Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    গালিভারস ট্রাভেলস – জোনাথন সুইফট

    জোনাথন সুইফট এক পাতা গল্প213 Mins Read0

    লিলিপুটদের দেশে – ১

    প্রথম পরিচ্ছেদ

    [ লেখক তাঁর নিজের এবং তাঁর পরিবারের কিছু ইতিহাস দিচ্ছেন। ভ্রমণে তাঁর প্রথম আগ্রহ। জাহাজ ডুবি হল, প্রাণ বাঁচাতে সাঁতার কাটতে হল, নিরাপদ তীরে পৌঁছলেন কিন্তু দেশটা হল লিলিপুটদের। বন্দী হলেন, লিলিপুটরা তাদের দেশে লেখখকে নিয়ে গেল। ]

    .

    নটিংহ্যামশায়ারে আমার বাবার ছোটো একটা জমিদারী ছিল, আমি হলাম বাবার পাঁচ ছেলের মধ্যে তৃতীয়। আমার বয়স যখন চৌদ্দ তখন বাবা আমাকে কেমব্রিজে এমানুয়েল কলেজে পাঠালেন। সেখানে আমি তিন বছর ছিলাম এবং বেশ মন দিয়েই লেখাপড়া করছিলাম। কিন্তু কলেজে পড়ার আমার যে খরচ (যদিও আমার জন্যে বরাদ্দ অর্থ যৎসামান্যই ছিল) বাবার আয়ের তুলনায় বেশি ছিল। অতএব আমার পড়া বন্ধ হল এবং আমাকে সাধ্য হয়েই লন্ডনের বিখ্যাত সার্জন মিঃ জেমস বেটসের কাছে শিক্ষানবিশির কাজ নিতে হল। মিঃ বেটসের কাছে আমি চার বছর ছিলাম। বাবা আমাকে মাঝে মাঝে কিছু টাকা পাঠাতেন। আমি সেই টাকায় জাহাজ চালানের বিদ্যা এবং দেশ ভ্রমণে কাজে লাগতে পারে গণিতের সেই সব তথ্য শিখতে লাগলাম কেননা আমি বিশ্বাস করতাম যে সমুদ্রযাত্রায় কোনো না কোনো সময়ে আমার ভাগ্য ফিরবে। মিঃ বেটসের কাজ ছেড়ে আমি বাবার কাছে ফিরে এলাম। বাবা এবং জন কাকা এবং কয়েকজন আত্মীয়ের কাছ থেকে আমি চল্লিশ পাউন্ড সংগ্রহ করলাম আর বছরে তিরিশ পাউন্ডের প্রতিশ্রুতি পেলাম। আমার উদ্দেশ্য আমি লাইডেন যাব। সেখানে আমার খরচ চালাতে হবে। লাইডেনে দু বছর সাত মাস ধরে আমি ফিজিক্স পড়লাম, দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রায় এ বিদ্যা.খুবই প্রয়োজনীয়।

    লাইডেন থেকে ফিরে আসার পর আমার কল্যাণকামী মনিব মিঃ বেটস আমাকে ক্যাপটেন আব্রাহাম প্যানেলের কাছে পাঠালেন। তিনি ‘সোয়ালো’ জাহাজের কমান্ডার। জাহাজের সার্জন পদটি খালি ছিল। মিঃ বেটস অনুমোদন করায় আমি চাকরিটি পেলাম।

    ঐ জাহাজে আমি ছিলাম সাড়ে তিন বছর। এই সময়ের মধ্যে লেভান্ট এবং আরো কয়েকটি বন্দরে বা দেশে যাওয়া-আসা করলাম। দেশে ফিরে স্থির করলাম লন্ডনে বসবাস করব । আমার মনিব মিঃ বেটস আমাকে উৎসাহ দিলেন এবং তাঁর মারফত আমি কয়েকজন রোগীও পেলাম। ওল্ড জুরি পাড়ায় একটা বাড়ির অংশ ভাড়া নিলাম এবং বন্ধুদের পরামর্শে অবস্থার পরিবর্তনের জন্যে আমি নিউ গেট স্ট্রিটের হোসিয়ারী ব্যবসায়ী মিঃ এডমন্ড বার্টসের মেজ মেয়ে মিস মেরি বার্টনকে বিয়ে করে যৌতুক স্বরূপ চারশ পাউন্ড পেলাম।

    কিন্তু দুঃখের বিষয় যে আমার সেই কল্যাণকামী মনিব মিঃ বেটস দু বছর পরে মারা গেলেন। আমার পরিচিত সংখ্যা বেশি না থাকায় আমার ব্যবসায়ে ভাঁটা পড়তে আরম্ভ, করল । তাছাড়া আমার সমব্যবসায়ীদের কুনীতি অনুসরণ করতে আমার বিবেকে বাধল । অতএব আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে এবং কয়েকজন পরিচিতের সঙ্গে পরামর্শ করে আবার সমুদ্রযাত্রায় যাওয়াই স্থির করলাম। আমি পরপর দুটো জাহাজে সার্জন ছিলাম এবং ছবছর ধরে ইস্ট এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ-এ কয়েকবার সমুদ্রযাত্রার ফলে কিছু অর্থ সঞ্চয় করলাম। অবসর সময়ে আমি প্রাচীন ও আধুনিক লেখকদের ভালো ভালো বই পড়তাম। বইয়ের কোনো অভাব ছিল না তাছাড়া আমি যখনি কোনো দেশে অবতরণ করতাম তখনি আমি সেই দেশের ভাষা ও মানুষের আচার ব্যবহার রীতিনীতি আয়ত্ত করতাম। আমার স্মরণশক্তি প্রখর থাকায় এসব শিখতে আমায় বেগ পেতে হয় নি।

    শেষ সমুদ্রযাত্রাটা আমার পক্ষে সৌভাগ্যজনক হয় নি। আমি যেন ক্লান্ত হয়ে পড়লাম, সমুদ্র যেন আর ভালো লাগে না; তাই আমি ঠিক করলাম স্ত্রী ও পরিবার নিয়ে এবার বাড়িতেই থাকা যাক । ওল্ড জুরি পাড়া থেকে আমি ফেটার লেনে উঠে গেলাম এবং সেখান থেকে ওয়াপিং পল্লী, আশা যে এখানে নাবিকদের মধ্যে আমার পেশা ভালো জমবে। কিন্তু তা হবার নয়। তিন বছর অপেক্ষা করলাম কিন্তু বরাত ফিরল না । তখন ভাগ্যক্রমে একটা চাকরি জুটে গেল। ক্যাপটেন উইলিয়ম রিচার্ড তাঁর ‘অ্যান্টিলোপ’ জাহাজ নিয়ে সাউথ সি যাচ্ছেন। ১৬৯৯ সালের ৪ঠা মে আমরা ব্রিস্টল থেকে যাত্রা করলাম এবং গোড়ার দিকে তরতরিয়ে এগিয়ে চললাম এই সব সমুদ্রে আমাদের সমুদ্র অভিযানের বিবরণী দিয়ে পাঠকদের পীড়িত করা ঠিক হবে না । তবে এইটুকু বলে রাখা ভালো যে ইস্ট ইন্ডিজ পার হবার পর আমরা প্রবল ঝড়ের টানে ভ্যান ডাইমেন আইল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিম দিকে ভেসে গেলাম। পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেল যে আমরা ৩০ ডিগ্রি অক্ষাংশ অতিক্রম করে দক্ষিণে খানিকটা চলে এসেছি। কঠোর পরিশ্রম আর খারাপ খাদ্য আমাদের বারজন নাবিকের মৃত্যুর কারণ হল আর বাকিরা অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ল। নভেম্বরে এখানে গ্রীষ্ম আরম্ভ হয়। পাঁচ তারিখে আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন কিন্তু এরই মধ্যে আমাদের একজন নাবিক জাহাজ থেকে মাত্র আট কেবল মানে তিন শ ফুট আন্দাজ দূরে একটা পাহাড় দেখতে পেল। কিন্তু বাতাস এত প্রবল বেগে বইছিল যে পাহাড়টা কিছুতেই এড়ানো গেল না, জাহাজ সজোরে সেই পাহাড়ে ধাক্কা মারল । আমি এবং আরো পাঁচজন নাবিক সমুদ্রে একটা নৌকো নামাতে পেরেছিলাম তাই কোনোরকমে একটা বাতাস এসে আমাদের নৌকোটাকে ধাক্কা দিয়ে সব এলোমেলো করে দিল। আমার নৌকোর সঙ্গীদের কী হল কিংবা যারা পাহাড়টার উপর পালাতে পেরেছিল কিংবা যারা জাহাজে থেকে গিয়েছিল, এদের সকলের ভাগ্যে কি ঘটেছিল আমি কিছুই জানি না, তবে আমার বিশ্বাস তারা সকলেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। আমার ভাগ্য অন্যরকম যে জন্যে আমি সাঁতার কেটে বা বাতাস ও জোয়ারের ধাক্কায় এগিয়ে যেতে পারছিলাম। মাঝে মাঝে আমি পানিতে পা ডুবিয়ে পানির গভীরতা জানবার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু তল পাচ্ছিলাম না। অবশেষে আমি ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়লাম, হাত পা আর চলছে না তখনি আমি পায়ের নিচে জমি পেলাম, ইতোমধ্যে ঝড়ও বেশ কমে গেছে। সাগরের গভীরতা কম এখানে। প্রায় মাইল খানেক হেঁটে ডাঙায় উঠলাম। আমার মনে হল এখন সন্ধ্যা আটটা হবে। ডাঙায় উঠে আধ মাইলখানেক হাঁটলাম কিন্তু কোনো বাড়ি বা বাসিন্দা চোখে পড়ল না, তবে আমি এতই দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম যে সেগুলো আমার নজরেই পড়ে নি। আমি অত্যন্ত ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম।

    তারপর বেশ গরম মনে হচ্ছিল, জাহাজ ছাড়ার আগে আধ পাঁইট ব্র্যান্ডিও খেয়েছিলাম, এইসব কারণে ঘুমে আমার চোখ জুড়ে আসছিল। আমি ছোটো ছোটো ও নরম ঘাসের উপর শুয়ে পড়লাম । এত গভীর ভাবে আমি কখনো ঘুমাই নি। মনে হয় আমি ন ঘণ্টারও বেশি ঘুমিয়েছিলাম। যখন ঘুম ভাঙল তখন সকাল হয়ে গেছে। আমি উঠবার চেষ্টা করলাম, কিন্তু একি? আমি নড়তে পারছি না কেন? কারণটা বুঝলাম।

    আমি চিৎ হয়ে শুয়েছিলাম । আমার দুই হাত ও দুই পা আর আমার মাথার লম্বা চুল কেউ বা কারা জমির সঙ্গে বেশ মজবুত করে বেঁধে দিয়েছে। আমার বুক ও উরুর উপর দিয়েও বেড় দেওয়া হয়েছে। পাশ ফিরতে পারছিলাম না তাই উপর দিকেই চেয়েছিলাম। রোদ ক্রমশ গরম হচ্ছে, আলো চোখকে পীড়া দিচ্ছে। আমাকে নিয়ে কারা বুঝি কিছু বলাবলি করছে কিন্তু আমি যে ভাবে শুয়ে আছি তাতে আকাশ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। একটু পরেই আমার মনে হল আমার বাঁ পায়ের উপর কিছু একটা জীবন্ত প্রাণী চলে বেড়াচ্ছে এবং সেটা আস্তে আস্তে আমার বুকে এসে উঠল এবং প্রায় আমার চিবুকের সামনে এসে থামল । যতটা পারি চোখ নামিয়ে আমি দেখলাম সেটা মনুষ্যাকার একটা প্রাণী, বড়জোর ছ ইঞ্চি লম্বা, হাতে তীর, ধনুক, পিঠে তাঁর রাখবার তৃণীর। ইতোমধ্যে আমি দেখলাম প্রথম ক্ষুদে মানুষটিকে অনুসরণ করে আরো চল্লিশজন (আমার তাই মনে হল) এগিয়ে আসছে। আমি তো ভীষণ অবাক হয়ে গেলাম এবং এত জোরে চিৎকার করে উঠলাম যে ওরা ভয় পেয়ে পালাতে আরম্ভ করল। পরে শুনছিলাম যে আমার দেহ থেকে নিচে লাফাতে গিয়ে কয়েকজন আহত হয়েছিল। যাহোক একটু পরে তারা আবার ফিরে এল এবং আমার পুরো মুখখানা দেখবার জন্যে একজন সাহস করে এগিয়ে এল। সে প্রশংসার ভঙ্গিতে দু হাত ও চোখ তুলে পরিষ্কার ও তীক্ষ্ণ স্বরে চিৎকার করে উঠল ‘হেকিনা দেগুল’ । তার সঙ্গীরাও শব্দ দুটি সমস্বরে কয়েকবার উচ্চারণ করল কিন্তু তার যে কী অর্থ তা আমি জানি না। কী তারা বলতে চাইছে? পাঠকরা বুঝতেই পারছেন আমি বেশ অস্বস্তিতেই সারাক্ষণ শুয়ে আছি।

    অবশেষে নিজেকে মুক্ত করবার চেষ্টায় আমি বলপ্রয়োগ করলাম ফলে যেসব গোঁজের সঙ্গে সরু দড়ি দিয়ে ওরা আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধেছিল সেগুলো মাটি থেকে পটাপট উঠে গেল। দড়িও ছিড়ল। বাঁ হাতটা আগে মুক্ত করলাম। এবার বুঝলাম ওরা আমাকে কী ভাবে বেঁধেছে কিন্তু মাথা তুলতে পারছি না, বাঁ দিকের চুলগুলো কোথাও আটকাচ্ছে তবুও জোরে একটা ঝাঁকুনি দিলাম, বেশ আঘাত লাগল কিন্তু উপায় কী? যা হোক মাথাটা এখন ইঞ্চি দুয়েক ঘোরাতে পারলাম। তাদের একটাকেও ধরবার আগেই তারা আবার পালিয়ে গেল এবং এবারও আগের মতো সমস্বরে চিৎকার করতে লাগল। চিৎকার থামবার পর শুনলাম একজন জোরে বলছে ‘তোলগো ফেনাক’। আর সঙ্গে সঙ্গে অনুভব করলাম আমার বাঁ হাতের ওপরের দিকে শখানেক তীর এসে বিঁধল। মনে হল যেন শত শত সুচ ফুটল। তারপর আমরা ইউরোপে যেমন বোমা ছুঁড়ি ওরাও সেইরকম আকাশের দিকে কিছু ছুঁড়ল এবং তা ফেটে আমার উপর কিছু অংশ পড়তে লাগল কিন্তু যা পড়ল তা এতই হালকা যে আমি কিছুই অনুভব করলাম না । তীর বৃষ্টি শেষ হল, আমি ব্যথা অনুভব করছি, বাঁধন খোলবার চেষ্টা করছি।.এমন সময় প্রথমবার অপেক্ষা আরো বেশি পরিমাণ একঝাঁক তীর এসে আমাকে বিধল ।

    এ তীরগুলো আগের চেয়ে বড়। কেউ কেউ আবার ক্ষুদ্র বর্শাহাতে আমাকে আক্রমণ করল, ভাগ্যক্রমে আমার গায়ে ছিল পুরু রাফ্ জার্কিন যা ঐ বর্শাগুলো ভেদ করতে পারল না। আমি ভাবলাম এখন চুপচাপ পড়ে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। রাত্রি পর্যন্তই এইভাবে থাকব। বাঁ হাতটাও আলগা হয়েছে অতএব নিজেকে সহজে মুক্ত করতে পারব। আর তারপর এই সব বাসিন্দারা, এরা সবাই যদি এমন ক্ষুদে হয় এবং আরো বড় দল নিয়ে আমাকে আক্রমণ করে তাহলেও আমি এদের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারব । কিন্তু আমার ভাগ্যে অন্যরকম লেখা ছিল। বাসিন্দারা যখন দেখল আমি চুপচাপ পড়ে আছি তখন তারাও তীর ছোড়া বন্ধ করল। কিন্তু কোলাহল বাড়ছে, তাহলে ভিড়ও বাড়ছে। আমার ডান কান থেকে চার গজ দূরে দুমদাম, আওয়াজ শুনতে পেলাম ।

    ঘণ্টাখানেক এই আওয়াজ চলল, লোকজন কাজ করছে। বাঁধন থাকা সত্ত্বেও যতটা সম্ভব ঘাড় ফেরালাম, কী হচ্ছে দেখা দরকার। আমি দেখলাম, জমি থেকে ফুট খানেক উঁচু একটা মঞ্চ তৈরি হচ্ছে। মঞ্চে জনা চার মানুষের জায়গা হতে পারবে, মঞ্চে উঠবার জন্যে দুটো তিনটে মইও লাগানো হচ্ছে। মঞ্চে একজন উঠলেন, দেখে মনে হল কেউকেটা, তিনি আমাকে উদ্দেশ করে একটা বক্তৃতা দিলেন যার একবর্ণও আমি বুঝলাম না। আমার বলা উচিত যে সেই কেউকেটা ভদ্রলোক তাঁর বক্তৃতা আরম্ভ করবার পূর্বে তিনবার ‘লাংরো দেহুল সান’ শব্দগুলো চিৎকার করে বললেন (শব্দ তিনটির অর্থ আমাকে পরে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল)। বলার সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চাশজন বাসিন্দা এসে আমার মাথার ও বাঁদিকের বাঁধন কেটে দিল। ফলে আমি ডান দিকে মাথা ঘুরিয়ে সেই বক্তাকে দেখতে পেলাম। দেখে মনে হল মানুষটি আধাবয়সী এবং তার সঙ্গে যে তিনজন মানুষ রয়েছে তাদের চেয়েও লম্বা। তিনজনের মধ্যে একজন তার বালক-ভৃত্য বা ‘পেজ’; বক্তার লম্বা কোটের পিছন দিকটা ধরে আছে। ছেলেটা আমার মাঝের আঙুলের চেয়ে একটু লম্বা হবে, আর বাকি দুজন বক্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে আছে, যেন তার রক্ষাকারী। বক্তার সমস্ত বৈশিষ্ট্যগুলোই সুপরিস্ফুট, কখনো নরম কখনো গরম কখনো সাশানি আবার কখনো অনুরোধ। ভাষা না বুঝলেও কন্ঠস্বর ও অঙ্গভঙ্গি শুনে ও দেখে বুঝতে অসুবিধে হচ্ছিল না। আমি অত্যন্ত বিনীতভাবে এবং অল্প কথায় জবাব দিলাম।

    সূর্যের দিকে চেয়ে যেন সূর্যকে সাক্ষী রেখে, বাঁ হাত তুলে এবং ডান হাত দিয়ে বার বার আমার মুখ দেখাতে দেখাতে সব লাজলজ্জা বিসর্জন দিয়ে আমি তাঁকে বোঝাতে চাইলাম যে আমি ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় কাতর। সেই জাহাজ ছাড়ার পর থেকে আমার পেটে একটাও দানা পড়ে নি, আমি আর দাঁড়াতে পারছি না। ‘হুরগো’ (সর্বোচ্চ নেতাকে ওরা এই বলে সম্বোধন করে, এসব অবশ্য পরে জেনেছিলাম) আমার মনোভাব বেশ ভালো করেই বুঝতে পারলেন । তিনি মঞ্চ থেকে নেমে এসে আদশে করলেন আমার দুদিকে মই খাড়া করা হোক। মই খাড়া হতেই কয়েক শত ক্ষুদ্র মানুষ বা বামন মই বেয়ে উঠতে লাগল, টুকরি ভর্তি মাংস নিয়ে আমার মুখের দিকে এগিয়ে এল । সেই সর্বোচ্চ নেতা অর্থাৎ রাজা নাকি আমার বিষয় জানতে পেরেই আমার আহারের আয়োজন করেছিলেন। এখন সেই আহার তিনি আমার কাছে পাঠাবার আদেশ দিয়েছেন। খেতে খেতে বুঝতে পারলাম যে বিভিন্ন কয়েক প্রকার প্রাণীর মাংস আমাকে দেওয়া হয়েছে কিন্তু স্বাদ গ্রহণ করে তাদের চিনতে পারলাম না। মাংসের টুকরোগুলো মটনের টুকরোর মতো গর্দান, রান ইত্যাদি চেনা যাচ্ছিল কিন্তু খুবই ক্ষুদ্র। আমি তো একসঙ্গে দুটো তিনটে মুখে পুরছিলাম। আর পাউরুটি? সেগুলো আমার বন্দুকের বুলেটের চেয়েও ছোটো, তাও একসঙ্গে তিনটে করে গালে পুরছিলাম । যত তাড়াতাড়ি পারছিল তারা আমার খাবার জুগিয়ে যাচ্ছিল এবং এত দ্রুত সব সাফ হয়ে যেতে তারাও অবাক হয়ে যাচ্ছিল, চোখ বড় বড় করে দেখছিল। হয়তো ভাবছিল কোথা থেকে একটা রাক্ষস এল। আমার ক্ষিধেও পেয়েছিল ভীষণ।

    তারপর আমি ইশারা করলাম যে আমার কিছু পানীয় চাই। আমার খাওয়ার বহর দেখেই ওরা বুঝতে পেরেছিল কী পরিমাণ পানীয় আমার লাগবে। ক্ষুদে হলেও ওদের ছোট্ট মাথায় বুদ্ধি আছে। ওরা ওদের সবচেয়ে বড় পিপে এনে কায়দা করে আমার মুখের কাছেধরল। আমি তা এক চুমুকেই শেষ করলাম। কতটুকুই বা আর হবে, বড়জোড় হাফ পাঁইট । বেশ সুস্বাদু অনেকটা বার্গান্ডির মতো। ওরা আরো এক পিপে নিয়ে এল, তাও শেষ করে আবার আনতে বললাম। কিন্তু ওদের আর মজুদ নেই, ভাঁড়ার শেষ। ওরা আমার কাণ্ড-কারখানা দেখে আনন্দে উল্লসিত। আমার বুকের উপর উঠে নৃত্য আরম্ভ করে দিল এবং আগের মতো ‘হেকিনা দেগুল’ ধ্বনি দিতে থাকল। ওরা এবার আমাকে ইশারা করে বলল পিপে দুটি ফেলে দিতে। সেই সঙ্গে তারা জনতাকে সতর্ক করে দিল, সরে যাও, সরে যাও। ‘বোরাচ মিভোলা’ বলে তারা চিৎকার করতে লাগল। জনতা সরে গেল। আমি পিপে দুটোকে আকাশের দিকে ছুঁড়ে দিলাম, তাদের তাই না দেখে সে কী উল্লাস। আবার তারা ‘হেকিনা দেগুল’ ধ্বনি দিতে থাকল। আমার দেহের উপর দিয়ে যখন বামনরা দলে দলে ছোটাছুটি করছিল তখন আমার ভারী লোভ হচ্ছিল যে গোটা পঞ্চাশ বামনকে ধরে মাটিতে আছাড় মারি। তবে ওরা আমাকে কিছু আঘাত করলেও আমার তো কোনো ক্ষতি হয় নি। তাছাড়া ওদেরও আমি ইঙ্গিতে জানিয়েছি ক্ষতি করার ইচ্ছে আমারও নেই এবং তাদের আমি সম্মান করি। অতএব আমি আমার কুচিন্তা মন থেকে দূর করলাম। তাছাড়া আতিথ্যর মর্যাদা রক্ষা করা উচিত। ওরা ইতোমধ্যেই আমার জন্যে প্রচুর ব্যয় করেছে, যথেষ্ট উদারতা দেখিয়েছে। এই ক্ষুদে মানবগুলোর নির্ভীকতার প্রশংসা না করে পারা যায় না। আমার ডান হাত মুক্ত ছিল, ইচ্ছে করলে ওদের প্রচণ্ড আঘাত করতে পারতাম তথাপি ওরা আমাকে দানবসদৃশ জেনেও নির্ভয়ে আমার দেহের উপর হেঁটে চলে বেড়িয়েছে। কিছুক্ষণ পরে যখন তারা বুঝল যে আমি আর মাংস খেতে চাইছি না তখন আমার কাছে মহামান্য সম্রাট প্রেরিত একজন উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী এলেন, তিনি আমার ডান পায়ের দিকে থেকে উঠে আমার দেহের উপর দিয়ে বরাবর হেঁটে আমার মুখের কাছে এলেন, সঙ্গে অবশ্য বারজন অনুচর। তারপর তিনি সীলমোহরাঙ্কিত একটি পরিচয়পত্র আমার চোখের সামনে আন্দোলিত করতে করতে এবং কোনো রকম রাগ প্রকাশ না করে প্রায় দশ মিনিট ধরে বক্তৃতা দিলেন। ভাষা না বুঝলেও এবং কোনো ঝাঁজ না থাকলেও তিনি যা বললেন বেশ জোরের সঙ্গেই বললেন এবং কথা বলার সময় মাঝে মাঝে সামনের দিকে আঙুল দেখাতে লাগলেন।

    যেদিকে আঙুল দেখাচ্ছিলেন পরে জেনেছিলাম সেদিকে আছে রাজধানী, প্রায় আধ মাইল দূরে। সপারিষদ সম্রাটের ইচ্ছা যে রাজধানীতে আমাকে নিয়ে যাওয়া হবে। তাঁর কথা শেষ হতে আমি উত্তরে কিছু বললাম। অবশ্য আমার ভাষা তাঁরা বুঝলেন না, তারপর আমি সাবধানে আমার মুক্ত বা হাত তুললাম যাতে নাকি সেই রাজকর্মচারী ও তাঁর অনুচরদের দেহে আঘাত না লাগে এবং আমার শরীরের বন্ধন দেখিয়ে ইশারায় বোঝালাম যে আমাকে বন্ধন মুক্ত করা হোক। তাঁর পরবর্তী ভঙ্গি দেখে বুঝলাম যে তিনি আমার কথা বুঝেছেন কিন্তু ঘাড় নেড়ে জানালেন আমাকে মুক্তি দেওয়া হবে না । আমাকে বন্দী করেই রাজধানীতে নিয়ে যাওয়া হবে। তারপরে আমাকে ইশারায় জানালেন যে আমাকে যথেষ্ট খাদ্য ও পানীয় দেওয়া হবে এবং ভালো ব্যবহারও করা হবে। বন্দী করা হবে? ভালো লাগল না। ভাবলাম বাঁধন ছিঁড়ে ফেলি কিন্তু তখনি মনে পড়ল ক্ষুদে বামনদের সুচের মতো ধারাল তীর তখনো আমার মুখে ও অন্যত্র বেশ কয়েকটা বিধে রয়েছে, যেখানে বিধেছিল সে জায়গাগুলো তখনো জ্বালা করছে। এখন ওরা দলে আরো ভারী, আমি বাঁধন ছিড়তে গেলেই ঝাঁকে ঝাঁকে তীর বর্ষণ হবে। তখন আমি ইশারা করে জানালাম ওরা আমাকে নিয়ে যা ইচ্ছে করতে পারে। আমার ইঙ্গিত বুঝতে পেরে সৌজন্যে প্রকাশ করে এবং হাসিমুখে অনুচরসহ ‘হুরগো’ নেমে গেল। একটু পরেই আমি খুব গোলমাল শুনলাম এবং একটা কথা ‘পেপলম সেলান’ বারবার শোনা যেতে লাগল।

    আমার বাঁ দিকে অনেক মানুষ এসে আমার বাঁধনগুলো তাড়াতাড়ি খুলে দিল ফলে আমি ডান পাশে ফিরতে পারলাম এবং অনেকক্ষণ যাবৎ আটকে রাখা মূত্র ত্যাগ করতে লাগলাম । এই দৃশ্য দেখে এবং মূত্র-বন্যাস্রোতে ভেসে যাবার আতঙ্কে ক্ষুদে মানুষগুলো ইতস্তত ছিটকে পড়ল। ইতোমধ্যে তারা আমার মুখে ও হাতে তীর লাগা আহত স্থানগুলোতে সুগন্ধী একটা মলম লাগিয়ে দিয়েছিল যার ফলে আমার সকল জ্বালা যন্ত্রণার উপশম হয়েছিল । ওরা আমাকে পর্যাপ্ত আহার ও পানীয় দিয়েছিল, পেট ভরে খেয়েছি।  এখন যন্ত্রণারও উপশম হল ফলে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।

    আমি প্রায় আটঘণ্টা ঘুমিয়েছিলাম এবং পরে শুনেছিলাম যে সম্রাটের আদেশে রাজ-চিকিৎসক মদের পিপেতে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিলেন। আমি অনুমান করলাম যে আমি দ্বীপে পা দেওয়ার পর ঘুমিয়ে থাকার সময় কোনো দূত মারফত সম্রাট খবর পেয়ে গিয়েছিলেন। সম্রাট তখন মন্ত্রীসভার সঙ্গে পরামর্শ করে আমাকে বেঁধে ফেলার হুকুম দেন (যখন আমি ঘুমোচ্ছিলাম তখনি আমাকে বেঁধে ফেলা হয়েছিল) এবং কীভাবে বাঁধা হয়েছিল তাও আমি আগে বলেছি। তখন এও স্থির করা হয় যে আমার জন্যে প্রচুর পরিমাণ খাদ্য ও পানীয় পাঠানো হবে এবং রাজধানীতে আমাকে বয়ে নিয়ে যাবার জন্যে একটা কোনো মেসিন তৈরি করা হবে।

    সিদ্ধান্তটি দুঃসাহসিক ও বিপজ্জনক মনে হতে পারে। তবে আমার বিশ্বাস যে এমন অবস্থায় ইউরোপের কোনো রাজা এমন আয়োজন করতেন না। আমার মতে এরা যা করেছে তা বিবেচনাপ্রসূত ও উদার। কারণ আমি যখন ঘুমিয়ে ছিলাম তখন ওরা তীর ছুঁড়ে ও বর্শার আঘাত করে আমাকে হত্যা করবার চেষ্টা করতে পারত। তাহলে প্রথম আঘাতে আমার নিদ্রাভঙ্গ হত এবং ক্রোধান্বিত হয়ে আমি বলপ্রয়োগ করে আমার বাঁধন ছিঁড়ে ওদের হত্যা করতে পারতাম, ওরা বাধা দিতে পারত না। আমার দয়াও আশা করতে পারত না। এই ক্ষুদে মানুষগুলো গণিত বিদ্যায় পারদর্শী এবং সম্রাটের কাছ থেকে উৎসাহ পেয়ে ওরা যথেষ্ট কারিগরিজ্ঞান আয়ত্ত করেছে। গাছের গুঁড়ি ও ভারী ওজন বইবার জন্যে রাজকুমার কয়েকটা মেসিনের চাকা বসিয়েছে। বনে যেখানে উপযুক্ত কাঠ পাওয়া যায় সেখানে বড় বড় যুদ্ধজাহাজ তৈরি করেছে যার মধ্যে কয়েকটা ন’ফুট লম্বা ।

    তারপর সেগুলো ঐ চাকাওয়ালা ইঞ্জিনে চড়িয়ে তিন চারশ গজ দূরে সমুদ্রে নিয়ে গেছে। সর্বাপেক্ষা বড় ইঞ্জিন তৈরি করবার জন্যে তারা অবিলম্বে পাঁচশ ছুতোর ও ইঞ্জিনিয়ার লাগিয়ে দিল। কাঠের একটা ফ্রেম তৈরি হল সাত ফুট লম্বা চার ফুট চওড়া, মাটি থেকে তিন ইঞ্চি উঁচু যাতে বাইশটা চাকা লাগানো হল। আমি দ্বীপে পৌঁছবার চার ঘণ্টা পরেই এটির নির্মাণকার্য আরম্ভ হয়েছিল। একটু আগে যে গোলমাল শুনেছিলাম তা হল ঐ ইঞ্জিনটির আগমন। আমার পাশেই ওটি সমান্তরালভাবে রাখা হল কিন্তু মূল সমস্যাটা হল আমাকে সেই যানটির উপর তোলা। এ জন্যে এক ফুট লম্বা আশিটা খুঁটি পোঁতা হল। ওদের মান অনুযায়ী মোটা দড়ির ডগায় হুক লাগানো হল, আমার গলায়। হাতে বুকে পায়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা হল। সেই ব্যান্ডেজে হুক আটকে আমাকে তোলা হবে আর কি । খুঁটির মাথায় এবার পুলি (চাকা) লাগানো হল। তারপর হুকগুলো ব্যান্ডেজে আটকে ন’শ জন পালোয়ান হেঁইও হেঁইও করে প্রায় তিন ঘণ্টা চেষ্টার পর আমাকে সেই গাড়িতে তুলে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধল । এই কাজটা করা হয়েছিল যখন আমি সুরার সঙ্গে মেশানো সেই ঘুমের ওষুধ খেয়ে গভীর ঘুমে অচেতন ছিলাম। সম্রাটের সবচেয়ে বড় পনের শতটি ঘোড়া যেগুলোর উচ্চতা প্রায় সাড়ে চার ইঞ্চি, সেই গাড়ির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া য়ছিল। তারপর টানতে টানতে আধ মাইল দূরে আমাকে রাজধানীতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ।

    আমাদের যাত্রা আরম্ভ হওয়ার চার ঘণ্টা পরে একটা মজার দুর্ঘটনার ফলে আমার ঘুম ভেঙে গেল । পথে গাড়ি বিকল হয়ে যাওয়ায় মেরামতের জন্যে থামানো হয়েছিল । সেই সময়ে আমি কেমন করে ঘুমোচ্ছি তা দেখবার জন্যে কৌতূহল দমন করতে না পেরে দু-তিনটি স্থানীয় ছোকরা গাড়ির উপর উঠে পড়ে তারপর আমার গায়ের উপর দিয়ে আস্তে আস্তে হাঁটতে হাঁটতে আমার মুখের উপর এসে ওঠে। তাদের মধ্যে একজন বুঝি ছিল রক্ষীদের হাবিলদার, সে আমার নাকের ভেতর তার বর্শার আর্ধেকটা ঢুকিয়ে দেয় ফলে আমার নাকে সুড়সুড়ি লাগে এবং আমি সজোরে ও সশব্দে এমন হাঁচি দিই যে ওরা উড়ে যায় । আমার হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়ার কারণটা আমি তিন সপ্তাহ পরে জানতে পেরেছিলাম। বাকি সময়টা দীর্ঘ যাত্রা। রাত্রি হল। বিশ্রাম নেবার জন্যে এক জায়গায় থামা হল । আমার দুদিকে পাঁচশ রক্ষী, তাদের অর্ধেকের হাতে তীর ধনুক । আমি নড়বার চেষ্টা করলেই আমাকে তীরবিদ্ধ করা হবে। পরদিন সকালে আবার যাত্রা এবং দুপুর নাগাদ নগর তোরণের দুশ গজের মধ্যে এসে পৌঁছলাম। আমাদের সঙ্গে মিলিত হবার জন্যে সভাসদসহ সম্রাট স্বয়ং এসেছেন। কিন্তু তাঁর মন্ত্রীরা তাঁকে কিছুতেই আমার শরীরের উপর উঠতে দেবেন না, কে জানে যদি তাঁর কিছু বিপদ ঘটে!

    আমার গাড়ি যেখানে থামল তার কাছেই ছিল একটি প্রাচীন মন্দির, সারা রাজত্বে সবচেয়ে বড়। কিছুদিন পূর্বে এই মন্দিরে একটি অস্বাভাবিক হত্যাকাণ্ড হয়েছিল, সেজন্যে মন্দিরটি কলুষিত বলে বিবেচিত হত। মন্দির থেকে সমস্ত রত্ন ও অলংকার এবং আসবাবপত্র সরিয়ে ফেলা হয়েছিল এবং মন্দিরটি বর্তমানে অন্য সাধারণ কাজে ব্যবহৃত হত। সাব্যস্ত হল যে এই ভবনে আমাকে রাখা হবে। উত্তর দিকে সামনের ফটক চার ফুট উঁচু এবং প্রায় দুফুট চওড়া। গুটিয়ে গুটিয়ে আমি এর ভেতর দিয়ে ঢুকতে পারি।

    গেটের দুপাশে দুট ছোটো জানলা, জমি থেকে ইঞ্চি ছয়েক উঁচু। বাঁ দিকের জানলায় রাজার কামার একানব্বইটি শেকল লাগিয়ে দিল। ইউরোপে মেয়েদের ঘড়ি থেকে যেমন চেন ঝোলে এই শেকলগুলো সেইরকম। সেই শেকল টেনে এনে আমার বাঁ পায়ে লাগিয়ে ছত্রিশটা তালা আটকে দেওয়া হল যাতে আমি পালাতে না পারি। এই মন্দিরের বিপরীত দিকে কুড়ি ফুট দূরে প্রায় পাঁচ ফুট উঁচু একটা গম্বুজ রয়েছে। আমাকে দেখবার জন্যে সম্রাট তাঁর দরবারের কয়েকজন অমাত্যকে নিয়ে সেই গম্বুজে উঠলেন। আমাকে দেখবার জন্যে আমার তো মনে হল শহর থেকে লাখখানেক মানুষ এসেছিল এবং প্রহরীদের বাধা উপেক্ষা করে হাজার দশ মানুষ মই বেয়ে আমার উপর উঠেছিল। কিন্তু একটি রাজকীয় ঘোষণা দ্বারা আমার উপর ওঠা নিষিদ্ধ করে দেওয়া হল। আদেশ উপেক্ষা করলে মৃত্যুদণ্ড । কর্মীরা যখন বুঝল যে আমার পক্ষে পলায়ন অসম্ভব তখন তারা আমার দেহবন্ধনগুলো কেটে দিল। তখন আমি উঠে দাঁড়ালাম যদিও আমার মেজাজ যারপর নেই বিরক্ত। কিন্তু আমাকে উঠে দাঁড়াতে এবং চলতে দেখে তারা বিহ্বল হয়ে যে সোরগোল তুলল তা আর বলা যায় না। আমার বাঁ পায়ে যে শেকল আটকে দেওয়া হয়েছিল তা প্রায় দুগজ় লম্বা। ফলে আমি অর্ধ-বৃত্তাকারের মধ্যে আগু পিছু করে চলতে পারছিলাম। কিন্তু গেট থেকে মাত্র চার ইঞ্চি তফাতে আমার বাঁ পা শেকলে বাঁধা তবুও আমি গুঁড়ি মেরে মন্দিরের মধ্যে পুরো শরীরটা ঢুকিয়ে দিতে পারছিলাম ।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঈগল ইন দ্য স্কাই – উইলবার স্মিথ
    Next Article অশুভ সংকেতের পর – কাজী মাহবুব হোসেন
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.