Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    প্রেমেন্দ্র মিত্র এক পাতা গল্প632 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ১৪. সূর্য কাঁদলে সোনার দেশ

    সূর্য কাঁদলে সোনার দেশ শুনতে শুনতে তো কান পচে যাবার জোগাড়! কিন্তু দেশটা কী কেউ বোধহয় বোবাঝেননি। দেশটা আসলে হল পেরু। হ্যাঁ, দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম প্রান্তের পেরু রাজ্য, প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে একটু সরু বাঁকানো পটির মতো যা লাগানো আছে।

    দেশটা অবশ্য সত্যিই অদ্ভুত। সাহারার মতো মরুভূমি, তার পরেই হিমালয়ের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো নগরাধিরাজ, আর তারই লাগাও কঙ্গোর মতো অজগর গহন জঙ্গল—একই রাজ্যে এমন পাশাপাশি পৃথিবীর আর কোথাও পাবার নয়। পেরুর প্রশান্ত সমুদ্রের নীল জল থেকে শুরু করে ধূ ধূ মরু হিমেল তুষারঢাকা পাহাড় আর গহন অরণ্য আজকালকার জেট বিমানে অন্তত দু-ঘণ্টার মধ্যেই বোধহয় পার হওয়া যায়।

    পশ্চিমে সমুদ্র উপকূলের মরুভূমি চওড়ায় কোথাও ষাট মাইলের বেশি নয়, কিন্তু লম্বায় প্রায় চোদ্দোশো মাইল। এই মরুভূমির পরই আন্ডিজ পাহাড়ের সিয়েরা আর তার পর মনটানা অর্থাৎ গহন জঙ্গল। আন্ডিজ পর্বতমালা ছোটখাটো পাহাড় নয়, মর্যাদায় তা হিমালয়ের পরেই। পেরুর মধ্যেই তার ইয়াসকারান চুড়োর উচ্চতা প্রায় বাইশ হাজার ফিট। মরুভূমির সমতল থেকে এ পাহাড়শ্রেণী প্রায় খাড়াভাবেই উঠে গেছে। সমুদ্রের লেভেল ছাড়িয়ে ষোলো হাজার ফুট উঠতে পঁচাশি মাইলের বেশি যেতে হয় না। আন্ডিজ পাহাড়ের মাথায় এই পেরুতেই পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু মালভূমির হ্রদ টিটিকাকা। তার উচ্চতা সাড়ে বারো হাজার ফুটেরও বেশি। টিটিকাকা হ্রদের পশ্চিম তীরের পুনো-ই হল পেরুর দক্ষিণের শেষ বড় শহর। তারপর—

    তারপর বক্তা থামলেন।

    বক্তা কিন্তু শ্রীঘনশ্যাম দাস নন, মর্মরের মতো মস্তক যাঁর মসৃণ সেই ইতিহাসের ভূতপূর্ব অধ্যাপক শিবপদবাবু।

    সেদিন অন্য সবাই যথাসময়ের আগেই উপস্থিত হলেও দাসমশাই তখনও এসে পৌছোননি। আসর ফাঁকা পেয়ে শিবপদবাবু তাঁর বিদ্যা একটু জাহির করছিলেন।

    তারপর-টুকু বলেই তাঁকে থামতে হয়েছে অবশ্য তাঁর শ্রোতাদের মুখেই কীরকম একটা অস্বস্তি লক্ষ করে।

    শ্রোতাদের দৃষ্টি অনুসরণ করেই এবার পেছন ফিরে শ্রীঘনশ্যাম দাসকে তিনি দেখতে পেয়েছেন। দাসমশাই কখন তাঁর পেছনে এসে নিঃশব্দে দাঁড়িয়েছেন, শিবপদবাবু টের পাননি।

    শিবপদবাবু মুখ ফিরিয়ে একটু অপ্রস্তুতই হলেন। দাসমশাই কিন্তু তাঁকে উৎসাহ দিয়েই বললেন, থামলেন কেন? বলুন, তারপর কী?

    অপ্রস্তুত ভাবটা কাটিয়ে উঠতে শিবপদবাবুর দেরি হল না। দাসমশাই-এর কথাগুলো উৎসাহের হলেও মুখের হাসিটা কেমন বাঁকা মনে হওয়ায় তিনি একটু গরম গলাতেই বললেন, তারপর কী আবার? তারপর চিলি আর বলিভিয়া। এ বৃত্তান্ত বলবারই বা দরকার কী? ভূগোলের ম্যাপ দেখলেই জানা যায়। আপনি সূর্য কাঁদলে সোনার দেশ বলে অত প্যাঁচালো হেঁয়ালি করছিলেন বলে সেটা একটু ভেঙে দিলাম।

    খুব ভাল করেছেন। দাসমশাই তাঁর নির্দিষ্ট আসনটিতে অধিষ্ঠিত হয়ে বললেন, কিন্তু পেরুর হেঁয়ালি কি শুধু তার ভৌগোলিক বিবরণ একটু দিয়েই ঘুচিয়ে দেওয়া যায়? পেরুর বিবরণ যা দিলেন তাও তো ঠিক নয়।

    ঠিক নয় মানে! শিবপদবাবু প্রায় খাপ্পা—পেরু দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম প্রান্তের সরু একটু লম্বা বাঁকানো ফালির মতো রাজ্য নয়? মরুভূমি থেকে তুষার ঢাকা চুডোর পাহাড় আর অজগর জঙ্গল ও রাজ্যে পাশাপাশি নেই?

    ও সবই ঠিকই! দাসমশাই-এর মুখে সহিষ্ণুতার মৃদু হাসি, শুধু আয়তনটা ভুল বলেছেন। আজকের পেরু আর সেই পিজারোর যুগের পেরু এক নয়। সেকালে পেরুর শেষ দক্ষিণের শহর পুনো ছিল না। উত্তর-দক্ষিণে তখনকার পেরু আরও অনেক দূর ছড়ানো। এখনকার ইকোয়েডর বলিভিয়া চিলির বেশ কিছুটা নিয়ে সেকালের সে পেরু রাজ্য আয়তনে ইউরোপের প্রায় তিনভাগের এক ভাগ ছিল। এই বিশাল দেশের রাজ্যেশ্বরকে বলা হত ইংকা। জাপানের সম্রাটবংশের মতো ইংকারা নিজেদের সূর্যের সন্তান বলতেন। ইংকাদের সাম্রাজ্যে লেখার পাট ছিল না। লেখার বিদ্যাই ছিল অজানা। ধাতু হিসেবে তখনও লোহা পেরুতে আবিষ্কৃত হয়নি। তবু সভ্য সচ্ছল সুখী রাজ্য গড়ে তোলার এক আশ্চর্য দৃষ্টান্ত তাঁরা রেখে গেছেন বহুদিক দিয়ে। তাঁদের স্থাপত্য ছিল অদ্ভুত। চুন সুরকি সিমেন্ট কিছু ব্যবহার না করে আর লোহার ব্যবহার না জেনেও তাঁরা বড় বড় পাথরের চাঁই দিয়ে যে সব দুর্গ দেবস্থান প্রাসাদ তৈরি করে গেছেন শুধু মাপসই ভাবে খাঁজে খাঁজে বসাবার কৌশলে, আজও তা অটল। সে যুগে এই দুর্গম মরু পাহাড় অরণ্যের দেশে তাঁরা দিগ্বিদিকে যোগাযোগের হাজার হাজার মাইল রাস্তা তৈরি করিয়েছেন। তাক তাক করে পাহাড় কেটে চাষের ব্যবস্থা করেছেন। যেখানে যেমন দরকার খাল কেটে আর সুড়ঙ্গ নালা বসিয়ে মরুভূমিকেও উর্বর করবার ব্যবস্থা করেছেন দুরন্ত পাহাড়ি নদীর সেচের জল দিয়ে। সমস্ত পৃথিবীর আজ যা একটা প্রধান খাদ্য, সেই আলুর চাষ পেরু থেকেই আমাদের পাওয়া। ইংকাদের পেরু রাজ্যে দারিদ্র ছিল না বললেই হয়। সমস্ত দেশের যা শস্য তার একভাগ দেবতার নামে উৎসর্গ করা হত। এক ভাগ বরাদ্দ হত রাজসরকারের জন্যে আর তিন ভাগের বাকি এক ভাগ পেত প্রজারা। শস্যের মধ্যে প্রধান হল ভুট্টা যা আলুর মতো আমেরিকা থেকেই সমস্ত পৃথিবী পেয়েছে। সেচের সুব্যবস্থায়, চাষের নৈপুণ্যে আর অধ্যবসায়ে ফসল প্রচুর হত। কাউকে উপবাসী থাকতে হত না। তবু দুর্বৎসরের জন্যে রাজভাণ্ডারে ফসল জমা করে রাখার ব্যবস্থাও ছিল। ইংকারা। ছিলেন সুর্যোপাসক। দেবতাকে কেন্দ্র করে রাজ্যশাসন করলেও রাষ্ট্রীয় সমাজতন্ত্রের নীতির আভাস তাঁদের পরিচালনায় পাওয়া যেত।

    পেরু রাজ্যের অধীশ্বর এই ইংকারাই কিন্তু সে দেশের সবচেয়ে বড় হেঁয়ালি। নিজেদের সূর্যের সন্তান বলে সূর্যকেই যাঁরা উপাসনা করতেন কোথা থেকে কেমন করে পেরুতে তাঁদের আবির্ভাব ঘটেছে?

    প্রমাণ যতদূর পাওয়া যায় তাতে খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীতেই পেরুতে তাঁদের আধিপত্য শুরু হয়েছে মনে হয়।

    তাঁরাই কি এসে পেরুকে সভ্যতার দীক্ষা দিয়েছেন?

    না, তা নয়। পেরুর সভ্যতা আরও অনেক প্রাচীন। টিটিকাকা হ্রদের কাছে এমন সব ধ্বংসস্তুপ আছে যা ইংকাদের আবির্ভাবের অনেক আগে নির্মিত হয়েছিল। ইংকাদের আগে পেরুতে যারা রাজত্ব করে গেছে এসব তাদের কীর্তি। তারাই বা কোন জাতি, কোথা থেকে এসেছে, পেরুর রঙ্গমঞ্চ থেকে বিদায় নিয়ে গেছেই বা কোথায়?

    প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহাসিকরা এখনও উত্তর খুঁজছেন। সুদূর স্ক্যান্ডিনেভিয়ার এক তরুণ পণ্ডিত গবেষক এই সেদিন ইংকাদের পূর্বগামীদের রহস্য ভেদ করতে মাত্র একটি কাঠের ভেলায় অকূল প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিয়েই অক্ষয় কীর্তি রেখেছেন। অজানা দেশের উপকূলের সাগরজলে পালতোলা যে বিচিত্র ভেলা দেখে পিজারোর নৌ-প্রধান রুইজ বিস্মিত বিমূঢ় হয়েছিলেন এ সেই বালসা ভেলা। নরওয়ের তরুণ দুঃসাহসী পণ্ডিত থর হেডেরডাল এই বালসা ভেলায় প্রশান্ত মহাসাগরের পারের যে-কোনও পলিনেশীয় দ্বীপবিন্দুতে পৌঁছে প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন যে, ইংকাদের আগে পেরুতে যাদের প্রতাপ ছিল তারাই ভেলায় ভেসে এসে পলিনেশিয়ার সমস্ত ছড়ানো দ্বীপে ডেরা পেতে তাদের সভ্যতা ছড়িয়েছে।

    তাঁর সিদ্ধান্ত প্রমাণ করতে পারুন বা না পারুন, মাত্র কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে ইপ-পেরেক ছাড়া শুধু দড়িতে বাঁধা কাঠের ভেলায় হেডেরডাল সত্যিই প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে পলিনেশিয়ার এক দ্বীপে গিয়ে পৌঁছেছিলেন।

    ইংকা বা তাঁদের পূর্বগামীদের রহস্য কিন্তু আজও সম্পূর্ণ ভেদ করা যায়নি।

    যাবে কী করে? পেরু পৃথিবীর এক অদ্ভুত দেশ। বহু বিষয়ে অসামান্য হলেও পেরুর মানুষ লেখবার কৌশলটাই আবিষ্কার করেনি। লেখা পুঁথিপত্রের বদলে তাদের যা ছিল তার নাম হল কিপু-গিট দেওয়া কিছু রঙিন সুতুলি। এই গিট দেওয়া সুতুলি দিয়ে কেমন করে তারা কাজ চালাত তাই বুঝে ওঠা যায় না।

    যা কিছু স্মৃতি-পুরাণ সব তাদের মুখে মুখে চলে এসেছে। ইংকাদের সম্বন্ধে একটি শুধু লিখিত পুরাণকথা আছে। এ পুরাণকথা লিখে গেছেন গার্সিলার্সে দে ভেগা। তিনিও এক অদ্ভুত মানুষ। বাপ এসপানিওল আর মা ইংকা রাজপরিবারের মেয়ে। ইংকা সাম্রাজ্যের মুখে মুখে ফেরা সমস্ত স্মৃতি-পুরাণ স্পেনের কর্ডোভা শহরে বসে তিনিই তাঁর মহাগ্রন্থ কমেন্তারিয়োস রিয়ালেস-এ স্প্যানিশ-এ লিখে গেছেন।

    ইংকাদের আবির্ভাব সম্বন্ধে যে পুরাণকথা তিনি লিখে গেছেন তা পৃথিবীর অন্য বহু জাতির আদি কথার মতোই আজগুবি কল্পনায় বোনা।

    পৃথিবীর এক চরম দুর্দিনে সূর্যদেব মানুষের ওপর দয়া করে তাঁর দুটি সন্তান পাঠিয়েছিলেন।

    নিজেদের মধ্যে মারামারি কাটাকাটি খাওয়াখাওয়ি করে, যেখানে যা দেখে নির্বিচারে তাই পুজো করে মানুষজাতটা তখন ধ্বংস হতে যাচ্ছে।

    সূর্যের দুই ছেলে মেয়ে এসে মানুষকে ধ্বংস থেকে বাঁচালেন। এই দুই ভাই বোনের নাম হল মানকো কাপাক আর মামা ওয়েলো হুয়াকো। এই দুই স্বর্গের ভাই বোন প্রথমে মানুষকে সমাজ গড়তে শেখানোর সঙ্গে সভ্যতার আর সব দীক্ষাও দিলেন। তারপর তাঁরা এক সোনার খুঁটি নিয়ে চললেন উত্তর দিকে। সেখানে টিটিকাকা হ্রদের ধারে এক জায়গায় তাঁদের সোনার খুঁটি আপনা থেকে মাটিতে পুঁতে গেল। সেইখানেই দুজনে তখন ডেরা বাঁধলেন। এই ডেরা থেকেই গড়ে উঠল কুজকো শহর।

    সেখানে মানকো কাপাক পেরুর পুরুষদের চাষবাস শেখালেন আর মামা ওয়েলো হুয়াকো মেয়েদের শেখালেন সুতোকাটা আর কাপড় বোনা।

    ইংকাদের আবির্ভাব সম্বন্ধে আর একটি পুরাণ কাহিনীও আছে। তাতে বলা হয় যে, টিটিকাকা হ্রদের তীর থেকে গৌরবর্ণ শ্মশ্রুমণ্ডিত কিছু মানুষ এসে পেরুর ওপর আধিপত্য বিস্তার করে। পেরুর লোকেদের সভ্যতার দীক্ষা তারাই দিয়েছে।

    ইংকাদের সম্বন্ধে বিভিন্ন পুরাণ কাহিনীর মধ্যে অন্য যা তফাতই থাক, একটি বিষয়ে মিল দেখা যায়।

    ইংকারা যে দক্ষিণ থেকে এসে প্রথমে টিটিকাকা হ্রদের ধারে এবং তারপর কুজকো শহরে তাদের ঘাঁটি গাড়েন এ বিষয়ে সব পুরাণই একমত। তার বিপরীত। কথা কোনও পুরাণ কাহিনীতে নেই।

    কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু হ্রদের ধারে উদয় হওয়ার আগে দক্ষিণে কোথায় ছিলেন ইংকারা? ওদেশের সাধারণ আদিবাসীদের চেয়ে সভ্যতার ওপরের ধাপে তাঁরা উঠলেন কোথা থেকে? একেশ্বর সূর্যকে পূজা করবার আশ্চর্য বৈশিষ্ট্যও তাঁদের মধ্যে দেখা দিল কেমন করে, কবে?

    এ সব প্রশ্নের সুস্পষ্ট উত্তর আজও মেলেনি। সমস্ত আমেরিকার নৃতত্ত্বের ওপর নতুন আলো পড়েছে ইদানীং। বহু ভ্রান্ত ধোঁয়াটে ধারণা দূর হয়ে গেছে। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার মহাদেশে খ্রিস্টজন্মের হাজারখানেক বছর আগে মানুষ প্রথম এশিয়া ও আমেরিকার উত্তরের বেরিং যোজক দিয়ে পদার্পণ করে, এরকম একটা ধারণা বহুকাল বৈজ্ঞানিক পণ্ডিতরাও আঁকড়ে ধরেছিলেন। সে মতবাদ এখন অচল। তারও বহু পূর্বে, খ্রিস্টপূর্ব প্রায় বারো হাজার বছর আগে প্রস্তর যুগের মানুষ যে উত্তরের আলাস্কা থেকে দক্ষিণ আমেরিকার টেরা ডেল ফুয়েগো পর্যন্ত ছড়িয়ে ছিল তার সুস্পষ্ট প্রমাণ এখন পাওয়া গেছে। কিন্তু মেক্সিকো য়ুকাটান আর পেরুর উন্নত সভ্যতার জন্মরহস্যের তাতে মীমাংসা হয়নি।

    আশ্চর্যের কথা এই যে, য়ুকাটান ও মেক্সিকোর মায়া, টোলটেক কি আজটেক সভ্যতার সঙ্গে পেরুর ইংকা সভ্যতা ও সাম্রাজ্যের কোনও যোগাযোগই ছিল না। একই যুক্ত মহাদেশের মধ্যে কয়েক হাজার মাইল ব্যবধানে দুটি বিভিন্ন সভ্যতা পরস্পরের সম্পূর্ণ অচেনা থেকে স্বাধীনভাবে গড়ে উঠেছে।

    এ দুই সভ্যতার বীজ কি ওই মহাদেশের মাটিতে আপনা থেকে জন্ম নিয়ে সঞ্জাত ও অঙ্কুরিত হয়েছে? না, বাইরের কোথাও থেকে তা বিক্ষিপ্ত হয়ে এসে পড়েছে এই। কুমারী মহাদেশের গর্ভে?

    অনেক অনুমান, অনেক জল্পনা কল্পনা মতবাদ সিদ্ধান্তের তোলাপাড়া চলেছে আজও এই নিয়ে।

    এশিয়ার প্রাচ্য ভূখণ্ড থেকেই এ সব সভ্যতার বীজ সাগর-স্রোতে ভেসে এসেছে এ মতবাদটাও ফেলনা নয়।

    আরও আশ্চর্য অবিশ্বাস্য এমন তথ্যও আছে যা সমস্ত তর্ক একেবারে গুলিয়ে দেয়।

    উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা নিয়ে নতুন অজানা মহাদেশ কলম্বাসই প্রথম আবিষ্কার করেন আমরা জানি। তার আগে এশিয়া ইউরোপে নতুন মহাদেশ সম্বন্ধে কোনও বিশ্বাসযোগ্য প্রামাণিক উল্লেখ কোথাও নেই। এশিয়া ইউরোপ আফ্রিকা নিয়ে যে সংযুক্ত মহাভূবিস্তার, গৌরাঙ্গ অসামান্য কয়েকটি মানুষের আকস্মিক আবির্ভাব সম্বন্ধে কিছু অস্পষ্ট কিংবদন্তি ছাড়া তার সঙ্গে নতুন মহাদেশের যোগাযোগের কোনও চিহ্ন স্বভাবতই কোথাও দেখা যায়নি। প্রথম বীজ প্রাচীন মহাদেশ থেকে পেলেও নতুন মহাদেশ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন আর স্বতন্ত্র হয়ে শতাব্দীর পর শতাব্দী কাটিয়েছে এই সিদ্ধান্তই ছিল সন্দেহাতীত।

    হঠাৎ সে সিদ্ধান্তের ভিতও অপ্রত্যাশিতভাবে নাড়া খেয়েছে।

    বেশি দিনের কথা নয়। উনিশশো বাহান্ন খ্রিস্টাব্দ। পেরুর এক অখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক দানিয়েল রুথে এক আজগুবি কিংবদন্তি অনুসরণ করেই আণ্ডিজের মার্কাহাউসি প্লেটো নামে এক দুর্গম মালভূমিতে যাবার চড়াই ভাঙছেন। যে কিংবদন্তি তাঁকে নাচিয়েছে তা হল এই যে পেরু অভিযাত্রী স্প্যানিশ বাহিনী নাকি কোনও এক দুর্গম গোপন অধিত্যকায় নানা মানুষ ও পশুর বিরাট মূর্তি তাদের যাত্রাপথে দেখেছিল।

    একটিমাত্র অত্যন্ত দুরারোহ গিরিবর্ত্ত দিয়ে মার্কাহাউসি প্লেটোতে পৌঁছোনো যায়। সে গিরিপথ দেখেই দানিয়েল রুথে বুঝলেন যে তা মানুষের হাতে তৈরি। প্লেটোতে যাবার রাস্তা পাহাড়ের ভেতর দিয়ে যারা কেটে তৈরি করেছিল তারা রাস্তার ধারে ধারে পাহাড়ের দেয়ালে সব বড় বড় খোপও রেখেছে শত্রু কেউ আক্রমণ করলে পাথর ছুড়ে রোখবার জন্যে।

    এই মালভূমিতে যাদের প্রাচীন বসতির চিহ্ন রুথো আবিষ্কার করেন তারা ইংকাদের বহু আগেকার মানুষ। গোপন এই প্লেটোতে তারা বারোটি কৃত্রিম হ্রদ বানিয়েছিল জল জমিয়ে রাখার জন্যে, সেচের জন্যে প্রকাশ্য ও সুড়ঙ্গ নালা কেটেছিল আর যা করেছিল সেইটেই সবচেয়ে অবিশ্বাস্য।

    তারা পাহাড়ের গায়ে অদ্ভুত রহস্যময় এমন সব মূর্তি গড়েছিল যা নতুন মহাদেশের পক্ষে সত্যিই কল্পনাতীত।

    মূর্তিগুলির একটি হল বিরাট এক কাফ্রির মুখ। নতুন মহাদেশে কাফ্রি জাতির প্রথম পদার্পণ ঘটেছে কলম্বাসের আবিষ্কারের বেশ কিছু পরে ক্রীতদাস হিসাবে। সে আমদানিও হয়েছে কিউবা হিসপানিওলার মতো দ্বীপে। প্রাচীন মহাদেশের প্রায় অগম্য দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম প্রান্তে আণ্ডিজ পাহাড়ের গুপ্ত মালভূমিতে কাফ্রি কোথা থেকে আসবে? তাও কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের কমপক্ষে পাঁচ-ছ শতাব্দী আগে!

    কাফ্রির মাথার সঙ্গে মূর্তিটির সাদৃশ্য যদি কিছুটা কাল্পনিক বলে ধরা হয় তাহলেও অন্য ভাস্কর্যগুলি সম্বন্ধে সন্দেহের অবকাশ নেই। সেগুলি হাতি-ঘোড়া-গোরু ও উটের।

    কলম্বাসের আবিষ্কারের আগে এসব প্রাণীর সঙ্গে আমেরিকার কোনও পরিচয় ছিল না।

    এসব প্রাণীর মূর্তি কারা তাহলে গড়েছে? চাক্ষুষ পরিচয় না থাকলে এ ধরনের মূর্তি গড়া তো সম্ভব নয়। সে পরিচয় যাদের ছিল এমন এক জাতি ওই দুর্গম কৃত্রিম গিরিপথ দিয়ে আগলানো গোপন মালভূমিতে কোথা থেকে এসে বসতি করেছিল?

    না, পেরুর হেঁয়ালি শুধু একটু ভৌগোলিক বিবরণ দিয়ে ঘুচিয়ে দেবার নয়।

    সূর্য কাঁদলে সোনা-র এই হেঁয়ালির দেশে পনেরোশো একত্রিশ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে পিজারো তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে পানামা উপসাগর থেকে তৃতীয়বারের

    অভিযানে পাড়ি দিলেন।

    দু-দুবারের মতো এ অভিযানও কি ব্যর্থ হবে?

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী
    Next Article মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    Related Articles

    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    ঘনাদা সমগ্র ১ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    ঘনাদা সমগ্র ২ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }