রিইউনিয়ন
বর্ণিতা যখন বাড়ি থেকে বেরোলো তখনও দোলাচলে দুলছিলো। অব্যয়ের ওই নিষিদ্ধ পল্লীতে যাওয়ার কথাটা কি বন্ধুদের বলবে, নাকি থাকবে! আদৌ ওই মহিলার খুনের সঙ্গে কি অব্যয় জড়িত?
অব্যয়কে খুনি ভাবতে গেলে নিজের সঙ্গে যে পরিমাণ যুদ্ধে লিপ্ত হতে হচ্ছে তাতে বর্ণিতাকে এতদিনের ক্ষীণ আশাটাকেও জলাঞ্জলী দিতে হবে। নিজের অযৌক্তিক অপেক্ষার কথা ভেবে ক্লান্তভাবে হেসে উঠলো বর্ণিতা। যে মানুষটা বলেই দিয়েছে ভালোবাসা-সংসার এসব ওর জন্য নয়, তার জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষায় বসে আছে বর্ণিতা। সত্যি নিজের এই ছেলেমানুষি পাগলামি দেখলে হাসিই পায় ওর। এতদিন পর্যন্ত একটা অনুভূতিহীন মানুষের জন্য অপেক্ষা ছিল বর্ণিতার কিন্তু আজ থেকে সব কিছু কেমন বদলে গেলো। অব্যয় যদি মেয়েটাকে খুন নাও করে থাকে তবুও একটা কথা তো সত্যি, অব্যয় যেত ওই মেয়েটার কাছে। কিসের টানে যেত? ভালোবাসাহীন নারী শরীরের টানে? জৈবিক ইচ্ছের দাসত্ব স্বীকার করতেই হাজির হতো ওই মেয়েটির কাছে? মেয়েটার ছবিটা কাগজে বেরিয়েছে, বর্ণিতা দেখেছে ছবিটা। অফিসার লগ্নজিতাই দেখালো ওকে। মেয়েটার মধ্যে কোনো বিশেষত্ব লক্ষ করেনি বর্ণিতা। অব্যয়ের পছন্দ এতটা সাধারণ, ভাবতেই অবাক লাগছে বর্ণিতার।
রক্তিমকে ফোন করে কনফার্ম করলো অ্যাড্রেসটা, তারপর ওদের কমপ্লেক্সের সামনে পৌঁছে গেলো। বর্ণিতা ঢুকতেই গুঞ্জা জড়িয়ে ধরে বললো, কতদিন পরে দেখলাম তোকে বর্ণিতা। সেই কলেজের মতই আছিস, একইরকম চার্মিং, স্মার্ট অ্যান্ড শার্প। একটুও বদলাসনি। আমি বরং একটু মুটিয়েছি। বর্ণিতা ওদের নতুন ফ্ল্যাটটার ওপরে আলতো করে চোখ বুলিয়ে বললো, বেশ সাজিয়েছিস তো। ভারি স্নিগ্ধ ডেকোরেশন। ড্রয়িংয়ের দেওয়ালময় বিভিন্ন পেইন্টিং। সেটাই স্বাভাবিক। গুঞ্জা আর রক্তিম দুজনেই ফাইন আর্টসের স্টুডেন্ট। তাই নিজেদের আঁকা ছবির আধিক্যই বেশি। তবুও প্রায় বিয়াল্লিশ ইঞ্চির চলন্ত টিভিকেও ম্রিয়মাণ করে দিচ্ছে যে ছবিটা বর্ণিতা হলফ করে বলতে পারে এ ছবি গুঞ্জা বা রক্তিমের আঁকা নয়। কারণ এই ধরনের রঙের কাজ ওদের শেখানো হতো না। অবশ্য আর্ট কলেজের ছেলেমেয়েরাই পরবর্তীকালে বিভিন্ন স্কুল-কলেজে শিক্ষকতা করে, নিজেদের এক্সিবিশন করে, এক্সপিরিমেন্ট করে ছবির ওপরে।
কিন্তু তবুও ওই ছবিটা সম্পূর্ণ অন্যরকম। অদ্ভুত রকমের নিরাশা বয়ে আনে জীবনে তবুও চোখ ফেরানো যায় না। একদল পাখি আকাশে উড়ছে। একটা দলছুট হয়ে এদিক ওদিক খুঁজছে বন্ধু বা পরিবারকে। অবশেষে খুঁজে না পেয়ে ক্লান্ত হয়ে বসে আছে বাজপড়া একটা গাছের শুকিয়ে যাওয়া একটা ডালে। একটাই ক্যানভাসের মধ্যে শিল্পী কি অদ্ভুতভাবে ফুটিয়েছে তার অভিব্যক্তি। বিভোর হয়ে দেখছিল বর্ণিতা। গুঞ্জা হই হই করে বললো, ওই তো স্বর্ণদীপ আর কুণাল এসে গেছে। দেখ কে এসেছে, বর্ণিতা।
কুণাল মুখ বেঁকিয়ে বললো, তোরা দেখ, আমার সঙ্গে ওর প্রায় দেখা হয়। ওর চ্যানেল আর আমার অফিস একই রাস্তায়। সপ্তাহখানেক আগেই তো দেখলাম, কোনো একজন হ্যান্ডু ডিরেক্টরের সঙ্গে রাস্তা পেরোচ্ছিলো। আমায় দেখে মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিমা করলো। কুণাল বর্ণিতাকে হাগ করে বললো, তুইই একমাত্র ফ্রিডম এনজয় করছিস বস। আমরা তো সংসারের দাসত্ব শিকার করে নিয়েছি।
বর্ণিতা আচমকা বলে উঠলো, এই রক্তিম ওই টিভির পাশের ছবিটা কার আঁকা রে?
কুণালটা বরাবরই রসিকতাপ্রিয়। তাই মুচকি হেসে বললো, টান বুঝলি টান। গুঞ্জা তো বাড়িটাকে এক্সবিশিন বানিয়ে ফেলেছে, এত ছবি চারিদিকে কিন্তু আমাদের বর্নির কিন্তু শকুনের নজর। ঠিক ছবিটাকে মার্ক করেছে দেখ। বর্ণিতা বললো, শকুনের নজরটা কি টাইপের কথা রে? এই নাকি তোরা সব সংসারী, সন্তানের বাবা, এত ডায়লগ ঝাড়ছিলি! রক্তিম হেসে বললো, বন্ধুদের মধ্যেও যদি দুটো ভদ্রসুলভ কথা না বলা যায় তাহলে তো পেট ফেটে মরে যাব রে। গুঞ্জা কফির কাপগুলো নামিয়ে রেখে বললো, ওটার দাম পঁচিশ হাজার টাকা। বন্ধু বলে নাকি পাঁচ হাজার কম নিয়েছে ছোটলোক অব্যয়টা। বর্ণিতা উঠে দাঁড়িয়ে ধীর পায়ে ছবিটার একেবারে কাছে গিয়ে বললো, এটা অব্যয়ের আঁকা? ছবিটা একটু নামিয়ে দিবি? আমি একটু হাতে নিয়ে দেখবো, প্লিজ।
স্বর্ণদীপ দেওয়াল থেকে ছবিটা নামাতে নামাতে বললো, বর্নি তোর দুর্বলতাটা এখনও কাটলো না অব্যয়ের প্রতি। তোকে একটা কথা বলি, অব্যয় কিন্তু কাউকে ভালোবাসে না নিজেকে ছাড়া। এই তো বছরখানেক আগে অব্যয়ের বাবার সঙ্গে দেখা হয়েছিল, আঙ্কেল বললেন ওনাদের সঙ্গেও সেভাবে যোগাযোগ রাখেনি অব্যয়। আসলে কি জানিস বর্নি, কিছু কিছু ফুল আছে দূর থেকে যার সৌন্দর্য উপভোগ করাই ভালো, হাতে নিয়ে গন্ধ শুকবো বা পুজোর উপাচারে লাগাবো এমন নয় বুঝলি! অব্যয়ের ব্যক্তিত্বটাও ঠিক সেরকম আকর্ষণ করবে সকলকে, সবাই চাইবে ওর সান্নিধ্য পেতে কিন্তু ঘন্টাখানেক অব্যয়ের সঙ্গে কাটালে তার ফুসফুসে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাবে, সে হাঁসফাঁস করবে, ভুগবে আত্মবিশ্বাসহীনতায়। কারণ কি জানিস? অব্যয়ের ব্যক্তিত্বের কাছে ফিকে হয়ে যাবে সেই মানুষটা, তারপর সে নিজেকে ভয়ানক ব্যর্থ ভাবতে শুরু করবে। তাই আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, প্রফেসর অব্যয় বিশ্বাস, আর্টিস্ট অব্যয় বিশ্বাস আমাদের সহপাঠী ছিলেন বলাটাই শ্রেয়, বন্ধু বলাটাও বোধহয় সমীচীন নয়।
রক্তিম বললো, এটা তুই ঠিক বলছিস না স্বর্ণ, অব্যয় আমাদের আজও বন্ধু ভাবে, তাই ওর এক্সিবিশনে মনে করে আমাদের ইনভাইট করেছিলো। স্বর্ণদীপ বললো, তাই কি? নাকি সহপাঠীদের নিজের উচ্চতা মাপার জন্য ডেকেছিলো। যাকগে তোরা ওকে বন্ধু ভাবলেও আমি ভাবি না। তাই বর্নিকে বলবো, এসব মোহ ত্যাগ করে শুরু করার বয়েস থাকতে থাকতে শুরু করাই ভালো। নাহলে একটা সময়ে একাকীত্ব গ্রাস করবে। আর ভুল চয়েসে যে কি হয় সেটার উদাহরণ তো তোদের সামনে বিদ্যমান। বর্ণিতা জানে স্বর্ণদীপের ওর প্রতি একটা দুর্বলতা ছিলই। বিয়ে করেছিল স্বর্ণদীপ, কি সব মনোমালিন্যর কারণে ডিভোর্স হয়ে গেছে বছর দুই আগে। আপাতত জীবনের প্রতি একটু বীতশ্রদ্ধ। বর্ণিতার হাতে ফ্রেমটা ধরিয়ে দিয়ে বললো, মরীচিকাকেও কখনো কখনো মানুষ বিশ্বাস করে, তাই না বর্নি? বর্ণিতা ছবিটার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। পাখিগুলোর ডানা ঝাপটানি দেখছিল হাঁ করে।
গুঞ্জা বললো, জানিস বর্নি, যে যাই বলুক, আমার কেন জানি না মনে হয় তুই যদি অব্যয়ের দায়িত্ব নিতিস তাহলে আজ এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। আমার তো দৃঢ় ধারণা অব্যয় ডিপ্রেশনে ভুগছিলো। আমি এক্সিবিশনের দিন রক্তিমকেও বলেছিলাম, অব্যয়ের মুখে স্বতঃস্ফূর্ততার অভাব ছিলো। রক্তিম সেদিন হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলো, সেলিব্রিটি হয়ে গেলে অমন গাম্ভীর্য ধরে রাখতে হয়। কলেজের মত ছ্যাবলামী করলে চলবে না। বিশ্বাস কর বর্নি, গাম্ভীর্য নয়, কেমন একটা অদ্ভুত রকমের ভীতু চাউনি দেখেছিলাম আমি ওর চোখে। ভয়ে ভয়ে তাকাচ্ছিল জানিস!
বর্ণিতা মোবাইল বের করে খান কয়েক ছবি তুললো ফ্রেমটার। স্বর্ণদীপ ফিসফিস করে বললো, জানিস তো অব্যয় নাকি কোনো প্রস্টিটিউটের কাছে যেত। শুধু রংতুলির প্রতি ভালোবাসা ছিল এমন নয় কিন্তু। বর্ণিতার চোখ দুটো নিষ্প্রভ হয়ে গেল ক্ষণিকের জন্য। কুণাল ব্যাপারটাকে একটু সহজ করার জন্য বললো, আমার তো মনে হয় অব্যয় কোথাও নিজের ইচ্ছেতে হারিয়ে গেছে কদিনের জন্য। শিল্পীদের এমন নীরবতা দরকার হয়। ওর কলেজের কলিগদের বেশি বাড়াবাড়ি, একেবারে মিসিং ডায়রি করে দিলো থানায় গিয়ে।
কুণালের কথার রেশ ধরে রক্তিম বললো, একলা থাকা আর একলা ভাবার অভ্যেসটা তো অব্যয়ের নতুন নয়। তাই হয়তো কোথায় চলে গেছে কদিন একলা কাটাবে বলে। আরেকটা কথা তো তোরা ভাবছিস না, ওর কলেজ কলিগরা দায়িত্ব নিয়ে নিজেদের ঘাড় থেকে সব নামিয়ে দেবার জন্যই সাত তাড়াতাড়ি মিসিং ডায়রি করে এসেছে, সঙ্গে আমাদের কলেজ বন্ধুদের ব্যাচের নামটাও দিয়ে এসেছে। কুণাল বললো, আরে সেদিন এক্সিবিশনে ওর কলেজের ওই উর্মি না কি নাম মহিলা আমাদের সকলের সঙ্গে উপযাচিত হয়ে পরিচয় করলেন না? উনিই এই কাজটি করেছেন। বর্নি অব্যয়ের কলেজে যেত তাই ওর নামটা নির্দ্বিধায় তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। গুঞ্জা ফিসফ্রাই আর সেকেন্ড রাউন্ড কফি টেবিলে রাখতে রাখতে বললো, তাহলে কি হবে এখন? মানে অব্যয় যতদিন না ফিরে আসছে ততদিন পুলিশ আসবে আমাদের তুলোধনা করতে? এটা কোনো যুক্তি হলো? আরে কলেজে এক ব্যাচে পড়লেই কি আমরা অব্যয়ের ভিতরের সব খবর জানবো? কমপ্লেক্সে রোজ রোজ পুলিশ ঢুকলে কিন্তু সম্মানটুকু অবশিষ্ট থাকবে না।
লগ্নজিতা ভট্টাচার্য কিন্তু সাধারণ পুলিশ অফিসার নয় রে। এই দেখ ওনার নামে অনেকগুলো খবর পড়লাম। প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ কেসের সমাধান করেছেন উনি। কলকাতায় ডিস্কোঠেকে মধ্যরাতে মদ্যপানরত অবস্থায় যে কুড়ি বছরের মেয়েটা মারা গিয়েছিলো তার খুনিদের হদিস বের করেছিলেন এই মহিলা। আবার ওই যে খবরের কাগজ বিক্রেতা ছেলেটা ড্রেনের ধারে পড়েছিলো তাকে কে বা কারা কেন খুন করেছিল সেটার ইনভেস্টিগেশনও করেছেন লগ্নজিতা। এর ইনভেস্টিগেশনের পদ্ধতিই হচ্ছে সন্দেহভাজনদের সঙ্গে গল্পের ছলে বারবার কথা বলা। ভেবে দেখ, কি বিপদ।
স্বর্ণদীপ রাগত স্বরে বললো, ভাটের বন্ধুর জন্য এই বয়সে এসে সম্মানহানি হবে নাকি বে। অব্যয় কবেই আমার ভালো বন্ধু ছিল জানি না রে। ও তো চিরকালের স্বার্থপর। নিজেরটুকু নিয়েই ছিলো। তাছাড়া ওর বাবা,মা, দাদা ফুল ফ্যামিলি ওর সঙ্গে যোগাযোগ অস্বীকার করেছে, সেখানে আমরা কেন হ্যারাস হবো রে ওর জন্য? গুঞ্জা একটু ভয়ে ভয়েই বললো, আবার লাবণ্য নামের কোনো প্রস্টিটিউট নাকি সুইসাইড করেছে না খুন হয়েছে তার সঙ্গে নাকি অব্যয়ের যোগ ছিল। অব্যয় তো মেয়েদের পাত্তাই দিতো না কোনোদিন। তাহলে হঠাৎ লাবণ্য কেন?
কুণাল কফিতে চুমুক দিয়ে বললো, এই যে কারণে ভরদুপুরে আমরা কফি খাচ্ছি সে কারণে নয় মনে হয়, বরং সকালের চায়ের মত নেসেসরি বলেই যোগাযোগ তৈরি করেছিলো। বর্ণিতা ফিসফিস করে বললো, অব্যয় তার মানে ভালোবাসতে জানতো কি বলো? কুণাল রেগে গিয়ে বললো, তোর বুঝি তাই মনে হলো? কোন অ্যাঙ্গেল থেকে মানুষ ভালোবাসার জন্য ওইসব জায়গায় যায় বলবি? ভালোবাসা নয় বস, বললাম না ভালোবেসে ভরদুপুরে কফি নয় বেডটি না হলে পটি ক্লিয়ার হবে না, তাই গেছে।
রক্তিম বললো, শারীরিক চাহিদা ভাবাটাই স্বাভাবিক কিন্তু মানুষটা যেহেতু অব্যয় তাই একটি কনফিউশনে আছি রে।
বর্ণিতা অন্যমনস্কভাবে ছবিটার দিকে তাকিয়েছিল, গুঞ্জা বললো, এসব বাদ দে তোরা প্লিজ। অব্যয়কে মারাত্মকভাবে ফাঁসানো হচ্ছে এটাও তো হতে পারে। বর্ণিতা বললো, আমার তা মনে হয় না রে। স্বর্ণদীপ বিস্ময়ে ফিরে তাকালো বর্নির দিকে। আজ অবধি অব্যয়ের নামে কোনোরকম নেগেটিভ রিভিউ ও দেখেনি। স্বর্ণদীপের বহুবার মনে হয়েছে চিৎকার করে বলে, এই বর্নি, কি কারণে অব্যয়কে তুই পাগলের মত ভালোবাসিস রে? কি আছে ছেলেটার মধ্যে। তুই এত ভালোবাসিস জেনেও যে ছেলে তোকে শুধু বন্ধুত্ব নামক সম্পর্কের মধ্যেই আটকে রাখতে চাইলো তার জন্য কেন এতকাল অপেক্ষা করে আছিস তুই? কিন্তু বলা হয়নি কোনোদিন। বলা হয়নি, বর্ণিতা আমি তোকে বড্ড ভালোবাসি। অব্যয়ের মত ব্যক্তিত্ব হয়তো আমার নেই, তবুও ভালোবাসি প্রাণ দিয়ে। বলা হয়নি কারণ বর্নি অব্যয়ের নামে কোনোরকম নেগেটিভ কথা শুনতে প্রস্তুত ছিল না কোনোদিন। তাই আজ বর্নির বলা কথাটা শুনে নিজের কানকেও যেন বিশ্বাস করতে পারছে না স্বর্ণদীপ।
বর্ণিতা রিপিট করলো, আমার মনে হয় না ওকে কেউ ফাঁসাচ্ছে। ওর কলিগরা চিন্তিত হয়েই হয়তো মিসিং ডায়রি করেছে। লগ্নজিতা ম্যাডামের সঙ্গে কথা বলে আমি এটুকু বুঝতে পেরেছি এই লাবণ্য নামক মহিলার সঙ্গে ওর যোগাযোগ ছিলো। কেন যোগাযোগ ছিলো সেটা আমি জানি না। আর অব্যয়কে জোর করে কেউ কোনো মহিলার বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবে না এটুকু আমার স্থির বিশ্বাস। ইনফ্যাক্ট অব্যয়কে জোর করে কেউই কিছু করাতে পারবে না। তাই কুণালের কথাই সত্যি, ও স্বেচ্ছায় যেত। লাবণ্য খুনের মামলায় ও জড়িত নয় হয়তো, তবে অব্যয় মিসিং নয়, কোনো কারণে ও গা ঢাকা দিয়েছে। হয়তো অন্তরালে থাকাটা প্রয়োজন ছিল ওর তাই।
.
রক্তিম জোরে নিশ্বাস ফেলে বললো, তুই এতটা নিশ্চিত কি করে হচ্ছিস যে অব্যয় গা ঢাকা দিয়েছে। হয়তো আঁকার প্রয়োজনে একলা থাকার প্রয়োজন হয়েছিলো, তাই শহর ছেড়ে দূরে গেছে কয়েকটা দিনের জন্য। বর্ণিতা বললো, ও দোকা কোথায় রক্তিম? ও তো একাই থাকে। ও কোথাও গেলে কাউকে তো জবাবদিহি করতে হয় না রে। অফিসার বললেন, ও নাকি ওদের দমদমের ফ্ল্যাটে আর থাকেও না। ইনফ্যাক্ট ওর বাবা-মায়ের সঙ্গেও ভালোমত সম্পর্ক রাখেনি। তাহলে? কোথাও গেলে কেন কলেজে লিভ নিয়ে যাবে না বলবি? আর আমি যতদূর ওকে চিনি ও নিজের কাজের ব্যাপারে ভীষণ রকমের সিনসিয়র। তারপরেও যখন উইদাউট লিভে চারদিন কলেজ যায়নি এবং ফোন সুইচড অফ রয়েছে তখন বুঝতে হবে ইচ্ছে করেই গা ঢাকা দিয়েছে। যাতে ওকে নোটিস করে পরিচিতরা। গুঞ্জা বললো, কিন্তু সেটা কেন বর্নি? বর্ণিতা কিছু বলার আগেই কুণাল বললো, শোন আমাদের ভাবনা ছাড়, এখন আমাদের যেটা করতে হবে সেটা হলো আমাদের পাঁচজনকেই একই কথা বলতে হবে অব্যয় সম্পর্কে। নাহলে অকারণে আমরা ফাঁসবো। অব্যয়ের সঙ্গে আমাদের লাস্ট মিট, ফোন কল এগুলো নিয়ে আলোচনা করে নিই চল। স্বর্ণদীপের ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা, যাক এতদিনে হলেও বর্নি অব্যয়ের আসল রূপটা নিজেই বুঝতে পেরেছে।
.