Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ঘনাদা সমগ্র ২ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    প্রেমেন্দ্র মিত্র এক পাতা গল্প884 Mins Read0

    ঘনাদার শল্য সমাচার

    কোন ভাগ্যে একটা বেফাঁস বচন মুখ ফসকে বেরিয়ে গিয়েছিল কে জানে! কিন্তু তাইতেই অমন একেবারে কেল্লা ফতে!

    গোলা-গুলি, রকেট, বোমা, টর্পেডোতে যা হয়নি, এ যেন এক গুলিতেই তা হাসিল।

    এ ক-দিন কী আর করতে বাকি রেখেছি।

    প্রথমে খানা-দানার এলাহি কাণ্ডকারখানা! সেসব খানার খুশবুতে শুধু বাহাত্তর নম্বর কেন, সমস্ত বনমালি নস্কর লেন ছাড়িয়ে গোটা ভোটের তল্লাটটাই ম-ম করে উঠেছে।

    আজ হিঙের কচুরি আর চিংড়ির কবরেজি কাটলেট, পরের দিন চিকেন চাওমিন আর সুইট অ্যান্ড সাওয়ার মাছ।

    দু-চার দিন এমন রসালো খানাপিনায় মুখ মেরে গিয়ে অরুচি ধরবে, তার উপায় নেই।

    এ তো মন মাতানো মেনু তৈরির মামুলি কেতাবি ছক নয়, একেবারে নতুন বৈজ্ঞানিক ফরমুলার ফিরিস্তি।

    বেশ ক-দিন খানদানি চৰ্য-চোষ্যেব পর হঠাৎ একদিন যখন যেমন মরসুম, তার মতো ফলমূল সন্দেশ-রসগোল্লা রাবড়ির সাত্ত্বিক আহার।

    পুরো সাত্ত্বিক আহারটা ঘনাদার কাছে অবশ্য যোলো আনা সই নয়। তাই একদিন মাত্র তা চালিয়েই সটান বিরিয়ানি পোলাও মোরগ মসল্লম আর শিক কাবাবের প্লেট সাজাতে হয়েছে।

    বিরিয়ানি পোলাওয়ের জায়গায় মোগলাই পরোটা, মোরগ মসল্লমের বদলে রগন জোস আর শিক কাবাবের জায়গায় চিৎপুরি চাপ বদল করেও ফল সেই একই।

    প্লেটগুলো অবশ্য ঠিক সাফ হয়ে যাচ্ছে। শিশিরের সিগারেটের টিনগুলো যথারীতি শিস দিয়ে আবরণ মুক্ত হয়ে যথাসময়ে খালি হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু ঘনাদা যেন সেই এক ভিজে বারুদের সলতে, তুবড়িতে আগুন লাগানো দূরের কথা, তা থেকে ভাল করে ক-টা আগুনের ফুলকিও বার করা যাচ্ছে না।

    ঘনাদা কি বিরক্ত? গরম মেজাজে আছেন? না, না মোটেই না। ওই চেলাকাঠ-মার্কা মুখে যতটা খোশ-ভাব ফোটা সম্ভব, তা ঠিকই ফুটেছে মনে হচ্ছে।

    গলার বোল কিন্তু শুধু হু আর হাঁ, আর মুখে সেই ধাঁধা-পেঁচানো মৃদু একটু হাসি, মিশরের কোনও স্ফিংকস-এর মুখে যা হয়তো খোদাই করা আছে।

    ধরাছোঁয়া যায়, প্রতিরক্ষার তেমন দুর্দান্ত ম্যাজিনো লাইনও ভেদ করা যায় অল্পে, কিন্তু শুধু হু হাঁ আর ধাঁধাটে হাসির এই বেয়াড়া বেড়া পার হওয়া যায় কী করে?

    চেষ্টার কিছু ত্রুটি অবশ্যই হয়নি। একেবারে মহাভারত ধরেই আরম্ভ করা হয়েছে।

    আরম্ভ করেছে গৌর। শিশিরের সঙ্গে তার আগে থাকতেই যেমন মহলা দেওয়া সেইমত দুজনে যেন চাপা গলায় নিজেদের মধ্যে কী আলোচনা করতে করতে হঠাৎ গরম হয়ে গর্জে উঠেছে।

    বাঁ হাতের ওপর ডান হাতের মুঠোর তুড়ি মেরে গৌর বলেছে, হ্যাঁ, দুর্যোধন! আলবত দুর্যোধন!

    আমরাও, মানে শিবু আর আমিও ঠিক সিনারিয়ো অর্থাৎ চিত্রনাট্য মাফিক হঠাৎ যেন চমকে উঠে উদ্বেগটা জানিয়েছি, আরে, আরে! হল কী! হঠাৎ দুর্যোধন নিয়ে এত রাগারাগি কীসের!

    কীসের? শিশির যেন অতি কষ্টে মেজাজ ঠাণ্ডা রেখে বলেছে, গৌর কী বলে, জানো! বলে, সারা মহাভারত হল দুর্যোধনকে ঠকিয়ে সব কিছু থেকে ফাঁকি দেওয়ার গল্প। আর এ ঠগবাজির প্যাঁচালো বুদ্ধি জুগিয়েছে আর কেউ নয়, স্বয়ং বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণ। বলে, তিনি প্যাঁচ না খেলালে দ্রৌপদীর বিয়ে হত ওই দুর্যোধনেরই সঙ্গে।

    কী! আমাদের গলাগুলো উদারা থেকে তারায় তুলে দিয়ে বলেছি, ঠকিয়ে ফাঁকি না দিলে দুর্যোধন তা হলে দ্রৌপদীকে বিয়ে করবার যা পণ সেই লক্ষ্যভেদও করতে পারত!

    সে পারুক না পারুক, তাতে কী আসে যায়! গৌর নিজেই এবার আমাকে মহড়া দিয়েছে, তার হয়ে লক্ষ্যভেদ করবার জন্য তো স্বয়ং ভীষ্মই ছিলেন। তাঁকে কীভাবে ঠুটো করা হয়েছিল তা নতুন করে শুনতে চাও? এই শোনো তা হলে

    পুনঃ পুনঃ ধৃষ্টদ্যুম্ন স্বয়ম্বর স্থলে।
    লক্ষ্য বিন্ধিবারে বলে ক্ষত্রিয় সকলে।
    তাহা শুনি উঠিলেন কুরুবংশ পতি
    ধনুর নিকটে যান ভীষ্ম মহামতি।
    এক টানে তুলি ধনু গঙ্গার কুমার
    আকর্ণ পুরিয়া তাতে দিলেন টঙ্কার।
    তারপর হাঁকি কন চির ব্রহ্মচারী,
    নিজের নিমিত্ত আমি নহি ধনুর্ধারী
    লক্ষ্যভেদে কন্যা লভি দিব দুর্যোধনে
    এত বলি ধনুর্বাণ ধরেন যতনে।
    কিন্তু এ কি! অকস্মাৎ এ কেমন হইল।
    দু চোখে দুটি ক্ষুদ্র অণু কি প্রবেশিল!
    কিছু না দেখেন ভীষ্ম চক্ষু করে জ্বালা
    ধনুর্বাণ ফেলে দেন হয়ে ঝালাপালা।
    একটু কি হাসি ফোটে শ্রীকৃষ্ণের মুখে?
    এ কাহার লীলা তবে বোঝো সকৌতুকে!

    তৈরি হয়েই ছিলাম। গৌর থামতেই প্রায় ঝাঁপ দিয়ে পড়ে একেবারে সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানিয়েছি, শুনলেন আপনি, শুনলেন? গৌরের মহাভারতটা শুনলেন?

    কিন্তু কোথায় কাকে কী বলছি? কলকাতা মামলার আপিল যেন তুলেছি কামসকাটকায় হাইকোর্টের হাকিম আর্জির মানেই যেন বোঝেন না!

    ঘনাদা তাঁর কাটলেটের প্লেটের আসল মাল সাফ করে ফ্রায়েড পোট্যাটো ফিংগারগুলো টোম্যাটো সস মাখিয়ে তারিয়ে শেষ করতে করতে আমাদের দিকে

    একটু মৃদু হাসি জড়ানো হু শব্দ করেছেন। হাসিটি অবোধ্য আর হু মানে যা বুঝতে চাও, বোঝে।

    ধাঁধার কপাটে মাথা ঠুকেও আমরা কিন্তু হাল ছাড়িনি। আমিই খোদ ব্যাসদেব আর কাশীরাম দাসের তরফে লড়তে উঠেছি। বলেছি, আস্পর্ধাটা একবার দেখলেন! একেবারে খোদার ওপরই খোদকারি! ধ্রুপদ রাজার লক্ষ্যভেদের সভায় ভীষ্মের ওই যে চোখে অণু কী পড়ার ও বর্ণনা কোথায় পেয়েছে, জিজ্ঞাসা করুন তো!

    ঠিক! ঠিক? শিবু আমায় মদত দিয়েছে, কোনও মহাভারতে ও কথা নেই। ব্যাসদেবের মূল মহাভারতেও না, কে না জানে ধনুকে বাণ লাগাতে গিয়ে হঠাৎ শিখণ্ডীকে দেখতে পেয়ে ভীষ্ম তীরধনুক ছেড়ে চলে যান?

    হ্যাঁ, চলে তো যানই, কিন্তু শিখণ্ডীকে দেখে, না চোখে অণু কী উড়ে পড়ার দরুন, তা কে জানে? গৌর নিজের কোট ছাড়েনি, ভীষ্মের ধনুক ছেড়ে চলে যাওয়ার দুটোই কারণ হতে পারে। এক, যখন স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের প্যাঁচ, তখন ভীষ্মকে তীর ছুঁড়তে

    দেওয়ার জন্য শিখণ্ডীকে সামনে আনার সঙ্গে চোখে অণু কী ফেলে দিয়ে মতলব হাসিলটা একেবারে নিশ্চিত করে নিয়েছেন। চতুর চূড়ামণি শ্রীকৃষ্ণের পক্ষে সেইটেই কি স্বাভাবিক নয়? কী বলেন ঘনাদা?

    ঘনাদা কিছুই বলেননি। কাটলেটের প্লেট সাফ করে পাশে নামিয়ে রাখার পর হাতের সিগারেটে সুখটানের সঙ্গে চায়ের পেয়ালায় মৌজ হয়ে চুমুক দিতে দিতে একটু রহস্যময় হাসি হেসেছেন।

    আমরা কিন্তু ওই যা বুঝতে-চাও-বোঝো মার্কা হাসির ফুটকি দিয়ে প্রসঙ্গটা শেষ করতে দিইনি। গৌরের ওপরই আবার চড়াও হয়ে বলেছি, থাক, থাক, ঘনাদাকে আর সাক্ষী মানতে হবে না। সবই তোমার চতুর চূড়ামণি শ্রীকৃষ্ণের প্যাঁচ বলেই মেনে না হয় নিলাম, কিন্তু ভীষ্মদেবের চোখে অণু কী পড়ার ওই ছত্রগুলি কোথায় পেয়েছ, শুনি? কাশীরাম দাস ওরকম কিছু লিখেছেন বলে তো কেউ কানে শুনিনি।

    শোনোনি? গৌর তাচ্ছিল্যভরে বলেছে, তা শুনবে কী করে? কাশীরাম দাস তো ও সব লেখেননি।

    তবে? আমরা যেন শেয়ালের গন্ধ পেয়ে শিকারি কুকুর হয়ে উঠেছি।

    তবে আর কিছু নয়, গৌর বাহাদুরির সঙ্গে বলেছে, ও লাইন ক-টা আমারই লেখা—মুখে মুখে বানিয়ে তোমাদের শোনালাম।

    মুখে মুখে বানিয়ে আমাদের শোনালে? আমরা একেবারে স্তম্ভিত। গৌর যেন ধর্মস্থান অপবিত্র করে তারই বড়াই করছে, এমন আঁতকে-ওঠা মুখের ভাব করে ঘনাদার কাছে কড়া গোছের একটা প্রায়শ্চিত্ত-টিত্ত গোছের বিধান চেয়েছি, শুনুন আপনি, শুনুন! আজে বাজে কিছু নয়—খোদ মহাভারতের ওপরেই ওর নোংরা হাত চালিয়েছে।

    ঘনাদা একটু তেতেছেন কি?

    না, মোটেই না। সেই রহস্যময় হাসির সঙ্গে এবার শুধু একটু কণ্ঠধ্বনি শোনা গেছে। আমাদের সকলকে বাদ দিয়ে ঘনাদা শুধু শিশিরকে সম্বোধন করে বলেছেন, তা ভালই তো লাগল!

    কী, ভাল লাগল কী? গৌরের মহাভারতের ওপর খোদকারি না শিশিরের দেওয়া সিগারেটের ব্র্যান্ড, তা কিছুই বোঝা গেল না।

    মহাভারত দিয়ে আর কিছু হবার নয় বুঝে শিবু এবার অন্য রাস্তা ধরে বিজ্ঞানের শরণ নিলে। হঠাৎ যেন অত্যন্ত গোপন খবর ফাঁস করবার মতো করে বললে, নভেম্বরে আমরা আবার দক্ষিণ মেরুতে যাচ্ছি, জানিস তো?

    আমরা যাচ্ছি মানে! শিশির যথাবিহিত বিস্ময় প্রকাশ করলে। আহা, আমরা মানে আমাদের ভারতের একটা বৈজ্ঞানিক দল, তাও বুঝিস না! শিবু শিশিরকে লজ্জা দিয়ে চট করে গলাটা নামিয়ে জিজ্ঞাসা করলে, কিন্তু এবার কেন যাচ্ছে তা জানিস?

    এরপর একটা লাগসই রহস্যময় উদ্দেশ্যের ইঙ্গিত দেবার কথা ছিল আমার। সেই সঙ্গে ঘনাদাকে উসকে দেবার মতো ঝাঁঝালো কিছুর ফোড়ন দেওয়ার ভারও ছিল আমার ওপর।

    কিন্তু বারবার ঘনাদাকে তাতাবার চেষ্টায় হার মেনে মেজাজ তখন আমার বিগড়ে গেছে। শিবুর গোপন খবরটার সব রহস্য আমি ঠাট্টার সুরে নস্যাৎ করে দিয়ে বললাম, যাচ্ছে কেন আবার? যাচ্ছে স্কেটিং ক্লাব খুলতে?

    স্কেটিং ক্লাব! আমার আচমকা বেয়াড়াপনায় বেশ বিরক্ত হলেও শিবুর হতভম্ব গলা দিয়ে আপনা থেকে প্রশ্নটা বেরিয়ে গেছে।

    হ্যাঁ, স্কেটিং ক্লাব। আমি এবার বোেঝালাম, হাজার হাজার মাইল জমা বরফের মাঠ পড়ে আছে। যেখানে যতদূর খুশি স্কেটিং রিং বসাও। শুধু জাহাজ থেকে উঠে বা প্লেন থেকে নেমে পায়ে স্কেটের জুতো জোড়া পরার অপেক্ষা, আর—

    থামো? এক ধমকে আমায় চুপ করিয়ে দিয়ে শিশির রহস্যটাকে নিজের মতো করে পাক দিতে চেয়ে বললে, ও সব স্কেট-টেট-এর বাজে ফকুড়ি নয়। আসলে আমাদের দ্বিতীয় অভিযান যাচ্ছে অ্যান্টার্টিকায় শেয়াল ছাড়তে!

    শেয়াল ছাড়তে! বলে যে বিস্ময়টা প্রকাশ করতে যাচ্ছিলাম তা শুরু করেই থামতে হল।

    শিশিব তখন সবিস্তারে নিজের বক্তব্যটা বুঝিয়ে দিচ্ছে। রহস্যটা সরল করে বললে, হ্যাঁ, যাচ্ছে শেয়াল ছাড়তে। ছাড়তে যাচ্ছে কোন শেয়াল? না আমাদের এই হুক্কা হুয়া-ডাকা শেয়াল নয়। উত্তর মেরুর সেই তুষারধবল রেশমি পশমের খেঁকশেয়াল যার ফার, মানে পশমি চামড়া হিরে মুক্তোর চেয়ে দামি। দক্ষিণ মেরুতে পেঙ্গুইন ছাড়া ডাঙায় চরবার কোনও প্রাণী তো নেই। উত্তর মেরুর এই শেয়াল সেখানে ছাড়লে তাই দেখতে দেখতে হাজারে হাজারে বেড়ে উঠে আমাদের ফরেন এক্সচেঞ্জ মানে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যাপারে ওই যাকে বলে গোপালের দধিভাণ্ড হয়ে উঠবে।

    আমরা যে যাই বলি, আড়চোখে নজরটা ঘনাদার দিকে ঠিকই থাকে। শিশিরের আজগুবি শেয়াল-চাষের পরিকল্পনা শোনার মধ্যেও তাই ছিল। শিশির যা গুলবাজি শুরু করেছিল, ঘনাদা তা থেকে অবলীলাক্রমে একটা ফ্যাকড়া টেনে বার করে পেঁচিয়ে তুলতে পারতেন। উত্তর থেকে দক্ষিণ মেরুতে ওই সাদা শেয়াল চালান থেকে সেখানে পেঙ্গুইনের পোলট্রি বানিয়ে দুনিয়ার খাদ্য সমস্যার সুরাহা করবার পরিকল্পনা কেন হালে পানি পেল না, তার একটা জমজমাট বিজ্ঞান-রহস্যের ফোড়ন দেওয়া গল্প ফাঁদবার এমন সুযোগ পেয়ে তাঁর তো ঝাঁপিয়ে পড়বার কথা, কিন্তু সেরকম কোনও চিড়িবিড়িনির লক্ষণ না দেখে গৌর আরও কড়া পাঁচন গুলল।

    কী যা তা বকছিস! বলে শিশিরকে থামিয়ে দিয়ে একেবারে যেন ঘোড়ার মুখের খবর বার করে এনে গৌর বললে, আমাদের দক্ষিণ মেরু অভিযানে লক্ষ্য কী তা জানিস? তারপর আমাদের ঠিক মাত্রা মাফিক কয়েক সেকেন্ড উৎকণ্ঠায় রেখে রহস্যটা প্রকাশ করে বললে, লক্ষ্য হল ফাটল খোঁজা।

    ফাটল খোঁজা? আমাদের এবার আর হতভম্ব হবার ভান করতে হল না। কারণ গৌর এইমাত্র যা ছাড়লে তা আমাদের রিহার্সেল দেওয়া চিত্রনাট্যের বাইরে। স্ক্রিপ্ট পালটালেও গৌর তার বেলাইনে যাওয়া সার্থক করে তুলে বলল, হ্যাঁ, ফাটল! কেন ফাটল, কোন ফাটল তাও বুঝতে পারছ না?

    নীরবে মাথা নেড়ে আমাদের অজ্ঞতা স্বীকার করতে হল।

    নারলিকার-এর নাম শুনেছিস? গৌর যথোচিত মুরুব্বিয়ানার সঙ্গে এবার জিজ্ঞাসা করলে, নারলিকার আর হয়েল-এর নাম?

    শোনা থাক আর না থাক, এখন বোকা সেজে মাথা নাড়তে হল। যাক, শোনোনি যখন, শুনে নাও, গৌর রীতিমত গুরুগিরির চালে বোঝালে, এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিতত্ত্ব ব্যাখ্যায় ওই দুজনের নাম একেবারে সবার ওপরের সারিতে। এই দুজনের মধ্যে হয়েল হলেন ইংরেজ আর নারলিকার ভারতীয়। এই নারলিকার কী বলছেন, শোনো। বলছেন যে আমাদের পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণই কমে যাচ্ছে, সূর্য থেকে সরে আসতে আসতে তাই ফেঁপেফুলে আরও বড় হতে থাকার মধ্যে তার খোলসে প্রথম ফাটল ধরবে এখানে সেখানে আর তারপর সেইসব ফাটল থেকে ঠেলে বার হতে থাকবে নতুন মহাদেশ হয়ে ওঠবার মতো পৃথিবীর ভেতরকার পাথুরে মালমশলা!

    গৌরকে মনে মনে তারিফ করে ঘনাদার দিকে আড়চোখে একটু তাকিয়ে নিয়ে আমরা হতভম্ব গলায় কোনওরকমে যেন বললাম, এমন ভয়ানক কাণ্ড!

    হ্যাঁ, গৌর গলায় প্রলয়ের হুমকির ভয়-বিহ্বলতা মাখিয়ে বললে, একেবারে সর্বনাশা ব্যাপার! পৃথিবীতে প্রাণের জগতের শেষ যবনিকা পতন না হোক, সম্পূর্ণ পালাবদল নিশ্চয়ই। এই সৃষ্টি ওলটানো ব্যাপার এখনই শুরু হয়েছে কিনা তা বোঝবার হদিস ওই ফাটল। সে ফাটল প্রথম কোথায় ধরবে?

    গৌর নাটকীয়ভাবে থামল। কিন্তু কোথায় কী? এমন একটা পাকা হাতে ধরিয়ে দেওয়া খেই যাঁর লুফে নেওয়ার কথা, তিনি দেহটাই শুধু আমাদের আড্ডাঘরে রেখে আর কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন!

    আশাভরে পাঁচ সেকেন্ড আন্দাজ অপেক্ষা করে গৌরকেই আবার শুরু করতে হল। বললে, পাকা ফলের বেলা যেমন তেমনই পৃথিবীর প্রথম মাথা আর তলার দিকে অর্থাৎ কিনা দুই মেরুর কোথাও। কিন্তু উত্তর মেরু তো ভাঙা নয়, জমা বরফের রাজ্য। সেখানে হরদম এখানে-সেখানে ফাটল ধরছে আর জোড়া লাগছে। আসল ফাটলের আগে একটুআধটু চিড়ধরা সেখানে বোঝার কোনও উপায় নেই। মোক্ষম ফাটলের আগে তো একটু চিড়ধরা ধরতে পারাই সবচেয়ে বড় কথা, আর তা ধরতে যেতে হবে সেই দক্ষিণ মেরুতে। আর শুধু গেলেই তো হবে না। সেই সৃষ্টিনাশা চিড় চেনবার মতো বৈজ্ঞানিক বিদ্যেবুদ্ধি বিচক্ষণতা তো চাই-ই, সেই সঙ্গে চাই যমের দক্ষিণ দুয়ারের সমান সেই আন্টার্টিকার চিরতুষারের বিপরীত মেরুতে টহল দিয়ে টিকে থাকবার ক্ষমতা।

    এ মণিকাঞ্চন যোগ তো অসম্ভব বললেই হয়। শিবু গৌরকে একটু দম নেবার ফুরসত দিয়ে সলতের আগুনটা উসকে দিলে।

    ঠিক তাই! আড়চোখে একবার যথাস্থানে চোখ বুলিয়ে নিয়ে গৌর আবার শুরু করলে, বিজ্ঞানের ধুরন্ধর যদি বা মেলে, মেরুবিজয়ী বাহাদুর পাচ্ছে কোথায়? আমাদের দক্ষিণ মেরু অভিযানের কর্মকর্তারা তাই হন্যে হয়ে সারা দুনিয়ায় খোঁজ চালিয়ে হয়রান হচ্ছেন।

    গৌর তাল বুঝে ঠিক সমের মাথায় থামল। ঘরের সবাইও উদগ্রীব আগ্রহে চুপ। এমন একটা মোক্ষম মুহূর্ত কি বিফলে যাবে?

    শিশির আর ধৈর্য ধরতে না পেরে সলতেটা ধরিয়ে দিলে। যেন অবাক হয়ে বললে, কেন? আসল লোকের নামই তাদের মনে পড়ল না? ঘনশ্যাম দাস নামটা তারা শোনেনি?

    আমরা আবার সব চুপ। এবার আর বারুদের সলতে নেতিয়ে থাকতে পারে না। কিন্তু কোথায় কী? বারুদের সলতের নয়, আওয়াজ একটা যা পেলাম তা সিগারেট ধরাবার জন্য ঘনাদার দেশলাই জ্বালবার।

    এরপর আর নিজেকে সামলে রাখা যায়? মেজাজটা অনেকক্ষণ থেকেই খেঁচড়ে ছিল। এখন একেবারে চিড়বিড়িয়ে টিটকিরি হয়ে বার হল, কী বললে? ওরা খোঁজ করবে ঘনশ্যাম দাসের? ভীষ্ম দ্রোণ গেল তল শল্য শেনাপতি?

    হঁঃ—হঁঃ—হঁঃ—হঁঃ—

    না, মেঘের গুড়গুড়ুনি নয়, গলা খাঁকারি এবং গলা খাঁকারি আর কারও নয়, স্বয়ং তাঁর।

    হ্যাঁ, ঘনাদাই গলা খাঁকারি দিয়ে এবার সরব হলেন। বেশ একটু ভারী গলাতেই শোনালেন—ভীষ্ম দ্রোণ গেল তল শল্য সেনাপতি? কেমন?

    ঘনাদার ভারী গলার আবৃত্তিতে কি একটু কান-মলা গোছের মোচড়?

    ঠিক বুঝতে না পেরে নীরব হয়েই রইলাম।

    ঘনাদাই আবার বললেন, অর্থাৎ হাতি-ঘোড়া হার মানল, রথ টানবে ছাগল! বচনটা এ রকমও হতে পারে!

    হাওয়াটা ঠিক কোনমুখো, তা বুঝতে না পারলেও শিবু আলাপটা নেহাত চালু রাখবার জন্যই বললে, হ্যাঁ, তা তো পারেই। ভীষ্ম দ্রোণ কর্ণ দুর্যোধন—তখন সব মহা মহা বীরই খতম হয়ে গেছে, তাই নেহাত নাচার হয়েই তিনি শল্যকে সেনাপতি করেছিলেন তো। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের ফলাফল তখন তিনি ভাল করেই বুঝে ফেলেছেন। শল্যের মুরোদ জানতে তো তাঁর বাকি ছিল না।

    হ্যাঁ, ঘনাদা যেন সায়ই দিলেন শিবুর কথায়—শল্যের মুরোদ আরেকজনও ভাল করেই বুঝেছিলেন, তাঁর ধারণাটাই শোনা যাক। তিনি বলেছিলেন, ও-ই বীর বিপুল বলশালী মহাতেজস্বী বিচিত্র যোদ্ধা ও ক্ষিপ্রহস্ত। আমার মনে হয়, উনি ভীষ্ম, দ্রোণ ও কর্ণের সদৃশ বা তাঁহাদের অপেক্ষা সমধিক রণ-বিশারদ। উঁহার তুল্য যোদ্ধা আর কাহাকেও লক্ষিত হয় না।

    ঘনাদা গম্ভীর মুখে ইচ্ছে করেই কিছু যেন উহ্য রেখে থামলেন। নিজেদের মধ্যে বারকয়েক মুখ চাওয়াচাওয়ির পর আমিই সকলের হয়ে মনের সংশয়টা প্রকাশ করলাম স্পষ্ট করেই। বললাম, শল্য সম্বন্ধে এরকম ধারণা সত্যি কারও ছিল নাকি?

    তা ধারণাটা কার? আর পেলেন কোথায়?

    কোথায় পেলাম? ঘনাদা অজ্ঞতা যেন ক্ষমা করে বললেন, পেলাম স্বয়ং ব্যাসদেবের লেখা মূল মহাভারতে।

    মূল মহাভারতে এ কথা আছে? আমি অবজ্ঞাভরে বললাম, তা হলে দুর্যোধনের কোনও মোসাহেব ভাঁড়-টাঁড়ের নিশ্চয়। ব্যাসদেব আবার সে কথা লিখে রেখে গেছেন, এটাই আশ্চর্য।

    না, ধারণাটা দুর্যোধনের মোসাহেব কোনও ভাঁড়টাঁড়ের নয়। ঘনাদা গম্ভীর হয়েই জানালেন, কিন্তু ধারণাটা যাঁরই হোক, শুনে হাসি পাবার মতো খুব কি উদ্ভট আজগুবি? শল্য কি কুরুক্ষেত্রের সবচেয়ে বড় যোদ্ধা নয়?

    আমাদের ধাতস্থ হবার জন্য কয়েক সেকেন্ড সময় দিয়ে ঘনাদা নিজেই আবার আরম্ভ করলেন—কৌরব পক্ষের ভীষ্ম দ্রোণ কর্ণ কি পাণ্ডব পক্ষের অর্জুন তো শুধু ধনুর্ধারী বীর। আর ওদিকে দুর্যোধন আর এদিকে ভীষ্ম গদাযুদ্ধে ওস্তাদ। কিন্তু শল্যের কথা ভাবো দেখি। ধনুক বা গদা কি যে অস্ত্র হাতে দাও, তাতেই সমান ওস্তাদ। শুধু তো তাই নয়। কুরুক্ষেত্রের সবার সেরা যোদ্ধারা তো শুধু অস্ত্র চালাতেই পারতেন, কিন্তু শল্য ছাড়া স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে পাল্লা দেবার মতো রথ চালাবার ক্ষমতা ছিল আর কার? দুর্যোধন শল্যকে সেনাপতি করায় অন্যেরা যে যাই হাসি তামাশা করুক, পাণ্ডব পক্ষের বিচক্ষণ সমঝদারেরা প্রমাদ গনেছিলেন।

    তার মানে! গৌর হঠাৎ উৎসাহিত হয়ে বলে উঠল, শল্য সেনাপতি থাকলে দুর্যোধনেরই কুরুক্ষেত্রে জিৎ হবার কথা।

    তাই তো মনে হয়। ঘনাদা যেন সত্যের খাতিরে স্বীকার করতে বাধ্য হলেন। না হলে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ অমন চিন্তিত হবেন কেন? যোদ্ধা হিসাবে শল্যের শ্রেষ্ঠত্ব সম্বন্ধে যে ধারণার কথা জানিয়েছি তা আর কারও নয়, শ্রীকৃষ্ণেরই।

    তোয়াজ তোষামোদের বদলে প্রথমেই যাতে কাজ হয়েছে, সেই উলটো খোঁচাই আবার একটু লাগানো উচিত মনে হল। ঘনাদার মতই নাসিকাধ্বনি করে বললাম, হ্যাঁ! শ্রীকৃষ্ণের ধারণা! ওঁর ধারণা, না ধাপ্পা।

    ধাপ্পা! শ্রীকৃষ্ণের ধারণাকে বলছিস ধাপ্পা! ঘনাদার হয়ে গৌরই তলোয়ার তুলল।

    হ্যাঁ, রসিকতা করে ধাপ্পা! রীতিমত গম্ভীর মুখে বললাম, রসিক চূড়ামণি শ্রীকৃষ্ণের সেদিকে তো গুণের ঘাট নেই। ভীষ্ম দ্রোণ কর্ণের পর শল্যকে সেনাপতি হতে দেখে যুধিষ্ঠিরের কাছে তাকে নিয়ে একটু ঠাট্টা করেছেন।

    না, ঠাট্টা করেনি! যেমনটি চেয়েছিলাম ঠিক সেই মতো ঘনাদারই চাপা গর্জন শোনা গেল—রীতিমত ভাবিত হয়ে যুধিষ্ঠিরের কাছে শল্য সম্বন্ধে নিজের মতটা জানিয়েছেন।

    তা জানালেই বা হয়েছে কী?—আমিও পিছু হটবার পাত্র নই, শ্রীকৃষ্ণ বললেই শল্য মহাবীর হয়ে উঠবে নাকি? যার গাড়োয়ানি করে শুল্যের মহাভারতে জায়গা সেই কর্ণ শল্য সম্বন্ধে কী বলতেন জানেন?

    জানি। ঘনাদার গলার ঝাঁজটা খুশি করবার মতো—শল্য কর্ণের সারথি হতে রাজি হয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু যুধিষ্ঠিরের সঙ্গে গোপন বোঝপড়ার দরুন কর্ণকে উঠতে বসতে টিটকিরি দিয়ে জ্বালিয়ে মারতেন। তিতিবিরক্ত হয়ে কর্ণ তাই মাঝে মাঝে তার শোধ তুলতে চাইতেন শল্যকে গালাগাল দিয়ে। কিন্তু সে গালাগাল তো শল্যের জাত তুলে নিন্দে। শল্য তো পাণ্ডব কৌরবদের মতো সিন্ধুনদ পার হয়ে আসা আর্যবংশধর নন। তাঁকে সেকালের বেলুচি বলা যায়। এখন যেখানে বেলুচিস্তান, সেই অঞ্চলেই ছিল তাঁর রাজত্ব। আর্যয়ানার খুঁতখুঁতে গোঁড়ামি তাঁদের ছিল না। তাঁরা পোশাক-আশাকে কার্পাসের তুলোর ধার ধারতেন না। ভেড়ার উটের ললামের মিহি মোটা কম্বলেই তাঁদের পোশাক তৈরি হত আর খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে সিন্ধু পার হওয়া আর্যদের মতো গোঁড়ামির বাছবিচার তাঁদের ছিল না—গোরু ভেড়া সব মাংসেই তাঁদের ছিল সমান রুচি। এ সব নিয়ে কর্ণের গালাগাল তাই গায়ে লাগেনি শল্যের। এ সব তো তাঁদের জাতের আচারবিচার নিয়ে নিন্দে। তাঁর বীরত্বের বিষয়ে উপহাস কি ধিক্কার তো তাতে নেই।

    বীরত্ব তো তাঁর ভারী!—খোঁচা দিতে এখনও ছাড়লাম না। ভীম অর্জুন, এমনকী নকুল সহদেবও নয়, কুপোকাত হলেন তো ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরের হাতে, ভাল করে ধনুক ধরতেও জানতেন কি না সন্দেহ!

    হ্যাঁ, মারা গেলেন যুধিষ্ঠিরের হাতে। ঘনাদার গলা এবার জলদগম্ভীর একমাত্র যাঁর হাতে ছাড়া শল্যের আজগুবি হার আর মরণ সম্ভবই ছিল না। শ্রীকৃষ্ণ বাসুদেব তাই আর কাউকে নয়, নাছোড়বান্দা হয়ে যুধিষ্ঠিরকেই সেধেছিলেন শল্যের সঙ্গে যুদ্ধ করে তাঁকে সংহার করবার জন্য।

    কেন? কেন?—এবার অবাক হওয়া প্রশ্নটা আমাদের সকলেরই—আর কারওর বদলে শুধু যুধিষ্ঠিরকেই এমন পেড়াপীড়ি কেন?

    সেইটা ভেবে দেখো না! এতক্ষণে ঘনাদার মুখে টেক্কা তুরুপের আগের মুহূর্তের হাসি। ভীম অর্জুন থেকে শুরু করে আরও সব বাঘা বাঘা যোদ্ধা থাকতে শুধু যুধিষ্ঠিরকেই এমন সাধাসাধির কারণ কী? সারা মহাভারতে আর কারও সঙ্গে যোঝবার জন্য যুধিষ্ঠিরকে একবার একটু ডাক দেওয়ার কথাও কোথাও আছে কি? শুধু শল্যের বেলা যুধিষ্ঠিরকে রাজি না করাতে পারলে শ্রীকৃষ্ণের আর শান্তি নেই। কত ভাবেই না যুধিষ্ঠিরকে তাতাচ্ছেন—

    কিন্তু কেন? আমাদের সেই একই প্রশ্ন—শল্যকে শেষ করবার জন্য শুধু যুধিষ্ঠিরকেই দরকার কেন?

    দ্রোণাচার্যকে মারবার জন্যও তাঁকে দরকার হয়েছিল—

    না, তিনি কিছু বলেননি—ঘনাদা একটু বিশদ হলেন—তবে সম্মুখসমরটা তাঁর সঙ্গে বলেই শল্য ব্যাপারটা বিশ্বাস করে আনমনা হয়েছিলেন, আর সেই ফাঁকেই যুধিষ্ঠিরের আনাড়ি-হাতের বাণও গিয়ে মর্মভেদ করেছিল শল্যের।

    শল্যকে আনমনা করার ব্যাপারটা তা হলে কী? আমাদের বিমূঢ় জিজ্ঞাসা। ব্যাপারটা নকুল সহদেবের ঠিক মওকা বুঝে করুণ আর্তনাদ!—ঘনাদা ব্যাখ্যা করলেন—শল্যবধের আগে যুদ্ধিষ্ঠিরের ভাবনাগুলো মনে করো,

    শ্রীকৃষ্ণের আজ্ঞা আছে শল্যের নিধনে,
    দুর্জয় দেখি যে শল্য আজিকার রণে
    হারিলে কি গতি হবে, পাব মহালাজ
    এই মত ভাবি তবে কহে ধর্মরাজ!
    চক্রব্যূহ করি মোরে দোঁহে বল রাখো।
    সহদেব ও নকুল মম বামে থাকো।

    বামে নয়, নকুল ও সহদেব ছিলেন যুধিষ্ঠিরের দু-পাশে, একা শল্য যখন বাঁ হাতে যুধিষ্ঠিরকে ঠেকিয়ে ডান হাতে পাণ্ডবসেনা ছারখার করছে তখন একবার নকুল আর তারপরে সহদেব, যেন হঠাৎ শল্যের বাণে এ-ফোঁড় ওফোঁড় হয়ে গেছে, এমনভাবে কাতর ডাক ছেড়েছে—মামা! মামা গো!

    শল্য যুধিষ্ঠির নিয়ে সব পাণ্ডবেরই মামা, কিন্তু হাজার হলেও নকুল সহদেব হল তাঁর নিজের মায়ের পেটের বোন মাদ্রীর ছেলে, তাই টানটা যদি তাদের ওপর একটু বেশি হয়, সেটা অন্যায় নয়। নকুল সহদেবের আর্তনাদে তাই কয়েক মুহূর্তের জন্য আনমনা হয়ে গেছেন শল্য আর সেই ফাঁকে যুধিষ্ঠিরের তীর গিয়ে বিধেছে তাঁর বুকে। যুধিষ্ঠির ছাড়া আর কারও সঙ্গে যুদ্ধ হলে নকুল সহদেবের ওই নকল আর্তনাদকে শল্য কখনও সত্যি বলে ভেবে অন্যমনস্ক হতেন না। শল্যকে এই ভুল করাবার জন্যই যুধিষ্ঠিরকে এ যুদ্ধে নামাবার জন্য শ্রীকৃষ্ণের অত পীড়াপীড়ি। নকুল সহদেবের আর্তনাদও অবশ্য তাঁরই শেখানো, আর সেটা যুধিষ্ঠিরের অজান্তে।

    কিন্তু কিন্তু আমাদের দ্বিধাভরে জিজ্ঞাসা করতে হল—মূল মহাভারতে এ সব কথা কোথাও আছে কি?

    থাকা তো উচিত, ঘনাদা উঠে দাঁড়িয়ে বারান্দার দরজার দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে বললেন, তবে সব মূল পুঁথি তো পণ্ডিতদের হাতে এখনও পৌঁছয়নি!

    ঘনাদা ঘর ছেড়ে চলে গেছেন। তাঁর পাশের টিপয়টার ওপরে শিশিরের সিগারেটের টিনটাও অবশ্য নাই।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray
    Next Article ঘনাদা সমগ্র ১ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    Related Articles

    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    ঘনাদা সমগ্র ১ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }