Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ঘনাদা সমগ্র ২ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    প্রেমেন্দ্র মিত্র এক পাতা গল্প884 Mins Read0

    ০৪. ঘনাদা কেদারা ছেড়ে ওঠার উপক্রম করলেন

    ঘনাদা কেদারা ছেড়ে ওঠার উপক্রম করলেন। কিন্তু তার আগেই বাইরের দরজা আগলে আমরা জবরদস্ত ভাবে খাড়া।

    আমাদের ভঙ্গিগুলো মিলিটারি হলেও আওয়াজ তখনও খুব নরম। বললাম, এখন উঠছেন কী? ছুটির দিনে বারোটা আবার বেলা! রামভুজ এখনও চিতল মাছের ধোঁকা চড়ায়ওনি বোধহয়। বলুন, বলুন। পল্টুবাবুর গাড়িতে না-চড়লে যে ট্রাফিক জ্যামে পড়তেন না, সেই ট্রাফিক জ্যামে পাশের বন্ধ মোটর থেকে চমকে দেওয়ার মতো কী শুনলেন সেইটা বলুন।

    সেইটে শুনতে চাও?ঘনাদা একটু অনুকম্পার হাসি হেসেই বললেন, কিন্তু তা শুনলে তো বুঝতে পারবে না!

    বুঝতে পারব না! আমরা একটু অপমানিত— কেন? কোন দেশের ভাষা?

    ভাষা ইউরোপেরই! ঘনাদা ব্যাখ্যা করলেন, তবে ইউরোপেরও খুব কম লোকই এ-ভাষায় কথা কয় বা জানে। ভাষাটা হল বাক। স্পেনের উত্তর পশ্চিমের একটা ছোট অঞ্চলের এ ভাষা—

    থাক থাক, ওতেই হবে, ঘনাদাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, ভাষাটা আপনার তো জানা। আপনি কী শুনে কী বুঝলেন তা-ই বলুন।

    আমি যা শুনলাম, আর যা বুঝলাম, তাও তো তোমাদের কাছে ধাঁধা। ঘনাদা তাঁর কথায় বাধা দেবার শোধ তুলে বললেন, কথা যা শুনলাম তা এনজেল নিয়ে। এনজেল মানে বোঝো কি?

    বুঝব না কেন? আমরা তাচ্ছিল্যভরে বললাম, এনজেল মানে দেবদূত, তা কে জানে!

    না, এ সে-এনজেল নয়। ঘনাদা বুঝিয়ে দিলেন, এ হল আকাশে প্লেন কি রকেটের ওড়ার উচ্চতার মাপ। এক এনজেল প্রায় তিনশো পাঁচ মিটার। তবে শুধু এনজেল কি বাস্ক ভাষা শুনেই আমি চমকে উঠিনি। আমি বীতিমত স্তম্ভিত হয়ে গেছি গলার স্বরটায়। বাস্ক ভাষার সঙ্গে এ গলা তো দুনিয়ার একটি মাত্র লোককেই নির্ভুলভাবে চিনিয়ে দেয়। ট্রাফিক জ্যাম কেটে গিয়ে আবার গাড়িগুলো সচল হবার মধ্যে আরও ক-টা কথা শুনে আমি তখন নিশ্চিতভাবে বুঝেছি আমার পাশের জানলা-বন্ধ দামি বিদেশি সেডান গাড়িটার ভেতরে বোরোত্রা ছাড়া আর কেউ নেই। বোরোত্রা অবশ্য তার আসল নাম নয়। তারই দেশের অনেক আগেকার এক মস্ত টেনিস খেলোয়াড়ের ওই নামটা সে ছদ্মনাম হিসেবে ব্যবহার করে।

    কিন্তু বোরোত্রা হঠাৎ দুনিয়ার সব জায়গা ছেড়ে কলকাতা হেন শহরের রাসবিহারী অ্যাভিনিউর মতো রাস্তায় কেন? বোরোত্ৰা মানেই তো চরম শয়তানি,

    সর্বনাশা কিছু! এখানে সেরকম কী মতলবে সে এসেছে!

    ট্রাফিক জ্যামটা কাটবার ঠিক আগের মুহূর্তে একটা উচ্চারণে ভয়ংকর রহস্যটার আসল খেই পেয়ে গেলাম। বন্ধ গাড়িটার ভেতর থেকে একটা নামই শুধু চকিতে কানে এল। দুব্যারি! তারপরই গাড়িটা বিদ্যুৎবেগে ছুটে বেরিয়ে গেল সামনে।

    বিদেশি দামি গাড়ির যেমন পিক আপ তেমনই বেগ। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। পেছনে লেগে থাকা কি সোজা কথা! তবু বোরোত্রাকে চোখের আড়াল হতে দিলে আমার চলবে না। যেমন করে হোক তার পেছনে আঠার মতো লোগে থাকতে হবেই।

    কলকাতার ঘিঞ্জি সব রাস্তার ভিড় আর যানবাহনের অব্যবস্থা আমার সহায় না হলে বোরোত্রার পেছনে লেগে থাকা আমার সম্ভব হত না। তার পেছনে কেউ লেগে আছে তা আন্দাজ করে অথবা নিজের স্বাভাবিক সাবধানতায় বোরোত্রা তার গাড়িটাকে কলকাতার ভেতরে উত্তর দক্ষিণ পুব পশ্চিম দিকে তখন যেন চরকি পাক খাওয়াচ্ছে। ড্রাইভারকে যেমন করে হোক তাকে চোখের আড়াল না-হতে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে আমি তখন কৌতূহল ভাবনা উদ্বেগে অস্থির হয়ে বসে আছি।

    বোরোত্রার সঙ্গে প্রথম দেখার কথাটা তো ভোলবার নয়। বোরোত্রার সঙ্গে দেখা হওয়ার কারণটা হয়েছে অবশ্য সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে অন্য একজন। “..

    মাত্র বছরখানেক আগে হঠাৎ নিজেদের তেলের খনিগুলোর মধ্যে সারা দুনিয়াকে খুশিমত ওঠবোস করাবার কী ক্ষমতা যে আছে, তা বুঝে আরব দেশগুলো পেট্রলের দাম একেবারে আকাশ-ছোঁয়া করে দিয়েছে। পৃথিবীর আমির-ওমরাহ দেশগুলোই তাতে একেবারে মাথায় হাত দিয়ে পথে বসে পড়েছে। দিনকাল বদলেছে। নইলে আরব দেশগুলোর মতো সামান্য ক্ষমতার কোনও রাজ্য আগেকার দিনে বেয়াদবি করলে গ্রেট ব্রিটেন দেখতে-না-দেখতে তিনটে ম্যান অফ ওয়ার পারস্য উপসাগরে পাঠিয়ে সব ঠাণ্ডা করে দিত। এখনও বড় বড় শক্তিগুলোর একটা ছুতো করে পায়ে-পা-লাগিয়ে ঝগড়া বাধিয়ে দুটো এয়ারক্র্যাফট কেরিয়ার অকুস্থলে রওনা করিয়ে দিয়ে, গোটা পাঁচেক বড় বম্বার সেখানকার আকাশে কবার একটু ঘুরিয়ে বেয়াড়াদের সিধে করে দিতে কি ইচ্ছে করে না? কিন্তু মুশকিল হয়েছে এই যে, সেদিন আর নেই। এক দলের এয়ারক্র্যাফট কেরিয়ার সেখানে দেখা দিতে-না-দিতেই আর-এক নিশান-ওড়ানো কেরিয়ারকে কাছাকাছি টহল দিতে দেখা যাবে নিশ্চয়। একজনের বোমারু বিমান কিছু বাড়াবাড়ি করলে আর-একজনের অ্যান্টি এয়ারক্র্যাফট কামান এখান-সেখান থেকে হঠাৎ হয়তো উঁকি দিতে শুরু করবে।

    ও সব পুরনো চাল ছেড়ে মার খাওয়া পালের গোদাগুলো তাই তখন মুশকিল আসানের ভিন্ন উপায় খুঁজছে। – সব বড় বড় দেশগুলোয় তখন অমন গণ্ডা গণ্ডা লুকোনো আর দেখানো

    সংকট-মোচনের রাস্তা বার করবার ঘাঁটি।

    ন্যু-ইয়র্ক, লন্ডন, প্যারিস, বন, মাদ্রিদ, অসলো, স্টকহোলম তো বটেই, লিমা, ব্রাসিলিয়া, বুয়েনস এয়ারসে পর্যন্ত কোটি কোটি টাকা অকাতরে খরচ করে দুনিয়ার সব বাঘা বাঘা ওই লাইনের বৈজ্ঞানিকদের জড়ো করা হয়েছে তেলের বদলি এনার্জি জোগাবার নতুন কিছু আবিষ্কারের জন্য।

    নদীর স্রোতের তোেড়, হাওয়ার বেগ, সমুদ্রের ঢেউয়ের নিত্য ঝাঁপিয়ে আসা আর ফিরে যাওয়া থেকে সূর্যের তাপ আর পরমাণু বিস্ফোরণ পর্যন্ত অনেক কিছুর

    ভেতরেই অফুরন্ত শক্তির উৎস সন্ধানের চেষ্টা হচ্ছে।

    নানা দেশের রাজশক্তির সরকারি সাহায্য আর উৎসাহ এ-সব চেষ্টার পেছনে অল্পবিস্তর থাকলেও দুনিয়ার কুবেরমার্কা কারবারিরাই নিজেদের স্বার্থে জোট বেঁধে এ কাজ হাসিলের জন্য মুক্তহস্ত হয়েছে।

    তেলের বদলি একটা কিছু সবদিক সামলানো সত্যিকার শক্তির উৎস বার করতে খরচায় টান যাতে কোনওমতেই না পড়ে, সেইজন্যই ইউরোপ-আমেরিকার কুবের কারবারিদের এমন করে জোট বাঁধা। সবচেয়ে বড় এ-জোটের নাম এস-এস-পি-এস।

    এক দিক দিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বাঘা কারবারি-জোট হলেও এই এস-এস-পি-এস-এর কথা খুব কম লোকেই জানে।

    মন্ত্রগুপ্তির ব্যবস্থা তাদের এত পাকা যে, তারা যে দুনিয়ায় নতুন জমানা আমদানি করার ব্যাপারে প্রায় বাজিমাত করতে চলেছে, এখবরটা ঘুণাক্ষরেও বড় বড় দেশের গোয়েন্দা দপ্তরেও পৌঁছয়নি।

    মঁসিয়ে লেভির মুখে এনামটা শুনে তাই সেদিন সত্যি চমকে উঠেছিলাম।

    প্যারিসের বেশ একটা গরিব পাড়ার নেহাত সস্তা একটা হোটেলের একেবারে টঙের একটা অখদ্যে ঘর নিয়ে তখন থাকি। হোটেলটার এমন অবস্থা যে, নীচের লবির কাউন্টার থেকে বোর্ডারদের কামরায় ফোনের ব্যবস্থাও নেই। বোর্ডারদের কাউকে কোনও খবর দেবার দরকার হলে নীচের জ্যানিটরকেই সেটা দিতে আসতে হয়।

    আমার কামরা চারতলার টঙে। সবচেয়ে সস্তা বলে এই গ্যারেট-ঘরটাই নিয়েছি। চার-চারটে তলার সিঁড়ি ভেঙে এসে হোটেলের বুড়ো জ্যানিটর হাঁফাতে হাঁফাতে যে-খবরটা আমায় দিলে, তাতে আমি প্রথমটা বেশ একটু অস্বস্তিই বোধ করলাম।

    জ্যানিটর খবর এনেছে যে, কে একজন হোটেলে এসে আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইছে।

    আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইছে এ-হোটেলে! মনে মনেই কথাটা আউড়ে আমি বেশ ভাবনায় পড়লাম।

    আমার সঙ্গে এ হোটেলে কারওর দেখা করতে আসা তা স্বাভাবিক ব্যাপার নয়। নিজেকে একটু গোপনে রাখব বলেই খুঁজে পেতে প্যারিসের সেইন নদীর বাঁ পাড়ের এমন একটা অখাদ্য হোটেলে আমি উঠেছি। নিজের সঠিক নামটাও এখানকার রেজিষ্ট্রি খাতায় লিখিনি। পাছে চেনা লোকের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়, তাই রাত্রের অন্ধকারে ছাড়া হোটেল থেকে আমি কখনও বার হই না। তা সত্ত্বেও এখানে আমার খোঁজ করে দেখা করতে যদি কেউ আসে, তা হলে সেটা তো বেশ সন্দেহজনক ব্যাপার।

    মনের তোলাপাড়াগুলো অবশ্য বাইরে বুঝতে না-দিয়ে একটু বিরক্তির সুরেই বলেছি, কে আবার এল দেখা করতে। যে এসেছে তাকে ওপরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়নি কেন?

    পাঠাব কী করে? জ্যানিটর বুড়ো আমার চেয়েও তিরিক্ষি মেজাজে বলেছে, তার কী এতখানি সিঁড়ি ভাঙবার ক্ষমতা আছে! নীচে এসে যেরকম ধুকছে, তাতে আমাদের হোটেল থেকেই না অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে হয়।

    একটু থেমে নীচে যাবার সিঁড়ির দিকে পা বাড়িয়ে বুড়ো জ্যানিটর তারপর যেতে যেতে বলেছে, আমার খবর দেবার দিলাম। তোমার যা করবার করো।

    মনে মনে তখন বুঝেছি, নীচে যে-ই এসে থাক, তার সঙ্গে দেখা করতে না-গিয়ে আমার উপায় নেই। জ্যানিটর বুড়ো চলে যাবার পর প্রায় তার পিছু পিছুই তাই সিঁড়ি দিয়ে নেমেছি নীচের লবিতে। যেমন হোটেল তেমনই তার লবি। বসবার চেয়ার সোফাটোফাগুলি ভাঙাচোরা, ভেঁড়া-খোঁড়া, কাউন্টারের কাঠের তক্তার পালিশ-টালিশ কবে উঠে গিয়ে একটা উইয়ে-খাওয়া চেহারা। সমস্ত হোটেলটাই যেন কোনও পুরনো রদ্দি মালের নিলেমের হাট থেকে কিনে এনে বসানো হয়েছে।

    হোটেল যেমনই হোক, তার কাউন্টারের ক্লার্ক কিন্তু চটপটে, মোটামুটি ফিটফাট এক ফাজিল ছোকরা। আমি সিঁড়ি দিয়ে নেমে লবিতে কাউকে দেখতে না-পেয়ে কাউন্টারের দিকে খোঁজ করতে যেতেই ঠাট্টা করে বললে, আপনার সঙ্গে স্বয়ং মিথুজেলা দেখা করতে এসেছেন।

    রসিকতাটা গ্রাহ্য না করে জিজ্ঞাসা করলাম, কোথায় তিনি!

    ফাজিল ছোকরা রসিকতার সুরেই বললে, খোদ মিথুজেলা তো! সিঁড়ি ভেঙে ওপরে যাবার ক্ষমতা নেই, আবার লবিতেও সকলের সামনে বসে থাকতে চান না। একটু নিরিবিলিতে অপেক্ষা করতে চাইলেন বলে সিঁড়ির নীচের কোণে জ্যানিটরের জায়গায় বসিয়ে দিয়েছি। যা অবস্থা! দেখুন এতক্ষণ টিকে আছেন কিনা।

    ছোকরার শেষ রসিকতাটা মুখ থেকে বার হবার আগেই সিঁড়ির পেছনের কোণে। জ্যানিটরের বসবার জায়গায় একটু ব্যস্ত হয়েই ছুটে যাবার ইচ্ছে হলেও সে-ইচ্ছেটা চেপে বেশ বিরক্তির সঙ্গেই বললাম, মিথুজেলাই হোক আর যেই হোক, আমার খোঁজে এসেছে বলছ কী করে? নাম বলেছে আমার?

    এবার ক্লার্ক ছোকরা একটু ঘাবড়ে গেল। তারপর একটু সামলে কৈফিয়তস্বরূপ জানালে, না, নাম আপনার বলেননি। তবে কাউন্টারে এসে আপনার চেহারা পোশাকের বর্ণনা দিয়ে খোঁজ করাতে আমি ভাবলাম–

    তোমার শুধু চুল ছাঁটাবার মাথা। ভাববার জন্য নয়, বলে ফাজিল ছোকরাকে বেশ একটু হতভম্ব করে সিঁড়ির পেছনের কোণে গিয়ে কিন্তু সত্যি অবাক আর স্তম্ভিত হয়ে গেলাম।

    সেখানে জ্যানিটরের চেয়ারটায় প্রায় যেন ভেঙে পড়া অবস্থায় যে মানুষটা বসে আছে তাকে চিনতে পারিনি এমন নয়। একমুখ দাড়ি গোঁফ সমেত চেহারায় অমন অবিশ্বাস্য পরিবর্তন সত্ত্বেও সে যে মঁসিয়ে লেভি ছাড়া আর কেউ নয় তা বুঝতে আমার কয়েক সেকেন্ড মাত্র লেগেছে।

    কিন্তু মঁসিয়ে লেভি এমন অবস্থায় আমার কাছে কেন? আমার খোঁজই বা সে পেল কী করে! আর আমার এখন তার বিষয়ে কী করা উচিত? এই কটা প্রশ্ন মনের ভেতর ওঠবার মধ্যেই লেভি কোনওরকমে ঘাড়টা তুলে আমার দিকে তাকাল। তার সেই ক্লান্ত কোটরে-বসা-চোখের চাউনি যেন মড়ার চোখের দৃষ্টি।

    আমার দিকে সেইভাবেই কয়েক সেকেন্ড চেয়ে থেকে সে বললে, দাস, তোমায়–

    আমার এবার কী করা উচিত তা এইটুকুর মধ্যে আমি ঠিক করে নিয়েছি।

    লেভিকে তার কথাটা শেষ করতে না দিয়েই কড়া গলায় বললাম, কাকে কী বলছেন আপনি? দাস বলছেন কাকে? আমি দাস নই! মিছিমিছি কেন আমাকে। ডাকিয়ে নামিয়েছেন?

    লেভির মুখচোখের চেহারা দেখে তখন কষ্ট হচ্ছে। কেমন হতাশভাবে আমার দিকে তাকিয়ে সে বলেছে, তুমি-আপনি দাস নন?

    না, আমি দাস নই। আমার নাম ললাপেজ গঞ্জালেস। হোটেলের কাউন্টারে জিজ্ঞাসা করলেই আমার নাম জানতে পারতেন–

    বেশ গলা চড়িয়ে লেভিকে এসব কথা শোনাবার মধ্যে একটা চোখ কয়েকবার মটকে তাকে ইশারা করবার চেষ্টা করেছি।

    লেভির চোখের দৃষ্টিই হয়তো ক্ষীণ হয়ে গিয়েছে বলে সে সে-ইশারা বুঝেছে বলে মনে হয়নি।

    তার ওপর ফরাসিতে চড়া গলায় তম্বি করার মধ্যে তাই এবার একবারের জন্য গলাটা একেবারে নামিয়ে তুর্কি ভাষায় একটা কথা শুধু বলেছি। ফ্রান্সের লোক হলেও লেভি যে বহুকাল তুরস্কেই কাটিয়েছে আর সেখানকার ভাষা যে ওর প্রায় মাতৃভাষার মতো তা জেনে চড়া গলার গালাগালির মধ্যে ছোট্ট করে শুধু তুর্কিতে একবার বলেছি, এটা নাটক।

    মুখের তোড়টা অবশ্য আগে পরে সমানে চালিয়ে গেছি। বলে গেছি, আসলে কে আপনি, কী মতলবে এখানে এসেছেন ঠিক করে বলুন। আজগুবি একজনের নাম বলে এখানে খুঁজতে আসার ছল করে ঢোকার নিশ্চয়ই একটা কোনও উদ্দেশ্য আছে।—ভয় নেই! এটা নাটক!—আপনার পাকা চুলদাড়ি দেখে ভুলব ভাববেন না। ও সব চালাকি আমার অনেক জানা আছে।

    চোখের ইশারায় যা হয়নি, আমার তম্বির মধ্যে ওই তুর্কি কথাটুকুতেই তা হাসিল হয়েছে। ক্লান্ত দুর্বল গলাতে হলেও লেভি এবার ব্যাপারটা বুঝে নিজেও যথাসাধ্য অভিনয় করবার চেষ্টা করেছে।

    চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করে বলেছে, না, না, আমারই ভুল হয়েছে। এখানে আসা। আমায় মাপ করবেন। আমি—আমি চলে যাচ্ছি।

    কিন্তু চলে যাবে কী, উঠতে গিয়েই লেভি হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাবার জোগাড়।

    কোনওরকমে তাকে ধরে ফেলে এবার বাধ্য হয়ে সুর পালটাতে হয়েছে।

    যেন অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বলেছি, আরে আপনি হাঁটতে গিয়ে টলে পড়ছেন যে! নেশায় চুর হয়ে এসেছেন বুঝি? অবস্থা যা দেখছি তাতে এই হোটেলের মধ্যেই দাঁত চিরকুটে পড়ে একটা কেলেঙ্কারি বাধাবেন। চলুন, চলুন, আপনাকে বার করে দিয়ে আসি। আরে না, না, ও সামনের দরজা দিয়ে নয়। ওখানে কেউ আপনার এ চেহারা দেখলে এ হোটেলের বদনাম হয়ে যাবে। এদিকে এই খিড়কি দিয়ে আসুন—

    এই সব বোলচাল দিতে দিতে লেভিকে ধরে হোটেলের পেছনের দিকের একটা খিড়কি দরজা দিয়ে বেরিয়ে নিরাপদ বলে সেইন নদীর ধারে ওখানকার মাল-টাল বওয়া লঞ্চ, টাগবোটের মাঝিমাল্লাদের একটা কফিখানায় গিয়ে উঠেছি।

    সেখানে লেভির এমন হাল কী করে হল জানতে চাওয়ায় তার মুখে এস-এস-পি-এস শুনে অবাক হয়েছি।

    জিজ্ঞাসা করেছি, এস-এস-পি-এস! এ নাম তুমি কোথা থেকে জানলে? কী জানো তুমি এস-এস-পি-এস সম্বন্ধে?

    যা জানবার সবই জানি, হতাশ ভাবে বলেছে লেভি, আমার এখন এ হাল হয়েছে ওই এস-এস-পি-এস-এরই জন্য।

    এস-এস-পি-এস-এর জন্য?অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করেছি, তা হলে ওদের সঙ্গে তুমি জড়িত ছিলে?

    হ্যাঁ, ছিলাম, ক্লান্তভাবে বলেছে লেভি, কিন্তু ওরা কারা, কী ওদের কাজ, তুমি নিজে কিছু জানো?

    তা একটু জানি বইকী, তিক্ত স্বরেই বলেছি, আর কিছু অন্তত না-জানলে আর আরও কিছু জানতে না চাইলে এমন করে নাম ভাঁড়িয়ে এরকম একটা জায়গায় লুকিয়ে বসে আছি কেন? কিন্তু তুমি এখানে আমায় খুঁজে বার করলে কী করে?

    নেহাত ভাগ্যের জোরে, বলে লেভি তার নিজের কাহিনীটা আমায় শুনিয়েছে।

    লেভি কাজটা এতদিন যা করে এসেছে তা প্রাণ-হাতে-নিয়ে-ফেরার মতো পরম দুঃসাহসের হলেও তার একটা দুর্নাম আছে।

    কাজটা গুপ্তচরের। তবে লেভির একটা বিশেষত্ব এই যে, শুধু মোটা ইনামের প্রলোভনে যা সে অন্যায় মনে করে এমন কাজ সে কখনও জেনেশুনে হাতে নেয়নি।

    বাইরে ফ্রান্সের একটা ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিতে সেলসম্যানের তোল নিয়ে সে বহুকাল থেকেই তুরস্কেই তার গুপ্তচরবৃত্তি চালিয়ে যাচ্ছে।

    এস-এস-পি-এস তার সম্বন্ধে খোঁজ খবর নিয়ে গোপনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তেলের বাদশাদের একচেটিয়া মালিকানার জুলুম ব্যর্থ করে পৃথিবীর সব মানুষের জন্য এনার্জির অন্য উৎস আবিষ্কারই এদের মহৎ উদ্দেশ্য জেনে লেভি এদের হয়ে কাজ করতে রাজি হয়। তেলের বাদশা-মালিকরাই তাদের আসল শত্রু বলে বুঝিয়ে, তাদের গোপন চক্রান্তের অন্ধিসন্ধি জানবার জন্যই লেভিকে যেন লাগানো হয়।

    কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই লেভি এস-এস-পি-এস-এর আসল স্বরূপ জানতে পারে।

    কী সে স্বরূপ? এই পর্যন্ত শুনেই লেভিকে প্রশ্ন করেছি। তা তুমি এখনও জানো না? লেভি একটু রুক্ষ স্বরেই আমায় জিজ্ঞাসা করেছিল।

    একটু হেসে বলেছিলাম, জানি যে, তারা সমস্ত পৃথিবীকে নতুন এক মহাজনি সাম্রাজ্যের ক্রীতদাস করে রাখতে চায়। তুমি এর চেয়ে বেশি কিছু জানো কি না তাই শুনতে চাচ্ছি।

    হ্যাঁ, বেশি কিছুই জানি, জ্বলন্ত স্বরে বলেছে লেভি, একটা নামই প্রথম বলছি, ই-ইউ-ডব্লিউ-সি। শুনেছ কখনও এ নাম?

    হ্যাঁ, শুনেছি, এবার একটু নরম গলাতেই বলেছি, ও নাম হল, এনার্জি আনলিমিটেড ওয়ার্লড কার্টেল। ওই নামটুকুর বেশি আর কিছুই জানি না সে কথা অবশ্য স্বীকার করছি।

    বেশ, আমার কাছেই শোনো তা হলে, বলে লেভি এবার এস-এস-পি-এস আর ই-ইউ-ডব্লিউ-সির সমস্ত রহস্য আমায় বুঝিয়েছে। সে রহস্য নিজে জানবার পর এস-এস-পি-এস-এর হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করতে রাজি না হওয়ায় কেমনভাবে তাকে তুরস্কের ইস্তাম্বুল থেকে লোপাট করে কাছের এক ছোট দ্বীপে বন্দি করে রাখা হয়, সেখানে শেষ পর্যন্ত তাকে খতমই করে দেওয়া হবে জেনে কেমন করে সে ভাগ্যক্রমে সেখান থেকে পালায় আর তারপর এসব গোপন রহস্য জানিয়ে যাবার জন্য নিজে এস-এস-পি-এস-এর ভাড়াটে দুশমনদের হাতে ধরা পড়বার বিপদ সত্ত্বেও কীভাবে তার পুরনো বিশ্বাসী বন্ধুদের খোঁজ করে বেড়ায়, সে কাহিনী লেভি আমায় শুনিয়েছে।

    আমায় খুঁজে পাওয়াটা নেহাত তার ভাগ্য। প্যারিসের নানা রাস্তায় ছন্নছাড়ার মতো ঘুরতে ঘুরতে একদিন সে একজনের চেহারা দেখে বেশ ফাঁপরে পড়ে। চেহারাটার সঙ্গে তার এককালের বন্ধু আর সঙ্গী দাস-এর খানিকটা মিল থাকলেও, ফেরা পোশাক সবই আলাদা।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray
    Next Article ঘনাদা সমগ্র ১ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    Related Articles

    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    ঘনাদা সমগ্র ১ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }