Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    চক্ষে আমার তৃষ্ণা – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প95 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৩. ঢাকা শহরে বৃষ্টি

    ঢাকা শহরে বৃষ্টি। ওসমান ছাদে। এক হাতে মাথায় ছাতি ধরে আছেন। ঝুমঝুম বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টির সঙ্গে এলোমেলো বাতাস। তাঁর ভালো লাগছে। গরম এক মগ কফি যদি কেউ তার হাতে ধরিয়ে দিত আরো ভালো লাগত। কয়েক দিন আগে একটা ছবিতে এ রকম দৃশ্য দেখেছেন। পাহাড়ের চূড়ায় এক যুবক বসে আছে। তুষারপাত হচ্ছে। যুবকের হাতে মস্ত বড় এক কফি মগ কফির ধুয়া উঠছে। যুবক কফিতে চুমুক দিচ্ছে। এক ধরনের বিষণ্ণ আনন্দ নিয়ে তুষারপাত দেখছে। কফির কাপে চুমুক দেবার আগে কিছুক্ষণ মনোযোগ দিয়ে কাপের দিকে তাকাচ্ছে। যেন কাপের ভিতর সে কিছু দেখতে পাচ্ছে। পরিচালক ভালো মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। কফির কাপের ভেতরটার জন্যে দর্শকদের আগ্রহ তৈরি করেছেন।

    তাঁর হাতে চায়ের কাপ থাকলে তিনিও এই কাজটা করতেন। কিছুক্ষণ তাকাতেন মগের ভেতরে। কিছুক্ষণ আকাশে। নিজেকে পর্বতারোহী ভেবে অন্যের জীবনযাপন করতেন। এটা এক ধরনের খেলা। পঙ্গু মানুষকে জীবনযাপন করতে হলে কিছু খেলা খেলতে হয়। যেমন—অভিনয় অভিনয় খেলা। ছবি আঁকাআঁকি খেলা। আকাশের তারা দেখা খেলা। নিজেকে সান্তুনা দেয়া–আমার জীবন হুইল চেয়ারে আইকা গাম দিয়ে কেউ আটকে দেয় নি। আমি পৰ্বতে উঠতে পারি। তুষারপাত দেখতে পারি। জলরঙ দিয়ে গহিন বনের ছবি এঁকে সেই বনে ঢুকে যেতে পারি।

    চাচা কী করছেন?

    তরু ছাদে এসেছে। মাথায় ছাতা-টাতা কিছু নেই। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওসমান বললেন, বৃষ্টিতে ভিজছি।

    তরু বলল, আপনি ছাতার নিচে বসে আছেন। আপনি মোটেই বৃষ্টিতে ভিজছেন না। বৃষ্টিতে আমি ভিজছি। এখন বলুন কেন? আমি মোটেই বৃষ্টি

    প্রেমিক না। তাহলে আমি কেন ভিজছি?

    তুমি এসো করো স্নান নামে একটা উপন্যাস লিখছ এই জন্যেও বৃষ্টিতে ভিজছ।

    হয়েছে। তবে উপন্যাসের নাম এখনো ফাইনাল হয় নি। যে পাঁচ পৃষ্ঠা আপনাকে দিয়েছি, পড়েছেন?

    হ্যাঁ।

    কেমন হয়েছে?

    কেমন হয়েছে বলা আমার পক্ষে মুশকিল। একজন ঔপন্যাসিক সেটা বলতে পারবেন। যিনি তোমাকে উপন্যাস লেখার কলাকৌশল শিখিয়েছেন তাকে পড়তে দাও।

    অসম্ভব। ঐ বাড়িতে যাওয়াই যাবে না।

    কেন?

    ঔপন্যাসিকের স্ত্রী অত্যন্ত সন্দেহ বাতিকগ্রস্ত মহিলা। আমি যতক্ষণ ছিলাম তিনি তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। একসময় বলেই ফেললেন, তুমি হুট হুট করে আসবে না। উনি লেখালেখি করেন। ব্যস্ত থাকেন। সামনেই বইমেলা। আমি বললাম, আমি কি টেলিফোনে কথা বলতে পারি? ভদ্রমহিলা প্রায় আঁতকে উঠে বললেন, কখনও টেলিফোন করবে না। ও কখনও টেলিফোন ধরে না। কেউ টেলিফোনে কথা বলতে চাইলে অত্যন্ত বিরক্ত হয়। এরপরেও কি ঐ বাড়িতে আমার যাওয়া উচিত?

    না।

    একজন পাঠক হিসাবে বলুন কেমন লেগেছে?

    লেখায় গল্পের ভঙ্গিটা ভালো। তবে এই হচ্ছে আমার টেলিফোন নাম্বার, লেখা ভালো লাগলে যোগাযোগ করবেন অংশ ভালো লাগে নি।

    কেন?

    এই অংশে ছেলেমানুষি আছে তাই।

    ছেলেমানুষি করার জন্যেই তো আমি ঐ অংশটা রেখেছি। ঐ টেলিফোন নাম্বার মোটেই আমার নাম্বার না। বানানো নাম্বার। আনা ফ্রাংকের ডায়েরি থেকে আপনি যদি ছেলেমানুষি অংশটা ফেলে দেন তাহলে ডায়েরি পড়তে ভালো লাগবে না।

    তুমি আনা ফ্রাংকের ডায়েরি পড়েছ?

    হুঁ। টিউটরিয়েল স্যার পড়তে দিয়েছিলেন। উনার নিক নেম চর্যা স্যার। চর্যাপদ পড়ান বলেই এই নাম। আনা ফ্রাংক পড়ে শেষ করে চর্যা স্যারকে ফিরত দিতে গিয়েছি। স্যার বললেন, রেখে দাও, ফেরত দিতে হবে না।

    ভালো মানুষ মনে হচ্ছে।

    হুঁ ভালো মানুষ—-আমার দিকে প্রেম প্রেম ভাব আছে বলে মনে হয়। আপনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিব।

    আমার সঙ্গে পরিচয় করিতে দেবে কেন?

    মানুষের সঙ্গেই তো মানুষ পরিচয় করে। উনার সঙ্গে গল্প করলে আপনার ভালো লাগবে। উনি সুন্দর করে কথা বলেন। কথা বললে দারুণ আনন্দ পাবেন।

    ওসমান বললেন, আপাতত এক কাপ চা খেতে পারলে দারুণ আনন্দ পাব। তুমি চা বানিয়ে দিতে পারবে?

    না। এখন পারব না। বৃষ্টিতে ভেজা শেষ হলে আমি ঘরে চলে যাব। কাজের মেয়েকে দিয়ে চা পাঠাব। দশ মিনিট পরে চা খেলে আপনার তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। না-ক্ষতি হবে?

    ক্ষতি হবে না। আচ্ছা আমার লেখা পড়ে সুতা কৃমির প্রতি কি মমতা তৈরি হয়েছে?

    না। কাপুরুষতা মমতা তৈরি করে না। শেক্সপিয়রের ঐ লাইনটা কখনও পড়েছ? Coward dies many times before their death.

    না, পড়ি নি। সুন্দর লাইন তো। বাংলায় কী হবে? ভীতুরা মৃত্যুর আগেই অনেক বার মারা যায়। চাচা বাংলাটা ইংরেজির মতো সুন্দর লাগছে না কেন?

    ওসমান ডান হাত থেকে বাঁ হাতে ছাতা বদল করতে করতে বললেন, ভীতু শব্দটার জন্যে। Coward শব্দের বাংলা ভীতু হবে না। যে মাকড়সা ভয় পায় সেও ভীতু। কিন্তু Coward শব্দ তার জন্যে না।

    চাচা আপনার কি ধারণা আপনি খুব জ্ঞানী?

    তা না। প্রচুর পড়ি তো, এই কারণেই হঠাৎ হঠাৎ দু-একটা জ্ঞানের কথা বলে ফেলি।

    আর বলবেন না। আপনি জ্ঞানের কথা বললে আমার অসহ্য লাগে।

    আচ্ছা আর বলব না। তোমার মনে হয় ঠাণ্ডা লেগে গেছে। শীতে কাঁপছ।

    আমি চাচ্ছি আরো ঠাণ্ডা লাগুক। জ্বর আসুক। জ্বর নিয়ে লেপের ভেতর শুয়ে থাকতে আমার খুবই ভালো লাগে।

    তাহলে আরও ভেজ।

    বেশিক্ষণ ভিজতে পারব না। দেখুন আকাশ পরিষ্কার হয়ে আসছে। বৃষ্টির তেজও কমে গেছে। আচ্ছা আমি চলে যাচ্ছি। দশ মিনিটের মাথায় আপনার চা চলে আসবে।

    তরু শীতে কাঁপতে কাঁপতে নিচে নেমে গেল। মনে হয় বৃষ্টিটা তরুর জন্যেই এসেছিল। সে চলে যাওয়া মাত্র বৃষ্টি পুরাপুরি থেমে গেল। ওসমান অনেকক্ষণ চায়ের জন্যে অপেক্ষা করলেন। কেউ চা নিয়ে এলো না। তিনি নিজেই কফি বানিয়ে খেলেন। বৃষ্টির কারণে রুটিন খানিকটা এলোমেলো হয়ে গেল। রুটিন মতো এখন ছবি আঁকার কথা। ছবি আঁকতে ইচ্ছা করছে না। লেপ গায়ে দিয়ে বিছানায় গড়াগড়ি করতে ইচ্ছা করছে। তরুর কথা মাথায় ঢুকে গেছে। একে বলে Sympathetic reaction. তরু চাচ্ছিল তার জ্বর আসুক, সে লেপ গায়ে দিয়ে শুয়ে থাকবে। তিনিও তাই চাচ্ছেন। তরুকে নিয়ে তার কোনো সমস্যা তৈরি হয়েছে কি-না কে জানে।

    সন্ধ্যা নাগাদ সত্যি সত্যি তার জ্বর এসে গেল। শরীর কাঁপিয়ে জ্বর। ওসমান নিজেকে বিছানায় তুললেন। হুইল চেয়ার থেকে বিছানায় ওঠার প্রক্রিয়া কষ্টকর। অনেক সময় লাগে। পায়ের কাছে রাখা কম্বলে শরীর ঢাকলেন। কম্বলে শীত মানছে না। লেপ হলে ভালো হতো। লেপ ট্রাংকে রাখা। ঘরে থার্মোমিটার আছে। রান্নাঘরে মেডিসিন ক্যাবিনেটে। থার্মোমিটার আনতে হলে আবার বিছানা থেকে হুইল চেয়ারে উঠতে হয়। কী দরকার? সন্ধ্যাবেলা মনিকা আসবে। সে-ই থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর দেখবে।

     

    মনিকা এসেছে। জ্বর মেপেছে। তাঁর জ্বর ১০৪.৫° কিংবা তার চেয়ে সামান্য বেশি। মনিকা গম্ভীর মুখে তার গা স্পঞ্জ করে দিচ্ছে। মেডিসিন ক্যাবিনেটে প্যারাসিটামল ছিল, প্যারাসিটামল খাইয়েছে। দোকান থেকে অরেঞ্জ জুস কিনে এনে গ্লাসে ঢেলে রেখেছে।

    মনিকা বলল, স্যার, সকালে নাশতা ছাড়া আপনি আর কিছু খেয়েছেন?

    ওসমান বললেন, না।

    খালি পেটে কমলার রস খাওয়া যাবে না, এসিডিটি হবে। আপনার ঘরে বিসকিট নাই, বিসর্কিট নিয়ে আসি।

    বিসকিট তোমাকে আনতে যেতে হবে না। রফিক খাবার নিয়ে আসবে। তাকে দিয়ে আনলেই হবে।

    সে কখন খাবার আনে?

    আটটার মধ্যে সব সময় আসে।

    মনিকা বলল, আটটা দশ কিন্তু বাজে। বাইরে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়েছে।

    ওসমান বললেন, ঝড়-বৃষ্টি-সাইক্লোন-টর্নেডো যাই হোক রফিক আসবে। কারণ, রফিক জানে সে যদি না আসে আমাকে উপোষ থাকতে হবে।

    আপনার ঘরে কি মোমবাতি আছে?

    আছে। ড্রয়ারে আছে। কেন?

    ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যে কারেন্ট চলে যাবে। আমি আগেভাগেই মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখতে চাই।

    তুমি খুবই গোছানো মেয়ে।

    আপনার মতো গোছানো না।

    ওসমান বললেন, আমাকে গোছানো হতে হয়েছে বাধ্য হয়ে। মনিকা শোনো, তুমি আমার creative writing-এর উপর কিছু বইপত্র জোগাড় করে দিতে পারবে।

    কী করবেন? আমি ঠিক করেছি একটা উপন্যাস লিখব। একসঙ্গে কত কিছু করবেন?

    কোনোটাই তো ক্লিক করছে না। তবে গল্প-উপন্যাস মনে হয় লিখতে পারব। আমি খুব গুছিয়ে চিঠি লিখতে পারতাম।

    পারতাম বলছেন কেন? এখন পারেন না?

    অনেক দিন কাউকে চিঠি লিখি না, কাজেই বলতে পারছি না পারব কি-না।

    কাউকে লিখে দেখুন।

    ওসমান বললেন, চিঠি লেখার আমার তেমন কেউ নেই, তোমাকে লিখব?

    মনিকা বলল, লিখতে পারেন।

    কী লিখব?

    মনিকা বলল, কী লিখবেন সেটা আপনি জানেন। আমি কীভাবে বলব। আপনার রফিক কিন্তু এখনও আসে নি।

    ওসমান বললেন, চলে আসবে। তুমি বরং কমলার রসটা দাও। আমি খেয়ে নেই। কমলার রস না খাওয়া পর্যন্ত তোমার অস্থিরতা কমবে না। আমার এসিডিটির কোনো সমস্যা নেই। কাজেই অসুবিধা হবে না।

    কমলার রস খাবার মাঝখানে ইলেকট্রিসিটি চলে গেল। ওসমান স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন। বাল্বের আলো চোখে লাগছিল, এখন আরাম লাগছে। মোমবাতির আলো চোখে আরাম দেয়।

    মনিকা! কাগজ-কলম নিয়ে বসো তো। চিঠি লিখব। মুখে-মুখে বলে যাব তুমি লিখবে।

    চিঠিটা কি আমাকেই লিখবেন?

    হুঁ। লেখো হ্যালো মনিকা।

    হ্যালো মনিকা কেন লিখব? আপনি তো আমাকে টেলিফোন করছেন না। চিঠি লিখছেন।

    ইন্টারেস্টিং করার জন্যে হ্যালো মনিকা দিয়ে শুরু করেছি। তুমি লিখতে থাকো।

    হ্যালো মনিকা।

    তুমি এখন আমাকে কালার হুইল শেখাচ্ছ। ছবিতে রঙ বসাতে হবে কালার হুইল দেখে। যেন রঙে রঙে মিল থাকে। চোখে না লাগে। আমার কথা হচ্ছে প্রকৃতি কি রঙের ব্যাপারে কালার হুইল ব্যবহার করে? সূর্যাস্তগুলি আমি কিছুদিন হলো খুব মন দিয়ে দেখছি। সেখানে কালার হুইলের কোনো ব্যাপার নেই, হালকা ফিরোজা রঙের পাশেই গাঢ় খয়েরি।…

    আপনি দ্রুত বলছেন, আমি এত দ্রুত লিখতে পারছি না।

    সরি। তুমি কোন পর্যন্ত লিখেছ?

    আমি অনেক পেছনে। আমি লিখেছি–সূর্যাস্তগুলি আমি কিছুদিন… তারপর কী, আমি ভুলে গেছি।

    মনিকা জ্বরটা কি আরেকবার দেখবে? মনে হয় বেড়েছে।

    মনিকা জ্বর মাপল ১০৪.৫°, ওসমান বললেন, থার্মোমিটার নষ্ট না তো? জ্বর এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে এটা অস্বাভাবিক না?

    মনিকা বলল, থার্মোমিটার ঠিক আছে। স্যার আপনার রফিক এখনও আসে নি।

    ওসমান বললেন, চলে আসবে। চলে আসবে।

    জ্বরের ঘোরে চলে আসবে বাক্য মাথায় ঢুকে গেল। গ্রামোফোনের পিন আটকে যাবার মতো ক্রমাগত চলে আসবে চলে আসবে হচ্ছে।

    মনিকা বলল, স্যার আমাকে চলে যেতে হবে। দশটার সময় হোস্টেলের গেট বন্ধ হয়ে যায়।

    ওসমান বললেন, চলে আসবে। রফিক চলে আসবে।

    মনিকা বলল, আপনাকে একজন ডাক্তার দেখানো দরকার। এখন ডাক্তার কোথায় পাব।

    ওসমান বললেন, ডাক্তার চলে আসবে।

    মনিকা বলল, আপনার কোনো রিলেটিভকে টেলিফোন করলে আসবে না? আপনার পাশে কাউকে থাকা দরকার।

    ওসমান বললেন, চলে আসবে। সবাই চলে আসবে।

    মনিকা উঠে দাঁড়াল। দোতলার কাউকে পাওয়া গেলে খবর দেবে। তার নিজের ইচ্ছে করছে থেকে যেতে। অসুস্থ মানুষের জন্যে থেকে যাওয়া অন্যায় কিছু না। কিন্তু থাকা সম্ভব না।

    ইলেকট্রিসিটি নেই, কাজেই কলিং বেল কাজ করছে না। অভ্যাসের কারণে মনিকা কলিং বেলের বোতাম চেপেই যাচ্ছে। কলিং বেল চাপাচাপির মধ্যেই কারেন্ট চলে এলো। দরজা খুলল তরু। সহজ-স্বাভাবিক গলায় বলল, ভেতরে আসুন।

    মনিকা বলল, ভেতরে আসব না। আমার নাম মনিকা।

    আপনাকে চিনি। আপনি চাচাকে ছবি আঁকা শেখান। আপনার সঙ্গে একদিন আমার কথাও হয়েছে।

    ও হ্যাঁ, কথা হয়েছিল। আপনার নাম মিস্ট্রি।

    ভেতরে এসে বসুন। দরজায় দাঁড়িয়ে কতক্ষণ কথা বলবেন।

    আমি চলে যাব। আমাদের হোস্টেলের গেট দশটার সময় বন্ধ করে দেয়। একটা খবর দিতে এসেছিলাম—ওসমান স্যারের শরীর খুব খারাপ করেছে। প্রচণ্ড জ্বর, একশ চার।

    তরু বলল, একশ চার পয়েন্ট পাঁচ হবার কথা।

    মনিকা বিস্মিত হয়ে বলল, হ্যাঁ তাই।

    তরু বলল, চাচার থার্মোমিটারটা নষ্ট। জ্বর যতই হোক এই থার্মোমিটারে উঠবে একশ চার পয়েন্ট ফাইভ। তারপরেও আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন আমি লোক পাঠাচ্ছি। সনজু বলে একটা ছেলে আছে, সে প্রয়োজন হলে রাতে উনার সঙ্গে থাকবে।

    মনিকা বলল, থ্যাংক ইউ। আপনার কাছে কি ভালো থার্মোমিটার আছে? আসল জ্বরটা কত দেখতাম।

    তরু থার্মোমিটার বের করে দিল। মনিকা উঠে গেল ছাদে।

    ওসমান দেয়ালে হেলান দিয়ে বিছানায় বসে আছেন। রফিক এসেছে। টিফিন কেরিয়ারের বাটি সাজাচ্ছে।

    ওসমান বললেন, তুমি এখনও যাও নি।

    মনিকা বলল, আপনার জ্বর কি চলে গেছে?

    ওসমান বললেন, পুরোপুরি যায় নি, তবে যাব যাব করছে।

    আপনার থার্মোমিটার যে নষ্ট, সেটা তো বলেন নি।

    থার্মোমিটার ঠিক আছে। তরুর ধারণা নষ্ট। কারণ আমার যখনই জ্বর ওঠে একশ চার পয়েন্ট পাঁচ ওঠে।

    আশ্চর্য তো।

    ওসমান বললেন, অনেক ছোটখাটো আশ্চর্য আমাদের চারদিকে ছড়ানো। আমার দূর সম্পর্কের এক খালার নাক দিয়ে রক্ত পড়ে। শুধু বুধবারে পড়ে। অন্য কোনো বারে না। এক ধরনের মেডিকেল মিস্ত্রি ছাড়া আর কি! তুমি দেরি করো না, চলে যাও। রফিক চলে এসেছে। সে রাতে থাকবে।

    মনিকা বলল, আমাকে পাঁচ মিনিট সময় দিন। দুটা থার্মোমিটার দিয়ে আমি আপনার জ্বর মাপ।

    দিলাম পাঁচ মিনিট সময়।

    দুটা থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মাপা হলো। দুটোতেই নিরানব্বই পাওয়া গেল।

    মনিকা চলে গেছে। ওসমান রফিককে দুটা নতুন ইংরেজি শব্দ দিলেন–একটা হলো : Fever জ্বর, অন্যটা Pain ব্যথা।

    রফিক বলো জ্বর ইংরেজি কী?

    ফিভার।

    ফিভারের সঙ্গে মিল আছে এমন একটা শব্দ পরশুদিন শিখিয়েছিলাম মনে আছে।

    রিভার।

    রিভার মানে কী?

    নদী।

    তাহলে ফিভার রিভার কী হবে?

    জ্বর নদী।

    ওসমান মুগ্ধ গলায় বললেন, কি সুন্দর বাক্য জ্বর নদী।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleচাঁদের আলোয় কয়েকজন যুবক – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article গৌরীপুর জংশন – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }