Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    চৈত্রের দ্বিতীয় দিবস – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প238 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৪. নান্টু ভাইয়ের ভাল নাম–আব্দুল কাদের জিলানী

    নান্টু ভাইয়ের ভাল নাম–আব্দুল কাদের জিলানী। বড় পীর সাহেবের নামে নাম। এই নাম সকলের সহ্য হয় না। আকিকার পর থেকে শুরু হল অসুখ বিসুখ। হাম সারলে হয় টাইফয়েড। টাইফয়েড সারলে হেপিং কফ। হোপিং কফ গেল তো শুরু হল ঘুসঘুসে জ্বর। বাচ্চাদের থাকবে মাথাভর্তি চুল। দুবছর বয়সে ছেলের মাথার সব চুল উঠে গেল। জ্বীন ভূতের আছর হতে পারে মনে করে মওলানা ডাকিয়ে আনা হল। মওলানা বললেন, জ্বীন ভূত কিছু না। নামের আছর পরেছে। বড় পীর সাহেবের নামে নাম রাখাই ভুল হয়েছে। আব্দুল কাদের নাম রাখলেই হত। নামের শেষে জিলানী যুক্ত হওয়াতে বিপদ শুরু হয়েছে।

    নান্টুর বাবা বললেন, আরেকটা আকিকা করে নাম বদলাব?

    মওলানা বললেন, সেইটাও ঠিক হবে না। যা করতে হবে তা হচ্ছে ভাল নামে কখনো ডাকা যাবে না। ভুলেও না। ভাল নাম কাউকেই জানানো যাবে না। সব কাজ সারতে হবে ডাক নামে।

    সেই থেকে নান্টু। মেট্রিক সার্টিফিকেটেও নান্টু। ইন্টারমিডিয়েট সার্টিফিকেট, বিএসসি-ডিগ্রী সবজায়গায় না। ভাল নাম মুখে না নেয়ার কিছু উপকারিতা পাওয়া যাচ্ছে। তার শরীর এখন খুবই ভাল। রোদ-বৃষ্টি-ঝড়-বাদল কিছুই তাকে কাবু করতে পারে না। তবে আজ নান্টু সাহেব সামান্য কাবু। প্রচণ্ড মাথা ধরেছে। মাথা ধরার চিকিৎসা হচ্ছে। মডার্ন সেলুনের নাপিতকে ধরে আনা হয়েছে। সে রাত এগারোটা থেকে মাথা বানাচ্ছে। ঘন্টা হিসেবে চুক্তি। ঘন্টায় পঁচিশ টাকা। নাপিত আধ ঘন্টা ননস্টপ মাথা বানিয়ে পঞ্চাশ টাকা কামিয়ে ফেলেছে কিন্তু মাথা ধরার ঊনিশ বিশ হচ্ছে না। বরং মাথা ধরা আরো বেড়েছে। নান্টুর ধারণা মাথার ভেতরের সুক্ষ্ম কোন নাট বল্টু আলগা হয়ে গেছে। দেয়ালে মাথা ঠুকে কায়দা মত করে ধাক্কা দিতে পারলে নাট বল্ট জায়গামত ফিটিং হয়ে যেত। সাহসে কুলুচ্ছে। অনেক আগে একবার সে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে মাথা ফাটিয়ে ফেলেছিল। রীতিমত রক্তারক্তি। ডাক্তারের কাছে পর্যন্ত যেতে হয়েছে। ডাক্তার সাহেব সব শুনে বলেছেন—যা করেছেন করেছেন। ভবিষ্যতে এরকম কখনো করবেন না। অন্ধ হয়ে যাবেন বুঝেছেন-অন্ধ। মাথা ধরা কোন রোগ না—নানান সমস্যায় মাথা ধরে। শারীরিক সমস্যা, মানসিক সমস্যা। সেই সমস্যার চিকিৎসা করতে হবে। দেয়ালে মাথা ঠুকাঠুকি না। আপনারা সমস্যা কি?

    নান্টু দাঁত বের করে হেসে ফেলে বলেছে, স্যার আমার কোন সমস্যা নেই। শারীরিক, মানসিক কোন সমস্যাই নেই। একটাই সমস্যা। মাথা ধরা।

    তার কথা ঠিক না। নান্টুর বড় ধরনের সমস্যা আছে। সমস্যা এ রকম যে তা নিয়ে কারো সঙ্গে আলাপ করা সম্ভব না। ডাক্তার সাহেবকে সে নিশ্চয়ই বলতে পারে না, স্যার আমার স্ত্রীর সঙ্গে আমার একটা সমস্যা চলছে। সে আমার সঙ্গে থাকে না। তার বাবার বাসায় থাকে। আমার একটা পাঁচ বছরের ছেলে আছে। তার নাম অর্ণব। সেও মার সঙ্গে থাকে। ছেলেটার জন্যে যখন খুবই মন কাঁদে তখন মাথা ধরে যায়। মাথা ধরার এই হল রহস্য।

    আজ অর্ণবের বাবার কাছে এসে থাকার কথা ছিল। বিকালে চলে আসবে রাতে থাকবে। সকালে অর্ণবকে মার কাছে পৌঁছে দিয়ে নান্টু চলে যাবে অফিসে। অর্ণব প্রায়ই বৃহস্পতিবার রাতে এসে বাবার সঙ্গে থাকে। শুক্র শনি স্কুল বন্ধ। এখন সামারের ছুটি চলছে যে কোন সময় আসতে পারে। ছুটিছাটার সময় বাবার সঙ্গে বেশি সময় কাটাবে এটাইতো যুক্তিযুক্ত।

    নান্টু বিকেলে ছেলেকে আনতে গেল। শ্বশুর বাড়িতে যাওয়া বলে কথা, খালি হাতে উপস্থিত হওয়া যায় না। মাতৃভাণ্ডারের রসমালাই শর্মিলার খুবই প্রিয়। এক কেজি রসমালাইয়ের একটা হাড়ি নিয়ে গেল।

    শর্মিলা রসমালাইয়ের হাড়ি হাতে নিতে নিতে শুকনা গলায় বলল, অর্ণব আজ যেতে পারবে না।

    নান্টু হতভম্ব হয়ে বলল, কেন?

    সে তার ছোটমামার সঙ্গে ময়মনসিংহ গিয়েছে।

    নান্টু আবারো বলল,কেন?

    শর্মিলা বিরক্ত গলায় বলল, মামার সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছে এর আবার কেন কি? সকাল থেকেই সে নাচানাচি করছে মামার সঙ্গে ময়মনসিংহ যাবে।

    এই কথাতেই নান্টুর মাথা ধরল। অর্ণব জানে আজ সে বাবার সঙ্গে থাকবে তারপরেও সকাল থেকে মামার সঙ্গে নাচানাচি করবে কেন? সে নাচ শিখল কবে? তাছাড়া ময়মনসিংহে আছে টা কি?

    শর্মিলা বলল, তুমি কি চা খাবে?

    নান্টু চা খেতে ইচ্ছা করছে না। তবু সে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল। খাবার অজুহাতে কিছুক্ষণ শর্মিলার সামনা সামনি বসে থাকা যায়। বাপের বাড়িতে থাকতে শুরু করার পর থেকে যত দিন যাচ্ছে শর্মিলা তত সুন্দর হচ্ছে। কে বলবে তার পাঁচ বছর বয়েসী একটা ছেলে আছে। মনে হয় ক্লাস এইট নাইনে পড়া কোন কিশোরী। প্রাইভেট টিচারের কাছে অংক করছিল, নান্টু নামের এক লোক এসেছে শুনে দেখা করতে এসেছে। লোকটা চলে গেলেই বেণী দুলিয়ে পড়তে বসবে।

    শর্মিলা চায়ের কাপ সামনে রাখতে রাখতে বলল, তোমার অফিসের কাজকর্ম কেমন চলছে?

    নান্টু ক্ষীণ স্বরে বলল, ভাল।

    মুখে মুখে তোমার সব কিছু তো ভাল চলে। আসলেই কি ভাল?

    নান্টু কিছু বলল না। শর্মিলা রাগতে শুরু করেছে। রাগলে তার নাক সামান্য ফুলে উঠে। শর্মিলার সঙ্গে কথা বলার সময় তার নাকের দিকে লক্ষ্য রাখতে হয়। রাগের সময় চুপচাপ থাকাটা ভাল বুদ্ধি। শর্মিলা বলল, তোমাকে যে উকিলের সঙ্গে পরামর্শ করতে বলেছিলাম করেছ?

    মোটামুটি আলাপ করেছি। ফাইন্যাল কিছু হয়নি।

    মোটামুটি আলাপটা কি?

    ডিভোর্সের সবচে সহজ পদ্ধতি হল মিউচুয়েলি করা। দুজন এক সঙ্গে কাজীর অফিসে উপস্থিত হতে হবে। লইয়ার থাকবে। কাবিন নামার কপিটা লাগবে।

    শর্মিলা বলল, কাবিন নামাটা তো আমার কাছেই আছে। একটা দিন ঠিক করে গেলেই হয়।

    নান্টু সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলল, যাব। অফিসে সামান্য ঝামেলা যাচ্ছে। ঝামেলাটা শেষ হোক।

    ঝামেলা শেষ হবে কবে?

    সপ্তাহখানিকের বেশি লাগবে না। এই সপ্তাহটা যাক—পরের সপ্তাহে।

    শর্মিলা বলল, পরের সপ্তাহে আমার চিটাগাং যাবার কথা। আচ্ছা ঠিক আছে, যাওয়া বাদ দেব।

    নান্টু উৎসাহের সঙ্গে বলল, বাদ দেবে কেন? এত তাড়াহুড়া তো কিছু নাই। চিটাগাং থেকে ঘুরে আস তারপর হবে। কাজী সাহেব পালিয়ে যাচ্ছেন না। লইয়ার পালাচ্ছে না, আমরাও পালাচ্ছি না। আমরা সবাই খুঁটিতে বাধা। হা হা হা।

    শর্মিলা বিরক্ত গলায় বলল, বিশ্রী করে হাসছ কেন? দাঁত বের করে হাসার মত কিছু হয় নি। তোমার এইসব ধানাই পানাই আমার অসহ্য লাগছে। না আমি চিটাগাং যাব না। তুমি আগামী সপ্তাহেই ব্যবস্থা করবে।

    হাতের সিগারেটটা দ্রুত টানার জন্যে শেষ হয়ে গিয়েছে। নান্টু আরেকটা সিগারেট ধরাল। সিগারেট শেষ না করে উঠা যাবে না। আরো কিছু সময় থাকা যাবে। মাথা ধরা শুরু হয়েছে। একবার এই যন্ত্রণা শুরু হলে তিন চার ঘন্টা আর সিগারেট খাওয়া যাবে না। আগে নান্টু সিগারেট ধরালেই শর্মিলা রাগ করত। এখন কিছুই বলে না। সব খারাপ জিনিসের কিছু ভাল দিক থাকে। এই একটা ভাল দিক। ডিভোর্স যদি সত্যি সত্যি হয়ে যায় তাহলে আরো কিছু ভাল দিক থাকবে। থাকতেই হবে। নান্টুর ধারণা ডিভোর্স হওয়া মাত্র শর্মিলার বিয়ে হয়ে যাবে। ডিভোর্সড হওয়া সুন্দরী মেয়েদের বাজারদর ভাল। কুমারী মেয়েদের চেয়েও ভাল। বিয়ে ভাঙ্গতে না ভাঙ্গতেই আবার বিয়ে। অর্ণবকে তখন নান্টু নিজের কাছে এনে রাখতে পারবে। তার ছোট মামা হুট করে তাকে নিয়ে ময়মনসিংহ চলে যাবে না।

    শর্মিলা উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, তোমার কথাতো শেষ হয়েছে। এখন যাও। আমি গুলশান মার্কেটে যাব।

    নান্টু বলল, চল তোমাকে নামিয়ে দিয়ে যাই।

    নামিয়ে দিয়ে যাবে মানে? তোমার সঙ্গে কি গাড়ি আছে নাকি?

    না গাড়ি পাব কোথায়? বেবীটেক্সী দিয়ে নামিয়ে দিয়ে যাব। আমিও ঐ দিকেই যাব।

    তোমার যে দিকে যেতে ইচ্ছা যাও। আমার কথা ভাবতে হবে না। অনেক বেশি ভেবে ফেলেছ।

    নান্টু বলল, দেখি এক গ্লাস পানি দাও। পানি খাব।

    আর কি কি খাবে এক সঙ্গে বলে ফেল। বার বার যাওয়া আসা করতে পারব না।

    আর কিছু না। পানি দিলেই হবে। ঠাণ্ডা পানি।

    পান খাবে না? জর্দা দিয়ে পান। পান খেয়ে খেয়ে দাঁতের তো বারোটা বাজিয়েছ।

    নান্টুর মন খুবই খারাপ ছিল, শর্মিলার এই কথায় সামান্য ভাল হল। পানের কারণে তার দাঁত লাল হয়ে আছে। এই ব্যাপারটা শর্মিলার চোখ এড়ায় নি। এর অর্থ শর্মিলার তার প্রতি মমতা এখনো যায় নি। সামান্য হলেও আছে। নান্টু পানির জন্যে অপেক্ষা করছে। আরো কিছুক্ষণ শর্মিলার সঙ্গে কাটানোর ভাল একটা কায়দা বের করেছে। পানির গ্লাস হাতে শর্মিলা ঢুকল না। কাজের একটা ছেলে ঢুকল।

     

    নান্টুর মেসে ফরহাদ যখন উপস্থিত হল তখন নান্টুর মাথা বানানো পর্ব শেষ হয়েছে। শরীর বানানো শুরু হয়েছে। নান্টু উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। নাপিত তার পিঠ খাবলা খাবলি করছে। নান্টু ফরহাদকে দেখে উঠে বসতে বসতে বিরক্ত মুখে বলল- তোকে আসতে বললাম সকালে, এখন রাত বারোটা তোর ব্যাপারটা কি?

    আটকা পরে গিয়েছিলাম।

    আটকা পরে গিয়েছিস ভাল কথা এত রাতে আসার দরকার কি ছিল? খেয়ে এসেছিস?

    হ্যাঁ।

    রাতে থাকবি না চলে যাবি?

    থাকব।

    তোকে খুবই আপসেট লাগছে ব্যাপার কি? এত ঘাবড়ে গেছিস ক্যান? আমি কি সহজ পাত্র না-কি। এমন বেড়াছেড়া লাগব যে চাকরি ফেরত দেবে প্লাস এডিশন্যান ফেসিলিটিজও পাৰি। তুই চুপ করে বোস—আমি গোসল করে আসি। তারপর রাতে দুজনে মিলে ছবি দেখব।

    নান্টুর মেসঘরটা বেশ বড়। সেখানে নান্টুর জন্যে একটা ডাবল খাট পাতা। খাটের পাশেই একটা সিঙ্গেল চৌকি আছে হঠাৎ চলে আসা গেস্টদের জন্যে। একটা চৌদ্দ ইঞ্চি ব্ল্যাক এণ্ড হোয়াইট টিভি আছে। ভিসিপি আছে। নান্টুর ছবি দেখার বাতিক। ঘুমুতে যাবার আগে হিন্দী ছবির পুরোটা বা সিকিটা না দেখলে তার ঘুম আসে না। ফরহাদ নান্টুর এখানে এলে রাতে থেকে যায়।

    গোসল সেরে এসে নান্টু বলল, কি ছবি দেখবি? একশান না সোসাল? কমেডিও আছে। সব রকম এনে রেখেছি। কার্টুনও আছে। অর্ণবের আসার কথা ছিল তার জন্যে টম এন্ড জেরী। বিড়াল আর ইঁদুরের খামচা খামচি।

    একটা দেখলেই হয়।

    একশান দেখি আয়। সোস্যাল ছবি এখন ভাল লাগবে না। কফি খাবি?

    কফির ব্যবস্থা আছে? ইনসটেন্ট কফির একটা কৌটা কিনে রেখেছি—ভাল ছবি দেখার পর হঠাৎ হঠাৎ খেতে ইচ্ছা করে। এই মাসে যদি বেতন হয়—ঠিক করে রেখেছি একটা রকিং চেয়ার কিনব। দোল খেতে খেতে কফি খাওয়া এর মজাটা অন্য রকম তাই না?

    হুঁ।

    নান্টু কেরোসিনের চুলায় পানি গরম করতে করতে বলল—চাকরির সমস্যা ছাড়াও তোর অন্য কোন সমস্যা আছে। দেখেই বুঝতে পারছি। সমস্যাটা কি খুলে বলতো। ঝেড়ে কাশ। তোর গলায় কফ আটকে আছে।

    ফরহাদ ইতস্তত করে বলল, নান্টু ভাই আমার বিয়ে।

    নান্টু বিস্মিত হয়ে বলল, বিয়ে মানে? কবে বিয়ে?

    শুক্রবারে।

    এই শুক্রবারে?

    জ্বি।

    মেয়েটা কে? ঐ যে অফিসে তোর খুঁজে মাঝে মধ্যে আসে। আসমানী?

    জ্বি।

    হুট করে বিয়ে করছিস ব্যাপারটা কি?

    আসমানীর মামা এসেছেন জাপান থেকে উনি চলে যাবেন। যাবার আগে ভাগ্নির বিয়ে দিয়ে যাবেন।

    বিয়ে করতে যাচ্ছিস হাতে টাকা পয়সা আছে?

    না।

    না-মানে? একটা ফকির কখন ফকিরনীকে বিয়ে করে তারও হাজার তিনেক টাকা খরচ হয়—তোর হাতে এখন নেট কত টাকা আছে?

    বারশ চল্লিশ।

    বলিস কি? শুক্রবার মেয়ের বাড়িতে গিয়ে বিয়ে পড়ানো হবে?

    সে রকমই জানি।

    হেঁটে হেঁটে তো আর বিয়ে করতে যাওয়া যায় না–মাইক্রোবাস ভাড়া করতে হবে। ঘণ্টায় দুশ টাকা হলে চার ঘণ্টায় লাগবে আটশ। বিয়ের পর বউ নিয়ে বাসায় আসবি না-কি ওরা বউ পরে উঠিয়ে দেবে?

    কিছুই জানি না।

    তুইতো মহাগাধা দেখি টেকনিক্যাল ব্যাপারগুলি পরিষ্কার করে রাখবি না। হাতেতো সময়ও নাই। দেখি কাল সন্ধ্যায় আমাকে ঐ বাড়িতে নিয়ে যা—।

    আচ্ছা।

    ঝামেলা যখন শুরু হয় একসঙ্গে শুরু হয়। যাই হোক যত মুশকিল তত আসান। চিন্তা করিস না। বউয়ের মেজাজ মর্জি দেখে চলবি। আমি যে সব ভুল করেছি সেইসব ভুল করবি না। যেমন ধর রাত বিরাতে বাড়ি ফেরা। অবশ্যই সন্ধ্যার পর ঘরে থাকবি। টাকা পয়সার সমস্যা যদিও হয় বউকে জানতে দিবি না। নিজের মধ্যে হজম করে রাখবি।

    ফরহাদ বলল, ভাবীর সঙ্গে আপনার সমস্যা কি মিটিছে?

    নান্টু বলল, প্রায় মিটেছে। তবে এখনো রাগ দেখাচ্ছে। দেখাক রাগ। উপরে উপরে রাগ ভেতরে অভিমান।

    এটাতো ভালই।

    ভাল কি-না জানি না, তবে খুবই যন্ত্রণা দায়ক। একটা জিনিস তুই খেয়াল রাখবি—মেয়েরা পুরুষ মানুষের মত না। তারা আলাদা। সম্পূর্ণ আলাদা। তোর ভাবীর কথাই ধর—বাপের বাড়িতে থাকছে। ডিভোর্সের কথা মাঝে মধ্যে বলছে। আমাকে রাগানোর জন্যেই বলছে। অন্য কিছু না। কিন্তু আজ কি হয়েছে শোন। অতিরিক্ত পান খাবার জন্যে আমার দাঁত লাল হয়েছে—এই নিয়ে তোর ভাবী যা শুরু করল বলার মত না। রাগারাগি, চিৎকার–কেন পান খেয়ে দাঁত নষ্ট করছ। তুমি পেয়েছটা কি? নিজের দিকে লক্ষ্য রাখবে না?

    যে মেয়ে ডিভোর্স চায় সেকি কখনো এমন কথা বলবে?

    না তা বলবে না।

    তোর ভাবী জানে ডিভোর্সের কথা উঠলে আমি মন খারাপ করি এই জন্যেই বার বার কথা তুলে। মেয়েরা খুবই আজব জাত। যাকে তারা পছন্দ করে তাকে কষ্ট দিয়ে খুবই মজা পায়। তুইতো বিয়ে করছিস নিজেই বুঝবি। তিন মাসের মাথায় দেখবি হাসতে হাসতে তোর বউ এমন সব কথা বলবে যে রাগে মাথার তালু জ্বলে যাবে। চুল খাড়া হয়ে যাবে। এইসব কথাকে মোটেই গুরুত্ব দিবি না। এইসব মনের কথা না।

    আচ্ছা।

    তোর বউ কি পছন্দ করে না করে সে দিকেও নজর রাখবি। ধর সে রসমালাই খেতে পছন্দ করে। তুই করবি কি প্রায়ই রসমালাই এক হাড়ি কিনে বাসায় ফিরবি। তোর বউ জানবে সে কি পছন্দ অপছন্দ তা তুই জানিস।

    ফরহাদ হাসল। নান্টু বিরক্ত গলায় বলল, হাসির কথা না। আমি খুব টেকনিক্যাল কথা বলছি। বউ কখন রেগে যাচ্ছে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। সেই মত ব্যবস্থা নিবি। কোন কোন মেয়ে আছে রাগলে তাদের নাক ফুলে যায়। ৩খন খেয়াল রাখতে হবে বউ-এর নাকের দিকে। একে বলে লক্ষণ বিচার। বিয়েতে সুখ যেমন আছে যন্ত্রণাও আছে। দুইই সমান সমান।

    নান্টু ভিসিআর ছেড়ে দিল। ফরহাদ বলল—আপনার মাথা ধরেছে আজ ছবি না হয় না দেখলাম।

    নান্টু বলল থাক বাদ দে। শুয়ে পরবি?

    হ্যাঁ।

    মশারি খাটানোর দরকার নেই। মশা কম। মশারি খাটালে ফ্যানের বাতাস পাবি না।

    ফরহাদ শুয়ে পড়ল। হঠাৎ করে তার খুব ঘুম পাচ্ছে। চোখ জড়িয়ে আসছে। মনে হচ্ছে চেয়ারে বসেই ঘুমিয়ে পড়বে। এরকম প্রচণ্ড ঘুম খুবই ভয়াবহ–বিছানায় যাওয়া মাত্র ও জাতীয় ঘুম কেটে যায়। ফরহাদের ধারণা পৃথিবীতে তিন রকমের ঘুম আছে—চলন্ত ঘুম। ট্রেন বা গাড়ি যখন চলে তখন এই ঘুম আসে। গাড়ি থেমে গেলেই ঘুম কেটে যায়। বসন্ত ঘুম—বসা অবস্থায় এই ঘুম আসে। বিছানায় শুলেই ঘুম নেই। আর একটা ঘুম হল—বিছানা ঘুম। এই ঘুম। বিছানায় আসে—আসল ঘুম।

    নান্টু বলল, ফরহাদ ঘুমিয়ে পরেছিস?

    ফরহাদ বলল, না।

    নান্টু আগ্রহের সঙ্গে বলল, বিয়ের পর অনেক অদ্ভুত অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করবি।

    কি রকম?

    যেমন তোর ভাবীর কথাই ধর। সে মশারি ফেলে ঘুমুতে পারে না। মশা যদি তাকে খুবলে খেয়েও ফেলে সে মশারি ফেলবে না। মার কাছ থেকে ছেলেও এই অভ্যাস পেয়েছে।

    অর্নবও মশারি ফেলে ঘুমুতে পারে না?

    না। এদিকে সে আবার মশা ভয় পায়। মশাকে সে কি বলে জানিস?

    কি বলে?

    শিশা। ছোট বেলায় বলতো—এখনো বলে।

    শিশা বলে কেন?

    আর বলিস না। বাচ্চাদের সবই অদ্ভুত। অর্ণব নিঃশ্বাসকে কি বলে জানিস?

    কি বলে?

    নিঃশ্বাসকে বলে নিশ-নাশ। ইন্টারেস্টিং না?

    অবশ্যই ইন্টারেস্টিং।

    নান্টু বিছানায় উঠে বসে আগ্রহের সঙ্গে বলল, অর্ণবের মধ্যে একটা ব্যাপার দেখে আমি খুবই অবাক। কারো বিরুদ্ধেই তার কোন কমপ্লেইন নেই। ধর তুই তাকে অকারণে একটা আছাড় মারলি। সে কাঁদবে। কিন্তু কখনো কাউকে গিয়ে বলবে না–ফরহাদ চাচু আমাকে আছাড় মেরেছে। একবার কি হয়েছে শোন—অর্ণবকে বিছানায় নিয়ে শুয়েছি সে কাঁদছে। আমি যতই বলি কি হয়েছে। বাবা? সে উত্তর দেয় না—শুধু কাঁদে। শেষে অনেক আদর টাদর করার পর আঙ্গুল দিয়ে নিজের পা দেখালো। আমি তাকিয়ে দেখি গোবরে পোকার মত একটা পোকা তাকে কামড়াচ্ছে। বেচারা জানে একটা পোকা তাকে কামড়াচ্ছে কিন্তু সে বলবে না।

    এটা কি ভাল?

    ভাল নাতো বটেই? এটা হল তার স্বভাব। স্বভাবতো আর বদলানো যায় না। ছেলেটাকে নিয়ে আমি খুবই চিন্তায় থাকি। তাকে নিয়ে আজ তার মামা গেছে। ময়মনসিংহ। অর্ণবের যদি কোন অসুবিধা হয় সেতো তার মামাকে বলবে না। ধর সে পুকুরে গোসল করতে নামল তখন একটা কচ্ছপ তার আংগুল কামড়ে ধরল। সে কাঁদবে কিন্তু তার মামাকে বলবে না–কচ্ছপ আমাকে কামড়াচ্ছে। ফরহাদ সিগারেট খাবি?

    না।

    খা একটা সিগারেট। সিগারেট খেতে খেতে একটু গল্প করি।

    আপনার মাথা ব্যথা কমেছে?

    হ্যাঁ কমেছে। তুই বিয়ে করেছিস শুনে ভাল লাগছে বুঝলি—তখনই মাথা ব্যাথাটা হুস করে কমে গেল। নতুন সংসার শুরু করা খুবই আনন্দের ব্যাপার। রাতে বাসায় ফিরে যখন দেখবি তোর বউ ভাত না খেয়ে তোর জন্যে অপেক্ষা করে আছে—তখন কি যে ভাল লাগবে। আমার একটা ঘটনা বলি শোন। বিয়ের দশ দিনের দিন হঠাৎ স্কুল জীবনের এক ফ্রেণ্ডের সঙ্গে দেখা ইশতিয়াক। গল্প গুজব করতে করতে অনেক রাত করে ফেললাম। বাসায় ফিরলাম রাত দুটা দশে। দেখি তোর ভাবী না খেয়ে ভাত নিয়ে বসে আছে। এত আনন্দ হয়েছিল বুঝলি একেবারে চোখে পানি এসে গিয়েছিল। ফরহাদ।

    জ্বি।

    ঘুমিয়ে পর। বিয়ের টাকা পয়সা নিয়ে চিন্তা করিস না। ইনশাল্লাহ একটা কিছু ব্যবস্থা করে ফেলব।

    জ্বি আচ্ছা।

    আমার আবার ঘুম আসছে না। ছেলেটার জন্যে মনটা খারাপ লাগছে। নিজের একটা গাড়ি থাকতো হুট করে ময়মনসিংহ চলে যেতাম।

    অর্ণবকে নিয়ে আপনি চিন্তা করবেন না। মামার কাছে ও ভালই আছে।

    ছেলেটা একেবারেই অন্য রকম হয়েছে। কি সুন্দর করে যে হাসে। হাসিটা একেবারে কলিজার মধ্যে গিয়ে লাগে। তুইতো বিয়ে করছিস। ছেলে মেয়ে হোক তখন বুঝবি ছেলেমেয়ের হাসি কি জিনিশ।

     

    ফরহাদ ঘুমুতে পারছে না। বিছানাটা আরামদায়ক। মাথার উপর ফ্যান ঘুরছে। সামান্য শীত শীত লাগছে। পায়ের কাছে চাদর আছে। চাদরটাও পরিষ্কার। নান্টুভাই একটা কোলবালিশও বের করে দিয়েছেন। ঘুমুবার জন্যে আয়োজন ভাল। কিন্তু ঘুম আসছে না। মাথা দপ দপ করছে। বিয়ের এই ঝামেলা হাতে নেয়া ঠিক হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। সংসারে নতুন একটা মানুষ নিয়ে আসার জন্যে অনেক প্রস্তুতি লাগে। তার কোন প্রস্তুতি নেই। আসমানী যে রাতে ঘুমুবে একটা ভাল বিছানা কি আছে? সুন্দর চাদর? দাদাজানের খাটটা সরাতে হবে? তিনি থাকবেন কোথায়? মঞ্জু তার ঘরে দাদাজানকে রাখবে না। রাগারাগি হৈ চৈ করবে। বুড়ো মানুষটা যাবে কোথায়? রাতে মশারি খাটাতে হবে—পুরানো মশারির কয়েক জায়গায় ফুটা আছে। সেফটিপিন দিয়ে ফুটা মেরামত করা হয়েছে তাতে মশা আটকায় না। গভীর রাতে মশার পিন পিন শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়। আলসেমী লাগে বলে সে চোখ না মেলেই মটকা মেরে পড়ে থাকে। সামান্য রক্তইতো খাবে। খাক। খেয়ে শান্ত হোক। মশারা শান্ত হয় না। রক্ত খাবার পর তাদের নাচ গানের উৎসাহ আরও বাড়ে। তারা প্রবল উৎসাহে কানের কাছে উৎসব শুরু করে। ফরহাদ তখন চাদরে মুখ ঢেকে ঘুমিয়ে পড়ার চেষ্টা করে। আসমানী নিশ্চয়ই এ রকম কিছু করবে না। সে বলবে, এই এত মশা ঢুকল কি করে। বাতি জ্বালাওতো মশা মারতে হবে।

    সে হাই তুলতে তুলতে বলবে, বাতি জ্বালাতে পারব না। ঘুম চটে যাবে।

    মশার কামড় খাব না-কি?

    চাদরে মুখ ঢেকে শুয়ে থাক।

    গরমের মধ্যে চাদরে মুখ ঢেকে শুয়ে থাকব কি? প্লীজ বাতিটা জ্বালাওতো। তোমার মত অলস মানুষ আমি দেখিনি।

    তুমিতো আর অলস না। তুমি বাতি জ্বালাও।

    আমি কি তোমার বাড়ি ঘর চিনি নাকি? সুইচটা কোথায়?

    দরজার পাশে।

    দরজাটা কোথায়?

    সুইচের পাশে।

    উফ কেন এত ফাজলামী করছ?

    এই পর্যায়ে ফরহাদ বিছানা থেকে নামবে। সুইচ জ্বালাবে। দুজনে মিলে মশা মারবে এবং আসমানী বলবে—তুমি কি দয়া করে কাল একটা নতুন মশারি কিনবে? সে হাসি মুখে বলবে, না। আসমানী রাগী রাগী গলায় বলবে, কেন কিনবে না? টাকা নেই?

    মশারি কেনার টাকা আছে তবে কিনব না।

    কারণটা জানতে পারি?

    জানতে পার। নতুন মশারি কিনলে গভীর রাতে মশার কামড়ে ঘুম ভাঙ্গবে। এবং আমরা রাত জেগে গল্প করতে পারব না। আমারতো আর এ্যালার্ম ঘড়ি নেই যে রাত তিনটা এ্যালার্ম দিয়ে রাখব। ঘুম ভাঙ্গবে এবং আমরা গুটুর গুটুর করে গল্প করব। মশারাই হচ্ছে আমার জীবন্ত এ্যালার্ম ঘড়ি।

    আমি তোমাকে একটা এ্যালার্ম ঘড়ি প্রেজেন্ট করব। তবু দয়া করে একটা মশারি কিনবে।

    আচ্ছা।

    আর নরম দেখে একটা বালিশ কিনবে।

    এই বালিশটা কি শক্ত?

    শক্ততো বটেই মনে হচ্ছে তুলার বদলে সীসার টুকরা ভরা। এই শোন আমার পানির পিপাসা পেয়েছে।

    আমারও পানির পিপাসা পেয়েছে। ভালই হয়েছে পিপাসায় পিপাসায় কাটাকাটি।

    ফাজলামী ধরনের কথা বলবেনাতো যাও দয়া করে আমার জন্যে এক গ্লাস পানি এনে দাও।

    স্বামীকে এইভাবে হুকুম দিচ্ছ। তোমার কিন্তু পাপ হচ্ছে।

    হোক পাপ। পানি নিয়ে এসো। জগ ভর্তি পানি আনবে।

    এত পানি দিয়ে কি হবে?

    হাতে মশার রক্ত লেগে গেছে হাত ধোব।

    ইশ তোমার হাত ভর্তি স্বামীর রক্ত। তুমিতো ডেনজারাস মেয়ে।

    উফ চুপ করবে?

    না চুপ করব না।

    তোমার কোন ব্যাপারটা আমার কাছে অসহ্য লাগে তাকি তুমি জান?

    জানি—এই যে কথার পিঠে কথা বলে তোমাকে রাগাচ্ছি এটাই তোমার কাছে অসহ্য লাগছে।

    জান যখন তখন রাগাচ্ছ কেন?

    কারণটা খুব স্পষ্ট।

    আমার কাছে কারণ মোটেই স্পষ্ট না।

    কারণ হল—আমার সোনার বাংলা গানের দ্বিতীয় লাইন।

    এই ধরনের ছেলেমানুষী কথা কার কাছ থেকে শিখেছ?

    তোমার কাছ থেকে।

    ফরহাদের মাথা দপদপ করছে। মনে হচ্ছে আজ রাতে তার এক ফোটা ঘুম হবে না। সারারাত বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করে কাটাব। অবশ্যি খুব খারাপ কাটবে না। সারারাতই আসমানীর সঙ্গে গল্প করা যাবে।

    যখন আসমানী সত্যি তার সঙ্গে থাকতে আসবে তখন কি এ রকম করে তারা রাত জেগে গল্প করবে? আগে ভাগে বলার কোন উপায়ে নেই। বিয়ের পর হয়ত দেখা যাবে আসমানী খুবই ঘুম কাতুরে। নটা বাজতেই শুয়ে পড়ছে ঘুম ভাঙ্গছে ভোরবেলায়। সারারাত সে ঘুমুচ্ছে কাঠের টুকরার মত।

    পানির পিপাসা হচ্ছে। ফরহাদ সাবধানে বিছানা থেকে নামলনান্টু ভাইয়ের ঘুম যেন না ভাঙ্গে। টেবিলের উপর পিরিচে ঢাকা পানির জগ। উল্টো করে রাখা পানির গ্লাস। নান্টু ভাইয়ের সব কিছুই খুব গোছানো। পাশে হরলিক্সের কৌটা ভর্তি বিসকিটও আছে। রাতে খিদে লাগলে খাবার জন্যে। এ ধরনের ব্যবস্থা তাকেও করতে হবে। রাতে পানি খাবার জন্যে জগ কিনতে হবে। আসমানীর মনে হয় ঠাণ্ডা পানি খাবার একটা ব্যাপার আছে। রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে সে সব সময় বলবে—ভাই ফ্রীজের পানি আছে না? ফ্রীজের ঠাণ্ডা পানি দিন।

    ছোট্ট একটা ফ্রীজ কিনতে পারলে ভাল হত। লাল টুকটুক ছোট্ট একটা ফ্রীজ। তাদের বড় সাহেবের খাস কামরায় আছে।

    ফরহাদ খুব সাবধানে দরজা খুলে বাইরে এসে দাঁড়াল। আশ্চর্য বৃষ্টি হচ্ছে। সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখতে লাগল। টিনের ছাদ হলে ভাল হত বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ শোনা যেত। আসমানী খুব বৃষ্টি পছন্দ করে প্রায়ই তার চিঠিতে থাকবে—এই শোন কাল রাত সাড়ে তিনটার দিকে অনেকক্ষণ ঝমঝম বৃষ্টি হয়েছে। ইংরেজী টাইপ বৃষ্টি। এখন বল দেখি ইংরেজী টাইপ বৃষ্টি কাকে বলে? বলতে পারলে না। জানি পারবে না। ইংরেজী টাইপ বৃষ্টি মানে Cats and dogs বৃষ্টি। আচ্ছা ঝমঝম বৃষ্টিকে Cats and dogs বৃষ্টি বলে কেন? কুকুর এবং বেড়ালরা এ জাতীয় বৃষ্টিতে ভিজে ন্যাতা ন্যাতা হয়ে যায় এই জন্যে? খুব ভাল ইংরেজী জানে এমন কাউকে পেলে জিজ্ঞেস করতাম—স্যার ঝমঝম বৃষ্টিকে Cats and dogs . বৃষ্টি বলে কেন? তোমার মাথায় এটা দিয়ে দিলাম। কাউকে পেলে জিজ্ঞেস করে জেনে আমাকে জানিও। বৃষ্টির সময় আমার সবচে বেশী যে কাজটা করতে ইচ্ছা করে তা হল টেলিফোনে কথা বলতে ইচ্ছা করে। তোমার বাসায় টেলিফোন থাকলে আমি অবশ্যই টেলিফোন করে তোমার ঘুম ভাঙ্গাতাম। ইশ তোমার টেলিফোন নেই কেন? টেলিফোনে তোমার গলা খুব সুন্দর শোনায় তাকি তুমি জান? কী তোমাকে বলে নি? আমি বললাম। তোমার গলার স্বরে বৃষ্টি আসবে, বৃষ্টি আসবে এ রকম একটা ভাব আছে। কি বাবু সাহেব, আপনার কি মনে হচ্ছে আমি পাগলী টাইপ কথা বলছি? একটা পাগল মেয়ে নিয়ে তুমি যে কি বিপদে পড়বে—আমি দিব্যচোখে তোমার বিপদ দেখতে পাচ্ছি। দশ নম্বর মহা বিপদ সংকেত। না দশের চেয়েও বেশী—১০০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত।

    ফরহাদের চায়ের পিপাসা পেয়ে গেল। নান্টু ভাইকে না জাগিয়ে চুপিচুপি এককাপ চা বানাতে পারলে ভাল হত। চায়ের কাপ হাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখতে দেখতে আসমানীর সঙ্গে কথা বলা। আচ্ছা এ রকম কথা কি সব ছেলেরাই বলে না সে একা বলে? মনে হয় তার মত করে বলে না। কারণ তার কথায় শুধু ভালবাসাবাসি থাকে না। অনেক জরুরী ব্যাপারও থাকে। এই মুহূর্তে সে আসমানীর সঙ্গে যে সব কথা বলবে সবই খুব জরুরী কথা। তবে শুরুটা হবে খুব নাটকীয়ভাবে।

    একি তুমি আমাকে ফেলে একা একা চা খাচ্ছ। আবার মজা করে বৃষ্টিও দেখছ?

    তুমি ঘুমুচ্ছিলে তাই জাগাই নি।

    আমি ভয়ংকর ভয়ংকর ভয়ংকর রাগ করেছি।

    একটু দাঁড়াও আমি তোমার জন্যে চা বানিয়ে নিয়ে আসছি।

    তোমাকে কিছু করতে হবে না। আমি চলে যাচ্ছি।

    কোথায় যাচ্ছ?

    যেখানেই যাই তোমার কি?

    আসমানী চলে গেছে। ফরহাদ আর কিছুতেই তাকে আনতে পারছে না। পুরো ব্যাপারটাই তার কল্পনা, কিন্তু এই কল্পনায় তার হাত নেই। সে নিজের ইচ্ছায় কিছু করতে পারে না। খুবই বিস্ময়কর একটা ব্যাপার। ফরহাদ হঠাৎ লক্ষ্য করল সে এমনভাবে হাত উঁচু করে আছে যেন তার হাতে সত্যি সত্যি একটা চায়ের কাপ। সে অদৃশ্য চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে চা খাচ্ছে। আচ্ছা তার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে নাতো?

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleছায়াবীথি – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article চাঁদের আলোয় কয়েকজন যুবক – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }