মনে ভেবেছিলো, হয়তো এটা ক্যাজুয়ালি বলা কথা, কিন্তু ওর সৌজন্য কিছুতেই পাল্টাতে পারে না। মনের মধ্যে বিশ্বাসটা ছিলো নিরন্তর। এসব টাকাপয়সার কেজো হিসেব নিকেশের মধ্যে কিছুতেই আটকে যেতে পারে না ওদের এতকালের ভালোবাসা! বিশেষ করে যখন এতদিন পরে সেটা পরিণতি পেতে চলেছে। বাঙালি মেয়েদের হিসেবে সুপর্ণার হয়তো বিয়ের বয়স পার হয়ে গেছে অনেক আগেই। সেসব দিকে অবশ্য কখনোই দৃষ্টিপাত করেনি ও। ঊনত্রিশের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েও ওর একটাই কথা মনে হয়েছে, সৌজন্যকে কোনো প্রেশার দেবে না। যতদিন ইচ্ছে সময় নিক ও নিজের স্বপ্নপূরণের জন্য। অপেক্ষা করেছে সুপর্ণা, দীর্ঘ অপেক্ষা। আত্মীয়স্বজন সকলের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজেকে সুরক্ষিত রেখেছে শুধু সৌজন্যর জন্য।
আনমনে ঈশার আঁকা অপূর্ব মেহেন্দির দিকে তাকিয়ে ছিলো সুপর্ণা। স্বপ্নীল একটা রাতের অপেক্ষায়, যখন সৌজন্যের দেওয়া লাল সিঁদুরে রঞ্জিত হবে ওর সিঁথি। সেই সময় সৌজন্যর এমন আকস্মিক আঘাতে চমকে উঠলো সুপর্ণা। সৌজন্য সুপর্ণার ভাবাবেগকে একটুও সময় না দিয়েই বললো, বললে না তো, এত কম দামে হঠাৎ ওই ছেলেটিকে ফ্ল্যাটটা বেচে দেওয়ার কারণটা ঠিক কি! ছেলেটা তো শুনলাম তোমার কলিগ। অবশ্য তোমার থেকে জুনিয়র। তো ওর ওপরে আচমকা তোমার এত দরদের কারণটা কিছুতেই আমার কাছে ক্লিয়ার হলো না সুপর্ণা।
সুপর্ণা নির্নিমেষ তাকিয়ে আছে সেই কলেজের সৌজন্যর দিকে। যে বলেছিলো, তোর চোখের জল কখনো তোর চিবুক ছোঁবে না সু। তার আগেই আমি তাকে যত্নে রেখে দেবো নিজের বুকের মধ্যে। একেই কি বদল বলে তবে!
সৌজন্য একই স্বরে বললো, প্রান্তিক না কি যেন নাম ছেলেটার! এনিওয়ে যাই নাম হোক না, ওর সঙ্গে কি আমার অনুপস্থিতিতে ওই ফ্ল্যাটেই লিভ ইন শুরু করেছিলে নাকি? তাই বাধ্য হয়ে অত কম দামে দিয়ে দিলে এমন পজিশনের ফ্ল্যাটটাকে! আমাকে বললে তো আমি olx এ বিজ্ঞাপন দিতে পারতাম চড়া দামে। ওভাবে অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকো না সুপর্ণা, আমি তোমাকে ক্লিয়ার কাট একটা কোশ্চেন করেছি এবং তোমার হাজবেন্ড হিসাবে এটুকুর উত্তর আমি ডিজার্ভ করি। সকলের সামনে ওরা নিজেদের তুমি সম্বোধনই করে। কিন্তু আপাতত এখানে কেউ নেই। সুপর্ণা এসেছিলো খেয়ে দেয়ে একটু বিশ্রাম নিতে। ওয়েডিং লজ-এর গেস্ট রুমে একটু গড়িয়ে নিতে। কারণ ঈশা বলে দিয়েছে, পার্লার থেকে নাকি বিকেল চারটের মধ্যেই চলে আসবে ওকে সাজগোজ করাতে, তাই সামান্য বিশ্রামের আশায় এই এককোণের কটেজটাকেই বেছেছে সুপর্ণা। ঘরে ঢোকার মিনিট দশকের মধ্যেই ওর পিছু পিছু ঢুকলো সৌজন্য। সৌজন্যকে দেখেই সুপর্ণা লাজুক গলায় বলেছিলো, তুমি কেন এখন এখানে এলে? লোকে দেখলে কি বলবে? তা ছাড়া শুভদৃষ্টি প্রথাটা কিন্তু আমার বেশ পছন্দ। সুপর্ণার এসব আবেগী কথা যে সৌজন্যর কানে ঢোকেনি সেটা ও বেশ বুঝতে পারলো ওর দিকে ছুটে আসা প্রশ্নের স্রোতের গতি লক্ষ্য করে।
সুপর্ণা একটু নরম স্বরেই বললো, আজ এসব কথা থাক না সৌজন্য, আজ বরং আমরা সেই কলেজের উত্তাল প্রেমের দিনগুলোর কথা বলি।
সৌজন্য একটু ব্যঙ্গাত্মক হেসে বললো, অতীত নিয়ে টানাটানি করার স্বভাবটা ইদানীং আমার নেই সুপর্ণা। তুমি বরং বলো, ওই ছেলেটাকে কেন ফ্ল্যাটটা বিক্রি করে দিলে?
সুপর্ণা দৃঢ় স্বরে বলেছিলো, যেমন তুমি আমার পারমিশন না নিয়েই জার্মানিতে সেটেল্ড করে গেলে তেমনিই সব কিছুতে পারমিশনের প্রয়োজন হয় না সৌজন্য।
আমার ফ্ল্যাটটা কেনার সময় আমি যেহেতু তোমার কাছ থেকে পাঁচটা টাকা ধার নিইনি তাই ওটা বিক্রির সময়েও তোমার হেল্প লাগবে, এ কথা ভাবিনি। বাকি পড়ে রইলো প্রান্তিকের সঙ্গে আমার সম্পর্কের কথা। ওকে আমি আমার কলিগ কম, ভাই বেশি ভাবি। তাই বাপের বাড়ি আসার একটা রাস্তা খোলা রাখলাম ওকে ফ্ল্যাটটা বিক্রি করে। যদি সন্দেহ থেকে থাকে তাহলে আজ আর লোক হাসানোর জন্য বিয়েটা করো না। মিউচ্যুয়াল ডিভোর্স নিয়ে নাও যেহেতু ভুল করে রেজিস্ট্রিটা করে ফেলেছ পরশুদিনই তাই। সৌজন্য, আজ তুমি নিজেকে আমার চোখে অনেকটা নামিয়ে ফেললে, জানি না আগের মত ভালোবাসতে পারবো কিনা তোমায়! অবশ্য তোমারও বোধহয় সেভাবে নিঃস্বার্থ ভালোবাসার প্রয়োজন নেই।
সৌজন্য অস্থিরভাবে বলেছিলো, তুমি আমায় ভুল বুঝছো, আমি….
ওকে কথা শেষ করতে না দিয়েই সুপর্ণা বললো, ভুল বুঝতাম। এখন একেবারেই ঠিক বুঝছি। একটা কথা শোনো, আমি যেমন আমাকে যদি তেমন ভাবে গ্রহণ করতে পারো তাহলে করো না হলে প্লিজ, আসতে পারো। এই প্রহসনের আর দরকার নেই।
সৌজন্য এগিয়ে এসে সুপর্ণার হাত দুটো ধরে বললো, সরি ফর এভরিথিং। ভুলটা আমার হয়েছিলো। প্লিজ ফরগিভ মি। চলো, দুজনকেই রেডি হতে হবে। শুভদৃষ্টিটা আমার কাছেও ইম্পর্টেন্ট সু।
সৌজন্য বেরিয়ে গিয়েছিলো। স্থির হয়ে বসেছিলো সুপর্ণা। কিভাবে যেন ভালোবাসার মানুষগুলো ধীরে ধীরে বদলে যায়। নিজের পরিবার, মা, দাদা, বৌদি সবাই এসেছে বিয়ে বাড়িতে অথচ কেউই যেন খুব একটা খুশি নয়। বরং এত মহা আয়োজন দেখে একটু যেন বিরক্তি ভ্রুর ভাঁজে।
সুপর্ণা ভেবেছিলো, থাকুক সবাই দূরে দূরে, যাকে ঘিরে ওর স্বপ্নগুলোর উড়ান সেই মানুষটা তো কাছেই আছে। সৌজন্যকে নিজের করে পাওয়ার পরে ভালোবাসা নামক জিনিসটাকে ও হাতের মুঠোয় এনে ফেলবে। দুজনের পুতুল পুতুল সংসারের ঘেরাটোপেই আটকে রাখবে ভালোবাসা নামক আপেক্ষিক অনুভূতিকে। ওদের দুজনের ছোট্ট স্বপ্নের বাড়িতেই চিরস্থায়ী করে রাখবে ভালোবাসাকে। কিন্তু আজ সৌজন্যের ব্যবহার বুঝিয়ে দিলো, ভালোবাসা আসলে একটা অলীক স্বপ্ন। আসলে সবটাই বড্ড নিরস হিসেবনিকেশ।
পার্লারের মেয়েদুটো এসেছে সুপর্ণাকে সাজাতে। সুপর্ণাকে নিখুঁত করে সাজিয়ে দেবে ওরা, যাতে ওর চোখের কোণের কষ্টরা চিরকালের মত ঘুমিয়ে পড়ে, যাতে ওর ঠোঁটের হাসিটা পারদর্শী হয়ে ওঠে অভিনয়ে… এমন ভাবেই এঁকে দেবে ওর ঠোঁটটা। মেকআপের মুখোশটা নিখুঁত করে আটকে নেবে সুপর্ণা যাতে ওকে দেখে নিমন্ত্রিত অথিতিরা ভাবতে বাধ্য হয়, সুখী প্রেমিকা। যে দীর্ঘ অপেক্ষার পরে নিজের করে পেতে চলেছে তার প্রেমিককে। মুখোশটা পড়ার আগেই দু ফেঁটা চোখের জল ওর গাল ছাপিয়ে চিবুক বেয়ে গড়িয়ে এলো। কেউ নেই মুছে দেবার, প্রতিশ্রুতিগুলো ব্যঙ্গ করে হাসলো শুধু।
নিজের হাতের তালু দিয়ে চোখটা ভালো করে মুছে নিলো সুপর্ণা। হাসতে হবে ওকে, নিখুঁত হাসতে হবে। অবাধ্য যন্ত্রনাগুলোকে ঢেকে ফেলে হাসতে হবে। সুপর্ণা মনে মনে বললো, বি রেডি।
ঈশার ডিজাইন করা লেহেঙ্গা আর সেনকো গোল্ডের গয়নায় সেজে উঠেছে সুপর্ণা। মহানগরীর অত্যাধুনিক ম্যারেজ হলও সেজেছে আলো আর ফুলের মালায়।
নিজেকে বড় আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দেখলো সুপর্ণা। বড্ড অচেনা লাগছে নিজেকে। সেই হাসিখুশি, কলিগদের লেগপুল করা মেয়েটাই যেন নয়, এ যেন সম্পূর্ণ অন্য কেউ। খোঁপার জুঁই আর গোলাপের সুগন্ধ এসে ঝাপটা দিলো নাকে, আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখলো, আয়নার সুন্দরী অচেনা মেয়েটা ওর দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হেসে বলছে, স্বাগতম, পরাধীনতার জীবনে প্রবেশের মুহূর্তে তোমায় অভিনন্দন জানাই।
এরপর থেকে আর তোমার একলা থাকার সুখ, একলা থাকার স্বাধীনতা তুমি কখনো পাবে না। বৃষ্টি দিনের গরম কফিতে নিশ্চিন্তে চুমুক, রাতভর রূপম ইসলাম, সকাল দশটায় উঠে অফিস বাঙ্ক, দুপুরে হেলেদুলে সুইগিতে অর্ডার….কিছুই পাবে না তুমি। নিজের খেয়ালখুশীতে নয়, এবারে বাঁচতে হবে অ্যাডজাস্টমেন্ট নামক একটা কঠিন শব্দের সঙ্গে। যার শুরুটা হবে তোমার স্যাক্রিফাইস দিয়ে আর শেষটা হবে তোমারই কম্প্রোমাইজ দিয়ে, শুধু সুন্দর একটা নাম থাকবে, অ্যাডজাস্টমেন্ট। সুন্দরী মেয়েটা আয়নার ভিতর থেকে বললো, বি রেডি সুপর্ণা। বেরিয়ে পড় অলীক সুখের খোঁজে।
বুকের ভিতরটা কঁকিয়ে কেঁদে উঠলো সুপর্ণার, তবুও চোখ দিয়ে নেমে এলো না অবাধ্য নোনতা জলের বিন্দুরা। ও বুঝলো, মুখোশটা ঠিকই পরতে পেরেছে ও।
সৌজন্যের দিদি এসেছে ওকে নিয়ে যেতে। ফিসফিস করে বললো, চলো সুপর্ণা, গেস্টরা আসতে শুরু করেছে। ভাই রেডি হয়ে বসে আছে ছাদনাতলায়। সুপর্ণা আয়নার দিকে আরেকবার তাকালো, মেয়েটা ওকে হাত নেড়ে বাই জানালো, দিয়েই ভ্যানিশ হয়ে গেলো। ধীর পায়ে লেহেঙ্গা সামলে বাইরে বেরিয়ে এলো সুপর্ণা। দূর থেকেই দেখতে পেলো, সৌজন্য শেরওয়ানি পরে বসে আছে বিয়ের পিঁড়িতে। বোধহয় ব্রাহ্মণ কিছু নিয়মকানুন করাচ্ছে ওকে দিয়ে। ওদের বিয়েটা ঠিক আর পাঁচটা বাঙালী বিয়ের মত হচ্ছে না। সৌজন্যই ঠিক করেছে, বেশি নিয়মকানুন নয়, যেটুকু দরকার সেটুকুই হবে। ওই শুভদৃষ্টি, মালা বদল, সিঁদুরদান, সাতপাক, এই আরকি। তাই নিয়মের ঘনঘটা নেই এই বিয়েতে। সিনেমার শুটিং সেটের মতই সাজানো হয়েছে গোটা বিয়ে বাড়িটা। মুচকি হাসলো সুপর্ণা। সৌজন্য হাত বাড়িয়ে দিল ওর দিকে।
সিনেমার নায়ক নায়িকার মতই নিখুঁত অভিনয় করছে ওরা। কে বলবে, মাত্র কয়েকঘণ্টা আগেই ওকে কুৎসিত ইঙ্গিত করেছিলো সৌজন্য? কে বলবে মাত্র কয়েকঘণ্টা আগেই ডিভোর্সের প্রোপাজাল দিয়েছিলো সুপর্ণা!
মাপা হাসি হেসে ওর পাশের পিঁড়িতে বসে পড়লো সুপর্ণা। ওদের কলেজের বন্ধুরা বেশ চেঁচিয়ে চিয়ার্স করলো। বেশ জোরে জোরেই সবাই বলছিলো, মেড ফর ইচ আদার।
ফচকে রুমি বললো, নো নো, সৌজন্য ইজ ম্যাড ফর সুপর্ণা স্টিল নাও। সৌজন্য ওদের সঙ্গেই বলে উঠলো, রাইট। সুপর্ণার বেশ মজা লাগছে এই বিয়ে বিয়ে খেলাটা খেলতে। ও বেশ বুঝতে পারছে একটা ঘন অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে ও, যে ঘরে অনেক বাতি থাকা সত্ত্বেও ঘরটা অন্ধকার। ভালোবাসার লেশমাত্র নেই অন্ধকার ঘরটাতে। তবুও চারিদিকে আলোর রোশনাই। সানাইয়ে সুর শোনা যাচ্ছে….
সুপর্ণা মনে মনে বললো, এখান থেকে কি ছুটে পালানো সম্ভব ওর মেট্রোর অফিসটাতে? অথবা সন্ধ্যাতারার সাততলার ফ্ল্যাটটাতে?
পান পাতা দিয়ে মুখটা ঢেকে আছে সুপর্ণা।
সামনেই রয়েছে ওর চিরআকাঙ্ক্ষিত পুরুষ, ওর দীর্ঘ প্রতীক্ষার ফল, ওর ভালোবাসা…তাও কেন যে কিছুতেই পাতাটা সরাতে ইচ্ছে করছে না চোখ থেকে, কে জানে!
কেউ একজন পিছন থেকে বললো, সুপর্ণা পাতাটা সরাও এবারে। দেখো, যাকে সেই কলেজ থেকে চেয়ে এসেছো সেই তোমার সামনে এখন। পান পাতাটা নির্লিপ্তভাবে সরাল সুপর্ণা। সৌজন্য মিষ্টি করে হাসলো ওর দিকে তাকিয়ে। সুপর্ণা তাকিয়ে রইলো অচেনা ভিনদেশী মানুষটির দিকে।