Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ছায়াবীথি – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প156 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ১৩. দুটা স্যুটকেস, একটা বড় ঝুড়ি

    দুটা স্যুটকেস, একটা বড় ঝুড়ি ভর্তি বাবুর জিনিসপত্র নিয়ে নায়লা তার মার বাসায় উপস্থিত হল। ফিরুর মা সঙ্গে এসেছে। বাবু তার কোলে বসে আছে। জামান আসেনি। সে ১০ টার ট্রেনে দেশের বাড়িতে চলে যাবে।

    মোর্তজা সাহেব মেয়েকে দেখে অবাক হয়ে বললেন, ব্যাপার কি কে?

    নায়লা বলল, কোন ব্যাপার না। তোমাদের দেখতে এলাম। তোমরা কেমন আছ বাবা?

    আমি ভালই আছি। শুধু তোর মার অবস্থা কাহিল। দাঁত ব্যথা।

    দাঁত ব্যথাতো অনেক আগেই শুনেছি। এখনো সারে নি?

    একটা সেরেছে আরেকটা শুরু হয়েছে সারাজীবন আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে এখন শোধ বোধ হচ্ছে। আল্লাহ কাউকে ছাড়েন না। শোধ বোধ করে দেন।

    কি যে তুমি কল বাবা।

    সত্যি কথা বলি। তোর ব্যাপারটা কি? কথা বালিশ নিয়ে উঠে এসেছিস। জামানের সঙ্গে ঝগড়া।

    না ঝগড়া টগড়া না। আমি তোমাদের সঙ্গে কিছুদিন থাকতে এসেছি। নিজের মত করে থাকব।

    জামান একা থাকবে?

    দু একদিন থাকবে এক।

    খাবে কি?

    বিয়ের আগেতো একা থাকতো। তখন ভাত খেতো না? একটা ব্যবস্থা করে নেবে।

    তোদের ঝগড়া কি নিয়ে?

    বললাম তো ঝগড়া না।

    মোর্তজা সাহেব গম্ভীর হয়ে বললেন–যা তুই তোর মার সঙ্গে কথা বল। ফিরুর মা, তুমি থাক। তোমার সঙ্গে কথা আছে। এটাকে কোলে নিয়ে ঘুরছ কেন? নামিয়ে দাও। কোলে নিলেই বাচ্চা কাচ্চা নষ্ট হয়। এখন বল–ওদের ঝগড়া কি নিয়ে?

    ঝগড়া হয় নাই।

    ঝগড়া হয় নি?

    জে না। ভাইজান ঝগড়ার মানুষ না।

    বিনা ঝগড়ায় জামানকে ফেলে নায়লা চলে এসেছে। এটাতো অবিশ্বাশ্য ব্যাপার। যাই হোক তুমি চা বানাতে পার?

    পারি।

    যাও আমার জন্য চা বানাও। চিনি কম, দুধ কম।

    মোতৰ্জা সাহেব চিন্তিত মুখে তার ইজিচেয়ারে বসলেন।

     

    জাহানারার দাঁত ব্যথা কাল রাত পর্যন্তও প্রচণ্ড ছিল। সারারাত ঘুমুতে পারেন নি। এখন একটু কম। লবন পানি দিয়ে অনেকক্ষণ গার্গল করায় ব্যথা সহনীয় পর্যায়ে এসেছে। তবে গাল ফুলে বিশ্রী হয়ে আছে।

    নায়লা বলল, ডাক্তারের কাছে যাওনি মা?

    কে নিয়ে যাবে ডাক্তারের কাছে? তোর বাবা নিবে না। নুরুর তো কোন খোঁজ নেই। ফেরে রাত বারটা একটায়। আমি কি একা ডাক্তারের কাছে যাব?

    দরকার হলে যাবে।

    জাহানারা আহত গলায় বললেন, আমি ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছি–তোর বাবা খুশি। আমি সারাজীবন তার সঙ্গে যে খারাপ ব্যবহার করেছি এটা নাকি তার শাস্তি। আমি ককে খারাপ ব্যবহার করলাম এটাইতো জানি না।

    নায়লা বিরক্ত গলায় বলল, বুড়ো হলে মানুষের মতিভ্রম হয়। বাবার হয়েছে। তোমাকে আমি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব মা। তুমি চিন্তা করো না।

    জামান কখন আসবে?

    ও আসবে না। আমি একা একা কয়েকদিন থাকব।

    কেন?

    মাঝে মাঝে পুরানো দিনের মত থাকতে ইচ্ছা করে না? আমার ইচ্ছা ছিল বাবুকেও তার বাবার ঘাড়ে ফেলে একা এসে তোমাদের সঙ্গে থাকব।

    জাহানারা কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে শংকিত গলায় বললেন, তোদের কি কোন সমস্যা হয়েছে। সত্যি কথা বল। আমার দিকে তাকিয়ে বল।

    কোন সমস্যা হয় নি।

    তুই সত্যি কথা বলছিস না।

    আমি সত্যি কথাই বলছি। আমাদের কোন সমস্য নেই শুধু …

    শুধু কি?

    ওকে আমার এখন আর সহ্য হচ্ছে না।

    এর মানে কি?

    জানি না ওর মানে কি। দীর্ঘদিন একসঙ্গে থাকলে এটা বোধহয় একঘেয়ে লাগে।

    তুই পাগলের মত কথা বলছিস কেন? একঘেয়ে লাগার কি আছে? আমি আর তোর বাবা যে এতদিন একসঙ্গে আছি আমাদের কি ঘেয়ে লাগছে।

    অবশ্যই লাগছে। লাগছে বলেই তোমার বাত ব্যথা হলে বাবা এখুশি হয়।

    তোর বাবার মাখাটা একটু খারাপ এই জন্যেই সে এরকম বলে–এটা তার মনের কথা না।

    বাবার যেমন মাথা খারাপ, আমারো তেমন মাথা খারাপ। আমিতো বাবারই মেয়ে। এইসব নিয়ে তুমি চিন্তা করবে নাতো মা।

    আমি চিন্তা করবনাতো কে চিন্তা করবে?

    তুমি তোমাকে নিয়ে চিন্তা করবে। আমি আমাকে নিয়ে চিন্তা করব। মা আমি কোন ঘরে থাকব।

    জাহানারা চিন্তিত গলায় বললেন, তুই কি অনেক দিনের জন্যে এসেছিস?

    জানি না। আমার জিনিসপত্র কোন ঘরে তুলক সেটা বল। আমি অমাির আগের ঘরটায় থাকব না।

    ঐ খানে তো নুরু থাকে।

    এখন থাকবে না?

    ও খুব হৈচৈ করবে।

    ও হৈ চৈ করলে আমিও হৈ চৈ করব। মেয়ে হয়েছি বলে আমি হৈ চৈ কম জানি তোমাকে কে বলল?

    জাহানারার দাঁত ব্যথা পুরোপুরি সেরেই গিয়েছিল। মেয়ের কান্ড কারখানায় জন্যেই হয়ত সেই ব্যথা আবারো শুরু হল। অসহ্য ব্যথা। তিনি চোখে অন্ধকার দেখতে লাগলেন।

    নায়লা।

    কি মা?

    জামানতো অসম্ভব ভাল একটা ছেলে–ওর সঙ্গে কি নিয়ে তুই লাগলি?

    এক কথা কতবার বলব?

    খুব চিন্তা লাগছেরে মা।

    চিন্তার কিছু নেই। জামানের সঙ্গে আমার কোন ঝামেলা হয় নি। ও দেশের বাড়িতে গেছে। কদেকদিন থাকবে। তারপর চলে আসবে।

    সত্যি?

    হ্যাঁ সত্যি।

    জাহানারার দাঁতের ব্যথা আবারো কিছুটা কমল।

     

    নুরু বাসায় ফিরে তার নির্বাসিত অবস্থায় রাগ করল না, বরং বোন কে দেখে আনন্দিত হল বলেই মনে হল। নায়লা বলল, আমার শাড়ি কোথায়? টাকা নিয়ে যে গেলি শাড়ি কোথায়?

    আর বল কেন আপা। হারামজাদাতে আমার টাকা মেরে দিয়েছে। আমি জান। দিয়ে তার শাড়ি বেচলাম। তোর শাড়িটার জন্যে টাকা দিলাম। বলল, দুপুরে এসে নিয়ে যেতে তখনই সন্দেহ করা উচিত ছিল যে সামথিং ইজ রং। কিছু বুঝতে পারি নি। মর্থন বুঝতে পেরেছি তখন ইট ইজ টু লেট।

    আমার এক হাজার টাকা গেল?

    পাগল হয়েছে। তোমার টাকা বাবে যানে–টাকা না দিয়ে ব্যাটা যাবে কোথায়? আমি শুওরের বাচ্চার কানে ধরে সারা শহর চক্কর দেওয়াবো না? আমার টাকা হজম করবে এমন মানুষ এখনো পয়দা হয় নি।

    নায়লা গম্ভীর গলায় বলল, আমার মনে হয় তুই মিথ্যা কথা বলছিস। সবার সঙ্গে ফটকাবাজি করে করে তোর এমন অভ্যাস হয়েছে–বাবা মা, ভাই বোন সবার সঙ্গেই ফটকাবাজী শুরু করেছিস।

    আমার সম্পর্কে তোর এই ধারণা অত্যন্ত নির্ম।

    কঠিণ কঠিণ বাংলা আমাকে বলার দরকার নেই। তোর দুলাভাই নিতান্তই গরীব মানুষ। তার খুব কষ্টের টাকা।

    বললামতো তোর টাকা তুই পেয়ে যাবি। খুব বেশি হলে এক সপ্তাহ। শুধু যে টাকা পাবি তাই না। শাড়িও পাবি। শাড়িটা ফাউ!

    নায়লা কঠিণ চোখে তাকিয়ে আছে। সেই দৃষ্টি অগ্রাহ্য করে নুরু শীষ দিতে দিতে বারান্দায় চলে এল। বারান্দায় বাবু খেলছে। বাবাকে ছেড়ে এ বাড়িতে এসে শুরুতে তার মনটা খারাপ ছিল। এখন মন খারাপ ভাব নেই। ছোট মামার সঙ্গে তার বেশ ভাব হয়েছে। ছোটমামা একটা ইঁদুর মেরে ইঁদুরের লেজে সুতা বেঁধে তার হাতে দিয়ে দিয়েছে। বাবু সেই সুতা বাধা ইঁদুর নিয়ে মহানন্দে ঘুরছে।

    বাবু ছোটমামাকে দেখে আনন্দিত গলায় বলল, মামা ইন্দুল।

    নুরু উদাস গলায় বলল, হ্যাঁ বাবা ইল। ইঙ্গুল দিয়ে আপাতত খেল। দেখি যদি পারা যায় একটা বিড়াল মেরে গলায় দড়ি বেঁধে হাতে দিয়ে দেব। এতে আরো মজা পাবে।

    বাবু হাসল। মামার কথাতেই সে মজা পাচ্ছে।

     

    নায়লার অস্থির ভাবটা কেটে গেছে। মার বাড়িতে থাকতে তার ভালই লাগছে।

    একজন বিবাহিত মেয়ে কোনদিনই কুমারী জীবনে ফিরে যেতে পারে না, কিন্তু কাছাকাছি হয়ত যাওয়া যায়। চেষ্টা করলেই যাওয়া যায়। নায়লা সেই চেষ্টা প্রাণপন করছে। দিনের বেলা সে সেজেগুজে ঘুরতে বের হয়।

    এই সময় তার খুব ব্যস্ত ভঙ্গি থাকে। যেন জরুরি কোন কাজে যাচ্ছে। নিঃশ্বাস ফেলার সময় নেই।

    একদিন সাভার স্মৃতিসৌধ (থকে একা একা ঘুরে এল। একগাদা মাটির খেলনা নিয়ে এল। চীন মৈত্রী সেতুও দেখা হল। সুন্দর বানিয়েছে। জোছনা রাতে এই সেতুর উপর হাঁটাহাটি করতে নিশ্চয়ই ভাল লাগবে। ছেলে হয়ে জন্মালে এই কাজটা করা যেত। আচ্ছা, চুল ছোট করে কেটে শার্ট-প্যান্ট পরে ছেলে সাজলে কেমন হয়? তাহলে নিশ্চিন্ত মনে ঘোরাঘুরি করা যায়। মেয়েরা এতদিন ধরে পুরুষের পাশাপাশি রাস্তায় হাঁটছে। তারপরেও পুরুষরা অভ্যস্ত হচ্ছে না কেন? এখনো কেন মেয়ে দেখামাত্র আড়চোখে তাকিয়ে থাকতে হবে?

    অরুনার অফিসে এক সকালে নায়লা গিয়ে উপস্থিত। প্লন-প্রোগ্রাম করে যে যাওয়া ত্যা না। রিকশা করে মতিঝিলের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিল–হঠাৎ মনে হল, আরে এইখানেই তো অরুনার অফিস। নায়লা রিকশাওয়ালাকে বলল, ভাই থামুন তো। থামুন।

    অরুনা খুশি-খুশি গলায় বলল, আরে তুই! ব্যাপার কি?

    তোকে দেখতে এলাম। তুই ব্যস্ত না কি?

    অসম্ভব ব্যস্ত। দেখছিস না তিনটা টেলিফোন সাজিয়ে বসে আছি। তুই কি কোন কাজে এসেছিস, না এম্নি এসেছিস?

    এম্নি এসেছি।

    তাহলে এই চেয়ারে চুপ করে বসে থাক। দশ মিনিটের মধ্যে আমাদের লাঞ্চ ব্রেক হবে–তখন তোকে নিয়ে লাঞ্চ করব। দশ মিনিট চুপচাপ বসে থাকতে পারবি?

    পারব মনে হয়।

    নায়লা চুপচাপ বসে রইল। অরুনা আসলেই ব্যস্ত। এই টেলিফোন বাজাছ। লোক আসছে। তাকে ডেস্ক ছেড়ে দোতলায় যেতে হচ্ছে, আবার নামতে হচ্ছে। দশ মিনিটের জায়গায় পুরোপুরি চল্লিশ মিনিট পার করে শাড়ির আঁচলে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে অরুনা বলল, চল যাই।

    কোথায় যাব? কোন একটা চাইনীজে ঢুকে দুপুরের খাওয়া খাই–তারপর চুটিয়ে আড্ডা। আমাকে আর অফিসে যেতে হচ্ছে না। ছুটি নিয়েছি আড্ডা দেবার জন্যে। অনেক সিরিয়াস ধরনের কথা আছে তোর সঙ্গে। আজ তোর সঙ্গে দেখা না হলে বিকেলে তোর বাসায় যেতাম।

    কেন মিথ্যা কথা বলছিস?

    অরুনা হাসল। তার কাধের ঝুলানো ব্যাগ খুলে এপয়েন্টমেন্ট বুক বের করে দেখাল যে, আজকের তারিখে লেখা আছে–নায়লার বাসা।

    বিশ্বাস হল?

    হুঁ।

    অরুনা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আজকাল কেউ মুখের কথা বিশ্বাস করতে চায় না। সবাই চায় ভকুমেন্টস। কিছুদিন পর দেখবি মানুষ কথা বলা ভুলে গেছে, সবাই শুধু লেখা চালাচালি করছে। ফ্যাক্স পাঠাচ্ছে, নোট পাঠাচ্ছে।

     

    তারা বসেছে একটা মিনি চাইনীজ। মিনি চাইনীজ মানে সেখানে একজন-দুজনের খাবার অর্ডার দেয়া যায়। চাইনীজের সঙ্গে ফাস্ট ফুড আছে। কেউ দুটা সিঙ্গারা, এক কাপ চা খেতে চাইলে সেই ব্যবস্থাও আছে। অরুনা বলল, নায়লা, তুই কি খাবি বল?

    তুই যা খাবি আমিও তাই খাব।

    আমি খাব একবাটি স্যুপ। দুপুরে আমি এর বেশি কিছু খাই না। যদি মোটা হয়ে যাই! এম্নিতেই বিয়ে হচ্ছে না, মোটা হলে কি আর উপায় আছে? একবার বিয়েটা শুধু হোক, তারপর দেখবি দিনরাত খাব। খেতে খেতে গ্যাস বেলুনের মত ফুলব।

    তখন অসুবিধা হবে না?

    না। বিয়ের আগে ছেলেরা চায় দুবলা-পাতলা মেয়ে। বিয়ের পর চায় স্বাস্থ্যবতী স্ত্রী। বল তুই কি খাবি?

    আমি স্যুপ খাব।

    না, স্যুপ-টুপ না আয় আজ আমরা ফুল কোর্স লাঞ্চ করি। তোর সঙ্গে অনেক কখা আছে। ধীরে ধীরে খাব আর কথা বলব।

    কি কথা?

    বলছি, দাঁড়া। আগে অর্ডার দিয়ে নেই।

    খাবারের অর্ডার দিয়ে অরুনা একটু ঝুঁকে এল নায়লার দিকে। গলার স্বর খানিকটা নামিয়ে বলল, তোর স্বামীর বন্ধু ঐ যে আলম সাহেব, উনার খবরটা কি বল তো?

    কি খবর?

    মানুষটার ভাবভঙ্গি কিছু বুঝতে পারছি না। ঐদিন তোর বাসায় দেখা হল। তার হাবভাব দেখে মনে হল আমাকে খুব পছন্দ হয়েছে। যাবার সময় আমার টেলিফোন নাম্বার নিলেন। বাসার মেইলিং এড্রেস লিখে রাখলেন। তারপর আর খোঁজ নেই। শেষে লজ্জার মাথা খেয়ে আমি টেলিফোন করলাম। টেলিফোন করে ধাক্কা খেলাম।

    কেন?

    উনি আমাকে চিনতে পারছেন না। বললেন, কোন অরুনা, শেষে বললাম, নায়লার বান্ধবী।

    তখন চিনতে পারলেন?

    হ্যাঁ তখন চিনলেন। অনেকক্ষণ গল্পও করলেন।

    কি নিয়ে গল্প?

    কি নিয়ে গল্প সেটা বলার জন্যেই তোকে এখানে নিয়ে এসেছি। সব গল্প তোকে নিয়ে।

    নায়লার হাত-পা শিরশির করতে লাগল। অরুনা ছোট্ট করে হাসল। হাসিমুখে কলল, নায়লা শোন–আমি তো ঘরবন্দি কোন মেয়ে না। পুরুষের সমান তালে বাস করে এমন একটি মেয়ে। রিসিপসনিস্টের কাজ করি। প্রতিদিন কম করে হলেও একশ পুরুষের সঙ্গে মিশতে হয়। বেদে যেমন সাপের হাঁচি চেনে, আমিও তেমন পুরুষের হাচি চিনি। ঐ লোকের সঙ্গে তোর সম্পর্ক কোন পর্যায়ে?

    তার মানে?

    তার মানে হচ্ছে তোরা এই সম্পর্ক কোন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিস? কথাবার্তা, হাত ধরাধরি এই স্তরে রেখেছিস, না শরীরের স্তরে নেমে গেছিস?

    নায়লা চোখ মুখ লাল করে বলল, তুই অত্যন্ত আপত্তিজনক কথা বলছিস।

    আমি কোনই আপত্তিজনক কথা বলছি না। সরাসরি কথা বলছি। পর্দার আড়ালে কথা চালচিালি আমার পছন্দ না। তুই যাসনি ভদ্রলোকের হোটেলে?

    হ্যাঁ গিয়েছি।

    একজন সুপুরুষ মানুষ দামী একটা হোটেলে একা একা ঘর ভাড়া করে আছে–সুন্দরী এক তরুণী অসময়ে সেই ঘরে উপস্থিত হল। মানুষটা হোটেলের দরজা টেনে বন্ধ করে দিল–তখন কি হয় বল তো?

    আমি জানি না কি হয়।

    আমি খুব ভাল করে জানি কি হয়! দরজা বন্ধ করা মাত্রই দুটি মানুষ সমস্ত পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তারা হয়ে যায় পৃথিবীর একমাত্র মানব-মানবী। আর কেউ নেই। আর কারোর অস্তিত্ব নেই। শরীর তখন মনের কথা মানে না। শরীর তখন তার নিজের ভাষায় কথা বলতে চায়।

    নায়লা কঠিন গলায় বলল, তুই নিজেকে দিয়ে সবাইকে বিচার করবি?

    হ্যাঁ করব। কারণ আমি আলাদা কেউ না। আমি অন্য সবারই অংশ।

    নায়লা কিছু খাচ্ছে না। হাত গুটিয়ে বসে আছে। অরুনা কাঁটা চামচে নির্বিকার ভঙ্গিতে খেয়ে যাচ্ছে–আরেকজন যে বসে আছে চুপচাপ সে দিকে তার দৃষ্টি নেই।

    নায়লা!

    বল।

    তুই কি সাহসী মেয়ে?

    সাহসী মেয়ে হলে আমাকে কি করতে হবে?

    সাহসী মেয়ে হলে বাস্তবকে স্বীকার করতে হবে। নিজে চোখ বন্ধ করে থাকবি এবং ভাববি, সমস্ত পৃথিবী চোখ বন্ধ করে আছে তা তো হয় না। ঐ লোক তোর সম্পর্কে কি ভাবছে না ভাবছে সেটা বাদ দে। তুই নিজে কি ভাবছিস?

    আমি কি ভাবছি সেটা জানার তোর কি দরকার?

    দরকার আছে। তাদের এই ব্যক্তিগত ঝামেলায় তুই আমাকে এনে ফেলেছিস। আমার এখানে জড়িয়ে পড়ার কথা ছিল না। আমি জড়িয়ে গেছি। মানুষটাকে আমার পছন্দ হয়েছে। বিদেশে যারা থাকে তারা চালবাজ ধরনের হয়। দেশে এসে বড় বড় চাল দিতে চেষ্টা করে। এই লোক তেমন না।

    কি করে বুঝলি?

    আমি খুব প্রাকটিক্যাল মেয়ে নায়লা। আমি ভাববাচ্যে চলি না, অনুমানের উপরও চলি না। আমি খোঁজ-খবর করি। নিউ জার্সিতে আমার যে চাচা আছেন আমি তাকে টেলিফোন করে বলেছিলাম ভদ্রলোক সম্পর্কে খোঁজ নিতে। খুব ভাল করে খোঁজ নিতে। উনি খোঁজ নিয়ে জানিয়েছেন।

    কি জানা গেল?

    জানা গেল যে, ভদ্রলোক শুরুতে আমেরিকা এসে পেট্রোল পাম্পে পেট্রোল ঢালার কাজ করতেন। তারপর ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা শুরু করেন। তাঁকে শুরু করতে হয় একেবারে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট থেকে। তিনি অসাধারণ ভাল রেজাল্ট করেন। পাশ করার পর চাকরি নেন ইউনিয়ন কার্বাইডে। ইউনিভার্সিটিতে কাজের উপর তার তিনটি পেটেন্ট ছিল। সেই তিনটি পেটেন্ট বিক্রি করে এক মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পেয়ে যান। বুঝতে পারছিস কিছু?

    বোঝার চেষ্টা করছি।

    অগা-মগা-বগা জাতীয় কেউ হলে তার প্রেমে পড়া দোষণীয় হত। এই লোকের প্রেমে পড়ে তুই কোন অন্যায় করিসনি।

    নায়লা উঠে দাঁড়াল। এই জাতীয় কথা শোনার তার আর ধৈর্য নেই। অরুন সহজ গলায় বলল, চলে যাচ্ছিস?

    হ্যাঁ

    এতক্ষণ যা বলেছি সব নকল কথা। আসল কথা বলিনি।

    কোন কথাই শুনতে চাচ্ছি না।

    ভাল। শুনতে না চাইলে শুনবি না–তবে আমার কিছু কথা আছে, তা তোর নিজের স্বার্থেই শোনা উচিত।

    তোকে আমার স্বার্থ দেখতে হবে না।

    আলম সাহেব হোটেলে থাকেন না। হোটেল ছেড়ে দিয়ে এ্যাপার্টমেন্টে উঠে গেছেন। সেই ঠিকানা আমি ছাড়া কেউ জানে না। তুই আমার সাহায্য ছাড়া তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবি না।

    তার সঙ্গে যোগাযোগের আমার দরকার কি?

    দরকার না থাকলে খুবই ভাল। তোর জন্যেও ভাল, আমার জন্যেও ভাল। আমি তখন নিশ্চিন্ত মনে বিয়ে করে হানিমুন করবার জন্যে সুইজারল্যান্ড যেতে পারি।

    নায়লা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, তুই আমার সঙ্গে এরকম করছিস কেন? অরুনা বলল, নায়লা বোস। সহজ হয়ে বোস। তোর মনের ভিতর কি আছে বল। একজন কাউকে তো মনের কথা বলতে হবে। বলতে না পারলে তুই তো মরে যাবি! তুই কি আজকাল আয়নায় নিজেকে দেখেছিস? তোকে দেখাচ্ছে পেত্নীর মত। করাত ধরে তোর ঘুম হচ্ছে না ঠিকমত বল তো?

    নায়লা বসল। তার কান্না পাচ্ছে। অদ্ভুত ধরনের কান্না। সমস্ত শরীর ভেঙে আসছে। গলায় কান্না জমাট বেঁধে আটকে আছে। কিন্তু চোখ শুকনো!

    লায়লা।

    হুঁ।

    হাত না দেখে আমি বলে দেই তোর কি হবে। ভয়ংকর কিছু তোর জীবনে ঘটতে যাচ্ছে। তোর ছিল সুখী সংসার। হঠাৎ একদিন তুই টের পেলি এটা আসলে সুখী সংসার না। মেকি সংসার। স্বামীকে সহ্য হচ্ছে না–আবার ফেলতেও পারছিস না। ভালবাসার কথা কাউকে বলতে পারছিস না, আবার গোপন রাখতে পারছিস না। বার বার মানুষটার কাছে ছুটে যাচ্ছিস। আবার ঘরে ফিরে চিৎকার করে নিজেকে জিজ্ঞেস করছিস–আমি কি করছি? আমি কি করছি? তোর স্নায়ু চুড়ান্ত রকমের উত্তেজিত। তোর ঘুম হচ্ছে না। তুই অস্বাভাবিক আচরণ করছিস–কিন্তু আচরণগুলি যে অস্বাভাবিক ত্যও ধরতে পারছিস না। এক সময় অস্বাভাবিকতা চূড়ান্ত পর্যায়ে যাবে। তুই সেই লোকের কাছে যাবি এবং বিশ্রী কিছু কাণ্ড করবি। বাসায় এসে তোর স্বামীর কাছে, তোর ছেলের কাছে যখন পাঁড়াবি তখন মনে হবে–আমি কি করেছি। আমি কি করেছি! বুঝলি নায়লা, এই পর্যায়ে মানুষ পাগল হয়, এই পর্যায়ে মানুষ ছাদ থেকে লাফিয়ে পাড়, ছুটে গিয়ে চলন্ত ট্রাকের সামনে দাঁড়ায়। তোর কি এই অবস্থা যাচ্ছে না?

    নায়লা কিচ্ছু বলল না। শাড়ির আঁচলে চোখ চেপে ধরল।

    অরুনা বেয়াবাকে ডেকে দুকাপ চা দিতে বলল। নায়লার দিকে তাকিয়ে বলল, তুই যে ভাবে কাদছিস–লোকজন সব দেখছে।

    দেখুক।

    অরুনা হাসল। মনে হচ্ছে সে খুব মজা পাচ্ছে।

    নায়লা।

    উঁ।

    তুই তো কখনো বোকা ছিলি না। এরকম বোকার মত কাজ কি করে করলি?

    আমি বোকার মত কিছুই করিনি।

    যে ধাক্কা আসবে সেটা সামলাতে পারবি?

    কি ধাক্কা আসবে?

    তুই আলম সাহেবের কাছে গিয়ে বলতে পারবি–আপনাকে ছাড়া আমি বাঁচব। আমার বাকি জীবন আমি আপনার সঙ্গে কাটাতে চাই। এই কথাটা বলার বা এই জাতীয় পরিকল্পনা নেয়ার সাহস কি তোর আছে? না-কি তোর সব সাহস গোপনে ঐ লোকের সঙ্গে রাত্রি যাপনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ?

    তুই যা ভাবছিস এরকম কিছু হয়নি।

    হয়নি, কিন্তু হাবে। খুব শিগগীরই হবে। হয়ত আজই হবে–আমার কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে তুই ভদ্রলোকের কাছে ছুটে যাবি এবং …

    প্লীজ চুপ।

    আচ্ছা যা, চুপ করলাম। চা খা চা ঠাণ্ডা হচ্ছে।

    নায়লা ছোট্ট করে কাপে চুমুক দিল। চট করে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, আমার জায়গায় তুই থাকলে তুই কি করতি?

    আমি যা করতাম সেটা তুই করতে পারবি না। একেক মানুষ একেক রকম। তোর সিদ্ধান্ত তোকেই নিতে হবে।

    নায়লা অস্পষ্ট স্বরে বলল, আমি খুব কষ্ট পাচ্ছি।

    অরুনা বলল, পৃথিবীতে কোন কিছুই চিরস্থায়ী নয়। কষ্ট যেমন চিরস্থায়ী নয় আবার সুখও চিরস্থায়ী না। আলম সাহেবকে না পাবার কষ্ট যত তীব্রই হোক সেটা চিরস্থায়ী না। আবার তোর স্বামী-সন্তানকে হারাবার কষ্টও যত তীব্ৰই হোক—চিরস্থায়ী না। তোর জন্যে সব পথ খোলা। চল্ উঠা যাক।

    নায়লা বলল, উনার এপার্টমেন্টের এড্রেসটা কি?

    অরুনা বেশ কিছুক্ষণ নিঃশব্দে নায়লার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, উনি আগের ঠিকানাতেই আছেন। তোকে আটকাবার জন্যে মিথ্যা বলেছিলাম।

    রাস্তায় এসে অরুনা বলল, তুই ঠিকমত হাঁটতে পর্যন্ত পারছিস না। আয় তো তোকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি।

    আমাকে পৌঁছে দিতে হবে না। আমি একাই যাব।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleছেলেটা – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article চৈত্রের দ্বিতীয় দিবস – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }