Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ঘনাদা সমগ্র ২ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    প্রেমেন্দ্র মিত্র এক পাতা গল্প884 Mins Read0

    কাঁটা

    লাল, না সবুজ?

    সবুজ কোথায়? ফিকে গোলাপি পর্যন্ত নয়। একেবারে খুনখারাপি ঘোর লাল যে এখন!

    হ্যাঁ, শুধু লাল আর সবুজ নিয়েই আছি কদিন ধরে। মাঝখানে হলদে-উলদে নেই। আমাদের এখানে হয় এসপার, নয় ওসপার। হয় ধন-ধান্য-পুষ্প ভরা, নয় ধু-ধু বালির চড়া।

    বাহাত্তর নম্বর বনমালি নস্কর লেনের কথা যে বলছি তা যাঁরা বুঝেছেন লাল সবুজের মানে বুঝতেও তাঁদের নিশ্চয় বাকি নেই।

    হ্যাঁ, লাল-সবুজ হল সিগন্যাল। রুখব, না এগোব তারই নিশানা। হলদের মতো মাঝামাঝি ন যযৌন তস্থৌ দোনামনা রঙের বালাই আমাদের নেই। লাল আর সবুজ নিয়েই আমাদের কারবার।

    গোড়া থেকে লালই চলছিল। আমাদের অবস্থাও অতি করুণ। দোতলার আড্ডাঘরে জমায়েত হই, কিন্তু আসর জমে না। হতাশ নয়নে টঙের ঘরের সিঁড়িটার দিকে তাকাই, কিন্তু ওই পর্যন্তই। ও সিঁড়িতে আমাদের পা বাড়ানো নৈব নৈব চ। লাল সিগন্যাল অমান্য যদি করো তো দুর্ঘটনা। গোঁয়ার্তুমি করতে গিয়ে শিবু যা বাধিয়েছে। সেই থেকেই ঘোর লাল চলছে।

    কীসের এত ভয়! শিবু মরিয়া হয়ে একদিন বলেছিল, আমরা সব মেনে নিই। বলে উনিও জো পেয়ে যান। এতদিন গেঁজলাতে না পেরে পেট ফুলে ঢাক হয়ে গেছে। এদিকে। আমি গিয়ে খুঁচিয়ে মুখ খোলালে বর্তে যাবেন। তারা দেখ না, পনেরো মিনিট বাদেই তোদের ডাকছি। আমার আওয়াজ পেলেই সব ওপরে চলে আসবি।

    পনেরো মিনিট অপেক্ষা করতে হয়নি।

    পাঁচ মিনিট না-হতেই আওয়াজ পেয়েছি। তবে শিবুর গলার নয়, তার পায়ের।

    শিবু চটপট সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছে।

    না, ভয়ে মুখ শুকনো-টুকনো নয়, কিন্তু লজ্জায় যেন কালি মেড়ে দেওয়া।

    কী হল কী? গৌর জিজ্ঞাসা করেছে, আমাদের না ডেকে নিজেই নেমে এলি যে!

    গৌরের সরল প্রশ্নের আড়ালে সামান্য একটু ঠাট্টার খোঁচা হয়তো ছিল, কিন্তু সেটা অত তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠার মতো কিছু নয়।

    হ্যাঁ, এলাম! শিবুর ক্ষুব্ধ চাপা গুমরানি শোনা গেছে, আমায় কী বলেছেন, জানো?

    শিবুর কাছে নিজস্ব সংবাদদাতার বিবরণ তারপর পাওয়া গেছে।

    শিবু রীতিমতো হই চই করে টঙের ঘরে গিয়ে ঢুকেছিল। যেন মাঝখানে কোথাও কোনও সুতো হেঁড়েনি। ইয়ালটা সম্মেলনের গলাগলিই চলছে, ন্যাটোর নামই জানা নেই।

    আরে, কী খবরের কাগজ পড়ছেন অবেলায় বসে বসে! শিবু খবরের কাগজটা প্রায় টেনে নিতেই গেছে, নীচে চলুন। সবাই বসে আছে হাপিত্যেশ করে। আর একটু জোরে নিশ্বাস টানুন না। গন্ধ পাবেন। ফ্রায়েড প্রন তো নয়, যেন মুনি ঋষির প্রতিজ্ঞা-ভাঙা প্রলোভন!

    যাঁর উদ্দেশে এই বাগবিস্তার তিনি কি কালাবোবা হবার ভান করেছেন?

    না। পেন্সিল হাতে নিয়ে খবরের কাগজটার যে পাতায় তিনি দাগ দিচ্ছিলেন সেটা শিবর প্রায় কোলের ওপরেই যেন নিজের অজান্তে সরিয়ে রেখে তিনি গম্ভীরভাবে শিবুর দিকে চেয়ে বলেছেন, আপনাদের ভাবনা করবার কিছু নেই। যাবার আগে এ ঘরের ভাড়া আমি চুকিয়ে দিয়ে যাব। দেখতেই তো পাচ্ছেন বাসা খুঁজছি।

    দেখতে শিবু খুব ভাল রকমই তখন পেয়েছে। কাগজে বাড়ি ভাড়ার বিজ্ঞাপনের কলমে ঘনাদা তাঁর লাল পেন্সিলে মোটা মোটা করে দাগ মেরেছেন।

    কিন্তু সে দাগরাজি বা তাঁর টঙের ঘরের ভাড়া মিটিয়ে দেবার আশ্বাসে যতটা নয়, তার চেয়ে তুমি থেকে আপনির চুড়োয় আচমকা চালান হয়েই শিবুর তখন টলটলায়মান অবস্থা।

    আমাদের সকলেরও তাই।

    ঘনাদা পনি বললেন তোকে? শিশিরের চোখ কপালে-তোলা প্রশ্ন।

    তুই ঠিক শুনেছিস? আমার সন্দিগ্ধ জিজ্ঞাসা।

    হ্যাঁ, হ্যাঁ—শুনেছি। একবার নয়, অন্তত দশবার। শিবু উত্তেজিতভাবে বলেছে, শেষে হ্যান্ডনোটই না লিখে দেবার কথা বলেন, তাই পালিয়ে এসেছি।

    হ্যাঁ, লাল নিশানা খুনখারাপির রাঙা চোখে পৌঁছবার পর সেটাও অসম্ভব নয়।

    খবরের কাগজের দাগরাজিই ছিল প্রথম লাল নিশানা।

    ঘনাদা যে নিত্য নিয়মিতভাবে খবরের কাগজের টু-লেট পঙক্তি দাগাচ্ছেন, গোড়াতেই তা জানা গেছে। অজানা থাকবার জো কী!

    ঘনাদার পড়া হয়ে যাবার পর কাগজগুলো আমাদের আড্ডাঘরেই এনে রাখা হয়। এখন আবার তাতে ভুল কি গাফিলি করবার উপায় নেই বনোয়ারির। ঘনাদার জরুরি নির্দেশটা প্রতিদিন টঙের ছাদ থেকে বেশ জোরালো গলাতেই ঘোষিত হয়।

    আরে, বনোয়ারি, কোথায় গেলি! কাগজগুলো নিয়ে যা। শেষে কাগজগুলোর ওপর মৌরসি পাট্টার দায়ে না পড়ি।

    এ ঘোষণাটা সকালে দুপুরে নয়, ঠিক বিকেলবেলা আড্ডাঘরে আমরা এসে জমায়েত হবার পরই শোনা যায়।

    বনোয়ারির যেটুকু দেরি হয় কাগজ নামিয়ে আনতে আমাদের সেটুকু সবুরও যেন সইতে চায় না। কাগজ এলেই একটি বিশেষ পাতার ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ি।

    বেশি খোঁজাখুঁজি করতে হয় না। ঘনাদার লাল পেন্সিলের দাগ সূক্ষ্ম-টুক্ষ্ম তো নয়, একেবারে লাঙলের ফলা দিয়ে যেন টানা।

    কী রকম বাসা ঘনাদা খুঁজছেন তার একটু নমুনা দাগমারা টু লেট-এর বিজ্ঞাপন থেকে অবশ্য পাই।

    ঘনাদার বড় খাঁই-টাই নেই। চাহিদা তাঁর যৎসামান্য। মাথা গোঁজবার একটু ঠাঁই হলেই তিনি যে খুশি দাগানো বিজ্ঞাপন পড়লেই তা বোঝা যায়।

    এক বিঘা জমিতে বাগান ঘেরা একটি ত্রিতল হাল ফ্যাশানের বাড়ি। আগাগোড়া মোজেইক। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, উপরে নীচে চারিটি শয়নকক্ষ। আচ্ছাদিত বারান্দা। গ্যারেজ ও অনুচরদিগের পৃথক ব্যবস্থা। ভাড়া মাসিক বারোশত টাকা।

    কিংবা–

    নবনির্মিত বিশ তলা টাওয়ার বিল্ডিংসের উপর তলায় দুইটি সংযুক্ত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যথোচিত আনুষঙ্গিক সহ তিনটি করিয়া শয়নকক্ষের ফ্ল্যাট। একটি স্বয়ংক্রিয় ও আর-একটি অনুচর চালিত লিফট।

    এর বেশি উঁচু নজর ঘনাদার নেই।

    প্রতিদিন এই লাল পেন্সিলে দাগানো বিজ্ঞাপন তো পড়তেই হচ্ছে। তার ওপর দুবেলা বড় বড় দুটি টিফিন কেরিয়ারের সঙ্গে থালা বাটি গেলাসের ঝোলা আর জলের জগ বয়ে নিয়ে যাওয়ার মিছিল দেখেও ধৈর্য ধরে ছিলাম। কিন্তু শিবুর সঙ্গে আমাদের হঠাৎ আপনি হয়ে ওঠাটা ভাবনা ধরিয়ে দিল। রামভুজের কাছে গোপনে খবরটা তাই নিতে হল।

    বড়বাবুর সেবা ঠিক হচ্ছে তো, রামভুজ?

    জি, হাঁ। রামভুজ জোর গলায় জানালো।

    টিফিন-কেরিয়ার দুটো দুবেলা ঠিক মতো ভর্তি হয়ে যাচ্ছে তো?

    রামভুজ সে বিষয়েও আশ্বস্ত করলে। টিফিন কেরিয়ার বোঝাই করে পাঠাবার ব্যাপারে কোনও ত্রুটি নেই। নিত্য নতুন পদ সে নিজে হাতে বেঁধে টিফিন কেরিয়ারে ভরে বনোয়ারিকে দিয়ে পাঠাচ্ছে। টিফিন কেরিয়ার দুটোয় অরুচির প্রমাণও পাওয়া যায়নি এখনও পর্যন্ত। চাঁছাপোঁছা হয়েই তো ফিরে আসছে প্রতিদিন।

    তাহলে উপায়?

    উপায় ভাববার আগে টিফিন কেরিয়ারের রহস্যের একটু ব্যাখ্যা বোধ হয় প্রয়োজন।

    ঘনাদা বেশ কিছুদিন থেকে খবরের কাগজের টু লেট কলমে দাগ মেরে ৩ ধ বাসা-ই খুঁজছেন না, আমাদের বাহাত্তর নম্বরের অন্নজলও ত্যাগ করেছেন।

    তাই তাঁর জন্য আজকাল একটা নয়, দু-দুটো টিফিন কেরিয়ারে দুবেলা খাবার যায় তাঁর টঙের ঘরে। সে খাবার নিয়ে যায় অবশ্য রামভুজ আর বনোয়ারি। বাহাত্তর নম্বরের ওপর ওইটুকু দয়া তিনি এখনও রেখেছেন। রামভুজকেই বাইরে থেকে তাঁর খাবার আনবার গৌরবটুকু তিনি দিয়েছেন।

    প্রথম দিনই রামভুজকে বাধিত হবার এই দুর্লভ সুযোগ দিয়ে তিনি বলেছিলেন, তোমাদের এখানে ভাল হোটেল-টোটেল আছে, রামভুজ?

    রামভুজ তখন আমাদেরই পরামর্শে ঘনাদা নীচে, না ওপরে তাঁর ঘরে বসেই খাবেন সে কথা জিজ্ঞাসা করতে এসেছে।

    ঘনাদার উক্তির গভীর তাৎপর্য না বুঝে প্রথমে তাচ্ছিল্যভরে জানিয়েছে যে, হোটেল থাকবে না কেন? অনেক আছে। কিন্তু তাকে কি আর হোটেল বলে! তারপর হঠাৎ একটু টনক নড়ে ওঠায় উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞাসা করেছে, হোটেল কী হোবে বড়াবাবু?

    কী আর হবে? ঘনাদা যেন নিরুপায় হয়ে বলেছেন, ভাল হোটেল থাকলে সেখান থেকেই খাবারটা আনাতাম। তা যখন নেই বলছ তখন গ্র্যান্ড কি গ্রেট ইস্টার্নেই যেতে হবে।

    গ্র্যান্ড, গ্রেট ইস্টার্ন রামভুজ বোঝেনি। কিন্তু হোটেল থেকে খাবার আনাবার কথাতেই শঙ্কিত হয়েছে।

    আপনি হোটেল কেনো যাবেন, বড়াবাবু, শশব্যস্ত হয়ে বলেছে রামভুজ, আপনার খানা তো হামি ইখানেই লায়ে দিচ্ছি।

    ঘনাদা রামভুজের দিকে স্নেহভরেই তাকিয়েছেন এবার।

    তা তুমি আনতে পারো, রামভুজ, কিন্তু এখানকার কিছু নয়। এখানে আমি আর খাব না।

    খাইবেন না ইখানে! মুখটা পুরোপুরি হাঁ হয়ে যাবার আগে ওইটুকু বলতে পেরেছে রামভুজ।

    উত্তর দেওয়াও বাহুল্য মনে করে ঘনাদা শুধু মাথা নেড়েছেন দুবার।

    ঘনাদার এ চরম ঘোষণার পর প্রায় বিহ্বল অবস্থায় নেমে এসে রামভুজ আমাদের সব জানিয়েছে।

    একটা কিছু ধাক্কার জন্য আমরা প্রস্তুতই ছিলাম। কিন্তু সেটা এমন উৎকট হবে

    ভাবতে পারিনি।

    আমাদের অমন মুহ্যমান দেখে হতাশভাবে জিজ্ঞাসা করেছে রামভুজ, হামি এখোন কী কোরবে! হামাকে খানা তো বাহারসে লাতে বোলিয়েছেন।

    লাতে বোলেছেন তো লাও, শিবু হঠাৎ চটে উঠেছে, খাবার লাতে তো বোলেছেন, পয়সা দিয়েছেন?

    পয়সা উনি আগে দেবেন! শিশিরই ঘনাদার মান বাঁচাতে রুখে দাঁড়িয়েছে, উনি কি তোমার আমার মতো হেঁজিপেঁজি যে নগদা দামে সওদা করেন! যত ওপরে তত সব ধারে কারবার। মার্কিন মুলুক হলে ওঁর ক্রেডিট কার্ড থাকত তা জানো! শুধু একটু পাঞ্চ করিয়েই যেখানে যা প্রাণ চায় নিতেন।

    হ্যাঁ, সেই ভুলই করেছেন নিশ্চয়। গৌর শিশিরকে ঠোকা দিয়েছে, বনমালি নস্কর লেনটা ভেবেছেন ফিফথ অ্যাভেনিউ।

    এর পর ঘনাদার ভুলটা আমাদেরই সামলাতে হচ্ছে তাঁর ক্রেডিট কার্ড-এর দায় নিয়ে।

    তার জন্য ঝামেলা বড় কম নয়। একটা নয়, দু-দুটো টিফিন কেরিয়ার আনতে হয়েছে কিনে। থালা-বাটি গেলাসগুলো অবশ্য আমাদের বাহাত্তর নম্বরেরই। ঘনাদা সেগুলো চিনতে পারেননি বা মাপ করে যাচ্ছেন।

    তা মাপ করবার জন্য পুজোও চড়াতে হচ্ছে কি কম! দুটি টিফিন কেরিয়ার ভর্তি নৈবিদ্যি দুবেলা পাঠাতে হচ্ছে আমাদের ওই বাহাত্তর নম্বরের হেঁশেলেই রান্না করে।

    সে রান্নার গন্ধ তাঁর টঙের ঘর থেকেই ঘনাদার পাবার কথা, কিন্তু নাকের সে কাজটা তিনি আপাতত মুলতুবি রেখেছেন বোধহয়। রামভুজ আর বনোয়ারি তাঁর খাবার নিয়ে যাবার পরে মাঝে মাঝে তিনি শুধু একটু তারিফ করে তাদের কৃতার্থ করেন।

    হোটেলটা তো ভালই খুঁজে বার করেছ, রামভুজ! রান্না-টান্না তত বেশ সরেস মনে হচ্ছে! হোটেলটা কোথায়?

    এই নীচে, বড়াবাবু, রামভুজ লজ্জিত হয়ে বলে, এই নীচেই আছে! ঘনাদা ওইটুকুর বেশি আর খোঁজ নেওয়া প্রয়োজন মনে করেন না, এই বাঁচোয়া।

    কিন্তু এমন করেই বা চলবে কতদিন! ছুঁচ হয়ে শুরু হয়ে ব্যাপারটা সত্যিই যে ফাল হতে চলেছে। অথচ লাল পেন্সিলে টু লেট বিজ্ঞাপন দাগানো আর বাহাত্তর নম্বরের পৃথগন্ন হওয়ার ব্যাপারটা আরম্ভ হয়েছিল অতি সামান্য ছুতো থেকে।

    দোষটা অবশ্য শিবুর। ঘনাদা না হয় পাতে দু-দুটো প্রমাণ সাইজের বাটামাছ ভাজা নিয়েও একটি চিপটেন কেটেছিলেন, বাটা মাছ এনেছ হে! এ যে বড় কাঁটা!

    তাই বলে পরের দিন ওই শোধটুকু না নিলে চলত না?

    শিবুই আজকাল আমাদের পার্মানেন্ট মার্কেন্টিং অফিসার। ঘনাদাকে কচি মুলো খাওয়াবার সেই কেলেঙ্কারির পর মনে মনে তার বোধহয় একটু জ্বালাই ছিল। বাজারের সেরা বাছাই করা বাটার নিন্দায় সেটা আরও চাগিয়ে উঠেছে।

    পরের দিন কী একটা ছুটির তারিখ। দুপুরবেলা বেশ একটু জমিয়ে খেতে বসে ঘনাদাকে ঘন ঘন আমাদের সকলের থালাগুলোর ওপর চোখ বোলাতে দেখে একটু অবাক হয়েছি। আমাদের নজরও তখন গেছে ঘনাদার পাতে।

    সত্যিই তো অবিশ্বাস্য ব্যাপার। আমাদের সকলের পাতে বড় বড় জোড়া কই আর ঘনাদার পাতে কী ও দুটো। আরে! ও তো বেলেমাছ! আমাদের কই আর ঘনাদার বেলে!!

    ঠাকুর! আমরাই ঘনাদার আগে ডাক দিয়েছি।

    কাঁচুমাচু মুখ করে রামভুজ এসে দাঁড়াতেই বুঝেছি ব্যাপারটা নেহাত দৈবদুর্ঘটনা নয়।

    ঘনাদার পাতের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে জিজ্ঞাসা করেছি সবিস্ময়ে, ঘনাদার পাতে বেলেমাছ কেন?

    রামভুজকে জবাব দিতে হয়নি! এতক্ষণ মাথা নিচু করে যে কইমাছের কাঁটা বাছছিল সেই শিবু মুখ তুলে চেয়ে এ-রহস্যে আলোকপাত করেছে।

    সহজ সরল গলায় বলেছে, বেলেমাছ আমি দিতে বলেছি।

    তুমি দিতে বলেছ! আমরা হতভম্ব! আমাদের বেলা কই আর ঘনাদার বেলা বেলে!

    হ্যাঁ, শিবু যেন আমাদের এই তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে বাড়াবাড়িতেই অবাক, অন্যায়টা কী হয়েছে তাতে! ঘনাদার কাঁটাতে ভয়, তাই ওঁর জন্য আলাদা মোলায়েম মাছ এনেছি।

    আমরা স্তম্ভিত নির্বাক।

    নিস্তব্ধ ঘরে শুধু একটা হু শোনা গেছে।

    না, মেঘের চাপা গর্জন নয়, ঘনাদা তাঁর নিজস্ব মন্তব্য ওই ধ্বনিটুকুতে প্রকাশ করেছেন।

    তারপর পাত ফেলে উঠে গেছেন কি? না, তা ঠিক যাননি, তবে এক মুহূর্তে আমরা যেন তাঁর কাছে হাওয়া হয়ে গেছি। আমাদের সাধ্যসাধনা মিনতি যেন তাঁর কানেই পেঁৗছয়নি।

    খাওয়া শেষ করে ঘনাদা ওপরে উঠে গেছেন। আমরা শিবুকে নিয়ে পড়ে তাকে। প্রায় ছিঁড়ে খেয়েছি। কিন্তু হাতের তির ছুটে গেলে ধনুকের ছিলা ছিঁড়েখুঁড়ে আর লাভ কী! যা হয়ে গেছে তা তো আর ফিরবে না।

    তবু অল্পে-স্বল্পে রেহাই পাবার আশায় বিকেল না হতেই রামভুজকে টঙের ঘরে পাঠিয়েছিলাম। ফল যা হয়েছে তা তো জানা। সেই থেকেই টিফিন কেরিয়ারে হোটেলের খানা আর কাগজ দাগানো লাল মানার দিন চলেছে।

    কিন্তু একটা কোনও নিষ্পত্তি তো আর না হলে নয়।

    মুশকিলের যে মূল, আসানের ফিকিরটা তার মাথা থেকেই বেরিয়েছে। হ্যাঁ, শিবু-ই উপায়টা বাতলেছে নেহাত রাগের ঝাঁঝটা প্রকাশ করতে গিয়ে।

    লালের জবাব তো সবুজ! তাই দিতে হবে এবার।

    সবুজ আবার কী জবাব? আমরা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করেছি।

    উনি লাল পেন্সিলে দাগাচ্ছেন, শিবু ব্যাখ্যা করেছে, আমরা সবুজে দাগাব কাল থেকে!

    কী দাগাব?

    কী আবার! ওই বাড়িভাড়ার বিজ্ঞাপন। শিবু নিজের প্রস্তাবে নিজেই মেতে উঠে বুঝিয়ে দিয়েছে, আমরাও এ বাহাত্তর নম্বর ছেড়ে দিচ্ছি—তাই কাল সকালে প্রথমেই টু-লেট-এর পাতায় সবুজ দাগ পড়বে।

    শিবুর ওপর যত রাগই করি, ফন্দিটা তার নেহাত মন্দ নয়। অন্তত ড়ুবতে বসে শেষ কুটো হিসেবে একবার ধরা যায়।

    কিন্তু তাতেই অমন বাজিমাত হবে আমরাই কি ভাবতে পেরেছি।

    সবুজ পেন্সিল আগেই জোগাড় করা ছিল। ভোরে উঠে একেবারে রাস্তায় গিয়েই কাগজওয়ালার হাত থেকে ইংরেজি, বাংলা দুটো কাগজই নিয়েছি। তারপর সুবজ দাগ মেরেছি খাবারঘরেই বসে বসে।

    দাগ মেরেছি খুব বিবেচনা করে মাত্র দুটি বিজ্ঞাপনে। ঘনাদার যেমন আমিরি নজর, আমাদের তেমনি ফকিরি। কোথায় দূরে শহরতলির কোন এঁদো গলিতে সস্তা ভাড়ায় টালির ছাদের দুটো ঘর। দাগ মেরেছি তাতেই। দাগ মেরেছি তারও অধম এজমালি উঠোন বাথরুমের আর একটা ঘর-ভাড়ার বিজ্ঞাপনে।

    সকালের চায়ের ট্রের সঙ্গে—চা-টাও অন্য হোটেলের বলেই ধরে নেন ঘনাদা— বনোয়ারি যথারীতি খবরের কাগজগুলো নিয়ে গিয়েছে টঙের ঘরে।

    আমরা সবাই মিলে তখন বাহাত্তর নম্বর থেকেই হাওয়া। প্রতিক্রিয়াটা পরে রামভুজের মারফতই জানতে পেরেছি।

    সকালে কাগজ উলটে ঘনাদার চোখ যদি একটু কপালে উঠে থাকে, তার সাক্ষী কেউ নেই। কিন্তু দুপুরে টিফিন কেরিয়ার বয়ে নিয়ে গিয়ে তাঁর পাত সাজাবার সময় রামভুজকে প্রথমে দু-একটা নেহাত যেন অবান্তর প্রশ্নের জবাব দিতে হয়েছে।

    নীচে যে আজ সব কেমন ঠাণ্ডা মনে হচ্ছে, রামভুজ?

    এমনই একটু ছুতো পাবার আশাতেই রামভুজকে ভোর থেকে সব শিখিয়ে পড়িয়ে রাখা হয়েছে। সে আশা বিফল হয়নি। রামভুজও আমাদের শিক্ষার মান রেখেছে।

    ঘনাদা কথাটা পাড়তে না পাড়তেই রামভুজ হতাশ মুখ করে জানিয়েছে যে তার আর বনোয়ারির হয়রানির অন্ত নেই। বাবুরা সেই ভোরবেলা বেরিয়েছেন। কখন ফিরে আসবেন কে জানে! যতক্ষণ না আসেন তাদের এই হেঁশেল পাহারা দিয়ে বসে থাকতে হবে।

    তা ওঁরা গেছেন কোথায়! এবার ঘনাদার প্রশ্নটা আর ঘোরালো নয়, গলাটাও তীক্ষ।

    রামভুজ এবার আসল বোমাটি ছেড়ে যেন অত্যন্ত কাতরভাবে জানিয়েছে যে বাবুরা নাকি কোথায় নতুন বাসা দেখতে গেছেন। এ বাড়ি তাঁরা ছেড়ে দেবেন।

    এবাড়ি ছেড়ে দেবেন! ঘনাদার গলায় মেঘের ডাকটা যেন কেমন ঝিমোনো মনে হয়েছে।

    হাঁ, বড়াবাবু! রামভুজ চিড়টায় চাড় লাগিয়েছে। আপনে ই মোকান ছোড়কে যাচ্ছেন, বাবুরাও তাই ইখানে আর থাকবেন না।

    ব্যস, রামভুজের এর বেশি কিছু বলবার দরকার হয়নি। দুপুরে একটু দেরি করে ফেরার পর খাবারঘরে তার কাছেই বিবরণটা শুনে ওষুধ একটু যেন ধরেছে বলে আশা হল।

    আশা হবার একটা কারণ ঘনাদার হাতফেরতা খবরের কাগজগুলো। সেগুলো নিয়মমতোই ঘনাদা ফেরত পাঠিয়েছেন, কিন্তু টু-লেট-এর সারিতে লাল দাগ কোথায়? আমাদের সবুজ পেন্সিলের দাগরাজিই সেখানে একেশ্বর হয়ে জ্বলজ্বল করছে।

    হাওয়া একটু ঘুরেছে তাহলে নিশ্চয়। চাল বদলে এবার কোন দিকে মোড় ফিরবেন ঘনাদা?

    মোড় যা ফিরলেন তা মাথা ঘোরাবার মতোই।

    বিকেলে আড্ডাঘরে জমায়েত হয়ে ঘনাদার পরের চাল আন্দাজ করবার চেষ্টা করছি, এমন সময় সেই টেলিগ্রাম।

    না, পোস্টাফিসের বিলি করা টেলিগ্রাম নয়, ঘনাদা রামভুজের হাতে টেলিগ্রাম করতে যা পাঠাচ্ছেন তারই খসড়া।

    রামভুজ সে খসড়া নিয়ে অসহায়ভাবেই আমাদের শরণ নিতে এসেছে।

    বড়াবাবু তার আভি তুরন্ত ভেজতে বোললেন। আমি তো কৈসে ভেজবে কুণ্ডু জানি না।

    কী এত জরুরি টেলিগ্রাম! রামভুজের হাত থেকে নিয়ে দেখতেই হল খসড়াটা। দেখে খানিকক্ষণ কারও মুখে আর কোনও কথা নেই। পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে সবাই তখন হাঁ হয়ে আছি।

    টেলিগ্রাম কোথায়! এ তো কেল্লগ্রাম। ভাষাটা এই

    PACIFIC COMMAND
    GUAM
    ACCEPTING OFFER BUT ANGRY BECAUSE PRESCRIPTION NOT FOLLOWED, HOWEVER DONT PANIC, SHALL SAVE THE PACIFIC AGAIN.
    DAS.

    মানে বুঝলে কিছু? শিবুই প্রথম সবাক হল, ঘনাদা প্যাসিফিক কম্যান্ড মানে গোটা প্রশান্ত মহাসাগরের মুরুব্বি কর্তাদের প্রায় ধমকে টেলিগ্রাম করেছেন।

    গায়ে পড়ে নিজে থেকে টেলিগ্রাম নয়, এটা তাদের টেলিগ্রামের জবাব, বিস্তারিত করলে গৌর, তারা সাধাসাধি করায় অনেক কষ্টে রাজি হয়েছেন প্রশান্ত মহাসাগরকে আবার উদ্ধার করতে।

    ওই আবার কথাটা মনে রেখো। শিশির স্মরণ করালে, তাব মানে এর আগেও একবার উদ্ধার করেছিলেন, কিন্তু তাঁর বিধান না শোনায় নতুন করে আবার বিপদ বেধেছে। আবার উদ্ধার করবার আশ্বাস দিয়েও তাই রাগটা জানাতে ছাড়েননি।

    কিন্তু এটা লাল, না সবুজ? জিজ্ঞাসা করলাম আমি।

    ঠিক! ঠিক! সবারই এবার খেয়াল গেল কথাটা।

    লাল তো ঠিক নয়। দ্বিধাভরে বললে শিশির।

    একটু সবজে ঝিলিক যেন মারছে! গৌর আশায় দুলল।

    আলবত সবুজ? তুড়ি মেরে বললে শিবু।

    হাতে পাঁজি তো মঙ্গলবার কেন? খসড়াটা নিয়ে আমি টঙের সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালাম। অন্যেরাও আমার পেছনে। শিশির শুধু চট করে নেমে গিয়ে হেঁসেলে কী যেন বলে এল।

    পা তো বাড়ালাম, কিন্তু সিঁড়ির একটা করে ধাপ উঠি আর ধুকপুকুনিও বাড়ে।

    কী করবেন ঘনাদা? রং চিনতে ভুল যদি হয়ে থাকে তাহলে তো সর্বনাশ। শিবুকে শুধু আপনিতে তুলেছিলেন আর এবার আমাদের হাতে তো সত্যিই হ্যান্ডনোট লিখে দেবেন।

    যা হবার হয় তোক। এ যন্ত্রণা আর সহ্য হয় না। কপাল ঠুকে তাই ঢুকে পড়লাম টঙের ঘরে।

    কই, বিস্ফোরণ তো কিছু হল না। ঘনাদা এক মনে তাঁর কলকেতে টিকে সাজাতে সাজাতে একবার শুধু আমাদের দিকে চেয়ে দেখলেন মাত্র। সে চোখে কি ভ্রূকুটি? না, তাও তো নয়।

    আর আমাদের পায় কে?

    ও কেল্লগ্রাম পাঠানো চলবে না, ঘনাদা। গৌরই মওড়া নিলে। আমরা তখন তক্তপোশের যে যেখানে পারি বসে গেছি।

    পাঠানো চলবে না বলছ? ঘনাদাও যেন ভাবিত, কিন্তু ওরা যে আশা করে আছে!

    থাক আশা করে! আমাদের মেজাজ গরম! একবার ডাকলেই আপনি মালকোঁচা মেরে ছুটবেন নাকি? আপনার মান সম্মান নেই?

    আর তা ছাড়া আপনি তো একবার উদ্ধার করে এসেছেন! গৌরের জোরালো যুক্তি, শোনেনি কেন আপনার কথা!

    এখন যদি যেতে হয় তো শুধু কেলগ্রামে হবে না। আমাদের ন্যায্য দাবি— প্যাসিফিক কম্যান্ডের মাতব্বরেরা নিজেরা এসে সাধুক!

    ঠিকই বলেছ। ঘনাদা প্রশান্ত মহাসাগরের জন্য একটু দীর্ঘশ্বাস ফেললেন! কিন্তু মুশকিল হয়েছে কী জানো। একেবারে যে শিরে সংক্রান্তি! এখুনি না রুখতে পারলে প্যাসিফিক যে ডেড সি হয়ে যাবে দুদিনে। প্রশান্তর বদলে গরল সাগর!

    গরল সাগর হয়ে যাবে? কীসে?

    কীসে আর,ঘনাদা তাঁর দৃষ্টিটা শিবুর ওপরই ফোকাস করে বললেন, কাঁটায়।

    কাঁটায়? কীসের কাঁটা? শিবু তার অস্বস্তিটা সন্দেহের সুরে চাপা দিলে।

    বাটা কি কই-এর কাঁটা নয়, ঘনাদা চুটিয়ে শোধ নিলেন, কাঁটা হল অ্যাকাস্থ্যাস্টার প্লানচির, যার আরেক নাম হল কাঁটার মুকুট।

    কী হয় সেই—ওই কী হলে একান যা যা…

    থাক! থাক! জিভে গিঠ পড়ে যাবে! ঘনাদার কাছে শিবুর আজ রেহাই নেই— তার চেয়ে কাঁটার মুকুটই বলো। কী হয় ও-কাঁটার মুকুটে জিজ্ঞাসা করছ? যা হয় তা জানাতে গিয়ে ক্যারোলাইন দ্বীপপুঞ্জের ইফালিক অ্যাটল-এ সমুদ্রের তলাতেই হাড় ক-খানা মাছেদের ঠোকরাবার জন্যে প্রায় রেখে আসছিলাম।

    মাছেদের রুচল না বুঝি! প্রায় সর্বনাশই করে বসল শিবু তার গায়ের জ্বালাটা চাপতে না পেরে।

    আমরা তো তখন দম বন্ধ করে আছি।

    রুচল না-ই বলতে পারো! ঘনাদা কিন্তু একটু হেসে বললেন, তবে তা রুচলে সিগুয়াটেরা আর শিঙে-শাঁখ ট্রাইটন, স্কুবা গিয়ার আর দশানন রাবণেরও দর্পহারী যোল থেকে একুশ বাহুবলে বলী সমুদ্রত্রাস অ্যাকান্থাস্টার প্লানচি-র কথা অজানাই থাকত, আর প্যাসিফিক কম্যান্ডের টনক নড়বার আগে অর্বেক প্যাসিফিকই যেত, সত্যি যাকে বলে, রসাতলে। যাক সে কথা।

    মাথাগুলো তখন ঘুরছে, কিন্তু ঘনাদাকে যে আবার না চাগালে নয়!

    আমাদের কথা যেন ভুলে গিয়ে নির্লিপ্ত নির্বিকার ভাবে তিনি যে তাঁর গড়গড়ায় টান শুরু করেছেন!

    চোখের দৃষ্টিতে শিবুকে প্রায় ভস্ম করে ঘাটের কাছে এ ভরাড়ুবি বাঁচাবার উপায় খুঁজছি, এমন সময় টঙের ঘরের দরজায় স্বয়ং সংকট-মোচনের আবির্ভাব।

    বেশটা অবশ্য তাঁর বনোয়ারির আর হাতে সদ্যভাজা দিগ্বিদিকে সুবাস ছড়ানো মশলা পাঁপরের একটি চ্যাঙাড়ি।

    বুঝলাম তাড়াতাড়িতে এর চেয়ে জবর কিছুর ব্যবস্থা করে আসতে পারেনি শিশির।

    কিন্তু দিনটা আমাদের পয়া। ওই মশলা পাঁপরেই ডবল প্লেট প্রন কাটলেটের কাজ হয়ে গেল। তার আগে ছোট একটু ফাঁড়া অবশ্য কাটাতে হয়েছে।

    ঘনাদা গন্ধের টানেই মুখ ঘুরিয়েছিলেন। বনোয়ারি চ্যাঙাড়িটা তাঁর সামনেই সসম্মানে রাখবার পর গড়গড়ার নলটা সরিয়ে যেন অন্যমনস্কভাবে একটা তুলে নিয়ে কামড় দিয়েই হঠাৎ থেমে গিয়ে বলেছেন, নীচে রামভুজের ভাজা নাকি?

    বনোয়ারি কী যেন বলতে যাচ্ছিল। আমরা সবাই এক সঙ্গে হাঁ হাঁ করে উঠেছি।

    রামভুজের ভাজা মানে! রামভুজের হাতের পাঁপর এমন, দাঁতে দিলে কথা বলবে। দস্তুরমতো মোড়ের রাজস্থানি পাঁপর!

    সেই সঙ্গে পাছে বেফাঁস কিছু বলে ফেলে বলে বনোয়ারিকেও তাড়া দিতে হয়েছে, যা যা, দেরি করিসনি। চা নিয়ে আয় শিগগির।

    আমাদের আশ্বাসে নিশ্চিন্ত হয়ে চা আনতে আনতেই অর্ধেক চ্যাঙাড়ি অবশ্য একাই ফাঁক করে ফেলেছেন ঘনাদা।

    তারপর মৌজ করে তাঁকে চায়ে চুমুক দিতে দেখে সুতোটা আবার ধরালাম। ইচ্ছে করে একটু ন্যাকাও সাজতে হল, প্যাসিফিকে কোথায় কোন টোলের কথা যেন বলছিলেন আপনি!

    টোল নয়, অ্যাটল! ঘনাদা শুধরে খুশি হলেন, অ্যাটল কাকে বলে জানো নিশ্চয়। অকূল সমুদ্রের মাঝখানে প্রবালে গড়া এক-একটা গোলাকার স্থলের বালা আর সেই বালার মাঝখানে স্বপ্নের মতো এক সায়র। মাঝখানের এই সায়রটুকুর জন্য অ্যাটল সাধারণ প্রবালদ্বীপ থেকে আলাদা। আকারেও তা ছোট। প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝখানে অসংখ্য এই সব প্রবাল দ্বীপ আর অ্যাটল-এর ফুটকি ছড়ানো।

    অ্যাটল তো নয়, সে যেন পৃথিবীতে নন্দনকাননের নমুনা। গিলবার্ট মার্শাল মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জ ঘুরে তখন ক্যারোলাইনে গিয়েছি সেখানকার ম্যালাও-পলিনেশিয়ান ভাষার আদি রূপ খুঁজে বার করতে।

    সেটা রথ দেখা মাত্র। আসল কলা বেচার কাজ হল প্যাসিফিকে গোলনে শিঙে শাঁখের শুমারি নেওয়া আর তার চোরা শিকারিদের শায়েস্তা করা। আই. জি. এম. সি. ও. মানে ইন্টার গভর্নমেন্টাল ম্যারিটাইম কনসলটেটিভ অর্গানিজেশনই অবশ্য পাঠিয়েছিল।

    না, কাশি-টাশি নয়। শিবুকে শুধু একটু চোরা রামচিমটি কাটতে হল তার জিভের রাশ টানবার জন্য।

    কাৰৱালাইন দ্বীপপুঞ্জের ইফালিক বলে এক অটল-এ তৎনে গিয়ে উঠেছি। ঘনাদা তখন বলে চলেছেন, নামে অ্যাটল, কিন্তু সত্যিই যেন পরীস্থান। যেমন তার মাঝখানের কাকচক্ষজলের সায়র, তেমনই পরীদের যেন পাউডার বিছানো তার তীর আর তেমনই তার সারা দিনরাত হাওয়ায় দোলা নারকেলের বন।

    ইফালিক অ্যাটল-এই পামারের সঙ্গে দেখা। পামার আর তার তিন সঙ্গী মিলে সেই অ্যাটল-এ বাসা বেঁধেছে।

    পামারকে দেখলে যেন সমুদ্রের তরুণ দেবতা বলেই মনে হয়। যেমন শক্ত সবল তেমনই সুঠাম শরীর। পামারের সঙ্গী তিনজনও সবাই লম্বা চওড়া জোয়ান, যেন অলিম্পিকস থেকেই সব ফিরেছে। শুধু তাদের মুখগুলো যেন শরীরের সঙ্গে খাপ খায় না। দেহগুলো তাদের গ্রিক দেবতার আর মুখগুলো যেন দানবের।

    ইফালিক-এর দুধে ধোয়া বালির তীরে তারা সারাদিন শুধু একটু কোপনি মাত্র পরে জল-খেলা করে। জলে সাঁতার, ঢেউয়ের ওপর তক্তা ভাসিয়ে ঘোড়ার মতো সওয়ার হয়ে দূর সমুদ্র থেকে তীরে ছুটে আসা, যাকে বলে সারফিং, কখনও বা হাতে পায়ে মাছের ডানার মতো ফ্লিপার আর মুখে অক্সিজেনের মুখোশ নিয়ে সমুদ্রের তলায় ড়ুব সাঁতার, এই নিয়ে তাদের দিন কাটে।

    ইফালিক অ্যাটল-এ পামার আর তার সঙ্গীদের দেখে আমি প্রথমে বেশ একটু অবাকই হয়েছিলাম। মাইক্রোনেশিয়ার এক অত্যন্ত আদিম গোষ্ঠীর কিছু কিছু লোক ইফালিক ও তার কাছাকাছি প্রবাল-দ্বীপে ও অ্যাটল-এ থাকে বলে জানতাম। ম্যালাও-পলিনেশিয়ান ভাষার মূল কিছু ধারা তাদের কাছে সংগ্রহ করবার আশায় এ দ্বীপে আসা। কিন্তু ইফালিক-এ তাদের তো কোনও চিহ্নই দেখতে পেলাম না।

    পামারকে সেই কথাই গোড়ায় জিজ্ঞাসা করেছিলাম। পামার তাচ্ছিল্যভরে কথাটা উড়িয়ে দিয়েছিল। বলেছিল, কে জানে কোথায় গেছে। এখানে থাকলে তো আমরাই এসে তাড়াতাম।

    কথাটা ঠাট্টা হিসেবেই নিয়েছিলাম। পামার আর তার সঙ্গীদের কতকগুলো রসিকতা কিন্তু একটু বেয়াড়া ধরনের। যেমন, আমাকে নিয়ে তাদের ঠাট্টা গোড়া থেকে যেন মাত্রা ছাড়িয়ে যেত।

    আমি আমার ছোট ইয়ল-এ সেখানে গিয়ে নামবার পরই অভ্যর্থনাটা একটু জোরালো রকম পেয়েছিলাম। নোঙর ফেলে ইয়ল থেকে নামতে নামতেই তো পামারের কোলাকুলিতে ওষ্ঠাগত প্রাণ। সাড়ে ছ-ফুট লম্বা জোয়ান পামার করমর্দন করার ছলে হাতের হেঁচকা টানেই তো প্রথমে বালির ওপর আমায় আছড়ে ফেলল। সেখান থেকে ওঠার পরও রেহাই নেই। এক এক করে পামারের তিন সঙ্গীর হাত-ঝাঁকানির উৎসাহে আরও তিনবার বালির ওপর মুখ থুবড়ে পড়তে হল। শেষবার ওঠবার পর পামার কাছে এসে জড়িয়ে বুকের মধ্যে চিড়েচেপটা করে মার্কিন স্ল্যাং-এ যা বললে বাংলায় তা বোঝাতে গেলে বলতে হয়, কোথা থেকে এলে বল তো, চাঁদ?

    অতি কষ্টে ককিয়ে বললাম, দম না পেলে বলি কী করে?

    পামার সজোরে বালির ওপর আমায় ছুড়ে দিয়ে আমার অনুরোধ রাখলে। আমি অতি কষ্টে দাঁড়িয়ে ওঠার পর দেখি চারজনই আমায় ঘিরে আছে। পামারের একজন সঙ্গী আবার প্রশ্ন করলে, সত্যি করে বল তো, কী মতলবে এখানে এসেছিস?

    যা সত্য তা বলে কোনও লাভ নেই জেনে মিথ্যে একটা অজুহাত তখনই বানালাম। বললাম, স্কুবা-ডাইভিং-এর শখ। তাই নির্জন একটা দ্বীপের খোঁজ করতে করতে এখানে এসে পড়েছি। কোনও মতলব নিয়ে আসিনি।

    বেশ, বেশ, পামার পিঠে বিরাশি সিক্কার একটি থাপ্পড় মেরে উৎসাহ দিলে, স্কুবা-ডাইভিং-এর শখ তোমার মিটিয়ে দেব।

    তা সত্যিই তারা মিটিয়ে দিলে। রোজ দুবেলা হাতে পায়ে মেছো ফ্লিপার আর পিঠে সিলিন্ডার বেঁধে, মুখে অক্সিজেনের মুখোশ নিয়ে সমুদ্রের তলায় ড়ুব-সাঁতারে যেতে হয়। জলের তলায় যা নাকানিচোবানি তারা খাওয়ায় তাতে শেষ পর্যন্ত শুধু প্রাণটা নিয়ে কোনও মতে ফিরতে পারি।

    একদিন সে আশাটুকুও আর রইল না।

    পামার আর তার সঙ্গীদের অমানুষিক অত্যাচার তখন কিন্তু একদিক দিয়ে আমার কাছে শাপে বর হয়েছে। জুলুম জবরদস্তির ওই ড়ুব-সাঁতারেই প্রশান্ত মহাসাগরের সর্বনাশ কেমন করে ঘনাচ্ছে আর তার আসানের উপায় কী, সে হদিস আমি আরও লাল করে পেয়ে গেছি।

    কিন্তু সমুদ্রের তলাতেই আমার কবর হলে সেখানকার যে ভয়ংকর রহস্য আমি জেনেছি তা তো আমার সঙ্গেই লোপ পাবে।

    পামার আর তার সঙ্গীরা সেদিন সেই ব্যবস্থাই করেছে। চারজনেই একসঙ্গে সেদিন স্কুবা-গিয়ার নিয়ে সমুদ্রের তলায় টহলে নেমেছিলাম।

    প্রবালদ্বীপের সমুদ্র সত্যিই যেন এক স্বপ্নের রাজ্য। গভীর জলের তলায় নানা আকার ও রঙের প্রবাল যেন এক আশ্চর্য স্বপ্নের ফুলবাগান সাজিয়ে রাখে। সেখানে যেসব মাছেরা ঘুরে বেড়ায় তারাও যেন কোন খেয়ালি শিল্পীর হাতে তৈরি ও আঁকা সব রং-বেরঙের অবাক মাছের কল্পনা।

    ইফালিক অ্যাটল-এ সমুদ্রের তলায় একটা ব্যাপার গোড়া থেকেই তাই বিস্মিত করেছে।

    প্রবালদ্বীপের সমুদ্র—কিন্তু তার তলায় কোথায় সেই রং-বেরঙের জলের প্রজাপতির মতো মাছ আর প্রবালের সেই পুষ্পিত শোভা?

    এখানে প্রথম থেকেই প্রবালের ওপর কী যেন এক অভিশাপ লেগেছে বলে মনে হয়েছে। রং-বেরঙের প্রবালের বদলে শুধু খড়িমাটির মতো ফ্যাসফেসে যেন প্রবালের কঙ্কাল। রঙিন মাছের বদলে সেই সাদা প্রবাল কঙ্কালের ওপর যেন বিদঘুটে সব কাঁটা গাছের ঝোপ।

    এখানকার সমুদ্রের তলার এই কুৎসিত রূপ দেখতে সেদিন অবশ্য আমিই পামারদের এনেছিলাম। এনেছিলাম এই বিশ্বাসে যে আমায় নিয়ে তাদের ফুর্তি করার ধরনটা বেশ একটু আসুরিক হলেও, পামার আর তার সঙ্গীরা একেবারে অমানুষ হয়তো নয়।

    আমার সে ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।

    আগের দিন পামারের এক সঙ্গী একা একাই সমুদ্রে সাঁতার দিতে গিয়েছিল। ফিরল যখন তখন প্রায় আধমরা! একটা পা যেন পক্ষাঘাতে পঙ্গু হয়ে গেছে আর সেই সঙ্গে অনবরত বমি করছে।

    ব্যাপারটা কী হয়েছে তা বুঝে তখনই আমি ওষুধ দিয়ে তাকে সারাবার ব্যবস্থা করি, আর সেই সঙ্গেই পামারকে কয়েকটা স্পষ্ট কথাও শোনাতে বাধ্য হই।

    অন্য সময় হলে কী করত তা জানি না, তবে চোখের ওপর তার মরণাপন্ন সঙ্গীকে বাঁচাতে দেখার পর পামার তখন আমার কথায় একটু কান না দিয়ে পারেনি।

    কী বলতে চাও তুমি? পামার ঝাঁঝের সঙ্গেই অবশ্য জিজ্ঞাসা করেছিল, সমুদ্রের অভিশাপে লিওর এই দশা হয়েছে?

    হ্যাঁ, জোর দিয়েই বলেছি, আর সে অভিশাপ তোমাদের মতো অবুঝ, লোভী মানুষই প্রশান্ত মহাসাগরে ডেকে আনছে।

    পামারের বাকি দুই সঙ্গী জো আর মার্ফি তখন ঘুষি বাগিয়ে প্রায় মারমুখো। পামার চোখের ইশারায় তাদের ঠেকিয়ে কড়া গলায় জানতে চেয়েছে, লোভটা আমাদের কোথায় দেখলে?

    দেখেছি কাল তোমাদের স্কুনার-এরই গুদাম ঘরে। শান্তস্বরেই বলেছি।

    এবার মার্ফি আর জো দুদিক থেকে বুনো মোষের মতো প্রায় আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আর কী! কিন্তু পামারের ধৈর্য অনেক বেশি, দুহাতে দুজনকে রুখে সে বজ্রগম্ভীর স্বরে বলেছে, আমাদের স্কুনার-এ কার হুকুমে তুমি উঠেছিলে?

    একটু হেসে বলেছি, হুকুম দরকার বলে তো মনে হয়নি। আপনাদের স্কুবা-ডাইভিং-এর উৎসাহ যে একটা ছল মাত্র তা তো জানতাম না।

    পামার অনেক কষ্টে এবারও সঙ্গীদের সামলে জিজ্ঞাসা করেছে, আমাদের লোভে যা ডেকে আনছি সমুদ্রের সে অভিশাপটা কী তা জানতে পারি?

    কাল আমার সঙ্গে অনুগ্রহ করে একবার স্কুবা-ডাইভিং-এ গেলেই তা দেখাতে পারব।

    পামার আমার অনুরোধ রাখতে রাজি হয়েছে। তার ধৈর্য দেখেই একটু অবাক হয়েছিলাম। আসল মতলবটা তখনও বুঝতে পারিনি।

    অসুস্থ লিওকে অ্যাটল-এর তাঁবুতেই রেখে এসে আমরা চারজন তখন স্কুবা-গিয়ার-এর দৌলতে ইফালিক-এর বাইরের সমুদ্রে ড়ুব-সাঁতার দিয়ে চলেছি। প্রবাল-সমুদ্রের অপরূপ রঙিন শোভার বদলে নীচে সেই ফ্যাকাসে সাদা পাথুরে মাটি আর কুৎসিত কাঁটার ঝোপ।

    নীচের দিকে নেমে যা দেখাবার ভাল করে দেখাতে যাচ্ছি, এমন সময় পিঠে একটা হ্যাঁচকা টান টের পেলাম। পরমুহুর্তে বুঝলাম আমার পিঠের অক্সিজেন সিলিন্ডার ওপর থেকে পামারের দলের কেউ ছুরি দিয়ে কেটে টেনে নিয়েছে। যেন বিদ্যুতের চাবুক খেয়ে ওপর দিকে ঘুরলাম। কিন্তু তখন আর সময় নেই, আমার অক্সিজেন সিলিন্ডারটা নিয়ে পামার আর তার দুই সঙ্গী তিরের বেগে দূরে চলে যাচ্ছে। বিনা অক্সিজেনে তাদের সঙ্গে সাঁতারে পাল্লা দেবার কোনও আশাই নেই। আর সাঁতরে তাদের ধরতে পারলেও লাভ কী হবে। তাদের তিনজনের কাছে আমি একলা। পামার যে মনে মনে এত বড় শয়তানি ফন্দি এঁটেছে সেটুকু বুঝতে না পেরেই আমি নিজের শমন নিজেই ডেকে এনেছি।

    পামার আর তার সঙ্গীরা কী আনন্দে তারপর ইফালিক অ্যাটল থেকে তাদের স্কুনার-এ রওনা হয়েছে তা অনুমান করা শক্ত নয়।

    কিন্তু সত্যিই যেন সমুদ্রের অভিশাপ তাদের তখন তাড়া করে ফিরছে। সমুদ্রে প্রথম রাতটা কাটাবার পরই ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে তাদের তিনজন যেমন অবাক একজন তেমনই ক্ষিপ্ত। ক্ষিপ্ত সেই লিও-ও। ঘুমন্ত অবস্থায় তার মুখে কে একদিকে আলকাতরা আর একদিকে চুন মাখিয়ে দিয়েছে।

    সেদিন খুনোখুনি একটা ব্যাপার প্রায় হয়ে যাচ্ছিল। জো আর মার্ফি ছাড়া এ কাজ আর কেউ করতে পারে না ধরে নিয়ে লিও প্রথমেই তাদের ওপর চড়াও হয়েছে। নেহাত পামার এসে বাধা না দিলে ব্যাপারটা রক্তারক্তি পর্যন্তই গড়াত।

    পরের দিন কিন্তু পামারের মাতব্বরিতেও ঝগড়াটা মিটতে চায়নি! সেদিন ভোরে দেখা গিয়েছে জো আর মার্কির মাথার চুল খাবলা খাবলা করে কে যেন তাদের ঘুমের মধ্যে রাত্রে কেটে দিয়েছে।

    পামারকে এদিন গায়ের জোর খাটিয়েই দাঙ্গা সামলাতে হয়েছে। কিন্তু তার পরদিন সকালে তার নিজের মুখেই চুন আর আলকাতরার মাখামাখি দেখবার পর রাগের চেয়ে আতঙ্কটাই বেশি হয়েছে সকলের।

    এসব কী ভুতুড়ে ব্যাপার?

    সবচেয়ে ভুতুড়ে ব্যাপার তারা সেইদিনই আবিষ্কার করেছে। জাহাজে তাদের লুকোনো গুদামঘর খুলতে গিয়ে পামার একেবারে হতভম্ব। সে-ঘর একদম খালি।

    পামার তার স্কুনার-এর ডেক-এ সঙ্গী তিনজনকে ডেকে রেগে আগুন হয়ে এসব কিছুর মানে জানতে চেয়েছে। জ্বলন্ত স্বরে জিজ্ঞাসা করেছে, ঠিক করে বললো, এ

    শয়তানি তোমাদের কার?

    সঙ্গীদের কারও মুখে কোনও কথা নেই।

    পামার তার হাতের শঙ্কর মাছের হান্টারটা দুবার শূন্যে আস্ফালন করে হিংস্র। বাঘের মতো গর্জন করে জানতে চেয়েছে, জবাব না পেলে তিনজনের পিঠের ছাল চামড়া এই চাবুকের ঘায়েই আমি ছাড়িয়ে নেব। এখনও বলো, কে এ কাজ করেছে?

    আজ্ঞে, আমি।

    পামার আর তার তিন সঙ্গী চমকে দিশাহারা হয়ে চারিদিকে চেয়েছে। কে দিলে এ জবাব? আশেপাশে কোথাও কাউকে তো দেখা যাচ্ছে না।

    কড়া রাখবার চেষ্টাতেও একটু কেঁপে-ওঠা গলায় পামার জিজ্ঞাসা করেছে, কে? কে কথা বলছে?

    আজ্ঞে, আমি—ইফালিক-এর সমুদ্রে যাকে চুবিয়ে মেরেছিলেন সেই দাসের ভূত।

    দাসের ভূত! পামার আর তিন সঙ্গী দিশাহারা হয়ে এবার চারিদিকে খুঁজে দেখেছে। কই, কোথাও কারও কোনও চিহ্ন তো নেই।

    আকাশবাণীর মতো সেই ভুতুড়ে স্বর আবার শোনা গেছে, অত খোঁজাখুঁজির দরকার নেই। চাক্ষুষই এবার আমি দেখা দিচ্ছি।

    দেখা দেবার আগে পামারের দল তখন ভুতুড়ে আওয়াজের হদিস পেয়ে গেছে। একটা মাস্তুলের তলায় বাঁধা একটা রবারের নলের মুখে লাগানো ছোট একটা স্পিকার।

    তারা সেটা নিয়ে যখন টানাটানি করছে তখনই পাশের মাস্তুল থেকে ডেক-এর ওপর নেমে এসে দাঁড়িয়েছি।

    ওসব নিয়ে টানাটানি করছেন কেন? অধীন আপনাদের সামনেই হাজির।

    স্কুনার-এ যেন বাজ পড়েছে এমনই চমকে চারজন আমার দিকে ফিরে দাঁড়িয়েছে এবার।

    তুই–!

    পামার রাগে তোতলা হয়ে গেছে।

    আজ্ঞে হ্যাঁ, আমি। মোলায়েম গলায় বলেছি, ভূত হয়েও আপনাদের ছায়া ছাড়তে পারিনি।

    এসব শয়তানি তাহলে তোর?

    তুই-ই আমাদের মুখে চুনকালি মাখিয়েছিস?

    আমাদের লুকোনো মাল তুই-ই সরিয়েছিস?

    চারজনই একসঙ্গে গর্জে উঠেছে তখন।

    আজ্ঞে, হ্যাঁ। সবিনয় স্বীকার করে বলেছি, আপনারা অক্সিজেন সিলিন্ডার কেড়ে নিয়ে সমুদ্রের তলায় ছেড়ে দিয়ে আসবার পর দেহটি সেইখানে ছেড়ে সূক্ষ্ম শরীর নিয়ে ওপরে ভেসে উঠি। আপনারা তখন ইফালিক অ্যাটল থেকে ডেরা তুলে এই স্কুনার-এ সরে পড়বার জোগাড় করছেন। সূক্ষ্ম শরীর নিয়ে এই জাহাজেরই ইঞ্জিনঘরে গিয়ে লুকিয়ে রইলাম। তারপর মনে হল আমায় নিয়ে যা রসিকতা এর আগে করেছেন তার একটু ঋণ শোধ না করলে ভাল দেখায় না। তাই আপনাদের মুখগুলোর ওপর একটু হাতের কাজ দেখিয়েছি। শেষ পর্যন্ত আপনাদের বড় সাধের লুকোনো দৌলতও একটু হাতসাফাই করেছি।

    আমার কথা শেষ হবার আগেই চারদিক থেকে আফ্রিকার সবচেয়ে খ্যাপা চারটে জানোয়ার যেন আমায় তাড়া করে এল। তাদের একটা গণ্ডার, একটা বুনো মোষ, একটা হাতি, আর একটা সিংহ।

    ঠকাস করে প্রচণ্ড একটা শব্দ হল তারপর। আমি তখন জাহাজের রেলিঙের ধারে। অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, আহা, লাগল নাকি?

    চার ষণ্ডা যেন তুফানের ঢেউ হয়েই আবার ঝাপিয়ে এল আমার দিকে।

    রেলিঙে লেগে দুজনের মাথা ফাটল, আর দুজন রেলিং টপকে পড়তে পড়তে কোনওরকমে রেলিঙের বার ধরে ফেলে নিজেদের সামলাল।

    আমি তখন বাণ মাছের মতো পিছলে আবার মাস্তুলের দিকে চলে গেছি। সেখান থেকে যেন মিনতি করে বললাম, মিছিমিছি হয়রান হয়ে মরছেন কেন? বললাম তো, এখন আমি সূক্ষ্ম শরীরে আছি। ভূত-প্রেত কি গায়ের জোরে ধরা যায়?

    আমার উপদেশটা মাঠেই মারা গেল। চারমূর্তি আবার এল পাঁয়তাড়া কযে। বাধ্য হয়ে আরও কিছুক্ষণ তাই খেলতে হল তাদের নিয়ে। সে-খেল শেষ হবার পর ডেকের ওপর চার ষণ্ডাই লম্বা। হাপরের মতো তাদের শুধু হাঁপানিই শোনা যাচ্ছে।

    চারজনকেই এবার একটু কষ্ট করে বাঁধতে হল। সবশেষে পামারকে বাঁধতে বাঁধতে বললাম, মাপ করবেন, বেশিক্ষণ বাঁধা থাকতে আপনাদের হবে না। গুয়াম-এর কাছেই প্রায় এসে পড়েছি। সেখানে পৌঁছেই আপনাদের ছেড়ে দেব।

    গুয়াম! ওই অবস্থাতেই পামার হাঁপাতে হাঁপাতে চেঁচিয়ে উঠল, গুয়াম এখানে কোথায়?

    বেশি দূরে নয়। আশ্বাস দিয়ে বললাম, আমরা আপ্রা বন্দরের কাছে প্রায় পৌঁছে গেছি। বেতারে প্যাসিফিক কমান্ডের অনুমতি পেলেই পিটি জেটিতে গিয়ে স্কুনার ভেড়াব।

    গুয়াম, আপ্রা, পিটি শুনে চারজনেরই চক্ষু তখন চড়কগাছ। তারই মধ্যে কী যেন বলতে গিয়ে পামারের গলায় অস্পষ্ট একটা গোঙানি শুধু শোনা গেল।

    ব্যাখ্যাটা নিজেই এবার করে দিলাম, যতটা ভাবছেন ব্যাপারটা তত আজগুবি নয়। আপনারা ওপরের কনট্রোল রুমে হালের চাকা ঘুরিয়েছেন আর আমি এ ক-দিন। ইঞ্জিনঘরে লুকিয়ে কল বিগড়ে দিয়ে জাহাজের গতি পালটে দিয়েছি।

    উত্তরে চারজনে প্রাণপণে বাঁধন ঘেঁড়বার চেষ্টা করলে খানিক। চোখের দৃষ্টিতে আগুন থাকলে তখন ওইখানেই ভস্ম হয়ে যেতাম।

    তাদের ওই অবস্থায় রেখে কনট্রোল রুমে গিয়ে রেডিও ট্রান্সমিটার নিয়ে বসলাম।

    প্রথমেই তাতে ডাক পাঠালাম, প্যানপ্যান-প্যান।

     

    প্যানপ্যান করলেন তাহলে?—জিভের ডগায় প্রায় এসে গিয়েছিল। কোনও রকমে নিজেকে সামলালাম। আমাদের মনের সন্দেহটা চোখে সম্পূর্ণ কিন্তু লুকোনো বোধ হয় যায়নি।

    ঘনাদা তাই আমাদের ওপর একটু করুণা কটাক্ষ করে বললেন, প্যান-প্যানটা বুঝলে না বুঝি? ওটা হল আন্তর্জাতিক রেডিও সংকেত। প্যানপ্যান শুনলেই যেখানে যত রেডিও চালু আছে সব কান খাড়া করে থাকবে। এর পরেই জরুরি কিছু খবর দেওয়া হবে প্যানপ্যান তারই সংকেত।

    প্যান-প্যানের রহস্য বুঝিয়ে দিয়ে ঘনাদা আবার বলতে শুরু করলেন, প্যানপ্যান সংকেতের পর যে খবরটা ছাড়লাম সেটি শুনতে দুকথার হলেও একেবারে একটি মেগাটন বোমা। রেডিওতে জানালাম—প্যাসিফিক বাঁচাবার দাওয়াই নিয়ে এসেছি। বন্দরে ঢুকতে দাও।…

    খানিকক্ষণ রেডিওতে কোনওদিক থেকে কোনও সাড়াই নেই। রেডিও-সংকেত আর সংবাদ যারা পেয়েছে তারা সবাই বোধহয় হতভম্ব। আমার সংবাদটা আরও দুবার পাঠাবার বেশ কয়েক মিনিট বাদে একটা অত্যন্ত ক্রুদ্ধ প্রশ্নই শোনা গেল। নেহাত যান্ত্রিক রেডিও না হলে সেটা মেঘ-গর্জনের মতোই শোনাত।

    প্রশ্নটা হল, কে তুমি? প্যাসিফিক বাঁচাবার কথা নিয়ে প্রলাপ বকছ?

    জবাবে জানালাম, আমার পরিচয় পরে পাবেন। আমার প্রলাপ আগে আর-একটু শুনুন। গুয়াম-এর বাইশ মাইল প্রবাল প্রাচীর কীসে ধ্বংস হয়েছে। জানেন নিশ্চয়? অস্ট্রেলিয়ার একশো বর্গমাইল ব্যারিয়ার রিফ-ই বা ধ্বসে গলে গিয়েছে কীসে? সমস্ত প্রশান্ত মহাসাগরে ছড়ানো সব প্রবাল দ্বীপ আজ দিন গুনছে কোন অমোঘ সর্বনাশের? প্রশান্ত মহাসাগরের এই ভয়ংকর অভিশাপের নাম কি অ্যাকান্থাস্টার প্লানচি?

    আর কিছু বলতে হল না। গুয়াম-এর প্যাসিফিক কমান্ডের ঘাঁটি থেকেই ব্যস্ত ব্যাকুল প্রশ্ন এল রেডিওতে, এ অভিশাপ কাটাবার উপায় সত্যিই আছে?

    জানালাম, আছে কিনা পরখ করেই যান না। আমি বন্দরের বাইরেই স্কুনার নিয়ে অপেক্ষা করছি।

    বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই দুটি গান-বোটে প্যাসিফিক হাই কম্যান্ডের তিন-তিন জন মাথা এসে হাজির।

    প্রথমটায় তিনজনেই বেশ একটু সন্দিগ্ধ। একজন তো গরম হয়ে আমার ওপর তম্বিই করলেন, কই, কোথায় তোমার প্যাসিফিক বাঁচাবার দাওয়াই?

    একটু হেসে তাদের সঙ্গে নিয়ে গিয়ে স্কুনার-এর একটা গুপ্তঘর খুলে দিলাম।

    তিনজনই তখন আমার ওপর খাপ্পা, রসিকতা হচ্ছে আমাদের সঙ্গে? এই তোমার দাওয়াই? এ তো এক জাতের শিঙে-শাঁখ ট্রাইটন, ঘর সাজাবার জন্যে শৌখিন লোকেরা চড়া দামে কেনে।

    হ্যাঁ, তা কেনে, আর তাই থেকেই প্রশান্ত মহাসাগরের চরম সর্বনাশের সূচনা। গত ক-বছর ধরে হঠাৎ রক্তবীজের মতো লাখে লাখে বেড়ে উঠে যে অ্যাকাস্থ্যাস্টার প্লানচি প্রবাল আবরণ খেয়ে খেয়ে ফেলে প্রশান্ত মহাসাগরের সমস্ত ছোট-বড় দ্বীপ ধ্বংস করে দিচ্ছে ওই শিঙে-শাখ ট্রাইটন তারই যম। বাচ্চা অবস্থাতেই অ্যাকান্থাস্টার প্লানচি খেয়ে ফেলে এই ট্রাইটন তাদের অভিশাপ হয়ে ওঠার মতো বংশবৃদ্ধি করতে দেয় না। কিন্তু নিজেদের লোভে আর আহাম্মকিতে এই ট্রাইটন শিকার করে মানুষ তার নিজের সর্বনাশ ডেকে এনেছে। মানুষের সেই রকম শত্ৰু চারজনকে আপনাদের হাতে তুলে দিচ্ছি, আর সেই সঙ্গে দিচ্ছি প্রশান্ত মহাসাগরকে আবার সুস্থ করে তোলার দাওয়াই এই ট্রাইটন।

     

    ঘনাদা চুপ করলেন। আমাদের সকলের মুখেই তখন এক জিজ্ঞাসা, অ্যাকান্থাস্টার প্লানচিটা কী জিনিস?

    জিনিস নয়, প্রাণী, ওর আর একটা ডাক নাম হল কাঁটার মুকুট।

    কাঁটার মুকুট? আমরা তাজ্জব, ওই কাঁটার মুকুটেই অস্ট্রেলিয়ার একশো বর্গমাইল ব্যারিয়ার রিফ সোপাট হয়ে গেল? গুয়াম-এর বাইশ মাইল প্রবাল প্রাচীর ধ্বংস হয়ে গেল ওতেই?।

    হ্যাঁ। ঘনাদা অর্ধনিমীলিত চোখে গড়গড়ায় একটা সুখ টান দিয়ে বললেন, ওই কাঁটার মুকুট অ্যাকাস্থ্যাস্টার প্লানচি বিকট এক জাতের তারা মাছ। রাবণের কুড়িটি হাত ছিল বলে শুনি, আর হাত-দেড়েক চওড়া এ তারা মাছের ষোলো থেকে একুশটা পর্যন্ত বাহু হয়। সমস্তটাই সাংঘাতিক কাঁটায় ভর্তি। সে কাঁটায় সিগুয়াটেরা নামে এমন এক দারুণ বিষ থাকে যা গায়ে ফুটলে শরীর অসাড় হয়ে যায় আর বমির ধমক থামতে চায় না। ইফালিক অ্যাটল-এ এই কাঁটা লেগেই লিও-র ওই দুর্দশা হয়েছিল। বছর কয়েক আগে পর্যন্ত এই সর্বনাশা তারামাছ সম্বন্ধে হুঁশিয়ার হবার কোনও কারণই ঘটেনি। তারপর জানা-অজানা নানা কারণে সত্যিই রক্তবীজের মতো এ অভিশাপের বংশবৃদ্ধি ঘটেছে। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে সমস্ত প্রবালদ্বীপের তলায় গিজগিজ করছে এখন এই কাঁটার মুকুট। এদের আহার হল প্রবাল। প্রবালের ওপরের খোলস খেয়ে ফেলার পর যে প্রবাল প্রাচীর প্রশান্ত মহাসাগরের সমস্ত দ্বীপের রক্ষাকবচ হিসেবে ঘিরে থাকে তা দুর্বল হয়ে সমুদ্রের প্রচণ্ড ঢেউয়ের আঘাত আর ঠেকাতে পারে না। দ্বীপগুলির চারিধারে সেখানকার সাধারণ মাছ প্রবাল প্রাচীরের আড়ালে আর আশ্রয় পায় না। দ্বীপগুলিও ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যেতে থাকে। এ কাঁটার মুকুটের খিদে এমন রাক্ষুসে যে এদের একটি ঝাঁক এক মাসে আধ মাইল প্রবাল প্রাচীর খেয়ে ফেলতে পারে আর ফেলছেও তাই। এ রাক্ষুসে তারামাছের একমাত্র যম হল শিঙে-শাঁখ ওই ট্রাইটন। ট্রাইটন শিকার বন্ধ করে আবার কাঁটার মুকুটের ওই স্বভাবশত্রুকে বাড়তে দিলে প্রশান্ত মহাসাগরকে বাঁচানো এখন সম্ভব। প্যাসিফিক কম্যান্ডকে এই দাওয়াই-ই বাতলে এসেছিলাম।

    খানিকক্ষণ আমাদের জিভ-টিভ সব অসাড়।

    কাঁটার খোঁচাটার আসল যে লক্ষ্য সেই শিবু তো লজ্জায় অধোবদন।

     

    ঘনাদাকে প্যাসিফিক কমান্ডের ডাকে যেতে আমরা দিইনি। অত যদি তাদের গরজ তাহলে শুধু টেলিগ্রাম কেন, নিজেরা এসে ঘনাদাকে তারা নিয়ে যাক।

    কিন্তু এলে ঠিকানাটা তো তাদের খুঁজে পাওয়া চাই। খবরের কাগজের টু-লেট দাগানো ছেড়ে ঘনাদাকে বাহাত্তর নম্বরেই তাই বাধ্য হয়ে অপেক্ষা করে থাকতে হচ্ছে।

    আমাদেরও এ অবস্থায় ঘনাদাকে একলা এখানে ছেড়ে যাওয়া কি ভাল দেখায়?

    বাহাত্তর নম্বরই তাই এখনও গুলজার।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray
    Next Article ঘনাদা সমগ্র ১ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    Related Articles

    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    ঘনাদা সমগ্র ১ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }