Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    চার-ইয়ারী কথা – প্রমথ চৌধুরী

    প্রমথ চৌধুরী এক পাতা গল্প88 Mins Read0

    ৫. আমার কথা

    আমার কথা

    সোমনাথ বলেছেন “Love is both a mystery and a joke।” এ কথা যে এক হিসেবে সত্য, তা আমরা সকলেই স্বীকার করতে বাধ্য; কেননা এই ভালবাসা নিয়ে মানুষে কবিও করে, রসিকতাও করে। সে কবিত্ব যদি অপার্থিব হয়, আর সে রসিকতা যদি অশ্লীল হয়, তাতেও সমাজ কোন আপত্তি করে না। Dante এবং Boccaccio, উভয়েই এক যুগের লেখক,শুধু তাই নয়, এর একজন হচ্ছেন গুরু, আর একজন শিষ্য। Don Juan এবং Epipsychidion, দুই কবিবন্ধুতে এক ঘরে পাশাপাশি বসে লিখেছিলেন। সাহিত্য-সমাজে এই সব পৃথকপন্থী লেখকদের যে সমান আদর আছে, তা ত তোমরা সকলেই জান।

    এ কথা শুনে সেন বল্লেন “Byron এবং Shelley ও-দুটি কাব্য যে এক সময়ে এক সঙ্গে বসে লিখেছিলেন, এ কথা আমি তাজ এই প্রথম শুনলুম।”

    আমি উত্তর করলুম “যদি না করে থাকেন, তাহলে তাদের তা করা উচিত ছিল।”

    সে যাই হোক, তোমরা যে সব ঘটনা বললে, তা নিয়ে আমি তিনটি দিব্যি হাসির গল্প রচনা করতে পারতুম, যা পড়ে মানুষ খুসি হত। সেন কবিতায় যা পড়েছেন, জীবনে তাই পেতে চেয়েছিলেন। সীতেশ জীবন যা পেয়েছিলেন, তাই নিয়ে কবিত্ব করতে চেয়েছিলেন। আর সোমনাথ মানব জীবন থেকে তার কাব্যাংশটুকু বাদ দিয়ে জীবন যাপন করতে চেয়েছিলেন। ফলে তিন জনই সমান আহাম্মক বনে গেছেন। কোনও বৈষ্ণব কবি বলেছেন যে, জীবনের পথ “প্রেমে পিচ্ছিল,”—কিন্তু সেই পথে কাউকে পা পিছলে পড়তে দেখলে মানুষের যেমন আমোদ হয়, এমন আর কিছুতেই হয় না। কিন্তু তোমরা, যে-ভালবাসা আসলে হাস্যরসের জিনিষ, তার ভিতর দু’চার ফোঁটা চোখের জল মিশিয়ে তাকে করুণরসে পরিণত করতে গিয়ে, ও-বস্তুকে এমনি ঘুলিয়ে দিয়েছ যে, সমাজের চোখে তা কলুষিত ঠেকতে পারে। কেননা সমাজের চোখ, মানুষের মনকে হয় সূর্যের আলোয় নয় চাদের আলোয় দেখে। তোমরা আজ নিজের নিজের মনের চেহারা যে আলোয় দেখেছ, সে হচ্ছে আজকের রাত্তিরের ঐ দুষ্ট ক্লিষ্ট আলো। সে আলোর মায়া এখন আমাদের চোখের সুমুখ থেকে সরে গিয়েছে। সুতরাং আমি যে গল্প বলতে যাচ্ছি, তার ভিতর আর যাই থাক আর না থাক, কোনও হাস্যকর কিম্বা লজ্জাকর পদার্থ নেই।

    এ গল্পের ভূমিকাস্বরূপে আমার নিজের প্রকৃতির পরিচয় দেবার কোন দরকার নেই, কেননা তোমাদের যা বলতে যাচ্ছি, তা আমার মনের কথা নয়—আর একজনের,-একটি স্ত্রীলোকের। এবং সে রমণী আর যাই হোক—চোরও নয়, পাগলও নয়।

    গত জুন মাসে আমি কলকাতায় একা ছিলুম। আমার বাড়ী ত তোমরা সকলেই জান; ঐ প্রকাণ্ড পুরীতে রাত্তিরে খালি দু’টি লোক শুত,—আমি আর আমার চাকর। বহুকাল থেকে একা থাকবার অভ্যেস নেই, তাই রাত্তিরে ভাল ঘুম হত না। একটু কিছু শব্দ শুনলে মনে হত যেন ঘরের ভিতর কে আসছে, অমনি গা ছম্‌ ছম্‌ করে উঠত; আর রাত্তিরে জানইত কত রকম শব্দ হয়,কখনও ছাদের উপর, কখনও দরজা জানালায়, কখনও রাস্তায়, কখনও বা গাছপালায়। একদিন এই সব নিশাচর ধ্বনির উপদ্রবে রাত একটা পর্যন্ত জেগেছিলুম, তারপর ঘুমিয়ে পড়লুম। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখলুম যেন কে টেলিফোনে ঘণ্টা দিচ্ছে। অমনি ঘুম ভেঙ্গে গেল। সেই সঙ্গে ঘড়িতে দুটো বাজল। তারপর শুনি যে, টেলিফোনের ঘণ্টা একটানা বেজে চলেছে। আমি ধড়ফড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়লুম। মনে হল যে আমার আত্মীয় স্বজনের মধ্যে কারও হয়ত হঠাৎ কোন বিশেষ বিপদ ঘটেছে, তাই এত রাত্তিরে আমাকে খবর দিচ্ছে। আমি ভয়ে ভয়ে বারান্দায় এসে দেখি আমার ভৃত্যটি অকাতরে নিদ্রা দিচ্ছে। তার ঘুম না ভাঙ্গিয়ে টেলিফোনের মুখ-নলটি নিজেই তুলে নিয়ে কাণে ধরে বল্লুম-Hallo!

    উত্তরে পাওয়া গেল শুধু ঘণ্টার সেই ভোঁ ভোঁ আওয়াজ। তারপর দু’চার বার “হালো” “হ্যালো” করবার পর একটি অতি মৃদু, অতি মিষ্ট কণ্ঠস্বর আমার কানে এল। জান সে কি রকম স্বর? গির্জার অরগানের সুর যখন আস্তে আস্তে মিলিয়ে যায়, আর মনে হয় যে সে সুর লক্ষ যোজন দূর থেকে আসছে,–ঠিক সেই রকম।।

    ক্রমে সেই স্বর স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়ে উঠল। আমি শুনলুম কে ইংরাজীতে জিজ্ঞেস করছে—

    “তুমি কি মিস্টার রায়?”

    –আমি একজন মিস্টার রায়।

    —S. D.?

    –হাঁ–কাকে চাও?

    —তোমাকেই।

    গলার স্বর ও কথার উচ্চারণে বুঝলুম, যিনি কথা কচ্ছেন, তিনি একটি ইংরাজ রমণী।

    আমি প্রত্যুত্তরে জিজ্ঞেস করলুম, “তুমি কে?”

    —চিনতে পারছ না?

    —না।

    –একটু মনোযোগ দিয়ে শোন ত, এ কণ্ঠস্বর তোমার পরিচিত কিনা।

    —মনে হচ্ছে এ স্বর পূর্বে শুনেছি, তবে কোথায় আর কবে, তা কিছুতেই মনে করতে পারছিনে।

    —আমি যদি আমার নাম বলি, তাহলে কি মনে পড়বে?

    —খুব সম্ভব পড়বে।

    –আমি “আনি”।

    –কোন্ “আনি”?

    –বিলেতে যাকে চিনতে।

    —বিলেতে ত আমি অনেক “আনি”-কে চিনতুম। সে দেশে অধিকাংশ স্ত্রীলোকের ত ঐ একই নাম।

    –মনে পড়ে তুমি Gordon Square-এ একটি বাড়ীতে দু’টি ঘর ভাড়া করে ছিলে?

    —তা আর মনে নেই? আমি যে একাদিক্রমে দুই বৎসর সেই বাড়ীতে থাকি।

    —শেষ বৎসরের কথা মনে পড়ে?

    —অবশ্য। সেত সে-দিনকের কথা; বছর দশেক হল সেখান থেকে চলে এসেছি।

    —সেই বৎসর সে-বাড়ীতে “আনি” বলে একটি দাসী ছিল, মনে আছে?

    এই কথা বলবামাত্র আমার মনে পূর্বস্মৃতি সব ফিরে এল। “আনি”র ছবি আমার চোখের সুমুখে ফুটে উঠল।

    আমি বললুম “খুব মনে আছে। দাসীর মধ্যে তোমার মত সুন্দরী বিলেতে কখনও দেখিনি।”

    —আমি সুন্দরী ছিলুম তা জানি, কিন্তু আমার রূপ তোমার চোখে যে কখনও পড়েছে, তা জানতুম না।

    —কি করে জানবে? আমার পক্ষে ও কথা তোমাকে বলা অভদ্রতা হত।

    —সে কথা ঠিক। তোমার আমার ভিতর সামাজিক অবস্থার অলঙ্ঘ্য ব্যবধান ছিল।

    আমি এ কথার কোনও উত্তর দিলুম না। একটু পরে সে আবার বললে—

    —আমি আজ তোমাকে এমন একটি কথা বলব, যা তুমি জানতে না।

    –কি বল ত?

    –আমি তোমাকে ভালবাসতুম।

    –সত্যি?

    —এমন সত্য যে, দশ বৎসরের পরীক্ষাতেও তা উত্তীর্ণ হয়েছে।

    —এ কথা কি করে জানব? তুমি ত আমাকে কখনও বলে নি।

    –তোমাকে ও কথা বলা যে আমার পক্ষে অভদ্রতা হত। তা ছাড়া ও জিনিষ ত ব্যবহারে, চেহারায় ধরা পড়ে। ও কথা অন্ততঃ স্ত্রীলোকে মুখ ফুটে বলে না।

    —কই, আমি ত কখনও কিছু লক্ষ্য করিনি।

    –কি করে করবে, তুমি কি কখনও মুখ তুলে আমার দিকে চেয়ে দেখেছ? আমি প্রতিদিন আধ ঘণ্টা ধরে তোমার সবার ঘরে টেবিল সাজিয়েছি, তুমি সে সময় হয় খবরের কাগজ দিয়ে মুখ ঢেকে রাখতে, নয় মাথা নীচু করে ছুরি দিয়ে নখ চাচতে।

    —এ কথা ঠিক,—তার কারণ, তোমার দিকে বিশেষ করে নজর দেওয়াটাও আমার পক্ষে অভদ্রতা হত। তবে সময়ে সময়ে এটুকু অবশ্য লক্ষ্য করেছি যে, আমার ঘরে এলে তোমার মুখ লাল হয়ে উঠত, আর তুমি একটু ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়তে। আমি ভাবতুম, সে ভয়ে।

    —সে ভয়ে নয়, লজ্জায়। কিন্তু তুমি যে কিছু লক্ষ্য করনি, সেইটেই আমার পক্ষে অতি সুখের হয়েছিল।

    —কেন?

    —তুমি যদি আমার মনের কথা জানতে পারতে, তাহলে আমি আর লজ্জায় তোমাকে মুখ দেখাতে পারতুম। ও-বাড়ী থেকে পালিয়ে যেতুম। তাহলে আমিও আর তোমাকে নিত্য দেখতে পেতুম না, তোমার জন্যে কিছু করতেও পারতুম না।

    –আমার জন্য তুমি কি করেছ?

    —সেই শেষ বৎসর মোর একদিনও কোনও জিনিষের অভাব হয়েছে,-একদিনও কোন অসুবিধেয় পড়তে হয়েছে?

    –না।

    –তার কারণ, আমি প্রাণপণে তোমার সেবা করেছি। জান, তোমাকে যে ভাল না বাসে, সে কখন তোমার সেবা করতে পারে না?

    –কেন বল দেখি?

    —এই জন্যে যে, তুমি নিজের জন্য কিছু করতে পার না, অথচ তোমার জন্য কাউকে কিছু করতেও বল না!

    –তুমি যে আমার জন্যে সব করে দিতে, আমি ত তা জানতুম না। আমি ভাবতুম Mrs. Smith। তাইতে আসবার সময় তোমাকে কিছু না বলে, Mrs. Smithকে ধন্যবাদ দিয়ে আসি।

    —আমি তোমার ধন্যবাদ চাইনি। তুমি যে আমাকে কখনও ধমকাওনি, সে-ই আমার পক্ষে ছিল যথেষ্ট পুরস্কার।

    —সে কি কথা! স্ত্রীলোককে কোনও ভদ্রলোক কি কখনও ধমকায়?

    –স্ত্রীলোককে কেউ না ধমকালেও, দাসীকে অনেকেই ধমকায়।

    —দাসী কি স্ত্রীলোক নয়?

    –দাসীরা জানে তারা স্ত্রীলোক, কিন্তু ভদ্রলোকে সে কথা দু’বেলা ভুলে যায়। কথাটা এতই সত্য যে, আমি তার কোন জবাব দিলুম না। একটু পরে সে বললে—

    —কিন্তু একদিন তুমি একটি অতি নিষ্ঠুর কথা বলেছিলে।

    —তোমাকে?

    -আমাকে নয়, তোমার একটি বন্ধুকে, কিন্তু সে আমার সম্বন্ধে।

    —তোমার সম্বন্ধে আমার কোনও বন্ধুকে কখন কিছু বলেছি বলে ত মনে পড়ছে না।

    –তোমার কাছে সে এত তুচ্ছ কথা যে, তোমার তা মনে থাকবার কথা নয়,–কিন্তু আমার মনে তা চিরদিন কাটার মত বিঁধে ছিল।

    -শুনলে হয়ত মনে পড়বে।

    —তুমি একদিন একটি মুক্তোর Tie-pin নিয়ে এস, তার পর দিন সেটি আর পাওয়া গেল না।

    –হতে পারে।

    —আমি সেটি সারা রাজি খুঁজে বেড়াচ্ছি, এমন সময় তোমার একটি বন্ধু তোমার সঙ্গে দেখা করতে এলেন; তুমি তাকে হেসে বললে যে, “আনি” ওটি চুরি করে ঠকেছে, কেননা মুক্তোটি হচ্ছে ঝুটো, আর পিনটি পিতলের; “আনি” বেচতে গিয়ে দেখতে পাবে যে ওর দাম এক পেনি। তারপর তোমরা দু’জনেই হাসতে লাগলে। কিন্তু ঐ কথায় তুমি ঐ পিতলের পিনটি আমার বুকের ভিতর ফুটিয়ে দিয়েছিলে।

    —আমরা না ভেবে চিন্তে অমন অন্যায় কথা অনেক সময় বলি।

    –তা আমি জানতুম, তাই তোমার উপর আমার রাগ হয়নি,—যা হয়েছিল সে শুধু যন্ত্রণা। দারিদ্র্যের কষ্টের চাইতে তার অপমান যে বেশি, সেদিন আমি মর্মে মর্মে তা অনুভব করেছিলুম। তুমি কি করে জানবে যে, আমি তোমার এক ফোঁটা ল্যাভেণ্ডারও কখনও চুরি করি নি।

    –এর উত্তরে আমার আর কিছুই বলবার নেই। না জেনে হয়ত . ঐরকম কথায় কত লোকের মনে কষ্ট দিয়েছি।

    —তোমার মুক্তোর পিন কে চুরি করেছিল, পরে আমি তা আবিষ্কার করি।

    –কে বল ত?

    —তোমার ল্যাণ্ডলেডি Mrs. Smith।

    –বল কি! সে ত আমাকে মায়ের মত ভালবাসত! আমি চলে আসবার দিন তার চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগল।

    —সে তার ব্যাঙ্ক ফেল হল বলে তোমাকে সে এক টাকার জিনিষ দিয়ে দু’টাকা নিত।

    –আমি কি তাহলে অতদিন চোখ বুজে ছিলুম?

    –তোমাদের চোখ তোমাদের দলের বাইরে যায় না, তাই বাইরের ভালমন্দ কিছুই দেখতে পায় না। সে যাই হোক, আমি তোমার একটি জিনিষ না বলে নিতুম,-বই,—আবার তা পড়ে ফিরে দিতুম।।

    -তুমি কি পড়তে জানতে?

    -–ভুলে যাচ্ছ, আমরা সকলেই Board School-এ লেখাপড়া শিখি।

    –হাঁ, তা ত সত্যি।

    –জান কেন চুরি করে বই পড়তুম?

    –না।

    –ভগবান আমাকে রূপ দিয়েছিলেন, আমি তা যত্ন করে মেজে ঘষে রাখতুম। -তা আমি জানি। তোমার মত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন দাসী আমি বিলেতে দেখিনি।

    –তুমি যা জানতে না, তা হচ্ছে এই,–ভগবান আমাকে বুদ্ধিও দিয়েছিলেন, তাও আমি মেজে ঘষে রাখতে চেষ্টা করতুম, এবং এ দুই-ই করতুম তোমারই জন্যে।

    —আমার জন্যে?

    -–পরিষ্কার থাকতুম এই জন্যে, যাতে তুমি আমাকে দেখে নাক না সেঁটকাও; আর বই পড়তুম এই জন্যে, যাতে তোমার কথা ভাল করে বুঝতে পারি।

    –আমি ত তোমার সঙ্গে কখনও কথা কইতুম না।

    –আমার সঙ্গে নয়। খাবার টেবিলে তোমার বন্ধুদের সঙ্গে তুমি যখন কথা কইতে, তখন আমার তা শুনতে বড় ভাল লাগত। সে ত কথা নয়, সে যেন ভাষার আতসবাজি! আমি অবাক হয়ে শুনতুম, কিন্তু সব ভাল বুঝতে পারতুম না। কেননা তোমরা যে ভাষা বলতে, তা বইয়ের ইংরাজি। সেই ইংরাজি ভাল করে শেখবার জন্য আমি চুরি করে বই পড়তুম।

    —সে সব বই বুঝতে পারতে?

    —আমি পড়তুম শুধু গল্পের বই। প্রথমে জায়গায় জায়গায় শক্ত লাগত, তারপর একবার অভ্যাস হয়ে গেলে আর কোথাও বাধত না!

    –কি রকম গল্পের বই তোমার ভাল লাগত? যাতে চোর ডাকাত খুন জখমের কথা আছে?

    —না, যাতে ভালবাসার কথা আছে। সে যাই হোক, তোমাকে ভালবেসে তোমার দাসীর এই উপকার হয়েছিল যে, সে শরীরে মনে ভদ্রমহিলা হয়ে উঠেছিল, তার ফলেই তার ভবিষ্যৎ জীবন এত সুখের হয়েছিল।

    —আমি শুনে সুখী হলুম।।

    —কিন্তু প্রথমে আমাকে ওর জন্য অনেক ভুগতে হয়েছিল।

    –কেন?

    –তোমার মনে আছে তুমি চলে আসবার সময় বলেছিলে যে, এক বৎসরের মধ্যে আবার ফিরে আসবে?

    —সে ভদ্রতা করে,–Mrs. Smith দুঃখ করছিল বলে তাকে স্তোক দেবার জন্যে।

    –কিন্তু আমি সে কথায় বিশ্বাস করেছিলুম।

    –তুমি কি এত ছেলেমানুষ ছিলে?

    –আমার মন আমাকে ছেলেমানুষ করে ফেলেছিল। তোমার সঙ্গে দেখা হবার আশা ছেড়ে দিলে, জীবনে যে আর কিছু। ধরে থাকবার মত আমার ছিল না। তার পর?

    —তুমি যে দিন চলে গেলে তার পরদিনই আমি Mrs. Smith-এর কাছ থেকে বিদায় হই।

    —Mrs. Smith তোমাকে বিনা নোটিসে ছড়িয়ে দিলে?

    –না, আমি বিনা নোটিসে তাকে ছেড়ে গেলুম। ও শ্মশানপুরীতে আমি আর এক দিনও থাকতে পারলুম না।

    –তারপর কি করলে?

    —তারপর একবৎসর ধরে যেখানে যেখানে তোমার দেশের লোকেরা থাকে, সেই সব বাড়ীতে চাকরি করেছি,—এই আশায় যে, তুমি ফিরে এলে সে খবর পাব। কিন্তু কোথাও এক মাসের বেশি থাকতে পারিনি।

    –কেন, তারা কি তোমাকে বকত, গাল দিত?

    —না, কটু কথা নয়, মিষ্টি কথা বলত বলে। তুমি যা করেছিলে—অর্থাৎ উপেক্ষা,—এরা কেউ আমাকে তা করেনি। আমার প্রতি এদের বিশেষ মনোযোগটাই আমার কাছে বিশেষ অসহ্য হত।

    –মিষ্টি কথা যে মেয়েদের তিতো লাগে, এ ত আমি আগে জানতুম না।

    —আমি মনে আর দাসী ছিলুম না—তাই আমি স্পষ্ট দেখতে পেতুম যে, তাদের ভদ্র কথার পিছনে যে মনোভাব আছে, তা মোটেই ভদ্র নয়। ফলে আমি আমার রূপ যৌবন দারিদ্র্য নিয়েও সকল বিপদ এড়িয়ে গেছি। জান কিসের সাহায্যে?

    -না।

    –আমি আমার শরীরে এমন একটি রক্ষাকবচ ধারণ করতুম, যার গুণে কোন পাপ আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি।

    —সেটি কি Cross?

    —বিশেষ করে আমার পক্ষেই তা Cross ছিল—অন্য কারও পক্ষে নয়। তুমি যাবার সময় আমাকে যে গিনিটি বকশিস দেও, সেটি আমি একটি কালো ফিতে দিয়ে বুকে ঝুলিয়ে রেখেছিলুম। আমার বুকের ভিতর যে ভালবাসা ছিল, আমার বুকের উপরে ওই স্বর্ণমুদ্রা ছিল তার বাহ্য নিদর্শন। এক মুহূর্তের জন্যও আমি সেটিকে দেহছাড়া করিনি, যদিচ আমার এমন দিন গেছে যখন আমি খেতে পাইনি।

    —এমন এক দিনও তোমার গেছে যখন তোমাকে উপবাস করতে হয়েছে?

    –একদিন নয়, বহুদিন। যখন আমার চাকরি থাকত না, তখন হাতের পয়সা ফুরিয়ে গেলেই আমাকে উপবাস করতে হত।

    -–কেন, তোমার বাপ মা, ভাই ভগ্নী, আত্মীয় স্বজন কি কেউ ছিল না?

    –না, আমি জন্মাবধি একটি Foundling Hospital-এ মানুষ হই।

    —কত বৎসর ধরে তোমাকে এ কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে?

    —এক বৎসরও নয়। তুমি চলে যাবার মাস দশেক পরে আমার এমন ব্যারাম হল যে, আমাকে হাসপাতালে যেতে হল। সেইখানেই আমি এ সব কষ্ট হতে মুক্তি লাভ করলুম।

    –তোমার কি হয়েছিল?

    —যক্ষ্মা।

    –রোগেরও ত একটা যন্ত্রণা আছে?

    —যক্ষ্মা রোগের প্রথম অবস্থায় শরীরের কোনই কষ্ট থাকে না, বরং যদি কিছু থাকে ত সে আরাম। তাই যে ক’মাস আমি হাসপাতালে ছিলুম, তা আমার অতি সুখেই কেটে গিয়েছিল।

    –মরণাপন্ন অসুখ নিয়ে হাসপাতালে একা পড়ে থাকা যে সুখের হতে পারে, এ আজ নতুন শুনলুম।

    –এ ব্যারামের প্রথম অবস্থায় মৃত্যুভয় থাকে না। তখন মনে হয় এতে প্রাণ হঠাৎ একদিনে নিভে যাবে না। সে প্রাণ দিনের পর দিন ক্ষীণ হতে ক্ষীণতর হয়ে অলক্ষিতে অন্ধকারে মিলিয়ে যাবে। সে মৃত্যু কতকটা ঘুমিয়ে পড়ার মত। তা ছাড়া, শরীরের ও-অবস্থায় শরীরের কোন কাজ থাকে না বলে সমস্ত দিন স্বপ্ন দেখা যায়,—আমি তাই শুধু সুখস্বপ্ন দেখতুম।

    —কিসের?

    —তোমার। আমার মনে হত যে, একদিন হয়ত তুমি এই হাসপাতালে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসবে। আমি নিত্য তোমার প্রতীক্ষা করতুম।

    –তার যে কোনই সম্ভাবনা ছিল না, তা কি জানতে না?

    —যক্ষ্মা হলে লোকের আশা অসম্ভবরকম বেড়ে যায়। সে যাই হোক, তুমি যদি আসতে তাহলে আমাকে দেখে খুসি হতে।

    –তোমার ঐ রুগ্ন চেহারা দেখে আমি খুসি হতুম, এরূপ অদ্ভুত কথা তোমার মনে কি করে হল?

    —সেই ইটালিয়ান পেন্টারের নাম কি, যার ছবি তুমি এত ভালবাসতে যে সমস্ত দেয়ালময় টাঙ্গিয়ে রেখেছিলে?

    –Botticelli।

    —হাঁ, তুমি এলে দেখতে পেতে যে, আমার চেহারা ঠিক Botticelliর ছবির মত হয়েছিল। হাত পা গুলি সরু সরু, আর লম্বা লম্বা। মুখ পাতলা, চোখ দুটো বড় বড়, আর তারা দুটো যেমন তরল তেমনি উজ্জ্বল। আমার রং হাতির দাঁতের রংয়ের মত হয়েছিল, আর যখন জ্বর আসত তখন গাল দুটি একটু লাল হয়ে উঠত। আমি জানি যে তোমার চোখে সে চেহারা বড় সুন্দর লাগত।

    –তুমি কতদিন হাসপাতালে ছিলে?

    —বেশি দিন নয়। যে ডাক্তার আমায় চিকিৎসা করতেন, তিনি মাসখানেক পরে আবিষ্কার করলেন যে, আমার ঠিক যক্ষ্মা হয়নি, শীতে আর অনাহারে শরীর ভেঙ্গে পড়েছিল। তার যত্নে ও সুচিকিৎসায় আমি তিন মাসের মধ্যেই ভাল হয়ে উঠলুম।

    —তারপর?

    –তারপর আমার যখন হাসপাতাল থেকে বেরবার সময় হল, তখন ডাক্তারটি এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন যে, আমি বেরিয়ে কি করব? আমি উত্তর করলুম-দাসীগিরি। তিনি বললেন যে—তোমার শরীর যখন একবার ভেঙ্গে পড়েছে, তখন জীবনে ও-রকম পরিশ্রম করা তোমার দ্বারা আর চলবে। আমি বল্লুম—উপায়ান্তর নেই। তিনি প্রস্তাব করলেন যে আমি যদি Nurse হতে রাজি হই ত তার জন্য যা দরকার, সমস্ত খরচা তিনি দেবেন। তাঁর কথা শুনে আমার চোখে জল এল,–কেননা জীবনে এই আমি সব প্রথম একটি সহৃদয় কথা শুনি। আমি সে প্রস্তাবে রাজি হলুম। এত শীগগির রাজি হবার আরও একটি কারণ ছিল।

    —কি?

    —আমি মনে করলুম Nurse হয়ে আমি কলকাতায় যাব। তাহলে তোমার সঙ্গে আবার দেখা হবে। তোমার অসুখ হলে তোমার শুশ্রুষা করব।

    —আমার অসুখ হবে, এমন কথা তোমার মনে হল কেন?

    —শুনেছিলুম তোমাদের দেশ বড়ই অস্বাস্থ্যকর, সেখানে নাকি সব সময়েই সকলের অসুখ করে।।

    –তারপরে সত্য সত্যই Nurse হলে?

    –হাঁ। তারপরে সেই ডাক্তারটি আমাকে বিবাহ করবার প্রস্তাব করলেন। আমি আমার মন ও প্রাণ, আমার অন্তরের গভীর কৃতজ্ঞতার নিদর্শনস্বরূপ তার হাতে সমর্পণ করলুম।

    –তোমার বিবাহিত জীবন সুখের হয়েছে?

    –পৃথিবীতে যতদূর সম্ভব ততদূর হয়েছে। আমার স্বামীর কাছে আমি যা পেয়েছি সে হচ্ছে পদ ও সম্পদ, ধন ও মান, অসীম যত্ন এবং অকৃত্রিম স্নেহ; একটি দিনের জন্যও তিনি আমাকে তিলমাত্র অনাদর করেননি, একটি কথাতেও কখন মনে ব্যথা দেননি।

    —আর তুমি?

    –আমার বিশ্বাস, আমিও তাকে মুহূর্তের জন্যও অসুখী করিনি। তিনি ত আমার কাছে কিছু চাননি, তিনি চেয়েছিলেন শুধু আমাকে ভালবাসতে ও আমার সেবা করতে। বাপ চিররুগ্ন মেয়ের সঙ্গে যেমন ব্যবহার করে, তিনি আমার সঙ্গে ঠিক সেইরকম ব্যবহার করেছিলেন। আমি সেরে উঠলেও আর আগের শরীর ফিরে পাইনি, বরাবর সেই Botticelliর ছবিই থেকে গিয়েছিলুম—আর আমার স্বামী আমার বাপের বয়সীই ছিলেন। তাঁকে আমি আমার সকল মন দিয়ে দেবতার মত পূজো করেছি।

    —আশা করি তোমাদের বিবাহিত জীবনের উপর আমার স্মৃতির ছায়া পড়েনি?

    –তোমার স্মৃতি আমার জীবন মন কোমল করে রেখেছিল।

    –তাহলে তুমি আমাকে ভুলে যাওনি?

    –না। সেই কথাটা বলবার জন্যই ত আজ তোমার কাছে এসেছি। তোমার প্রতি আমার মনোভাব বরাবর একই ছিল।

    —বলতে চাও, তুমি তোমার স্বামীকে ও আমাকে দুজনকে একসঙ্গে ভালবাসতে?

    –অবশ্য। মানুষের মনে অনেক রকম ভালবাসা আছে, যা পরস্পর বিরোধ না করে একসঙ্গে থাকতে পারে। এই দেখ না কেন, লোকে বলে যে শত্রুকে ভালবাসা শুধু অসম্ভব নয়, অনুচিত;–কিন্তু আমি সম্প্রতি আবিষ্কার করেছি যে শত্রু-মিত্র-নির্বিচারে, যে যন্ত্রণা ভোগ করছে, তার প্রতিই লোকের সমান মমতা, সমান ভালবাসা হতে পারে।

    —এ সত্য কোথায় আবিষ্কার করেছ?

    —ফ্রান্সের যুদ্ধক্ষেত্রে।

    —তুমি সেখানে কি করতে গিয়েছিলে?

    —বলছি। এই যুদ্ধে আমরা দুজনেই ফ্রান্সের যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়েছিলুম, তিনি ডাক্তার হিসেবে, আমি Nurse হিসেবে–সেইখান থেকে এই তোমার কাছে আসছি, যে কথা আগে বলবার সুযোগ পাইনি, সেই কথাটি বলবার জন্য।

    —তোমার কথা আমি ভাল বুঝতে পারছিনে।

    –এর ভিতর হেঁয়ালি কিছু নেই। এই ঘণ্টাখানেক আগে তোমার সেই Botticelliর ছবি একটি জর্মান গোলার আঘাতে ছিঁড়ে চার-ইয়ারী-কথা টুকরো টুকরো হয়ে গেছে—অমনি আমি তোমার কাছে চলে এসেছি।

    —তাহলে এখন তুমি–?

    –পরলোকে।

    এর পর টেলিফোন ছেড়ে দিয়ে আমি ঘরে চলে এলুম। মুহূর্তে আমার শরীর মন একটা অস্বাভাবিক তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে এল। আমি শোবামাত্র ঘুমে অজ্ঞান হয়ে পড়লুম। তার পরদিন সকালে চোখ খুলে দেখি বেলা দশটা বেজে গেছে।

    *****

    কথা শেষ করে বন্ধুদের দিকে চেয়ে দেখি, রূপকথা শোনার সময় ছোট ছেলেদের মুখের যেমন ভাব হয়, সীতেশের মুখে ঠিক সেই ভা। সোমনাথের মুখ কাঠের মত শক্ত হয়ে গেছে। বুঝলুম তিনি নিজের মনের উদ্বেগ জোর করে চেপে রাখছেন। আর সেনের চোখ দুলে আসছে—ঘুমে কি ভাবে, বলা কঠিন। কেউ ‘হুঁ’ ‘না’-ও করলেন না। মিনিট খানেক পরে বাইরে গিঞ্জের ঘণ্টায় বারোটা বাজলে, আমরা সকলে এক সঙ্গে উঠে পড়ে ‘boy boy’ বলে চীৎকার করলুম, কেউ সাড়া দিলে না। ঘরে ঢুকে দেখি, চাকরগুলো সব মেজেতে বসে দেয়ালে ঠেস দিয়ে ঘুমচ্ছে। চাকরগুলোকে টেনে তুলে গাড়ী জুততে বলতে নীচে পাঠিয়ে দিলুম।

    হঠাৎ সীতেশ বলে উঠলেন, “দেখ রায়, তুমি একজন লেখক, দেখ, এ সব গল্প যেন কাগজে ছাপিয়ে দিয়ো না, তাহলে আমি আর ভদ্রসমাজে মুখ দেখাতে পারব না।” আমি উত্তর করলুম “সে লোভ আমি সম্বরণ করতে পারব না—তাতে তোমরা আমার উপর খুসিই হও, আর রাগই কর।” সেন বল্লেন, “আমার কোনও আপত্তি নেই। আমি যা বল্লুম তা আগাগোড়া সত্য, কিন্তু সকলে ভাববে যে তা আগাগোড়া বানান।” সোমনাথ বল্লেন, “আমারও কোনও আপত্তি নেই, আমি যা বল্লুম তা আগাগোড়া বানান, কিন্তু লোকে ভাববে যে তা আগাগোড়া সত্যি।” আমি বললুম, “আমি যা বল্লুম তা ঘটেছিল, কি আমি স্বপ্ন দেখেছিলুম, তা আমি নিজেও জানিনে। সেই জন্যই ত এ সব গল্প লিখে ছাপাব। পৃথিবীতে দু’রকম কথা আছে যা বলা অন্যায়,—এক হচ্ছে মিথ্যা, আর এক হচ্ছে সত্য। যা সত্যও নয় মিথ্যাও নয়, আর না হয়ত একই সঙ্গে দুই–তা বলায় বিপদ নেই।

    সীতেশ বল্লেন, “তোমাদের কথা আলাদা। তোমাদের একজন কবি, একজন ফিলজফার, আর একজন সাহিত্যিক,সুতরাং তোমাদের কোন্ কথা সত্য আর কোন্ কথা মিথ্যে, তা কেউ ধরতে পারবে না। কিন্তু আমি হচ্ছি সহজ মানুষ, হাজারে ন’শ নিরনব্বই জন যেমন হয়ে থাকে, তেমনি। আমার কথা যে খাঁটি সত্য, পাঠকমাত্রেই তা নিজের মন দিয়েই যাচাই করে নিতে পারবে।”

    আমি বল্লুম—”যদি সকলের মনের সঙ্গে তোমার মনের মিল থাকে, তাহলে তোমার মনের কথা প্রকাশ করায় ত তোমার লজ্জা পাবার কোনও কারণ নেই।” সীতেশ বল্লেন, “বাঃ, তুমিত বেশ বল্লে! আর পাঁচজন যে আমার মত, এ কথা সকলে মনে মনে জানলেও, কেউ মুখে তা স্বীকার করবে না, মাঝ থেকে আমি শুধু বিজপের ভাগী হব।” এ কথা শুনে সোমনাথ বল্লেন, “দেখ রায়, তাহলে এক কাজ কর,– সীতেশের গল্পটা আমার নামে চালিয়ে দেও, আর আমার গল্পটা সীতেশের নামে!” এ প্রস্তাবে সীতেশ অতিশয় ভীত হয়ে বল্লেন, “না না, আমার গল্প আমারই থাক। এতে নয় লোকে দুটো ঠাট্টা করবে, কিন্তু সোমনাথের পাপ আমার ঘাড়ে চাপলে আমাকে ঘর ছাড়তে হবে!”–

    এর পরে আমরা সকলে স্বস্থানে প্রস্থান করলুম।

    জানুয়ারি, ১৯১৬।

    1 2 3 4 5
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleসনেট-পঞ্চাশৎ – প্রমথ চৌধুরী
    Next Article কেরী সাহেবের মুন্সী – প্রমথনাথ বিশী

    Related Articles

    প্রমথ চৌধুরী

    সনেট-পঞ্চাশৎ – প্রমথ চৌধুরী

    September 22, 2025
    প্রমথ চৌধুরী

    বীরবলের হালখাতা – প্রমথ চৌধুরী

    September 22, 2025
    প্রমথ চৌধুরী

    প্রবন্ধ সংগ্রহ – প্রমথ চৌধুরী

    September 20, 2025
    প্রমথ চৌধুরী

    গল্পসংগ্রহ – প্রমথ চৌধুরী

    September 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Our Picks

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.