Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    প্রেমেন্দ্র মিত্র এক পাতা গল্প632 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ২৩. অনুমান ভুল হয়নি গানাদোর

    অনুমান ভুল হয়নি গানাদোর। যে অতিথিশালায় সোনাবরদার হিসেবে তাঁরা। আশ্রয় পেয়েছিলেন তার দরজায় সত্যিই রাজপুরোহিতের অনুচর প্রহরীরা তখন খাড়া হয়ে আছে।

    রাজপুরোহিতের সূর্যবেদিকার কক্ষ থেকে বার হয়ে সে আস্তানায় ফিরে গেলে এ প্রহরীদের সঙ্গে তাঁর দেখা হত। রাজপুরোহিত বেশিক্ষণ অপেক্ষা করেননি। গানাদো বিদায় নিয়ে চলে যাবার খানিক বাদেই তাঁর অনুচরদের পাঠিয়েছেন।

    অনুচর প্রহরীরা অতিথিশালায় এসে জোর-জুলুম কিছু করেনি। অত্যন্ত সম্ভ্রমের সঙ্গেই সোনাবরদারদের নায়ক গানাদোর কাছে রাজপুরোহিতের একটা অনুরোধ জানাতে চেয়েছে। রাজপুরোহিত বিশেষ জরুরি কোনও প্রয়োজনে গানাদোর সঙ্গে এখনই আর একবার দেখা করতে চান। প্রহরীরা তাই গানাদোকে সসম্মানে নিয়ে যেতে এসেছে।

    কিন্তু গানাদো তো এখানে নেই! অতিথিশালা থেকে বেরিয়ে এসে পাউলো টোপাই প্রহরীদের প্রধানকে বলেছেন, তিনি তো রাজপুরোহিতের সঙ্গেই দেখা করতে গেছেন।

    হ্যাঁ, গেছলেন? বিমূঢ়ভাবে বলেছে প্রহরী-প্রধান, দেখা শেষ করে চলেও এসেছেন অনেক আগে। এতক্ষণে তো তাঁর এখানেই ফিরে আসবার কথা।

    ফিরে কিন্তু গানাদো আসেননি। নিরুপায় হয়ে প্রহরী-প্রধান পাউলো টোপাকেই রাজপুরোহিতের কাছে নিয়ে গেছে। পাহারায় দাঁড় করিয়ে গেছে কয়েকজন

    অনুচরকে গানাদো যদি ফিরে আসেন সেই ভরসায়।

    প্রহরীদের দাঁড়িয়ে থাকা-ই সার হয়েছে। গানাদোর দেখা তারা পায়নি। ওদিকে পাউলো টোপাকে তখন অস্থির হয়ে উঠতে হচ্ছে রাজপুরোহিতের জেরায়।

    গানাদো এখনও অতিথিশালায় ফেরেননি কেন? এখান থেকে আর কোথায় তাঁর পক্ষে যাওয়া সম্ভব?

    পাউলো টোপা সরলভাবেই এ বিষয়ে তাঁর অজ্ঞতা জানিয়েছেন। তাতে রেহাই মেলেনি এবং আরও কঠিন প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে।

    বিদেশি শত্রুদেরই একজন হওয়া সত্ত্বেও গানাদো তাঁদের দলপতি হয়েছেন কী করে?

    আতাহুয়ালপার এত গভীর বিশ্বাস তাঁর ওপর কেমন করে জন্মাল যে তাঁরই পরামর্শ নিয়ে এমন বিপজ্জনক ষড়যন্ত্রের মধ্যে নিজেকে জড়িয়েছেন?

    পাউলো টোপা এসব প্রশ্নের উত্তর যতটুকু জানতেন তাও দেননি। রাজপুরোহিতের গলার স্বর আর চোখের দৃষ্টিতে এমন কিছু তিনি পেয়েছেন যা তাঁকে সতর্ক করে দিয়েছে। তিনি জানিয়েছেন যে, ইংকা নরেশ আতাহুয়ালপার আদেশ পালনই করতে সোনাবরদার দলের সঙ্গে তিনি এসেছেন। গানাদো সম্বন্ধে কোনও প্রশ্নের উত্তর দেবার ক্ষমতা তাঁর নেই।

    রাজপুরোহিত বিশ্বাস করেননি সে কথা। পাউলো টোপার কাছ থেকে কোনও কথা বার করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত তাঁকে বন্দি করেছেন। সেই সঙ্গে প্রহরীদের আদেশ দিয়েছেন যেমন করে তোক গানাদোকে খুঁজে আনবার।

    গানাদোকে কিন্তু খুঁজে পাওয়া যায়নি। কোরিকাঞ্চার মন্দির-নগর তোলপাড় করে ফেলেছে রাজপুরোহিতের অনুচরেরা। সেখানে অন্তত তিনি নেই।

    কোরিকাঞ্চায় না থাকলে কুজকো নগরেই কোথাও তিনি গা ঢাকা দিয়ে আছেন নিশ্চয়। সেইখানেই তাঁর খোঁজ করা দরকার। কিন্তু কুজকো শহরে তাঁর সন্ধান করা বেশ একটু কঠিন হয়ে পড়েছে তখন রেইমি-র উৎসবের দরুন।

    সূর্যদেবের উত্তরায়ণ একেবারে আসন্ন। রেইমির উৎসবের আয়োজন তার আগে থাকতেই শুরু হয়ে গেছে। দূর-দূরান্তর থেকে এ উৎসবে যোগ দিতে যারা কুজকোয় এসে জড়ো হয়েছে তাদের ভিড়ে নগরে চলাফেরাই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

    লুকিয়ে থাকতে চাইলে এ জনারণ্যে কাউকে খুঁজে বার করা অসম্ভব।

    গানাদোর খোঁজ না পেয়ে অত্যন্ত অস্থির উত্তেজিত হয়ে উঠেছেন রাজপুরোহিত। গানাদো কি তা হলে কুজকো ছেড়ে সৌসার দিকেই গেছে? না, তা অসম্ভব। প্রথম দিন থেকেই সৌসার পথে তিনি কড়া পাহারা রেখেছেন।

    তাঁর কাছে আতাহুয়ালপার দূতী হয়ে যে এসেছিল সেই মুইস্কা মেয়েটির কথা এবার মনে পড়েছে তাঁর। দলপতি গোছের কারও সাহায্য ও নির্দেশ না পেলে তার মতো অবলা অসহায় একটি মেয়ের যে কিছু করবার ক্ষমতা নেই তা জেনেই এ পর্যন্ত তাকে হিসেবের মধ্যে ধরেননি।

    এবার কিন্তু তাকেও প্রয়োজন মনে হয়েছে। পাউলো টোপা চরম উৎপীড়নেও কোনও গোপন কথা প্রকাশ করেননি। কোনও প্রলোভনেও আতাহুয়ালপার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতায় সম্মত করা যায়নি তাঁকে।

    পাউলো টোপার বেলা যা বিফল হয়েছে ওই মুইস্কা মেয়েটির বেলা তা সফল হতে বাধ্য। শুধু উৎপীড়নের ভয় দেখিয়েই মেয়েটির কাছে কথা যা আদায় করবার করা যাবে নিশ্চয়। তা ছাড়া তাকে টোপ করে গানাদোর মতো ধুরন্ধরকে ধরা হয়তো শক্ত হবে না। ইতিপূর্বে এ কৌশলটা কেন মাথায় আসেনি ভেবে আফশোশ হয়েছে। রাজপুরোহিতের।

    এইবার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত ঘা খেয়েছেন রাজপুরোহিত। মুইস্কা মেয়েটি কোথায় আশ্রয় নিয়েছে তা তাঁর জানা। দূর-দূরান্তরের তীর্থযাত্রিণীদের সেই অতিথিশালায় কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। জানা গেছে যে গানাদো যেদিন থেকে নিরুদ্দেশ মেয়েটিকেও সেই দিন থেকে অতিথিশালায় আর দেখা যায়নি। তীর্থযাত্রিণীদের অতিথিশালায় থাকা না থাকা তাদের স্বেচ্ছাধীন বলেই এ বিষয়ে সন্দেহ করবার কিছু পায়নি কেউ।

    মুইস্কা মেয়েটি কি তা হলে গানাদোর সঙ্গেই কুজকো শহরে রেইমি উৎসবের ভিড়ে আত্মগোপন করে আছে?

    রাজপুরোহিত তাঁর অনুচরদের প্রাণপণে এ দুজনের সন্ধান করতে বলেছেন। নিজে কিন্তু তিনি এ সন্ধানের ফলাফলের জন্যে অপেক্ষা করেননি। তাতিসুইয়ুর প্রধান পুরোহিত হয়েও চিরদিনের বিধি লঙ্ঘন করে রেইমি উৎসবের আগেই দুজন বিশ্বাসী অনুচর নিয়ে তিনি কোরিকাঞ্চা শুধু নয়, কুজকো শহরই গোপনে ত্যাগ করেছেন।

    কী তাঁর গন্তব্য তা অনুমান করা কঠিন নয়। হুয়াসকার যেখানে বন্দি সেই সৌসা দুর্গই তাঁর লক্ষ্য।

    প্রথমে যত অস্থির উত্তেজিতই হয়ে থাকুন, রওনা হবার পর রাজপুরোহিতের মনে বিশেষ কোনও উদ্বেগ আর থাকে না। অসম্ভবও যদি সম্ভব হয়ে থাকে তবু তাঁর ভাবনা করবার কিছু নেই। কুজকো থেকে সৌসায় এমন গুপ্ত গিরিপথ আছে যা ডাক হরকরাদেরও অজানা। সে গুপ্তপথের বিশেষ দিশারি রক্ষী আছে। ইংকা নরেশ, সেনাপতি ও রাজপুরোহিত, এই তিন ইংকা শ্রেষ্ঠ ও তাঁদের চিহ্নিত কোনও প্রতিনিধিকে ছাড়া আর কাউকে এ পথ চিনিয়ে তারা নিয়ে যাবে না। সুতরাং সাধারণ সরকারি রাস্তায় যদি কেউ সমস্ত সতর্ক পাহারা এড়িয়ে গিয়ে যেতে পেরেও থাকে। তবু তার অনেক আগে তিনি গুপ্তপথে সৌসায় পৌঁছে যাবেন।

    হুয়াসকার-এর কাছে আতাহুয়ালপার প্রস্তাবই কোনওদিন আর পৌঁছোবে না!

     

    যা অসম্ভব অবিশ্বাস্য তাই কিন্তু ইতিমধ্যে ঘটে গেছে। কন্যাশ্রমের বাইরের পৃথিবী। যার কাছে চন্দ্রলোকের মতো অজানা, শিশিরস্নিগ্ধ তেমনই একটি অবলা সরলা মেয়ে অসাধ্য সাধন করে আতাহুয়ালপার প্রস্তাব সত্যিই পৌঁছে দিয়েছে হুয়াসকার-এর কাছে।

    শুধু গুপ্ত গিরিপথই তার কাছে উন্মুক্ত হয়ে যায়নি, সৌসার সদাসতর্ক প্রহরীরা। তাকে বাধা দেবার বদলে সসম্রমে অভ্যর্থনা করেছে, আর হুয়াসকার-আতাহুয়ালপার দূতী হিসেবে তাকে অবিশ্বাস করবার কথা কল্পনাও করেননি।

    এ অলৌকিক ব্যাপার কেমন করে সম্ভব হল?

    রাজপুরোহিত সৌসায় পৌঁছে স্তম্ভিত হয়ে সেই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজেছেন।

    সৌসা দুর্গে উপস্থিত হবার পর প্রথমেই তিনি হুয়াসকার-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেছলেন। সেখানে প্রেতমূর্তি দেখবার মতো তিনি চমকে উঠেছেন। সেই মুইস্কা মেয়েটিকে আর যেখানে তোক হুয়াসকার-এর কাছে দেখবার কথা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। ভেতরে ভেতরে যত বিচলিতই হোন, বাইরে নিজেকে সম্পূর্ণ সংযত রেখে হুয়াসকার-এর মুখে আতাহুয়ালপার প্রস্তাবের কথা ধৈর্য ধরে তিনি দ্বিতীয়বার শুনেছেন। হুয়াসকার যে এ প্রস্তাবে সম্পূর্ণ সম্মত তা বুঝতে রাজপুরোহিতের দেরি হয়নি!

    সব কিছু শোনবার পর প্রথমেই তাই তিনি প্রশ্ন করেছেন, এ প্রস্তাব স্বয়ং আতাহুয়ালপাই পাঠিয়েছেন বলে আপনি বিশ্বাস করেন?

    এ রকম প্রশ্নে বেশ একটু বিস্মিত হয়ে হুয়াসকার বলেছেন, নিশ্চয় করি! শুধু ওই কিপুটি দেখে? চেষ্টা করেও রাজপুরোহিত তাঁর গলার স্বর সম্পূর্ণ স্বাভাবিক রাখতে পারেননি, কেমন করে জানছেন যে ও কিপু জাল নয়? এই সম্পূর্ণ অজানা মেয়েটি যে আমাদের প্রতারণা করতে আসেনি তার প্রমাণ কী?

    যার চেয়ে বড় প্রমাণ আর হতে পারে না সেই প্রমাণই ও দিয়েছে? হুয়াসকার গভীর বিশ্বাসের সঙ্গে একটু হেসে বলেছেন, তা ছাড়া ওর দিকে একবার চেয়ে দেখলেই বুঝবেন, তাভান্‌তিন্‌সুইয়ু-র পবিত্রতম গিরিসাগর টিটিকাকার জলের মতো অন্তর ওর স্বচ্ছ। কোনও প্রমাণ ছাড়াই বিশ্বাস করা যায় যে সেখানে প্রতারণা থাকতে পারে না।

    শুধু ওই রূপ দেখেই তা হলে ভুলেছেন? রাজপুরোহিত ভিলিয়াক ভমুর গলা তিক্ত বিদ্রূপে একটু তীক্ষ্ণ হয়েছে—ওর মুখে ইংকা রাজভাষা শুনে মনে করেছেন।

    ও সত্যিই মুইস্কা বংশের কুমারী।

    মুইস্কা বা ইংকা না হলে এ ভাষা তো কারও পক্ষে জানা সম্ভব নয়।– রাজপুরোহিতের অন্যায় সন্দেহে একটু কৌতুকই বোধ করেছেন হুয়াসকার—তা ছাড়া ওর বংশপরিচয়ের কথা এখানে অবান্তর নয়?

    না, নয়। জোর দিয়ে বলেছেন রাজপুরোহিত, মিথ্যা বংশপরিচয়ের মধ্যেই ওর প্রতারণার সুস্পষ্ট প্রমাণ। ইংকা রাজভাষা ওর মুখে শুনে ভুলবেন না। যেদিন থেকে এ পবিত্র দেশ বিদেশি পাষণ্ডদের পায়ের স্পর্শে কলুষিত হয়েছে সেদিন থেকে মানুষের বুকে সত্যের আর ধর্মের দীপ নিভে গেছে। কুইচুয়ার বদলে পবিত্র রাজভাষা অশুচি জিহ্বায় উচ্চারণ করতে সাধারণ প্রজার আর বুক কাঁপে না। বিদেশি পাষণ্ডরা দেশদ্রোহী এ দেশের কুলাঙ্গারদের এ-ভাষা শেখবার সুযোগ করে দিচ্ছে চর হিসেবে নিয়োগ করবার জন্যে।

    হুয়াসকার একটু হেসে এ উত্তেজিত ভাষণে বাধা দিয়েছেন, আপনি বলতে চান এ মেয়েটি সেই রকম বিদেশি শত্রুর চর!

    হ্যাঁ, তাই বলতে চাই!—হুয়াসকারের কৌতুকের স্বরে রাজপুরোহিত আরও উত্তেজিত হয়েছেন—মুইস্কা কুমারী বলে ও নিজের পরিচয় দিচ্ছে। ইংকা আর মুইস্কা কোনও পরিবারেরই কুলপঞ্জি আমাদের অজানা নয়। কোথাকার কোন মুইস্কা বংশে ওর জন্ম আমি জানতে চাই। জানতে চাই এই বয়সে এই কঠিন দৌত্যের ভার ও কেমন করে পেল!

    রাজপুরোহিতের এ তীব্র আক্রমণের সামনে মেয়েটি যেন একটু বিবর্ণ হয়ে উঠেছে, লক্ষ করেছেন হুয়াসকার।

    রাজপুরোহিতের দৃষ্টিতেও তা এড়ায়নি। আরও নির্মম তীব্রতার সঙ্গে তিনি জিজ্ঞাসা করেছেন, নিজের কোনও নাম এ পর্যন্ত ও যে জানায়নি তা লক্ষ করেছেন? নিজের নামটুকু জানাতে কেন ওর এ দ্বিধা।

    দ্বিধা হবে কেন! মেয়েটির একেবারে পার হয়ে আসা মুখের দিকে চেয়ে স্বতস্ফুর্ত মমতায় তার পক্ষ নিয়ে বলেছেন হুয়াসকার, নাম বলার প্রয়োজন হয়নি বলেই বলেনি। একটু থেমে সাহস দিয়ে বলেছেন আবার, বলল, কী নাম তোমার?

    মেয়েটি বিপন্ন কাতর দৃষ্টি মেলে হুয়াসকার-এর দিকে নীরবে চেয়ে থেকেছে শুধু। কিছুই বলতে পারেনি।

    বলল, তোমার নাম। একটু বিমূঢ় স্বরে হুয়াসকার আবার তাকে উৎসাহ দেবার চেষ্টা করেছেন।

    হিংস্র উল্লাসে দীপ্ত হয়ে উঠেছে রাজপুরোহিতের মুখ। নিষ্ঠুর শাণিত দৃষ্টিতে যেন শিকারকে বিদ্ধ করে তিনি বলেছেন, নাম ও বলবে না। কারণ ও জানে মিথ্যা নাম দিয়ে ও পরিত্রাণ পাবে না। শুধু নামটুকু পেলেই কুলজি মিলিয়ে ওর প্রতারণা আমি প্রমাণ করে দেব। নাম বলবার সাহস তাই ওর নেই।

    নিশ্চয় আছে। এতক্ষণে একটু অধৈর্য প্রকাশ পেয়েছে হুয়াসকার-এর কণ্ঠে। স্নেহের স্বরে বলেছেন, বলো, তোমার নাম, দ্বিধা কোরো না।

    এখনও কি নীরব থাকবে মেয়েটি!

    হুয়াসকার উদ্বিগ্নভাবে তার মুখের দিকে তাকিয়েছেন। রাজপুরোহিত তাকিয়েছেন হিংস্র ব্যাধের দৃষ্টিতে।

    মেয়েটির ঠোঁটদুটি বারকয়েক কেঁপে উঠেছে। তারপর অস্ফুট স্বরে সে যা বলেছে তাতে বিমূঢ় জিজ্ঞাসা ফুটে উঠেছে হুয়াসকার-এরও চোখে আর রাজপুরোহিতের কণ্ঠে একটা তীক্ষ্ণ বিদ্রূপের হাসি।

    আমার নাম কয়া, বলেছে মেয়েটি।

    কয়া!সবিস্ময়ে তার দিকে তাকিয়ে নিজের মনেই যেন কথাটা উচ্চারণ করেছেন হুয়াসকার।

    এ নাম এ দেশের কোনও কুমারী মেয়ের হওয়া সম্ভব? বিদ্রূপের সঙ্গে একটা তীব্র অভিযোগ ফুটে উঠেছে রাজপুরোহিতের গলায়—তোমায় এ নাম দেবার স্পর্ধা কোন পরিবারের হয়েছে?

    কী বলবে কয়া? এ নাম কোথায় কে তাকে দিয়েছে স্বীকার করবে? প্রকাশ করবে তার চরম কলঙ্কের কথা? সে যে কন্যাশ্রম থেকে লুণ্ঠিতা সূর্বসেবিকা, সূর্যসেবিকা হিসেবে কোনও নাম যে তার কোনওদিন ছিল না, তার জীবনে অভাবিত মুক্তির দূত হয়ে যে দেখা দিয়েছে, এ নাম যে উদয়-সমুদ্রতীরের সেই আশ্চর্য পুরুষের দেওয়া, সবিস্তারে জানাবে কি সে কাহিনী?

    কী তার ফল হবে সে ভাল করেই জানে। আর যারই থাক, ভ্রষ্টা সূর্যকুমারীর কোনও ক্ষমা নেই তাভান্‌তিন্‌সুইয়ুতে। ইতিহাস যাই হোক, কেউ তার কোনও মূল্য দেবে না। আপামর সকলের সে ঘৃণা ও অবিশ্বাসের পাত্রী। স্বয়ং সূর্যদেবের অভিশাপে ছাড়া সূর্যকুমারী কখনও ভ্রষ্টা হতে পারে না, এ রাজ্যের এই দৃঢ়বিশ্বাস। কারও সহানুভূতি সে পাবে না। পাপাচারিণী বলে চিহ্নিত হয়ে তার পক্ষে প্রতারণাই স্বাভাবিক বলে সবাই ধরে নেবে।

    এমন আশ্চর্য কৌশলে, এত দুঃসাহসে ও অবিশ্বাস্য চেষ্টায় সাজিয়ে তোলা আয়োজন কি শুধু তার জন্যেই ব্যর্থ হয়ে যাবে তা হলে?

    কুজকো থেকে সৌসায় এসে হুয়াসকার-এর সাক্ষাৎ পাওয়ার মতো অসাধ্যসাধনের পর সার্থকতায় পৌঁছোবার সেতু ভেঙে পড়বে শেষমুহূর্তে। হুয়াসকার তাকে অবিশ্বাস করবেন? দুই রাজভ্রাতার মিলন আর হবে না? বিদেশি শত্রুর কলুষমুষ্টি থেকে তাভান্‌তিন্‌সুইয়ু উদ্ধারের সব আশা শূন্যে বিলীন হয়ে যাবে এক মুহূর্তে?

    কয়ার পায়ের তলায় কঠিন মাটি যেন দুলে উঠেছে। সেই অবস্থাতেই হুয়াসকার-এর বজ্রকঠিন স্বর সে শুনতে পেয়েছে।

    হুয়াসকার যা বলছেন তা আশাতীত অবিশ্বাস্য।

    শুনুন, ভিলিয়াক ভমু। কঠিন স্বরে বলেছেন হুয়াসকার, কয়া নামে নিজের পরিচয় যে দিচ্ছে, সেই মুইস্কা বংশের কেউ না হতে পারে। কিন্তু পরিচয় ও ইতিহাস যাই হোক, আতাহুয়ালপার দূতী হিসেবে তাকে অবিশ্বাস করবার কোনও অধিকার আমাদের নেই। অন্য সবকিছু মিথ্যা হলেও তার দৌত্যের মধ্যে যে প্রতারণা নেই, তার পরম সন্দেহাতীত প্রমাণ সে দিয়েছে। বুঝতেই পারছেন, সে প্রমাণ না দিতে পারলে কুজকো থেকে গুপ্ত গিরিপথে সৌসায় আসা তার পক্ষে সম্ভব হত না আর সৌসার এ কারাদুর্গের নির্মম প্রহরীরাও দেবীর সম্মান দিয়ে আমার কাছে তাকে উপস্থিত হবার সুযোগ দিত না।

    বুঝতে সবই পারছি! দাঁতে দাঁত চেপে বলেছেন রাজপুরোহিত, কিন্তু এত সব অসাধ্যসাধন যা করেছে সেই আশ্চর্য প্রমাণটা চাক্ষুষ একবার দেখতে চাচ্ছি।

    তা-ই দেখুন। এবার হেসে বলেছেন হুয়াসকার।

    কয়া ধীরে ধীরে ভিকুনার পশমে বোনা থলিটি এবার খুলে ধরে যা বার করে এনেছে সেদিকে চেয়ে স্তব্ধ হয়ে গেছেন রাজপুরোহিত।

    রাজপুরোহিতের মুখেই শুধু যে কথা সরেনি তা নয়, তাঁর চোখদুটো যেন কোটর থেকে ঠেলে বেরিয়ে এসেছে বিমূঢ়-বিস্ময়ে।

    না, আর সন্দেহ কি প্রতিবাদের একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি রাজপুরোহিত। নীরবে নতমস্তকে কয়ার এগিয়ে দেওয়া প্রমাণ সন্দেহাতীত বলে মানতে বাধ্য হয়েছেন।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী
    Next Article মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    Related Articles

    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    ঘনাদা সমগ্র ১ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    ঘনাদা সমগ্র ২ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }