Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    চক্রব্যূহে প্রখর রুদ্র – কৌশিক রায়

    কৌশিক রায় এক পাতা গল্প22 Mins Read0

    দিসেরগড়ে দিশেহারা

    ০১. দিসেরগড়ে দিশেহারা

    দিসেরগড়ে দিশেহারা। টালমাটাল পায়ে লোকটা পানশালা থেকে বেরিয়ে রাস্তার দিকে এগিয়ে গেলো। রাত অনেক হয়েছে। রাস্তার ল্যাম্পপোষ্টের হলদে আলোগুলো ঝিমিয়ে পড়েছে, রাতের অন্ধকার সব কিছুকে গিলে খাচ্ছে। লোকটা কোনোমতে ডান হাতটা তুলে ধরে রাতের শেষ ট্যাক্সিগুলোকে ধমকে ওঠে–“ঐ শালা, আমাকে বাড়ি নিয়ে চল। পাঁচশো টাকা দেব।” রাত সাড়ে বারোটায় কোনো ট্যাক্সিই এই মাতাল যাত্রী তুলতে আগ্রহ দেখায় না। ফাঁকা রাস্তার বুক চিরে হুস হুস করে হলদে ট্যাক্সিগুলো বেরিয়ে যেতে থাকে। লোকটা অসমর্থ হাতে বুক পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ঠোঁটের কোণে রেখে এক মুখ ধোঁয়া ছেড়ে এদিক ওদিক তাকাতে থাকে। ঝাপসা চোখে সে কিছু দূরে একটা হাতে টানা রিক্সা দেখতে পায়। যদিও রিক্সা চালক বোধহয় চাদর জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। শহরে ধীরে ধীরে ঠান্ডা পড়ছে। লোকটা সিগারেটটা বাঁ হাতে ধরে রিক্সার সামনে এসে দাঁড়ায়–“ঐ ওঠ, ওঠ শালা। আমায় বাড়ি পৌঁছে দিবি চল।” সদ্য ঘুম ভাঙা রিক্সা চালক ফ্যাল ফ্যাল করে লোকটার দিকে তাকিয়ে থাকে। লোকটা একটা পাঁচশো টাকা বাড়িয়ে দেয়–“নে, তোর সারা মাসের খরচা। এবার আমায় বাড়ি পৌঁছে দিবি চল।” গরীব দেহাতি রিক্সা চালক আর কথা বাড়ায় না। লোকটা রিক্সায় চেপে বসে। তাঁর সিগারেট ধরা হাতটা রিক্সার বাইরেই ঝুলতে থাকে।

    পানশালার পিছন থেকে একটা ছায়ামূর্তি বেরিয়ে আসে। হাত দুটো জ্যাকেটের পকেটে ঢুকিয়ে ছায়ামূর্তি চুপচাপ রিক্সাটাকে অনুসরণ করে। খুব বেশি দূরত্ব না রেখেই ছায়ামূর্তি নিঃশব্দে লোকটিকে অনুসরণ করে। কিছুদূর যেতেই লোকটি তাঁর সিগারেটে শেষ সুখটান দিয়ে রাস্তায় ফেলে দেয়। এবার ছায়ামূর্তি ছুটে এগিয়ে আসে, হাতে তাড়াতাড়ি সাদা গ্লাভস পরে নেয়। সিগারেটের ফিল্টারটা কুড়িয়ে নিয়ে একটা এয়ারটাইট প্যাকেটে ঢুকিয়ে পকেটে ভরে নেয়। এদিক ওদিক দেখে ছায়ামূর্তি উল্টোদিকে হাঁটতে শুরু করে–“হ্যালো ম্যাডাম, হ্যাঁ কাজ হয়ে গেছে। না, না। আমি এখুনি ল্যাবে আসছি…”

    ******

    শিবানী অফিস থেকে ফিরেই ছুটে দু’তলায় চলে যায়। শিবানীর ভারি বুটের আওয়াজ পেয়ে শিবানীর মা কুন্তলাদেবী বলে ওঠেন–“ওরে মালতি চা বসা। একজন ফিরেছেন, আর একজন যে কখন ফিরবেন ভগবানই জানেন।” শিবানী জুতো খুলে সোজা জ্যেঠুর পড়ার ঘরে হানা দেয়। শিবানীর জ্যেঠুর বয়স প্রায় ষাট ছুঁই ছুঁই। স্বাস্থ্য দেখলে বোঝা যায় যুবাবয়সে বেশ শক্ত সমর্থ ছিলেন। শিবানীর জ্যেঠু কম বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন–যেখানে যা কাজ পেয়েছেন করেছেন আর কিছু টাকা জমলেই আবার নতুন জায়গা দেখার নেশায় শহর ছেড়েছেন। বিচিত্র সেসব অভিজ্ঞতা। সেসব চিঠি লিখে তাঁর এক লেখক বন্ধুকে জানাতেন, আর লেখক বন্ধুটি সেসব অভিজ্ঞতার কথা গল্পাকারে লিখে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিলেন। তারপর বয়স বাড়তেই হঠাৎ করেই একদিন বাড়ির টান পেয়ে বসলো। একমাত্র ছোটো ভাইয়ের কাছে যখন ফিরলেন তখন বাবা মা গত হয়েছেন আর ভাই, শেখরের দুটি পাঁচ বছরের যমজ মেয়ে–শিবানী আর ইন্দ্রানী। একরকম ভাইঝিদের মুখ চেয়েই রয়ে গেলেন ভাইয়ের কাছে, তবে এখনো হঠাৎ হঠাৎ বেরিয়ে পড়েন আর প্রত্যেকবার সঙ্গে নিয়ে যান ইন্দ্রানী না হয় শিবানীকে। ছোটভাই শেখর পুলিশের ডি আই জি। আর শিবানী এবছরই ক্রাইম ব্রাঞ্চের ইন্সপেক্টর পদে অভিষিক্তা হয়েছে। ছোট ভাইঝি ইন্দ্রানী অবশ্য জ্যেঠুর ধাত পেয়েছে। এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ানো আর সব কিছুকে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করা।

    শিবানী পড়ার ঘরে ঢুকে দেখলো জ্যেঠু একটা বায়োলজির বই পড়ছে। পায়ের শব্দ পেয়ে চোখ না তুলেই জিজ্ঞাসা করল–“কীরে, আজ আবার কী কেস? ছিনতাই নাকি অযথা চিন্তাই!”

    শিবানী নিচের ঠোঁট উল্টে বলল–“হত্যা নাকি দুর্ঘটনা?”

    জ্যেঠুমণি শিবানীর হাতের চকোলেটের দিকে ইশারা করে বললেন–“আমাকে দিও নাকো তেল, ওহে মিস মার্পেল..”

    শিবানী এসে একটা ফাইল টেবিলে রেখে জ্যেঠুকে জড়িয়ে ধরে বলল–“প্লিজ প্লিজ এরকম কোরো না। খুব কেস খাচ্ছি অফিসে। বাবা আজ অফিসেই কল করে বলল তাড়াতাড়ি হয় কেস সলভ করতে না হলে ছেড়ে দিতে। আর বেশি দিন দেখবে না। হাই প্রোফাইল কেস। নিজের বাবা মেয়েকে সাপোর্ট করছে না, ভাবতে পারো তুমি! তুমিও হাত তুলে দিলে যাই কোথা?”

    জ্যেঠুমণি চকলেটটা শিবানীর হাত থেকে নিয়ে এক টুকরো মুখে দিয়ে বললেন–“বস। বল দেখি… শুনি।”

    শিবানী বলতে শুরু করে–“ঘটনার শুরু মাস তিনেক আগে। ঐ জুনের শেষ দিকে আর কি। শহরের নামী এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর মেয়ে ও তার এক বান্ধবী বর্ধমানের কাছে একটি রিসর্টে প্রাইভেট পার্টিতে গিয়েছিল। ফেরার পথে নিখোঁজ। পরের দুই-আড়াই মাস তন্ন তন্ন করে খুঁজেও না গাড়ি পাওয়া গেল, নাকি তাদের বডি। দিন পনেরো আগের কথা। হঠাৎ করেই গাড়ির দ্যাখা মিলল দামোদরের চরে। ভরা বর্ষায় দামোদরের জলে আড়াই মাস ডুবে ছিল লাল অল্টো গাড়িটা। এখন জল কমতে দ্যাখা মিলেছে। বলাই বাহুল্য তাতে দুজন মহিলার বডি পাওয়া গেছে, কিন্তু তাদের আর চেনার মতো অবস্থায় নেই। জলের তলায় বডি পচে ফুলে উঠে যাতা অবস্থা, তবে গাড়িতে পাওয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখে সনাক্ত করে ক্রাইম ব্রাঞ্চে খবর পাঠায় লোকাল থানা। আমরা দেরি না করে গিয়ে যা যা ছবি তোলার তুলে বডি নিয়ে কোলকাতাতে ফেরত আসি। বডির যা অবস্থা হয়েছিল কিছুই পাওয়ার আশা ছিলনা–হাড়ের থেকে মাংস সব ঝুলে পড়েছিল। কোনো রকমে কাপড়ে বেঁধে আমরা নিয়ে আসি। ফরেনসিক খুব বেশি কিছু পায়নি–ভ্যাজাইনাতে একাধিক সিমেনের নমুনা পাওয়া গেছে, কিন্তু ধর্ষন কিনা বলা সম্ভব হয়নি। শরীরের সব মাংসপিণ্ডই পচে গলে উঠে ছিল…।

    জ্যেঠুমণি বলে উঠল–“জলের নিচে অতদিন থাকার পরে সিমেনের নমুনা সংগ্রহ করা গেল?”

    শিবানী একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলল–“না মানে ঠিক সিমেন না। জরায়ুর মধ্যে দুটি মেল ডি এন এ-এর ট্রেস পাওয়া গেছে Y-STR টেস্ট করে। আর তুমি তো ভালো করেই জানো ডি এন এ-এর ছোটো থেকে ছোটো স্যাম্পলও বেশ কয়েক বছর পরও ইনটাক্ট থেকে যায়। যদি বডিটা পুরোপুরি গলে পচে জলে ভেসে যেত, তাহলে হয়তো আর খুঁজে পাওয়া যেত না।”

    জ্যেঠুমণি বলে উঠল–“হুম… তোরা ঠিক পথেই তো ছিলিস। তা সমস্যাটা বাঁধলো কোথায়।”

    শিবানী চেয়ার থেকে উঠে পায়চারী করতে করতে বলতে শুরু করল–“বাবার অধেল টাকা। উদ্দাম জীবনযাপন। সেদিন প্রাইভেট পার্টিতেও মদ্যপানের কোনো সীমা ছিলো না। সেখানেই একজনের সাথে শারীরিকভাবে ঘনিষ্ঠ হয়। একজন স্বীকারও করেছে। সেখান থেকে মাঝ রাতে মদ্যপ অবস্থায় মেয়েটি ও তার বন্ধু গাড়ি করে বেরিয়ে যায়। পরে ইনভেস্টিগেশনে জানলাম, এর আগেও মেয়ে দুটি এরকম প্রাইভেট পার্টিতে এরকম বহুবার করেছে। মেয়েটির বাবা না জানলেও মা জানতেন। বারণ করেও কিছু হয়নি। এরকম অবস্থায় প্রথমে দুর্ঘটনা বলে কেস ক্লোস করে দেওয়া হয়। কিন্তু মেয়েটির বাবার দাবি, এটা দুর্ঘটনা নয়–তার মেয়ে মদ্যপ অবস্থায় হলেও স্টিয়ারিং হাতে ধরলে নাকি পাক্কা ড্রাইভারকেও হার মানিয়ে দেয়। জানি এরকম যুক্তির কোনো মানে নেই, তাও দুর্ভাগ্যবশত সেই কেস আমার ঝুলিতেই এসে পড়েছে।”

    “তোরা কি কি জোগাড় করলি?”

    শিবানী পায়চারী করতে করতে বলে–“পুরুলিয়া বরাকর রোডের উপর একটা ধাবা আমরা সনাক্ত করেছি, যেখানে মেয়ে দুটি নেমেছিল। দুমাস পরেও ধাবার মালিক মনে রেখেছিল। সেদিন রাতে ধাবায় মদ্যপ অবস্থায় চিৎকার চেঁচামেচি আর কি! যা হয়!”

    “হুম…চিৎকার চেঁচামেচিটা ঠিক কিসের জন্য? আর গাড়িটা ঠিক কোথায় পাওয়া গিয়েছিল?”

    “ঐ কয়েকটি ছেলে তাদের দিকে কিছু মন্তব্য করেছিল। তারই ফলে প্রথমে কথা কাটাকাটি, তারপর ধস্তাধস্তি। ধাবার মালিক দুই পক্ষকেই বের করে দেয়া এক ওয়েটারের মাথায় মেয়েটি কচের গ্লাস ছুঁড়ে মারে। রক্তারক্তি কান্ড একেবারে। আর গাড়ি পাওয়া যায়, যেখানে দামোদর আর বরাকর মিশছে ঠিক সেখানে।

    জ্যেঠুমণি ল্যাপটপটায় ফটাফট বর্ধমানের ম্যাপ খুলে বসে–“দ্যাখ, পুরুলিয়া বরাকর রোড মানে কোলকাতা আসতে দিশেরগড় ব্রীজ টপকাতেই হবে। আমার সম্ভবনা বলছে ওরা ব্রীজ টপকায়নি। টপকালে, আর সে গাড়ি দামোদরের জলে পাওয়া যেত না। তবে মন বলছে দুর্ঘটনা নয়, না হলে যা হওয়ার ব্রীজের উপরেই হতো। এক যদি মেয়েদুটির নিচে যাওয়ার নির্দিষ্ট কোনো কারণ না থেকে থাকে। কতগুলো জিনিস আরো একটু ভালো করে দ্যাখা দরকার। কোনো ভিডিও ফুটেজ?”

    শিবানী ল্যাপ্টপের উপর ঝুঁকে পড়ে বলে–“হ্যাঁ। ধাবা আর কিছু দূরের একটি এ টি এম এর ফুটেজে লাল অটো দিব্যি দ্যাখা যাচ্ছিলো। সঙ্গে দুটি ফুটেজেই যে ছেলেগুলির সাথে ঝগড়া হয় তাদের কালো স্কোরপিও দ্যাখা গেছিলো। ওদের আমরা সন্দেহের বশে তুলে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। কোনো লাভ হয়নি। ওদের কারো ডি এন এ-ও ম্যাচ করেনি। ওদের বক্তব্য ওরা ধাওয়া করেছিল ঠিকই, কিন্তু কিছু দূর গিয়ে ওরা আর ঝামেলা বাড়াতে চাইনি তাই গাড়ি থামিয়ে বিয়ার খেয়ে সারারাত রাস্তাতেই ছিল। ভোর হতে সবাই মেদিনীপুর ফিরে যায়। আমরা ওদের বক্তব্য ভেরিফাই করেছি। সবকিছুরই প্রমাণ আছে–সকালে যে দোকান থেকে চা খেয়েছিল, ব্রেকফাস্ট করেছিল সবই অথেন্টিক।”

    জ্যেঠুমণি ফাইলটা টেবিল থেকে তুলে শিবানীর দিকে ধরে বলল–“ছবিগুলো দ্যাখা তো…”

    শিবানী গাড়ির কতগুলো ছবি সামনে সাজিয়ে দিল সঙ্গে দুজন ভিক্টিমের দেহ। ভিক্টিমদের যদিও দেখার আর কিছু বাকি ছিল না–গলা, পচা ফুলে ওঠা সাদাটে মাংস পিন্ড ছাড়া আর কিছুই বাকি নেই। মানুষের আকৃতি না থাকলে হয়তো মানুষ বলেও ঠাহর করা যেত না। গাড়ির দুটো ছবি নিয়ে জ্যেঠুমণি মন দিয়ে দেখতে লাগলো–একটা, পিছনদিকের ডিকির ছবি; অন্যটা, সামনের বনেটের। তারপর তড়িঘড়ি পোস্ট মর্টেম রিপোর্টটা দেখে নিলো। বাকি ফাইলটা চোখ বুলিয়ে জ্যেঠুমণি বলে উঠলো–“কটা জিনিস খোঁজ নে। এক, গাড়ির বনেট আর ডিকি দুই জায়গাতেই বড় সড় থোবড়ানো কোনো একটা কি আগে থেকেই ছিল? দুই, প্রাইমারি ইনভেস্টিগেটিভ অফিসার যিনি ছিলেন তাঁকে জিজ্ঞাসা করিস যখন গাড়িতে বডি পাওয়া যায় তখন ঠিক কিভাবে ছিল–মানে সিট বেল্ট ছিল কিনা; পায়ের থেকে অ্যাক্সিলারেটর, ব্রেক কতদূরে ছিল এসব আর কি। মানে যতটা বিস্তারিত বলতে পারবে ততটা সুবিধা।

    শিবানী ব্যাগ থেকে একটা সিডি বের করে জ্যেঠুমণির ল্যাপটপে ঢুকিয়ে দেয়–“সি সি টিভি ফুটেজ সব এতে আছে। গাড়ির ডেন্ট ছিল কিনা জানা হয়ে যাবে।”

    দুজনে অনন্ত ধৈর্য নিয়ে সব ফুটেজগুলো দেখে চলে। এর মধ্যে মালতি এককাপ চা আর এককাপ কফি দিয়ে গেছে। ভাইঝি আর জ্যেঠুর যদিও সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই। কুন্তলাদেবী এসে ঠান্ডা চা আর কফি নিয়ে চলেও গেছেন। টেবিলের উপর চকলেট দেখে তিনি বুঝেছেন সমস্যা গম্ভীর। কিন্তু এই বয়সে বেশি মিষ্টি না খাওয়াই ভালো–“দাদা, আমি চকলেটটা ফ্রীজে রাখছি। এখন আর খাবেন না।” জ্যেঠুমণি কোনোদিকে না তাকিয়ে শুধু ‘হুম’ বলে সম্মতি জানিয়েছেন।

    প্রায় একঘণ্টা ধরে সব ফুটেজ খুঁটিয়ে দেখে শিবানী বলল–“দেখো এটিএম পর্যন্ত তো দেখাই যাচ্ছে যে, না গাড়ির সামনে ডেন্ট আছে না পিছনে। আমার মনে হয়ে জলে পড়ার সময়ই দামোদরের নিচে শক্ত কোনো পাথরে ধাক্কা লেগে ডেন্ট হয়েছে। কিন্তু এটাতে এতো ভাবার কি আছে?”

    জ্যেঠুমণি বলল–“গাড়ি একই সাথে কি দুদিকে চলতে পারে?”

    “মানে?”

    “মানে, হয় গাড়ি সামনে ভাবে চলবে আর না হলে রিভার্স গিয়ারে পিছনের দিকে। সামনের দিকে মুখ থুবড়ে পড়লে বনেট থুবড়ে যাবে কিন্তু ডিকিতে খুব বেশি আঘাতে চিহ্ন থাকবে না। আর যদি পিছন ভাবে পড়ে তাহলে ডিকি থুবড়ে যাবে, বনেট থুবড়ে যাবে না। নিশ্চই মাঝখানে কিছু একটা হয়েছিল যেটা আমরা মিস করছি। সেটা জানার জন্য বাকি প্রশ্ন গুলোর উত্তর খোঁজ তাড়াতাড়ি।”

    শিবানী শুকনো মুখে তাকিয়ে বলল–“তার মানে বলতে চাইছো, খুন?”

    “মনে তো তাই হচ্ছে রে! আরো একটা খটকা আছে–পোস্ট মর্টেম বলেছে মাথার স্ক্যাল্পে পিছনে চিড় ধরা। এখন প্রশ্ন গাড়ি সামনে ভাবে পড়লে সামনে চিড় ধরলে তাও মানা যেত। মাথার ডান পাশে চিড় ধরলেও আশ্চর্য হতাম না–দরজায় গায়ে ধাক্কা লাগতেই পারে। কিন্তু পিছনে সিট থাকতেও এতো জোরে কি আদৌ ধাক্কা লাগতে পারে যে স্ক্যাল্পই ফেটে যাবে। আরও একটু খুঁটিয়ে দেখতে হবে। সিডিটা এখানেই রেখে যা। সকালে মনে করে নিয়ে যাস অফিস যাওয়ার সময় দেখি যদি আরো কিছু পাওয়া যায়। আর হ্যাঁ যা মনে হচ্ছে যদি এটা খুন হয়ে থাকে তাহলে ওই এটিএমের পর থেকে ব্রীজে ওঠার আগে পর্যন্ত এরমধ্যেই কিছু হয়েছে। নদীর আশে পাশের জঙ্গলগুলো খুঁজে দেখ। যদি কোনোরকম কোনো কিছু পাওয়া যায়। আশে পাশের লোকজনকেও জিজ্ঞাসা কর। খুব শুনশান জায়গা তো আর নয়, কিছু না কিছু কেউ যদি দেখে থাকে।”

    এতোক্ষণে দুজনের খেয়াল হয়, কখন যেন শেখরবাবু ফিরে এসে চুপচাপ সোফায় বসে চা খাচ্ছেন। শিবানী দেখে একটু অপ্রস্তুত ভাবে হেসে ফ্যালে। শেখরবাবুও প্রত্যুত্তরে মিচকি হাসেন।

    ******

    পরের দিন সকালে শিবানী অফিস যাওয়ার আগে জ্যেঠুর সাথে দ্যাখা করে সিডিটা নিতে আসে। জ্যেঠুমণি একটুকরো কাগজ এগিয়ে দেন–“ঐ দিন এই তিনটে গাড়িও মোটামুটি ঐ মেয়েদুটির গাড়ির হয় কিছু আগে না হয় পরে ক্রস করেছে। ধাবা আর এ টি এম দুই জায়গাতেই এই তিনটে গাড়িকে দ্যাখা যাচ্ছে। এরা অদৌ জড়িত কিনা জানি না, তবে বাজিয়ে দ্যাখা আর কি!”

    শিবানীর এমনই দেরী হয়ে গিয়েছিলো তাই আর বেশি দেরি না করে কাগজটা নিয়ে বেরিয়ে যায়। দুপুরের দিকে কুন্তলাদেবীকে ফোন করে শিবানী জানায় কদিনের জন্য সে বর্ধমান যাচ্ছে। কুন্তলা দেবী আগে এসব চিন্তা করতেন তবে স্বামীকে এতোদিন দেখেছেন আর মেয়ে গত তিন বছরে এরকম অনেক হার্ট অ্যাটাক দিয়েছে, তাই তিনি শুধু খাওয়া দাওয়ার যত্ন নিতে বললেন। তিনি জানেন এখন সব থেকে বেশি মেয়ের খবর যদি কারোকাছে থাকবে তা হল তার ভাসুরের কাছে।

    তিন দিন পর বাড়ি ফেরে শিবানী। এই তিন দিনে অনেককিছু জোগাড় হল ঠিকই কিন্তু স্নায়ু যুদ্ধ তখনও শেষ হয়নি। শিবানী যখন বাড়ি ফেরে তখন জ্যেঠুমণি মন দিয়ে ল্যাপটপে কিছু একটা দেখছিলেন।

    তিন দিনের ক্লান্তি শিবানীকে নিংড়ে দিয়েছিল, তাই একটু ঘুমিয়ে সন্ধ্যেবেলা জ্যেঠুমণির ঘরে উপস্থিত হল।

    জ্যেঠুমণি বলে ওঠে–“কীরে কেমন লাগছে?”

    “ওসব ছাড়ো। আমার শনির দশা কাটছে না। এতো কাছে এসেও জাল গোটাতে পারছি না যে। কী যে করি…”

    জ্যেঠুমণি কিছু বলতে যাওয়ার আগেই শেখরবাবু ঘরে ঢুকে শিবানীকে বললেন–“কীরে তোর প্রোগ্রেস কতদূর? মিডিয়া কিন্তু জল ঘোলা করছে। আজ রিপোর্টও জমা করিস নি।”

    শিবানী অপ্রস্তুত হয়ে একবার বাবা আর একবার জ্যেঠুমণির দিকে দেখতে থাকে।

    জ্যেঠুমণি বলেন–“আমায় যা যা বলেছিস, ওকেও একবার বলে দে। ওকেও তো উপর মহলে জবাব দিতে হয়।”

    শিবানী সোফাতে বসে শুরু করে–“যে তিনটে গাড়ির নম্বর জ্যেঠু দিয়েছিল সে তিনটের কথা আগে বলি। একটা ছিল ফ্যামিলি কার। পুরুলিয়ার এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ফিরছিল। আর একটি আসছিল মালদা থেকে–একটি ছোটো খাটো ওষুধ ডিস্ট্রিবিউটারের গাড়ি। মাল নিয়ে ফিরছিল কোলকাতা। এই লোকটি ভোর ভোরই কোলকাতা পৌঁছে গিয়েছিল। তাই হিসেব করে দেখতে গেলে রাস্তায় কিছু করতে গেলে লোকটি অতো ভোরে কোলকাতা পৌঁছাতে পারত না। রাস্তার এক জায়গাতে এ টি এমে টাকা তুলেছিল। তারও ফুটেজ আছে। তৃতীয় গাড়িটি এক প্রতিপত্তিশালী নেতার শালা। সে যদিও বিশেষ কিছু বলতে রাজি নয়। ব্যক্তিগত কাজ থেকে রাতে দেরি করে ফিরছিল। কতরাতে বাড়ি ফিরেছিল সেসব বলতেও সে রাজি ছিল না। ঠিকঠাক কোনো কারণ ছাড়া জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে না জানিয়ে দিয়েছে।”

    শেখরবাবু এবার চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন–“আমার মনে হচ্ছে [একটা সাধারণ দুর্ঘটনাকে তোরা জোর করে খুন বানাতে চাইছিস। আই ওয়ান্ট রিপোর্ট অন ইয়োর সিনিয়ারস ডেস্ক টুমোরো মর্নিং নো মোর টাইম ওয়েস্ট।”

    শিবানী এবার একটু অধৈর্য হয়ে বলল–“পুরোটা না শুনেই কথা বলো কেন! আগে একটা ধন্দ ছিলো। এখন পরিষ্কার যে একটা খুন। শোনো তবে। তিন দিন আমারা কুড়ি জনের টিম দিশেরগড় ব্রীজ থেকে দামোদর আর বরাকরের মোহনা পর্যন্ত তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি। লোকজনকে জিজ্ঞাসা করেছি। অবশেষে দেখলাম ছিন্নমস্তা মন্দিরের কিছু দূরে একটা চালাঘরের নতুন মন্দির জাঁকিয়ে বসেছে। দেখলাম সেখানেই লাইন বেশি। জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম, প্রায় তিন মাস আগে এক অমাবস্যার সকালে একজন নদীর ঘাটে যেতে গিয়ে দেখে একটা মাঝারি সাইজের পাথরের উপর রক্তের ছোপ। তারপর যা হয়, রটে গেল–রাতে মা ছিন্নমস্তা মন্দির থেকে বেরিয়ে পাথরের উপরে বসেছিলেন। ঐ রক্তের দাগ স্বয়ং ছিন্নমস্তার। তারপর কয়েকঘণ্টার মধ্যেই চালাঘর তৈরি হয়ে যায়, সঙ্গে হঁটের বেদী। কে বলে এই দেশে কুসংস্কার সমাজের জন্য বিপদ! তবে ভাগ্যে ভালো পাথরের উপরে তখনো তেল, সিঁদূর চড়ে নি। না হলে আমি এতক্ষণে শূলে চড়ে যেতাম। যাইহোক তার থেকে পাওয়া ব্লাড স্যাম্পেল ম্যাচ করেছে ব্যবসায়ীর মেয়ের বন্ধুটির সাথে।”

    শেখরবাবু কিছুক্ষণ হাঁ করে চেয়ে থাকেন। জ্যেঠুই মুখ খোলেন–“তাহলে স্ক্যাম্পের পিছনের চোটটা জানা গেল..”

    আর কিছু বলার আগেই। শিবানী বলে উঠল–“আর হ্যাঁ, আমি লোকাল থানার যারা গাড়িটি খুঁজে পেয়েছিলেন তাদের সাথে কথা বলেছি। তাদের মধ্যে একজনের বক্তব্য ড্রাইভের সীটে বসে থাকে মৃতদেহটির পায়ের পাতার বুড়ো আঙুলের মাথা থেকে ব্রেক, অ্যাক্সিলারেটরের দূরত্ব ছিল প্রায় ত্রিশ সেন্টিমিটার পর্যন্ত। পরে কোলকাতার ক্রাইম ডিপার্টমেন্ট গিয়ে কাজ শুরু করলে লোকাল থানা আর এসব নিয়ে মাথা ঘামায়নি।”

    জ্যেঠুমণি বলল–“প্রায় ত্রিশ সেন্টিমিটার… না, এভাবে গাড়ি চালানো যায় না। অবশ্যই গাড়ীটি লম্বা কেউ চালিয়ে এনে পরে সীটে মেয়ে দুটির একটিকে বসিয়ে দিয়েছে।”

    এবার শেখরবাবু মুখ খুললেন–“এমনও তো হতে পারে, গাড়ীটি জলে পড়ার পর মেয়েটি বের হওয়ার চেষ্টা করছিল, তাই হয়তো নিজেই সীটটা পিছের দিকে ঠেলে দিয়েছে।”

    জ্যেঠুমণি একবার হেসে বললেন–“একদম হতে পারে। একবারের জন্য এবার তুই ভেবে নে গাড়ী করে জলের মধ্যে পড়ে গেছিস। অন এভারেজ তোর কাছে এক মিনিট আছে। তুই ঠিক কী কী করবি?”

    শেখরবাবু ঠোঁট উল্টে বললেন–“কী আবার করব! প্রথমে সীটবেল্ট খুলব, সীট পিছনে ঠেলে সরাবো তারপর গাড়ীর দরজা…”

    জ্যেঠুমণি বলে উঠলেন–“একদম। তুই আগে সীটবেল্ট খুলবি। যে কেউই তাই করবে। কিন্তু মেয়েদুটির মৃতদেহ সীটবেল্টের সাথেই বাঁধা ছিল। তারমানে হয় তারা হয় মারা গিয়েছিল তা না হলে অচৈতন্য ছিল। তাই সীট পিছনে ঠেলার কোনো কারণই নেই। আচ্ছা, পাথরটা কত ভারি ছিলো রে?”

    শিবানী রিপোর্ট দেখে বলল–“তিন কেজি সাতশো গ্রাম।”

    “তারমানে মোটামুটি পাথরটা দুহাত দিয়েই তুলে ছুঁড়েছে বলেই অনুমান করা যায়। তারমানে হাতের চামড়া কিছুটা হলেও ছালিয়ে যাওয়ার একটা সম্ভবনা থাকেই। ডি এন এ স্যাম্পেল কিছু পাওয়া গেল?”

    –“না কি করেই বা আর পাওয়া যাবে, এতদিন পুরানো ধূলো ফুলোতে নষ্ট হয়ে গেছে।”

    –“লালবাজারে কি M-Vac আছে?” জ্যেঠুমণি চেয়ারের উপরে হেলান দিয়ে বসে ভাইয়ের দিকে তাকালো। শিবানী কিছুক্ষণ দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো।

    শেখরবাবু ধীরে ধীরে বলে উঠল–“আমি ঠিক শিওর না। ফরেনসিকে দেখতে হবে।”

    শিবানী বলে ওঠে–“সেটা কি?”

    জ্যেঠুমণি চেয়ারে হেলান দিয়ে আয়েস করে বসে বলল–“দিন বদলাচ্ছে বানী। ক্রাইমের ধরণও। তাই শুধু মগজাস্ত্রে ভর করে কেস সলভ করা ঐ গল্পের ভালো লাগে। বাস্তবে দরকার সঠিক ডেটা কালেকশন। তারপর অপরাধীকে সনাক্ত করা। তার জন্য বিজ্ঞানের অসাধারণ সব আবিষ্কার এসে গেছে, কিন্তু আমরা খরব রাখছিনা। শোন, M-Vac হল ডি এন এ নমুনা সংগ্রহের নবতম আবিষ্কার। এর মাধ্যমে আগের পদ্ধতিগুলির তুলনায় ৯০% বেশি ভালো ভাবে ডি এন এ স্যাম্পেল সংগ্রহ করা সম্ভব তাও খুব কম নমুনা থেকেই। আমেরিকায় এই পদ্ধতি ব্যবহার করে খুব সম্প্রতি প্রায় কুড়ি বছর পুরানো এক কেসের সমাধান হয়েছে। একবার M–vac ট্রাই করে দেখ।”

    শিবানী মোবাইলে কাউকে ফোন করতে করতে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

    ******

    দুদিন পর দুপুরে শিবানী অফিস থেকে ফোন করে–“থ্যাঙ্কু জ্যেঠু। পাথরের ফাটলের মধ্যে কিছু সূক্ষ চামড়ার টুকরো ছিল। M-Vac দিয়ে সেগুলো সংগ্রহ করে ফেলেছি। ডি এন এ প্রিন্টও আজ হাতে পেলাম। এটা হুবহু ভ্যাজাইনাতে পাওয়া আন-আইডেন্টিফাইয়েড ডি এন এ-র সঙ্গে ম্যাচ করছে। একরকম আমাদের তদন্তকারী দল নিশ্চিত যে এই ব্যাক্তিই আততায়ী। কিন্তু এখন মূল সমস্যা হল, আমরা যে কজনের ডি এন এ সংগ্রহ করেছিলেন তাদের কারুর সাথেই মেলে না। বাদ থাকে শুধু ওষুধ ডিস্ট্রিবিউটর, প্রতীক আর নেতার শালা, শ্যামলের। এদের মধ্যে প্রতীক সমস্ত ভাবে সাহায্য করতে রাজি আছে কিন্তু শ্যামল… মানে বুঝতেই পারছো। কিছু একটা লিঙ্ক না পেলে চেপে ধরতে পারছি না।”

    –“সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বেঁকাতে হয় জানিস তো! আগে ডি এন এ স্যাম্পেল জোগাড় করা মিলে গেলে চেপে ধরা কেন একদম কোমরে দড়ি দিস।”

    শিবানী কিছুক্ষণ চুপ করে, ফরেনসিকের ডঃ গুপ্তেকে ফোন করল–“আচ্ছা আপনারা কি কি থেকে একটা লোকের ডি এন এ প্রিন্ট তৈরি করতে পারবেন?”

    –“ম্যাডাম, ব্লাড হলে খুব ভালো। না হলে হেয়ার রুট, ইউরিন বা স্যালাইভা হলেও চলবে। কিন্তু শেষের দুটোতে একটু সময় লাগবে।”

    শিবানী হুম বলে ফোন রেখে দেয়, ডেকে পাঠায় তাদের টিমেরই কর্মকারকে–“এই শ্যামল বলে লোকটার ডি এন এ স্যাম্পেল চাই, অ্যাট এনি কস্ট! তার ব্লাড, ইউরিন বা স্যালাইভা যেকোনো কিছু হলেই চলবে। কিন্তু কেউ যেন এই মূহুর্তে জানতে না পরে।

    কর্মকার ‘ওকে ম্যাডাম’ বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। বাইরে গিয়ে সে। পর পর কয়েকটা ফোন করে–“একটা ছবি পাঠিয়েছি দেখ। নাম শ্যামল। সারাদিন ফলো কর। কখন কোথায় যায় তার ড্রিটেস সব চাই। যত তাড়াতাড়ি হয়।”

    ******

    প্রতীকের উচ্চতা প্রায় পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি, টিকালো নাক, গলায় তিল, ক্লিন শেল্ড। দেখতে নম্র, ভদ্র কিন্তু বেশ ভোলা মনের। শিবানী প্রতীকের দিকে প্রথম প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়, “আরও একবার আপনাকে বিরক্ত করতে হচ্ছে, আশা করি আপনার কোনও সমস্যা নেই?”

    প্রতীক একমুখ হেসে বলে, “এ আপনি কী বলছেন! আমার আপত্তি থাকবে কেন? আমি তো পুলিশকে পুরোপুরি হেল্প করতেই চাই। আগের দিন আপনি থানায় ডেকেছিলেন। আজ যখন আপনি আমার বাড়িতেই এসে হাজির, তখন এক কাপ চা করি। বসুন।”

    শিবানী যেন এবার একটু সংকোচ বোধ করল, “না না। এসবের আবার… আসলে আমি একটু ব্যস্তও আছি। সময় বেশি নেই।”

    মাঝপথেই প্রতীক থামিয়ে দিল, “ঠিক আছে। আমি আপনার সময় নষ্ট করব না। আপনি বরং প্রশ্ন করতে থাকুন। আমি চা করতে করতেই উত্তর দিচ্ছি। তাহলে হয়তো আর আপনার সময় নষ্ট হবে না।”

    প্রতীক একটু ছোট্ট করে হেসে রান্নাঘরের দিকে চলে যায়। বসার ঘর থেকে রান্নাঘরটা সরাসরি দেখা যায় না। শিবানীকে প্রশ্ন করতে গেলেও একটু গল তুলেই করতে হবে। তাই শিবানী উঠে রান্নাঘরের সামনেটায় গিয়ে দাঁড়াল। প্রতীক শিবানীকে দেখেই জিব কেটে বলল, “ইস, আপনি উঠলেন কেন?”

    “ইটস অলরাইট। আপনি বরং প্রশ্নগুলোর উত্তর দিন। সেদিন সকালে আপনি বাড়িতে ক-টার দিকে পৌঁছেছিলেন?”

    আভেনে জলটা ফুটতে শুরু করেছে। প্রতীক হাতে চায়ের কৌটো নিয়ে মুচকি হেসে উত্তর দিল, “কেন, সেদিনই যে বললাম, বাড়ি ফেরার পথে সাড়ে পাঁচটায় এ.টি.এম. গিয়েছিলাম। আপনারা নিশ্চিতভাবে অলরেডি চেক করেছেন। ওখান থেকে আমার বাড়ি আধ ঘণ্টার পথ। ভোররাতে রাস্তা ফাঁকাই থাকে। তাই আমি বাড়ি ঢুকেছিলাম ওই ধরুন ছ-টা বাজার পাঁচ-দশ মিনিট আগে।” চায়ের পাতাগুলো জলে দিয়ে প্রতীক নাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে জলের রংটা কালচে বাদামি হয়ে যায়। সেই সঙ্গে সারা ঘরটা চায়ের একটা মিষ্টি গন্ধ ভরে যায়।

    শিবানী বলে, “আপনার ব্লাড স্যাম্পল দিতে কোনও আপত্তি আছে?”

    প্রতীক চায়ের পাতাগুলো ঘেঁকে নিয়ে কাপে লিকারটা ঢেলে দেয়, তারপর দুধটাও হালকা হাতে ঢালতে থাকে, “তার মানে আপনারা কোনও ডি.এন.এ. স্যাম্পল পেয়েছেন? মোস্ট পসিবলি? রাইট?”

    শিবানী একটু এবার বিরক্ত হয়– “নান অফ ইয়োর বিজনেস!”

    “চিনি ক-চামচ?”

    “দুই। তাহলে আপনার কোনও আপত্তি?”

    প্রতীক মুচকি হেসে চায়ের কাপটা বাড়িয়ে দেয়, “নো প্রবলেম, ম্যাডাম। আপনাদের ক-বোতল লাগবে?”

    শিবানী একটু বিরক্ত হয়। লোকটা কি একটু বেশিই ক্যাজুয়াল বিহেভ করছে, “না, না। আমি ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্প খুলছি না। একটা ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জের সমান হলেই হবে।”

    “তার মানে আমাকে আরও একবার লালবাজার যেতে হবে তাই তো?”

    “হ্যাঁ। মানে বুঝতেই পারছেন।”

    “ওকে। অলওয়েজ অ্যাট ইয়োর সার্ভিস। আর কিছু?”

    শিবানী দৃঢ়কণ্ঠে উত্তর দেয়– “আর হ্যাঁ। আপনার গাড়িটা দেখতে চাই।”

    প্রতীক ঘরের থেকে চাবিটা নিয়ে বাড়ির বাইরে আসে। গ্যারেজটা বাড়ির পিছনদিকে। টেম্পো ট্রাভেলারের তালা খুলে শিবানীর পাশে এসে দাঁড়ায়, “দেখে নিন।”

    শিবানী এগিয়ে যায়। গাড়ির পিছনে কিছু ওষুধের খালি বাক্স রয়েছে। আর সাইড সিটের উপরে কতকগুলো ফাইল। সেগুলো উলটে-পালটে যা বুঝল, হিসেবপত্তরের ফাইল। তারপর সে সামনে এসে দেখতে গিয়েই চমকে ওঠে। সামনের সিটের নীচে কিছুটা ঝুঁকে পড়ে একটা গাঢ় বাদামি রং যেন শুকিয়ে গেছে। আরও নিচু হয়ে সে শোঁকার চেষ্টা করে। শিবানী সজাগ হয়েই তড়িৎ গতিতে পিছনে ফেরে, “এ কী, এখানে রক্ত কেন? কার রক্ত?”

    প্রতীক হঠাৎ করে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে, “ও হ্যাঁ। ওটার কথা তো ভুলেই গিয়েছিলাম। ওই যে আগের দিন বলেছিলাম না, রেস্টুরেন্টে একটা ওয়েটারের মাথায় মেয়েটি কাঁচের গ্লাস ভেঙেছিল? ওই ওয়েটারটাকে নিয়েই পাশের হসপিটালে গিয়েছিলাম। সঙ্গে আরও একজন ওয়েটার ছিল।”

    শিবানীর চোয়াল দৃঢ় হয় আর চোখগুলোও যেন সবকিছুকে মেপে নিতে চায়। প্রতীক আমতা আমতা করতে থাকে, “বিশ্বাস করুন। আপনি চাইলে ওই হসপিটালে গিয়েও খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। আমি ওদের নিয়ে গিয়েছিলাম। তারপর আবার ওদের হোটেলের কিছুটা দূরে নামিয়ে দিই। যখন ছাড়তে গিয়েছিলাম তখনও মেয়ে দুটো ওখানেই ছিল। তারপর মেয়ে দুটো বেরিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর আমিও চলে এলাম। বিশ্বাস না হলে ওয়েটার দু-জনকেও জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন।”

    শিবানী চিবিয়ে চিবিয়ে উত্তর দিল, “সেটা আপনাকে ভাবতে হবে না। কাকে জিজ্ঞাসা করতে হবে, আমি বুঝব। আমি আপাতত এই ম্যাটটা নিয়ে যাচ্ছি। ল্যাব টেস্টের জন্য। আর কাল লালবাজার আসবেন একবার।”

    প্রতীক এবার যেন কিছুটা সন্ত্রস্ত –“ও.কে., ও.কে., তা-ই হবে।”

    শিবানী ম্যাটটা রোল করে নিয়ে পা বাড়ায়– “ভুলেও পুলিশকে না। জানিয়ে শহর ছাড়ার চেষ্টা করবেন না। ফল ভালো হবে না।” প্রতীক একটা অসহায় ভঙ্গিতে মাথা নাড়াল।

    ******

    ওদিকে কর্মকারের খোঁচড়রা শ্যামলের সারাদিনের রোজনামচা জানিয়ে দিয়েছে। প্রত্যেক বুধবার সন্ধ্যেবেলা শ্যামল শহরের একটা বারে যায়। এর থেকে ভালো সুযোগ আর হয় না। বারে কর্মকার শ্যামলকে চোখে চোখে রাখলো। দু’তিন বার সিগারেট খেয়ে বাটগুলো ডাস্টবিনে ফেলল। তাই কর্মকার চাইলেও সেগুলো কালেক্ট করতে পারল না। কয়েক পেগ মদ খেল বার কাউন্টারে বসেই। গ্লাসগুলো কর্মকার কালেক্ট করার আগেই বার টেন্ডার নিয়ে ব্যবহৃত গ্লাসে বাস্কেটে ফেলে দিল। ব্যাপারটা যেহেতু গোপনে করার নির্দেশ আছে তাই কর্মকার বারের ম্যানেজার বা বার টেন্ডারকে এখুনি নিজের পরিচয় দিতে চাইলো না। কিন্তু এভাবে আদৌ কিছু করা যাবে কিনা কর্মকার সন্দিগ্ধ হয়ে পড়লো। একের পর এক সুযোগ ছাড়তে থাকলো। কর্মকারের মনে হতে থাকলো শ্যামল লোকটা জাতে মাতাল তালে ঠিক।

    অবশেষে টালমাটাল পায়ে লোকটা পানশালা থেকে বেরিয়ে রাস্তার দিকে এগিয়ে গেলো। কর্মকারও পিছন পিছন গিয়ে অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়ে দাঁড়ালো। আজ আর হবে না মনে হয়! লোকটা কিছুক্ষণ ট্যাক্সির জন্য ওয়েট করে একটা সিগারেট ধরিয়ে রিক্সায় উঠে। কর্মকার দেখলো এই শেষ সুযোগ। রিক্সার পিছন পিছন দৌড়াতে থাকে। কিছুদূর যেতেই সিগারেটটা শ্যামল ফেলে দেয়। কর্মকার এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে হাতে গ্লাভস পরতে পরতে ছুটতে থাকে। কাছে এসে সিগারেটের বাটটা চিমটে দিয়ে তুলে নিয়ে এয়ার টাইট পাউচে ভরে ফেলে। সঙ্গে সঙ্গেই শিবানীকে ফোন করে–“হ্যালো ম্যাডাম, কাজ হয়ে গেছে। না, না। আমি এখুনি ল্যাবে আসছি…”

    ******

    “…অবশেষে জোড়া খুনের সমাধান করে ফেলল লালবাজার। লোকাল থানা প্রথমে দুর্ঘটনা বলে মনে করলেও লালবাজারের দুঁদে গোয়েন্দারা খুনের চক্রব্যুহকে ভেদ করলেন…” রবিবার সকালের টিভির নিউজটা দেখে জ্যেঠুমণি মুচকি হেসে ফেলল।

    শেখরবাবু সকালের চা-টায় চুমুক দিয়ে বললেন–“কীরে বানী এই কেসটা তো সলভ হল, তা জ্যেঠুকে আজ কি খাওয়াবি?”

    শিবানী বলে ওঠে–“জ্যেঠু যা খেতে চাইবে তাই হবে।”

    জ্যেঠুমণি বলেন–“ওসব ছাড়া কেসের বাকি ডিটেলসটা তো এখনো আমায় বললি না। শ্যামলের ডি এন এ জোগাড়ের পর কি হল!”

    শিবানী হাতের চা নামিয়ে শুরু করে–“শ্যামলের পিছনে বৃথাই ছোটা হল। ওর ডি এন এ মেলেনি। ভেবে দেখো, যখন মনে হচ্ছিল কেসটা প্রায় গুটিয়ে এনেছি; তখন রিপোর্টটা দেখে আকাশ ভেঙে পড়লো। প্রতীকের ব্লাড স্যাম্পেল সে নিজেই দিতে রাজি হয়েছিল, তার ডি এন এর সঙ্গেও মেলেনি। এরকম অবস্থায় যে কী করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। খুনের সব প্রমাণ আছে, এভিডেন্স আছে শুধু আততায়ীই নিখোঁজ। তাই আবার প্রথম থেকে শুরু করলাম। এবার মনে মনে ঠিক করে নিলাম অল পসিবিল কন্ডিশন সমান ভাবে চেক করবো।

    দুর্ঘটনাগ্রস্থ গাড়ীটা আবার চেক করলাম। সব মিলিয়ে যে চারটি গাড়িকে আমরা ক্যামেরাতে দেখেছিলাম তাদের সবার সাথে আবার একপ্রস্থ কথাবার্তা হল৷ এবার তাদের গাড়ীও চেক করার সিদ্ধান্ত নিলাম। মানে একরকম বলতে পারো, অন্ধকারে যা পাচ্ছিলাম হাতড়ে ধরছিলাম। এইভাবেই এই কেসের শেষ আর গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্কটা পেলাম। যেটা [এতোটাই তুচ্ছ যে আমরা ধরছিলামই না। প্রতীকের ছোটো ম্যাটাডোর টাইপের গাড়ীটি নিয়ে সে নিজেই তিন চার মাসে একবার করে কোলকাতার বাইরে থেকে মাল তুলতে যায়। ঐ ঘটনার পর সে আর এর মধ্যে বাইরে যায়নি। গ্যারেজে তার গাড়ীটি চেক করতে গিয়ে ম্যাটে অনেকটাই শুকনো রক্তের দাগ পাওয়া যায়।”

    শেখরবাবু বলে ওঠেন–“কার রক্ত?”

    “উফ… বাবা, বলছি তো শোনো না! প্রতীককে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারি সেদিন ঐ ধাবাতে সেও ছিল। মেয়েদুটি একটি ওয়েটারের মাথায় গ্লাস ভেঙে রক্তারক্তি কান্ড ঘটালে, প্রতীকই ঐ ওয়েটার আর তার এক সাথীকে নিয়ে তাড়াতাড়ি হসপিটালে যায়। হসপিটালে কয়েকটা সেলাই দিয়ে আধ ঘণ্টার মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রতীকই নিজের গাড়ী করে দিশেরগড় ব্রীজের কাছে তাদের ছেড়েছে। ম্যাটের শুকিয়ে যাওয়া রক্ত থেকে ডি এন এ স্যাম্পেল সংগ্রহ করা যায়নি। খোলা হাওয়া আর অতিরিক্ত উত্তাপের কারণে তা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ধাবার সিসি টিভি ফুটেজ থেকেও প্রতীকের বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করে দেখলাম, ওয়েটারটির মাথা ফাটার প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট পর মেয়ে দুটি ওখান থেকে বের হয়, আর তার মধ্যে সঙ্গী ওয়েটারটি ধাবাতে ফিরে এসেছিলো।

    জ্যেঠুমণি হেসে বলল–“এই কেসে ঐ একটাই মোক্ষম অস্ত্র ছিল, ডি এন এ না হলে হয়তো কোনো দিনই ধরা সম্ভব হতো না…যাইহোক তারপর বল।”

    –“একরকম জেদের বশেই যে হসপিটালে ওয়েটারটি গিয়েছিল, সেখান থেকে ফোন করিয়ে ডেকে পাঠালাম। ডাক্তারদের সাহায্যেই ব্লাড স্যাম্পেল নিয়ে কোলকাতা পাঠালাম। ফরেনসিক রিপোর্ট দিল–একজেক্ট ম্যাচ নয় তবে এই স্যাম্পেলের সাথে অনেক অংশেই মিল আছে। অর্থাৎ তার এই স্যাম্পেলটির কোনো নিকট আত্মীয়। আমরা সঙ্গে সঙ্গে এই ওয়েটার, হৃতেশকে তুলে নিলাম। তারপর আর কি! জানোই তো লালবাজারে মার! একটু কড়কে দিতেই স্বীকার করলো ওর সঙ্গী ওয়েটারটি ওর ভাই জিগ্নেশ। হোটেলে ফিরে যেতেই মেয়েগুলোকে তখনও দেখে মাথা গরম জিগ্নেশ দাদাকে ফোন করে দিশেরগড় ব্রীজের কাছে অপেক্ষা করতে বলে। জিগ্নেশও চুপচাপ বেরিয়ে চলে আসে।

    তারপর মেয়ে দুটির গাড়ী ব্রীজের একটু দূরে রাস্তার পাথর ফেলে থামায়। মদ্যম মেয়ে দুটি খুব একটা বাধা দেওয়ার মতো অবস্থায় ছিলো না। তাদের নিয়ে জিগ্নেশ আর হৃতেশ ছিন্নমস্তার মন্দিরের কাছাকাছি একটা জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে যায়। প্লান ছিল ধর্ষণ করে ছেড়ে দেবে। কিন্তু সব কিছুর পর, মেয়ে দুটির ধীরে ধীরে চেতনা আসতে শুরু করলে একজন খামচা খামচি করতে শুরু করে, অন্যজন চীৎকার করে পালাতে চেষ্টা করে। জিগ্নেশ মেয়েটিকে ধরে ফেলে, ডিকির উপর ঘাড় চেপে ধরে চুপ করানোর চেষ্টা করলেও, বিফল হয়। রাগের মাথায় পাশে পড়ে থাকে পাথর তুলে মাথার পিছনে মারে। মেয়েটি তখনি মারা যায় কিনা ওরা জানে না। কিন্তু ভয়ে অন্য মেয়েটির শ্বাসরোধ করে খুন করে দেয়। এরপর আমাদের সবার জানা। গাড়ীটি জিগ্নেশ বাকী রাস্তা চালিয়ে দামোদরের ঘাট পর্যন্ত এনে জলে ফেলে দেয়। জিগ্নেশ তুলনামূলক একটু বেশি লম্বা, তাই গাড়ীর সিট স্বাভাবিকভাবেই পিছনের দিকে সরানো ছিল।” শিবানী এবার একবুক শ্বাস নিয়ে বলল–“এবার কিছু দিন আমি ছুটি কাটাবো, ব্যাস।”

    শেখরবাবু হেসে বললেন–“তা নিয়ে নে।” জ্যেঠুমণিও হেসে ওঠেন।

    এমনই সময় টেবিলে রাখা ল্যান্ডফোনটা বেজে ওঠে–“হ্যালো, মিস্টার রুদ্র কথা বলছেন?”

    জ্যেঠুমণি তাঁর স্বাভাবিক ভারি কণ্ঠস্বরেই উত্তর দিলেন–“এখানে সবাই রুদ্র, আপনি কোন রুদ্রকে চাইছেন?”

    –“আজ্ঞে, প্রখর রুদ্র…–“ইয়েস, প্রখর রুদ্ৰ স্পিকিং..

    –সমাপ্ত–

    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনোলা : খাবারের সরস গপ্পো – কৌশিক মজুমদার
    Next Article দ্য এইট – ক্যাথারিন নেভিল
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.