Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    প্রেমেন্দ্র মিত্র এক পাতা গল্প632 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ২১. মেয়েটির সমস্ত রহস্য

    মেয়েটির সমস্ত রহস্য এই একটি উক্তিতেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল গানাদোর কাছে। তার অদ্ভুত অপার্থিব সৌন্দর্য, তার বেশভূষার ভিন্নতা, প্রথম যে ভাষা আপনা থেকে সে ব্যবহার করেছিল, সেই সব কিছুরই অর্থ বোঝা গিয়েছিল এবার।

    মেয়েটি তাভানতিসুইয়ুর সেই পরম রহস্যে ঘেরা সূর্যসেবিকা দিব্যকুমারী সমাজের একজন।

    এই সূর্যকন্যাদের কথা শুনলে প্রাচীন রোমের ভৈস্টা দেবীর মন্দিরে পূত হোমাগ্নি অনির্বাণ রাখবার ভার যাদের ওপর দেওয়া হত সেই কুমারীদের বা ভারতের দেবদাসীদের কথা মনে হতে পারে। কিন্তু পেরুর দিব্যাঙ্গনা কুমারী সূর্যসেবিকারা ভেস্টাল ভার্জিন বা দেবদাসীদের থেকে বেশ একটু আলাদা।

    ভেস্টা দেবীর কুমারী সেবিকাদের সঙ্গে সেই সূর্যকন্যা দিব্যাঙ্গনাদের একটি বিষয়ে শুধু মিল। ভেস্টা দেবীর সেবিকাদের মতো এই সূর্যকন্যাদেরও একটি পবিত্র অগ্নি নির্বাপিত না হতে দেওয়ার ভার নিতে হয়। সূর্যদেবের উত্তরায়ণের দিন থেকে যার আরম্ভ এ অগ্নি সেই রেইমি উৎসবের।

    কুমারী দিব্যাঙ্গনারা সূর্যসেবিকা হয়েও কিন্তু সম্পূর্ণ অসূর্যম্পশ্যা।

    একবার সূর্যসেবিকা হবার সৌভাগ্য লাভ করার পর বাইরের জগতের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক তাদের ছিন্ন হয়ে যায়।

    অতি অল্প বয়সে কৈশোরে পা দিতে-না-দিতে তারা তাভানতিনসুইয়ু-র এই চরম গৌরবের জন্যে নির্বাচিত হয়। তারপর নিজেদের আত্মীয়স্বজন, এমনকী পিতামাতাও তাদের আর দেখতে পান না। বাইরের জগতের কোনও পুরুষ কি নারীর অধিকার নেই তাদের কন্যাশ্রমে প্রবেশ করবার।

    পুরুষের মধ্যে একমাত্র ইংকা স্বয়ং আর নারীদের মধ্যে শুধু কয়া বা সম্রাজ্ঞী তাদের আশ্রমে প্রবেশ করতে পারেন।

    সূর্যসেবিকাদের শ্রেষ্ঠ কন্যাশ্রম হল কুজকো নগরে। সেখানে শুধু ইংকা রাজরক্ত যাদের মধ্যে আছে সেইসব পরিবার থেকেই সূর্যকন্যা নির্বাচিত হয়। পরিবার থেকে সূর্যকন্যা নির্বাচিত হওয়া একটা অসামান্য গৌরব। কিন্তু গৌরবের যেমন তেমনই নিদারুণ উদ্বিগ্ন আতঙ্কের ব্যাপারও পরিবারের পক্ষে। সূর্যকন্যাদের সামান্যতম বিচ্যুতিরও ক্ষমা নেই। ভ্রষ্টা কেউ হলে তাকে তো জীবন্ত সমাধি দেওয়া হয়, আর যে পুরুষ এ ব্যাপারে জড়িত থাকে তার নিজেরই শুধু মৃত্যুদণ্ড হয় না, ধূলিসাৎ করে তার গ্রামের বা নগরের বসতির চিহ্ন পর্যন্ত লুপ্ত করে দেওয়া হয়।

    এ রাজ্যে আসবার পর থেকে এই বিচিত্র সূর্যসেবিকাদের সম্বন্ধে গানাদো। যথাসাধ্য অনেক বিবরণই সংগ্রহ করেছিলেন। এটুকুও জেনেছিলেন যে চাঁদের অন্য পৃষ্ঠের মতো তারা অদর্শনীয়া।

    মেয়েটি সেই দিব্যাঙ্গনা সূর্যসেবিকাদেরই একজন শোনবার পর তীব্র বিস্ময়বিহ্বলতায় তাকে লক্ষ করতে গিয়ে স্থানকাল কয়েক মুহূর্তের জন্যে ভুলে গিয়েছিলেন বোধহয়। তারপরই আত্মস্থ হয়ে বলেছিলেন, সূর্যসেবিকা বলে কোনও পরিচয় আর তো তোমার নেই। কন্যাশ্রমের সীমানা পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাইরের আলো-বাতাস আর পাপের সংসারের স্পর্শে তোমার সে নামহীন একাগ্র সাধিকার জীবন শেষ হয়ে গেছে। এখানে তোমায় নাম নিয়ে চিহ্নিত হতে হবে। বললা, কী নামে তোমায় ডাকব?

    একটু থেমে চুপ করে থেকে হঠাৎ উৎসাহভরেই গানাদো বলেছিলেন, পেয়েছি তোমার নাম। তুমি আজ থেকে কয়া।

    না, না। নামটা শুনেই মেয়েটি আপনা থেকেই যেন শিউরে উঠেছিল—আর যে নাম দাও, কয়া নয়।

    কেন নয়! একটু হেসেই এবার বলেছিলেন গানাদো, কয়া মানে রাজেন্দ্রাণী বলে তোমার আপত্তি? কিন্তু রাজেন্দ্রাণী বললেও তোমায় বুঝি তুচ্ছ করা হয়। তবু তোমার নাম আমি কয়াই রাখলাম। আজ সন্ধ্যায় ওই নামেই এসে ডাকব।

    গানাদো আর সেখানে দাঁড়াননি। মেয়েটির দিকে ফিরেও আর না তাকিয়ে সোজা কাক্‌সামালকার অতিথি-মহল্লায় তাঁদের শিবিরের দিকে পা বাড়িয়েছিলেন।

    ফিরে এসেছিলেন সন্ধ্যা না হতেই।

    গুহামুখের গুপ্ত পথের কাছে এসে নাম ধরে ডাকতে কিন্তু তাঁকে হয়নি। কয়া আগে থাকতেই সেখানে এসে একটি পাথর-স্কৃপের আড়ালে তাঁর জন্যে অপেক্ষা করছে।

    তখনও সন্ধ্যার আকাশে সব আলো মিলিয়ে যায়নি। যেন কোনও নববধূর মুখের সলজ্জ রক্তিম আভা ছড়িয়ে আছে পৃথিবীর ওপর।

    সেই অবাস্তব আলোয় কয়া-র স্নিগ্ধ কোমল দুটি চোখে একটি মধুর ঔৎসুক্য যেন দেখেছিলেন গানাদো।

    সে ঔৎসুক্যের উৎস সারাদিনের উপবাসক্লিষ্ট তনু, না তার জাগরণােন্মুখ হৃদয় বিচার করবার সাহস হয়নি গানাদোর।

    শিবির থেকে আনা আহার্য এক জায়গায় রেখে কয়াকে তা তুলে নিয়ে যেতে বলে তিনি কিছু দূরে এসে বসেছিলেন।

    কয়া সে খাবার তুলে নিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু দূরে নয়, তাঁর বেশ কাছেই এসে বসেছিল।

    এত কাছে এসে বসার সাহস তোমার হল? গানাদো বিস্ময়ের সঙ্গে ঈষৎ কৌতুকের স্বরে বলেছিলেন।

    হল। কয়া-র মুখে এই প্রথম হাসি দেখেছিলেন গানাদো। আগেই হওয়া উচিত ছিল। শুধু ইংকা নয়, আমি যে মুইস্কা বংশের মেয়ে তা ভুলে যাওয়া উচিত হয়নি।

    মুইস্কা বংশের মেয়ে

    গানাদো কয়ার কথাটার সবিস্ময়ে শুধু পুনরাবৃত্তি করেছিলেন। তার অর্থ কিছুই বুঝতে পারেননি। এই অজানা বিচিত্র পার্বত্যরাজ্যে পা দেবার পর থেকে এদেশের সব কিছু তিনি যথাসম্ভব খুঁটিয়ে জানবার চেষ্টা করেছেন। এসপানিওল বাহিনীর পণ্ডিত গোছের দুএকজনের তুলনায় তাঁর জ্ঞান যে অনেক বেশি এ নিয়ে তাঁর মনে গোপন একটু গর্বও বোধহয় ছিল। কিন্তু সে গর্ব কয়ার উচ্চারিত ওই একটি শব্দ মুইস্কা চুরমার করে দিয়েছে।

    মুইস্কা বংশের মেয়ে বলতে কী বোঝাতে চায় কয়া?

    মাত্র একদিন এক রাত্রির মধ্যে ভাগ্য তাকে নিয়ে যা ছিনিমিনি খেলেছে তাতে। কিছুটা মাথার গোলমাল হয়ে কয়া কি প্রলাপ বকছে নাকি? তার অমন করে হঠাৎ কাছে এসে বসাটাই তো বেশ একটু অদ্ভুত।

    গানাদো সন্ধ্যার ঘনায়মান অন্ধকারে কয়ার মুখের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলেন।

    সে মুখে স্নিগ্ধ সরল একটু হাসির আভাস। সে হাসিতে বা তার চোখের প্রসন্ন দৃষ্টিতে বাতুলতার লক্ষণের বদলে একটা পরম নির্ভরতার তৃপ্তিই ফুটে উঠেছে।

    নিজের অজ্ঞতাটা প্রথমে গোপন করবার ইচ্ছাই হয়েছিল গানাদোর। বিমূঢ় বিস্ময়ে প্রথমে যেটুকু প্রকাশ করে ফেলেছিলেন তা চাপা দিয়ে কৌশলে মুইস্কা শব্দের রহস্যটা জেনে নেবার কথা ভেবেছিলেন একবার।

    কিন্তু এই শিশির-স্বচ্ছ পবিত্র মেয়েটির সঙ্গে চাতুরী করার কথা মনে যে একবার উঠেছিল তার জন্যেই নিজেকে ধিক্কার দিয়েছিলেন তখনই।

    সোজাসুজিই তারপর জিজ্ঞাসা করেছিলেন, মুইস্কা আবার কী? ওরকম বংশের নামও তো কখনও শুনিনি।

    না শোনবারই কথা। কয়া হেসে বলেছিল, এই তাভানতিনসুইয়ু-তেও কতজন আর মুইস্কাদের কথা শুনেছে! কিন্তু মুইস্কারা না বলে দিলে রেইমি উৎসবের দিন নির্ভুলভাবে কেউ জানতে পারত না। আকাশ-পথে ভেসে যেতে যেতে কবে চন্দ্রদেবীর মুখ যন্ত্রণায় কালো হয়ে উঠবে তা আগে থাকতে জেনে, পারত না প্রস্তুত হয়ে থাকতে। বংশ-মর্যাদায় ইংকাদের সমতুল্য হলেও, পেরুর যাঁরা অধীশ্বর তাঁদের কাছে তাই মুইস্কাদের সম্মান সবচেয়ে বেশি।

    তার মানে মুইস্কারা জ্যোতিষী? সবিস্ময়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন গানাদো।

    সাধারণ জ্যোতিষী নয়, তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু। একটু গর্বই প্রকাশ পেয়েছিল কয়া-র গলার স্বরে—ইংকা রাজ্যে আরও অনেক জ্যোতির্বিদ আছে, কিন্তু দেবাদিদেব পরম জ্যোতির সৃষ্টি-পরিক্রমার গূঢ় রহস্য একমাত্র মুইস্কাদেরই জানা।

    পেরু রাজ্যবাসীরা অন্য অনেক বিষয়ে টেনচটিটলান অর্থাৎ মেক্সিকোর অধিবাসীদের চেয়ে যথেষ্ট অগ্রসর হলেও জ্যোতির্বিদ্যায় যে তাদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে, গানাদো ইতিমধ্যেই তার প্রমাণ পেয়েছিলেন! সমস্ত পেরু র, একমাত্র মুইস্কারাই যে মেক্সিকোর আজটেকদের মতে শুধু নয়, প্রশাত মহাসাগরের ওপারের এশিয়ার সভ্য জাতিদের মতো জ্যোতির্বিদ্যার মূল সূত্রগুলি আশ্চর্য ও স্বাধীনভাবে আবিষ্কার করেছিল কিছুদিন বাদে গানাদো তা জানতে পারেন বিশদভাবে।

    সেই মুহূর্তে কিন্তু এ সব আলোচনায় কোনও উৎসাহ তাঁর হয়নি। নিজের মনের সবচেয়ে বড় কৌতূহলটাই তিনি প্রকাশ করেছিলেন।

    জিজ্ঞাসা করেছিলেন বিমূঢ় বিস্ময়ের স্বরে, কিন্তু তুমি যে শুধু ইংকা নও, মুইস্কাও, তা মনে পড়ায় আমার এত কাছে এসে বসার সাহস হল কী করে? দ্বিধা সংকোচ ভয় কি তাইতেই চলে গেল?

    হ্যাঁ, গেল। গভীর নির্ভরতার সুরে বলেছিলেন কয়া, তোমাকে ভয় করা যে আমার ভুল তা মুইস্কা হিসেবে আগেই আমার বিশ্বাস করা উচিত ছিল। উদয়-সাগর-তীর থেকে তোমার আসা যখন মিথ্যে হয়নি, তখন আর সব গণনাই বা সত্য হয়ে উঠবে না কেন?

    তার মানে এ সব ঘটনা আগেই তোমাদের কেউ গণনা করে জেনেছিলেন! সবিস্ময়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন গানাদো, কে তিনি? কী তাঁর গণনা?

    কী তাঁর গণনা সব জানতে চেও না। মধুর অনুরোধের সুরে বলেছিল কয়া, ভবিষ্যৎ জানবার অধিকার সকলের থাকে না। জানলে জীবনের স্বাদ তাদের কাছে স্লান কিংবা ফিকে হয়ে যায়। একথা বলতেন আমার পিতামহ। তিনিই তাভতিনসুইয়ুর সঙ্গে জড়িত আমার নিয়তি গণনা করে বলে গিয়েছিলেন যে, এ রাজ্যের চরম দুর্যোগের দিনে সূর্যকন্যা হিসেবে আমি ব্রতভ্রষ্টা হব আর আমার জীবনে পরম সহায় রূপে দেখা দেবে উদয়-সাগর-তীরের কোনও এক অচেনা ভিনদেশি।

    একটু থেমে গানাদোর দিকে উৎসুক চোখ তুলে আবার বলেছিল কয়া, এর বেশি আর কিছু বলার অনুরোধ আমায় কোরো না। বলতে নিষেধ আছে আমাদের মুইস্কা সংস্কারে। ভবিষ্যৎকে অজানা থাকতেই দাও। সুখ-দুঃখ জয়-পরাজয় নিয়ে জীবনের সব পাওনাই আসুক গভীর অন্ধকার থেকে অভাবিতের চমক নিয়ে।

    তাই আসুক! কয়ার প্রতি মুগ্ধ আকুলতার সঙ্গে নতুন এক সম্ভ্রম নিয়ে বলেছিলেন গানাদো, তোমার পিতামহ যা বলতেন আমার নিজেরও মত তাই। শুধু একটা কথা তোমায় জিজ্ঞাসা করি। সূর্যসেবিকা যখন তুমি হয়েছিলে তোমার পিতামহ কি তখন জীবিত?

    হ্যাঁ, জীবিত, স্লান একটু হেসে গানাদোর পরের প্রশ্নটা যেন অনুমান করে বলেছিল কয়া।

    তা হলে ব্রতভ্রষ্টা হবে জেনেও তোমাকে সূর্যসেবিকার অনুমতি তিনি দিয়েছিলেন। কেন? কয়ার অনুমিত প্রশ্নই তুলে গানাদো বলেছিলেন, সূর্যকন্যা হওয়া তো এ রাজ্যে হেলাফেলার ব্যাপার নয়। এ জীবন ব্রতে সার্থকতার গৌরব যেমন অসামান্য, স্থলন পতনের লজ্জা গ্লানি লাঞ্ছনা তেমনই অপরিসীম। সব জেনেশুনেও তোমার এ চরম দুর্গতি ঠেকাবার চেষ্টা তিনি করেননি কেন?

    করেছিলেন। মুখে একটি বিষগ্ন ছায়া নিয়ে বলেছিল কয়া, অনিবার্যের বিরুদ্ধে সব সংগ্রামই নিষ্ফল জেনেও করেছিলেন। তবু সূর্যসেবিকারূপে আমার নির্বাচন বন্ধ করতে পারেননি। কৈশোর না পার হতে একদিন কুজকোর প্রধান কন্যাশ্রমের অলঙ্ঘ্য প্রাচীরের আড়ালে আমি নির্বাসিত হয়েছিলাম। সেখানে নিষ্কলঙ্ক দিব্যাঙ্গনার জীবন কিন্তু আমি কাটাইনি। এ রাজ্যের এই চরম বিপর্যয়ের দিনেই প্রথম নয়, মনে পাপের স্পর্শ লেগে ভ্রষ্ট হয়েছি আমি অনেক আগেই।

    তুমি ভ্ৰষ্টা হয়েছ ওই কন্যাশ্রমের মধ্যে? ওই পবিত্র সূর্যকন্যা ব্ৰত তুমি ভঙ্গ করেছ?—বিস্ময়ে সংশয়ে তীক্ষ্ণ হয়ে উঠেছিল গানাদোর গলার স্বর।

    হ্যাঁ, ভ্রষ্টা আমি হয়েছি সত্যিই অনেক আগে।গানাদোর উত্তেজিত সন্দিগ্ধ প্রশ্নের জবাব শান্ত স্নিগ্ধ আর সেই সঙ্গে কেমন যেন অনুশোচনাহীন কণ্ঠে বলেছিল কয়া, ভ্রষ্টা হয়েছি সেইদিন থেকে যেদিন নিজের নিয়তির কথা জেনে শঙ্কিত বিহ্বল হবার বদলে আমার উৎসুক কল্পনা কন্যাশ্রমের অলঙঘ্য দেওয়ালের বাইরে আমি ছড়িয়ে দিয়েছিলাম। কঠিন আচার অনুষ্ঠানের বন্ধনে সূর্যকন্যাদের সমস্ত জীবন বাঁধা। আমার মন সে বন্ধন কিন্তু আর স্বীকার করতে চায়নি। অমোঘ নিয়তিই আমার কাছে যেন মুক্তির দ্বার হয়ে মনে মনে আমায় ব্যভিচারিণী করেছে। এ অমোঘ নিয়তির কথা না জানলে কী হত আমি জানি না, কিন্তু পিতামহ তাঁর মৃত্যুর আগে নিজেই কন্যাশ্রমের কঠিন চিরসতর্ক পাহারা ভেদ করে তাঁর গণনার কথা আমায় জানাবার ব্যবস্থা করেছিলেন।

    কেন? কী করে? গানাদো সবিস্ময়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। কেন তা তিনিই জানেন। মৃদু হেসে বলেছিল কয়া, তবে সূর্যসেবিকাদের কন্যাশ্রমের অলঙ্ঘ্য প্রাচীর বিফল করবার মতো ছিদ্রপথও কিছু কিছু আছে। পিতামহ সেই ছিদ্রপথেই আমার কাছে তাঁর শেষ বার্তা পাঠিয়েছিলেন। নামে যারা সূর্যসেবিকা বাইরের জগতের কাছে তারা অসূর্যম্পশ্যা। স্বয়ং ইংকা কিংবা তাঁর সামাজ্ঞী কয়া ছাড়া তাদের সাক্ষাৎ দর্শন পাবার অধিকার কারও নেই। বাইরের সঙ্গে কন্যাশ্রমের যোগাযোগ রক্ষা করেন বর্ষিয়সী তপোসিদ্ধা কয়েকজন পূর্বতন সূর্যসেবিকা, মামাকোনা বলে যারা পরিচিত। কী উপায়ে জানি না আমাদের এক মামাকোনাকেই প্রভাবিত করে পিতামহ তাঁর হাত দিয়ে আমার কাছে তাঁর গোপন কিপু পাঠিয়েছিলেন। ইংকা নয়, সে আরও জটিল ও উন্নত মুইস্কা কিপু। মামাকোনা চেষ্টা করলেও তার অর্থ উদ্ধার করতে পারতেন না। ছেলেবেলার বংশগত শিক্ষায় আমি তা পেয়েছিলাম। কৈশোর থেকে যৌবনে উত্তীর্ণ হয়ে আমি তখন রেইমি উৎসবের পবিত্র শিখা রক্ষণের ভার পেয়ে সূর্যকন্যারূপে চিহ্নিত হয়েছি। কিন্তু পিতামহের সেই ক-টি সুতুলি কিপু আমার মনের কঠিন নিষ্ঠা ও সংকল্পের ভিত্তিতে চিড় ধরিয়ে দিল। অনাগত ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে ঔৎসুক্যে আমার মন একাগ্র সূর্য-সাধনার পক্ষে অশুদ্ধ হয়েছিল তখনই। পিতামহ সেই উদ্দেশ্যেই তাঁর গণনা আমায় জানিয়ে গেছলেন কি না এক-একবার আমার সন্দেহ হয়।

    কয়ার কথা শেষ হবার পর অনেকক্ষণ গানাদো স্তব্ধ হয়ে বসেছিলেন।

    সন্ধ্যার অন্ধকার তখন বেশ গাঢ় হয়ে চারিদিকের দৃশ্যবৈচিত্র্য মুছে দিয়েছে। মৌন এক বিচ্ছিন্নতার যবনিকায় তাঁরা দুজনে যেন বেষ্টিত।

    অনেকক্ষণ বাদে, ক্রমশ নিবিড় হয়ে ওঠা অন্ধকারে পরস্পরের কাছেও অস্পষ্ট হয়ে আসার পর কয়া কুণ্ঠিত মৃদু কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করেছিল, আমাকে একটু ঘৃণা করছ নিশ্চয়ই।

    ঘৃণা! বিস্মিত স্বরে বলেছিলেন গানাদো, ঘৃণা করব তোমাকে? কেন?

    তোমার কাছে আমার গোপন স্থলনের কথা প্রকাশ না করে পারলাম না বলে। সূর্যসেবিকা হিসাবে আমি তো সত্যিই ভ্রষ্টা। প্রায় অস্ফুট স্বরে বলেছিল কয়া।

    এবার হেসে উঠেছিলেন গানাদো। বলেছিলেন, হ্যাঁ, সত্যিই তুমি স্রষ্টা। কিন্তু এ স্থলন তোমার লজ্জা নয়, তোমার গৌরব। বেগের আনন্দে বয়ে যাবার নদী বলেই বদ্ধ জলের বাঁধানো পাড় তুমি না ভেঙে পারোনি। তোমার পিতামহ এই নিয়তির জন্যেই তোমাকে প্রস্তুত রাখতে চেয়েছিলেন এই কথাই ভাবতে ইচ্ছে করে নাকি?

    গানাদোর কথা কয়া কি সব বুঝেছিল? কোনও উত্তর সে অন্তত দেয়নি।

    অন্ধকারে অনেকক্ষণ নীরবে বসে থাকবার পর গানাদো উঠে পড়ে বিদায় চেয়ে ছিলেন। কয়াকে আশ্রয় নিতে বলেছিলেন গোপনে গুহায়।

    এখনই তুমি যাবে?

    দেহের শিরা উপশিরায় সুধার স্রোত ছড়িয়ে কয়ার ঈষৎ কাতর প্রশ্ন গানাদোর কানে বেজেছিল।

    আবেগ বিহ্বলতার জন্যেই কয়েক মুহূর্ত তিনি বুঝি উত্তর দিতে পারেননি। তারপর শান্ত আশ্বাসের কণ্ঠে বলেছিলেন, হ্যাঁ, এখনই যাব, তবে বেশিক্ষণের জন্যে নয়। তুমি নিশ্চিত থেকো যে, মধ্য রাত্রের আগেই ফিরে এসে সূর্যোদয় পর্যন্ত এ গুহামুখ আমি পাহারা দেব। এখন শুধু কামালকা নগরে একটি দায় না সেরে এলে নয়।

    কী সে দায়, কয়া কিন্তু আর জিজ্ঞাসা করেনি। নীরবে সে গুহামুখের গোপন পথে চলে গেছে।

    কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে থাকার পর গানাদো যা করেছেন তা দেখতে পেলে কয়া কেন, কামালকা নগরের যে কেউ বিস্মিত হত।

    পার্বত্যপথে কিছুদূর পর্যন্ত হেঁটে গানাদো একটি প্রস্তর-স্কুপের আড়ালে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন।

    একটি ঘোড়া সেখানে বাঁধা। ঘোড়াটির বিশেষত্ব এই যে, অন্ধকারেও তার গা থেকে যেন ক্ষীণ একটু সাদা আলো ছড়াচ্ছে। ভাল করে লক্ষ করলে অবশ্য দেখা যেত ঘোড়ার গায়ের এ শুভ্রতা স্বাভাবিক নয়। কাছের একটি পাত্রই তার প্রমাণ। কাক্‌সামালকা শহরের বাড়িগুলি যার কল্যাণে সবই উজ্জ্বল ধবল সেই চুনই খানিকটা রাখা আছে পাত্রটিতে।

    গানাদো নিজেই যেভাবে বেশ বদল করেছেন তা একটু অদ্ভুত। যা পরেছিলেন তার ওপর সাদা আলখাল্লা জাতের একটি পোশাক তিনি চাপিয়েছেন। কোমরবন্ধে সে আলখাল্লা বেঁধে খাপ সমেত তলোয়ার তো সেখানে ঝুলিয়েছেনই, তার সঙ্গে আর একটি যা জিনিস নিয়েছেন সেইটিই বিস্ময়কর। জিনিসটি এমনিতে দেখলে একটা লম্বা দড়ি ছাড়া কিছু মনে হয় না।

    এই দড়িটি জিনের ওপর রেখে ঘোড়া খুলে তাতে সওয়ার হয়ে আপাদমস্তক শুভ্র আবরণে ঢেকে গানাদো যখন নগরের দিকে রওনা হয়েছেন তখন সত্যিই ঘোড়া সমেত তাঁর মূর্তি অলৌকিক কোনও আবির্ভাব বলে মনে করা কারও পক্ষে অস্বাভাবিক ছিল না।

    রাতের পর রাত নগরের নির্জন পথে এ মূর্তি দেখবার সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য কারও কারও হয়েছে তার পর। কামালকা নগরে পেরুবাসী তো বটেই, এসপানিওলদের মধ্যেও এ মূর্তি নিয়ে তখনই বিস্ময় সংশয়ভরা আলোচনা শুরু হয়ে গেছে।

    শুধু কাকসামালকা নয়, আর-এক জায়গাতেও ভীরাকোচারূপী ও মূর্তি কীভাবে যে কিছুকাল বাদেই আলোচিত হয়েছে তা জানলে গানাদো নিজেই বোধহয় একটু বিচলিত হতেন।

    জায়গাটির নাম টম্‌বেজ বন্দর। আলোচনা যারা করেছে তাদের দু-জনেই। আমাদের চেনা একজনের নাম গাল্লিয়েখো আর একজন মার্কুইস গঞ্জালেস দে সোলিস।

    মার্কুইস গঞ্জালেস দে সোলিসের কাছে স্পেন ও মেক্সিকো দুই ই একটু বেয়াড়া হয়ে ওঠায় অজানা নতুন মহাদেশ পেরুতেই ভাগ্য পরীক্ষা তার কাছে সুবিধের মনে হয়েছে। পানামা থেকে একটি অভিযাত্রী জাহাজে সে তখন সবে এসে নেমেছে। টম্‌বেজ-এ।

    কামালকায় যার মুখ দেখানো আর সুবিধের নয়, পিজারোর হুকুমে বিতাড়িত সেই গাল্লিয়েশখাও তখন পাহাড় থেকে নেমে টমবেজ বন্দরে ওই জাহাজেই ফিরে যাবার জন্যে অপেক্ষা করছে।

    বন্দরের পথেই দুজনের দেখা। মার্কুইস গঞ্জালেস দে সোলিসকে না হলেও পুরোনো আলাপী সোরাবিয়াকে গাল্লিয়েখো চিনেছে। সোরাবিয়া সে পরিচয় অস্বীকার করেনি।

    নেশার আড্ডায় সোরাবিয়ার না হোক, গাল্লিয়েখোর জিভের রাশ আলগা হয়ে গেছে তার পর। অদ্ভুত ভীরাকোচা মূর্তির কাছে তার চরম লাঞ্ছনার কথা সবই বলে ফেলেছে গাল্লিয়েখো।

    শুনতে শুনতে উত্তেজিত হয়ে উঠেছে সোরাবিয়ার মুখ। গাল্লিয়েখোর কপালের আর মুখের অসি কলঙ্ক চিহ্নগুলি তখনও মেলায়নি। সেগুলি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পরীক্ষা করে প্রায় নিষ্পেষিত দন্তে অদ্ভুতভাবে হেসে সোরাবিয়া বলেছে, তোমার এ লাঞ্ছনার শোধ শিগগিরই হবে, গাল্লিয়েখো। কাকসামালকার এসপানিওলদের বিভীষিকা, ভীরাকোচার এ অবতারকে আমি বোধহয় চিনি।

    তীব্র উৎসাহ উত্তেজনা নিয়ে সেই দিনই সোরাবিয়া রওনা হয়েছে কাক্‌সামালকার পথে।

    গানাদো তখন অবশ্য কাকসামালকায় নেই। সোনাবরদারদের দলে সবে কুজকো শহরে পৌঁছে ইংকা সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ সূর্যমন্দির কোরিকাঞ্চায় আশ্রয় নিয়ে কয়াকে। তিনি সৌসায় হুয়াসকার-এর কাছে কিপু নিয়ে দুঃসাহসিক দৌত্যে পাঠাবার আয়োজন করছেন।

    হুয়াসকার-এর কাছে গোপন কিপু নিয়ে যে দৌত্যে যাবে সোনা-বরদার দলের সঙ্গে কোরিকাঞ্চার সূর্যমন্দিরে আশ্রয় পাবার পরই তার চেহারা পোশাক আশ্চর্যভাবে পালটে গেছে।

    হালকা পাতলা নেহাত কিশোর গোছের যে একজনকে সোনা-বরদার দলের সঙ্গে কামালকা থেকে কুজকো পর্যন্ত আসতে দেখা গেছল কুজকো শহরে পা দিয়ে

    সোনা-বরদার দল কোরিকাঞ্চায় ঢোকবার পর আর তার পাত্তা পাওয়া যায়নি।

    কোরিকাঞ্চার মন্দিরে সে যেন কোথায় হারিয়ে গেছে বলেই মনে হয়েছে প্রথমে।

    তা কোরিকাঞ্চার মন্দিরে হারিয়ে যাওয়া এমন কিছু আশ্চর্য তো নয়! কুজকো শহরের একেবারে মাঝখানে এ যেন বিশাল এক আলাদা জগৎ।

    প্রধান সুর্য-দেউল একটিই। কিন্তু সেটিকে ঘিরে অসংখ্য ছোট বড় সব আয়তন চারিদিকে বহুদূর পর্যন্ত যেন অনুগত সেবক-সেবিকার মতো ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। সূর্য-মন্দির থেকে শুরু করে ছোট বড় সব দেবায়তনই পাথরে তৈরি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে সেগুলির ছাউনি ঘাসের। বাইরে সেগুলির চেহারা তেমন জমকালো না হলেও ভেতরের ঐশ্বর্য ইউরোপের অনেক রাজা-মহারাজাদেরও চোখ কপালে তোলবার মতো। সারা ভানতিনসুইয়ু-ই বলতে গেলে সোনা রুপোয় মোড়া। তার মধ্যে সমস্ত দেশের সেরা যা কিছু সোনাদানা সব জড়ো হয়েছে এই কোরিকাঞ্চার দেবস্থানে। সোনার ছড়াছড়ি বলেই এ দেবায়নের নাম হয়েছে কোরিকাঞ্চা। কোরিকাঞ্চা মানে হল সোনার পুরী।

    আশ্চর্য তো! উৎসাহ দমন করতে না পেরে মেদভারে যিনি হস্তীর মতো বিপুল সেই সদাপ্রসন্ন ভবতারণবাবু শ্রীঘনশ্যাম দাসকে বাধা দিয়ে ফেলেছেন।

    বাধা পেয়ে দাসমশাই একটু ভ্রুকুটিভরে তাকাতে বেশ একটু অপ্রস্তুত হলেও ভবতারণবাবু তাঁর বিস্ময়সূচক মন্তব্যটা শেষ না করে পারেননি।

    কুণ্ঠিতভাবে দুবার ঢোক গিলে বলেই দিয়েছেন, কোরিকাঞ্চার মানে সোনার পুরী হওয়া ভারী অদ্ভুত নয়?

    অদ্ভুতটা কোথায় দেখলেন?—মস্তক যাঁর মর্মরের মতো মসৃণ সেই শিবপদবাবু তাঁর পাণ্ডিত্যের উচ্চ শিখর থেকে একটু অবজ্ঞার খোঁচা না দিয়ে পারেননি—কাঞ্চা। শব্দটার সঙ্গে কাঞ্চনের সম্পর্ক খুঁজছেন নাকি? ভাবছেন, সংস্কৃতের কাঞ্চন শব্দটাই কালাপানি, ভারত সমুদ্র আর গোটা প্রশান্ত মহাসাগর পেরিয়ে গিয়ে পেরুতে কাঞ্চা হয়েছে? আর তা যদি হয়ে থাকে তা হলে ইংকা সভ্যতার পেছনে ভারতবর্ষই উঁকি দিচ্ছে বলে ধরে নিচ্ছেন?

    ভবতারণবাবু কাঁচুমাচু, সভার অন্য সবাই একটু দিশাহারা।

    কিন্তু সাহায্য এসেছে অপ্রত্যাশিতভাবে শ্রীঘনশ্যাম দাসের কাছ থেকেই। শিবপদবাবুর ইস্কাবনের টেক্কার ওপর চিড়েতনের রঙের দুরির তুরুপ মারবার এমন সুযোগ কি দাসমশাই ছাড়েন!

    ঈষৎ কুঞ্চিৎ চোখে শিবপদবাবুর দিকে চেয়ে তিনি বলেছেন, ভারতবর্ষ উকি দিচ্ছে কি না কেউ জানে না, তবে সেকালের কুইচুয়া ভাষার কয়েকটা শব্দ যে কৌতূহলটা জাগাবার মতো এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। যেমন ধরুন অমাউতা। উচ্চারণ অমাউত্যা ছিল মনে হয়। সংস্কৃতে অমাত্য হল রাজাকে মন্ত্রণা দেন এমন প্রাজ্ঞ বিদ্বান মানুষ আর পেরুতেও অমাউত্যা বলতে বোঝাত বিজ্ঞ পণ্ডিত। তফাত শুধু ছিল এই যে, রাজাকে মন্ত্রণা দেবার বদলে ইংকা রাজপুত্রের শিক্ষাদীক্ষা দেবার ভার তাঁদের ওপর থাকত। শুধু কাঞ্চা আর অমাউত্যা কেন, পেরু শব্দটাই সংস্কৃত পারুর কথা মনে করিয়ে দেয়। পারু মানে সংস্কৃতে সূর্য। কাঞ্চা শুনে ভবতারণবাবুর কান একটু খাড়া হয়ে ওঠা সুতরাং দোষের নয়।

    শিবপদবাবু পালটা কিছু প্রশ্ন তোলার জন্যে যদি তৈরি হয়ে থাকেন, তার সুযোগ দাসমশাই তাঁকে দেননি। সরাসরি আবার গল্পে গা ভাসিয়ে দিয়েছেন—

    যে কোরিকাঞ্চার কথা বললাম কুজকোর একেবারে বুকের মাঝখানে হৃদপিণ্ডের মতো আর-এক সেই মন্দিরনগর চারিদিকে আবার যথেষ্ট উঁচু দেওয়াল দিয়ে ঘেরা। উৎসবের দিনেও এক ইংকা ছাড়া আর সকলকে সে নগরে ঢোকবার আগে দেওয়ালের বাইরে জুতো খুলে ঢুকতে হয়।

    এ মন্দির-নগরের হর্তাকর্তা হলেন ভিলিয়াক ভমু, অর্থাৎ প্রধান পুরোহিত। পেরু সাম্রাজ্যে মর্যাদার দিক দিয়ে তাঁর স্থান ইংকার পরেই। ইংকা রাজরক্ত গায়ে না থাকলে কোরিকাঞ্চার ভিলিয়াক ভমু হওয়া যায় না। কোরিকাঞ্চাতেই তাঁর অধীনে চার হাজারের ওপর তাঁবেদার।

    এ রকম একটি মন্দির-নগরের ভিড়ের মধ্যে অনায়াসেই নিপাত্তা হওয়া সম্ভব। গানাদোর দলের কিশোর চেহারার এক সোনাবরদার তা-ই হয়েছে। কিন্তু নিখোঁজ হলেও নিশ্চিহ্ন সে হয়নি। কয়েকদিন বাদেই তাকে ওই কোরিকাঞ্চাতেই দেখা গেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপে।

    মন্দির-নগরের একটি অতিথিশালায় গানাদো অন্যান্য সোনা বরদারদের সঙ্গে তখন আশ্রয় পেয়েছেন। ইতিপূর্বে সোনাবরদার হিসেবে যারা এসেছে, এই অতিথিশালাতেই আশ্রয় নিয়ে তারা আতাহুয়ালপার হুকুমনামা ভিলিয়াক ভমুর কাছে দাখিল করেছে। সে হুকুমনামা অনুযায়ী রাজপুরোহিত ভারে ভারে সোনা তাদেরই মারফত পাঠিয়েছেন কামালকায়।

    এবারে কামালকা থেকে সোনাবরদারদের দল মন্দির-নগরে এসে আশ্রয় নেবার পর দিন কয়েক কেটে যাওয়া সত্ত্বেও আতাহুয়ালপার হুকুম নিয়ে কেউ তাঁর কাছে না আসায় রাজপুরোহিত বেশ একটু অবাক হয়েছেন।

    কোরিকাঞ্চা উজাড় করে আতাহুয়ালপার হুকুম তামিল করতে যে তাঁর ভাল লাগে তা নয়, মনে মনে আতাহুয়ালপার এ অন্যায় আদেশ তাঁর কাছে বাতুলতার লক্ষণ বলেই মনে হয়। কিন্তু বিদেশি শত্রুর হাতে বন্দি হলেও আতাহুয়ালপা-ই এ রাজ্যের সর্বেসর্বা। ঘাড়ে একটা মাত্র মাথা নিয়ে তাঁর আদেশের প্রতিবাদ করা যায় না।

    সোনাবরদারদের কেউ তাঁর সঙ্গে দেখা না করতে আসায় রাজপুরোহিত প্রথমে অবাক এবং পরে তাই চিন্তিত হয়ে উঠেছেন। পাছে সোনাবরদারদের আলস্য কি গাফিলতি তাঁর নিজের অবাধ্যতা বলে কেউ ধরে বসে এই ভয়ে অতিথিশালায় নিজেই তিনি সোনা বরদারদের খোঁজ নিতে পাঠিয়েছেন।

    সেখান থেকে খবর যা পাওয়া গেছে তা দুর্ভাবনা করবার মতো নয়। সোনাবরদার দল রেইমি-র উৎসব না দেখে কুজকো থেকে রওনা হবে না। উৎসবের এখনও কয়েকদিন দেরি আছে। তাই তারা ভিলিয়াক ভমুকে এ কয়দিন বিরক্ত করেনি। তাদের হয়ে একজন সেইদিন আতাহুয়ালপার হুকুমনামা নিয়ে তাঁর কাছে যাচ্ছে।

    সোনা বরদারদের প্রতিনিধি হয়ে এসেছে একজন ঠিকই কিন্তু তাকে দেখে রাজপুরোহিত একেবারে বিমূঢ়।

    কামালকা থেকে সোনা-বরদারদের দলকে যারা কুজকো আসতে দেখেছে। তাদেরও সে মূর্তি একটু বিস্মিত, সন্দিগ্ধ কি করত না? সে দলের কিশোর গোছের একটি চেহারার সঙ্গে একটা রহস্যজনক সাদৃশ্য তাদেরও লক্ষ এড়াত না বোধহয়। তবু সাক্ষাৎ নক্ষত্রলোক থেকে নেমে আসা অপ্সরার মতো সুন্দরী মেয়েটিকে সেই সোনা-বরদারদের একজন বলে ভাবা বেশ কঠিন হত তাদের পক্ষে।

    গানাদো যার নাম কয়া রেখেছিলেন সূর্যসেবিকাদের নিতান্ত বেঢপ পোশাকের বদলে কুজকোর সম্ভ্রান্ত ঘরের মেয়েদের বেশে তার সৌন্দর্য সত্যিই যেন অপার্থিব হয়ে উঠেছে।

    রাজপুরোহিতও সে মূর্তি দেখে প্রথমটা বিস্মিত বিহ্বল হয়েছেন সত্যিই, কিন্তু তারপরে জ্বলে উঠেছেন রাগে।

    তাঁর সঙ্গে এটা কী ধরনের পরিহাস! নারীর সৌন্দর্য দেখবার চোখ থাকলেও তাতে মোহিত হয়ে বুদ্ধিশুদ্ধি হারাবার বয়স তাঁর নেই।

    সোনাবরদারদের প্রতিনিধি হিসেবে একটি সুন্দরী মেয়েকে তাঁর কাছে পাঠানো তাই তাঁর ক্ষমার অযোগ্য রসিকতার স্পর্ধা বলে মনে হয়েছে।

    কী করতে এসেছ তুমি এখানে? বজ্রস্বরে বলেছেন ভিলিয়াক ভমু, এসেছ কোন অধিকারে!

    একটি মধুর সরল হাসি ফুটে উঠেছে কয়ার মুখে।

    তাঁর অমন প্রচণ্ড ধমকের উত্তরে এ হাসিতে রাজপুরোহিত একটু অস্বস্তি বোধ করেছেন। তবু কঠিন স্বরে আবার বলেছেন, উৎসবে অনুষ্ঠানে ছাড়া কোরিকাঞ্চার এ সূর্যবেদিকার কক্ষে মেয়েদের প্রবেশ নিষেধ তুমি জানো না?

    জানি। শান্ত চোখ তুলে স্নিগ্ধস্বরে বলেছে কয়া, তবে একথাও জানি যে এ নিষেধ কারও কারও জন্যে নয়।

    হ্যাঁ, নয়। স্নিগ্ধ স্বরের কথাগুলিতে স্পর্ধার আভাস প্রচ্ছন্ন বলে সন্দেহ করে রাজপুরোহিত আরও রূঢ় হয়ে উঠেছেন, কিন্তু নয় শুধু কাদের জন্যে? শুধু ইংকা রাজঅন্তঃপুরিকা সূর্যসেবিকাদের কন্যাশ্রমের প্রধান মামাকোনার, আর মুইস্কা বংশের কুমারীদের জন্যে।

    আমি মুইস্কা বংশেরই কুমারী, একটু যেন বিষণ্ণ সুরেই বলেছে কয়া। তুমি মুইস্কা!—সন্দিগ্ধ স্বরে জিজ্ঞাসা করেছেন রাজপুরোহিত, তোমায় বিশ্বাস করব কেমন করে?

    আমায় বিশ্বাস করতে হবে না। মৃদু একটু হেসে বলেছে কয়া, যাঁর কাছ থেকে আমি এসেছি সেই মহামহিম আতাহুয়ালপার আদেশবাহী কিপু থেকেই তাঁর যা নির্দেশ তার সঙ্গে আমার পরিচয়ও জানতে পারবেন।

    রাজপুরোহিত ভ্রুকুটিভরে.কয়ার হাত থেকে আতাহুয়ালপার হুকুমনামা এবার নিয়েছেন।

    সেটির ওপর চোখ বোলাতে গিয়ে তাঁর ভ্রুকুটি প্রথমে আরও তীক্ষ্ণ হয়ে উঠেছে। তারপর কেমন একটা সংশয়-বিহ্বলতার ছায়া ফুটে উঠেছে তাঁর দৃষ্টিতে।

    কয়ার দিকে যেভাবে তিনি চেয়েছেন তাতে মনে হয়েছে আতাহুয়ালপার এ নির্দেশের কিপুই জাল বলে বুঝি তিনি ঘোষণা করবেন।

    কিন্তু তা তিনি করেননি। করা সম্ভব নয়। ইংকা নরেশের নিজস্ব গোপন এমন কিছু গ্রন্থিবৈশিষ্ট্য এ কিপুতে আছে যার রহস্য একমাত্র ইংকা নরেশ স্বয়ং, পেরুর রাজপুরোহিত আর প্রধান সেনাপতিই জানেন। অন্য কারও পক্ষে তা নকল করা অসম্ভব।

    এ কিপু সুতরাং অবিশ্বাস করা যায় না। কিন্তু তাতে যে আদেশ দেওয়া হয়েছে তা সত্যিই বিশ্বাসের বাইরে। আতাহুয়ালপার কিপুতে এবার সোনা পাঠাবার নির্দেশ নেই।

    দূতী হিসেবে মুইস্কা বংশের মেয়েটির পরিচয় দিয়ে এমন একটি কাজে তাকে যথাসাধ্য সাহায্য করার আদেশ আছে যা সর্বনাশা বাতুলতা বলেই মনে হয়েছে। রাজুপুরোহিতের।

    আতাহুয়ালপা জানিয়েছেন যে, তাঁর দূতী মুইস্কা কুমারী সৌসা দুর্গে বন্দি হুয়াসকার-এর কাছে একটি বিশেষ প্রস্তাব নিয়ে যাচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব তাকে সৌসা দুর্গে পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা ভিলিয়াক ভমুকে করতে হবে। আর আতাহুয়ালপার প্রস্তাবে রাজি হলে মুক্ত করতে হবে হুয়াসকারকে।

    মুক্ত করতে হবে হুয়াসকারকে!

    কিপুর রঙিন গ্রন্থিগুলোর ভুল অর্থ করেছেন কি না একবার এমন সন্দেহ হয়েছে। রাজপুরোহিতের।

    হুয়াসকারকে মুক্ত করা মানে তো জেনে শুনে গলায় দোকর মরণফাঁস টানা। আতাহুয়ালপার গলায় সাদা বিদেশি শয়তানের ফাঁস তো লাগানোই আছে, তার ওপর হুয়াসকারকে ছেড়ে দিলে সর্বনাশের কি বাকি থাকবে কিছু?

    আতাহুয়ালপার প্রস্তাবে রাজি হলে তবে হুয়াসকারকে ছাড়বার কথা আছে। অবশ্য।

    কিন্তু সত্যের তেজ ছাড়া মিথ্যের এক রত্তি কালো ছায়া যাঁর দেহে নেই হুয়াসকার। কি সেই সূর্যদেব? ছাড়া পাবার জন্যে আতাহুয়ালপার প্রস্তাবে রাজি হবার ভান করতে তার আটকাচ্ছে কোথায়? একবার ছাড়া পেলেই সে যে নিজমূর্তি ধরবে, এ-বিষয়ে কোনও সন্দেহই নেই। কী বিশ্বাসে হুয়াসকারকে এরকম সুযোগ তা হলে দেওয়া হচ্ছে?

    এরকম অনেক প্রশ্নেই রাজপুরোহিতের মন অস্থির হয়ে উঠেছিল। এতসব উদ্বেগ দুর্ভাবনা কি সত্যিই ইংকা নরেশের বিপদের কথা ভেবে? তা যদি হয় তা হলে আতাহুয়ালপা নিজেই যে এসব প্রশ্ন একদিন তুলেছিলেন এইটুকু জানলে রাজপুরোহিত বিস্মিত হতেন নিশ্চয়।

    গানাদোর আর সব পরামর্শ মেনে নিলেও প্রথমে আতাহুয়ালপা হুয়াসকারকে মুক্তি দেওয়ার সম্পূর্ণ বিপক্ষে ছিলেন সত্যিই। বিদেশি শত্রুর বিরুদ্ধে মরণপণ করে আতাহুয়ালপার পাশে দাঁড়িয়ে লড়বে, এমন কথা দিলে হুয়াসকারকে মুক্তি দেওয়া হবে।

    কিন্তু তার কথার দাম কী? গভীর সন্দেহের সঙ্গে জিজ্ঞাসা করেছিলেন আতাহুয়ালপা। বলেছিলেন, মুক্তি পাবার জন্যে সে তো অম্লান বদনে কথা দেবে মিথ্যে করে।

    হ্যাঁ, মিথ্যে করেই কথা দিতে পারেন, বলেছিলেন গানাদো, কিন্তু মুক্তি পাবার পর তিনি কথা রাখবেন সত্যি করে।

    কেন? বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন আতাহুয়ালপা।

    কারণ আপনার বিরুদ্ধে যত আক্রোশই থাক, সাচ্চা ইংকা হলে, মুক্তি পাবার পর আরও ভাল করে তিনি বুঝবেন যে সৌসা দুর্গ থেকে ছাড়া পাওয়াটা কিছুই নয়, বিদেশি শত্রুকে না তাড়ানো পর্যন্ত সমস্ত পেরুই সৌসা দুর্গের চেয়ে অসহ্য বন্দিশালা। আর বিদেশি শত্রুকে তাড়াতে হলে আপনার পাশে না দাঁড়ালেও নয়।

    আতাহুয়ালপা এর পর আর কোনও প্রশ্ন তোলেননি।

    রাজপুরোহিতের মনে অসংখ্য প্রশ্নের খোঁচা কিন্তু থেকেই গেছে। সে সমস্ত এই মেয়েটির কাছে তোলবার নয়। তাকে শুধু একটি প্রশ্নই তিনি করেছেন, সৌসায় হুয়াসকার-এর কাছে তোমায় পাঠাবার ব্যবস্থা করছি। কিন্তু তুমি যে সত্যিই আতাহুয়ালপার দূতী তা তিনি বিশ্বাস করবেন কেন? এটা যে তাঁকে ফাঁদে ফেলবার একটা ষড়যন্ত্র নয় তা তিনি বুঝবেন কীসে?

    যাতে বোঝেন সেই ব্যবস্থাই করেছেন গানাদো। গভীর বিশ্বাসের সঙ্গে বলেছে। কয়া।

    গানাদো! তিনি আবার কে?সবিস্ময়ে জিজ্ঞাসা করেছেন রাজপুরোহিত।

    তিনি উদয়-সমুদ্র-তীরের এক আশ্চর্য মানুষ! কয়ার কণ্ঠস্বর গাঢ় হয়ে উঠেছে। মুগ্ধতায় তাভানতিনসুইয়ুকে উদ্ধার করবার সমস্ত পরিকল্পনার মূলে তিনিই আছেন।

    রাজপুরোহিতের চোখে হঠাৎ কী যেন একটা ঝিলিক দেখা গেছে। কৌতূহল আর সম্রম মেশানো গলাতেই যেন জিজ্ঞাসা করেছেন, এ মহাপুরুষের দেখা পাওয়া কি সম্ভব?

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী
    Next Article মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    Related Articles

    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    ঘনাদা সমগ্র ১ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    ঘনাদা সমগ্র ২ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }