অব্যয়ের একাকীত্ব
বাবু সংসার পাতিস নি কেনে?
মিষ্টি সুরে কঞ্চির মত ছিপছিপে চেহারার মেয়েটা বললো। মেঝেতে আল্পনা এঁকে, মাটির কুঁজোর গায়ে আল্পনা আঁকছিলো মেয়েটা। অব্যয় এতক্ষণে ভালো করে তাকিয়ে দেখলো। বয়েস বড় জোর উনিশ। গায়ের শ্যামলা রঙে আলো পড়ে চিকচিক করছে। এক ঢাল চুলের ভারে পিঠে এলিয়ে পড়েছে ভারী খোঁপাটা। খোঁপার গোড়ায় গুঁজে রাখা পলাশের পাঁপড়িগুলো আদরে সোহাগে ঘাড়ের কাছের নরম চুলগুলোতে লুটোপাটি খাচ্ছে। যৌবন উপচে পড়ছে ওর গোটা শরীর জুড়ে। মুঠোর মধ্যে ধরতে পারা কোমর থেকে আচমকাই দৃষ্টি সরে গেলো ওর উদ্ধত স্তনের দিকে। অব্যয় অপলক চেয়ে ছিলো আদিম সৌন্দর্যের দিকে। ঠিক যেন বনপলাশীর ন্যাড়া পাহাড়ের মাথায় কচি সবুজ পাতায় ভরা গাছটা।
মেয়েটা বুকের কাছের লজ্জাবস্ত্রটা একটু টেনে নিয়ে বললো, বল না বাবু, সংসার পাতিসনি কেনে? বিয়া করিসনি কেনে?
অব্যয় জানে এ অঞ্চলে শহুরে বাবুদের বড্ড দুর্নাম। তারা দুদিনের জন্য বেড়াতে আসে, আর এদের মেয়েদের কৌমার্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। অনেকে আবার অভাবের তাড়নায় বেচেও দেয় নিজেকে। কেউ কেউ সরল বিশ্বাসে ভালোবাসা নামক কুহকিনীকে বিশ্বাস করে নিজেকে সম্পূর্ণ সমর্পণ করে দেয় শহুরে মানুষদের কাছে। বিশ্বাসভঙ্গ হয় যখন তারা ছুটি কাটিয়ে বখশিশ হাতে গুঁজে দিয়ে বলে, ভালো লাগলো তোদের বনপলাশী। তখন তরুণীর চোখের স্বপ্নভঙ্গ হয়। গোটা শরীর জুড়ে ভালোবাসার ছোঁয়াগুলো পরিণত হয় নেহাতই ঘৃণায়। তাই ইদানিং কোনো রিসর্টে এরা তেমন কাজ করতে চায় না।
অব্যয় বললো, তোমার নাম কি? মেয়েটা অকারণেই লজ্জা পেয়ে ফিক করে হেসে বললো, শিমুল।
অব্যয় ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো, পড়াশোনা করো না?
শিমুল ঠোঁট উল্টে আদুরে ঢঙে বললো, কি হবেক? খিদে মিটবেক নাই। শিমুল নিজের ছন্দে ওর হাতের কাজ সেরে চলে যাচ্ছিলো। যাওয়ার সময় অব্যয়ের দিকে তাকিয়ে বললো, বিয়া করে নিস, নাহলে একলা লাগবে বটেক।
চলে গেছে শিমুল। বাদশা হয়তো ওয়েট করছে অব্যয়ের জন্য। ওদের বনপলাশীর সান্ধ্য নৃত্য দেখতে নিয়ে যাবার জন্য। কিন্তু শিমুলের কথাটা শোনার পর অব্যয়ের মধ্যে অদ্ভুত একটা ভাঙার খেলা চলছে। যে একাকীত্বটাকে ও দিনরাত গালিগালাজ করে ওর থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে এত বছর, সেই একাকীত্বের অনুভূতিটা আচমকা জাঁকিয়ে বসতে চাইছে ওর মন জুড়ে। ঠিক এভাবেই লাবণ্যও বলেছিলো, সংসার পাততে মন চায় না? অব্যয় তুলিতে সোনালি রঙের টান দিয়ে বলেছিলো, হয়তো, কিন্তু বাঁধা পড়তে বড় ভয়। লাবণ্য, তোমার সংসারে আসক্তি আছে এখনো? লাবণ্য লাজুক হেসে বলেছিলো, পাইনি বলেই না রয়ে গেছে। সবে নুন তেলের কৌটোগুলো সাজিয়ে ছিলাম রান্নাঘরে। গ্যাসের আগুনে ফুট ধরেছিলো আউশ চালে, ঘরময় গরম ভাতের গন্ধে আমি সংসারী হবো হবো ভাবছি, তখনই তো হাতবদল হয়ে গেলাম। রাজেশ ঘটির বউ লাবণ্য থেকে সোজা হয়ে গেলাম দেহ….
ওকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই অব্যয় বলেছিলো, হয়ে গেলে নিজেই নিজের অভিভাবক। তাই তো?
লাবণ্য অপলক তাকিয়ে বলেছিলো, আপনি আমাকেও সম্মান করেন? ভাবতে বড্ড অবাক লাগে যে। অব্যয় ক্যানভাসে লাবণ্যের সোনার হরিণ রঙের আঁচলের ভাঁজে লজ্জাটুকুকে লুকিয়ে বলেছিলো, সম্মান করার মত সমস্ত গুণ যে তোমার আছে লাবণ্য, তাই করতে বাধ্য হই।
তথাকথিত সুন্দরী বা স্মার্ট কোনোটাই নয় লাবণ্য তবুও মেয়েটার মধ্যে অদ্ভুত একটা মায়া ছিলো। ওর পাশে দু-দণ্ড বসলে ক্লান্তি মিটতো। এমন মেয়ের সঙ্গেই কি জীবনানন্দের দেখা হয়েছিলো কোনো এক নাটোরে? এমন মেয়েকে দেখেই কি কবি লিখেছেন বনলতা সেন! হবে হয়তো। সংসারে বীতশ্রদ্ধ মানুষরা তো দু-দণ্ডের জন্য স্নেহের পরশ পেতেই ছুটে বেড়ায় আঙিনায় আঙিনায়। অব্যয়ও বোধহয় সেকারণেই লাবণ্যের সান্নিধ্যে এসে শান্তি পেতো। চাওয়া-পাওয়ার হিসেব নিকেশ নেই, ভবিষ্যৎ গড়ার পরিকল্পনা নেই, কোনো পার্থিব লোভে নয়, ওদের মেলামেশাটা নিতান্তই লাভক্ষতির হিসেব না করে নামহীন এগিয়ে যাওয়া।
বনপলাশীর নিভৃত পরিবেশে লাবণ্য নামটা যেন অব্যয়ের একলা বাঁচার উদ্যোগকে আরও বেশি করে একাকিত্বে ভরিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর।
ওর অবসর যাপনে বারবার এসে উপস্থিত হচ্ছে লাবণ্যের উপস্থিতি। ওর গায়ের জুঁইয়ের গন্ধটা যেন তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে অব্যয়কে। লাবণ্যের সঙ্গে কি ও অন্যায় করে ফেললো? মারাত্মক অন্যায়? তাই কি লাবণ্য এভাবে নিজেকে সরিয়ে নিলো?
লাবণ্যর মৃত্যুর খবরটা অব্যয় কাগজেই পড়েছিলো। একমুহূর্ত দেরি না করে কলকাতা ছেড়েছিলো ও। খুব ভালো করে জানতো পুলিশের টিকটিকিটা ওকে দেখেছে ঐদিন বেরোতে। হয়তো এখন পুলিশ ওকে খুঁজছে। লাবণ্য কি সুইসাইড করেছে নাকি খুন হয়েছে? কে খুন করতে পারে ওকে! ভাবনার অতলে তলিয়ে যাবার আগেই বাদশা ডাকলো, আসুন।
অব্যয় রেডি হয়ে গিয়ে বসলো রিসর্ট থেকে একটু দূরে, টিলার মাথায়। মাঝে আগুন জ্বলছে। সেই আগুনকে ঘিরেই এরা শুরু করবে নাচ। তার প্রস্তুতি চলছে। পাশে বেশ কিছু বেতের চেয়ারে বসে আছে কিছু পর্যটক। গলায় ক্যামেরা দেখলেই বোঝা যায় এই ভ্রমণপ্রিয় বাঙালিকে। মধ্যবিত্ত ছাপোষা বাঙালিও বেড়াতে বেরোলে শিল্পী হয়ে ওঠে। নিজেকে রঘু রায় বা প্রবুদ্ধ দাশগুপ্ত ভেবে বেপরোয়া ছবি তোলে সূর্য অস্তাচলের বা উদয়ের। ব্যাপারটা অব্যয়ের মোটেই খারাপ লাগে না। দশটা পাঁচটার জীবন থেকে বেরিয়ে এই যে দু-দিনের ফটোগ্রাফার হয়ে ওঠার ইচ্ছেটাকে লালন করে বাঙালি নিজের মনের মধ্যে, এই জন্যই তো মধ্যবিত্ত বাঙালির মধ্যে থেকে আচমকা বেরিয়ে আসে প্রতিভাগুলো।
সামনের পাঁচটা চেয়ার ছেড়ে পিছনের দিকেই বসলো অব্যয়। নিজের ক্যামেরাটা রেডি করে রাখলো। বিভিন্ন ভঙ্গিমায় ছবি তুলে নিয়ে যাবে ও। তারপর তাদের নিজের রং তুলিতে স্থান দেবে। বনপলাশীর বাহ্যিক সৌন্দর্য একটা কেন দশটা অ্যালবাম দাবি করে।
মাদলে দু-চারটে চাঁটি পড়েছে। এইবার শুরু হবে শুরু হবে একটা পরিবেশ। আগুনের শিখাকে আরেকটু উস্কে দেবার জন্যই কেউ একজন চেলা কাঠ ভরে দিলো উনুনে। ঠিক উনুন নয় আবার ফায়ারপ্লেসের মত আভিজাত্যও নেই, চার চৌকো বাঁধানো জায়গার ভিতরে আগুনের লেলিহান শিখা। আদিবাসী কন্যার হলদে শাড়ির মতই তার তেজ।
মাদল বাজতে শুরু করেছে। ঠিক সেই সময় অব্যয় খেয়াল করলো মাত্র একটা চেয়ার দূরে যে মানুষটা বসে ছবি তোলায় নিমগ্ন তাকে অব্যয় চেনে। হ্যাঁ খুব ভালো করে চেনে। ব্রাউন কালারের একটা গরম ওভারকোটের মধ্যে নিজেকে ঢাকলেও অব্যয়ের শিল্পীর নজরকে ফাঁকি দেওয়া মোটেই সহজ কাজ নয়। লোকটা কি অব্যয়ের পিছু নিয়েছে? নাকি নিজের কাজে এসেছে! নাকি আপনমনে থাকবে বলে এসেছে? গোটা তিনেক প্রশ্নের অস্বস্তি মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেয়ে গেলো। ওদিকে ওই আগুনকে ঘিরে শুরু হয়ে গেছে বনপলাশীর বিখ্যাত সান্ধ্য নৃত্য।
.
হিন্দুর দেবী দুর্গাকে আদিবাসীদের একাংশ খলনায়িকা বলে মনে করেন। তাঁদের বিশ্বাস, তাঁরা মহিষাসুরের বংশধর। আর্য-অনার্য সংঘাতের সময় ছলনাময়ী দুর্গা মহিষাসুরকে অন্যায়ভাবে বধ করেছিলেন। রাজার মৃত্যুর পর আদিবাসীরা দেবতাদের (আর্যদের) ভয়ে ভীত হয়ে মহিলাদের কাপড় পরে, আনন্দের অভিনয় করতে করতে জঙ্গলে পালিয়ে আসেন। সেই সময়ের স্মৃতি ধরে রাখতে সাঁওতালদের একাংশ পুজোর সময় মেয়েদের পোশাক পরে মাথায় ময়ূর পালক গুঁজে গান করেন। গানের কথায় থাকে মহিষাসুর বধ পরবর্তী তাঁদের দুর্দশার কথা। বিজয়া দশমীর সময় গ্রামে, শহরে দাসাই নাচ করেন তাঁরা। এর নাম দুখ দাসাই। এই দুখ দাসাইকেই শীতকালের সন্ধেতে এরা অন্য রূপে পরিবেশন করে থাকেন। এখানে ছেলেরা আর মহিলা সাজে না। রীতিমত মরদ সাজে। একটা করে মেয়ের পিছনে থাকে একজন করে পুরুষ। নাচের মাধ্যমে চলে যৌবনের পুজো।
ওদের নাচে শরীরী ভঙ্গিমা যৌন আবেদনে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। হিমেল সন্ধেতে ফায়ারপ্লেসের আগুন ছড়িয়ে যায় দেহ মনে।
অব্যয় বিভোর হয়ে দেখছিলো ওদের নৃত্য। একদল চলে গেলো দাসাই নাচের তালে। আরেকদল এলো, এই দলে ওর ঘরে বিকেলে আল্পনা দেওয়া শিমুলও আছে। মেয়েটাকে সম্পূর্ণ অন্যরকম লাগছে এখন।
‘জারিয়ালি’ নামেও একপ্রকার নাচের প্রচলন আছে এখানে। গারোদের মধ্যে গাছ থেকে ফল পাড়ার কৌশলকে এ নাচে রূপান্তরিত করা হয়েছে। এমনকি পায়রা কেমন করে খাবার সংগ্রহ করে, কেমন করে পরস্পরকে খাওয়ায়, কেমন করে প্রেমময় মুহূর্তে পরস্পরকে আদর করে, তাও নৃত্যের মাধ্যমে প্রদর্শিত হয়।
শিমুলের দু-চারটে ছবি তুললো অব্যয়। মেয়েটার চোখ দুটো বড্ড আপন মনে হয়। মনে হয় কত দিনের চেনা। পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে ক্রমাগত। অব্যয় চোখে চোখে রেখেছে ব্রাউন ওভারকোট পরে বসে থাকা অতিপরিচিত চেহারাটাকে।
শিমুলদের দল চলে যেতেই ব্রাউন ওভারকোট উঠে দাঁড়ালো। অব্যয়ও ভিড়ের মাঝে বাদশাকে খুঁজে পেলো না। পিছন থেকে চেনা মানুষটাকে নিশ্চিত করার জন্যই নাচ দেখার মায়া কাটিয়ে অব্যয় পিছু নিলো। উচুঁনিচু রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলো অব্যয়। ওর ঠিক দু-পা আগে আগেই হাঁটছে মানুষটা।
অপরিচিত পথে কেউই খুব জোরে জোরে হাঁটতে পারছে না। তাই মানুষটা পিছন ঘুরলেই যে অব্যয়কে দেখতে পাবে সে ব্যাপারে ও নিশ্চিত। তবুও লোকটা কোথায় যাচ্ছে এটা জানতেই হবে।
‘রংবেরং’ রিসর্টের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ঘুরে তাকালো মানুষটা। অব্যয়ের ভুল হয়নি।
রাধারমণ মুখুজ্জে চোখে চোখ রেখে বললো, আমাকে ফলো করে বনপলাশীতে এসেছো? কিন্তু প্রফেসর, তোমাকেও যে লগ্নজিতা ভট্টাচার্য খুঁজছে! কারণ লাবণ্যের মৃত্যুর দিনে তুমিও বোধহয় সকালের দিকে গিয়েছিলে রানীভবনে, তাই না? আর লাবণ্যের সঙ্গে আশনাই তো তোমারই বেশি ছিলো, তাই না প্রফেসর! তাহলে আর এই গরীব ছবি আঁকিয়ের পিছনে ঘুরঘুর করে লাভ কি?
অব্যয় হাসিমুখে বললো, কিন্তু মুখুজ্জে মশাই, লাবণ্য যে বলেছিলো, আপনি কদিন আগেও এসে ওকে হুমকি দিয়ে গিয়েছিলেন। প্রাণে মেরে ফেলবার হুমকি। রাধারমণ মুখুজ্জে ভ্রু কুঁচকে বললো, কদিন আগে তো লাবণ্য মরেনি, মরেছে সেদিন। যেদিন সকালে তুমি বেরিয়ে গিয়েছিলে ওর ঘর থেকে।
অব্যয়ের পিঠ দিয়ে শীতল রক্তকণিকারা দ্রুতগামী হলো। অব্যয় জানে রাধারমণ মুখুজ্জে দেখতে এমন ভবঘুরের বাউল টাইপ হলে কি হবে ওর নেটওয়ার্ক মারাত্মক। আর নামের লোভও কিছু কম নেই।
আসল কথাটা একমাত্র রাধারমণ মুখুজ্জে জানে। যদি সেটা পুলিশকে বলে দেয়, তাহলে অব্যয় ফেঁসে যাবে কারণ সাক্ষী দেবার জন্য লাবণ্য নেই এখন।
রাধারমণ বললো, কি হে আর্টিস্ট, অ্যালিবাই কিছু রেখেছিলে ও বাড়িতে? অথচ আমি রেখে এসেছিলাম। সেদিনই গোপালের হাতে দশটা টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলেছিলাম, ছাদটা ঝাঁট দিয়ে দিতে। ও ঝাঁট দেবার পরে ওর সামনেই নিজের ঘরে চাবি দিয়ে আমি বেরিয়ে এসেছিলাম। গোপাল নিশ্চয়ই পুলিশের কাছে বলবে সে কথা। লাবণ্যের মৃত্যুর আগেই আমি ও বাড়ি ছেড়েছিলাম, এটা গোপাল আর সাবিত্রী দুজনেই দেখেছে।
তোমার অ্যালিবাই তো আমি হে আর্টিস্ট। আমার কাছে মোটিভ অবধি ক্লিয়ার, কেন তুমি লাবণ্যকে মেরে ফেলেছো! আর সেই মোটিভটা লগ্নজিতা ভট্টাচার্যকে বললে মন্দ হয় না। লাবণ্যের আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে এটুকু করাটা বোধহয় আমার নাগরিক কর্তব্য। অন্তত সহভাড়াটে হিসেবেও এটুকু ডিজার্ভ করে মেয়েটা, কি বলো প্রফেসর?
স্থবিরের মত দাঁড়িয়ে আছে অব্যয়। লোকটাকে দেখে এতটা ভয়ানক কোনোদিনও মনে হয়নি অব্যয়ের। তবে লাবণ্য বারংবার বলতো, রাধারমণ মুখুজ্জে হলো বিষধর সাপ, যাকে দেখতে ঢোঁড়ার মত লাগলেও আসলে তা নয়। এই মুহূর্তে অব্যয় বুঝতে পারলো, লাবণ্যের কথাটা অক্ষরে অক্ষরে সত্যি।
অব্যয় জ্বলন্ত চোখে বললো, ভুলে যাচ্ছেন কেন, আপনার কিছু সিক্রেট আমিও যে জানি। লাবণ্যের ডায়রিটাতে ও কয়েকটা কথা লিখেও বোধহয় রেখেছিলো। সে ডায়রি যদি পুলিশ পায় তাহলে কি আপনিও ছাড় পাবেন মুখুজ্জে মশাই?
রাধারমণ কড়াভাবে তাকিয়ে ঢুকে গেলো রিসর্টের ভিতরে। যাওয়ার সময় বললো, দেখা যাক আমাদের মধ্যে বেইমানিটা কে করে? কে পুলিশকে আগে খবর দেয়।
জংলীতে ফিরে চেয়ারে বসে হাঁপাচ্ছিলো অব্যয়। মনে করার চেষ্টা করছিলো কে কে দেখেছে সেদিন রানীভবন থেকে ওকে বেরোতে বা ঢুকতে।