Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    গহনগোপন – প্রফুল্ল রায়

    প্রফুল্ল রায় এক পাতা গল্প87 Mins Read0

    ১. সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে

    গহনগোপন – উপন্যাস – প্রফুল্ল রায়

    ০১.

    প্রতিবছর সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে বা অক্টোবরের গোড়ায় কলকাতা থেকে বেরিয়ে পড়ে দীপেন। এবারও তার হেরফের হয়নি।

    সবে অক্টোবর পড়েছে। বাংলা ক্যালেন্ডারে এটা আশ্বিন মাস! কলকাতার বাতাসে এখন পুজো পুজো গন্ধ। শহরের রাস্তায় রাস্তায় আর পার্কে পার্কে প্যান্ডেল বাঁধা চলছে পূর্ণোদ্যমে। আর কয়েক দিনের মধ্যে দশভুজা বাপের বাড়ি আসবেন। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের তাবৎ বাঙালির সবচেয়ে বড় পার্বণও দীপেনকে কলকাতায় ধরে রাখতে পারেনি।

    মাঝখানে তিনটে বছর বাদ দিলে কোনওবার সে গেছে ঈশ্বরের আপন দেশ কেরালায়, কোনওবার রাজস্থানে, কোনওবার অমরকন্টকে বা গোয়র সমুদ্রসৈকতে। দশ পা হাঁটলেই ফুরিয়ে যাবে, ভারত তো এমন একরত্তি দেশ নয়; এ প্রায় এক মহাদেশ। দীপেনের বয়স যখন একুশ কি বাইশ, তখন থেকেই বছরের এই সময়টায় তার ভারতভ্রমণ চলছে।

    এ-বছরে সে এসেছে কাশ্মীরে। এই নিয়ে তিনবার। কলকাতা থেকে জেট এয়ারের উড়ানে দিল্লি, সেখান থেকে কানেক্টিং ফ্লাইটে শ্রীনগর। শ্রীনগরে দুরাত কাটিয়ে তিনদিন হল দীপেন এসেছে পহেলগাঁও। উঠেছে লিডার নদীর ধারে ছোটখাটো একটা হোটেলে।

    সারা ভারতভূমি জুড়ে যেখানে যত ট্যুরিস্ট স্পট রয়েছে, প্রায় সবই চষে ফেলেছে দীপেন। যেখানে সে একবার যায় সেখানে দুবার তার পা পড়ে না। কিন্তু কাশ্মীর তার কাছে ভেরি ভেরি স্পেশাল। ভূস্বর্গ কি এমনি এমনি বলে? তাই এখানে তিন-তিনবার।

    দুপুরে খাওয়া-দাওয়া চুকিয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়েছিল দীপেন। লিডার নদীর পাশ দিয়ে মসৃণ পাহাড়ি রাস্তাটা কোথাও সামান্য উঁচু, কোথাও সামান্য নীচু। স্বচ্ছন্দে হাঁটা যায়; পাহাড়ি-পথ বলে হাঁফ ধরে না।

    দীপেনের বয়স পঞ্চাশ পেরোয়নি। কিন্তু এর মধ্যেই সারা শরীর জুড়ে ভাঙন ধরেছে। চোখের তলায় কালচে ছোপ, গাল বসা, গায়ের চামড়া কুঁচকে-মুচকে গেছে। কপালে ভাঁজ। হাতের শিরাগুলো বড় বেশি প্রকট। অদৃশ্য ঘুণপোকারা রক্তে-মাংসে ঘাঁটি গেড়ে ধ্বংসের কাজ অনেকটাই শেষ করে ফেলেছে। তার পরনে সাত-আট বছরের পুরোনো গরম ট্রাউজার্স, শার্ট, সোয়েটার, কোট, মাথায় উলের টুপি। স্বাস্থ্য যখন টান টান, মজবুত ছিল, শীতের এই পোশাক চমৎকার মানিয়ে যেত। কিন্তু এখন ক্ষয়াটে, শীর্ণ দেহে সেগুলো ঝলঝল করে। শরীর শুকিয়ে গেছে কিন্তু কোট-প্যান্টগুলোর মাপ তো পাল্লা দিয়ে ছোট হয়ে যায়নি। তাই ভীষণ বেখাপ্পা দেখায়।

    পা থেকে মাথা অবধি এত যে ভাঙচুর, তবু বোঝা যায় একসময় সে বেশ সপুরুষ ছিল।

    পহেলগাঁওয়ের রাস্তাটা ধরে হাঁটছিল দীপেন। তার কোনও গন্তব্য নেই। শুধুই লক্ষ্যহীন হাঁটা। কলকাতায় এবছর আক্টোবরের গোড়াতেও বেশ গরম রয়েছে। কিন্তু কাশ্মীরে? এর মধ্যেই কনকনে হাওয়া দিচ্ছে। হিম-ঋতুটা যে এখন থেকে জাঁকিয়ে পড়তে শুরু করেছে সেটা টের পাওয়া যাচ্ছে।

    ভরদুপুরে রোদের উষ্ণতা গায়ে মেখে হাঁটতে ভালোই লাগছে দীপেনের। রাস্তায় প্রচুর মানুষজন। বোঝা যাচ্ছে এরা সব টুরিস্ট। আগের বছর দুই জঙ্গি হামলার জন্য টুরিস্টরা আসছিল না। এবছর পরিবেশ খুব শান্ত, গুলি-গোলা ঝামেলা-ঝঞ্জাট নেই। পর্যটকরা তাই ঝাঁপিয়ে পড়েছে। চারপাশ থেকে অবিরল কলকলানি কানে আসছে। গুজরাতি, মারাঠি, হিন্দি, ওড়িয়া–এসব তো আছেই, তবে সব ছাপিয়ে বাংলাটাই বেশি শোনা যাচ্ছে।

    বাঙালি এক জাত বটে। পায়ের তলায় তাদের সরষে। ছুটি পেলে তো ভালোই, নইলে ছুটি নিয়ে লটবহর কাঁধে চাপিয়ে বেরিয়ে পড়ল। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের যেখানেই যাও, তা জোহানেসবার্গই হোক বা টোকিও গ্ল্যাসগো পাপুয়া নিউগিনি হাওয়াই বা লিসবন–সর্বত্র কম করে দশ-বিশটা বঙ্গবাসীর দর্শন মিলবেই। তা ছাড়া নিজেদের বিশাল ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া তো আছেই।

    দীপেনের ডানপাশে লিডার নদী। তার পাড়ে অনেকটা গ্যাপ দিয়ে গ্যাপ দিয়ে বেশ কটা হোটেল। নদীটা কত আর দুরে? খুব বেশি হলে চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ ফিট। হোটেলগুলোর মধ্যে অনেকটা করে ফাঁক থাকায় রাস্তা থেকে নদীটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। কাঁচের মতো স্বচ্ছ, অগভীর জলধারাটির নীচের অজস্র নুড়ি, পাথরের টুকরো এবং বালুকণাগুলোকেও বুঝিবা গুনে নেওয়া যায়। নুড়ি-টুড়িতে ধাক্কা খেতে খেতে ঝুম ঝুম আওয়াজ তুলে বয়ে চলেছে। লিডার। দিন-রাত একই সিমফনি।

    দীপেনের বাঁ পাশেও ছোট পাহাড়। তার নীচের দিকে রাস্তা ঘেঁষে লাইন দিয়ে কাশ্মীরি শাল, সোয়েটার আর অজস্র কাশ্মীরি হ্যাঁন্ডিক্রাফটের দোকান; শো-রুম। ওপরের দিকে নানা ধরনের বাংলো, বেশিরভাগই কাঠের তৈরি। পিকচার পোস্টকার্ডে যেমনটা দেখা যায়, অনেকটা সেইরকম।

    নদীর দিকে চোখ রেখে অন্যমনস্কর মতো পা ফেলছিল দীপেন। নানা এলোমেলো চিন্তা আর হতাশা উড়ো মেঘের মতো মাথায় ঢুকে যাচ্ছিল। তিনবার সে পহেলগাঁও এল। খুব ইচ্ছা ছিল লিডার নদী অনেক দূরে যেখানে বাঁক ঘুরে চলে গেছে সেখানে জম্মু ও কাশ্মীর গভর্নমেন্টের ট্যুরিজম ডিপার্টমেন্টের যে লগ কেবিনগুলো আছে তার একটায় কটা দিন কাটাবে, নদী থেকে ট্রাউট মাছ ধরবে, তা ছাড়া চন্দনওয়াড়ি হয়ে অমরনাথ যাবে। কিন্তু কোনওটাই হয়নি বা হবেও না। কেননা ব্যাঙ্কের সুদের ওপর ভরসা করে সে কোনওরকমে টিকে আছে। ব্যাঙ্ক যেভাবে দু-চারমাস পর পর ইন্টারেস্ট কমাচ্ছে তাতে–কিন্তু হঠাৎ কে যেন ডেকে উঠল, আঙ্কল-আঙ্কল।

    ভাবনাগুলো ছত্রখান হয়ে গেল দীপেনের। পরক্ষণে খেয়াল হল কে ডাকবে তাকে? এখানে তো কেউ চেনে না। রীতিমতো চমকেই উঠল সে। কী ভেবে পেছন ফিরে তাকাতেই দেখল একটি ন-দশ বছরের ছেলে তার দিকে তাকিয়ে আছে। টকটকে গায়ের রং, সারল্যে ভরা, নিষ্পাপ মুখ। পরনে খুব দামি শীতের পোশাক। দেখামাত্র আন্দাজ করা যায় সোসাইটির উঁচু স্তরের কোনও বাঙালি কি? ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। চারিদিকে ইন্ডিয়ার নানা রাজ্য থেকে আসা টুরিস্টরা তাদের মাতৃভাষায় কর কর করে যাচ্ছে। নিজের অজান্তে বাংলাতেই জিগ্যেস করল দীপেন, তুমি কি আমাকে ডাকছিলে?

    আস্তে আস্তে মাথা নাড়ল ছেলেটি।

    দীপেনের মনে যে ধোঁয়াটে ভাবটা ছিল, কেটে গেল। ছেলেটি বাঙালিই। সে জানতে চাইল, আমাকে কিছু বলবে?

    উৎসুক চোখে তাকিয়ে রইল দীপেন।

    ছেলেটি বলল, আমার বাবা বলছিল, কাশ্মীরে এইসময় বরফ পড়ে। ওই যে পাহাড়টার মাথায় সাদা মতো দেখা যাচ্ছে ওটা কি বরফ?

    লিডার নদীর ওপারে যে ছোট পাহাড়টা রয়েছে তার পেছন দিক থেকে পর পর অনেক পাহাড়। সবচেয়ে উঁচু পাহাড়টার দিকে আঙুল বাড়িয়ে দিয়ে ছেলেটি বলল, ওই যে–ওটা।

    এই ছোট ছেলেটির মতো তার চোখের দৃষ্টি অত সতেজ নয়। ষাট-সত্তর ফিট দুরের জিনিস কেমন যেন ঘোলাটে ঘোলাটে মনে হয়। দূর পাহাড়ের মাথায় অক্টোবরের শুরুতেই বরফ পড়েছে কিনা তা নিয়ে দীপেন ভাবছে না, সেদিকে তাকাচ্ছেও না। একা একটি ছেলে, সঙ্গে কেউ নেই, আচমকা কোত্থেকে এসে হাজির হল, বোঝা যাচ্ছে না। ভেতরে ভেতরে তার জন্য উৎকণ্ঠা হচ্ছিল। জিগ্যেস করল, তোমার নাম কী?

    দাদু-দিদা-বাবা-মা বলে তাতান, ভালো একটা নামও আছে–সমৃদ্ধ ব্যানার্জি। বলেই তার পুরোনো প্রশ্নে চলে গেল।–বললে না তো, ওটা বরফ কিনা। বলো-বলল, প্লিজ

    তাতানের গলার স্বরটি ভারী মিষ্টি; পাখির ডাকের মতো সুরেলা। ছেলেটা মিশুকে তো বটেই, বেশ আদুরে ধরনের। তার মাথায় বরফ ঢুকেছে, সেটি না-জানা অবধি স্বস্তি নেই। দীপেন বলল, তোমাকে একা দেখছি। কার সঙ্গে পহেলগাঁও এসেছ?

    মা-বাবার সঙ্গে। বলো না আঙ্কেল।

    কোথায় তোমার মা-বাবা?

    যেখানে দীপেনরা দাঁড়িয়ে আছে সেখান থেকে পেছনদিকে বরাবর অনেক দূরে তাকালে বেশ কটা উইলো আর ওকগাছের জটলা। সেদিকে হাত বাড়িয়ে তাতান বলল, ওখানে ঘোড়াওয়ালারা আছে না? মা-বাবা তাদের সঙ্গে কথা বলছে।

    এই এলাকার নাড়ি-নক্ষত্র দীপেনের জানা। দূরের ওই গাছগুলোর তলায় ঘোড়াওয়ালাদের ঘাঁটি। দুরকমের ঘোড়া নিয়ে ওরা ওখানে দাঁড়িয়ে থাকে। টগবগে বড় ঘোড়া আর টাট্ট। হর্স-রাইডের জন্য টুরিস্টরা ওদের ঘোড়া ভাড়া নেয়। যাদের বয়স বেশি তাদের জন্য বড় ঘোড়া, ছোটদের ছড়ানো হয় টাটুতে। দীপেন আন্দাজ করে নিল তাতানের মা-বাবা ওখানে যখন ঘোড়াওয়ালাদের সঙ্গে হর্স-রাইডের ভাড়া নিয়ে কথা বলছেন, সেই ফাঁকে তাতান এদিকে চলে এসেছে।

    দীপেন জিগ্যেস করল, এখানে যে আসবে, মা-বাবাকে কি বলেছ?

    শব্দহীন হাসিতে সারা মুখ ভরে গেল তাতানের। চোখ দুটো প্রায় বুজে গেছে। আস্তে আস্তে মাথাটা এধার থেকে ওধারে নাড়তে লাগল সে।

    তার মনে না বলেই চলে এসেছে তাতান। তার আধবোজা চোখ থেকে দুষ্টুমির একটা ঝলক বেরিয়ে এল।

    না, যতটা সরল দেবশিশু মনে হয়েছিল, আদপেই সে তা নয়। দীপেন বলল, এই যে তুমি হুট করে চলে এলে, মা-বাবা ভাববেন না?

    ঘাড় কাত করে তাতান বলল, হু, ভাববে তো।

    তা হলে এভাবে চলে এলে কেন?

    ইচ্ছে হল যে

    এই ছেলের ইচ্ছের তালিকাটা কতখানি লম্বা, ভাবতে চেষ্টা করে দীপেন বলল, মাঝে মাঝে এরকম না বলে কোথাও চলে যাও নাকি?

    যাই তো

    তারপর?

    চোখ-মুখে সেই দুষ্টু-হাসিটা লেগেই আছে তাতানের। ডান হাতটা তুলে মায়ের কায়দাটা দেখিয়ে দিল সে।

    চোখ গোলাকার হয়ে গেল দীপেনের। তাতান ব্যক্তিটি যে সামান্য নন সেটা তার চোখ-মুখের ভাবভঙ্গি, হাত তুলে প্রহারের মুদ্রা ফুটিয়ে তোলার কারিগরি দেখে টের পাওয়া যাচ্ছে। মজাও লাগছিল দীপেনের। সেইসঙ্গে ভাবছিল ছেলেটা মা-বাপকে একেবার তুর্কি নাচন নাচিয়ে ছাড়ে। বলল, কে তোমাকে বেশি মারেন?

    কে আবার, মা। মারতে মারতে পিঠের ছাল তুলে ফেলে।

    আর বাবা?

    বাবা মারে না; একটুখানি বকাবকি করে। মা যখন মারতে শুরু করে, বাবা বাড়িতে থাকলে আমাকে টেনে একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। মা আর আমাকে ধরতে পারে না। বাইরে দাঁড়িয়ে বাবার ওপর খুব রাগারাগি করে, চেঁচায় আর বলে, আমাকে আদর দিয়ে বাবা মাথায় তুলেছে।

    বোঝা যাচ্ছে শাসন যেটুকু করেন তাতানের মা-ই। ওর বাবা রীতিমতো আশকারাই দেন। দীপেন বলল, আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকে না। মা-বাবা নিশ্চয়ই খুব খোঁজাখুঁজি করছেন। চলো, তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসি

    এক্ষুনি যাবার তেমন ইচ্ছা ছিল না তাতানের। তবে আপত্তি করল না।-আচ্ছা, চলো–

    ঘোড়াওয়ালাদের ঘাঁটিটার দিকে এগিয়ে চলল দুজনে। পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে দীপেন জিগ্যেস করে, তোমরা কোথায় থাকো?

    কলকাতায়।

    তোমরা ক’ভাইবোন?

    আমি একলা।

    কোন স্কুলে পড়ো?

    সেন্ট জেভিয়ার্স।

    বাঃ, ওটা তো ভেরি ফেমাস স্কুল

    তাতান হাসল।

    কোন ক্লাস?

    ফোর।

    বেশ কয়েক বছর দীপেনের শরীরের মতো জীবনটাও আগাগোড়া তছনছ হয়ে গেছে। তার একটা ফ্যামিলি লাইফও ছিল, সেটাও ঘেঁটেঘুঁটে ধ্বংসস্তূপ। একটি আধবুড়ো কাজের লোক এসে ঘরদোর সাফ করা, বাজারে যাওয়া, জামাকাপড় কাঁচা, রান্নাবান্না–এসব করে দিয়ে চলে যায়। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে সে একেবারে একা। আত্মীয়-পরিজন, বন্ধুবান্ধব, কেউ তার ত্রি-সীমানায় ঘেঁষে না। দূষিত, বর্জ্য পদার্থের মতো সে একধারে পড়ে থাকে। তার ওপর একটা মরণ রোগ বাধিয়েছে। সেটা নিঃশব্দে তার শরীরের শাঁস কুরে কুরে খেয়ে চলেছে।

    কাজের লোক বলাইকে বাদ দিলে কথা বলার প্রায় কেউ নেই তার। বহুদূরের পহেলগাঁওয়ের রাস্তায় হঠাৎই তাতান নিজের থেকে এসে ভাব জমিয়েছে। ভারী মিষ্টি, একটু একটু দুষ্টু এই ছেলেটার সঙ্গ কী ভালো যে লাগছে! দীপেনের নুয়ে-পড়া ক্ষয়াটে শরীরে অনন্তকাল আগের তার যুবা বয়সের খানিকটা এনার্জি যেন ফিরে এসেছে।

    তাতান, তার মা-বাবা, তাদের বাড়ির অন্য লোকজন সম্বন্ধে খুব কৌতূহল হচ্ছিল দীপেনের। কী জিগ্যেস করতে যাচ্ছিল, হঠাৎ দূর থেকে কোনও মহিলার তীব্র, চকিত কণ্ঠস্বর ভেসে এল।-ওই তো তাতান, ওই তো-

    চমকে সেদিকে তাকাতেই দীপেনের চোখে পড়ল, একজন সুন্দরী মহিলা, দামি শাড়ির ওপর গরম লেডিস কোট পরা, তার সঙ্গী একজন ভারী সুদর্শন মাঝবয়সি ভদ্রলোক, পরনে টাউজার্স, শার্টের ওপর ফুল-স্লিপ পুল-ওভারভিড়ের ভেতর দিয়ে লম্বা লম্বা পা ফেলে প্রায় ঊধ্বশ্বাসে ছুটে আসছে।

    দীপেনরা দাঁড়িয়ে পড়েছে। পাশ থেকে তাতান নীচু গলায় বলল, আমার মা আর বাবা

    মাত্র কয়েক লহমা। পুরুষ এবং মহিলাটি কাছে চলে এল।

    পুরুষটি অর্থাৎ তাতানের বাবা ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমাকে নিয়ে আর পারা যায় না তাতান। তুমি আমাদের পাগল করে ছাড়বে। বলতে বলতেই তার চোখ এসে পড়ল দীপেনের ওপর। আপনার সঙ্গে আমাদের ছেলে; ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারলাম না তো!

    দীপেন বলল, আমি একজন ট্যুরিস্ট। আপনাদের ছেলে নিজেই এসে আমার সঙ্গে আলাপ করেছে। তারপর তাদের মধ্যে যা যা কথা হয়েছে সব জানিয়ে বলতে লাগল, আপনারা কোথায় আছেন শুনে নিয়ে আপনাদের কাছে ওকে পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলাম। ভালোই হল, রাস্তাতেই দেখা হয়ে গেল। একটু হেসে ফের বলল, অনেক দূরে একটা পাহাড়ের সাদা পিক দেখে বার বার জিগ্যেস করছিল, ওখানে বরফ পড়েছে কিনা—

    আমারই দোষ। বলেছিলাম এর মধ্যে কাশ্মীরে বরফ পড়ে। সেটাই ওর মাথায় ঢুকে গেছে। বরফ বরফ করে অস্থির করে তুলছিল। আমরা হর্স-রাইডের জন্যে ঘোড়া ঠিক করছিলাম; কখন এদিকে চলে এসেছে, প্রথমটা টের পাইনি। তার পর খোঁজাখুঁজি শুরু করলাম। কপাল ভালো, আপনার মতো একজন ভদ্রলোকের কাছে ছেলেটা গিয়েছিল।

    দীপেন জিগ্যেস করল, আপনাদের না-বলে এরকম বেরিয়ে পড়ে নাকি?

    মাঝে মাঝেই। মাথায় একটা কিছু চাপলেই হল। দেশটা বদমাশ খুনি কিডন্যাপারে ভরে গেছে। ভদ্রলোক আর কটা? কোনদিন যে কার পাল্লায় পড়বে। সবসময় ছেলেটাকে নিয়ে আমাদের টেনশানে থাকতে হয়। আপনি যা করলেন সেজন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ।

    একটু বিব্রতভাবে হাসল দীপেন।-না না, ধন্যবাদ পাওয়ার মতো এমন কিছু কিন্তু করিনি।

    কী করেছেন, সেটা আমি জানি

    ওদিকে মহিলাটি আগুন-চোখে তাতানের দিকে তাকিয়ে ছিল। চাপা, গনগনে গলায় সে বলছিল, অবাধ্য, পাজি ছেলে। একেবারে জ্বালিয়ে মারলে। আজ তোমার কী হাল করি, দেখো। হাড়-মাংস আলাদা করে ছাড়ব। এসো এদিকে

    তাতান অপরাধী অপরাধী মুখ করে, ঠোঁট টিপে মায়ের দিকে মিটিমিটি তাকাতে তাকাতে এক দৌড়ে তার বাবার গা ঘেঁষে গিয়ে দাঁড়াল। দীপেন আন্দাজ করল, এই ঘোর সংকটে বাবাই তার একমাত্র রক্ষাকর্তা।

    তাতানের বাবা দীপেনের দিকে তাকিয়েই ছিল। বলল, আপনি আমাদের এত বড় একটা উপকার করলেন, কিন্তু পরিচয়ই তো হল না। আমার নাম সুকান্ত ব্যানার্জি। ডাক্তারি করি। আর ইনি শমিতা-আমার স্ত্রী; একটা মিশনারি স্কুলে হিস্ট্রি পড়ান। বলেই হাতজোড় করল।

    এতক্ষণ ডক্টর সুকান্ত ব্যানার্জি আর তাতানকে নিয়েই ব্যস্ত ছিল দীপেন। মহিলাটি, অর্থাৎ শমিতাকে সেভাবে লক্ষ করেনি। শমিতা নামটা তার কানে খট করে লেগেছিল। কিন্তু কোটি কোটি বাঙালির মধ্যে শমিতা কি একজনই? হাজার হাজার শমিতা রয়েছে। হাতজোড় করে মহিলার দিকে ভালো করে তাকাতেই তার ভাঙাচোরা, শীর্ণ শরীরের ভেতর দুর্বল হৃৎপিণ্ডের ধুকপুকুনি মুহূর্তে যেন থমকে গেল। কেমন যেন অসাড় হয়ে গেল সে। পনেরো-ষোলো বছর পর আবার দেখা শমিতাকে চিনতে তার অসুবিধা হয়নি। সামান্য মেদ জমেছে চেহারায় এবং আরও অনেক বেশি সুন্দর হয়েছে।

    শমিতাও হাতদুটো জড়ো করে বুকের কাছে তুলে এনেছিল। ধ্বস্ত, জীর্ণ প্রেতের মতো মানুষটাকে আগে তেমন লক্ষ করেনি। তাতানকে নিয়ে সে এতটাই উৎকণ্ঠিত ছিল যে, খেয়াল করার কথা নয়। এবার কিন্তু শমিতা চিনতে পেরেছে। মুহূর্তে সব রক্ত সরে গিয়ে মুখটা একেবারে ছাইবর্ণ হয়ে যায়। তার গলার ভেতর থেকে ফ্যাসফেসে আওয়াজ বেরিয়ে এল।-নমস্কার।

    তারা কেউ লক্ষ করেনি, সুকান্ত ব্যানার্জি খুব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

    মাত্র দু-এক মিনিট। পনেরো-ষোলো বছর পর দেখা একটি পুরুষ এবং একটি নারীর কাছে সময়টা যেন কয়েক যুগেরও বেশি।

    একসময় সুকান্ত ব্যানার্জির কণ্ঠস্বর শোনা গেল।-আপনার নামটা কিন্তু এখনও জানতে পারিনি।

    চমকে উঠল দীপেন। ঝটিতি তার চোখ সুকান্তর দিকে ঘুরে গেল। শ্বাসটানা গলায় নিজের নামটা জানিয়ে বলল, বলার মতো তেমন কোনও পরিচয় আমার নেই। আমি সামান্য একজন মানুষ।

    সামান্য কি অসামান্য, সেটা অন্যকে ভাবতে দিন। বোধহয় কলকাতায় থাকেন?

    হ্যাঁ, গড়িয়ায়। সেটা গ্রেটার ক্যালকাটায় ঢুকে গেছে। সেই হিসাবেই কলকাতায় থাকি, বলা যায়। দেড় কামরার ছোট একটা ফ্ল্যাট আমার। পায়রার খোপ আর কী। সে চুপ করে গেল।

    হঠাৎ সবার চোখে পড়ল সূর্য পশ্চিমদিকের পাহাড়গুলোর মাথা ছুঁই ছুঁই করছে। চারিদিকের উঁচু উঁচু আর ছোট ছোট পাহাড়ের ছায়া ক্রমশ লম্বা হচ্ছে। বাতাস আরও কনকনে। সূর্য দূরের পাহাড়গুলোর ওধারে চলে গেলে অন্ধকার নামতে শুরু করবে।

    ব্যস্তভাবে সুকান্ত বলল, ঠান্ডাটা ভীষণ বেড়ে গেল। আপনি এখানে কোথায় উঠেছেন?

    আঙুল বাড়িয়ে লিডার নদীর ধারে তার হোটেলটা দেখিয়ে দিল দীপেন। দোতলা ছোট হোটেল। নাম প্যারাগন।

    আপনার কোনও আর্জেন্ট কাজ-টাজ আছে?

    আমার কখনও কোনও কাজ থাকে না। আমি ওয়ান হানড্রেড পারসেন্ট বেকার। বেড়াতে এসেছি। কিছুক্ষণ বাইরে ঘোরাঘুরি করি। এখানে যাই, সেখানে যাই। শীতটা যখন সহ্য হয় না, হোটেলে ফিরে টিভি চালিয়ে কম্বলের ভেতর ঢুকে পড়ি। রাত হলে খাওয়া-দাওয়া চুকিয়ে ফের কম্বলের নীচে। কাজ বলতে এটুকুই। দীপেন বলছিল ঠিকই, তবে তার চোখ বার বার শমিতার দিকে চলে যাচ্ছিল।

    সুকান্ত প্রায় লাফিয়ে উঠল।–ফাইন। আলাপ হল। কাশ্মীরের এই শীতের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় নাকি? চলুন, চলুন, কফি-টফি খেতে খেতে জমিয়ে গল্প করা যাবে। ওই যে আমাদের হোটেল।

    হোটেল প্যারাগন থেকে বেশ খানিকটা দুর লিডার নদীরই ধারে এখানকার সবচেয়ে বড় হোটেল–হোটেল পহেলগাঁও। দীপেন জানে শুধু বড়ই নয়, কাশ্মীরের এই এলাকায় সবচেয়ে পুরোনো এবং অভিজাত পান্থনিবাস। ওখানকার ডাবল-বেড রুমের প্রতিদিনের ভাড়া ছহাজার। তার মতো মানুষ একদিন হয়তো ওই হোটেলটায় থাকতে পারত। কিন্তু সেসব দিন আর নেই।

    দীপেন বলল, না না, প্লিজ আপনারা যান।

    চলুন তো মশাই বলে স্ত্রীর দিকে ঘাড় ফেরাল সুকান্ত। কী হল, বোবার মতো দাঁড়িয়ে রইলে যে। মিস্টার ঘোষকে রিকোয়েস্ট করো। ভদ্রলোক আমাদের এত উপকার করলেন।

    শমিতা এর মধ্যে হয়তো খানিকটা সামলে নিয়েছিল। যতটা সম্ভব স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করল, তুমিই তো এত করে বলছ। আশা করি, উনি আমাদের সঙ্গে যাবেন। তার মুখে ফিকে একটু হাসি ফুটল।

    আর কেউ টের না পাক, দীপেন ঠিকই বুঝেছে শমিতার ভেতর তুমুল তোলপাড় চলছে। বাইরে স্বাভাবিকতার যে খোলসটা দেখা যাচ্ছে সেটা পুরোপুরি মেকি।

    আরও বারকয়েক না না করল দীপেন। কিন্তু সুকান্ত ছাড়লে তো। শেষ পর্যন্ত রাজি হতেই হল। এতক্ষণ সিঁটিয়ে ছিল তাতান। যে-ই বুঝল মায়ের বকুনি আর মারধরের হাত থেকে আপাতত রেহাই পাওয়া গেছে, গা ছাড়া দিয়ে সে এসে দীপেনের একটা হাত ধরল।-চলো আঙ্কেল-চলো

    হোটেল পহেলগাঁও-এর দিকে হাঁটতে হাঁটতে কোনও দিকেই নজর ছিল না দীপেনের। তাতান সমানে কল কল করে চলেছে; সুকান্তও কী সব বলে যাচ্ছে। আবছা আবছা কিছু কিছু শব্দ কানে আসছিল। সে ভাবছিল কখনও কখনও ভ্যাদভেদে, বিস্বাদ, একঘেয়ে জীবনে আচমকা চমকে দেবার মতো এমন কিছু ঘটে যায় যা পরমায়ুর বাকি দিনগুলোকে অপার আনন্দে ঝলমলে করে তোলে। আবার এমন কিছু ঘটে যা অবাঞ্ছিত, দমবন্ধ-করা, সমস্ত ভাবনা-চিন্তাকে উথালপাথাল করে দেয়। আজকের দিনটায় দীপেনের জীবনে ঠিক তাই ঘটল। হয়তো শমিতার জীবনেও। সুদূর পহেলগাঁও-এ পনেরো-ষোলো বছর বাদে নিয়তিতাড়িত দুটি মানুষের যে দেখা হয়ে যাবে, তারা নিজেরাই কি কোনওদিন ভাবতে পেরেছিল।

    .

    ০২.

    হোটেল পহেলগাঁও-এ ডাবল বেড রুম না, বড় বড় দুকামরার একটা সুইট নিয়েই আছে সুকান্ত ব্যানার্জিরা। একটা বেড রুম, অন্যটা ড্রইং-কাম-ডাইনিং রুম। দামি দামি ক্যাবিনেট, কার্পেট, রুম-হিটার দিয়ে সুইটটা সাজানো। এমন একটা সুইট ভাড়া নিয়ে দামি হোটেলে যারা থাকতে পারে তারা সোসাইটি কোন স্তরের মানুষ, তা বলে দিতে হয় না। সেখানে পা দিয়েই টের পাওয়া গেল আরামের, বিলাসের নানা উপকরণ সেখানে ছড়ানো। শমিতা যে কতটা সুখে আছে হোটেলের এই সুসজ্জিত কক্ষটি যেন চোখে আঙুল দিয়ে দীপেনকে দেখিয়ে দিচ্ছে।

    সুকান্ত ব্যানার্জি বেশ আন্তরিক সুরে বলল, বসুন মিস্টার ঘোষ, বসুন

    দীপেনের খুব অস্বস্তি হচ্ছিল। এখানে না এলেই ভালো হত। কোনও একটা জোরালো অছিলা খাড়া করে এড়িয়ে যাওয়াই উচিত ছিল। কিন্তু তেমন সুযোগই তো পাওয়া গেল না। আড়ষ্টভাবে একটা সোফায় বসতে বসতে দীপেন ভাবল, এখানে কোন বিড়ম্বনায় পড়তে হবে, কে জানে!

    সুকান্তও বসে পড়েছিল। দীপেনকে তাতানের ভীষণ ভালো লেগেছে। একরকম তার জন্যই মায়ের হাতের বেদম ঠ্যাঙানির হাত থেকে আজকের দিনটা রেহাই পাওয়া গেছে। সে দীপেনের পাশে ঘন হয়ে বসল।

    শমিতা কিন্তু দাঁড়িয়েই আছে। চোখে মুখে কেমন একটা অস্বাচ্ছন্দ্যের ছাপ। তার দিকে তাকিয়ে সুকান্ত বলল, কী হল, ভদ্রলোককে ধরে নিয়ে এলাম। হসপিটালিটিতে ত্রুটি থেকে যাচ্ছে যে। কী ভাবছেন উনি! তড়বড় করে বলতে লাগল, এক্ষুনি রুম-সারভিসে বলে দাও কফি-টফি যেন পাঠিয়ে দেয়। খেতে খেতে আড্ডা দেওয়া যাক।

    কয়েক মিনিটের ভেতর কফি কাবাব কাজুবাদাম কাটলেট-টাটলেট এসে গেল।

    তাতান ছাড়া বাকি তিনজন কফির কাপ তুলে নিল। তাতান মনোনিবেশ করল কাটলেট, কাবাবে।

    কফিতে চুমুক দিয়ে সুকান্ত হইহই করে উঠল।-রাস্তায় দু-একটা মোটে কথা হয়েছে। এবার আলাপটা জমানো যাক। বললেন, গড়িয়ায় থাকেন।

    সুকান্ত যে মজলিশি মানুষ, যৎসামান্য পরিচয়েই তার আঁচ পেয়েছে দীপেন। আস্তে মাথা নাড়ল সোহা।

    সুকান্ত জিগ্যেস করল, বাড়িতে আর কে কে আছে?

    আমি একাই।

    চোখ কপালে তুলে একটা নকল বিস্ময়ের ভঙ্গি করল সুকান্ত।–দারা পুত্র পরিবার কেউ নেই?

    মাথাটা ডাইনে থেকে বাঁয়ে, বাঁয়ে থেকে ডাইনে বারকয়েক দোলাল দীপেন।–শুধু একটা কাজের লোক এসে দু-বেলা রান্না-টান্না করে দিয়ে যায়। যদি মনে করেন সে আমার ফ্যামিলি মেম্বার তা হলে তাই।

    চোখ গোলাকার করে সুকান্ত স্ত্রীর দিকে তাকায়।সংসারের কোনওরকম ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট নেই। একেবারে মুক্তপুরুষ-কী বলে?

    শমিতা উত্তর দিল না।

    সুকান্তর চোখ আবার ফিরে এল দীপেনের দিকে।বেশ আছেন মিস্টার ঘোষ।

    দীপেনের চোখ-মুখে নির্জীব, ফিকে একটু হাসি ফুটে উঠতে-না-উঠতেই মিলিয়ে গেল।

    সুকান্ত এবার বলল, সবে পরিচয় হয়েছে। বেশি কৌতূহল প্রকাশ করতে নেই। যদিও অশোভন, তবু একটা ব্যাপার জানতে ইচ্ছে করছে।

    ভেতরে ভেতরে অস্বস্তিটা চলছেই। সুকান্ত কী জানতে চাইছে, কে জানে! সতর্কভাবে দীপেন বলল, বলুন–

    আপনি কি কোনও সারভিসে আছেন বা অন্য কিছু করেন?

    অস্বাচ্ছন্দ্যের মাত্রাটা একটু কমল দীপেনের।-আমি কিছুই করি না। না সারভিস, না বিজনেস। একেবারে নিষ্কর্মা, বেকার। বলেই খেয়াল হল সুকান্ত যে স্তরের মানুষ, অশোভন জেনেও একজন সদ্য পরিচিতকে সে কী করে না করে, এ জাতীয় গাঁইয়া মার্কা প্রশ্ন করবে কেন? পরক্ষণে নিজের অজান্তে তার চোখ দুটো শমিতার দিকে চলে গেল। শমিতা ঠোঁট টিপে, একদৃষ্টে পলকহীন তাকেই লক্ষ করছে।

    হোটেলে আসার পর তার সঙ্গে একটি কথাও বলেনি শমিতা। আগেও বলেছে কি? মনে পড়ল না দীপেনের। শমিতাকে কেমন যেন আড়ষ্ট, সতর্ক দেখাচ্ছে। কিন্তু সুকান্তর মতো তারও কি তার সম্বন্ধে কৌতূহল রয়েছে? সমস্ত ব্যাপারটা দুর্বোধ্য, ঘোলাটে লাগছে দীপেনের কাছে। অস্বাচ্ছন্দ্যটা যেটুকু কমেছিল তার কয়েকগুণ বেড়ে ফিরে এল যেন।

    সুকান্ত হইচই বাধিয়ে বলল, ওই দেখুন, আপনাকেই শুধু এটা-ওটা জিগ্যেস করে চলেছি। অথচ আমাদের সম্বন্ধেও তো আপনাকে জানানো দরকার।

    মাত্র ঘণ্টা দেড়-দুই হল তাদের পরিচয় হয়েছে, হয়তো জীবনে আর কখনও সুকান্তদের সঙ্গে দেখা হবে না। তা হলে এত জানাজানির প্রয়োজনটা কী? তক্ষুনি দীপেনের খেয়াল হয় মাঝখানে শমিতা রয়েছে। সুকান্তর প্রশ্নগুলো কি তারও হতে পারে? অস্বস্তি তো ছিলই, ক্রমশ যেন কুঁকড়ে যেতে লাগল সে।

    সুকান্ত বলতে লাগল, জানেন মিস্টার ঘোষ, আমরা ওল্ড কলকাত্তাইয়া। পাঁচ-ছ জেনারেশন ধরে ওখানে আছি। ঠাকুরদার ঠাকুরদা ছিলেন ইংরেজ আমলে একটা বিরাট ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার। তাঁর ছেলে ওই ফার্মেই বিরাট পোস্টে ছিলেন। ঠাকুরদা, আমার বাবা আর দুই কাকা হাইকোর্টের লইয়ার। তারপর আমাদের জেনারেশন। আমরা কেউ বাপ-ঠাকুরদার পথে হাঁটিনি। আমি ডাক্তার, আমার ছোট ভাই ইঞ্জিনিয়ার, খুড়তুতো ভাইরা কেউ চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, কেউ ব্যাঙ্কার, কেউ বা প্রফেসর। আপনি তো বললেন একেবারে একা। আমরা কিন্তু উলটো। কয়েক জেনারেশন ধরে আমাদের জয়েন্ট ফ্যামিলি। বাবা, কাকা, মা, কাকিমা, খুড়তুতো ভাই-টাই, তাদের বউরা, নিজের ছেলে, ভাইপো-ভাইঝিদের নিয়ে জড়িয়ে-মড়িয়ে আছি। আমাদের টোটাল ফ্যামিলি মেম্বার কত জানেন? সাতাশ। হোল বেঙ্গল চষে ফেলুন, এত বড় ফ্যামিলি কমই পাবেন। খুব বেশি হলে পাঁচ-দশটা। এখন নিজের বউ, দু-একটা বাচ্চা নিয়ে ছোট ছোট সব ফ্যামিলি।

    দীপেন হতভম্ব হয়ে যাচ্ছিল। সুকান্ত ব্যানার্জি নিজেদের সম্বন্ধে এমন সাতকাহন কেঁদে বসল কেন? অচেনা একটি মানুষকে এসব শোনাবার পেছনে কোনও গভীর উদ্দেশ্য আছে কি?

    বলতে বলতে সুকান্ত দীপেনের দিকে তাকাল।–সব শুনছেন তো মিস্টার ঘোষ?

    আস্তে মাথা নড়ল দীপেন। আবছা গলায় বলল, শুনছি।

    পাইকপাড়ায় গিয়ে যদি ব্যানার্জি ভিলা-র নাম করবেন যে-কেউ দেখিয়ে দেবে। প্যালেসের মতো চারতলা বাড়িটা বানিয়েছিলেন আমার ঠাকুরদার বাবা। ওটা ওই এলাকার ল্যান্ডমার্ক। ওটা খুব শিগগিরই হেরিটেজ বিল্ডিং হয়ে যাবে।

    চকিতে দীপেনের খেয়াল হল, নিজেদের বংশগরিমা, রাজপ্রাসাদের মতো বাড়ি, আভিজাত্য-টাত্য নিয়ে আধঘন্টা ধরে সুকান্ত একটানা যা জাহির করল তার পেছনে কোথাও কি চাপা আত্মম্ভরিতা রয়েছে? সে কি বোঝাতে চেয়েছে, দেখো আমাদের পারিবারিক স্টেটাসের কাছে তুমি কত তুচ্ছ, কত অকিঞ্চিৎকর। দীপেন জানে এমন অনেক মানুষ আছে যারা ঢাক-ঢোল বাজিয়ে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে জানাতে চায়, আমরা এই করেছি, সেই করেছি, আমাদের এত সুনাম, এত বৈভব ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু অপরিচিত একটি লোককে ডেকে এনে অবিরল এই নিয়ে কীর্তন গাওয়ার কারণটার তলকূল আগেও পায়নি সে, এখনও পেল না। ব্যাপারটা তার কাছে ধোঁয়াটে হয়ে রইল।

    আচমকা সুকান্তর খেয়াল হল দীপেন হাত থেকে কফির মগটা নামিয়ে রেখেছে। প্লেটে প্লেটে সুখাদ্যগুলি তেমনই পড়ে আছে। সুকান্ত ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়ে।-এ কী মিস্টার ঘোষ, আপনি তো কিছুই ছোঁননি। আমি সমানে বকবক করে যাচ্ছি। আপনি নিশ্চয়ই বোরড ফিল করছিলেন। কফিটা জুড়িয়ে গেছে। শমিতার দিকে ফিরে বলল, আমাদের গেস্ট, তুমি একটু লক্ষ রাখবে তো? রুম-সারভিসে বলে দাও, ঠান্ডা কফি-টফি ফেরত নিয়ে গিয়ে গরম খাবার-টাবার দিয়ে যায় যেন

    তাতান অবশ্য তার প্লেটগুলো সাফ করে ফেলেছে। শমিতা আর সুকান্ত দু-এক চুমুক কফি খেয়েছিল কিন্তু প্লেটে হাত দেয়নি।

    দীপেন বাধা দেবার আগেই শমিতা রুম-সারভিসে ফোন করে দিয়েছে এবং কয়েক মিনিটের ভেতর গরম গরম টাটকা খাবার চলে এসেছে

    সুকান্ত বলল, এবার শুরু করুন মিস্টার ঘোষ

    দীপেন কী জবাব দিতে যাচ্ছিল, হঠাৎ বুকে চিন চিন করে ব্যথা শুরু হল। চেনা লক্ষণ। একটা বড় ধরনের স্ট্রোক হবার পর ডাক্তার দত্তগুপ্ত তাকে সবসময় ব্যথানাশক বড়ি সঙ্গে রাখতে বলেছিলেন। যেখানেই দীপেন যায়, একপাতা ওই বড়ি তার পকেটেই থাকে।

    ওষুধের প্যাকেটটা দ্রুত বের করে একটা বড়ি জিভের তলায় রাখল দীপেন।

    সুকান্ত, শমিতা আর তাতান দীপেনের দিকের তাকিয়ে ছিল। সুকান্ত জিগ্যেস করল, ওটা কী খেলেন মিস্টার ঘোষ, সরবিট্রেট?

    দীপেন উত্তর দিল না।

    সুকান্ত জিগ্যেস করল, যাদের হার্টের সমস্যা আছে, মাঝে মাঝে যখন বুকে পেইন হয় তাদের ওই ওষুধটা খেতে হয়। আপনার কি সেরকম কোনও প্রবলেম আছে?

    আছে। একটা ম্যাসিভ হার্ট-অ্যাটাক হয়েছিল। বাইপাস সার্জারি করতে হয়।

    যে সুকান্ত কৌশলে তাদের বংশ, বনেদিয়ানা ইত্যাদি সম্বন্ধে সাত কাহনের জায়গায় চোদ্দো কাহন ফেঁদে বসেছিল তার ভেতর থেকে হঠাৎ দায়িত্বশীল চিকিৎসকটি যেন বেরিয়ে এল।সরি মিস্টার ঘোষ, আমি এটা জানতাম না। কাবাব-টাবাব দেওয়া ঠিক হয়নি।

    দীপেন বলল, আজকেই তো আলাপ হয়েছে। জানবেন কী করে? নিজের অজান্তেই তার চোখ শমিতার দিকে চলে যায়। মহিলাটির চোখে-মুখে উৎকণ্ঠার ছাপ ফুটে উঠেই চকিতে মিলিয়ে গেল।

    সুকান্ত স্ত্রীর দিকে তাকায়।–মিস্টার ঘোষের জন্যে চিকেন স্যুপ-টুপ দিয়ে যেতে বলো। যেন খুব লাইট হয়।

    একবার কাবাব, ফিশফিঙ্গার জুড়িয়ে জল হওয়া, এবার হঠাৎ বুকের ব্যথাটা চাগিয়ে ওঠা–দু-দুবার তার জন্য দামি দামি খাবার নষ্ট তো হলই, বিলটা সুকান্ত ব্যানার্জিদেরই মেটাতে হবে। বিড়ম্বনার একশেষ। চুড়ান্ত বিব্রত দীপেন দুহাত নেড়ে বলতে লাগল, না না, প্লিজ কিছু আনাবেন না। আমি এবার যাব। বলেই দ্রুত উঠে দাঁড়ায় সে।

    সুকান্ত ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়ে।–যাবেন কী মশাই! আমি একজন ডাক্তার। হার্ট স্পেশালিস্ট। আপনাকে এই অবস্থায় যেতে দিতে পারি না।

    বলে কী লোকটা? মাথা-টাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি? দীপেন তাকিয়ে থাকে।

    সুকান্ত থামেনি।-আপনার বাইপাস হয়েছে। পাহাড়-টাহাড়ে বেড়াতে আসা ভীষণ রিস্কি। সে যাক, আমাদের টু-বেডরুম সুইট। আজ রাতটা এখানেই থেকে যান। আমাদের কোনওরকম অসুবিধা হবে না। সংকোচের কোনও কারণ নেই।

    এর মধ্যে সন্ধে নেমে গিয়েছিল। আর বুকের ব্যথানাশক বড়িটা মুখের লালায় গলে গিয়ে ভেতরে ঢুকে যাওয়ায় যন্ত্রণাটা আর নেই দীপেনের। এখানে থেকে যাওয়া মানে জটিল ফাঁদে আটকে যাওয়া। নিজেকে মুহূর্তে শক্ত করে নিল সে। বলল, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ডক্টর ব্যানার্জি। আমাকে আমার হোটেলে ফিরতেই হবে।

    দীপেন দরজার দিকে পা বাড়িয়ে দিয়েছিল, আর তখনই তার চোখে পড়ল, শ্বাসরুদ্ধের মতো দাঁড়িয়ে আছে শমিতা। সে চলে যাচ্ছে দেখে জোরে নিঃশ্বাস ফেলল। খুব সম্ভব মুক্তির নিঃশ্বাস। দীপেন তাদের স্যুইটে রাত্তিরে থাকুক, খুব সম্ভব সেটা কোনওভাবেই সে চাইছিল না।

    মুখ ফিরিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেল দীপেন। সুকান্তও উঠে পড়েছে। ব্যস্তভাবে বলল, আরে আরে, আপনি তো ভীষণ জেদি লোক দেখছি। ডাক্তার হিসেবে বারণ করছি, তবু শুনছেন না?

    দীপেন উত্তর দিল না। এর মধ্যে সে দরজার কাছাকাছি চলে গেছে।

    একটু দাঁড়ান, যখন থাকতে চাইছেন না, কী আর করা যাবে। আপনাকে আপনার হোটেলে পৌঁছে দিয়ে আসি।

    দীপেন বলল, দয়া করে একজন অচেনা লোকের জন্যে আপনি আর কষ্ট করবেন না। আমি একাই চলে যেতে পারব।

    অচেনা কোথায়? পরিচয় তো হয়েই গেছে। সুকান্ত লম্বা লম্বা পা ফেলে এগিয়ে গেল কিন্তু আর আগেই দীপেন দরজা খুলে বেরিয়ে গেছে।

    আশ্চর্য লোক তো- সুকান্ত ধীরে ধীরে দরজাটা বন্ধ করে কয়েক লহমা দাঁড়িয়ে রইল। তারপর ফিরে এসে তার সেই সোফাটায় বসল। স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল, এত করে বললাম তবু থাকল না?

    শমিতা অন্যমনস্কর মতো বলল, সে যখন থাকতে চাইছিল না তখন এত জোরাজুরি করার কী দরকার ছিল?

    স্থির দৃষ্টিতে শমিতাকে লক্ষ করতে করতে সুকান্ত বলল, লোকটা হার্টের পেশেন্ট। তাই

    পহেলগাঁওয়ে যে টুরিস্টরা বেড়াতে এসেছে, তাদের মধ্যে আরও কেউ কেউ এই ধরনের পেশেন্ট থাকতে পারে। তাদের রোগের খবর জানতে পারলে আমাদের স্যুইটে থাকতে দেবে নাকি? বলে আর দাঁড়াল না শমিতা। ভেতর দিকের রুমটায় চলে গেল।

    অদ্ভুত মিহি একটা হাসির রেখা চকিতের জন্য সুকান্তর ঠোঁটে ফুটে উঠেই মিলিয়ে গেল।

    1 2 3
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনিজেই নায়ক – প্রফুল্ল রায়ভ
    Next Article উত্তাল সময়ের ইতিকথা – প্রফুল্ল রায়

    Related Articles

    প্রফুল্ল রায়

    আলোর ময়ুর – উপন্যাস – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    কেয়াপাতার নৌকো – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    শতধারায় বয়ে যায় – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    উত্তাল সময়ের ইতিকথা – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    নিজেই নায়ক – প্রফুল্ল রায়ভ

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    ছোটগল্প – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Our Picks

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.