Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    প্রেমেন্দ্র মিত্র এক পাতা গল্প632 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ২৫. সূর্যদেবের উত্তরায়ণ

    পরের দিন থেকেই সূর্যদেবের উত্তরায়ণের সঙ্গে রেইমি-র উৎসব শুরু হবে। কাস্লামালকা শহরে আতাহুয়ালপা নিশ্চয়ই প্রস্তুত হয়ে আছে সম্পূর্ণভাবে। রেইমি উৎসবের সুযোগ নিয়ে আনন্দমত্ত জনতার মধ্যে নিজেকে গোপন করে সৌসার পথে তিনি রওনা হবেন। ওদিকে হুয়াসকারও তখন সৌসায় বসে থাকবেন। পার্বত্যপথের এক গোপন দুর্গে দুই রাজভ্রাতার সাক্ষাতের ব্যবস্থা সম্পূর্ণ হয়ে আছে। বিদেশি শত্রুদের যা ভাতিনসুয়ুইর পবিত্র গিরিরাজ্য থেকে ঘৃণ্য ক্লেদের মতো ধুয়ে দূর করে দেবে পেরুর সে নবজাগরণের ঢল নামতে শুরু করবে ওই গোপন দুর্গ থেকেই।

    ভিলিয়াক ভূমুর সমস্ত পাহারাদারদের চোখে ধুলো দিয়ে গানাদো সেই পরম মুহূর্তের অপেক্ষায় কুজকো শহরেই এমন এক অবিশ্বাস্য গোপন আশ্রয় খুঁজে নিয়েছেন, সমস্ত কুজকোবাসীর প্রায় চোখের ওপরে থেকেও, যা তাদের কল্পনাতীত।

    অপেক্ষা আর কটা দিন মাত্র, অধৈর্য নেই তাই গানাদোর মনে। কামালকায় কী হচ্ছে তা যেন তিনি মনশ্চক্ষে দেখতে পান। যা দেখতে পান।

    তা হল এই যে, এসপানিওল সেনাপতি পিজারোর সঙ্গে কাক্সামালকা শহরের নতুন এক আগন্তুক গভীর উত্তেজিত আলোচনায় মত্ত। সে আগন্তুকের নাম মার্কুইস গঞ্জালেস দে সোলিস।

    সৌসা কারাদুর্গের একটি ঘটনাও তখন গানাদোর কল্পনার বাইরে।

    কোরাকেঙ্কুর পালক দেখিয়ে সৌসা দুর্গে কয়া যখন সমস্ত সন্দিগ্ধ অভিযোগের জবাব দিয়ে রাজপুরোহিতের কুটিল গোপন চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিয়েছে, আর কামালকা নগরে পেরু বিজয়ী এসপানিওল সেনাপতি পিজারোর সঙ্গে স্মরণীয় সাক্ষাৎ হয়েছে মার্কুইস গঞ্জালেস দে সোলিস-এর, গানাদো নিজে তখন কুজকো শহরেই দিন নয়, দণ্ডপল গুনছেন।

    সমস্ত তাভানতিনসুইয়ু যাতে কেঁপে উঠবে সে বিস্ফোরণের আর বিলম্ব হবার কথা নয়। হাওয়ায় তিনি উগ্রীব কান পেতে আছেন সৌসা থেকে প্রথম সে জয়ধ্বনি শোনবার জন্যে।

    কিন্তু কান তিনি পেতে আছেন কোথায়?

    নেহাত জাদুমন্ত্রে কীটপতঙ্গ না হয়ে থাকলে কুজকো শহরে তাঁর লুকিয়ে থাকা তো অসম্ভব। রাজপুরোহিত ভিলিয়াক ভূমুর প্রকাশ্য প্রহরী ও গোপন চরেরা বাড়ি ঘর রাস্তাঘাট তো তন্নতন্ন করে খুঁজেছে-ই, রেইমি উৎসবের জন্যে সমবেত তীর্থযাত্রীদেরও জনে জনে পরীক্ষা করবার ত্রুটি রাখেনি। ভিলিয়াক ভমু সৌসা রওনা হবার আগে সেই আদেশই দিয়ে গিয়েছিলেন। কুজকো থেকে বাইরে যাবার গোনাগুনতি পাহাড়ি রাস্তা তো আগেই বন্ধ করবার ব্যবস্থা হয়েছিল। গানাদো তাঁর সঙ্গে দেখা করে চলে যাবার পর তাঁকে অতিথিশালায় গিয়ে বন্দি করার আদেশের সঙ্গে কুজকো থেকে যাবার-আসবার পথগুলিতে কড়া পাহারার ব্যবস্থা রাজপুরোহিত করেছিলেন। নেহাত স্ত্রীলোক বলেই কয়া সে পাহারা এড়িয়ে কিছুদূর পর্যন্ত বিনা বাধায় যেতে পেরেছিল। গানাদোর সম্বন্ধেই সতর্ক হওয়া দরকার মনে করে মেয়েদের সম্বন্ধেও হুঁশিয়ার থাকবার নির্দেশ দেবার কথা রাজপুরোহিতের মাথায় আসেনি। রাজপুরোহিতের এই হিসেবের ভুলটুকু অনুমান করেই গানাদো কয়াকে একা অত বড় কঠিন বিপদের কাজে পাঠিয়েছিলেন নিশ্চয়।

    কিন্তু কয়া কুজকো ছেড়ে সৌসার পথে রওনা হতে পারলেও গানাদো তো তা আর পারেননি। ভিলিয়াক ভমুর প্রহরীদের দৃষ্টি এড়িয়ে কুজকো শহরে থাকাও তাঁর পক্ষে অসম্ভব।

    সেই অসম্ভবই কিন্তু গানাদো সম্ভব করে তুলেছেন শুধু বুদ্ধির জোরে আর বেপরোয়া সাহসে। এ রাজ্যের মানুষের হাড়হদ্দ জানবার চেষ্টায় সত্যিই এমন এক লুকোবার আস্তানার হদিস তিনি পেয়েছেন সামনা সামনি দেখেও কুজকো শহরের কেউ যেখানে তাঁকে খোঁজবার কথা কল্পনাও করবে না।

    দরকার শুধু সে আস্তানায় নিজেকে লুকোবার সাহস। গানাদোর সে সাহসের অভাব হয়নি।

    সূর্যের দক্ষিণায়ন শেষ হবার সঙ্গে রেইমির উৎসব শুরু হবে পরের দিন। আগের বছর হুয়াসকার-ই ইংকা নরেশ হিসেবে এ উৎসবের প্রধান ভূমিকা নিয়েছিলেন। এবারে উৎসবে বিজয়ী নতুন ইংকা হিসেবে এ ভূমিকা যাঁর নেবার কথা তিনিও কামালকায় বিদেশি শত্রুর হাতে বন্দি।

    রাজপুরোহিত ভিলিয়াক মুকেই তাই এবারের উৎসব অনুষ্ঠানে একাধারে ইংকা আর রাজপুরোহিতের দায়িত্ব নিতে হবে।

    কুজকো নগরে কোরিকাঞ্চা ঘিরে সমবেত নাগরিক আর তীর্থযাত্রীরা বুঝি উদ্বিগ্ন হয়েছে। তাদের সোনার রাজ্যে একটা গভীর অমঙ্গলের ছায়া যে পড়েছে তা তাদের জানতে বাকি নেই। তবু যে তারা এ উৎসবে যোগ দিতে সব কিছু তুচ্ছ করে এসেছে তার কারণ শুধু অন্ধ ধর্মভীরুতা নয়। তাতিসুইয়ুর এই প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠানে দেবাদিদেব আকাশপতি সূর্য তাঁদের কাতর প্রার্থনায় প্রসন্ন হয়ে তাদের পবিত্র রাজ্য থেকে পাপের ছায়া সরিয়ে নিতে পারেন এ আশাও একটু তাদের মনে আছে।

    তারা উদ্বিগ্ন একটু হয়েছে পাছে অনুষ্ঠানের কোনও ত্রুটি হয় এই ভয়ে। ইংকা নরেশ হিসাবে হুয়াসকার বা আতাহুয়ালপা এ উৎসবে কোনও ভূমিকাই নিতে পারবেন না। কিন্তু ইংকা রাজশক্তির প্রতিনিধি হিসেবে যিনি এ উৎসব পরিচালনার দায়িত্ব নেবেন সেই রাজপুরোহিত ভিলিয়াক ভমুও যে কুজকো শহরে তখনও অনুপস্থিত।

    কয়েকদিন আগে বিশেষ কোনও জরুরি প্রয়োজনে রাজপুরোহিত কুজকো ছেড়ে গেছেন তা তারা জানে। যেখানেই গিয়ে থাকুন, রেইমি উৎসবের দিন উত্তরায়ণের প্রথম সূর্যোদয়কে অভিনন্দিত করে অর্ঘসুরা বিতরণ করবার জন্যে কুজকোয় তিনি উপস্থিত থাকবেন নিশ্চয়।

    কিন্তু রাত্রির শেষ যাম অতিক্রান্ত হতে চলেছে। পূর্ব দিগন্তের তারারা নিষ্প্রভ হয়ে আসছে। সে দিকের অন্ধকার তরল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, নগরসীমার পার্বত্য প্রান্তরে ভক্ত জনতা সমবেত হয়েছে মধ্যরাত্রি থেকে। অর্ঘ্যসুরার বিরাট পাত্র যথাস্থানে স্থাপিত হয়েছে অনেক আগেই। শুধু রাজপুরোহিতেরই তখনও দেখা নেই।

    গত তিন দিন কোনও গৃহস্থ বাড়িতে আগুন জ্বলেনি, তিন দিন ধরে সমস্ত ভক্ত পেরুবাসীরা উপবাসী। পূর্বাকাশ প্রথম সূর্যকিরণ দেখবার সৌভাগ্যে ধন্য ও পবিত্র হবার জন্যে তারা দূরদূরান্তর থেকে এসে এই কৃচ্ছসাধন করেছে। স্বয়ং ইংকা নরেশ কি রাজপুরোহিত সেদিনের শিশুসূর্যকে প্রশস্তি মন্ত্রে বরণ না করলে তো সমস্ত অনুষ্ঠানই ব্যর্থ হয়ে যাবে। দেবাদিদেব পরমজ্যোতির আশীর্বাদের বদলে অভিশাপই বর্ষিত হবে সমস্ত তাভান্‌তিন্‌সুইয়ুর ওপর।

    আকাশের দিকে আর নয়, জনতা ভীত উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে পিছনের নগরবর্জ্যের দিকে তাকায়, কোরিকাঞ্চার অধস্তন পুরোহিতদের উৎকণ্ঠিত দৃষ্টিও সেই দিকে। এত বড় বিশাল জনারণ্যকে একই আশঙ্কা যেন ঝড়ের মতো উদ্বেলিত করছে। অতি দীনদরিদ্র কৃষক থেকে যথার্থ ইংকা রক্তের অভিজাত সম্প্রদায় পর্যন্ত সকল শ্রেণীর আবালবৃদ্ধ নরনারীই তো সেখানে উপস্থিত। শুধু জীবিত নয়, মহান মৃতেরাও এসেছেন উত্তরায়ণের প্রথম সূর্যকে বন্দনা করতে।

    ভাতিইয়ুর প্রাচীনতম প্রথা সত্যি পালিত হয়েছে এই দিনটির জন্যে। পেরু রাজ্যে মৃত ইংকাদের বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যেতে দেওয়া হয় না। অনেকটা মিশরের ধরনে তাঁদের মরদেহ শাশ্বত করে রাখবার চেষ্টা হয়। জীবনকালে যা পরতেন সেই জমকালো মহার্ঘ পোশাকে সাজিয়ে নিরেট সোনার সিংহাসনে কোরিকাঞ্চার সূর্যমন্দিরে সারিবদ্ধ তাঁদের শবদেহ বসানো থাকে। পরলোকগত ইংকাদের জন্যে একটি করে প্রাসাদও পৃথক ভাবে বরাদ্দ। সেখানে তাঁদের নিত্যব্যবহার্য জিনিস ও ঐশ্বর্য কোনও কিছুরই অভাব রাখা হয় না।

    বিশেষ বিশেষ দিনে মৃত ইংকাদের শবদেহ তাঁদের ঐশ্বর্যবিলাসের উপকরণ সমেত এই কাজে নিয়োজিত স্বতন্ত্র প্রহরী ও অনুচরেরা জনসাধারণের সামনে এনে উপস্থিত করে। মৃত ইংকারা তখন জীবিতদের সমানই সশঙ্ক সমাদর পান।

    সেই প্রথামতোই রেইমির উৎসব উপলক্ষে মৃত ইংকাদের সংরক্ষিত শবদেহ এনে রাখা হয়েছে নগর সীমার প্রান্তরে। পূর্বতন ইংকাদের মধ্যে হুয়াসকার ও আতাহুয়ালপা দু-জনেরই পিতা হুয়াইনা কাপাক-এর শবদেহকে ঘিরে ঐশ্বর্যগরিমার সমারোহ সবচেয়ে বেশি। পেরুর প্রজাসাধারণের মনে ইংকা হুয়াইনা কাপাক-এর। স্মৃতি এখনও অত্যন্ত উজ্জ্বল। সোনার সিংহাসনে বসানো, সোনারুপোর কাজে ঝলমল পোশাকে সাজানো তাঁর শবদেহের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ইংকা প্রজারা সসম্ভ্রমে তাঁকে অভিবাদন জানিয়ে যায়। তাদের কাছে তিনি মৃত নন। রাজপুরোহিত যথাসময়ে না এসে পৌঁছোবার দরুন রেইমি উৎসব যে পণ্ড হতে চলেছে তার জন্যে তিনিও গভীরভাবে উৎকণ্ঠিত বলেই তাদের ধারণা। পূর্ব দিগন্ত আরও পাণ্ডুর হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে শঙ্কিত ব্যাকুলতায় তারা অনেকে হুয়াইনা কাপাক-এর কাছেই নিজেদের প্রার্থনা জানায়। যথাবিহিত অনুষ্ঠান না হলে সূর্যদেবের যে অভিশাপ সমস্ত তাভানতিসুইয়ুতে বর্ষিত হতে পারে তা থেকে শেষ মুহূর্তে তিনিই রক্ষা করতে পারেন এই তাদের অন্ধ বিশ্বাস।

    সেই অন্ধ বিশ্বাসেই কি তাদের কেউ কেউ সোনার সিংহাসনে বসানো হুয়াইনা। কাপাক-এর সুসজ্জিত শবদেহে ঈষৎ প্রাণের স্পন্দন লক্ষ করে বিদ্যুৎ-শিহরন অনুভব করে সারা দেহে।

    এই নিদারুণ সংকটে সত্যিই কি মহাশক্তিধর হুয়াইনা কাপাক আবার জেগে উঠবেন? অসামান্য বাহুবলে কুজকো থেকে কুইটো পর্যন্ত যিনি ইংকা সাম্রাজ্য বিস্তৃত করেছিলেন তিনিই কি আবার এসেছেন তাতিসুইয়ুকে বিদেশি গ্রাস থেকে মুক্ত করতে?

    শঙ্কিত উৎকণ্ঠিত জনতার মধ্যে একটা উত্তেজিত গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়।

    পুবের আকাশ আরও পরিষ্কার হয়ে আসছে। কোরিকাঞ্চার উদ্বিগ্ন অধস্তন পুরোহিতেরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন, এ বিপদে কী যে করণীয় তা স্থির করতে না পেরে।

    তাঁরা নিজেরাই কি কেউ আজ ইংকা নরেশ আর রাজপুরোহিতের হয়ে উত্তরায়ণের সদ্যোজাত সূর্যদেবকে বরণ করবার ভার নেবেন?

    কিন্তু তাঁদের ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র অনুষ্ঠানের এ নিদারুণ ত্রুটি রেইমি উৎসবের জন্যে সমবেত বিরাট জনতা মেনে নেবে বলে তো মনে হয় না। রাজপুরোহিত স্বয়ং এসে এখনও সব দিক রক্ষা করতে পারেন। আর কিছুক্ষণ দেরি হলে উত্তেজিত উৎকণ্ঠিত ধর্মপ্রাণ জনতার মধ্যে কী উত্তাল আলোড়ন যে জাগবে তা অনুমান করাই কঠিন।

    এই অস্থির বিহ্বলতার মধ্যে জনতার গুঞ্জন পুরোহিতদের কানেও এসে পৌঁছোয়। ব্যাকুল হয়ে তাঁদের কেউ কেউ হুয়াইনা কাপাক-এর শবদেহের দিকে ছুটে যান।

    পেরুর চরম দুর্দিনে এই ভয়ংকর সংকট মুহূর্তে সত্যিই কি এক অলৌকিক বিস্ময় প্রত্যক্ষ করবার সৌভাগ্য তাঁদের হবে? উত্তরায়ণের সূর্যকে বরণ করবার জন্যে অদ্বিতীয় ইংকা কুলতিলক হুয়াইনা কাপাক তাঁর সযত্নে সংরক্ষিত শবদেহ আবার সঞ্জীবিত করে তুলবেন? এ অঘটন কি সত্যিই সম্ভব?

    সাধারণ জনতার সঙ্গে নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাঁরাও স্বর্ণ-সিংহাসনে আসীন মূর্তির দিকে চেয়ে থাকেন। এ মূর্তির মধ্যে প্রাণের স্পন্দন প্রথম কে দেখেছে, কেউ জানে না। কিন্তু মুখে মুখে কথাটা বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। পূর্ব দিগন্তে উৎসুকভাবে যারা চেয়েছিল তাদের অনেকেই ভূতপূর্ব ইংকা নরেশের শবদেহ যে রঞ্জু-বেষ্টনীর মধ্যে সাড়ম্বর স্বর্ণ-সিংহাসনে স্থাপিত তার চারিধারে ভিড় করে এসে জড়ো হয়।

    সকলেই উত্তেজিত উৎকণ্ঠিত উৎসুক। অন্ধ বিশ্বাসের চোখে কি না বলা কঠিন, অনেকেই এবার শবদেহে একটা চাঞ্চলের আভাস পায়। যা তাদের স্বপ্নাতীত তাই কি এবার সত্যি ঘটতে চলেছে?

    না ঘটবার কোনও হেতু নেই। কারণ এমনই একটি সুযোগের মুহূর্তের জন্যই নিখুঁতভাবে সমস্ত আয়োজন করা হয়েছে।

    সৌসার কারাদুর্গ থেকে নিশ্চয় এতক্ষণে মুক্তি পেয়েছেন হুয়াসকার। মুক্তি পাবার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর বিশ্বস্ত অনুরক্ত অনুচরবাহিনী নিয়ে এই কুজকোর অভিমুখেই তিনি এগিয়ে আসছেন ঝড়ের গতিতে। রেইমি উৎসবের আগে ব্রাহ্মমুহূর্তেই তাঁর সদলবলে কুজকোর এই সূর্যাবরণের প্রান্তরে এসে পৌঁছোবার কথা। তিনি এসে পৌঁছোবার সঙ্গে সঙ্গে যে উত্তেজনার সঞ্চার হবে তারই মধ্যে জেগে উঠবে অদ্বিতীয় ইংকা নরেশ হুইয়ানা কাপাক-এর শবদেহ। তাঁরই কষ্ঠে রেইমি উৎসবের জন্য সমবেত সমস্ত তাভানতিসুইয়ুর ভক্ত তীর্থযাত্রীরা শুনবে নবজাগরণের এক বহ্নিময়

    বাণী।

    যে কোনও কারণেই তোক হুয়াসকার রেইমি উৎসবের আগে কুজকোয় এসে পৌঁছোতে পারলেন না দেখা যাচ্ছে। তাতেও এমন কিছু ক্ষতি নেই। হুয়াসকার এসে

    পৌঁছোলেও হুয়াইনা কাপাক-এর শবদেহ একবারের জন্যে প্রাণ পেয়ে জেগে উঠবে। উত্তরায়ণের শিশুসূর্য পূর্ব দিগন্তে আবির্ভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি মহামন্ত্র অন্তত সমস্ত পেরুবাসীর কানে পৌঁছোবে। সে মহামন্ত্র তাভান্‌তিন্‌সুইয়ুর পবিত্র গিরিরাজ্য বিদেশি পাষণ্ডের পাপস্পর্শ থেকে মুক্ত করার।

    হুয়াইনা কাপাক-এর শবদেহে প্রাণ-সঞ্চার কিন্তু আর হয় না। হঠাৎ কুজকো। শহরের দূর সীমা থেকে দ্রুত অগ্রসর একটা ধ্বনি শোনা যায়। সচকিত হয়ে ওঠে সমস্ত জনতা। হুয়াসকারই কি তা হলে এসে পৌঁছোলেন যথাসময়ে? কিন্তু এ তো তাঁর বাহিনীর পদশব্দ নয়। এ যে অশ্বক্ষুর-ধ্বনি

    অশ্বক্ষুর-ধ্বনি মানে কী?

    তার মানে তো হুয়াসকার-এর আহ্বান তাঁর পতাকাতলে সমবেত পেরুর শৃঙ্খলমোচনের বাহিনী নয়! নিশাবসানের তরল অন্ধকারে কুজকো শহরের দিগ্বিদকে যা তাভানতিনসুইয়ুর শঙ্কিত হৃদস্পন্দনের মতো শোনা যাচ্ছে, তা তো এসপানিওল। রিসালার আগমনবার্তা ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। ঘোড়ার খুরের শব্দ একমাত্র বিদেশি শত্রু সওয়ারের নির্ভুল ইঙ্গিতই দেয়।

    হঠাৎ এই মুহূর্তে এসপানিওল সওয়ার সৈনিক কি কামালকা থেকেই কুজকোতে আসছে? কেন?

    কী হয়েছে তা হলে আতাহুয়ালপার? হুয়াসকারই বা কোথায়? কয়া কি তাঁকে মুক্ত করতে পারেনি?

    দুর্ভাবনায় অস্থির হয়ে ওঠেন গানাদো। নির্ভুলভাবে সযত্নে সাজানো যেসব চাল অনিবার্যভাবে সাফল্যের শিখরে গিয়ে পৌঁছে দেবে ধরে রেখেছিলেন, তার মধ্যে কোনও একটা অপ্রত্যাশিতভাবে ব্যর্থ হয়ে গেছে।

    কোন চালটা বিফল হয়েছে? কোথায়? কাক্সামালকায়, না কুজকোতে?

    এসপানিওল সওয়ারবাহিনীর এই আকস্মিক হানা দেওয়ায় মনে হচ্ছে কাকসামালকাতেই কোনও কিছু ঘটেছে যা তাঁর হিসেবের বাইরে।

    এসপানিওল সওয়ারবাহিনী এবার সূর্যবরণ প্রান্তরে এসে পৌঁছে গেছে। আতঙ্কবিহ্বল জনতা দিশাহারা হয়ে ঠেলাঠেলি করছে নিজেদের মধ্যে।

    পারলে গানাদো একবার উঠে দাঁড়াতেন। জনতার মধ্যে একজন হয়ে এগিয়ে দেখতেন এসপানিওল রিসালায় কারা এসেছে আর কে তাদের নায়ক।

    কিন্তু তার উপায় নেই। জনসমুদ্রে অস্থির দোলা লেগেছে সত্যিই, কিন্তু তাঁর চারিধারে একটা নিস্তরঙ্গ বেষ্টনী। তাঁকে ঘিরে যারা পাহারা দিচ্ছে, প্রাণ দিয়েও সে বেষ্টনী তারা রক্ষা করবার চেষ্টা করবে।

    তবু নিস্পন্দ নিথর হয়ে বসে থাকা অসহ্য মনে হয় গানাদোর। একবার ইচ্ছা হয় হঠাৎ সাড়া দিয়ে উঠে বিহ্বলব্যাকুল এই জনসমুদ্র আর এক বিদ্যুৎ-বিস্ময়ে উত্তাল করে তুলবেন।

    কিন্তু তার লগ্ন পার হয়ে গেছে। এখন তা শুধু নিরর্থক আত্মঘাতী মূঢ়তা। নির্মম দুর্ধর্ষ এসপানিওল বাহিনীর সামনে আকুল দিশাহারা গ্লামার পালের মতো পলাতক এই নিরস্ত্র নিরুপায় ভয়ার্ত জনতাকে কোনও অলৌকিক আবির্ভাব দিয়েও এখনই আর সংহত করা যাবে না।

    চারিদিকের তীব্র উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খলার আলোড়নের মধ্যে মহার্ঘ পোশাকে শবদেহের মতোই নিস্পন্দ হয়ে থাকেন গানাদো। তাঁকে ঘিরে উদ্যত বল্লম নিয়ে পাহারা দেয় তাঁর মর্যাদা রক্ষায় জীবনপণ করা প্রহরীরা।

    তারা অবশ্য জানে যে, মহামহিম সূর্যসম্ভব ভূতপূর্ব ইংকা নরেশ হুয়াইনা কাপাক-এর মরদেহই তারা পাহারা দিচ্ছে।

    হ্যাঁ, এই অবিশ্বাস্য গোপন আশ্রয়ই খুঁজে নিয়েছিলেন গানাদো রাজপুরোহিত ভিলিয়াক ভূমুর গভীর অভিসন্ধি অনুমান করে কয়াকে যেদিন পরম অভিজ্ঞান দিয়ে সৌসায় পাঠান, সেইদিনই।

    কয়ার কাছে বিদায় নেবার পর কাক্সামালকা থেকে সোনাবরদার হয়ে যারা এসেছিল তাদের জন্যে বরাদ্দ অতিথিশালায় গানাদো ফিরে যাননি। বার হবারও চেষ্টা করেননি কুজকো নগর থেকে। সে চেষ্টা করলে রাজপুরোহিতের প্রহরীদের প্রখর দৃষ্টি এড়ানো তাঁর পক্ষে সম্ভব হত না। প্রহরীরা রাজপুরোহিতের কঠোর নির্দেশে প্রাণের দায়ে কুজকো শহরেও তাঁকে তন্নতন্ন করে খোঁজার ত্রুটি করেনি। তবু তাদের শিকার যে কুজকো থেকে জাদুবলে অদৃশ্য হয়েছে বলে তাদের মনে হয়েছে, তার কারণ গানাদো প্রথম দিন থেকেই ভূতপূর্ব ইংকা নরেশ হুয়াইনা কাপাক-এর জন্যে বরাদ্দ প্রাসাদেই আত্মগোপন করেছেন। পেরুবাসীর রীতিনীতি সংস্কার জেনে এফন্দি তিনি ভেবে রেখেছিলেন গোড়া থেকেই। বিশেষ একটি-দুটি উৎসব ছাড়া মৃত ইংকাদের প্রেত-প্রাসাদে কড়াকড়ি কোনও পাহারা থাকে না। থাকার প্রয়োজনও নেই। প্রেত-প্রাসাদে সাধ করে কেউ ঢুকতে বা সেখান থেকে যত মূল্যবানই হোক কোনও ঐশ্বর্য চুরি করতে চাইবে তাভান্‌তিন্‌সুইয়ুতে এ ব্যাপার কল্পনাতীত। জীবিত ইংকার চেয়ে মৃতের মর্যাদা পেরুবাসীদের কাছে বেশি বই কম নয়। এ প্রেত-প্রাসাদে যেসব প্রহরী আর অনুচর থাকে, তাদের আসল কাজ মৃত ইংকাদের প্রতাপ-প্রতিপত্তি মৃত্যুতেও যে অক্ষুণ্ণ অম্লান তারই প্রমাণস্বরূপ সাজসজ্জার ঘটা দেখানো। দরকার হলে নিজেদের পরম প্রভুর মর্যাদা রক্ষার জন্যে তারা সত্যিই প্রাণ দিতে প্রস্তুত, কিন্তু সেরকম কোনও প্রয়োজন কখনও হয় না বললেই চলে।

    প্রেত-প্রাসাদের রক্ষণাবেক্ষণ নেহাত আনুষ্ঠানিক বলেই গানাদোর সেখানে লুকিয়ে থাকবার কোনও অসুবিধে হয়নি। প্রহরী ও অনুচরেরা কল্পনাই করতে পারেনি যে, মৃত ইংকা নরেশের শবদেহের কাল্পনিক সুখ-সাচ্ছন্দ্যবিধানের অনুষ্ঠান পালন করতে গিয়ে তারা সত্যিই জীবিত কারও পরিচর্যা করছে। হুয়াইনা কাপাক-এর আত্মার পরিতৃপ্তির জন্যে নৈবেদ্য হিসেবে তারা অপর্যাপ্ত খাদ্য পানীয় প্রতিদিন যথাবিধি তাঁর শবদেহের সামনে ধরে দিয়েছে। পরের দিন সে আহার্য সরিয়ে নিয়ে যাবার সময় তা থেকে যৎসামান্য খোয়া গিয়েছে কি না লক্ষই করেনি। রাত্রে ভিকুনার পশমে বোনা সুকোমল রাজশয্যা পেতে ইংকা নরেশের শয়নমন্দিরের দ্বার যখন তারা বন্ধ করে প্রেত-প্রাসাদের বাইরে নেহাত নিয়মরক্ষার পাহারা দিতে চলে গেছে তখন কেউ যে সে শয্যা সত্যিই ব্যবহার করতে পারে, তা তাদের স্বপ্নেরও অগোচর।

    এই প্রেত-প্রাসাদেই রাজপুরোহিতের প্রহরীদের দৃষ্টি এড়িয়ে গানাদো দিন গুনেছেন রেইমি উৎসবের জন্যে। প্রহরীদের নিজেদের মধ্যেকার আলাপ আড়াল থেকে যতটা তিনি শুনেছেন, তাতে লক্ষণ সব শুভ বলেই মনে হয়েছে। কয়া সৌসা যাবার পথে ধরা পড়লে কুজকো নগরে একটা সাড়া পড়ে যেত নিশ্চয়ই। প্রেত-প্রাসাদের প্রহরীদের আলাপে তার আভাস পাওয়া যেত। সেরকম কিছু যখন পাওয়া যায়নি তখন কয়া সৌসায় পৌঁছে হুয়াসকার-এর সাক্ষাৎ নিশ্চয় পেয়েছে বুঝেছিলেন গানাদো। হুয়াসকার-এর একবার সাক্ষাৎ পেলে আর ভাবনার কিছু নেই! উত্তরায়ণের প্রথম লগ্নে না হোক, রেইমির উৎসবের মধ্যে তাঁর বাহিনী নিয়ে হুয়াসকার এসে পড়বেনই কুজকো শহরে। আতাহুয়ালপাও তখন কামালকা থেকে কুজকোর দিকে অর্ধেক পথ পেরিয়ে আসবেন। যে মহান লক্ষ্য নিয়ে তাঁরা মিলিত হচ্ছেন তারই সমর্থনে সমস্ত পেরুর দূরদূরান্ত থেকে তীর্থযাত্রীরা যেখানে সমবেত হয়েছে, সূর্যবরণের সেই পবিত্র বিশাল পার্বত্য-প্রান্তরে অলৌকিক এক দৈববাণী শোনা যাবে। শোনা যাবে যেন পূর্বতন ইংকানরেশ হুয়াইনা কাপাক-এর শবদেহের সংরক্ষিত মূর্তির মুখে। গানাদো জানতেন উত্তেজিত ধর্মপ্রাণ জনতা সন্দেহ করবে না সে দৈববাণীর যাথার্থ্য, প্রশ্ন করবে না তা নিয়ে। গভীর অন্ধবিশ্বাসে, দেশ ও জাতির পরম কলঙ্ক মোচনের আকুলতায়, নির্বিচারে মেনে নেবে সে বাণী। তারপর দেশপ্রেমের আবেগের সঙ্গে ধর্মবিশ্বাসের আন্তরকিতা মিলে যে প্রচণ্ড আলোড়নের সৃষ্টি হবে তার সামনে কোথায় দাঁড়াবে মুষ্টিমেয় ক-টা বিদেশি শত্রু!

    সেই পরম মুহূর্তের জন্যেই তৈরি হয়েছিলেন গানাদো।

    কিন্তু তার বদলে কোথা দিয়ে এ কী হয়ে গেল!

    তাঁর চারিপাশ থেকে জনতা যেভাবে ব্যাকুল হয়ে ছুটে পালাচ্ছে, তাতে এসপানিওল সওয়ারেরা এদিকেই আসছে বুঝতে পারেন গানাদো। ঘোড়ার পায়ের শব্দ আর দ্রুত নয়, রিসালা এখন ধীরে সুস্থে অগ্রসর হচ্ছে।

    মৃত ইংকা নরেশের সুসজ্জিত অলঙ্কার-ভূষিত শবদেহ হয়ে গানাদো সোনার সিংহাসনে নিস্পন্দ জড়ের মতোই হেলান দিয়ে আছেন। মুখে তাঁর মৃত্যু-মুখোশ আঁটা। মাথায় উষ্ণীষস্বরূপ নানারঙের প্লান্টু একটু সরে এসেছে কপালের ওপর, আর কপালের রাজশক্তির প্রতীক ঝালর-দেওয়া রক্তিম বোলা নেমে এসে চোখ দুটোকে চাপা দিয়েছে অনেকখানি।

    প্লান্টু ও বোলা-র এ স্থানচ্যুতি একেবারে দৈবাৎ নয়, অলক্ষ্যে তাতে গানাদো সাহায্য লাভ করেছেন, চোখের জন্যে কাটা মৃত্যু-মুখোশের ফোকর দিয়ে অস্পষ্টভাবেও একটু দেখবার সুযোগের জন্যে।

    বোর্লার রক্তরাঙা ঝালরের ভেতর দিয়ে গানাদো এসপানিওল সওয়ারদের নেতৃস্থানীয় দু-জনকে তাঁর চারিধারের বেষ্টনীর কাছে ঘোড়া থামাতে দেখেন।

    একজন তার মধ্যে তাঁর পরিচিত। মাকিয়াভেল্লী থেকে চুরি করা বিদ্যে জাহির করে যে কাক্‌সামালকার প্রথম মন্ত্রণাসভায় পিজারোকে শয়তানি পরামর্শ দিয়েছিল, সেই জুয়ান দে হেরাদা।

    কিন্তু হেরাদার পাশে ওই সওয়ারটি কে?

    ঘোড়ার পিঠে বসে পিছু ফিরে পেছনে কী যেন দেখছে বলে তার মুখটা গানাদোর বেয়াড়াভাবে হেলানো ও অনড় মাথার দৃষ্টি সীমার মধ্যে পড়ছে না, কিন্তু ঘোড়ার ও মালিকের সাজের বহর দেখে বোঝা যাচ্ছে লোকটা হেঁজি পেজি নয়।

    হেরাদার হাঁক এবার শোনা যায় এই, কে তোরা? কোথায় তোদের রাজপুরোহিত ভিলিয়াক ভমু?

    জবাব মেলে না কোনও গানাদোকে হুয়াইনা কাপাক-এর শবদেহ হিসেবে যারা পাহারা দিচ্ছে তারা ছাড়া জবাব দেবারও কেউ নেই। প্রহরীরা ভিলিয়াক ভমু নামটা ঠিকমতো শুনলে হয়তো কিছু বলার চেষ্টা করতে পারত, কিন্তু হেরাদার বিকৃত উচ্চারণে সে নাম তাদের বোধগম্য হয় না।

    জবাব না পেয়ে গরম হয়ে ওঠে হেরাদা। দাঁত খিঁচিয়ে চিৎকার করে ওঠে, বোবা। সেজেছে সব? জিভগুলো কেটে সত্যিই বোবা বানিয়ে দিচ্ছি!

    হেরাদা কোমরবন্ধ থেকে তলোয়ারটা প্রায় খুলতেই যাচ্ছে এমন সময় পেছন থেকে যে এসে তাকে বাধা দেয় সে-ও গানাদোর চেনা। দোভাষী ফেলিপিলিও।

    মানুষ হিসেবে ফেলিপিলিও হেরাদারই যোগ্য সহচর। তবে আপাতত সে উচিত। প্রশ্নই করে।

    একটু হেসে বলে, কাদের জিভ কাটতে যাচ্ছেন? এদের?

    হ্যাঁ, যা জিজ্ঞেস করছি তার জবাব নেই। হেরাদা কুদ্ধ স্বরে বলে, আর স্পর্ধা দেখেছ হতভাগাগুলোর। আর সবাই তবু ভয়ে পালাচ্ছে আর এরা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে গ্যাঁট হয়ে। হাতে আবার ঊচোনো বল্লম।

    দোভাষী ফেলিপিলিও এবার ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করে বোঝায়। লোকগুলো স্পর্ধা দেখাতে নয়, ভূতপূর্ব ইংকা নরেশ হুয়াইনা কাপাক-এর পবিত্র শবদেহ পাহারা দিতে ওখানে এদেশের চিরকালের সংস্কার মেনে অটল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ফেলিপিলিওর এই বিবরণের মধ্যেই দ্বিতীয় সওয়ার নায়ক পেছন থেকে সামনে মুখ ফেরায়।

    সচকিত বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে যান গানাদো। অসামান্য সংযম না থাকলে সেই মুহূর্তে ভেতরের চাঞ্চল্য চাপতে না পেরে হয়তো ধরাই পড়ে যেতেন।

    আর যাকে-ই হোক, ঠিক সেই মুহূর্তে কুজকো শহরের সেই সূর্য-বরণ প্রান্তরে এই মানুষটিকে এসপানিওল সওয়ারদের অন্যতম নায়ক হিসেবে দেখবার কথা গানাদো কল্পনাও করেননি।

    মানুষটি আর কেউ নয়, মার্কুইস গজালেস দে সোলিস, কোনওকালে সোরাবিয়া নামে যে নেহাত নীচ ইতর জুয়াড়ি বলে পরিচিত ছিল, আর গানাদোর জীবনে একাধিকবার যে অশুভ গ্রহের মতো চরম দুর্ভাগ্যের দূত হয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে দেখা দিয়েছে।

    মার্কুইস গঞ্জালেস দে সোলিস ফেলিপিলিওকে তার ব্যাখ্যা শেষ করতে দেয় না। অধৈর্যভরে তাতে বাধা দিয়ে বলে, এ দেশের মর্কটগুলোর শাস্ত্রকথা শুনতে এখানে আসিনি। রাজপুরোহিত ভিলিয়াক মুর খবর পেয়েছ কিছু? আছে সে এখানে?

    না, এখানে নেই। জানায় ফেলিপিলিও, মনে হচ্ছে কুজকো শহরেই নেই।

    কী করে জানলে? সন্দিগ্ধ চড়া গলায় প্রশ্ন করে মার্কুইস দে সোলিস, মন্তর পড়ে নাকি? তুমি তো আমাদের সঙ্গেই এলে!

    হ্যাঁ, আপনাদের সঙ্গেই এসেছি, বলে ফিলিপিলিও, কিন্তু রাজপুরোহিতকে আপনাদের চেয়ে একটু বেশি চিনি! কুজকো শহরে থাকলে তিনি ঘোড়ার খুরের শব্দ পেলে সবার আগে ছুটে এসে এখানে হাজিরা দিতেন।

    বটে! ব্যঙ্গের সুরে বলে হেরাদা, হুঁশিয়ার মানুষ বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু আজ এদের কী এক মস্ত জংলি পরব। এই পরবের দিনেও রাজপুরোহিতের এখানে না থাকাটা কী রকম?

    হ্যাঁ, ব্যাপারটা একটু অদ্ভুত। স্বীকার করে ফেলিপিলিও, তারপর জানায় যে কোরিকাঞ্চার ছোটখাটো পুরোহিতদের কাউকে ধরে এখন খবর না নিলে নয়।

    কিন্তু যাকে আমরা চাই, সেই গোলামটার খোঁজ দিতে পারবে ওরা? হিংস্রভাবে প্রশ্ন করে মার্কুইস গঞ্জালেস দে সোলিস।

    না পারলে ওরা শুধু নয়, কুজকো শহরের কেউ রেহাই পাবে! হেরাদা যেন মনে মনে ভাবী উৎপীড়নটা কল্পনাতেই উপভোগ করে বলে, এ শহরের একটা মানুষকে তা হলে আস্ত রাখব না। খোঁজ না দিতে পারার শাস্তি একটি করে অঙ্গ। জ্যান্ত মানুষ কেউ পার পাবে না!

    কিন্তু যাকে খুঁজছেন, মৃদু প্রতিবাদের ছলে একটু রহস্য করে ফেলিপিলিও, সে-ই এখনও বেঁচে আছে তারই বা ঠিক কী!

    মরে গিয়ে থাকলে, পৈশাচিক আক্রোশের সঙ্গে বলে মার্কুইস দে সোলিস, কবর খুঁড়েও তার লাশ আমি টেনে বার করব। জ্যান্ত বা মড়া যাই হোক, আমার হাত থেকে তার নিস্তার নেই। চলো এখন, রাজপুরোহিতের জায়গায় কাকে পাওয়া যায় দেখি।

    কোরিকাঞ্চার অন্য ছোটখাটো পুরোহিতের খোঁজে ঘোড়া চালিয়ে এবার এগিয়ে যেতে যেতে মার্কুইস দে সোলিস হঠাৎ পিছু ফিরে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে, সোনার সিংহাসনে বসানো ও বাসি পচা মড়াটা কার বললে যেন, কোন বাঁদির বাচ্চার?

    বাঁদির বাচ্চার নয়,-এসপানিওলদের কাছে নিজেকে বিকিয়ে-দেওয়া দেশের দুশমন বিভীষণ হলেও ফেলিপিলিওর গলার স্বর একটু তেতোই শোনায়-কুজকো থেকে কুইটো পর্যন্ত সমস্ত রাজ্যের যিনি অধীশ্বর ছিলেন ও পবিত্র শবদেহ ইংকাশ্রেষ্ঠ সেই হুয়াইনা কাপাক-এর।

    হুঁ, গলায় যেন ভক্তি ভক্তি ভাব পাচ্ছি! বিদ্রূপ করে মার্কুইস, তোমাদের রাজা-গজা যা-ই হোক, আমার কাছে সব বাঁদির বাচ্চা। এখান থেকে ফেরবার সময় ও লাশটা তলোয়ারের খোঁচায় টেনে ফেলে দিয়ে সিংহাসনটা সঙ্গে নিয়ে যাব। ওটা নিরেট সোনা মনে হচ্ছে।

    নিরেট সোনার সিংহাসনে হুয়াইনা কাপাক-এর শব সেজে নিস্পন্দ গানাদোর কানে প্রত্যেকটা কথা যেন গলানো সিসের মতো গিয়ে পড়ে।

    অপ্রত্যাশিত বিশ্রীগোছের কিছু একটা যে হয়ে গেছে এবিষয়ে আর সন্দেহ থাকে গানাদোর।

    মার্কুইসরূপী সোরাবিয়া সঙ্গী হিসেবে হেরাদাকে নিয়ে তাঁরই খোঁজে যে এসেছে তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।

    শুধু নিজেদের মর্জিতে হেরাদা বা সোরাবিয়ার পক্ষে সওয়ারবাহিনী নিয়ে কামালকা থেকে কুজকোয় আসা সম্ভব নয়। সেনাপতি পিজারোর অনুমতি তো বটেই, সমর্থন জানানো আদেশও এই দুই মানিকজোড় পাষণ্ড পেয়েছে নিশ্চয়।

    তাঁকেই বিশেষ করে খুঁজতে আসার কারণ কী? সোনাবরদার হয়ে তাঁর কামালকা থেকে পালানো কি ধরা পড়েছে?

    শুধু সেটুকু ধরা পড়লেও এমন কিছু সর্বনাশ হবে না। সেখানে যে চাকা ঘোরাবার নানাদো তার যথোচিত ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এখন তাঁর পেছনে ধাওয়া করে, এমনকী তাঁকে গ্রেপ্তার করলেও পেরুর বিদ্রোহের দাবানল নেভানো যাবে না।

    সৌসা থেকে হুয়াসকার আর কামালকা থেকে আতাহুয়ালপা একবার রওনা হতে পারলে আর ভাবনা নেই।

    কিন্তু আতাহুয়ালপার সঙ্গে তাঁর চক্রান্ত যদি ফাঁস হয়ে গিয়ে থাকে, তা হলে তো সবকিছুই ব্যর্থ।

    না, তা কখনওই হয়নি—মনে মনে বিচার করে ধারণা হয় গানাদোর। আতাহুয়ালপাকে যেটুকু চিনেছেন, তাতে তিনি কুটিল ক্রুর স্বার্থপর দাম্ভিক সবকিছু হতে পারেন কিন্তু সম্রাটোচিত মর্যাদাবোধে তিনি পৃথিবীর কোনও নৃপতির চেয়ে কম যান না। যারা তাঁকে বন্দি করে রেখেছে, তাদের চেয়ে তিনি অনেক ওপরের স্তরের মানুষ। ইংকা রক্তের স্বাভাবিক আভিজাত্যে তিনি এ পার্বত্য রাজ্যের তুষারমৌলি উত্তুঙ্গ শিখরের মতোই স্বতন্ত্র ও অসাধারণ। আতাহুয়ালপা সুতরাং কোনও কারণেই নিজের দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভাঙবেন না। রাজত্ব ফিরে পাওয়ার প্রলোভনে কিংবা চরম উৎপীড়নে আর মৃত্যুভয়েও কোনও গোপন কথা বার হবে না তাঁর মুখ থেকে। আর আতাহুয়ালপা ছাড়া এ বিদ্রোহের গোপন আয়োজনের কথা বিন্দুবিসর্গও যে জানে এমন কাউকে গানাদো কামালকায় রেখে আসেননি। এ ষড়যন্ত্রের আর একজন মাত্র অংশীদার পাউল্লাে টোপা তাঁর সঙ্গেই কুজকোতে এসেছে। এখানে রাজপুরোহিত ভিলিয়াক ভমুর হাতে ধরা পড়ে সে হয়তো উৎপীড়নে কিছু কিছু গোপন কথা প্রকাশ করে ফেলেছে। পাউলো টোপার পক্ষে যা প্রকাশ করা সম্ভব, তা রাজপুরোহিতের কাছে নতুন কিছু নয়। তিনি ইতিমধ্যে গানাদোর কাছেই তার বেশি কিছু জেনেছেন। যা জেনেছেন, সে খবর কিন্তু কামালকায় পৌঁছে দেবার

    জন্যে রাজপুরোহিত একটুও ব্যস্ত হবেন কি না সন্দেহ। এ ধরনের গুপ্ত ষড়যন্ত্র ধরে দেওয়ার ঝুঁকি তো কম নয়। তার উপযুক্ত প্রমাণ না দিতে পারলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তা ছাড়া এখান থেকে খবর পাঠালেও ইতিমধ্যে কামালকা থেকে তার জবাবে এসপানিওল রিসালার কুজকোয় এসে হানা দেওয়া সম্ভব নয়।

    সুতরাং আতাহুয়ালপার কাছ থেকে গোপন ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়নি যেমন ধরে নেওয়া যেতে পারে, রাজপুরোহিতের কাছ থেকেও কোনও খবর কাক্সামালকায় যায়নি এ কথা বিশ্বাস করতে পারা যায় তেমনই।

    ষড়যন্ত্র প্রকাশ না পাওয়ার আর একটা প্রমাণ এই বলে গানাদোর মনে হয় যে, এরকম একটা সর্বনাশা কিছুর আঁচ পেলে পিজারো শুধু সোরাবিয়া আর হেরাদার নেতৃত্বে ছোট একটা রিসালা কুজকো পর্যন্ত পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত হতেন না।

    সোরাবিয়ার আর হেরাদার আলাপে শুধু তাঁর কথাটাই প্রধান হয়ে উঠত না অতখানি।

    গানাদোই তা হলে কামালকা থেকে এসপানিওল রিসালার কুজকো অভিযানের একমাত্র লক্ষ্য বলে বোঝা যাচ্ছে। এসপানিওলদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র যদি প্রকাশ না হয়ে থাকে—হয়নি বলেই নিশ্চিত ধরে নেওয়া যেতে পারে—তা হলে তাঁর এতবড় সম্মান পাওয়ার কারণ কী?

    শুধু পলাতক একজন এসপানিওল সৈনিকের জন্যে এত মাথাব্যথা পিজারোর হতে পারে না যে তাকে ধরতে ছোটখাটো একটা সওয়ার দল পাঠাবেন।

    সে সওয়ার দলের নায়ক আবার সোরাবিয়া!

    সোরাবিয়া কোথা থেকে এসে কী করে এ বাহিনীর নায়ক হয় সেইটেই ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না গানাদো।

    মেদেলিন শহরে যমপুরীর মতো কারাগার থেকে পালিয়ে আসবার পর আর কোনওদিন সোরাবিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ হবার সম্ভাবনা সত্যি ছিল না। সারাবিয়ার হাতেই ভাগ্যের চক্রান্তে কাপিন সানসেদোর সঙ্গে সেবার ধরা পড়েছিলেন বটে, তারই ঘুষ আর প্রতিপত্তির দরুন চালানও হয়েছিলেন অমন জীবন্ত কবরে, কিন্তু সেখান থেকে প্রায় অলৌকিকভাবে উদ্ধার পাবার পর সোরাবিয়ার জগৎ চিরকালের মতো ছেড়ে আসতে পেরেছেন বলেই ধারণা হয়েছিল গানাদোর।

    সোরাবিয়া তো আর তখন যেমন-তেমন কেউ নয়, দস্তুরমতো মার্কুইস গঞ্জালেস দে সোলিস। গানাদো আর সানসেদোর কারাগার থেকে পালাবার খবর পেয়ে রাগে যত আগুনই সে হোক, গানাদোকে নিয়ে মাথা ঘামাবার সময় আর উৎসাহ তার না থাকবারই কথা। অভিজাতদের একজন হিসেবে এসপানিয়ার আমিরি ফেলে একটা হাঘরে ঘেয়ো কুকুরের মতো তাড়া-খেয়ে-ফেরা গোলামের পেছনে সে ছুটে মরবে কেন? আক্রোশ তার যা ছিল সে গোলামের বিরুদ্ধে তা তো মিটেই গেছে। যদি বা কিছু অবিশিষ্ট থাকে তা এমন তীব্র নিশ্চয় নয় যে এসপানিয়ার ঐশ্বর্য বিলাস প্রতিপত্তি সব বিসর্জন দিয়েই এই অজানা বিপদের রাজ্যে পাড়ি দেওয়াতে পারে।

    এত জায়গা থাকতে এই সূর্য কাঁদলে সোনার দেশেই সোরাবিয়ার আসাটা তাই একটু বেশি অদ্ভুত লাগে গানাদোর। গানাদোর সন্ধানেই সোরাবিয়া সব কিছু ছেড়ে বেরিয়েছে এই অসম্ভব ব্যাপারও যদি সত্যি হয় তা হলেও ঠিক এই রাজ্যেই সে আসে কেমন করে? গানাদো যে এখানে এসেছেন তা তো তার কোনওমতেই জানবার কথা নয়।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী
    Next Article মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    Related Articles

    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    ঘনাদা সমগ্র ১ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    প্রেমেন্দ্র মিত্র

    ঘনাদা সমগ্র ২ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }