Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    গল্পবলিয়ে তারিণীখুড়ো

    উপন্যাস সত্যজিৎ রায় এক পাতা গল্প11 Mins Read0

    গল্পবলিয়ে তারিণীখুড়ো

    ‘তোরা ত আমাকে গল্পবলিয়ে বলেই জানিস,’ বললেন তারিণীখুড়ো, ‘কিন্তু এই গল্প বলে যে আমি এককালে রোজগার করেছি সেটা কি জানিস?’

    ‘না বললে জানব কী করে?’ বলল ন্যাপলা।

    ‘সে আজ থেকে বাইশ বছর আগের কথা,’ বললেন তারিণীখুড়ো। ‘বম্বেতে আছি, ফ্রি প্রেস জার্নাল কাগজে এডিটরের কাজ করছি, এমন সময় একটা বিজ্ঞাপন দেখলাম—আমেদাবাদের এক ধনী ব্যবসায়ী একজন গল্পবলিয়ের সন্ধান করছে। ভারি মজার বিজ্ঞাপন। হেডলাইন হচ্ছে “ওয়ানটেড এ স্টোরি টেলার।” তারপর লেখা আছে যে আমেদাবাদের একজন কাপড়ের ব্যবসায়ী বলবন্ত পারেখ একটি ব্যক্তির সন্ধান করছেন যে তাঁকে প্রয়োজন মতো একটি করে মৌলিক গল্প শোনাবে। সে লোক বাঙালি হলে ভালো হয়, কারণ বাঙালিরা খুব ভালো গল্প লেখে। বুঝে দেখ—“মৌলিক” গল্প। অন্যের লেখা ছাপা গল্প হলে চলবে না। সেরকম গল্প ত পৃথিবীতে হাজার হাজার আছে। কিন্তু এ লোক চাইছে এমন গল্প যা আগে কোথাও প্রকাশিত হয়নি। এখন ব্যাপারটা হচ্ছে কি, আমার পক্ষে গল্প তৈরি করা খুব কঠিন নয়। আমার জীবনের এতরকম অভিজ্ঞতা হয়েছে, তাতেই একটু-আধটু রং চড়িয়ে রদবদল করে বলে নিলেই সেটা গল্প হয়ে যায়। তাই কপাল ঠুকে অ্যাপ্লাই করে দিলুম। এটাও জানিয়ে দিলুম যে আমি গুজরাটি জানি না, তাই গল্প বললে হয় ইংরিজিতে না হয় হিন্দিতে বলতে হবে। হিন্দিটা আমার বেশ ভালো রকমই রপ্ত ছিল আর ইংরিজি-ত কলেজে আমার সাবজেক্টই ছিল। সাতদিনে উত্তর এসে গেল। পারেখ সাহেব জানালেন ওঁর ইনসমনিয়া আছে, রাত সাড়ে তিনটে চারটের আগে ঘুমোন না, সেই সময়টা গল্প শুনতে চান। রোজ নয়, যেদিন মন চাইবে। মাইনে মাসে হাজার টাকা।’

    ‘আমি আমার বম্বের খবরের কাগজের চাকরি ছেড়ে দিলুম। দেড় বছর করেছি এক কাজ, আর এমনিতেও ভালো লাগছিল না।’

    বুড়ো থেমে দুধ চিনি ছাড়া চায়ে একটা চুমুক দিয়ে আবার শুরু করলেন।

    আমেদাবাদ গিয়ে জানলুম পারেখ সাহেবের কাপড়ের মিল আছে, বিরাট ধনী লোক। বাড়িটাও পেল্লায়, অন্তত বারো-চোদ্দখানা ঘর। তার একটাতেই আমাকে থাকতে দিলেন। বললেন, ‘তোমার ডিউটির ত কোনও ধরা বাঁধা সময় নেই। মাঝরাত্তিরে তোমায় ডাকব—অন্য জায়গায় থাকলে চলবে কি করে। তুমি আমার বাড়িতেই থাক।’ ভদ্রলোকের বয়স পঁয়তাল্লিশের বেশি না। অর্থাৎ আমারই বয়সী। দুই ভাইপো আছে, হীরালাল আর চুনীলাল—তারা কাকার ব্যবসায় লেগে গেছে। এর মধ্যে হীরালালের বিয়ে হয়ে গেছে, সে বউ আর দুটি ছেলে মেয়ে নিয়ে ওই একই বাড়িতে থাকে।

    খাওয়ার ব্যাপারে আমার কোনও ঝামেলা নেই। পারেখ সাহেব জিগ্যেস করলেন আমি কোনও স্পেশাল রান্না খাব কি না, আমি বলে দিলুম যে আমি গুজরাটি রান্নায় অভ্যস্ত।

    মোট কথা মাসখানেকের মধ্যেই বেশ গ্যাঁট হয়ে বসলাম। গল্প দেখলাম মাসে দশ দিনের বেশি বলতে হচ্ছে না। বাকি সময়টা খাতায় গল্পের প্লট নোট করে রাখতাম। ইচ্ছে করলে আমি নিজেই একজন গল্পলিখিয়ে হয়ে যেতে পারতাম, কিন্তু তাতে মাসে হাজার টাকা আয় হত না। ভূতের গল্প, শিকারের গল্প, ক্রাইমের গল্প—সাধারণত এইগুলোই ভদ্রলোক বেশি ভালোবাসতেন শুনতে। তোরা ত জানিসই ভূতের অভিজ্ঞতা আমার অনেক হয়েছে। তেমনি রাজারাজড়াদের সঙ্গে শিকারও করেছি কম না। ক্রাইমের গল্পটা মাথা থেকে বার করে বলতুম, সেটা বেশ ভালোই উতরিয়ে যেত। মোটামুটি ভদ্রলোক আমার কাজে খুশিই ছিলেন।

    মাস ছয়েক হয়ে গেছে এমন সময় একদিন সকালে এক ভদ্রলোক পারেখ সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে এলেন। পারেখ সাহেব সেদিন একটু বেরিয়েছিলেন। আমি ভদ্রলোককে বৈঠকখানায় বসিয়ে জিগ্যেস করলুম তাঁর কী দরকার? উনি বললেন ওঁর নাম মহাদেব দুতিয়া, উনি একটা বিশেষ জনপ্রিয় গুজরাটি মাসিক পত্রিকা ললিতার সম্পাদক। ললিতার নাম আমি শুনেছিলাম। ওটার নাকি প্রায় এক লাখ সার্কুলেশন। আমি বললাম, ‘মিঃ পারেখের ফিরতে আঘঘণ্টাখানেক হবে, আপনি যদি বলেন, আপনার কী দরকার ছিল আমি সেটা ওঁকে জানিয়ে দিতে পারি।’

    দুতিয়া বললেন, ‘আমি ওঁর কাছ থেকে গল্প চাইতে এসেছি। ‘সাহিত্য’ পত্রিকায় উনি নিয়মিত লিখছেন কয়েক মাস থেকে। আমার গল্পগুলো খুব ভালো লেগেছে, তাই ভাবছিলাম আমাদের কাগজে যদি লেখা দেন। আমাদের পাঠক সংখ্যা সাহিত্যর প্রায় দেড়া।’

    ‘উনি গল্প লিখছেন?’ আমি একটু অবাক হয়েই জিগ্যেস করলাম।

    ‘আপনি জানেন না?’ ভদ্রলোকও অবাক।

    ‘না। একেবারেই জানি না।’

    ‘ভেরি গুড স্টোরিজ। আর ওঁর গল্পের খুব ডিমান্ড হয়েছে। সাহিত্যর গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে গেছে। আপনি গুজরাটি পড়তে পারেন?’

    ‘একটু একটু। হিন্দির সঙ্গে সামান্য মিল আছে ত।’

    ‘এই দেখুন ওঁর একটা গল্প।’

    দুতিয়া একটা থলি থেকে একটা পত্রিকা বার করে একটা পাতা খুলে দেখাল। লেখকের নামটা পড়তে আমার কোনও অসুবিধা হল না।

    ‘এ গল্প তুমি পড়েছ?’

    ‘সার্টেনলি। খুব ভালো গল্প।’

    ‘গল্পের মোটামুটি ব্যাপারটা খুব সংক্ষেপে আমাকে বলতে পার?’

    দুতিয়া বললেন, এবং আমি বুঝলাম যে সেটা আমারই বলা একটা গল্প। ভদ্রলোকের কাহিনীকার হবার শখ হয়েছে, কিন্তু নিজের মাথায় প্লট আসে না, তাই অন্যের কাছ থেকে শোনা মৌলিক গল্প নিজের বলে চালাচ্ছেন। গল্পবলিয়ে বাঙালি হবার প্রয়োজনও এখন বুঝলাম। আমি গুজরাটি হলে ত এ ব্যাপারটা অনেক আগেই জেনে ফেলতাম। এভাবে ঘটনাচক্রে দুতিয়ার কাছ থেকে জানার কোনও প্রয়োজন হত না।

    আমি বললাম, ‘আপনি কি বসবেন? না আরেকদিন আসবেন? অবিশ্যি আমিও ওঁকে ব্যাপারটা বলে দিতে পারি।’

    ‘আমি নিজেই আসব। কাল সকালে এলে দেখা হবে কি?’

    ‘এগারোটা নাগাদ এলে নিশ্চয়ই হবে। মিঃ পারেখ একটু দেরিতে ওঠেন।’

    মিঃ দুতিয়া চলে গেলেন।

    আমি আবার মন দিয়ে ব্যাপারটা উপলব্ধি করার চেষ্টা করলাম। ব্যাপার খুবই সোজা। লোকটা স্রেফ আমাকে না জানিয়ে আমার নাম ভাঙিয়ে নিজে নাম করছে।

    নাঃ—এর একটা বিহিত না করলেই নয়। এ জিনিস বরদাস্ত করা যায় না। অথচ লোকটাকে দেখে একবারও বুঝতে পারিনি যে সে এত অসৎ হতে পারে।

    পরদিন দোতলায় আমার ঘরের জানালা থেকে দেখলাম এগারোটার সময় একটা পুরোন ফোর্ড গাড়ি এসে পারেখের বাড়ির সামনে থামল আর তার থেকে দুতিয়া নামলেন। এবার থেকে ললিতা পত্রিকায় চোখ রাখতে হবে। পারেখের কোনও গল্প বেরোয় কিনা সেটা দেখতে হবে। কিন্তু এর প্রতিকার হয় কী করে? এ জিনিস ত চলতে দেওয়া যায় না।

    রাত্তিরে ডাক পড়ল। গেলুম। পারেখ বললে গল্প শুনবে। আমার ভাবাই ছিল। আমি বলে গেলুম। গল্পের শেষে আমায় তারিফও করলে। বললে, ‘দিস ইজ ওয়ান অফ ইওর বেস্ট।’

    এক মাস পরের কথা। এর মধ্যে আরও আট-দশটা গল্প বলা হয়ে গেছে। একদিন সকালে পারেখ বেরিয়েছে, আমি আমার ঘরে বসে আছি। এমন সময় পারেখের ভাইপো হীরালাল এসে বলল আমার টেলিফোন আছে।

    আমি নীচে আপিসে গেলুম। ফোন তুলে হ্যালো বলে দেখলুম ললিতার সম্পাদক দুতিয়া কথা বলছেন। বললেন, ‘মিঃ পারেখ নেই শুনছি।’

    ‘না, উনি একটু বেরিয়েছেন।’

    ‘বিশেষ জরুরি দরকার ছিল। তা আপনি কি একবার আমার আপিসে আসতে পারবেন? ঠিকানাটা টেলিফোন ডিরেক্টরিতেই পাবেন।’

    আমি বললাম, ‘এখান থেকে কতদূর আপনার আপিস?’

    ‘ট্যাক্সিতে এলে দশ মিনিটে পৌঁছে যাবেন।’

    ‘বেশ, আমি আসছি।’

    ললিতার আপিস দেখলেই বোঝা যায় তাদের অবস্থা খুব সচ্ছল। বেশ বড় ঘরে একটা বড় টেবিলের পিছনে দুতিয়া তিনটে টেলিফোন সামনে নিয়ে বসে আছেন। আমাকে দেখেই উত্তেজিত হয়ে বললেন, ‘কেলেঙ্কারি ব্যাপার!’

    ‘কী হল?’

    ‘মিঃ পারেখ আমাদের একটা গল্প পাঠিয়েছিলেন—চমৎকার গল্প। আমরা সেটা ছাপিয়েছিলাম। তারপর থেকে অন্তত দেড়শো চিঠি পেয়েছি—পাঠকরা বলছে গল্পটা চুরি—এর মূল লেখক হচ্ছেন তোমাদের বাংলাদেশের শরৎচন্দ্র চ্যাটার্জি।’

    গল্পবলিয়ে তারিণীখুড়ো

    তোরা তো আমাকে গল্পবলিয়ে বলেই জানিস, বললেন তারিণীখুড়ো, কিন্তু এই গল্প বলে যে আমি এককালে রোজগার করেছি সেটা কি জানিস?

    না বললে জানব কী করে? বলল ন্যাপলা।

    সে আজ থেকে বাইশ বছর আগের কথা, বললেন তারিণীখুড়ো। বম্বেতে আছি, ফ্রি প্রেস জার্নাল কাগজে এডিটরের কাজ করছি, এমন সময় একটা বিজ্ঞাপন দেখলাম–আমেদাবাদের এক ধনী ব্যবসায়ী একজন গল্পবলিয়ের সন্ধান করছে। ভারী মজার বিজ্ঞাপন। হেডলাইন হচ্ছে ওয়ানটেড এ স্টোরি টেলার। তারপর লেখা আছে যে আমেদাবাদের একজন কাপড়ের ব্যবসায়ী বলবন্ত পারেখ একটি ব্যক্তির সন্ধান করছেন যে তাঁকে প্রয়োজনমতো একটি করে মৌলিক গল্প শোনাবে। সে লোক বাঙালি হলে ভাল হয়, কারণ বাঙালিরা খুব ভাল গল্প লেখে। বুঝে দেখ–মৌলিক গল্প। অন্যের লেখা ছাপা গল্প হলে চলবে না। সেরকম গল্প তো পৃথিবীতে হাজার হাজার আছে। কিন্তু এ বোক চাইছে এমন গল্প, যা আগে কোথাও প্রকাশিত হয়নি। এখন ব্যাপারটা হচ্ছে কী, আমার পক্ষে গল্প তৈরি করা খুব কঠিন নয়। আমার জীবনের এতরকম অভিজ্ঞতা হয়েছে, তাতেই একটু-আধটু রঙ চড়িয়ে রদবদল করে বলে নিলেই সেটা গল্প হয়ে যায়। তাই কপাল ঠকে অ্যাপ্লাই করে দিলুম। এটাও জানিয়ে দিলুম যে, আমি গুজরাতি জানি না, তাই গল্প বললে হয় ইংরিজিতে না হয় হিন্দিতে বলতে হবে। হিন্দিটা আমার বেশ ভাল রকমই রপ্ত ছিল আর ইংরিজি তো কলেজে আমার সাবজেক্টই ছিল। সাতদিনে উত্তর এসে গেল। পারেখ সাহেব জানালেন ওঁর ইনসমনিয়া আছে, রাত সাড়ে তিনটে-চারটের আগে ঘুমোন না, সেই সময়টা গল্প শুনতে চান। রোজ নয়, যেদিন মন চাইবে। মাইনে মাসে হাজার টাকা।

    আমি আমার বম্বের খবরের কাগজের চাকরি ছেড়ে দিলুম। দেড় বছর করছি এক কাজ, আর এমনিতেই ভাল লাগছিল না।

    বুড়ো থেমে দুধ চিনি ছাড়া চায়ে একটা চুমুক দিয়ে আবার শুরু করলেন।

    .

    আমেদাবাদ গিয়ে জানলুম পারেখ সাহেবের কাপড়ের মিল আছে, বিরাট ধনী লোক। বাড়িটাও পেল্লায়, অন্তত বারো-চোদ্দখানা ঘর। তার একটাতেই আমাকে থাকতে দিলেন। বললেন, তোমার ডিউটির তো কোনও ধরাবাঁধা সময় নেই। মাঝরাত্তিরে তোমায় ডাক–অন্য জায়গায় থাকলে চলবে কী করে। তুমি আমার বাড়িতেই থাকো। ভদ্রলোকের বয়স পঁয়তাল্লিশের বেশি না। অর্থাৎ আমারই বয়সি। দুই ভাইপো আছে, হীরালাল আর চুনীলাল–তারা কাকার ব্যবসায় লেগে গেছে। এর মধ্যে হীরালালের বিয়ে হয়ে গেছে, সে বউ আর দুটি ছেলেমেয়ে নিয়ে ওই একই বাড়িতে থাকে।

    খাওয়ার ব্যাপারে আমার কোনও ঝামেলা নেই। পারেখ সাহেব জিজ্ঞেস করলেন আমি কোনও স্পেশাল রান্না খাব কিনা, আমি বলে দিলাম যে আমি গুজরাতি রান্নায় অভ্যস্ত।

    মোট কথা, মাসখানেকের মধ্যেই বেশ গ্যাঁট হয়ে বসলাম। গল্প দেখলাম মাসে দশ দিনের বেশি বলতে হচ্ছে না। বাকি সময়টা খাতায় গল্পের প্লট নোট করে রাখতাম। ইচ্ছে করলে আমি নিজেই একজন গল্পলিখিয়ে হয়ে যেতে পারতাম, কিন্তু তাতে মাসে হাজার টাকা আয় হত না। ভূতের গল্প, শিকারের গল্প, ক্রাইমের গল্প–সাধারণত এইগুলোই ভদ্রলোক বেশি ভালবাসতেন শুনতে। তোরা তো। জানিসই ভূতের অভিজ্ঞতা আমার অনেক হয়েছে। তেমনি রাজারাজড়াদের সঙ্গে শিকারও করেছি কম। ক্রাইমের গল্পটা মাথা থেকে বার করে বলতুম, সেটা বেশ ভালই উতরিয়ে যেত। মোটামুটি ভদ্রলোক আমার কাজে খুশিই ছিলেন।

    মাস ছয়েক হয়ে গেছে এমন সময় একদিন সকালে এক ভদ্রলোক পারেখ সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে এলেন। পারেখ সাহেব সেদিন একটু বেরিয়েছিলেন। আমি ভদ্রলোককে বৈঠকখানায় বসিয়ে জিজ্ঞেস করলাম তাঁর কী দরকার। উনি বললেন ওঁর নাম মহাদেব দুতিয়া, উনি একটা বিশেষ জনপ্রিয় গুজরাতি মাসিক পত্রিকা ললিতার সম্পাদক। ললিতার নাম আমি শুনেছিলাম। ওটার নাকি প্রায় এক লাখ সার্কুলেশন। আমি বললাম, মিঃ পারেখের ফিরতে আধঘণ্টাখানেক হবে, আপনি যদি বলেন, আপনার কী দরকার ছিল আমি সেটা ওঁকে জানিয়ে দিতে পারি।

    দুতিয়া বললেন, আমি ওঁর কাছ থেকে গল্প চাইতে এসেছি। সাহিত্য পত্রিকায় উনি নিয়মিত লিখছেন কয়েক মাস থেকে। আমার গল্পগুলো খুব ভাল লেগেছে, তাই ভাবছিলাম আমাদের কাগজে যদি লেখা দেন। আমাদের পাঠকসংখ্যা সাহিত্যর প্রায় দেড়া।

    উনি গল্প লিখছেন? আমি একটু অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করলাম।

    আপনি জানেন না? ভদ্রলোকও অবাক!

    না। একেবারেই জানি না।

    ভেরি গুড স্টোরিজ। আর ওঁর গল্পের খুব ডিমান্ড হয়েছে। সাহিত্যর গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে গেছে। আপনি গুজরাতি পড়তে পারেন?

    একটু একটু। হিন্দির সঙ্গে সামান্য মিল আছে তো।

    এই দেখুন ওঁর একটা গল্প।

    দুতিয়া একটা থলি থেকে একটা পত্রিকা বার করে একটা পাতা খুলে দেখাল। লেখকের নামটা পড়তে আমার কোনও অসুবিধা হল না।

    এ গল্প তুমি পড়েছ?

    সার্টেনলি। খুব ভাল গল্প।

    গল্পের মোটামুটি ব্যাপারটা খুব সংক্ষেপে আমাকে বলতে পারো?

    দুতিয়া বললেন, এবং আমি বুঝলাম যে, সেটা আমারই বলা একটা গল্প। ভদ্রলোকের কাহিনীকার হবার শখ হয়েছে, কিন্তু নিজের মাথায় প্লট আসে না, তাই অন্যের কাছ থেকে শোনা মৌলিক গল্প নিজের বলে চালাচ্ছেন। গল্পবলিয়ে বাঙালি হবার প্রয়োজনও এখন বুঝলাম। আমি গুজরাতি হলে তো এ ব্যাপারটা অনেক আগেই জেনে ফেলতাম। এভাবে ঘটনাচক্রে দুতিয়ার কাছ থেকে জানার কোনও প্রয়োজন হত না।

    আমি বললাম, আপনি কি বসবেন? না আরেকদিন আসবেন? অবিশ্যি আমিও ওঁকে ব্যাপারটা বলে দিতে পারি।

    আমি নিজেই আসব। কাল সকালে এলে দেখা হবে কি?

    এগারোটা নাগাদ এলে নিশ্চয়ই হবে। মিঃ পারেখ একটু দেরিতে ওঠেন।

    মিঃ দুতিয়া চলে গেলেন।

    আমি আবার মন দিয়ে ব্যাপারটা উপলব্ধি করার চেষ্টা করলাম। ব্যাপার খুব সোজা। লোকটা স্রেফ আমাকে না জানিয়ে আমার নাম ভাঙিয়ে নিজে নাম করছে।

    নাঃ-এর একটা বিহিত না করলেই নয়! এ জিনিস বরদাস্ত করা যায় না। অথচ লোকটাকে দেখে একবারও বুঝতে পারিনি যে সে এত অসৎ হতে পারে।

    .

    পরদিন দোতলায় আমার ঘরের জানলা থেকে দেখলাম এগারোটার সময় একটা পুরনো ফোর্ড গাড়ি এসে পারেখের বাড়ির সামনে থামল আর তার থেকে দুতিয়া নামলেন। এবার থেকে ললিতা পত্রিকায় চোখ রাখতে হবে। পারেখের কোনও গল্প বেরোয় কিনা সেটা দেখতে হবে। কিন্তু এর প্রতিকার হয় কী করে? এ জিনিস তো চলতে দেওয়া যায় না।

    রাত্তিরে ডাক পড়ল। গেলুম। পারেখ বললে গল্প শুনবে। আমার ভাবাই ছিল। আমি বলে গেলুম। গল্পের শেষে আমায় তারিফও করলে। বললে, দিস ইজ ওয়ান অফ ইওর বেস্ট।

    .

    এক মাস পরের কথা। এর মধ্যে আরও আট-দশটা গল্প বলা হয়ে গেছে। একদিন সকালে পারেখ বেরিয়েছে, আমি আমার ঘরে বসে আছি। এমন সময় পারেখের ভাইপো হীরালাল এসে বলল আমার টেলিফোন আছে।

    আমি নীচে আপিসে গেলুম। ফোন তুলে হ্যালো বলে দেখলুম ললিতার সম্পাদক দুতিয়া কথা বলছেন। বললেন, মিঃ পারেখ নেই শুনছি।

    না, উনি একটু বেরিয়েছেন।

    বিশেষ জরুরি দরকার ছিল। তা আপনি কি একবার আমার আপিসে আসতে পারবেন? ঠিকানাটা টেলিফোন ডিরেক্টরিতেই পাবেন।

    আমি বললাম, এখান থেকে কতদূর আপনার আপিস?

    ট্যাক্সিতে এলে দশ মিনিটে পৌঁছে যাবেন।

    বেশ, আমি আসছি।

    ললিতার আপিস দেখলেই বোঝা যায় তাদের অবস্থা খুব সচ্ছল। বেশ বড় ঘরে একটা বড় টেবিলের পিছনে দুতিয়া তিনটে টেলিফোন সামনে নিয়ে বসে আছেন। আমাকে দেখেই উত্তেজিত হয়ে বললেন, কেলেঙ্কারি ব্যাপার।

    কী হল?

    মিঃ পারেখ আমাদের একটা গল্প পাঠিয়েছিলেন–চমৎকার গল্প। আমরা সেটা ছাপিয়েছিলাম। তারপর থেকে অন্তত দেড়শো চিঠি পেয়েছি–পাঠকরা বলছে গল্পটা চুরি–এর মূল লেখক হচ্ছেন তোমাদের বাংলাদেশের শরৎচন্দ্র চ্যাটার্জি।

    আনন্দমেলা, পূজাবার্ষিকী ১৪০১ রচনাকাল ১৯৮৮

    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleগণৎকার তারিণীখুড়ো
    Next Article গণেশ মুৎসুদ্দির পোর্ট্রেট

    Related Articles

    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    উপন্যাস কল্লোল লাহিড়ী

    ইন্দুবালা ভাতের হোটেল – কল্লোল লাহিড়ী

    May 28, 2025
    উপন্যাস বুদ্ধদেব গুহ

    কোয়েলের কাছে – বুদ্ধদেব গুহ

    May 23, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রবার্টসনের রুবি – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    বোম্বাইয়ের বোম্বেটে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রয়েল বেঙ্গল রহস্য – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }