Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ঘনাদা সমগ্র ১ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    প্রেমেন্দ্র মিত্র এক পাতা গল্প646 Mins Read0

    শিশি

    আপনাকে চুরি!—প্রায় কেলেঙ্কারিই করে ফেলেছিলাম বেফাঁস কথাটার সঙ্গে কাশি চাপতে গিয়ে বিষম খেয়ে। তাড়াতাড়ি সামলে বললাম,  এত বড় সাহস!

    ঘনাদা ঠাণ্ডা হয়ে রহস্যময় হাসি হেসে বললেন, সাহস নয়, দায়!

    ব্যাপারটা যে বাহাত্তর নম্বর বনমালি নস্কর লেনের তা বলাই বাহুল্য, কিন্তু গোড়া থেকে শুরু করাই নিশ্চয় উচিত।

    ফন্দিটা মাথায় এসেছিল গৌরের। আমরা সবাই সেটায় জোগান দিয়েছি মাত্র।

    কিন্তু শেষে নিজেদের ফাদে নিজেরাই জব্দ হব কে জানত!

    সব দিক বেঁধে-হেঁদেই ব্যবস্থা করেছিলাম, কিন্তু কোথায় যে ছিদ্রটুকু ছিল আগে ধরতে পারিনি।

    শিবু দামি কার্ডটা ছাপিয়ে এনেছে। তার আগে ঘনাদার দিবানিদ্রার সুযোগে আমরা কজনে মিলে চিঠিটার ভাষার খসড়া করেছি অনেক মাথা ঘামিয়ে।

    সুবিধে ছিল এই যে সে সময়ে বিজ্ঞান কংগ্রেস হচ্ছে কলকাতাতেই। দেশ-বিদেশের বড় বড় সব বিজ্ঞানের রথী মহারথীরা এসেছেন এই শহরে। যেন তাঁদেরই একজনের নাম দিয়ে কার্ডটা ছাপানো। ভূগোলবিশারদ নামকরা মানচিত্রকার সঁসিয়ে সুস্তেল যেন পৃথিবীর অজ্ঞাত দুর্গমতম স্থানের অদ্বিতীয় আবিষ্কারক ও পর্যটক ঘনশ্যাম দাস এই কলকাতা শহরেই সশরীরে উপস্থিত এই আশাতীত খবর পেয়ে আহ্লাদে গদগদ হয়ে তাঁকে বিজ্ঞান কংগ্রেসের এক বিশেষ ভূগোল-বৈঠকে উপস্থিত দেশ-বিদেশের সুধীমণ্ডলীকে তাঁর ভাষণ শুনিয়ে কৃতার্থ করবার জন্যে বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন। কবে ও কখন তিনি স্বয়ং গাড়ি নিয়ে ঘনশ্যাম দাসকে নিতে আসবেন তা-ও এ-অনুরোধের চিঠিতে জানানো আছে।

    আগে থাকতে মহলা দিয়ে যেমন যেমন ঠিক করে রাখা গিয়েছিল ঠিক সেই মতোই প্রথম অভিনয় সবাই করেছি। বসবার ঘরের মার্কামারা আরামকেদারায় ঘনাদা এসে গা এলিয়ে বসবামাত্র শিশির যথারীতি তার সিগারেটের টিন সামনে খুলে ধরেছে। আমি লাইটার জ্বেলে সিগারেট ধরিয়ে দিয়েছি সসম্ভমে। ঘনাদা প্রথম টান দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে শিশিরের দিকে ফিরে জিজ্ঞাসা করেছেন, কত হল?

    বেশি নয়, এই চার হাজার দুশো একুশ মাত্র! শিশির জানিয়েছে সংকুচিতভাবে।

    একুশ কেন হবে, উনিশ না? ঘনাদার – কুঞ্চিত হতে-না-হতে শিশির তাড়াতাড়ি পকেট থেকে নোটবই বার করে খুলে দেখে লজ্জায় জিভ কেটেছে। হ্যাঁ, হ্যাঁ, উনিশ-ই তো?

    ঘনাদা সন্তুষ্ট হয়ে আর একটি টান দিয়ে চোখ দুটি প্রায় নিমীলিত করার পরই আমি আনন্দে যেন কথাটা চাপতে না পেরে বলেছি, আমরা কিন্তু সবাই শুনতে যাচ্ছি সেদিন, ঘনাদা!

    সবাই শুনতে যাচ্ছ? ঘনাদা চোখ খুলে তাকিয়েছেন, কী শুতে? বাঃ, আপনার বক্তৃতা! আমি যেন ঘনাদার বিস্মৃতিতে অবাক হয়েছি। ঘনাদা দন্তস্ফুট করার আগেই শিশির সোৎসাহে বলে উঠেছে, একেবারে ভোরবেলা থেকে কিউ দিতে হবে কিন্তু। নইলে জায়গা মিলবে না।

    ভোরবেলা থেকে কী! শিবু শিশিরকে ধমকেছে, আগের রাত্তির থেকে বল! মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গলের শিল্ড ফাইন্যাল হার মেনে যাবে দেখিস। সায়েন্স কংগ্রেসে একটা দাঙ্গাহাঙ্গামা না হয়ে যায় না!

    ঘন ঘন সিগারেট টানা আর চোখ-মুখের ভাব দেখেই ঘনাদার অবস্থাটা বুঝতে পারা গেছে তখন। নেহাত মানের দায়েই সোজাসুজি রহস্যটা সম্বন্ধে কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারছেন না।

    শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে আর পারেননি। যথাসম্ভব গম্ভীর হয়ে নিজের চাল বজায় বেখে একটু ঘুরিয়ে বললেন, সায়েন্স কংগ্রেসে আমি বক্তৃতা দিচ্ছি, তোমরা জানলে কোথা থেকে?

    কোথা থেকে জানলাম। আমরা সমস্বরে নিজেদের বিস্ময় প্রকাশ করেছি।

    শিবু বিশদ ব্যাখ্যার ভার নিয়েছে—শহরে কে না জানে! তবে মসিয়ে সুস্তেল নিজে সব আয়োজন করেছেন আর নিজেই যে তিনি আসছেন আপনাকে নিয়ে যেতে

    এটা অবশ্য সবাই জানে না।

    ঘনাদার মুখে আশানুরূপ আশঙ্কার ছায়া দেখে আমরা উৎসাহিত হয়ে উঠেছি। ঘনাদা অস্বস্তিটা বিরক্তির ছলে প্রকাশ করেছেন, ঃ! মসিয়ে সুস্তেল বলে তো আমার গুরুঠাকুর নয়। তিনি এসে ধরলেই আমায় যেতে হবে! সায়েন্স কংগ্রেসে বক্তৃতা দেবার জন্য আমি হেদিয়ে মরছি নাকি?

    কী যে বলেন ঘনাদা! শিশির সমস্ত সায়েন্স কংগ্রেসের হয়ে যেন ঘনাদার রাগ ভাঙাবার জন্যে ব্যাকুল হয়ে উঠেছে, আপনি হেদিয়ে মরলেন কি, হেদিয়ে মরছে তো তারা! এ যে কত বড় সৌভাগ্য তা কি তারা জানে না। নইলে মসিয়ে সুস্তেল নিজে বাড়ি বয়ে এসে আপনাকে নিমন্ত্রণের চিঠি দিয়ে যান!

    নিমন্ত্রণের চিঠি! কী চিঠি? ঘনাদা সত্যিই আকাশ থেকে পড়েছেন। আমরাও একেবারে যেন অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করেছি, সে কী! নিমন্ত্রণের চিঠি দেখেননি? আপনি তখন বিকেলে লেক-এ বেড়াতে গেছেন। মসিয়ে সুস্তেল কত খোঁজ করে এসে কতক্ষণ বসে রইলেন, তারপর আমাদের কাছে চিঠিটা দিয়ে দেখা না হওয়ার জন্যে কত দুঃখু করে গেলেন। বার বার করে বলে গেলেন যে আপনাকে নিতে তিনি নিজেই পরশু মানে শনিবার বিকেল চারটেতে আসছেন! সে চিঠি—সে চিঠি, হ্যাঁ গৌরই তো চিঠিটা রাখলে আপনাকে দেবার জন্য।

    আমরা যেন রেগে আগুন হয়ে বারান্দায় বেরিয়ে এসে গৌরের নাম ধরে ডাকাডাকি শুরু করেছি তারপর। গৌরও শশব্যস্ত হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বিরক্তির ভান করেছে, কী ব্যাপার, কী! হঠাৎ এত চেঁচামেচি কীসের!

    চেঁচামেচি কীসের! আমরা গৌরকে গালাগাল দিতে আর বাকি রাখিনি, আহাম্মক, অকর্মার ধাড়ি কোথাকার! কলকাতা শহরের মুখে চুনকালি দিয়ে সায়েন্স কংগ্রেসকে তুমি ভোবাতে বসেছ! মসিয়ে সুস্তেলের সে-চিঠি তুমি ঘনাদাকে দাওনি!

    গৌর লজ্জায় যেন মাটিতে মিশিয়ে গিয়ে হাতে ধরা পড়া চোরের মতো মুখ কাঁচুমাচু করে ঘর থেকে কার্ডটি এনে ভয়ে ভয়ে ঘনাদার হাতে দিয়ে বলেছে, মাপ করবেন ঘনাদা। একেবারে মনে ছিল না।

    তাচ্ছিল্যভরে কার্ডটা ধরলেও ঘনাদার চোখ দেখে বোঝা গেছে কী মনোযোগ দিয়ে কার্ডটা তিনি পড়ছেন।

    কার্ডে কোনও খুঁত যে নেই তা আমাদের জানা, ঘনাদাও নিশ্চয় ধরতে পারেননি।

    ভেতরে যাই তোক বাইরে ঠাট বজায় রেখে একটু অবজ্ঞার সুরে বলেছেন, সুস্তেল! দাঁড়াও, দাঁড়াও, কোন সুস্তেল ঠিক মনে পড়ছে না!

    বাঃ-সঁসিয়ে সুস্তেলকে মনে পড়ছে না! শিশির ঘনাদার স্মৃতিশক্তিকে একটু উসকে দেবার চেষ্টা করেছে, সেই বিখ্যাত কাটোগ্রাফার, মানে মানচিত্রের ব্যাপারে দুনিয়ায় যাঁর জুড়ি নেই বললেই হয়।

    হুঁ! সংক্ষিপ্ত একটি ধ্বনিতে যা বোঝাবার বুঝিয়ে ঘনাদা ঘর থেকে উঠে গেছেন।

    তারপর শনিবার দিন সকাল থেকেই আমরা সজাগ। আধা নয়, সে শনিবার কীসের যেন একটা পুরো ছুটি ছিল। দুপুরের খাওয়া-দাওয়া পর্যন্ত কিছু হবে না তা জানতাম। কারণ ছুটির দিন বলে সকালে বাজারটা একটু ভালরকম করা হয়েছে। মাছের থলের বড় বড় গলদা চিংড়িগুলো ঘনাদাকে কায়দা করে দেখিয়ে রাখতে ভুলিনি।

    বেলা একটা নাগাদ ভূরিভোজ শেষ হবার পরই আমাদের সজাগ থাকার সময়।

    এবারের সজাগ থাকা একটু অবশ্য আলাদা ধরনের। ঘনাদা পাছে পালিয়ে যান সেই ভয়ে পাহারা দেওয়া নয়, তিনি কোন ফাঁকে কী ভাবে মেস থেকে সরে পড়েন, নিজেরা গা ঢাকা দিয়ে লুকিয়ে তাই দেখে মজা করা।

    দুপুরের খাওয়ার সময়ই জমি তৈরি করে রাখা হয়েছে। ভরপেট খেয়ে আমাদের সকলেরই যেন ঘুমে চোখের পাতা জুড়ে আসছে। ছুটির দিন বলে সেদিন আর তাই খেলাধলো আজ্ঞা নয়, যে যার বিছানায় পড়ে ঘুম—এই কথাটাই জানিয়ে রেখেছি।

    কিন্তু বিছানায় কতক্ষণ মটকা মেরে শুয়ে থাকা যায়! একটার পর দুটো বাজল। দুটোর পর তিনটে। ঘনাদা এখনও করছেন কী! ঘরের দরজা জানালা বন্ধ। কান খাড়া করে আছি ঘনাদার পায়ের শব্দের জন্য। পালা করে জানালার খড়খড়ির ফাঁক দিয়ে তেতলা থেকে নামবার সিঁড়িটার ওপর চোখও রাখছি, কিন্তু ঘনাদার কোনও সাড়াশব্দই নেই।

    তিনটের পর চারটে বাজল। ঘনাদা কি সত্যিই ছাদ ডিঙিয়ে পালালেন! কিন্তু সেদিকেও তো আমাদের রামভুজকে পাহারায় রেখেছি, ঘনাদার সে রকম কোনও চেষ্টা দেখলেই নীচে থেকে রামা হো বলে গান ধরবে। তাহলে? ঘনাদা কি সত্যিই অন্তর্ধানমন্ত্ৰ গোছের কিছু জানেন নাকি!

    ঘনাদার ঘরের দিকেই একবার খোঁজ করে আসব কিনা ভাবছি এমন সময়ে সশব্দে তাঁর ঘরের দরজা খোলার শব্দ শোনা গেল। তারপর তেতলার সিঁড়ির ওপর থেকে তাঁর পাড়া-কাঁপানো ডাক, কই হে! সব গেলে কোথায়! দিনের বেলা আর কত ঘুমোবে!

    এ ওর মুখের দিকে তাকালাম ফ্যাল ফ্যাল করে। শেষে ঘনাদাই আমাদের খুঁজছেন নিজে থেকে!

    ঘনাদার ডাক না শুনে উপায় কী! গুটি গুটি করে একে একে ভিজে বেড়ালের মতো তাঁর তেতলার ঘরে গিয়ে ঢুকলাম!

    শিবু ওরই মধ্যে একটু নিজেদের মুখরক্ষার চেষ্টা করে বললে, আপনি এখনও তৈরি হননি, ঘনাদা! চারটের সময়ে না আপনাকে নিয়ে যাবার কথা!

    নিজের আধময়লা ফতুয়া আর ধুতিটার দিকে একবার চেয়ে বিছানার মাঝখানটিতে উঠে বসে ঘনাদা অদ্ভুত মুখভঙ্গি করে বললেন, আর কী তৈরি হব! কেন, এই সাজে যাওয়া যাবে না?

    বাধ্য হয়ে এ বিদ্রুপ হজম করতে হল। শিবু আর একবার ন্যাকা সেজে মান বাঁচাবার চেষ্টা করলে, মসিয়ে সুস্তেল-এর না আসাটা কিন্তু আশ্চর্য!

    ঘনাদা একটু হাসলেন এবার। অবজ্ঞাভরে বললেন, সুস্তেল যে আসবে না আমি জানতাম!

    আপনি জানতেন! বেশ সন্ত্রস্ত হয়েই আমরা ঘনাদার দিকে তাকালাম। কিন্তু যা ভয় করছিলাম ঘনাদা সেদিক দিয়ে গেলেন না। শিশিরের দিকে তর্জনী ও মধ্যম আঙুল ফাক করে ডান হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে অনুকম্পার সুরে বললেন, হ্যাঁ, জানতাম। আমি ছিলাম না জেনেই সোনি এসেছিল, নইলে আমার সামনে এসে দাঁড়াবার ওর সাহস নেই।

    পরম স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে সাগ্রহে এবার উসকানি দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, কেন বলুন তো? অমন পৃথিবীজোড়া নাম, অতবড় কার্নোগ্রাফার!

    হুঃ, কাটোগ্রাফার! ঘনাদা নাসিকাধ্বনি করলেন।

    শিশির তৈরি হয়েই এসেছিল। ততক্ষণে ঘনাদার আঙুলের ফাঁকে যথারীতি সিগারেট বসিয়ে দিয়ে দেশলাইয়ের কাঠি জ্বেলে ফেলেছে।

    ঘনাদা প্রথমে টানটি দিয়ে খানিক চুপ করে থেকে ধোঁয়া ছাড়লেন। আমরা চাতকের মতো তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে। ঘনাদার শ্রীমুখ থেকে কী শুধু ধোঁয়াই বেরুবে?

    ধৈর্য ধরতে না পেরে শিবু একটু ঝাঁকুনি দেবার চেষ্টা করলে, সত্যি কাটোগ্রাফার নয় বুঝি? জাল?

    জাল হবে কেন? ঘনাদা মৃদু ধমক দিলেন, আসল কাটোগ্রাফারই বটে। তাতে হয়েছে কী? নাম-ই গালভরা, আসলে জরিপদারের জেঠা ছাড়া তো কিছু নয়। বনজঙ্গল পাহাড়-পর্বতেরই খবর রাখে। জানে কি সোম অ্যাবিস্যাল প্লেন কোথায় আর কতখানি, মেপেছে কখনও মুইর কি প্লেটো সী মাউন্ট কত উঁচু?

    অভিভূতের মতো বললাম, মঙ্গল গ্রহের ভূগোলে আছে বুঝি? নাম তো কখনও শুনিনি!

    নাদা অনুকম্পার হাসি হাসলেন তোমাদের ওই সুস্তেলই কি জানত! ডোবার পুঁটি হয়ে গেছল সমুদ্রের তিমির সঙ্গে ফচকেমি করতে! এই শিশিটা না থাকলেই হত খতম।

    তক্তপোশের ওপর থেকেই হাত বাড়িয়ে পেছনের শেলফ থেকে যে-শিশিটি তুলে ঘনাদা আমাদের এবার দেখালেন তাতে আমরা তো থ!

    ওই শিশি? ওটা হোমিওপ্যাথিক ওষুধের না?

    শিবুর অসাবধান মুখ থেকে এক মুহূর্তের জন্যে ফসকে গিয়ে প্রায় ঘাটে এসে ভরাড়ুবি হয়েছিল আর কী!

    হোমিওপ্যাথিক! ঘনাদা প্রায় ফেটে পড়ছিলেন।

    শিবুই তাড়াতাড়ি সামলে নিয়ে বললে, মানে প্রায় সেইরকম দেখতে কিনা। বোকা লোকেরা তফাত ধরতেই পারবে না।

    ঘনাদা ফণা নামালেন, একটু অবজ্ঞাভরে হেসে বললেন, তোমাদের ওই সুস্তেলও পারেনি। সাত সাগর খুঁজে নারবরো দ্বীপে আমায় চুরি করতে আসবার সময়ে ও অন্তত জানত না যে এই শিশির মধ্যে তাদের পরমায়ু লুকোনো থাকবে।

    আপনাকে চুরি! হাসি চাপতে গিয়ে বিষম খেয়ে প্রায় যাই আর কী! অতিকষ্টে সেটা সামলে ও কেলেঙ্কারি বাঁচিয়ে বললাম, এত বড় সাহস!

    সাহস নয়, দায়।ঘনাদার মুখে রহস্যময় হাসি দেখা গেল। আমাদের মুখগুলোর ওপর একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে তিনি শুরু করলেন, নারবরো দ্বীপের নাম নিশ্চয় শোনোনি, গ্যালাপ্যাগোসের নামই হয়তো জানো না। দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর-পশ্চিমে ইকোয়েডর থেকে প্রায় ছশো পঞ্চাশ মাইল দূরের এই কটি ছোট বড় আগ্নেয়দ্বীপের জটলায় প্রায় সওয়া এক শতাব্দী আগে সেকালের একটি পালোলা জাহাজ টহল না দিতে গেলে বিজ্ঞানের এ যুগের সবচেয়ে একটা দামি মতবাদের জন্মই হত কিনা সন্দেহ। সে পালতোলা জাহাজের নাম এস এস বীগল, সে জাহাজের বৈজ্ঞানিকের নাম চার্লস ডারউইন, আর সে মতবাদ হল বিবর্তনবাদ।

    গ্যালাপ্যাগোস দ্বীপগুলির মধ্যে সবচেয়ে বড় হল অ্যালবেমাৰ্ল বা ইসাবেলা। দেখতে অনেকটা ইংরিজি জে হরফের মতো। সেই ইসাবেলার মাথার বাঁ দিকে একটি বড় ফুটকি হল নারবরো দ্বীপ, ফার্নানডিনা-ও বলে কেউ কেউ। পৃথিবীর একমাত্র সামুদ্রিক গিরগিটির জাত সী-ইগুয়ানার ভাল করে পরিচয় নিতে সেই দ্বীপে তখন কিছুদিনের জন্যে ডেরা বেঁধেছি। পেরুর লিমা থেকে একটি ছোট স্টিমার আমাকে আর আমার এক অনুচর নিমারাকে সেখানে নামিয়ে দিয়ে গেছে। মাসখানেক বাদে আবার সেই ছোট স্টিমারই আমাদের নিয়ে যাবে।

    আমার অনুচরটি ইকোয়েডরের আদিবাসীর জাত। এমনিতে কাজকর্মে চৌকশ কিন্তু একেবারে ভিতুর শেষ। একে এই জনমানবহীন পাথুরে দ্বীপ, তার ওপর চারদিকের বালির চড়ায় বিদঘুটে চেহারার ইগুয়ানারা গিজগিজ করছে সারাক্ষণ। দুদিন যেতেই নিমারার ভয়ে প্রায় নাড়ি-ছাড়ার অবস্থা। সে ধর্মে খ্রিস্টান। তার ধারণা কোনও অজানা পাপের শাস্তিতে বেঁচে থাকতেই সে নরকে পৌঁছে গেছে।

    আমি যত তাকে বোঝাই যে দেখতে ভয়ংকর হলে কী হয়, দ্বীপের ওই সব প্রাণী একেবারে নিরীহ, মানুষকে পর্যন্ত তারা ভয় করতে শেখেনি, আর লড়াই-এর পাঁয়তাড়া কষলেও নিজেদের মধ্যেও রক্তারক্তি মারামারি কখনও করে না, কিন্তু ভবি ভোলবার নয়। রাত্রে সে ভাল করে ঘুমোয় না পর্যন্ত। তার বিশ্বাস চোখের দু-পাতা এক করলেই সাক্ষাৎ শয়তানের ওইসব দূত চুপি-চুপি হানা দিয়ে তাঁবু সুদ্ধ আমাদের চিবিয়ে শেষ করে দেবে।

    নিমারার অবস্থা দেখে বেশ একটু ভাবনাতেই পড়ে গেলাম। খাওয়া নেই, ঘুম নেই, লোকটা শেষ পর্যন্ত পাগলই হয়ে যাবে নাকি! সঙ্গে যে খুদে ওয়্যারলেস ট্রাম্সমিটারটি ছিল তা-ই দিয়ে লিমাতে যেদিন স্টিমারটা তাড়াতাড়ি পাঠাবার জন্য খবর দিয়েছি সেই রাত্রেই নিমারা একেবারে খেপে গেছে মনে হল।

    সারাদিনের ঘোরাফেরার পর ক্লান্ত শরীরে সবে তখন খাওয়া-দাওয়া সেরে একটু ঘুমিয়েছি, হঠাৎ নিমারা হুড়মুড় করে তাঁবুর দড়িদড়া ছিঁড়ে কাঁপতে কাঁপতে আমার একেবারে গায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।

    বাঁচান, হুজুর বাঁচান!

    ধড়মড়িয়ে জেগে উঠে প্রথমটা তো তাকে একটি চড় কষাতেই যাচ্ছিলাম। অনেক। কষ্টে নিজেকে সামলে জিজ্ঞাসা করলাম রেগে, কী হয়েছে, কী?

    এবার শয়তান নিজেই এসেছে হুজুর। আর রক্ষে নেই!

    রক্ষে যদি নেই জানিস তো আমার ঘুম ভাঙালি কেন, হতভাগা! বিছানা থেকে উঠে পড়ে বললাম, কই কোথায় তোর শয়তান, দেখাবি চল।

    নিমারা সহজে কি যেতে চায়! শয়তানকে একবার সে দেখে এসেছে, আর একবার সামনে গেলেই তার দফা রফা এ বিষয়ে তার কোনও সন্দেহ নেই।

    কোনওরকমে টানা-হেঁচড়া করে তাকে বাইরে নিয়ে গিয়ে তার ভীত ইশারায় যা দেখলাম তাতে আমারও চক্ষুস্থির।

    নারবরো দ্বীপের মাঝখানে মরা আগ্নেয়গিরির প্রায় চূড়ার কাছে আমাদের তাঁবু খাটানো হয়েছে।

    কৃষ্ণপক্ষের রাত। চারিদিকের সমুদ্রে যেন গাঢ় নীল কালি গোলা। সেই গাঢ় নীলকৃষ্ণ সমুদ্রের জলে নারবরো আর ইসাবেলা দ্বীপের মাঝখানের সংকীর্ণ প্রণালীতে বিরাট কী একটা জলজন্তু ভাসছে দেখতে পেলাম। সেটাকে সবচেয়ে বড় জাতের নীল তিমি বা সিবাল্ডস ররকোয়াল ভাবতে পারতাম, কিন্তু নীল তিমিও তো ছেষট্টি-সাতষট্টি হাতের বেশি লম্বায় কখনও হয় না। তা ছাড়া নীল তিমির গা থেকে থেকে-থেকে এরকম আলো ঠিকরে বেরোয় বলে তো কখনও শুনিনি। গ্যালাপ্যাগোসের সবই অদ্ভুত। অতল সমুদ্রের কোনও অজানা বিরাট বিভীষিকাই আমার দেখবার সৌভাগ্য হল নাকি?

    দেখতে দেখতে বিরাট জলজন্তুটা সমুদ্রে ড়ুবে গেল। নিমারা তখন আর দাঁড়াতে পেরে বসে পড়ে দু-হাতে মুখ ঢেকেছে।

    তাকে ধমক দিয়ে বললাম, অত ভয়ের কী আছে? তোমার শয়তান তো সমুদ্র থেকে ডাঙায় ওঠেনি। তা ছাড়া নিজেই সে ভয়ে ড়ুব মেরেছে—চেয়ে দেখো।

    চোখ না খুলেই নিমারা বললে, না হুজুর, ও শুধু শয়তানের ছল। এখন ড়ুব দিয়েছে, কিন্তু দেখবেন ঠিক আবার অন্য মূর্তিতে এসে হাজির হবে।

     

    নিমারার কথাই এক দিক দিয়ে অক্ষরে অক্ষরে তার পরদিন ফলল বলা যায়। রাত্রে-দেখা সেই অজানা বিশাল জলচরের কথা মাথায় থাকলেও, রোজকার মতো সকালে বেরিয়ে ক্যামেরায় কটি অদ্ভুত প্রাণী ও দৃশ্যের ছবি তখন তুলেছি। নারবরো দ্বীপে হিংস্র প্রাণী একেবারে নেই বলা ঠিক নয়। এক ধরনের সাপই এই অহিংসার রাজ্যের কলঙ্ক। একটা ফণিমনসা জাতের অদ্ভুত গাছের ঝোপে সেই সাপের একটি বড় গিরগিটি ধরে খাওয়ার ছবি তন্ময় হয়ে তুলছি, এমন সময় পিঠে একটা খোঁচা খেয়ে চমকে উঠলাম।

    নিমারার অবস্থা কাহিল। তাকে তাঁবুতেই রেখে এসেছি শুইয়ে। সুতরাং হঠাৎ একেবারে খেপে গেলেও সে এমন চুপি চুপি এসে আমার পিঠে নিশ্চয় খোঁচা দেবে না। তাহলে এই জনমানবহীন দ্বীপে কে এসে আমার পিছনে দাঁড়িয়ে খোঁচা দিয়েছে।

    বলতে এতক্ষণ লাগলেও পলকের মধ্যে এসব ভাবনা বিদ্যুতের মতো মাথার মধ্যে খেলে গেল। তারপর পেছন ফিরতে যাচ্ছি, পিঠে আরও জোরে একটা খোঁচার সঙ্গে ভারি গম্ভীর গলায় শাসানি শুনতে পেলাম, ফেরবার চেষ্টা কোরো না, যেমন আছ সেইভাবে এগিয়ে চলো। তোমার পিঠে দোনলা বন্দুক ঠেকানো, তা বোধ হয় বুঝেছ।

    শুধু ওইটুকুই নয়, আরও অনেক কিছুই তখন বুঝে ফেলেছি। কথাগুলো ফরাসিতে বলা হলেও তাতে একটু বাঁকা টান। আলজিরিয়া কি মরক্কোতে যারা কয়েক পুরুষ কাটিয়েছে সেই ফরাসিরা যেভাবে কথা বলে সেই রকম কতকটা। আশ্চর্যের বিষয়, এই গলার আওয়াজ আর এই কথার টান কেমন যেন আমার চেনা বলেই মনে হল। কিন্তু তাই বা কী করে সম্ভব?

    কয়েক পা হুকুমমতো এগিয়ে গিয়েই হঠাৎ হেসে উঠে ফিরে দাঁড়ালাম। খবরদার! হাঁকের সঙ্গে সঙ্গে একটি বন্দুক আর একটি রিভলভার আমার দিকে উঁচিয়ে উঠল।

    রিভলভার যার হাতে, তালগাছের মতো লম্বা রোগা পাকানো বুড়োটে চেহারার সে লোকটিকে কখনও দেখিনি, কিন্তু দোনলা বন্দক আমার পিঠে ঠেকিয়ে যে কম করেছিল শুধু গলা শুনেই তার পরিচয় ঠিকই অনুমান করেছিলাম। যাকে দেখলাম সে তোমাদের এই সুস্তেল।

    গৌর হঠাৎ একটা হেঁচকিই যেন তুলল মনে হল।

    ঘনাদা কথা থামিয়ে সন্দিগ্ধভাবে তার দিকে চাইতেই আমরা বলে উঠলাম, জল খেয়ে নে না একটু।

    জল খাব কী! গৌরই খেঁকিয়ে উঠল আমাদের, ঘনাদার দিকে দু-দুটো বন্দুক ওঁচানো না? তা বন্দুক আর রিভলভার তারা ছুঁড়ল তো?

    না। ঘনাদার মুখে রহস্যময় হাসি।

    গুলি ছিল না বুঝি? না, খেলার বন্দুক? শিশিরের বোকার মতো প্রশ্ন।

    খেলার বন্দুক নয়, গুলিও ছিল। ঘনাদার মুখ আবার গম্ভীর হল।

    তবে? আমরা সবাই বেকুব।

    ঘনাদা আবার হাসলেন, গুলি ছুঁড়বে কী করে? সেই কথাই হাসতে হাসতে তাদের বললাম। বললাম, কই ছোঁড়ো গুলি। দেখি। একটু চুপ করে থেকে হতভম্ব মুখগুলো একটু উপভোগ করে আবার বললাম, ভড়কিতে আর লাভ কী! সারা দুনিয়া ছুঁড়ে এই অখদ্দে দ্বীপে আমায় গুলি করে মারবার জন্য হানা যে দাওনি তা বুঝেছি। এখন মতলবটা কী খোলাখুলি-ই বলল।

    খোলাখুলি-ই বলছি। বুড়োটে লম্বা লোকটিই বজ্রগম্ভীর স্বরে ভাঙা-ভাঙা ইংরেজিতে এবার কথা বললেন, আমাদের সঙ্গে আপনাকে যেতে হবে।

    কোথায়? কেন?

    জানতে পাবেন না। বুড়োর মুখ নয়, যেন লোহার মুখোশ।

    তাহলে কী করে যাই বলুন। ভাঙা ইংরেজির বদলে যদি নিজের ভাষায় কথা বলতেন তবু আপনার জাতটা, দেশটা কী বুঝতে পারতাম। সুস্তেলের তো ওসব বালাই নেই। টিউনিশিয়ায় জন্ম, জার্মানিতে শিক্ষা। যুদ্ধের পর রুশেরা কিছুদিন আটকে রেখেছিল বলত। তারপর ইংল্যান্ডের হয়ে অজানা জায়গার মানচিত্র আঁকার ছুতোয় আফ্রিকায় আর বলিভিয়ায় ইকোয়েডরে কিছুদিন ঘোরাঘুরি করে হঠাৎ একদিন নিরুদ্দেশ বলে সবাই জানে। আপনাদের মতো দুই অজানা আঘাটার মানুষের সঙ্গে কিছু না জেনে যেতে কি মন চায়?

    এত কথা যে-সুযোগের জন্য বলছিলাম তা এবার মিলে গেল। সুস্তেল আমার টিটকারিতে এতক্ষণ রাগে ফুলছিল। আমার কথা শেষ হতেই হুংকার দিয়ে উঠল, তবু তোকে যেতেই হবে, শুটকো বাঁদর। ভালয় ভালয় না যাস তো তার মতো পুঁচকে ফড়িংকে দু আঙুলে টিপে নিয়ে যাব!

    তা চেহারার দিক দিয়ে সুস্তেল সে তম্বি করতে পারে। সুস্তেলকে তো দেখেছ? মাংসের একটা পাহাড়, কিং কং তার কাছে কোন ছার!

    কিন্তু আমরা যে রোগা চিমসে দেখলাম! এমন একটা সুবিধে ছাড়তে না পেরে শিবু ফস করে বলে ফেললে।

    সে তাহলে ভুগে ভুগে হয়েছে। তিন মাইল সমুদ্রের তলায় তিন দুগুণে ছহপ্তা ড়ুবে থাকা তো চারটিখানি কথা নয়। সেই থেকেই ওর অসুখ! অম্লান বদনে শিবুর খোঁচা এবার অগ্রাহ্য করে আমাদের সত্যিকার হাঁ করে দিয়ে ঘনাদা আবার শুরু করলেন, তখন সে একটা দৈত্যবিশেষ। কিন্তু গর্জনের সঙ্গে আচমকা আমার একটি হাইকিক-এ হাতের বন্দুকটা ছিটকে পড়তেই প্রথমটা একটু ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেল। তারপর মনে হল বুনন খ্যাপা একটা হাতিই ছুটে আসছে আমার দিকে। ডিগবাজি খেয়ে হাত পাঁচেক দুরে ছিটকে পড়েও তার রোখ কি যায়! গা ঝেড়ে ঝুড়ে উঠে, আগুনের ভাঁটার মতো দু-চোখ দিয়ে আমায় যেন ভস্ম করতে এবার সন্তর্পণে দু-হাত বাড়িয়ে এগুতে লাগল। ধোবি-পাটে তাকে রামপটকান দেবার জন্যে তৈরি হচ্ছি। এমন সময় ঘাড়ে পিপড়ের কামড়ের মতো কী একটা জ্বালা পেয়ে ফিরে দেখি সেই পাকানো লম্বা বুড়ো শয়তানের মতো আমার পিছনে হাতে কী একটা নিয়ে দাঁড়িয়ে।

    তারপরে আর জ্ঞান নেই।

    জ্ঞান যখন হল তখন প্রথমটা স্বপ্ন দেখছি কিনা বুঝতে পারলাম না। এ কোথায় এলাম! ছোট্ট একটা জানলা-দরজাহীন কোটর বললেই হয়। ছাদটা এত নিচু যে বিছানার ওপর উঠে বসলেই যেন মাথায় ঠেকে যাবে। নারবরো দ্বীপ বিষুবরেখার ওপরে বলে সেখানে ছিল বেশ গরম আর এখানে দিব্যি ঠাণ্ডা। তা ছাড়া বাতাসেও কেমন একটা ওষুধ ওষুধ গন্ধ। স্থির হয়ে ব্যাপারটা ভেবে নিচ্ছি এমন সময় খুট করে একটা আওয়াজ হয়ে সামনের দেওয়ালেরই খানিকটা যেন সরে গেল। একগাল হাসি নিয়ে পাহাড়ের মতো শরীরটা কোনওরকমে সেই গা-দরজার ফঁক দিয়ে গলিয়ে সুস্তেল আমার বিছানারই এক ধারে এসে পড়ে বলল, যাক, ঘুম তাহলে ভাঙল এতদিনে!

    এতদিনে! মনে যা হল মুখে তা প্রকাশ করলাম না। বরং তাচ্ছিল্যের সুরে একটু হেসে বললাম, ভাঙল নয়, তোমরা ভাঙালে বলো! তা, কতদিন ওষুধপত্র দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখলে?

    তা মন্দ কী! প্যাসিফিক-এ শুয়েছ আর অ্যাটলান্টিক-এ জাগলে। এখন আইসল্যান্ড ছাড়িয়ে চলেছি।

    হুঁ, একটু চুপ করে থেকে বললাম, কিন্তু এ-নিউক্লিয়ার সাবমেরিনটি কোথায় পেলে? অ্যাটমিক সাব তো শুধু মার্কিন মুলুকেরই আছে জানতাম।

    অ্যাটমিক সাব! সুস্তেল সত্যিই চমকে উঠল, কে বললে তোমায়!

    ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে জেনেছি বোধহয়, যেমন সাত সমুদ্র খুঁজে আমায় কী জন্য চুরি করে এনেছ তাও জানতে পেরেছি।

    সুস্তেল প্রথম অবাক হওয়ার ধাক্কাটা খানিকটা সামলে বললে, কী জন্য এনেছি বলো দেখি?

    যে জন্য এনেছ অ্যাটলান্টিকের তলা দিয়ে লুকিয়ে যাবার সে একটি মাত্র রাস্তার খোঁজ জিজ্ঞাসা করলে তো আমি এমনই বলে দিতে পারতাম। তার জন্য ছুঁচ ফুটিয়ে অজ্ঞান করে চুরি করে আনবার দরকার ছিল না।

    দরকার ছিল। বলে সস্তেল একটু হাসল। আন্দাজ তমি অনেকটা করেছ, সবটা পারোনি। অ্যাটলান্টিকের তলায় রিফট ভ্যালির খাদের খবর তোমার চেয়ে ভাল কেউ জানে না এটা ঠিক, কিন্তু সে-খাদ ছকে দেওয়ার চেয়ে বড় কাজ তোমায় দিয়ে করাতে হবে।

    ঘনাদা থামলেন। শিবুর কাশিটা মাঝে মাঝে এমন বেয়াড়া হয়ে ওঠে।

    ফাঁক পেয়ে আর ঘনাদার মেজাজ পাছে বিগড়ে যায় এই ভয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, রিফট ভ্যালিটা কী ব্যাপার, ঘনাদা?

    ঘনাদা খুশি হয়ে বললেন, পৃথিবীর ওপরকার নয়, অ্যাটলান্টিক সমুদ্রের তলার এ একটা আঁকাবাঁকা জোড়া পাহাড়ের মাঝখানকার লম্বা গিরিখাত, আইসল্যান্ডের তলা থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণ আমেরিকার মাথা ছাড়িয়ে চলে গেছে। এক ধারে মিডঅ্যাটলান্টিক রিজ আর এক ধারে রিফট পাহাড়। এ রাস্তায় কোনও সাবমেরিন চুপিসারে গেলে আমেরিকা কি ইউরোপ হদিসও পাবে না। সুস্তেলের কথায় জানলাম শুধু এই ডোবা গিরিখাত চেনানো নয়, আটলান্টিকের ক-টি ড়ুবো পাহাড়ের হদিসও আমায় দিয়ে তারা পেতে চায়। ডাঙার পাহাড়-পর্বতের তুলনায় এ সব ড়ুবো পাহাড় যে পেট্রোল থেকে শুরু করে দামি সব ধাতুর কুবেরের ভাণ্ডার এ খবর তারা জানে।

    সমস্ত কথা শুনে একটু হেসে বললাম, আমায় যদি এতই দরকার তাহলে এ সাবমেরিনটা কাদের আমায় বলা উচিত নয় কি?

    অস্বস্তিভরে এদিক ওদিক চেয়ে সুস্তেল যেন একটু ভয়ে ভয়েই বললে, বলতে মানা আছে।

    মানা আছে। তার দিকে একদৃষ্টে চেয়ে তীব্রস্বরে বললাম, তাহলে দুনিয়ার ওয়াকিব মহলে যা কানাঘুষা চলেছে তা মিথ্যা নয়আমেরিকা ও রাশিয়া ছাড়া আর একটি গোপন তৃতীয় শক্তি কে বা কারা সত্যিই গড়ে তুলছে! আমেরিকা কি রাশিয়ার যে ভুল বা দোষই থাক তারা মানুষের সত্যি কল্যাণ চায়, কিন্তু এই তৃতীয় শক্তির সেসব কোনও দুর্বলতা নেই। আর যা-ই হোক, তোমার গায়ে ফরাসি রক্ত তো কিছু আছে, কী বলে শুধু পয়সার লোভে তুমি এদের কাছে নিজেকে বেচে দিয়েছ? নিজের দেশ বলে কিছু না মানো, মানুষ জাতের ওপরও কি তোমার মমতা নেই?

    সুলে কীরকম যেন বিহ্বল হয়ে পড়ল। দুবার ঢোঁক গিলে বলল, দেখো, দাস, আমার চেহারাটা প্রকাণ্ড হলেও ভেতরে ভেতরে সত্যি আমি দুর্বল। মনের জোর এত কম যে অন্যায় বুঝেও হঠাৎ প্রলোভনের কাছে হার মেনে বসি। বিশ্বাস করো, যা আমি করেছি তার জন্যে আমার আফসোসের সীমা নেই। আমি পুরস্কারের লোভে তোমার খবর দিয়ে ওভাবে ধরবার ব্যবস্থা না করলে ওরা তোমার খোঁজও পেত না। কিন্তু এখন উপায় কী?

    সুস্তেলের কথাগুলো যে আন্তরিক তা তার মুখ দেখেই বুঝলাম। এ কথার উত্তরে যা বলতে যাচ্ছিলাম তা কিন্তু আর বলা হল না। সেই শয়তানের মতো বুড়ো তখন। দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে। কামরার ভেতর ঢুকে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে আমায় একবার লক্ষ করে সে ভাঙা ইংরেজিতে সুস্তেলকেই বললে, যা বোঝাবার বুঝিয়ে দিয়েছ তো?

    হ্যাঁ, এই দিচ্ছি! বুড়ো হঠাৎ এসে পড়ায় সুস্তেল একটু যেন ভড়কে গেছে।

    আচ্ছা, বুঝিয়ে কমিটিরুমে এসো। এখানে বেয়াড়াপনার শাস্তি যে কী তা-ও জানাতে ভুলো না বলে আমায় একটু সম্ভাষণ পর্যন্ত না জানিয়ে বুড়ো চলে গেল।

    বুড়ো যেতেই আগ্রহভরে বললাম, উপায় কী তুমি জিজ্ঞাসা করেছিলে?

    সুস্তেল সভয়ে ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চাপা গলায় বললে, সাবধান! বেফাঁস আর কিছু বোলো না। এ ঘরে লুকোনো মাইক আছে। তোমার ঘুমের সময় বন্ধ ছিল, এখুনি চালু হবে।

    তার কথা শেষ হতে না হতে প্রায় অস্পষ্ট খুট করে একটা আওয়াজে বুঝলাম মাইক সজাগ।

    কী এখন করা যায়! সুস্তেলকে গোটাকতক কথা এখুনি না বললে নয়।

    তাকে চোখের ইশারা করে ধীরে ধীরে বললাম, তিন, একশো বাইশ, সাতাত্তর।

    সে খানিক হতভম্ব হয়ে থেকে হঠাৎ উৎসাহভরে বললে, ছয়!

    বললাম, তেইশ, চারশো পাঁচ, এগারো।

    সুস্তেল তৎক্ষণাৎ উঠে ওই কামরারই একটি টেবিলের ওপর থেকে কাগজ পেন্সিল নিয়ে এল।

    ব্যাপারটা কী হল? আমরা হাঁ করে ঘনাদার দিকে তাকালাম।

    কী আর, সাংকেতিক কথা! ঘনাদা একটু হাসলেন।

    সাংকেতিক কথা তো বুঝলাম! গৌর বললে, কিন্তু ও তো শব্দ নয়, সংখ্যা। আর আপনি বলতেই সুস্তেল বুঝল কী করে?

    লোগোগ্রাফি জানলেই বুঝবে! ঘনাদা অনুকম্পাভরে আমাদের দিকে চেয়ে বললেন, লোগাগ্রাফিতে দু হাজার পর্যন্ত সংখ্যা দিয়ে মোটামুটি সব কিছুই বলা যায়। সকলের অবশ্য অত মুখস্থ থাকে না। সঙ্গে লোগোগ্রাফির আলাদা অভিধান রাখতে হয়।

    এর পরে আর ট্যাঁ ফোঁ করবার কিছু নেই, তবু চোখ কপালে তুলে বললাম, আপনার বুঝি সব মুখস্থ?

    ঘনাদার মুখে স্বৰ্গীয় হাসি দেখা দিতেই শিবু জিজ্ঞাসা করলে, ওই সব হিজিবিজি অঙ্ক যে বলাবলি করলেন তার মানে কী?

    মানে? ঘনাদা বুঝিয়ে দিলেন, মানে প্রথমে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি লোগোগ্লাফি জানো? সুস্তেল তাতে জানালে, হাঁ। তখন তাকে খাতা পেন্সিল

    আনতে বললাম।

    একটু থেমে আমাদের মুখের চেহারাগুলো দেখে নিয়ে ঘনাদা আবার শুরু করলেন, খাতা পেনসিল আনবার পর কাগজে লিখে সব কথাবার্তা সেরে ফেললাম। চুক্তি হয়ে গেল যে দুশমনদের চোখে ধূলো দেবার ফন্দিতে সুস্তেল আমার সহায় হবে গোপনে। কিন্তু সুস্তেলের সব সাধু সংকল্প শেষ পর্যন্ত তার মনের দুর্বলতায় ভণ্ডুল হয়ে গেল। তার এবং সাবমেরিনের সকলের প্রাণ বাচানোর কৃতজ্ঞতাটুকু পর্যন্ত সে দেখাল না। লোগোগ্রাফিতে তার কাছে জেনে নিয়েছিলাম যে নারবরো দ্বীপ থেকে আমায় অজ্ঞান করে আনবার সময় নিমারাকে সঙ্গে না নিলেও আমার কটি দরকারি বাকস ব্যাগ তারা সাবমেরিনে তুলে নিয়েছিল। আইসল্যান্ড ছাড়িয়ে রিফট ভ্যালির খাদে সাবমেরিন ঢোকবার পর সেই ব্যাগ আর বাকস না থাকলে এ গল্প আর এখানে বসে করতে হত না। সেইখানেই সাবমেরিনটির কবর হয়ে যেত।

    কেন! অ্যাটমিক সাবমেরিন না? মুখ থেকে বেরিয়ে গেল আপনা থেকে।

    হ্যাঁ, অ্যাটমিক সাবমেরিনও বেগড়ায়। একসঙ্গে তখন ওপরে ভাসিয়ে তোলার আর হাওয়া শোধনের কল গেছে খারাপ হয়ে। সে সব যন্ত্র মেরামত করতে যতক্ষণ লাগবে তার আগেই কার্বন-ডায়াইড গ্যাসে আমাদের কারুর আর জ্ঞান থাকবে না? সুস্তেলের মুখ তো ছাইয়ের মতো ফ্যাকাশে। সেই শয়তান বুড়ো পর্যন্ত কেমন একটু দিশাহারা!

    আমার ব্যাগ থেকে ওই শিশি তখন বার করলাম।

    ওই শিশি, এক সঙ্গে সবাই বলে উঠলাম। ওই শিশিতে সাবমেরিন ভাসল?

    সাবমেরিন ভাসবে কেন? ঘনাদা অধৈর্যের সঙ্গে বললেন, হাওয়ার সমস্যা মিটল।

    ওই শিশিতে? আমরা আবার হাঁ।

    হ্যাঁ, ওই শিশিতে। ও-শিশিতে কী ছিল জানো? ক্লোরেলা নামে একরকম আণুবীক্ষণিক ফাস—যাকে ছত্রাক বা ছাতা বলে। সিকি আউন্স জলে প্রায় চার কোটি ক্লোরেলা থাকে। কার্বন-ডায়াসাইড থেকে তাড়াতাড়ি অকসিজেন হেঁকে বার করতে তার জুড়ি নেই। শিশি থেকে নানান পাত্রে সেই ক্লোরেলার ফোঁটা জলে ফেলে সমস্ত সাবমেরিনের নানা জায়গায় রাখবার ব্যবস্থা করলাম।

    দেখতে দেখতে বদ্ধ হওয়ার সব বিষ কেটে গেল।

    সময়মতো যন্ত্রপাতি মেরামত হল। তারপর প্রায় একমাস ধরে সমুদ্রের তলায় সমস্ত রিফট গিরিখাদ আর মরক্কোর পশ্চিমের মাদিরা অ্যাবিস্যাল প্লেন থেকে প্লেটো আর অ্যাটল্যান্টিস সী-মাউন্ট হয়ে সার্গাসো সমুদ্রের উত্তরে সোহ অ্যাবিস্যাল প্লেন পেরিয়ে বার্মুদা পেডেস্টাল পর্যন্ত লস্ট অ্যাটলান্টিকের বিশাল অতল রাজ্যের সন্ধান নিয়ে একদিন নিউফাউন্ডল্যান্ডের এক নির্জন তীরে গিয়ে উঠলাম।

    সেই শয়তান বুড়োর মতলব এবার স্পষ্ট বোঝা গেল। একটি নির্জন খাঁড়িতে ঢুকে সাবমেরিন থামবার পর বুড়ো এসে হঠাৎ বাইরে তার সঙ্গে একটু ঘুরে আসার অনুরোধ জানালে।

    হেসে বললাম, যা কুয়াশার দেশ, এখানে টহল দেবার শখ আমার নেই।

    তবু একবার বেড়িয়েই আসি চলোনা। এখানকার সীল মাছ একটা শিকারও করা যেতে পারে।

    প্রতিবাদ নিল জেনে ওভারকোট পরে নিয়ে বেরুলাম। দেখলাম শুধু বুড়ো নয়, সুস্তেলও সঙ্গে চলেছে। শিকারের লোভ দেখালেও বন্দুক শুধু বুড়োরই হাতে।

    তীর ছাড়িয়ে কিছুদূর যেতেই বুড়ো সোজাসুজি আসল কথা পাড়লে—লুকোনো ম্যাপটা এবার দাও, দাস।

    উঁচিয়ে ধরা বন্দুকটা অগ্রাহ্য করেই অবাক হয়ে বললাম, অ্যাটলান্টিকের তলার ম্যাপ! সে তো সাবমেরিনেই আছে।

    না, বুডোর গলার স্বরে যেন বাজ ডাকল, সে ম্যাপ ফাঁকি। সুস্তেল সব আমার কাছে স্বীকার করেছে। আসল ম্যাপ তুমি নিজের কাছে লুকিয়ে রেখেছ—দাও।

    সুস্তেলের দিকে জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাকালাম। সে একেবারে অমানুষ নয়। অত্যন্ত অস্বস্তির সঙ্গে থতমত হয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলে। বুডোর দিকে ফিরে বললাম, যদি না দিই।

    তাহলেও এ-ম্যাপ আমি পাব, শুধু এই নির্জন তীরে তোমায় শেষ নিঃশ্বাস নিতে হবে। কেউ জানতেও পারবে না কিছু।

    বুড়ো বন্দুকের সেফটিক্যাচটা সরাল।

    সুস্তেল হঠাৎ এগিয়ে এসে বললে, দাঁড়ান, ওই ছুঁচোর জন্য গুলি খরচ করবার দরকার নেই। একবার আমায় বেকায়দায় কাবু করেছে, তার শোধ আমি নিজে হাতে নিতে চাই।

    শোধ সে সত্যিই নিলে। দুবার আমার প্যাঁচে মাটি নিয়ে তিনবারের বার আমার পিঠের ওপর ঘটোৎকচের মতো চেপে বসল ঘাড়টা লোহার মতো হাতে আমার পেছনে টেনে ধরে। প্রায় মটকে যায় আর কী!

    বুড়ো এবার এগিয়ে এসে সব খুঁজে শেষ পর্যন্ত জুতোর সুকতলার নীচে থেকে ভাঁজ করা ম্যাপটা বার করে নিয়ে বললে, ছেড়ে দাও কালো ভূতটাকে।

    ছেড়েই তারা রেখে গেল। তারপর একা সেই জনমানবহীন খাঁড়ির পাড়ে পড়ে রইলাম।

    দিন তিনেক উইলো-গ্রাউসের বাসা খুঁজে খুঁজে শুধু ডিম খেয়ে কাটাবার পর, এক সীল-শিকারি দলের মোটর বোট সেখানে না এলে আর ফিরতে হত না।

    ঘনাদা থামলেন। শিশিরের মুখেই আমাদের সকলের প্রশ্ন সবিস্ময়ে বার হল। বলেন কী, ঘনাদা! আপনি সুস্তেলের কাছে হারলেন, আবার যে ম্যাপের জন্যে এত, তা-ও ওরা কেড়ে নিলে।

    ঘনাদা রহস্যময় হাসি হেসে বললেন, সুস্তেলের কাছে না হারলে ওই জাল ম্যাপ ওরা বিশ্বাস করে কেড়ে নিয়ে যায়! সুস্তেলের সঙ্গে গোপনে ওই বোঝাপড়াই ছিল। সুস্তেলকে ওইটুকুর জন্যেই ক্ষমা করেছি।

    অভিভূত হয়ে ঘনাদাকে শেষ একটা সিগারেট ধরিয়ে দিয়ে যাবার সময় শিশির মেঝে থেকে কী যেন একটা কুড়িয়ে নিল মনে হল!

    নীচে নেমে জিজ্ঞাসা করলাম, কী একটা কুড়িয়ে নিলি তখন?

    শিশির ভেঁড়া পাকানো কাগজটা আমাদের সামনে খুলে ধরে বললে, আমাদের

    সব ফন্দি যাতে ফাঁস সেই আসল জিনিস।

    দেখি ক-জনে মিলে সুস্তেলের নামে যে চিঠি বানিয়েছিলাম তারই হাতে লেখা খসড়াটা। ঘনাদা কখন কোথায় যে কুড়িয়ে নিয়েছে জানতেও পারিনি।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঘনাদা সমগ্র ২ – প্রেমেন্দ্র মিত্র
    Next Article প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    Related Articles

    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    ঘনাদা সমগ্র ২ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }