Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    চৈত্রের দ্বিতীয় দিবস – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প238 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৫. নান্টু ভাই-এর কথা

    নান্টু ভাই-এর কথা অনুযায়ী আজ অফিসে চূড়ান্ত রকমের ঝামেলা হবার কথা। চাকরী নেই পাঁচজন তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে অফিসের সামনে বসে থাকবে। তারা সারাক্ষণ কঁাও মাও করবে। পত্রিকার ফটোগ্রাফররা আসরে। মজা দেখতে জড় হবে পাবলিক। অফিসের সামনের রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম শুরু হবে। ঝামেলা আরো জোড়দার করার জন্যে নির্দোষ ধরনের কয়েকটা পটকাও ফুটানো হবে। পুলিশ চলে আসবে। এইসব কর্মকান্ড শুরু হবার কথা সকাল দশটা থেকে কারণ বড় সাহেব অফিসে আসেন ঠিক সাড়ে নটায়। এখন বাজছে সাড়ে এগারোটা। আর দশটা দিন অফিসের কাজকর্ম যেমন চলে আজো তাই চলছে। কোন রকম ঝামেলা নেই।

    ফরহাদ নিশ্চিত হবার জন্যে আবারো ঘড়ি দেখল—এগারোটা বত্রিশ। তাহলে কি ঝামেলা তৈরীর সময় পিছিয়ে দেয়া হয়েছে? পাঁচজনের যে কোন একজনকে জিজ্ঞেস করলে জানা যেত। কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। দুজন দারোয়ানের একজন টুলে বসে আছে। অন্যজন হাত দিয়ে আড়াল করে বিড়ি টানছে। তাদের মধ্যে কোন উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠা নেই। বড় সাহেব যে অফিসে আছেন তা তার গাড়ি দেখে বোঝা যাচ্ছে। গাড়ির ড্রাইভারও নিশ্চিন্ত মনে পান খাচ্ছে। ঘটনা যা ঘটার ঘটে গিয়ে এখন কি অল কোয়েয়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট হয়ে গেছে কি-না তাও বোঝা যাচ্ছে না। হয়ত সে রকমই কিছু হয়েছে। ফরহাদের আসার কথা ছিল সাড়ে নটায়। সে দুঘন্টা দেরী করে ফেলেছে। দাদাজানের হঠাৎ করে শরীর খারাপ করে ফেলল। ডাক্তার আনতে হল। ডাক্তার বললেন, অক্সিজেন দিতে হবে। অক্সিজেন হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও দেয়ানো যাবে আবার প্রাইভেট ব্যবস্থাও করা যাবে। প্রাইভেট ব্যবস্থায় ঘরে এসে অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে যাবে। একজন এসে অক্সিজেন দেবার নিয়ম কানুন শিখিয়ে দেবে। ডাক্তার সাহেবের কথায় বোঝা গেল। প্রাইভেট ব্যবস্থা অনেক ভাল। সেই অনেক ভাল ব্যবস্থা করতে গিয়ে নয়শ পঞ্চাশ টাকা খরচ হয়ে গেছে। তবে অক্সিজেন কাজে দিয়েছে। মেম্বর আলি শান্তিমত নিঃশ্বাস নিচ্ছেন। ফরহাদ অফিসের দিকে রওনা হবার আগে দেখে এসেছে তিনি ঘুমুচ্ছেন। বোঝা যাচ্ছে ঘুমট আরামের হচ্ছে। চোখে মুখে কষ্টের ছাপ নেই।

    ফরহাদ অফিসে ঢুকল। অশোক বাবুর টেবিলে কিছুক্ষণ বসা যায়। উনি কিছু জানলেও জানতে পারেন। চাকরি নেই সহকর্মীদের দিকে সবাই করুণা এবং মমতার চোখে তাকায়। এই দৃষ্টি ঘৃণার দৃষ্টির চেয়েও খারাপ। ঘৃণার দৃষ্টি ফেরত দেয়া যায়, করুণার দৃষ্টি ফেরত দেয়া যায় না। অফিসে ঢুকেই ফরহাদের মনে হল সবাই তাকে দেখছে। অথচ ব্যাপারটা সে রকম নয়। সবাই কাজ করছে। আলাদাভাবে কেউ যে তাকে দেখছে তা না। তবে সব মানুষের তিন নম্বর একটা চোখ থাকে। সেই চোখ বাইরে থেকে দেখা যায় না। তবে সেই চোখ যদি কারো দিকে তাকিয়ে থাকে তা পরিষ্কার বোঝা যায়। ফরহাদ বুঝতে পারছে সবার তিন নম্বর চোখ তার দিকে।

    সেই চোখে করুণা এবং মমতা ছাড়াও আরো একটা কিছু আছে। সেই কিছুটা বোঝা কি যাচ্ছে না। অশোক বাবু বললেন—ফরহাদ সাহেব কেমন আছেন? বসুন বসুন।

    ফরহাদ বসল। অশোক বাবু বেল টিপলেন। তাঁর বেল টেপায় মোর্স কোড জাতীয় সংকেত থাকে। তাঁর বেয়ারা বেলের শব্দ শুনে বুঝতে পারে—বাবু কি চাচ্ছেন। অশোক বাবুকে মুখে কিছু চাইতে হয় না। চা চলে আসে, পানি চলে আসে, কাচা সুপারি দেয়া জর্দা ছাড়া পান চলে আসে। বেয়ারা এক কাপ চা এনে ফরহাদের সামনে রাখল। অশোক বাবু আন্তরিক গলায় বললেন, খান চা খান। সিগারেট খাবেন? খান চায়ের সঙ্গে একটা সিগারেটও খান। আমি নিজে সিগারেট ছেড়ে দিয়েছি এই জন্যেই বোধ হয় অন্য কেউ সিগারেট খাচ্ছে এই দৃশ্য দেখতে ভাল লাগে।

    ফরহাদ সিগারেট নিল। অশোক বাবু সিগারেট ধরিয়ে দিলেন। ফরহাদ বলল, নান্টু ভাই কি এসেছিলেন?

    অশোক বাবু বললেন—সকাল নটার দিকে এসেছিলেন। ঘন্টাখানিক ছিলেন। চা পান খেয়ে চলে গেলেন। আমি বলেছিলাম বড় সাহেবের সঙ্গে দেখা করে যেতে। বোধ হয় করেছেন। যাবার সময় আমার সঙ্গে দেখা হয় নি।

    অশোক বাবু নিজেও একটা সিগারেট ধরালেন। লজ্জিত মুখে বললেন আমার প্রধান সমস্যা হচ্ছে কাউকে খেতে দেখলেই সিগারেট খেতে ইচ্ছা করে। নিজেও একটা ধরিয়ে ফেলি। হিসাব করে দেখেছি এতেও প্রতি দিন সাত আটটা সিগারেট হয়ে যাও।

    আপনার সামনে সিগারেট খাওয়াটা ঠিক হয় নি।

    খুব ঠিক হয়েছে। আরাম করে খানতো দেখি। আপনাকে একটা সত্যি কথা বলি আপনার এবং নান্টু সাহেবের জন্যে মনটা খুবই খারাপ হয়েছে।

    শুধু আমাদের দুজনের জন্যে মন খারাপ হবে কেন? আমরা পাঁচজন না? বাকি তিনজন কি দোষ করল?

    অশোক বাবু বিস্মিত হয়ে বললেন–আপনি কিছু জানেন না? তিনজনকে অবজর্ব করে নেয়া হয়েছে। সিনিয়ারিটি দেখে নেয়া হয়েছে। তবে নান্টু সাহেব সিনিয়ার হয়েও কেন জানি বাদ পরেছেন। আমি এই জন্যেই তাকে বলেছিলাম বড় সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে।

    তিনজনের চাকরি হয়ে গেছে?

    হয়েছে। কাউকে কিছু বলতে হয় নি। তার আগেই হয়েছে। আর হবে নাইবা কেন বলেন—কোম্পানীর অবস্থাতো ভাল। আমরা মিডল ইস্ট থেকে ওরস্যালাইন এবং রেগুলার সেলাইনের বিরাট একটা অর্ডার পেয়েছি। কোম্পানী কসমেটিকস প্রডাকশানে যাবে-টুথপেস্ট, হালাল সাবান। হালাল সাবানটা হঠাৎ ক্লিক করেছে। সবাই ঝুঁকেছে হালাল সাবানের দিকে।

    ফরহাদ কিছু বলছে না। বলার মত কিছু পাচ্ছেও না। সে কি বলবে? হালাল সাবানের প্রসপেটস নিয়ে আলাপ করবে?

    ফরহাদ সাহেব!

    জ্বি।

    বড় সাহেবের সঙ্গে দেখা করুন। চেষ্টা করতে তো ক্ষতি নেই।

    জ্বি না কোন ক্ষতি নেই।

    গুড লাক।

    গুড লাক মানে উঠে পরুন। চা খেয়েছেন, সিগারেট খেয়েছেন। অনেক সামাজিক সৌজন্য দেখানো হয়েছে—আর কত?

     

    ওরিয়ন ইন্টারন্যাশনালের বড় সাহেবের খাস খামরায় কম্পিউটার বসানো হচ্ছে। নিতান্তই অল্পবয়েসী দুটি ছেলে অত্যন্ত ব্যস্ত ভঙ্গিতে নানান কানেকশন দিচ্ছে। বোতাম টেপাটেপি করছে। সুন্দর কোন খেলনার দিকে বাচ্চারা যেমন আগ্রহের সঙ্গে তাকিয়ে থাকে এমডি জামিলুর রহমান সাহেব সেই ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছেন। যেন খেলনায় ব্যাটারী ভরা হচ্ছে। ব্যাটারী ভরার কাজটা শেষ হওয়া মাত্র তিনি বোম টিপবেন–খেলনা উদ্ভট মজাদার কিছু করবে। বড় সাহেবকে ব্যস্ত বলা যায়। এই ব্যস্ততার মধ্যে তিনি যে চাকুরিচ্যুত একজন কর্মচারীকে ঘরে ঢোকার অনুমতি দিয়েছেন এটা একটা বিস্ময়কর ঘটনা। ফরহাদ বড় সাহেবের ঘরে ঢুকেছে এবং বড় সাহেব দ্বিতীয় বিস্ময়কর ঘটনা ঘটিয়েছেন। তিনি হাসিমুখে ফরহাদকে বলেছেন, দাঁড়িয়ে আছ কেন বোস। তিনি কখনো তার কোন কর্মচারীকে বসতে বলেন না। যাদের দাঁড়িয়ে থাকার কথা তারা দাঁড়িয়ে থাকে। যাদের বড় সাহেবের সামনে চেয়ারে বসার যোগ্যতা আছে তারা নিজেরাই চেয়ার টেনে বসে।

    ফরহাদ বসেছে। কিন্তু কিছু বলতে পারছে না, কারণ বড় সাহেব আবারো গভীর আগ্রহে কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে আছেন। তাঁর ঘর যথারীতি ঠাণ্ডা। ফরহাদের শরীর বরফের মত হয়ে যাচ্ছে।

    বড় সাহেব তার রকিং চেয়ার ঘুরিয়ে ফরহাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, এখন বল কি ব্যাপার?

    ফরহাদের মনে হল বড় সাহেব তাকে চিনতে পারছেন না। রংপুর থেকে ঢাকা আসার পথে বড় সাহেব তাকে নাম ধরে ডেকে চমকে দিয়েছিলেন। সেই নাম এখন সম্ভবত তার মনে নেই। ফরহাদ বলল, স্যার আপনাকে একটা থ্যাংকস দিতে এসেছি।

    জামিলুর রহমানের চোখ সামান্য সরু হয়ে এল। তিনি বললেন, কি জন্যে বলতো?

    ফরহাদ বলল, রংপুর থেকে ঢাকা ফেরার পথে আপনি আমাকে এক হাড়ি দৈ দিয়েছিলেন। বগুড়ার দৈ। দৈটা খুবই ভাল ছিল।

    ও আচ্ছা আচ্ছা। আমি নিজে অবশ্যি টেস্ট করে দেখিনি। ডায়াবেটিসতো। মিষ্টি খেতে পারি না। তুমি শুধু দৈ-এর জন্যে থ্যাংকস দিতে এসেছ?

    জ্বি স্যার।

    আচ্ছা ঠিক আছে। তোমার নাম যেন কি?

    স্যার আমার নাম ফরহাদ।

    ফরহাদ উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, স্যার যাই।

    বড় সাহেব হাসি মুখে মাথা নেড়ে চলে যাবার অনুমতি দিলেন। যে সব কথা বড় সাহেবকে বলবে বলে মনে মনে রিহার্সেল দিয়ে রেখেছিল সে সব বলা হল না তবে তার জন্যে খারাপও লাগছে না। হাত কচলে কারো কাছে কিছু চাওয়া মানসিক কষ্টের ব্যাপার।

    বড় সাহেবের ঘরের ঠিক সামনেই সিদ্দিক সাহেব বসেন। হেড ক্যাশিয়ার। সিদ্দিক সাহেব হাতের ইশারায় ফরহাদকে ডাকলেন। ওরিয়ন ইন্টারন্যাশনালের হেড ক্যাশিয়ার সিদ্দিক সাহেবের অফিসের সবেই আড়ালে ডাকে মরা সিদ্দিক। দ্রলোকের কথাবার্তা, আচার আচরণ সবই মৃত মানুষের মত। মানুষটা চা খাচ্ছে, কাজ করছে, কথা বলছে কিন্তু প্রাণ বলে কোন ব্যাপার তাঁর মধ্যে নেই। আবেগ শূন্য একজন মানুষ। মাঝখানে ভদ্রলোক একবার সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন। ফেরার পর সবাই বলাবলি করতে লাগল—সিদ্দিক সাহেব সিঙ্গাপুরে তার চোখ দুটা ফেলে দুটা পাথরের চোখ বসিয়ে নিয়েছেন। মানুষের চোখে তাঁর না-কি কাজকর্মে অসুবিধা হচ্ছিল।

    ফরহাদ তার সামনে দাঁড়াতেই সিদ্দিক সাহেব একটা কাগজ বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, এখানে সই করুন। দুমাসের সেলারী। খামে টাকা আছে। চেক না দিয়ে ক্যাশ দিয়ে দিলাম। গুণে নিন। সঙ্গে রেভিন স্ট্যাম্প আছে?

    জ্বি না।

    দুটা টাকা দিন রেভিন স্ট্যাম্প আনিয়ে দিচ্ছি। আপনার একটা রেজিস্টার্ড চিঠি আছে। সুইজারল্যান্ড থেকে এসেছে। চিঠিটা নিয়ে যান। চা খাবেন?

    জ্বি না।

    দাঁড়িয়ে আছেন কেন বসুন।

    ফরহাদ বসল। মরা সিদ্দিক অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পরেছেন ফরহাদের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছেন না। রেভিন স্ট্যাম্প নিয়ে আমার পর হয়তবা ফিরে তাকাবেন। ফরহাদ সুইজারল্যান্ডের চিঠি পড়ছে।

    রহমত উল্লাহ সাহেবের চিঠি। ভদ্রলোক দুমাস তিন মাস পর একটা চিঠি পাঠান। সেই চিঠিতে সব সময় তার এবং তার পরিবারের কিছু ছবি থাকে। চিঠির শেষে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে ফরহাদকে ধন্যবাদ দেন। ঢাকায় তার জায়গাটা দেখে শুনে রাখার জন্যে। পুনশ্চ দিয়ে আরেকটি বাক্য থাকে দেশের বাইরে এসে ভাগ্য পরীক্ষা করে দেখতে চাইলে জানিও, সাধ্যমত করব।

    আজকের চিঠিতেও পুনশ্চ দিয়ে সেই বাক্যটি আছে কি-না ফরহাদ দেখে নিল। হ্যাঁ আছে। পারিবারিক ছবিও আছে। কী করার পোষাকে স্বামী-স্ত্রী। স্কী করছেন না—দুজনই মগ ভর্তি কফি খাচ্ছেন। বিদেশীনি মহিলা মাত্রই রূপবতী মহিলা এমন ধারণা প্রচলিত থাকলেও রহমত উল্লাহ সাহেবের স্ত্রীর চেহারা বেঁটে দৈত্যদের মত। এই মহিলাকে দেখলেই মনে হয় তিনি কোন আখড়া থেকে কুন্তী শেষ করে ফিরেছেন। প্রতিপক্ষ সবাইকে পরাজিত করে ফিরেছেন বলে তাঁর মুখ ভর্তি হাসি। সেই হাসিতে সমগ্র পুরুষজাতির প্রতি কুন্তীর আহ্বান আছে। এমন একজন মহিলার প্রেমে পড়ে তাকে বিয়ে করতে সাহস লাগে। রোগা পটকা রহমত উল্লাহ সাহেবের ভীত চোখ মুখ দেখে মনেই হয় না তার সে সাহস আছে।

    ফরহাদ চিঠি পড়ায় মন দিল। রেভিন স্ট্যাম্প আসতে আসতে চিঠিটা পড়ে ফেলতে হবে। চিঠির জবাবও পাঠাতে হবে। জবাব পাঠাতে পঞ্চাশ টাকার মত খরচ। এই খরচটা কাঁটার মত বুকে লাগে। মনে হয় নিতান্তই অপ্রয়োজনে খরচটা করা হচ্ছে।

    ফরহাদ,

    এবার চিঠি পাঠাতে দেরী হল। রুথ এ্যাকসিডেন্ট করে হাসপাতালে। স্কী করতে গিয়ে এই বিপত্তি। হাতের একটা হাড় এবং বুকের পাজরের দুটা হাড় ভেঙ্গেছে। তোমাকে যে ছবিটা পাঠালাম, সেটা একটু মন দিয়ে দেখ। এ্যাকসিডেন্টের ঠিক দশ মিনিট আগে তোলা ছবি। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নামার আগে আগে কফি খাওয়া হচ্ছে। কফি শেষ করার দশ মিনিটের মাথায় ঘটনা ঘটে। রুথের অবস্থা এমন ছিল যে আমি ধরেই নিয়েছিলাম তাকে বাঁচানো সম্ভব না। তবে এই উন্নত দেশে অসম্ভব বলে কোন ব্যাপার নেই। খবর ছড়িয়ে পরার সঙ্গে সঙ্গে হেলিকপ্টার এ্যাম্বুলেন্স তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল। দুঘন্টা সার্জারীর পর ডাক্তাররা তাকে বিপদমুক্ত ঘোষণা করলেন। খুব বড় ধরনের বিপদের হাত থেকে বেঁচেছি। আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া।

    যাই হোক এখন কাজের কথা বলি—ঢাকায় আমার জায়গাটা আমি এক রিয়েল এস্টেট কোম্পানীর কাছে বিক্রি করেছি। তারা জমির দামের একটা অংশ আমাকে ডলারে শোধ করেছে। ঢাকার জমিতে তারা মাল্টি স্টোরিড এ্যাপার্টমেন্ট হাউস বানাবে এবং আমাকে দুটা এ্যাপার্টমেন্ট দেবে। আমার কাছে ডিলটা অত্যন্ত ভাল মনে হয়েছে। রিয়েল এস্টেট কোম্পানী তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করবে। তুমি তাদেরকে সব রকম সাহায্য সহায়তা করবে। তুমিতো জানই ঢাকায় আমার স্বার্থ দেখার লোকজন নেই। কাজটা তোমাকেই করতে হবে।

    তুমি ভাল থেকো। পরিবারের সবাইকে শ্ৰেণীমত সালাম এবং দোয়া দেবে।

    অনেক দিন একটা জায়গায় বাস করছিলে হঠাৎ সেটা ছেড়ে দিতে গিয়ে তোমাদের হয়ত সাময়িক কিছু সমস্যা হবে। তার জন্যে আমি দুঃখিত ও লজ্জিত। বিদেশে বাস করলেও আমার আর্থিক অবস্থা শোচনীয়। তোমরা ভাল থেকো। রুথের জন্যে দোয়া করো, সে এখনো পুরোপুরি সারে নি।

    আরেকটি কথা বলতে ভুলে গেছি। রুথ বেবী এক্সপেট করছিল। দু মাস চলছিল। এতবড় একটা দুর্ঘটনা ঘটে যাবার পরেও বেবীর কোন ক্ষতি হয় নি। এটা আল্লাহর রহমত ছাড়া আর কিছুই না।

    ইতি–

    রহমত উল্লাহ

    পুনশ্চ : দেশের বাইরে এসে ভাগ্য পরীক্ষা করতে চাইলে জানিও সাধ্যমত চেষ্টা করব।

    রেভিন্যু স্ট্যাম্প চলে এসেছে। সই করে ফরহাদ উঠে দাঁড়াল। সিদ্দিক সাহেবকে ধন্যবাদ জাতীয় কিছু বলা দরকার। না বললেও হয় ইনি যন্ত্রমানব। ধন্যবাদের ধার ধারেন না। সিদ্দিক সাহেব টাকা গুণছেন এমন সময় যদি খবর আসে তাঁর ছোট ছেলেটি পানিতে ড়ুবে মারা গেছে। তিনি টাকা গোণা বন্ধ করবেন না, কাজটা শেষ করবেন। শেষ করার পর শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করবেন—কখন মারা গেছে?

    ফরহাদ সাহেব!

    জ্বি।

    বাসায় চলে যাচ্ছেন?

    জ্বি।

    সিদ্দিক সাহেব কাজ বন্ধ করে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন—চলুন আপনাকে একটু এগিয়ে দেই।

    ফরহাদ বিস্মিত হয়ে বলল, কেন?

    শরীরটা ভাল না। বমি বমি আসছে—একটা পান খাব।

    সিদ্দিক সাহেবের এই ব্যাপারটা আছে। তিনি কাউকে দিয়ে কোন কাজ করান না। চা খেতে ইচ্ছা করলে নিজে গিয়ে চা নিয়ে আসেন। পান খেতে ইচ্ছা করলে নিজেই অফিসের সামনের পানের দোকানে পান কিনতে যান।

    সিদ্দিক সাহেব দুটা পান কিনলেন। একটা মুখে দিয়ে অন্যটা পকেটে রাখতে রাখতে বললেন–ফরহাদ সাহেব। আপনার খুব খারাপ সময় যাচ্ছে। এই খারাপ সময় সম্পর্কে আমার ধারণা আছে। আমার বড় মেয়ের জন্মের পর পর আমার চাকরি চলে গিয়েছিল। দুবছর আমি বেকার ছিলাম। যে কষ্ট করেছি তার সীমা নাই। পৃথিবীতে নানান ধরনের কষ্ট আছে—মানসিক কষ্ট, প্রিয়জন হারানোর কষ্ট, অসুখ বিসুখের কষ্ট। সবচে বড় কষ্ট হল ক্ষিধের কষ্ট। এই কষ্টও করেছি। একবার ঠিক করেছিলাম বিষ খেয়ে মরে যাব। ঘুমের অষুধ জোগাঢ়ও করেছিলাম। মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে মরতে পারি নাই। ভাই শুনুন আপনি ভরসা হারাবেন না। এই কাগজটা একটু রাখুন।

    সিদ্দিক সাহেব মানিব্যাগ খুলে একটা কাগজ বের করলেন। কাগজে কার যেন ঠিকানা লেখা। ফরহাদ বলল, কি কাগজ?

    সিদ্দিক সাহেব বললেন, দুটা বাচ্চাকে পড়াতে হবে প্রাইভেট টিউটর চায়। আমি আপনার কথা বলে রেখেছি। যাই পাওয়া যায় এখন তাই লাভ।

    ফরহাদ কাগজটা নিল। সিদ্দিক সাহেব পানের পিক ফেলতে ফেলতে বললেন, যে চিঠিটা একটু আগে পড়ছিলেন সেখানেও একটা খারাপ সংবাদ আছে তাই না?

    ফরহাদ কিছু বলল না। সিদ্দিক সাহেব বললেন—আমি লক্ষ্য করেছি চিঠিটা পড়তে পড়তে আপনার মুখ ছাই বর্ণ হয়ে গেছে। আমার নিজের বুকের মধ্যে তখন একটা ধাক্কার মত লেগেছে। সুখ যখন আসে তখন একদিক থেকে আসে না, নানান দিক থেকে আসে। বিপদ যখন আসে তখনও একদিক থেকে আসে না। নানান দিক থেকে আসে। এই ব্যাপারটা আমার চেয়ে ভাল কেউ জানে না। আমি বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়েছি ইনশাল্লাহ আপনিও পাবেন। আমার বড় মেয়েটা ইউনিভার্সিটির পড়া শেষ করেছে। কমনওয়েলথ স্কলারশীপ পেয়েছে পিএইচডি করতে যাচ্ছে কানাডায়। তার জন্মের পর আমার স্ত্রীর বুকে দুধ ছিল না। টিনের দুধ কিনব এই টাকা ছিল না। বাজার থেকে চিড়া কিনে আনতাম—চিড়া কচলে তার পানিটা খাওয়াতাম। মেয়েটা সেই পানি খেতে পারে না। উগলে ফেলে দেয়। তখন আমি স্ত্রীকে বললাম,….. থাক বাদ দেন।

    ফরহাদ তাকিয়ে আছে। সিদ্দিক সাহেব রুমাল বের করে চোখ মুছছেন।

    সিদ্দিক সাহেব ধরা গলায় বললেন, একটা সময় ছিল রোজ কাঁদতাম। আজ অনেক দিন পরে কাঁদলাম। মেয়েটা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে মনটা দুর্বল এই জন্যে কেঁদে ফেলেছি। কিছু মনে করবেন না।

    সিদ্দিক সাহেব উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করলেন। একবারো পেছনে ফিরলেন না।

    ফরহাদ লক্ষ্য করল প্রচন্ড মন খারাপ ভাবটা এখন আর তার নেই। সে বেশ ভাল বোধ করছে। তাকে বাড়িঘর ছেড়ে দিতে হবে। সে কোথায় গিয়ে উঠবে এই চিন্তাটাও এই মুহূর্তে তার মাথায় নেই। শুক্রবারে তার বিয়ে। দুমাসের বেতনের টাকা তার পকেটে। খারাপ কি? তার কোন দুধের শিশু নেই যাকে চিড়ার পানি গুলে খাওয়াতে হবে। তাকে কি সুখী মানুষ বলা যায় না? তার ইচ্ছা করছে আসমানীকে নিয়ে বের হতে। টুকিটাকি কিছু জিনিস কিনবে। সংসারের জিনিস দুজনে মিলে কেনার অনেক আনন্দ। প্রথমে কিনতে হবে একটা মশারি। ধবধবে শাদারঙের নেটের মশারি। পাশে বড় এবং বেশ উঁচু। মশারির ভেতর বসে থাকলে যেন মশারির ছাদ মাথা স্পর্শ না করে। দুজনে চা খাবার জন্যে সুন্দর দুটা কাপ পিরিচ। বিছানার চাদর। ঘরে কোন ড্রেসিং টেবিল নেই। ড্রেসিং টেবিল কিনতে পারলে ভাল হত। সম্ভব হবে না। ভাল বড় আয়না কিনে দেয়ালে ঝুলিয়ে দিতে হবে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখা যায় এমন বড় আয়না। কত দাম পড়বে কে জানে। আসল জিনিশের কথাই মনেছিল না—বালিশ। নরম বালিশ কিনতে হবে। ফ্লাক্স কিনতে হবে। ফ্লাক্স ভর্তি থাকবে গরম পানি। টি ব্যাগ, চায়ের, দুধ, চিনি থাকবে। গভীর রাতে চা খেতে ইচ্ছা করলে গরম পানি দিয়ে চা বানানো। একটা টিভি কিনতে পারলে খুব ভাল হবে। ঢাকা শহরে তাদের বাড়িটি সম্ভবত একমাত্র বাড়ি যেখানে টিভি নেই। এক সময় টিভি ছিল। ভোল্টেজ ফ্লাকচুয়েশনের কি ঝামেলায় পিকচার টিউব নষ্ট হয়ে যাবার পর আর সারানো হয় নি। টিভিটা সারাতে দিলে হয়।

    টেলিফোনে আসমানীর সঙ্গে কথা বলে নিতে হবে। তার শরীরটা কেমন কে জানে। শরীর খারাপ থাকলে বের হতে পারবে না। একশ টাকার নতুন একটা ফোন কার্ড কেনা হয়েছে। ফোন কার্ডের কিছুই খরচ হয় নি। পুরো কার্ডটা খরচ করলে কেমন হয়? তাহলে বলা যাবে একশ টাকায় কথা বলা হল।

    আসমানী বলল, কে বলছেন?

    ফরহাদ বলল, জমিন বলছি।

    আসমানী হাসতে হাসতে বলল, জমিন বলছ মানে?

    তুমি আসমান হলে আমি জমিন। বাংলা সিনেমা আর কি? তুমি বৃষ্টি, আমি মেঘ। তুমি জল আমি স্থল। এই শরীর কেমন?

    শরীর কেমন মানে! তোমার কি ধারণা আমি চীর-রোগী। খবর্দার আর কখনো টেলিফোন করে শরীর কেমন জিজ্ঞেস করবে না।

    আচ্ছা যাও করব না। আমাদের বিয়ের তারিখ কি ঠিক আছে?

    দুদিন পিছিয়েছে। রবিবার। আমরা আমাদের সব আত্মীয় স্বজনদের রবিবারের কথা বলছি। মামা এর মধ্যে তোমার বাবা-মার সঙ্গে কথা বলবেন। মনে হচ্ছে আজ সন্ধ্যাবেলা যাবেন। সন্ধ্যাবেলা তুমি অবশ্যই বাসায় থাকবে।

    হ্যাঁ থাকব।

    এখন কি করছ?

    আসমানী নামের একটা মেয়ের সঙ্গে কথা বলছি। আচ্ছা শোন তুমি কি আজ আমাকে দোকানে নিয়ে যেতে পারবে?

    ওমা কেন পারব না। আমার নিজেরো কিছু কেনাকাটা আছে। এই শোন কথা বাড়িয়ে এক্ষুনী চলে এসো।

    এক্ষুনী চলে আসতে পারব না। তোমাকে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলতে হবে। আমি একশ টাকা দিয়ে একটি ফোন কার্ড কিনেছি। কার্ড শেষ না হওয়া পর্যন্ত কথা বলব।

    আচ্ছা বল আমি টেলিফোন ধরে আছি।

    আসমানী তোমার কোন ধরনের বালিশ পছন্দ। শক্ত না নরম?

    বালিশ আবার শক্ত হয় নাকি? বালিশ মানেই তো নরম।

    বালিশ যে ক্ষেত্র বিশেষে কি রকম শক্ত হয় তা আমাদের বালিশ না দেখলে বুঝবে না। আমাদের বালিশ দিয়ে মাথায় বাড়ি মারলে সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হবার সম্ভাবনা। ভাল কথা তোমার খাটের গদী কি ফোমের?

    হ্যাঁ ফোমের।

    কত ইঞ্চি ফোম?

    মেপে দেখিনি। মাপব?

    অবশ্যই মাপবে, টেলিফোনে কথা শেষ হোক তারপর মাপবে। কারণ আমি একটা ফোমের তোষক কিনব।

    তোমাকে এত খুশি খুশি লাগছে কেন?

    খুশি খুশি লাগছে?।

    হ্যাঁ খুব খুশি খুশি লাগছে। চাকরি ফেরত পেয়েছ তাই না?

    চাকরি ফেরত পাইনি। আমার খুবই দুঃসময়। তাতে কি? আমাকেতো আর দুধের মেয়েকে চিড়ার পানি খাওয়াতে হচ্ছে না।

    তার মানে?

    তার মানে তুমি বুঝবে না।

    আসমানী বলল, আচ্ছা আজ কি বৃহস্পতিবার?

    ফরহাদ বলল, কেন বলতো?

    তোমার আনন্দ দেখে মনে হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। আমি একটা বই-এ পড়েছি একেকজন মানুষের একেকবারে আনন্দ থাকে। যেমন ধর আমি। আমি হচ্ছি সূর্যের কন্যা। আমি আনন্দে থাকি রোববারে। আচ্ছা শোন, তুমি কথা বলে শুধু সময় নষ্ট কর।

    উঁহু আমি আজ একশটাকার কথা বলব। একশ টাকা এখনও শেষ হয় নি।

    কখন শেষ হবে?

    তাও বলতে পারছি না। তবে আর মনে হয় কথা বলতে পারব না।

    কেন?

    আমার পেছনে লম্বা লাইন হয়ে গেছে। লাইনের লোকগুলি বিশ্রীভাবে আমার দিকে তাকাচ্ছে।

    ভাল হয়েছে। অগ্নি দৃষ্টিতে তোমাকে ভস্ম করে দিক। হ্যালো শোন টেলিফোন রাখার আগে খুব জরুরী একটা কথা জিজ্ঞেস করি। কি রঙের শাড়ি পরব বলতো? তোমার পছন্দের কোন রঙের শাড়ি পরতে ইচ্ছা করছে।

    আমাকে কিছু বলতে হবে না। আমি মনে মনে যে রঙটা ভাবব তোমাকে সেই রঙের শাড়ি পরেই আসতে হবে। এই বিষয়ে আমার আধ্যাত্বিক ক্ষমতা আছে। ইএসপি টাইপ ক্ষমতা, পরীক্ষা হয়ে যাক। আমি টেলিফোন রেখেই আমার পছন্দের রঙের কথা এক টুকরো কাগজে লিখে মানিব্যাগে রেখে দেব। তুমি দেখবে যে রঙের শাড়ি পরে বের হয়েছ সেই রঙটার কথাই আমি লিখেছি।

    উফ ফালতু কথা বলবে নাতো। প্লীজ।

    বাজি?

    আচ্ছা যাও বাজি।

    টেলিফোন রেখে দেই?

    দাও। তবে টেলিফোন রাখার আগে দয়া করে বলতো আমার সোনার বাংলা গানটার পরের লাইনটা যেন কি?

    আমি তোমায় ভালবাসি।

    আসমানী তার মার কাছ থেকে নিয়ে ধবধবে শাদা রঙের একটা শিফন শাড়ি পরেছে। শাদা রঙের শাড়ি সে কখনো পরে না। ফরহাদকে শিক্ষা দেয়ার জন্যে এমন শাড়ি পরা। সে নিশ্চয়ই ভাববে না, আজকের দিনে সে শাদা শাড়ি পড়বে।

    আসমানী হাসি হাসি মুখে বলল, দেখি তোমার মানিব্যাগের কাগজ।

    ফরহাদ কাগজ বের করে আসমানীর হাতে দিল। কাগজে লেখা—শাদা। আসমানী খুবই অবাক হয়ে ফরহাদের দিকে তাকাচ্ছে। সে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। আসমানীর বিষ্মিত মুখ দেখে ফরহাদের খুবই মায়া লাগছে। ইচ্ছা করছে সত্যি ব্যাপারটা বলে দিতে। মানিব্যাগে শুধু যে শাদা লেখা কাগজই ছিল তা না, একটা কাগজে লেখা ছিল নীল, একটায় সবুজ, একটায় লাল এবং একটায় কালো। অন্য কাগজগুলি রেখে ফরহাদ শাদা লেখা কাগজটা বের করে দিয়েছে। ছেলেমানুষী ম্যাজিক। পিসি সরকারের ছোটদের ম্যাজিক বই থেকে শেখা। আসমানী এতটা অভিভূত হবে সে ভাবে নি। ফরহাদের খুবই লজ্জা লাগছে। ছছাট্ট এই কৌশলটা করায় সে মনে হচ্ছে নিজের কাছে ছোট হয়ে গেছে।

    ফরহাদ বলল, আসমানী তোমাকে শাদা শাড়ীতে খুবই সুন্দর লাগছে। তোমাকে আজ যত সুন্দর লাগছে তত সুন্দর এর আগে কখনো লাগে নি। শাদা শাড়ি তুমি ঘন ঘন পরবে।

    আসমানী বলল, তোমাকে এই ছাই রঙা শার্ট খুবই কুৎসিত লাগছে। এরকম কুৎসিত শার্ট আর কখনো পরবে না। তোমাকে কেমন লাগছে বলব?

    বল।

    মাছ কাটার আগে মাছের গায়ে ছাই মাখানো হয়। মনে হচ্ছে তোমার গায়ে ছাই মাখানো হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তোমাকে কাটা হবে।

    আসমানী খিল খিল করে হাসছে। তাকে দেখতে আসলেই সুন্দর লাগছে। শাদা শাড়িতে তাকে মেঘ কন্যা বলে মনে হচ্ছে।

    আসমানীর হাতে শাদা লেখা কাগজের টুকরোটা এখনো ধরা। সে এই কাগজ ফেলে দেবে না। কোন এক ফাঁকে চট করে তার হ্যান্ড ব্যাগে লুকিয়ে ফেলবে। মেয়েরা স্মৃতি সংগ্রহ করতে খুব পছন্দ করে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleছায়াবীথি – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article চাঁদের আলোয় কয়েকজন যুবক – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }