Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    গল্পসংগ্রহ – অজেয় রায়

    লেখক এক পাতা গল্প994 Mins Read0
    ⤷

    ভূমিকা – গল্প লেখার গল্প

    পাকেচক্রে লেখক বনলাম।

    এম এ পাসের রেজাল্ট বেরুতেই কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে চাকরির দরখাস্ত ছাড়তে শুরু করেছিলাম। একটা মাস্টারি লেগে গেল। সংসারে অনটন। বাছবিচারের সময় নেই। তখুনি দিয়ে নিলাম।

    জায়গাটা অচেনা; ব্যান্ডেলের কাছে। অজ পাড়াগাঁ নয়, তবে গ্রাম বটে। কোঠা বাড়ি অল্প। ধানক্ষেত, পুকুর, ঝোপজঙ্গল, খেলার মাঠ সব মিলেমিশে রয়েছে। স্কুলবাড়িটা পাকা। পুরনো স্কুল। দূর দূর থেকে ছেলেরা পড়তে আসে। বই আগলে ধুলো পায়ে ইস্কুলে হাজির হয়। শিক্ষকরা আসেন কেউ হেঁটে কেউ বা সাইকেলে।

    কাছে একজনের বাড়িতে আমার থাকা এবং খাওয়ার ব্যবস্থা ঠিক করে দিলেন হেডমাস্টারমশাই।

    একেবারে ছোকরা এবং শহুরে লোক। নতুন মাস্টার সম্বন্ধে তাই ছাত্রদের কৌতূহল আর মেটে না। হাঁ করে দেখে তার ধরনধারণ পোশাকআশাক উলটো পালটা প্রশ্নও চলে। ভারি অস্বস্তি হয়। যা হোক মাসখানেক বাদে সামলে উঠলাম। সহকর্মী. অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপ পরিচয় হল। তাঁরা আমায় আপন করে নিলেন।

    কিন্তু ছাত্রদের নিয়ে বেশ মুশকিলে পড়লাম।

    এখানে ছাত্ররা কড়া শাসনে অভ্যস্ত। তারা সাদামাটা বকুনির চেয়ে চড়চাপড় গাঁট্টাকেই বেশি মানে। আমি কারো গায়ে হাত দিতে পারি না। ছেলেরা আমার ক্লাসে বড্ড কথা বলে। পড়া করে আসে না। কথা না শুনলে ধমক দিই। চশমাটি চোখ থেকে নামিয়ে গুম মেরে থাকি। আমার শাস্তির দৌড় বড়োজোর―‘দাঁড়িয়ে থাক।’

    ওসব থোড়াই কেয়ার করে ছাত্ররা। হেডমাস্টারমশাই খুব ডিসিপ্লিনের ভক্ত। তিনি লক্ষ্য করলেন ব্যাপার। একদিন আমায় ডেকে বললেন, ‘মাস্টারমশাই, ক্লাসে ডিসিপ্লিনটার দিকে খেয়াল রাখবেন। একটু গোলমাল হচ্ছে। ছেলেরা পড়াটড়া করে আসছে তো? দরকার হলে শক্ত হবেন।

    ভেবে পাই না কী করব!

    অন্য মাস্টাররা বুদ্ধি দিলেন, ‘অত নরম হলে কি ক্লাস ম্যানেজ করা যায়? একটু কড়া হন।’

    ভূগোল স্যার বিপুলকায় ভূপেনবাবু বজ্রমুষ্টি আন্দোলিত করে হুংকার ছাড়লেন, ‘এই! এই হচ্ছে দাওয়াই। এক ডোজ পড়লেই সব ঢিট। একদিন এক্সপেরিমেন্ট করে দেখুন। ব্যাস প্রবলেম সলভড। এসব সোজা ছেলে নয় মশাই— বিচ্চু! বিচ্চু।’ অনেক টিচার মাথা নাড়লেন। মালুম হল ভূপেনবাবুর ফরমুলায় তাঁদেরও সায় আছে।

    চুপ করে থাকি। ছাত্রদের মারধোর করতে আমার বাধে। যে স্কুলে পড়েছি সেখানে মারের রেওয়াজ ছিল না। আর নিজের বাড়িতে বা স্কুলে কখনো মার খেয়েছি বলে মনে পড়ে না। আমার ধারণা মেরে ধরে ছেলেদের শোধরানো বা বাগানো যায় না। মারের ব্যথায় ছেলেরা প্রথম প্রথম ভয় পায় বটে। কিন্তু পরে মার সহ্য হয়ে গেলে ঠ্যাঠা হয়ে যায়। তার চেয়ে অন্তরে ঘা দিতে পারলে কথা শোনে। উপদেশগুলো ঠিক জায়গায় পৌঁছয়। কিন্তু উপায়টা যে কী ভেবে পাই না।

    সব মাস্টার যে শাসন করতে ছাত্র ঠ্যাঙান তা নয়। কিন্তু তাঁদের ভারিক্কি চেহারা। চোখ পাকিয়ে ধমক, গার্জেন বা হেডমাস্টারমশাইকে নালিশ করার হুমকি, তাতেই কাজ হয়। সেটুকুও যে ভালো মতো পারি না। অল্প বয়স এবং নিরীহ

    চেহারা আমার কাল হয়েছে। ছাত্ররা পেয়ে বসেছে।

    এইভাবে চললে যদি আমায় পার্মানেন্ট না করে? হেডমাস্টার যদি আমায় অযোগ্য ভাবেন? মনে মনে মুষড়ে পড়ি। উপায় একটা বেরিয়ে এল। অদ্ভুত উপায়। ক্লাস সিক্সে, ইংরেজি পড়াচ্ছি। হাফ ইয়ারলি পরীক্ষা হয়ে গেছে। তখনও রেজাল্ট বেরোয়নি, পড়ার চাপ কম, ছেলেদের ক্লাসে আটকে রাখাই প্রধান কর্তব্য।

    খানিক পড়ালাম। ছেলেগুলো আর পড়তে চায় না। ছটফট করছে। ক্লাসে গোলমাল শুরু হয়ে গেল। এই ছোটোদের বাগানোই বেশ কঠিন। পরীক্ষা বা পাঠ্য বিষয়ে আলোচনা করলে উঁচু ক্লাসে তবু খানিকটা কান দেয়। ছোটোদের ওসব মোটে ভালো লাগে না।

    ধমক লাগাই— ‘আঃ আস্তে। চুপ। কথা নয়।’

    গোলমাল একটু থিতোয়, ফের বাড়ে। পাশের ঘরে হেডমাস্টারমশাই ক্লাস নিচ্ছেন। যদি তাঁর ডিসটারবেস হয়? উদবিগ্ন হই। ‘স্যার একটা গল্প বলুন।’ কচি গলায় অনুরোধ আসে।

    আমি গল্প অনেক জানি। বই পড়া আমার নেশা। বিশেষত অ্যাডভেঞ্চারের গল্প। আগেও ছেলেরা ধরেছে গল্প বলতে। সাহস পাইনি। কী জানি ক্লাসে গল্প বলা উচিত হবে কিনা? সেদিন মাথায় একটা বুদ্ধি খেলল। বললাম, ‘বলতে পারি যদি তোমরা চুপ করে থাক। একদম কথা না বল। কী, রাজি?’

    —‘হ্যাঁ স্যার, হুঁ স্যার।’ ক্লাসসুদ্ধু আশ্বাস দিল।

    কী বলা যায়? চট করে যা মাথায় এল শুরু করে দিলাম- ‘রবিনহুড।’

    গল্প বলা আমার অভ্যেস আছে। নিজের ছোটো ভাইবোনদের কত গল্প শুনিয়েছি। সুযোগ পেলেই রাতে খাবার আগে তারা দাদার কাছে গল্প শুনতে বসে।

    ধীরে ধীরে বলে চলি। ফুটিয়ে তুলি গল্পের পাত্রপাত্রীদের হাবভাব, বীরত্ব, অ্যাডভেঞ্চার। যাতে কানে শুনে ছেলেরা মনের ভিতর পরিষ্কার দেখতে পায় সেই অচেনা দেশের, অচেনা লোকগুলোর ছবি। দুরন্ত ছেলেরা চোখ বড়ো বড়ো করে শোনে দস্যু রবিনহুডের কীর্তিকলাপ।

    হঠাৎ পিছনের বেঞ্চে দুজনে কিঞ্চিৎ ঠেলাঠেলি। কিছু জোরে জোরে কথা।

    অমনি গল্প বন্ধ করলাম। সেই বেঞ্চের দিকে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে বললাম— ‘ফের? তবে থাক।’

    গোটা ক্লাসটা মহা বিরক্তিতে শাসিয়ে উঠল, ‘অ্যাই কী হচ্ছে?’

    একটি অপরাধী নালিশ জানাল, ‘স্যার, ও আমার পা মাড়িয়ে দিল।’

    তক্ষুনি দ্বিতীয়জন কাতর কণ্ঠে সাফাই গাইল, ‘ইচ্ছে করে নয় স্যার। শুনতে শুনতে ভুল করে।’

    —‘হুঁ। মনে রেখো, আর হলে কিন্তু—

    ফের গল্প শুরু করি।

    ঢং! ঘণ্টা পড়ল। রবিনহুডের গল্প মস্ত বড়ো। আধঘণ্টায় আধখানাও হয়নি। ‘পরের দিন বলব,’ বলে উঠলাম।

    পরদিন ওই ক্লাসে ঢুকতেই ‘গল্প গল্প’, করে চেঁচাতে থাকে ছেলেরা। বললাম, ‘আগে একটু পড়াই। তারপর বলব। গোলমাল করলে কিন্তু বলব না।’

    ছেলেরা চুপ করে পড়া শোনো। পিরিয়ডের পনোরো মিনিট রবিনহুড বললাম। এইভাবে পাঁচ দিনে শেষ করলাম গল্পটা।

    আমার গল্প বলার খ্যাতি হু হু করে ছড়িয়ে পড়ল সারা ক্লাসে। যে ক্লাসেই যাই দাবি আসে— ‘গল্প। একটা গল্প বলুন স্যার।’

    নিজের কাজ গুছোতেই ক্লাসে ক্লাসে গল্প বলা শুরু করলাম।

    প্রথমত, গল্প শোনার লোভে ছেলেরা চুপ করে থাকে। গোলমাল করে না। তাহলে যে সেদিন গল্প বলা বন্ধ। দ্বিতীয়ত, এই টোপ দিয়ে দিব্যি পড়াটাও তৈরি করিয়ে নেওয়া যায়।

    পিরিয়ডের শেষ দশ-বারো মিনিট গল্পের পালা। তার আগে পড়া। আগের দিনের দেওয়া টাস্ক ধরি। নতুন পড়া বুঝিয়ে দিই। নিয়ম করেছি, পড়া ধরলে ক্লাসে বারোজনের বেশি উত্তর না দিতে পারলে সেদিন সেই ক্লাসে গল্প বন্ধ। ফলে কেউ পড়া না পারলে অন্য ছেলেরাই তাকে খেঁকিয়ে ওঠে— ‘অ্যাই পড়া করিসনি কেন?’

    আর-একটা নিয়ম— যে ছেলে পর পর দুদিন পড়া তৈরি করে আসবে না তার ভাগ্যে দ্বিতীয় দিন গল্প শোনা নিষেধ। অপরাধীকে ক্লাস থেকে বের করে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় দূরে। যাতে তার কানে গল্পের কথা না আসে। অথচ সে দেখতে

    পাচ্ছে ক্লাসসুদ্ধু উদ্‌গ্রীব হয়ে গিলছে গল্পের কথা। উঃ কী যন্ত্রণা!

    —‘স্যার মধু শুনছে। কাছে চলে এসেছে।’

    একদিন গল্পের সময় অভিযোগ শুনে দূরে দাঁড় করানো শাস্তি পাওয়া মধু কখন গুটিগুটি এসে দাঁড়িয়েছে ক্লাসের কাছাকাছি। গলা বাড়িয়ে কান খাড়া করে শুনছে। সে আর থাকতে পারেনি। কিন্তু অন্য ছেলেরা ছাড়বে কেন? তারা কষ্ট করে পড়া তৈরি করে এসে গল্প শুনতে পাবে, আর মধু ফাঁকি দিয়ে ফোকসে শুনবে? ওটি হচ্ছে না। তাই ধরিয়ে দিয়েছে।

    এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে। মধুর মতন হতভাগ্যরা অন্য ছেলেদের হাতে পায়ে ধরে গল্পের ফাঁকটুকু পরে শুনে নেয়। তবে স্যারের মুখে শোনার স্বাদ নাকি আলাদা। অমন করে বলতে পারে না কেউ। তাছাড়া অন্যরা বলতেও চায় না। জব্দ করে।

    একসঙ্গে পাঁচটা ধারাবাহিক চালালাম। দারুণ সব গল্প! হোয়াইট ফ্যাং। টোইন্টি থাউজেন্ড লীগ্‌স্‌ আনডার দ্য সী। রবিনসন ক্রুসো। এমনি সব

    বাঘা বাঘা দুষ্টু ছেলে, যারা সব মাস্টারের ভীতির কারণ তারা অবধি আমার ক্লাসে ঢুঁ শব্দটি করে না গল্প ভালো করে শোনার লোভে। এমনকী পড়াও করে আসে।

    একদিন কামাই করেছিলাম। পরদিন স্কুলে যেতেই ম্যাথমেটিক্স-এর টিচার ভানুবাবু ধরলেন, ‘কাল আসেননি যে?’

    বললাম, ‘একটু জ্বর হয়েছিল।’

    —‘তা বেশ। কিন্তু আপনার ক্লাস নিতে আর কক্ষনো যাচ্ছি না। নেভার। এই বলে রাখলুম। জ্বালিয়ে মেরেচে মশাই। ক্লাসে ঢুকতে-না-ঢুকতেই ছেলেগুলো চেঁচাতে লাগল— আপনি কেন? আমাদের স্যার কই? তারপর বলে গল্প বলতে হবে। তা অন্য গল্প চলবে না। কাউন্ট অফ মন্টিক্রিস্টো না কী— সেই গল্পটা চাই। বুঝুন ঠ্যালা। নামই শুনিনি জন্মে।’

    জানা গেল আমার ক্লাস নিতে আরও দু-তিনজন মাস্টারের ওই একই হাল হয়েছে। অথচ আর কোনো শিক্ষক কামাই করলে আমাকে তাঁর ক্লাসে নিয়ে যাবার জন্য ছেলেদের কী ঝুলোঝুলি। ওই গল্পের লোভে। বকেবকে মুখ ব্যথা হয়ে যায়। অন্য মাস্টাররা হাসেন। তাঁদের তো মজা। খাটুনি কমে। বলেন— ‘কেমন জব্দ।’

    তবে ক্লাস নাইন-টেন-এ ধারাবাহিক গল্প বলতে কিছুতেই রাজি হইনি। সে সব ক্লাসে পড়ার চাপ বেশি। সবদিন গল্প বলার সময় মেলে না। তবু ছেলেরা ছাড়ে না। তাই যেদিন সময় পাই নানা টুকিটাকি গল্প বলি— বিখ্যাত সব ঐতিহাসিক ঘটনা। নাম করা লেখক, বৈজ্ঞানিক, পর্যটকদের জীবনের বিচিত্র কাহিনি। পৃথিবীর নানান জায়গাকার অদ্ভুত অদ্ভুত জীবজন্তু। বইয়ে লেখা বানানো গল্পের চাইতে সে সমস্ত খবর কম আকর্ষণীয় নয়।

    একদিন হেডমাস্টারমশাই আমায় ডেকে বললেন, ‘আপনি নাকি ক্লাসে ইন্টারেস্টিং গল্প বলেন?’

    এই রে! আমতা আমতা করি, ‘আজ্ঞে মানে একটু-আধটু। পিরিয়ডের শেষের দিকে।’

    —‘দেখবেন পড়ায় যেন ক্ষতি না হয়।’

    —‘আজ্ঞে না। কোর্স আমি ঠিকমতো এগুচ্ছি।’

    —‘অল রাইট। অল রাইট। ভালো বইয়ের গল্প শুনলে সাহিত্যে উৎসাহ হয়। নলেজ বাড়ে। এবার লাইব্রেরির বই কেনার সময় আপনি একটা লিস্ট দেবেন ছোটোদের বইয়ের।’

    বোঝা গেল হেডমাস্টার আমার গল্প বলার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন এবং অখুশি নন। নিশ্চিন্ত হলাম।

    এইভাবে বছর খানেক চলার পর আমার গল্পের পুঁজি এল ফুরিয়ে। ভালোমতো জানা বড়ো গল্প সব বলে ফেলেছি। ছোটোদের ভালো লাগে এমন রোমাঞ্চকর কাহিনি আরও কত পড়েছি। কিন্তু অনেক দিন হয়ে গেছে সে সব উপন্যাসের খুঁটিনাটি গেছি ভুলে। কাঠামোর খানিকটা শুধু মনে আছে আর গল্পের কিছু পাত্রপাত্রী। বইগুলি একবার ঝালিয়ে নিতে পারলে হত। কিন্তু সে সব বই কোথায়? নানাজনের কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে পড়েছি। লাইব্রেরি থেকে নিয়ে পড়েছি। এখানে ভালো লাইব্রেরি নেই, বই জোগাড় করতে পারি না।

    এখন গল্প বলা থামাবারও উপায় নেই। তাহলে আর ক্লাস ম্যানেজ করতে হচ্ছে না। নিজেই নিজের পায়ে কুড়ুল মেরেছি। মহা দুশ্চিন্তায় পড়ি।

    উঁচু ক্লাসের টুকরো টুকরো ইন্টারেস্টিং গল্পের স্টক এখনও প্রচুর। নানা পত্রপত্রিকায় এমনি কত ঘটনা চোখে পড়ে। ছোটোদের ক্লাস নিয়েই ভাবনা। ধারাবাহিক চালাবার মতো রোমাঞ্চকর উপন্যাস যে ছাই আর কিছু মাথায় আসছে না। আর এক-একদিনে শেষ হওয়া ছোটো ছোটো গল্প বললে কাজ হাসিল হবে না। এই ধারাবাহিকের টানেই ছেলেরা পড়া তৈরি করে আসে। ক্লাসে ডিসিপ্লিন বজায় থাকে। টানা গল্পে একদিনও ছেদ দিতে তারা রাজি নয়। কিন্তু ছোটো গল্প এক-আধদিন না শুনলেও তেমন এসে যায় না। বিপাকে পড়ে যে গল্পগুলো প্রায় ভুলে গিছলাম সেগুলোও বলতে শুরু করলাম। কিছু মনে আছে— বাকিটা বানাই। কে আর ধরবে? মনে মনে একটু সংকোচ হয়। পরে ছেলেরা যদি পড়ে এই বইগুলো, কী ভাববে?

    বলতে বলতে মনে মনে হাসি। আসল লেখকরা যদি জানতেন তাঁদের কাহিনির আমার হাতে কী হাল হচ্ছে…।

    এমনি আরও ছয় মাস চালাবার পর আধখানা সিকিখানা মনে থাকা গল্পের ভাণ্ডারও আমার শেষ হয়ে এল এবার? মরিয়া হয়ে এক দুঃসাহসিক কাণ্ড করে বসলাম।

    ক্লাস সেভেন, সেকশন-এ-তে যে গল্পটা বলছিলাম সেটা শেষ হয়ে গেছে। ‘আজ নয় কাল থেকে’, বলে ঠেকালাম দুদিন। তারপর স্রেফ বানিয়ে এক গল্প শুরু করলাম।

    বিষয়— আফ্রিকা অভিযান। গল্পের নায়ক এক বাঙালি বৈজ্ঞানিক এবং তাঁর দুই যুবক সঙ্গী। এক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সূত্র ধরে তারা বেরিয়ে পড়ল এক রোমাঞ্চকর অ্যাডভেঞ্চারে।

    আফ্রিকা সম্বন্ধে অনেক কিছুই পড়েছি। তাই থেকে বর্ণনা দিতে লাগলাম অভিযানের পথের, সেখানকার গাছপালা, জীবজন্তু, অধিবাসীদের। বলতে বলতে চরিত্রগুলো দিব্যি জীবন্ত হয়ে উঠল। জমে গেল গল্প।

    আসলে রোমাঞ্চকর গল্প বানাতে আমাকে খুব বেশি কষ্ট করতে হয়নি। কল্পনায় আমি অ্যাডভেঞ্চারের জাল বুনি। অমনি ঘটনা যেখানে যা পাই পড়ে ফেলি। কত ঝোপ জঙ্গল ভরা মাঠে ঘাটে, নদীর তীরে, নির্জন প্রান্তরে এক বা দু-একটি বন্ধু নিয়ে ঘুরেছি অ্যাডভেঞ্চারের আশায়। ছোটোখাটো অ্যাডভেঞ্চার জুটেও গেছে। পুরনো ভাড়া বাড়ি পেলে আঁতিপাঁতি করে খুঁজে দেখেছি গুপ্তধন আছে কিনা। বই পড়া গল্পের সঙ্গে নিজের বানানো টুকরে টুকরো অ্যাডভেঞ্চার শুনিয়েছি ভাইবোনদের। এতখানি বানানো, আস্ত একখানা উপন্যাসের প্লট ফাঁকা থাকে কখনো? ছেলেদের আগ্রহ দেখে মনের সুখে লাগাম ছেড়ে দিয়ে ছোটালাম ঘটনার পর ঘটনার স্রোত। তিন সপ্তাহে, নয় পিরিয়ডে একটু একটু বলে শেষ করতে হল কাহিনি।

    পরদিনই নিবারণ এসে বলল, ‘স্যার বইয়ের নাম, লেখকের নামটা বলুন-না।’

    —‘কেন?’

    —‘বইটা কিনে ফেলব।’

    অ্যাঁ! বলে কী!

    নিবারণ খুব বই পড়তে ভালোবাসে। তার কাকা কলকাতায় কাজ করেন। যে গল্পগুলো আগে বলেছি তার কয়েকখানা বই সে কিনে ফেলেছে। বাবাকে দিয়ে আনিয়েছে কলকাতা থেকে।

    —‘তোমার ভালো লেগেছে?’ কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করি।

    —‘হ্যাঁ স্যার। দারুণ।’

    —‘আগের গুলোর মতন?’

    —‘হ্যাঁ স্যার।’

    —‘পরের দিন, ‘আগে পড়া’। ‘ইংরেজি নামটা ঠিক মনে পড়ছে না,’ ইত্যাদি বলে নিবারণকে এড়িয়ে গেলাম।

    এ যে সম্পূর্ণ আমার বানানো বলি কী করে? বললে কি আর বিশ্বাস করবে? মনে একটু গর্বও হয়। আমার বানানো গল্প পয়সা দিয়ে কিনে পড়তে চাইছে।

    গল্পটা লিখে ফেললে কেমন হয়? এখনও সদ্য সদ্য মনে আছে। পরে ভুলে যাব। শেষটায় লিখেই ফেললাম, তবে কোথাও ছাপাবার জন্য দিতে সাহস হল না।

    এর আগে আমার দুটি গল্প ছেপেছে একটি ছোটোদের পত্রিকা। গল্প দুটি মজার এবং আকারে নেহাত ছোটো। তিন নম্বর গল্পটা পাঠাতে আর ছাপেনি। আমার লেখক হবার উৎসাহেও ভাঁটা পড়েছে। মনে ভেবেছি এই ঢের। আর কোথাও লেখা ছাপাতে চেষ্টা করিনি। লেখক হবার স্বপ্ন মন থেকে ঝেড়ে ফেলেছি।

    মনে ভরসা এসে গিছল। তাই ক্লাস নাইন, সেকশন এ-তে ফের একটা অ্যাডভেঞ্চার বলতে শুরু করলাম। পুরো নিজের বানানো। সেটাও বেশ জমল।

    কয়েক মাসের মধ্যেই ওই স্কুল ছাড়লাম। চাকরি বদলালাম। এলাম শান্তিনিকেতনে।

    গল্প বানানোর অভ্যেসটা তখন মোক্ষম রকম চেপে বসেছে। একটা ছোটো গল্প লিখে পাঠিয়ে দিলাম কলকাতার এক নামকরা ছোটোদের পত্রিকায়। অবাক কাণ্ড! সেটা ছাপা হল। ফের একটা পাঠালাম। সেটাও ছাপা হল। দুটো গল্প ছাপার মাঝখানে এক বছরের বেশি ফাঁক। তাতে কী? এটুকুই বা আশা করেছি কি? হ্যাঁ, এ যাবৎ আমার যা ছাপা হয়েছে সব ছদ্মনামে। আসল নাম দিতে ভরসা হয়নি।

    হঠাৎ খবর পেলাম ওই পত্রিকার সম্পাদিকা শান্তিনিকেতনে এসেছেন বেড়াতে। আলাপ করার ভারি ইচ্ছে। সাহসে আর কুলোয় না। শুধু সম্পাদিকা নন, নামকরা লেখিকা। ওঁর গল্প আমি কত পড়েছি। দূর থেকে দেখলাম। চশমা পরা রাশভারি চেহারা। কোনো বড়ো লেখকের সঙ্গে কখনো পরিচয় নেই। ওঁদের সম্বন্ধে মনে খুব ভয় ভক্তি। না জানি কেমন ভাবে কথা বলেন! না দেখে যা দু-একটা ছেপেছেন। চেনা হলে আমার সম্বন্ধে ধারণা কী দাঁড়াবে ভগবান জানেন। হয়তো উলটো ফল হবে। আর লেখাই ছাপবেন না। সম্পাদিকার বাড়ির সামনে কয়েকদিন ঘোরাঘুরি করলাম। কত লোক আসছে যাচ্ছে। শেষে একদিন বুক ঠুকে ঢুকে পড়লাম।

    আলাপ হতে ভয় ভেঙে গেল। অতি সাধাসিধে লোক। হ্যাঁ আমার গল্প দুটোর কথা মনে আছে। উৎসাহ দিলেন— ‘আরও লেখো। এবং নিজের নামে লেখো।’

    উৎসাহ পেয়ে লিখে ফেললাম কয়েকটা ছোটো গল্প আর কয়েকটা প্রবন্ধ। সম্পাদিকা বছরে দু-তিনবার শান্তিনিকেতনে আসেন। লেখা নিয়ে গিয়ে সংশোধন করিয়ে নিই। তারপর সেগুলো ছাপাও হল ওই পত্রিকায়। আরও দু-তিনবছর কেটে গেল এর মাঝে।

    সেই মস্ত অ্যাডভেঞ্চারটা কিন্তু এখনও বের করিনি। সম্পাদিকা যদি চটে যান? ভাবেন লাইপেয়ে মাথায় উঠেছে। বেশি বিরক্ত করছে। নিজের মনেই ঘষামাজা করি লেখাটা।

    একবার সাহস করে উপন্যাসটা নিয়ে হলাম হাজির।

    —‘এটা কী?’ জাবদা খাতাটার দিকে সন্দিগ্ধ চোখে চেয়ে সম্পাদিকা প্রশ্ন করলেন।

    কাঁচুমাচু ভাবে বলি, ‘আজ্ঞে উপন্যাস। একটু দেখে দেন যদি।’

    —‘হুম্। বিষয়টা কী?’

    —‘আজ্ঞে অ্যাডভেঞ্চার। বিজ্ঞান ভিত্তিক অ্যাডভেঞ্চার। আফ্রিকার পটভূমিকায়।

    —‘আচ্ছা দেখব।’ খাতাটা নিলেন তিনি।

    সাতদিন আর ওমুখো হইনি। বড্ড বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি। একেবারে উপন্যাস ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। গেল বুঝি সব কেঁচে। কেমন আলাপ জমে উঠছিল। সেটাই বা কি কম পাওনা! আবোল-তাবোল লেখাটার কথা যত ভাবি লজ্জা পাই। পাড়াগেঁয়ে ছেলেদের মন ভোলানো আর পাকা সম্পাদিকার পছন্দ হওয়ার ঢের তফাত।

    ফের গুটিগুটি হাজির হলাম।

    লেখাটার কথা আর তুলি না। সম্পাদিকা নিজেই তুললেন ‘বড্ড বানান ভুল।’

    —‘আজ্ঞে হ্যাঁ।’

    —‘কিছু কাটছাঁট দরকার। দাগ দিয়ে দিয়েছি।’

    —‘আজ্ঞে হ্যাঁ।’

    ব্যাস এই পর্যন্ত। ভালোমন্দ আর কিছু বললেন না। ঘামতে ঘামতে লেখাটা ফেরত নিয়ে এলাম। বকুনি দেননি এই যথেষ্ট। ইচ্ছে হচ্ছিল জিজ্ঞেস করি— ছাপানো যায়? পরে ভাবলাম— না থাক! ছাপাবার মতো হলে নিজেই বলতেন। লেখাটা আবার বাক্সবন্দী হল। বড়ো অ্যাডভেঞ্চার ছাপানোর সাধ বুঝি আর মিটল না।

    মাস দুই বাদে ওই সম্পাদিকার এক চিঠি পেলাম। পড়ে আমি থ! লিখেছেন— তোমার রোমাঞ্চকর উপন্যাসটা শিগগির পাঠাও। সামনের পুজোসংখ্যায় আমাদের পত্রিকায় ছাপতে চাই। বানানগুলো ঠিক করবে। দাগ দেওয়া জায়গাগুলো বাদ দেবে। পরিষ্কার করে কপি করবে।

    অ্যাঁ। একেবারে পুজো সংখ্যায়! এ যে মেঘ না চাইতে জল। ফুর্তির চোটে দু-পাক নেচে নিলাম ঘরের ভিতর। মনে একটু ধন্দ— সত্যি বেরুবে তো? যদি শেষমেশ খারিজ হয়। কাউকে তাই বলতে পারলাম না ভরসা করে। ঘাবড়ে গিয়ে উপন্যাসের নামটা অবধি ঠিক করতে পারলাম না। লিখলাম, অনুগ্রহ করে নামটা আপনারা দিয়ে দেবেন।

    সত্যি বেরল সেই অ্যাডভেঞ্চারের উপন্যাস। নাম—মুঙ্গু। পাঠকদের পছন্দও হল।

    সেই শুরু। তার পর থেকে লিখেই চলেছি। নানা রকম ছোটো গল্প। বড়ো বড়ো অ্যাডভেঞ্চার।

    সন্দেশ
    ফাল্গুন ১৩৮৮

    ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleরহস্য সমগ্র – অজেয় রায়
    Next Article অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – অজেয় রায়

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }