হারিয়ে যাওয়ার আগে – ১১
১১
ইভানকে নিয়ে চলে গেছেন সমুদ্রবাবু। দিদিও এখন স্বাভাবিকভাবেই অফিস যাচ্ছে। রচনার কোনোরকম সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি আর পোস্টমর্টেম রিপোর্টেও নাকি অ্যাক্সিডেন্টাল ডেথ বলেই উল্লেখ করা হয়েছে। ম্যাক্সিমাম বার্নের কারণের হার্টফেল করেছে রচনা চৌধুরী। দিদিভাই বলছিলো, ভাগ্নের দায়িত্ব নেওয়ার ভয়েই বোধহয় রচনার দাদাও কেসটা উইথড্র করে নিয়েছে। দিদিভাই রেগুলার যায় ইভানের কাছে। ওর পড়াশোনা, হোমওয়ার্ক এসব দেখাশোনার দায়িত্ব এখন দিদিভাইয়ের ওপরে। দিন সাতেক হয়ে গেল কমপ্লেক্সে আবার স্বাভাবিক ছন্দ ফিরে এসেছে।
ঈশা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দেখলো, ইভানকে নিয়ে স্কুল বাসে তুলে দিলেন সমুদ্রবাবু। ইভান হাত নাড়লো বাবাকে। ছেলেটা যেন একটু রোগা হয়ে গেছে। দিদিভাই বলছিলো, রোজই প্রায় জিজ্ঞেস করে মা কবে ফিরবে? আরও সময় লাগবে ইভানের স্বাভাবিক হতে। সমুদ্র নাকি বিকেলের মধ্যে কাজ গুছিয়ে চলে আসে অফিস থেকে। ওদের ফ্ল্যাটের সবসময়ের পরিচারিকা বাসন্তীদি ইভানের দেখাশোনা করে মন দিয়ে। ভদ্রমহিলার নিজস্ব সংসার নেই। সমুদ্রর ফ্ল্যাটেই চব্বিশঘণ্টা থাকে সে। ইভানকে একা থাকতে হবে না ভেবেই নিশ্চিন্ত হয়েছিলো ঈশা। ছেলেটার ওপর দিয়ে যা ঝড় বয়ে গেল তা বলার নয়। ঝড় কি শুধু ইভানের ওপর দিয়ে গেল! ঝড় তো ওদের পরিবারের ওপর দিয়েও গেল। মা-বাবা দিদিভাইকে হাজার বারণ করা সত্ত্বেও দিদিভাই ইভানের দায়িত্ব নিয়েছে, বকলমে সমুদ্রর সংসারের চালিকাশক্তি এখন বিদিশাই। মা বিরক্ত হয়ে বলেছিল, এরকম অবৈধ রিলেশনের দরকারটা কি সেটাই তো বুঝতে পারছি না। এরপর তোর বিয়ের যোগাযোগ শুরু করলে এই রিলেশনটাই তো কাল হয়ে দাঁড়াবে। মায়ের মুখের ওপর দিদিভাই বলে দিয়েছে, অসময়ে ইভান আর সমুদ্রের হাত ছাড়তে পারবো না। বাবা বিরক্ত হয়ে বলেছিল, তাহলে জবটা ছেড়ে দাও। বিদিশা মুচকি হেসে বলেছিল, নিজের বুকে হাত দিয়ে বলছো তো? গত দুটো বছরের খুব খারাপ অবস্থাটা বোধহয় কাটিয়ে উঠতে পেরেছ সমুদ্র চৌধুরীর দেওয়া ইউনিক বুদ্ধির বলে আর আমার কন্ট্রিবিউশনের কারণে। এই একবছর কম টাকা তো তোমার হাতে তুলে দিলাম না! সবই হয়েছে চৌধুরী এন্টারপ্রাইজের চাকরির দৌলতেই।
তোমরা কেমন অসময়টাকে ভুলে যাও, তাই না?
একমাত্র ঈশাই আড়ালে বলেছিলো, দিদিভাই তুই সমুদ্রবাবুকে ভালোবাসিস তাই না রে? বিদিশা কোনো উত্তর না দিয়ে ঈশার বুকে মুখ গুঁজে কেঁদেছিলো অনেকক্ষণ ধরে।
তারপর ধীরে ধীরে বলেছিলো, ভালোবাসি কিন্তু বিশ্বাস কর আমি চাইনি আমার জন্য রচনা মারা যাক, ইভান মা হারা হোক। তাই সমুদ্র চাইলেও আমি জোর করে দূরে সরিয়ে রেখেছিলাম ওকে। এখন রচনার অনুপস্থিতিতে যদি ওর সংসারে ঢুকে পড়ি তাহলে হয়তো কিছুদিন পরে কোনো এক নীরব মুহূর্তে সমুদ্র ভাববে আমি সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। তাই ইভানের দায়িত্ব এখন কিছুদিন নিলেও ধীরে ধীরে আমি সরে আসবো বাবা আর ছেলের ছোট্ট দুনিয়াটা থেকে। তবে রচনা সুইসাইড করেনি, মার্ডারও নয়, অ্যাক্সিডেন্ট জানতে পেরে আমিও শান্তিতে ঘুমিয়েছিলাম। অপরাধী হয়ে বাঁচার যন্ত্রণাটা বড্ড কষ্টদায়ক রে ঈশা।
ঈশা দিদিভাইয়ের চোখ মুছিয়ে বলেছিলো, তুই মন খারাপ করিস না রে, ডেস্টিনি কেউ আটকাতে পারে না। ওয়েট কর, সব ঠিক হয়ে যাবে। তুই কোনো অন্যায় করিস নি দিদিভাই, ভালোবাসা অন্যায় নয়। মনের ওপর তো কারোর শাসন চলে না। বিদিশা বোনকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলো, তাও কেন ইভানকে দেখলেই অপরাধবোধে ভুগছি রে ঈশা? কেন মনে হচ্ছে রচনা কি মরতেই চেয়েছিল তাই অমন অগোছালোভাবে আগুন ধরে গেল ওর ড্রেসে! কিছু প্রশ্নের উত্তর যে কিছুতেই পাওয়া যাচ্ছে না। মনের অলিগলি খুঁজেও পাচ্ছি না। সমুদ্রও কেমন যেন নির্লিপ্ত হয়ে গেছে, কাজের ব্যাপারেও সেই প্যাশনটাই নেই যেন, বোধহয় রচনার মাত্রারিক্ত খরচের ভারটা কমে গেছে বলেই ও এখন বেশ শান্ত। সবকিছু কেমন ঘেঁটে গেল রে ঈশা। জীবনটা কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো। শোন না, কখনো যদি কাউকে ভালোবাসিস তাহলে মন থেকে নয় বুদ্ধি দিয়ে বাসবি, তার সঙ্গে গোটা জীবনটা কাটাতে পারবি তো? নাকি মাঝপথেই থমকে যাবে ভালোবাসার সোপানটা? শুধু মন নয়, মাথাও খাটাবি বুঝলি ঈশা! আমি চাই না তুই কোনোরকম কষ্ট পাস জীবনে। তোর জীবনটা যেন আমার মত এলোমেলো না হয়ে যায়। তুই আমার ছোট্ট পরী, তোর কিছু খারাপ হলে সেটা খুব যন্ত্রণা দেবে আমায়। ঈশা তাকিয়েছিলো দিদিভাইয়ের দিকে। এই তো ওর সেই দিদিটা যে টিপের রঙিন পাতায় একটাই ব্লু টিপ থাকায় ওর কপালে পরিয়ে দিয়ে বলেছে, কালো আর ব্লুর মধ্যে পার্থক্য তেমন কিছু নেই। আমি কালো পরে নিচ্ছি। দুই বোনের ফ্রকের রংই ব্লু ছিল সেদিন, তবুও দিদিভাই কালো টিপেই অ্যাডজাস্ট করে নিয়েছিল। বোনের সাজের কোনো খামতি হতে দেয়নি। বিদিশা বরাবরই এরকম।
দিদিভাইয়ের কথাগুলো শুনে আচমকা একটা মুখ ভেসে উঠলো চোখের সামনে। ইস, বাড়ির এইরকম টালবাহানার পরিবেশে প্রান্তিকের একটা খোঁজও নেওয়া হয়নি। এমনকি গত সাতদিন ধরে ও সমানে মেসেজ করে বলেছে, ঈশা একবার আসবে আমার ফ্ল্যাটে? জরুরি দরকার আছে। ঈশা লিখেই গেছে বাড়িতে একটা সমস্যা চলছে, মিটলেই যাবো। এত কিছুর মধ্যে ঈশা ভুলেই গিয়েছিল, প্রান্তিক অপেক্ষা করছে ওর জন্য। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল সকাল দশটা। প্রান্তিক এখন অফিস যাবার তাড়ায় রয়েছে। সন্ধেতে ফিরলে তখনই ঈশা যাবে ওর কাছে। পায়ে পায়ে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালো, এখান থেকে গেটটা দেখা যায় সোজা। প্রান্তিক নিশ্চয়ই বেরোবে মিনিট পনেরোর মধ্যেই। একবার দেখার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকলো ঈশা। সাড়ে দশটা ছাড়িয়ে যাবার পরেও প্রান্তিকের বাইকের দেখা মিলল না। হোয়াটসঅ্যাপেও কাল রাতের পরে আর অন হয়নি। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলটা একবার ব্রাশ করে নিয়ে, পাজামার ওপরের কুর্তিটা চেঞ্জ করে ও এগোলো প্রান্তিকের ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে।
বার তিনেক বেল বাজানোর পরে দরজাটা খুললো প্রান্তিক। চোখ দুটো লাল, মুখটা শুকনো। গালে না কাটা দাড়িই জানান দিচ্ছে দুদিন অন্তত অফিস যায়নি ও।
ঈশা ভিতরে ঢুকেই বললো, কি হয়েছে তোমার? শরীর খারাপ? আমায় জানাওনি কেন পাগল?
একা একা রয়েছ ফ্ল্যাটে, একটা কল তো করতে পারতে?
প্রান্তিক করুণ হেসে বললো, তুমি তো লিখেছিলে তোমাদের বাড়িতে কিছু একটা প্রবলেম চলছে, মিটলেই আসবে, তাই আর বিরক্ত করিনি।
ঈশা বললো, সেটা তো লিখেছিলাম দিন তিনেক আগে। তারপর যে তোমার শরীর খারাপ হয়েছে সেটা তো জানাবে, নাকি? অদ্ভুত মানুষ তো?
প্রান্তিক ব্যস্ত হয়ে বললো, আরে তেমন কিছু নয়, একটু জ্বর, ঠান্ডা লাগা এই পর্যন্ত।
ঈশা ব্যস্ত হয়ে বলল, কবে থেকে হয়েছে?
প্রান্তিক সোফায় কাত হয়ে বসে বললো, পরশু রাত থেকে। সম্ভবত ঠান্ডা লেগেছে। অনেক রাত পর্যন্ত ছাদে ছিলাম তো তাই হয়তো ঠান্ডা লেগেছে।
ঈশা বললো, রাতে ছাদে কেন গিয়েছিলে? ঠান্ডা রয়েছে বেশ রাতের দিকে। ফাঁকা ছাদে করছিলেটা কি?
প্রান্তিক বললো, নিজের সঙ্গে বোঝাপড়াটা সেরে নিতে খোলা আকাশের নিচে কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েছিলাম। চার দেওয়ালের মধ্যে আমরা বড্ড বেশি যত্নবান, সচেতন হয়ে থাকি কারণ ঘরের আয়নায় নিজেকে দেখা যাবে এই আশঙ্কায় ফরম্যাল থাকি, কিন্তু খোলা আকাশের নিচে শুধু বহুদূরের তারারা ছাড়া যখন আর কারো উপস্থিতি থাকে না তখন আমাদের মনের গোপন কোণগুলোও সামনে বেরিয়ে পড়ে। উত্তর দেয় এলোমেলো অনেক প্রশ্নের, যেগুলো সর্বক্ষণ ক্ষতবিক্ষত করে চলে। সেই উত্তর খুঁজতে নিরিবিলি অথচ নিজের মুখ দেখতে না পাওয়া অন্ধকারের উদ্দেশ্যেই ছাদে গিয়েছিলাম। আর তখনই ঠান্ডা বাবাজি সুযোগ পেয়ে একটু উষ্ণতার খোঁজে প্রবেশ করেছে আমার মধ্যে।
কথা না বাড়িয়ে ঈশা ওর ঠান্ডা হাতটা ঠেকালো প্রান্তিকের কপালে। উষ্ণতা এখনো রয়েছে কপাল জুড়ে।
প্রান্তিক একটু কেঁপে উঠলো যেন। ঈশা বললো, এখনো তো জ্বর আছে, মেডিসিন কিছু নিয়েছ?
প্রান্তিক বাধ্য ছেলের মত বললো, ওই যে মুদিখানার দোকানেও যেটা পাওয়া যায়, ওই প্যারাসিটামল নিয়েছি। ঈশা হেসে বললো, শরীর খারাপের মধ্যেও এই মজা আসছে কোথা থেকে ?
প্রান্তিক লাজুক গলায় বলল, কারোর কারোর উপস্থিতি আর স্পর্শে মনে হয় জ্বরটা নেহাত মন্দ নয়, বরং থাকুক আর কিছুদিন।
ইশা কপট রাগে চোখ পাকিয়ে বললো, অনেক হয়েছে, ব্রেকফাস্ট হয়েছে কিছু?
প্রান্তিক ঘাড় নেড়ে বললো, না। খুব উইক তাই উঠে কিছু করতে পারিনি। সুপর্ণার দেওয়া পরিচারিকা শেফালীদি দিন তিনেক আসেনি। গতকাল সুইগি, তার আগের দিন অফিস ক্যান্টিন করে চালিয়ে নিয়েছি। ঈশা বললো, বুঝেছি। প্রান্তিক বললো, না তুমি কিচ্ছু বোঝোনি। তুমি কিচ্ছু বোঝো না।
ঈশা প্রান্তিকের দিকে সোজাসুজি তাকিয়ে বললো, কি বুঝি না? আমার একটা ছোট্ট প্রশ্নের উত্তর মেসেজে জানাতে বলেছিলাম, কেউ একজন সেই মেসেজটা করতেই ভুলে গেছে। আর কি বুঝবো আমি একটু বলবে?
প্রান্তিক বললো, আর যদি বলি সে বারবার টাইপ করেও মুছে দিয়েছে, যদি বলি সে তাকে বারংবার ডাকছিলো ওই প্রশ্নের উত্তর সামনাসামনি দেবে সেই জন্যই, তাহলে?
ঈশা লজ্জায় ছটফট করে উঠে বললো, দেখি কিচেনের কি অবস্থা। অ্যাটলিস্ট চা, ব্রেড পাই কিনা। প্রান্তিক ওকে জোর করে সোফায় বসিয়ে বললো, তার আগে সেদিনের প্রশ্নের উত্তরটা নিয়ে যাও, একটু বসো।
নিজের ঘর থেকে একটা রেড র্যাপারে মোড়া ছোট বক্স এনে ঈশার হাতে দিয়ে বললো, তাড়া নেই, সময় মত দেখো।
ঈশা কথা না বলেই কিচেনে ঢুকে খুটখাট শুরু করলো। সোফায় বসে ওর কিচেনে ঈশাকে ব্রেকফাস্ট বানাতে দেখে অন্যরকম অনুভূতিরা এসে ভিড় করছিল প্রান্তিকের মনে। ফিসফিস করে বললো, ঈশা যদি এটা তোমার নিজের কিচেন হয় কোনোদিন, কেমন হবে? এই ফ্ল্যাটটা তোমার হবে সেদিন, আমি হবো আশ্রিত। দিনরাত বকবে আমায় অগোছালো স্বভাবের জন্য, আমি আদুরে গলায় বলবো, পাল্টে নাও আমায় তোমার মনের মত করে। ওর স্বপ্নগুলো কি তবে সত্যি হবার পথে এগোচ্ছে? বুকের ভিতরটা দুরদুর করে কেঁপে উঠলো প্রান্তিকের। ঈশা ট্রেটা সেন্টার টেবিলে রেখে বললো, দিনরাত এত কি ভাবছো বলবে? আমি ভাবছি এবারে তোমার ছবি দিয়ে টিশার্ট বানাবো, নীচে হেডিং হবে ভাবুক, অবুঝ প্রেমিক। কেমন আইডিয়াটা?
প্রান্তিক চায়ে চুমুক দিয়ে বললো, দুর্দান্ত হয়েছে চা টা। পারফেক্ট। আইডিয়াটা মন্দ নয়, করতেই পারো।
ঈশা ঠোঁট বেঁকিয়ে বললো, বয়েই গেছে। কত মেয়ে ওনাকে হৃদয়ে নিয়ে ঘুরবে, স্বপ্ন বুনবে আর আমি সেটা দায়িত্ব নিয়ে সহ্য করবো! অসম্ভব। কভি নেহি।
প্রান্তিক হেসে বললো, আইডিয়াটা তোমার ছিল ঈশা। নাহলে আমি কিন্তু খুব পজেসিভ লাভার। কিছুতেই নিজের কিছু শেয়ার করবো না পাবলিকলি। ঈশা বললো, আমি পজেসিভ নই, তবে একজনের ব্যাপারে মনে হচ্ছে পজেসিভ হওয়াটাই উচিত।
ব্রেডটা খেতে খেতে প্রান্তিক বললো, সে ভীষণ লাকি ম্যান। কে সে? ঈশা ছদ্ম রাগ দেখিয়ে বলল, দুপুরে কি খাবে? কিছু অর্ডার করবে নাকি আমি কিছু করে দিয়ে যাব। আমি ভাত, ডাল আর ডিমসিদ্ধ পারি।
প্রান্তিক হেসে বললো, ওটা আমিও পারি। কিন্তু জ্বর আছে কিনা সেটা আমি দেখতে পারি না। ওটার জন্য একটা শীতল সহানুভূতিপূর্ণ স্পর্শের দরকার। ঈশা প্রান্তিকের কপালে হাত ছুঁইয়ে বললো, তোমার চার দেওয়াল আর অ্যাকুয়ারিয়ামের মাছগুলো সাক্ষী রইলো, আমি চাই তুমি যেন আজকেই সুস্থ হয়ে ওঠ। প্রান্তিক ঈশার হাতের ওপরে হাত রেখে বললো, লিনতাপের নিয়ম অনুযায়ী আপাতত আমি শীতল হবো আর তুমি উষ্ণ।
ঈশা প্রান্তিকের দেওয়া বক্সটা হাতে নিয়ে বললো, দরকার হলে ডেকো। প্রান্তিক মুচকি হেসে বললো, উঁহু, অপ্রয়োজনেই তোমায় প্রয়োজন। বিনা দরকারেই আসবে তুমি, না বলে কয়ে আচমকা, হঠাৎ করে। আকস্মিক প্রাপ্তির আনন্দই আলাদা। ঈশা ভ্রু কুঁচকে বললো, অনেক হয়েছে কবিত্ব। এবারে রেস্ট নাও, আমি সন্ধেতে আসবো আবার।
ঈশা ফিরে যাওয়ার মুহূর্তে প্রান্তিক বললো, আরেকটা খুব প্রয়োজনীয় কথা আছে। আমার অফিসের ছয়জন মত খুব ধরেছে একটা ছোট্ট গেট টুগেদার চাই, ফ্ল্যাট কেনার পর ওদের খাওয়ানো হয়নি। শোনো না, নেক্সট সানডে ওরা আসবে। কি করবো? মেনু কি কি করবো, আর কি ভাবে? মানে আমার এই অনভিজ্ঞ জীবনে এসব কিছুই ঘটেনি এর আগে। তাই কি করে ম্যানেজ করবো বুঝতে পারছি না। প্লিজ হেল্প মি। আরো একটা অনুরোধ, সানডে কিন্তু তোমায় বাড়িতে ম্যানেজ করতে হবে। ওইদিন তোমায় এখানে থাকতে হবে, প্লিজ। আমি একা পারবো না, কনফেস করছি।
ঈশা বললো, কি পরিচয়ে থাকবো? তোমার কলিগদের সামনে?
প্রান্তিক ঈশার দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে বললো, ওই বক্সে আছে, দেখে নিও।