Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ঘনাদা সমগ্র ২ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    প্রেমেন্দ্র মিত্র এক পাতা গল্প884 Mins Read0

    মৌ-কা-সা-বি-স বনাম ঘনাদা

    ছুটির দিন। দুপুর বেলা খাওয়াদাওয়া শেষ হতে একটু দেরিই হয়। তবু যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি সে পাট চুকিয়ে ঘনাদা তাঁর খাওয়া সেরে নিজস্ব সেই চিলেছাদের টঙের ঘরে উঠে যাওয়ার পরই সবাই একসঙ্গে দোতলার সিঁড়ির বাঁকে শিশিরের ঘরে গিয়ে জমায়েত হয়েছি।

    জমায়েত যে হয়েছি তা ঠিক খোশ-মেজাজ নিয়ে গুলতানি করবার জন্য নয়। তার বদলে রীতিমত একটা লজ্জা আর অপমানের জ্বালা নিয়ে।

    লজ্জা আর অপমানের জ্বালাটা যা নিয়ে তার ব্যাপারেই শিবু তখন নীচের খাবার ঘরে খাওয়া শেষ করার পর আমাদের সঙ্গে ওপরে না এসে বাইরের গেটের পাশের লেটারবক্স হাতড়াতে গেছে আর আমরা শিশিরের ঘরে এসে জড়ো হয়ে অধীর আগ্রহে তার জন্য অপেক্ষা করছি।

    অপেক্ষা বেশিক্ষণ করতে হল না। মিনিট দশেকের মধ্যেই শিবু এসে হাজির হল, কিন্তু যে চেহারা নিয়ে সে দেখা দিলে তাতে, ফলাফল সম্বন্ধে কোনও সংশয়ের অকাশ না থাকলেও হতাশ কণ্ঠেই জিজ্ঞাসা না করে পারলাম না—কী আজও কিছু নেই?

    থাকবে না কেন, শিবু হতাশ কণ্ঠটা আরও গাঢ় করে জানালে, যা থাকবার তাই আছে।

    তার মানে, নেই—টিটকিরির চিরকুট?

    হতাশার সঙ্গে বেশ একটু ক্ষোভের জ্বালা নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেও শিবুর হাত থেকে চিরকুটটা নিয়ে না পড়ে পারলাম না।

    পড়ার অবশ্য নতুন কিছু নেই। বেশ কিছুক্ষণ থেকে সোজাসুজি স্পষ্ট সমস্যার ধাঁধাটাঁধার বদলে যে ধরনের জ্বালা ধরানো টিটকিরির চিমটি আসছে তারই আর একটি নমুনা।

    এবারেও সেই পোস্টকার্ডের মাপের একটা ধবধবে সাদা কার্ড। তার সম্বোধন নেই। কোথা থেকে আসছে তার কোনও হদিস নেই। কার্ডের মাঝামাঝি মোটা মোটা অক্ষরে শুধু লেখা—দুয়ো।

    এ রকম কার্ড এ ক-দিনে আরও কয়েকটা পাওয়া গেছে। এক না হলেও সবগুলিই অপমান ধরা টিটকিরি দিয়ে লেখা।

    এই জাতের যে কার্ড পাওয়া গেছে তাতে তার ভাষণ সংক্ষিপ্ত হলেও ভাষা একটু বিস্তারিত ছিল।

    মাপজোকে এক হলেও সে কার্ডে বক্তব্য একেবারে অস্পষ্ট নয়।

    লেখার ধরন-ধারণ অবশ্য এক। প্রমাণ আকারের সাদা কার্ডের মাঝখানে পর পর মোটা মোটা অক্ষরে কথাগুলি সাজানো

    কে না কারা? এখনও বুঝলে কিছু, দুয়ো।

    এর পরের চিঠিটা আর একটু বড় হলেও মোটেই ধোঁয়াটে নয়। তার একটি খোঁচাই স্পষ্ট করে দেওয়া। পর পর তিন লাইনে সাজিয়ে লেখা–

    কোথায় এখন।

    টঙের ঘরের তিনি!

    ড়ুব মেরেছেন কোথায়?

    নিয়মিতভাবে পর পর এ ধরনের ভেংচিকাটা চিঠি নিয়ে মেজাজগুলো তখন আমাদের কী হয়েছে তা বোধহয় বলে বোঝাবার দরকার নেই।

    এ যে মৌ-কা-সা-বি-স-এর কাণ্ড সে বিষয়ে কোনও মতেই আমাদের সন্দেহ নেই।

    কিন্তু কে সে মৌ-কা-সা-বি-স?

    কে না কারা?

    আমাদের এমন কানমলা দেবার এ গরজই বা তার বা তাদের কেন?

    আর আমাদের এই বাহাত্তর নম্বরের বাসার ডাকবাক্সে তারা তাদের চিঠি চালানই বা করছে কখন? কীভাবে?

    সারাক্ষণ যতখানি সম্ভব আমরা সজাগ পাহারায় থেকেছি।

    সকলে দল বেঁধে না হোক, কেউ না কেউ তো বটেই।

    এই এত পাহারার মধ্যে কখন কী ভাবে তারা তাদের এই সব চিঠি চালান করছে। আমাদের চিঠির বাক্সে?।

    দিনের বেলা তো নয়ই, রাত্রেও আমাদের অজান্তে চিঠির বাক্সে কিছু ফেলা অসম্ভব বললেই হয়। কারণ সন্ধ্যা হতে না হতেই আজকাল আমরা বাইরের গেট চাবি দিয়ে বন্ধ করার ব্যবস্থা করেছি।

    অন্য কারও তো নয়ই, আমাদের নিজেদেরও কারও বাইরে থেকে ভেতরে আসতে হলে চাবি দিয়ে গেট না খুলিয়ে আসা যাওয়ার উপায় ছিল না।

    এই অবস্থায় আমাদের অজান্তে আমাদের ডাকবাক্সে চিঠি বা চিরকুট চালান কেমন করে সম্ভব!

    ব্যাপারটা যা দাঁড়িয়েছে তাতে আমরা পরস্পরের ওপর সন্দিগ্ধ হয়ে উঠেছি।

    আমাদেরই কেউ কি চুপি চুপি এই সব চালাকি করছে। কিন্তু কে সে হতে পারে?

    এ রকম মজার বেয়াড়াপনা করে তার লাভই বা কী!

    আর তাছাড়া মৌ-কা-সা-বি-স যে সব মাথাগুলোনো ধাঁধার রহস্য আমাদের সামনে সাজিয়ে ধরেছে, একা এমন কিছু করার মতো বুদ্ধিও আমাদের কার আছে?

    শিবুর?

    না। কোনও একটা মজার ব্যাপার নিয়ে বেশ একটু হইচই বাধিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা ছাড়া আর কোনও এলেম তার থাকার পরিচয় তো এখনও পেয়েছি বলে মনে হয় না।

    যদিই বা এরকম ক্ষমতা তার থাকে, আপাতত তা অনুমানের মধ্যে রেখে অন্যদের কথা বিচার করে দেখতে পারি।

    প্রথমে নিজেকে বিচারের দাঁড়িপাল্লায় তুলে চোখ বুজেই সরাসরি বাদ দিতে। পারি।

    না, আমি দু চারটে খোঁচা দিয়ে সোজা কথাকে কখনও কখনও প্যাঁচালো করতে পারি, কিন্তু ভেবে চিন্তে সাজিয়ে গুছিয়ে একটা ধাঁধা বানানো–সে আমার কর্ম নয়।

    আমার পর বাকি থাকে শুধু গৌর আর শিশির।

    তা দু-দুজনের কেউ যে ফেলনা নয় একথা অকপটে স্বীকার না করে উপায় নেই। কিন্তু বাদ সেধেছে দুজনের নিজস্ব চরিত্রের বিশেষত্ব।

    গৌর ইচ্ছে করলে সবই পারে। কিন্তু সকলের সঙ্গে সমান উৎসাহে যে কোনও ধান্দায় মাততে আপত্তি না থাকলেও মৌ-কা-সা-বি-স-এর মতো বাহাদুরির জন্য নিজের গরজে সময় আর বুদ্ধি খরচ সে করবে বলে মনে হয় না।

    শিশিরের পক্ষে সে রকম কিছু করা অবশ্য সম্ভব।

    কিন্তু ব্যাপারটা আরও তাহলে জমকালো হওয়া দরকার।

    জমকালো না হোক, ব্যাপারটা এখন যা দাঁড়িয়েছে তাতে একটা গায়ে জ্বালাধরানো টিটকিরির চাবকানির আভাস আছে বলে অবশ্য শিবু, গৌর, শিশির কারওই সামান্য গা ঝাড়া দিয়ে তাচ্ছিল্য করার ভাবটা আর নেই।

    রহস্যটার একটা মীমাংসা তাই না করলেই নয়।

    কিন্তু কীভাবে সে ব্যাপারে অগ্রসর হওয়া যায় ঠিক মতো বুঝতে না পেরে আপাতত শিবুর ওপরেই একটু চড়াও হয়ে বললাম, এতক্ষণ লেটারবক্স হাতড়ে তুই শুধু এই লেখাটুকু পেলি?

    তার মানে? হঠাৎ আক্রমণটা কোন দিক দিয়ে যায়—কেনই বা এমন বেয়াড়া হয়ে ওঠে তা বুঝতে না পেরে শিবু বেশ একটু গরম মেজাজ নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে, কী বলতে চাইছিস তোরা।

    আমরা-আমরা মানে— বলবার কিছু না পেয়ে আমরা তখন তোতলামিতে পৌঁছে গেছি।

    আমাদের হয়ে শিবুই কথাগুলো গরম মেজাজে জানিয়ে দিলে, তার মানে আমি ওই কাটা কার্ডের টুকরোটা লিখে আনতে দেরি করছিলাম বলতে চাস?

    না না— আমরা এবার অপ্রস্তুত হয়ে সরব প্রতিবাদ জানালাম।

    তা–মানে তা কেন বলব—মানে বলছিলাম কী—

    ও সব বাজে কথা রাখ— শিবুর চড়া মেজাজ ঠাণ্ডা হল না—স্পষ্ট আমায় যে সন্দেহ করছিস তা সাহস করে স্বীকার কর না।

    না, না, মানে আমরা অপ্রস্তুত হয়ে যা বলতে যাচ্ছিলাম শিবু তাতে বাধা দিয়ে বললে, শোন, মিছিমিছি কথা বাড়িয়ে তো লাভ নেই। সত্য কথাটা তাই আমাদের সকলেরই স্বীকার করা ভাল। আসল ব্যাপারটা যা দাঁড়িয়েছে তা এই যে রহস্যটার ঠিক মতো কোনও হদিস না পেয়ে আমরা সকলেই সকলকে মনে মনে সন্দেহ করতে আরম্ভ করেছি। আমি নিজে এখন তা অকপটে স্বীকার করছি যে আমি নিজেও তাই করে একদিন হাতেনাতে আসল আসামিকে ধরবার মতলবে ছিলাম। তার জন্যে বেশ একরকম ফাঁদও পেতেছি।

    সত্যিই তুই আমাদেরই কাউকে সন্দেহ করেছিস? অবিশ্বাস্য স্বরে জিজ্ঞাসা না করে পারলাম না। আর তাকে ধরবার জন্যে ফাঁদও পেতেছিস? নিজের কানকেই বিশ্বাস না করতে পেরে একটু রুক্ষ গলায় জিজ্ঞাসা করলাম, কাকে?

    কাকে জানতে চাইছিস? শিবু বিনা দ্বিধায় জানাল, কাকে না করেছি সেইটিই বরং জিজ্ঞাসা কর। তবে সে প্রশ্নেরও সঠিক জবাব দিতে পারব না।

    তার মানে? একটু ধমক দেবার ভঙ্গিতে বলবার চেষ্টা করলাম, কী আবোল-তাবোল বকছিস।

    হ্যাঁ, শুনলে আবোল-তাবোলই মনে হয়, শিবু অকপটে স্বীকার করলে, কিন্তু কথাটা পুরোপুরি ঠিক। সন্দেহ যখন শুরু হয়েছে তখন এক এক করে কেউই বাদ পড়েনি।

    কেউই বাদ পড়েনি! নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে না পেরে বললাম, সন্দেহ করেছিস এক এক করে আমাদেরই সকলকে!

    হ্যাঁ, তাই করেছি। শিবু সোজাসুজি জানালে, আর তার মধ্যে প্রথম কাকে সন্দেহ করেছি শুনবি?

    এ ধরনের কথায় মেজাজ ঠিক রাখা যায়? বেশ একটু কড়া গলাতেই বললাম, সেইটেই তো জানতে চাই।

    বেশ, শোন তাহলে, শিবু যেন নিজের দায়টা কাটিয়ে নিয়ে বললে, প্রথম সন্দেহ করেছি আর কাউকে নয়, এই তোমাকেই!

    আ-আ-আমাকে? আমি তোতলা হয়ে কথাটা যখন জিজ্ঞাসা করতে পারলাম, ঘরেও অন্যদিকে তখন চাপা হাসির শব্দটা খুব অস্পষ্ট নয়।

    সেটা গ্রাহ্য না করে তোতলামিটা এবার কাটিয়ে উঠে প্রায় ধরা গলায় জিজ্ঞাসা করলাম, প্রথম সন্দেহ করলি এই আ-মা-কেই? মানে আমি প্রথমে মৌ-কা-সা-বি-স-এর ওই গোটা দু-তিন চালাকির খেল দেখিয়ে সে সব প্যাঁচের পুঁজি ফুরিয়ে যাবার পর এমনই করে সবাইকে টিটকিরি দিয়ে বাহাদুরি করছি।

    হ্যাঁ, আমার মেজাজের ঝাঁঝটা গ্রাহ্যই না করে শিবু সোজাসুজি এবার স্বীকার করলে, হ্যাঁ, প্রথমে তোর ওই বোকা বোকা ভাবগতিকটা হয়তো একরকম সেজে থাকা বলেই সন্দেহ হয়েছিল। তারপর অবশ্য

    শিবুকে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে জ্বলন্ত গলায় জিজ্ঞাসা করলাম, তারপর অবশ্য কী?

    তারপর, শিবু এবার একটু হেসেই বললে, বুঝলাম যে তোমায় সন্দেহ করাটা সম্পূর্ণ ভুল। মানে—

    শেষ পর্যন্ত বুঝলে তাহলে সে কথা? খুশি হয়ে শিবুকে একটু তারিফ জানাতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু তা আর হল না। শিবু তখন তার বক্তব্যটা শেষ করে বলছে, মানে তখন খেয়াল হয়েছে যে বোকা সাজাটা সহজ হলেও তোমার পক্ষে মৌ-কা-সা-বি-স-এর ওই সব প্যাঁচের এক-একটা গল্প ফাঁদা-তোমার কর্ম নয়। সে বুদ্ধি তোমার নেই।

    এ অপমানের কি জবাব নেই?

    থাকলেও তখন তা ভেবে বার করতে না পেরে নীরবে তা হজম করে শিবুর কথাই শুনে যেতে হল।

    শিবু তখন বলছে, তোমাকে বাতিল করে তখন গৌর-শিশিরের কথা ভাবছি। হ্যাঁ, ওদের দুজনের পক্ষেই এরকম একটা বাহাদুরি দেখানো অসম্ভব নয়, আর বিশেষ করে ওদের যা দস্তুর—দুজনে সেইরকম জোট বেঁধে যদি কাজ করে।

    শিবু একটু থেমে গম্ভীরভাবে মাথা নেড়ে এবার বললে, কিন্তু সেইটেই আর সম্ভব নয়।

    সম্ভব নয়? আমি গৌর আর শিশিরের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, কেন? তা সম্ভব নয় কেন?

    তাও বুঝিয়ে বলতে হবে? শিবু আমার মূঢ়তায় তার হতাশাটা গলার স্বরে বুঝিয়ে দিয়েও বললে, লীগ চ্যাম্পিয়ানশিপ-এর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে না। এখন ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান জোট বাঁধবে কী? মুখ দেখাদেখিও বন্ধ।

    না, না, তা কেন গৌর আর শিশির দুজনেই প্রতিবাদ করে জানালে, ও সব খেলাধুলোর ঝগড়া আমরা মাঠেই রেখে আসি। ও ঝগড়া বাড়ি বয়ে আনব নাকি?

    ঠিক, ঠিক, আমারই ভুল হয়েছে। শিবু নিজের ভুল স্বীকারের সঙ্গে মুখ টিপে একটু হেসে বললে, কিন্তু আসামিদের তালিকা থেকে একে একে সবাই বাদ যাবার পর পড়েছি ফাঁপরে। আমাদের চিঠির বাক্সের ও সব নাক কান মলা চিঠি দিয়ে মজা করছে কে বা কারা?

    সত্যিই কি ব্যাপারটা তাহলে ভুতুড়ে কিছু?

    এ ব্যাপারে একমাত্র যিনি সব সন্দেহের বাইরে আছেন এ বিপাকে পড়ে এবার তাঁর শরণ নেবার কথা ভাবতে হচ্ছে! হ্যাঁ, টঙের ঘরের সেই তিনি। মৌ কাসা-বি-স-এর এ-রহস্যের কোনও সমাধান যদি থাকে তাহলে একমাত্র তাঁর কাছেই তা পাওয়া সম্ভব। তাই তাঁর শরণই এবার নিতে হবে।

    তা নিতে চাও নাও, একটু সন্দেহ প্রকাশ করেই জানতেই চাইছিলাম, কিন্তু এ ব্যাপারে তিনি সন্দেহের বাইরে কেন মনে করছ?

    করছি, শিবু একটু গম্ভীর হয়েই জবাব দিল, গোড়ায় মৌ-কা-সা-বি-স-এর চিঠিগুলো তাঁর নিজের হাতের লেখার নকল দেখে।

    তাঁর নিজের হাতের লেখার নকল। শিশিরই অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলে, সে লেখা যে নকল তা বুঝলে কী করে?

    বুঝলাম তাঁর হাতের লেখার সঙ্গে মিলিয়ে, শিবু ব্যাখ্যা করে এবার বোঝালে, ওঁর হাতের লেখা আমাদের কাছে অতি সামান্যই আছে। একবার আমাদের এই বাহাত্তর নম্বর ছেড়ে অন্য কোথাও যাবার হুমকি দিয়ে যখন খবরের কাগজের বাড়িভাড়ার বিজ্ঞাপন দেখে ভাড়ার আবেদনের চিঠি লিখেছিলেন বনোয়ারিকে দিয়ে ডাকে পাঠাবার জন্য, তখন সে সব চিঠি ডাকবাক্সের বদলে আমাদের কাছেই জমা করেছি। সেই চিঠির লেখার সঙ্গে মিলিয়ে বুঝলাম এ লেখা ঘনাদার। সেই নিজের লেখারই নকল-নকল শুধু আমাদের ধোঁকা দেবার জন্য? এ ধোঁকা দেবার চালাকি কে বা কারা করছে তা বার করবার জন্য টঙের ঘরের তাঁরই শরণ নিতে হবে।

    আরে মেঘ না চাইতেই জল! গৌর টিপ্পনি কাটলে, সিঁড়িতে তাঁর চটির আওয়াজ বোধহয় শোনা যাচ্ছে।

    গৌর ভুল বলেনি। মিনিট কয়েক বাদে বিদ্যাসাগরি জোড়া চটির আওয়াজ নীচ থেকে ওপরে উঠে তখনকার আস্তানাঘরের পাশ দিয়ে যেতে যেতে আবার আমাদের দরজায় ফিরেই বোধহয় কড়া ঠেলা দিতে যাচ্ছিল, কিন্তু তার আর দরকার হল না।

    শিবুই ভেতর থেকে দরজা খুলে ধরে যেন কুর্নিশ করার মতো ভঙ্গিতে বললে, আসুন না। আপনি বোধহয় অন্তর্যামী। এইমাত্র আপনার কাছে যাবার কথাই ভাবছিলাম। কেমন করে তা বুঝে নিজে থেকেই তার আগে এসে পড়েছেন!

    এ আদিখ্যেতায় ঘনাদা বিশেষ গললেন বলে মনে হল না। কথাগুলো যেন গ্রাহ্যই না করে তিনি ঘরের ভেতর গৌরের ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ানো সোফাটায় বসে গম্ভীরভাবে বললেন, ব্যাপার কী বলল তো, এমন ছুটির দিন বিকেলে তোমরা আড্ডাঘরের বদলে এখানে এসে জমা হয়েছ, আমার কাছেও যাবার কথা ভাবছিলে? কী হল কী হঠাৎ এমন?

    হঠাৎ নয়, শিবুই গলাটা ভারি করে জানালে, ব্যাপারটা হয়েছে অনেকদিন। ছেলেখেলা বলে কিন্তু এখন আর উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। মীমাংসার জন্যে তাই আপনার শরণ নিতে যাচ্ছিলাম।

    সে কথা তো অনেকবার শুনলাম, ঘনাদা একটু অধৈর্যের সঙ্গে বললেন, কিন্তু ব্যাপারটা হয়েছে কী?

    একটু চুপ করে আমাদের সকলের মুখের ওপর একবার চোখ বুলিয়ে ঘনাদা হঠাৎ যেন দিব্যদৃষ্টি পেয়ে বললেন, সেই তোমাদের মৌ-কা-সা-বিস আবার খোঁচা দিয়েছে? চিঠি দিয়েছে কিছু আবার।

    চিঠি দিয়েছে, আবার দেয়নি—

    শিবু হেঁয়ালি করে জানাবার চেষ্টা করাতে তার ওপর বিরক্ত হয়ে ঘটনাটা যা দাঁড়িয়েছে, ঘনাদাকে একটু বিস্তারিত করে জানালাম।

    সেই সঙ্গে মৌ কাসা-বি-স-এর শেষ চিঠিগুলোও দেখাতে ভুললাম না।

    ঘনাদা যেরকম গম্ভীর মুখে আমাদের পেশ করা কাগজপত্র প্রথমে দেখছিলেন, শেষের দিকে হঠাৎ তার বদলে তাচ্ছিল্যভরে হেসে ওঠাতে কিন্তু আমাদের অবাক হতে হল।

    এই! এই তোমাদের সমস্যা! ঘনাদা ওঁর কাছে জড়ো হওয়া কাগজের টুকরোগুলো সামনের টেবিলের ওপর নাড়াচাড়া করতে করতে বললেন, করে দেওয়া এ যদি রহস্য হয়, তাহলে তার সমাধান এইগুলোর মধ্যেই করে দেওয়া আছে। এই কাগজের টুকরোগুলোর মধ্যেই।

    আমরা অবাক হলাম। সেই সঙ্গে ঘনাদা বোধহয় আমাদের নিয়ে ঠাট্টা করছেন এই সন্দেহ করে একটু চুপ।

    ক্ষোভটা গোপন না করে একটু তেতো গলাতেই জানতে চাইলাম, সমাধানটা আছে বুঝলাম, কিন্তু সেটা কোন ভাষায় তা একটু জানাবেন? ভাষাটা বাংলা না এসপেরান্টো গোছের কিছু?

    না, না ওসব কেন হবে! ঘনাদা জড়ো করা কার্ডগুলোর একটা তুলে নিয়ে তার পেছনের সাদা পাতার সামনে যা লেখা আছে সেই কথাগুলোই নিজের পকেট থেকে একটা কলম বার করে লিখতে লিখতে বললেন, এই কার্ডের এক পিঠের লেখাটাই অন্য পিঠে লিখলাম। একটু মন দিয়ে পড়লে মানেটা বোঝা জলের মতো সহজ হবে বলে মনে করি।

    কথাটা শেষ করে নিজের হাতের দুপিঠে লেখা কার্ডটা অন্য কাগজগুলোর মধ্যে মিশিয়ে দিয়ে হঠাৎ উঠে পড়ে দরজা দিয়ে ছাদের সিঁড়ির দিকেই পা বাড়াতে বাড়াতে যা বললেন তাও একটা ধাঁধা। বলে গেলেন, এবার লেখাটা পড়তে পারবে আশা করি। লেখা না পড়তে পারো কলম পড়লেই চলবে।

    এ আবার কী আজগুবি কথা?

    মনে হল ঘনাদার বিদ্যাসাগরি চটির শব্দ ন্যাড়া ছাদের সিঁড়িতে মিলিয়ে যাবার আগে তাঁকে মানেটা বোঝাবার জন্য ধরে নিয়ে আসি।

    কিন্তু সেটা আর পারলাম না। তার বদলে মৌ-কা-সা-বি-স-এর টুকরো কার্ডগুলোর ভেতর থেকে ঘনাদার উলটো পিঠে লেখা কার্ডটা খুঁজে বার করে একটু মন দিয়ে পড়বার চেষ্টা করলাম।

    কিন্তু তাতে লাভ কী হল?

    কার্ডটায় এক পিঠে যা লেখা ছিল ঘনাদা অন্য পিঠে ঠিক তাই লিখেছেন।

    মূল কার্ডটায় লেখা ছিল একেবারে সংক্ষিপ্ত দুটি মাত্র শব্দ কার্ডের ঠিক মাঝখানে মোটা মোটা অক্ষরে লেখা-কে আমি। কার্ডের অন্য পিঠে ঘনাদা আমাদের সামনে সেই কথাই লিখেছেন—

    কে আমি!

    তাহলে?

    নেহাত সস্তা ধাপ্পা বলে কাগজটা অন্য সবগুলোর সঙ্গে কাগজ ফেলার ঝুড়িতে ফেলতে গিয়ে হঠাৎ ঘনাদার শেষ কথাই মনে পড়ল।

    কী বলে গেছেন ঘনাদা।

    বলে গেছেন—লেখা না পড়তে পারো কলম পড়লেই চলবে।

    ঠিক! ঠিক!

    লেখা ক-টার মানে বুঝতে আর দেরি হল না।

    এক এক করে অন্য কার্ডগুলোর লেখাগুলোও পড়ে দেখলাম। ঘনাদার কথাই ঠিক। লেখার কলমই লেখককে চিনিয়ে দিয়েছে।

    কেমন সে কলম? এমন আজগুবি কিছু নয়। শুধু নিব-এ একটু দোষ আছে। ওপর দিকে কলমের টান দেবার সময় খুব মিহি, প্রায় অদৃশ্য কালির ছিটে কাগজের ওপর ছড়ায়।

    এই সূক্ষ্ম ছিটে মৌ-কাসা-বি-স-এর যত চিঠি আমরা পেয়েছি সবগুলিতেই একটু ভাল করে লক্ষ করলে দেখা যায়।

    সেই ঘরে—তখনই সেই টঙের ঘরে ছুটলাম?

    না, বিকেলের খাবারের ফরমাশগুলো গরম গরম এসে পৌঁছবার জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষাই করলাম।

    খাবার কী এল তার বর্ণনার বোধহয় দরকার নেই। শুধু স্পেশ্যাল আইটেমটার একটা বর্ণনা দিই। সেই এক বারকোশ প্রমাণ পূর্ণচাঁদের মাপের একটি নরম পাকের কাঁচাগোল্লা, সাদা জমির ওপর নীলচে লালচে ক্ষীরের বুটি ভোলা অক্ষরে লেখা–মৌ-কা-সা-বি-স-এর ভাঙা কলম।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray
    Next Article ঘনাদা সমগ্র ১ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    Related Articles

    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    ঘনাদা সমগ্র ১ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }