Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ঘনাদা সমগ্র ২ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    প্রেমেন্দ্র মিত্র এক পাতা গল্প884 Mins Read0

    মুলো

    হ্যাঁ, মুলো। আর কিছু নয়, মুলো।

    তাই নিয়েই তুমুল কাণ্ড!

    আমাদের শিবু নেহাত মরমে মরে আছে তাই, তা না হলে তার অনুপ্রাসের বাতিকে নিশ্চয় বলত, মুলোবানানটা হ্রস্ব উ দিয়েই করলাম—তা থেকেই আমাদের বাহাত্তর নম্বরের আমূল পরিবর্তন। কিংবা এখান থেকে আমাদেরই নির্মূল হবার অবস্থা।

    সামান্য মুলোর বাজারে নতুন উঠেছে। শিবু তাই খুব খুশি মনে গণ্ডা দুয়েক কিনে এনে আড্ডা ঘরে তাই নিয়ে আবার একটু জাঁক করেছিল।

    আজ একটা জিনিস যা খাওয়াব! মরশুমের একেবারে প্রথম ফলন!

    আমরা সকলেই একটু অবাক হয়ে শিবুর দিকে চেয়েছিলাম। সেই সঙ্গে একটুও সন্দিগ্ধও।

    শিবুর মুখে বাজার সম্বন্ধে এরকম বাহাদুরির দাবি বেশ অস্বাভাবিক! বাজার করার নাম শুনলেই আগে সে তো ব্যাজার হয়ে থাকত। বাজারের পালা পড়লে প্রথমে সে নানা অজুহাতে এ দায় এড়িয়ে আর কারও ঘাড়েই চাপাবার চেষ্টা করত। তাতে সফল হলে এমন বাজার করে আনত যে আমাদের পাঁচক চূড়ামণি রামভুজের রান্নার জাদুর হাতেও সে সব জিনিস মুখে তোলবার যোগ্য হত না।

    একটা দিন ঘনাদার মুখ আষাঢ়ের মেঘ হয়ে থাকত। সে মেঘ কাটাতে পরের দিন আমাদের বাজার খরচটা বাধ্য হয়েই যে ডবল করতে হত তা বলাই বাহুল্য।

    নিজেদের খাওয়া নষ্ট হওয়া আর এই উপরি খরচার সমস্ত গায়ের ঝাল শিবুর ওপর গিয়ে পড়ত।

    কিন্তু সব গাল-মন্দ দাঁত-খিচুনি শিবু ঠেকাত করুণ মুখের একটি ছোট্ট জবাবে আমি কি বাজার করতে জানি! কিছু যে চিনি না!

    ওই এক বাজারের ধাক্কাতেই তার পর পারতপক্ষে শিবুর ওপর বহুদিন ওভার দেওয়া হত না।

    কিন্তু সম্প্রতি হঠাৎ শিবুর এক অদ্ভুত পরিবর্তনে আমরা বেশ একটু অবাক অবশ্য হয়েছি। ক-দিন হল শিবু নিজে থেকেই বাজারের ভারটা নিতে এগিয়ে আসছে!

    এ-সুমতির রহস্যটা শিশিরের কাছেই জানা গেছে। শিবু নাকি কোথায় শুনেছে বা পড়েছে যে, ভীমসেনের স্বাস্থ্য নিয়ে মার্কণ্ডেয়-র পরমায়ু পেতে হলে নিজে হাতে বাজার করতে হয়। সব দীর্ঘজীবী বড় বড় লোকেরা নাকি তাই করেছেন ও করেন।

    এই কিছুকাল আগেই স্যার যদুনাথ সরকার পর্যন্ত।

    তা শিবুর বাজারে আমরা খুব কষ্টে আছি এমন কথা বলতে পারব না। এই সেদিন পর্যন্ত পোকা ধরা বেগুন, পাকা তেঁড়স, পচা আলু আর বাসি মাছ ছাড়া বাজারে আর কিছু যে খুঁজে পেত না, এখন তার পছন্দর তারিফই করতে হচ্ছে মনে মনে। বাজারের টাটকা সওদা আর তার সঙ্গে এটা-ওটা নতুন কিছু প্রায় রোজই আমাদের ভাগ্যে জুটছে।

    বাজার নিয়ে তার হামবড়াইটা কিন্তু এই প্রথম।

    বিস্ময়ের সঙ্গে সন্দেহটা সেই জন্যই।

    কী অবাক চিজ খাওয়াবি! গৌর মুখ টিপে হেসে জিজ্ঞাসা করেছিল, তেরো হাত বীচির বারো হাত কাঁকুড়!

    না, না! শিশির সে ঠাট্টায় যোগ দিয়েছিল, নতুন ফসল বলছে যে! নির্ঘাত তা হলে কচু শাক! বর্ষার শেষে মাঠ বন এখন ছেয়ে গেছে না!

    এখন কচু বলো ঘেঁচু বলল শিবু নিজের সাফল্যে নিশ্চিত থেকে বলেছিল, খাওয়ার সময় দুবার চেয়ে খাবে!

    বটে! আমাকে এবার ফোড়ন কাটতে হয়েছিল, এমন আজব মাল কী নতুন উঠেছে বাজারে! পুঁই মেটুলি নাকি?

    না, ব্রকোলি!

    আমরা চমকে যথাস্থানে চোখ তুলেছিলাম।

    হ্যাঁ, এ সরল সমাধান আর কারও নয়, স্বয়ং ঘনাদার। শিশিরের দেওয়া জ্বলন্ত সিগারেট হাতে আসর ঘরের বিশেষ আরামকেদারায় অর্ধ নিমীলিত চোখে শায়িত তাঁর উপস্থিতির কথাটা ভুলে যাওয়া আমাদের উচিত হয়নি।

    কিন্তু ব্রকোলি? সে আবার কী!

    আমাদের প্রায় সকলেরই মনের প্রশ্নটা মনের মধ্যেই চাপা থেকেছে।

    গৌর ওর মধ্যে একটু ওয়াকিবহাল হবার চাল দেখিয়ে মুরুব্বির মতো বলেছে, ব্রকোলি কী জানিস তো? এক রকম কী বলে–কী বলে—

    হ্যাঁ, হ্যাঁ, ওই তো যাকে বলে–আমি বিজ্ঞের মতো গৌরের পন্থাই ধরেছি।

    শিশির আর এক ধাপ এগিয়ে ঘনাদাকেই যেন সমর্থন করে জানিয়েছে, ঠিক ধরেছেন, ঘনাদা! শিবু হাঁ করতেই বুঝেছি যে ব্রকোলি ছাড়া আর কিছু নয়। বাজারে এখন তো ব্রকোলিরই ওঠবার সময়।

    ঘনাদার ভুরু জোড়া একটু কি কুঁচকেছে।

    শিবুকে হার মানাবার উৎসাহে অতটা লক্ষ করিনি তখন। তার বদলে শিবুর চেহারাটাই যেন কেমন কেমন লেগেছে। নতুন সওদার তার চমকে দেওয়ার প্যাঁচটা ধরা পড়ে গেছে ঠিকই। কিন্তু তাইতেই মুখোনা কি অমন ভ্যাবাচাকা দেখায়।

     

    দুপুরবেলা খেতে বসে ব্রকোলি হঠাৎ মুলো হয়ে যাওয়ায় হতাশ কিন্তু খুব হইনি। পালংশাক দিয়ে নতুন মুলোর ঘণ্ট বেশ তৃপ্তি করেই খেতে খেতে শিবুকে তারিফ করেছি।

    তা, তোর ব্রকোলি তো সত্যি খাসা দেখছি, শিবু!

    শিবু ডাইনে বাঁয়ে না চেয়ে নিজের থালাটার ওপরেই অখণ্ড মনোযোগ দেওয়ায় আরও তাতিয়ে বলেছি, এরকম ব্রকোলি রোজ রোজ এখন আনিস।

    ব্রকোলি! ভাতের তালের ওপর মুলো-পালং-ঘণ্টর একটি ছোট পাহাড় সাফ করতে করতে ঘনাদা আমাদের দিকে ভ্রুকুটিভরে চেয়ে বলেছেন, কই, ব্রকোলি কোথায়?

    কোথায় আর! আপনার পাতে! শিশির বাঁকা হাসির সঙ্গে জানিয়েছে, শিবুর ব্রকোলির ঘণ্টই তো খাচ্ছেন?

    ব্রকোলির ঘণ্ট খাচ্ছি! ঘনাদার গলা ভারী হয়ে উঠেছে, এ-ঘণ্টে ব্রকোলি

    আছে!

    আছে বই কী! গৌরের হঠাৎ বেয়াড়া রসিকতার ঝোঁক চেপেছে। এখন শুধু অন্য নামে আছে মর্ত্যলোকে! আপনার যা ব্রকোলি তাই এখানে মুলো!

    মুলো! ঘনাদা মুলো-পালঙের শেষ গ্রাসটা যথাস্থানে পাঠিয়ে যেন শিউরে উঠে বললেন, ব্রকোলি আর মুলো এক! জানো ব্রকোলি কাকে বলে? জানো বাঁধাকপির গাঞী আর ফুলকপির মেল মিলিয়ে ব্রকোলির বিবর্তন ঘটাতে কত যুগের সাধনা লেগেছে? জানো–

    অত জানাজানির দরকার কী, ঘনাদা! ঘনাদাকে তাঁর ভাষণের মধ্যে থামিয়ে দিয়ে শিশির সবচেয়ে মারাত্মক ভুলটি এবার করে ফেলেছে, যার নাম ভাজা চাল তার নামই মুড়ি। ও মুখে যখন ভাল লাগছে তখন ব্রকোলিও যা মুলোও তাই ধরে নিন না।

    ধরে নেব? ব্রকোলি আর মুলো এক বলে ধরে নেব! ঘনাদার ধাপে ধাপে ওঠা গলায় মেঘ-গর্জন শোনা গেছে, তার মানে ব্রকোলির নামে আমায় মুলো খাওয়ানো হয়েছে! মুলো!

    শেষ কথাটা যেন চাপা আর্তনাদের মতো বেরিয়েছে ঘনাদার গলা থেকে।

    আমরা এইবার প্রমাদ গনেছি। শিবু কাতর হয়ে বলেছে, কেন ঘনাদা, মুলোগুলো তো খারাপ ছিল না।

    বলছিলাম কী, ঘনাদা! গৌরও অনুতপ্ত হয়ে শান্তির সাদা পতাকা উড়িয়েছে, খাওয়া যখন হয়েই গেছে তখন আজকের মতো ক্ষমা-ঘেন্না করে নিন।

    ঘনাদার কানে যেন এসব কথা পৌঁছোয়ইনি। আমাদের উপস্থিতিই ভুলে গিয়ে জলদগম্ভীর স্বরে তিনি ডাক দিয়েছেন, রামভুজ!

    রামভুজ ব্যস্ত হয়ে ছুটে এসে সভয়ে বলেছে, হ্যাঁ, বোলিয়ে বড়া বাবু!

    কী বলবেন আর কী করবেন এবার ঘনাদা? আমরা দুরু দুরু বুকে তাঁর মুখের দিকে চেয়ে ইষ্টনাম জপ করেছি। ঘনাদা কি খাওয়া ছেড়ে উঠে যাবেন? সেই কথাই বলতে ডেকেছেন রামভুজকে?

    না, তা নয়। মুলোর ঘণ্টের চাঁছাপোঁছা থালাটা শুধু বদলে দিতে বলেছেন ঘনাদা।

    তারপর নিঃশব্দে সব খাওয়া শেষ করে সেই যে টঙের ঘরে উঠে গেছেন, আর আমাদের সঙ্গে বাক্যালাপই নেই বললেই হয়।

    চেষ্টার ত্রুটি আমরা কি কিছু করেছি? মোটেই না। সকালে বিকেলে গিয়ে ধন্না দিয়েছি তাঁর দরজায়।

    তাতে ঘনাদার আবাহনও নেই বিসর্জনও নেই। আমাদের যেন দেখেও দেখেননি। নেহাত আমরা নাছোড়বান্দা বলে হু হাঁ দিয়ে সেরেছেন।

    বালাখানা থেকে এই সবচেয়ে সরেস অম্বুরি তামাক আনলাম, ঘনাদা! আমরা স্বস্ত্যয়নের নৈবেদ্যটা তাঁর সামনে ধরে দিয়েছি কখনও।

    হুঁ, তিনি সেটার দিকে একবার দৃকপাত করে আবার নোটবুকের মতো ছোট কী একটা বই-এর পাতা উল্টোতে তন্ময় হয়ে গেছেন।

    কী এমন বই-এ ঘনাদার হঠাৎ মনোযোগ? সকালে বিকেলে বার কয়েক তাঁকে সেই বই-এ ড়ুবে থাকতে দেখে অনেক চেষ্টা করেও সেটার মর্ম উদ্ধার করতে পারিনি।

    সংক্ষিপ্ত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নিশ্চয়! ঘনাদার ঘর থেকে ফেরার পর শিবুর অনুমানটা আমাদের মনে লেগেছে। কিন্তু ঘনাদার হঠাৎ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় এত আঠা কেন?

    রহস্যটা কিন্তু বোঝা গেছে পরের দিনই। আমরা যথারীতি সকালে নিষ্ফল হাজিরা দিয়ে ফিরে এসেছি।

    খানিকবাদেই ওপর থেকে সেই পেটেন্ট গলা শুনে উৎসুক হয়ে কান খাড়া করতে হয়েছে।

    ঘনাদা বনোয়ারিকে ডেকে ডেকে কী বলছেন। কথাটা জনান্তিকেই বলা হচ্ছে। নিশ্চয়, তবে বাহাত্তর নম্বরের বাইরের গলি ছাড়িয়ে সদর রাস্তা পর্যন্ত কারও কাছে তা অশ্রত থাকা উচিত নয়।

    হ্যাঁ, বলবি ডাক্তারখানায় যাচ্ছি, বুঝলি! ঘনাদা তারস্বরে তাঁর গোপন সংবাদটা জানিয়েছেন, যারা সব আসবে তারা যতই কাকুতি-মিনতি করুক, বড়বাজারে যে গেছি তা বলবি না। তাতেও যদি না শোনে তো আর দেখা হবে না বলে বিদেয় করবি, বুঝেছিস?

    আমাদের হাত-পা প্রায় ভেতরে সেঁধিয়ে যাবার অবস্থা।

    না, ঘনাদার দর্শনপ্রার্থীদের ভিড়ের ভয়ে নয়, বড়বাজার ডাক্তারখানা এইসব গোলমেলে কথা শুনে।

    হঠাৎ তাঁর ডাক্তারখানায় যাবার কী দরকার পড়ল?

    টঙের ঘর থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে তাই তাঁকে ঘিরে ধরি।

    ডাক্তারখানায় কেন, ঘনাদা? কী হয়েছে!

    মানুষের শরীরের কথা কিছু বলা যায়! নীরব না থেকে আমাদের ওপর কৃপা করে ঘনাদা উদাসীন দার্শনিক হয়ে ওঠেন, শরীর থাকলেই ব্যাধি আছে!

    ও বাবা! আমরা সেখানেই প্রায় বসে পড়ি আর কী! এর চেয়ে কথা বন্ধ যে ভাল ছিল, কিংবা জ্বলন্ত গলার বকুনি! এ মূর্তিমান বৈরাগ্যশতককে সামলাব কী করে?

    তবু যা তোক একটা চেষ্টা করতেই হয়।

    অসুখ করেছে আপনার? আমরা শশব্যস্ত হয়ে উঠি, তা আপনি ডাক্তারখানায় যাবেন কী! আর সেই বড়বাজারে। আমরা এখুনি ডাক্তার ডেকে আনছি!

    ডাক্তার! ঘনাদা এমন একটা গলার স্বর আর মুখভঙ্গি করেন যেন নতুন হাওড়া ব্রিজ বানাতে আমরা নাপিত ডাকবার কথা বলেছি।

    কেন? আমরা অপ্রস্তুত হয়ে নিজেদের মূঢ়তার কৈফিয়ত হিসেবে বলি, ডাক্তার কিছু করতে পারবে না? ডবল এম আর সি পি, এফ আর সি এস ডেকে আনব।

    না, তাতে লাভ নেই। ঘনাদা পরম তিতিক্ষার সঙ্গে জানান, ওদের গাল ভরা ডিগ্রিই আছে, আসল যা জিনিস তা পাবে কোথায়! দেখি জোগাড় হয় কি না! পারি যদি তো ফিরব।

    অ্যাঁ! আমরা একেবারে আঁতকে উঠি ভয়ে। ঘনাদা বলেন কী?

    আপনার সঙ্গে তা হলে যাই? আমরা আকুল আগ্রহ জানাই।

    কিন্তু ঘনাদা যেন শিউরে ওঠেন। সঙ্গে যাবে। তার মানে মুলো খেয়ে যে সর্বনাশটা হয়েছে তা একেবারে মোক্ষম করতে চাও? সঙ্গে কেউ থাকলে ও জিন-সেঙের সন্ধান আর পাব! এমনিতেই এক কণা যদি পাই তা হলে বুঝব নেহাত পরমায়ুর জোর।

    এরপর বোবা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া উপায় কী!

    আচ্ছা, চলি! বলে ঘনাদা যেন ফাঁসিকাঠে উঠতে যাওয়ার মতো করে উদাস মুখে বিদায় নিয়ে যান।

    বারান্দায় সিঁড়ির মাথাতেই একবার শুধু ফিরে দাঁড়ান।

    দেখো, নেহাতই যদি ফিরি, ঘনাদা নিরাশ শুকনো গলাতেই বলেন, তা হলে জোরালো একটু পথ্যির দরকার হতে পারে। জিন-সেঙের ধাক্কা সামলানো তো সোজা কথা নয়।

     

    আর আমাদের কিছু বলতে হয়?

    জিন-সেঙ কী চিজ জানি না। তাতে কী হয়েছে। জোরালো পথ্যি বলতে যা কিছু মাথায় আসে সব কিছুরই জোগাড় রাখতে ত্রুটি করি না।

    জোরালো পথ্যি মানে কী? নিজেদেরই জিজ্ঞাসা করি।

    উত্তরটাও নিজেরাই দেবার চেষ্টা করি: গরম দুধ, শিঙি, মাগুর, কই-এর ঝোল?

    মনটা খুঁতখুঁত করে। ওসব তো দুবলা পাতলা পেট-রোগাদের পথ্যি। তেমন জবরদস্ত কিছুর ধাক্কা কি ওই পানসে পথ্যিতে সামলানো যাবে? তার জন্য তন্দুরি নান, মটনের রগন জোস গোছের কিছু না হলে চলে? অন্তত মটন দোপেঁয়াজা, চিকেন কাটলেট তো বটেই।

    বড় ফাঁপড়েই পড়তে হয়। কোনটা ছেড়ে কোনটা রাখব? শেষ পর্যন্ত মীমাংসায় হার মেনে জল-সাবু থেকে শুরু করে শিককাবাব, শোহন হালুয়া পর্যন্ত সব কিছুর জোগাড়েই লেগে যাই।

    জোগাড়ের সঙ্গে সঙ্গে হা-হুতাশ আর পরস্পরের দোষ ধরা চলে।

    আর ঘনাদা ফিরবেন? কোনও আশাই নেই! যাবার সময় মুখটা কেমন ফ্যাকাশে মেরে গেছে দেখলি না! কিন্তু হঠাৎ হলটা কী? দিব্যি তো বহাল তবিয়তে ছিলেন!

    হবে আর কী? হয়েছে ওই মুলো! ওই মুলোই সর্বনাশ বাধিয়েছে।

    হ্যাঁ, মুলোতে নিশ্চয় অ্যালার্জি!

    তা অ্যালার্জির ওষুধ খেলেই তো হয়। শিবু নিজের অপরাধটা একটু হালকা করবার চেষ্টা করে।

    তুই আর তোর ওই মুলোই তো সব নষ্টের মূল! আমরা তার ওপর খেঁকিয়ে উঠি, মুলো আনবার কী দরকার ছিল? আবার কী চিজ খাওয়াব বলে বাহাদুরি!

    তা মুলো উনি খেলেন কেন? শিবু দুর্বলভাবে একটা তর্ক তোলে।

    খেলেন, মানে ব্রকোলি ভাবতে ভাবতে ভুলে খেয়ে ফেলেছেন নিশ্চয়–

    আমরা শিবুর বেয়াড়া প্রশ্নটাকে আমলই দিই না—আর ওই ভুল করে খেয়েই আরও সাংঘাতিক হয়েছে বোধহয় অ্যালার্জি!

    আমার তো ভয় হচ্ছে রাস্তাতেই মুখ থুবড়ে না পড়েন।

    আমাদের সঙ্গে যাওয়া উচিত ছিল।

    কিন্তু যেতে দিলেন কই? কেউ সঙ্গে থাকলেই নাকি, সেই জংশন না কী, আর পাওয়া যাবে না।

    জংশন নয়, জিন-সেঙ! শিশির সংশোধন করে।

    জংশন বা জিন-সেঙ যাই হোক–হতাশ হই আমরা—ও জিনিস কি আর পাওয়া যাবে! শুনলি না, এক কণার জন্য সারা বড়বাজার চষে ফেলতে হবে।

    তা হলে?—আমাদের গলা ধরে আসে—তা হলে ওই এক কণা জিন-সেঙ পাওয়া মানে তো ঘনাদার আর না ফেরা! মানে এ বাহাত্তর নম্বর অন্ধকার!

    অন্ধকার আবার কীসের? বাহাত্তর নম্বরে আর থাকছি নাকি!

    হ্যাঁ, বাহাত্তর নম্বর তো ছার, এ বনমালি নস্কর লেনেই আর ঢুকতে পারব না।

    মেসের জন্য নতুন বাড়ি কোথাও— শিবু কথাটা শুরু করতেই আমরা তাকে এই মারি তো সেই মারি।

    আবার বাড়ি, আবার মেস! লজ্জা করে না?

    আমি তো দেশ ছেড়েই চলে যাব ঠিক করলাম! শিশির তার অটুট সংকল্প জানায়।

    কোথায় যাবি? আমি শিশিরের সঙ্গী হবার জন্য তৈরি হই—কটক, না কাটামুণ্ডু?

    কটক, না কাটামুণ্ডু?–শিশির যেন অপমানে জ্বলে ওঠে—তার বদলে বেহালা বঁড়শে বললেই পারতিস। ওর নাম দেশ ছেড়ে যাওয়া? যাব কঙ্গো কি কটোপাক্সি।

    এই? আমিই বা কম যাই কেন? তোকে একটু পরীক্ষা করে দেখলাম। দেশ যদি ছাড়তেই হয় তা হলে কঙ্গো আর কটোপাক্সি কেন? যাব আঙ্গারা বেসিন কি কুইন মড রেঞ্জ!।

    ও আর এমন কী!—শিশির হালে পানি না পেলেও, ভাঙে তবু মচকাতে চায় —আরও দূর গেলেই হয়!

    আরও দূর এ পৃথিবীতে যাবার কোথাও নেই যে! ঘনাদাকে তাতাবার আশায় সেদিন সকালেই ভূগোল হাটকানো বিদ্যের জোরে আমি শিশিরকে পেড়ে ফেলি—

    আঙ্গারা বেসিনটা হল উত্তর মেরুতে, আর কুইন মড রেঞ্জ দক্ষিণ মেরুতে।

    বেশ একটু থমথমে অবস্থা। ঘনাদার অভাবের শোকটা এমন একটা মোক্ষম টেক্কা দেওয়ার বাহাদুরিতে একটু যে হালকা করব তার কি জো আছে তবু?

    ও মেরু-টের কিছু নয়!—গৌর বিদ্যে জাহির করবার আর যেন সময় পেল না—যেতে হলে যাও আল আজিজিয়া, নয়তো নর্থ ভোস্টক!

    আমরা সবাই কি একটু ভ্যাবাচাকা?

    ভেতরে যা-ই হই, বাইরে ধরা দেবে কে?

    আমি ঘনাদার নাসিকাধ্বনির অক্ষম অনুসরণ করে অবজ্ঞাভরে বলি, তা ওর চেয়ে ভাল জায়গা ভেবে না পাও তো ওই দুটোর একটাতেই যাও।

    ভাল নয়, সবচেয়ে খারাপ জায়গা বলেই যেতে চাইছি! গৌর আমার। খোঁচাটাকে ভোঁতা করে দিয়ে বলে, একেবারে জ্বলন্ত চুলোয় ঝলসাতে চাও তো যাও লিবিয়ার আল আজিজিয়া। থার্মোমিটারের পারা ১৩৬.৪ ফারেনহাইটে গিয়ে পৌঁছয়, আর মাইনাস ১২৬.৯-এ যদি জমে বরফের চাঁই হতে চাও তো যাও দক্ষিণ মেরুর নর্থ ভোস্টক এ দুনিয়ার সবচেয়ে ঠাণ্ডা জায়গা।

    ওইমিয়াকন!

    হৃদ্যন্ত্রগুলো লাফ দিয়ে প্রায় মুখের হাঁ দিয়েই বেরিয়ে যায় আর কী! ক্ষীণ হলেও গলাটা শুনেই চমকে ফিরে তাকিয়ে দেখি বৈঠকঘরের দরজায় সশরীরে স্বয়ং ঘনাদা। কিন্তু যেভাবে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, এখুনি পড়ে যাবেন যে! কী যেন কোনও মিঞার সম্বন্ধে ভুলও বকছেন তো।

    ধরাধরি করে এনে তাঁর মৌরসি কেদারায় বসিয়ে পাখাটা ফুল স্পিডে চালিয়ে দেবার পর আসল কথাটা খেয়াল হয়। আরামকেদারা আর হাওয়ায় কী হবে? দরকার তো এখন অন্য কিছুর!

    আপনার পথিাগুলো এখানেই আনতে বলি, ঘনাদা? ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করি।

    পথ্যি শুনে ঘনাদার মুখে ক্ষণেকের জন্য একটু যদি ছায়া নেমে থাকে তো গৌরের ব্যাখ্যাতেই তা কেটে যায়!

    অত পথ্যি আবার এখানে ধরানো মুশকিল! গৌর বেশ চিন্তিত হয়ে বলে, মটন আর চিকেনের ক-টা প্লেটেই তো এ ছোট টেবিল ভরে যাবে?

    সব প্লেট আবার দরকার কী? শিশির সুযুক্তি দেয়, বাছাই করে গোটা কয়েক আনলেই তো হয়। ঘনাদা তো আর সব খাবেন না।

    শিশিরের প্রস্তাবটা শেষ হতে না হতেই ঘনাদার উদ্বিগ্ন কণ্ঠ শোনা যায়, না, না, খাবার ঘরেই চলল। এতটা যখন এসেছি তখন এটুকুও পারব?

    গলাটা সাত দিনের সাবু খাওয়া রগির মতো চিচি করলেও ঘনাদা আমাদের সমর্থনের অপেক্ষায় না থেকে নিজে নিজেই ইজিচেয়ার থেকে উঠে বেশ চটপটে পা বাড়িয়ে দেন।

    পিছু পিছু গিয়ে খাবারঘরে তাঁর সঙ্গে এবার বসতে হয়।

    তা টেবিলটা যে ভালই সাজানো হয়েছে ঘনাদার চোখ দেখেই তা বোঝা যায়। ঘনাদা কোন দিকে যে প্রথম হাত বাড়াবেন যেন ঠিক করতে পারেন না। গলাটা অবশ্য তাঁকে এখন চামচিকের মতোই রাখতে হয়।

    এত সব খাবার করতে গেলে কেন আবার? ঘনাদার করুণ গলার মৃদু অনুযোগ।

    তা হলে দু-একটা তুলে রাখি! গোর যেন সে অনুযোগে লজ্জা পেয়ে ভুল শোধরাতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে।

    আহা! আবার তোলাতুলির কী দরকার! চিঁচিঁ গলা প্রায় চিঁহি হয়ে ওঠে ঘনাদার। খালার আগলাতে টেবিলের ওপরই ঝাঁপিয়ে পড়েন বুঝি!

    তা, সাজানো টেবিলের মান ঘনাদা রাখলেন। খাওয়া শেষ করে শিশিরের দেওয়া সিগারেট ধরিয়ে যখন তিনি আবার আসরঘরের আরামকেদারার শোভা বাড়ালেন তখন টেবিলের প্লেটগুলোয় পিঁপড়ে কেঁদে যাচ্ছে বললে খুব বাড়িয়ে বলা হয় না। তাঁর চিচি গলাও তখন চাঙ্গা হয়ে উঠেছে অবশ্য।

    বনোরিকে খাবার জল দিয়ে যাবার হাঁকে গলার এই উন্নতি দেখেই ভরসা পেয়ে জিজ্ঞাসা করতে পারলাম, শেষ পর্যন্ত জংশন তা হলে পেলেন?

    জংশন নয়, জিন-সেঙ, শিশির সংশোধন করলে।

    হ্যাঁ, হ্যাঁ, ওই জংশন-ই হোক, আমি সংশোধনটায় এমন কিছু দাম না দিয়েই বললাম, আর জিন-সে-ই বলি, ঘনাদা যে পেয়েছেন এই আমাদের ভাগ্য।

    কিন্তু কই আর পেলাম! ঘনাদা আমাদের মুখের হাঁ-গুলো খানিক বুজতে না দিয়ে বললেন, জিন-সেঙ কলকাতা শহরে তো ছার, ইন্ডিয়াতেই কোথাও আছে কি না বলতে পারি না।

    কিন্তু জিন-সেঙ না পেলে তো আপনার—

    শিবু ঘনাদার দিকে চেয়ে উদ্বেগে আশঙ্কায় কথাটা আর শেষ করতে পারলে না।

    জিন-সেঙ না পেয়ে থাকলে ঘনাদা এক টেবিল খানা সাফ করে কীসের ধাক্কা সামলালেন সে প্রশ্নটাও তখন আমাদের মনে উঁকি দিচ্ছে।

    ঘনাদা সব উদ্বেগ আশঙ্কা কৌতূহলই ঠাণ্ডা করলেন।

    বনোয়ারির নিয়ে আসা জলের গেলাসটা প্রায় এক চুমুকেই খালি করে কোঁচার খুঁটে জলের সঙ্গে মুচকি হাসিটাও যেন মুছে বললেন, হ্যাঁ উপায় নেই, তাই জিন-সেঙের সস্তা বদলি দিয়েই কাজ সারতে হল।

    জিন-সেঙের সস্তা বদলি! ঘনাদা যেন একটু মাত্রা ছাড়াচ্ছেন। গৌরের উচ্চারণের ধরনে সেই সন্দেহটা একেবারে লুকোনো রইল না।

    হ্যাঁ, জিন-সেঙের বিকল্প রিন-সেন! ঘনাদা কিন্তু নির্বিকারভাবে জানালেন, তাও দাঁও বুঝে চার আঙুলের দাম চাইল চার হাজার!

    চার হাজার টাকা! চার আঙুল মাপের জিনিসের দাম!

    তার মানে এক আঙুল পরিমাণ হাজার টাকা?

    আমাদের চোখগুলো তখন যেমন কপালে, গলাগুলো তেমনই আর খুব মোলায়েম নয়। সন্দেহের বদলে তাতে শঙ্কাটাই প্রধান হয়ে উঠছে।

    জিন-সেঙ না রিন-সেন ওই ছাইপাঁশ কিছু সত্যি খেয়ে থাকুন বা না খেয়ে থাকুন, ঘনাদার মাথাটাতে হঠাৎ একটু গোলই বাধল নাকি!

    ফিরে এসে আসরঘরে ঢোকার মুখেই তাঁর প্রথম আবোল-তাবোল কথাটাও মনে পড়ে গেল। প্রলাপ বকা তখনই তো শুরু হয়ে গেছে মনে হয়!

    তবু অবস্থাটা ঠিক মতো বোঝবার জন্য একবার জিজ্ঞাসা করলাম, তা, ওই হাজার টাকা আঙুল মানে ইঞ্চির রিন-সেন-ই কিনলেন? ওই কোন মিঞার কথা বলছিলেন তার কাছেই বুঝি!

    মিঞার কথা বলছিলাম! ঘনাদা ক্ষণেক একটু হকচকিয়ে গিয়ে তারপর অনুকম্পার হাসি হাসলেন, না, কোনও মিঞার কথা বলিনি, শুধু ওইমিয়াকন-এর নাম করেছিলাম।

    আমাদের হতভম্ব মুখগুলোর ওপর চোখ বুলিয়ে করুণ স্বরে তারপর ব্যাখ্যা যা করলেন, তাতে অবস্থা আরও কাহিল-সবচেয়ে ঠাণ্ডা জায়গার কথা কী হচ্ছিল না তোমাদের? তাই শুনে ওইমিয়াকন-এর কথা মনে পড়ল। পাঁচ-পাঁচটি আঁটি সেখানে যদি অমন দাতাকর্ণ হয়ে না দিয়ে আসি তা হলে আজ বিক্রম থাপাকে তার বাবার কথাটা মনে করিয়ে দিতে হয়!

    জিন-সেঙ, রিন-সেন, পাঁচ আঁটি, দাতাকর্ণ, ওইমিয়াকন, বিক্রম থাপা, আবার তার বাবা-সব মিলিয়ে মাথাগুলো যে আমাদের তখন চক্কর খাচ্ছে তা নিশ্চয় বলবার দরকার নেই।

    তারই মধ্যে একটু সামলে উঠে গৌরই প্রথম জিজ্ঞাসা করলে, কীসের আঁটি দান করে এসেছিলেন? ওই জিন-সেঙের? ওখানে কারখানা আছে বুঝি?

    কারখানা? ওখানে জিন-সেঙের কারখানা! অ্যাপোলো ইলেভন-এর আর্মস্ট্রংকে চাঁদে চিনেবাদামের দর যেন জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, ঘনাদা গৌর আর সেই সঙ্গে আমাদের মূঢ়তায় সেই রকম যেন ব্যথা পেয়ে বললেন, ওইমিয়াকন বলতে কী বোঝায় তা জানো? ওইমিয়াকন হল একটা শহরের নাম। পৃথিবীর সবচেয়ে ঠাণ্ডা শহর। তখন দুনিয়ার সবচেয়ে ঠাণ্ডা জায়গার কথা বলছিলে না? সে জায়গা অবশ্য অ্যান্টার্টিক মানে দক্ষিণ মেরুর নর্থ ভোস্টক। সেখানে এক দশমিক কম মাইনাস একশো সাতাশেও থার্মোমিটারের পারা নামে, কিন্তু সে জায়গা তো ধু-ধু তুষারের তেপান্তর। মানুষের পাকা বসতি আছে এমন শহর তো নয়। সে রকম শহর হল সাইবিরিয়ায় এই ওইমিয়াকন। আর্কটিক সার্কল যাকে বলে সেই সুমেরু বৃত্তের বাইরে ও দক্ষিণে হলেও এ শহরে শীতকালে থার্মোমিটারের পারা মাইনাস ছিয়ানব্বইও ছোঁয়। আর সে শীত তো আমাদের মতো পৌষ মাসেই কাবার নয়। বছরের আট মাসই যা কিছু তরল সব জমে পাথর হয়ে থাকে।

    ওইমিয়াকন-এই সমশের-এর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। তখন তার নাম অবশ্য সমশের নয়, সেমেন রুজনিকভ। তাকে ও অঞ্চলের আদিবাসী ইয়াকুট বলেই ধরে নিয়ে সাইবেরিয়ায় অজানা অসীম টাইগা অঞ্চলের গাইড ও সঙ্গী হিসেবেই সবে বহাল করেছি।

    খটকা লেগেছে অবশ্য গোড়াতেই। ওইমিয়াকন শহর হিসেবে এমনও কিছু নয়। কম-বেশি হাজার তিনেক লোকের সেখানে বসতি। যাকে রুপোলি শেয়াল বলা হয়, মহামূল্য পশমি ছাল ফার-এর জন্য উত্তর মেরু অঞ্চলের সেই প্রাণীটি পোষবার একটা ফার্ম-ই ও শহরের প্রাণ বলা যায়।

    যখনকার কথা বলছি তখন শেয়াল পোষা ফার্ম-এর সবে পত্তন হয়েছে। মেরু অঞ্চলের ফার শিকারি আর বল্গা হরিণের পাল অসীম টাইগায় যারা চরিয়ে বেড়ায় সেই ইয়াকুট রাখালদের ওটা একটা সময়-অসময়ের মেলবার আস্তানা মাত্র।

    আধ-পোষা বল্গা হরিণের থেকে শুরু করে টাইগা অঞ্চলের পশু-পাখির বিস্তারিত খোঁজ নেবার জন্য ওইমিয়াকন-ই ক-দিনের জন্য প্রধান ঘাঁটি করেছিলাম। অভিযানে বার হলে নাগাড়ে অন্তত দু-তিন হপ্তা টহল দেবার মতো রসদ সঙ্গে রাখা দরকার। সেই ব্যবস্থা করতে গিয়েই সেমেন মানে সমশের-এর ওপর প্রথম সন্দেহ জাগল একটু। আমার নির্দেশ মতো কয়েকটা জিনিস সেমেন সেদিন ওইমিয়াকন ঘুরে সওদা করে এনেছে। সেগুলো দেখতে দেখতে অবাক হয়ে বললাম, তুমি তো আসল জিনিসই ভুলে গেছ দেখছি! কই, স্ট্রোগানিনা কই?

    কী বললেন?

    না, প্রশ্নটা সেমেন ওরফে সমশের-এর নয়। আমাদেরই।

    একটু অনুকম্পার হাসির সঙ্গে ঘনাদা আমাদের অবজ্ঞার প্রতি করুণা কটাক্ষ করে বললেন, সমশের-এর চোখেও সেই প্রশ্নই দেখে আশ্চর্য হয়েছিলাম।

    স্ট্রোগানিনার কথা কি ভুলে গিয়েছিলে নাকি?মনের ক্ষীণ সন্দেহটাকে তবু প্রশ্রয় না দিয়ে সমশেরকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, শুধু তো দুটো জিনিসই আনতে দিয়েছি চোখন আর-স্ট্রোগানিনা। তারই আসলটা ভুলে গেলে?

    আজ্ঞে? এবারও কাতর বিহ্বল প্রশ্নটা আমাদেরই, ওগুলো কী খাবার-দাবারের নাম?

    হ্যাঁ, আমাদের এইটুকু বুদ্ধির পরিচয়েও যেন কৃতার্থ হয়ে ঘনাদা ব্যাখ্যা করলেন, চোখনকে মালাই চিজ-এর একরকম কুলপি বলতে পারো। তবে নোনতা। আর স্ট্রোগানিনা হল বরফে জমানো কাঁচা মাছ।

    ইয়াকুট হয়ে তাদের সবচেয়ে পেয়ারের খাবার স্ট্রোগানিনা জানবে না! এমনটা হতেই পারে না। ভুলে যাবার কারণ তাই অন্য কিছু বলে ধরে নিয়েছিলাম।

    কিন্তু টাইগায় টহলদারিতে বার হবার পর কয়েকদিনের মধ্যেই সমশের সম্বন্ধে। সন্দেহটা আর উড়িয়ে দেওয়া গেল না। ওইমিয়াকন থেকে রওনা হয়ে তখন দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রায় খান্দিগার কাছাকাছি ঘুরে বেড়াচ্ছি। হঠাৎ ফার গাছের জঙ্গলের মাঝে একটা জায়গা চোখ দুটোকে যেন চুম্বকের মতো আটকে দিলে। বরফের মতো ঠাণ্ডা মাটির সঙ্গে প্রায় লেপটে এক রাশ কমলা রঙের খুদে খুদে পেরেকের মাথা যেন জটলা পাকিয়ে আছে।

    নিজের চোখকে সত্যিই বিশ্বাস করতে পারছি না তখন। তন্ময় হয়ে দেখতে দেখতে হঠাৎ সমশেরের কথায় চমকে ভেঙেছে।

    কী দেখছেন এত?

    অবাক হয়ে সমশের-এর দিকে খানিক চেয়ে থেকে তার কথাটা বিশ্বাস করতে না পেরে বলেছি, কী দেখছি, সত্যি জিজ্ঞাসা করছ?

    হ্যাঁ, করছি তো! আমার গলার স্বরে একটু অস্বস্তি বোধ করে সমশের বলেছে, ওদিকে একটা মিঙ্ক ভাম চলে গেল কিনা, তাই ভাবছি কী এত দেখছেন।

    আমিও একটা কথা ভাবছি, সেমেন! তার চোখে চোখ রেখে বেশ একটু কড়া। গলায় বলেছি, তুমি কি সত্যি ইয়াকুট?

    কেন? কেন? সমশের বেশ একটু অস্থির হয়ে বলেছে, আমি ইয়াকুট নয়তো কী?

    কী, তাই তো ভাবছি! ইয়াকুট হয়ে তুমি স্ট্রোগানিনা কাকে বলে জানতে না, এই ক-দিন টাইগায় ঘুরে দেখলাম তুমি এ-অঞ্চলের নদী-পাহাড় বন কিছুই ঠিকমতো চেনো না। এখন আবার আমি কী দেখছি জিজ্ঞাসা করলে অম্লান বদনে। তোমার পক্ষে ইয়াকুট হওয়া অসম্ভব। সত্যি করে বলো তো, সেমেন রুজনিকভ তোমার আসল নাম কি না?

    আরও কিছুক্ষণ পরিচয় লুকোবার বৃথা চেষ্টা করে সমশের শেষ পর্যন্ত সব কথাই স্বীকার করেছিল। সেমেন রুজনিকভ নয়, নাম তার সমশের থাপা। এমনিতে বেশ ভাল ঘরের ছেলে। শিক্ষাদীক্ষাও অবহেলা করবার মতো নয়, শুধু পেশাটা যা বেছে নিয়েছে তা অত্যন্ত নোংরা। সমশের গুপ্তচর হিসেবে এ অঞ্চলে এসেছে। এখানকার আদিবাসীদের সঙ্গে চেহারায় মিল দেখে ভাষা ইত্যাদিতে যথাসম্ভব তালিম দিয়ে কোনও শত্রুপক্ষের শক্তি—তাকে ইয়াকুট সেজে ওখান থেকে সব রকম দরকারি খবর সংগ্রহ করে আনতে পাঠিয়েছে।

    কাজ সে ইতিমধ্যে খুব কম করেনি। তার ওপর আমার কাছে চাকরি বাগিয়ে তার সুবিধে হয়েছে খুব বেশি। আমি যখন তাকে সহায়-সঙ্গী হিসেবে বহাল করেছি বলে ভেবেছি, তখন আসলে সে-ই আমায় বাহন করেছে তার কার্যোদ্ধারের জন্য। এ অজানা অঞ্চলে নিরাপদে নির্ভয়ে ঘোরাফেরার জন্য আমার মতো কাউকেই তার দরকার ছিল।

    সব শুনে আমি তাকে দুটি রাস্তার একটি বেছে নিতে বলেছি। হয় তাকে গুপ্তচর হিসেবে ধরা পড়তে হবে, নয় এ পর্যন্ত যা কিছু সে সংগ্রহ করেছে সমস্ত আমার সামনে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

    সমশের থাপা শেষ পথটাই বেছে নিলে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে নিয়তিই তার সংকল্পে চরম বাদ সাধবে বলে ভয় হল।

    টাইগা থেকে ফিরে ওইমিয়াকন-এর ভেতরে তখন ঢুকেই পড়েছি। আর পোয়া খানেক পথ গেলেই আমাদের আস্তানায় পৌঁছে যাই।

    হঠাৎ আপনা থেকে আর্তনাদ বেরিয়ে এল আমার গলা থেকে, নাক! তোমার নাক সামলাও, সমশের!

    নাক! সমশের চমকে উঠে নাকে হাত লাগাল।

    চমকে উঠলাম আমরাও। নাকে হাত হঠাৎ? কী সামলাতে?

    নাক চুরি যাচ্ছিল নাকি? গৌরের বেয়াড়া প্রশ্ন।

    গোঁফ চুরির মতো নাক চুরিও যায় বোধ হয়! শিশিরের তার ওপর ফোড়ন।

    অন্য দিন হলে এই বেয়াদবিটুকুতেই বৈঠক বানচাল হয়ে যেতে পারত। আজ পথ্যিগুলোর পয়ে ঘনাদার খোশমেজাজে চিড় ধরল না।

    নাক চুরিই বলতে পারো, আমাদেরই একরকম সমর্থন জানিয়ে ঘনাদা গলায় যেন ভয়ের কাঁপুনি তুললেন, তার চেয়েও বুঝি সাংঘাতিক।

    দু সেকেন্ড আমাদের মনে কথাটা বসবার সময় দিয়ে ঘনাদা আবার শুরু করলেন, চুরি গেলে তবু ফেরত পাবার আশা থাকে। এ একেবারে জন্মের মতো লোপাট হবার ভয়। অস্থির হয়ে তাই সমশেরকে প্রাণপণে নাক ঘষতে বললাম। প্রাণপণে ঘষে ঠাণ্ডায় জমে সাদা হয়ে যাওয়া নাকটায় যদি রক্ত চলাচল করাতে পারে। তা না হলে ও নাক আর বাঁচানো যাবে না, পচে খসে যাবে। সাইবেরিয়ার টাইগার ঠাণ্ডার এই এক বিভীষিকা।

    সমশেরকে আর দুবার বলতে হল না। রাস্তার ধারে পিঠের বোঝা নামিয়ে দাঁড়িয়ে সে তখন খ্যাপার মতো নাক ঘষতে শুরু করেছে।

    নাকটা তাতে বাঁচল, কিন্তু এক জায়গায় দাঁড়িয়ে যতক্ষণ নাক ঘষেছে তাতে একটা পা-ই গেছে ঠাণ্ডায় জমে। সে পা-টা শেষ পর্যন্ত কেটে বাদই দিতে হল। তাতেও সমশেরকে নিয়ে যমে-মানুষে টানাটানি।

    সে টানাটানির মধ্যে তার গুপ্তচরগিরির কীর্তিগুলো নম্বন্ধেই দারুণ ভাবনায় পড়লাম। কথা ছিল ওইমিয়াকন-এ পৌঁছেই তার সে গোপন কাগজপত্রের পুঁজি সে আমার হাতে তুলে দিয়ে আমার সামনেই জ্বালিয়ে দেবে। রাস্তায় নাক জমে যাওয়ার পর থেকে সে পুঁজি কোথায় যে লুকোনো তার বলবার ফুরসতই কিন্তু সে পায়নি। বলবার মতো অবস্থাও তার ছিল না।

    তার মরণ-বাঁচন-দোলার অসুখের মধ্যে নিজেই একদিন তার ডেরায় গিয়ে জিনিসপত্র থেকে শুরু করে তার কামরায় খুঁজতে কিছু বাকি রাখিনি। তখন ওখানকার সব বাড়িই ছিল কাঠের বড় বড় গাছের রোলা কেটে তৈরি। সে কাঠের কামরায় চোরা ফোকর কোথাও থাকতে পারে ভেবে মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত ঠুকে ঠুকে হয়রান হয়ে গেছি। কোনও হদিসই মেলেনি।

    সমশেরকে যদি না বাঁচানো যায়, শেষ পর্যন্ত তার গোপন পুঁজির খবর সে যদি না দিয়ে যেতে পারে, তা হলে কী হওয়া সম্ভব তাই ভেবেই বুকটা কেঁপে উঠেছে বার বার। আমি এখন সন্ধান না পেলেও, পরে কোনওদিন কোনও লুকোনো জায়গা থেকে সমশেরের গুপ্তচরগিরির কীর্তি বার হয়ে পড়া কিছুমাত্র আশ্চর্য নয়। সমশেরের সঙ্গে আমার নামটাও তখন এই কুৎসিত জঘন্য ব্যাপারের সঙ্গে যে জড়িয়ে ভাবা হবে! সমশের আমার কাছেই কাজ করেছে, তাকে নিয়েই আমি টাইগা অঞ্চলের দুর্গম সব জায়গা ঘুরে বেড়িয়েছি। আমিই যে খোদ চক্ৰী নই কে বিশ্বাস করবে তখন সে কথা! বিশেষ করে সমশের তো তখন সব ধরাছোঁয়ার ওপরে চলে গেছে।

    যেমন করে হোক সমশেরের বেঁচে ওঠা তাই একান্ত দরকার। কিন্তু সেইটেই অসম্ভব মনে হয়েছে। ওইমিয়াকন-এর আধা হাতুড়ে ডাক্তারের ওপর ভরসা না রেখে দুশো পঁচিশ মাইল দূরের আরও বড় ঘাঁটি খানডিগা থেকে ঘোড়ায় চড়িয়ে সত্যিকার বড় সার্জন এনেছি। যতদূর সম্ভব চেষ্টা করে তিনিও একদিন হাল ছেড়ে দিয়ে বলেছেন, না, আর আশা নেই। নাড়িই ছেড়ে যাচ্ছে!

    সত্যিই চোখে অন্ধকার দেখেছি।

    কিন্তু সেই অন্ধকারেই একটা ছবি যেন ভেসে উঠেছে। মাটির সঙ্গে প্রায় লেপটানো খুদে খুদে কমলা রঙের থোক থোক একরাশ যেন পেরেকের মাথা।

    সমশেরের তারপর নাড়ি ফিরে এসেছে। শেষ পর্যন্ত সেরেও উঠেছে পুরোপুরি, একটা পা বাদে অবশ্য।

    সারল বুঝি ওই আপনার জংশন-এ! আমি সবিস্ময়ে বললাম।

    জংশন নয়, জিন-সেঙ–সংশোধন করলে শিশির।

    ঘনাদা সায় দিয়ে বললেন, হ্যাঁ, ওই হল জিন-সে। নেহাত দৈবের দয়া না হলে ও বস্তুর দেখা পাওয়া যায় না। পেলেও চেনা শক্ত। ভাগ্যক্রমে যা পেয়েছিলাম সবটাই মাটি কেটে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলাম। তা পরিমাণে খুব অল্প কী? প্রায় পাঁচশো গ্রাম। সাইবিরিয়ার টাইগায়, এমনকী জিন-সেঙের খাস মুল্লুক খাবারভস্ক অঞ্চলেও যেসব পেশাদার সন্ধানী এ জিনিস খুঁজে ফেরে, তাদের এক মরশুমের সংগ্রহও চারশো গ্রামের ওপর কখনও ওঠে না। চারশো গ্রাম তো চারটিখানি কথা নয়। সরেস মাল হলে চারশো গ্রামের দামেই দালান তোলা যায়। সত্যিই জিনিসটা সাতরাজার ধন কিনা! সব কিছুই তার শাহানশাহি চালের। বীজ থেকে কল বার হতেই দু বছর লাগে। বাড় এমন আস্তে যে বোঝাই যায় না। বছরে দেড় গ্রাম ওজন যদি বাড়ে তা হলেই যথেষ্ট। কিন্তু গুণ? তিল পরিমাণ বেটে খাওয়ালে একটা তাগড়া জোয়ান হার্টফেল করে মরে যায়। তিলের কণার কণা খাওয়ালে মরতে বসা রোগী জ্যান্ত হয়ে ওঠে। সমশেরও তাই হল।

    কিন্তু, শিবু আমাদের সকলের মনের ধোঁকাটাই ব্যক্ত করলে, এক তিলের কণার কণাতেই যখন অমন কাজ হল তখন, আপনার কী বলে, পাঁচ-পাঁচটা আঁটি দাতব্য করতে গেলেন কেন? করলেনই বা কাকে?

    কাকে আর? ওই সেমেন রুজুনিকভ মানে সমশের থাপাকেই! ঘনাদা যেন রাজা হরিশচন্দ্রের প্রক্সি দিয়ে বললেন, আমার বাসাতেই সমশেরের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলাম। সেরে-সুরে ওঠবার পর তার প্রতিজ্ঞাটা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললাম, এবার তা হলে লুকোনো মালগুলো কোথায় রেখেছ বার করে দেবে চলো। ওগুলো না পোড়ানো পর্যন্ত স্বস্তি নেই।

    আজ্ঞে হ্যাঁ, তা তো বটেই! মুখে স্বীকার করলে সমশের। কিন্তু তবু তার নড়বার নাম নেই।

    একটু অধৈর্যের সঙ্গে বললাম, তা তো বটেই যদি হয় তো চুপ করে বসে আছ কেন? বেশি দূর কোথাও যদি হয় তো খোঁড়া পায়ে তোমার যাবার দরকার নেই। শুধু

    জায়গাটার হদিস দাও, আমি খুঁজে বার করে আনছি। আজ্ঞে না, আপনাকে অত কষ্ট করতে হবে না!

    সমশেরের এই ভুয়ো তোয়াজের কথায় জ্বলে উঠলাম এবার, আমায় যদি কষ্ট না করতে হয় তো তুমি-ই করো! যেখানে যেতে হয় যাও তাড়াতাড়ি!

    আজ্ঞে যাব আর কোথায়! বলে সমশের যেখান থেকে তার লুকোনো মাল বার করে আনল তা দেখে আমি তাজ্জব!

    সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা হিসেবে সমশের কোন সুযোগে আমার কামরায় আমারই বিছানার পুরু গদির নীচে তার সব কিছু লুকিয়ে রেখেছিল এতদিন?

    বেশ সুশীল সুবোধ হয়ে বার করে দিলেও তার লুকোনো পুঁজি পোড়াতে যাবার সময় সমশের প্রায় কাঁদো কাঁদো।

    সত্যিই এগুলো পোড়াবেন?

    পোড়াব না তো কি এখানকার পুলিশকে উপহার দেব? আমি কামরা গরম করার চুল্লিতে এক এক করে সেগুলো ফেলতে শুরু করলাম।

    কিন্তু আমার কথা একবার ভেবেছেন! সমশের আকুল আবেদন জানালে।

    তোমার কথা ভেবেছি বলেই তো গুপ্তচর বলে ধরিয়ে না দিয়ে তোমায় ভালয় ভালয় দেশে ফেরার সুযোগ দিচ্ছি!

    কিন্তু ফিরে আমি করব কী! সমশের এবার প্রায় ড়ুকরে উঠল। এই খোঁড়া পা নিয়ে আমায় তত তিলে তিলে উপোস করে মরতে হবে। তার চেয়ে এখানে মরাই ভাল ছিল। ও ধন্বন্তরীর গুঁড়ো দিয়ে কেন আমায় বাঁচাতে গেলেন?

    সমশেরের আক্ষেপের মধ্যেই মনঃস্থির আমি করে ফেলেছি।

    কিট ব্যাগ খুলে কাগজের প্যাকেটটা তার সামনে ধরে নিয়ে বললাম, নাও।

    নেব? প্যাকেটটা খুলেই সমশের কিন্তু আঁতকে উঠল ভয়ে, এ কী! এ তো মমি দেখছি! পেটের ভেতর জন্মাবার আগে যেমন থাকে তেমনই সব বাচ্চার মমি!

    মমি নয়। অনেক কষ্টে তাকে বোঝাতে হল, এই হল সাতরাজার ধন জিন-সেঙের শেকড়। এই পাঁচ আঁটি নিয়ে দেশে চলে যাও, সারা জীবন খাবার ভাবনা আর তোমায় ভাবতে হবে না। আর এগুলোও যদি নেহাত ফুরোয় কি হারায়, তখন তোমাদের নেপালেরই রিন-সেন খুঁজে বার কোরো। জিন-সেঙ যে জানে রিন-সেন চিনতে তার অসুবিধা হবে না।

    সমশের আমার কথা যে ভোলেনি আজ তার বড় প্রমাণ পেলাম। জিন-সেঙ ফুরিয়ে ফেলে তার ছেলে বিক্রম থাপাই এখন বাপের হয়ে রিন-সেন-এর ব্যবসা করছে। না জেনেশুনে ন্যায্য দামই চেয়েছিল আমার কাছে। সমশের থাপার নাম করে পুরনো দুটো কথা বলতেই একবারে অন্যমূর্তি। একটু পরিচয় পেতেই একেবারে জোড়হস্ত হয়ে রিন-সেনের গুঁড়ো আমায় সেবন করিয়ে তবে ছেড়েছে। তা

    হলে তোমাদের ওই সর্বনাশা মুলোর বিষক্ষয় আজ হয়, না আমি আর ফিরে আসি?

    কত বড় ফাঁড়া যে আমাদের গেছে তা ভাল করে বোঝবার সময় দেবার জন্যই ঘনাদা টঙের ঘরে এবার চলে গেছেন। শিশিরের সিগারেট টিনটাও সেই সঙ্গে গেছে

    অবশ্য!

    হঠাৎ দিব্যজ্ঞান পেয়ে আমি সবিস্ময়ে বলেছি, ও! মুলো দিয়েই তা হলে মুলোর বিষক্ষয়! জিন-সেও তো আসলে একরকম মুলো!

    জিন-সেঙ নয়, শিশির গম্ভীরভাবে সংশোধন করেছে, জংশন!

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray
    Next Article ঘনাদা সমগ্র ১ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    Related Articles

    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    ঘনাদা সমগ্র ১ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }