Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    গোল্ডেন লায়ন – উইলবার স্মিথ / জাইলস ক্রিস্টিয়ান

    জাইলস ক্রিস্টিয়ান এক পাতা গল্প491 Mins Read0

    ৮. বুজার্ড তার দলবল নিয়ে

    বুজার্ড তার দলবল নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব সামনে এগুতে লাগল। কিন্তু কোথাও অ্যামাডোভাদের কোনো নিশানা খুঁজে পেল না। কারণ অ্যামাডোডারা তাদের সর্বশক্তি দিয়ে দৌড়াচ্ছে। সেইসাথে জুডিথ-এর উপরেও আজকে অসীম শক্তি ভর করেছে। সেও সমানতালে দৌড়াচ্ছে। একপাও পিছিয়ে পড়ছে না। হালও দিনের পর দিন অক্লান্ত পরিশ্রমের পর আজকে দৌড়বিদের মতো শক্ত পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে, কারণ তার সামনে আর কোনো রাস্তা খোলা নেই। তাছাড়া জুডিথ পাশে থাকায় তার পাদুটোতে যেন পাখা গজিয়েছে।

    দৌড়াতে দৌড়াতে তারা উপকূলে পৌঁছে গেল, যেখানে বিগ ডেনিয়েল, ফিশার, জন লোভেলকে সাথে নিয়ে পানসিতে করে হাল এবং অ্যাবোলির ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ যাবত তারা সেখানেই অবস্থান করছে।

    হাল আর জুডিথ যখন গোল্ডেন বাউ-এর কাছাকাছি পৌঁছল, তখন চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পেল তারা। সেই চিৎকার আরও বেড়ে যায় যখন হাল বাউ এ পৌঁছে সবার উদ্দেশ্যে বলা শুরু করে, “তোমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে যে আমি তোমাদেরকে পুরস্কার-এর কথা বলেছিলাম। সেই পুরস্কারের উদ্দেশ্যেই আমরা এখন যাত্রা করব। মি. টেইলর, আমাদের সবাইকে নিয়ে এলিফ্যান্ট লেগুন-এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করুন।”

    অবশেষে বুজার্ড যখন কাপেলোকে নিয়ে কোয়েলিম্যান-এ পৌঁছে তখন প্রায় চারদিন পর্যন্ত তারা একটি জাহাজ খুঁজতে থাকে ধার নেয়ার জন্য।

    যে রহস্যময় দ্বীপের চিহ্ন কোনো মানচিত্রে নেই সেরকম দ্বীপের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা অনেক বড় ঝুঁকির ব্যাপার। তাছাড়া সময়মত সেখানে পৌঁছানো যাবে কি-না সেটাও চিন্তার বিষয়। যখন এসব ভেবে কাপেলো এদিক সেদিক হাঁটাহাঁটি করছিল তখনই সে বারোসকে দেখতে পেল। লোকটা তার জাহাজ মাদ্রি দি ডিয়াস থেকে নেমে আসছিল।

    বারোসকে দেখার পর থেকে কাপেলোর রক্ত টগবগ করে ফুটতে থাকে। এই সেই লোক যে তার সমস্ত সমস্যার জন্য দায়ী। সে তাকে খুন করার জন্য হন্যে হয়ে খুঁজছে। কোয়েলিম্যান সেই ঘটনা ঘটানোর জন্য উপযুক্ত জায়গা নয়। সব ক্রোধ পেছনে ফেলে কাপেলো বারোসকেই কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

    “পুরনো বন্ধু তুমি নিশ্চয়ই আমাকে চেন। আমি পেটের ব্যাপারে কতটা যত্নশীল। কিন্তু আফ্রিকার কোনো শহরে আমি ভাল কোনো খাবার খুঁজে পাই নি। কিন্তু ব্লু এলিফ্যান্ট নামে একটা জায়গা আছে। সেখানকার মতো ভাল খাবার কোথাও পাওয়া যায় না। আমি কয়েক বোতল আলভারেলহাও ওয়াইন এবং এক কৌটা ট্রাস-ওস-মনটেস জোগাড় করেছি। তুমি একটু জিবে নিয়ে দেখতে পার।”

    কাপেলের কথায় প্ররোচিত হয়ে দুটো থেকেই একটু একটু খেয়ে দেখে। বারোস। কাপেলোর কথার সত্যতা স্বীকার করে নেয় সে। এরপর বুজার্ড-এর দিকে তাকিয়ে দেখে সে কিছুই খেতে পারছে না।

    “এই অদ্ভুত সৃষ্টিটাকে দেখে বড় অবাক লাগে। বেচারা কোনো কিছুরই স্বাদ গ্রহণ করতে পারে না।”

    “তুমি যদি তোমার আজেবাজে কথা বন্ধ কর তবে আমরা কাজের কথায় আসতে পারি।” কাপেলো হঠাৎ বেশ গম্ভীর হয়ে বলতে শুরু করল।

    “তুমি যে সাদা দাসটাকে নিয়ে এসেছিলে-ঐ যে বলেছিলে কালোদের মতোই কাজ করতে পারে-সে সেনোর লোহোর অনেক বড় ক্ষতি করেছে। তার নাম হচ্ছে কার্টনি। সে একজন ক্যাপ্টেন। সবাই তাকে এল তাজার নামে চেনে। আমার মনে হয় তুমি এটা জানো। আমি আশা করব যে সেনোর লোবোর ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার জন্য তাকে ধরতে তুমি আমাদেরকে সাহায্য করবে।”

    “কার্টনি কী করেছে?” বারোস জিজ্ঞেস করল।

    কাপেলো যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্তভাবে কার্টনির পালিয়ে যাওয়া এবং জুডিথকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা খুলে বলল। বুজার্ড-এর চামড়ার নাকের সামনে দিয়েই ওরা পালিয়ে গিয়েছে এটাও বলতে ভুলল না। গল্প শুনতে শুনতে বাতোস আরও একপেগ ওয়াইন পান করল। অবশেষে নিজের ঊরুতে চাপড় দিয়ে উচ্চস্বরে হাসতে থাকে সে।

    “এখন তোমরা চাচ্ছ আমি যেন তোমাদেরকে আমার জাহাজে করে নিয়ে কার্টনি আর তার নাজেকে খুঁজে বের করতে সাহায্য করি?” আচ্ছা তাহলে শোন, “আমিও ওদিকেই যাচ্ছি।” আমি চল্লিশ জোড়া হাতির দাঁত একজন ব্যবসায়ীর হাতে তুলে দিতে যাচ্ছি। সে কেপ অব গুড হোপ-এ অপেক্ষা করবে এবং সেগুলো নিয়ে হল্যান্ড-এ ফিরে যাবে। কিন্তু তোমরা এইসব প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি ভুলে যাও। সমুদ্র থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরে বাস করা বৃদ্ধ লোবোকে আমি ভয় পাই নে। এখন আমাকে যথাযোগ্য কারণ দেখাও যে কেন আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ কাজ করতে যাব?”

    কাপেলো কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু বুজার্ড তাকে থামিয়ে দিয়ে বলতে শুরু করল, “কার্টনির পিতা ফ্যাঙ্কিকে আমি খুব ভালভাবেই চিনতাম। তার দুটি গুণ ছিল। গুপ্তধন সমৃদ্ধ কোনো জাহাজ যদি সাগরের ওপর দিয়ে ভেসে যেত তবে গন্ধ শুঁকেও সে সেটা খুঁজে বের করতে পারত। দ্বিতীয়ত, সেই জাহাজের প্রতিটা পেনীও সে রেখে দিত। কত গুপ্তধন মজুদ করেছে সেটা সে কোনোদিন কাউকে বলেনি। এমনকি আমি, যে কি-না তার অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলাম এবং যার সেই গুপ্তধন-এ ভাল রকমের ভাগ ছিল, তাকেও সে কোনোদিন কিছু বলেনি।”

    বারোস কথা বলার জন্য মুখ খুলল কিন্তু বুজার্ড তার তিন আঙুল বিশিষ্ট হাতটা উঠিয়ে তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠল, “তুমি নিশ্চয়ই জানতে চাইবে কার্টনির গুপ্তধনের পরিমাণ কত হতে পারে? আমি তোমাকে বলছি শোন। শেষ যে জাহাজটা কার্টনি আটকিয়েছিল সেটা ছিল রিজলিউশন নামের একটা ওলন্দাজ জাহাজ।”

    “ওহ, হ্যাঁ…আমার মনে পড়েছে।” বারোস বলতে শুরু করে। “কেপ কলেনিতে তখন এটা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। কিন্তু রিজলিউশন তত আবারও দখল করেছিল ওরা-সমস্ত কাঠ আর মশলাসহ।”

    “হ্যাঁ, স্টুপিড ওলন্দাজগুলো আবারও তাদের জাহাজ ফেরত পেয়েছিল, কাঠ আর মশলাগুলো সহই। কিন্তু আমি হলফ করে বলতে পারি জাহাজে আরও অনেক কিছু ছিল। পঞ্চাশ হাজার ডাচ্ গিল্ডার মুদ্রা এবং তিনশত…” “তুমি কী আমার কথা শুনতে পাচ্ছ…তিনশত খাঁটি সোনার বার যার একটাই একজন মানুষের সারাজীবন সুখে শান্তিতে বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট।”

    কার্টনির এত গুপ্তধনের কথা শুনে বারোস একধরনের শব্দ করে উঠল। তখন বুজার্ডের মনে হলো যে আর বলা উচিত হবে না। বাকি যেগুলো আছে সেগুলো নিজের জন্য রেখে দেওয়া উচিত।

    “আচ্ছা ঠিক আছে”, পরিস্থিতি বুঝতে পারল বায়োস। কিন্তু তুমি কী জান সেই গুপ্তধন কোথায় লুকিয়ে রাখা আছে?”

    “খুবই মজার একটা প্রশ্ন। এর উত্তর একই সাথে হ্যাঁ এবং না। আমি জানি যে কার্টনি যে উপকুলে গিয়ে থেমেছিল সেখান থেকে গুপ্তধনের দূরত্ব প্রায় অর্ধেক দিনের। আমি এটাও জানি যে বিচের কোথায় কোথায় এটা নেই। কারণ আমি সারা বীচ ঘুরে দেখেছি। কোথাও এর চিহ্ন খুঁজে পাইনি।”

    “বীচটা কোথায়?” বাবোস জিজ্ঞেস করল।

    “জায়গাটার নাম এলিফ্যান্ট লেগুন। কিন্তু আমাকে ডিঙিয়ে ওখানে যাওয়ার চেষ্টা করো না ক্যাপ্টেন। কারণ তুমি এটা কোনো চার্ট-এ খুঁজে পাবে না। কিন্তু আমি জানি এটা কোথায় আছে এবং কীভাবে সেখানে যেতে হয়। আমি কার্টনিকে সেখানে যেতে দেব। এমনকি গুপ্তধনও উদ্ধার করতে দেব”, এরপর বুজার্ড টেবিলের ওপর শক্তভাবে ঘুসি মেরে বলল, “আমরা তখনই আক্রমণ করব যখন সে ভুলেও সেটা প্রত্যাশা করবে না। তখন আমরা তার গুপ্তধন এবং নারী দুটোই ছিনিয়ে আনব।”

    “আমি গুপ্তধনের অধের্কটা চাই”, বারোস বলে উঠে।

    “দ্য হেল ইউ ডু”, বুজার্ড ফোঁসফোঁস করে বলল।

    “প্লিজ, দ্রমহোদয়গণ, থামুন”, কাপেলো ওদেরকে থামানোর চেষ্টা করে। বলল। “আমরা এখানে প্রত্যেকেই প্রত্যেকের ওপর নির্ভরশীল, ক্যাপ্টেন বারোস, তোমার হয়ত জাহাজ আছে। কিন্তু এখানে একমাত্র আমাদের মুখোশওয়ালা বন্ধুই গুপ্তধনের খোঁজ জানে। ক্যাপ্টেন বারোস, খাবার, পানি, গানপাউডার এসবের জন্য তোমাকে কোনো খরচ করতে হচ্ছে না। আর আইভরি থেকে তুমি তোমার লাভ পেয়ে যাবে। এখানে একমাত্র আমাকেই সেনোর লোবোর হয়ে টাকা খরচ করতে হচ্ছে। তাই এসব নিয়ে বাদ-বিবাদ না করে আমরা তিনজনই যদি সেটা সমান ভাগ করে নেই, তাহলেই তো ব্যাপারটা মিটে গেল।”

    “তার ওপর আমি কার্টনির স্ত্রীকে নিয়ে গিয়ে লোবোর কাছে হস্তান্তর করব। আর ক্যাপ্টেন তুমি কার্টনির মাথাটা নিয়ে প্রিন্স জাহানের নিকট দেবে আর যথেষ্ট পুরস্কার পাবে এর জন্যে। আর কার্টনির জাহাজটা পাবে বুজার্ড।”

    “আচ্ছা ঠিক আছে। আমি রাজি।” বারোস বলতে থাকে। কিন্তু “কার্টনি কয়েকদিন পূর্বেই যাত্রা শুরু করে দিয়েছে। আমাদের যাত্রা শুরু করতে আরও দুই দিন লাগবে। আমরা কীভাবে কার্টনিকে ধরব?”

    “এটা নিয়ে ভেবো না”, বুজার্ড জবাব দেয়। “কার্টনি ভেবেছে সে নিরাপদ-এ আছে। তাই সে আস্তে ধীরে এগুতে থাকবে। কিন্তু আমরা একটা উদ্দেশ্য নিয়ে এগুব। তাই আমরা ঠিকই সময়মত তাকে ধরে ফেলব।”

    অবশেষে তারা তিনজন তদারকি করে জাহাজটাকে যাত্রার জন্য প্রস্তুত করে ফেলল। আর তারপর ঠিক পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটিয়ে জাহাজ চালু করে দিল তারা। যখন আবহাওয়া খারাপ হতে শুরু করল তখন বুজার্ড নিজে দাঁড়িয়ে থেকে আরও পাল তুলে দিল। গন্তব্যে পৌঁছার পূর্ব পর্যন্ত একটানা চলতেই থাকল তারা।

    *

    “আমার চোখের দৃষ্টি খুব ভাল”, মসি বলল। “এবং আমি খুব উচ্চস্বরে চিৎকার করতে পারি। আপনি জাহাজের যে কোনো প্রান্ত থেকে আমার কণ্ঠ শুনতে পাবেন। এই যে শুনুন…” এই কথা বলার পরপরই মসি চিকন স্বরে এত জোরে চিৎকার করে উঠল যে তার পাশে দাঁড়ানো হাল দুহাত দিয়ে কান বন্ধ করে ফেলল।

    মসি আনন্দে হেসে উঠে। “এইতো দেখেছেন, স্যার। আমি বেশ ভাল পাহারাদার হতে পারব।”

    হাল চোখমুখ শক্ত করে না-সূচকভাবে মাথা নাড়াল। সে এই ব্যাপারটা নাবিকদের হাতে ছেড়ে দিয়েছে। গোল্ডেন বাউ কোয়েলিম্যান পার হওয়ার কিছু সময় পরেই মসি এসে পরবর্তী পাহারাদার হওয়ার জন্য হাল-এর কাছে আবেদন জানায়। হাল তাকে সোজা না করে দিয়েছে। এরপর একটার পর একটা কারণ বের হতে থাকে যে কেন সে পাহারাদার হতে পারবে না। মসির বয়স অল্প, সে খুব ছোট, সে দ্রুত উপরে উঠানামা করতে পারবে না, সে বিভিন্ন জাহাজের পার্থক্য বুঝতে পারবে না এবং চিৎকার করে নিচের সবাইকে জানাতে পারবে না ইত্যাদি।

    গোল্ডেন বাউ বর্তমানে দক্ষিণ দিকে যাত্রা করছে। আজকের দিনের জন্য গোল্ডেন বাউয়ের প্রধান আলোচনার বিষয় হচ্ছে, জাহাজের সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি এবং সবচেয়ে ছোট ব্যক্তির মধ্যে দ্বন্দ্ব। অনেকে এটা নিয়ে বাজি ধরা শুরু করেছে। কেউ বলছে যে ক্যাপ্টেন ছোট্ট বালকটির কথা মেনে নেবে, কেউ বলছে, কোনো সম্ভাবনাই নেই।

    “আমি তোমাদেরকে বলে রাখছি, এটা কোনোদিনও সম্ভব হবে না।” বিকেলবেলা গল্প করতে বসে বিগ ডেনিয়েল একদল নাবিককে উদ্দেশ্য করে বলল। এবং “কেন সেটা ভেবে দেখ। পৃথিবীতে একমাত্র একজনই আছে যে ক্যাপ্টেনকে তার কথামত কাজ করাতে পারে কিংবা কোনো কাজে নিষেধ করতে পারে। ক্যাপ্টেন খুব ভাল করেই জানে মসি তার খুব প্রিয় পাত্র। সে কোনোভাবেই মসিকে প্রধান মাস্তুলের ওপর থেকে পড়ে চেপ্টা হতে দেবে না।”

    “হ্যা”, একজন নাবিক বিগ ডেনিয়েল-এর কথার সাথে সহমত পোষণ করল। “ক্যাপ্টেনস লেডি যে শুধু রাগ করতে পারে তাই না। সে তলোয়ার দিয়ে কী করতে পারে সেটা আমি দেখেছি।”

    সেই ব্যাপারটাই এখন ক্যাপ্টেন-এর মনে বেশি করে খেলা করছে। তাই কার্ড-এর শেষ চাল দেয়ার সময়ও তাকে দেখে বেশ উতলা মনে হচ্ছিল। “লেডী জুডিথ-এর কথা চিন্তা করে দেখ”, হাল বলল। সে জানে যে মসি জুডিথ-এর কাছে ততটাই গুরুত্বপূর্ণ ঠিক যতটা জুডিথ তার কাছে। যদি তুমি ওপর থেকে পড়ে যাও তখন…” হাল প্রধান মাস্তুলের একেবারে চূড়ায় ইশারা করে দেখায়। তাহলে তুমি ডেক-এর ওপর পড়ে চেপ্টা হয়ে যাবে। মারা যাবে তুমি। এতে জুডিথ খুব দুঃখ পাবে। তুমি নিশ্চয়ই তোমার লেডি জুডিথকে দুঃখ দিতে চাও না, তাই না?”

    মসি ব্যাপারটা নিয়ে খানিকক্ষণ চিন্তা করল, এবং তারপর পরই সে মুখে হাসি ফুটিয়ে পূর্ণোদ্যমে বলতে শুরু করল, “কিন্তু আমি পড়ে যাব না ক্যাপ্টেন কার্টনি স্যার। আমাদের গ্রামে গাল পাখির ডিম আনার জন্য আমাকে উঁচু পাহারে উঠতে বলা হতো। আপনি আমাকে একটা লম্বা রশি দিলে আমি চাদেও উঠতে পারব।”

    মসির কথা শুনে অবোলি হেসে উঠে। সে তখন প্রধান ডেক-এর ওপর দাঁড়িয়ে অ্যামাডোডাদের কাজ পরিদর্শন করছিল। হাল তাকে ইশারায় ডেকে পাঠালে সে এগিয়ে এলো।

    “তুমি কী মনে কর একে আমার উপরে উঠতে দেয়া উচিত?” হাল জিজ্ঞেস করল।

    “সে যদি ওপর থেকে পড়ে না যায় তাহলে ঠিক আছে”, আবোলির আগেই নেড টেইলার জবাব দিয়ে বসলো। “আমি চাইনা, আমার এই পরিষ্কার ডেকটা নোংরা হয়ে যাক।”

    অ্যাবোলি হেসে ফেলল। এরপর তার দুই হাত একবার উপরে আরেকবার নিচে নামিয়ে বলল, “এই ছেলে হচ্ছে স্প্যারো, গান্ডওয়েন। সে যদি পড়ে যেতে শুরু করে তবে সে তার ডানা ছড়িয়ে দেবে। তাছাড়া তুমি যখন প্রথম মাস্তুলের ওপর উঠেছিলে তখন এর বয়সি কিংবা এর চেয়েও ছোট ছিলে। যদিও আমি যতদূর মনে করতে পারছি তোমার বাবা তখন তার কেবিন-এ ঘুমিয়ে ছিলেন।”

    সেই স্মৃতি মনে পড়ে হাল-এর মুখে হাসি ফুটে উঠল। অ্যাবোলির সে সময়ের নির্দেশনাগুলো এখনো তার কানে বাজে। “নিচের দিকে তাকিও না, গান্ডওয়েন। যেভাবেই হোক নিচের দিকে তাকানোর ইচ্ছে প্রতিহত কর।” প্রধান মাস্তুল বেয়ে উপরের দিকে উঠার সময় তার পাগুলো কাঁপছিল, বুকটা ধড়ফড় করছিল। কিন্তু একবার যখন সে চূড়ায় পৌঁছল তখন সেখানে বসে নিজেকে তার রাজা বলেই মনে হচ্ছিল।

    “সেই মাস্তুল এটার মতো অতটা লম্বা ছিল না, অ্যাবোলি”, হাল বলল।

    “না, তা ছিল না।” অ্যাবোলি স্বীকার করে নিল। এরপর মসির দিকে তাকিয়ে বলল, “কিন্তু সে যদি পড়ে যায় আমি তাকে ধরে ফেলব-ঠিক যেভাবে তোমাকে ধরতাম, গান্ডওয়েন।”

    হাল মসির দিকে স্থিরদৃষ্টিতে তাকায় এবং বুঝতে পারে অ্যাবোলি ছেলেটাকে বেশ সমীহ করছে। হালও মনে মনে ছেলেটার সাহসের প্রশংসা করতে লাগল। কারণ এই বয়সে সে যে পরিস্থিতি নিজ চোখে দেখেছে বা শিকার হয়েছে এরপরও এতটা সাহস ধরে রাখা প্রশংসার দাবিদার বটে।

    “আর যদি আমি তাকে ধরে ফেলতে না পারি তবে মাই লেডি দেখে ফেলার পূর্বে ডেকটা পরিষ্কার করে ফেললেই চলবে”, অ্যাবোলি চেহারায় যথেষ্ট গাম্ভীর্য ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে বলল। যদিও তার চোখে হাসি হাসি ভাব খেলা করছিল।

    “মাই লেডি দেখে ফেলার পূর্বে কী হবে?” পেছন থেকে একটা নারী কণ্ঠ বলে উঠল।

    “ওহ, কিছু না, ডার্লিং”, জুডিথ-এর কৌতূহল-এর ওপর প্রলেপ দেয়ার চেষ্টা চালালো হাল। কিন্তু মসি হাল-এর সেই চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে বলে উঠল, “ক্যাপ্টেন আমাকে জিজ্ঞেস করছিল যে আমি প্রধান মাস্তুলের ওপর উঠতে পারব কি-না…।”

    “আমি কখনোই একথা বলিনি, হাল বিস্ফোরিত হয়ে বলে উঠল।

    “আর আমি যদি পড়ে যাই তবে অ্যাবোলি আমাকে ধরে ফেলবে বলেছে।”

    “এসব কী সত্যি?” জুডিথ জিজ্ঞেস করল। হাসি চেপে রেখে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে সবকিছু খুঁটিয়ে দেখার চেষ্টা করছে সে।

    “এটা সত্য যে সে আমাকে অনেকক্ষণ ধরেই রাজি করানোর চেষ্টা করছে যেন আমি তাকে প্রধান মাস্তুলের উপরে উঠতে দেই। কিন্তু আমি তাকে উঠতে বলেছি এটা কখনোই সত্য নয়। তুমি যাচাই করে দেখতে পার।”

    ‘ক্যাপ্টেন ঠিকই বলেছে, মাই লেডি”, নেড টেইলার বলে উঠল। “তিনি। বরং ছেলেটাকে উঠতে দিতে চাচ্ছেন না।”

    “সত্যি?” চেহারায় একটা নিষ্পাপ ভাব ফুটিয়ে তুলে বলল জুডিথ। “কিন্তু কেন? আমি চাই ছেলেরা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হোক। তাদেরকে যদি পরীক্ষার মধ্যে ফেলা না হয় তাহলে তারা কীভাবে শক্তিশালী হবে? কীভাবে সাহসী মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে?”

    “কিন্তু আমি ভেবেছিলাম…তুমি বলেছিলে…” হাল কথা বলার জন্য সঠিক শব্দ খুঁজতে থাকে। জুডিথ-একসময় পরিষ্কার করে বলেছিল যে সে চায় না মসির কোনো ক্ষতি হোক এবং হালের সেটা ভালই মনে আছে।

    জুডিথ বুঝতে পারে যে সে হাল-এর জন্য যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করে ফেলেছে।

    হেঁটে গিয়ে হাল-এর পাশে দাঁড়াল সে। এরপর হাল-এর একবাহু ধরে সরাসরি তার দিকে তাকাল। “আমি জানি আমি যা চাই, তুমি তাই করবে। সেজন্য তোমার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কিন্তু এটা তোমার জাহাজ। তোমার মতমতের ওপর ভিত্তি করেই এই জাহাজ চলবে। যদি তুমি মনে কর মসি মাস্তুলের ওপর উঠার উপযুক্ত তবে আমি কিছুতেই মানা করব না।”

    “প্লিজ, ক্যাপ্টেন। প্লিজ-প্লিজ!” মসি লাফিয়ে লাফিয়ে বলতে থাকে।

    হাল ভেবে দেখে অ্যাবোলি এবং জুডিথ ঠিকই বলেছে। সে অনেক ছোটবেলাতেই একাজ শুরু করেছিল। আর এটাই তাকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করেছে। তাই সে মসির দিকে তাকিয়ে বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে, কিন্তু খুব সাবধানে উঠবে। আর একবার যখন তুমি উপরে উঠতে শুরু করবে তখন নিচের দিকে তাকাবে না।”

    “ঠিক আছে স্যার, তাকাব না”, মসি বলে উঠল। তার চেহারায় বিকেলের সূর্যের মতো ঝকমকে হাসি ফুটে উঠে। সেই সাথে সে তার ছোট্ট পা আঁকাবাকা করে নাচতে থাকে।

    “যখন আমি উপরে সামুদ্রিক পাখির দেখা পাব তখন আমি তাদের বলব যে আমি কে। আমি তাদের কাছে আপনার কথাও বলব, ক্যাপ্টেন।”

    “আমি নিজেই তাদেরকে আমার কথা বলব”, হাল বলে উঠল। “কারণ আমিও তোমার সঙ্গে উপরেই যাচ্ছি।”

    “কী?” জুডিথ অবাক বিস্ময়ে বলে উঠল।

    “তোমাকে নিশ্চয়ই একজন আদর্শ নেতার বৈশিষ্ট্য বলে দিতে হবে না, মাই ডিয়ার জেনারেল? একজন আদর্শ নেতা কখনই তার অধীনস্থ কাউকে এমন কোনো কাজ করতে বলে না যেটা সে নিজে করতে পারে না।”

    সবাই ওর কথাটাকে আনন্দধ্বনি আর চিৎকার এর মাধ্যমে সম্মান জানালো। ক্যাপ্টেন কার্টনির জন্য গর্বে তাদের বুক স্ফিত হয়ে গেল।

    “সে একেবারে তার বাবার মতই হয়েছে।” নেড টেইলার বিগ ডেনিয়েল এর পাশে দাঁড়িয়ে বলল।

    “বৃদ্ধ ফ্রাঙ্কি নিশ্চয়ই ওপর দেখে বেশ খুশি হচ্ছে, বিগ ডেনিয়েল জবাব দিল।

    হাল তার গায়ের জামা খুলে ফেলল; খালি গায়ে আর খালি পায়ে তাকে একজন সাধারণ নাবিকের মতই মনে হচ্ছে এখন। তার পিঠের চাবুকের দাগ আর ক্ষতগুলো বের হয়ে গেলে মসি বিস্ময়ের সাথে মুখ হা করে তাকিয়ে থাকে।

    “আমিও একসময় সাধারণ একজন দাস ছিলাম, মসি”, হাল বালকটির কৌতূহল বুঝতে পেরে তাকে জানালো।

    “আপনি নিশ্চিতভাবেই খুবই অবাধ্য দাস ছিলেন, মাই লর্ড।” মসি হাসতে হাসতে বলল।

    হালও হেসে জবাব দিল, “হ্যাঁ, তোমার চেয়েও অনেক বেশি।” সে তার চুলগুলোর বাধন খুলে আবারও পেছনে নিয়ে শক্ত করে বাঁধল। এতে করে লম্বা কালো পিগটেইলটা পেছনে দুই কাঁধের মাঝে পড়ে রইলো।

    “আমরা কী প্রস্তুত?” সে মাস্তুলের দিকে ঝুঁকে এমনভাবে মসিকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলল যেন সে কোনো নারীকে সূর্যাস্ত দেখানোর জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছে।

    “ক্যাপ্টেন। দেখিয়ে দিন এখনো আপনার মাস্তুলের ওপর উঠার ক্ষমতা রয়েছে আগের মতই”, একজন নাবিক চিৎকার করে উঠে।

    “আমি বাজি ধরে বলতে পারি ছেলেটি ক্যাপ্টেন-এর আগে মাস্তুলের ওপর উঠে পড়বে।” একজন নাবিক তার পাশের জনকে বলছিল।

    “নাহ”, ক্যাপ্টেন কার্টনির জন্মই হয়েছে মাস্তুলের ওপর উঠার জন্য। সে সবসময় ওখানে রাজার মতই থাকবে”, অন্য লোকটি জবাব দিতে শুরু করল।

    “তোমাকে আমার জন্য হলেও জিততে হবে, ডালিং”, জুডিথ ফিসফিস করে বলে উঠল।

    “তোমরা সবাই কাজে যাও, বদমাশের দল”, হাল অলসভাবে বসে থাকা নাবিকদের উদ্দেশ্যে খেঁকিয়ে উঠল। যদিও সে খুব ভালভাবেই জানে যে ওরা কেউ ক্যাপ্টেন-এর মাস্তুলে উঠা না দেখে যাবে না।

    অ্যাবোলি প্রতিযোগীদের উদ্দেশ্যে বলল, “তোমরা সবাই তৈরি?” সে তার দুই হাত বাতাসে ছড়িয়ে দিয়ে প্রতিযোগীদের উদ্দেশ্যে তাকাল। দুজন প্রতিযোগই তার দিকে তাকিয়ে হাঁ-সূচক মাথা নাড়াল যদিও তখন দুশ্চিন্তায় তাদের শরীর কাঁপছিল।

    “গো!” অ্যাবোলি চিৎকার দিয়ে উঠল। মসি এত দ্রুত দৌড়াতে শুরু করে যে দেখে মনে হয় কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই সে মাস্তুলের ওপর উঠে যাবে। সত্যিটা হচ্ছে, অ্যাবোলির মুখের শব্দ শেষ হওয়ার পূর্বেই সে দৌড়াতে শুরু করে দিয়েছিল।

    দুর্ভাগ্যবশত হাল তার প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে অল্প একটু সময় পরে দৌড়াতে আরম্ভ করেছিল। ইতোমধ্যেই গরমের কারণে ঘামের পানি তার কপাল চুঁইয়ে পড়ছে। তার চোখের পাতা বন্ধ হয়ে আসছে। সে মাস্তুলটাকে তার এবং সূর্যের মাঝে রাখার চেষ্টা করছে। তারপরও সে সূর্যের তাপ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। কিন্তু সবচেয়ে বেশি সে যে চেষ্টাটা করছে তা হাল ছোট ছেলেটার সাথে তাল মিলিয়ে উপরে উঠতে।

    “ছোকরা জন্মগতভাবেই একজন উপমাস্টারম্যান”, নেড টেইলার মসির দিকে তাকিয়ে এমনভাবে বলল যে শুনে মনে হচ্ছিল, কোনো শিক্ষক তার শিক্ষার্থীর প্রশংসা করছে।

    নিচে দাঁড়িয়ে থাকা সবাই প্রতিযোগীদের উৎসাহ দেয়ার জন্য চিৎকার করছে।

    “সেটা বুঝলাম। কিন্তু আমাদের ক্যাপ্টেন এখনও পাছায় আগুন লাগা বানরের মতো তড়তড় করে মাস্তুলের ওপর উঠতে পারে”, বিগ ডেনিয়েল গর্বের সাথে বলল।

    ডেক-এর যথেষ্ট উপরে থাকায় তাদের কারো কথাই হাল-এর কানে পৌঁছাচ্ছে না। এখন শুধু তার সামনে একটাই চিন্তা : মসিকে কীভাবে ধরে ফেলা যায়। কিন্তু ঠিক তখনই…মসি নিচের দিকে তাকাল।

    “চোখ উপরের দিকে উঠাও”, হাল বলে উঠল। কিন্তু ততক্ষণে বেশ দেরি হয়ে গিয়েছে। মসি প্রায় জমে বরফ-এ পরিণত হয়েছে। তার সারা শরীর কাঁপছে।”

    “আমি আটকে গেছি, স্যার!”

    “একটা গভীর শ্বাস নাও। এটা তেমন কোনো ব্যাপার না”, হাল বলতে থাকে। “উঠ, আরও উপরে উঠ।” হাল ছেলেটাকে বলতে পারত নিচে নেমে আসতে। কিন্তু সে সেটা করে নি। কারণ সে জানে একবার যদি ছেলেটার মনোবল ভেঙে যায় তাহলে সে আর কোনোদিনও উপরে উঠতে পারবে না।

    নিচের সব মানুষ নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের সমস্ত উত্তেজনা এখন ভয়ে রূপ নিয়েছে। তারা বুঝতে পারছে ছেলেটি এখন কী পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে সময় পার করছে। প্রতিযোগিতা শেষ হয়ে গিয়েছে এরইমধ্যে, কিন্তু মসি-এর চেয়েও বড় এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে আছে।

    “আমার পা আমার সাথে প্রতারণা করেছে, স্যার।”

    “তুমি যা বলবে ওগুলো ঠিক তা-ই করবে। এখন আর কথা না বাড়িয়ে উপরে উঠতে থাক।”

    “আমি নড়তে পারছি না। কান্নার সুরে কথাগুলো বলল ছেলেটা। তার হাঁটুদুটো যথেষ্ট দূরে সরে গিয়েছে। পেট ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়ায় হাল তার বুকের পাঁজরের প্রতিটা হাড় গুনতে পারছে।

    “তুমি যদি মাস্তলের চূড়ায় উঠতে না পারো তবে পরবর্তী বন্দরে আমি তোমাকে দাসের বাজারে বিক্রি করে দেব”, হাল ছেলেটাকে হুমকি দিল। হাল জানে এটা একটা নিষ্ঠুর হুমকি। কিন্তু উচ্চতার চেয়েও বড় ভয়ের কোনো কিছু তার সামনে দাঁড় করাতে হবে। আর হুমকিতে কাজ হলো। যদিও মসি কাঁপছে, কিন্তু এরপরেও সে আস্তে আস্তে উপরে উঠার চেষ্টা করছে।

    “এইতো কাছাকাছি পৌঁছে গেছ, আর বেশি দূরে নয়”, হাল বলল।

    “হ্যাঁ স্যার”, মসি বলল। পা কাঁপুনিকে অনেক কষ্টে দমিয়ে রেখে উপরে উঠছে সে।

    অবশেষে ছেলেটা তার পা বাঁকিয়ে রেটলাইন-এর ওপর উঠিয়ে দিতে সক্ষম হলো। এরপর মাস্তুলের চূড়ায় উঠে বসলো সে।

    “আমরা তোমাকেই টপমাস্টারম্যান বানাব”, হাল উঠে মসির পাশে বসার পর বলল। ওরা উপরে বসার পর নিচ থেকে সবাই সমস্বরে চিৎকার দিয়ে উঠেছে।

    কিন্তু মসি এখনো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।

    “তুমি বেশ ভাল করেছ”, হাল মসিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে বলল। হাল নিজের কাজেও বেশ খুশি। কারণ এতদিন পর উপরে উঠার চেষ্টা করে তার নিজেকেও বেশ ধকল সইতে হয়েছে। “জাহাজের সব লোক তোমার কাজ দেখেছে। তুমি সবার আস্থা অর্জন করেছে। তাকিয়ে দেখ, সবাই তোমার কাজে খুশি হয়ে চিৎকার করছে।”

    “কিন্তু আমি…আমি কিছুতেই নড়তে পারছিলাম না।”

    “তুমি নিচের দিকে তাকিয়েছিলে”, হাল বলল। “আমি তোমাকে সেটা করতে মানা করেছিলাম।”

    নিজের কাজের জন্য মসি বেশ লজ্জিত হয়ে পড়ল। কিন্তু হাল ছেলেটার প্রতি আদুরে ভাব না দেখিয়ে আবারও তাকে পরীক্ষায় ফেলার চেষ্টা করল। “আমরা তোমার উপরে উঠার পরীক্ষা নিয়েছি। এখন আমরা তোমার চোখের দৃষ্টির পরীক্ষা নেব।”

    অনেক দূরে একটা জাহাজ খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। লোকটার নিশ্চয়ই কোনো তাড়াহুড়ো আছে, হাল মনে মনে চিন্তা করল। জাহাজটার বাইরের দিকটা দেখে পরিচিত মনে হচ্ছে কিন্তু সে চিনতে পারছে না। ড্যাম! আমার দৃষ্টিশক্তি কী আমার সাথে প্রতারণা করছে নাকি, হাল মনে মনে ভাবল।

    “বলতো ওটা কী রঙের পতাকা উড়িয়ে যাচ্ছে?” সে মসিকে জিজ্ঞেস করল।

    “কোনো রঙেরই না, ক্যাপ্টেন”, মসি তার চোখের শেষ পানির ফোঁটাটাও মুছতে মুছতে জবাব দিল।

    “অদ্ভুত”, হাল বিড়বিড় করে উঠল। ব্যাপারটা ভালভাবে পরীক্ষা করে দেখার জন্য তার আরও কিছুক্ষণ থাকা উচিত কিন্তু প্রথমবার উঠার চেয়ে নামাটা মসির জন্য কঠিন হতে পারে। তাই তাকে গাইড করে নিচে নামিয়ে নিতে হবে এখন।

    “ঠিক আছে, মসি, চল এখন আমরা ডেক-এ নেমে যাই।”

    “আমার পা আমার সাথে আর কখনো এরকম বেইমানি করবে না, ক্যাপ্টেন”, মসি বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল।

    “আমি জানি সেটা”, হাল মসিকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করল। “চল, আমরা এখন নিচে নামব।”

    *

    এলিফ্যান্ট লেগুন-এর পাথরের ওপর বেড়ে উঠা গাছের আড়ালে লুকিয়ে বন্দুক তাক করে রেখেছে বুজার্ড। তার পাশেই কামান বসানোর সেই পুরনো জায়গা দেখা যাচ্ছে যেখানে বহুদিন পূর্বে কার্টনি আস্তানা বানিয়েছিল নেভীদের হাত থেকে নিজের বাহিনীকে রক্ষা করার জন্য।

    আশেপাশে নৌকো বা মানুষের বসবাসের কোনো চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না। তার বদলে চকচকে সাদা বালি দেখা যাচ্ছে। তিনটা হাতি পানির ধারে খেলা করছে। কিন্তু এখন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হওয়ার মতো মন মানসিকতা বারোস-এর নেই।

    “ড্যাম ইউ! আমি আমার লোকদেরকে বিদ্রোহের জন্য জাহাজটাকে প্রস্তুত করতে বলেছি এবং তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য অনুরোধ করেছি। কিন্তু তার ফল কী হল? কিছুই না। কার্টনি পালিয়েছে। আমি সোনাদানার কোনো চিহ্নই দেখতে পাচ্ছি না।”

    “নাকি কান্না বন্ধ কর। তোমার জাহাজের তেমন কোনো ক্ষতিই হয়নি। পালের কয়েকটা জায়গায় একটু ছিঁড়ে গিয়েছে এবং কয়েকটা কাঠ নষ্ট হয়েছে। কেপ-এর বোটইয়ার্ড-এ একদিনেই সেটা ঠিক করে ফেলা যাবে। আর এই যাত্রার শেষে যখন তোমার লোকেরা ভালকিছু জিনিস হাতে পাবে তখন তারা এমনিতেই খুশি হয়ে যাবে।”

    “কিন্তু আমি এখানে ভাল খারাপ কিছুই দেখতে পাচ্ছি না”, বারোস-এর গলার স্বর আস্তে আস্তে উঁচুতে উঠতে থাকে।

    “তোমার কী মনে হয় সবকিছু তোমার জন্য বীচ-এ ছড়ানো থাকবে?” বুজার্ড তার মুখোশের ভেতর থেকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বারোস-এর দিকে তাকাল। “আমার সঙ্গে এসো।”

    “নিচে নামা কী ঠিক হবে?” বায়োস জিজ্ঞেস করল। এই প্রথম বারোসকে বেশ উদ্বিগ্ন মনে হচ্ছে। যে প্রাণীগুলোর কারণে এই জায়গাটার নামকরণ করা হয়েছে তারা বারোস-এর মনে ভয় জাগাতে পেরেছে।

    তারা পাথরের উপরের দিয়ে ভেতর দিকে এগুতে থাকে। ওরা সেই পুরনো কুড়েঘরগুলো দেখতে পেল যেগুলোতে বুজার্ড আর কার্টনি উভয়েই একসময় ঘুমিয়েছিল এককালে।

    “তখন আমি পরিপূর্ণ মানুষ ছিলাম। আমার দুটো হাত ছিল এবং আমি কঠোর পরিশ্রম করতে পারতাম”, বুজার্ড মনে মনে ভাবতে থাকে। এখানে সেখানে ছড়িয়ে থাকা ছাই-এর চিহ্ন দেখতে পায় সে যেগুলো পুরনো ক্যাম্পফায়ার-এর চিহ্ন বহন করছে।

    “অনেক দিন যাবত এখানে কেউ আসে না”, বুজার্ড নিজের মতামত ব্যক্ত করল।

    “যদি আমি কার্টনি হতাম তবে আমি কখনোই আমার লোকদেরকে উপকূলে নিয়ে আসতাম না। বারোস বলতে থাকল। তাদেরকে জাহাজে রেখে দুই একজন বিশ্বস্ত অফিসারকে সঙ্গে নিয়ে গুপ্তধন উদ্ধার করতে চলে আসতাম।”

    বুজার্ড বেশ উচ্চস্বরে হেসে উঠল। “ইয়ং কার্টনি তা করবে না। সে তার ছেলেদেরকে জাহাজ ছেড়ে বাইরে যেতে দেবে, মাছ ধরতে দেবে কিংবা খাবার সংগ্রহে যেতে বলবে অথবা জাহাজ ঠিক করার জন্য কাঠ সংগ্রহ করার আদেশ জারি করবে।”

    “এটা ওর অনেক বড় দুর্বলতা”, বারোস তার মাথা নেড়ে দৃঢ়কণ্ঠে বলল।

    “আহ, আর এটাই তার মৃত্যু ডেকে আনবে”, বুজার্ড হাসতে হাসতে বলল। “আর তা খুব শীঘ্রই হবে।”

    “তাহলে আমরা এখন কী করব?”

    “আমরা আমাদের জাহাজটাকে দক্ষিণ দিকে পরবর্তী সমুদ্র সৈকতে নোঙর করাব। তাহলে কার্টনি আমাদের সন্ধান পাবে না। কারণ সে আসবে। উত্তর দিক থেকে। কার্টনি পৌঁছেই প্রথম যে কাজটা করবে তা হলো লংবোট নিয়ে গুপ্তধনের সন্ধানে বের হয়ে যাবে। সে যখন ফিরে আসবে জাহাজের সবাই তাকে অভিনন্দন জানানোর ব্যবস্থা করে রাখবে।” আমরা যা করব তা হচ্ছে, “ওদের আনন্দ উৎসবের পরপরই হাল-এর শেষকৃত্য আয়োজনের ব্যবস্থা শুরু করে দেব।”

    *

    নরম শীতল পানির ওপর দিয়ে শক্তভাবে দাঁড় বেয়ে তারা নৌকোটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। তাদের আগমনে শান্ত পানিতে ঢেউ ও এর সৃষ্টি হয়। সেই সাথে পানিতে বসে থাকা বন্য পাখির ঝাঁক ডানা ঝাঁপটাতে ঝাঁপটাতে আকাশে উড়ে যায়। বুনো হাঁসের ডাক চারদিকে ধ্বনিত হতে থাকে।

    কিন্তু জায়গাটার নীরবতা নিয়ে তাদেরকে বেশিক্ষণ হতাশ থাকতে হয় নি। যখনই গোল্ডেন বাউ বীচ-এ নোঙর ফেলে, তখন তারা দেখতে পায় কতগুলো বিশালাকার বন্য হাতি দূরে দাঁড়িয়ে আছে। যখন হাতিগুলো এরকম নীরব বনের মাঝে মানুষ দেখতে পেল, তখন তারা তাদের বিরাটাকার মাথাগুলো তুলে কুলার ন্যায় কানগুলো নাড়াতে থাকল, যেন তারা মানুষগুলোকে স্বাগত জানাচ্ছে।

    “ওহ, কী বিশাল জন্তু!” জুডিথ জাহাজের সামনে দাঁড়িয়ে হাতিগুলোকে দেখতে পেয়ে বলে উঠল।

    “সেই সাথে আমার দেখা অনেক মানুষের চেয়েও এরা বেশি চালাক।” অ্যাবোলি তার স্বাভাবিক গাম্ভীর্য ধরে রেখে যোগ করল।

    “আমরা এগুলোর কয়েকটাকে গুলি করে মারছি না কেন?” বিগ ডেনিয়েল বেশ আগ্রহভরে প্রস্তাব উত্থাপন করল। হাতির দাঁত-এর অনেক দাম, জানোই তো। ওগুলো দিয়ে আমাদের ভাগ্য ফিরে যেতে পারে।

    “আমরা এর চেয়ে সহজে অনেক গুপ্তধন পাব, ড্যান”, হাল তার মাথাটা ড্যান-এর দিকে নাড়িয়ে বলল। “আমার মনে হয় ওদেরকে শান্তিতে থাকতে দেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।”

    পুরনো দুর্গের ধ্বংসাবশেষ-এর কাছাকাছি এসে হাল তার গোল্ডেন বাউকে নোঙর করল। সবাইকে বন্দুক বের করে গ্রেপশট-এর গুলি লোড করতে আদেশ দিল সে যাতে করে বন্য কোনো উপজাতি বা অন্য কেউ যদি হঠাৎ করে আক্রমণ চালিয়ে বসে, তাহলে সেটা প্রতিহত করতে পারা যায়। এরপর সে জুডিথকে টেনে একপাশে নিয়ে এলো।

    “আমি চাই যে তুমি আমার সঙ্গে নৌকোয় না গিয়ে এখানে থাকবে। আমি না থাকলেও এখানে পঞ্চাশজন লোক থাকবে তোমার সঙ্গে। তারা তোমার দেখাশোনা করতে পারবে। তাছাড়া “তোমার এখন বিশ্রাম প্রয়োজন, পানসির বিরক্তিকর জার্নি তোমার জন্য ক্ষতির কারণ হবে।”

    “বাচ্চার জন্য হলেও আমাকে তাই করতে হবে।” তবে “আমাকে কথা দাও যে, তুমি যত শীঘ্রই সম্ভব ফিরে আসবে। আমি তোমার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করব”, জুডিথ বলল।

    হাল বার জনের একটা দল নিয়ে লংবোট-এ করে পাহাড়ের মধ্যখান দিয়ে বয়ে চলা উপনদীর মাঝ দিয়ে যাত্রা শুরু করল। যাত্রার শুরুর পরই তারা দেখতে পায় যে ধূসর চামড়ার বিশালাকার জম্ভগুলো তাদের দিক থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে বনের দিকে যাত্রা শুরু করেছে।

    লম্বা, সোজা একটা রাস্তা পার হওয়ার পর তাদেরকে একটা নদীর বাঁক ঘুরতে হলো। তখন হাল, অ্যাবোলি এবং ডেনিয়েল পাহাড়ের চূড়ায় একঝাঁক বেবুন দেখত পায় যেটা তাদের জন্য একটা নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।

    গোল্ডেন বাউ যেখানে নোঙর করা আছে সেখান থেকে প্রায় দশ মাইল দূরে তাদেরকে যেতে হয়। নদীর পানির ধারা আস্তে আস্তে সরু হতে থাকে। যদিও সময়ের সাথে পাহাড়ের চূড়া তাদের দিক থেকে দূরে সরে যাচ্ছে যেন থর দেবতা তার হাতুড়ি দিয়ে পাহাড় ভেঙে দূরে সরিয়ে দিয়ে গিয়েছে।

    “এই সেই জায়গা, মাস্টার ডেনিয়েল”, হাল অন্য নৌকোটির উদ্দেশ্যে বলল। এরপর নৌকোটা দক্ষিণ প্রান্তে ভেড়ানোর জন্য রাডার স্থাপন করল। তার বাবার স্মৃতি বিজড়িত পাথরটার সাথে নৌকোদুটো নোঙর করল সে।

    এরপর সেই লোকটির স্মৃতির উদ্দেশ্যে দুই মিনিট নীরবতা পালন করল সে যিনি তাকে জন্ম দিয়েছেন এবং তাকে এই কঠিন বন্ধুর পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য প্রস্তুত করেছেন। হাল চোখ খুলে তাকিয়ে দেখল অ্যাবোলি তার দিকে চেয়ে আছে।

    তারা পরস্পর দৃষ্টি বিনিময় করল, এরপর মাথা নাড়ল হাল; এখন কাজ শুরু করার সময় হয়েছে।

    হাল উঠে দাঁড়িয়ে দুটো রশির কয়েল তার কাঁধে ঝুলিয়ে রাখল। “আমি প্রথমে যাব, এরপর তুমি”, সে অ্যাবোলির উদ্দেশ্যে বলল। এরপর ডেনিয়েল এর দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি চারজনকে সঙ্গে নিয়ে নৌকোয় থাকবে। আমি এখান থেকে যা কিছু নামিয়ে দেব সেগুলো নৌকোয় রাখবে। বাকিরা সতর্ক দৃষ্টি রেখে চারদিক পাহাড়া দেবে, ঠিক আছে?”

    পাথরটার পাশে লাফ দিয়ে নামল হাল, তারপর আস্তে আস্তে উপরে উঠতে শুরু করল।

    “সাবধানে উঠ, গান্ডওয়েন”, অ্যাবোলি পেছন থেকে বলে উঠল। তাড়াহুড়োর কিছু নেই।

    হাল অ্যাবোলির কথা কানে তুলল না। হঠাৎ করেই সে নিজের ভেতর এক ধরনের তাড়না অনুভব করছে। এতদিন পর্যন্ত কী গুপ্তধনগুলো অরক্ষিত অবস্থায় আছে নাকি অন্য কেউ সেটা খুঁজে পেয়েছে?

    যদিও সে এখন পর্যন্ত পাথরের মুখে কোনো রাস্তা দেখতে পাচ্ছে না। সে উপরে উঠেই যাচ্ছে। আস্তে আস্তে নৌকোদুটো দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যাচ্ছে। একসময় গুহার মুখের পাথরগুলো খুঁজে পেল সে। পাথরগুলো আগের মতোই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন আছে ঠিক যেমনটা বহুবছর আগে সে আর অ্যাবোলি রেখে গিয়েছিল। তার মন আনন্দে ভরে উঠল। এরপর সে আস্তে আস্তে একটার পর একটা পাথর সরাতে থাকল।

    গর্তের মুখটা যখন যথেষ্ট বড় হয়ে গেল তখন সে হামাগুড়ি দিয়ে সেটার ভেতর প্রবেশ করল। আস্তে আস্তে গুহার ভেতর উঠে দাঁড়াল সে। গুহার ছাদটা অমসৃণ এবং বেশ নিচু। সে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল যতক্ষণ পর্যন্ত না তার চোখ অল্প আলোতে মানিয়ে চলতে সক্ষম হয়।

    আস্তে আস্তে মাথার উপরের দেয়াল হাতড়ে দেয়ালের পাশে রাখা মশালদুটো খুঁজে পায় সে। মশাল দুটো বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরল হাল; সে আর তার পিতা শেষবার এখানে আসার সময় এ দুটো জিনিস এখানে রেখে গিয়েছিল। ওর বাবার স্পর্শ লেগে আছে ওগুলোতে।

    গুহার মেঝেতে হাঁটুতে ভর দিয়ে বসে পড়ল হাল। স্টীলের পাত আর পাথর বের করে সে দুটোয় ঘষে মশালে আগুন জ্বালাল সে।

    হাল মশালের আলোতে গুহার চারদিকটা ভাল করে দেখতে থাকে।

    এখনো সবকিছু অক্ষত অবস্থায় রয়ে গিয়েছে। প্রত্যেকটা ব্যাগ, প্রত্যেকটা ব্যারেল, প্রত্যেকটা থলে এবং বাক্সগুলো একই রকমভাবে রয়ে গিয়েছে-ঠিক যেভাবে সে আর তার বাবা রেখে গিয়েছিল। রুপার পাত আর সোনার পিণ্ডগুলোও এখনো একই রকমই আছে।

    হাল বসে বসে তার বাবার সেই কথাগুলো মনে করতে থাকে।

    “ঈশ্বর আমাদের সবার জন্য মৃত্যু লিখে রেখেছেন। যখন আমার মৃত্যুর সময় আসবে তখন আমি প্রার্থনা করব আমার উত্তরাধীকার সূত্রে তুমি যেন এই গুপ্তধনের মালিক হও।”

    “এই গুপ্তধন প্রয়োজনের চেয়েও অনেক-অনেক বেশি, বাবা। এত বেশি সম্পত্তি দিয়ে আমি এখন কী করব?” হাল বেশ উচ্চস্বরে বলে উঠল। প্রায় সাথে সাথে আরেকটি কণ্ঠ জবাব দিল।

    “যেমন ধরো : ভিসকাউন্ট উইন্টারটন-এর কাছে গোল্ডেন বাউ-এর জন্য যে ঋণ রয়েছে তোমার সেটা সবার প্রথমেই শোধ করতে পারো। এরপর ইংল্যান্ড-এর ঝকঝকে উপকূল এলাকায় কয়েক হাজার একর ভূমি কিনতে পারো। সেখানে বাড়ি বানিয়ে তোমার ভালবাসার মানুষ এবং এক ডজন বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে সংসার শুরু করে দিতে পারো।”

    লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল হাল। পেছনে তাকিয়ে দেখল, অ্যাবোলি দাঁড়িয়ে আছে। সে এই বয়সে এতটা উপরে উঠার কারণে হাঁপাচ্ছে। হাল এগিয়ে গিয়ে ওকে আলিঙ্গন করল। এরপর দুজনে চুপচাপ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল, যেন তারা দুজন তাদের অন্তরের সমস্ত শ্রদ্ধা সেই লোকটির উদ্দেশ্যে নিবেদন করছে যে তার ছেলের ভাগ্য নিজের জীবন দিয়ে গড়ে দিয়ে গিয়েছে। তারা দুজন তার সেই অসহ্য যন্ত্রণার কথা মনে করতে থাকে যে মৃত্যুযন্ত্রণা ডাচ কলোনীর গভর্নর ভ্যান ডি ভেলডির আদেশে স্লো জন তাকে দিয়েছিল।

    “এই সম্পত্তিগুলোর জন্য উনার ঐ অমানুসিক নির্যাতন সহ্য করার কোনো প্রয়োজন ছিল, অ্যাবোলি?” হাল অবশেষে নীরবতা ভেঙ্গে জিজ্ঞেস করল।

    “তোমার পিতা তা-ই ভাবতেন।” অ্যাবোলি কাঁধ ঝাঁকাল। তিনি তার জীবন দিয়েছেন এই সম্পদের জন্য। এখন তোমার দায়িত্ব হচ্ছে তা গ্রহণ করা যেন তার ত্যাগ সার্থক হয়।

    “ধন্যবাদ, অ্যাবোলি”, হাল নরম সুরে অ্যাবোলির দিকে তাকিয়ে বলল। “আপনার এই উপদেশটুকু ছাড়া আমি হয়ত এই সম্পদ গ্রহণ করার সাহস পেতাম না। আর সেজন্য আমাকে সারাজীবন আফসোস করতে হত।”

    .

    সমস্ত গুপ্তধন আর সোনা-দানা পাহাড়ের চূড়া থেকে নামিয়ে নৌকোয় উঠাতে তাদের দুই দিন লেগে যায়। যখন সব নৌকোয় উঠানো শেষ হয়, তখন দেখা যায় নৌকোয় বসার জন্য কোনো জায়গা নেই বললেই চলে। তারপরও তারা কোনোভাবে নৌকোয় উঠে বসল। রাতটা কোনোভাবে কাটিয়ে পরদিন সূর্য উঠার পূর্বেই তারা বাউ-এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে দিল।

    গোল্ডেন বাউ যেখানে নোঙর করা আছে সেখান থেকে অল্প কিছু দূরত্বে থাকা অবস্থায় হঠাৎ করেই আকাশে বজ্রপাতের আওয়াজ শুনতে পেল ওরা। তারা সবাই চমকে গিয়ে আকাশের দিকে তাকাল। যদিও আকাশ মেঘে ঢেকে আছে কিন্তু ঝড়ের কোনো পূর্বাভাস নেই।

    “বজ্রপাত?” ডেনিয়েল চমকে উঠে চিৎকার করে অন্য নৌকোর উদ্দেশ্যে বলল।

    “না”, অ্যাবোলি চিৎকার করে পেছনের নৌকোকে জবাব দিল। “এটা বজ্রপাত নয়। কামানের গুলি।”

    “গোল্ডেন বাউ বিপদের সংকেত পাঠাচ্ছে!” হাল চিৎকার করে উঠল। “জাহাজটাকে নিশ্চয়ই কেউ আক্রমণ করেছে!”

    সে বুজার্ড নয়। যদি কেউ সেটা ভেবে থাকে তবে সে ভুল করছে। সে এখন পুরনো সেই অ্যাঙ্গাস কোকরান, আর্ল অব কামব্রা এবং নটনিয়ার নাইট অব দ্য টেম্পল অব দ্য অর্ডার অব দ্য জর্জ এন্ড দ্য হলি গ্রেইল। ঠিক যেমনটা হাল কার্টনি আর তার পিতা ছিল।

    তাদের মধ্যে পার্থক্যটা হচ্ছে এই যে তারা দুইজন নিজেদের সম্মান ও সুনামের ব্যাপারে বেশ সচেতন ছিল এবং ক্রিস্ট ও হলি গ্রেইলের জন্য যুদ্ধ করেছে সব সময়, অথচ অ্যাঙ্গাস কোকরান শুরু থেকেই জানতো যে এইসব হচ্ছে অর্থহীন মধ্যযুগীয় চিন্তা-ভাবনা। প্রিন্স জাহান যেভাবে তাকে মুখোশ পরিয়ে অপমান করেছিল এবং দাসত্ব মেনে নিতে বাধ্য করেছিল, ঠিক সেভাবেই, তারাও তাকে অপমান করার জন্য একটা নাম দিয়েছিল-বুজার্ড, যার অর্থ, তীক্ষ্ণ নাকওয়ালা বাজপাখি।

    কিন্তু এই বাজপাখির ন্যায় লম্বা নাকওয়ালা মুখোশই তাকে এখন শক্তিশালী করে তুলেছে। এটা তাকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে এনেছে। এটা তার নষ্ট হয়ে যাওয়া মুখচ্ছবিকে ঢেকে রেখেছে এবং তাকে রহস্যময় এক নতুন সৃষ্টিতে পরিণত করেছে। এটাই তার শত্রুর মনে ভয় ধরিয়ে দেয়। এই মুখোশই তাকে আরেকবার এর মতো শক্তিশালী যোদ্ধায় পরিণত করেছে।

    সে তার ফাঁদ পেতে দিয়েছে এবং হাল কার্টনিও ভালভাবেই সেই ফাঁদে পা দিয়েছে।

    কোকরান হয়ত তার একটি হাত, একটি চোখ এবং লিঙ্গের অধিকাংশ অংশ হারিয়ে ফেলেছে কিন্তু তার ব্রেইন এখনো কাজ করছে। তার ডান হাতের তলোয়ার এখনো মৃত্যুর পরোয়ানা জারি করার জন্য যথেষ্ট।

    গোল্ডেন বাউ-এলিফ্যান্ট লেগুন-এ পৌঁছার পর থেকেই মাদ্রি দি ডিয়াস যেকোনো মুহূর্তে আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে ছিল। এখন টপমাস্টম্যান তার স্টেশনে প্রস্তুত আছে, গানরা কামানে গুলি লোড় করে এর পেছনে অপেক্ষা করছে।

    বুজার্ড-এর স্পাইরা তাকে খবর দিয়েছে যে তারা দুটো পানসিকে গোল্ডেন বাউ থেকে ছেড়ে যেতে দেখেছে। পানসি দুটো লেগুন-এর চূড়ার দিকে গিয়ে নদী পথের বাঁকের আড়ালে হারিয়ে গিয়েছে। টেলিস্কোপ দিয়ে তারা হাল কার্টনি আর অ্যাবোলিকে চিনতে পারল। কিন্তু ফেরার সময় আর তাদেরকে দেখতে পায়নি ওরা। হয়ত রাতের বেলা পাহারাদার ঘুমিয়ে পড়েছিল একারণে দেখতে পায়নি।

    কিন্তু তাদেরকে না জানিয়েই ওরা এলিফ্যান্ট লেগুন ছেড়ে যেতে পারবেনা।

    অপেক্ষা করতে করতে চতুর্থ দিন সূর্য উঠার পূর্বে বুজার্ড তার ফাঁদ গুটিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সে তার নাবিকদেরকে নিয়ে রণতরী সাজিয়ে ইন্ডিয়ান সাগরে এলিফ্যান্ট লেগুন-এর প্রবেশ পথ দিয়ে এগুতে থাকে। সে মাদ্রি দি ডিয়াস-এর সম্মুখভাবে টেলিস্কোপ হাতে দাঁড়িয়ে থাকল। মুখোশ-এর ভেতর থেকে এক চোখের দৃষ্টি টেলিস্কোপ-এর ভেতরে নিবিষ্ট করে রাখল। সে দেখতে পেল, গোল্ডেন বাউ লেগুন-এর ভেতরের দিকে নোঙর করা আছে। এর গানপোর্টগুলো বন্ধ এবং মাস্তুলে কোনো পাল লাগানো নেই। জাহাজের ডেকটা খালি পড়ে আছে এবং মাস্তুলের চূড়ায় শুধু একজন পাহারাদারকে দেখা যাচ্ছে।

    একটা পানসি তীরে ভেড়ানো আছে। নাবিকেরা নিশ্চয়ই খাবার পানি সংগ্রহ করছে। আরেকটা পানসিতে করে নাবিকেরা আগুন জ্বালানোর কাঠ সংগ্রহ করছে। কয়েকজন নাবিক তীরে আগুন জ্বালিয়ে বসে বসে নাস্তা খাচ্ছে।

    সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে হাল লম্বা নদীপথ পাড়ি দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সে নিশ্চয়ই কেপ অফ গুড হোপ-এর পাশ দিয়ে আটলান্টিক সাগর হয়ে ব্রিটিশ দ্বীপে যাবে। কিন্তু তার নাবিকেরা এখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, তাই তিন মাস্তুল বিশিষ্ট যুদ্ধ জাহাজ নীরবেই এলিফ্যান্ট লেগুন-এর প্রবেশ পথ দিয়ে এগুতে লাগল।

    বুজার্ড ঘুরে দাঁড়িয়ে ক্যাপ্টেন বারোস-এর দিকে তাকিয়ে বলল, “ওদের উদ্দেশ্যে অন্তত একটা গুলির আওয়াজ করুন যেন বোকা বানরগুলো অন্তত সজাগ হতে পারে, প্লিজ, ক্যাপ্টেন।”

    বাবোস তার নিচে দাঁড়িয়ে থাকা গানার মাস্টার-এর উদ্দেশ্যে একটা হাততালি দিল। এরপর তীব্র কামানের শব্দ চারদিকে প্রতিধ্বনিত হতে থাকল।

    ব্রিটিশ নাবিকেরা হতবাক হয়ে মাদ্রি দি ডিয়াস-এর আগমন দেখতে থাকল।

    “গোল্ডেন বাউ-এর দিকে জাহাজ চালনা কর, বুজার্ড তার পরবর্তী আদেশ দিল। ওটাকে এখন সহজেই আক্রমণ করা যাবে। কারণ ওর নাবিকেরা এখন দূরে দূরে রয়েছে।” সে তার গলা পরিষ্কার করে আরও পরিষ্কার কণ্ঠে বলতে থাকল, “আমি কার্টনিকে চাই। তোমরা কী শুনতে পেয়েছ? কার্টনি যদি জাহাজের ওপর না থাকে তবে আমি তার স্ত্রীকে চাই।”

    জুডিথ নাজেত তার এবং হাল-এর কেবিনটাতে বসে বিশ্রাম করছিল। সে জানালার পাশে লেখার ডেস্কটাতে বসে ছিল। এমন সময় দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনতে পেয়ে তাকিয়ে দেখল যে মসি তার কোঁকড়া চুল নাড়িয়ে কেবিন-এ প্রবেশ করছে।

    “গুড মর্নিং, মাই কাইন্ড মিসট্রেস, আমি আপনার জন্য কফি নিয়ে এসেছি। চিনি এবং দুধ ছাড়া।”

    “ধন্যবাদ”, মসি। কিন্তু “তুমি কীভাবে জান যে আমি এটা পছন্দ করি?”

    “কারণ আপনি সবসময় এভাবেই কফি পান করেন।” সে চেহারায় একটা ঝকমকে হাসি ফুটিয়ে তুলে বলল। এটা তাদের নিত্য নৈমত্তিক অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। মসি সবসময়ই চুপচাপ কেবিন-এ প্রবেশ করে কফি হাতে জুডিথ-এর পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত না জুডিথ টের পায়।

    “আমি কী বাতিগুলো নিভিয়ে দেৰ, মাই লেডি?” সে হাত বাড়িয়ে মাথার উপরের বাতিগুলো নেভানোর জন্য উদ্যত হলো।

    “না থাক, ধন্যবাদ মসি। এখনো বাইরে বেশ অন্ধকার। সূর্যের আলো পুরোপুরি উঠেনি।”

    মসি মাথা নাড়াল এবং কপালের সামনের কেশগুচ্ছ সরাতে সরাতে কেবিন থেকে বের হয়ে গেল। জুডিথ নিজের মনে হেসে উঠল। সে ছেলেটিকে সত্যিই বেশ পছন্দ করতে শুরু করেছে। এরপর সে কলমের নিবটা কালির দোয়াতে ডুবিয়ে লিখতে শুরু করল, “ছোট্ট বর্বরটা আমার পেটে লাথি মারতে শুরু করেছে, সেই সাথে আমাকে সারা রাত জাগিয়ে রেখেছে ও। সে যখন বের হবে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখবে, কেবল তখনই আমি স্বস্তি পাব।”

    কামানের গুলির শব্দটা এতটা কাছে হলো যে মনে হচ্ছে, সে যে কেবিনে বসে আছে সেটাতেই শব্দটা হয়েছে। সে এতটাই চমকে যায় যে হাত থেকে কলম পড়ে গিয়ে কাগজে কালি ছড়িয়ে পড়ে। লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল সে।

    জুডিথ যেখানে বসে আছে জাহাজটি সরাসরি সেদিকেই এগিয়ে আসছে। কিন্তু জাহাজটি সে এর পূর্বে দেখেছে বলে মনে পড়ছে না। কিন্তু জাহাজের লোকদেরকে দেখে মনে হচ্ছে তারা যুদ্ধের ধামামা বাজিয়ে কোনো ক্ষতি সাধনের জন্যই এগিয়ে আসছে।

    জাহাজটাতে যুদ্ধের সবরকম প্রস্তুতিই দেখা যাচ্ছে। সব গানপোর্টই ভোলা দেখা যাচ্ছে। কামানের লম্বা নল বের হয়ে আছে।”

    জুডিথ-এক মুহূর্তও সময় নষ্ট না করে ডেস্ক-এর উপরের ড্রয়ারটা টান দিল। ওটাতে দুই জোড়া পিস্তল সাজানো আছে। একজোড়া পিস্তল সে কোমড়ের হলুদ ফিতায় আটকে রেখে আরেকজোড়া পিস্তল দুই হাতে নিয়ে গুলি করার জন্য উদ্যত হলো। এরপর কেবিন-এর দরজাটা পিঠ দিয়ে ধাক্কা দিয়ে খুলে ডেক-এর দিকে উঠতে শুরু করল।

    সে ডেক-এর ওপর পৌঁছার পূর্বেই তার পায়ের নিচে জাহাজটা কাঁপতে থাকল এবং এরপর আরও একটা শক্ত ধাক্কা লাগল ওর শরীরে। ক্রমাগত বন্য চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে আশেপাশে। সে দ্রুত ডেক-এর ওপর উঠে এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখতে থাকল।

    আরেকটা জাহাজ গোল্ডেন বাউ-এর পাশে দাঁড় করানো আছে। ওই জাহাজটা থেকে অনেক হুক বেরিয়ে ওটাকে বাউ-এর সাথে আটকিয়ে রেখেছে। গানেল-এর ওপর দিয়ে একটা লোকের মাথা দেখা যাচ্ছে। হাল-এর বর্ণনা শুনে-বিশেষ করে ওর মুখের কোণায় গোলাপি কাটা দাগ দেখে-সে লোকটাকে চিনতে পারল।

    সেই পর্তুগীজ জাহাজের মালিক যে জাহাজে করে হালকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, বিক্রি করে দেয়া হয়েছিল। লোকটির নাম জাও বারোস এবং জাহাজটির নাম হচ্ছে মাদ্রি দি ডিয়াস, সে এই মুহূর্তে নিশ্চিত যে বাউ-এর পাশে দাঁড় করানো জাহাজটিই হচ্ছে সেই জাহাজ।

    এরপর আর কোনোরকম চিন্তা-ভাবনা না করে ডান হাতে পিস্তলটা নিয়ে তাক করে গুলি ছুঁড়ে দিল জেনারেল জুডিথ নাজেত। গুলিটা গিয়ে বারোস-এর কপালের মাঝখানে আঘাত করল। বারোস এমনভাবে কেঁপে উঠল যে দেখে মনে হচ্ছে, গুলিটা তার মাথা ভেদ করে চলে গিয়েছে। বাতোস কাত হয়ে পড়ে যাওয়ার সাথে-সাথে তার মাথার জায়গায় আরেকটা মাথা ভেসে উঠল।

    এই মাথাটা হচ্ছে মানুষের চেহারা বিহীন একটা মাথা, যেখানে মুখের পরিবর্তে চামড়ার একটি মুখোশ পরানো আছে। মুখোশে একটিমাত্র চোখ আর ঈগলের ঠোঁটের মতো নাক রয়েছে। নাক-এর নিচে সাদা দাঁতের কতগুলো চিহ্ন আঁকা আছে যেগুলো দেখে মনে হচ্ছে যে সার্কাস-এর পাপেট শো করার জন্য কাউকে সাজানো হয়েছে।

    “বুজার্ড,” জুডিথ এমনভাবে বলে উঠল যে মনে হচ্ছিল তার হার্ট বন্ধ হয়ে গিয়েছে এবং সমস্ত শরীর প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছে। সে ডান হাতের ফাঁকা পিস্তলটা ফেলে দিয়ে বাম হাতের পিস্তলটা নেয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু বুজার্ড এত দ্রুত এগিয়ে এসে ব্লেডটা চালনা করল যে পিস্তলটা তার হাত থেকে ছিটকে দূরে সরে গেল। পিস্তলটা গড়াতে গড়াতে অনেক দূরে চলে গিয়েছে। সেই সাথে আঘাতের ফলে তার হাতটা যেন জমে বরফ-এ পরিণত হয়েছে। তাই সে হাত দিয়ে কোমড়ের ফিতায় আটকানো পিস্তলটা ধরারও চেষ্টা করল না। কারণ তাহলে হয়ত দানবটা তলোয়ার দিয়ে তার হাতই কেটে ফেলবে। যখন সে বুঝতে পারে যে সে বুজার্ড-এর তলোয়ার-এর নিচে আটকা পড়ে যাচ্ছে তখন সে আস্তে আস্তে পেছাতে থাকে। সিঁড়ি দিয়ে পেছন দিকে নামতে নামতে তার পা গাউনের নিচের অংশের ওপর গিয়ে পড়ে। হ্যাঁচকা টানের কারণে কোমড় থেকে পিস্তল দুটো খুলে মাটিতে পড়ে গেল। ওগুলোর একটা থেকে গুলি বের হয়ে কাঠের দেয়ালে গিয়ে লাগল।

    সে সিঁড়ির গোড়ায় পৌঁছে উপরে তাকিয়ে দেখতে পেল বুজার্ড অগ্নিমূর্তি ধারণ করে নিচে নেমে আসছে। কিন্তু সে অন্যান্য মানুষের চেয়ে বেশ উঁচু এবং তার কাধ বেশ চওড়া, তাই তাকে বানরের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে নামতে হচ্ছে।

    জুডিথ ঘুরে দাঁড়িয়ে তার কেবিন-এর দরজার দিকে দৌড়াতে থাকে। কেবিন-এ প্রবেশ করে সে ঝনাৎ করে দরজা বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা করল।

    কিন্তু ততক্ষণে বুজার্ড তীব্র গতিতে দরজার গায়ে ধাক্কা বসিয়ে দিয়েছে। ছিটকে বিছানার ওপর পড়ে গেল জুডিথ।

    বুজার্ড জুডিথ-এর মাথা বরাবর তলোয়ার দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করল কিন্তু জুডিথ গড়িয়ে অন্যপাশে সরে যাওয়ায় অল্পের জন্য শেষ রক্ষা হলো। বুজার্ড-এর তলোয়ারটা বিছানার কাঠের সাথে আটকে গেল। এক হাত দিয়ে তলোয়ারটা ছুটানোর চেষ্টা করতে-করতে মুখ দিয়ে নোংরা ভাষা ছুঁড়ে মারছিল সে।

    “নোংরা বেশ্যা, আমি তোর পেট কেটে ওটার ভেতর থাকা জারজটাকে বের করে আনব। এরপর আমি ওটাকে টুকরা টুকরা করে ফেলব। তারপর মাংসগুলো তোকে খাইয়ে দেব।” এখনো সে ব্লেডটা ছাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে, কিন্তু সফল হচ্ছে না।

    জুডিথ বিছানা থেকে গড়িয়ে নেমে সোজা হয়ে দাঁড়াল। তার কিছু একটা করা উচিত। কিন্তু এই মুহূর্তে তার হাতে কোনো অস্ত্র নেই এবং বুজার্ড একমাত্র দরজাটি আগলে দাঁড়িয়ে আছে। এখন তার একমাত্র পালাবার পথ হচ্ছে কেবিনের জানালা। সে যদি জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে সাগরে পড়তে পারে তাহলে অন্তত সাঁতরে তীরে উঠার একটা সুযোগ থাকবে।

    জুডিথ পাটাতনের কাছ থেকে সরে এসে জাহাজের স্টার্ন-এর দিকে এগুতে থাকে। বুজার্ড দেখতে পায় জুডিথ-এগিয়ে আসছে। তাই সে তলোয়ার-এর বাঁট ছেড়ে দিয়ে হাত দিয়ে জুডিথকে আটকাতে যায়। জুডিথের কাঁধ লক্ষ্য করে ঘুসি চালিয়েছে বুজার্ড, যেটা তার লক্ষ্য মিস করেনি। পিছলে নিজের ডেস্কের ওপর পড়ে গেল জেনারেল জুডিথ নাজেত। এরপর লাফ দিয়ে ডেস্কের ওপর উঠে দাঁড়াল বুজার্ড। সে তার তিন আঙুল বিশিষ্ট হাত দিয়ে জুডিথকে ধরতে গেল।

    “প্লিজ”, জুডিথ আর্তনাদ করতে থাকল, “আমার বেবীকে বেঁচে থাকতে দাও।”

    আর ঠিক তখনই সে মাথার পেছনে গরম কিছু একটা অনুভব করল। এক হাত উঠিয়ে সেটা থেকে বাঁচতে চাইলো সে। অয়েল ল্যাম্প-এর কাঁচের ফানেলের স্পর্শ লাগল হাতে, সেই সাথে আগুনের শিখায় হাতের চামড়ার কিছু অংশে ফোঁসকা পড়ে গেল। জুডিথ-এর মনে হঠাৎ করেই একটা আশা জেগে উঠল। সে তেলের পাত্রটা দুই হাত দিয়ে শক্তভাবে ধরে ব্র্যাকেট থেকে ছুটিয়ে আনল। এরপর শরীরের সমস্ত শক্তি ব্যবহার করে তেলের পাত্রটা দিয়ে বুজার্ড-এর মাথায় আঘাত করে বসলো জুডিথ।

    বুজার্ড-এর মাথায় আর সমস্ত শরীরে তেল ছড়িয়ে পড়ল। সাথে-সাথেই ধপ করে আগুন ধরে গেল ওর দেহে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আগুনের শিখা বুজার্ডের চামড়ার মুখোশকে পুড়িয়ে দিয়ে ওর ক্ষতবিক্ষত মুখকে আরো একটিবারের জন্য উন্মোচন করে দিল। পাগলের মতো লাফাতে লাফাতে পেছাতে চেষ্টা করল জুডিথ। একপর্যায়ে বিছানার ওপর হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল সে। বিছানার চাদরে আগুন লেগে গেল নিমিষেই। চোখের পলকেই সারা ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়ল।

    দরজা ফাঁকা পেয়ে দৌড়ে বের হয়ে এলো জুডিথ। সিঁড়ি দিয়ে উঠে ডেকের ওপর চলে এলো সে। খোলা ডেক-এর ওপর এসে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়ার পাশাপাশি ফোঁপাতে শুরু করল ও।

    একজোড়া শক্ত বাহু পেছন দিক থেকে এগিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে সিক্ত কণ্ঠে বলতে শুরু করল, “ঈশ্বরের দোহাই লাগে, তোমার কী হয়েছে তা কী একটু বলবে? তুমি এভাবে ফোপাচ্ছ কেন?”

    জুডিথ ঘুরে দাঁড়াল। হাল দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে। সাথে-সাথে হাল এর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল সে। “থ্যাংকস গড় যে তুমি এখানে চলে এসেছ! ও আমাকে আর আমার বেবীকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল!”

    “কে?”

    “বুজার্ড।”

    “কোকরান?” “সে এখন কোথায়? তাকে থামাতেই হবে।”

    “সে আমাদের কেবিন-এ আছে। কিন্তু জাহাজে আগুন ধরে গিয়েছে। আ…আমি দুঃখিত…এছাড়া তাকে থামানোর আর কোনো রাস্তা ছিল না আমার হাতে…”

    হাল আশেপাশে তাকিয়ে বিপদটা বোঝার চেষ্টা করল। সে তাকিয়ে দেখল যে আগত জাহাজটা তাদের জাহাজ থেকে দূরে চলে যাচ্ছে-যে পথে ওটা এসেছিল, ঠিক সেই পথে।

    “ওদেরকে চলে যেতে দাও”, হাল সিদ্ধান্ত নিল। “আগুন কোথায়? তুমি বলছিলে আমাদের কেবিনে।”

    জুডিথ দ্রুত মাথা নাড়াল। “হ্যাঁ, সত্যিই। আমাদের কেবিনে।”

    হাল জুডিথকে ছাড়িয়ে ঘুরে দাঁড়াল। “অ্যাবোলি! বিগ ড্যান! আগুন লেগেছে! আগুন নেভানোর ব্যবস্থা কর! জলদি!”

    .

    আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পুরো জাহাজের সব পাম্প, সমস্ত নাবিকের শ্রম আর পুরো অর্ধেকটা দিন লেগে গেল। অবশেষে হাল যখন জুডিথকে সাথে নিয়ে কেবিন-এর ভেতরে গেল তখনও ধোয়ার গন্ধ বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছিল। পুড়ে কুকড়ে যাওয়া মৃতদেহটা ওদের সামনেই বিছানার ওপর পড়ে আছে।

    “এটা কী বুর্জাড?” জুডিথ ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল। কিন্তু তাকে দেখতে বেশ ছোট মনে হচ্ছে।”

    “আগুন তার এই অবস্থা করেছে। হাল তার বাহু দিয়ে জুডিথকে জড়িয়ে ধরে বলল। “প্রথমবার সে কোকরান হিসেবে পুড়েছিল। এখন সে বুজার্ড হিসেবে পুড়েছে।”

    হাল-এর বাহুবন্ধনে মাথা রেখেও কাঁপছিল জুডিথ। তাই হাল তাকে নিয়ে বাইরে বের হয়ে এলো। সিঁড়ি দিয়ে ডেক-এর ওপর উঠতে থাকল সে। সিঁড়ির চুড়ায় বিগ ডেনিয়েল ফিশার অপেক্ষা করছিল।

    “আদেশ করুন। ক্যাপ্টেন।”

    “প্রথমত” হাল জবাব দিল, “নৌকো থেকে কার্গোগুলো নিরাপদে নামিয়ে জায়গামত রাখ।”

    গুপ্তধনের কথা বলায় সাথে-সাথে বিগ ডেনির মুখে হাসি ফুটে উঠল।

    “আই, আই, ক্যাপ্টেন। এরপর কী করতে হবে বলুন।”

    “কাঠুরেদের বল পুড়ে যাওয়া কেবিনটা ঠিকঠাক করতে। এবার তাদেরকে বলবে যে তারা যেন সাদা রং করে। আমি আর জুডিথ আকাশী রং দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।”

    ডেনি হাল-এর আদেশ অনুযায়ী কাজ করতে চলে গেল। এরপর হাল জুডিথ-এর দিকে ঘুরে দাঁড়াল, সেই সাথে তার হাত ধরে পুপ ডেক-এর ওপর নিয়ে এলো। এখন একমাত্র এই জায়গাটিতেই তারা একটু নীরবে সময় কাটাতে পারবে।

    তারা দুজন রেলিং-এ হেলান দিয়ে দাঁড়াল। জুডিথ হাল-এর কাঁধে মাথা রেখে দাঁড়িয়ে রইলো। কয়েক মুহূর্ত কেউ কোনো কথা বলল না। অবশেষে একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আস্তে ধীরে কথা বলতে শুরু করল জুডিথ।

    “গ্রেইল রক্ষা পেয়েছে। আমার দায়িত্ব শেষ। আমি যুদ্ধ করতে করতে আর হত্যাযজ্ঞ দেখতে দেখতে ক্লান্ত। আমাদের জন্য কী এমন কোনো জায়গা খুঁজে নিতে পারবে না যেখানে তুমি, আমি আর আমাদের সন্তান বাকি জীবনটা শান্তিতে কাটিয়ে দিতে পারব?”

    “তুমি এইমাত্র যে জায়গাটার কথা বললে, ওটার নাম হাই ওয়েল্ড,” হাল শব্দ করে হেসে বলল।

    “হাই ওয়েল্ড? কী অদ্ভুত নাম রে বাবা! কী এটা? আর এটা আছেই বা কোথায়?”

    “ইংল্যান্ডের দক্ষিণেই আছে। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর জায়গা বলতে পায়রা ওটাকে। আমার পূর্বপুরুষের বাড়ি।”

    “আমাকে এখুনি সেখানে নিয়ে চল! যত তাড়াতাড়ি সম্ভব! আমি আর একমুহূর্তও এখানে থাকতে চাই নে!” “প্লিজ!” হাল-এর বাহুর মধ্যেই ঘুরে দাঁড়িয়ে ওকে আরও শক্তভাবে জড়িয়ে ধরল জুডিথ।

    1 2 3 4 5 6 7 8
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদামেস্কের কারাগারে – এনায়েতুল্লাহ্ আলতামাশ
    Next Article অ্যাডগার অ্যালান পো রচনাসমগ্র / অনুবাদ : জাকির শামীম
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }