Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ঘনাদা সমগ্র ২ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    প্রেমেন্দ্র মিত্র এক পাতা গল্প884 Mins Read0

    ১২. ঘনাদা থেমে নতুন সিগারেট ধরালেন

    ঘনাদা থেমে নতুন সিগারেট ধরালেন।

    ব্লাডটেস্ট গুপ্ত, প্রেশার সোম আর কার্ডিওগ্রাম সান্যালের তখন আর ধৈর্য ধরবার ক্ষমতা নেই।

    পুরুষ না হলে তো মেয়ের গলা! ব্লাডটেস্ট গুপ্তের দুচোখ কপালে।

    তার ওপর বাংলা! প্রেশার সোমের হাঁ-মুখ আর বোজে না!

    মঙ্গলগ্রহে বাঙালি মেয়ে? কার্ডিওগ্রাম সান্যালের গলাই যেন শুকনো!

    না, মঙ্গলগ্রহে বাঙালি মেয়ে কেউ ছিল না, ঘনাদা সিগারেটে দুটি রামটান মেরে বনোয়ারির নিয়ে আসা দ্বিতীয় দফার চায়ের ট্রে থেকে একটি কাপ তুলে নিয়ে সশব্দে চুমুক দিয়ে বললেন, তবে বাঙালি ছেলেকে সেখানেই রেখে আসতে হল।

    কাকে রেখে আসতে হল? এবার আমাদের জিজ্ঞাসার পালা—ওই সুরঞ্জনকে?

    হ্যাঁ, সুরঞ্জনকে আর নিয়ে আসা গেল না। ঘনাদা ছোট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন—আর সুরঞ্জনকে রেখে এলে তার ছায়া বটুকেশ্বরকে কি আর আনা সম্ভব? তাই ভাবি, বটুকের অমন চিলের চোখ যদি না হত।

    ঘনাদার আবার দীর্ঘশ্বাস।

    দু-দুবার দীর্ঘশ্বাস আমাদের খুব ভাল ঠেকল না। ঘনাদার এটা ঝিমিয়ে পড়ার লক্ষণ। তাড়াতাড়ি তাই একটু তাতাবার আঁচ দিতে হল সবাই মিলে।

    ও জালা-জন্তুগুলোই সব গণ্ডগোলের মূল, না ঘনাদা?

    বটুকের অমন চোখের জোর না হলে ওগুলো কি আর দেখা যেত? আর দেখ গেলে সুরঞ্জনেরও নেমে দেখবার অমন ঝোঁক হয় না, তাকে অমন রেখেও আসতে হয় না, সেই আট কোটি কিলোমিটার দূরের নির্বাসনে।

    রঞ্জন সেই জালা-জন্তু ধরবার লোভেই নেমেছিল নিশ্চয়! ইস, একটা যদি ধরে আনতে পারত! আপনিও পারলেন না একটা আনতে?

    অনুযোগ মেশানো শেষ জিজ্ঞাসাটা ঘনাদার মুখের দিকে বড় আশায় ছাই-পড়া-চেহারা নিয়ে চেয়ে।

    প্রক্রিয়াটা বিফল হল না!

    একটা ধরে আনবার কথা বলছ? ঘনাদা যথোচিত সাড়া-ই দিলেন, তা আর পারলাম কই? তার বদলে তারাই যখন সুরঞ্জনকে ধরে রাখলে তখন ছাড়িয়ে আনতে পারলাম না। ইতিহাসের খাতিরে ছেড়ে আসতে হল।

    ইতিহাসের খাতিরে? এবার আমাদের বিস্ময়টা একেবারে নির্ভেজাল। হ্যাঁ, গ্রহটার ভাবী ইতিহাসের একটা দাবি তো আছে। ঘনাদা বিশ্বভ্রাতার করুণাঘন হাসি হাসলেন, সে দাবি অগ্রাহ্য করতে পারলাম না।

    মঙ্গলের ভাবী ইতিহাসের দাবি শুনে চোখে তখন অন্ধকার দেখছি। তবু কথাটা চালু রাখবার জন্য বিজ্ঞতার নামে বুদ্ধ সেজে বলতে হল, ঠিক, ঠিক! ইতিহাসের দাবি না মানলে চলে? নইলে সেখানেই হয়তো নিশান নিয়ে আমাদের দাবি-মানতে হবে বলে ঘেরাও করত ইতিহাসের দল।

    না, এ সেরকম দাবি নয়। ঘনাদা অনুকম্পাভরে সংশোধন করতে পেরে খুশি হয়ে বললেন, দাবি হচ্ছে মঙ্গলগ্রহের ইতিহাসের ধারার। সে ধারা তো শুকিয়ে গিয়ে তখন শেষ হতেই বসেছে, মঙ্গলগ্রহের ওপরটা অনেকদিন আগে থেকেই, আমাদের বিজ্ঞান যা জেনেছে, সেই শ্মশান। সেখানে প্রাণের চিহ্ন না পাবারই কথা, কিন্তু তা না পেয়ে, ও গ্রহে প্রাণই নেই ভাবা একেবারে ভুল শুধু নয়, বৈজ্ঞানিকদের কল্পনারও অভাব তাতে প্রমাণ হয়। গ্রহের ওপরে প্রাণ না থাকলেও কি তলাতে থাকতে পারে না? মঙ্গলগ্রহে ঘটেছিল ঠিক তাই। সেখানে প্রাণের বিকাশ আর বিবর্তন আমাদের পৃথিবীর অনেক আগেই হয়, তারপর আমাদেরই মতো পারমাণবিক যুগে পৌঁছে নিজেদের হিংসা-প্রতিহিংসার যুদ্ধে আর স্বাভাবিক কারণে গ্রহের ওপরটা প্রাণীদের বাসের অযোগ্য হয়ে ওঠে। মঙ্গলের যারা সেরা প্রাণী সেই মাঙ্গলিকেরা এ-সম্ভাবনার কথা ভেবে অনেক আগে থেকেই মাটির ওপরের স্তরের তলায় সুড়ঙ্গ কেটে সব পাতাল শহর বসাবার কাজ শুরু করে রেখেছিল। হাওয়া ফুরিয়ে জল উবে গিয়ে সূর্যের মারাত্মক আলট্রাভায়োলেট আর মহাকাশের কসমিক রশ্মির বর্ষণে ওপরে টিকে থাকা যখন সম্পূর্ণ অসম্ভব হয়ে ওঠে, তখন মাঙ্গলিকদের যারা তখনও বেঁচে ছিল সবাই ওই পাতাল রাজ্যে গিয়ে আশ্রয় নেয়, কিন্তু সেখানেও নিয়তির নিষ্ঠুরতা থেকে রেহাই পায় না। ওপর ছেড়ে পাতালে নামবার সময় যে মাঙ্গলিকেরা কমতে কমতেও সংখ্যায় অন্তত লাখ দুয়েক ছিল, আমাদের ও গ্রহে নামবার সময় তারা শেষ পর্যন্ত মাত্র গুটি দশেকে এসে পৌঁছেছে। শুধু তাই নয়, তাদের আবার

    ওই জালা-মূর্তির মতো চেহারা? প্রেশার সোম নিজেকে সামলাতে পারেন না। প্রমাদ গুনতে শুরু করে আমরা তখন ঘনাদার মুখের দিকে চেয়ে আছি।

    এমন করে বেমক্কা কথার সুতো ভেঁড়ার জন্য আসরই বুঝি যায় ভেস্তে।

    কিন্তু ভাগ্য ভাল। মাংসের শিঙাড়া তোতাপুলির সঙ্গে শিশিরের সিগারেটগুলোই ধাক্কা সামলালে। ঘনাদার মুখে-চোখে একটু ঘনঘটা হওয়ার সূত্রপাত হয়েই কেটে গেল।

    মাঙ্গলিকদের জালা-মূর্তির মতো চেহারা? ঘনাদা প্রেশার সোমকে যেন বহুকষ্টে নিরীক্ষণ করতে পেরে বললেন, না।

    গলাটা রীতিমত গম্ভীর।

    তা হোক, কারেন্ট এখনও আছে। আমরা ডবল ফিউজ তার লাগালাম।

    সেই বাংলা শোনার পর একেবারে হকচকিয়ে গেছলেন, না ঘনাদা?

    মঙ্গলগ্রহে বাংলা! তাও আবার মেয়ের গলায়!

    আজগুবি ব্যাপার!

    যত আজগুবিই হোক, মানেটা কি আর ঘনাদা পাননি?

    হ্যাঁ, পেলাম, ঘনাদা প্রসন্ন হয়ে জানালেন, পেলাম নাটকের ভেতর দিয়ে বলা যায়। বাংলায় ওই নেপথ্যবাণীর পরই সে নাটক যেন আপনা থেকে শুরু হল।

    যেখানে তখন পৌঁছেছি, আগেই বলেছি যে সে জায়গাটা সার্কাসের অ্যারিনার মতো গোল। একদিকে একটা গড়ানে সুড়ঙ্গ ঢাল, আর একদিকে ঘোরানো সিঁড়ি বাদে চারিধারে, ওপরের নিরেট ছাদ পর্যন্ত, শুধু খাড়া দেওয়াল।

    সে খাড়া দেওয়ালগুলো হঠাৎ চতুর্দিকেই ফাঁক হয়ে গিয়ে সেখান থেকে এক এক করে গুটি দশেক জালামূর্তিই বেরিয়ে এল।

    সে জালা-মূর্তিগুলোর পেছনে আর কেউ নয়, স্পেস স্যুট ছেড়ে তার ঘরোয়া পোশাকে আমাদের বটুকেশ্বর।

    একী কাণ্ড, বটুক! আমার আগে সুরঞ্জনই চেঁচিয়ে উঠল, তুমি এদের সঙ্গে করছ।

    কী! এরা কারা?

    এরা বাংলা জানল কী করে? তুমি শিখিয়েছ?

    এতগুলো প্রশ্নের বাণেও অবিচলিত বটুক তার সেই মুখস্থ-পড়ার শুধু শেষ জিজ্ঞাসাটারই জবাব দিলে, শেখাতে এদের হয় না।

    পর মুহূর্তেই ধ্বনি-প্রতিধ্বনিতে সে বিরাট পাতাল-মঞ্চ ঝন ঝন করে উঠল। দশ-দশটা মেয়ের গলায় একসঙ্গে শোনা গেল—শেখাতে এদের হয় না।

    বুঝলেন এবার? বটুক তার সেই এক পর্দার গলায় জানালে, এরা সব হরবোলা। যা শুনবে তাই নকল করতে পারে।

    আবার সেই জালা-মূর্তির ভেতর থেকে দশ-দশটা মিহি হলায় শুনলাম— বুঝলেন এবার! এরা সব হরবোলা। যা শুনবে তাই নকল করতে পারে।

    হ্যাঁ, হরবোলা যে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।

    কথাগুলো বটুক যা বলেছে তাই, কিন্তু পর্দাগুলো এক নয়। ওই একই কথা মিহিগলায় নানা পর্দায় যেন জলতরঙ্গ বাজিয়ে দিলে।

    কিন্তু ওই জালা বসানো চেহারার ভেতর থেকে এমন মেয়ের গলা বার হয় কী করে?

    সেই কথাই জিজ্ঞাসা করলাম বটুককে।

    একরকম ভেংচানো ধ্বনি-প্রতিধ্বনিও অবশ্য চলল সঙ্গে সঙ্গে। বটুক যা জবাব দিলে তারাও তাই।

    দেখবেন তাহলে? বলে বটুক অমন সৃষ্টিছাড়া কাণ্ড করে বসবে তখন কি জানি? মাপ করবেন তাহলে একটু—বলে বটুক আচমকা তার গায়ের জামাটাই ফেললে খুলে।

    আর সঙ্গে সঙ্গে দশ মুখে তার প্রতিধ্বনির সঙ্গে যা হল তা আমাদের স্বপ্নেরও অতীত।

    দশ দিকে দশটা জালা-মূর্তি ঝপ ঝপ করে তাদের মাথার আর গায়ের জালা-পোশাকগুলো নামিয়ে আমাদের ঘিরে দাঁড়াল। আমাদের স্পেস-স্যুটের মতো জালা-পোশাকগুলো তাদের মঙ্গলের ওপরে যাবার বেশ।

    সেই পোশাক খোলার পর তাদের আসল চেহারা দেখলাম। সেই সঙ্গে খিল খিল করে হাসিটা ফাউ।

    কিন্তু এ কী দেখছি।

    দশ-দশটা মেয়ের কাকে ছেড়ে কাকে দেখব! সব যেন তিলোত্তমার ছাঁচে নিখুঁত করে ঢালা।

    কিন্তু দশটাই মেয়ে? প্রশ্নটা কার্ডিওগ্রাম সান্যালের, ছেলে নেই?

    না, ঘনাদা একটু যেন দুঃখের হাসি হাসলেন, সেই কথাই তখন বলতে যাচ্ছিলাম। মাঙ্গলিকরা কমতে কমতে শুধু মাত্র দশটাতেই পৌঁছয়নি, তাদের সবাই আবার মেয়ে। তারা একবার ছেলে হাতে পেলে কি ছাড়ে! বটুককে আগেই ধরেছিল, সুরঞ্জনকেও ছাড়ল না। মঙ্গলগ্রহের ইতিহাসটা যাতে অচল না হয়ে যায় তাই জোর করে ফিরিয়ে আনতেও মন উঠল না।

    আর আপনি? হাসিটাকে ঠোঁট টিপে চেপে জিজ্ঞাসা করলে শিবু, আপনাকে যে ছেড়ে দিলে?

    আমাকে! ঘনাদা যেন ক্ষণিকের জন্য উদাস হয়ে গেলেন—আমাকে কি আর ছাড়তে চায়! পৃথিবী থেকে আরও ছেলে আনবার ভরসা দিয়ে অনেক কষ্টে ছাড়া পেয়ে এসেছি।

    সে কথা আর রাখতে পারেননি তো? গৌরের গভীর আফশোস।

    কী করে আর রাখব? ঘনাদার হতাশ স্বীকৃতি—প্রথমত পাতালপুরীর যে নামটা দিয়েছিলাম সেই ধাঁধিকা থেকে সুরঞ্জনেরই স্পেস স্যুট পরে বেরিয়ে আসবার মুখেই আবার সেই বুকের কষ্ট। কী ভাগ্যি, কাঠ-পোড়া ছাই একটু সঙ্গে রেখেছিলাম। তাই মুখে দিয়ে তখনকার মতো ধাক্কাটা সামলালাম।

    ঘনাদা থামলেন। তারপর আমাদের মুখগুলোর দিকে চেয়ে একটু বুঝি করুণা হওয়াতেই সদয় হয়ে ব্যাখ্যাটা আর চেপে রাখলেন না।

    ভাবছ, ছাই দিয়ে হার্টের অসুখ সারে কী করে? সব হার্টের অসুখ তো নয়, মহাশূন্যে পাড়ি দেওয়ার ফল হিসেবে অ্যাস্ট্রোনট বা মহাকাশযাত্রীদের যে হার্টের গোল দেখা যায়, সেই অসুখ শুধু ওই ছাইয়ে সারে। আকাশপথে অনেককাল ভারশূন্য থাকবার ফলে সকলেরই শরীর থেকে পটাসিয়াম স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি বেরিয়ে যায়। কারও আরও বেশি। পটাসিয়াম কম থাকলে হার্টের বৈদ্যুতিক প্রবাহ ক্ষুণ্ণ হয়ে হৃদযন্ত্রের ছন্দ কেটে যায়। মহাকাশযাত্রীদের খাবারে তাই একটু বেশি পটাসিয়াম থাকা দরকার। পটাসিয়াম বড় মজার এলিমেন্ট। দুনিয়ায় তিনি একা থাকেন না। সায়ানাইডের সঙ্গে মিশে যা বিষ সেই পটাসিয়াম আবার অন্য সংসর্গে অমৃতের শামিল। লুটভিক-এর শূন্যযানে হার্টের গোল যখন প্রথম শুরু হল তখন পটাসিয়াম আর কোথায় পাব। টেবিলের কাঠের পায়া পুড়িয়ে তাই তা জোগাড় করতে হল। এককালে কাঠের ছাই থেকেই পটাসিয়াম কার্বনেট সংগ্রহ করা হত।

    কাঠের ছাই খেয়ে সুস্থ হয়ে শূন্যযানে যখন ফিরে এলাম তখন সত্যিই মনে মনে আবার মঙ্গলে একদল আইবুড়ো নিয়ে যাবার কল্পনা ছিল। কিন্তু তা আর হল না। আমার জন্য অপেক্ষা করে করে এতদিনে সেখানে আমাদের কুলীন বামুন কি আমেরিকার মর্মনদের মতো বহুবিবাহ যদি ওরা চালু করে দিয়ে থাকে তাহলে দোষ দেবার কিছু নেই।

    কিন্তু সত্যিই আর সেখানে ফিরলেন না কেন? প্রেশার সোমের আকুল জিজ্ঞাসা, শূন্যযানটা নিয়ে পৃথিবীতে যে ফিরেছিলেন তাতে তো আর সন্দেহ নেই।

    না, তোমাদের সামনে সশরীরে যখন উপস্থিত, ঘনাদার মুখে বিষণ্ণ একটু হাসি, তখন ফেরার কথা অস্বীকার করি কী করে! কিন্তু ফেরার পর ওই উন্মাদ বৈজ্ঞানিক লুটভিক-ই যে শয়তানি করল! আমার ওপর তার দারুণ আক্রোশ। তবু ফিরে আসবার সময় তার আশ্চর্য যন্ত্রের সৃষ্টিছাড়া রহস্য সে আমাকে যেন ঘৃণাভরেই বুঝিয়েছে। রকেট-টকেট নয়, এ আশ্চর্য শূন্যযান চলে অ্যান্টি-ম্যাটারের জোরে। অ্যান্টি-ম্যাটার মানে হল আমাদের দুনিয়ার মূল উপাদানের যেন আয়নায় দেখা উলটো নকল। সে অ্যান্টি-ম্যাটারের হাইড্রোজেন অ্যাটমে একটা প্রোটনের চারিধারে একটা ইলেকট্রন ঘোরে না। নেগেটিভ অ্যান্টিপ্রোটনের চারিধারেই ঘোরে পজিটিভ পজিট্রন। অন্য সব উপাদানও তাই। এই অ্যান্টি-ম্যাটারের আঁচ পেলেও কেউ তা এখনও সৃষ্টি করতে পারেনি। করেছে শুধু এই উন্মাদ বৈজ্ঞানিক লুটভিক। অ্যান্টি-ম্যাটারের সঙ্গে ম্যাটারের সম্পর্ক অহিনকুলের শত্রুতার চেয়েও বেশি, অ্যান্টি-ম্যাটারে ম্যাটারে দেখা হলে দুজনেই একেবারে বিদ্যুদ্বেগে যায় দুজনের কাছ থেকে ছিটকে। সে দুই বস্তুর ওই ধর্ম কাজে লাগিয়ে লুটভিক থরের মরুভূমির মাঝে তার আশ্চর্য যন্ত্রযান বানিয়েছিল। পৃথিবী ছাড়িয়ে যেতে সে শূন্যযানের রকেটের মতো অসম্ভব বেগ লাগে না। যেমন খুশি বেগে বেলুনের মতো ভাসতে ভাসতেও তারা পৃথিবী ছাড়িয়ে যেতে পারে। হাওয়ার ঘর্ষণে পুড়ে যাবার ভয় তাই আমাদের শূন্যযানের ছিল না। সাধারণ আসবাবপত্রও সেখানে বাতিল করতে হয়নি। একেবারে শামুকের গতি থেকে অ্যান্টি-ম্যাটারে ধীরে ধীরে প্রায় আলোর গতিতে তোলা যায় বলে মহাশূন্যে বেগ বাড়াবার সময় ভারশূন্যতা ছাড়া অন্য কোনও অসুবিধা আমাদের ভোগ করতে হয়নি। মঙ্গলগ্রহে নামতেও পেরেছি নিরাপদে।

    তেমনই নিরাপদেই আবার থরের সেই মরুপ্রান্তরেই এসে নেমেছিলাম। নামার পর লুটভিককে আর বেঁধে রাখতে নিজের বিবেকেই বেধেছে। তাকে অনেক বুঝিয়ে তাই বাঁধন খুলে দিয়ে লোকালয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে বাইরে বেরিয়ে এসেছি।

    বেশি দূর তারপর যেতে হয়নি। কিছুদূর যেতে না যেতেই একটা যেন উলটো বজ্রপাত হয়েছে। মরুর বালি থেকেই একটা বিদ্যুৎশিখা যেন নিমেষে আকাশে উঠে বিরাট একটা আগুনের হলকা হয়ে মিলিয়ে গেছে।

    সেই উলটো বজ্রপাতের ধাক্কাতেই বালির ওপর তখন মুখ থুবড়ে পড়েছি। কিছুক্ষণ বাদে উঠে বসে মুখ ঘুরিয়ে শূন্যযানটাকে আর দেখতে পাইনি। লুটভিক তার সঙ্গেই নিজেকে শেষ করেছে, না অন্য কোনও দিকে আগেই পালিয়েছে, তা জানি না এখনও।

    আচ্ছা! ঘনাদা থামতে কার্ডিওগ্রাম সান্যাল শেষ সংশয়টা আর প্রকাশ না করে পারলেন না, মাঙ্গলিকদের অমন মানুষের চেহারা হল কী করে? তারা তো মানুষ নয়!

    না, তারা মানুষ নয়, কিন্তু আমরাই তো আসলে মাঙ্গলিক হতে পারি! ঘনাদা শেষ ধাঁধাটি ছাড়লেন, লক্ষ লক্ষ বছর আগে মাঙ্গলিকরাই এসে পৃথিবীতে মানুষ জাতের গোড়াপত্তন যে করেনি তা কে বলতে পারে! মিসিং লিংক এখনও তো ঠিক পাওয়া যায়নি।

    এর পর আমাদের চোখগুলো যদি চড়কগাছ হয় তাহলে সে কি চোখের দোষ?

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray
    Next Article ঘনাদা সমগ্র ১ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    Related Articles

    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    ঘনাদা সমগ্র ১ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }