Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    গোলোকপুরের পরশ পাথর – অভীক দত্ত

    লেখক এক পাতা গল্প58 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    গোলোকপুরের পরশ পাথর – ৮

    ৮

    মেলার সময় দিনগুলো ভারি ভাল কাটে গদাইয়ের। বছরের এই সময়টা লোকের পকেট কেটে যে টাকা পাওয়া যায়, তাতে সারা বছরের জন্য অনেকটাই সুরাহা হয়ে যায়। গ্রামের লোকেরা সারাবছর ধরে মেলার জন্য টাকা জমায়। তার মত লোকেরা এই সুযোগ ছাড়বে কেন?

    প্রথম দিনই যেমন চোখের নিমেষে একটা লোকের পকেট কেটে দেড়শো টাকা পাওয়া গেল। টাকাটা পেয়ে গদাই উদাস হয়ে গেল। আহা! কত দিন পরে কত টাকা পাওয়া গেল! এখন কাজ না করে একটু খরচ করা যাক।

    শুরুতেই সে একটা পাঁপড় খেয়ে নিল। তারপর এক বাটি ঘুগনি। খেতে খেতে দু চোখে জল চলে এল তার। এসব খাবার যেন স্বর্গীয়! অনেকদিন এত ভালো খাবার পায় নি সে। পাবেই বা কী করে? এই ঘুগনিওয়ালা তো সারাবছর থাকে না। দূরের কোন গ্রাম থেকে এখানে এসেছে।

    খেয়ে মনটা বেশ ভাল হয়ে গেল তার। ঠিক করল প্রথমদিনে যে টাকাটা পড়ে থাকবে সেটা নিয়েই বাড়ি ফিরবে। এর বেশি লোভ সে আর করবে না।

    গদাই নাগরদোলা চাপল, টয়ট্রেনও ছাড়ল না। টয়ট্রেনের টিকিটের লাইনে একটা লোকের মানিব্যাগ তাকে প্রবল লোভ দেখাচ্ছিল বটে, সে ওই ফাঁদে একবারেই পা দিল না। বরং ভদ্র লোকের মত টিকিট কেটে টয়ট্রেনে চাপল। একটু জায়গা দিয়ে জোরে শব্দ করে ট্রেন যায়। কী মজা রে বাবা! ছোটবেলায় তো পয়সা ছিল না। কিছুই চাপতে পারত না। বড় হয়ে টয় ট্রেন চেপে সে আরেকটু কেঁদে নিল।

    টয়ট্রেন থেকে নেমে খানিকটা হেঁটে সে দেখল একটা দোকানে বড় বড় করে লেখা আছে, “ভবিষ্যৎ জানুন, মাত্র দশ টাকায়।”

    মাত্র দশ টাকায় ভবিষ্যৎ বলে দেবে?

    সব ইচ্ছেই তো মেটানো হল। এটাই বা বাদ যাবে কেন? গদাই টিকিট কেটে ঢুকে গেল। একটা লাল রঙের আলো ঘুরছে ঘরের ভেতর। ছোট একটা গুমটি। একটা লোক টেবিলের ওপাশে বসে আছে। মেঝেতে শতরঞ্চি পাতা। লোকটা বলল, “বসুন”।

    গদাই শতরঞ্চিতে বসে পড়ল।

    গদাই তাদের গ্রামের না। তাই শম্ভু তাকে চিনতে পারে নি।

    ব্যাজারমুখে গদাইয়ের চোখে টর্চ ফেলল সে। পরক্ষণেই শম্ভু অবাক হয়ে গেল। টর্চ বন্ধ করে বলল, “আপনি খুব শিগগিরি অনেক সম্পত্তি পাবেন”।

    গদাই হেসে ফেলল, “ধুস, কী যে বলেন। আমার নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, আমি নাকি সম্পত্তি পাবো। আমার কি আর সে কপাল আছে?”

    শম্ভু বলল, “আমি এই গাঁয়েই থাকি। আপনি যদি কোনদিন সম্পত্তি পান, আমায় এসে বলে যাবেন, কেমন?”

    গদাই খুব হাসল একচোট। তারপর বলল, “দূর দূর। আপনি আশা দিচ্ছেন ভাল কথা। কিন্তু এসব বলে আর লজ্জা দেবেন না। আচ্ছা আসি তবে”।

    দোকান থেকে বেরিয়ে গদাই আবার হাসল। বলে কিনা সে বড় লোক হবে। এটা কোন কথা? সে তো চুরি ছাড়া কিছু জানেই না, কী করে টাকা হবে তার?

    বাদাম কিনল পাঁচ টাকা দিয়ে। খেতে খেতে মেলা থেকে বেরোল সে।

    মন খারাপ হয়ে গেল হঠাৎ করেই। বাবা কত করে বলত ভাল করে পড়াশুনা কর, পড়াশুনা না করলে কিচ্ছু হয় না।

    সে পড়ে নি। স্কুল পালিয়ে যেত। যদু মাষ্টার তাকে খুঁজতে বেরোলে সে ক্ষেতে লুকিয়ে পড়ত। বাবার কথা শুনলে কি আর এই দিন দেখতে হত তাকে?

    শ্মশানের পথ দিয়ে গ্রামের রাস্তার শর্টকাট। গদাই শ্মশান পেরিয়ে খানিকটা যাওয়ার পর হোঁচট খেল। পকেটে টর্চ ছিল। জ্বালিয়ে দেখল রাস্তায় একটা পোটলা পড়ে আছে। পোটলার ভেতর টর্চের আলো ফেললে দেখল সেটা জামা কাপড়ে ভর্তি। সে গলা ছাড়ল, “কেউ আছো নাকি গো? কার পোটলা এটা?”

    কেউ সারা দিল না।

    সে টর্চ জ্বালিয়ে দেখল। না। কেউ নেই। অগত্যা পোটলাটা কাঁধে করে ঘরে নিয়ে এল। মেঝের উপর উপুড় করে দিল গোটাটা।

    একটা ছোট বাক্স পড়ল মেঝে। বাক্সটা খুলে তার চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেল।

    একগাদা মোহর গিজগিজ করছে বাক্সের ভেতর!

    তার দরজায় কে যেন ঠক ঠক করল।

    গদাই অবাক হল। এত রাতে কে এল?

    বাক্সটা গুছিয়ে খাটের তলায় রেখে সে দরজা খুলে দেখল একটা লম্বা মত লোক জরির পোশাক পরে দাঁড়িয়ে আছে।

    গদাই বলল, “আজ্ঞে? কী চাই দাদা?”

    লোকটা বলল, “গোলোকপুরটা কোথায় বলতে পারেন?”

    গদাই যেন আকাশ থেকে পড়ল। এই নামে তো এখানে কিছু নেই! সে বলল, “না দাদা। এখানে এরকম কোন জায়গা নেই”।

    লোকটা সন্দিগ্ধ গলায় বলল, “কিন্তু আমি তো শুনেছিলাম, এই জায়গাটা এখানেই কোথাও একটা আছে। সত্যিই জানেন না?”

    গদাই জোরে জোরে মাথা নেড়ে বলল, “সত্যিই জানি না। ছোটবেলা থেকে এখানেই বড় হয়েছি দাদা, আমি এই নামে কোন জায়গার নাম শুনি নি বিশ্বাস করুন”।

    লোকটা তার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, “তাহলে খুঁজুন। ওটা তো আপনাকে এই জন্যই দেওয়া হয়েছে। খুঁজে পেলে আমায় বলবেন। আমি আবার খোঁজ নিতে আসবো”।

    গদাইয়ের উত্তরের অপেক্ষা না করে নিমেষের মধ্যে লোকটা অন্ধকারে হারিয়ে গেল। গদাই হাঁ করে সেদিকে তাকিয়ে রইল।

    মোহরটা তাকে এই জন্য দেওয়া হয়েছিল? তাহলে ফেরত চাইলো না তো?

    কী আশ্চর্য!

    #

    গঙ্গা আর নন্তু আজকেও ঝগড়া করছিল। ট্রেন স্টেশনে দাঁড়ানোর কয়েক মিনিটের মধ্যে দেখা গেল চার পাঁচ জন লোক নিয়ে আগের দিনের শহরের বাবুটা চলে এসেছে। এবার আর গঙ্গার দিকে ফিরেও তাকালো না লোকটা। নন্তু টোটোওয়ালার কাছে এসে বলল, “গবা তান্ত্রিকের ডেরা। জলদি। কোন প্রশ্ন না, ঠিক আছে?”

    নন্তু গঙ্গার দিকে তাকিয়ে গান ধরল, “হরি দিন তো গেল সন্ধ্যা হল… দেখেছো তো গঙ্গাদা, তোমার পুরনো রিক্সা ড্রেনে পড়ার পর তোমার আগের সওয়ারি আর রিক্সাতেই উঠলোই না?”

    গঙ্গা রেগে গিয়ে বকবক করতে শুরু করে দিল।

    লোকগুলো টোটোয় ওঠার পর নন্তু টোটো চালু করে বলল, “কোত্থেকে এসেছেন দাদারা?”

    তারক গম্ভীর গলায় বলল, “তোমাকে শুরুতেই বলেছি কোন প্রশ্ন না। ভুলে গেলে চলবে?”

    নন্তু জিভ কাটল। ঠিকই তো। এই বেশি কথা বলার অভ্যেসটা তো খুব খারাপ। বাকি রাস্তা সে আর কোন কথা বলল না।

    #

    সেঞ্চুরি করার পর থেকে এলাকায় গৌরীনাথের কদর বেড়ে গেছে। স্বয়ং শিশিরবাবু তার বাড়িতে এসে তাকে পিঠ চাপড়ে দিয়ে গেছেন। খবরের কাগজের খেলার পাতায় ছোট করে তার ছবি দিয়ে একটা খবরও হয়েছে “বিস্ময় বালক” শিরোনামে। গ্রামের লোকেরা এর মধ্যেই গর্ব করে বলতে শুরু করেছে, “গৌরী তো আমাদের গর্ব। এরপর যখন গৌরী দেশের হয়ে খেলবে, তখন সাংবাদিকরা আমাদের ইন্টারভিউ নেবে”।

    রুনু পিসি খুশি। তাকে অনেকখানি আচার দিয়ে গেছে।

    তার মনের মেঘ কেটে গেলেও গৌরীনাথ মাঠ থেকে জিতে এসে গবার ডেরায় গিয়ে গবাকে পায় নি। পরের দিন সকাল থেকে বেশ কয়েকবার গবার ঘরের সামনে দিয়ে গেছে গৌরীনাথ। দরজায় তালা দেওয়া দেখে মুষড়ে পড়েছে।

    তার যে গবার সামনা সামনি বসে অনেক কথা বলার ছিল! গবাকে সে ছোটবেলা থেকে দেখছে। সে জানত গবা বুজরুক। কত লোকের থেকে টাকা নিতো বশীকরণ করবে বলে। কিছুই হত না, লোকগুলো গবার বাড়ি বয়ে এসে তাকে গালাগাল দিয়ে যেতো।

    তবে অনেকেই বলে, বেশ কিছুদিন হল গবার মধ্যে যেন একটা পরিবর্তন এসেছে। আজকাল গবা বেশি কথা বলে না। কিন্তু যে কথাগুলো বলে, তার কোন কোন কথা মিলেও যায়। এজন্যই অনেক অপরিচিত লোক গবার ঘরের কাছে ঘুর ঘুর করে। সাইকেল নিয়ে যতবারই এসেছে, গৌরীনাথ দেখেছে গবার ঘরের উলটোদিকের রাস্তার বেঞ্চিতে কতগুলো অপরিচিত লোক বসে আছে। এরা কারা, কোত্থেকে এসেছে, কেউ জানে না। তবে এরা সবাই যে গবার কাছেই এসেছে, তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।

    গবাকে না পেয়ে বিফলমনোরথ হয়ে গৌরীনাথ মেলার মাঠে চলে গেল। সকাল বেলায় মেলার মাঠে এলে অনেক কিছু দেখা যায়। সার্কাসের লোকজন ঝগড়া করছে, বিভিন্ন দোকানের লোকেরা পুকুরে স্নান করে এসে দড়ি টাঙিয়ে কাপড় শোঁকাতে দিয়েছে। তাদের গ্রামে অনেক লোকেরই ধারণা সকালে এলে মেলার জিনিস কম টাকায় পাওয়া যায়। গ্রামের বিখ্যাত কেপ্পন ভব লাহিড়ী যেমন। বিভিন্ন দোকানে ঘুর ঘুর করে দরদাম করছে। ভব লাহিড়ী অবশ্য কিছুই কিনবে না। তার কাজই হল দরদাম করে যাওয়া।

    গৌরীনাথ খানিকক্ষণ ঘুরে পাঁচ টাকার আচার কিনে খেয়ে দেখল রুনু পিসির আচারের কাছে এই আচার দেড়শো রান আর এক ইনিংসে হেরে যাবে। সে আরো কিছুক্ষণ মেলায় ঘুরে সাইকেল নিয়ে পোড়ো বাড়ির জঙ্গলের কাছে যেতেই তার খেয়াল হল কে যেন তার কানে কানে বলছে, “জঙ্গলে যা”।

    গৌরীনাথ অবাক হল। কে রে বাবা? কে ফিসফিস করে তাকে জঙ্গলে যেতে বলছে? গৌরীনাথ একবারেই ভীতু না। সে বিন্দুমাত্র ভয় পেলো না।

    সাইকেলটা রেখে সে জঙ্গলের ভিতর ঢুকে পড়ল। অন্য দিন হলে সে জঙ্গলে যেতো না। পোড়ো বাড়ির কুয়োর ধারে বসে থাকত। এই বাড়িটার ধারে কাছে কেউ আসে না। কেউ কেউ বলে এখানে নাকি দুষ্ট আত্মা ঘুরে বেড়ায়। গৌরীনাথ কোনদিন তেমন কিছু দেখে নি। এটা তার নিজের সঙ্গে নিজের বোঝাপড়া করার জায়গা। যেদিন এখানে অনেক লোক আসতে শুরু করবে, সেদিন থেকে গৌরীনাথ এখানে আসা ছেড়ে দেবে।

    বড় বড় দুটো অশ্বত্থ গাছে, তার সঙ্গে ভর্তি আগাছা, একটা বড় সাপও সুড়ুত করে সরে যেতে দেখল। সাপে সে ভয় পায় না। সে জানে বিরক্ত না করলে সাপ কিচ্ছু করে না। খানিকটা গিয়ে বুঝল সে অকারণ জঙ্গলের ভিতর ঢুকছে। আর গিয়ে কাজ নেই ভেবে সে পিছু ফিরতেই আবার কণ্ঠস্বরটা পেল, খুব বিরক্ত গলায় বলছে, “আজকালকার ছেলেপিলেদের একদম তর সয় না। আরো যা। আরো খানিকটা পথ যেতে হবে। যা বাবা, যা”।

    গৌরীনাথ বলল, “কে আপনি?”

    উত্তর এল, “আমি কে তা জেনে তুই কী করবি? যা বলছি শোন। ভিতরে গিয়ে দেখ”।

    অগত্যা গৌরীনাথ আবার জঙ্গলের ভিতর হাঁটতে শুরু করল। খানিকটা গিয়েই সে বুঝল কণ্ঠস্বর ভুল কিছু বলে নি। জঙ্গলের মধ্যে রক্তাক্ত অবস্থায় গবা পড়ে আছে। সে দৌড়ে গিয়ে গবার নাড়ি দেখল। চলছে দেখে আশ্বস্ত হয়ে গবাকে ঠেলল, “উঠতে পারবে?”

    কানের কাছে কণ্ঠস্বরটা চিৎকার করে উঠল, “আচ্ছা গর্দভ ছেলে তো! দেখছিস ছেলেটা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে! কতই বা ওজন! এত যে খেলাধুলা করিস, কী লাভ হয় তাতে? যা, গবাকে কাঁধে তুলে নিয়ে যা”।

    গৌরী ঠিক করল তাই করবে। কিন্তু গবাকে কাঁধে তুলতে গিয়ে দেখা গেল হচ্ছে না। কণ্ঠস্বর আবার বলল, “উঁহু, পাঁজাকোলা করে তুলতে হবে। পারবি, যেভাবে বলছি, সেভাবে তোল”।

    তা পারল সে। কণ্ঠস্বরের দেওয়া নির্দেশ অনুসারে সে গবাকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে জঙ্গলের বাইরে নিয়ে এল। পোড়ো বাড়ির সামনের বেঞ্চিতে শুইয়ে দিয়ে কুয়ো থেকে জল তুলে গবার মুখে জল ছেটালো। বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টার পর গবা উঠে বসে তাকে দেখে বলল, “ওরে গৌরী রে, তুই তবে এ যাত্রায় আমার প্রাণ বাঁচালি। ”

    গৌরীনাথ বলল, “না না। আমি কিছু করি নি। আমি তো একটা গলার স্বর শুনলাম। উনি যেভাবে বলছিলেন,আমি সেভাবে করছিলাম”।

    গবা নিজের কপালে হাত দিল। তখনও রক্ত পড়ছে। সে বলল, “ওহো, পাঁচু দা। বুঝেছি। শোন গৌরী, এখন আমার ফেরাটা ঠিক হবে না। বরং ওরা জানুক যে আমি আর বেঁচে নেই। বেঁচে থাকলে ওরা আবার আসবে”।

    গৌরীনাথ অবাক গলায় বলল, “কারা আসবে?”

    গবা বলল, “অনেক কাল আগে আমার এক সাগরেদ ছিল। তারক। ওর এখন ভোল পাল্টে গেছে। তারকের ধারণা হয়েছিল আমার কাছে অনেক টাকা পয়সা সোনা দানা আছে। লোকজন নিয়ে ও আমাকে লুটতে এসেছিল। তারক যদি জানতে পারে আমি বেঁচে আছি, তবে ও আবার আসবে। বার বার ওরা আমাকে আক্রমণ করে যাবে”।

    গৌরীনাথ বলল, “তবে যে সবাই বলে তোমার অনেক সাহস। কেউ তোমার ক্ষতি করতে পারবে না?”

    গবা ম্লান হাসল, “আমি চাইলেও এখন কাউকে মারতে পারবো না। তাহলে আমার সব শক্তি নষ্ট হয়ে যাবে। আমি তো আর আগের মত নেই। এখন কেউ আমাকে মারতে এলে আমাকেও পড়ে পড়ে মার খেতে হবে। তবে কী জানিস তো গৌরী, তারকরা এখানে আসার খানিক আগে আমি যা আভাস ইঙ্গিত পেয়েছি, তাতে আমাদের জন্য তারকের থেকেও বড় সমস্যা অপেক্ষা করে আছে”।

    গৌরীনাথ বলল, “তারকের থেকেও বড় সমস্যা? সেটা কী?”

    গবা চিন্তিত মুখে বলল, “কতগুলো অচেনা অজানা লোক আসছে গৌরী। অনেকদিন পর ওরা আসছে। আর ওরা আসা মানে খুব চিন্তার ব্যাপার”।

    গৌরীনাথ বলল, “ওরা মানে? তারা কারা?”

    গবা বলল, “আমি যখন সিদ্ধাই হই নি, সেই সময় অনেকদিন আগে একটা লোক আমাদের গ্রামে এসেছিল। লোকটা আমার কাছে একটা পাথর গচ্ছিত রেখে গেছিলো। আমি অনেক যত্ন করে সে পাথর আগলে রেখেছিলাম। কাল সকালে ধ্যানে বসে আমি জানতে পারি ওরা এই পাথরটা পেলে আমাদের আরো বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। আমি তখন পাথরটা লুকিয়ে ফেলি। তারক আসার আগে ওরা ওদের লোক পাঠিয়েছিল আমার কাছে। আমি যেই বলেছি পাথর আর নেই, তারপর থেকে ওরা খুব রেগে গেছে। আমাকে কিছুতেই আর ওরা বেঁচে থাকতে দেবে না”।

    গৌরীনাথ বলল, “সে পাথরটা কোথায় গবাদা?”

    গবা চারদিকে তাকিয়ে তার হাতে একটা ছোট পাথর দিয়ে বলল, “আমার কাছেই আছে। লুকিয়ে রাখবি। কাউকে দিবি না। তুই চলে যা। চারিদিকে নজর রাখিস। আমি এই বনেই লুকিয়ে থাকবো এখন”।

    গৌরীনাথ পাথরটার দিকে তাকালো। একবারেই সাদাসিধে পাথর। সে বলল, “এই পাথরের জন্য এত কিছু?”

    গবা বলল, “এটা আসলে একটা চাবি”।

    গৌরী অবাক হয়ে বলল, “মানে?”

    গবা বলল, “দূরের কোন পৃথিবীর সঙ্গে এই পৃথিবীর সংযোগরক্ষাকারী একমাত্র চাবি হল এই পাথর। ওদের হাতে এই পাথর যদি যায়, তাহলে এই ছাবিটার মাধ্যমে ওরা ওদের পৃথিবীর সব লোক আমাদের পৃথিবীতে নিয়ে এসে সব শেষ করে দেবে”।

    গৌরী তাড়াতাড়ি পাথরটা তার পকেটে ঢুকিয়ে দিয়ে বলল, “ওরে বাবা, তবে থাক। কাজ নেই আমার এই পাথর দেখে। আমি কি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসবো?”

    গবা সভয়ে মাথা নাড়ল, “একদম না। তাহলেই আবার তারক টের পেয়ে যাবে। আমার পেছনে এখন দুটো দল লেগে আছে। এক, তারক আর তার দলবল। আর আছে রাজা অনঙ্গনাথের লোকজন। তারকের দল জানলেও আমার বিপদ আছে”।

    গৌরীনাথ ভ্রু কুঁচকাল, “রাজা অনঙ্গনাথ? সে আবার কে? এই যুগে আবার রাজা আছে নাকি? কোথাকার রাজা সে?”

    গবা বলল, “রাজা অনঙ্গনাথ অনেক দূর থেকে আসে। এই পাথর তারই। তোকে আমি অতো বোঝাতে পারবো না। তুই যা বাবা। আর আসিস না”।

    গৌরীনাথ ঘাড় নাড়ল, “আচ্ছা। তাই যাবো। কিন্তু তুমি আমাকে বল আমি আমার ব্যাট দিয়েই এতো ভালো খেললাম কী করে? তুমি তো কোন মন্ত্রও পড়ে দাও নি আমার ব্যাটে? তাহলে কোন অলৌকিক কিছু না করেই আমি এত ভাল খেললাম কী করে?”

    গবা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, “কারণ তুই খেলতে পারিস। এতদিন শুধু নিজেই সেটা বিশ্বাস করছিলি না। তুই একদিন অনেক বড় প্লেয়ার হবি। কোন অলৌকিক শক্তি দরকার হবে না তোর ভাল খেলার জন্য। তোর জানার দরকার ছিল তুই পারবি। সেটা জেনে গেছিস। আর কেউ তোকে আটকে রাখতে পারবে না।”

    গৌরীনাথ বলল, “সে না হয় জেনেছি। কিন্তু তুমি এখানে কী করে একা একা থাকবে, আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না। আমি কি কিছুই করতে পারি না?”

    গবা একটু ভেবে বলল, “না। তোকে এখন কিছু করতে হবে না। তুই যা। এখানে আসবি না আর। আর ওটা সাবধানে রাখবি। কেউ যেন পাথরটার কথা জানতে না পারে”।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleখেলাঘর এবং অন্যান্য গল্প – অভীক দত্ত
    Next Article রাজকন্যের সন্ধানে – অভীক দত্ত

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }