Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ছায়াবীথি – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প156 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ১২. নায়লা বিকেল থেকেই নিউমার্কেটে ঘুরছে

    নায়লা বিকেল থেকেই নিউমার্কেটে ঘুরছে। অন্যদিন যা দেখে সবই কিনে ফেলতে ইচ্ছা করে। আজ আর কিছুই কিনতে ইচ্ছা করছে না। বাবুর জন্যে লাল টুকটুকে একটা বল শুধু কেনা হয়েছে। ছটা চিনামাটির প্লেট কেনার জন্যে এলিফেন্ট রোডের দোকানগুলিতে অনেক হাঁটাহাঁটি করল। পছন্দও করল। শেষ পর্যন্ত কিনল না। আজই কিনতে হবে এমনতো কোন কথা না। পরে কিনলেও হবে। বরং জামানের জন্যে একটা শার্ট কেনা যাক। রঙচঙা সার্ট, যা গায়ে দিলেই চট করে বয়স দশ বছর কমে যায়। ও পরতে চাইবে না। জোর করে পরাতে হবে।

    শার্ট কিনতে গিয়ে নায়লার মনে হল আলমের জন্যেও একটা কিছু কেনা উচিত। সে এত উপহার দিয়েছে তাকে একটা কিছু না দিলে ভাল দেখায় না। ঐদিন যে পাঞ্জাবী পরে এসেছিল সেটা তেমন ভাল ছিল না। কত সুন্দর সুন্দর পাঞ্জাবী বের হয়েছে। সিল্কের কিছু প্রিন পাঞ্জাবী আড়ং এ পাওয়া যায়–এত সুন্দর। গায়ে দিলে দামী কিছুই দিতে হয়।

    সন্ধ্যা হতে এখনো ঘণ্টা খানিক বাকি। এরমধ্যে পাঞ্জাবী কিনে আলমকে হোটেলে দিয়ে সন্ধ্যায় সন্ধ্যায় বাসায় ফেরা যাবে। তা ছাড়া বিয়ের ব্যাপারে কতদূর কি হল সেটাও জানা দরকার। সে অরুনার সঙ্গে এসব নিয়ে আলাপ করেছে কি না তা জানার প্রয়োজন আছে। একটা ব্যাপার জামানকে বলতে সে ভুলে গেছে। অরুনাদের ফ্যামিলিতে পাগল আছে। অরুনার বড় মামা বদ্ধ উন্মাদ। মাঝে মাঝে তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হয়। পাগলামী বংশগত রোগ। বংশে একজনের থাকলে পরবর্তী জেনারেশনে কারোর না কারোর দেখা যায়। সত্যি আবার এটা জেনে শুনেও যদি আলম বিয়ে করতে চায় করবে। তবে তাকে যদি মতামত জিজ্ঞেস করে সে কলবে–না। রিস্ক নেয়ার প্রয়োজন কি? বাংলাদেশে কি মেয়ের অভাব হয়েছে। খুঁজলে অরুনার চেয়ে অনেক সুন্দর সুন্দর মেয়ে পাওয়া যাবে।

    নায়লা সাড়ে সাতশ টাকা দিয়ে সিল্কের একটা পাঞ্জাবী কিনল। এক সঙ্গে এতগুলি টাকা চলে গেল কিন্তু তার তেমন খারাপ লাগল না। বরং পাঞ্জাবীটা কিনে ভাল লাগল। মনে হল আলমের ঋণ সে খানিকটা শোধ করেছে।

    জামান শুনলে রাগ করবে কি? না রাগ করবে না। নায়লার ধারণা জামান খুশিই হবে। বেচারার বন্ধু বান্ধব একেবারেই নেই। একটি মাত্র বন্ধু–তাকে সে খুব পছন্দ করে।

     

    আলম দরজা খুলে অবাক হয়ে বলল, আরে তুমি। বিগ সারপ্রাইজ। আমি তোমাদের এখানেই যাচ্ছিলাম।

    সত্যি?

    হ্যাঁ সত্যি। এই দেখ জামা কাপড় পরে তৈরী হয়ে আছি। সঙ্গে পেষ্ট্রির প্যাকেট। তোমার রাগ ভাঙ্গানোর জন্যে পেস্ট্রি নিয়ে যাচ্ছিলাম।

    আমি কি রাগ করেছি যে রাগ ভাঙ্গাবেন?

    অবশ্যই রাগ করেছ। কেন করেছ সেটাই বুঝতে পারছি না। ঐ দিন তোমার ছেলের জম্মদিনে গিয়ে লক্ষ করলাম তুমি ভীষণ রেগে আছ। কাজেই তোমাকে না ঘটিয়ে ফষ্টি নষ্টি করলাম অরুনা মেয়েটার সঙ্গে।

    অরুনাকে আপনার খুব পছন্দ হয়েছে তাই না?

    খুব না। তবে অপছন্দ হয় নি।

    অরুনাকে বিয়ে করবেন?

    ও রাজি থাকলে আমার আপত্তি নেই।

    অরুনা খুব রাজি হবে।

    আলম বলল, এখন বল, তুমি ঠিক সন্ধ্যায় সন্ধ্যায় কোথেকে উপস্থিত হলে? নায়লা বলল, আপনার এখানে কি সন্ধ্যাবেলো আসা নিষেধ?

    না নিষেধ না। তুমি এসেছ আমি ভয়ংকর খুশি হয়েছি। আমরা এক ঘণ্টা ম্যারাথন গল্প করব।

    পাগল হয়েছেন? আমি এক্ষুণী বিদায় হব। আপনার জন্যে সামান্য উপহার এনেছি। উপহারটা দিয়েই বিদেয় হব।

    আমার জন্যে উপহার?

    হুঁ। আমি আপনার জন্য একটা পাঞ্জাবী এনেছি।

    আশ্চর্য। এত প্রথম কেউ আমাকে উপহার দিল। বিশ্বাস কর নায়লা। আমি বানিয়ে বলছি না, বা মিথ্যেও বলছি না। আমি কারো কাছ থেকে কোন উপহার পাইনি।

    নায়লা বলল, আমি উঠি?

    অসম্ভব তোমাকে উঠতে দেয়া হবে না। তুমি চুপচাপ বসো। আমি পাঞ্জাবীটা পরে আসি। তারপর পাঞ্জাবী পরে আমরা দুজন লাউঞ্জ খাব–চা খাব। গল্প করব।

    না না আমি এক্ষুণী যাব। এক্ষুণী।

    আলম গম্ভীর মুখে বলল, বেশ যাও।

    আপনি রাগ করবেন না। আমাকে এক্ষুণী যেতে হবে।

    আমি রাগ করছি না। তোমার এক্ষুণী যেতে হলে তুমি যাবে।

    আপনি রাগ করছেন।

    আমি তাহলে যাচ্ছি।

    আচ্ছা।

    ঘরের বাইরে এসেই নায়লার মনে হল সে এরকম ছেলেমানুষী কেন করল। ছুটে ঘর থেকে বের হয়ে আসার মত কি কারণ ঘটেছে? মাত্র সন্ধ্যা হয়েছে। সেতো কিছুক্ষণ থাকতেই পারতো? যে জন্যে সে এসেছে সেটাতে হয় নি–অরুনার বড় মামা যে পাগল এই কাটাতো বলা হয়নি। সে-কি আবার ফিরে যাবে? ফিরে যেতে লজ্জা লাগবে। কিন্তু লজ্জা লাগারই বা কি আছে? সে দরজার বেল টিপবে–আলম দরজা খুলবে। সে বলবে, যে কথাটা বলার জন্যে এসেছিলাম সেটাই বলতে ভুলে গেছি … আলম বলবে, ভেতরে এসে বল। সে বলবে, না যা বলার এখানে দাড়িয়ে বলে চলে যাব। আলম বলবে, কি ছেলেমানুষী করছ? দরজায় দাড়িয়ে আবার কথা কি? ভেতরে আস। সে ভেতরে যাবে তবে খুব অল্প সময়ের জন্যে …।

    নায়লা করিডোরে সঁড়িয়ে আছে। সে মন ঠিক করতে পারছে না–কি করবে। পেতলের বোতামদেয়া নীল কোট পরে হোটেলের এক কর্মচারী নায়লার কাছে এগিয়ে এসে বলল, আপনি কার কাছে যাবেন।

    নায়লা খতমত খেয়ে বলল, কারো কাছে যাব না। হোটেল থেকে বেরুব।

    ম্যাডাম লিফট ডান দিকে।

    থ্যাংক য়্যু।

    নায়লা যন্ত্রের মত লিফটের দিকে এগুচ্ছে। তার এখন আর বাড়ি ফিরতে ইচ্ছা করছে না। একা একা শহরে কিছুক্ষণ ঘুরতে ইচ্ছা করছে। ভাড়ায় টেক্সি যে সব পাওয়া যায় তার একটা ঘণ্টাখানিকের জন্যে ভাড়া করে শহরে ঘুরলে কেমন হয়? ঐ সব টেক্সির ভাড়া কত?

    ঘন হয়ে সন্ধ্যা নেমেছে। নায়লা ফুটপাথ ধরে হাটছে। সে যাচ্ছে ফার্মগেটের দিকে। ফার্মগেটে তার পরিচিত কেউ থাকে না। তবু সে ঐ দিকে কেন যাচ্ছে নিজেও জানে না।

     

    রাত দশটার মত বাজে। নায়লা এখনো বাসায় ফিরেনি। জামান খুবই দুঃশ্চিন্তায় পড়েছে। শীতের সময় রাত দশটা অনেক রাত। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় রাত আটটার মধ্যে তারপরেও এত রাত পর্যন্ত নায়লা বাইরে কি করছে? কোন বিপদ আপদ হয়নিতো? হয়তো কোন এক্সিডেন্ট করেছে কিংবা কোন বদলেকের পাল্লায় পড়েছে।

    বাবু খুব কান্নাকাটি করছে। কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠে কিছুক্ষণ আগে একগাদা বমি করেছে। বমি করে এখন প্রায় নেতিয়ে পড়েছে। মাম্রাট মান্নাট বলে–এখন সে আর কাদছে না, তবে চোখ বড় বড় করে চারদিকে দেখছে হয়ত আশা করছে যে কোন মুহূর্তে মাকে সে দেখতে পাবে।

    ফিরুর মা।

    জি ভাইজান?

    কি করি বলতো? নায়লাতো এখনো অসিছে না।

    ভাইজান চিন্তা কইরেন না। আইস্যা পড়ব।

    তুমি কি একটু বাবুকে রাখবে আমি খুঁজে আসি।

    কই খুঁজবেন ভাইজান ঢাকা শহরতো আফনের ছোড মোড় জাগা না।

    খুবই সত্যি কথা। জামনি কোথায় খুঁজবে? না খুঁজে ঘরেই বা বসে থাকে কি ভাবে?

    ভাইজান।

    হুঁ।

    আম্মারে আফনে ভাল ডাক্তার কবিরাজ দেখান। আম্মার ভাবগতিকে ভাল ঠেকে না।

    কেন?

    আম্মা রাইত ঘুমায় না।

    কি বল তুমি?

    কাইল শেষ রাইত দেখছি বসার ঘরে চিয়ারে চুপচাপ বসা। তার আগের রাইতেও দেখছি।

    তুমি একটু বাবুকে রাখতো আমি দেখি খোঁজ নিয়ে।

    বাবু ফিরুর মার কাছে যেতে তেমন আপত্তি করল না। মনে হচ্ছে সে বুঝতে পারছে তার বাবা যাচ্ছে মাআঁটকে আনতে।

     

    জামান এপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের গেটের কাছে আসতেই নায়লার দেখা পাওয়া গেল। সে বেবীটেক্সির ভাড়া মেটাচ্ছে। জামান বলল, এত দেরি?

    নায়লা হাসল। প্রাণহীন হাসি জামান বলল, আমি যে কি রকম দুশ্চিন্তায় পড়েছিলাম … তুমি আরেকটু দেরি করলে আমার হার্ট এ্যাটাক হয়ে যেত। নায়লা কিছু বলল না। তার হাতে বাবুর লাল বল। বেবীটেক্সিতে করে সে একটা ফুলের টবও এনেছে। ঢাকা কলেজের সামনে থেকে কিনেছে। রাবার গাছের চারা।

    জামান আবার বলল, তুমি কোথায় ছিলে?

    নায়লা বলল, রাস্তায়।

    নায়লা লিফটের দিকে এগুচ্ছে। জামান বলল, তোমাকে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হবে। লিফট আজ সন্ধ্যা থেকে নষ্ট।

    নায়লা নিঃশব্দে সিড়ি ভাঙ্গছে। জামানের কাছে খুব অবাক লাগছে যে নায়লা এখনো জিজ্ঞেস করছে না–বাবু কেমন ছিল? কেন সে জানতে চাচ্ছে না? এ রকম করছে কেন শায়লা?

    বাসার দরজার কাছে এসে নায়লা থমকে দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করল–বাবু কান্না কাটি করেছিল?

    জামান মিখ্যা করে বলল, অল্প তেমন না।

    বাবু ঘুমুচ্ছে। তার গাল ভেজা। নায়লা ছেলেকে দেখল কিন্তু আদর করল না। বাবুর গালে মশা বসেছে, নায়লা মশাটাকেও মারল না।

    ফিরুর মা গোসলের পানি দাও তো?

    আফনে ছিলেন কই আম্মা। চিন্তায় চিন্তায় ভাইজানের মুখ শুকাইয়া বস্টি হইয়া গেছে।

    তোমাকে গোসলের পানি দিতে বলছি পানি দাও। বাবুর উপর মশারি খাঁটিয়ে দিয়ে যাও।

    জামান লক্ষ্য করল নায়লা তার চোখে চোখে তাকাচ্ছে না। এমন ভাব করছে যেন ঘরে দ্বিতীয় প্রাণী নেই। জামনি বলল, কেনাকাটা কি করেছ?

    কিছু করি নি।

    জামান বলল, তুমি কিছুদিন তোমার বাবা-মার সঙ্গে থাক।

    কেন?

    এতে তোমার অস্থির ভাবটা দূর হবে।

    আমার অস্থির ভাব তোমাকে কে বলল?

    কেউ বলেনি–দেখতে পাচ্ছি।

    বেশি দেখতে যেও না। বেশি দেখা ভাল না। বেশি দেখতে গেলে আফসোসের সীমা থাকবে না। এক সময় চিৎকার করে বলবে, হায় হায় কেন বেশি দেখতে গেলাম…

    তোমার কথাবার্তা বুঝতে পারছি না।

    না বোঝাই ভাল।

    তুমি কদিন তোমার বাবা মার সঙ্গে থাকলে আমার সুবিধা হয়। দেশের বাড়ি থেকে ঘুরে আসতে পারি। অনেক দিন যাওয়া হয় না। যাওয়াও দরকার …।

    যাওয়া দরকার হলে যাও। আমাকে নিয়ে এত চিন্তার কিছু নেই। আমি কোথাও যাব না। এই এখানেই থাকব। তুমি যা ভাবছে তা হবে না।

    আমি কি ভাবছি?

    নায়লা কঠিণ গলায় বলল, তুমি ভাবছ–তুমি দেশের বাড়িতে চলে যাবে। খালি ফ্ল্যাট পরে থাকবে–রোজ আলম আসবে। অনেক রাত পর্যন্ত গল্প করবে। কোন কোন বার রাত এত বেশি হবে যে সে হোটেলে ফিরবে না। থেকেই যাবে।

    জামান অবাক হয়ে বলল, আমি কখনো এরকম কিছু মনে করিনি। কখনো না।

    সাধু সাজতে যেও না। আমার কাছে সাধু সেজে পার পাবে না। আমার দেরি দেখে তুমি যে অস্থির হয়েছ, কি জন্যে অস্থির হয়েছ তুকি মনে করেছ আমি জানি না? খুব ভাল করে জানি। তুমি ভেবেছ আমি তোমার বন্ধুর হোটেলে বসে আছি।

    আমি এরকম কিছু ভাবি নি নায়লা।

    তোমার বন্ধুর সঙ্গে আমার অবশ্যি দেখা হয়েছে। তাকে একটা জিনিস দিতে গিয়েছিলাম। এত কোথায় ছিলাম তাও বলি–খানিকক্ষণ রাস্তায় ঘুরেছি তারপর অরুনার বাসায় গিয়েছিলাম। এখন তুমি কি আমাকে জেরা করতে চাও? জেরা করতে চাইলে জেরা কর।

    জামান তাকিয়ে আছে। ফিরুর মা বাথরুমে পানি দিয়ে এসে খবর দিল। নায়লা শান্তভঙ্গিতে বাথরুমে ঢুকল। সারাগায়ে সাবান মেখে আজ সে অনেকক্ষণ গোসল করবে। গোসল করে সে ছাদে বসে গরম এক কাপ কফি খাবে। ইনস্ট্যান্ট কফির একটা কৌটা সে কিনে এনেছে। কফি খেতে ভাল লাগে না, কিন্তু কফির গন্ধটা সুন্দর!

     

    জামান বাবুর পাশে শুয়েছিল। তার চোখ বন্ধ কিন্তু নায়লা বুঝতে পারছে সে জেগে আছে। নায়লা চুল আঁচড়াল। কাজলদানী থেকে কাজল দিল। কি মনে করে ঠোটে লিপিস্টিক দিল। আয়নায় নিজেকে খানিকক্ষণ দেখল। তারপর রান্নাঘরে ঢুকল কফি বানাতে। ফিরুর মা ভাত তরকারী গরম করছে। ফিরুর মা বলল, ভাত খাইবেন না আম্মা?

    না। তোমার ভাই খেয়েছে?

    না ভাইজানও খায় নাই। ভাইজান সন্ধ্যাকালেই বলছে ভাত খাইব না–তার শইল খারাপ।

    তুমি ভাত খেয়ে শুয়ে পর।

    আমি ভাত কোন কালেই খাইছি। আমরা হইলাম গরীব মানুষ, ভাত না খাইলে আমরার পুষে না। ধনীর উল্টা নিয়ম ভাতের বদলে চা খাইলেও পুষে।

    ফিরুর মা, তুমি যেমন গরীব আমরাও সে রকম গরীব। ধনী কাকে বলে তুমি জান না।

    না জানাই ভাল আম্মা।

    এটা ঠিক বলেছ না জানাই ভাল। ফিরুর মা ছাদে পাঠি টা পেতে দিয়ে এসে তো।

    ও আল্লা এই শীতে ছাদে বইবেন? মাথার উপরে তো আম্মা উস পড়ব।

    পড়ুক। আর শোন এই দুটা কাপ ছাদে রেখে এসো।

    বড়লোকের কাজ কারবার বোঝা বড় দায় তো আম্মা। বড়লোক হইল আম্মা আল্লাপাকের এক আজব জীব।

    হয়েছে কথা বন্ধু।

    নায়লা জামানের গায়ে হাত রেখে নরম গলায় বলল, এই আস তো।

    জামান উঠে বসল। নায়লা কোমল গলায় বলল, এক টিন কফি কিনেছি। এসে বড়লোকদের মত কফি খাই।

    নায়লা হাত ধরে জামানকে নামাল। জামানের বিস্ময়ের সীমা রইল না। নায়লার ব্যাপারটি। সে এরকম করছে কেন? নায়লা বলল, আমার কথাবার্তা শুনে তোমার আক্কেল গুড়ুম হয়েছে তাই না? রাগ করো না। হাত জোড় করে ক্ষমা চাচ্ছি। এই দেখ তোমাকে ভুলানোর জন্যে রাত দুপুরে সেজেছি।

    আমাকে ভুলানোর কোন দরকার নেই।

    দরকার আছে। স্ত্রীর উচিত স্বামীকে ভুলানোর চেষ্টা করা আবার স্বামীর উচিত স্ত্রীকে ভুলানো! তুমি আমাকে ভুলানোর জন্যে কখনোই কিছু কর না। আমি কিন্তু করি।

    জামান কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে বলল, তোমাকে ভুলানোর জন্যে আমি কখনো কিছু করি না–কারণ আমি জানি তোমাকে ভুলানোর কোন দরকার নেই।

    এটা কিন্তু ভুল। খুব ভুল।

    না ভূল না। তা ছাড়া নায়লা ভূলানোর কায়দা কানুনও আমি জানি না।

    মেয়েদের বিশেষ করে স্ত্রীদের ভুলানো অসম্ভব সহজ। মন্ত্রীরা যে সব জিনিস পছন্দ করে–মাঝে মধ্যে সেই সব করবে।

    জামান হালকা গলায় বলল, তুমি বেড়াতে পছন্দ কর। টাকা পয়সা খরচ করতে পছন্দ কর। আমি সেই সব পছন্দ মেটাব কি করে বল।

    থাক তোমাকে মেটাতে হবে না। মাঝে মাঝে আমাকে তুমি গয়নার দোকানের সামনে দিয়ে ঘুরিয়ে আনবে। না-কি সেটাও পারবে না?

    পারব।

    শুধু শুধু চা খাচ্ছ যে তোমার সিগারেট নেই?

    না।

    আমার কাছে চাচ্ছ না কেন?

    আছে তোমার কাছে?

    অবশ্যই আছে। আজ নিউ মার্কেটে গিয়ে প্রথম যে জিনিসটা কিনেছি সেটা হচ্ছে এক প্যাকেট সিগারেট। রাস্তায় দাড়িয়ে যে সিগারেট বিক্রি করে ওদের বললাম, সবচে দামী সিগারেট এক প্যাকেট দিন তো। সেই এই সিগারেট দিল। খেয়ে দেখতে কেমন?

    দাম কত?

    দাম শুনলে তো তুমি আর খেতে পারবে না। কাশতে থাকবে। একশ কুড়ি টাকা দাম।

    সর্বনাশ। তোমার সাহসের তো নায়লা সীমা পরিসীমা নেই–একশ কুড়ি টাকা দিয়ে এক প্যাকেট সিগারেট কিনলে? একটা শলার দাল ছ টাকা।

    এত দাম হিসাব করতে হবে না। খাও তো। আর শোন আমিও কিন্তু একটা টান দেব। তুমি হাসতে পারবে না। দামী সিগারেটে একটা টান দিয়ে দেখি কেমন লাগে।

    সত্যি টান দেবে?

    হুঁ।

    নায়লা সিগারেটে টান দিয়ে খুকখুক করে কাশতে লাগল। তার চোখে পানি এসে গেছে। সে চোখ মুছতে মুছতে বলল–সর্বনাশ।

    জামান হাসছে।

    নায়লা বলল, শখ করে কেউ এই জিনিস খায়?

    জামান বলল, ঠাণ্ডা লাগছে চল ভেতরে যাই।

    নায়লা বলল, আর একটু বস পাঁচ মিনিট।

    দুজন চুপচাপ বসে আছে। জামান তাকিয়ে আছে নায়লার দিকে। নক্ষত্রের আলোয় কি সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে।

    জামান বলল, তোমার মনে কি অনেক কষ্ট নায়লা?

    নায়লা সঙ্গে সঙ্গে বলল, হ্যাঁ।

    কেন বলতো?

    কি হবে বলে।

    একেকজন মানুষের একেক রকম কষ্ট। তোমার কষ্টটা কি রকম শুনে দেখি।

    নায়লা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল–ছোটবেলা থেকে আমার খুব গানের শখ ছিল। আমি অন্যের কাছে শুনে শুনে গান তুলতাম। সবাই বলতে এত ভাল গলা। এত ভাল গলা। ক্লাস ফাইভে যখন পড়ি তখন আমাদের স্কুলের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে খুব বড় একটা ফাংশান হয়েছিল। শিক্ষামন্ত্রী এসেছিলেন। সেখানে আমি একটা গান গয়েছিলাম। উনি আমাকে কোলে নিয়ে বলেছিলেন — এই মেয়ে গান গেয়ে একদিন ভুবন বিখ্যাত হবে। আজ তো তুমি দেখছই ভুবন বিখ্যাতের নমুনা। চল ঘুমুতে যাই। আসলেই ঠাণ্ডা লাগছে।

    তোমার বাবা গান শেখার কোন ব্যবস্থা করে দেন নি?

    কোত্থেকে দেবেন? ভাত খাবার পয়সা নেই। আমাদের স্কুলের গানের অপা আমাকে একটা হারমোনিয়াম কিনে দিয়েছিলেন। বাবা সেই হরিমোনিয়াম রাখেন নি ফেরত পাঠিয়েছিলেন।

    কেন?

    জানি না কেন? আমি শুধু কেঁদেছি–বাবাকে কিছু জিজ্ঞেস করিনি। মানুষের সব দুঃখ একসময় কমে যায়। আমার গান শিখতে না পারার দুঃখ কোনদিন কমবে না। যখন কোন সুন্দর গান শুনি তখনই মনে হয়–আমিতো এরচে সুন্দর গাইতে পারতাম। চল ঘুমুতে যাই। ও আচ্ছা তোমাকে কিন্তু আরেকটা কথা বলা হয়নি। আমি তোমার বন্ধুকে একটা পাঞ্জাবী কিনে দিয়েছি। উনি এত উপহার দিয়েছিল আমার লজ্জা লাগছিল।

    পাঞ্জাবী দিয়েছ ভাল করেছ।

    নায়লা ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলল।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleছেলেটা – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article চৈত্রের দ্বিতীয় দিবস – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }