Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ঘনাদা সমগ্র ২ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    প্রেমেন্দ্র মিত্র এক পাতা গল্প884 Mins Read0

    ০৪. ঘনাদা একটা সিগারেট ধরিয়ে

    ঘনাদা একটা সিগারেট ধরিয়ে ফের শুরু করলেন তাঁর গল্প:

    পকেটে না কামড়াক, সেই নাছোড়বান্দা ভিখিরির ছুঁড়ে দেওয়া কাগজের ডেলাটা অমন লজ্জা আর অপমানের জলবিছুটির জ্বালা যে সারা শরীরে ধরাবে, তা কি ওরা জানত! আসল নামগুলো যখন জানাই হয়ে গেছে, তখন তা-ই ব্যবহার করে বলি, শুঁটকো ডুগান আর গোরিলা-মার্কা কার্ভালো তা ভাবতেই পারেনি।

    ক্যাসিনোর বাইরে থেকে বৃথাই ঘুরে এসে নিজেদের রুলেটের মজলিশে গিয়ে বসবার আগে পকেটে রাখা কাগজটা খুলে বার করে পড়তে গিয়ে দুজনের চোখ প্রায় ছানাবড়া।

    এ কার চিঠি! কী নিয়ে চিঠি? না, এ চিঠি জুয়ায় ফতুর হওয়া কোনও হেরো ভিখিরির নয়, যাকে কুচিকুচি করে কেটে গায়ের জ্বালা যায় না, সেই উচ্চিংড়ে দাসের।

    দাস লিখেছে,

    চিনতে পারলে না তো? ওভার কোটটা শুধু উলটে পরে, মাথায় একটা লাল ব্যান্ডেজ বেঁধে, একটা চোখ একটা ঠুলিতে ঢেকেছিলাম। তাতেই অমন বোকা বনার পর দুনিয়ার ফাটকাবাজার ফাটানো সেই ধড়িবাজ চূড়ামণিকে তোমরা খুঁজে বার করতে পারবে, এ আশা আর করতে পারি? অন্য সব কথা বলার আগে আমার ওভারকোটটার কথাই বলে দিই। ওটি সরল সোজা ছদ্মবেশ। ওর এক দিকটা ছেঁড়াখোঁড়াময়লা একটা ওভারকোটের যেন শেষ অবস্থা। ওভারকোটটা ওলটালেই অন্য দিক কিন্তু একেবারে হাল ফ্যাশনের ঝকঝকে তকতকে নতুন সাজ। উলটো দিকটা বাইরে রেখে পরে ক্যাসিনোর বেয়ারাকে তোমাদের হাতে পৌঁছে দেবার চিঠিটা দিয়েছিলাম। তারপর বাইরে আসবার আগেই একটা বাথরুমে ঢুকে মাথায় মিথ্যে ব্যান্ডেজ বেঁধে আর চোখে ইলি লাগিয়ে ওভারকোটটা উলটে পরে এসেছিলাম। যাই হোক, তোমাদের বুদ্ধির পরীক্ষা করে আর সময় নষ্ট করতে চাই না। যাকে খুঁজছ, সত্যিই যদি তার হদিস পেতে চাও, কাল দিনের প্রথম ফ্লাইটে এখান থেকে বিলেতের হিথরোতে গিয়ে নামবে। তারপর কী করতে হবে, সেখানকার এয়ারপোর্ট থেকে উড়োজাহাজ কোম্পানির বাস-এ তাদের শহরের আস্তানা মানে সিটি অফিসে গিয়ে পৌঁছবার আগেই তার হদিস পাবে নিশ্চয়।

    হদিস তারা যা পেয়েছিল, তাতে তাদের নিরেট মাথা দুটো ঠুকে দেওয়াই উচিত ছিল। তবু তা না করে ধৈর্য ধরে তাদের বলেছিলাম, এই বুদ্ধি নিয়ে তোমরা দুনিয়ার এক ধড়িবাজ চূড়ামণিকে ধরার আশা রাখো? হিথরোতে নেমে তোমরা শেষ পর্যন্ত এই ঘোড়দৌড়ের মাঠে এলে তার খোঁজে? আগে দুনিয়ার সেরা সব জুয়ার আড্ডায় তাকে খুঁজেছ, তারপর এই বিলেতে এসে নেমে এলে কিনা ঘৌড়দৌড়ের মাঠে!

    মানে–, ছোট কং অর্থাৎ আসলে গোরিলা কার্ভালোর শুঁটকো সঙ্গী ডুগান একটু বুঝি লজ্জিত হয়েই বলেছিল, আমরা ভাবলাম যে, আজ বিলেতে দুনিয়ার সেরা ঘৌড়দৌড় ডার্বির খেলা হচ্ছে, তাই সে ধড়িবাজটা

    থামো, ধমক দিয়েই বলেছিলাম, তোমরা যাদের সঙ্গে কারবার করো, এ সেই হেঁজিপেজি ধড়িবাজ নয়, এত দিনেও তা বোঝোনি! টাকা রোজগারটা এদের মতো মানুষের কাছে কোনও সমস্যাই নয়। কারবারে দুনিয়ায় এদিকে ওদিকে ক-টা প্যাঁচ কষে এরা যখন যত খুশি মুনাফা লুটতে পারে বললেই হয়। যাকে তোমরা খুঁজছ, সেই ধুরন্ধরের আবার টাকায় লোভ নেই বললেই হয়। তার আগের দুটো দাতব্যের কথা তোমরা আগেই শুনেছ, এখন জেনে রাখো, মন্টিকার্লো থেকে ছেড়ে আসবার আগে সেখানেই সে একটা বড় ক্যানসার হাসপাতালের জন্য মোটা সাহায্যর টাকা দিয়ে এসেছে। না, টাকার কুমির হওয়া নয়, এ মানুষের নেশা হচ্ছে মানুষের জীবন। আর জগতের যে সব ব্যাপার আজও পরম ধাঁধা হয়ে আছে, বুদ্ধি দিয়ে তাদের রহস্য ভেদ করা। মহাভারতের যুগে জন্মালে এ মানুষ অর্জুনের সঙ্গে ধ্রুপদরাজের লক্ষ্যভেদের বাহাদুরির খেলায় পাল্লা দিত। গান্ডিবীকে লজ্জা-দেওয়া সেই মানুষকে। তোমরা খুঁজতে এসেছ এই এপসম ডাউনস-এ?

    ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ঘোড়দৌড় ডার্বি খেলার মাঠ এপসম ডাউনস-এর মধ্যে দাঁড়িয়েই কথা হচ্ছিল। হিথরোতে প্লেন থেকে নেমে তারা আর কোথাও নয়, এই বিখ্যাত ঘোড়দৌড়ের মাঠেই প্রায় ছুটে আসবে, তা বুঝে এখানে এসেই দুই মূর্তিমানকে ধরেছিলাম। তাদের বুদ্ধির দৌড়ে আর একবার ধিক্কার দিয়ে সেই কথাই আর একবার বললাম, মন্টিকালো থেকে বিলেতের হিথরোতে এসে নেমে লন্ডন শহর পর্যন্ত আসার পথে এই ডার্বির ঘৌড়দৌড়ের মাঠ ছাড়া আর কোনও কিছুর কথা তোমাদের মনে পড়ল না? ওই নিরেট দুটো মাথার ঘিলুতে আর কোনও ভাবনা একটু নাড়া দিল না?

    না, দিল না! এতক্ষণ পর্যন্ত অনেক বাক্য সয়ে ছোট কং, বা তার আসল যা নাম তাই ধরে বলি, গোরিলা কার্ভালো খেপে গেছে বললেই হয়। ডার্বি-দৌড়ের দিন এপসম ডাউনস-এর সেই মাঠ-ভর্তি দিনমজুর থেকে লাট-বেলাট, বড়লোকের ভিড়ের মধ্যে আমার একটা হাত ধরে মোচড় দিয়ে প্রায় ছিঁড়ে নেবার চেষ্টা করে বললে, আমরাই যদি ভাবব, তা হলে তোকে হুকুম দিয়ে কাজে লাগিয়েছি কেন? নে, খুঁজে বার কর তোর সেই মক্কেলকে। নইলে তোর দুটো হাত আর মাথাটা এখানেই ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে যাব। কী? বুঝলি, যা বললাম? এক্ষুনি বার কর তোর মক্কেলকে।

    এক্ষুনি বার করতে হবে? যেন কাঁদো কাঁদো হয়ে বললাম, কিন্তু তা হলে এ জায়গা ছেড়ে একটু যেতে হবে যে!

    যেতে হবে? ছোট্ট কং মানে গোরিলা কার্ভালো আগুনের হলকা বার করা গলায় জিজ্ঞেস করলে, কোথায়?

    বেশি দূরে নয়, যেন ভয়ে-ভয়ে বললাম, এই ওয়াটার্ল স্টেশনে।

    ওয়াটাৰ্ল স্টেশনে! শুঁটকো ডুগান আর গোরিলা কার্ভালো দু-জনেরই গরম গলায় এবার খিচুনি শোনা গেল, রসিকতা হচ্ছে আমাদের সঙ্গে?

    তারপর ছোট কংই আলাপের মওড়া নিয়ে বললে, জিভটা ছিঁড়ে নেব, এইটা মনে রেখে যা বলবার বলবি। কোথাও এতদিনে যার খোঁজ মেলেনি, ওই ওয়াটার্ল স্টেশনে গেলেই তার দেখা মিলবে? সে আমাদের জন্য সেখানে অপেক্ষা করে বসে আছে?

    তা কি আর আছে! সবিনয়ে স্বীকার করলাম। তবে তাকে খুঁজে বার করতে হলে ওই ওয়াটার্ল স্টেশনে যাওয়া ছাড়া তো আর কোনও উপায় দেখছি না।

    তা ছাড়া উপায় দেখছিস না! ছোট কং মানে গোরিলা কার্ভালো তার মুঠো করা ডান হাতটার রদ্দাটা আমার বাঁ কানের ওপর চালাবে কি না, তক্ষুনি ঠিক করতে না পেরে কী ভেবে নিজেকে তখনকার মতো সামলে বললে, বেশ, তোর ওয়াটার্ল স্টেশনেই চল। সেখানে আজ তোর এসপার কি ওসপার, এইটে শুধু মনে রাখিস।

    মনে আর কী রাখব? দুই বুনো মক্কেলকে বেশ একটু ভুলিয়ে ভালিয়েই সেদিন ওয়াটা থেকে উত্তর স্কটল্যান্ডের একটা গাড়িতে তুলতে হল।

    এর আগে ঘোড়দৌড়ের মাঠ থেকে ওয়াটার্ন আসবার পথেই ট্যাক্সিতে দুই মক্কেলকে কিছুটা নরম করতে পেরেছিলাম। নরম আর কিছুতে নয়, স্রেফ মোটা দাঁও-এর লোভ দেখিয়ে। তোমরা ফাটকাবাজারের লোকসান পুষিয়ে নেবার জন্য দুনিয়া চষে বেড়াচ্ছ, আর সে মানুষটা অত লাভের পড়তা হেলায় অগ্রাহ্য করে দানধ্যান করেই সব বিলোতে বিলোতে অন্য কী এক ধান্দায় উধাও হয়ে গেছে! তার মানে কী? সে ধান্দায় এমন দারুণ কিছু লাভ নিশ্চয়ই আছে, যা আমাদের কল্পনাতেই নেই। সুতরাং সে মানুষটাকে খুঁজে বার করে তার এখনকার ধান্দাটা জানাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ নয় কি?

    শুঁটকো ডুগান আর গোরিলা কার্ভালো মুখ গোমড়া করে রাখলেও আমার কথাগুলো একেবারে অগ্রাহ্য করতে পারেনি। দুনিয়ার কারবারি লেনদেনের বাজার নিয়ে যে এমন অনায়াসে ছিনিমিনি খেলে যখন খুশি লাভের পুঁজির পাহাড় জমিয়ে ফেলতে পারে, সে কোন লোভে এ সুখের স্বপ্ন ছেড়ে কোন অজানা ধান্দায় হঠাৎ নিরুদ্দেশ হয়ে যায়?

    সে ধান্দাটা কী, তা জানবার আগ্রহটা আমার দুই বুনো মক্কেলের মধ্যে জাগিয়ে তুললেও স্টেশন থেকে তাদের বিলেতের হিসেবে দূরপাল্লার গাড়িটায় তুলতে একটু বেগই পেতে হয়েছে।

    এপসম ডাউনস থেকে ওয়াটা স্টেশনের নাম করে বার হলেও রাস্তায় একটু যেন লজ্জার সঙ্গে স্বীকার করেছিলাম যে, বিলেতের রেলস্টেশনের খবর আমার তেমন জানা নেই। তাই ঠিক ওয়াটার্ল স্টেশনে গেলেই কাজ হাসিল হবে কি না বলতে পারছি না। তবে ওয়াটার্ল না হোক, বড় গোছের একটা স্টেশনে গেলে চলবে।

    যে-কোনও বড়গোছের স্টেশন হলেই চলবে? শুঁটকো ডুগান আর গোরিলা কার্ভালো বেশ একটু সন্দিগ্ধ গলায় জিজ্ঞেস করেছিল।

    হ্যাঁ, যে-কোনও, মানে একটু বড়গোছের স্টেশন হলে নিশ্চয়, এমনিভাবে এলোমেলো খানিক বকুনি দিয়ে দুই মক্কেলকে তখনকার মতো ঠাণ্ডা করলেও সত্যিকার কাজটা হাসিল করবার জন্য যে প্যাঁচটা কষলাম, সেটা কাজে না লাগলে সমস্ত ব্যাপারটাই যেত মাটি হয়ে।

    তা যে হয়নি তার কারণ গোরিলা কার্ভালো আর শুঁটকো ডুগানের মতো মক্কেলদের মেজাজ-মরজির মারপ্যাঁচ কষে নিতে আমার ভুল হয়নি।

    একটার জায়গায় দুটো বড় স্টেশনে এফোঁড় ওফোঁড় যেন খোঁজাখুঁজি করে আমি তখন আমার দুই মক্কেলকে একেবারে খাপ্পা করে তুলেছি।

    কই, কোথায় তোর শিকার? স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের ওপরই যেন আমার ধড়মুণ্ডু ছিঁড়ে আলাদা করে দেবে এমনই হিংস্র চাপা গলায় গোরিলা কার্ভালো তার হিংস্র চোখ দুটো দিয়ে আমায় যেন খুবলেছে।

    এই যে! এই যে! এক্ষুনি ধরে দিচ্ছি, আমি যেন ভয়ে ভয়ে বলেছি, একটু শুধু ধৈর্য ধরো।

    আর বেশি ধৈর্য ধরবার অবশ্য দরকার হয়নি। এক থেকে আর-এক স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ব্যস্তভাবে খুঁজতে খুঁজতে ঠিক যা চাইছিলাম তা আমি পেয়ে গেছি।

    যে প্ল্যাটফর্মে তখন এসে দাঁড়িয়েছি, বরাত-জোরে নিশ্চয় দূরপাল্লার ট্রেনটা তখন সবে তা থেকে ছাড়তে যাচ্ছে। একেবারে খালি একটা ডিল্যক্স কামরা থেমেছে ঠিক আমাদেরই সামনে।

    আমার মাথায় মতলবটা খেলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনটা লম্বা হুইসল দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। তারপর যা করবার তাতে এতটুকু ভুল আমার হয়নি। ট্রেন ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লাফ দিয়ে কামরার ভেতরে উঠে পড়ে আমি দরজা থেকে পাশের জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে বলেছি, টা-টা বন্ধুরা, টা-টা! আশা করি আবার

    কথাটা শেষ করতে কিন্তু পারিনি উদ্বেগে উত্তেজনায়। কী করবে এবার দুই মূর্তিমান। রাগে দাঁত কিড়মিড় করলেও উজবুকের মতো ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থেকে ছুটন্ত ট্রেনে আমায় সরে পড়তে দেবে?

    তা যদি দেয় না, শুঁটকো ডুগান আর গোরিলা কার্ভালোর মতো মূর্তিমানদের মরজি-মেজাজের মারপ্যাঁচ কষতে আমার ভুল হয়নি।

    চলন্ত গাড়িতে লাফিয়ে উঠে দরজা থেকে একটা জানলার কাছে এসে আমার মুখ বাড়াবার সঙ্গে সঙ্গেই রাগে একেবারে আগুন হয়ে পড়ি কি মরি করে দুজনেই ছুটে এসে পর পর দরজার হাতলটা ধরে ফেলে ভেতরে এসে ঢুকে পড়ল।

    দুজনেই এরপর ঝাঁপিয়ে এল আমার দিকে। গোরিলা কার্ভালোর চেয়ে শুঁটকো ডুগানের রাগটা একটু বেশি। পকেট থেকে একটা ভাঁজ করা ছুরি বার করে সে তার ফলাটা যে রকম উৎসাহের সঙ্গে খুলতে যাচ্ছিল তাতে তার কনুইয়ে সামান্য একটু টোকা দিয়ে হাতটা অবশ করে ছুরিটা মেঝেতে ছিটকে ফেলতে হল। গোরিলা কার্ভালো তখন প্রায় আমার বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। একটু কাত হয়ে সরে গিয়ে তাকে একধারের আসনের ওপর গড়িয়ে পড়তে দিয়ে মাথার মাঝখানে দু আঙুলের একটা টোকা দিয়ে বললাম, একেবারে কংক্রিট মনে হচ্ছে রে!

    গোরিলা কার্ভালো চাঁদির ঠিক মাঝখানে সেই টোকা খেয়ে চোখের তারা উলটে একটা বার্থের ওপর বসে পড়বার পর কামরার মেঝে থেকে ডুগানের ছুরিটা তুলে নিয়ে ফলা মুড়ে পকেটে রাখতে রাখতে বললাম, লড়াইটড়াই যা হবার খুব হয়েছে। এবার যে-জন্য এই প্যাঁচ করে তোমাদের এ গাড়িতে তুলেছি, সেই বৃত্তান্তটা শোনো। যে বাদশাহি আরামের ডিলক্স কামরায় আমরা বসে আছি, একামরা কাল ভোরের আগে আর কেউ খুলবে না। এই কামরাকে যা বয়ে নিয়ে যাচ্ছে, সেই ট্রেনটাও তখন এদেশের উত্তরের এক শহরে গিয়ে থামবে। তোমরা যা খুঁজছ, আর আমি যা যতটা উদ্ধার করেছি, সেইসব রহস্যের ইতিহাস-ভূগোল যা জানবার, সেখানেই জানা যাবে। তোমাদের হিথরো এয়ারপোর্টে নেমে বিমানবন্দর থেকে খাস শহরে আসার পথেই তোমাদের এপসম ডাউনস-এর হাতছানির বদলে আমি এই আসল রহস্যের হদিস পাই। সেই হদিস পেয়ে এই লাইনেরই এইরকম এক ট্রেনে আমি যেখানে গেছি, যা যা দেখেছি, জেনেছি ও শেষ পর্যন্ত যে-রহস্যের সন্ধান পেয়েছি, তা-ই তোমাদের এখন শোনাব। যে ট্রেনে আমরা উঠেছি, একটানা সারারাত গিয়ে কাল ভোরে যেখানে তা থামবে, সেইটিই আমাদের গন্তব্যস্থান। শুধু তোমরা যা খুঁজছ, তার জন্য নয়, আজকের দুনিয়ার এক অতল রহস্যের সন্ধান করতে হলে ওখানেই যেতে হবে। আশ্চর্যের কথা এই যে, বিলেতের হিথরো বিমানবন্দরে নামবার পর শহরে আসতে আসতে এই রহস্যের হাতছানি তোমাদের প্রথম থেকেই অস্থির করে তোলেনি। বিদেশের যে-কোনও জায়গা থেকে বিলেতে প্রথম পা দেবার পর ওই একটি রহস্যের প্রচণ্ড আকর্ষণে বেসামাল না হয়ে তো উপায় নেই। যেদিকে যাও, যেখানে যাও, ওই এক রহস্য হাজার ছুতোয় তোমাকে হাতছানি দেবেই। এমন হাতছানি, যার টান ছিঁড়ে বেরিয়ে আসা অসম্ভব বললেই হয়। হ্যাঁ, নেসি-র রহস্যের কথা বলছি। স্কটল্যান্ডের উত্তরে সকনেস নামে সেই আশ্চর্য হ্রদের কথা, যার রহস্যকে কেন্দ্র করে একটা গোটা মহাভারতের মতো নবপুরাণ, আর হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে বই কাগজ খেলনা ছবি খাদ্য-পানীয়ের ফলাও এক রাশ ব্যবসা ফেঁপে উঠেছে।

    সব রহস্যের যা মূল সেই নেসি এখনও পুরোপুরি একটা অজানা ধাঁধা হয়ে আছে বললেই হয়। কিন্তু বিলেতে উত্তর স্কটল্যান্ডের একটা সাধারণ শহরকে তা বিশ্বের ভূগোলে জায়গা করে দিয়েছে। সেই শহরের নাম ইনভারনেস, আর সেই শহরের কাছে মাইল চল্লিশ লম্বা যে পাহাড়ি হ্রদটির হাজার দশেক বছর আগে প্রথম উদ্ভব হয় বলে ভূতাত্ত্বিকদের ধারণা, সেই পাহাড়ি হ্রদের একটি অতল রহস্য এখনও তার ব্যাখ্যা খুঁজছে।

    এ-ট্রেনের এই শৌখিন কামরায় সারারাত যেতে যেতে উত্তর স্কটল্যান্ডের সেই ইনভারনেস শহর থেকে শুরু করে আমার সমস্ত বিবরণটা আমি দিয়ে যাব। কার্ভালো আর ডুগানকে বললাম, শুনতে শুনতে যদি ঘুম আসে তো ঘুমিয়ে পড়তে পারো। আমার তাতে আপত্তি নেই। শুধু বেয়াড়াপনা করার কিছু চেষ্টা করলে তোমাদের মধ্যে বয়সে বড় বলে শুঁটকো ডুগানকে কনুইয়ের দু-হাড়ে একটু করে টুসকি দিয়ে সারা অঙ্গ অসাড় করা রামঝিঝি ধরিয়ে দেব আর কার্ভালো, আমি তোমার নাম দিয়েছি ছোট কং। তোমার মাথার চাঁদিতে রামগাঁট্টা দিয়ে চোখ দুটো জমিয়ে ছানাবড়া করে রেখে দেব সেই সকাল অবধি। সকালেই আমরা ইনভারনেস গিয়ে পৌঁছচ্ছি। আশা করি তার আগে আমার গল্প বলার মধ্যে গল্পটা থামাবার মতো বেয়াদবি করার কুবুদ্ধি তোমাদের দুজনের কারও হবে না।

    যে শহরে আমরা নামতে যাচ্ছি, সেই ইনভারনেস দিয়েই আমার যা বলবার শুরু করি। মার্কামারা স্কটিশ শহর ইনভারনেস। সেইরকম সওয়ারি ঘোড়া আর ঘোড়ায় টানা গাড়ি চালাবার সুবিধের জন্য পাথরের নুড়ি বসিয়ে বাঁধানো সামান্য চওড়া সব রাস্তা, আর বেশির ভাগ সেকেলে একতলা দোতলা বাড়ি। পুরনো শহর।

    বিলেত বলতে আমরা এখন যা বুঝি, একসঙ্গে ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ডে, ওয়েলস মেলানো সেই গ্রেটব্রিটেন তো চিরকাল ছিল না। এই সেদিনও তাদের এ রাজ্যে ও রাজ্যে বিশেষ করে ইংল্যান্ড-স্কটল্যান্ডের মধ্যে ঝগড়া-মারামারি-লড়াইয়ের শেষ ছিল না। সেইরকম লড়াইয়ে বলতে গেলে এই সেদিন, মানে এই ১৭৪৬ সালে এই ইনভারনেস শহরেই স্কটরা ইংরেজদের সবচেয়ে বড় পরাজয়ের লজ্জা দেয়।

    ইনভারনেসের নামডাক কিন্তু তারও অনেক আগে থেকে ছড়ানো শুরু হয়েছে। নামটা ছড়িয়েছে নুড়ি ফেলে বাঁধানো সরু সরু রাস্তা আর ছোট ছোট দোতলা একতলা বাড়ির জন্য নয়। ওই শহরের গা থেকে ছড়ানো প্রায় চৌষট্টি কিলোমিটার লম্বা পাহাড়ি হ্রদটার জন্য।

    স্কটল্যান্ড তো পাহাড়ি দেশ। ওরকম হ্রদ সেখানে তো ওই একটা নয়, তবে ওই পাহাড়ি হ্রদটা নিয়ে অত আদিখ্যেতা কেন?

    লকনেস নাম দেওয়া ওই হ্রদটা নিয়ে যে অত হইচই, তার কারণ ওই হ্রদটার একটা দারুণ রহস্য। দু-দশ বছরের কথা তো নয়, বহুবহু কাল আগে থেকে সঠিক তারিখ ধরে বলতে গেলে সেই ৫৬৫ খ্রিস্টাব্দে যাযাবর ধর্মযাজক সেন্ট কলম্বা ওই ইনভারনেসের হ্রদে এক ভয়ংকর জলচর দানবের সম্বন্ধে কথা বলে গেছেন। তিনি যখন এখান দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন হ্রদের জলে স্নান করবার সময় ভয়ংকর এক জলদানবের আক্রমণে ক্ষতবিক্ষত একটি লোকের মৃত্যুর কথা শোনেন। সেন্ট কলম্বা নিজে সেই হ্রদে স্নান করতে নামলে সেই ভয়ংকর দানব তাঁকেও আক্রণ করতে আসে। তবে সেন্ট কলম্বা তাঁর ইষ্টদেবতার নাম জপ করে কবার দূর হ, দুর হ বলাতেই দানবটা দূরের গভীর জলে পালিয়ে যায়।

    সেই ৫৬৫ খ্রিস্টাব্দের প্রথম প্রচারের পর থেকে ইনভারনেসের হ্রদের সেই ভয়ংকর দানব সম্বন্ধে নানা অদ্ভুত কাহিনী ক্রমশই লোকের মুখে মুখে ফিরে একত্র জমা হয়ে উঠেছে। সে-সব বিবরণ পল্লবিতও হয়েছে নানাভাবে। যেমন, সেই জলচর দানবের মুখ-চোখ দিয়ে নাকি আগুনের হলকা বার হয়। আর সামনে কেউ পড়লে তাকে চোখের সম্মোহনী দৃষ্টিতে সেই দানব নাকি নিঃসাড় নিস্পন্দ করে রাখতে পারে। এইরকম আরও অনেক গুজব।

    অবশেষ ১৯৩৪-এ এই জলচর দানবের প্রথম বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেল বলে মনে হল। পাওয়া গেল লন্ডন শহরের এক শল্যচিকিৎসকের নেওয়া একটি ফোটোতে। ফোটোটায় পাওয়া গেল, হ্রদের ভেতর থেকে লম্বা গলা বাড়িয়ে মাথা উঁচু করে রয়েছে একটি অদ্ভুত প্রাণীর ছবি।

    সে ছবি কেউ বিশ্বাস করল, কেউ-বা করল না। কিন্তু ইনভারনেসের হ্রদের অদ্ভুত প্রাণী সম্বন্ধে কৌতূহলের মাত্রা আর নানা বিবরণের সংখ্যা বাড়তেই লাগল ক্রমশ।

    এ পর্যন্ত কমপক্ষে তিন হাজার বার ইনভারনেসের হ্রদ কিংবা সংক্ষেপে লকনেসে ওই প্রাণীটিকে দেখবার দাবি নানা জনে নানা সময়ে পেশ করেছে। তার মধ্যে কোনটা সাচ্চা, কোনটা ঝুটো বিচার করা কি সোজা কথা?

    যেমন এই কবছর আগে একদিন ভোরবেলায় অবিরাম ফোনের আওয়াজে অস্থির হয়ে জেগে উঠে লন্ডনের প্রকৃতি বিজ্ঞানের মিউজিয়ামের কিউরেটরমশাই তাঁর পরিচিত মাইকেল ওয়েদারেলের উত্তেজিত কণ্ঠে শুনলেন যে, মাইকেল খানিক আগেই লকনেসের তীরে একটি সামুদ্রিক প্রাণীর পায়ের সুস্পষ্ট ছাপ দেখেছেন।

    দুর্দান্ত খবর!

    দু ঘণ্টার মধ্যে দেশের সবচেয়ে বড় প্রাণিতত্ত্ববিদ হেলিকপ্টারে করে লকনেসের তীরে যথাস্থানে গিয়ে হাজির হয়ে তদন্ত শুরু করে দিলেন।

    কিন্তু হায়, সবই ধাপ্পা। পরীক্ষা করে বোঝা গেল, পায়ের ছাপ অন্য কিছু নয়, সব ক-টিই হিপোপটেমাসের। খানিক বাদে ইনভারনেসের স্থানীয় মিউজিয়াম থেকে চুরি করা হিপোপটেমাসের যে একটি ভুষি-ভরা কাটা পা হ্রদের তীরে ছাপ ফেলবার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল, সেটিকেও পাওয়া গেল।

    এরকম ঠাট্টার ব্যাপার দু-একটা মাঝে-মাঝে ঘটলেও সকনেসের জলচর দানব সম্বন্ধে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান কিন্তু বন্ধ হয়নি। যে যাই বলুক, সমস্ত ব্যাপারটা যে হেসে উড়িয়ে দেবার নয়, গভীর ভাবে তা বিশ্বাস করে এই অজানা প্রাণীটির অস্তিত্ব প্রমাণ করবার চেষ্টা সমানে করে আসছেন, ব্রিটেন শুধু নয়, অন্য নানা দেশের বৈজ্ঞানিকেরাও।

    গত ২০ বছর ধরে রাডার যন্ত্র থেকে শুরু করে প্রতিধ্বনি পরিমাপকের মতো নানা আধুনিক বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি নিয়ে তাই সন্ধানীর দল অবিরাম লকনেসে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। ন-জন জাপানির একটি দল প্রায় দু-মাস অজস্র টাকা খরচ করে ওই হ্রদের নানা জায়গায় তাদের সন্ধান চালিয়ে এইটুকু নিশ্চিতভাবে জেনেছে যে, লকনেস হ্রদের তলার গভীর নানা জায়গায় কোনও অজানা প্রাণীর চলাফেরার আভাস আছে।

    জাপানিরা যে আর বেশি কিছু করতে পারেনি তার কারণ নাকি লকনেসের রহস্য উদঘাটনে যা সময় ও পরিশ্রম লাগে, তা প্রায় অশেষ। ছোটখাটো পুকুর-দিঘি তো নয়ই, হ্রদ হিসেবেও বড়। যেমন চল্লিশ মাইল লম্বা, সেই অনুপাতেই গভীর।

    লকনেস-রহস্যসন্ধানী ব্যুরো নামে একটি প্রতিষ্ঠান বহুদিন এই ব্যাপারে রহস্যভেদীদের অর্থসাহায্য দিয়ে উৎসাহিত করবার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু অর্থাভাবে সে প্রতিষ্ঠানকেও এক সময়ে নিজেদের দরজায় তালা দিতে হয়।

    এত দিকে এভাবে বাধা পেয়ে সকনেসের রহস্যভেদের চেষ্টা মানুষ ছেড়ে দিয়েছে কি? না, তা দেয়নি। নানা দিকে নানা সন্ধানী গবেষণায় এই পর্যন্ত বৈজ্ঞানিকেরা এখন অনুমান করবার ভরসা করছেন যে, একটি-দুটি নয়, খুব-সম্ভব অন্তত শ-দেড়েক জলচর দানবাকার প্রাণী লকনেসের গভীরে বর্তমানে বাস করে। বহু প্রাচীন যে-সামুদ্রিক প্রাণীর সঙ্গে তাদের মিল থাকতে পারে সে প্রাণীর বৈজ্ঞানিক নাম হল প্লিসিওসোরাস।

    কিন্তু তাই যদি হয়, তা হলে স্কটল্যান্ডের এই পাহাড়ি হ্রদে তারা কেমন করে কোথা থেকে এল? প্লিসিওসোরাস নামের সামুদ্রিক প্রাণীটি তো অন্তত দশ কোটি বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গেছে পৃথিবী থেকে। আর স্কটল্যান্ডের লকনেসের উদ্ভব হয়েছে দশ হাজারের খুব বেশি বছর আগে নয়।

    লকনেসে প্লিসিওসোরাসের মতো কোনও জলচর দানবাকার প্রাণী থাকতে পারে বলে যাঁরা মনে করেন তাঁদের ধারণা, কোটি কোটি বছর আগে এই অঞ্চলটায় আদি সমুদ্রের একটা অংশ ছিল, আর সেই সমুদ্রের অংশটুকু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে স্কটল্যান্ডের এই হ্রদটুকুতেই সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। প্রাচীন সমুদ্রের কিছু প্লিসিওসোরাস বংশের প্রাণীও সেই সময়ে আটকা পড়ে যায় এই হ্রদের মধ্যে।

    হ্রদের মধ্যে আটকা পড়ে কোটি কোটি বছর ধরে যদি তারা টিকে আছে মনে করা যায়, তা হলে তাদের, জীবন্ত তো নয়ই, কোনও শব কি অস্থিও পাওয়া যায় না কেন? তখন অপরপক্ষ বলেন যে, প্লিসিওসোরাস অত্যন্ত ভীরু গোছের প্রাণী বলে মানুষের সংস্পর্শ তারা যথাসাধ্য এড়িয়ে চলে। তা ছাড়া, এ প্রাণীটি হয়তো, তাদের মধ্যে যারা মারা যায়, তাদের খেয়েই ফেলে, আর মৃত্যু আসছে এমন লক্ষণ টের পেলে তারা ভারী ভারী পাথর গিলে খেয়ে নিজেদের দেহ অগাধ জলে একেবারে গলে নিশ্চিহ্ন হওয়া পর্যন্ত যাতে ড়ুবে থাকে তার ব্যবস্থা করে।

    এসবই নেহাত মনগড়া অনুমানের বেশি আর কিছু নয়। কিন্তু অনুমানের চেয়ে বেশি কিছু প্রমাণ কি একেবারে নেই? হ্যাঁ, তা আছে।

    প্রয়োগ-বিজ্ঞানের বোস্টন অ্যাকাডেমি সেই প্রমাণ সংগ্রহের জন্য চার বছর ধরে লেগে থেকেছে। তাদের যান্ত্রিক সহায় হল গভীর জলের মধ্যে ছায়াছবি তোলার ক্যামেরা, অত্যন্ত শক্তিমান সার্চলাইট আর ক্ষীণতম শব্দতরঙ্গ ধরার মতো অত্যন্ত আধুনিক মাইক্রোফোন। এসব সার্চলাইট আর মাইক্রোফোন পঞ্চাশ ফুটেরও বেশি গভীর জলের তলায় নামিয়ে রাখার সঙ্গে এমন যান্ত্রিক ব্যবস্থা ছিল যে, বড় গোছের কোনও কিছু কাছাকাছি এলেই সার্চলাইট আর মাইক্রোফোন আপনা থেকেই চালু হয়ে যাবে।

    ১৯৭৫-এর ১০ ডিসেম্বর এই বোস্টন দলের নেতা তাঁর সন্ধানের ফলাফল, আর কোথাও নয়, একেবারে বিলেতের পার্লামেন্টেই জানাবার ব্যবস্থা করেন। পার্লামেন্টে সেদিন পাহারার দারুণ কড়াকড়ি, জাল প্রবেশপত্র নিয়ে যাতে কেউ না ঢুকতে পারে। বোস্টন দলের নেতা সেদিন পার্লামেন্টের সদস্য আর নিমন্ত্রিতদের কী দেখিয়েছিলেন? দেখিয়েছিলেন কয়েকটা রঙিন আর সাদাকালো ফোটোগ্রাফের ছবি, যাতে অস্পষ্ট আকারের কোনও একটা কিছুকে ঝাপসাভাবে দেখা যায়। কল্পনার সাহায্য নিলে ভাবা যায় যে, দলনেতা লম্বা গলা আর লেজসমেত দুটি পাখনাওলা খুদে মাথার বিরাট একটা প্রাণীকে দেখেছেন। বোস্টন দলের ক্যামেরায় তোলা ছবিগুলো কয়েক মিটার দূর থেকে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে বোস্টন-নেতা বলেন যে, দেহটা প্রায় আট থেকে দশ মিটার লম্বা, গলাটা প্রায় তিন থেকে পাঁচ মিটার। সেই প্রাণীটি আদিম প্লিসিওসোরাসেরই বংশধর। হ্রদের মাছ আর জলজ শ্যাওলাই প্রাণীটির খাদ্য। আর লকনেসে মোট একশো পঞ্চাশটি সেরকম প্রাণী এখন আছে বলে তাঁদের ধারণা। বোস্টনের এই প্রথম দলের পর দ্বিতীয় একটি দল এসে আগের দলের মতোই প্লিসিওসোরাসের অস্তিত্ব সম্বন্ধে আরও কিছু সাক্ষাপ্রমাণ সংগ্রহ করার পর বৈজ্ঞানিক মহলে সত্যিকার একটা সাড়া পড়ে গেল। বোস্টনের দ্বিতীয় সন্ধানী দল নিজেরাই বিজ্ঞানের সততার মর্যাদা রাখতে কনেসের রহস্যময় জলচর যে প্লিসিওসোরাস হওয়া সম্ভব, সে-বিষয়ে নতুন কিছু প্রমাণ দাখিল করেও, বিজ্ঞানের পরিপূর্ণ সততার মর্যাদা রাখতে, ছোট ড়ুবোজাহাজ গোছের কিছু দিয়ে আরও কিছু সন্ধানের পরামর্শ দিলেন।

    বৈজ্ঞানিক মহল কিন্তু তখন আর ঘুমিয়ে নেই। যেমন-তেমন নয়, লন্ডন সান-এর মতো পত্রিকা একটু বাড়াবাড়ি করেই লিখল যে, বোস্টনের বৈজ্ঞানিক সন্ধানী দল লকনেসের রহস্য-দানবের যে খবর ও ছবিটবি সংগ্রহ করে প্রকাশ করেছে, তা চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদের সূত্র আবিষ্কারের মতোই। যুগান্তকারী। এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের সন্দেহাতীত সম্পূর্ণ সাক্ষ্য-প্রমাণ কবে পাওয়া যাবে, এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য যেমন সাধারণ মানুষ, তেমনই বৈজ্ঞানিকেরাও উৎসুক হয়ে আছেন। চেষ্টায় তাঁদের ত্রুটি নেই। কোন দিক দিয়ে এই রহস্যভেদের চেষ্টা কে করছেন তা অবশ্য সম্পূর্ণ গোপনই রাখা হচ্ছে। আসল খবর খুব বেশি না বার হলেও একটা তীব্র উত্তেজনার বিদাৎ-স্পন্দন যেন ছড়াচ্ছে। চারদিকে।

    এই পর্যন্ত বলে ছোট কং ও তার সঙ্গীর দিকে তাকিয়ে হেসে বললাম, মধ্যোপসাগরের সেই ছোট্ট দ্বীপে তোমাদের কাছে দুনিয়ার ফাটকাবাজার ওলটপালট করা সেই এক ধুরন্ধর ধড়িবাজ চূড়ামণিকে ধরবার ফরমাশ পেয়ে এদিকে ওদিকে একটু ঘুরে ফিরে বিলেতে হিথরোতে এসে নামবার পরই এয়ারপোের্ট থেকে আমি বুঝতে পারি যে, আমার খোঁজাখুঁজির দায় প্রায় শেষ হয়ে এসেছে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray
    Next Article ঘনাদা সমগ্র ১ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    Related Articles

    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    ঘনাদা সমগ্র ১ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }