Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    প্রেমেন্দ্র মিত্র এক পাতা গল্প632 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৭. উৎসবের আনন্দ কোলাহল

    সারা সেভিল শহরেই সেদিন উৎসবের আনন্দ কোলাহল। এক জায়গায় জনতার চেহারা একটু সম্ভ্রান্ত।

    সেখানে ঘুরেফিরে অনেকেরই দৃষ্টি একদিকে পড়ছে। পড়া কিছু আশ্চর্য নয়। অভিজাত সুন্দরী নারী। সৌন্দর্যেও বিশেষত্ব আছে। অনেক সুন্দরী নারীর ভিড়েও এ মহিলাকে আলাদা করে দেখতে হয়।

    ভিড় জমেছে অসামান্য এক গির্জার উৎসব উপলক্ষে। যে সে গির্জা নয়, সান্তা মারিয়া দে লা সেদে ক্যাথিড্রাল! সেভিল শহরের পরম গর্বের স্থাপত্যনিদর্শন।

    পৃথিবীতে ওর চেয়ে বড় গির্জা আর একটি মাত্রই আছে।

    শতাধিক বছর আগে কাজ শুরু হয়ে ১৫১৯-এ মাত্র নবছর হল গির্জাটি তৈরি শেষ হয়েছে। সেই থেকে প্রতিবছর এ গির্জাকে কেন্দ্র করে উৎসব হয়ে আসছে। দর্শকদের ভিড় যেখানে সবচেয়ে বেশি পূজাবেদীর পেছনের সেই অপূর্ব চুয়াল্লিশটি গিল্টি করা কাঠের খোদাই মূর্তিগুলির কাজ সাতচল্লিশ বছর ধরে নানা শিল্পীর সাধনায় সমাপ্ত হয়েছে মাত্র দুবছর আগে।

    অন্য অনেকের দৃষ্টি বারবার যার ওপর গিয়ে পড়ছে সেই সুন্দরী মহিলার অখণ্ড মনোযোগ কিন্তু এই অপূর্ব শিল্পনিদর্শনের ওপর নেই। নেহাত বাইরের ভড়ং রাখবার জন্যেই সে মূর্তিগুলির ওপর চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে মাত্র। ভাল করে একটু লক্ষ করলেই বোঝা যায়, ক্ষণে ক্ষণে সুন্দরী বাইরের গিজাতেরণের দিকেই কীসের একটা প্রত্যাশায় যেন তাকাচ্ছে।

    রীরডস-এর মূর্তিগুলি পুরোপুরি না দেখেই মহিলাকে গির্জার আর-একদিকে চলে যেতে দেখা যায়।

    এখানেও ক্যাথিড্রালের একটি অতুলনীয় সম্পদ অবশ্য আছে। মেরিমাতার একটি প্রমাণ মাপের কাঠের মূর্তি। জননী মেরি রুপোর সিংহাসনে বসে আছেন। তাঁর কেশরাশি সোনার সুতোয় তৈরি।

    এ অপূর্ব মূর্তির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ক্ষণেকের জন্যে নতি জানিয়েই মহিলা উঠে পড়ে আবার গির্জার বাইরের তোরণের দিকেই এগিয়ে যায়।

    ক্যাথিড্রালের ঈষৎ স্তিমিত আলো থেকে বাইরে আসবার পর সুন্দরী মহিলাকে কেউ কেউ চিনতে পারে।

    মহিলা সেভিলের অধিবাসিনী নয়। কিছুদিন মাত্র এ নগরে তাকে দেখা যাচ্ছে। এই সময়টুকুর মধ্যে মহিলা শুধু মুগ্ধ বিস্ময়ই নয়, তার স্বামীর সঙ্গে বেশ একটু তীব্র কৌতূহলও জাগিয়েছে।

    মার্কুইস গঞ্জালেস দে সোলিস নামটা তখন স্পেনের খানদানি মহলে একেবারে অপরিচিত নয়। বনেদি প্রাচীন ঘরানা না হয়েও কীসের দৌলতে মার্কুইস উপাধি পাবার সৌভাগ্য হয়েছে সেই বিষয়েই সঠিক ধারণা বিশেষ কারও নেই। নানারকম অনুমান ও গুজব তাই এই নিয়ে প্রচলিত। মার্কুইস-এর আভিজাত্য কত গভীর সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও তাঁর স্ত্রী মার্শনেস-এর সৌন্দর্য সম্বন্ধে অবশ্য দ্বিমত নেই। সেভিল-এর সম্ভ্রান্ত মহলে মার্কুইস ও মার্শনেস-এর খাতির সেই জন্যেই দিন দিন বাড়ছে।

    কিন্তু মার্শনেস-এর মতো অভিজাত সুন্দরী মহিলাকে এখন দেখলে একটু অবাকই হবার কথা।

    সান্তা মারিয়া দে লা সেদের ব্যাথিড্রাল থেকে সে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছে। নেহাত মেলার আবহাওয়া না হলে মার্শনেস-এর এভাবে চলাফেরা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু। হত।

    ধর্মের উৎসবের দিন। রাস্তায় উৎসবমত্ত নাগরিকদের ভিড়। মার্শনেস-এর ওপরে বিশেষভাবে কেউ নজর দেয় না।

    এসপানিওলরা জাত হিসেবেই ফুর্তিবাজ। তার ওপর সেভিল শহর শুধু নয়, দক্ষিণ স্পেনের সমস্ত সেভিল প্রদেশের লোকেরই আমুদে বলে খ্যাতিটা সবচেয়ে বেশি। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে সেভিল শহরের পত্তন থেকেই সেখানকার মানুষ আমাদের দেশের বারো মাসে তেরো পার্বণের মতো যে কোনও ছুতোয় একটা উৎসব করতে পেলে আর কিছু চায় না। স্পেনের নিজস্ব ষাঁড়ের লড়াই নিয়ে তারা যেমন মেতে ওঠে তেমনই ধর্মের অনুষ্ঠানের মেলা কি কার্নিভ্যালেও তাদের অদম্য উৎসাহ।

    তখনকার উৎসবটা আবার ইস্টার-এর। সেভিলের এই উৎসবটাই সবচেয়ে বড়। সেভিল জলার দেশ বললেই হয়। শাখা-প্রশাখা সমেত গুয়াদালকুইভির নদীর বন্যা সামলাতে বর্তমান যুগেও সেখানে অনেক তোড়জোড় করতে হয়। কিন্তু জলার দেশ হলেও আন্দালুসিয়া অঞ্চলটার শুকনো রোদে ঝলমল আবহাওয়াই সেখানকার মানুষের পোশাক যেমন মনও তেমনই রংচঙে করে তোলে।

    শুধু শহরের লোক নয়, দূর গ্রামাঞ্চল থেকেও চাষিরা সপরিবারে তখন মেলায় যোগ দিতে এসেছে। তাদের রংবেরং-এর সাবেকি ধরনের সাজের মধ্যে মার্শনেস-এর পোশাক একটু বেমানান হয়তো লাগে। কিন্তু তা নিয়ে মাথা ঘামাবার মতো সময় ও উৎসাহ কারও নেই।

    মার্শনেস ক্যাথিড্রাল থেকে বেরিয়ে উত্তর-পূর্ব কোণের ঘণ্টামিনার বা জিরাল্ডার নীচে খানিক দাঁড়ায়। এ ঘণ্টামিনার এখন প্রায় দুশো হাত উঁচু। তখন ছিল মাত্র সওয়া একশো হাত। আগের মিনারটি নতুন করে গেঁথে পরে বাড়িয়ে তোলা হয়। পুরনো মিনারটির বয়স কিন্তু গির্জাটির চেয়ে সাড়ে তিনশো বছরের বেশি। সে মিনার ছিল একটি প্রাচীন মসজিদের অংশ। স্পেনের সুদীর্ঘ মুসলিম অধীনতার স্মৃতিচিহ্ন হিসাবে এ ঘণ্টা-মিনারটি সেভিল ক্যাথিড্রালকে একটি বৈশিষ্ট্য দিয়েছে।

    স্থাপত্যরীতির ওসব ভেদাভেদ বুঝে উপভোগ করবার মতো ক্ষমতা থাক বা না থাক মার্শনেস-এর তখন সেদিকে দৃষ্টি দেবার মতো মনের অবস্থাই নয়। কী একটা অস্থিরতা তাকে যেন তাড়িয়ে নিয়ে ফিরছে।

    ঘণ্টামিনারের নীচে একটু অপেক্ষা করে মার্শনেস আবার ক্যাথিড্রালের দিকেই ফেরবার জন্যেই পা বাড়ায়।

    ঠিক সেই সময় পেছন থেকে তার পোশাকে একটা টান পড়ে।। বেশ একটু চমকে মার্শনেস ঘুরে দাঁড়ায়। সেভিল-এর লোকেরা ফুর্তিবাজ, কিন্তু তাদের শিষ্টতার খ্যাতি অনেককালের। তারা তো পারতপক্ষে এমন অসভ্যতা করে না। তা ছাড়া মার্শনেস-এর পোশাকটাই তাকে চিনিয়ে দেয়। সে পোশাক যে হেঁজি-পেঁজির ঘরের নয় তা বুঝে এরকম অসম্মান করবার সাহস করবে কে?

    গাঁ-দেশ থেকে চাষাভুষো অনেক এসেছে। তারা অবশ্য অতশত বোঝে না। মাতাল হয়ে খোশমেজাজে তারাই কেউ কি না-জেনেশুনে এ বেয়াদপি করেছে?

    ফিরে দাঁড়িয়ে লোকটার দিকে চেয়ে সেই অনুমানই ঠিক বলে মনে হয়।

    রংদার হলেও একেবারে মাকামারা গ্রাম্য-উৎসবের পোশাকে একটি গাঁইয়া লোক নেশায় ঢুল-ঢুলু চোখে তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। খাটো আঁট ইজের। কোমরবন্ধ আঁটা ঝোলা কুর্তা আর উপুড়-করা প্রকাণ্ড সানকির মতো টুপিতে লোকটার গাঁইয়া পরিচয় স্পষ্ট করে লেখা।

    মার্শনেস এক মুহূর্তে রেগে আগুন হয়ে ওঠে। তার মধ্যে যে একটা হিংস্র বাঘিনী আছে বাইরের রূপ দেখে তা বোঝবার উপায় নেই।

    সেই বাঘিনীটাই যেন হঠাৎ জেগে উঠে লোকটার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে চায়।

    নিজেকে তবু অতিকষ্টে সামলে সে গোলামদের ধমক দেবার ভঙ্গিতে ক্রুদ্ধ চাপা গলায় জিজ্ঞাসা করে, তুই আমার পোশাক ধরে টেনেছিস, বদমাশ?

    আজ্ঞে হ্যাঁ, মার্শনেস! অম্লানবদনে আগের মতোই মুচকে মুচকে হাসতে হাসতে বলে লোকটা।

    মার্শনেস! লোকটার কাছে তার পরিচয় তা হলে অজানা নয়। তা সত্ত্বেও চাষাটার এতবড় বেয়াদবি করবার স্পর্ধা হয়েছে!

    রাগে মার্শনেস প্রায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে, চোখের দৃষ্টিতে আগুন ছিটিয়ে বলে, হাতদুটো কাটিয়ে নুলো হতে চাস?

    তাতে রাজি আছি, মার্শনেস দে সোলিস! লোকটার মুখে কোনও ভাবান্তর দেখা দেয় না। তার আগে ওই মিহি কোমরটা একবার জড়িয়ে ধরবার অনুমতি যদি দেন!

    মার্শনেস অভদ্র চাষাটার গালে কযাবার জন্যে চড়টা তুলেছিল তার আগে। কিন্তু হাতটা তাকে বেশ একটু হতভম্ব হয়ে নামাতে হয়।

    তাকে মার্শনেস বলে চেনা একজন চাষা-ভুষোর পক্ষে যদি বা সম্ভব, মার্শনেস দে সোলিস বলে তার পুরো পরিচয়টা জানা তো প্রায় অবিশ্বাস্য ব্যাপার।

    লোকটাকে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে এবার লক্ষ করে মার্শনেস সত্যিই চমকে ওঠে—তুমি! চাষাড়ে মোেটা নকল গোঁফটা খুলে আর মাথায় বড় কানাতোলা থালার মতো টুপিটা নামিয়ে লোকটি এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন গলায় তীব্র বিদ্রূপের সঙ্গে বলে, হ্যাঁ আমি, মার্শনেস দে সোলিস! তোমার প্রিয়তম স্বামী। সামান্য একটু ছদ্মবেশ করে তোমার ওপর নজর রাখছি অনেকক্ষণ থেকে। সান্তা মারিয়া দে লা সেদে ক্যাথিড্রালের ইস্টার উৎসবে যোগ দেবার নামে যখন একলা বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছ তখন থেকেই। আমার ছদ্মবেশ অতি সাধারণ। কোনও ছেলেমানুষের চোখকেও বোধহয় এতে ফাঁকি দেওয়া যায় না। কিন্তু কোনও কিছুর চিন্তায় তুমি এত উতলা, এমন অস্থিরভাবে কাউকে খুঁজতে ক্যাথিড্রালের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছোটাছুটি করে বেড়াচ্ছ যে অমন একটা বেয়াদবির পরও আমাকে ভাল করে লক্ষ করবার ক্ষমতা তোমার হয়নি।

    একটু থেমে মার্কুইস গঞ্জালেস দে সোলিস বাঁকা হাসিতে বিষ ছড়িয়ে আবার জিজ্ঞাসা করে, এত ব্যাকুল হয়ে কাকে খুঁজছ বলে ফেলো দেখি! কার সঙ্গে এই ক্যাথিড্রালের ভেতরে বা বাইরে দেখা করবার ব্যবস্থা করেছ?

    একটা গোলামের সঙ্গে, প্রথম চমকের পর ইতিমধ্যেই নিজেকে সামলে নিয়ে মার্কুইস-এর চেয়েও তিক্ত তীব্র বিদ্রূপের চাবুক চালিয়ে মার্শনেস বলে, যাকে শয়তানি ফন্দিতে গোলাম না বানাতে পারলে আজ মার্কুইস গঞ্জালেস দে সোলিস-এর বদলে ছদ্মবেশে যা সেজে আছ তোমার অবস্থা তারও অধম হত।

    তা যে হয়নি, মার্কুইস যেন স্ত্রীর তীব্র বিদ্বেষটা উপভোগ করে বলে, তার জন্যে মার্শনেস-এর কাছেই কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। কারণ শয়তানকেও হার মানানোর ফন্দিটা খাটাবার বাহাদুরি আমার একার নয়, তাতে তাঁরও কিছু কেরামতি আছে। আর আমি আজ মার্কুইস না হয়ে চাষার অধম হলে বেহায়া বিধবা হিসেবে ফার্নানদিনাতেই তাঁরও বোধ হয় এতদিনে সোনার অঙ্গে ছাতা ধরত।

    জানোয়ার! দাঁতে দাঁতে চেপে কথা দিয়েই মাংস খুবলে নেবার মতো গলায় বলে মার্শনেস।

    নিশ্চয়ই! তা না হলে তোমার স্বামী হবার যোগ্য হতে পারি! আগের মতোই জ্বালা-ধরানো হাসির সঙ্গে বলে মার্কুইস গঞ্জালেস দে সোলিস, কিন্তু পরস্পরকে মধুর সব সম্ভাষণ করবার যথেষ্ট সময় পরে পাওয়া যাবে। আপাতত তোমার এত ছটফটানি কার জন্যে সেইটেই বুঝে দেখা যাক। সেই গোলামটার? মার্কুইস একটু থেমে ভুরু কুঁচকে যেন গম্ভীরভাবে ভাববার ভান করে বলে, না, গোলামটা নয়। তবে তারই হদিস পাবার আশায় আর কারও জন্যে!

    কথাগুলো কীরকম বিধছে বোঝবার জন্যেই স্ত্রীর মুখের দিকে চেয়ে মার্কুইস খানিক চুপ করে।

    মার্শনেস-এর মুখ যেন পাথর কেটে তৈরি। শুধু চোখদুটো আঙরার মতো জ্বলছে।

    সে আর কেউ-কে কি আমি চিনি? মার্কুইস যেন সরবে চিন্তা করে, মনে হচ্ছে চিনি। সেই অপদার্থ বুড়ো পাইলটটা, সেই কাপিন সানসেদো, তোমার তিয়েন সেই আহাম্মকটা, যার ধর্মজ্ঞানের বাড়াবাড়িতে আমাদের সবকিছু বানচাল হতে বসেছিল। হ্যাঁ, ঠিক! সে ছাড়া আর কেউ নয়। বুড়ো জরদগবটা গোড়া থেকেই আমায় বিষনজরে দেখেছে। সেই গোলামটার ওপরই তার ছিল যত টান। জুয়াতে গোলামটার ওপর দরদের জন্যে তাকে তার শোধও আমি নিয়েছি। মহামান্য স্পেন-সম্রাটের সোনাদানার নজরানা মেক্সিকো থেকে জাহাজে বয়ে আনার সময়ে বেশ কিছু সরাবার দায়ে তার পেছনে হুলিয়া ছুটছে। বুড়োকে এখন ফেরার হয়ে ফিরতে হচ্ছে গা-ঢাকা দিয়ে। তার মেদেলিনের বাড়িঘর সম্পত্তি সব বাজেয়াপ্ত হয়ে গেছে। সেই বুড়োটার সঙ্গে তোমার কোনওভাবে দেখা হয়েছে নিশ্চয়ই। বুড়োই গোপনে যোগাযোগ করেছে। সে তোমায় জপাতে চায় সেদিনকার আসল ব্যাপারটা তার কাছে ন্যায়ধর্মের খাতিরে খুলে বলবার জন্যে! আর তুমি তার কাছে গোলামটার হদিস চাও। বুড়ো আবার কীসব ডাইনি বিদ্যে-টিদ্যের জোরে ভূতভবিষ্যৎ বলে কিনা! দু-জনে গোপনে যুক্তি করে এইখানেই কোথাও দেখা হবার ব্যবস্থা তাই ঠিক করেছিলে, কেমন?

    শয়তানের মতো হেসে ওঠে এবার মার্কুইস। তারপর আক্রোশ আর বিদ্বেষে মুখচোখের বিকৃত ভঙ্গিতে বলে, কিন্তু তা হবার নয়, মার্শনেস। সেই বুড়ো আহাম্মক, তোমার তিয়েন, কাপিন সানসেদোকে সেভিল শহরে আর দেখতে পাবে না। তুমি ডালে ডালে ফেরো বলে আমায় পাতায় পাতায় থাকবার ব্যবস্থা করতেই হয়। চরেদের কাছে খবর পেয়ে তোমার আর কাপিতানের জোটবাঁধার রাস্তাটা তাই বন্ধ করতে হয়েছে। তোমার আদরের পাতানো মামা কাপিন সানসেদোর নামে হুলিয়াটা এখানেও চালু করে দিয়েছি। এখানে ধরা পড়লে হাজতের দরজা যে তাঁর জন্যে হাঁ করে আছে তা জেনে কত পগার তিনি এতক্ষণে পার হয়েছেন কে জানে!

    তুমিই তা হলে মেদেলিন শহরে তাঁর ভিটেমাটি নিলামে চড়িয়ে আমার তিয়েনকে দেশছাড়া করেছ, সম্রাটের নজরানা চুরির মিথ্যে অভিযোগ সাজিয়ে তাঁর নামে হুলিয়া বার করিয়েছ, আর এই সেভিল শহর থেকেও তাঁকে তাড়িয়েছ। পাছে আমার সঙ্গে দেখা হয় বলে!

    মার্কুইসকেও একবার চমকে ভুরু কুঁচকে তাকাতে হয় স্ত্রীর দিকে। মার্শনেস যেন হঠাৎ অন্য কেউ হয়ে গেছে। এতগুলো কথা যে বলেছে তার মধ্যে উত্তেজনা আক্রোশ কিছুই নেই। এক পর্দায় কথাগুলো যেন ছোটদের মুখস্থ পড়ার মতো সে বলে গেছে। কিন্তু সেই একঘেয়ে একটানা বলাটাই যেন আরও বেশি অস্বস্তিকর।

    ভেতরে বেশ একটু অস্বস্তি বোধ করলেও বাইরে তাচ্ছিল্য ও অবজ্ঞার সঙ্গে। মার্কুইস বলে, ফিরিস্তিটা ঠিকই দিয়েছ। কিন্তু আমায় লুকিয়ে মেদেলিন শহরে সানসেদোকে খুঁজতে গিয়ে যখন রাজদ্রোহের অপরাধে ভিটেমাটি খুইয়ে তাঁর ফেরারি হবার কথা জেনেছিলে তখনই আমার বাহাদুরিটুকু আঁচ করা উচিত ছিল। সেভিলে তাঁর সঙ্গে মেলবার মিথ্যে আশা তা হলে আর করতে না। আর যেখানেই পাও, সেভিল শহরে তাঁর দেখা পাবে না।

    মার্শনেস কিছুই না বলে স্বামীর দিকে একদৃষ্টে কয়েক মুহূর্ত চেয়ে থেকে ক্যাথিড্রালের ভেতরেই চলে যায়। মার্কুইস গঞ্জালেস দে সোলিস-এর আস্ফালন কিন্তু মিথ্যে হয়ে গেছে অপ্রত্যাশিত একটি ঘটনায়।

    কাপিন সানসেদোর মতো সামান্য একটা মানুষের বিরুদ্ধে হুলিয়া নিয়ে সেভিল শহরের মাথাব্যথার তখন অবসর নেই। লুকিয়ে থাকতে হলেও কাপিন সানসেদাকে সেভিল ছেড়ে যেতে হয়নি। তিনি তখন সেভিল ছেড়ে গেলে এ কাহিনীর সমাপ্তি এখানেই টানতে হত কি না জানে!

    সেভিল শহর শুধু নয়, সারা স্পেনকে পরে সজাগ চঞ্চল করে তোলবার মতো একটি ব্যাপার তখন ঘটেছে। ঘটেছে প্রথমে কিন্তু নিঃশব্দে।

    যাঁর সম্বন্ধে অনেক কিংবদন্তি আগেই স্পেনে এসে পৌঁছেছে সেই ফ্রানসিসকো পিজারো সেভিল-এর বন্দরে তাঁর জাহাজ নিয়ে এসে নোঙর ফেলার পরই পুরনো দেনার দায়ে গ্রেফতার হয়েছেন।

    তাঁকে গ্রেফতার করিয়ে জেলে যিনি পাঠিয়েছেন ইতিহাসে শুধু সেই একটি কারণেই তিনি অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁর নাম ব্যাচিলর এনসিসো।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী
    Next Article মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    Related Articles

    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    ঘনাদা সমগ্র ১ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    ঘনাদা সমগ্র ২ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }