Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    গথ – অৎসুইশি

    কৌশিক জামান এক পাতা গল্প372 Mins Read0

    ১. মোরিনার সাথে শেষ দেখা

    গথ – অৎসুইশি / অনুবাদ: কৌশিক জামান / প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি ২০১৮

    অনুবাদকের বক্তব্য :

    ‘অৎসুইশি’ নামটাতেই কেমন জানি অশুভ অশুভ একটা ভাব আছে। সেরা

    জাপানি গৃলার লেখকদের তালিকায় অদ্ভুত নামটা তাই আলাদাভাবে আমার মনোযোগ কেড়েছিল। ইন্টারনেটে দেখলাম লেখকের সবকয়টি বইয়েরই রিভিউ ভালো কিন্তু বইগুলো সম্পর্কে সেভাবে বিস্তারিত কিছু পাওয়া গেল না। তারপর নানা কারনে এই লেখকের প্রতি আমার কৌতূহল বাড়তেই লাগল। মনে হচ্ছিল যেন ব্ল্যাকহোলের মত টানছে। পরিচিত সবখানে খুঁজলাম, কোথাও কোন বইও পেলাম না। ই-বুক পর্যন্ত পাচ্ছিলাম না! বাইরে থেকে বই আনাতে গিয়েও নানা রকমের কুফা লাগল। সেসব কাহিনী আর না বলি। সোজা কথা হলো, আমার জিদ চেপে গেল-যেভাবেই হোক এই লেখকের বই আমাকে পেতেই হবে। কী এত রহস্য তা জানতে হবে। অবশেষে অনেক ঝামেলা পর ‘গথ’-এর একটা ই-বুক পাওয়া গেল। কষ্ট কাজে দিল, খুবই ভালো লাগল বইটা পড়ে। হাতের অন্য কাজ ফেলে আগে ‘গথ’ অনুবাদ করলাম। আশা করি পাঠকদেরও ভাল লাগবে।

    আর প্রেমপুকে ধন্যবাদ বইটি সম্পাদনা করার জন্য। খালামনিকে বলেছিলাম একটা বই শুধু তার জন্য লেখা হবে, এই সেই বই (জানি না আদৌ পড়বে কিনা!)। সেঁজুতি কিছুদিন আগে মালয়শিয়া থেকে অৎসুইশির ‘জু’ বইটাও এনে দিলেন। শপ টু বিডি গ্রুপের ফয়সাল ভাই কানাডা থেকে এনে দিলেন ‘সামার, ফায়ারওয়ার্কস অ্যান্ড মাই কর। তাদের দুজনকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

    অবশেষে প্রকাশককে ধন্যবাদ সবসময় হাসিমুখে সব যন্ত্রণা সহ্য করার জন্য।

    কৌশিক জামান
    ঢাকা, ২০১৮

    ১

    তিন সপ্তাহ আগে মোরিনার সাথে আমার শেষ দেখা হয়। গরমের ছুটি চললেও সেদিন আমাদেরকে স্কুলে যেতে হয়েছিল।

    হোমরুম শুরু হওয়ার আগেই ক্লাসে ঢুকে সাথে সাথেই আমার ডেস্কের সামনে এসে দাঁড়াল।

    আমরা কখনোই হাই-হ্যালোর ধার ধারি না। মোরিনো পকেট থেকে একটা নোটবুক বের করে আমার ডেস্কের উপর রাখল। নোটবুকটা আমি আগে কখনো দেখিনি।

    জিনিসটা বেশ ছোট, হাতের তালুতে ভরে ফেলা যায়। বাদামি রঙের সিন্থেটিক লেদারে মোড়ানো-স্টেশনারির দোকানে এরকম নোটবুক সবসময়ই দেখা যায়।

    “দেখ কি খুঁজে পেয়েছি,” সে বলল। “এটা আমার না।”

    “জানি।” কথা শুনে মনে হলো ও মজা পাচ্ছিল।

    নোটবুকটা হাতে নিয়ে এর নকল চামড়ার মসৃণ কাভারের স্পর্শ অনুভব করলাম আমি। খুলে দেখতে লাগলাম ভেতরে কী আছে। নোটবুকের অর্ধেকটার মত ক্ষুদে অক্ষরে লেখা দিয়ে ভর্তি। শেষের অর্ধেকটা খালি।

    “গুরু থেকে পড়।”

    ওর কথা অনুসারে আমি পড়া শুরু করলাম। অপরিচিত হাতের লেখা। অনেকগুলো প্যারাগ্রাফ, দেখে মনে হচ্ছিল লিস্ট ধরে সাজানো।

    ***

    মে ১০

    স্টেশনের সামনে কুসুদা মিতসুই নামের একটা মেয়ের সাথে দেখা হলো। বয়স ষোল। ওর সাথে কথা বললাম। কিছুক্ষণ পরে ও আমার গাড়িতে চড়ে বসল।

    ওকে নিয়ে ট****উন্টেনে গেলাম।

    ও জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আমাকে বলল ওর মা নাকি খবরের কাগজের এডিটর কলামের চিঠিগুলোর জন্য পাগল।

    ট****ম্মাউন্টেনের একদম উপরে নিয়ে গাড়ি থামিয়ে ট্রাঙ্কের ভেতর থেকে ছুরি, পেরেক ভর্তি ব্যাগটা বের করলাম। ও হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করল ব্যাগে কী আছে।

    ***

    এভাবে ডায়েরির শুরু।

    কুসুদা মিতসুই নামটা আমি আগে দেখেছি…তিন মাস আগে, একটা পরিবার, স্বামী-স্ত্রী আর তাদের ছেলে, ট****ম্মাউন্টেনে হাইকিং করতে গিয়েছিল। ছেলেটার বাবা অনেকদিন পর ছুটি পাওয়ায় চূড়ায় পৌঁছেই চিৎপটাং হয়ে বিশ্রাম নিতে থাকে। ছেলেটা অনেক চেষ্টা করল বাবাকে তার সাথে খেলার জন্য কিন্তু লোকটা নড়লই না। সুতরাং লাঞ্চের পর ছেলেটা একা একাই বনের দিকটা ঘুরে দেখতে গেল।

    ছেলেটার মা প্রথম খেয়াল করলেন, সে আশেপাশে নেই। তারপর বন থেকে ভেসে আসা ভয়ার্ত চিৎকার শুনতে পেলেন।

    স্বামী-স্ত্রী দু-জনে ছুটে গেলেন বনের দিকে ছুটে গেলে ছেলেকে খুঁজে পেলেন সেখানে। সেখানে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছিল সে, দৃষ্টি সামনে, একটু উপরে কিছু একটার দিকে নিবদ্ধ।

    ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে স্বামী-স্ত্রী দেখতে পেলেন একটা গাছের গায়ে লালচে কালো রঙের নোংরা কিছু লেগে আছে। ছোটখাট কিন্তু অশুভ ধরনের কিছু, পেরেক দিয়ে গাছে লাগিয়ে রাখা হয়েছে। তারপর চারপাশে তাকিয়ে

    তারা দেখলেন আশেপাশের প্রায় সব গাছেই কিছু না কিছু ৫ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে…

    কুসুদা মিতসুইর শরীরের বিভিন্ন অংশ। কেউ তাকে বনে এনে টুকরো টুকরো করেছে। তারপর তার চোখ, জিহ্বা, কান দুটো, আঙুল, কাকি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ একটা একটা করে গাছগুলোতে পেরেক ঠুকে লাগিয়ে দিয়েছে।

    একটা গাছের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত মেয়েটার বাম-পায়ের বুড়ো আঙুল, উপরের ঠোঁট, নাক আর পাকস্থলি লাগানো। আরেকটা, ক্রিসমাস ট্রি’র মত করে সাজানো ছিল।

    সাথে সাথেই এই বিভৎস খুনের ঘটনা সারা দেশের মূল আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়াল।

    মোরিনোর পাওয়া নোটবুকে বিস্তারিত লেখা ছিল-কিভাবে কুসুদা মিতসুইকে খুন করা হয়েছিল, কোন অঙ্গ কোন গাছে পেরেক মেরে লাগানো হয়েছিল, কী ধরনের পেরেক ব্যবহার করা হয়েছিল ইত্যাদি। কিন্তু লেখার মধ্যে লেখকের মানবিক অনুভুতির কোন বহিঃপ্রকাশ ছিল না।

    কেসটার যাবতিয় সব খোঁজ খবর সংগ্রহে রাখছিলাম আমি। সেটা টিভিতে, খবরের কাগজ কিংবা ম্যাগাজিন, অথবা ইন্টারনেটে যেখানেই হোক। তাই প্রায় সবকিছুই আমার জানা ছিল। কিন্তু এই নোটবুকে যেভাবে বর্ণনা দেয়া সেটা আর কোথাও দেখিনি।

    “আমার ধারণা মেয়েটাকে যে খুন করেছে, নোটবুকটা তার।”

    পাশের বিভাগের একটা হাই স্কুলের ছাত্র ছিল কুসুদা মিতসুই। তাকে শেষ দেখা গিয়েছে স্টেশনের সামনে বন্ধুদের গুডবাই জানাতে। আর ও ছিল লোমহর্ষক খুনগুলোর মধ্যে প্রথম শিকার। এরকম আরো একটা কেস আছে, সেটার সাথে প্রচুর মিল আছে এটার। অনেকে বলে দুটোই একই সিরিয়াল কিলারের কাজ।

    “ও দ্বিতীয় খুনটা সম্পর্কেও লিখেছে।”

    ***

    জুন ২১

    শপিং ব্যাগ হাতে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকা এক মেয়ের সাথে কথা বললাম। সে জানাল তার নাম নাকানিসি কাসুমি।

    আমি তাকে বাসায় লিফট দিতে চাইলাম।

    হ***মাউন্টেনে যাওয়ার পথে সে খেয়াল করল আমরা ওর বাসায় যাওয়ার রাস্তা থেকে সরে এসেছি। তারপরই চিল্লাচিল্লি শুরু করল।

    গাড়ি থামিয়ে ও চুপ না করা পর্যন্ত হাতুড়ি দিয়ে বাড়ি মারতে থাকলাম আমি।

    হ*** মাউন্টেনের একটা কুঁড়ে ঘ রে রেখে আসলাম ওকে।

    ***

    গত মাসে দেশের সবাই নাকানিসি কাসুমি নামে কারিগরি স্কুল পড়ুয়া একজন ছাত্রির কথা জানতে পারে। খবরের কাগজ আর চ্যানেলগুলো সাথে সাথে খবরটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে সে। ঐ দিন এমনকি স্কুল থেকে ফেরার আগেই আমি এই দ্বিতীয় শিকারের খবর পেয়ে যাই।

    হ***মাউন্টেনের উপর একটা কুঁড়ে ঘরে মেয়েটাকে পাওয়া যায়। অনেকদিন ধরেই জায়গাটা পরিত্যাক্ত ছিল, মালিক কে তা জানা যায়নি। বৃষ্টিতে কুঁড়ে ঘরটার বারোটা বেজে গিয়েছিল। প্রায় দশ ফুট চওড়া ঘরটার দেয়াল আর মেঝেটা কাঠ দিয়ে তৈরি।

    একজন বুড়ো লোক পাহাড়ে গিয়েছিল খাবার সংগ্রহ করতে। সে খেয়াল করল কুঁড়ে ঘরের দরজাটা খোলা। সবসময় সেটাকে বন্ধ দেখেছে। তাই অবাক হয়ে কাছে যেতেই বিকট এক দুর্গন্ধ এসে লাগে তার নাকে।

    কুঁড়ের ভেতরে উঁকি দিয়ে প্রথমে সে বুঝতে পারেনি আসলে কী দেখেছে। আগের শিকারের মতই নাকানিসি কাসুমির শরীরকে কেটে টুকরো টুকরো করে যত্নের সাথে কাঠের মেঝেতে দশ বাই দশ ছকে সাজিয়ে রাখা হয়েছিল সারি সারি করে। প্রতিটি টুকরোর মধ্যে দূরত্ব ছিল দশ সেন্টিমিটারের মত। মেয়েটাকে প্রায় একশ টুকরোতে রূপান্তর করা হয়েছিল।

    এই নোটবুকে সেটার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া আছে।

    দুটো খুনেরই কোন প্রত্যক্ষদর্শি পাওয়া যায়নি। এখন পর্যন্ত খুনিও ধরা পড়েনি। মিডিয়া আজো খুন দুটো নিয়ে নিউজ করে যাচ্ছে। কোনো সিরিয়াল কিলারের বিভৎস কার্যকলাপ বলে চালানো হচ্ছে এগুলোকে।

    “এই কেসের খবর দেখতে আমার ভালো লাগে।”

    “কেন?”

    “অদ্ভুত একটা কেস,” মোরিনো নীরস গলায় বলল।

    আমিও একই কারনে খবর দেখতাম, তাই মোরিনো কি বোঝাতে চেয়েছিল তা পরিস্কার বুঝতে পারছিলাম।

    কিছু মানুষ খুন হয়েছে-কেটে টুকরো টুকরো করা হয়েছে তাদের। যাদেরকে করা হয়েছে আর যারা তাদেরকে এরকম করেছে উভয়েই সত্যিকারের রক্তমাংসের মানুষ।

    মোরিনো আর আমার এসব উভট বিভৎস বিষয়ের প্রতি অন্যরকম একটা আগ্রহ রয়েছে। আমরা সবসময় এমন কিছু খুঁজি যার মধ্যে জঘন্য খারাপ কিছু পাওয়া যায়, এমন কিছু যা জানার পর গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়তে ইচ্ছা হয়। অবশ্য এরকম অদ্ভুত আগ্রহ নিয়ে আমরা কখনো খোলাখুলি কথা বলিনি। কোন কিছু না বলেই আমরা একজন আরেকজনের মধ্যে অস্বাভাবিক ব্যাপারটার উপস্থিতি টের পেয়েছি।

    আমি জানি আমাদের এসব কথা সাধারণ মানুষ জানলে আতংকিত হয়ে পড়বে। এধরনের আচরণ অনেকটাই অস্বাভাবিক। তাই আমরা যখন কোন টর্চার প্রক্রিয়া বা খুনের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করি তখন গলার স্বর নিচু রাখি।

    নোটবুক থেকে মুখ তুলে দেখি মোরিনো জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। আমি নিশ্চিত ও নির্ঘাত নাকানিসি কাসুমির শরীরের অংশ মেঝেতে পড়ে থাকার দৃশ্য কল্পনা করছিল।

    “কোথায় পেয়েছে এই জিনিস?” আমি জানতে চাইলাম। বিস্তারিত জানাল সে।

    আগের দিন বিকেলে মোরিনো ওর প্রিয় কফি শপে বসেছিল। জায়গাটা অন্ধকার, চুপচাপ আর কফি মাস্টারও কখনো টু শব্দ করে না।

    মোরিনো কফি খেতে খেতে ‘পৃথিবীর নিষ্ঠুর গল্প সমগ্র’-এর পাতা ওল্টাচ্ছিল। এমন সময় শব্দ শুনে বাইরে তাকিয়ে দেখে জোরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে।

    কয়েকজন কাস্টমার বেরিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল কিন্তু বৃষ্টি দেখে আবার বসে পড়ল তারা। বৃষ্টি থামার জন্য অপেক্ষায় থাকা এইসব লোজনসহ ওকে নিয়ে সেখানে মোট পাঁচজন কাস্টমার ছিল।

    মোরিনো বাথরুমে যাওয়ার জন্য উঠলে পায়ের তলায় অদ্ভুত কিছুর একটা উপস্থিতি অনুভব করে তাকিয়ে দেখে দোকানের কাঠের মেঝের উপর একটা নোটবুক পড়ে আছে। নোটবুকটা তুলে ও পকেটে ভরে ফেলে। একবারও নোটবুকটা কার হতে পারে সেটা খোঁজ নেয়ার কথা ওর মাথায় আসেনি।

    বাথরুম থেকে ফিরে দেখে অন্য কাস্টমাররা কেউই বের হয়নি, বসে বসে বৃষ্টি দেখছে।

    বৃষ্টি থামলে আবার দেখা পাওয়া গেল সূর্যের। সূর্যের উষ্ণ আলোয় শিগগিরি রাস্তাঘাট শুকিয়ে গেল। কয়েকজন কাস্টমার বেরিয়ে গেল কফিশপ থেকে।

    বাসায় ফেরার পর মারিনোর মনে পড়ল নোটবুকটার কথা। পকেট থেকে বের করে পড়তে শুরু করল সে।

    “আমি দুবার বাথরুমে গিয়েছিলাম। প্রথমবার নোটবুকটা ওখানে ছিল। বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর কাস্টমাররা ভেতরে আটকা পড়ে। দ্বিতীয়বার বাথরুমে যাওয়ার সময় নোটবুকটা পাই। এর অর্থ হলো, খুনি তখন কফি শপের ভেতর ছিল। ধারে কাছেই কোথাও থাকে সে।” বুকের সামনে দুহাত ভাঁজ করে বলল।

    আমরা যেখানে থাকি তার থেকে দু-তিন ঘন্টার দূরত্বে লাশ দুটো পাওয়া গিয়েছে। সুতরাং এখানে খুনির বাস করা অসম্ভব কিছু নয়। তবু কেন জানি ব্যাপারটা মেনে নিতে ইচ্ছা হচ্ছিল না।

    এই কেস নিয়ে হয়তো বছরের পর বছর কথা চলবে। রহস্যের সমাধান হলেও ভয়াবহ বিভৎসতার কারনে ব্যাপারটা পরিস্কার। পুরো দেশের সবাই এই নিয়ে কথা বলছে-এমনকি বাচ্চারাও এই কাহিনী জানে। যে কারনে খুনি ধারে কাছে কোথাও থাকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল।

    “এমনও তো হতে পারে খবর দেখে কেউ কল্পনা করে লিখেছে?”

    “বাকিটা পড়, মোরিনো আত্মবিশ্বাসের সুরে বলল।

    ***

    আগস্ট ৫

    মিজুগুশি নানামি নামে একটা মেয়েকে রাইড দিলাম। স**** মাউন্টেনের কাছে একটা সোবা শপে তার সাথে পরিচয়।

    পাহাড়ের দক্ষিণ দিক দিয়ে উঠে আমরা বনের ভেতরের মঠে গেলাম। সে আমার সাথে বনের ভেতর গেল।

    ***

    নোটবুকের মালিক বনের ভেতর মিজুগুশি নানামি নামের একজনকে ছুরি দিয়ে পেটে কুপিয়েছে।

    নোটবুকে সে গিজগিজ হাতের লেখায় লিখেছে, কিভাবে শিকারের শরীর কাটা হয়েছে। কিভাবে সে তার চোখগুলো টেনে বের করে এনেছে, পেটের ভেতরের রঙ কিরকম ছিল, যাবতিয় বর্ণনা দেয়া আছে।

    সে মিজুগুশি নানামিকে বনের ভেতর ফেলে এসেছে।

    “তুমি কি এই মিজুগুশি নানামির নাম শুনেছ?” মোরিনো বলল।

    আমি মাথা নাড়লাম।

    মেয়েটার লাশ আবিস্কারের কোন খবর পাওয়া যায়নি এখনো।

    ২

    মোরিনোকে আমি খেয়াল করি দ্বিতীয় বর্ষ শুরুর পর। আমরা একই ক্লাসে ছিলাম। প্রথমে ভেবেছিলাম ও বোধহয় আমার মতই কারো সাথে মিশতে চায়না, একাকি জীবন নিয়ে চলতে চায়। এমনকি বিরতির সময় কিংবা হল দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময়ও সে লোকজনকে এড়িয়ে চলে। কখনো কোন আড্ডায় ঢোকে না।

    আমাদের ক্লাসে শুধু আমরা দুজন এমন ছিলাম। অবশ্য এটা বলা যাবে না যে, আমি যেভাবে আমার ক্লাসমেটদের উৎসাহ নিয়ে বিরক্ত, সেও সেরকম। আমার সাথে কেউ কথা বলতে আসলে কথা বলি। হালকা মজা করে ব্যাপারটাকে বন্ধুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রাখি। সাধারণ জীবনযাপনের জন্য নমূনতম যতটুকু করা দরকার করি। কিন্তু এসব কিছুই করি উপরে উপরে, আমার হাসির পুরোটাই আসলে মিথ্যে, পুরোপুর বানোয়াট।

    প্রথমবার আমরা যখন কথা বলি, মোরিনো সোজা আমার ভেতরের রূপটা দেখে ফেলেছিল।

    “আমাকে ওরকম হাসি দেয়া শেখাবে?” স্কুলের পর আমার সামনে এসে ও সরাসরি বলেছিল, মুখে কোন রকম কোন অভিব্যক্তি ছাড়াই। সে নিশ্চয়ই আমাকে ভেতরে ভেতরে ঘৃণা করত।

    এটা ছিল মে মাসের শেষের দিকের কথা। এরপর থেকে আমরা মাঝে মাঝে কথা বলতাম।

    মোরিনো স্রেফ কালো রঙের পোশাক পরত-পায়ের জুতো থেকে মাথার লম্বা একদম সোজা কালো চুল পর্যন্ত সব গাঢ় রঙ। উল্টোদিকে ওর চামড়ার মত ফ্যাকাসে সাদা রঙ আমি আর কারো দেখিনি। দেখে মনে হত সিরামিকের তৈরি। ওর বাম চোখের নিচে একটা ছোট্ট তিল ছিল, অনেকটা ক্লাউনের মুখের মত দেখতে। এতে চেহারায় একটা রহস্যময়ি ভাব এসেছিল।

    সাধারণ মানুষের তুলনায় ওর চেহারায় অভিব্যক্তি খুবই কম বদলাত, কিন্তু বদলাত। যেমন, সে হয়তো একজন খুনির উপর একটা বই পড়ছে, যে কিনা রাশিয়াতে বায়ান্ন জন নারী-শিশুকে হত্যা করেছে। বোঝা যেত ও বইটা পড়ে মজা পাচ্ছে। এই অভিব্যক্তির সাথে ক্লাসে বসে থাকা অবস্থায় বিষণ্ণ সুইসাইডাল অভিব্যক্তির মিল নেই। ওর চোখগুলো তখন জ্বলজ্বল করত।

    একমাত্র ওর সাথে কথা বলার সময় আমি কোন ভান করতাম না। অন্য কারো সাথে যদি এভাবে কথা বলতাম তাহলে তারা অবাক হত-কেন আমার চেহারায় কোন অভিব্যক্তি নেই, কেন আমি হাসি না। কিন্তু মোরিনোর সাথে কথা বলার সময় এসবের কোন প্রয়োজন নেই। আমার ধারণা ও আমার সাথে একই কারনে কথা বলত।

    আমাদের দুজনের কেউই লোকজনের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পছন্দ করতাম না। আমরা আমাদের প্রাণবন্ত ক্লাসমেটদের ছায়ায় লুকিয়ে নিজেদের নিশ্চুপ জীবন যাপন করতাম।

    তারপর এল গরমের ছুটি। আর সাথে এই নোটবুক।

    ***

    যেদিন ও আমাকে নোটবুকটা দেখাল, সেদিনই পরে আমরা স্টেশনে দেখা করলাম আর স**** মাউন্টেনে যাওয়ার ট্রেনে চড়ে বসলাম।

    আগে আমরা কখনো স্কুলের বাইরে দেখা করিনি। তাই এবারই প্রথম ওকে ইউনিফর্ম ছাড়া দেখলাম। সে যথারীতি কালো পোশাকই পরে ছিল। আমিও কালো পোশাক পরেছি। আর ওর মুখ দেখে বুঝলাম ও তা খেয়ালও করেছে।

    ট্রেনে লোকজন প্রায় ছিলই না, যারা ছিল তারাও চুপচাপ। আমরাও কোন কথা বলিনি, যার যার বইয়ে নাক ডুবিয়ে বসেছিলাম। ও পড়ছিল শিশু নির্যাতনের উপর একটা বই, আর আমি পড়ছিলাম বিখ্যাত এক শিশু অপরাধির পরিবারের লেখা একটা বই।

    ট্রেন থেকে নেমে স্টেশনের কাছের সিগারেটের দোকানে বসে থাকা এক বুড়িকে জিজ্ঞেস করলাম স****মাউন্টেনের কাছে কয়টা সোবা শপ আছে। তিনি বললেন একটাই আছে, আর আমরা যেখানে আছি সেখান থেকে কাছেই সেটা।

    এই সময় মোরিনো একটা দুর্দান্ত কথা বলল। “তামাকের কারনে অনেক মানুষ মারা যায়, কিন্তু সিগারেটের ভেন্ডিং মেশিন এই বুড়ির কাজ কেড়ে নিয়ে তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে।”

    ও আমার থেকে কোন প্রতিক্রিয়া আশা করছিল না, তাই আমিও কিছু বললাম না।

    আমরা রাস্তার ধার দিয়ে হেঁটে সোবা শপের দিকে গেলাম। রাস্তাটা পাহাড় ঘিরে উপরের দিকে উঠে গিয়েছে।

    স**** মাউন্টেনের গোড়ায় সোবা শপটা দাঁড়িয়ে। পাশে সারি দিয়ে কয়েকটা রেস্টুরেন্ট আর বার। তেমন একটা ভিড় ছিল না, অল্প কয়েকটা গাড়ি আর লোকজন দেখা গেল। সোবা শপের পার্কিং লটে কোন গাড়ি ছিল না। অবশ্য দোকানটা ভোলাই ছিল, দরজায় ‘ওপেন দেখে আমরা ভেতরে গেলাম।

    “খুনির সাথে মিজুগুশি নানামির এখানেই দেখা হয়েছিল,” মোরিনো বলল। দোকানের ভেতরে এমনভাবে চোখ বোলাল, যেন আমরা জনপ্রিয় কোন টুরিস্ট স্পটে এসেছি। “সরি-এটা আসলে একটা সম্ভাবনা, সে হয়তো এখানে মেয়েটার সাথে দেখা করেছিল। আমরা এখানে এসেছি সত্যিটা কি তা জানতে।”

    আমি ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে নোটবুক পড়তে লাগলাম। নীল বল পয়েন্ট কলমে লেখা। নোটবুকে শুধু যে তৃতীয় মেয়েটার কথা ছিল, তা নয়। আরও কিছু মাউন্টেনের নাম লেখা ছিল। প্রথম পৃষ্ঠায় সেগুলো লেখা ছিল খুনের কাহিনীগুলোর আগে।

    মাউন্টেনগুলোর নামের সাথে এরকম চিহ্ন দেয়া ছিল : ⃣,O,⃤ /, আর X। যে মাউন্টেনগুলোতে লাশ তিনটা রাখা হয়েছে সেগুলোর সবগুলোতে • দেয়া। হয়তো এর মানে হল এই মাউন্টেনগুলো খুন করার জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা।

    নোটবুকে এমন কিছু ছিল না যা থেকে লেখক সম্পর্কে কিছু জানা যায়। আর আমাদের দুজনের কেউই এটা পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার কথা চিন্তাও করিনি। আমরা কিছু করি না করি পুলিশ আজকে হোক কালকে হোক খুনিকে একদিন ধরবেই। নোটবুক ওদের দিলে হয়তো কাজটা একটু দ্রুত হতে পারে, ভিক্টিমের সংখ্যা কমতে পারে। সুতরাং আমাদের দায়িত্ত নোটবুকটা পুলিশের হাতে তুলে দেয়া। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমাদের সেসব নিয়ে কোন মাথা ব্যথা ছিল না। আমরা নিষ্ঠুর, সরীসৃপের মত হিংস্র, হাই স্কুলের শিক্ষার্থী।

    “যদি চতুর্থ কোন ভিক্টিম পাওয়া যায়, তাহলে ধরে নিতে হবে আমরাই তাকে খুন করেছি।”

    “কী দুঃখজনক।”

    সোবা খেতে খেতে আমরা এইসব আলাপ করলাম। মোরিনোকে দেখে মনে হচ্ছিল না ওর কাছে ব্যাপারটাকে দুঃখজনক কিছু মনে হচ্ছে, ওর কথায় অনুভূতির কোন রেশ ছিল না, সমস্ত মনোযোগ ছিল সামনে বাটি ভর্তি সোবার উপর।

    দোকানের মালিকের কাছে আমরা মঠে যাওয়ার রাস্তা জানতে চাইলাম।

    আমরা যখন হাঁটছিলাম, মোরিনো তখন নোটবুকের দিকে তাকিয়ে ছিল, কাভারে স্পর্শ করছিল, যেখানে কিনা খুনিও স্পর্শ করেছে। ওর

    ভাবসাবে মনে হল খুনির প্রতি ওর যথেষ্ট পরিমান ভক্তিও আছে।

    আমার নিজেরও আছে। জানি ব্যাপারটা সঠিক নয়। খুনি এমন একজন ব্যক্তি যার শাস্তি হওয়া উচিত। তাকে এমন মর্যাদা দেয়া উচিত না যেভাবে একজন বিপ্লবী কিংবা শিল্পীকে মর্যাদা দেয়া হয়। একই সাথে এও জানি যে কিছু মানুষ আছে যারা কুখ্যাত খুনিদের রীতিমত পুজা করে-আর সেরকম কোন একজনে পরিণত হওয়া নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় কোন ব্যাপার না।

    নোটবুকের মালিকের বিভৎস কৃতকর্ম আমাদের পুরোপুরি আয়ত্ত করে ফেলেছিল। এই খুনি সাধারণ জীবনের সীমা অতিক্রম করে কিছু মানুষকে শারীরিকভাবে ধ্বংস করে ফেলেছে। তাদের পরিচয়, তাদের সম্মান নষ্ট করে ফেলেছে। দুঃস্বপ্নের মাঝে আটকে পড়া অবস্থা হয়েছিল আমাদের, অন্য দিকে দৃষ্টি ফেরাতে পারছিলাম না।

    সোবা শপ থেকে মঠে যেতে পাহাড় বেয়ে কিছুদূর উঠতে হলো আমাদের, তারপর বিশাল এক সিঁড়ি বেয়ে আরো উপরে যেতে হলো।

    যে কোন ধরনের ব্যায়ামের প্রতি আমাদের দুজনেরই অন্যরকম এক ঘৃণা রয়েছে। নিচে নামা কিংবা উপরে ওঠা কোনটাই আমাদের পছন্দ ছিল না। যেকারনে মঠ পর্যন্ত পৌঁছতে গিয়ে আমরা হাঁপিয়ে গেলাম।

    মঠের মূর্তিগুলোর নিচে বসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করলাম। আশেপাশে খালি গাছ আর গাছ। গাছগুলোর ডালপালা আমাদের মাথার উপর ছড়িয়ে ছিল, পাতার ফাঁক দিয়ে গ্রীষ্মের সূর্য উঁকি দিচ্ছিল।

    আমরা দু-জন পাশাপাশি বসে ছিলাম, চারপাশ থেকে পোকার ঝিঁঝি শব্দ কানে আসছিল।

    মোরিনোর কপালে ঘাম জমে গেছে।

    একসময় সে ঘাম মুছে উঠে দাঁড়াল, মিজুগুশি নানামির লাশ খুঁজতে লাগল।

    “খুনি আর মিজুগুশি নানামি এদিক দিয়ে একসাথে হেঁটে গিয়েছিল,” পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে ও বলল।

    আমরা মঠ পেরিয়ে পিছনের বনে গিয়ে ঢুকলাম। কোনদিকে যেতে হবে, কতদুর যেতে হবে কিছুই আমাদের জানা ছিল না তাই আমরা এদিক ওদিক খুঁজতে লাগলাম।

    “হয়তো ওইদিকে হবে,” মোরিনো আমার দিক থেকে অন্যদিকে যেতে যেতে বলল।

    কয়েক মিনিট পর শুনতে পেলাম ও আমার নাম ধরে ডাকছে। আমি ওর গলা লক্ষ্য করে এগিয়ে গিয়ে দেখি ও একটা ক্লিফের গোরায় দাঁড়িয়ে। আমার দিকে পেছন ফিরে আছে। শরীর শক্ত হয়ে আছে, দু হাত পাশে ঝুলছে। আমি ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। ও যেদিকে তাকিয়ে ছিল সেদিকে তাকালাম : ঐ যে মিজুগুশি নানামি।

    বন আর ক্লিফের মাঝখানে, একটা বড় গাছের ছায়ায়, গ্রীষ্মের হালকা আলোতে একটা নগ্ন মেয়ে বসে আছে। মিজুশি নানামি মাটিতে বসে ছিল, ওর পিঠ গাছের উপর হেলান দেয়া, হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, ঘাড়ের উপরে কিছু নেই। পেট কেটে গর্ত করা হয়েছে। মাথাটা সেই গর্তে ঢুকানো।

    চোখগুলো উপড়ে এনে দু-হাতের তালুর উপর রাখা। চোখের কোটরগুলো কাদা দিয়ে ভরাট করা হয়েছে, মুখ ভরাট করা হয়েছে পচা গলা পাতা দিয়ে। পেট থেকে বের করা নাড়ি ভুড়ি পেছনের গাছের সাথে রাখা। মাটিতে পড়ে থাকা রক্ত শুকিয়ে কালো হয়ে গিয়েছিল। মেয়েটার কাপড় চোপড়গুলো ফেলে রাখা ছিল কাছেই।

    আমরা হা করে সেখানে দাঁড়িয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। আমাদের দুজনের কারোরই কিছু বলার মত অবস্থা ছিল না, স্রেফ নিভাবে তাকিয়ে ছিলাম লাশটার দিকে।

    ***

    পরেরদিন মোরিনো আমার সেল ফোনে মেসেজ পাঠালো : “নোটবুকটা ফেরত দাও।”

    ওর মেসেজ সবসময়ই এরকম ঘোট আর সোজা ভাষার, কখনোই দরকারের অতিরিক্ত কোন কথা থাকে না। একইভাবে ওর ফোনের সাথে অন্য মেয়েদের মত আজাইরা কোন চাবির রিং কিংবা স্ট্রাপও লাগানো থাকে না।

    নোটবুকটা আমি বাসায় নিয়ে গিয়েছিলাম। মিজুগুশি নানামির ওখান থেকে ফেরার পর মোরিনোকে ফেরত দেয়া হয়নি।

    ফেরার পথে ট্রেনে মোরিনো দূরে তাকিয়ে ছিল, তখনো শক কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

    ফিরে আসার আগে ও মাটি থেকে মিজুশি নানামির জামা কাপড় আর জিনিসপত্র তুলে নিজের ব্যাগে ভরে নিয়ে আসে। জামা কাপড়গুলো কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু মেয়েটার হ্যাট আর ব্যাগ, ব্যাগের ভেতরের জিনিসপত্র ছুঁয়েও দেখা হয়নি।

    ব্যাগের ভেতর ছিল মেয়েটার মেকআপ, ওয়ালেট আর রুমাল। ফেরার পথে ট্রেনে আমরা সব বের করে হাতিয়ে দেখেছি।

    ওয়ালেটের ভেতরের স্টুডেন্ট আইডি দেখে আমরা জানতে পারলাম মিজুগুশি নানামি আমাদের পাশের বিভাগের একটা হাই স্কুলের ছাত্রি ছিল। ব্যাগের ভেতর একটা ছোট বুক ছিল ‘পুরিকুরা রাখার জন্য। পুরিকুরার ছবিগুলোতে আর আইডি কার্ড থেকে আমরা বুঝতে পারছিলাম জীবিতকালে মেয়েটা কতখানি প্রাণবন্ত ছিল।

    মেসেজ পাওয়ার পর আমি দুপুর বেলায় স্টেশনের কাছের ম্যাকডনাল্ডে গিয়ে মোরিনোর সাথে দেখা করলাম।

    মোরিনো ওর স্বভাবসুলভ কালো পোশাক পরেনি। প্রথমে ওকে চিনতেই পারিনি আমি। ও যে হ্যাটটা পরেছিল সেটা আমরা মিজুগুশি নানামির লাশের কাছে পেয়েছিলাম। সুতরাং আমি অনুমান করলাম ও হয়তো মৃত মেয়েটার মত জামাকাপড় পরে সাজগোজ করেছে।

    ওর চুল আর মেকআপ পুরোপুরি মিজুগুশি নানামির পুরিকুরাতে পাওয়া ছবির মত। মেয়েটার জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলা হয়েছিল, তাই ও শপিঙে গিয়ে একইরকম দেখতে জামাকাপড় কিনেছে।

    নোটবুক ফেরত দিতে গিয়ে মনে হলো ও মজায় আছে। ব্যাপারটা উপভোগ করছে।

    “আমাদের কি মিজুগুশি নানামির পরিবারকে জানানো উচিত ওর লাশ বনের মধ্যে পড়ে আছে?” বললাম তাকে।

    মোরিনো এক মুহূর্ত চিন্তা করে মাথা নাড়ল, “দরকার নেই, পুলিশ একসময় ঠিকই খুঁজে পাবে।” মৃত্যুর আগে মিজুগুশি নানামি যেরকম পোশাক পরা ছিল ঠিক একইভাবে মোরিনো সাজুগুজু করেছে।

    মিজুগুশি নানামির পরিবার কি করছে এখন? ওর নিরুদ্দেশ হওয়ার ঘটনার কি তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে আছে? ওর কি কোন বয়ফ্রেন্ড ছিল? ওর গেড কি রকম ছিল?

    মোরিনোকে একটু অন্যরকম লাগছে। ও যেভাবে কথা বলছে, বা নড়াচড়া করছে, সেসব ওর অন্য সময়ের ব্যবহারের চেয়ে ভিন্ন। ওর ব্যাংগস কোথায় রেখেছে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করছিল। আমাদের উল্টোদিকের বুথে বসে থাকা কপোত-কপোতির দিকে ইশারা করল। এসব মোরিনো আগে কখনো করেনি।

    টেবিলের উপর কনুই দিয়ে বসে আছে। হাসিখুশি দেখাচ্ছে ওকে। ওর পাশে মিজুগুশি নানামির ব্যাগটা রাখা। ব্যাগের সাথে একটা চাবির রিং লাগানো, যেটায় একটা অ্যানিমে ক্যারেক্টার ঝুলছে।

    “তুমি আরও কিছুদিন এরকম সাজগোজ করে চলবে নাকি?”

    “হ্যাঁ, তাই ভাবছি…মজার না ব্যাপারটা?”

    মোরিনোর জন্য ব্যাপারটা অন্য একজন হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল। কিন্তু ও যেভাবে হাসছিল কিংবা আয়নায় তাকিয়ে ভুরু পরীক্ষা করছিল, কোন হাই স্কুলে পড়া সাধারণ গোছের মেয়ে হুবহু ওরকম করে

    -মনে হচ্ছিল মিজুগুশি নানামি কোনভাবে ওর ভেতর ঢুকে পড়েছে।

    ম্যাকডোনাল্ড থেকে বের হওয়ার পর, মোরিনো এমনভাবে আমার হাত ধরল যেন ব্যাপারটা খুবই স্বাভাবিক। এমনকি আমি না বলা পর্যন্ত ও নিজেও তা টের পায়নি। মিজুগুশি নানামি এখন মৃত, কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল আমার হাত ধরেছিল মিজুগুশি নানামিই, মোরিনো নয়।

    স্টেশনের কাছে গিয়ে যার যার পথে আলাদা হয়ে গেলাম আমরা।

    বাসায় ফিরে টিভি চালালাম। সিরিয়াল কিলিং নিয়ে খবর দেখাচ্ছে। প্রথম দু-জন শিকারের উপর। সেই একই তথ্য আবারো বলা হচ্ছে। আগেও হাজারবার বলা হয়েছে। নতুন কিছু নেই খবরে। মিজুগুশি নানামির কোন উল্লেখ নেই।

    ভিক্টিমদের পরিবার আর আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধবদের ছবি দেখানো হলো। তাদেরকে দুঃখি দুঃখি দেখাচ্ছে। স্ক্রিন ভরাট করার জন্য ভিক্টিমদের ছবি বড় করে দেখানো হচ্ছে।

    মোরিনোর কথা ভেবে আমার দুশ্চিন্তা হচ্ছিল-এরকম অনুভূতি আমার আগে কখনো হয়নি। মাথা ঝাঁকি দিয়ে চিন্তাটা সরাতে চাইলাম।

    ছবিতে দেখা যাচ্ছে ভিক্টিমদের দুজনেরই মিজুগুশি নানামির মতই চুল আর পোশাক। এর মানে হলো, মোরিনো নিজেও এখন খুনির ‘পছন্দের ধরন’-এর মধ্যে পড়ে যাচ্ছে।

    ৩

    ম্যাকডোনাল্ডস এ দেখা করার তিনদিন পর এক বিকেলে আমার ফোন বেজে উঠল। টোন শুনে বুঝলাম কারো কাছ থেকে মেসেজ এসেছে…মোরিনোর থেকে।

    “হেল্প।”

    শুধু একটা শব্দ, আর কিছু নেই।

    আমি তাড়াতাড়ি উত্তরে লিখলাম : “কি হয়েছে?”

    অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলেও কোনো উত্তর এল না। এরপর আমি ওকে ফোন করলাম। কল ঢুকছিল না-হয় ফোনটা বন্ধ নয়তো নষ্ট।

    সন্ধ্যায় মোরিনোর বাসায় ফোন করলাম। অনেক আগে একবার ও আমাকে ওর বাসার ফোন নাম্বার দিয়েছিল। এমন না যে সে ভেবেছিল আমি ওকে কখনো ফোন করব, বরং দেখাতে চেয়েছিল যে নাম্বারটা ডায়াল করতে গেলে বাটনের অক্ষরগুলো দিয়ে কাকতালীয়ভাবে একটা অর্থ দাঁড়ায়, যে কারনে নাম্বারটা মনে রাখা সহজ ছিল।

    ওর মা ধরলেন। মহিলার গলার স্বর বেশ উঁচু আর অনেক দ্রুত কথা বলেন।

    আমি তাকে জানালাম যে আমি ওর সাথে পড়ি, ক্লাসের কিছু ব্যাপারে মোরিনোর সাথে কথা বলা দরকার, সেজন্য ফোন করেছি।

    কিন্তু মোরিনো বাসায় ছিল না।

    ওকে আক্রমণ করা হয়েছে এই চিন্তা বাদ দিলাম। কিন্তু নোটবুকের লেখাগুলো যেহেতু, সত্যি, সুতরাং সেদিন খুনি সম্ভবত মোরিনোর সাথে একই ক্যাফেতে উপস্থিত ছিল। আর সম্ভাবনা আছে, সে মোরিনোকে মিজুশুশি নানামির মত সাজগোজে দেখেছে। যে মেয়েকে কিছুদিন আগেই খুন করেছে, প্রায় তার মত হুবহু আরেকজনকে ঘোরাফেরা করতে দেখে খুনি নিশ্চয়ই খুব অবাক হয়েছে সে। হয়তো তার প্রলোভন…কিন্তু মোরিনোকে আসলে লক্ষ্যবস্তু করার সম্ভাবনা খুবই কম। হাজার হোক এরকম সাজগোজ করা মেয়ের সংখ্যা কম নয়।

    খুনি ওকে তুলে নিয়ে গিয়েছে এই সন্দেহ করার সবচেয়ে বড় কারন হলো, সম্ভবত খুনি আর মোরিনোর বাসা কাছাকাছি। তারা একই কফি শপে ছিল। যদি না শুধু ঐদিনের জন্য খুনি দূরের কোন কফি শপে এসে থাকে, তাহলে মোরিনোর সাথে তার প্রতিদিন দেখা হওয়ার সম্ভাবনা বেশ ভালই।

    সে রাত পুরোটা সময় ধরে আমি এসব চিন্তা করলাম! হয়তো মোরিনো এর মধ্যেই খুন হয়ে গিয়েছে। হয়তো কোনো পাহাড়ের চূড়ার ওর টুকরো টুকরো করা শরীর ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।

    এসব কল্পনা করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম আমি।

    ***

    পরদিন আবার ওর বাসায় ফোন করলাম।

    মোরিনো তখনও বাসায় ফেরেনি। ওর মায়ের বক্তব্য অনুসারে, এই প্রথম সে সারা রাত বাইরে ছিল, তাও আবার বাসায় না জানিয়ে। মহিলা দুশ্চিন্তা করছিলেন।

    “তা বাবা, তুমি কি ওর বয়ফ্রেন্ড?” মোরিনোর মা জিজ্ঞেস করলেন।

    “জি না একদমই না,”

    “ঠিক আছে, লজ্জার কিছু নেই, আমি সবই জানি।”

    মোরিনোর মায়ের মনে কোন সন্দেহ নেই যে তার মেয়ের একজন বয়ফ্রেন্ড জুটেছে। মোরিনোর কখনোই কোন বন্ধু বান্ধব ছিল না। আর এলিমেন্টারি স্কুলের পর এই প্রথম কেউ ফোন করে ওর খোঁজ নিচ্ছে।

    “ইদানিং ও উজ্জ্বল রঙের সব জামাকাপড় পরছে, তখনই বুঝলাম নিশ্চয়ই ওর কোনো বয়ফ্রেন্ড হয়েছে।”

    ফোনের বিল কত আসবে তা নিয়ে আমার দুশ্চিন্তা হতে লাগল।

    “আচ্ছা একটু দেখবেন ওর রুমে কোন ছোট বাদামি রঙের নোটবুক আছে কিনা?”

    মহিলা ফোন রেখে গিয়ে দেখে আসলেন। একটু বিরতির পর আবার তার গলা শোনা গেল। “ওর ডেস্কের উপর ওরকম কিছু একটা আছে, ওটার কথাই তুমি বলছ কিনা বুঝছি না…।”

    এর মানে হল নোটবুকটা মোরিনোর সাথে ছিল না। সাথে থাকলে আর খুনি যদি ওকে সেটা পড়া অবস্থায় দেখত তাহলে অবশ্যই মুখ বন্ধ করার জন্য আক্রমণ করত।

    আমি মোরিনোর মাকে জানালাম, নোটবুকটা নিতে আসছি। মহিলার থেকে বাসার ঠিকানা নিলাম।

    ফোন রেখেই সাথে সাথে বের হলাম। ওর বাসা স্টেশন থেকে খুব একটা দূরে না, কিন্তু আগে কখনো যাই নি।

    স্টেশনের পেছনের একটা অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের চারতলায় থাকত ও।

    সেখানে গিয়ে বেল বাজালাম। মোরিনোর মা-ই দরজা খুললেন, কোনো সন্দেহ নেই, কারন গলার স্বর ফোনের মত একইরকম।

    “আস আস, ভেতরে আস।”

    ভদ্রমহিলা এপ্রন পরেছিলেন। তাকে দেখতে ঠিক সাধারণ গৃহিণীদের মতই লাগছিল। মোরিনোর থেকে একদম আলাদা। এরকম একজন মহিলার গর্ভে কী করে মোরিনোর মত সন্তান জন্মাল ভেবে আমি অবাক হলাম।

    ভেতরে গেলাম না। নোটবুক নিয়েই বিদেয় হওয়ার ইচ্ছা আমার। উনি নোটবুকটা এনে আমার হাতে দিলেন। জিজ্ঞেস করলাম ভেতরের লেখা পড়েছেন কিনা।

    তিনি মাথা নাড়লেন। “এত ছোট হাতের লেখা পড়ার ধৈর্য আমার নেই।”

    নোটবুকের চেয়ে তার আগ্রহ বেশি আমাকে নিয়েই।

    “দ্বিতীয় বর্ষ শুরু হওয়ার পর মোরিনো হঠাৎ নিয়মিত ক্লাসে যেতে লাগল। এখন আমি বুঝতে পারছি কারণটা কি!”

    আগের বছর নাকি মোরিনো বলত স্কুল খুবই বোরিং। আর প্রায়ই স্কুলে অনুপস্থিত থাকত। আমার এ তথ্য জানা ছিল না। ওর চিন্তাধারা সাধারণ মানুষের মত, ওর আগ্রহ অনাগ্রহও অস্বাভাবিক। আর ও কারো সাথে মিশতেও পারত না। বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হতো। খুবই স্বাভাবিক যে ও স্কুলে যেতে পছন্দ করত না।

    আমি ভদ্রমহিলাকে জিজ্ঞেস করলাম শেষ কখন মোরিনোকে দেখেছেন। “গতকাল দুপুরে…যতদূর মনে পড়ে। বাসা থেকে বের হচ্ছিল তখন।”

    “যাওয়ার আগে কিছু বলেছিল?”

    মোরিনোর মা মাথা নাড়লেন। “তুমি কি ওকে খুঁজে দেখবে?” যখন চলে আসছিলাম তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন।

    মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম, “যদি সে এখনো বেঁচে থাকে।”

    ওর মা ভাবলেন আমি মজা করছি, হেসে ফেললেন তিনি।

    ***

    স্টেশনের দিকে ফিরতে ফিরতে নোটবুকটা খুলে পাহাড়ের তালিকাটা বের করলাম। যেই তালিকাটা খুনি তৈরি করেছিল লাশ রাখার জন্য। এটা স্পষ্ট যেসব পাহাড়ের পাশে  ⃣  চিহ্ন দেয়া সেগুলো তার সবচেয়ে পছন্দ ছিল। মাত্র চারটার পাশে এই চিহ্ন ছিল। এখন পর্যন্ত এই চারটার তিনটাতেই লাশগুলো পাওয়া গিয়েছে।

    তার মানে সে সম্ভবত মোরিনোকে চতুর্থটায় নিয়ে গিয়েছে–ন** মাউন্টেনে।

    স্টেশনের টিকেট কাউন্টারে জানতে চাইলাম কোন ট্রেন ধরে সেখানে যাওয়া যাবে। তারপর টিকেট কেটে ট্রেনে উঠে পড়লাম।

    ন** মাউন্টেনের কাছে স্টেশনে নেমে আবার বাস নিতে হলো। চারদিকে আঙুরের ক্ষেত। বাস থেকে ক্ষেতে লাগানো আঙ্গুরের বিজ্ঞাপন দেখতে পেলাম।

    খুনি এখানে এলে অবশ্যই গাড়ি দিয়ে এসেছে। লাশ সে কোথায় ফেলতে পারে? নিশ্চয়ই পাহাড়ের গভীরে দুর্গম কোথাও হবে, যেখানে মোরিনোর চিৎকার কেউ শুনতে পারবে না। জায়গাটা কোথায় হতে পারে সে ব্যাপারে আমার কোন ধারণাই নেই।

    বাসে আমি আর ড্রাইভার ছাড়া কেউ ছিল না। বাসের ভেতর এলাকার একটা ম্যাপ লাগানো ছিল। ওটা দেখে আর ড্রাইভারের সাথে কথা বলে বের করার চেষ্টা করলাম খুনি কোথায় গিয়ে থাকতে পারে। সে জানাল আমি যেদিক থেকে এসেছি সেদিক থেকে যারা ন**মাউন্টেনে ঘুরতে আসে তারা সবসময়ই এই বড় রাস্তা দিয়েই আসে।

    পাহাড়ের চূড়ায় যাওয়ার রাস্তার সামনে এসে আমি বাস থেকে নামলাম। রাস্তাটা যথেষ্ট প্রশস্ত। খুনি যদি গাড়ি নিয়ে এসে থাকে তাহলে অবশ্যই এই রাস্তা দিয়ে গিয়েছে।

    রাস্তা ধরে হেঁটে উঠতে লাগলাম। পাকা রাস্তা হলেও কোন ট্রাফিক ছিল না সেখানে।

    বনের কাছে গিয়ে রাস্তা থেকে বিভিন্ন দিকে সরু সরু রাস্তা চলে গিয়েছে। খুনি এর যে কোনটা দিয়ে গিয়ে থাকতে পারে। যতদূর যাচ্ছি রাস্তা তত সরু হয়ে আসছে। উপর থেকে বনের মাঝে ছোট ছোট গ্রাম চোখে পড়ছিল। ছোট ছোট বাড়ি ঘর।

    চূড়ার কাছাকাছি যেতেই একটা ছোট পার্কিং লট চোখে পড়ল। সাথে ছোট একটা বিল্ডিং, দেখে মনে হল অবজারভেটরি হবে। এর পর আর গাড়ি যেতে পারবে না। বেশি হাঁটা লাগেনি তাই সেদিনের মত কাহিল হইনি।

    মোরিনোর মৃতদেহ খুঁজছিলাম।

    গাছপালার ভেতর দিয়ে পথ চলে গেছে। আশেপাশের যে শাখা পথ ছিল সেগুলো দিয়ে হেঁটেও খুঁজলাম।

    আকাশ মেঘলা ছিল বলে বনের মধ্যেও বেশ অন্ধকার। গাছের ডাল পালার ভেতর দিয়ে যতটুকু সম্ভব দূরে দেখার চেষ্টা করলাম। কোনো বাতাস নেই। চারপাশে খালি পোকামাকড়ের গুঞ্জন।

    ন**মাউন্টেন বিশাল জায়গা। সেখানে একটা লাশের টুকরা টাকরা খুঁজে পাওয়া সহজ কাজ ছিল না। অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে ব্যর্থ হলাম। হেঁটে আবার যখন বাস স্টপে ফেরত আসলাম তখন পুরো কাহিল, জামাকাপড় ঘামে ভিজে গিয়েছে।

    রাস্তার সাথে অল্প কিছু বাড়িঘর ছিল। উপরে যাওয়ার রাস্তার পাশের এক বাগানের বুড়োকে জিজ্ঞেস করলাম আগেরদিন কোন গাড়ি যেতে দেখেছে কিনা। সে মাথা নাড়ল। তার বাসার লোকজনকে ডেকে একই প্রশ্ন করল। কিন্তু কেউ কোন গাড়ি দেখেনি।

    তাহলে মোরিনো ঐ মেসেজটা কেন পাঠাল? খুনি কি ওকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়েছিল? ও তো বোকা মেয়ে না, অন্যদের মত এত সহজে ওকে ফাঁদে ফেলা সম্ভব নয়।

    নাকি আমি একটু বেশিই কল্পনা করছি? হয়তো তাকে কেউ বন্দি করেনি?

    বাস স্টপে বসে আবার নোটবুকটা খুলে পড়তে লাগলাম। খুনের বিবরণ থেকে খুনি সম্পর্কে জানার জন্য যে দক্ষতা আর ট্রেইনিং দরকার সেটা আমার নেই।

    কপাল থেকে ঘাম বেয়ে নোটবুকের উপর পড়ে কালি মাখিয়ে গেল। লেখা পড়া যাচ্ছিল না। পানিতে নষ্ট হয় এমন কালি ব্যবহার করেছিল খুনি।

    কোথায় বসে খুনি এই লেখাগুলো লিখত? খুন করে ফিরে বাসায় বসে? আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে সে খুনের সময় ওখানে বসে কিছু লিখত কিনা। নিশ্চয়ই সে তার স্মৃতি থেকে লিখত, কল্পনার রং মেখে।

    বাস এলে উঠে দাঁড়ালাম। হাত ঘড়িতে তিনটার বেশি বাজে। পাহাড় ছেড়ে আবার শহরে ফিরে যাচ্ছি আমি।

    ৪

    মোরিনো সবসময় যে কফি শপটায় যায় সেটা ছিল স্টেশনের কাছে একটা আরকেডের মাঝামাঝি। আমাকে জায়গাটার কথা জানিয়েছিল আগে, কিন্তু কখনো যাওয়া হয়নি।

    ও যেরকম বলেছিল, জায়গাটায় আলো খুব কম। আঁধারে বরং আমি সস্তি বোধ করছিলাম। হালকা মিউজিক বাজছিল, কেউ খেয়াল করছি মনে হচ্ছিল না।

    আমি কাউন্টারে গিয়ে বসলাম।

    শপের পেছন দিকে বাথরুমের সাইন দেখা যাচ্ছে। বাথরুমের সামনে ফ্লোরের দিকে তাকালাম, যেখানে মোরিনো নোটবুকটা পেয়েছে।

    কফি শপে আমি ছাড়া মাত্র একজন কাস্টমার ছিল। স্যুট পরা একজন তরুণী। জানালার পাশে বসে কফি খেতে খেতে ম্যাগাজিন পড়ছিল।

    দোকানের মালিক আমার অর্ডার নিতে এলে জানতে চাইলাম ঐ তরুণী এখানে প্রায়ই আসে কিনা।

    সে মাথা ঝাঁকাল। মুখ শুকনো। বুঝতে পারছে না এই প্রশ্নের মানে কি।

    “জরুরি কিছু না, এমনি। আপনার সাথে হ্যান্ড সেইক করলে কোন সমস্যা আছে?”

    “হ্যান্ড সেইক..? কেন?”

    “উপলক্ষটি চিহ্নিত করে রাখার জন্য।”

    দোকানের মালিকের চেহারা নিরীহ ভদ্র গোছের। বয়স আছে, কিন্তু আবার মধ্যবয়স্ক বলার মত বয়সও না। মলিন ত্বক। কালো টিশার্ট পরা, যে কোন দোকানে যেমন পাওয়া যায়। চুলগুলো যত্ন করে আঁচড়ানো।

    প্রথমে সে আমাকে একজন অদ্ভুত কাস্টমার ভেবেছিল। কারন সম্ভবত আমি সোজা তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম দেখে।

    সে গিয়ে তাড়াতাড়ি আমার জন্য কফি নিয়ে এল।

    “আমার একজন বান্ধবি আছে, নাম মোরিনো। আপনি কি ওকে চেনেন?”

    “হ্যাঁ নিয়মিত আসে এখানে।”

    আমি জানতে চাইলাম ও এখনো বেঁচে আছে কিনা।

    লোকটা আমার কথা শুনেস্থির হয়ে গেল।

    আস্তে করে কাপটা নামিয়ে রেখে আমার দিকে ভালো করে তাকাল। ওর চোখ ঘোলাটে দেখাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল আলোর ভেতর থেকে দুটো ব্ল্যাকহোল তাকিয়ে আছে।

    আমার মনে হয়েছিল ঐদিন থাকা অন্য কাস্টমারদের চেয়ে এই লোকের খুনি হওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি-এখন জানলাম আমার অনুমান সঠিক।

    “কি বলতে চাও?” সে বোকা সাজার ভান করল।

    আমি নোটবুকটা বের করলাম। সেটা দেখে হালকা ধূর্ত হাসি ফুটে উঠল তার মুখে।

    “সেদিন মোরিনো এটা খুঁজে পেয়েছিল।”

    নোটবুকটা নিয়ে খুলে দেখল সে।

    “আমি আশ্চর্য হয়েছি, তুমি ধরতে পেরেছে জিনিসটা আমার।”

    “অন্তত এর অর্ধেক আসলে স্রেফ জুয়া ছিল। আমি তাকে বললাম কিভাবে ন**মাউন্টেনে গিয়ে মোরিনোর লাশ খুঁজেছি, তারপর কী চিন্তা করে এখানে এসেছি।

    ***

    নোটবুকটা হারানোর পর খুনি কি চিন্তা করছিল? আমি সেটা কল্পনা করার। চেষ্টা করছিলাম।

    সে কেন এই নোটবুকটা লিখেছে? মনে রাখার জন্য? কোন রকম রেকর্ড রাখার জন্য আমি নিশ্চিত ছিলাম, সে এটা বার বার পড়েছে, আর ওর কাছে নোটবুকটার যথেষ্ট মূল্য ছিল। সুতরাং নোটবুকটা যে হারিয়ে গিয়েছে তা সে অবশ্যই খেয়াল করেছে।

    নোটবুকটা সে কোথায় রেখেছিল হয় পকেটে না হয় কোন ব্যাগে। যেহেতু মেঝেতে পড়ে ছিল, সুতরাং পকেট থেকেই পড়েছে বলে ধরে নেয়া যায়। হয়তো বাথরুমে হাত ধুতে গিয়েছিল সে, রুমাল বের করার সময় পকেট থেকে নোটবুকটা পড়ে যায়।

    তারপর কখন সে টের পেল, নোটবুকটা তার পকেটে নেই? দশ মিনিট পর? কয়েক ঘন্টা পর? আমি নিশ্চিত ছিলাম, ঐদিন শেষ হওয়ার আগেই সে হারানোর ব্যাপারটা টের পেয়েছিল।

    সে নিশ্চয়ই মনে করার চেষ্টা করেছে শেষ কখন নোটবুকটা দেখেছে। তারপর যেখানে পড়তে পারে সেখানে গিয়ে খোঁজাখুঁজি করেছে।

    আমি বাজি ধরতে রাজি আছি, সেরকম জায়গা আসলে কমই ছিল। কারন সে কিছুক্ষণ পর পরই নোটবুকটা খুলে পড়ত। সুতরাং শেষ যেখানে পড়েছে তার থেকে কাছাকাছি কোথাওই হারানোর কথা।

    তারপর নিশ্চয়ই খুনি সেখানে খোঁজাখুঁজি করেছে, কিন্তু পায়নি। বুঝতে পেরেছে একজন নোটবুকটা পেয়ে নিয়ে গিয়েছে। এবং সে যদি পড়ে ফেলে তাহলেই শেষ! পুলিশ তৃতীয় ভিক্টিমের লাশ পেয়ে যাবে। লাশ পাওয়া সমস্যা না। সমস্যা হল যদি তারা নোটবুকে খুনির হাতের ছাপ পেয়ে যায়। কিংবা হাতের লেখা মিলিয়ে ধরে ফেলে।

    আমার ক্ষেত্রে যদি এমন হত তাহলে আমি কি করতাম? অবশ্যই চতুর্থ আরেকজনকে খুন করতে যেতাম না। পুলিশ কাছাকাছি ঘোরাঘুরি করছে। হাজার হোক নোটবুকটা পাওয়া গিয়েছে এমন জায়গায় যেখানে খুনির আসা যাওয়া রয়েছে। পুলিশ ধরে নেবে খুনি আশেপাশেই আছে। এমন অবস্থায় কোন রিস্ক নেয়া চলে না।

    কিন্তু কয়েকদিন পার হয়ে গেল। মিজুগুশি নানামির লাশ উদ্ধার হল না। কারন আমি বা মোরিনো কেউই নোটবুকটা পেলেও পুলিশের হাতে দিইনি।

    খুনি প্রতি রাতে খবর দেখেছে, লাশ উদ্ধার হয়েছে কিনা জানতে চেয়ে। নিরাপদ বোধ না করা পর্যন্ত সে আবার খুন করতে চায় না…কিন্তু এদিকে আবার মোরিনো উধাও।

    মোরিনো লুকিয়ে থেকে মজা করছে এরকম চিন্তা বাদ দিয়ে আমি কল্পনা করার চেষ্টা করলাম খুনি কি করছে। আমি যদি খুনি হতাম আমি চতুর্থ একজন ভিক্টিম কেন বেছে নিতাম?

    * আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না

    * আমি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসি। পুলিশ আমাকে ধরতে পারবে না, ওদের মাথায় এত ঘিলু নেই।

    * ধরা পড়লেও আমার কিছু আসে যায় না

    * কেউ নোটবুকটা পায়নি, পেলেও কেউ নোটবুকটা পড়েনি

    * পড়লেও বিশ্বাস করেনি

    কিংবা আরেকটা হতে পারে যে নোটবুক যে হারিয়েছে তা সে টের পায়নি। এই হলো সব সম্ভাবনা…কিন্তু আমি আরেকটা থিওরির পক্ষে বাজি ধরলাম। আমার মনে হচ্ছিল খুনি ভেবেছে :

    * কেউ নোটবুকটা পেয়েছে কিন্তু পড়তে পারেনি, যে কারনে পুলিশের হাতে দেয়নি ওটা। আর সে কারনেই মিজুশি নানামির লাশ এখনো উদ্ধার হয়নি।

    কফি শপের মালিক আগ্রহের সাথে আমার এসব কথা শুনলেন।

    “তাহলে কি থেকে তোমার মনে হলো, আমিই খুনি?”

    নোটবুকটা তার থেকে নিয়ে খুললাম আমি। যেখানে আমার ঘাম লেগে লেখা নষ্ট হয়ে গিয়েছে সে অংশটা দেখালাম। আপনি জানতেন আপনি কি কালি ব্যবহার করছেন। আপনি জানতেন, পানি লেগে ভিজে গেলে কেউ আর এর লেখা পড়তে পারবে না। আমি ধরে নিয়েছি খুনি ভেবেছে সে বাইরে কোথাও নোটবুকটা ফেলেছে, দোকানের ভেতর না। মোরিনো আমাকে বলেছিল সেদিন অনেক বৃষ্টি হচ্ছিল। আমার মনে হয়েছে খুনি জানত, সে বৃষ্টির সময়ে জিনিসটা হারিয়েছে।”

    খুনি ভেবেছে নোটবুকটা যদি দোকানের মধ্যে পাওয়া যেত তাহলে সেটা পুলিশের হাতে পৌঁছত। কিন্তু মিজুগুশি নানামির লাশ পাওয়ার কোন খবর নেই। তার মানে খুনি ধরে নিয়েছে সে অবশ্যই বৃষ্টির মধ্যে বাইরে হারিয়েছে জিনিসটা। আমি ভাবলাম। সেক্ষেত্রে নোটবুকটা ভিজে যাবে, পড়ার অবস্থায় থাকবে না।

    মোরিনো বলেছিল সেদিন বৃষ্টির মধ্যে একমাত্র যে বাইরে গিয়েছিল সে হল কফি শপের মালিক।

    এত কিছু হিসাব করে আমি জুয়া খেলেছিলাম, সে-ই খুনি। আমি থামলে লোকটা বাঁকা হাসি দিল।

    “আমি আসলেই ভেবেছিলাম বৃষ্টির মধ্যে বাইরে কোথাও ফেলেছি নোটবুকটা,” সে স্বীকার করল। “মোরিনো উপরের তলায় আছে।”

    দোকানের দোতলা আর তিন তলায় তার বাসা।

    নোটবুকটা যত্ন করে নিজের পকেটে ঢুকিয়ে উঠে দাঁড়াল, তারপর হেঁটে দরজা খুলল লোকটা।

    ততক্ষণে মেঘ কেটে গিয়েছে, সূর্য মামা দ্বিগুণ প্রতাপে ফিরে এসেছে। অন্ধকার দোকান থেকে বেরিয়ে সাদা আলোয় আমার চোখ মনে হচ্ছিল ঝলসে যাচ্ছিল। লোকটা দোকান থেকে বেরিয়ে রাস্তা পার হয়ে বাইরের আলোর মধ্যে হারিয়ে গেল।

    নিয়মিত কাস্টমার তরুণীটি উঠে রেজিস্টারের কাছে এল বিল দিতে। আশেপাশে তাকিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করল দোকান মালিক কোথায় গেছে। আমি আলতো করে মাথা নাড়ালাম। জানি না।

    ***

    দোতালায় যাওয়ার সিঁড়ি বাইরের দিকে। দোকান থেকে বের হয়ে সেদিকে যেতে হবে।

    তিন তলায় হাত পা বাধা অবস্থায় মেঝেতে পড়েছিল মোরিনো। তখনো ওর পরনে মিজুগুশি নানামির মত পোশাক। দেখে মনে হল না আহত।

    আমাকে দেখে মোরিনো চোখ সরু করে তাকাল। এটা ওর হাসার ভঙ্গি। মুখে একটা ভোয়ালে ঢোকানো ছিল যে কারনে কিছু বলতে পারল না।

    আমি তোয়ালেটা সরালে সে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

    “কফি শপের মালিক ভান করেছিল যে ব্যথা পেয়েছে। আমাকে বলল কিছু জিনিস বহন করে দিতে পারব কিনা। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই..”

    হাত-পায়ের দড়ি খোলা সহজ ছিল না। আমি ওকে ওখানেই ফেলে রেখে রুমের ভেতর চেক করলাম। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে লোকটা একাই বাস করে সেখানে।

    ডেস্কের উপর একটা সাদা কাগজ রাখা ছিল। ছোট ছোট ক্রস চিহ্ন আঁকা।

    শেষে এক সেট ছুরি পেলাম। সেগুলো কি কাজে ব্যবহৃত হত তা কল্পনা করার প্রয়োজন নেই, নোটবুকেই বিস্তারিত লেখা ছিল।

    মোরিনো রাগি সুরে আমাকে ধমক দিল কেন ওর বাঁধন কেটে দিচ্ছি না।

    আমি ছুরিগুলো থেকে একটা বেছে নিয়ে ওর দড়ি কাটলাম।

    “আমাদের পালানো উচিত-ও টের পেয়ে যাবে।”

    “না, পাবে না।”

    সে আর ফিরে আসবে না এখানে, এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত ছিলাম। হ্যাঁ, ছোট্ট একটা সম্ভাবনা আছে, সে ফিরে এসে আমাদের দুজনকে খুন করে ফেলতে পারে। কিন্তু কোনো বিচিত্র কারনে আমার মনে হচ্ছিল সে আর আসবে না।

    কফি শপের কাউন্টারে বসে যখন আমরা কথা বলছিলাম তখন আমার মনে হয়েছে আমাদের দুজনের মধ্যে কোথাও যেন একটা মিল আছে। চুপচাপ দোকান থেকে বের হয়ে গিয়েছিল সে, কারন বুঝতে পেরেছিল আমি কাউকে কিছু বলব না।

    খুনি ফিরে আসবে না এ কথা আমার মুখে শুনে মোরিনো একটু অবাক হয়েছিল। সে উঠে দাঁড়িয়ে পোশাক ঠিক করতে লাগল।

    “আমি কোনরকমে তোমাকে একটা মেসেজ পাঠাতে পেরেছিলাম, কিন্তু সে বুঝে ফেলেছিল।”

    ডেস্কের উপর ওর ফোনটা বন্ধ অবস্থায় রাখা ছিল। মিজুগুশি নানামির ব্যাগটাও সেখানে রাখা। হাজার হোক মোরিনো তো সেটা নিয়েই ঘুরছিল। খুনি কি টের পেয়েছিল যে চতুর্থ শিকারের ব্যাগ আর তৃতীয় শিকারের ব্যাগ একই ছিল? নাকি সে ওকে লক্ষ্যই করেছিল একইরকম ব্যাগের কারনে?

    একটা পুরো দিন হাত পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে থাকায় সিঁড়ির দিকে যেতে মোরিনোর বেশ কষ্ট হলো।

    রুম ছেড়ে যাওয়ার আগে আমি স্মৃতি স্মারক হিসেবে ডেস্কের সাদা কাগজ আর ছুরির সেটটা সাথে নিয়ে গেলাম। পুলিশ যখন সব জানতে পারবে আর এখানে এসে রুম সার্চ করবে, তখন ছুরিগুলো না পাওয়া গেলে একটু সমস্যা হতে পারে। কিন্তু তাতে আমার কি?

    নিচে নেমে কফি শপের ভেতরে তাকালাম আমি। হালকা মিউজিক চলছিল তখনো। কেউ ছিল না। দরজার সাইনটা ঘুরিয়ে ‘ক্লোজড করে দিলাম।

    মোরিনো আমার পেছনে দাঁড়িয়ে তার হাত মালিশ করছিল। দড়ির দাগ ওর হাতে স্পষ্ট বসে গিয়েছে।

    “জঘন্য অভিজ্ঞতা ছিল,” সে বলল। “এখানে আমি আর কখনো আসছি না।”

    “লোকটা কিন্তু অতটা খারাপ ছিল না, ওর সাথে তোমার পরিচয় হলে ভালো হতো।”

    মোরিনোর মুখ শুকিয়ে গেল। “কার সাথে পরিচয় হলে ভালো হত? ঐ ব্যাটা আমার সাথে এমন করলই বা কেন?”

    সে তখনো বুঝতে পারেনি, দোকানের মালিকই সেই সিরিয়াল কিলার।

    আমি মুখ নামিয়ে আমার হাতে ধরা ছোট ছোট ক্রস আঁকা সাদা কাগজটার দিকে তাকালাম।

    1 2 3 4 5 6
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅর্থশাস্ত্র – চাণক্য
    Next Article জু – অৎসুইশি

    Related Articles

    কৌশিক জামান

    জু – অৎসুইশি

    August 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.