Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ঘনাদা সমগ্র ১ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    প্রেমেন্দ্র মিত্র এক পাতা গল্প646 Mins Read0

    ঘড়ি

    মোহনবাগান বনাম ইস্টবেঙ্গলের চ্যারিটি ম্যাচের চার-চারটে হোয়াইট গ্যালারির টিকিট আগে থাকতে কেনা থাকা সত্ত্বেও ঢাকা, বরিশাল, হুগলি ও বর্ধমান জেলার চারিটি সুস্থ সবল উগ্র ক্লাবপ্রেমিক যুবক, আষাঢ় মাসের একটা আশ্চর্য রকম খটখটে বিকেলে ঘরে বসে কাটিয়েছে, এমন কথা কেউ কখনও সুস্থ মস্তিষ্কে বিশ্বাস করতে পারে?

    জানি তা পারা সম্ভব নয়, তবু এই অবিশ্বাস্য ঘটনা আমাদের জীবনে ঘটেছে বলে তার কাহিনী অত্যন্ত লজ্জিত ভাবে নিবেদন করছি। ঘনাদার সঙ্গে যাদের পরিচয় হয়নি এবং ঘনাদার মতো অঘটনঘটন কুশলী অসামান্য ব্যক্তি যাদের মেসে নাই, তাদের কাছে এ কাহিনী বলা যে বৃথা বাক্য ব্যয় তা অবশ্য জানি।

    ঘনাদা যে দিনকে রাত করতে পারেন এবং অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারেন, একথা তারা জানবে কী করে? সওয়া পাঁচটায় খেলা আরম্ভ, কিন্তু সেদিন আমরা পরস্পরকে তাগাদা দিতে শুরু করেছি বেলা বারোটা থেকেই। টিকিট আগে থাকতে কেনা থাকলে কী হয়, টিকিট যারা কিনে রেখেছে, গেটে তাদের ভিড়ও তো কম নয়। সেই ভিড় ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই যদি খেলা শুরু হয়ে যায়, তা হলে তখন খেলা দেখব, না সিটের নম্বর খুঁজে বেড়াব?না, যেতে যদি হয়, আগে যাওয়াই ভাল। সর্বসম্মতিক্রমে এই প্রস্তাব গ্রহণ করে আমরা ক্ষণে-ক্ষণে পরস্পরকে উৎসাহিত যেমন করেছি, নজরও রেখেছি তেমনই এ ওর ওপরে।

    আমাদের গৌর বড় বেশি ঘুমকাতুরে। দুপুরে খাওয়ার পর একটু গড়িয়ে নেওয়া তার চাই-ই, আর একবার গড়ালে কত বেলা পর্যন্ত তা যে গিয়ে ঠেকবে তার কোনও ঠিক নেই। তাই শিবু তাকে পাহারা দিয়েছে। আধ ঘণ্টা, পনেরো মিনিট অন্তর জিজ্ঞাসা করছে, কীরে গৌর, জেগে আছিস তো?তারপর গৌরের ক্রমশ সংক্ষিপ্ত ও উত্তরোত্তর উষ্ণতর প্রতিবাদ শুনে বলেছে, দেখিস, ঘুমোসনি যেন?

    শিবুর ওপর আবার পাহারায় রাখতে হয়েছে শিশিরকে। শিবুর বড় ভুলো-মন। ঠিক বেরুবার সময় রাস্তায় বেরিয়ে সে হয়তো বলবে, ওই যা, মনি ব্যাগটা ফেলে এসেছি, কিংবা নিদেন পক্ষে বলবেই, দাঁড়া ভাই-ঘরের জানালাটা বন্ধ করে আসি, নইলে বৃষ্টিতে সব ভিজে যাবে।

    শিশির তাই মিনিটে-মিনিটে শিবুকে সাবধান করেছে, কোনও কিছু ভুল যেন তার না হয়। শিশিরের ওপর আবার নজর রাখতে হয়েছে আমাকে। কোনও কিছু দরকারি। কাজে বেরুবার ঠিক আগের মুহূর্তে তার একটা কিছু হারাবেই। হয় এক পাটি জুতো সে খুঁজে পাবে না, কিংবা পাঞ্জাবির বোতাম তার কোথায় যে আছে মনে করতে না পেরে নিজের ও আমাদের সকলের টেবিল দেরাজ ঘেঁটে সে তছনছ করবে।

    ওদের সকলকে পাহারা দেওয়া সত্যি দরকার। কিন্তু আমাকে অমন ক্ষণে-ক্ষণে বিরক্ত করার সত্যি কোনও মানে হয়? ওদের ধারণা—কোথা থেকে এ-ধারণা হল তা জানি না–আমার নাকি সময়ের কোনও জ্ঞান নেই। এক-আধ ঘণ্টা এদিক-ওদিক কখনও কখনও আমার হয় না এমন কথা বলছি না, কিন্তু তাই বলে পনেরো মিনিট অন্তর ঘড়িটা একবার দেখুন দিকি! অথবা, ক-টা বাজল খেয়াল আছে? শুনতে কার ভাল লাগে।

    বিরক্ত হয়ে শেষে ঘড়িটাই আমি গৌরের বিছানার ওপর ফেলে দিয়ে বলেছি, ঘড়িটা নিজের কাছেই রাখো না, ক-টা বাজল তা হলে আর মিনিটে মিনিটে জিজ্ঞেস করতে হবে না!

    ঠিক সেই মুহূর্তে ঘনাদা ঘরে ঢুকে গম্ভীরভাবে মাথা নেড়ে বলেছেন, উহুঃ, ঠিক হচ্ছে না, ঠিক হচ্ছে না ওটা।

    কী ঠিক হচ্ছে না, ঘনাদা—অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করেছি আমরা।

    ঘনাদা তখখুনি কোনও জবাব না দিয়ে ধীরে-সুস্থে শিশিরের টেবিল থেকে কেসটা তুলে তা থেকে একটা সিগারেট নিয়ে ধরিয়ে আরাম করে—আরামকেদারার অভাবে তার বিছানার ওপরই দুটো বালিশ ঠেসান দিয়ে বসে—একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে বলেছেন, ওই না-দেখেশুনে ঘড়ি নেওয়া।

    ঘনাদার রকম-সকম ভাল মনে হয়নি। ইশারায় শিশির, গৌর, শিবুকে সাবধান করে দিয়ে একটু হেসে বলেছি, ও-ঘড়ি আর দেখবার শোনবার কিছু নেই ঘনাদা, সুইটজারল্যান্ডের একেবারে সবচেয়ে বনেদি কারখানার ছাপ ওতে মারা।

    ঘনাদা একটু হেসেছেন, ছাপ ওরকম মারা থাকে। ছাপ দেখে কি আর ঘড়ি চেনা যায়?

    আপনি ঘড়িও চেনেন নাকি ঘনাদা? শিবু বুঝি না জিজ্ঞেস করে পারেনি।

    হ্যাঁ, তা একটু চিনি বইকী! না চিনলে এই দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ আর কি হত? তার দরকারই হত না।

    ঘনাদার সঙ্গে আমাদের বেশ ভাল রকমই পরিচয় আছে, তবু একথার পর খানিকক্ষণ আমরা একেবারে থ হয়ে গেছি। কারুর মুখ দিয়ে কোনও কথাই বেরোয়নি। গৌরই প্রথম বলেছে, কিন্তু ঘড়ি তো আপনাকে ব্যবহার করতে কখনও দেখলাম না!

    না, ঘড়ি-টড়ি আমি ব্যবহার করি না! সিগারেটে একটা সুখটান দিয়ে ঘনাদা বলেছেন, তবে, ঘড়ি একবার পেয়েছিলাম কয়েকটা।

    পেয়েছিলেন? কটা ঘনাদা? শিশিরের বিদ্রূপটা খুব অস্পষ্ট নয়। কিন্তু ঘনাদা নির্বিকার ভাবে খানিকক্ষণ চোখ বুজে থেকে বলেছেন, যতদূর মনে পড়ছে, মোট দু-লক্ষ তিপ্পান্ন হাজার তিনশো একটা। ঘনাদার কাছে থাকা আর নিরাপদ নয় বুঝে শিবুকে তাড়া দিয়ে বলেছি, ওহে, ওঠো না এইবার। সময় তো হয়ে এল।

    শিবু তা সত্ত্বেও জিজ্ঞাসা করেছে, সে-সব ঘড়ি গেল কোথায় ঘনাদা? কোথায় রেখেছেন মনে নেই বুঝি ?

    না, মনে থাকবে না কেন, খুব মনে আছে। সেগুলো রেখেছিলাম, ১২৫ ডিগ্রি দ্রাঘিমা যেখানে ৩৫ ডিগ্রি অক্ষাংশকে কেটে বেরিয়ে গেছে ঠিক সেইখানে। তবে সেগুলো এখন অচল।

    ঘনাদা গলা খাঁকারি দিয়ে নড়েচড়ে বসতেই সভয়ে উঠে পড়ে শিশিরকে ঠেলা দিয়ে বলেছি, উড়ে পড়া শিশির, তুমি তো আবার শিরে সংক্রান্তির সময় জুতো খুঁজতে জামা হারিয়ে ফেলবে।

    কিন্তু ঘনাদা তখন শুরু করে দিয়েছেন, ১৯৩৭ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর, প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণে যে বিরাট সাইক্লোন আর টাইড্যাল ওয়েভ অর্থাৎ প্রলয় বন্যা দেখা দেয়, তার কথা তোমাদের মনে আছে কিনা জানি না। তবে, খবরের কাগজে বিশদভাবেই সব বিবরণ বেরিয়েছিল। টাইড্যাল ওয়েভের পাহাড় প্রমাণ ঢেউ পশ্চিমে নিউজিল্যান্ড ও পুবে দক্ষিণ আমেরিকার চিলির পার্বত্য উপকূল পর্যন্ত তো পৌঁছোয়ই; উত্তরে, অথবা ঠিক করে বলতে গেলে, উত্তর-পশ্চিমে ডুসি, পিটকেয়ার্ন দ্বীপ থেকে শুরু করে তাহিতি টোঙ্গা ফিজি সামোয়া পর্যন্ত অসংখ্য দ্বীপ প্রায় ভাসিয়ে নিয়ে যায় বললেই হয়। অস্ট্রাল দ্বীপপুঞ্জের কয়েকটা তো একেবারে নিশ্চিহ্নই হয়ে গিয়েছিল কিছুকালের মতো। প্রচণ্ড ঝড়ে আর এই সমুদ্র বন্যায় কত লোক যে মারা যায় তার লেখা-জোখা নেই।

    টাইড্যাল ওয়েভ-এর প্রায় দুমাস আগের কথা। হাওয়াই থেকে সামোয়া হয়ে, ফিজি দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত তখন আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা চালাই, তিনটে জাপানি মালের জাহাজ ভাড়া নিয়ে। আমদানি-রপ্তানির কারবারটা অবশ্য লোক দেখানো ব্যাপার। বাইরে এই সব দ্বীপ থেকে ইউরোপ আমেরিকায় নারকোল-শাঁস চালান দিয়ে তার বদলে ছুরি কাঁচি থেকে শুরু করে, ঘড়ি সাইকেল সেলাই-এর কল পর্যন্ত টুকিটাকি নানা জিনিস আমদানি করি। কিন্তু ভেতরে ভেতরে যে ধান্দায় ঘুরি, তারই সম্পর্কে হঠাৎ একদিনেই আমেরিকা আর ইংল্যান্ড থেকে গোপন কোড-এ লেখা দুটি রেডিয়ােগ্রাম একসঙ্গে এসে হাজির। নেভিল আর ফ্রাঙ্ক দুজনেই তখন বেঁচে।

    শিশির অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছে, নেভিল আর ফ্রাঙ্ক? তারা আবার কে?

    গৌর গম্ভীর মুখে বলেছে, বুঝতে পারলিনে? নেভিল—চেম্বারলেন আর ফ্রাঙ্কলিন—রুজভেল্ট!

    ওঁরাই আপনাকে তার করেছিলেন? চোখ কপালে তুলে জিজ্ঞাসা করেছে শিবু, আপনার সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল বুঝি?

    যেন অত্যন্ত সামান্য ব্যাপার, এইভাবে কথাটা হাত নেড়ে উড়িয়ে দিয়ে ঘনাদা বলেছেন, যাক গে সেসব কথা। হ্যাঁ, যা বলছিলাম—দুই রেডিয়োগ্রামেই এক কথা, সমূহ বিপদ, প্রশান্ত মহাসাগরের কাজ ফেলে এক্ষুনি যেন চলে আসি।

    কিন্তু একটা মানুষ একসঙ্গে আমেরিকা আর ইংল্যান্ডে তো যেতে পারে না। সেই মর্মেই দুটো তার দু জায়গায় পাঠিয়ে আরও বিশদ বিবরণ জানতে চাইলাম।

    বিশদ বিবরণ শুধু পরের রেডিয়োগ্রামে নয়, বেতারের খবরেও কিছুটা তার পরদিন পাওয়া গেল। ইউরোপ আমেরিকা ইংল্যান্ডের নানা জায়গায় হঠাৎ রহস্যজনক ভাবে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ হয়ে বড় বড় বাড়ি-ঘর, কারখানা, রেলের লাইন প্রভৃতি উড়ে যাচ্ছে। গোয়েন্দা-পুলিশ সব জায়গায় এই অভাবনীয় ব্যাপারে শুধু ছুটোছুটি করে হিমসিম খাচ্ছে না, কিছু বুঝতে না পেরে একেবারে ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে গেছে। ভ্যাবাচ্যাকা হওয়া কিছু বিচিত্র নয়। কারণ যেসব জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটছে, পুলিশ সেখানে কোনওরকম বোমা বারুদ ডিনামাইটের নাম-গন্ধও পাচ্ছে না এবং এরকম এলোপাথাড়ি ধ্বংসের কাজ চালাতে পারে এমন কোনও দেশদ্রোহী প্রবল গুপ্তদলের কথাও তাদের জানা নেই।

    অবস্থা এই রকম সঙ্গিন বলেই, আমাদের বিভাগের বড় বড় মাথা যে যেখানে আছে সকলের ডাক পড়েছে পরামর্শ সভায়। কিন্তু ইংল্যান্ড আমেরিকা, দু জায়গার কোথায় যাব, দোমনা হয়ে ঠিক করতে না পেরেই, শেষ পর্যন্ত স্থির করলাম, সামোয়া দ্বীপের পালোলো উৎসবটা আগে না দেখে অন্য কোথাও যাব না। ভাবলাম, কাছে থেকে যা দুর্বোধ, দূর থেকে ঠাণ্ডা মাথায় সে রহস্যের খেই হয়তো পেয়েও যেতে পারি।

    পালোলো উৎসব পৃথিবীর একটি অষ্টম আশ্চর্য ব্যাপার বললেই হয়। বৎসরে মাত্র দুটি দিন এই উৎসব হয়। সামোয়া আর ফিজি দ্বীপপুঞ্জের চারিদিকে ঠিক নির্দিষ্ট অরিখে যেন অলৌকিক মন্ত্রবলে পালোলো নামে সংখ্যাতীত এক রকম সামুদ্রিক পোকা জলের ওপর ভেসে ওঠে, দুভাগ হয়ে বংশ বিস্তার করবার জন্যে। পালোলোর এই বংশ বিস্তারের লগ্ন সামুদ্রিক মাছেদেরও জানা। ঝাঁকে ঝাঁকে তারাও সেদিন ভেসে ওঠে। পালোলোরা বংশ বিস্তার যত না করে, সমুদ্রের এই মাছেদের পেটে যায় তার বেশি। কিন্তু পালোলো আর মাছের ঝাঁকের ওপরেও আছে আর এক প্রাণী। তারা, পলিনেশিয়ান জেলে। মাছ ও পালোললা দুই-ই তাদের কাছে পরম সুখাদ্য। রাশি রাশি মাছ ও পালোলো ধরবার সুযোগ হয় বলে বৎসরের এই দুটি দিন তাদের কাছে একটা মস্ত পরব।

    কিন্তু ঠাণ্ডা মাথায়, খোশ মেজাজে এ-পরব দেখা সেবার আমার ভাগ্যে নেই। হাওয়াই দ্বীপের হনলুলু থেকে এপিয়া বন্দরে আসবার পথে জাহাজেই ওই দুটি রেডিয়োগ্রাম পেয়েছিলাম। সামোয়া দ্বীপপুঞ্জের উপোলু দ্বীপের এই এপিয়া বন্দরটিই তখন আমার কারবারের প্রধান ঘাঁটি। সেখানে পৌঁছেই খবর পেলাম, দিন তিনেক আগে আমার ওয়্যার হাউজ থেকে বড় গোছের একটা চুরি হয়ে গেছে। চুরি না বলে তাকে ডাকাতিই বলা উচিত। রাত্রে দরজার তালা ভেঙে প্রায় হাজার পঞ্চাশ টাকার মাল ডাকাতেরা সরিয়ে নিয়ে গেছে আমার দুজন পাহারাদারকে পিছমোড়া করে বেঁধে। পুলিশকে খবর আগেই দেওয়া হয়েছিল। নিজে গিয়ে থানায় একবার দেখাও করতে হল–এপিয়া—ব্রিটিশ এলাকা। প্রধান পুলিশ কর্মচারি আমার বিশেষ পরিচিত জন লেমান নামে একজন মার্কিন। কী কী ধরনের কত মাল চুরি গেছে তার একটা তালিকা তাকে দিলাম। দামি মালের মধ্যে ইউরোপ থেকে আনানো শ-পাঁচেক রেডিয়ো সেট আর শ-তিনেক সাইকেল। কয়েক বাক্স ঘড়িও তার মধ্যে ছিল। লেমান আমায় আশ্বাস দিলে যে, মাল যদি চোরেরা ইতিমধ্যে পাচার করেও দিয়ে থাকে, তবু সাইকেল আর রেডিয়ো বেশির ভাগই সে উদ্ধার করে দিতে পারবে। তবে ঘড়িগুলোর কথা বলতে পারে না। সেগুলো হাতে হাতে লুকিয়ে চালান দেওয়া সহজ। খুশি হয়ে বললাম, তুমি অন্যগুলো যদি উদ্ধার করে দাও, ঘড়িগুলোর জন্য আমি ভাবি না। সেগুলো নেহাত সস্তা খেলো জিনিস। চেহারা দামি ঘড়ির মতো জমকালো হলেও, আসলে ছেলে-ভুলানো জাপানি মাল।

    কিন্তু এই সস্তা খেলো ঘড়িগুলোই এক জ্বালা হয়ে উঠল। লেমানের কাছ থেকে বাড়ি ফিরে দেখি, আবার দুটি তার এসে হাজির। তার একটি লণ্ডন থেকে, আগেরগুলির মতোই তাড়াতাড়ি রওনা হবার তাগিদ, আর একটি জাপানের যে-কোম্পানি থেকে ঘড়িগুলো আমায় পাঠানো হয়েছে, সেগুলো আমি যেন অবিলম্বে ফেরত পাঠাই, কারণ আমি যে-ঘড়ির অর্ডার দিয়েছিলাম তার বদলে এগুলি চালান দেওয়া হয়েছে।

    যে-ঘড়ি চোখেই দেখিনি তা অর্ডার-মাফিক না অন্যকিছু, কী করে আর জানব, ঘড়িগুলো যে আমার গুদাম থেকে চুরি গেছে, এই কথা জানিয়ে এক টেলিগ্রাম করে পালোলো উৎসবের জন্য একটি মোটর লঞ্চে করে বেরিয়ে পড়লাম। লন্ডনের টেলিগ্রামের জবাবই আর দিইনি। মনটা সেজন্যে একটু খচখচ করছিল। কাজে ফাঁকি দিয়ে এই পরব দেখতে গিয়েই প্রধান রহস্যের সূত্র যে পেয়ে যাব তখন তো আর জানতাম না!

    মাঠের ওপর যেমন মেলা হয়, পালোলো উৎসব তেমনই সমুদ্রের ওপরকার মেলা। বন্দর ছাড়িয়ে কয়েক মাইল যাবার পর সমুদ্রের একটি বিশেষ অঞ্চলে যে দৃশ্য চোখে পড়ে তা বর্ণনা করে কঠিন। মাইলের পর মাইল জলে অগুনতি পালোলো আর মাছের ঝাঁক কিলবিল করছে। মাছেদের রুপোলি ডানার ঝিলিকে সমুদ্রে যেন ক্ষণে ক্ষণে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে মনে হয়। পোকা ও মাছের লোভে অসংখ্য সামুদ্রিক পাখি সেই সঙ্গে সাদা পাখার ঝাপটায় বাতাস তোলপাড় করে ফিরছে। এরই ভেতর যেদিকে চাও, পলিনেশিয়ান জেলেদের নানা রংয়ের ডিঙি আর জাল। সেসব ডিঙিতে উৎসবের সাজে মেয়েরাও এসেছে মজা দেখতে। নৌকাগুলোতে নানা রঙের নিশান আর ফুলের সাজ, মেয়েদের মাথায় ও গলায় ফুলের মালা, কেউ-কেউ আবার বাজনাও এনেছে গান গাইতে ও বাজাতে! আমার মতো দু-চার জন শৌখিন লোক একলা বা দল বেঁধে শুধু এই দৃশ্য উপভোগ করবার জন্যই নিজেদের মোটর লঞ্চে বা ছোট স্টিমারে এসে জড়ো হয়েছে।

    পালোলো উৎসব খুব ভাল ভাবেই জমেছিল। উজ্জ্বল, নির্মেঘ আকাশ, ঝড় বাতাসহীন শান্ত সমুদ্র, হঠাৎ তারই মাঝে বিনা মেঘে বজ্রাঘাতের মতো একটা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেল। সেই সঙ্গে কাছাকাছি তিনটি নৌকো আরোহীদের নিয়ে আকাশে টুকরো-টুকরো হয়ে ছিটকে উঠে একেবারে নিশ্চিহ্ন। এ কী আশ্চর্য ব্যাপার! সমুদ্রের জলে মাইন না থাকলে তো এ রকম হতে পারে না! কিন্তু মাইন

    এ-অঞ্চলে কেমন করে থাকবে? আসবে কোথা থাকে?

    দেখতে-দেখতে আরও দু জায়গায় ওই রকম দুটি বিস্ফোরণ পর-পর হয়ে গেল। পলকের মধ্যে উৎসবের আনন্দ আতঙ্কে পরিণত হল। সমুদ্র তখনও তেমনই মাছে আর পোকায় কিলবিল করছে, সাগর-চিলগুলো তেমনই ঝাঁকে ঝাঁকে জলের ওপর ছোঁ মারছে, কিন্তু মাইনের ভয়ে জেলে ডিঙিগুলি প্রাণপণে সে-অঞ্চল ছেড়ে পালাচ্ছে।

    মোটর লঞ্চে আমিই অবশ্য প্রথম এই দুর্ঘটনার খবর এপিয়াতে নিয়ে এলাম। দেখা করলাম গভর্নরের সঙ্গে। তিনি তো এ-খবর শুনে একোরে থযুদ্ধবিগ্রহ নেই, কোনও গোলমাল কোথাও নেই, হঠাৎ সামোয়া দ্বীপপুঞ্জের বিশেষ একটি সামুদ্রিক অঞ্চলে মাইন ভাসিয়ে দিয়ে যাবে কে? তাও বন্দরের মধ্যে হলে না হয় উদ্দেশ্য খানিকটা বোঝ যেত, যেখানে কস্মিনকালে জেলেডিঙি ছাড়া কোনও বড় জাহাজ যায় না, সেখানে এ-মাইন ভাসানোতে কার কী স্বার্থ? ভাল করে ব্যাপারটার সন্ধান নেবার জন্য আমার সঙ্গেই একটি পলিশ লঞ্চ পাঠাবেন বলে গভর্নর ঠিক করলেন। লেমানকে খবর পাঠিয়ে দিলেন, আমায় আমার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাবার জন্য। দু মুঠো খেয়ে নেবার জন্য আমার আস্তানায় গিয়ে দেখি, আর এক হাঙ্গামা সেখানে আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে। যে-কোম্পানির কাছ থেকে ওইসব ঘড়ি আনিয়ে ছিলাম, তাদের একজন বড় কর্মচারী নিজে এসেছেন ঘড়িগুলো ফেরত নিয়ে যাবার জন্য। কর্মচারীর নাম মি. ওকামোতো। শুনলাম তিনি ইয়োকোহামা থেকে প্লেনে করে আজ সকালেই এসে এখানে পৌঁছেছেন ও আমার জন্য এতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করে আছেন। একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ওই কটা সস্তা খেলো ঘড়ির জন্য আপনাদের এত মাথাব্যথা?

    একটু সলজ্জভাবে হেসে মি. ওকামোতো বললেন, ঘড়িগুলো সস্তা হতে পারে, কিন্তু ভুলটা কোম্পানির পক্ষে বড় বেশি লজ্জার। সেইটে শোধরাবার জন্যই তাঁদের এত বেশি ব্যাকুলতা।

    কিন্তু, ঘড়ি যে চুরি গেছে তা তো আপনাদের জানিয়েছি।

    মি. ওকামোতো কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে যা বললেন, তাতে আরও অবাক হলাম। এ-ঘড়ি ফেরত না নিয়ে যেতে পারলে তাঁর মুখে চুনকালি পড়বে, তাই এ ভুলের প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ কিছু গুণাগার দিতেও তিনি প্রস্তুত।

    বুঝলাম, ঘড়ি চুরির কথা মি. ওকামোত বিশ্বাস করতেই পারছেন না। একটু বিরক্ত হয়েই তাই বললাম, আপনাদের ওই ছেলে-ভুলানো ঘড়ি লুকিয়ে রেখে আমার কোনও লাভ আছে মনে করেন? সত্যি চুরি গেছে কিনা, চলুন আপনাকে দেখিয়ে দিচ্ছি।

    চুরি প্রমাণ করবার জন্য গুদামে যাওয়ার আর দরকার হল না, মি. লেমান আমার খোঁজে সেই মুহুর্তেই এসে ঘরে ঢুকলেন। ওকামোতের সঙ্গে তাঁর পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললাম, ইনিই এখানকার পুলিশ-চিফ। আমার গুদাম ভেঙে ডাকাতরা ঘড়ি এবং অনেক কিছু নিয়ে গেছে কি না, ওঁর কাছেই শুনতে পাবেন!

    মি. লেমান আমার কথা সমর্থন করার পর শান্তশিষ্ট ওকামোতো হঠাৎ একেবারে জ্বলে উঠলেন। সবেগে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে-যেতে যা বলে গেলেন তার মর্ম এই যে, তাঁদের কোম্পানির সঙ্গে এই চালাকি করার ফল কী, আমরা শিগগিরই হাড়ে হাড়ে বুঝব।

    মি. লেমান একটু অবাক হয়ে বললেন, কী এমন দামি ঘড়ি মশাই, যার জন্য এত আস্ফালন?

    দেখবেন? বলে আমার ম্যানেজারকে একটি ঘড়ি নিয়ে আসতে বললাম। চোরেরা কেস ভেঙে নিয়ে যাবার সময় কয়েকটি ঘড়ি গুদামের মধ্যে অসাবধানে পড়ে গেছল। সেগুলো আমি বাড়িতেই আনিয়ে রেখেছিলাম। ম্যানেজার তা থেকে একটি ঘড়ি এনে আমার হাতে দিলে। লেমান সেটি নিয়ে একটি পরীক্ষা করে বললেন, এ-জাতের বুদ্ধি সত্যি অসাধারণ। এমনিতে দেখলে মনে হবে, যেন নামজাদা কোন সুইস কোম্পানির হাতঘড়ি?

    হেসে বললাম, অথচ দাম তার দশ ভাগের এক ভাগও নয়।

    টেবিলের উপর সেখানকার খবরের কাগজটা ভোলা ছিল, তার ওপর ঘড়িটা রেখে উঠে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ, ঘড়ির তলায় যে-খবরের শিরোনামটা দেখা যাচ্ছিল সেইটে পড়বামাত্র মাথার ভেতর দিয়ে যেন একটা বিদ্যুৎ খেলে গেল। মি. লেমানকে উত্তেজিতভাবে বললেন, মাপ করবেন মি. লেমান, আপনার সঙ্গে আজ যেতে পারছি না। ড. ডেভিসের কাছে এখুনি আমার যাওয়া দরকার!

    সে কী! ড. ডেভিসের কাছে হঠাৎ কেন? অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন মি.

    লেমান।

    কেন? ড. ডেভিস পৃথিবীর একজন নামজাদা রাসায়নিক বলে। তিনি যে কয়েক মাসের জন্য শরীর সারাতে এপিয়াতে এসে বাস করছেন এ-ও আমাদের সৌভাগ্য বলে।

    কিন্তু পালোলো উৎসবের দুর্ঘটনাগুলোর রহস্য আগে সন্ধান করতে গেলে ভাল হত নাকি?

    না, মি. লেমান, মনে হচ্ছে, আপনারও সেখানে যাবার আর দরকার নেই। বলে টেবিল থেকে ঘড়িটা তুলে নিয়ে মি. লেমান কোনও কিছু বলবার আগেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম।

    সেদিন সারারাত ড. ডেভিসের সঙ্গেই তাঁর বাইরের ঘরে গভীর গবেষণায় কাটালাম। পরের দিন দুপুরেই ইউরোপ আমেরিকার সমস্ত বড় বড় রাজ্যে গোপন কোডে টেলিগ্রাম করে দিলাম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাছে।

    পনেরো দিন পর্যন্ত ইউরোপ ও আমেরিকার নানা জায়গা থেকে অল্প-বিস্তর। দুর্ঘটনার সংবাদ পাওয়া গেল। আমাদের এপিয়া ও কাছাকাছি নানা জায়গা থেকেও কয়েকটা বিস্ফোরণের খবর এল। তারপর সব গেল শান্ত হয়ে। ইউরোপ ও আমেরিকার যে-কোনও রেডিয়ো খুললে এই কদিন প্রতি ঘন্টায় একটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তিই বার বার শোনা যেত। প্রতি খবরের কাগজে ওই একই কথা। ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে দুটি জাহাজ তখন এপিয়ার দিকে রওনা হয়েছে। জাহাজ দুটি এসে পৌঁছোল, ১৯৩৭ সালের ১৩ই ও ১৪ই সেপ্টেম্বর। সেই সঙ্গে আমেরিকা থেকে চারটি বিরাট আর্মি প্লেনও আনিয়ে নিয়েছিলাম। ১৫ই সেপ্টেম্বর জাহাজ দুটি থেকে সেই চারটি প্লেনে কয়েকটি বড় বড় কাঠের বাক্স তুলে আমি ও ড. ডেভিস সকাল আটটায় রওনা হলাম। সন্ধ্যা নাগাদ চারটি প্লেন যেখানে একসঙ্গে পৌঁছোল, আমাদের চার্ট দেখে বুঝলাম, তার দ্রাঘিমা ১২৫ ডিগ্রি আর অক্ষাংশ ৩৫ ডিগ্রি। বেতার ইঙ্গিতে সকলকে আদেশ জানাবার পর চারটি প্লেন থেকে কয়েকটি বড় বড় বাক্স সমুদ্রের ওপর ফেলে দেওয়া হল।

    ড. ডেভিস আর আমি দুজনেই এতক্ষণ যেন কীসের ঘোরে আচ্ছন্ন হয়েছিলাম। এতক্ষণে তিনি ধরা-গলায় বললেন, সভ্য জগতের সবচেয়ে বড় বিপদ বোধহয় কেটে গেল।

    আমি একটু ম্লান হেসে বললাম, আপাতত!

    ঘনাদা চুপ করলেন।

    গৌর উৎসুকভাবে জিজ্ঞাসা করলে, ওই বাক্সগুলোর মধ্যে কী ছিল, ঘনাদা? ঘড়ি?

    হ্যাঁ, দুলক্ষ তিপ্পান্ন হাজার তিনশো একটা ঘড়ি। ঘড়ি নয়, তার প্রত্যেকটা হল এক-একটি খুদে অ্যাটম বোমার শামিল। এমনভাবে সেগুলি তৈরি যে, কোনওটি তিন দিন, কোনওটি বা তিন মাস ধরে দম দেওয়ার পরই তার গোপন দুটি খুদে কুঠরি খুলে গিয়েটি, এন. টি.-এর চেয়েও সাংঘাতিক দুটি রাসায়নিক পদার্থ একসঙ্গে মিশে যায়। এই মিশ্রণের ফলে যে বিস্ফোরণ হয় তা অ্যাটম বোমার মতো না হলেও ডিনামাইটের চেয়ে অনেক বেশি প্রচণ্ড। যে-কোম্পানি এই ঘড়ি তৈরি করেছিল, সস্তা দরে সমস্ত ইউরোপ আমেরিকায় এগুলি ছড়িয়ে দিতে তাদের কোনও অসুবিধা হয়নি। কারখানার মজুর থেকে কেরানি উকিল ডাক্তার অনেকেই এ-ঘড়ি সস্তার লোভে অজান্তে কিনে হাতে পরেছে। তার ফলে দুই দেশের সর্বত্র অতর্কিত বিস্ফোরণ হতে শুরু করে। আর কিছু বেশি দিন এই ঘড়ি চালাতে পারলে ওসব দেশের কলকারখানা, রেল, জাহাজ, কীভাবে যে ধ্বংস হয়ে যেত, কেউ তার হদিসই পেত না। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের তাহলে আর দরকারই হত না।

    ইউরোপের বদলে ভুলক্রমে কয়েক বাক্স ঘড়ি যদি আমার কাছে না এসে পড়ত, সে-ঘড়ি আবার যদি চুরি না যেত, পালোলো উৎসবে ওইরকম রহস্যময় বিস্ফোরণ তার কয়েকদিন পরেই যদি না ঘটত, ঘড়ির কোম্পানির প্রতিনিধি ওই সামান্য সস্তা খেলো ঘড়ি ফেরত নেবার জন্য প্লেনে করে ছুটে আসবার মতো। গরজ যদি না দেখাত এবং সবচেয়ে যে ব্যাপারে আমার টনক নড়ে ওঠে, আমার ম্যানেজার সেইদিনকার কাগজের একটি বিশেষ সংবাদের ওপর ঘড়িটি যদি না রেখে যেত, তাহলে এ দারুণ সর্বনাশ রহস্যের সমাধান করবার মতো খেই আমি। খুঁজে পেতাম না।

    খবরের কাগজে ইউরোপের কয়েকটি কারখানার বিস্ফোরণের সংজর ওপর ঘড়িটা দেখবার পরই হঠাৎ এই সমস্ত ব্যাপারের মধ্যে একটা যোগসূত্র আছে বলে আমার মনে হয়। ড. ডেভিসকে দিয়ে ঘড়িটা খুলে পরীক্ষা করবার পর আমি এ-বিষয়ে নিঃসন্দেহ হই। নিরপরাধ পলিনেশিয়ান জেলেদের কেউ কেউ না জেনে আমার কারখানা থেকে চোরাই ঘড়ির কয়েকটা কিনেই উৎসবের দিনের ওই সমস্ত বিস্ফোরণের কারণ হয়, এ তখন আমার আর বুঝতে বাকি নেই।

    ঘনাদা কতকক্ষণ চুপ করে আর-একটা সিগারেট ধরাতেই শিশির বললে রেডিয়ো আর খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েই তা হলে এই ঘড়িগুলো সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু এত জায়গা থাকতে ওই কত দ্রাঘিমা আর অক্ষাংশ বললেন, সেখানে এগুলো ফেলবার মানে কী?

    মানে ম্যাপ খুললেই বুঝতে পারবে। স্থলভাগ থেকে যতদুরে সম্ভব এ সর্বনাশা জিনিস ফেলতে হবে তো! ম্যাপে দেখতে পাবে, ওই জায়গার ধারে কাছে একটা দ্বীপের ফুটকি পর্যন্ত নেই।

    ওখানে ফেলার দরুন কোনও ক্ষতি তা হলে আর হয়নি? জিজ্ঞাসা করলে শিবু।

    না, তা আর বলি কী করে? হতাশভাবে বললেন ঘনাদা, ১৭ই সেপ্টেম্বরের টাইড্যাল ওয়েভ আর সাইক্লোনের কথা তো আগেই বলেছি। তার মূলে তো ওই ঘড়ি।

    কিন্তু এদিকে ঘড়িতে কটা বাজে জানো? গৌর প্রায় আর্তনাদ করে উঠল,

    রেফারি এতক্ষণে বোধহয় ফাইনাল হুইসল দিচ্ছে।

    অ্যাঁ! প্রায় সমস্বরে সবাই চিৎকার করে উঠে ফ্যালফ্যাল করে পরস্পরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঘনাদা সমগ্র ২ – প্রেমেন্দ্র মিত্র
    Next Article প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    Related Articles

    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    ঘনাদা সমগ্র ২ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }