হারিয়ে যাওয়ার আগে – ৭
৭
বিদিশা ছটফট করে বললো, সমুদ্র ছাড়ো প্লিজ। দেখো, তোমাকে আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি, আমি তোমার পার্সোনাল সেক্রেটারি, কেপ্ট নই। চাকরিটা আমার দরকার ছিলো তাই করছি, কিন্তু দিনের পর দিন তুমি এভাবে…
সমুদ্র চৌধুরী বিদিশার অবাধ্য চুলগুলোকে গুছিয়ে দিতে দিতে বললো, ভালোবাসি বিদিশা, কেপ্ট কেন হবে তুমি?
বিদিশা রাগে হিসহিস করে বললো, আর রচনা, ইভান ওরা তাহলে কে? তুমি তিনজনকে ঠকাচ্ছ সমুদ্র, আমাকে, রচনাকে আর ইভানকে।
সমুদ্র দৃঢ় গলায় বললো, আমি কাউকে ঠকাচ্ছি না বিদিশা। রচনা, ইভান ওদের কখনো কোনো অভাব রাখিনি আমি। কিন্তু রচনাকে দেখলে আমার কোনোদিনই কোনো অনুভূতি জাগেনি, সেটা কি আমার দোষ? আর পাঁচটা বিবাহিত পুরুষের মত আমিও সংসার করে যাচ্ছি। ইভান জন্মেছে, আমি আরও বেশি করে নিজের কাজে ইনভলভড হয়েছি। রচনার সঙ্গে আমার সম্পর্কের মধ্যে গভীরতা কম, দাবি বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে বহুদিন। যেমন ধরো, আমি সমুদ্র চৌধুরী ওর হাজবেন্ড এটা ওর সম্মান। আমার অর্থ, প্রতিপত্তি সেটা ওর অধিকার। আচ্ছা বিদিশা, দিনের শেষে একটা ক্লান্ত পুরুষমন একটু ভালোবাসাও চায়। শুধু হিসেবনিকেশ নয়। শুধুই ফরেন ট্যুরের প্ল্যানিং রচনার কাছে স্ট্যাটাস সিম্বল হতে পারে, দামি শাড়ি, দামি গয়না বিবাহ পরবর্তী জীবনের প্রাপ্তি হতে পারে, কিন্তু আমার কাছে তো এগুলোর দাবি ভালোবাসা হতে পারে না। আমিও চাই কেউ আমায় যত্ন করে লাঞ্চবক্স প্যাক করে দিক, আমিও চাই কেউ আমার সারাদিনের কর্মক্লান্ত কপালে হাত ছুঁইয়ে বলুক, এত টাকার দরকার নেই, বরং একটু রেস্ট নাও।
এই চাওয়াগুলো কি মানুষ হিসাবে বড্ড বেশি চাওয়া বিদিশা? আমি জানি, হয়তো তুমিও জানো তোমার বাবার বিজনেসের অবস্থা আর আগের মত নেই। আমরা একই প্রফেশনে আছি, তাই ওনার ব্যবসার অবস্থা আমি জানি। তুমি হয়তো সেটা টের পেয়েই চাকরি খুঁজতে বেরিয়েছিলে। চাকরিটা তোমার সত্যিই দরকার ছিলো, আমারও দরকার ছিলো সমস্ত দিকে নজর রাখা একজন পার্সোনাল সেক্রেটারি। না, আমার দিকে নজর রাখার কোনো দায়িত্ব বা মাইনে আমি তোমায় দিই না। তারপরেও লাঞ্চ টাইমে সময়ের অভাবে শুধু জুস খাওয়ার অভ্যেসটাকে তুমিই বদলে দিয়েছ বিদিশা। যত্ন করে লাঞ্চবক্স সামনে ধরে বলেছো, খেয়ে নিন স্যার, আমরা আপনার ভরসায়, তাই ইঞ্জিন বিকল হোক একেবারেই চাই না। এমন কত ছোট ছোট ঘটনায় আমার যান্ত্রিক মনটাও বুঝতে পেরেছে তুমি আমায় ভালোবাস। জানি তুমি অস্বীকার করবে, আঘাত করবে আমায়, হয়তো জবটা ছেড়ে চলে যাবে… তবুও আমি জানি, তুমিও ভালোবাস আমায়। রচনা, ইভান এদের কথা ভেবেই পিছিয়ে যাচ্ছ বারবার, ঠেলে সরিয়ে দিচ্ছ আমায়। হাতটা দাও, ছাড়িয়ে নিও না। একটা জিনিস দেবার আছে তোমায়।
বিদিশার হাতটা জোর করে টেনে নিয়ে একমুঠো ভেজা গোলাপের পাপড়ি ওর হাতে দিয়ে বললো, কাঁটা সমেত দিলাম না। এমনিতেই তোমার জীবনে অনেক সমস্যা, তাই কাঁটাটুকু আমার থাকুক। বিদিশা নিষ্পলক তাকিয়ে থাকলো, ওর থেকে বছর বারোর সিনিয়র মানুষটার দিকে। যার একজন সুন্দরী স্ত্রী আছে, আছে ক্লাস সিক্সে পড়া একটা মিষ্টি ছেলে। চোখের সামনে ভেসে উঠলো ইভানের মুখটা। সন্ধ্যাতারা কমপ্লেক্সের সামনে যখন ইভানদের স্কুলের বাসটা দাঁড়ায় তখন বহুদিন বিদিশা দেখেছে, ইভানকে বাসে তুলে দিতে এসেছে হয় রচনা নয় সমুদ্র। ছটফটে মিষ্টি একটা ছেলে, তার কাছ থেকে তার বাবাকে কেড়ে নেওয়াটা অন্যায়। হ্যাঁ, সমুদ্র ঠিকই বুঝেছে, বিদিশাও ভালোবাসে সমুদ্রকে। কিন্তু সমাজ, রচনা, ইভানের ভাবনা ভাবতে ভাবতে নিজেকেই আঘাত করে বিদিশা অনবরত। কেন এমন একজন মানুষকে ভালোবেসে ফেললো ও যার সঙ্গে কখনোই বাঁধতে পারবে না ওর স্বপ্নের সংসার। নিজেকে আর সমুদ্রকে আঘাত করতে করতেই ক্ষয় হয়ে যাবে ওর প্রাণশক্তি।
বিদিশা বরাবরই বাবার খুব কাছের। ঈশা যেমন মা ন্যাওটা, বিদিশা ঠিক তার উল্টো। বিদিশাই আবিষ্কার করেছিলো বাবার প্রোমোটারি বিজনেসটা একটু মন্দার দিকে। তার কারণ নাকি চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ। সন্ধ্যাতারা হাইরাইজের বি ব্লকের নয়তলার বাসিন্দা সমুদ্র চৌধুরী। অল্প বয়সেই সাকসেসফুল প্রোমোটার। বাবাই বলেছিলো, সমুদ্রের বয়েস বেশি নয়, বছর চল্লিশ হবে কিন্তু নিজের বুদ্ধি আর কর্মক্ষমতায় এখন চৌধুরী এন্টারপ্রাইজের রমরমা। সেই কারণেই নাকি বিদিশার বাবার মত ছোটখাট প্রোমোটাররা মার খাচ্ছে। বিদিশা তখন ইন্টিরিয়ার ডেকোরেশন নিয়ে পড়াশনা শেষ করে কাজ খুঁজছে। যদিও মা বিদিশার পাত্র খোঁজায় মন দিতে চেয়েছিলো, কিন্তু বিদিশা বুঝেছিলো, এই মুহূর্তে বাবার পাশে আরেকটা হাত দরকার সংসারটাকে ধরে রাখার জন্য। ঈশা নেহাতই ছেলেমানুষি বুদ্ধি নিয়ে উড়ছে, মাও হাউজওয়াইফ। বাবা হয়তো মুখে কোনোদিনই বলবে না নিজের অসুবিধার কথা, তবুও বিদিশা বুঝেছিলো বিয়ে নয়, চাকরি দরকার ওর। বাবার রমরমা ব্যবসা যার জন্য মার খেলো সেই শত্রুর কোম্পানির বিজ্ঞাপনটা দেখে তাই দেরি না করেই অ্যাপ্লিকেশন ঠুকে দিয়েছিলো। বিদিশা জানতো না সমুদ্র ওকে চেনে। কমপ্লেক্সের দুর্গাপুজোর সময় অঞ্জলী দিতে যাওয়া বিদিশাকে দেখেছিলো সমুদ্র, বা একই গেট দিয়ে বেরোনোর সময় ও নজরে পড়েছিলো সমুদ্রর। আচমকাই ব্যস্ত সমুদ্রের নজর আটকেছিলো বিদিশার প্রতি। তাই পার্সোনাল সেক্রেটারি চুজ করার সময় বিদিশার ছবি আর যোগ্যতা দেখে অন্য কাউকে ইন্টারভিউয়ে ডাকেনি সমুদ্র।
সমুদ্রের নেটওয়ার্ক চিরকালই খুব স্ট্রং। তাই জানতো বিদিশার বাবা এবং আরও দুজনের জয়েন্ট কোম্পানি ‘স্বপ্নের নীড়’ এখন বেশ লসে রান করছে। সুফল রায় বেশ দোটানায় আছে বর্তমানে। বেশ কিছু প্রোজেক্ট আটকে আছে করপোরেশনের পারমিশনের ওপরে। আর কিছু ইললিগ্যাল বলে আটকে রেখেছে রুলিং পার্টির নেতারা, স্রেফ টাকা খাওয়ার আশায়। সমুদ্র বুঝেছিলো, বিদিশার জবটা দরকার। তাই বেশ হাসিখুশি, চনমনে মেয়েটাকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার দিয়েই দিয়েছিলো। প্রথম যখন জবটা জয়েন করেছিলো তখন বিদিশা মনে করতো সমুদ্রর জন্যই ‘স্বপ্নের নীড়’ কোম্পানির হাল খারাপ হয়েছে। পরে বুঝেছে, বিষয়টা উল্টো। বিদিশার বাবার কাজ করার টেকনিকের সঙ্গে সমুদ্রর অনেক তফাৎ। সমুদ্র অনেক মেপে তবে পা ফেলে। তাই ও আজ এতটা সাকসেসফুল বিজনেসম্যান। সমুদ্র বলেছিলো, তোমাকে কয়েকটা সিক্রেট বিজনেস বুদ্ধি দেব, গিয়ে সুফলবাবুকে বলবে, যদি ওনার লাভ হয়। উনি একটু বেশিই সৎ মানুষ, তাই পিছিয়ে পড়ছেন এই বিজনেসে এসে।
সমুদ্রকে ঠিক সেদিন থেকেই ভালো লেগেছিলো বিদিশার। কম্পিটিটরের মেয়েকে পার্সোনাল সেক্রেটারির জব দিতে দ্বিধা করেনি সমুদ্র। এমনকি নিজের বিজনেস স্ট্র্যাটেজি শেয়ার অবধি করতে চেয়েছে বিদিশার বাবার সঙ্গে। বিদিশার ভুল ধারণাগুলো একে একে ভেঙে গিয়েছিলো সমুদ্রর ব্যবহার দেখে। মনে মনে প্রসংসা করে বলেছিলো, একজন সফল পুরুষ, যে জেলাসিতে বিলিভ করে না, সুস্থ কম্পিটিশনে বিশ্বাসী। সমুদ্রকে যত দেখতো বিদিশা ততই ওকে ভালো লাগতে শুরু করেছিলো। একটা মানুষ কতটা পারফেকশনিস্ট হয় ওকে না দেখলে কেউ বিশ্বাসই করবে না। ডিজাইনার থেকে র-মেটিরিয়াল সাপ্লাইয়ার, সকলের সঙ্গে নিজে বসে আলোচনা করতো সমুদ্র প্রত্যেকটা কমপ্লেক্স তৈরির আগে।
তখনও বিদিশা জানতো না সমুদ্রর পারিবারিক জীবনের খুঁটিনাটি। মাঝে মাঝেই দেখতো, চুলের মুঠি ধরে বিজবিজ করে বলছে, আর কত চাই রচনা তোমার, আর কত? বিদিশাই একদিন সাহস করে জিজ্ঞাসা করেছিলো, রচনাটা কে?
সমুদ্রর সেদিন বাঁধ ভেঙে গিয়েছিলো। অমন গুরুগম্ভীর মানুষটা বিদিশার সামনেই কেঁদে ফেলেছিলো। ভাঙা গলায় বলেছিল, আমার স্ত্রী। ওকে সন্তুষ্ট করা বোধহয় আমার সাধ্য নয়। মেন্টালি সিক একজন মহিলা। ভেবেছিলাম ইভান হওয়ার পরে একটু পাল্টাবে, কিছুতেই পরিবর্তন হলো না ওর। রোজই কোনো না কোনো জুয়েলারী শপ থেকে ফোন আসছে, লাখ লাখ টাকার জুয়েলারী কিনে চলেছে। জানো বিদিশা, খুব ইচ্ছে ছিল একটা বাংলো প্যাটার্নের বাড়ি বানাবো। চৌধুরী এন্টারপ্রাইজের মডেল হবে সেই বাড়ি। সেখানে বাস করবো শেষ বয়সে। সন্ধ্যাতারার নয়তলায় সবচেয়ে বড় ফ্ল্যাটটা আমার। এছাড়াও কলকাতার বুকে আরো দুটো ফ্ল্যাট আছে, কিন্তু বাগানওয়ালা বাড়ি বড্ড টানে আমায়। পারবো না বোধহয়। রচনা যেভাবে সোনা আর হিরের জুয়েলারী কিনে শেষ করে দিচ্ছে আমার ব্যাংক ব্যালেন্স, তাতে ওই বাংলোর স্বপ্ন আমার অধরাই থেকে যাবে। বিদিশা বলেছিল, বারণ করেন না কেন?
সমুদ্র ক্লান্ত হেসে বলেছিলো, রচনাকে একটা কথা দুবার বললেই ও সুইসাইড অ্যাটেম্পট করে। বার দুয়েক এরকম করেছে। তাই ভয়ে কিছু বলি না। ইভান আছে, মা ন্যাওটা ছেলে, আমি তো সেভাবে সময় দিতে পারি না তাই রচনাই সামলায় ওর সব ঝক্কি। ছেলেটা মা হারা হবে বিদিশা। সেটা কি করে সহ্য করি। না হলে মাঝে মাঝে মনে হয় মুক্তি দিক ভগবান রচনার কাছ থেকে। বিদিশা বুঝেছিলো প্রাচুর্যের মধ্যেও কষ্ট থাকে, ঝকঝকে আলোর নিচের অন্ধকারের মতই। তেমনি কঠিন, মারাত্মক পার্সোনালিটি সম্পন্ন মানুষটাও ভিতরে ভিতরে বড্ড একা। বিদিশা দেখেছিলো সমুদ্র লাঞ্চ টাইমে হয় একটা বার্গার নয় স্যান্ডউইচ চিবাতে চিবাতে ল্যাপটপ ঘাঁটছে। বিদিশা বাড়ি থেকে টিফিন বানিয়ে আনতো, কাঁচের দরজার মধ্যে দিয়ে ঠিক পাশের কিউবে বসা মানুষটা অমন খাচ্ছে দেখে স্বাভাবিকভাবেই এগিয়ে গিয়েছিল নিজের লাঞ্চবক্স নিয়ে। বিদিশার বক্স থেকে অতি সংকোচে দুটো লুচি আর তরকারি খেয়ে সমুদ্র খুশিতে বলে উঠেছিলো, দারুণ খেলাম। কতদিন পরে বাঙালি ঘরোয়া রান্নার স্বাদ পেলাম। তারপর থেকে বিদিশা নিয়ম করে দুটো লাঞ্চবক্স আনতো। সমুদ্রর ক্যান্টিনের স্যান্ডউইচ খাওয়া বন্ধ হয়েছিলো। বয়সে এতটা বড়, সম্মানে বিদিশার বস তবুও মানুষটার একাকীত্বের যন্ত্রণা স্পর্শ করেছিলো বিদিশাকে। তাই ওদের অসম বন্ধুত্বটা গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়েছিলো। বিদিশা যখন উপলব্ধি করেছিলো ও একজন সংসারী মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে, তখন অনেকটা দেরি হয়ে গেছে।
তখন সমুদ্রও বন্ধুত্বের গণ্ডি পেরিয়ে অনেকটা এগিয়ে এসেছে বিদিশার দিকে। ওদের সম্পর্কের কোনো ভবিষ্যৎ নেই জেনেও ওরা একে অপরের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে মানসিকভাবে। সমুদ্র বিশেষভাবে নির্ভর করতে শুরু করেছে বিদিশার ওপরে। বিদিশাও দু-হাত দিয়ে আঁকড়ে রেখেছিলো সমুদ্রকে। কোনো মানসিক কষ্ট যেন না পায় সমুদ্র সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিতো ও।
সমুদ্রর নর্থের ফ্ল্যাটে বৃষ্টিভেজা সন্ধেয় দুজনে দুজনের দিকে অপলক তাকিয়ে ভেবেছে, কি নাম ওদের সম্পর্কের? কীই বা ভবিষ্যৎ? নামহীন একটা অদ্ভুত সম্পর্কের বেড়াজালে ঘুরপাক খেয়েছে দুজনে। বিদিশার বুকের মধ্যে মাথা দিয়ে বাচ্চা ছেলের মত কেঁদে সমুদ্র বলেছে, জানি তুমি থাকবে না চিরদিন আমার কাছে, কিছুই দেবার নেই তোমায়, আটকে রাখার মত কোনো সম্পদ নেই আমার মুঠোয়, তবুও যদি জানতে চাও ভালোবাসি কিনা, বলবো নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি তোমায়। তাই লোভী পুরুষের মত ভোগ করতে পারবো না তোমায়, এই নরম স্পর্শটুকুই থাকুক আমার হয়ে। সমুদ্র ফিরে গেছে সন্ধ্যাতারায় ওর সংসারে। ওই ফ্ল্যাটে একাই রাত কাটিয়েছে বিদিশা, নিজের সঙ্গে একলা হবার খেলায় মেতেছে। মা-বাবা কারোর প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেনি বিদিশা, রাতে কোথায় ছিলিস? কে ছিল সঙ্গে?
বলতে পারেনি, একলা ছিলাম, আরেকজনের যে সংসার আছে!
বিদিশা বুঝেছিলো, সমুদ্রে ক্রমাগত ডুবে যাচ্ছে ও। তল খুঁজে পাচ্ছিলো না এই সম্পর্কের পরিণতির। তাই নিজেই নিজেকে একটু একটু করে সরিয়ে নিচ্ছিল সমুদ্রের থেকে। কথায় কথায় অকারণে আঘাত করতো সমুদ্রকে। কিন্তু তবুও সমুদ্র সরে যায়নি ওর কাছ থেকে, বলতো, জানি বিদিশা এ আঘাত তুমি ইচ্ছের বিরূদ্ধে করছো আমায়, বুঝি সব। ইভানকে দেখে নিজের পিঠে সপাটে চাবুক মারতে ইচ্ছে করতো বিদিশার, রচনার সুখী সুখী মুখটা দেখে যন্ত্রণায় নীল হয়ে যেত ও। তবুও মন থেকে সম্পূর্ণ সরিয়ে দিতে পারেনি সমুদ্রকে। দ্বন্দ্ব চলে অহরহ বিদিশার মনের মধ্যে। চেষ্টা করে কাজের অতিরিক্ত সমুদ্রর সঙ্গে কথা না বলতে।
সমুদ্র একদিন লাঞ্চবক্সটা খুলে বলেছিল, বিদিশা দূরেই যখন সরিয়ে দিতে চাইছো তখন এসব যত্ন আর কেন? অভ্যস্ত হয়ে যাব যে! আমিও চাই তুমি একজনকে বিয়ে করে সুন্দর করে নিজের জীবনটা শুরু কর। এভাবে তো চলতে পারে না। আমার আর কিছু পাবার নেই, তাই বলে তোমার পাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবো, এ বড় অন্যায়। আমি তোমাকে মন থেকে ভালোবাসি, তাই তোমার মঙ্গল চাই।
বিদিশা রেগে গিয়েই বলেছিলো, আমার জীবনের ভার আমি তোমার ওপরে দিইনি সমুদ্র, ওটা একাই বইতে পারি। আমি তোমার কোম্পানির এমপ্লয়ি বৈ তো নয়। তোমার কোম্পানির এত এমপ্লয়ি আছে, তুমি কি সকলের কথা ভাবছো সমুদ্র? তাহলে আমাকে আলাদা চোখে দেখার দরকার নেই। নিজে বরং বউ, ছেলে নিয়ে সুখে থাকো, আমারটা আমি বুঝে নেব। অবুঝ করুণ চোখে তাকিয়েছিলো সমুদ্র। নিরুপায় যন্ত্রণা ছিল সে দৃষ্টিতে।
বিদিশা বুঝেও আঘাত করতো সমুদ্রকে। হয়তো নিজের যন্ত্রণাটা যদি একটু লাঘব হয় সেই আশায়। পরে নিজেই কষ্ট পেত সমুদ্র দুঃখ পেয়েছে ভেবে। ভীষণ রকম এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল বিদিশার জীবনটা। আগের মত ঈশার সঙ্গে খুনসুটি করে না ও। মায়ের বানানো আচার লুকিয়ে খেয়ে মায়ের বকা খায়নি কতদিন। শুধু মাসের শেষে বাবার হাতে মোটা অংকের একটা অ্যামাউন্ট ধরিয়ে দেবার সময় একটু তৃপ্তি পেত ও। বাবার মুখে একটা দুশ্চিন্তা মুক্তির হাসি ফুটে উঠতো। বাবা বলতো, কে বলে মেয়েসন্তান বাবা-মায়ের দায়িত্ব নিতে পারে না? তারা এসে দেখে যাক বিদিশা রায়কে। ঈশাও একটা ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের বিজনেস শুরু করেছে সদ্য সদ্য। কতটা সাকসেসফুল হবে সেটা অবশ্য বিদিশা জানে না, তবে ও যে নিজের ইচ্ছে মত চালাতে পারছে জীবনটা এটাই অনেক। মাঝে মাঝে নিজের ছোট আদরের মিষ্টি বোনটাকেও হিংসে করে বিদিশা। মনে হয় সকলের জীবন কি সুন্দর সরলরেখার দ্বারা আঁকা, শুধু ওরটাই ঘুরপথে বৃত্ত এঁকেছে। সেই ঘুরে ফিরে সমুদ্রর বিবাহিত বউ আর ছেলেতে এসে আটকে আছে। সমুদ্রর পার্সোনাল সেক্রেটারি হয়ে ওর সঙ্গে বারো ঘণ্টার বেশি টাইম স্পেন্ড করে ওর থেকে আলাদা হবার স্বপ্নটা নেহাতই ছেলেমানুষি, সেটা বোঝে বিদিশা। সমুদ্রর থেকে দূরে যেতে হলে ওর কোম্পানি ছাড়তে হবে। এই বাজারে এখুনি আরেকটা চাকরি পাওয়া যে কতটা টাফ সেটা বিদিশার মত মধ্যমেধার মেয়েরা জানে। তাই বাবার এই ভরাডুবি বিজনেসের কন্ডিশনে কোনোমতেই বিদিশা এই জবটা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। সমুদ্রের সম্মুখে থেকেই নিজের অবাধ্য মনকে শাসন করে সরিয়ে রাখতে হবে, এটা বেশ বুঝেছিলো বিদিশা। কয়েকদিন আগেই ঈশা প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে বলেছিলো, দিদিভাই তুই আমার সঙ্গে এভাবে কেন কথা বলছিস? আমিও তো চেষ্টা করছি সংসারের পাশে দাঁড়ানোর।
বিদিশা খুব রূঢ় ভাবেই আঘাত করেছিলো ঈশাকে। অথচ বিদিশা জানে ঈশার ছোটবেলায় তৈরি হওয়া ক্রাইসিসটার কথা। অনুভব ওভাবে সুইসাইড করার পরে মেয়েটা যেন কেমন একটা হয়ে গিয়েছিলো। চুপ করে বসে কাঁদতো ঘরের কোণে। রাতে শুয়েও থরথর করে কাঁপত। মাঝরাতে বিদিশাকে জড়িয়ে ধরে থাকতো। বিদিশা দেখতো চোখের কোন দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে ঈশার। বছর পাঁচেকের ছোট বোনটাকে নিজের বুকের মধ্যে আগলে রাখতো ও। বোন কষ্ট পাচ্ছে দেখলে নিজেও কেঁদে ফেলতো। বিদিশাকে লোকে সুন্দরী বলে ঠিকই তবে ঈশা যেন বিশ্বকর্মার নিজের হাতে গড়া। বোনের সৌন্দর্য নিয়েও ছোটবেলায় বিদিশার অহংকারের শেষ ছিলো না। নববর্ষের দিনে যখন ওরা এই হাইরাইজে আসেনি, নিজেদের পুরোনো ফ্ল্যাটে থাকতো, তখন নতুন জামা পরে ঈশাকে নিয়ে রাস্তায় বেরোত বিদিশা। পাশের ফ্ল্যাটের সবাই ওদের দুই বোনকে আদর করে বলতো, কি মিষ্টি দেখতে দুজনকেই। তখন বিদিশা তাদের বলতো, ঈশা তো মানুষ নয় একটা নিখুঁত পুতুল। আমার খেলার পুতুল। সত্যিই ঈশা ছিল বার্বি ডলের মত। বড্ড মিষ্টি। বিদিশার কখনো ঈশার সৌন্দর্য্য নিয়ে হিংসা ছিল না, যেটা ছিল সেটা হলো গর্ব।
ইদানীং নিজেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে চিনতে পারে না বিদিশা। ঈশার স্বাধীন, সাবলীল জীবনটা দেখে হিংসা হয় বিদিশার। অথচ অনুভব মারা যাবার পরে ঈশাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য মা-বাবার সঙ্গে ও নিজেও কম চেষ্টা করেনি। সেই বোনকে এখন প্রাণবন্তভাবে হাসতে দেখলে বিদিশা হিংসে করছে! ছি ছি একি অবক্ষয় হচ্ছে ওর! মানসিক দ্বন্দ্বে ও কি আস্তে আস্তে পাগল হয়ে যাচ্ছে নাকি! বিদিশা খুব ভালো করে জানে, ডক্টর বলেছিলেন, ঈশার ট্রমাটা হয়তো কাটানো সম্ভব হয়েছে তবে চেষ্টা করবেন ওকে আনন্দে রাখতে। খুব বড় কোনো আঘাতে ও আবার আগের মতই গুটিয়ে নেবে নিজেকে। এত ছোট বয়সের আকস্মিক আঘাত বলেই সেটা নাকি বেশ গভীরভাবে দাগ ফেলেছিল ঈশার মনে এবং মস্তিষ্কে। তাই যতটা পারা যায় ওকে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল ওরা সবাই। এখন কদিন ঈশাকে হাসতে খেলতে দেখে ওর এই অদ্ভুত রাগের কারণ খুঁজে পাচ্ছে না বিদিশা। নিজের ওপরেই বিরক্তি আসছে ধীরে ধীরে। যে ভাবেই হোক সমুদ্রকে সরাতে হবে নিজের জীবন থেকে। আজ ওদের ব্লকেরই সুপর্ণা বলে মেয়েটার বিয়ে ছিলো। ঈশার সঙ্গে মেয়েটার বেশ ভাব আছে। সুপর্ণা খুব মিশুকে মেয়ে বলে পরিচয়ও আছে বিদিশার সঙ্গে। বাড়িশুদ্ধু নিমন্ত্রণ করেছিলো সুপর্ণা, ওকেও বারবার বলে গিয়েছিলো, বিদিশা যেও কিন্তু। সুপর্ণা আর বিদিশা বোধহয় একই বয়েসী। মনেমনে হিংসায় জ্বলে উঠেছিলো বিদিশা, যখন সুপর্ণা বলেছিল, সেই কলেজের প্রেম বুঝলে, এতদিনে সৌজন্যকে নিজের করে পাবো। তারপর সেটেল্ড হবো জার্মানিতে। বিদিশা তাকিয়ে দেখেছিলো সুপর্ণার চোখের তারায় খুশির ঝলকানি। নিজের দিকে তাকিয়ে অবসন্ন হয়ে এসেছিলো ওর ক্লান্ত মন। এমন একজনকে ও প্রাণ দিয়ে ভালোবাসল যাকে কোনোদিন বিয়ে করতে পারবে না। বিয়ে দূরে থাক কাউকে পরিচয়ও করাতে পারবে না ভালোবাসার মানুষটার সঙ্গে। কাউকে বলতে গেলেই সে বিদিশাকে খারাপ ভাববে, ভাববে রচনার সংসার ভাঙছে ও। কিন্তু কি করবে ও, ভালোবাসা তো মানুষ দেখে, বিচার বিবেচনা করে হয় না, হঠাৎই আচ্ছন্ন করে দেয় যুক্তিবাদী মনটাকে। আর তখনই ওর সাজানো যুক্তিগুলো ভেসে যায় হরকা বানের স্রোতে। বিদিশাও জানতো সব, সমুদ্র বিবাহিত, ওর একটা ক্লাস সিক্সে পড়া ছেলে আছে, সমুদ্র নিজেই সবটুকু বলেছিলো ওকে। এমনকি কত কম বয়সে প্রায় সমবয়সী রচনার সঙ্গে ওর বিয়ে হয়েছিছলো সেটাও। রচনা আসলে সমুদ্রর ছোটমাসীর জায়ের মেয়ে। পরিবারের মধ্যে সম্বন্ধ পেয়ে ওর মা দেখেশুনে মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলো সমুদ্রর। সেই তখন থেকেই নাকি রচনার যাবতীয় আহ্লাদ একতরফা মেটাতে মেটাতে ক্লান্ত সমুদ্র।
এসব জানার পরও কি করে পতঙ্গের মত ওই একলা মনের মানুষটার দিকে এগিয়েছিলো বিদিশা তার উত্তর নেই ওর কাছে। ও শুধু একটা কথাই জানে, ভালোবাসা কোনো যুক্তিতর্ক মানে না। ওর সমবয়সী মেয়েদের বিয়ে হচ্ছে দেখলে হিংসে হয়, কষ্ট হয়, আবার সমুদ্রকে ছেড়ে অন্য কাউকে ভালোও বাসতে পারে না ও। মাঝখান থেকে আজকেও ঈশাকে আঘাত করে কথা বলে ফেললো সুপর্ণা। বিকেলে একটা মিটিং ছিল, তাই দুপুরে লাঞ্চ সেরে দেরি করেই ও বেরোচ্ছিলো বাড়ি থেকে, ঈশা খুব সাধারণভাবেই জিজ্ঞেস করেছিলো, দিদিভাই বিয়েবাড়ি যাবি না? সুপর্ণার বিয়ে জানে বিদিশা, কথাটা মনে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সুপর্ণার হাসি হাসি সুখী মুখটা মনে পড়ে গিয়েছিলো বিদিশার। তাই ঈশাকেও আঘাত করে ফেললো ও। ইস, বাড়ি গিয়ে বোনটাকে একটু আদর করে দিতে হবে।
অনলাইনে ইয়ার রিং দেখছিলো বিদিশা, কতদিন কিছু দেওয়া হয়নি বোনটাকে। দুটো অর্ডার করে দিলো ঈশার জন্য। আড়চোখে তাকিয়ে দেখলো সমুদ্র মনমরা হয়ে ল্যাপটপ ঘাঁটছে। বিদিশার টেবিলে এখনো ছড়িয়ে আছে ভেজা গোলাপের পাপড়িগুলো। বড় যত্ন করে এনেছিলো এগুলো সমুদ্র ওর জন্য, বিদিশা আবারও নোংরা কথা বলে আঘাত করলো সমুদ্রকে। এছাড়া আর কিইবা করার আছে ওর! বিদিশা একেবারেই চায় না ওর জন্য রচনা আর সমুদ্রের সংসারটা নষ্ট হয়ে যাক।
মনটা বিক্ষিপ্ত লাগছিলো ওর। যবে থেকে রচনা ওকে ফোন করে নোংরা কথাগুলো বলেছে তবে থেকেই মনের মধ্যে চলছে অনবরত রক্তক্ষরণ। অফিসেই কাজ করছিলো বিদিশা, হঠাৎই একটা আননোন নম্বর থেকে ফোন এসেছিলো বিদিশার নম্বরে। রিসিভ করতেই একজন মহিলা অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল দিয়ে বলেছিলো, তুই তো সমুদ্রর কেপ্ট তাই না? শুধু সমুদ্ররই না আরও এমন অনেকে আছে? তোদের মত মেয়েরা আবার রাতে মেসেজ করে, ডিনার করেছো? কেন রে, আমি কি আমার হাজবেন্ডকে খেতে দিই না? শরীর বেচতে বসেছিস শরীর বেচে দে, এত আদিখ্যেতা করিস না। স্তম্ভিত হয়ে বসেছিলো বিদিশা। এমন ভাষায় ওকে কেউ কথা বলতে পারে এটাই যেন বিশ্বাস করতে পারছিলো না ও। সমুদ্র বোধহয় বার তিনেক ডেকেছিলো ওকে, কোনো সাড়া না পেয়ে নিজেই এসেছিলো ওর কিউবিকলে। ওর রক্তবর্ণ চোখ আর নীলচে মুখ দেখে কিছু একটা আন্দাজ করেই বলেছিলো, কিছু হয়েছে বিদিশা? কেউ কিছু বলেছে তোমায় অফিসে?
বিদিশা উন্মত্তের মত সমুদ্রর কলার ঝাঁকিয়ে বলেছিলো, আমি তোমার রক্ষিতা? মাইনের বাইরে একটা টাকাও নিয়েছি কখনো তোমার কাছ থেকে? আমি তোমার কেপ্ট?
বিধস্ত বিদিশাকে শান্ত করার চেষ্টা না করেই সমুদ্র স্খলিত গলায় বলেছিলো, বুঝেছি, রচনা ফোন করেছিলো তো?
গতকাল রাতে তোমার মেসেজটা বোধহয় ও দেখেছে কোনোভাবে। তোমার আর আমার মেসেজগুলো পড়েই সম্ভবত কিছু একটা আন্দাজ করেছে। আমাকেও জিজ্ঞেস করছিল, বিদিশা তোমার কে হয়? আমার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়েছিলো। তখনই হয়তো তোমার নম্বরটাও লোড করে নিয়েছে। আমি দোষী বিদিশা, আমায় শাস্তি দাও, তোমার আজকের এই অপমানের জন্য আমি দায়ী।
বিদিশা শান্ত হয়েছিলো, অদ্ভুত গলায় বলেছিলো, চলে যাও। আজ থেকে তুমি আমার বস, আমি জাস্ট এমপ্লয়ি। না, কোনো বন্ধুত্ব থাকবে না আমাদের মধ্যে। সমুদ্র ভাঙা গলায় বলেছিল, বেশ তাই হবে, আমাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছ মাথা পেতে নিচ্ছি কিন্তু কোম্পানি থেকে সরে যেও না, চৌধুরী এন্টারপ্রাইজের তোমায় দরকার।
এরপর থেকে অনবরত চোখের জল ফেলেছে বিদিশা কিন্তু দেখতে দেয়নি সমুদ্রকে।
সমুদ্রও রচনার বলা অত্যন্ত নোংরা উক্তিগুলো হজম করে অবলীলায় শুধু একটাই শর্তে, রচনা আর কোনোদিন ফোন করবে না বা অপমান করবে না বিদিশাকে। ইভানের সামনেই ঝগড়া হয়েছে বারংবার, রচনাকে শান্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে গেছে সমুদ্র। তাই ইদানীং জীবন সম্পর্কে খুব নিঃস্পৃহ ওর দৃষ্টিভঙ্গি। শুধু খারাপ লাগে বিদিশাকে দেখে। মেয়েটা যেন বড্ড বেশি মনমরা হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে ওর টেবিলে ওর পছন্দের ফুল রেখে এসেছে সমুদ্র, কখনো টুকটাক স্ন্যাকস, কিছুতেই স্বাভাবিক হয়নি বিদিশা। আজকেও তেমনিই গোলাপের পাপড়ি দিতে গিয়েছিলো ওর হাতে, বিদিশার ফেভারিট রেড গোলাপ, কিন্তু তাতেও ও যেভাবে রিয়াক্ট করলো খুব কষ্ট হলো সমুদ্রর। গত তিনমাস ধরে একই রকম ব্যবহার করে চলেছে বিদিশা। বড্ড ফর্মাল। রচনার ফোনটা আসার পর থেকেই নিভে গেছে যেন মেয়েটা। মুখটা থমথমে লাগে আজকাল। ওদিকে বাড়িতেও চলে রচনার চূড়ান্ত অপমান, নাটুকে কান্নাকাটি ইত্যাদি। সমুদ্রর ইচ্ছে করছে দূরে কোথাও চলে যেতে, এসব ছেড়ে একেবারে একা।
বিদিশা ফুলের পাপড়িগুলো আলগোছে তুলে নিচ্ছে সেদিকে অপলক তাকিয়ে থাকলো সমুদ্র।