Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    গোপনে – ইমদাদুল হক মিলন

    ইমদাদুল হক মিলন এক পাতা গল্প38 Mins Read0

    ০২. এক বসন্তকালের কথা

    সেও এক বসন্তকালের কথা।

    সৈয়দ মামাদের বাড়ির পশ্চিম দিককার মাঠে আলমগির মামার সঙ্গে গোল্লাছুট খেলতে গেছি। কত বয়স হবে আমার তখন! দশ! আলমগির মামাও আমার বয়সী। মার মেজোচাচার দ্বিতীয় পক্ষের ছোট ছেলে। খুবই দুরন্ত স্বভাবের, ডানপিটে ধরনের। আর আমি ছিলাম ন্যালাভোলা, গোলগাল, নিরীহ। কথা বলার স্বভাব তখন থেকেই কম। মুখে যত না বলি, মনে মনে বলি তারচে হাজার গুণ।

    তো সেই বিকেলে খেলতে খেলতে অকারণেই আমাকে একটা ধাক্কা দিয়েছিল আলমগির মামা। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিল। আমার কোনও দোষ ছিল না। তবু কেন ধাক্কাটা দিল?

    তেমন ব্যথা আমি পাইনি। কিন্তু রাগে ক্ৰোধে বুক ফেটে যাচ্ছিল। দুঃখও হচ্ছিল। কেন আমার সঙ্গে এমন করল আলমগির মামা!

    না, আমি কাঁদিনি। মন খারাপ করে ছিলাম। আর খেলিওনি সেদিন। হয়তো সেই বিকেলেই ধাক্কা দেয়ার কথা ভুলে গিয়েছিল। আলমগির মামা। কিন্তু আমি ভুলিনি। দিনের পর দিন রাতের পর রাত আমার মনে পড়েছে সেই ধাক্কার কথা। বুকের ভেতর ফুঁসে উঠেছে রাগ, ক্ৰোধ।

    কিন্তু ওই মুহূর্তে প্রতিবাদ আমি করিনি কেন? কেন আলমগির মামাকেও একটা ধাক্কা দিইনি! ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিইনি কেন? আমার গায়ে কি জোর কম ছিল! আলমগির মামার সঙ্গে কি আমি পারতাম না!

    রাগ ক্রোধের সঙ্গে একথাও আমার বহুবার মনে হয়েছে। তবে সেই ধাক্কার প্ৰতিশোধ আমি নিয়েছিলাম, আলমগির মামাকে ধাক্কা দিয়ে কিংবা মারপিট করে নয়, অন্যভাবে। বেশ অনেকদিন পর, শীতের শুরুর দিকে।

    বিকেলের মুখে মুখে বাড়ি থেকে বেরিয়েছি। আমরা দুজন। আমার পরনে ইংলিশপ্যান্ট আর স্যান্ডো গেঞ্জি। আলমগির মামা পরেছে। লুঙ্গি, খালি গা কিন্তু কাঁধের ওপর ফেলা একেবারেই নতুন একটা হাওয়াই শার্ট। ওই বয়সেই আলমগির মামার ভাবভঙ্গি চালচলন বড়দের মতো। মেয়েদের নিয়ে দুএকটি অসভ্য কথাও সে বলে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে নতুন পুকুরের সামনে এসেছি আমরা, ভেতরবাড়ি থেকে মেজোনোনার গম্ভীর গলার ডাক ভেসে এল। আলইমামা, ঐ আলইমামা।

    নানাকে বাঘের মতো ভয় পেল আলমগির মামা। ডাক শুনে মুখটা শুকিয়ে গেল তার। এমন দিশেহারা হলো, দিকপাস না তাকিয়ে পাগলের মতো দৌড় দিল বাড়ির দিকে। দৌড়ের তালে শার্টটা যে পড়ে গেল কাঁধ থেকে, টেরই পেল না। মুহূর্তে ভেতর বাড়িতে উধাও হয়ে গেল।

    আলমগির মামার শার্টের দিকে তাকিয়ে আমার বুকের ভেতর ফুঁসে উঠল এক বিষাক্ত সাপ। রাগ ক্ৰোধ এবং অপমানের জ্বালায় ঘা ঘা করতে লাগল কানমুখ! কেন অমন করে আমাকে সে ধাক্কা দিয়েছিল? কী অন্যায় করেছিলাম আমি?

    সেই নতুন হাওয়াই শার্টে আমি তারপর বেশ কয়েকটি বড় সাইজের মাটির ডেলা গিঁট দিয়ে বেঁধেছিলাম। পোটলার মতো করে ছুড়ে ফেলেছিলাম নতুন পুকুরে। চোখের সামনে মুহূর্তে ডুবে গিয়েছিল আলমগির মামার শার্ট।

    আশ্চর্য ব্যাপার, সেই মুহূর্তেই মনটা কেমন শান্ত হয়ে গেল আমার। বুকের ভেতর জমে থাকা রাগ ক্ৰোধ কোথায় মিলিয়ে গেল। ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাওয়ার অপমান মুহূর্তেই যেন ভুলে গেলাম আমি। আমার শুধু মনে হলো একটু অন্যরকমভাবে প্রতিশোধটা আমি নিতে পেরেছি। আলমগির মামার প্রিয় নতুন শার্ট এমনভাবে পানিতে ডুবিয়ে দিয়েছি। কেউ কোনওদিন সেই শার্টের হদিস পাবে না। আমি ছাড়া কেউ কোনওদিন জানবে না শার্টের পরিণতি।

    খুবই প্ৰফুল্ল মন নিয়ে আমি তারপর মাঠের দিকে চলে গিয়েছিলাম। সেদিন আলমগির মামার সংগে আমার আর দেখাই হয়নি। নানা বোধহয় কোথাও পাঠিয়েছিল। তাকে। পরদিন খুবই চিন্তিত গলায় সে। আমাকে বলল, আমার শার্টটা দেখছিলি মামু? দৌড়ের তালে কই যে পড়ল আর বিচড়াইয়া পাইলাম না। এই শার্টের লেইগা বাবায় যে আমারে কী পিডানডা পিডাইবো!

    শুনে আমি দুঃখি দুঃখি মুখ করে বললাম, না তো! তাঁর শার্ট তো আমি দেহি নাই। আহা রে, নতুন শার্টটা তুই হারালি কেমতে? অহন তো মাইরা তার খাইতেই হইব।

    দুদিন পরই সেই মারটা আলমগির মামা খেয়েছিল। গরু, চড়াবার লাঠি দিয়ে আলমগির মামাকে পেটাতে পেটাতে নানা শুধু একটা গালই দিচ্ছিলেন বউয়ার পো, এমুন বাদাইরা তুমি হইছ, নতুন শার্ট হারাইয়া ফালাও, উদিস পাও না।

    মেজোনানার প্রিয়গাল ছিল বউয়ার পো। এই গালটার অর্থ খুব একটা খারাপ না। বউর ছেলে। আলমগির মামা তো যথার্থই তাই। আর বাদাইরা মানে বেহিসেবি, উদিস মানে টের পাওয়া। এগুলো বিক্রমপুরের শব্দ।

    কিন্তু উঠোনে ফেলে আলমগির মামাকে যখন পিটাচ্ছিলেন নানা, বড়ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখতে দেখতে, আর আলমগির মামার বাবা রে, গেছি রে, গেছি। রে টাইপের ত্রাহি চিৎকার শুনে আমার মনের ভেতরটা আশ্চর্য এক আনন্দে ভরে যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল আমার সেই ধাক্কার একটি নয় দুটি বড় ধরনের প্রতিশোধ আমি নিতে পেরেছি। প্রথমত শার্টটা নষ্ট করে দিয়েছি, দ্বিতীয়ত নানার হাতে বেদম একটা মার খাওয়াতে পেরেছি।

    জীবনে সেই ছিল আমার প্রথম প্ৰতিশোধ নেয়া।

    কিন্তু শারমিনকে কোথাও দেখছি না কেন? না ক্লাশের দিকে যেতে, না কড়িডরে, না সিঁড়ির কাছে। ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের এইসব জায়গাতেই তো কদিন ধরে দেখছি তাকে। তার সঙ্গের ছেলেমেয়েগুলোর কাউকে কাউকে দেখলাম। ক্লাশের দিকে যাচ্ছে কেউ, টিচার্স রুমের দিকে যাচ্ছে। দুটো মেয়েকে দেখলাম উচ্ছল ভঙ্গিতে কথা বলতে বলতে সিঁড়ি দিয়ে নামছে। এদের সঙ্গেই তো বেশির ভাগ সময় দেখি তাকে।

    আজ কি সে ইউনিভার্সিটিতে আসেনি! কেন আসেনি? শরীর খারাপ। জ্বর এলো! এসময় তো বাংলাদেশে খুব জ্বরজ্বরি হয়। বড়ভাইর ছেলেটার দুদিন ধরে বেশ জ্বর।

    কিন্তু শারমিনের জ্বর একথা ভাবতে আমার ভাল লাগে না। কালও তো দেখলাম। তাকে কী উচ্ছল। ছটফটে প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর ফেস একটি মেয়ে। বন্ধুদের সঙ্গে হৈ চৈ করছে, টিএসসিতে আডিডা দিচ্ছে, হাসছে। সঙ্গের একটি ছেলেকে দেখলাম হাসতে হাসতে বই দিয়ে খুব মারল। সেই মেয়ের জ্বর আসবে কেন?

    না না জ্বর হয়নি। শারমিনের। সে ভালই আছে। হয়তো ক্লাশে আসতে দেরি করছে। কিংবা জরুরি কোনও ক্লাশ নেই দেখে টিএসসাইট গিয়ে বসে আছে। কয়েকমাস পর যেহেতু মাস্টার্স ফাইনাল, এসময় জরুরি ক্লাশ নাও থাকতে পারে।

    আম ইএকটা সিগ্রেট ধরাই। তারপর টানতে টিএসসির দিকে হাঁটতে থাকি।

    আমি বেশ ঘন ঘন সিগ্রেট খাই। চেইনস্মোকার। আমার ব্রান্ড মার্লাবোরো। টোস্টেড মার্লাবোরো। হার্ড সিগ্রেট। সব জায়গায় পাওয়া যায় না। বায়তুল মোকাররম নিউমার্কেট গুলশান এসব জায়গায় পাওয়া যায়। তিনদিন আগে এক কার্টুন কিনেছিলাম। আজ সকালে শেষ দুপ্যাকেট নিয়ে বেরিয়েছি। ফেরার সময় নিউমার্কেট থেকে এক কার্টুন কিনে নেব।

    টিএসসিতে এসে এদিক ওদিক তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি, না শারমিন কোথাও নেই। তার বন্ধুবান্ধবও কাউকে দেখি না। তাহলে কি ভেতরে বসে চা সিঙারা খাচ্ছে ওরা!

    কেন্টিনে ঢুকি। ভেতরে বেশ আগ্রহ কিন্তু মুখে খুবই নির্বিকার ধরনের একটা ভাব নিয়ে এ টেবিল ও টেবিলের দিকে তাকাই। না, শারমিন কোথাও নেই। দক্ষিণ দিককার কর্ণারের টেবিলে দেখি শারমিনের সেই দুই বান্ধবী বসে চা খাচ্ছে আর কী কথায় যেন খিলখিল করে হাসছে।

    আমার আবার মনে হয়, শারমিন কি আজ সত্যি সত্যি ইউনিভার্সিটিতে আসেনি! কেন আসবে না? সে কি জানে না। আমি তার জন্য অপেক্ষা করব! এখনও কি বোঝেনি। একজন মানুষ নিঃশব্দে তাকে ফলো করছে! দূর থেকে তার প্রতিটি আচরণ খেয়াল করছে! মেয়েদের তো শুনেছি। একটা তৃতীয় নয়ন থাকে। সেই নয়ন দিয়ে অন্যে দেখে না। এমন অনেক কিছুই দেখতে পায় তারা! তাহলে আমাকে কি দেখতে পায়নি শারমিন!

    আচ্ছা শারমিনের বান্ধবী দুজনকে কি জিজ্ঞেস করব শারমিন কোথায়? সে কি আজ ইউনিভার্সিটিতে আসেনি!

    এটা কি ঠিক হবে?

    শারামিনের কথা জিজ্ঞেস করলে ওরাও তো আমাকে অনেক প্রশ্ন করবে। আপনি কে? কোন শারমিনের কথা জানতে চাইছেন! সে আপনার কে হয়! দুএকদিন ওদের সঙ্গে থাকার পরও শারমিনকে আমি ফলো করেছি। শারমিনের মতো। ওরাও তো মেয়ে। ওদেরও তো তৃতীয় নয়ন থাকার কথা। ওরাও যদি খেয়াল করে থাকে আমাকে! যদি ওই নিয়ে কোনও প্রশ্ন করে!

    আমার স্বভাবের মধ্যে দুটো ব্যাপারই সমানভাবে কাজ করে, না ভেবেচিন্তে হুট করে কোনও কোনও কাজ আমি করে ফেলতে পারি। আবার দশদিক ভেবেচিন্তেও কাজ করি।

    আজ অনেকদিন পর মনে হলো না। ভেবেচিন্তে দুএকটা কাজ করলে কী এমন ক্ষতি হবে! দুএকটা পাগলামোও তো জীবনে থাকা উচিত। দেখি না মেয়ে দুটোর সঙ্গে শারমিনকে নিয়ে একটু কথা বলে।

    হাতের সিগ্রেট শেষ হয়ে এসেছে, সেই সিগ্রেট থেকে আরেকটা সিগ্রেট ধরালাম আমি। তারপর খুবই স্মাৰ্টভঙ্গিতে মেয়ে দুটোর টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। এক্সকিউজ মি!

    দুজন একসঙ্গে চোখ তুলে তাকাল।

    এইসব মুহূর্তে মেয়েদের তোকানোর ভঙ্গিতে দুটো ব্যাপার কাজ করে। বেশ একটা তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের ভাব আর বিরক্তি। যেন ইচ্ছে করে তাদেরকে কেউ ডিস্টার্ব করছে।

    এই দুজনের চেহারায়ও তাই দেখা গেল। ব্যাপারটা আমি তেমন পাত্তা দিলাম না। সিগ্রেট টান দিয়ে বললাম, আপনারা তো ইংলিশে পড়েন, না?

    একজন একটু লম্বা ধরনের। বেশ কাটাকাটা চেহারা। গায়ের রং শ্যামলা। চেহারায় এক ধরনের রুক্ষতাও আছে। অন্যজন ফর্সা, গোলগাল, একটু মোটা ধাঁচের।

    রুক্ষ চেহারার মেয়েটি বলল, জ্বি। কেন বলুন তো?

    আমি আসলে একজনকে খুঁজছি। সে আপনাদের সঙ্গে পড়ে।

    অন্য মেয়েটি বলল, কী নাম?

    শারমিন হক।

    শারমিন নামটা শুনে দুজনেই যেন একসঙ্গে চমকাল। এ ওর মুখের দিকে তাকাল। তারপর রুক্ষ মেয়েটি বলল, আপনি জানলেন কী করে যে আমাদের সঙ্গে পড়ে?

    ওর সঙ্গে আপনাদেরকে আমি দেখেছি।

    ফর্সা মেয়েটি তখন মুখের সামনে দুতিনবার হাত নাড়ল। অর্থাৎ সিগ্রেটের ধোয়া সরাল। সঙ্গে সঙ্গে হাতের সিগ্রেট ফেলে পা দিয়ে পিষে দিলাম আমি। আইয়্যাম রিয়েলি সরি! সিগ্রেট খাওয়া ঠিক হচ্ছিল না।

    আমার আচরণে ফর্সা মেয়েটি যেন একটু মুগ্ধ হলো। হাসিমুখে বলল, হ্যাঁ শারমিন আমাদের সঙ্গে পড়ে। কিন্তু ও তো আজ ইউনিভার্সিটিতে আসেনি।

    এইটুকুই জানার দরকার ছিল আমার। বললাম, তাই নাকি! কেন আসেনি জানেন? মানে আপনাদের কারও সঙ্গে কি কোনও যোগাযোগ হয়েছে। মানে শারমিনের শরীর খারাপ করেনি তো! এখন তো চারদিকে খুব ভাইরাল ফিবার টিবার হচ্ছে।

    রুক্ষ মেয়েটি বলল, না কোনও যোগাযোগ হয়নি। কিন্তু আপনি এত খোঁজ খবর নিচ্ছেন কেন। সে যে আপনার কোনও আত্মীয় নয় বুঝতে পারছি। আত্মীয় হলে খোঁজ খবর নিতে ওদের বাড়িতে চলে যেতেন। কিংবা ফোন করতেন তা না করে ইউনিভার্সিটিতে এসেছেন খোঁজ নিতে। আমাদেরকে জিজ্ঞেস করছেন। আপনার আসলে ব্যাপারটা কী?

    এই ধরনের পরিস্থিতিতে আমি কখনও পড়িনি। কী বলব বুঝতে পারছি না। হুট করে পাগলামো করতে এসে তো ধরা খেয়ে গেলাম!

    ফর্সা মেয়েটি স্নিগ্ধচোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তার দিকে তাকিয়ে মুহূর্ত কয়েক কিছু ভাবলাম আমি। তারপর হাসিমুখে বললাম, আসলে ব্যাপার তেমন কিছুই না। আপনারা বিশ্বাস করবেন কি না আমি জানি না, তবু আমি মিথ্যে বলছি না, মিথ্যে বলার স্বভাব আমার নেই, আমার ছোটখাটো একটা এডফার্ম আছে। একটি কসমেটিকস কোম্পানির এডের কাজ পেয়েছি। আমি। সেই কোম্পানির প্রধান শর্ত হলো তারা কোনও তথাকথিত পরিচিত ফেস কিংবা পপুলার মডেল নেবে না…

    আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই ফর্সা মেয়েটি বলল, আপনি বসুন না। বসে কথা বলুন।

    থ্যাংকস।

    টেবিলের দুপাশে দুজন আমি বসলাম তৃতীয় পাশটায়। বাই দা বাই, আমার নাম মাহি। মাহি খান।

    এতক্ষণে রুক্ষ মেয়েটিও একটু যেন স্বাভাবিক হয়েছে। ফর্সা মেয়েটিকে দেখিয়ে বলল, ওর নাম ঝিনুক আর আমি তৃণা।

    দুটোই খুব সুন্দর নাম। তারপর যা বলছিলাম, যেহেতু ওরা নিউ ফেস চায় সেই কারণে আমি দু-তিনদিন ধরে ইউনিভার্সিটিতে আসছি। যদি তেমন কাউকে পছন্দ হয় তাকে অফার করব।

    ঝিনুক বলল, তার মানে শারমিনকে আপনার পছন্দ হয়েছে! ও হওয়ারই কথা। শারমিন তো খুব সুন্দর।

    তৃণা বলল, কিন্তু ওর নাম আপনি জানলেন কী করে?

    আরে, এই মেয়েটা তো বেশ ট্যাটনা টাইপের দেখছি! উকিলদের মতো প্রশ্ন করে!

    তবু হাসিমুখে উত্তরটা আমি দিলাম। এটা কি কি খুব কঠিন কোনও কাজ বলুন! আপনাদের এক বন্ধুর কাছ থেকেই ট্যাক্টয়ালি জেনে নিয়েছি।

    কোন বন্ধু?

    তার নাম আমি জানি না। সরি। তবে সে ছেলে। যাহোক দু-তিনদিন ধরে ইউনিভার্সিটিতে ঘুরে ঘুরে অনেককেই দেখলাম। কিন্তু শারমিনকেই আমার পছন্দ হলো। ভাবলাম আজ তার সঙ্গে কথা বলব আর দেখুন আজই সে এল না।

    ঝিনুক বলল, কিন্তু মডেলিং ও করবে বলে আমার মনে হয় না।

    কেন বলুন তো?

    ও এসব পছন্দ করে না।

    কিন্তু আজকাল অনেকেই মডেলিং করছে! আমি প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন মুখ চাই বা এই জাতীয় একটা এড দেব পেপারে। শুনে আমার একজন এক্সকিউটিভ বলল, এই কাজও করবেন না। স্যার। তাহলে শয়ে শয়ে মেয়ে এসে হাজির হবে। হাজার হাজার চিঠি এবং ছবি আসবে। আরেক বাদারেসান্স।

    মাঝে মাঝে তীক্ষ্ণচোখে তৃণা আমাকে দেখছিল। বুঝতে পারি আমার সবকথা সে বিশ্বাস করছে না। তার মধ্যে একটা সন্দেহ কাজ করছে।

    করুক। আমার কি! আমার যা জানার ছিল তাতো আমি জেনেই ফেলেছি। শারমিন আজ ইউনিভার্সিটিতে আসেনি।

    কিন্তু কিছু একটা বলে তো তৃণা এবং ঝিনুকের কাছ থেকে বিদায় নিতে হয়। কী বলব?

    ঝিনুকের দিকে তাকিয়ে বললাম, আপনারা আমাকে একটু হেল্প করবেন। শারমিনদের ফোন নাম্বার কিংবা বাড়ির এডড্রেসটা দেবেন। আমি তাহলে সরাসরি যোগাযোগ করি।

    ঝিনুক কথা বলবার আগেই তৃণা বলল, শারমিনকে না বলে সেটা আমাদের দেয়া ঠিক হবে না। তারচে আপনি বরং আপনার একটা কার্ড দিন আমরা শারমিনকে দিয়ে দেব এবং ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলব। সে যদি ইন্টারেস্টেড হয় তাহলে আপনাকে ফোন করবে। আর যদি ফোন না করে, ধরে নিতে হবে সে ইন্টারেস্টেড না।

    তৃণার কথাবার্তা শুনে ভেতরে ভেতরে খুবই বিরক্ত আমি। বিক্রমপুরের ভাষায় মনে মনে মোটামুটি ভদ্রগোছের দু-তিনটা গাল দিয়ে দিলাম। তার চেহারা দেখলেই বুঝা যায়। তুই যে বহুত ট্যাটনা। বিয়া হইলে জামাইর হালুয়া তুই টাইট কইরা ছাড়বি। যেই বেডা তরে বিয়া করব ওর জিন্দেগি ছেড়াভেড়া। তর লাহান ছেমড়ি শারমিনের বান্ধবী হইলি কেমতে!

    কিন্তু মুখটা খুবই হাসি হাসি আমার। বিনয়ের অবতার হয়ে বললাম, সরি। আমার সঙ্গে আজ কার্ড নেই। মানিব্যাগে কার্ড রাখি। দু-তিনদিন আগে শেষ হয়েছে নতুন করে রাখতে মনে নেই। একটা কাজ করুন, আমার সেল নাম্বারটা, সরি মোবাইল নাম্বারটা রাখুন। ওটা শারমিনকে দিয়ে দেবেন।

    তৃণা নয়, আমার নাম্বার লিখে রাখল ঝিনুক।

    টিএসসি থেকে বেরিয়ে প্রথমে আমি একটা হাপ ছাড়লাম তারপর সিগ্রেট ধরালাম। ইস, বানিয়ে বানিয়ে এত কথা বলা যায়! তবে বলেছি। খুব স্মার্টাল। হঠাৎ করেই এড কোম্পানি মডেলিং এসব মাথায় আসার ফলে বেশ জমে গিয়েছিল গল্পটা। একটুও নার্ভাস না হয়ে বেশ চালিয়ে গেলাম। ঝিনুক কিংবা তৃণার বোঝার কোনও উপায়ই ছিল না। যে পুরো ব্যাপারটাই ফলস, বানোয়াট।

    কিন্তু শারমিন আজ ইউনিভার্সিটিতে আসেনি কেন? কী হয়েছে তারা? সত্যি সত্যি জ্বর হয়নি তো!

    শারমিনের দুটো ছবি আছে আমার কাছে। বি টু সাইজের। একটা আকাশি রংয়ের সালোয়ার কামিজ পরা আরেকটা ফিরোজা রংয়ের শাড়ি পরা। সালোয়ার কামিজ পরা ছবিটা অসাধারণ। সেটা আমি আমার পাসপোর্টের ভেতর, সুটকেসে রেখে দিয়েছি। অন্য ছবিটা গলার কাছ থেকে সুন্দর করে কেটে শুধু ফেসটা আমেরিকান ভিসার জন্য যে সাইজের ছবি লাগে সেই সাইজ করে নিয়েছি। এই সাইজের ছবি মানিব্যাগের গোপন পকেটে রাখতে সুবিধা।

    মানিব্যাগ থেকে ছবিটা আমি বের করলাম। অসাধারণ মিষ্টি চেহারার শারমিন গজদন্ত বের করে হাসছে। আর তোকানোটা এমন, যেন আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।

    সেই ছবির দিকে তাকিয়ে আমি মনে মনে বললাম, শারমিন, তোমার কী হয়েছে? ইউনিভার্সিটিতে আসনি কেন? তুমি কি জন না আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব!

    তখন দ্বিতীয় পাগলা মোটা খেলে গোল আমার মনে। আচ্ছা শারমিনকে ফোন করলে কেমন হয়! ঝিনুক তৃণার সঙ্গে চালাকি করে শারমিনের ফোন নাম্বার চেয়েছিলাম, আসলে ফোন নাম্বার এডড্রেস সবই তো আছে আমার কাছে।

    কিন্তু ফোন যদি অন্য কেউ ধরে?

    সেটাই তো স্বাভাবিক। শারমিনই যে ফোন ধরবে তেমন তো কোনও কথা নেই।

    যে ইচ্ছে ধরুক, সরাসরি শারমিনকে চাইব। পরিচয় জানতে চাইলে নামটা ঠিক বলে এডফার্মের গল্পটা চালিয়ে দেব, ঝিনুক তৃণার সঙ্গে যেমন চালিয়েছি। তারপর শারমিন ফোন ধরলে…

    শারমিনকে কী বলব সেকথা আমার আর মনে আসে না। সিগ্রেট টানতে টানতে শাহবাগের দিকে হাঁটতে থাকি।

    শাহবাগের কোণে পিজি হাসপাতালের মুখে দু-তিনটি ফোন ফ্যাক্সের দোকান। একটা দোকানে ঢুকে শারমিনদের বাড়িতে ফোন করি। শারমিনের ছবি, ফোন নাম্বার, অ্যাড্রেস ইত্যাদি পাওয়ার পর আজই তাকে প্ৰথম ফোন করা। আমার হিসেবটা ছিল এই রকম যে ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে প্রথমে তাকে আমি দূর থেকে কাছ থেকে দেখব। ছবির সঙ্গে কতটা মিল তার, কতটা অমিল। তার আচার-আচরণ চলাফেরা কেমন। ফোন ধরনের ছেলেমেয়ের সঙ্গে সে মেশে। দেখে স্যাটিসফাইড হলে ফোন করব, কথা বলব। তারপর সরাসরি একদিন সামনে গিয়ে দাঁড়াব।

    প্রথম পর্বটা আমি শেষ করেছি। তারপরও আজই ফোন করার কোনও প্ল্যান আমার ছিল না। ইউনিভার্সিটিতে এসে শারমিনকে না পেয়ে মনের ভেতর চাড়া দিয়ে উঠল পাগলামো। ঝিনুক ও তৃণার সঙ্গে কথা বললাম। এখন ফোন করছি।

    ফোন ধরল একটা ছেলে। গলার আওয়াজে বোঝা গেল কিশোর বয়সী হবে। এবং ভাষায় বোঝা গেল বাড়ির কাজের ছেলে।

    হ্যালু, কারে চান?

    এটা কি জাহিদুল হক সাহেবের বাড়ি।

    জ্বে।

    শারমিন আছে?

    জ্বে না। নাই।

    কোথায় গেছে?

    কইতে পারি না। আপনে কে?

    প্রশ্নটার উত্তর আমি এড়িয়ে যাই। কখন বেরিয়েছে বলতে পারব? মানে ইউনিভার্সিটিতে গিয়েছে নাকি অন্য কোথাও?

    ছেলেটা এবার বেশ গম্ভীর হলো। কিন্তু আপনে কে সেইটা বলতাছেন না ক্যান? সেইটা না বললে তো আপনার কথার আমি জবাব দেব না।

    বুঝে গেলাম ছোকড়াটা তৃণা টাইপের। ট্যাটনা। আমি কি এখন আমার নাম বলে, মিথ্যে বানোয়াট পরিচয় দিয়ে ওর কাছ থেকে কথা বের করব! সেটা কী এমন কঠিন কাজ!

    গম্ভীর গলায় বললাম, এই ছেলে, তুমি যে এভাবে আমার সঙ্গে কথা বলছ, তুমি জানো আমি কে? আমি শারমিনের মামাতো ভাই। আমার নাম…

    নাম বলার আগেই বেশ নার্ভস গলায় ছেলেটা বলল, তয় আপনে ফুবুআম্মার সঙ্গে কথা বলেন।

    বলেই ফোন নামিয়ে রেখে ফুবুআম্মা, ফুবুআম্মা বলে চিৎকার করে কাকে ডাকল। সঙ্গে সঙ্গে লাইনটা আমি কেটে দিলাম। এখন নিশ্চয় শারমিনের নীলুফুফু এসে ফোন ধরবেন। তার সঙ্গে কথা বলতে আমার ভাল লাগবে না।

    ততোক্ষণে বেশ দুপুর। খিদে পেয়েছে আমার। একটা ফাস্টফুডের দোকানে ঢুকে বিফবাৰ্গার আর কোক খেলাম। খেতে খেতেই মাথায় তৃতীয় পাগলামোটা এল আমার। আমি এখন শারমিনদের বাড়িতে যাব।

    পিজির গেটের সামনে রিকশা সিএনজি ট্যাক্সিক্যাব সবই আছে। আমি একটা কালো রংয়ের ট্যাক্সিক্যাবে চড়ি। উত্তরা যান।

    উত্তরা নামটি বলার সঙ্গে সঙ্গে বুকের ভেতর আশ্চর্য এক অনুভূতি হয় আমার। সেই ভয়ঙ্কর ঘটনার কথা মনে পড়ে।

    1 2 3
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদুই বাংলার দাম্পত্য কলহের শত কাহিনী – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও ইমদাদুল হক মিলন সম্পাদিত
    Next Article প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ – ইমদাদুল হক মিলন

    Related Articles

    ইমদাদুল হক মিলন

    ইমদাদুল হক মিলনের বিবিধ রচনা

    July 10, 2025
    ইমদাদুল হক মিলন

    অন্তরে – ইমদাদুল হক মিলন

    July 10, 2025
    ইমদাদুল হক মিলন

    এসো – ইমদাদুল হক মিলন

    July 10, 2025
    ইমদাদুল হক মিলন

    প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ – ইমদাদুল হক মিলন

    July 10, 2025
    ইমদাদুল হক মিলন

    দুই বাংলার দাম্পত্য কলহের শত কাহিনী – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও ইমদাদুল হক মিলন সম্পাদিত

    July 10, 2025
    ইমদাদুল হক মিলন

    প্রিয় – ইমদাদুল হক মিলন

    July 10, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.