Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    গৌরীপুর জংশন – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প59 Mins Read0
    ⤶

    ০৬. ইস্টিশনে পা দিয়ে জয়নাল হকচকিয়ে গেল

    ইস্টিশনে পা দিয়ে জয়নাল হকচকিয়ে গেল। অনেক পুলিশ। রেলওয়ে পুলিশ না। রেলওয়ে পুলিশ আনসারেরও অধম, আসল পুলিশ। জয়নালের বুক ছাঁৎ করে উঠল। তবে প্রায় সঙ্গে-সঙ্গেই আশ্বস্ত হল। তার সামান্য চুরির ব্যাপারে এত পুলিশ আসবে না। অন্য কোন ব্যাপার। জানা গেল হিরণপুর স্টেশনের কাছে মালগাড়ি থেকে দশ বস্তা চিনি চুরির তদন্ত হচ্ছে। দারোগা সাহেব খোঁজ-খবর করতে এসেছেন। আসামীদের একজন ধরা পড়েছে, সে গৌরীপুর স্টেশনের নম্বরী কুলি। ওসি সাহেবের ধারণা অন্যদেরও যোগ থাকতে পারে। সবাইকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

    জয়নালকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে ডাকা হল। রেলওয়ে পুলিশের হোট ঘরে এক-এক করে ডাকা হচ্ছে, এবং জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ কী যন্ত্রণায় পড়া গেল। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের নমুনা সে জানে। পুলিশ আদর করে কখনো কিছু জিজ্ঞেস করে না। প্রশ্ন করার আগে পেটে রুলের একটা গুঁতা দেয়। প্রশ্ন শেষ হলে আরেকটা দেয়। কে কী বলল, না বলল তাতে কিছু আসে যায় না। সত্যি বললেও গুঁতা মিথ্যা বললেও গুঁতা।

    ওসি সাহেব বললেন, তোমার নাম জয়নাল না?

    জয়নাল ওসি সাহেবের স্মৃতিশক্তি দেখে মুগ্ধ হয়ে গেল। সেই কবেকার কথা এখনো মনে আছে। এই না হলে থানার ওসি।

    জয়নাল নাতোমার নাম?

    জ্বি, স্যার।

    ওয়াগনে লুটের সময় তোমার সাথে আর কে কে ছিল?

    জয়নাল বিনয়ে ভেঙে পড়ে বলল, হুজুরের যখন আমার নামটা স্মরণ আছে তখন আমার পাওডার অবস্থাও নিশ্চয়ই স্মরণ আছে। এই পাও নিয়া আমি ওয়াগন লুট। করতে পারলে তো কামই হইছিল। হুজুর পাওডার অবস্থা নিজের চোখে দেখেন।

    জয়নাল লুঙ্গী সরিয়ে পা দেখাল। তাতেও ওসি সাহেবের বিশেষ ভাবান্তর হল না। তিনি কঠিন গলায় বললেন, লুটের মালের ভাগ তো ঠিকই পাইছস। নূতন শার্ট নূতন স্যান্ডেল।

    এইগুলো হুজুর বকশিশের টেকায় কিনা। বকশিশের টাকা?

    জ্বি, হুজুর। আপনে মা-বাপ, আপনের কাছে মিথ্যা বইল্যা লাভ নাই। এক প্যাসেঞ্জারের ছোড বাচ্চা কানতেছিল। তার দুধের জন্যে গরম পানি আইন্যা দিলাম। বাচ্চার মা খুশি হয়ে এক শ টেকা বকশিশ করল।

    এক শ টাকা বকশিশ?

    বড়লোকের কারবার। টেকা পয়সা এরার হাতের ময়লা। আমার কথা যদি হুজুরের বিশ্বাস না হয় কোরান শরীফ আনেন। মাথার উপরে কোরান শরীফ রাইখ্যা তারপর বলব।

    আচ্ছা যা ভাগ।

    স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে জয়নাল বের হল। বিরাট বড় একটা ফাঁড়া কেটেছে। আরেকটু হলে ফেঁসে গিয়েছিল।

    ওসি সাহেব যদি বলতেন কার কাছ থেকে গরম পানি আনলে? তাহলেই সর্বনাশ হয়ে যেত। মিথ্যা কথা বেশিক্ষণ বলা যায় না। একের এর এক মিথ্যা বলতে থাকলে জিয়া ভারী হয়ে যায়। তোতলামি এসে যায়। একবার তোতলামি এসে গেলে আর দেখতে হত না। জয়নাল বজলুকে খুঁজে বের করল। কী অদ্ভুত ব্যাপার। সে তাকে যেখানে বসিয়ে রেখেছিল সেখানেই বসে আছে। গাধা না-কি ছেলেটা? এই ছেলে টিকবে কী করে? এর কপালে দুঃখ আছে।

    কিছু খাইছ? ঐ বজলু।

    না।

    খাস নাই ক্যান?

    বজলু মাথা নিচু করে আছে। তার বগলে ভাঁজ করা কম্বল। কম্বল সে হাতছাড়া করে নি। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে জীবন দিয়ে দেবে তবু সে কম্বল দিবে না।

    টেকা তো একটা তোরে দিছিলাম। বলছিলাম কী? এক ছটাক বাদাম কিন্যা দুই গেলাস পানি খাইলে ক্ষিধা শেষ। বাদাম কিনলি না ক্যান।।

    বজলু কিছু বলল না। তবে এখন তার চোখ চকচক করছে। মনে হচ্ছে জয়নালকে আবার দেখতে পেয়ে তার বুকে হাতির বল ফিরে এসেছে। জয়নালকে সে দেখতে পাবে এই আশা সে প্রায় ছেড়েই দিয়েছিল। অনেকক্ষণ ফুপিয়ে কেঁদেছেও অজানা সব দুঃশ্চিন্তাতে সে অস্থির ছিল। ক্ষিধের কথা তার মনেই হয় নি। এখন ক্ষিধেয় চোখ অন্ধকার হয়ে আসছে।

    চল যাই—ভাত খাই। আইজের দিন যত মন চায় খাইবি। কাইল থাইক্যা ঠনঠঠন।

    বজলু ক্ষীণ স্বরে বলল, আফনেরে খুঁজতেছে।

    কে খুঁজতেছে?

    হাশেম। সর্দার হাশেম।

    তুই চিনস তারে?

    জ্বি।

    আমারে খুঁজে ক্যান। বিষয় কি? কিছু কইছে?

    না।

    কিছুই কয় নাই?

    না।

    জয়নালের মন আবার অস্বস্তিতে ভরে গেল। কিছু কি টের পেয়েছে? ইস্টিশনে। থাকাও এক যন্ত্রণা। দুশ্চিন্তায় জয়নাল খালোমলত খেতে পারল না। বজলু খুব আরাম করে খাচ্ছে। অনেকদিন পর এই প্রথম বোধ হয় ভাত খাওয়া। কেমন চেটে পুটে খাচ্ছে।

    আর চাইটা ভাত নিবি?

    না।

    শরম করিস না। ক্ষিধা থাকলে ক। দিব আর এক হাফ?

    জ্বি।

    আরে ব্যাটা, তুই জ্বি কোনখানে শিখলি? কথায় কথায় জ্বি। ইসকুলে পড়ছস? বজলু হা-সূচক মাথা নাড়ল।

    কোন কেলাসে ছিলি?

    ফোর।

    ইসকুলে পড়তে মন চায়?

    জ্বি।

    মন চাইলেই তো আর হয় না ব্যাটা। ভাইগ্যের ব্যাপার। ভাইগ্যে থাকলে হয়। না থাকলে হয় না। এই সব নিয়া মন খারাপ করিস না। পেট ভইরা ভাত খা। এই পুলারে আর এক হাফ ভাত দেও। ডাইল দেও। বজলু কাঁচামরিচ দিয়া ডলা দে।

    স্টেশনে ফিরে জয়নাল ভয়াবহ সংবাদ পেল। পুলিশ পাঁচজনকে ধরে নিয়ে গেছে তার মধ্যে একজন হচ্ছে মালবাবু। কী সর্বনাশের কথা। পুলিশ হাশেমকেও খুঁজছে। হাশেম পলাতক। পুলিশের এসপি এসেছেন ময়মনসিংহ থেকে। জেলা পুলিশের বড় কর্তা। এদের দেখতে পাওয়া ভাগ্যের কথা। স্টেশন মাস্টারের ঘরে তিনি বসে আছেন। জয়নাল এক ফাঁকে জানালার ফাঁক দিয়ে দেখে এল। দেখতে ভদ্রলোকের মতো—চুক চুক করে চা খাচ্ছেন।

    জয়নাল বজলুকে উঁচু করে দেখাল। ছেলেমানুষ দেখতে না পেলে মনে একটা আফসোস থাকতে পারে। একজন কনস্টেবল ছুটে এসে বলল, ভিড় করবেন না খবৰ্দার। জানালার কাছ থেকে সরতে মন চাচ্ছে না। এসপি সাহেব এখন কি সুন্দর রুমাল দিয়ে ঠোঁট মুছছেন। এই দৃশ্য দেখার ভাগ্য কয়জনের হয়।

     

    স্টেশনে বেশিক্ষণ থাকা নিরাপদ মনে হচ্ছে না। জয়নাল বজলুকে নিয়ে ঘুমটি ঘরের দিকে রওনা হল রমজান ভাইয়ের কাছে যাওয়া যাক। মনটা ভালো নেই। মালবাবুকে ধরে নিয়ে গেছে। মারধর করেছে কিনা কে জানে। ভদ্রলোকদের পুলিশ নিশ্চয়ই মারধর করে না। কিংবা কে জানে হয়ত করে। পুলিশ হচ্ছে পুলিশ। এদের কি আর মান্যগণ্য আছে?

    রমজান ঘরেই ছিল। তাকে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে। দরজায় জয়নালের ছায়া দেখেই আঁতকে উঠে বলল, কে কে?

    আমি, রমজান ভাই, আমি।

    ইস্টিশনের খবর কি-রে জয়নাল?

    সাড়ে সব্বনাশ রমজান ভাই। ভালো ভালো লোক সব ধইরা নিয়া যাইতাছে। মালবাবুরে ধরছে।

    এই খবর হনছি। নূতন কি খবর?

    এসপি সাব আইছেন। চা খাইতে-খাইতে রুমাল দিয়া ঠোঁট মুছছেন। চেহারা সুরত সুন্দর।

    বড় চিন্তার বিষয় হল জয়নাল।

    রমজানের ঠোঁটমুখ শুকিয়ে গেল। তার এত চিন্তার কী আছে জয়নাল বুঝতে পারল না।

    সিগ্রেট খাইবেন রমজান ভাই?

    দে দেহি।

    এই প্রথম রমজান কোনোরকম আপত্তি ছাড়াই সিগারেট নিল। চিন্তিতমুখে সিগারেট টানতে লাগল। একবারও বলল না, নিজের পয়সার জিনিস ছাড়া খাই না-রে জয়নাল।

    জয়নাল কাছে আয় তোরে কানেকানে একটা কথা কই।

    জয়নাল এগিয়ে গেল। রমজান ফিসফিস করে বলল, আমি সব জানিয়ে জয়নাল সব জানি।

    কি জানেন?

    ওয়াগন কে লুট করছে এই বিত্তান্ত। একজন খুন হইছে। পুলিশ জানছে গত কাইল–আমি জানি দুই দিন আগে।

    কন কী।

    জানলে তো লাভ নাই। কারে বলব এইসব কথা? পুলিশেরে বললে পুলিশ সবের আগে ধরব আমারে।

    খাঁটি কথা।

    রমজান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে করুণ গলায় বলল, চিন্তা ভাবনা অখন কিছুই করতে পারি না। তুই অত বড় একটা সমস্যা দিলি-মানুষ জাতির লেজ নাই। কেন? এই সমস্যা নিয়াও বসতে পারতেছি না। চিন্তা করতে বসলেই সব আওলাইয়া যায়।

    থাউক পরে চিন্তা করবেন।

    একটা জন্তু অবশ্যি পাইছি যার লেজ নাই–যেমন ব্যাঙ।

    ছোট অবস্থায় থাকে বড় অবস্থায় থাকে না। চিন্তা কইরা দেখলাম ব্যাঙের সাথে মানুষের মিলও আছে—ব্যাঙ যেমন বেহুদা লাফায়, মানুষও লাফায়! ব্যাঙ যেমন বড়বড় ডাক ছাড়ে মানুষও ডাক ছাড়ো আরো চিন্তা দরকার। এখন তুই যা। মাথা আওলা হইয়া আছে।

    জয়নাল চলে যাবার জন্যে পা বাড়িয়েছে, রমজান আবার ডাকল, খুনটাকে করছে শুইন্যা যা। কাছে আয়—এইসব কথা কানেকানে বলা লাগে।

    জয়নাল এগিয়ে এল।

    খুনটা করছে হাশেম। একবার মানুষ মারলে আরেকবার মারা লাগে। মাইনষের রক্তের মধ্যে নিশার জিনিস আছে। একবার রক্ত দেখলে জবর নিশা হয় তখন আরেকবার দেখতে মন চায়। তারপর আবার তারপর আবার। পরথম খুন হইল কে?- মুবারক। হেই খুন আমার নিজের চউক্ষে দেখা। কাউরে কিছু বলি নাই। বলাবলি কইরা কী লাভ। শুধু নিজের মনে চিন্তা করছি। এখন বললাম তোরে। একজন কাউরে বলতে হয়। না বললে মাথা ঠিক থাকে না। তরে যে বললাম অহন মাথা ঠিক হইছে। তোর মাথা বেঠিক হইল। করণের কিছু নাই। যা আমার কথা শেষ। অহন নিশ্চিন্ত মনে একসিডেন বাজায়ে দিমু

    একসিডেন বাজাইবেন?

    হুঁ। আইজ রাইতেই ঘটনা ঘটব। দেরি কইরা লাভ নাই। পুলিশের এসপি সাব যখন আছে সুবিধাই হইল ইনার চউক্ষের সামনে ঘটনা ঘটব। হি-হি-হি।

    জয়নাল হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। রমজান ভাইয়ের মাথা মনে হচ্ছে পুরোপুরিই খারাপ হয়ে গেছে।

    ঘটনা আইজরাইতে ঘটব রে রমজান। আইজআবার পূর্ণিমা পড়ছে। দুইয়েদুইয়ে চাইর।

    আপনের মাথা পুরাপুরি গেছে রমজান ভাই।

    আমার একলার তো যায় নাইরে জয়নাল। মাথা সকলের একসাথে গেছে। মাথা কারো ঠিক নাই। হিহিহি।

    রেল লাইনের স্লিপারে পা রেখে দ্রুত স্টেশনের দিকে ফিরছে জয়নাল। পেছনেপেছনে বজলু আসছে। কুয়াশায় চারদিক ঢাকা। সেই কুয়াশা চাঁদের আলোয় চিকচিক করছে। কুয়াশা ভেদ করে সিগন্যালের লাল আলো চোখে আসে। যেন এক চোখওয়ালা কিছু কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। কোনো বিশেষ ঘটনার জন্যে অপেক্ষা করছে সবাই। কি সেই ঘটনা কে জানে।

    কে যায়? জয়নাল ভাই না?

    জয়নাল থমকে দাঁড়াল। অন্ধকার ফুড়ে কে যেন বের হয়ে আসছে হাশেম। লাইনের উপর ঘাপটি মেরে বসেছিল। তার জন্যই কি বসেছিল? জয়নাল থমত খেয়ে বলল, কে হাশেম ভাই? শইল ভালা?

    হুঁ। শ‍ইল ভালা। আপনের কাছে সিটে আছে জয়নাল ভাই? শীত পড়ছে জবর।

    জয়নাল সিগ্রেট দিল। তার হাত কাঁপছিল। সেই কাঁপা হাতেই সে দিয়াশলাই জ্বালিয়ে সিগারেট ধরিয়ে দিতে গেল তখন চোখে পড়ল হাশেমের হাতে একটা লোহার রড যার মাথাটা সূচালো। জয়নালের গা দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেল।।

    গায়ে নতুন শার্ট দেখছি জয়নাল ভাই।

    পচিশ টেহা দিয়া কিনলাম। একজন বকশিশ দিছিল। তার বাচ্চার জন্য গরম পানি আইন্যা দিলাম। হেই কারণে বকশিশ।

    হাশেম সহজ গলায় বলল, হাজার টেহা দামের জিনিস। আড়াই শ টেকায় বেচলেন। দাদাম করা লাগে। দুনিয়া ভর্তি ঠগ।

    এই প্রচণ্ড শীত, অথচ ঘামে তার সর্বাঙ্গ ভিজে যাচ্ছে। সে অসহায়ভাবে একবার তাকাল বজলুর দিকে। বজলু একদৃষ্টিতে লোহার রডের দিকে তাকিয়ে আছে।

    হাশেম সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে বলল, জয়নাল ভাই যা করছেন করছেন এইটা আমি ধরি না রমজান আপনেরে কি বলব ঠিকঠাক কন।

    কিছু বলে নাই।

    কিছুই বলে নাই? আমি তো জানি যেই তার কাছে যাইতাছে তারেই সে কানেকানে কথা বলতেছে আমি না-কি খুন করছি। সে না-কি দেখছে।

    পাগল মানুষ ইনার কথা ঠিক না।

    পাগল কে কইল? অতি চালাক। আরেকটা কথা কই জয়নাল ভাই। আপনে লোকটাও চালাক।

    জয়নাল হাসার চেষ্টা করল। হাসলে পরিস্থিতি খানিকটা হালকা হতে পারে। হাসি এল না। কাশির মত একটা শব্দ হল। সেই শব্দে সে নিজেই চমকে উঠল।

    জয়নাল ভাই?

    জ্বি।

    এতক্ষণ রমজানের লগে ছিলেন কোন কথাবার্তা হইল না।

    উনারে একটা সমস্যা দিছিলাম হেই সমস্যা নিয়া আলাপ করলাম।

    কি সমস্যা?

    সবজন্তুর লেজ আছে। মানুষের নাই—এইটা নিয়া একটা আলাপ। বাঘ, ভালুক, সিংহ, তারপর ধরেন গিয়া টিকটিকি সবের লেজ আছে। খালি ব্যাঙ-এর নাই। এই জন্যই ব্যাঙের সাথে মানুষের বেজায় মিল। ব্যাঙ খামাখা লাফালাফি করে বড়-বড় ডাক ছাড়ে মানুষও এই রকম।

    হাশেম ঠাণ্ডা গলায় বলল, জয়নাল ভাই আপনে লোকটা বেজায় চালাক।

    আপনেও চালাক।

    তা-ও ঠিক তয় জয়নাল ভাই শুধু চালাকিতে কাম হয় না। শক্তি লাগে। যান ইস্টিশনে যান। ইস্টিশনে গিয়া আরাম কইরা ঘুমান, আপনের ঘুম দরকার।

    জয়নাল নড়ে না। একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে।

    লোহার রড হাতে ঘুমটি ঘরের দিকে এগিয়ে যায় হাশেম। জয়নাল কী করবে? চিৎকার করে করে লোক জড় করবে? নাকি ইস্টিশনে গিয়ে শুয়ে পড়বে? আল্লাহ পাক তাঁর ইচ্ছামতো দুনিয়া চালান—কোনো কিছু করে সেই ইচ্ছাকে বাধা দেয়া কি ঠিক? কী করবে সে? স্টেশনে গিয়ে এসপি সাহেবকে কি বলবে-জনাব আপনেরে একটা কথা বলতে চাই। গোপন কথা। এসপি সাহেব কি শুনবেন তার কথা। সে কে? সে কেউ না। ইস্টিশনে পড়ে থাকা একজন পঙ্গু মানুষ।

    রেল লাইনের স্লিপারে পা দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে জয়নাল। তার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকে বজলু। বজলুর বগলে ভাঁজ করা কম্বল। যে কম্বল তাকে দিয়েছিলেন মালবাবু। বড় ভালো লোক ছিলেন।

    ট্রেন আসছে। ঝিক-ঝিক শব্দ হচ্ছে। লাইনে তার কাঁপন বোঝা যায়। চিটাগাং মেইল। গৌরীপুর-ময়মনসিংহ হয়ে এই ট্রেন যায় বাহাদুরাবাদঘাট পর্যন্ত। এই ট্রেন প্রতিরাতেই আসে। ট্রেনের শব্দ মিশে আছে তার রক্তে। এটি এমন নতুন কিছু নয়। সকাল থেকেই জয়নালের মনে হচ্ছে আজকের দিনটি অন্যরকম।

    খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে ট্রেনের শব্দে জয়নাল ভেতর থেকে চমকে উঠল। তার হঠাৎ করে কান্না পেয়ে গেল। অনেকদিন সে কাঁদে না। আজ তার কাঁদতে ইচ্ছা করছে। বাপজানের কথা, শাহেদার কথা এবং অনুফার কথা ভেবে একটু চোখের পানি ফেললে কেমন হয়?

    জয়নালের চোখে পানি এসে যায়।

    বজলু নিচু স্বরে বলে, আপনে কানতেছেন?

    জয়নাল শার্টের হাতায় চোখ মুছে গাঢ় স্বরে বলল, না কান্দি না। কান্দনের কী আছে? কান্দনের কিছুই নাই। বাপজান যেদিন মরল সেই দিনও কান্দি নাই আর আইজ কান্দব?

    কিন্তু জয়নাল কাঁদে। ফুপিয়ে-ফুপিয়ে কাঁদে। ভেজা চোখে তাকিয়ে থাকে। ইস্টিশনের দিকে। মরবার সময় এই ইস্টিশনের হাতেই তার বাপজান তাকে তুলে দিয়ে গিয়েছিলেন।

    জয়নাল হাঁটতে শুরু করে।

    এত কাছে গৌরীপুর জংশন, তবু মনে হয় অনেক দূর। যেন এই জীবনে সে সেখানে পৌঁছতে পারবে না।

    জয়নালকে ঘিরে একদল পতঙ্গ ওড়াউড়ি করে।

    মানুষ যেমন এদের বুঝতে পারে না, এরাও হয়তো মানুষকে বুঝতে পারে না।

    কে জানে মানুষকে দেখে পতঙ্গরাও বিস্ময় অনুভব করে কি না?

    ⤶
    1 2 3 4 5 6
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleচক্ষে আমার তৃষ্ণা – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article কুটু মিয়া – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }