Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ঘনাদা সমগ্র ২ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    প্রেমেন্দ্র মিত্র এক পাতা গল্প884 Mins Read0

    পৃথিবী বাড়ল না কেন

    চিত্রার্পিত কথাটা সবাই নিশ্চয়ই জানে।

    আমি জানতাম না।

    অন্তত অমন চাক্ষুষভাবে মানেটা বোঝবার সুযোগ কখনও পাইনি।

    সেদিন পেলাম।

    সেদিন মানে, শুভ ২৪ আষাঢ়, খ্রিস্টাব্দ ৯ জুলাই অ ২৪ আহাব মুং ১৫ জম-য়ল, প্রতিপদ দং ২৫।৩৬।০ ঘ ৩।১৪।৪৯ উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্র দং ৪৮।৩০।৫৬ রাত্রি ঘ ১২।২৪।৪৭ ইত্যাদি, ইত্যাদি, ইত্যাদি।

    তারিখটা তো বুঝলাম, কিন্তু সালটা কী কেউ যদি জিজ্ঞাসা করেন তা হলে বলব পাঁজি দেখে নিন।

    আর মানে জানতে চাইলে অকপটে সত্য কথাটা স্বীকার করব।

    মানে আমি কিছুই জানি না এবং বুঝিনি।

    শুধু দিনটা পার হয়ে যাবার পর তার আশ্চর্য কাণ্ডকারখানার কারণ কিছু কোথাও পাওয়া যায় কি না খোঁজার চেষ্টায় পাঁজি খুলে ওই সব বুকনি পেয়ে মাথাটা আরও গুলিয়ে গিয়েছিল।

    দিনটা সত্যিই অদ্ভুত।

    অমন যে বাহাত্তর নম্বর বনমালি নস্কর লেনের দোতলার আড্ডাঘর—সেখানেও অমন কাণ্ড বুঝি কখনও হয়নি।

    সে কাণ্ড বর্ণনা করতে গেলে প্রথমে ওই চিত্রার্পিত দিয়েই শুরু করতে হয়।

    হ্যাঁ, আমরা সবাই চিত্রার্পিত।

    আমরা মানে আমি,শিবু, শিশির, গৌর তো বটেই, তাঁর মৌরসি আরামকেদারায় স্বয়ং ঘনাদাও তাই।

    সবাই মিলে যেন নড়নচড়ন-হীন একটা আঁকা ছবি।

    ছবিটা আবার সহজ স্বাভাবিক নয়। যেন একটা সচিত্র রহস্যগল্পের পাতা খুলে বার করা।

    রহস্যটাও যে সাধারণ নয় তা ঘনাদা আর আমাদের সকলের চোখমুখের ভাব থেকেই বোঝবার। আমরা সবাই যেন ভূত দেখেছি।

    ঘনাদার চেহারাটাই সবচেয়ে দেখবার মতো। চোখগুলো যেন কোটর থেকে ঠেলে বেরিয়ে আসবার জোগাড়। আর মুখটা একেবারে হাঁ।

    তা চোখমুখের আর অপরাধ কী?

    ব্যাপার যা ঘটেছে তাতে আর কেউ হলে খানিকটা বেহুশ হলেও বলার কিছু থাকত না। ঘনাদা বলেই তাই শুধু চোখদুটো ছানাবড়ার বেশি আর কিছু করেননি।

    ধানাই পানাই একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে মনে করে যদি কেউ ধৈর্য হারিয়ে থাকেন। তা হলে ব্যাখ্যাটা আর চেপে রাখা নিরাপদ হবে না। সবিস্তারে খুলেই বলা যাক। ঘটনাটা।

    শুক্রবারের সন্ধ্যা, নীচের হেঁশেলে রামভুজ রাতের জন্য স্পেশাল মেনুর আয়োজনে ব্যস্ত। বনোয়ারিকে যখন দেখা যাচ্ছে না তখন সেও সেই বড় ধান্দায় নিশ্চয় কোথাও প্রেরিত হয়েছে ধরে নিতে হবে।

    সন্ধের আসর ইতিমধ্যে জমে ওঠবার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। রাত্রের স্পেশাল মেনু আগাগোড়া ঘনাদার নির্দেশ মাফিকই তৈরি হয়েছে। ঘনাদা তাই প্রসন্ন মনে একটু আগে আগেই আমাদের আড্ডাঘরে এসে তাঁর মৌরসি কেদারা দখল করেছেন। আমরাও হাজিরা দিতে দেরি করিনি।

    আসল নাটকের যবনিকা ওঠবার আগে যেমন সামান্য একটু অর্কেস্ট্রা-বাদন তেমনই রাতের ভুরিভোজের ভূমিকা হিসাবে কিছু টুকিটাকির ব্যবস্থা হয়েছে।

    বনোয়ারি অনুপস্থিত। তাই আমরা নিজেরাই পরিবেশনের ভার নিয়েছি। কাঁথামুড়ি-টি-পটের সঙ্গে পেয়ালা-টেয়ালা ইত্যাদি সাজ-সরঞ্জাম সমেত ট্রে-টা শিশির নিজেই নিয়ে এসেছে বয়ে। ট্রের ওপর এখনওনা-খোলা চোখ জুড়োনো সিগারেটের টিনটা সাজিয়ে আনতেও ভোলেনি।

    শিশির তার ট্রে-টা একটা টিপয়ে রাখতে-না-রাখতে আমি আর-একটা ট্রে নিয়ে এসে হাজির হয়েছি। সিগারেটের টিনটা না আমার ট্রের প্লেটগুলোর দিকে চোখ দেবেন ঠিক করতে না পেরে, ঘনাদার তখন প্রায় ট্যারা হবার অবস্থা।

    আমি আমার ট্রে থেকে জোড়া ফিশরোলের প্লেটটা তাঁর হাতে তুলে দিয়ে সে সংকট কিছুটা মোচন করেছি।

    তারপর আমরা নিজেরাও এক একটা প্লেট নিয়ে যথাস্থানে বসবার পর বর-টর দেবার আগে দেবতাদের মতো একটা প্রসন্ন হাসি মুখে মাখিয়ে ঘনাদা তাঁর প্লেট থেকে একটি ফিশরোল সবে তুলতে যাচ্ছেন, এমন সময়ে

    এমন সময়েই সেই তাজ্জব কাণ্ড!

    হঠাৎ যেন বাইরের বারান্দায় শুনলাম—অয়মহম্ ভোঃ!

    তারপরের মুহূর্তেই তিষ্ঠ শুনে মুখ ফেরবার আগেই ঘনাদার দিকে চেয়ে চক্ষুস্থির।

    ঘনাদার প্লেটের ফিশরোল তাঁর হাতে নেই, মুখে নেই, তাঁর ঠিক নাকের ওপরে ঝুলছে!

    এমন ব্যাপারে একেবারে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে কয়েক সেকেন্ডের জন্য যা হলাম তাকে চিত্রার্পিত বলে বর্ণনা করা খুব ভুল হয় কি!

    এ ঝুলন্ত ফিশরোলের ধাক্কা সামলাতে না সামলাতে আসরঘরের মধ্যে এক নাটকীয় প্রবেশে আমাদের চটকা ভাঙল।

    ঘরের মধ্যে যিনি তখন এসে দাঁড়িয়েছেন, তাঁকে বর্ণনা করব কেমন করে সেইটাই ভেবে পাচ্ছি না।

    জটাজুটধারী বলে শুরু করে ওখানেই থামতে হয়। তারপর সন্ন্যাসী আর বলা চলে না। কারণ মাথায় বোটানিকসের বটের ঝুরির মতো জটা আর মুখে একমুখ গোঁফ দাড়ির কঙ্গো থুড়ি জাঈর-এর জঙ্গল থাকলেও তারপর কৌপিন বাঘছাল কমণ্ডলু চিমটে-টিমটে কিছু নেই। নেহাত সাধারণ পাঞ্জাবি পাজামা। তবে ছোপটা একটু অবশ্য গেরুয়া।

    এ হেন মূর্তি ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে হাত তুলে যেন ঘনাদাকেই বিশেষভাবে নির্দেশ করে বজ্রস্বরে ভর্ৎসনা করলেন, লজ্জা করে না তোমাদের! অতিথি যখন দ্বারে সমাগত তখন তাঁর পরিচর্যার ব্যবস্থা না করে নিজেদের ভোজনবিলাসে মত্ত হয়েছ?

    কথাগুলোয় সংস্কৃতের ঝংকার থাকলেও এবার ভাষাটা মোটামুটি বাংলা। কিন্তু বাংলা বা সংস্কৃত যা-ই হোক ওই ভসনায় আমাদের অবস্থাটা খুব সুবিধের হবার তো কথা নয়।

    ঘনাদার দিকে একবার চেয়ে তাঁর অবস্থাটাও বুঝে নিতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু তার আর ফুরসত মিলল না।

    আধা-সন্ন্যাসী আগন্তুকের বজ্রস্বর আবার শোনা গেল আর সেই সঙ্গে আর-এক ভোজবাজি!

    যে লোভে অতিথির অমর্যাদা করেছ, দুর্বাসার আধুনিক সংস্করণ তখন গর্জন করছেন, সেই লোভের গ্রাসেই তা হলে ছাই পড়ুক!

    এই অভিশাপবাণী মুখ থেকে খসতে না খসতে ঘনাদার নাকের সামনে ঝুলন্ত ফিশরোল যেন লাফ দিয়ে ছাদে গিয়ে ঠেকে ছত্রাকার হয়ে খুঁড়িয়ে পড়ল চারদিকে।

    আমরা তখন হাঁ হাঁ করে সবাই দাঁড়িয়ে উঠেছি।

    আমাদের শোক তখন ছাদে ঠেকে ছত্রাকার ফিশরোলের জন্য নয়। আমাদের সব উদ্বেগ ঘনাদার মুখের দিকে চেয়ে।

    ব্যাপারটা কেমন মাত্রাছাড়া হয়ে গেল কি?

    কী করবেন এবার ঘনাদা?

    এসপার ওসপার একটা কিছু করে ফেলবেন নাকি? আরাম-কেদারা ছেড়ে উঠেই চলে যাবেন নাকি গটগটিয়ে তাঁর টঙের ঘরে? না, দুর্বাসার নতুন এডিশনকে পালটা গর্জন শুনিয়ে ছাড়বেন?

    ভুল, সব অনুমান আমাদের ভুল।

    ঘনাদাকে অত সহজে যদি চেনা যেত তা হলে আমরা এমন কৃতাঞ্জলি হয়ে তাঁর কাছে নাড়া বেঁধে থাকি!

    দ্বিতীয় দুর্বাসার প্রতি গর্জন বা নিজের টঙের ঘরে সটান প্রস্থান, কিছুই করলেন না ঘনাদা।

    তার বদলে আমাদের সকলকে একেবারে থ করে নিজে থেকেই দাঁড়িয়ে উঠে ঘনাদার সে কী বিনয়ের ভঙ্গি!

    ননুক্রিয়াতামাসনপরিগ্রহঃ। অবহিতোহস্মি!

    কিন্তু এ সব আবোলতাবোল বলছেন কী ঘনাদা! হঠাৎ নাকের ডগা থেকে ফিশরোল উধাও হয়ে গেছে বলে মাথাটাই বিগড়ে গেল নাকি!

    আমরা যখন ভ্যাবাচাকা মেরে দাঁড়িয়ে, ঘনাদা তারই মধ্যে নিজের কেদারাই ঠেলে দিয়েছেন দু নম্বর দুর্বাসার দিকে।

    দুর্বাসা ঠাকুরও কি একটু দিশাহারা!

    তাঁর দাড়ি গোঁফের জঙ্গল ভেদ করে ভাবটা ঠিক বোঝা গেল না। তবে ঘনাদার বিনয়েই বোধহয় রাগটা তখন তাঁর প্রায় জল হয়ে গেছে মনে হল। ঘনাদার এগিয়ে দেওয়া কেদারাটা না নিয়ে তিনি নিজেই কোণ থেকে আর-একটা চেয়ার টেনে বসে একটু প্রসন্ন কণ্ঠেই বললেন, যাক আমি প্রীত হয়েছি তোমার বিনয়ে আর দেবভাষার প্রয়োগে! আমার ক্রোধ আমি সংবরণ করলাম।

    আমাদের ভাগ্য ভাল যে যত খটমটই হোক, দ্বিতীয় দুর্বাসার কথাটা এবার বাংলা বলেই বুঝলাম। কিন্তু দেবভাষার কথা কী বললেন উনি।

    দেবভাষা মানে তো সংস্কৃত। আবোলতাবোল নয়, ঘনাদা তা হলে সংস্কৃতই বলেছেন জবাবে!

    এবার দুর্বাসা দ্য সেকেন্ডের সঙ্গে আলাপে তিনি যদি সেই সংস্কৃত চালান তা হলেই তো গেছি!

    না। সে বিপদটা কলির দুর্বাসার একটা চালের দরুনই কাটল বলা যায়। দুর্বাসা ঠাকুর শুধু ক্রোধ সংবরণ করেই তখন ক্ষান্ত হলেন না, সেই সঙ্গে ক্ষমায় উদার হয়ে জিজ্ঞাসা করেন, তোমাদের মধ্যে ঘনশ্যাম কার নাম?

    প্রশ্নটা শুনেই চমকে উঠেছিলাম। যত উদার ভাবেই করা হোক, চালটা নেহাত কাঁচা হয়ে গেল না? বাহাত্তর নম্বরে ঢুকে ঘনশ্যাম কার নাম ঘনাদাকেই জিজ্ঞাসা করা!

    এই এক বেয়াড়া প্রশ্নেই অন্যদিন হলে তো সব বানচাল হয়ে যেত।

    আজ কিন্তু যাকে বলে অঘটন ঘটার দিন। শুধু ফিশরোল-এর বেলা নয়, সব কিছুতেই যেন ভোজবাজি হয়ে যাচ্ছে! কাঁচা চালেই কাজ হয়ে গেল।

    অমন একটা প্রশ্নেও ঘনাদা চটলেন না, বরং বিনয়ে গলে গিয়ে সংস্কৃত থেকে সরল না হোক, কাঁকরবালি সমেত অন্তত বোধগম্য বাংলায় নেমে এলেন।

    আজ্ঞে, অধীনের নামই ঘনশ্যাম! ঘনাদার মুখে লজ্জিত স্বীকৃতি শুনে আমরাই তাজ্জব, আপনার প্রতি অমনোযোগের অপরাধে মার্জনা ভিক্ষা করছি। সত্যিই আপনাকে প্রথমে চিনতে পারিনি।

    প্রথমে চিনতে পারোনি! দুর্বাসা ঠাকুরের গলা যেন একটু কাঁপা, এখন পেরেছ নাকি?

    না। কুণ্ঠিতভাবে জানালেন ঘনাদা, তবে গোড়ায় আপনাকে সেই মালাঞ্জা এমপালে বলে ভুল করেছিলাম।

    মা-লা-ঞ্জা এম-পা-লে! দুর্বাসা মুনির গলার স্বরটা এবার দাড়ি গোঁফের জঙ্গলেই যেন প্রায় চাপা পড়ে গেল, আমাকে ওই—ওই—তাই ভেবেছিলে!

    আজ্ঞে হ্যাঁ, ঘনাদা নিজের ভুলের জন্য যেন অত্যন্ত অনুতপ্ত হয়ে বললেন, সেই যে সাংকুর নদীর ধারে এমবুজি মাঈ থেকে চোরাই হিরে পাচার করার জন্য আমায় ম্যাজিকের ধোঁকা দিয়ে এপুলু-তে নিয়ে গিয়ে মিথ্যে খবরে ইতুরি-র গহন বনে পাঠিয়ে জংলিদের ঝোলানো ফাঁদে ফাঁসিতে লটকে মারবার চেষ্টা করেছিল, আর যার মতলব হাসিল হলে পৃথিবী আরও বিরাট হয়ে দুনিয়ার কী দশা হত জানি না, সেই মালাঞ্জা এমপালে ভেবেই আপনাকে একটু তাচ্ছিল্য করেছিলাম গোড়ায়। তবে— অত্যন্ত বিশ্রী কষ্টকর স্মৃতি মনে না আনবার জন্যই ঘনাদা যেন চেপে গিয়ে দুঃখের নিশ্বাস ফেলে বললেন, থাক সে কথা!

    থাকবে মানে! আমরা অস্থির হয়ে উঠলাম। বলেন কী ঘনাদা! চোরাই হিরে ম্যাজিকে পাচার করার ব্যাপারে ইতুরি না ফিতুরির জঙ্গলে ঘনাদা-ঝোলানো-ফাঁস থেকে ফাঁসি যেতে যেতে বাঁচলেন, আর দুনিয়া তাতে আরও বিরাট হতে না পেরে কী দশা থেকে বাঁচল কেউ জানে না—এতদূর শুনে আমরা ঘনাদাকে থাক বলে থামতে দেব! কিন্তু আমাদের মুখ খুলতে হল না।

    না, না, থাকবে কেন?আমাদের আগে দুর্বাসাই নাছোড়বান্দা হলেন, মনে যখন হয়েছে তখন বলেই ফেলল। বদখত কিছু হলে সে স্মৃতি পেটে রাখতে নেই, বুঝেছ। কিনা? তাতে আবার বদহজম হয়।

    না, বদহজম আর কী হবে? ঘনাদা একটু যেন হতাশ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, পেটেই যখন কিছু পড়েনি।

    তাও তো বটে। তাও তো বটে! দুর্বাসা ঠাকুরই এবার ব্যতিব্যস্ত, আমি আবার অভিশাপটা ভুল করে দিয়ে ফেলে খাওয়াটাই নষ্ট করে দিয়েছি। তা তোমরা—

    দুর্বাসা আমাদের দিকে ফিরলেন। ফেরার অবশ্য দরকার ছিল না। ঘনাদার মুখের খেদটুকু শেষ হতে না হতে শিশির-শিবু দুজনেই ছুটে নেমে গেছে নীচে।

    দুর্বাসা যখন মুখ ফেরালেন তখন দুজনেই ফিরে দরজা পেরিয়ে ঘরের ভেতরে এসে হাজির দুটি প্রমাণ সাইজের প্লেট হাতে নিয়ে।

    তার একটা ঘনাদার আর অন্যটি দুর্বাসার হাতে দিতে দুর্বাসাই অত্যন্ত বিব্রত। আমি মানে-আমি প্লেটটার জোড়া ফিশরোলের দিকে চেয়ে তাঁর যেন করুণ আর্তনাদ—আমি তো কী বলে—

    তা দুর্বাসার আর্তনাদ নেহাতই অকারণ নয়। মাথার জটা ছাড়া দাড়ি গোঁফের যা জঙ্গল তিনি মুখে গজিয়েছেন তার ভেতর দিয়ে কিছু চালান করাই তো সমস্যা।

    ঘনাদা নিজের প্লেটটির প্রতি যথাবিহিত মনোযোগ দিতে দিতেই আমাদের সেজন্যে ভর্ৎসনা করলেন, কী তোমাদের আক্কেল! ওঁকে ওই সব খাবার দিয়ে অপমান করছ!

    অপমান! আমরা সত্যিই সন্ত্রস্ত—অপমান কী করলাম?

    অপমান নয়? ঘনাদা বেশ ধীরে সস্তে তাঁর ফিশরোল দটির সদগতি করে চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে বললেন, ওঁকে কিছু খেতে বলাই তো অপমান। তোমার আমার মতো গাণ্ডেপিণ্ডে খেলে ওঁর এমন যোগশক্তি হয়, না ওই জটাজুটের ভার উনি বইতে পারেন? যিনি স্রেফ হাওয়ার সঙ্গে হয়তো দু-ফোঁটার বেশি জল মেশান না, তাঁকে দিয়েছ কিনা ফিশরোল! ছি ছি তোমাদের লজ্জা হওয়া উচিত।

    আমাদের লজ্জা থেকে বাঁচাতে ঘনাদা এখন চায়ের পেয়ালা রেখে দুর্বাসা দ্য সেকেন্ডের কাছেই গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। অত্যন্ত সম্রমের সঙ্গে ফিশরোলের প্লেটটা দুর্বাসার কোল থেকে সরিয়ে নিজের আসনে এসে বসতে বসতে বললেন, চোখের ওপর জিনিসটা নষ্ট হতে দিতে খারাপ লাগে—তাই, নইলে ওঁর সামনে কিছু মুখে দিতেই সংকোচ হয়।

    ঘনাদার ডান হাতের কাজ তখন আবার শুরু হয়ে গেছে। তা দেখে আমরা যদি অবাক হওয়ার সঙ্গে একটু মজা পেয়ে থাকি, আমাদের দুর্বাসা ঠাকুরের চেহারাটা যেন হতভম্ব হওয়ার চেয়ে বেশি কিছু মনে হল। দাড়ি গোঁফের অরণ্যের ভেতর দিয়ে তাঁর দুচোখের দৃষ্টির প্রায় জ্বলন্ত ভাবটাও খেতে দেওয়ার অপমান থেকে বাঁচাবার জন্য ঘনাদার প্রতি কৃতজ্ঞতা কি না ঠিক বোঝা গেল না।

    ঘনাদা ইতিমধ্যে অবশ্য আমাদের সকলের হয়ে তাঁর প্রায়শ্চিত্তটা সেরে ফেলে পেয়ালায় নতুন করে চা ঢেলেছেন। শিশিরও তার যথাকৰ্তব্য ভোলেনি।

    শিশিরের এগিয়ে ও জ্বালিয়ে দেওয়া সে সিগারেট থেকে বার করা ধোঁয়ার বহর দেখে একটু ভরসা পেয়ে কেমন করে আবার আসল কথাটা তুলব ভাবছি, এমন সময় ঘনাদা নিজে থেকেই সদয় হলেন।

    আমাদের যোগীবর দুর্বাসার কাছ থেকেই যেন অনুমতি চেয়ে বললেন, পেটের কথা চেপে রাখতে নেই বলছিলেন না! আপনার উপদেশই মানতে চাই। শুধু ভাবছি এ সব বিশ্রী কথা আপনার সামনে বলা কি ঠিক হবে?

    খুব হবে! খুব হবে! দুর্বাসার হয়ে আমরা এবার সমস্বরে উৎসাহ দিলাম।

    আমাদের উৎসাহটুকুর জন্যই ঘনাদা যেন অপেক্ষা করছিলেন।

    এর পর আর তাঁকে উসকে দেবার দরকার হল না। নিজের স্টিমেই বলে চললেন, আসল কথা কী, জানো? ওঁকে মালাঞ্জা এমপালে ভাবার জন্যই এখন লজ্জা হচ্ছে। কোথায় উনি আর কোথায় সেই শয়তানের শিরোমণি। চেহারায় মিল আছে ঠিকই। মালাঞ্জা অবশ্য আরও ফরসা ছিল, আরও মোটাসোটা জোয়ান চেহারার। তবে ওঁকে দেখে ভেবেছিলাম নিজের শয়তানির সাজাতেই বুঝি মালাঞ্জা এমন শুটকো মর্কট মার্কা হয়ে গেছে।

    ঘনাদা গলা খাঁকরি দেবার জন্য একটু থামলেন। আমাদের তখন যোগীবর দুর্বাসার দিকে একবার তাকাবারও সাহস নেই।

    মালাঞ্জার ম্যাজিকও ছিল উঁচু দরের, ঘনাদা আবার শুরু করে আমাদের যেন বাঁচালেন, প্রথমে ম্যাজিক দেখিয়েই সে আমায় মোহিত করে। একটা মানুষের খোঁজে প্রায় অর্ধেক পৃথিবী ঘুরে তখন এমবুজি মাঈ শহরে এসে কদিনের জন্য আছি। এমবুজি মাঈ শহর হিসেবে এমন কিছুই নয়, কিন্তু সেখান থেকে মাসে দুবার নিতান্ত ছোট দু এঞ্জিনের এমন একটা প্লেন ছাড়ে যা হুমকি দিয়ে একবার হাইজ্যাক করতে পারলে, মঙ্গলগ্রহে না হোক, চাঁদে অমন পাঁচটা রকেট নামানোর খরচ উঠে যায়! ঘনাদা দুর্বাসাকে সবিনয়ে জিজ্ঞাসা করলেন হঠাৎ। এমবুজি মাঈ-এর কথা আপনি তো সবই জানেন!

    আমি…মানে…আমি—দুর্বাসার অবস্থা যেন একটু কাহিল বলে মনে হল।

    আপনার তত সশরীরে যাবারও দরকার নেই। ঘনাদা ভক্তিভরে বললেন, যোগবলেই সব জানতে পারেন। তার সময় পাননি বুঝি? আমিই তা হলে বলে দিই, এমবুজি মাঈ আফ্রিকার পশ্চিম প্রান্তের এক রাজ্যের এমন এক শহর যার চারিধারের মাটি আঁচড়ালেও হিরে পাওয়া যায়। পৃথিবীতে শখ করে পরবার দামি হিরের অন্য অনেক বড় খনি আছে, কিন্তু যা দিয়ে সত্যিকার কাজ হয় শিল্পের দিক দিয়ে সে রকম দামি হিরের অদ্বিতীয় আকর হল ওই এমবুজি মাঈ শহরের চারদিকে কাসাই প্রদেশের লাল মাটি।

    সেখানে একটি মাত্র সরকারি কোম্পানি মিবাই হিরে তোলবার অধিকারী। তারা প্রতিদিন যে পরিমাণ হিরে তোলে তার দাম কম পক্ষে দশ লক্ষ টাকা।

    এ এমবুজি মাঈ শহর আর কাসাই প্রদেশ হল জানতি পারো নার জ-দেওয়া জাঈর রাজ্যের অংশ। এ জাঈর রাজ্যের আগের নাম ছিল কঙ্গো। ১৯৬০ সালে এ রাজ্য স্বাধীন হবার পর নাম বদলে জাঈর রাখা হয়।

    হিরের খোঁজে এমবুজি মাঈ শহরে আসিনি। এসেছি এমন একজনের খোঁজে দুনিয়ার সব হিরের চেয়ে যার দাম তখন আমার কাছে বেশি।

    তার খোঁজ শুরু করেছিলাম উত্তর আমেরিকায় পৃথিবীর এক গভীরতম গিরিখাতে।

    তার মানে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে! গৌর বিদ্যে জাহির করবার সুযোগটা ছাড়তে পারলে না।

    না কানমলাও খেল তৎক্ষণাৎগ্র্যান্ড ক্যানিয়ন-এর চেয়ে অন্তত আড়াই হাজার ফুট বেশি গভীর গিরিখাত ওই আমেরিকাতেই আছে। ঘনাদা অনুকম্পাভরে জ্ঞান দিলেন, আইডাহো আর ওরিগন স্টেট যা প্রায় দুশো মাইল ধরে ভাগ করে রেখেছে সেই স্নেক নদী-ই কমপক্ষে বিশ লক্ষ বছর ধরে পাহাড় কেটে এই গিরিখাত তৈরি করেছে। নাম তার হেলস ক্যানিয়ন।

    নামে হেলস ক্যানিয়ন, অর্থাৎ নরকের নালা, কাজেও তাই। তা দিয়ে স্নেক অর্থাৎ যে সাপনদী বন্যাবেগে দক্ষিণ থেকে বয়ে যায় নামের মর্যাদা সেও রেখেছে।

    লিকলিকে সাপের মতো আঁকাবাঁকাই তার গতি নয়, এক-এক জায়গায় দারুণ স্রোতের বেগে সংকীর্ণ গিরিখাত তোলপাড় করা ঘূর্ণিতে জল যেন বিষের ফেনায় সাদা করে তুলে তার প্রচণ্ড ঝাপটা দিচ্ছে ছোবলের মতো।

    এই দুরন্ত স্নেক দিয়ে জেট বোটে উজানে যেতে যেতে বোটের ক্যাপ্টেন ডিন ম্যাকের কাছ থেকে ড. লেভিনের কথা জানবার চেষ্টা করছিলাম।

    এত জায়গা আর এত লোক থাকতে একটা প্রায় অজানা বিপজ্জনক গিরিখাতে নগণ্য একজন জেট বোটের ক্যাপ্টেনের কাছে ড. লেভিনের খোঁজ করতে আসা একটু আহামুকি মনে হতে পারে, কিন্তু খোঁজখবর নেবার আর কোথাও কিছু তখন বাকি নেই বলেই শেষ এই হতাশ চেষ্টা। ড. লেভিন সম্পূর্ণ নিরুদ্দেশ হয়ে যাবার আগে এই হেলস ক্যানিয়নেই এসেছিলেন। এসেছিলেন নাকি এখানকার গিরিখাতের একদিকের পাহাড়ের গায়ে পাঁচ হাজার বছর আগেকার কোনও অজানা আদিবাসীদের খোদাই করা সব লেখা আর ছবি দেখার জন্য।

    তিনি কি তা হলে এই দুরন্ত সাপ-নদীর স্রোতে কোথাও ড়ুবে-টুবে গেছেন নাকি? যা ভয়ংকর গিরিখাত আর জলের তোড় তাতে সেরকম কিছু ঘটা অসম্ভব নয় মোটেই।

    কিন্তু সেরকম কিছু যে হয়নি তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ রয়েছে। হেলস ক্যানিয়নের অভিযান থেকে ফেরার পর তাঁকে স্বচক্ষে সেখান থেকে প্লেনে উঠতে দেখেছে এমন সাক্ষীর অভাব নেই। তা ছাড়া ড, লেভিনের নিজের ল্যাবরেটরিতে রেখে যাওয়া তাঁর লেখা চিরকুটটাই যে এ সব কল্পনার বিরুদ্ধে অকাট্য প্রমাণ।

    ড. লেভিন তাঁর ল্যাবরেটরিতে ঢুকলেই-চোখে-পড়ে এমন ভাবে একটা কাগজ এঁটে রেখে গিয়েছিলেন। সে কাগজে তাঁর নিজের হাতে যা লেখা তার মর্ম হল— আমি স্বেচ্ছায় নিরুদ্দেশ হচ্ছি। কেউ যেন আমার খোঁজ না করে।

    কিন্তু কেউ যেন খোঁজ না করে বলে লিখে গেলেই কি ড. লেভিনের মতো মানুষের সম্বন্ধে তাঁর নিজের দেশ ও পৃথিবী হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারে! খোঁজ তাই তখন থেকেই সমানে চলছে। শুধু এত দিনের এত চেষ্টা সত্ত্বেও ধরে এগোবার মতো একটা খেই-ও কোথাও পাওয়া যায়নি।

    ড. লেভিনের মতো মানুষের নিরুদ্দেশ হতে চাওয়াটাই যে অবিশ্বাস্য। জৈব রসায়নের অসামান্য গবেষক হিসেবে যাঁর নাম নোবেল প্রাইজ-এর জন্য বহু জায়গা থেকে প্রস্তাবিত হয়েছে, অত্যন্ত আদর্শবাদী ও সফল বিজ্ঞানসাধক হিসেবে যাঁর জীবনে কোনও দিকে কোনও দুঃখের কিছু নেই, তিনি হঠাৎ স্বেচ্ছায় নিরুদ্দেশ হতে যাবেন কেন? আর তা হয়ে থাকলে কোথায় বা গিয়ে লুকিয়ে থাকতে পারেন দুনিয়ার সেরা সন্ধানীদের চোখ এড়িয়ে? রহস্যটা সত্যিই যেন একেবারে আজগুবি। – আমেরিকার এফ বি আই-ও কোন কিনারা করতে পারেনি বুঝি? চোখেমুখে মুগ্ধ বিস্ময় ফুটিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম আমি।

    কই আর পারল! ঘনাদা একটু করুণা ফোটালেন দৃষ্টিতে।

    শিবু তোয়াজটা বাড়াবার জন্য একটু উলটো গাইল, জেমস বন্ডকে তো ডাকলে পারত!

    আরে তা কি আর ডাকেনি! শিশির ধমক দিল শিবুকে, তাতে কিছু হয়নি বলেই না শেষ পর্যন্ত ঘনাদার শরণ নিয়েছে! না নিয়ে যাবে কোথায়? ছাগল দিয়ে কি যব মাড়ানো চলে!

    ঠিক বলেছ! শিশিরকে গলা ছেড়ে সমর্থন করবার এমন সুযোগ আর ছাড়। বললাম, কীসে আর কীসে! ধানে আর শিষে! আরে জেমস বন্ড তো সেদিনের মাতব্বর। তার জন্ম হবার অন্তত বিশ বছর আগে ঘনাদা মশা মেরে নুড়ি তুলেছেন সে হুঁশ কারও আছে!

    যেতে দাও, যেতে দাও ও সব কথা! ঘনাদা উদার মহত্ত্বে নিজের প্রসঙ্গ চাপা দিলেন, ব্যাপারটা হাতে নেবার পর থেকে আমিও কোথাও ছিটেফোঁটা একটা খেইও পাইনি। হতাশ হয়ে তাই তাঁর শেষ অভিযানের জায়গা সেই হেলস ক্যানিয়নে গেছলাম হার স্বীকার করার আগে আর-একটিবার অপ্রত্যাশিত কিছু সূত্র সেখানে মেলে কি না দেখতে।

    যাওয়াই পণ্ডশ্রম মনে হয়েছে। স্নেক নদী দিয়ে জেট বোটে পাড়ি দেওয়ার উত্তেজনা মিলেছে যথেষ্ট, কিন্তু আসল লাভ কিছুই হয়নি। জেট বোটের ক্যাপ্টেন ডিন ম্যাকেকে নানারকমে জেরা করেও কোনও ফল না পেয়ে নিজের বুদ্ধির ওপরই অবিশ্বাস এসেছে। মনে হয়েছে আমার এ চেষ্টাটাই পাগলামি। এত দিকের এত রকম সন্ধানে যে রহস্যের এতটুকু কিনারা হয়নি, তার খেই মিলবে ডা. লেভিনের মোটমাট একদিনের একটা বোটের পাড়িতে?

    তাই কিন্তু মিলেছে আশাতীতভাবে অকস্মাৎ।

    গিরিখাতের ধারের পাহাড়ের গায়ে পাঁচ হাজার বছর আগেকার লুপ্ত কোনও জাতির খোদাই-এর কাজ দেখাতে দেখাতে ম্যাকে হঠাৎ বলেছে, আপনাদের ডা. লেভিন কিন্তু একটু খ্যাপাটে ছিলেন।

    ম্যাকের এ কথায় বিশেষ কান দিইনি। ড. লেভিনের মতো মানুষ সাধারণের কাছে। একটু অদ্ভুত মনে হবেন এতে আর আশ্চর্য হবার কী আছে?

    কিন্তু ম্যাকের পরের কথায় একটু চমকে উঠে কানটা খাড়া করতে হয়েছে।

    ড. লেভিন এইসব খোদাই দেখতে দেখতে কী বলেছিলেন জানেন? ম্যাকে তখন আমায় শোনাচ্ছে—বলেছিলেন যে পৃথিবীটাকে আরও বড় করতে হবে, অনেক বড়। শুনে আমার তো তখন হাসি পাচ্ছে। পৃথিবী আবার বড় করবে কী? পৃথিবী কি বেলুন যে ফুঁ দিয়ে ফুলিয়ে বড় করবে! তাঁর লোকটা কিন্তু খোসামোদ করে তাঁকে যেন তাতিয়ে বলল—একা আপনিই তা পারেন হুজুর। এই পাহাড়ের খোদাইকার জাতের মতো কাউকে তা হলে আর দুনিয়া থেকে মুছে যেতে হবে না।

    ম্যাকের মুখে ড. লেভিনের পৃথিবী বড় করার কথা শুনেই তখন আমার মাথার ভেতর ভাবনার চাকা ঘুরতে ঘুরতে শুরু করেছে। তার ওপর আর একটা প্রশ্নও খোঁচা দিচ্ছে অবাক করে। ড. লেভিনের লোকটা আবার কে? তাঁর সঙ্গে কেউ কি আরও ছিল?

    সেই কথাই জিজ্ঞাসা করলাম ম্যাকেকে। ম্যাকের কাছে যা জানলাম তা এমন কিছু অদ্ভুত নয়। ড. লেভিনের সঙ্গে তাঁর একজন অনুচর গোছের ছিল। অমন অনুচর থাকাই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু ড. লেভিনের অন্তর্ধান সম্বন্ধে যা যা বিবরণ আমায় দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে এ রকম অনুচরের বক্তব্যও কি থাকা উচিত ছিল না? যত তুচ্ছই হোক এ বিষয়ে কারও কথাই তো উপেক্ষা করবার নয়।

    আগেকার সন্ধানের এ-ত্রুটি শোধরাতে হবে ঠিক করে আসল কাজের জন্য আইডাহোর রাজধানী বয়েস-এ ড. লেভিনের নিজের ল্যাবরেটরিতেই গিয়ে হাজির হলাম। তারপর তাঁর সহকারীদের সাহায্যে তন্নতন্ন করে ড. লেভিন সম্প্রতি যে-গবেষণার কাজে মেতে ছিলেন তার সন্ধান নিতে কিছু বাকি রাখলাম না।

    যা আঁচ করেছিলাম সে রকম কিছু সত্যিই তার মধ্যে পেলাম। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার। তাঁর সঙ্গে যে অনুচর হেলস ক্যানিয়ন-এ স্নেক নদীর পাড়িতে গিয়েছিল, তার সম্বন্ধে কিছুই জানা গেল না। লোকটার কোনও পাত্তাই নেই। ড. লেভিন একা তাঁর যে বাসায় থাকতেন সেখানে তাঁর নিয়মিত জ্যানিটরের বদলি লোকটা নাকি কিছুদিন মাত্র কাজ করেছিল। নেহাত ক-দিনের বদলি বলে তার সম্বন্ধে খোঁজখবরের কথা কেউ ভাবেনি।

    ড. লেভিনের আসল জ্যানিটরও লোকটাও সম্বন্ধে কিছুই বলতে পারল না। সে ক-দিনের ছুটিতে যাবার সময় তাদের ইউনিয়ন থেকেই চিঠি নিয়ে লোকটা নাকি বদলিতে এসেছিল। জ্যানিটরের কাছে অনেক কষ্টে লোকটার নামটা শুধু উদ্ধার করা। গেল।

    সে নামটা বেশ অবাক করবার মতো। নাম হল মালাঞ্জা এমপালে।

    নাম শুনেই সন্দিগ্ধ ভাবে জ্যানিটরকে জিজ্ঞাস করেছিলাম, নামটা ঠিক তোমার মনে আছে তো?

    আজ্ঞে হ্যাঁ, বলেছিল জ্যানিটর, নামটা অদ্ভুত বলেই মনে আছে। আমাদের এ দিকে আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ান, কাফ্রি ও কিছু কিছু এস্কিমোও আছে। তাদের নানা রকম মজার নামের ভেতর এরকম বেয়াড়া নাম কখনও পাইনি।

    মালাঞ্জা এমপালে যার নাম বলছ, সে লোকটা কি চেহারায় কাফ্রি, আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ান বা এস্কিমোদের মতো? এবার জিজ্ঞাসা করেছিলাম।

    আজ্ঞে না, বলেছিল জ্যানিটর, নামটা উদ্ভুট্টে হলেও চেহারায় আমাদেরই মতো!

    নাম মালাঞ্জা এমপালে, অথচ চেহারায় ইউরোপীয় এই রহস্যটা মাথায় নিয়ে সেখান থেকে চলে এসেছিলাম।

    তারপর ড. লেভিনের ল্যাবরেটরির কাগজপত্র ঘেঁটে যা পেয়েছি আর মালাঞ্জা এমপালে নাম থেকে যা হদিস মিলেছে তাই সম্বল করে বারো আনা পৃথিবী ঘুরে একবার ফিলিপাইনস আর তারপর উত্তর বর্মা হয়ে সোজা জাঈর-এ গিয়ে রাজধানী কিনশাসা, আর কানাঙ্গা হয়ে এমবুজি মাঈতে এসে উঠলাম।

    দুই-এ দুই-এ চার জুড়তে ভুল যে আমার হয়নি দুদিন ওই ছোট শহরে একটু শোরগোল তোলবার পরই তার অকাট্য প্রমাণ পাওয়া গেল।

    ওখানকার প্রধান মাইনিং কোম্পানির ম্যানেজারের সুপারিশেই হোটেলের বদলে সাংকুরু নদীর ধারে নির্জন একটা ছোট বাংলো বাড়িতে থাকবার সুবিধে পেয়েছিলাম। তিন দিনের দিন সন্ধ্যার পর সেই বাংলোতেই এক দর্শনপ্রার্থী এসে হাজির।

    কেউ একজন আসবে বলেই অনুমান করেছিলাম। কিন্তু আমার চাকরের আনা কার্ডে যে নামটা ছাপানো সেটা আমার কাছেও অপ্রত্যাশিত।

    নামটা মালাঞ্জা এমপালে!

    চাকরকে তক্ষুনি রাত্রের মতো ছুটি দিয়ে আগন্তুককে বসবার ঘরে ডাকলাম।

    কার্ডের নামটা পড়ে যেমন মানুষটাকে স্বচক্ষে দেখে তেমনই অবাক হতে হল।

    আইডাহোর রাজধানীতে ড. লেভিনের বাসার জ্যানিটরের কাছে যার বর্ণনা শুনেছিলাম, ইউরোপিয়ানদের মতো ফরসা চেহারা। আর এ লোকটি পোশাক-আশাক থেকে চেহারাতেও ঝামা-ইটের রং-এর বান্টু।

    কথাবার্তা আর উচ্চারণে কিন্তু নির্ভুল ফ্লেমিশ।

    সেই ভাষাতেই প্রথম ঢুকেই জিজ্ঞাসা করলে, খুব অবাক হয়েছেন, না ঘঁসিয়ে দাস?

    তা একটু হয়েছি! যেন লজ্জার সঙ্গে স্বীকার করলাম।

    কীসে অবাক হয়েছেন? আমার ঘাড়ের ওপর সচাপটে একটা হাতের ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন এমপালে, এত তাড়াতাড়ি হাজির হয়েছি বলে?

    না। কাঁধ থেকে তার হাতের চাপটা সরাবার যেন বৃথা চেষ্টা করে একটু অস্বস্তি দেখিয়ে বললাম, আপনাকে খোঁজার জন্য আমার যত গরজ, আপনার আমাকে। খোঁজার গরজও যে তার চেয়ে কম নয় তা জানতাম। তবে নিজেই প্রথমে দর্শন দেবেন এটা আশা করতে পারিনি, আর গায়ের রংটা আইডাহো থেকে জাঈর-এ এসেই রোদে পুড়ে এতটা পালটাবে সেটা ধারণার মধ্যে ছিল না।

    যা দরকারি তা অন্যকে দিয়ে আমি করাই না।মালাঞ্জা এমপালে আমার এক কাঁধ ছেড়ে আর কাঁধে চাপ দিয়ে বললেন, আর এ-ই আমার আসল রং। আইডাহোতে যা লোকে দেখেছে সে রং মেক-আপ করা নকল। কিন্তু আইডাহো থেকে আপনি এই জাঈর-এ আমার খোঁজে এলেন কী করে?

    সামান্য একটু বুদ্ধি তার জন্য খাটাতে হয়েছে। আবার যেন এমপালের হাতের চাপটা সরাতে গিয়ে হার মেনে কাতর গলায় বললাম, তা ছাড়া আপনি নিজেই একটা সোজা স্পষ্ট খেই রেখে এসেছিলেন কিনা!

    আমি সোজা স্পষ্ট খেই রেখে এসেছিলাম? সত্যিই চমকে উঠে কাঁধের ওপর চাপ দেওয়া ছেড়ে আমার নড়া ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বললে, কী খেই?

    আজ্ঞে, আপনার নামটা! গলাটা যেন যন্ত্রণায় নাড়তে নাড়তে বললাম।

    আমার নামটা! আর ভদ্রতার মুখোশ না রাখতে পেরে এমপালে হিংস্র গলায় জিজ্ঞাসা করলে, ওই নাম থেকে তুই এখানে আমার খোঁজ করতে আসার হদিস পেয়েছিস।

    শুধু আপনাকে নয়, আপনি যাকে সঙ্গে এনে লুকিয়ে রেখেছন সেই ড. লেভিনকে খোঁজ করার হদিসও ওই নামটা থেকে অনেকটা পেয়েছি! যেন ভয়ে ভয়ে বললাম, বাকিটা পেয়েছি ড. লেভিনের ল্যাবরেটরির কাজকর্ম দেখে আর হেলস ক্যানিয়নে তাঁর একটা বাতুল ইচ্ছের কথা জেনে।

    আমার কথায় হতভম্ব হয়ে এমপালে এবার বোধ হয় আমায় শারীরিক শাস্তি দিতে ভুলে গেল। শুধু দাঁত খিঁচিয়ে জানতে চাইলে, ও সব বাজে বাকতাল্লা ছেড়ে আমার নাম শুনে কী করে এখানে এলি তাই আগে বল।

    আজ্ঞে! এটা আপনার কাছে এত শক্ত মনে হচ্ছে কেন? একটু রেহাই পেয়ে যেন সভয়ে একটা দেয়ালের দিকে ঘেঁষে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম, দুনিয়ার সব জায়গায় নামের বিশেষত্ব আছে জানেন তো! আপনাদের এই অঞ্চলেরই পশ্চিম টাঙ্গানাইকা হ্রদের ওপরে টানজানিয়া কি দক্ষিণ পূর্বে জামবিয়ায় যে ধরনের নাম, জাঈর-এর নামের ধরন তা থেকে আলাদা। মালাঞ্জা এমপালে শুনেই তাই বুঝেছিলাম আসল বা ছদ্মনাম যা-ই হোক নামটা এই জাঈর অঞ্চলের। এ নাম যে নিয়েছে জাঈর-এর সঙ্গে তার সম্পর্ক যে নিশ্চিত আছে, ড. লেভিনের গবেষণার ধারা জেনে আর তাঁর পৃথিবী বড় করার ইচ্ছের কথা শুনে সে বিষয়ে সম্পূর্ণ নিঃসন্দেহ হই।

    আমার নাম শুনে জায়গাটা না হয় আঁচ করেছিস বুঝলাম, কিন্তু ড. লেভিনের পথিবী বড় করার ইচ্ছে থেকে নিশ্চিত বুঝলি আমরা জাঈর-এ এসেছি! চালাকি করবার আর জায়গা পাসনি! হতভম্ব থাকার দরুনই এবারও এমপালে আমায় মারধোর দেবার চেষ্টা করলে না।

    চালাকি করবার এই তো এখন জায়গা! একটু যেন সাহস পেয়েছি ভাব দেখিয়ে জোর গলায় বললাম, আর পৃথিবী বড় করার মতো আশ্চর্য চালাকি এই জাঈর ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও সম্ভব নয়। তাই জেনেই ড. লেভিনকে বোঝাতে এখানে তাঁর খোঁজে এসেছি।

    সে খোঁজ তা হলে তোকে ছাড়তে হবে। এবার আর দাঁত খিচুনি নয়, এমপালের গলায় যেন বজ্রের হুমকি, কোথায় তোর দেশ জানি না। তা যে চুলোতেই হোক, ঘরের ছেলে ভালয় ভালয় ঘরে ফিরে যা।

    আমার ঘর যে বড় দূর! যেন দুঃখের সঙ্গেই বললাম, সেই গোটা আফ্রিকা আর আরব সাগর পার হবার পরও যেতে হবে ভারতবর্ষের একেবারে পুব প্রান্তে। তার চেয়ে আপনার ঘরে ফিরে যাওয়াই সোজা নয়? প্লেন যদি না জোটে তা হলে মাতাদির বন্দর থেকে জাহাজে চেপে সোজা উত্তরে আপনার বেলজিয়মে গিয়ে পৌঁছতে পারেন। অবশ্য বেলজিয়াম যদি আপনার আসল দেশ হয়। আমায় মসিয়ে বলে সম্বোধন করেও যেরকম ভাঙা ফ্লেমিশ-এ কথা বলছেন তাতে মনে হয় বেলজিয়মও আপনার দেশ নয়। যুদ্ধে হারবার পর শয়তান নাৎসিদের অনেকে অসংখ্য পাপের শাস্তির ভয়ে দেশবিদেশে পালিয়ে লুকিয়ে আছে শুনেছি। কে জানে আপনি তাদেরই একজন কি না, পৈশাচিক এক মতলব নিয়ে ছদ্মনামে আর চেহারায় এই ঘোর জঙ্গলের দেশে পড়ে আছেন। এখন চলে গেলে ড. লেভিনকে তাঁর স্বপ্ন আর আদর্শের টোপ দিয়েই ভুলিয়ে নিয়ে এসে সে মতলব হাসিল করা আপনার আর হয়ে উঠবে না বটে, তবে আমি যখন এসে গেছি তখন সে উদ্দেশ্য সফল তো আপনার আর হবার নয়। তাই ভালয় ভালয় আপনারই এখন চলে যাওয়া ভাল। বেলজিয়মে জায়গা না জোটে জাঈর ছেড়ে যেখানে খুশি গেলেই হবে। জাঈর-এর ইতুরি-র জঙ্গলের অন্তত ধারে কাছে থাকবেন না।

    ভেতরে ভেতরে জ্বলে পুড়ে গেলেও শুধু আমি কতটা কী ধরে ফেলেছি তা জানবার অদম্য কৌতূহলেই নিশ্চয়ই, আমার দীর্ঘ বক্তৃতায় এতক্ষণ কোনও বাধা দেয়নি মালাঞ্জা। এবার ইতুরি কথাটা আমার মুখ থেকে খসতেই একেবারে বোমার মতো সে ফেটে পড়ল।

    ইতুরি! কী জানিস তুই ইতুরি-র? এমপালে চোখের আগুনেই আমায় যেন ভস্ম করবে।

    কিছুই এখনও জানি না, সহজ সরল ভাবে ভালমানুষের মতো বললাম, শুধু অনুমান করছি যে পৃথিবী বড় করবার পরীক্ষা চালাবার পক্ষে ইতুরি-র চেয়ে ভাল জায়গা আর হতে পারে না। সেইখানেই আপনার গুপ্ত ঘাঁটি বসিয়ে ড. লেভিনকে এনে রেখেছেন মনে হচ্ছে—

    আর কিছু বলতে হল না। জাঈর-এর দুর্দান্ত পাহাড়ি গোরিলার মতোই মণ পাঁচেক কয়লার বস্তার ভার নিয়ে এমপালে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।

    দড়াম করে একটা শব্দ হল দেওয়ালে। বেচারার মাথাটা ফেটে রক্তারক্তি।

    ধরে তুলতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু সুযোগ দিলে না। মালাঞ্জার জেদ আছে বটে। ফাটা মাথা নিয়েই আবার ঝাঁপিয়ে পড়ল আমার ওপর। একবার দুবার নয়, পাঁচ-পাঁচবার। কপাল মাথা কিছু আর আস্ত রইল না।

    বেচারার আর দোষ কী? আমায় তাগ করে যেখানেই ঝাঁপিয়ে পড়ে, সেখানে শুধু দেয়ালের সঙ্গেই মোলাকাত হয়। আমি তার আগেই সরে গেছি।

    পাঁচ-পাঁচবার এমনই দেয়ালবাজি দেখাবার পর সত্যিই ধরে তুলতে হল মালাঞ্জাকে। ধরে তুলে আমার চেয়ারটাতেই বসিয়ে দিয়ে বললাম, আমি বড়ই দুঃখিত, হের মালাঞ্জা। এ বাংলোবাড়ির দেয়ালে গদি আঁটা থাকা উচিত ছিল।

    আমিও দুঃখিত যে, ধুকতে ধুকতে হাঁফাতে হাঁফাতে বললে মালাঞ্জা এমপালে, আমার কথাটা আপনাকে ঠিক বোঝাতেই পারিনি। আমি এতক্ষণ শুধু আপনাকে পরীক্ষা করছিলাম, মি. দাস? ড. লেভিনের নিজের হুকুমেই এত কড়া পরীক্ষা করতে হয়েছে। বুঝতেই তো পারছেন, ড. লেভিন যা করতে যাচ্ছেন অমন আশ্চর্য একটা গবেষণার কথা একেবারে যোলো আনা খাঁটি মানুষ ছাড়া কাউকে জানানো যায়! আপনাকে এখান থেকে ড. লেভিনের কাছেই নিয়ে যাবার জন্য আমি এসেছি— পরীক্ষাটা আগে শুধু করে নিলাম।

    আমায় পরীক্ষা করছিলেন? চোখ দুটো আপনা থেকেই কপালে উঠল।

    অবাক হবার তখনও কিছু তবু বাকি।

    মালাঞ্জা যন্ত্রণায় মুখটা একটু বেঁকিয়ে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললে, হ্যাঁ, সে পরীক্ষা আমার শেষ হয়েছে, শুধু শেষ হুঁশিয়ার করাটা এখনও বাকি। এখান থেকে আপনার যাবার আসল বাধাটা তাই কাটিয়ে দিই।

    আসল বাধা? সন্দিগ্ধ ভাবে বললাম, সে আবার কী?

    এই দেখুন, বলে মালাঞ্জা এবার যা দেখাল তা সত্যি তাজ্জব করার মতো ব্যাপার।

    গাছ থেকে ফুল তোলার মতো আমার মাথা মুখ নাক কান হাতা পকেট যেখানে খুশি হাত দিয়ে সে একটার পর একটা ছোট বড় হিরে বার করে আনতে লাগল।

    তারপর সেগুলো সামনের টেবিলে রেখে ওই রক্ত-মাখা মুখেই একটু কাতরানির হাসি হেসে বললেন, যতই আপনি ম্যানেজারের বন্ধু হন, এই সব চোরাই হিরে নিয়ে আপনি এমবুজি মাঈ ছেড়ে যেতে পারতেন? এবার বুঝতে পারছেন আমি আপনার বন্ধু, না শত্রু! শত্রু হলে এই সব হিরে দিয়েই আপনাকে আমি ধরিয়ে দিতাম না?

    আমার মুখে তখন আর কথা নেই। এ ম্যাজিকের পর আর বলার কী বা থাকতে পারে?

    শত্রু না বন্ধু মালাঞ্জার সঙ্গেই তারপর এমবুজি মাঈ থেকে বোয়ামা জলপ্রপাতের শহর কিসানগানি হয়ে এপুলু গেলাম। সেখান থেকে দুনিয়ার সব চেয়ে রহস্যময় জঙ্গল ইতুরি। ইতুরি-র জঙ্গলে মালাঞ্জার সাধ্য নেই একা পথ চিনে যাবার। তাই সেথো নেওয়া হল মাকুবাসি নামে ইতুরির বিখ্যাত বামন জাতের এক সর্দারকে। মাকুবাসি মাথায় চার ফুটের বেশি লম্বা নয়, পরনে তার নেংটি। হাতে যেন খেলাঘরের একটা ছোট ধনুক। কিন্তু যেমন সে ধনুকের তিরের অজানা অব্যর্থ বিষ তেমনই আশ্চর্য তার সব ক্ষমতা। গহন জঙ্গলের সঙ্গে তার যেন গোপন দোস্তি আছে। এমনই তার সেখানকার সব কিছু সম্বন্ধে জ্ঞান।

    এই মাকুবাসিকেও কিন্তু মালাঞ্জার বিশ্বাস নেই। দুদিন মাকুবাসির কথা মতো চলবার পর তিনদিনের দিন এক জায়গায় রাত কাটিয়ে ভোর না হতেই মালাঞ্জা আমায় ঘুম থেকে তুলে দিয়ে বললে, এবার আপনাকে একটু কষ্ট করতে হবে, দাস!

    হেসে বললাম, এতক্ষণ কি শুধু আরাম করেছি?

    না, না, লজ্জিত হয়ে বললে মালাঞ্জা, এবার খানিকটা পথ আপনাকে ও আমাকে একলা একলা আলাদা যেতে হবে। মাকুবাসি রাত থাকতেই উঠে জালে শিকার ধরতে গেছে। সে আসবার আগেই আমাদের পালাতে হবে। ড. লেভিনের গোপন আস্তানা ওই বামন জাতের কাউকেও আমরা জানাতে চাই না।

    একটু চুপ করে থেকে ব্যাপারটা বুঝে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, একলা অমন কতদূর যেতে হবে? পথ চিনতে পারব তো!

    খুব পারবেন!ভরসা দিলে মালাঞ্জা, এখান থেকে সোজা গেলেই মাইল খানেক দূরে একটা প্রকাণ্ড বাওবাব গাছ দেখতে পাবেন। সেই বাওবাবের প্রকাণ্ড একটা কোটরের ভেতর দিয়ে মাত্র মিনিট দুইয়ের একটা সুড়ঙ্গ, ড. লেভিনের গোপন আস্তানায় যাবার রাস্তা। আমি ভিন্ন রাস্তায় সেখানেই যাচ্ছি। আপনি আগে বেরিয়ে পড়ুন। কোনও ভাবনা নেই। শুধু একটু দেখে শুনে যাবেন মাকুবাসির নজরে না পড়েন।

    দেখে শুনেই যাচ্ছিলাম। তাতে এক মাইলও যেতে হল না। তার আগেই মাকুবাসির নজরে পড়ে যাব কে জানত!

    ঘন জঙ্গলের ভেতর দিয়ে কোনওরকমে পথ করে যাচ্ছি। হঠাৎ পেছনে জামায় টান পড়ে থেমে যেতে হল। ফিরে তাকিয়ে দেখি কাঁধে এমবোলোকো নামে ছোট্ট খুদে একটা নীল হরিণ নিয়ে মাকুবাসি। সে উত্তেজিত ভাষায় যা বলল তা প্রথমটা ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। বোঝাবার জন্যই কাঁধের ছোট্ট নীল হরিণটা সে আমার সামনে এক পা দূরে ছুড়ে ফেলে দিলে।

    বুঝতে আর তখন কিছু বাকি রইল না। হরিণটা সেখানে পড়া মাত্র মাটির ওপর পাতা জংলি-লতা ফাঁস তার পা দুটোতে জম্পেশ করে আটকে তাকে এক ঝটকায় শূন্যে ঝুলিয়ে দিলে। মাকুবাসি মোক্ষম সময়ে টেনে না ধরলে ইতুরি-র জংলি বামনদের ফাঁদে আমারও ওই অবস্থাই হত।

    মাকুবাসি তার হরিণটা ঝোলানো ফাঁদ থেকে ছাড়িয়ে তখুনি আমাদের রাতের আস্তানায় ফিরে যেতে চাইছিল, তাকে তা দিলাম না। কোনও রকমে আমার মনের কথাটা তাকে বুঝিয়ে রাত পর্যন্ত তাকে রেখে দিলাম সঙ্গে।

    তারপর—

    হ্যাঁ, তারপর নাটকের শেষ দৃশ্যটা একরকম জমাটি-ই হল।

    ইতুরি-র জঙ্গলের মাঝখানে সত্যিই বেশ মজবুত করে তৈরি বাঁশ বেত আর জংলি লতাপাতার একটা ছোটখাটো বাসা। তার একটা ঘর গবেষণাগারের সাজ-সরঞ্জামেই সাজানো! কী কষ্ট করে শুধু সে সমস্ত লটবহর নয়, ঘরের জোরালো হ্যাসাক বাতিটাও আনানো হয়েছে ভাবলে অবাক হতে হয়।

    অবাক হতে হয় সেখানকার দুটি মানুষের আলাপ শুনেও। তাদের একজন ড. লেভিন, আর-একজন মালাঞ্জা এমপালে।

    ড. লেভিন তখন জিজ্ঞাসা করছেন, যাঁর খোঁজে গিয়েছিলে বলছ, সত্যিই তাঁর দেখাই পেলে না। তিনি তো আমাদের বন্ধু বলছ।

    হ্যাঁ, পরম বন্ধু! হতাশভাবে বললে মালাঞ্জা, তিনি এলে অনেক উপকার আমাদের হত। তাই গোপনে খবর পাঠিয়ে তাঁকে আসতে বলেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইতুরির জঙ্গলের ভয়েই বোধহয় আসতে পারলেন না।

    না, ঠিকই এসেছি, মালাঞ্জা, আর বোধহয় ঠিক সময়েই। নমস্কার ড. লেভিন।

    বাইরের বেতের দরজা প্রায় ভেঙে আমায় হঠাৎ ঢুকতে দেখে মালাঞ্জা আর ড. লেভিন দুজনেই একেবারে স্তম্ভিত হতবাক।

    তার মধ্যে ড. লেভিনই প্রথম চাঙ্গা হয়ে বললেন, একী—তুমি মি. দাস? তোমায় আনতে গিয়ে মালাঞ্জা খুঁজে পায়নি! তুমি যে আমার খোঁজে আসছ তা আগে আমায় বলেনি কেন?

    বলেনি একটু বাধা ছিল বলে বোধহয়, হেসে মালাঞ্জার দিকে তাকিয়ে বললাম, প্রথমত, আপনার সঙ্গে আমার পরিচয় যে বহুদিনের তা ওর জানা ছিল না। দ্বিতীয়ত, আগে থাকতে বললে ইতুরির ঝোলানো ফাঁসে আমাকে লটকাবার ব্যবস্থা করা যেত না।

    ফাঁসে লটকানো? কী বলছ তুমি, দাস? ড. লেভিন ভুরু কুঁচকে আমার দিকে তাকালেন, তোমাকে ঝোলানো ফাঁসে লটকাতে যাবে কেন মাঞ্জা?

    যাবে, আমার মতো পথের কাঁটা না সরালে ওর আসল মতলব হাসিল হবে না, তাই। কী বলো মালাঞ্জা? মালাঞ্জার দিকে ফিরে তাকিয়ে তাকেই জিজ্ঞাসা করলাম।

    মালাঞ্জা একেবারে চুপ। তার বদলে ড. লেভিনই বিমূঢ় এবং একটু উত্তেজিত গলায় বললেন, কী তুমি বলছ কিছুই বুঝতে পারছি না, দাস। আমার এই একা লুকোনো আস্তানার খোঁজ পাওয়াই অবিশ্বাস্য ব্যাপার। তোমার অসাধ্য কিছু নেই। বলেই তা তুমি পেয়েছ বুঝলাম, কিন্তু সে খোঁজ পাবার পর আমার একান্ত বিশ্বাসের সহকারী সম্বন্ধে এ সব মিথ্যা অভিযোগ করতেই কি তুমি এসেছ!

    মিথ্যা অভিযোগ নয়, ড. লেভিন, সব সত্য। এবার গম্ভীর হয়ে বললাম, কিন্তু শুধু তার জন্য আমি আসিনি। আমি এসেছি আপনাকে নিয়ে যেতে।

    আমায় নিয়ে যেতে! ড. লেভিন এবার গরম হলেন, আমায় তুমি নিয়ে যেতে চাইলেই আমি যাব? আমি কী জন্য এখানে এসেছি তা তুমি জানো?

    তা জানি বলেই আপনাকে নিয়ে যেতে চাই। কঠিন হয়ে এবার বললাম, আর আপনার সন্ধান যে পেয়েছি তা আপনার নিরুদ্দেশ হবার কারণ থেকেই। শুনুন ড. লেভিন, আপনি মস্ত বৈজ্ঞানিক, সেই সঙ্গে পৃথিবীতে স্বর্গের স্বপ্ন-দেখা কবি। আপনি পৃথিবীকে আরও বড় করতে চান মানুষের ভালর জন্য।

    হ্যাঁ, এবার উৎসাহিত হয়ে উঠলেন ড. লেভিন, মানুষের এত সব সমস্যা, জাতিতে জাতিতে এত মারামারি কাটাকাটি শুধু পৃথিবীতে এখন জায়গার অভাব। বলে। পৃথিবী বড় করতে পারলে মানুষের বারো আনা সমস্যার মীমাংসা হয়ে যাবে।

    আপনি পৃথিবীকে বড় করতে চান জেনেই, ড. লেভিনকে বাধা দিয়ে থামিয়ে বললাম, কোথায় আপনি নিরুদ্দেশ হয়ে থাকতে পারেন তার নিশ্চিত হদিস পেয়েছি।

    কেমন করে? ড. লেভিন অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালেন।

    বললাম, পেয়েছি, পৃথিবী বড় করার আসল রহস্যটা বুঝে। পৃথিবী তো সত্যি বেলুনের মতো ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বড় করা যায় না। পৃথিবী যা আছে তা-ই থাকা। তা সত্ত্বেও পৃথিবীকে আরও বিস্তৃত করতে হলে মানুষকে ছোট করতে হয় এই বুদ্ধি আপনার মাথায় এসেছে। মানুষ যদি এখনকার মাপের বদলে সমস্ত বর্তমান বিদ্যাবুদ্ধি নিয়ে ছোট হতে হতে ইঁদুর, আর তারও পরে পিঁপড়ের মতো ছোট হয়ে যায় তা হলে পৃথিবী তার পক্ষে কী বিরাটই না হয়ে যাবে। তাই ভেবেই আপনার জৈব-বিজ্ঞানের সাহায্যে মানুষকে আকারে ছোট করার উপায় আপনি খুঁজতে শুরু করেছেন। সে খোঁজে শেষ পর্যন্ত পৃথিবীর এই একটি দেশ জাঈরের-এর ইতুরি জঙ্গলে আপনাকে আসতেই হবে।

    কেন আসতে হবে তা তুমি বুঝেছ? ড. লেভিন বেশ একটু মুগ্ধ বিস্ময় নিয়ে আমার দিকে চাইলেন।

    হ্যাঁ, কিছুটা তার বুঝেছি, ড. লেভিন, বিনীতভাবেই জানালাম, পৃথিবীতে বামন জাত, বামন প্রাণী অনেক জায়গাতেই আছে, কিন্তু জাঈর-এর এই ইতুরি-র জঙ্গল যেন সে রহস্যের আসল ঘাঁটি। এখানে শুধু আদ্যিকালের এক বামন জাতের মানুষই নেই, এখানকার আরও অনেক কিছুর আকার ছোটর দিকে, যেমন এখানকার খুদে লাল মোষ, বামন হাতি ইত্যাদি। এখানকার মাটি আর জলে সুতরাং আকার কমাবার কোনও রহস্য লুকোনো আছে। নিজের গবেষণায় যা জেনেছেন তার সঙ্গে এখানকার রহস্যও আপনার না জানলে নয়।

    সবই বুঝলাম, এবার ড. লেভিন আবার একটু সন্দিগ্ধ গলায় বললেন, কিন্তু আমার একান্ত বিশ্বাসী সহকারী মালাঞ্জার বিরুদ্ধে তোমার ও সব অভিযোগ কেন?

    প্রথমত, ও সত্যি মালাঞ্জা এমপালে নয় বলে। মালাঞ্জার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে এবার বললাম, দ্বিতীয়ত, আপনার গবেষণার ফল ও নিজের লাভেই লাগাবে বলে মতলব করে আপনাকে এখানে এনেছে বলে অভিযোগ।

    এ সব কথা তুমি কীসের জোরে বলছ, দাস? ড. লেভিনের গলা এবার কঠিন হল।

    বলছি কীসের জোরে—এই দেখুন! মালাঞ্জার নাক মুখ চোখ থেকে টুক টুক। করে যেন ফুল ঘেঁড়ার মতো হিরে টেনে বার করতে করতে বললাম, মালাঞ্জা চোর। এমবুজি মাঈ থেকে ও এমনই করে হিরে পাচার করে এনেছে।

    ঘনাদার কথা শুনে যত না, তাঁর কাণ্ড থেকে তখন আমরা সবাই থ। করছেন কী ঘনাদা। মালাঞ্জার নাক মুখ থেকে হিরে বার করা দেখাতে গিয়ে আমাদের দুর্বাসার জটাজুট দাড়ি থেকেই যে মার্বেলের গুলি আর তার সঙ্গে ক-টা আস্ত ডিম বার করে ফেললেন!

    সে সব মার্বেল আর ডিম টেবিলের ওপর রেখে ঘনাদা আবার বললেন, হিরেগুলো বার করবার পর ঘরের একটা তাক থেকে একটু স্পিরিট হাতে লাগিয়ে মালাঞ্জার গালে একটু জোরে একটা আঙুল ঘসতে যেতেই ড. লেভিন হাঁ-হাঁ করে উঠলেন।

    আমি আঙুল ঘসতে আরম্ভ করার সঙ্গেই প্রায় ধমক দিয়ে বললেন, আরে, কহ কী, দাস! মালাঞ্জা যে গায়ে পেস্ট করে আইডাহোতে সাহেব সেজেছিল তা ও আমার কাছে স্বীকার করেছে।

    না, ড. লেভিন, আঙুলটা ভাল করে মালাঞ্জার গায়ে ঘসে তুলে নিয়ে বললাম, মালাঞ্জার এখনকার রংটাই পেন্ট করা কি না এই দেখুন। আসলে ও একজন ইউরোপিয়ান, হয়তো ফেরারি নাৎসি। আপনার গবেষণা সফল হলে তাই দিয়ে পৃথিবীর কী সর্বনাশ করা ওর মতলব কে জানে! আপনাকে তাই আমার সঙ্গে চলে আসতে হবে।

    কেমন যেন বিহ্বল দিশাহারা হয়ে ড. লেভিন বললেন, কিন্তু আমার গবেষণা? আমার স্বপ্ন?

    আপনার গবেষণা আপনার স্বপ্ন মানুষের পক্ষে সর্বনাশা ড. লেভিন!সহানুভূতির সঙ্গেই বললাম, মানুষকে আকারে ছোট করলেই তার বেশির ভাগ সমস্যা মিটবে এ কথা ভাবা আপনার ভুল। শুধু পৃথিবীই তার পক্ষে বিশাল করলে চলবে না, মানুষের মনটাকেও সেই সঙ্গে আরও বড় আরও উদার করতে হবে। তার উপায় যত দিন না হয় ততদিন পৃথিবীর বদলে সারা ব্রহ্মাণ্ড পেলেও সমস্যা মিটবে না। যা ভুল করতে যাচ্ছিলেন তা ছেড়ে এখন আমার সঙ্গে চলুন।

    চলুন। হঠাৎ হা হা করে হেসে দাঁড়িয়ে উঠল মালাঞ্জা। খুব তো বড় বড় কথা শোনালে, দাস। কিন্তু চলুন বললেই কি এই ইতুরির জঙ্গল থেকে যাওয়া যায়! আমি ফেরারি নাৎসি বা যে-ই হই, যে গবেষণার জন্যে ড. লেভিনকে এখানে এনেছি তা শেষ না করা পর্যন্ত এখান থেকে এক পা-ও ওঁকে যেতে দেব না। সেই সঙ্গে তোমাকেও যে এখানে বন্দী থাকতে হবে তা বুঝতে পারছ, দাস?

    ঠিক পারছি না তো! একটু হেসে ইশারা করার সঙ্গে সঙ্গে মাকুবাসি ঘরে এসে ঢুকতেই তাকে দেখিয়ে বললাম, বরং মনে হচ্ছে চলুন বললেই ইতুরি থেকে যাওয়া যায়। তবে তোমার যখন ইতুরি-র ওপর এত মায়া তখন তোমাকেই কিছুদিন এখানে রাখবার ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। ভয় নেই, আলগা করেই বাঁধন দেব। একটু চেষ্টা করলে

    একদিনের মধ্যেই যাতে খুলতে পারো।

    মালাঞ্জা এমপালেকে সেইরকম ভাবে বেঁধেই সেখান থেকে ড. লেভিনকে নিয়ে মাকুবাসিকে গাইড নিয়ে চলে এসেছিলাম। মাকুবাসিকে ফিরে গিয়ে মালাঞ্জার খোঁজ নিতে বলতেও ভুলিনি।

    ঘনাদা কথাগুলো শেষ করেই আচমকা উঠে পড়ে ঘর থেকে চলে যাবার জন্য পা বাড়িয়েছেন। যেতে যেতে দরজার কাছ থেকে ফিরে শুধু বলে গেছেন, আমার ফিশরোল সরানোর জন্য ছাদের সঙ্গে বাঁধা কালো সুতোটা এখনও ঝুলছে। ওটা ছিঁড়ে ফেলো। আর তোমাদের ওই সন্ন্যাসী ঠাকুরকে জটাজুট দাড়ি গোঁফ একটু খুলে আরাম করে বসতে বলো। যা গরম।

    টঙের ঘরের সিঁড়িতে ঘনাদার পায়ের আওয়াজ পাওয়া গেছে। আমরা তখন চোরের মতো এ ওর মুখ চাওয়াচাওয়ি করছি।

    দুর্বাসার দিকে চাইতেই চোখ উঠতে চাইছে না।

    অত সাজগোজ শেখানোপড়ানোর পর অমন নাকাল হয়ে যা কটমট করে সে আমাদের দিকে তাকিয়ে!

    এরপর তাদের ক্লাব থেকে আর কাউকে কোনওদিনও কিছু সাজিয়ে আনা যাবে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray
    Next Article ঘনাদা সমগ্র ১ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    Related Articles

    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    ঘনাদা সমগ্র ১ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }