ভূতুড়ে টেলিফোন – ১
প্রথম পরিচ্ছেদ
(১)
রাস্তায় নেমে আদিত্য দেখল পুবদিকের আকাশে আবার মেঘ জমছে। একটু আগে, দুপুরবেলায়, বেশ কয়েক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। বউবাজার স্ট্রিটের খানাখন্দগুলো এখনও বৃষ্টির জলে টইটুম্বুর। ফুটপাথ কাদায় কাদা। আদিত্য ঘড়ির দিকে তাকাল। বিকেল সাড়ে চারটে। আপিসের ভিড় এখনও শুরু হয়নি। বিবাদী বাগের মিনিবাস গুমটি প্রায় ফাঁকা। কিছু একটা খেতে হবে। সেই সকালে চা-বিস্কুট খেয়ে বেরিয়েছিল তারপর সারাদিন আর কিছু পেটে পড়েনি। আদিত্য রাস্তা পার হয়ে বিবাদী বাগের দিকে যেতে যাবে এমন সময় কে যেন তার নাম ধরে ডাকল।
বউবাজারের এই অঞ্চলটা আপিস পাড়ার ঠিক গায়ে। একটু এগোলেই রাধাবাজারের ঘড়িপট্টি। এজরা স্ট্রিট। সারি সারি ইলেকট্রিকাল গুডস-এর দোকান। রাস্তায় অবিশ্রাম লোক চলছে। রাত নটা-সাড়ে নটা অব্দি এরকমই চলবে। ভিড়ের মধ্যে আদিত্য পেছন ফিরল। তাদের আপিস বিল্ডিং-এর সিকিউরিটির নতুন ছেলেটা তাকে ডাকছে। কী যেন নাম ওর? বোধহয় শ্যামল।
‘আরে আদিত্যবাবু কতক্ষণ থেকে চ্যাঁচাচ্ছি শুনতে পাচ্ছেন না?’ শ্যামল ভিড় ঠেলে এগোতে এগোতে বলল।
‘কী ব্যাপার, তাড়াতাড়ি বল। সারাদিন খাওয়া হয়নি। ভীষণ খিদে পেয়েছে।’
আদিত্যর ভয় হল বিল্ডিং-এর মালিক গোকুলচাঁদ বুঝি শ্যামলকে দিয়ে আবার ভাড়ার টাকা চেয়ে পাঠিয়েছে। গত তিনমাস আদিত্য আপিস ঘরের ভাড়া দিতে পারেনি। মুখে একরাশ নকল বিরক্তি নিয়ে সে শ্যামলের সামনে দাঁড়াল।
‘আপনাকে একজন বাবু খোঁজাখুঁজি করছেন। ভাবসাব দেখে মনে হল মক্কেল। তাই ভাবলাম দেখি, আপনাকে কাছে-পিঠে খুঁজে পাই কিনা।’
শ্যামলও এই ক’দিনে জেনে গেছে মক্কেল বস্তুটা আদিত্যর জীবনে কী ভীষণ দুর্লভ। আশায়-আশঙ্কায় আদিত্যর বুকটা ধক করে উঠল। ধুর, মক্কেল হয়তো নয়। হয়ত তাদের মেসের চুনীবাবু। চুনীবাবুর কাছ থেকে সে গতমাসে কিছু টাকা ধার করেছিল। এখনও শোধ দেওয়া হয়নি। কিন্তু চুনীবাবু টাকার তাগাদা করতে এখানে আসবেন কেন?
মুখে নির্বিকার ভাব এনে আদিত্য বলল, ‘কোথায় বাবু?’
‘তাকে আপিসের মেন গেটে দাঁড় করিয়ে এসেছি।’
আরও কয়েক পা হেঁটে আপিসের মেন গেটের কাছে এসে আদিত্য দেখল কড়া ইস্ত্রি করা সাদা-বুশশার্ট-সাদা-প্যান্ট পরনে কালো মতো ফিটফাট এক মাঝবয়সি ভদ্রলোক গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন আর অস্থিরভাবে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছেন। এক ঝলক দেখলেই বোঝা যায় ভদ্রলোকচুলে কলপ করেছেন। মুখের চামড়া আর চুলের রঙের মধ্যে সামঞ্জস্য নেই। আদিত্য অনুমান করল, চুলের রঙ কুচকুচে কালো হলেও ভদ্রলোকের বয়েস পঞ্চাশে-র এদিকে হবে না। আরও খানিকটা এগিয়ে ভদ্রলোকের সামনে পৌঁছে সে বলল,
‘আমাকে খুঁজছিলেন? আমার নাম আদিত্য মজুমদার।’
ভদ্রলোক চমকে উঠে আদিত্যর দিকে তাকালেন। মুখে হুলো বেড়ালের সতর্কতা।
‘ও আপনিই আদিত্য মজুমদার? তা, মানে, একটু দরকার ছিল আপনার সঙ্গে।’
‘আসুন আমার সঙ্গে। দোতলায় আমার আপিস। আসুন।’
মেন গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকলেই সারি সারি লেটার বক্স। ওপরে বহুদিনের জমা ঝুল। একপাশ দিয়ে পুরোনো আমলের সিঁড়ি উঠে গেছে। বাড়িটা পাঁচতলা হলেও কোনও লিফট-এর ব্যবস্থা নেই। আদিত্যর ভাগ্য ভাল সে দোতলায় একটা ঘর পেয়েছে। যাও বা এখন কালেভদ্রে দু’একটা মক্কেল আসে, এই পাহাড়ের মত সিঁড়ি ভেঙে পাঁচতলায় উঠতে হলে তাও আসত না। আদিত্য ভদ্রলোককে সঙ্গে নিয়ে সিঁড়ি ভাঙতে শুরু করল। দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়েছে। জায়গায় জায়গায় পানের পিকের লাল লাল ছোপ। দেখলে গা ঘিন ঘিন করে। দোতলায় উঠে ডানদিকে বেঁকল আদিত্য। লম্বা করিডোর। প্রথমে একটা জাল সিডির গুদোম। আদিত্য এখানে আসার পর দু’বার পুলিশ রেড হয়ে গেছে। তারপর একটা ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির আপিস। সর্বদা লরি ড্রাইভারদের ভিড় লেগে থাকে। হট্টগোলে কান পাতা যায় না। সেসব পেরিয়ে করিডোরের একেবারে শেষপ্রান্তে আদিত্যর দরজা। দরজার গায়ে কাঠের নতুন নেমপ্লেট। তাতে ইংরেজিতে লেখা—আদিত্যবর্ণ মজুমদার, প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর।
পকেট থেকে চাবি বার করে দরজা খুলে আদিত্য ভদ্রলোককে বলল, ‘আসুন।’
ঘরটা ছোট, কিন্তু বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। একটা বড় টেবিল, তার একদিকে একটা রিভলভিং চেয়ার, উল্টোদিকে দু’টো গদি-আঁটা আরাম কেদারা। ঘরের একদিকে একটা আলমারি, অন্যদিকে একটা সোফাও আছে। আসবাবগুলো বেশ পুরোনো, কিন্তু একটু দেখলেই বোঝা যায়, রীতিমত দামি। এগুলো আদিত্যর পারিবারিক সম্পত্তি। উত্তরাধিকারসূত্রে, বলতে গেলে, সে ওইটুকুই পেয়েছে। ঘরের একদিকের দেয়ালে একটা জানলা। জানলা দিয়ে বউবাজার স্ট্রিটের চলমান জনস্রোত দেখা যায়। এখানে আসার পরে আদিত্য জানলায় নতুন কাচ লাগিয়ে নিয়েছে। দরজা-জানলা বন্ধ করে দিলে ঘরটা বেশ নিরিবিলি হয়ে যায়।
আদিত্য ভদ্রলোককে বসতে বলে নিজেও বসল।
‘বলুন, কী ব্যাপার।’
‘একটা গোপনীয় ব্যাপারে আপনার সাহায্য চাইতে এসেছি। মানে, ব্যাপারটা খুবই গোপনীয়।’ ভদ্রলোক পকেট থেকে রুমাল বার করে কপালের ঘাম মুছলেন।
‘বুঝলাম। তা আমার কথা জানলেন কী করে? খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেখেছেন?’
‘না, না। উকিলবাবু, মানে আপনার বন্ধু সুনন্দ মিত্র, আপনার কাছে আসতে বললেন। আমি আমার সমস্যা নিয়ে ওঁর কাছে গিয়েছিলাম। উনি বললেন, উনি কিছু করতে পারবেন না, আপনার ঠিকানা দিয়ে বললেন, আমার বন্ধুর কাছে যান, ও আপনাকে সাহায্য করতে পারবে। আপনার, মানে ফিসটা কত যদি একটু বলেন।’
‘টাকা-পয়সার কথা পরে হবে। আপনি আগে আপনার সমস্যাটা বলুন।’
‘বলছি। তার আগে একটা কথা। শুনলেই বুঝতে পারবেন, আমার সমস্যাটা গোপনীয়। এটা গোপনীয় রাখাটা খুব দরকার। আমার কথাগুলো পাঁচকান হলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।’
‘আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, কেউ কিচ্ছু জানতে পারবে না। মক্কেলদের গোপনীয়তা রক্ষা না করতে পারলে আমার ব্যবসা দু’দিনে লাটে উঠে যাবে। আপনার সমস্যাটা এবার বলুন। আচ্ছা দাঁড়ান, আগে একটু চা বলে আসি।’
ভদ্রলোককে বসিয়ে রেখে আদিত্য নীচে এসে দেখল শ্যামল দরজার কাছে টুলের ওপর বসে বসে ঝিমোচ্ছে।
‘শ্যামল, একটু চা আনতে হবে ভাই। একটু তাড়াতাড়ি, মক্কেল বসে আছে। আর দেখো, কাপটা যেন পরিষ্কার হয়। চারটে বিস্কুটও এনো। এই নাও। ফেরতটা তুমি রেখে দিও।’
আদিত্য একটা কুড়ি টাকার নোট এগিয়ে দিল।
‘আমার ভালো নাম জিতেন্দ্রনাথ দত্ত। তবে মন্টু দত্ত বলেই লোকে আমাকে বেশি চেনে। মেডিকেল কলেজের উল্টোদিকে আরপুলি লেনে আমার একটা ছোটখাট প্রেস আছে। ওখানে গিয়ে মন্টুবাবুর প্রেস বললে যে কেউ দেখিয়ে দেবে। আমার প্রথম স্ত্রী চিররুগ্না ছিলেন। দশ বছরেরও বেশি হয়ে গেল মারা গিয়েছেন। আমার মেয়ে তখনও ইশকুলে পড়ে। ওই মেয়ে ছাড়া আমার আর কোনও সন্তান নেই। আমি সাবধানী মানুষ মশাই, মেয়ে মাধ্যমিক পাশ করতে না করতে বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। ২০০৯-এর নভেম্বর, হ্যাঁ, তাও প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর হতে চলল। জামাই ভিলাইতে কাজ করে। বয়েসে আমার মেয়ের থেকে প্রায় পনেরো বছরের বড়, কিন্তু স্বভাবচরিত্র ভাল। তবে কলকাতায় আসার সুযোগও নেই, ইচ্ছেও নেই। বলতে কি, বিয়ের পরে মেয়ে একেবারে পর হয়ে গেছে। দূরে থাকে, খুব একটা খোঁজ-খবরও নেয় না। নাতিটাকেও দু’একবারের বেশি চোখে দেখিনি। বুঝতেই পারছেন, মেয়ের বিয়ের পর খুবই একা হয়ে পড়েছিলুম। কিছুই ভাল লাগে না, কাজে-কম্মেও মন বসে না। শেষে বছর তিনেক আগে আবার একটা বিয়ে করেছি। আমার দ্বিতীয় স্ত্রী বকুল আমাদের পাড়ারই মেয়ে। বাপ-মা নেই। ভাইদের গলগ্রহ হয়ে ছিল। কিছুতেই বিয়ে হচ্ছিল না, নইলে দোজবরকে কে বিয়ে করবে বলুন? যাইহোক, আমার সঙ্গে বিয়ে হয়ে বকুলও বাঁচল, মানে তার ভবিষ্যতের একটা উপায় হল, আর আমিও একটা সঙ্গী পেলুম। মোট কথা, বিয়ের পর বছর দুয়েক বেশ ভালোই কাটল। আর তারপরেই শুরু হল ঝামেলা।’
‘একটু দাঁড়ান। আপনার এখন বয়েস কত চলছে?’
মন্টুবাবু একটু থতমত খেলেন। ‘তিপ্পান্ন চলছে, সামনের নভেম্বর মাসে তিপ্পান্ন কমপ্লিট করে চুয়ান্নতে পড়ব।’
‘আর আপনার দ্বিতীয় স্ত্রীর বয়েস?’ আদিত্য একটা ডায়রিতে নোট নিচ্ছিল।
‘মেয়েদের বয়েস তো মশাই বোঝা মুস্কিল। জিজ্ঞেস করলেও সত্যি কথা বলে না। তবে আমার মনে হয় বকুলের বয়েস সাঁইত্রিশ-আটত্রিশের কম হবে না। অনেকদিন বিয়ের জন্য বসে ছিল।’
‘আপনাদের বিয়ে কবে হয়েছে?’
‘২০১১ সালে, নভেম্বর মাসে।’
‘হুঁ, তারপর কী হল বলে যান।’
শ্যামল দরজায় টোকা দিয়ে ঘরে ঢুকল। হাতে চায়ের কেটলি, দুটো খালি কাপ, খবর কাগজে মোড়া চারটে থিন-এরারুট বিস্কুট। চা কাপে ঢেলে কেটলি নিয়ে শ্যামল চলে গেল।
‘আসুন, চা খান।’
‘শুধু চা। বিস্কুট খাব না।’
মন্টুবাবু শব্দ করে চায়ের কাপে চুমুক লাগালেন। আদিত্য চায়ে চুমুক দিয়ে সিগারেট ধরাল। মন্টুবাবুর দিকে সিগারেটের প্যাকেটটা বাড়িয়ে দিতে তিনি মাথা নাড়লেন, তাঁর সিগারেট চলে না। তিন-চার চুমুকে চা শেষ করে মন্টুবাবু আবার বলতে লাগলেন—
‘আমার নিজের সমস্যাটার কথা বলার আগে আমাদের পাড়াটার কথা একটু বলে নিই। আমার বাড়ি শহরের পুবদিকে, গোবরা কবরস্থান অঞ্চলে। চিত্তরঞ্জন হাসপাতালের পেছন দিয়ে একটা রাস্তা এঁকেবেঁকে আমাদের ওইদিকটায় গিয়ে পড়েছে। রাস্তাটা ধরে চলতে থাকলে দুবার রেল লাইন পেরোতে হয়। প্রথমটা পার্ক সার্কাস-শেয়ালদার মেন রেললাইন। ওটার ওপর দিয়ে ঘন ঘন ট্রেন যায়। লেবেল ক্রসিং-এ ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এর পরে আর একটা রেল লাইন আছে যেটা শেয়ালদা স্টেশনের পেছন দিক দিয়ে অর্থাৎ স্টেশনটাকে পশ্চিমে রেখে পার্ক সার্কাস স্টেশন থেকে সোজা স্যার গুরুদাস হল্ট বলে একটা ছোট্ট স্টেশন ছুঁয়ে একেবারে বিধাননগর স্টেশনে গিয়ে ঠেকেছে। আমাদের পাড়াটা এই দ্বিতীয় রেললাইনটার গা ঘেঁষে। এই লাইনটার ওপর দিয়ে খুব বেশি ট্রেন চলে না। কিছু মালগাড়ি যায় আর সারাদিনে মেরে কেটে দু-তিনটে লোকাল ট্রেন। আপনি ওদিকটায় কখনও গেছেন কিনা জানি না, তবে হয়তো শুনে থাকবেন ওই অঞ্চলটা খুব একটা ভাল নয়। নেহাত বাবা ওখানে বাড়ি করেছিলেন বলে ছেড়ে যেতে পারি না। পাড়াটা রেল লাইনের ধারে বলে ওয়াগন ব্রেকার, সমাজবিরোধীদের ঝামেলা লেগেই আছে। প্রতি মাসেই একটা-দুটো লাস পড়ে। প্রায় রোজই রাত্তিরের দিকে বোমা, গুলিগোলার শব্দ শোনা যায়। মাঝে মাঝে পাড়ায় পুলিশ আসে, হম্বিতম্বি করে, দু-একজনকে ধরেও নিয়ে যায়, তারপর আবার যে কে সেই। আমার বাড়ি এবং শ্বশুরবাড়ি, মানে বকুলের বাপের বাড়ি, দুটোই রেললাইনের একেবারে গা ঘেঁষে। বকুলের বাবা-মা বহুদিন গত হয়েছেন, নিকটজন বলতে দুই দাদা। বড়দা রজনী বসাক অতিশয় সজ্জন, পিএনটি-তে চাকরি করত, বদখেয়াল কিছু নেই, পান-বিড়ি পর্যন্ত খায় না, নেশা বলতে শুধু দেশ-বিদেশ বেড়ানো। আপিস থেকে প্রিম্যাচিওর রিটায়ারমেন্ট নিয়ে একটা ট্র্যাভেল এজেন্সি খুলেছে। বয়েসে রজনী আমার থেকে কয়েক বছরের ছোট। তার সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের পরিচয়। তার কাছ থেকেই বকুলকে বিয়ে করার ব্যাপারে প্রস্তাবটা এসেছিল। তো সে যাই হোক, রজনীর ছোট ভাই দেবীটা কিন্তু এক নম্বরের বদমাশ। ক্লাস ফোর ফাইভের পর আর ইশকুলমুখো হল না। কুসঙ্গে পড়ে মদ-গাঁজা ধরল, তারপর একটু বয়েস বাড়তে স্মাগলারদের দলে ভিড়ল। মানে সেইরকমই শুনতে পাই আর কি। তাকে পুলিশ দু’চারবার ধরে নিয়ে গেছে, তারপর দলের লোকেরা টাকা-পয়সা দিয়ে ছাড়িয়ে এনেছে। শেষবার সে কী কুকর্ম করেছিল জানি না, দলের লোকেরা তাকে আর ছাড়াতে পারল না। প্রায় দু-বছরের জেল হয়ে গেল। তার সঙ্গে তার স্যাঙাত এবং সব অপকর্মের গুরুমশাই সুশান্ত হালদারেরও জেল হল। এই সুশান্তটাই দেবীকে খারাপ পথে নিয়ে এসেছিল। তাছাড়া আমার স্ত্রী বকুলের ওপরেও সুশান্তর কুনজর ছিল।’
বলতে বলতে মন্টুবাবু মাথা নিচু করলেন। আদিত্য বুঝতে পারল অচেনা মানুষের কাছে পারিবারিক কলঙ্কের কথা বলতে ভদ্রলোকের মোটেই ভাল লাগছে না। আস্তে আস্তে এই মন্টুবাবু লোকটাকে আদিত্যর ভাল লেগে যাচ্ছিল। এমনিতে কলপ করা লোক সে মোটেই পছন্দ করে না। কিন্তু মন্টুবাবুর বাইরেটা কলপ করা হলেও ভেতরটা মনে হয় খাঁটি। সে মন্টুবাবুকে কিছুটা তৈরি হবার সময় দিল। তারপর নিচু গলায় বলল,
‘শুনুন, আমার কাছে কিছু লুকোবেন না। আমার কাছে কথা লুকোলে আপনারই কাজ পেতে অসুবিধে হবে।’
‘না, না। আপনার কাছে কিছু লুকোব না। আপনাকে তো সব কথাই বলতে এসেছি। এক গেলাস জল হবে?’
আদিত্য ডায়েরি বন্ধ করে জানলার কাছে কুঁজো থেকে এক গ্লাস জল এনে ভদ্রলোকের সামনে রাখতে না রাখতেই ভদ্রলোক ঢকঢক করে জলটা খেয়ে ফেললেন। বোঝা গেল, যেকোনও পানীয়ই ভদ্রলোক চট করে গিলে ফেলায় বিশ্বাসী, তা সে চা-ই হোক, কি জল। জল খেয়ে, পকেট থেকে রমাল বার করে মুখ মুছে, ভদ্রলোক আবার শুরু করলেন,
‘দেবী আর সুশান্ত জেলে যেতে আমাদের পাড়াটাও যেন কিছুদিনের জন্য হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। এরই কিছুদিন পরে রজনীর কাছ থেকে বকুলকে বিয়ে করার প্রস্তাবটা আসে। দেবী আর সুশান্ত জেলের বাইরে থাকলে কিছুতেই এই বিয়ে হতে দিত না। বছরখানেক আগে জেলের মেয়াদ শেষ করে দেবী আর সুশান্ত বাইরে বেরোল। আগে সুশান্ত, তার মাস তিনেক পরে দেবী। পাড়ায় এসে তারা শুনল বকুলের বিয়ে হয়ে গেছে।’
এদিকে রজনী তার ছোট ভাইকে সাফ সাফ জানিয়ে দিল তার বাড়িতে জেল-ফেরত কয়েদির কোনও জায়গা হবে না। সে ভদ্র সমাজে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাস করে, সরকারি চাকরি করত, এখন সৎ ভাবে ব্যবসা করছে। এই বয়সে সে মান-সম্মান খুইয়ে পরিবার সুদ্ধু পথে বসতে রাজি নয়। বাড়িটা রজনীর নিজের টাকায় করা। তাই সেখানে কে থাকবে আর কে থাকবে না সেটা ঠিক করার পুরো অধিকার তার আছে। দাদার কথা শুনে দেবী খুব একচোট হম্বিতম্বি করল। তারপর বলল, দুএকদিনের মধ্যেই সে ফিরে এসে বদলা নেবে। সে চলে যেতেই রজনী পাড়ার পাঁচজনকে ডেকে তার সমস্যার কথা বলল। সকলেই তার পক্ষে। আমাদের ওদিকটা কলকাতার একটু বাইরে বলে এখনও একটা গ্রাম-গ্রাম ভাব আছে। বিপদে-আপদে পাড়ার লোক বুক দিয়ে করে। সবাই মিলে পরামর্শ করে সেইদিনই আমাদের এম এল এ সাহেবের কাছে যাওয়া হল। আমাদের এম এল এ মানুষটি অতি ভদ্রলোক। তিনি অভয় দিলেন। তাঁর কথায় পার্টির ছেলেরা পরদিন দেবী আর সুশান্তকে রেল লাইনের ধারে দেখতে পেয়ে প্রচণ্ড ধমকাল। তাদের বলা হল, ফের যদি তারা পাড়ায় ঢোকে তাহলে তাদের ছাল ছাড়িয়ে নেওয়া হবে। দেবী আর সুশান্ত একটু ভড়কাল। তারা পাড়ায় আর ঢুকল না বটে কিন্তু পুরোপুরি পাড়া ছেড়ে চলেও গেল না। পাড়ার ঠিক বাইরে একটা সাইবার কাফে খুলে বসল। দোকান ঘরের পেছনের ঢাকা জায়গাটাতে তারা রাত্তিরে থাকে। কোনও রকম ঝামেলায় আর তারা যায় না। ধীরে ধীরে পাড়ার লোক ওদের অতীতের কথা ভুলতে শুরু করল। কেউ কেউ এটাও বলতে লাগল যে, জেলের ঘানি টেনে ছেলে দুটো একেবারে শুধরে গেছে। এখনও সেইভাবেই চলছে। ওদের দোকানে আজকাল বেশ ভিড় হয়। আমাদের পাড়ায় আর কোনও কম্পিউটারের দোকান নেই তো। আমার কিন্তু স্থির বিশ্বাস ছেলেদু’টো ঠিক আগের মতোই বদমায়েশ আছে। শুধু জেলের ভাত খেয়ে আরও সেয়ানা হয়েছে।’
(২)
মন্টুবাবু দম নেবার জন্য খানিকটা থামলেন। আদিত্য আবার সিগারেট ধরাল। টেরিয়ে দেখল তার হাতঘড়িতে সোয়া পাঁচটা বেজে গেছে। বাইরে আবার বৃষ্টি নেমেছে। খুব জোরে নয়, আবার খুব আস্তেও নয়। ভিজিয়ে দেবার পক্ষে যথেষ্ট। আপিসগুলো ছুটি হচ্ছে। রাস্তায় শুধু ছাতা আর ছাতা। একটা ট্র্যাম বেলাইন হয়ে ভয়ানক যানজট সৃষ্টি করেছে। বাস, মিনিবাস, ট্যাক্সি সকলে একসঙ্গে হর্ন বাজাচ্ছে। সেই ভয়ঙ্কর গোলমাল জানলার মোটা কাচ ভেদ করে কিছুটা ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ছে।
‘জানলাটা একটু খুলে দেওয়া যাবে?’ মন্টুবাবু কিন্তু কিন্তু গলায় বললেন।
আদিত্য বুঝল সিগারেটের ধোঁয়ায় ভদ্রলোকের কষ্ট হচ্ছে। সে উঠে গিয়ে জানলাটা খুলে দিতেই এক ঝলক ভিজে হাওয়া ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল। সেই সঙ্গে রাস্তার হট্টগোল আর উল্টোদিকে নয়নতারা কেবিন থেকে ভেসে আসা মোগলাই পরোটা, কোবরেজি ভাজার হালকা গন্ধ। আদিত্য-র হঠাৎ মনে পড়ে গেল আজ সারাদিন তার কিছুই খাওয়া হয়নি। তার ভীষণ খিদে পেয়ে গেল। খিদেটাকে চাপা দেবার জন্য সে হাতের সিগারেটটাতে একটা লম্বা টান দিয়ে অবশিষ্টাংশ অ্যাশট্রেতে গুঁজে আবার নিজের জায়গায় এসে বসল।
‘তারপর?’
‘হ্যাঁ, তারপর আসল কথায় আসি। আগেই বলেছি, জেলে যাবার আগে থেকেই বকুলের দিকে সুশান্তর কুনজর ছিল। রজনীও অনেকবার আমাকে বলেছে ওই সুশান্ত ছোকরা মাঝে মাঝেই তার বোনকে বিরক্ত করে। জেল থেকে বেরিয়ে সুশান্ত আবার বকুলের দিকে দৃষ্টি দিল। তবে আগেকার মতো খোলাখুলি নয়, লুকিয়ে চুরিয়ে।’
‘কেন আপনার এরকম মনে হল?’
‘বকুল নিজেই আমাকে দু-একবার বলেছে রাস্তাঘাটে দেখা হলে সুশান্ত তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে।’
‘শুধু কথা বলার চেষ্টা করে?’
‘না, শুধু কথা বলার চেষ্টা করলে সমস্যা ছিল না। দেবী আর সুশান্ত জেল থেকে ছাড়া পাবার কয়েক মাসের মধ্যে আমাদের বাড়িতে ভূতুড়ে টেলিফোন আসতে শুরু করল। প্রত্যেকদিন অন্তত দশ-পনেরোবার টেলিফোন আসে। ফোন তুলে হ্যালো বললে সঙ্গে সঙ্গে কেটে দেয়। কোনও কথা বলে না। এতদিন আমাদের বাড়ির টেলিফোনটা মোটামুটি বোবা হয়েই বসে থাকত। কে আর ফোন করবে? আমার তো তিনকুলে কেউ নেই, মেয়েও খোঁজখবর নেয় না। আর বকুলেরবাপের বাড়ি দু’পা দূরে। তার দাদা, বৌদি, ভাইঝি দু’বেলা আসা-যাওয়া করছে। তাছাড়া বকুল আর আমার দুজনেরই একটা করে মোবাইল আছে। কথা বলার থাকলে তাতেই কথা হয়। বলতে পারেন টেলিফোনটা এতদিন অকেজো হয়েই পড়ে থাকত। নেহাত বাবার আমলের টেলিফোন তাই মায়া করে কানেকশনটা কাটিয়ে দিতে পারিনি। দু’মাস অন্তর ভাড়া গুনে গেছি। কিন্তু দেবী-সুশান্ত ফিরে আসার পর থেকে ঘনঘন টেলিফোন বাজতে শুরু করল। আমি রিসিভার তুলে হ্যালো বললেই কুট করে কেটে দেয়।’
‘শুধু আপনি কথা বললেই কেটে দেয়, নাকি …’
‘না, বকুল হ্যালো বললেও একই রকম হয়। অন্তত বকুল তাই বলছে।’
‘টেলিফোনটা কোথা থেকে আসছে কখনও ট্রেস করার চেষ্টা করেছেন?’
‘করেছি। টেলিফোন ভবনে আমার চেনাশোনা একজন কাজ করে। সে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে জানতে পেরেছে যে টেলিফোনটা একই নম্বর থেকে আসে। নম্বরটা চিত্তরঞ্জন হাসপাতালের উল্টোদিকের একটা টেলিফোন বুথের। বুথটা দিনের অনেকটা সময় খোলা থাকে আর সারাক্ষণ সেখানে ভিড় লেগেই আছে। রুগিদের বাড়ির লোকের ভিড় আর কি। তাও আমি সেখানে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলুম। তারা বলল রোজ তাদের দোকান থেকে এত লোক ফোন করে যে একটা বিশেষ নম্বরে কে বারবার ফোন করছে তাদের পক্ষে খেয়াল রাখা সম্ভব নয়।
‘দেখুন মন্টুবাবু, আপনি যদি ভূতুড়ে টেলিফোন সমস্যার সমাধান করতে আমার কাছে এসে থাকেন, তাহলে কিন্তু ভুল করেছেন। এর জন্য টেলিফোন আপিস আছে, পুলিশ আছে। দরকার হলে আপনার টেলিফোন নম্বরটা পাল্টেও নিতে পারেন। টেলিফোন আপিসে তার জন্য শুধু একটা দরখাস্ত করতে হবে।’
‘না, না আমি সেজন্য আসিনি। দেখুন তেমন বুঝলে আমি তো টেলিফোন লাইনটাই কাটিয়ে দিতে পারি। বাড়িতে টেলিফোন রাখার কোনও প্রয়োজনই আমার নেই। আমি এসেছি অন্য একটা কারণে। এবার সেই কথাটা বলি।’
মন্টুবাবু একটু নড়েচড়ে বসে আবার শুরু করলেন।
‘সুশান্তর যে বকুলের প্রতি দুর্বলতা ছিল সে তো আগেই বলেছি। কিন্তু বকুলের দিক থেকে কোনও প্রশ্রয় ছিল কিনা, কে বলতে পারে? দেখুন, নিজের স্ত্রীর সম্বন্ধে এসব নোংরা কথা ভাবতে আমার নিজেরই ঘেন্না করছে। কিন্তু মাথা ঠান্ডা করে ভেবে দেখলে সম্ভাবনাটা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে একটা কথা মনে হয়। বিয়ের আগে যদি সুশান্তর প্রতি বকুলের কোনও দুর্বলতা থেকেও থাকে, বিয়ের পরে সেসব কিছু আর অবশিষ্ট নেই। তবে মেয়েদের চরিত্র, বুঝলেন কিনা।’
‘এটাই কি সমস্যা?’
‘না, না। আসল সমস্যাটা অন্য জায়গায়। আমার ধারণা, বিয়ের আগে বকুলের সঙ্গে সুশান্তর বেশ খানিকটা মাখামাখি হয়েছিল। ফলে বকুলের জীবনের কোনও গোপন কথা সুশান্ত জানে আর এখন সেই কথাটা ফাঁস করে দেবার ভয় দেখিয়ে সে বকুলকে ব্ল্যাকমেল করছে। কথা হচ্ছে, সেই গোপন কথাটা যত ভয়ঙ্করই হোক, আমি কিন্তু আমার স্ত্রীকে ছাড়ছি না। মুস্কিল হল, কথাটা বকুলের কাছে পাড়তেই পারছি না। এসব কথা বলতে গেলেই সে এমন গম্ভীর হয়ে যায় যে বেশি দূর আর এগুনো যায় না।’
‘সুশান্ত বকুলকে ব্ল্যাকমেল করছে এমন ধারণা আপনার হল কেন?
কারণ প্রথমত ওই ভূতুড়ে টেলিফোন। আমার মনে হয় ভূতুড়ে টেলিফোন করে সে বকুলের ওপর ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে। হয়তো আমার অনুপস্থিতিতে বকুলকে ফোন করে সে ভয়ও দেখায়। আমি লক্ষ করে দেখেছি আজকাল টেলিফোন এলেই বকুল কেমন যেন ভয় পেয়ে যায়। তাছাড়া একদিনের ঘটনা বলি। সাধারণত সারা দিনটা আমি প্রেসেই কাটাই। বাড়ি ফিরতে সাড়ে আটটা নটা বেজে যায়। সেদিন শরীরটা ভালো লাগছিল না বলে দুপুরবেলায় বাড়ি ফিরে আসছিলুম। তাড়াতাড়ি ফিরব বলে বাড়ির পেছন দিকের রাস্তাটা দিয়ে শটকাট করছি এমন সময় দেখি আমাদের বাড়ির পেছন দিকের গলিতে বকুল দাঁড়িয়ে আছে আর তার কিছু দূরে দাঁড়িয়ে আছে সুশান্ত। সুশান্তর হাতে একগোছা পাঁচশো টাকার নোট। আমাকে দেখে বকুলের মুখটা ভয়ে সাদা হয়ে গেল আর সুশান্ত চট করে পাশের গলিটায় গা ঢাকা দিল। ওই ভরদুপুরে ওখানে কী করছিল জিজ্ঞেস করতে বকুল আমতা আমতা করতে লাগল। মনে হল আরও চেপে ধরলে কেঁদেই ফেলবে। আমি আর তাকে খুব একটা ঘাঁটাতে সাহস পেলুম না।’
‘আচ্ছা, আপনার স্ত্রী তো চাকরি করেন না। ব্ল্যাকমেলের টাকা তিনি পাবেন কোথায়?’
‘দেখুন, টাকা-পয়সার ব্যাপারে আমি আমার স্ত্রীকে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করি। সংসার খরচের পুরো টাকাটাই তো তার হাতে। তার থেকে দশ-বিশ হাজার এদিক ওদিক হয়ে গেলেও টের পাব না। আপনাকে বললুম বটে আমার প্রেসটা ছোটখাট, কিন্তু আসলে প্রেসটা খুব একটা ছোট নয়। পাকা এবং ঠিকে মিলিয়ে ষাট-সত্তরজন কাজ করে আমার প্রেসে। মাসে তিন-চার লাখ টাকার কম আয় হয় না। যা আয় করি, স্ত্রীর হাতে তুলে দিই। ব্যাঙ্কট্যাঙ্ক-এর কাজগুলো বকুলই দেখে। প্রেসের কাজ সামলে আমি আর টাকাপয়সার ব্যাপারটা দেখে উঠতে পারি না। তাছাড়া টাকাপয়সা বাদ দিয়েও বকুলকে সুশান্ত অন্য কোনও ব্যাপারে বাধ্য করতে পারে।’
‘ভয় দেখিয়ে কোনও নোংরা শারীরিক দাবি সুশান্ত করতে পারে এটাই বলছেন কি?’
মন্টুবাবু কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর চোয়াল শক্ত করে রুদ্ধস্বরে বললেন,
‘সেটাই বলছি। ব্যাপারটা আমি অনেক ভেবে দেখেছি। আমার মনে হয়েছে সম্ভাবনাটা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে আমি নিশ্চিত যে, সেরকম কিছু ঘটে থাকলে বকুলের অনিচ্ছাতে তার অসহায়তার সুযোগ নিয়ে সুশান্ত ঘটিয়েছে।’
‘আপনি আমাকে ঠিক কী করতে বলছেন?’
আপনার কাছে আমার দুটো অনুরোধ। একনম্বর, আপনাকে জানতে হবে বকুলকে সত্যি-সত্যি কেউ ব্ল্যাকমেল করছে কিনা। আর দু’নম্বর, করে থাকলে কীসের জোরে করছে? বলাই বাহুল্য, দু’টোরই প্রমাণ আপনাকে জোগাড় করতে হবে।’
জানলার দিকে তাকিয়ে আদিত্য খানিকক্ষণ চিন্তা করল। তারপর বলল,
‘আপনার কেসটা আমি নিলাম। আপনার ঠিকানাটা আমাকে দিয়ে যান।’
‘এই যে আমার কার্ড। এতে আমার আপিস এবং বাড়ির ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, টেলিফোন নম্বর সবই আছে। বাড়ির যে টেলিফোন নম্বরটা কার্ডে দেওয়া আছে ওই নম্বরেই ফোনগুলো আসে। আপনার ফী-এর ব্যাপারটা তো বললেন না?’
‘এখন হাজার দশেক অ্যাডভান্স দিয়ে যান। পরে আরও হাজার চল্লিশ লাগবে। তবে আপনার কাজ যদি না করে দিতে পারি, তাহলে গাড়িভাড়া এবং একটা সামান্য পারিশ্রমিক কেটে নিয়ে বাকিটা ফেরত দেব। চলবে তো?’
‘খুব চলবে মশাই, খুব চলবে। টাকার ব্যাপারটা খোলাখুলি বলে নিলাম বলে কিছু মনে করবেন না। ব্যবসাদার মানুষ তো, টাকাকে ঠিক খোলামকুচি মনে করতে পারি না।’
মন্টুবাবু পকেট থেকে একটা পাঁচশো টাকার নোটের বান্ডিল বার করে গুনে গুনে দশ হাজার টাকা টেবিলের ওপর রাখলেন। আদিত্য টাকাটা ড্রয়ারে রেখে একটা রসিদ কেটে দিল।
‘আচ্ছা, আজ আসি তাহলে?’
‘আসুন। ও হ্যাঁ, আমার মোবাইল নম্বরটা নিয়ে যান। কিছু জানাবার থাকলে ফোন করবেন।’
‘আপনার মোবাইল নম্বর আছে আমার কাছে। সুনন্দবাবুর কাছ থেকে পেয়েছি। ভেবেছিলুম ফোন করে আসব। কিছুতেই ফোনে পেলুম না। বলছে, আউট অফ সার্ভিস।’
‘এবার পাবেন। নমস্কার।’
‘নমস্কার।’