Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    গল্পসমগ্র – আশাপূর্ণা দেবী

    লেখক এক পাতা গল্প70 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    যুদ্ধ

    যুদ্ধ

    মালতিদি তার টোল খাওয়া গালে আরও টোল ফেলে চাপা হাসি হেসে বলে, নতুন বৌয়ের অনারে পিকনিক করছিস? বেশ বেশ! শুনে প্রাণে বড় আনন্দ পেলাম রে! কী কালেই আমরা বিয়ে করেছিলাম! তা যাক, আমাদেরও যেতে বলছিস? মানে তোদের জামাইবাবুকেও?

    মালতির মামাতো ভাই সমীর, যে নাকি এই পিকনিকের আহ্বায়ক, সে এ প্রশ্নে প্রায় রেগে উঠে প্রতি-প্রশ্ন করে, না তো কি জামাইবাবুকে বাদ দিয়ে তোমায় একা?

    সমীর সবে এইমাত্র বিয়ে করেছে, অতএব তাকে এখন উদার মুক্তহস্ত, আর বিশ্বপ্রেমী হতে হয়েছে। তুতো-টুতো মিলিয়ে যে সব গাদাগাদা বোন আর বৌদির সম্পর্কে এ যাবৎ উৎসাহের কোনও চিহ্ন দেখা যায় নি সমীরের তাদের সব্বাইকে জুটিয়ে নিয়ে বিয়ের অষ্টমঙ্গলার মধ্যেই মহোৎসাহে দুদিন সিনেমা আর একদিন মুক্তাঙ্গনে থিয়েটার দেখানো হয়ে গেছে, আবার এখন এই পিকনিকের তোড়জোড়।

    পিকনিক তো আরও ব্যাপক ব্যাপার।

    কিন্তু সে ঝুঁকি সমীর স্বেচ্ছায় মাথায় নিয়েছে এবং কন্যাদায়ের মতই এ-বাড়ি ও-বাড়ি নেমন্তন্ন করে বেড়াচ্ছে।

    আসল কথা, বিয়ে বাবদ যে ছুটিটা নেওয়া হয়েছিল, তার এখনও দিন চার-পাঁচ মাত্র হাতে আছে, এতে মধুচন্দ্র-যাপনে যাওয়ার প্রশ্ন ওঠে না, অথচ একটা কিছু না করলেও মন উঠছে না। ছুটিটা বরবাদ যাবে কেন? তার শেষ মিনিটটি পর্যন্ত নিংড়ে নিংড়ে সুখের সুধাবিন্দু আহরণ করে নিতে হবে না?

    অবশ্য সে আহরণের আরও অনেক বেশি রিফাইন্ড পদ্ধতি ছিল, আছে। কিন্তু সমীরদের জন্যে ছিল না, নেই।

    সমীরদের বাড়ি এমন নয় যে সেই রিফাইড় পদ্ধতিকে সমর্থন করবে। ওদের পরিবার এখনও বিগত যুগের নীতিতে বিশ্বাসী। পারিবারিক কোনও ব্যাপারে সমবেত সঙ্গীতের তান না উড়লে ওরা আহত হয়।

    তাই সমীরকে পিসতুতো দিদির দরবারেও এসে আবেদন জানাতে হচ্ছে। আবেদন আর কিছু না–আমাদের আনন্দে যোগ দিয়ে আমাদের বাধিত কর।

    অবশ্য মালতিদি সম্পর্কে সমীরের মনোভাব দায়সারা নয়, বরং রীতিমত উচ্চ।

    আসার আগে নতুন বৌকে সে বিশদ বুঝিয়েও এনেছে, মালতিদি? ওঃ! একাই একহাজার! যা জমাতে পারে, দারুণ! তেমনি করিৎকর্মা। মালতিদি গেলে একাই পিকনিকের সবকিছু ম্যানেজ করে ফেলতে পারবে। আর যা সাংঘাতিক ভাল রান্না না মালতিদির! বলে বোঝানো যায় না।

    নতুন বৌ এই উচ্ছ্বাসকে কী চক্ষে দেখত কে জানে, তবে মালতিদির বয়েসটা জেনে ফেলে বোধহয় নিশ্চিন্ত আছে। সমীরের থেকে অন্তত বছর দশেকের বড় মালতিদি।

    পিকনিকে গিয়ে একাই সবকিছু ম্যানেজ করতে পারে, এমন একজন বয়স্কা মহিলা সুবিধেজনক। অন্যদিকেও মহিলাটিকে সুবিধের খাতায় বসানো চলে।

    আরও যে সব দাদা-বৌদি, দিদি-জামাইবাবু, শালী-শালীপতি, বা শ্যালক-শ্যালকপত্নীর সঙ্গ প্রার্থনা করা হয়েছে, সকলেরই সঙ্গে কিছু না কিছু সাঙ্গোপাঙ্গো আছে, যারা পিকনিক-পার্টির দলবৃদ্ধি করতে যাবে।

    মালতিদিদেরই কোনও সৈন্যবাহিনী নেই। ওরা মাত্র দুজন।

    তা ওই দুজনের মধ্যেও আবার একজনকে বাদ দেওয়ার কথা বলছে মালতিদি!

    পাগল নাকি!

    সেই জনটিই কি ফেলনা?

    জামাইবাবুর গুণই কি কম?

    জামাইবাবু দাবায় ওস্তাদ, তাসে পটু, আড্ডায় একনম্বর, তার উপর আবার হাত দেখতে জানে, ম্যাজিক দেখাতে পারে।

    এসব গুণ মজলিশের পক্ষে আদর্শগুণ।

    অতএব সমীরকে বলতেই হয়, পাগল নাকি?

    মালতি তার স্পেশাল হাসি হেসে বলে, পাগল নাকি? তোর জামাইবাবুর সঙ্গে ঘর করতে করতে শুধু পাগল কেন বদ্ধ উন্মাদ হয়ে বসে আছি। সে কথা যাক, ভাবনা তোদের নিয়ে। নতুন বৌ নিয়ে আমোদ-আহ্লাদ করতে যাচ্ছিস, তাই বলা। তোদের জামাইবাবু পুরো পার্টিটাকেই না পাগল করে ছাড়ে।

    একালের নতুন বৌরা সেকালের মুখে তালাচাবি আঁটা নতুন বৌ নয়। সমীরের নতুন বৌ সুরঙ্গমা মৃদু হেসে বলে, বড্ড বেশি গৌরবদান করা হচ্ছে না মালতিদি?

    মালতি চাপা কৌতুকের হাসি হেসে বলে, বেশি? আচ্ছা ঠিক আছে, নিয়ে যাও, বুঝবে ঠ্যালা।

    বাজে কথা রাখো মালতিদি, সমীর বলে ওঠে, সব সময় তুমি জামাইবাবুর নিন্দে কর কেন বল তো?

    আজ রবিবার, সুধাকর বারান্দায় বসে খবরের কাগজ ওল্টাচ্ছিল। সমীরদের আসতে দেখে এ ঘরে এসে বসছিল, মালতি তাকে ভাগিয়েছে ঘর থেকে। বলেছে, কাগজ পড়ছিল পড়গে না। শহরে কটা রাহাজানি, কটা ছিনতাই, কটা নারীহরণ হচ্ছে দৈনিক, তার হিসেব রাখগে। আমরা ভাই-বোনে দুটো মনের প্রাণের কথা কইব–

    সমীর হৈ চৈ করেছিল, মালতি বলেছিল, ঠিক আছে বাবা, কুটুম নয় যে অপমানের জ্বালায় চলে যাবে।

    আর সুধাকর হেসে হেসে বলেছিল, চিন্তার কারণ নেই শালাবাবু, ঘরের বাইরে থেকেও মন প্রাণ কান সব তোমাদের কাছেই রইল।

    এখন বলে উঠল, ওহে শ্যালক, পারবে, পারবে, বুঝতে পারবে, এরপর থেকে পারবে। এর নাম কি জান, কৃষ্ণকথার সুখ। শ্রীরাধিকা বলে গেছেন, নিন্দাচ্ছলে কৃষ্ণর কথাই তো কইছে–

    মালতি একবার কটাক্ষে ওদিকে তাকিয়ে বলে ওঠে, থাক থাক, শাক দিয়ে আর কদিন মাছ। ঢাকবে? সমীর, তোর নতুন বৌয়ের সামনে ফাঁস করে দেব নাকি কথাটা?

    সমীর বলে, যদি নতুন বৌ বলে সমীহবোধ কর, নাই বা করলে?

    মালতি তেমনি কৌতুকের গলায় বলে, না বাবা, সাবধান করে দেওয়া ভাল। সত্যি বলতে–তুই যেই পিকনিকের কথা তুললি, তক্ষুনি আমার বুকটা ধড়ফড় করে উঠল।

    সমীর তো অবাক।

    পিকনিকের কথায় তোমার বুক ধড়ফড় করে উঠল?

    মালতি মুখ-চোখ করুণ করে হতাশ নিশ্বাস ফেলে বলে, করবে না? ওই বুড়ো মস্তানকে একঝাক সুন্দরী সুন্দরী তরুণীর মাঝখানে ছেড়ে দিলাম, ভাবলে বুক স্থির থাকতে পারে?

    মালতির কথাবার্তা চিরদিনই এই রকম, তবু নতুন বৌয়ের সামনে অস্বস্তি পায় সমীর, তাড়াতাড়ি বলে, মালতিদি, মাত্রা ছাড়াচ্ছ।

    সুধাকর ওখান থেকেই চেঁচায়, দেখছিস তো ভাই? বুঝছিস, তোদের দিদির ছ্যাবলামির বহর? কোথায় বয়েস হয়ে কমবে, তা নয়–

    মালতি তেমনি হতাশ ভঙ্গিতে বলে, আমিও তো তাই ভাবি, কোথায় বয়েস হয়ে কমবে, তা নয়, বুড়ো হয়ে যেন আরও

    সমীর আর তার বৌ দুজনে একটা কৌতুক আর অর্থপূর্ণ দৃষ্টি বিনিময় করে।

    যে দৃষ্টির অর্থটা হচ্ছে, বয়েস হলে কি হবে, দুজনের রঙ্গরসের লীলাটি আছে বেশ।

    সমীর আর একটা ভঙ্গিতে দুহাত উল্টে বোঝায়, ছেলে-মেয়ে তো হয় নি, তাই যেমন ছিলেন তেমনি আছেন।

    দৃষ্টি-বিনিময়টা অবশ্য ক্ষণিকের ব্যাপার। ধরা পড়ে না।

    অন্তত ওরা ভাবে ধরা পড়ছি না।

    সুধাকর তার চেয়ারটা হিড়হিড় করে টেনে ঘরের দরজার কাছ পর্যন্ত এনে বসে।

    সমীর বলে, এটা কী হল জামাইবাবু?

    উত্তরটা মালতি দেয়, বুঝছিস না? সীতা গণ্ডী পার হবেন না! তা এটা তো নিজের অসুবিধেই ঘটালে গো। ওখান থেকে তবু কটাক্ষপাতটা তত ধরা পড়ছিল না।..সমীর তোর বৌয়ের কড়ে আঙুলটা একটু কামড়ে দে

    বলা বাহুল্য, ওরা রোল তুলে হেসে ওঠে।

    সুধাকর করুণ হয়ে বলে, দেখো মালতি, সমীরের তবু তোমার এই স্ট্রং ঠাট্টা-টাট্টা গুলোর সঙ্গে কিছুটা পরিচয় আছে, কিন্তু ওর নতুন বৌয়ের পক্ষে বড্ড গুরুপাক হয়ে যাচ্ছে না?

    মাই গড!

    মালতি কপালে হাত দিয়ে বলে, ঠাট্টা। ঠাট্টা করছি আমি? এখনও তুমি মাছ ঢাকতে শাক তুলছ? নতুন বৌটাকে অবহিত করিয়ে দেবার জন্যেই তো আমার এত কথার অবতারণা। …তুই তো জামাইবাবুকে দরাজ নেমন্তন্ন করে বসলি। বেচারা ইনোসেন্ট মেয়েটা পিকনিকের হৈ-চৈয়ের মধ্যে নিশ্চিন্দি হয়ে ঘুরে বেড়াল, অথবা হয়তো বিজ্ঞ-সিজ্ঞ ননদাইয়ের হাতে নির্ভয়ে পানের খিলি এগিয়ে দিতে এল, তারপর ভবিতব্যে কী ঘটবে, জানে না তো।

    মালতিদি, সত্যিই একটু অধিক স্ট্রং হয়ে যাচ্ছে। সমীর প্রসঙ্গ পালটাতে বলে, তুমি বরং আমাদের চা আনো, আমরা ততক্ষণ জামাইবাবুর কাছে হাত দেখাই।

    হাত? দেখতে জানেন উনি?

    নতুন বৌ সুরঙ্গমা নতুন বৌত্ব বিসর্জন দিয়ে ফটু করে হাতটা বাড়িয়ে ধরে, আমারটা আগে দেখুন।

    মালতি খাট থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ছিল বোধকরি চায়ের জন্যেই, আবার ধপ্ করে বসে পড়ে বলে, নাঃ, এই সমীরটা যে এত হাঁদা তা জানতাম না। তুই সত্যি বিশ্বাস করিস ও হাত দেখতে জানে?

    জানেন না? বাঃ! কত দেখেছেন।

    মিলেছে?

    তা অনেক সময় মিলেছে তো–

    মালতি সমীরের মাথাটা নেড়ে দিয়ে বলে, ছাই মিলেছে। সব ফোর টোয়েনটির ব্যাপার। আসলে হাত দেখতে জানি বললে হাতের মধ্যে অনেক কোমল করপল্লব এসে ধরা দেবেই, নিরীক্ষণ করে দেখতে বেশ কিছুক্ষণ নিপীড়ন চালানো যায়।

    নাঃ মালতিদি, তুমি ওঠালে–

    সমীর হাসতে থাকে, সত্যিই তোমার মুখ দিন দিন বেশি আলগা হয়ে যাচ্ছে মালতি এমন একটা গভীর দুঃখের ভঙ্গিতে নিশ্বাস ফেলে বলে, অনেক দুঃখেই যাচ্ছে রে যে আবার একদফা হাসির রোল না উঠে যায় না।

    সুধাকর উদাস গম্ভীর ভাবে বলে, শালাবাবু, তোমার বৌয়ের মানসিক স্বাস্থ্যটি ভালই বলতে হবে, এত গুরুপাক বস্তুগুলোও পাক করে ফেলছে দেখছি।…কিন্তু ভাই, তোমাদের ওই লিস্ট থেকে এই নরপিশাচ পাষণ্ডের নামটা বাদ দাও, আমি বরং সেদিন একা বাড়ি বসে নিশ্চিন্ত মনে ভাগবত পাঠ করব।…ঈদের ছুটি আছে তো পরশু?

    ভাগবত পাঠ!

    নতুন বৌ রুমাল মুখে দিয়ে হাসি চাপতে কেশে ওঠে।

    তারপর কষ্টে কথা বলে, উঃ মালতিদি, আপনি না কী যে সাংঘাতিক! সারাক্ষণ আপনি ওঁকে এইভাবে জ্বালান?

    সুধাকর তো ততক্ষণে নতুন বৌয়ের হাতটা দেখবার জন্যে বাগিয়ে ধরেছে। নিরীক্ষণ করতে করতে বলে, দেখ ভাই দেখ। তবে শিখিস না।

    মালতির চিরকাল দেখা আছে এই লোকটাকে চটিয়ে দিয়ে কিছু লাভ করতে পারে না। ও স্রেফ পিটে কুলো আর কানে তুলোর নীতিতে আশ্রয়ী।

    মালতি তাই হাল-ছাড়া গলায় বলে, আহা ছুটির দিন একা বাড়িতে বসে ভাগবত পাঠ করবে! এমন দিনও হবে? হে মা কালী, তোমায় হরিরলুঠ দেব, লোকটার যেন সত্যিই সে সুমতি হয়।

    সুরঙ্গমার ভারি ভাল লেগে যায় সমীরের এই দিদি-জামাইবাবুকে। জীবনকে এঁরা সিরিয়াস করে তোলেন নি। দুজনেই সমান হাসি-খুশী। দুই জুটিতে মিলে দিব্যি একখানি কৌতুকানিভয় করে চলেছেন।…এঁরা পিকনিকে গেলে খুব জমাবেন।

    মুখে বলে, কই বলুন? কী দেখছেন?

    সুধাকর খুব গম্ভীর মুখে বলে, দেখছি কিছুদিন আগে একটা নিশ্চিত বিয়ের যোগ ছিল সম্প্রতি সেটা কেটে গেছে। আর তো কই–সে যোগ দেখছি না।

    সমীর গলা ছেড়ে হেসে ওঠে।

    বৌ লুটোপুটি খায়।

    ইত্যবসরে, বোধহয় মালতির ইশারার নির্দেশে চাকর চায়ের ট্রে এনে নামায়, মালতি পেয়ালায় চা ঢালতে ঢালতে বলে, তাহলে সমীর, আমরা যাচ্ছি তোদের দলে

    নিশ্চয়। অবশ্য অবশ্য!

    মালতি ওদের দিকে চা এগিয়ে দিলে, ভরসার মধ্যে খোলা মাঠ-ঘাট, আর দিনের বেলা। আলো ফিউজের ভয়টা নেই।

    সমীর অবাক হয়ে বলে, আলো ফিউজ মানে?

    মালতি কৌতুকে চোখ নাচিয়ে বলে, কী গো বলে দেব না কি মানেটা?

    সুধাকর চশমার মধ্যে থেকে একবার স্ত্রীর মুখটা দেখে নেয়। না, সেখানে হিংস্রতার কোন আভাস নেই। শুধুই কৌতুকে ফেটে পড়া ভাব। তবু সুধাকর–দারুণ অস্বস্তি বোধ করে। মালতি আজ ভেবেছে কী!

    তবু সুধাকর তো ওই কৌতুকাভিনয়ের জুটির একজন। তাই সুধাকর বৈরাগী-বৈরাগী মুখ করে বলে, বলো। গল্প তো তোমার মুখে মুখে। দে ভাই সমীর, তোর দিদির গল্প বানাবার এই অসামান্য প্রতিভাটি এই হতভাগ্যের সঙ্গে চালাকি করে করেই মাঠে মারা গেল। লিখলে একটা নামকরা লেখিকা হতে পারত।

    তা হয়তো পারতাম

    মালতি ওদের দিকে সন্দেশ আর সিঙাড়ার প্লেট সরিয়ে দিয়ে, নিজের বড় মাপের পেয়ালাটা নিয়ে গুছিয়ে বসে বলে, হলে প্লটের অভাব হত না। তা শোন একটা গল্পই বলি, সমীর তোর তো কী একটা কাগজের সঙ্গে জানাশোনা আছে, বলিস তো লিখি, ছাপিয়ে দিস। গল্পটা হচ্ছে এই–একটা বিয়ে-বাড়ি! বেশ সমারোহের বিয়ে, লোকে লোকারণ্য। যত রঙের ঘটা, তত রূপের ছটা, যত হি হি খিলখিল, তত ঝলমলানি।.আর রোশনাইয়ের তো কথাই নেই। আলোর ঝালর দিয়ে মুড়েছে বাড়িটা। ওমা। সব থেকে জমজমাটি সময়ে বর আসে আসে, হঠাৎ দুম করে সারা বাড়ি ঘুটঘুঁটে। তখন বাবা এত লোডশেডিংয়ের চাষ ছিল না, সবাই হৈ-চৈ করে উঠল, ফিউজ ফিউজ। বিয়ে বাড়ি-টাড়িতে হয় এখন।…কিন্তু অন্ধকার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মেয়ে-মহলে দারুণ আর্তনাদ, কে? কে? কে?

    এদিকে কর্তারা ওদিকে কর্ণপাত না করে ডাক-হাঁক লাগিয়েছেন, ঘর সামলাও, ভাড়ার সামলাও, মেয়েরা গহনা সামলাও, মিষ্টির ঘরের চাবি কার কাছে? কনের কাছে কে আছে? …ওদিকে কে যেন পুলিস পুলিস রব তুলে চেঁচাতে লেগে গেছে, তারই মধ্যে কোনও একটা ছেলে একটু ফিউজওয়ার জোগাড় করে মেনসুইচে হাত দিয়ে অবাক! সুইচটাকে অফ করে দিয়েছে। ওই রমরমা সময়ে কি না হঠাৎ মেনসুইচ অফ! গল্পের বাকি অংশটা অনুমানে বোঝ।

    সমীরও হতবাক।

    এর আবার বাকি অংশই বা কী? অনুমানই বা কী? কেউ মজা দেখতে অফ করে দিয়েছিল!

    মালতি গল্পের ফাঁকে ফাঁকে চায়ের পেয়ালা শেষ করে ফেলেছে। এখন সেটা ঠুকে নামিয়ে রেখে বলে, নাঃ এই অবোধ বালকটাকে নিয়ে কিছু করার নেই। বাকি অংশটা বুঝবে এই বৌটা? কী রে বুঝবি না?

    সুরঙ্গমা মুখ নীচু করে হাসে।

    মালতি গম্ভীর গলায় বলে, বলি অবোধ বালক, সেই তরুণীকুলের আর্তনাদ বুঝি তোর কানে প্রবেশ করল না? করবে কেন? পুরুষ যে! যাক বৌটা বুঝেছে। কিন্তু কী বলব, একটাও মেয়ে বৌয়ের মুখ থেকে আদায় করা গেল না, তারা সবাই অমন কে? কে? করে চেঁচিয়ে উঠেছিল কেন?…এরকম প্লট আমার স্টকে অনেক আছে।

    সমীররা উঠে পড়েছিল।

    তবে দাঁড়িয়ে উঠেই তো আসল গল্প শুরু হয়।

    সমীর বলল, যাই বল মালতিদি, তোমার এবার একটু গম্ভীর হওয়া উচিত। চুলে টুলে পাক ধরে এল–

    মালতি গাল দুটো ফুলিয়ে বলে, ঠিক আছে। এই হলাম গম্ভীর। তা ঘটনাটা কোথায় ঘটছে?

    সমীর হেসে ফেলে বলে, কোথায়? কোথায় নয়? কলকাতার আশে-পাশে যত পিকনিক স্পট আছে। সব জায়গাতেই একবার করে মনপবনের নায়ে চড়ে যাওয়া হয়েছে। অবশেষে বোটানিক্‌সে–

    বোটানিক্‌সে!

    মালতি হাততালি দিয়ে উঠে বলে, ওঃ কী মৌলিক চিন্তা! কী আশ্চর্য আবিষ্কার। সমীর কার মাথা থেকে এমন অনাস্বাদিত নতুন জায়গাটার নাম ঝরে পড়ল?

    সমীর দুষ্টু হাসি হেসে বলে, এই অসাধারণ আবিষ্কারের নায়িকা তোমার সামনেই দাঁড়িয়ে।…বলে কিনা কখনও বোটানিক্‌সে যায় নি।

    আশ্চর্যের কিছু নেই। মালতি বলে, আমি তো কখনও ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে যাই নি।

    তাহলে?

    নতুন বৌ হেসে বলে, ওই নিয়ে বাড়িতে যা হাসাহাসি! তবু আমার দলে একজন আছেন।

    মালতি উদাস গলায় বলে, সাধে আছি রে! ও সব জায়গায় গেলে কি আর লোকটাকে ফিরিয়ে আনতে পারতাম? কার আঁচলের সুতো ধরে কোথায় হাওয়া হয়ে যেত।

    সুরঙ্গমার নতুন করে আবার ভাল লাগে।…এঁদের জীবন-দর্শনটি বেশ! হেসে-খেলে কাটিয়ে দেওয়া …এই তো তার এক খুড়ি আছেন, ছেলে-মেয়ে হয় নি, তিনি রাতদিন পেঁচামুখ করে ঘুরে বেড়ান, যেখান থেকে পারেন, আর যত পারেন মাদুলী এনে এনে পরেন, আর যত পারেন ডাক্তার দেখান। দেখলে রাগ ধরে।.ছেলে-মেয়ে কী এমন নিধি রে বাবা! কী সুন্দর এঁদের এই জীবন! হাসি-আহ্লাদ মজা! এই নিয়েই আছেন!

    তাহলে সেই আদি ও অকৃত্রিম বোটানি?

    হ্যাঁ!

    ওকে নিয়ে যেতেই হবে?

    না নিয়ে যাওয়ার প্রশ্ন উঠছেই না।

    ঠিক আছে, তবে জেনে রেখো–তোমরা যা করছে, নিজ দায়িত্বে করছো। ও যদি কোনও কেলেঙ্কারি করে না বসে তো কী বলেছি।

    নতুন বৌ হি হি করে হেসে ফেলে চটি পায়ে দেয়।

    সেই দিকে ক্রুদ্ধদৃষ্টি মেলে তাকিয়ে দেখে ভাবে সুধাকর, মেয়েগুলো কি চতুর!…আর হাসলে ওদের যা দেখায় না!….

    ওরা চলে যেতেই সুধাকর আর সুধাকরের মূর্তিতে থাকে না, বিষধরের মূর্তিতে ফণা তুলে বলে ওঠে, খুব গৌরব বাড়ল, কেমন? স্বামীর মুখে দোহাত্তা চুনকালি মাখিয়ে নিজের মুখটা খুব উজ্জ্বল হল?

    মালতির সেই খুশীতে আর কৌতুকে ফেটে পড়া লালচে মুখটা একদম ঝুলে পড়ে কালচে মেরে গেছে।

    গালের টোলটা আলাদা করে বোঝা যাচ্ছে না, মনে হচ্ছে সারা মুখটাই টোল খাওয়া।

    মালতি যেন যুদ্ধে ক্ষান্ত দিয়ে হাতের অস্ত্র নামিয়ে ফেলেছে, এক্ষুনি নতুন আর কোনও অস্ত্র হাতে তুলে নেবার ইচ্ছে নেই।

    মালতি তাই ঠাণ্ডা গলায় বলে, চুনকালি মাখালাম? না চুনকাম করলাম।

    সুধাকর গর্জন করে বলে, তুমি যেভাবে বাড়াবাড়ি করলে, তাতে আর কেউ মনে করবে না ঠাট্টা করছ।

    মালতি আরও ঠাণ্ডা আর ক্লান্ত গলায় বলে, ওটা ঠাট্টা, এটা প্রমাণ করা তো তোমারই হাতে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপ্রবন্ধ সংগ্রহ – আশাপূর্ণা দেবী
    Next Article শুধু তারা দু’জন – আশাপূর্ণা দেবী

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }