Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ছায়াবীথি – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প156 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৬. নায়লা চোখ বড় বড় করে বলল

    নায়লা চোখ বড় বড় করে বলল, আপনি এত বড় গাড়ি নিয়ে এসেছেন? আমরা যাব পুরানো ঢাকায়। এত বড় গাড়ি তো গলি দিয়ে চকুবে না।

    আলম বলল, যতদূর যাওয়া যায় চল যাই, তারপর না হয় রিকশা নিয়ে নেব। জামান যাচ্ছে না?

    না। ও বাবুকে ডাক্তারের কাছে নিয়েছে। বাবুর কাশি হয়েছে। কাল রাতে খুব কেশেছে। অবশ্যি বাবু সুস্থ থাকলেও সে যেত না। ওর নকি মেয়ে দেখতে যেতে ভাল লাগে না।

    আলম খানিকটা অবাক হয়ে নায়লাকে দেখছে। নায়লা কেমন হড়বড় করে কথা বলে যাচ্ছে।

    আমাদের বিয়ের সময়ও কিন্তু ও আমাকে আগে দেখেনি।

    চোখ বন্ধ করে বিয়ে হয়েছে?

    অনেকটা সে রকম।

    তাহলে চল রওনা হই। তুমি যা সাজ দিয়েছ, তোমার পাশে তো অরি অন্য কোন মেয়েকে ভাল লাগবে না।

    নায়লা লজ্জিত ভঙ্গিতে হাসল। হালকা গোলাপি রঙের সুতির শাড়ি পরেছে। সাজের মধ্যে সাজ হল–চোখে কাজল। নিজেই কাজলদানে কাজল বানিয়ে চোখে দিয়েছে। প্রথমে হাতে দুগাছি সোনার চুড়ি পরেছিল। তাকিয়ে দেখে হাত খালি খালি লাগছে। হাত ভর্তি সোনার চুড়ি থাকলে একটা কথা। এত চুড়ি সে পাবে কোথায়? বিয়ের সময় বাবা যা দিয়েছিলেন তাই। সেখান থেকেও কিছু নষ্ট হয়েছে। বাবুর জন্মের সময় গলার হারটা বিক্রি করতে হল।

    নায়লা সোনার চুড়িগুলি খুলে ফেলে হাত ভর্তি কাচের চুড়ি পরল। সবুজ রঙের চুড়ি। সবুজ পাথর বসানো একটা আঙটি হাতে থাকলে খুব মানাতো?

    আলম বলল, নায়লা, একটা কাজ করা যাক। রওনা হবার আগে চল কোন কফি হাউসে বসে এক কাপ কালো কফি খাই। কফি খেতে খেতে আমাদের স্ট্রাটেজি ঠিক করে নেই।

    স্ট্র্যাটেজি কিসের?

    একটা পরিকল্পনা করতে হবে না যাতে মেয়েটা আমাকে পছন্দ করে? ফাস্ট ইমপ্রেশন ভাল না হলে খেলা ড্র হয়ে যাবে।

    বেশ তো, চলুন কফি খাই।

    আর গাড়িটাও বদলাতে হবে, ছেটি গাড়ি নিতে হবে। আমার পোশাক-আশাক কি ঠিক আছে?

    হ্যাঁ ঠিক আছে।

    আমার নিজের কাছে ভাল লাগছে না। তোমার পোশাকের সঙ্গে ম্যাচ করছে না। তুমি পরেছ খাঁটি বাঙালী পোশাক–আমি জিনসের প্যান্ট, রঙচঙা শার্ট। আমিও বাঙালী পোশাক পরব।

    বাঙালী পোশাকটা কি? লুঙ্গি-গেঞ্জি?

    ছেলেদের বাঙালী পোশাক হচ্ছে পায়জামা-পাঞ্জাবি, কাধে চাদর। পায়ে চটি জুতা …।

    আগে ছিল, এখন আর এইসব কেউ পরে না।

    তুমি তাহলে বলছ আমার ড্রেস ঠিক আছে?

    হুঁ।

    গায়ে সেন্ট মেখেছি, বুঝতে পারছ তো? সেন্টটা কোন সমস্যা করবে না তো?

    নায়লা বিস্মিত হয়ে বলল, সেন্ট সমস্যা করবে কেন?

    অনেক মেয়ে আছে–ছেলেদের সেন্ট মাখা একেবারেই পছন্দ করে না। তারা ভাবে, এটা হল এফিমিনেট–মেয়েলী ব্যাপার। পুরুষদের গায়ে ঘামের কড়া গন্ধে তাদের কিছু যায়-আসে না, কিন্তু আফটার শেভের মিষ্টি গন্ধ তাদের পছন্দ না।

    অপিনি বুঝি মেয়েদের পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে খুব চিন্তা করেন?

    আগে করতাম না। এখন করি। বিয়ের চেষ্টা যে আমি এখন শুরু করেছি তা না। বেশ কিছু দিন থেকেই করছি। বিদেশেও বাঙালী মেয়েরা আছে। কয়েকজনের সঙ্গে কথাবার্তাও এগিয়েছিল–শেষে তারা পিছিয়ে গেল। আমি হলাম ঘরপোড়া গরু–কাজেই এবার আমি খুব সাবধান …।

    কফি শপটা সুন্দর। লোকজন একেবারেই নেই। সকাল দশটার দিকে এ দেশের লোকজন কফি খেতে চায় না। এরা কফি খায় বিকেলে। আলম বলল, নায়লা, এখন তুমি তোমার বান্ধবী সম্পর্কে আমাকে ব্রীফিং দাও–তার নাম হল–অরুণা, তাই না?

    হুঁ।

    পড়াশোনা কতদূর?

    বিএ পাশ করার পর বিএড ডিগ্রী নিয়েছে–এক সময় স্কুলে পড়াত। এখন রিসিপশনিস্টের কাজ করছে।

    সর্বনাশ! মাস্টারনী?

    মাস্টারনীতে অসুবিধা কি?

    মাস্টাররা পৃথিবীর সবাইকে ছাত্র মনে করে–এই হচ্ছে অসুবিধা। বাসররাতে জিজ্ঞেস করে বসতে পারে–বাসররাত কোন সমাস?

    নায়লা হাসছে। শব্দ করে হাসছে। গালে কী সুন্দর টোল পড়েছে! আলম বলল, তোমার নিজের পড়াশোনা কি? নায়লা হাসি থামিয়ে বলল, আমার পড়াশোনা নেই।

    স্বরে অ, স্বরে আ জান? না তাও জান না?

    না জানার মতই। আমি ইন্টারমিডিয়েট পাশ করতে পারিনি। পরীক্ষার একমাস আগে বিয়ে হল–পরীক্ষা দেয়া হল না। পরের বছর পরীক্ষা দেব ভেবেছিলাম–সেই বছর বাবু হল, এখন উৎসাহ চলে গেছে।

    বিয়ের জন্যে পড়াশোনা দরকার ছিল, বিয়ে হয়ে গেছে, আর পড়াশোনা দিয়ে কি হবে, তাই না?

    নায়লা জবাব দিল না। আলম বলল, তোমার মন খারাপ করিয়ে দিলাম কি?

    উঁহু।

    চল যাওয়া যাক। মন খারাপ করার কিছু নেই। আমি সত্যি কথাই বলছি। এখন পর্যন্ত মেয়েদের সবকিছু বিয়ে এবং বিয়ের পরে স্বামী নামক বস্তুটি কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। জামানের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে বলে তুমি একরকম হয়েছ জামানের সঙ্গে বিয়ে না হয়ে আমার সঙ্গে হলে তুমি হতে অন্যরকম। আমি বা জামান–আমরা বদলাচ্ছি না। বদলাচ্ছ তুমি। মেয়েরা পুরোপুরি পানির মত। নিজের আকৃতি নেই–যে পাত্রে রাখা হচ্ছে সেই পাত্রের আকার ধারণ করছে।

    সবাই করচ্ছে না। কেউ কেউ হয়ত করছে।

    আলম বলল, করছে না এমন সংখ্যা খুবই অল্প। যারা করছে না–তাদের আবার বিয়ে হচ্ছে না–হলেও বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে। বিয়ে টিকছে না। বিয়ে যাতে না ভাঙে, এই জন্যেই মেয়েরা নিজেদের বদলায়। বদলানোর ব্যাপারটা পুরুষদের জন্যে কঠিন বলেই মেয়েরাই এই কাজটা করে। তারা যে জেনেশুনে করে তাও কিন্তু না। প্রকৃতি তাদের ডিএনএ অণুতে এই ব্যাপারটি লিখে দিয়েছে। প্রোগ্রাম করা। কেন এ রকম প্রোগ্রাম করা সেটা জান?

    না।

    জানতে চাও? বলব?

    অন্য সময় বলবেন। আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে। অরুণাকে পাব না।

    না পেলে না পাব। কথাগুলি জরুরী, তুমি শুনে রাখ। তোমার লাভ হবে।

    কি লাভ?

    নিজেকে জানতে পারবে। নিজেকে যত ভাল জানবে ততই লাভ। নিজেকে জানতে চাও না?

    নায়লা কিছু বলল না। আলম বলল, এসো আরেক কাপ কফি খাওয়া যাক। কফি খেতে খেতে ব্যাপারটা তোমার কাছে ব্যাখ্যা করি।

    আমি আর কফি খাব না, আপনি খান।

    তুমি তাহলে চা খাও–দিতে বলি?

    বলুন।

    আলম চায়ের কথা বলে নায়লার দিকে খানিকটা ঝুঁকে এল। তার চোখ চকচক করছে। আগ্রহী শ্রোতাকে কথা শোনানোর আনন্দের সবটাই এখন তার চোখে মুখে।

    প্রকৃতি যে এই কাজটা করে, কেন করে? প্রকৃতি অকারণে কিছু করে না। তার সবকিছুর পেছনে কারণ আছে। যুক্তি আছে। বর্তমান নিয়ে প্রকৃতির তেমন মাথাব্যথা নেই। প্রকৃতির দৃষ্টি সব সময় ভবিষ্যতের দিকে। প্রকৃতি দেখে মানবজাতির ভবিষ্যৎ কি। সে সেই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্যেই এই কাজটা করে। বুঝতে পারছ?

    না।

    তোমার এবং তোমার স্বামীর সুসম্পর্কের উপর নির্ভর করছে তোমার ছেলেমেদের ভবিষ্যৎ। প্রকৃতি সেই দিকে লক্ষ্য রেখে চেষ্টা চালাবে সম্পর্ক ঠিক রাখতে। স্ত্রীর মনে স্বামীর প্রতি যে ভাবলাসী ও মমতা তৈরি হয় তার অনেকটাই মিখা ভালবাসা, মিথ্যা মমতা। এই মিথ্যা প্রকৃতির সৃষ্টি।

    কি যে আপনি বলেন।

    শুনতে খারাপ লাগলেও যা বলছি তা সত্যি। তুমি জামানকে ভালবাস, বাস না?

    এই প্রসঙ্গ খাক।

    থাকবে কেন, এসো আমরা এনালাইজ করি। ধরে নেয়া যেতে পারে, এই ভালবাসা তীব্র। জামান অফিস থেকে ফিরতে দেরি করলে তুমি অস্থির হও। ফেরার সময় গেটের দিকে তাকিয়ে থাক। যেই দেখ সে রিকশা থেকে নামছে তুমি আনন্দে অভিভূত হও …।

    আপনি বলতে চাচ্ছেন এই আনন্দের মধ্যে ভালবাসা নেই?

    থাকলেও খুব সামান্য। এই আনন্দের প্রায় সবটাই নিরাপত্তাবোধের আনন্দ। তুমি একজনকে দেখছ যে তোমার সন্তানের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবে, তোমাকে আশ্রয় দেবে, তোমার শারীরিক চাহিদা মেটাবে।

    আপনি বলতে চাচ্ছেন–আমাদের যে সব চাহিদা আছে সেই সব বাইরে থেকে মেটাবার ব্যবস্থা থাকলে আপনার বন্ধুর জন্যে আমার ভালবাসা থাকবে না?

    না থাকারই কথা। তোমাদের দুজনের চরিত্র সম্পূর্ণ দুরকম।

    সম্পূর্ণ দুধরনের চরিত্রের দুটি মানুষ একজন আরেকজনকে ভালবাসতে পারে না?

    ভালবাসা ব্যাপারটাই ধোঁয়াটে। প্রকৃতির এক খেলা, যার উদ্দেশ্য ভবিষ্যৎ মানব সৃষ্টির নিরাপত্তা…

    আপনার এই বক্তৃতা বন্ধ করুন। শুনতে ভাল লাগছে না।

    চল রওনা দেয়া যাক।

    আজ গিয়ে লাভ হবে না–অরুনা স্কুলে চলে গেছে।

    জামান খুশি খুশি গলায় বলল, আজ না যাওয়াই ভাল। তাছাড়া তোমার সঙ্গে যেতেও চাচ্ছি না। এক তরুণীকে সঙ্গে নিয়ে আরেক তরুণীকে দেখতে যাওয়ার কোন মানে হয় না। আমি জামানকে নিয়ে কাল-পরশু যাব।

    আমি চলে যাই তাহলে?

    এত তাড়া কিসের? বস।

    বসে কি করব?

    গল্প করবে। তুমি গল্প করতে না চাইলে আমি গল্প করব, তুমি শুনবে।

    নায়লার অস্বস্তি লাগছে। সে গল্প করবে? কি গল্প করবে?

    নায়লা।

    জি।

    তুমি এমন গাল-টাল লাল করে বসে আছি, ব্যাপার কি? তুমি কি আগে কখনো কোন ছেলের সঙ্গে বসে চা খাওনি?

    নায়লা জবাব দিল না।

    বিয়ের আগে প্রেম-টেম কিছুই হয়নি?

    আলম ভাই, আজ আমি উঠি। বাবুর শরীরটা ভাল না, কাশি?

    বাবু তো জঙ্গলে পড়ে নেই। বাবার সঙ্গে আছে। ভাক্তার তাকে দেখবেন। ইতিমধ্যে হয়ত ওষুধও দেয়া হয়েছে। আমার সঙ্গে বসে থাকতে কি তোমার অস্বস্তি লাগছে?

    অস্বস্তি লাগবে কেন?

    সেটাই তো কথা–অস্বস্তি কেন লাগবে? শোন নায়লা, আমি যে ক্রমাগত বক বক করে যাচ্ছি তার একটা কারণ আছে। আমি আমেরিকার যে অঞ্চলে বাস করি সেখানে বাঙালীর বংশও নেই। মাসের পর মাস চলে যায় কোন বাংলা কথা শুনি না।

    বাংলা কথা শুনবার জন্যে আপনি আমাকে বসিয়ে রেখেছেন?

    না। তোমার সঙ্গ পাবার জন্যে বসিয়ে রেখেছি। এই সময়ের তরুণী মেয়েরা কি ভাবে কথা বলে, কি ভাবে, এই সব আমার জানা দরকার। দুদিন পর একজনের সঙ্গে বাস করতে যাচ্ছি। তোমার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখছি।

    কি শিখছেন?

    প্রথম যা শিখলাম তা হচ্ছে–এ দেশের বিবাহিত মেয়েরা স্বামীর অনুপস্থিতিতে অন্য কোন যুবকের সঙ্গে সহজ হতে পারে না। তারা সহজ হয় স্বামীর উপস্থিতিতে। অথচ উল্টোটাই হওয়া উচিত ছিল। শোন নায়লা, বেলা বারোটা পর্যন্ত তোমাকে আমার সঙ্গে থাকতে হবে।

    কেন?

    কারণ বারোটা পর্যন্ত আমি একটা গাড়ি ভাড়া করেছি–আমার ধারণা ছিল অরুণা নামের তোমার ঐ বান্ধবীর বাসায় যাওয়া—গল্প করা—তারপর তোমাকে নামিয়ে দেয়াতে বারোটার মত বেজে যাবে। যেহেতু অরুণা-প্রোগ্রাম বালি সেহেতু তোমাকেই থাকতে হবে বারোটা পর্যন্ত। আমি তো শুধু শুধু টাকা নষ্ট হতে দিতে পারি না।

    এত কিছু বলার দরকার নেই। আমি থাকব বারোটা পর্যন্ত।

    গুড। তাহলে চল একটা ঘোড়া কিনে নিয়ে আসি।

    কি কিনবেন?

    ঘোড়া–The Horse.

    সত্যি ঘোড়া কিনবেন?

    অবশ্যই কিনব। সাভারে পাওয়া যায়। তুমি বোধহয় আমার কথা বিশ্বাস করছ না?

    নায়লা ক্ষীণ গলায় বলল, আমি বিশ্বাস করছি।

    বিশ্বাস করছ কেন?

    বিশ্বাস করছি, কারণ আপনি শুধু শুধু আমার সঙ্গে মিথ্যা কথা বলবেন কেন?

    ঠিক ধরেছ। আমি মোটেই মিথ্যা বলছি না। আমি দেখে এসেছি সাভারে ঘোড়া বিক্রি হয়। তাই একটা কিনব।

    চলুন যাই।

    সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের কাছে মাটির খেলনার দোকান থেকে আলম বিশাল আকৃতির মাটির মোড় কিনল। শুধু ঘোড়া না–ঘোড়া এবং হাতী দুটাই কিনল। হাসিমুখে বলল, তোমার ছেলের জন্যে কিনলাম। ঘোড়া এরা সুন্দর বানিয়েছে। কিন্তু হাতি সুবিধা হয়নি। দেখতে ইঁদুরের মতে লাগছে। তাই না? মনে হচ্ছে না বড় সাইজের ইঁদুর?

    হুঁ।

    তুমি এমন গম্ভীর হয়ে আছ কেন নায়লা? মনে হচ্ছে তোমার আশাভঙ্গ হয়েছে। তুমি কি ভেবেছিলে আমি সত্যি সত্যি ঘোড়া কিনব?

    হ্যাঁ। টাকাওয়ালা মানুষদের কত অদ্ভুত শখ থাকে। আমরা তাদের সেইসব শখ দেখে মজা পাই?

    ভুল কথা বললে নায়লা। টাকাওয়ালা মানুষদের অদ্ভুত শখ থাকে না। আসলে তাদের কোন শখই থাকে না। শখ থাকলেই টাকা খরচ। টাকা খরচ হলে এর টাকাওয়ালা হবে কিভাবে? চল যাওয়া যাক।

    নায়লা বলল, স্মৃতিসৌধটা দেখে যাই। আমি আগে কখনো দেখিনি।

    তোমার দেরি হয়ে যাবে না?

    হবে। একবার যখন দেরি হয়ে গেছে, হোক।

    গুড। এই হল স্পিরিট।

    নায়লা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, জায়গাটা এত সুন্দর, ক্যামেরা থাকলে ছবি তুলতাম।

    ক্যামেরা আমার ব্যাগে আছে। ছবি তুলতে চাইলে তুলে দেব।

    না থাক, লাগবে না।

    কেন লাগবে না? অবশ্যই লাগবে। তুমি এখানে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক, আমি ক্যামেরা নিয়ে আসছি।

    নায়লা দাঁড়িয়ে আছে। আলম ক্যামেরা আনতে যাচ্ছে। গাড়ি অনেক দূরে। আলমকে অনেকখানি জায়গা হাঁটতে হবে। নায়লার কেন জানি অস্থির অস্থির লাগছে। অস্থিরতাটা কি অন্যে? বাবুকে বেখে এসেছে, সে অন্যে? নাকি এর পেছনে অন্য কোন কারণ আছে? জামান বাবুকে ডাক্তার দেখিয়ে মার কাছে রেখে অফিসে যাবে। এই ছিল কথা। রেখে এসেছে নিশ্চয়। আচ্ছা, বাবু কি কিছু খেয়েছে? মার বাসায় বাবুকে দিয়ে আসার এই এক সমস্যা। এরা নিয়ে শুধু খেলবে–খাওয়ার সময় খাওয়াবে না। তাছাড়া বাবুর একটা বড় সমস্যা হচ্ছে পিপি আটকে রাখা। কিছুতেই করবে না। বাথরুমে নিয়ে শিষ দিয়ে দিয়ে পিপি করাতে হয়।

    নায়লা, দেখি তাকাও তো?

    নায়লা তাকাতেই আলম ছবি তুলল। হাসতে হাসতে বলল, আমি ড্রাইভারকেও নিয়ে এসেছি। সে আমাদের ছবি তুলে দেবে।

    আমাদের ছবি তুলে দেবে মানে কি? নায়লা কি চেয়েছে আলমের সঙ্গে ছবি তুলতে? এখন সে কি বলবে? সে কি বলবে, আপনার সঙ্গে ছবি তুলব না। এটা বলা যায় না। অভদ্রত হয়। আলম চাইলে–ছবি তুলতে হবে। আলম দীর্ঘদিন বাইরে আছে–তার কাছে এই ব্যাপারগুলি হয়ত খুব স্বাভাবিক। এ দেশের জন্য না। এ দেশে স্বামীর অনুপস্থিতিতে স্বামীর বন্ধুর সঙ্গে ছবি তোলা যায় না।

    নায়লা, আমার পাশে দাঁড়াও।

    নায়লা দাঁড়াল।

    হাসিমুখে দাঁড়াও। তুমি এমন মুখ কালো করে দাঁড়িয়েছ যে মনে হচ্ছে–ফাঁসির হুকুম হয়েছে। ছবি তোলার পর পরই তোমাকে ফাঁসিতে ঝুলানো হবে। মুখ এমন কালো কেন?

    নায়লা ক্ষীণ স্বরে বলল, দুঃশ্চিন্তা লাগছে। বাবুকে রেখে এসেছি।

    বাঙালী মেয়েদের সঙ্গে বিদেশী মেয়েদের এই একটা বড় তফাৎ। বাচ্চাকাচ্চা হয়ে গেলে বাঙালী তরুণী আর তরুণী থাকে না–মা হয়ে যায়। বিদেশীনীদের ব্যাপারটা কেমন জান? বাচ্চা যখন পাশে থাকবে তখন মা, যখন পাশে থাকবে না তখন লাস্যময়ী তরুণী। নায়লা শোন, তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি—আমার ধারণা, বাচ্চাকে বাসায় রেখে তুমি কখনো জামানকে নিয়ে ঘুরতে বের হও না। না-কি হও?

    না হই না। আমরা মজা করে ঘুরব আর ঐ বেচারা একা ঘরে থাকবে?

    মাঝে মাঝে এই কাজটা করবে, নয়ত দেখবে একদিন জামান তোমার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। তোমার কথা মনে হলেই তার মনে মাতৃমূর্তি ভেসে উঠছে–প্রেমিক-মূর্তি না।

    আপনার উপদেশ মনে রাখব। এখন চলুন বাসায় যাই।

    আমি কিন্তু চলেই যেতে চেয়েছিলাম, এখানে এসেছি তোমার আগ্রহে।

    আমার আগ্রহ শেষ হয়েছে, এখন চলুন ফেরত যাই।

    চল যাই। তার আগে ছবি বিটা শেষ করে ফেলি–অল্প কটা ছবি বাকি। রিল শেষ করলেই প্রিন্ট করতে দেব। তবে ছবি ভাল হবে না–সূর্য একেবারে মাখার উপর।

    নায়লা মনে মনে বলল, ছবি একেবারে না উঠলেই সবচে ভাল হয়।

     

    হাতী-ঘোড়া সহ আলম নায়লাকে তাদের বাসায় নামিয়ে দিয়ে গেছে। খালি বাসা। ফিরুর মাও নেই। জামান কি তাকেও রেখে এসেছে? তালা দেয়া ঘর খুলতে কেমন জানি লাগে। এতক্ষণ সে একা একা থাকবে? আগে কথা ছিল অরুণীর বাসা থেকে সে মার বাসায় চলে যাবে। সেখান থেকে সবাইকে নিয়ে বিকেলে বাসায় ফিরবে। সব পরিকল্পনা এলোমেলো হয়ে গেছে। খিদেও লেগেছে। শুধু নিজের জন্যে রান্না করতে ইচ্ছা করছে না।

    অনেক সময় নিয়ে নায়লা গোসল করল। বাথরুমে তার কেমন ভয় ভয় লাগছে। কেন জানি মনে হচ্ছে গোসল শেষ করে বাথরুমের দরজা খুলতে গিয়ে দেখবে, দরজা খুলতে পারছে না।

    দুপুরে সে অভুক্ত অবস্থায় বিছানায় শুয়ে রইল। দিনে ঘুমিয়ে তার অভ্যাস নেই–তবু বিছানায় শোয়ামাত্র ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুমের মধ্যেই বাজে ধরনের দুঃস্বপ্ন দেখল। দুঃস্বপ্নটা বাজে এবং নোংরা যেন তার স্বামী আলম, জামান নয়। সে আলমের সঙ্গে বেড়াতে বের হয়েছে। আলম ছবি তুলবে, কোত্থেকে শুটকা ধরনের একটা লোকটা ধরে নিয়ে এসেছে। তাকে গম্ভীর ভঙ্গিতে বলছে, অটোফোকাস ক্যামেরা। শুধু বাটন টিপলেই হবে।

    লোকটা ক্যামেরা হাতে দাঁড়িয়েছে। অলিম তাকে একহাতে জড়িয়ে ধরে আছে। তার একটু অস্বস্তি লাগছে, কারণ বাইরের একটা লোক, সে কি জানি মনে করছে। তারচেয়েও বড় কথা–নায়লা দাঁড়িয়ে আছে শুধু পেটিকোট পরে। তার গায়ে আর কোন কাপড় নেই। অথচ এই ব্যাপারটায় কেউ কিছু মনে করছে না। যেন এটাই স্বাভাবিক। শুধু নায়লা একাই লজ্জায় মরে যাচ্ছে।

    নায়লার ঘুম ভাঙল সন্ধ্যা মিলিয়ে যাবার পর। জামান অফিস থেকে এসে দরজা ঠক ঠক করছে, তখনো নায়লা ঘুমে। ঘর অন্ধকার। মুখের চারপাশে মশা ভন ভুন করছে …। উত্তরের জানালা খোলা জানালা দিয়ে শীতের হাওয়া আসছে। শরীর কাঁপছে শীতে। নায়লা উঠে দরজা খুলল।

    জামান বলল, কি ব্যাপার, শরীর খারাপ?

    হুঁ।

    ঘর অন্ধকার করে রেখেছ–ঘুমুচ্ছিলে?

    হুঁ। বাবুকে আননি?

    না। আমি ভাবলাম তুমি নিয়ে আসবে।

    জামান বাথরুমে ঢুকে গেল। কোন কৌতূহল নেই, কোন আগ্রহ নেই। আশ্চর্য মানুষ তো! অরুণাকে আলমের পছন্দ হয়েছে কি না জানতে চাইবে না? ঘরের ভিতরে বিশাল আকৃতির মাটির ঘোড়া, মাটির হাতী। সেদিকেও লক্ষ্য নেই। একবার তো জিজ্ঞেস করবে–এগুলি কোখেকে এসেছে? নায়লা রান্নাঘরে ঢুকল। জামানকে চা দেবে। ঘরে খাবার কি কিছু আছে? মুড়ি থাকার কথা। মিইয়ে গেছে কিনা কে জানে। বাবুকে আনতে যেতে হবে। জামানকেই আনতে যেতে হবে।

    ঘরে মুড়ি ছিল না। একটা টিনে কয়েকটা টোস্ট বিসকিট। সব কটা মিইয়ে গেছে। চায়ে ভিজিয়ে খাওয়া যাবে কি? নায়লা চা ও টোস্ট বিসকিট দিয়েছে। জামান সেই মিয়ানো টোস্ট আগ্রহ করে খাচ্ছে।

    জামান বলল, মাটির এত বড় খেলনা আলম কিনেছে?

    হ্যাঁ।

    এতবড় খেলনা হয় জানতাম না। আমাদের সময় ছোট ছোট ছিল।

    নায়লা বলল, চা খেয়ে বাবুকে নিয়ে এসো।

    আচ্ছা।

    নায়লা নিজের থেকেই বলল, অরুণীর কাছে শেষ পর্যন্ত আর যাওয়া হয়নি। দেরি হয়ে গেল।

    জামান বলল, ও আচ্ছা। তোমার বন্ধু আবার আমাকে নিয়ে যেতেও চায় না। একজন মেয়েকে নিয়ে আরেকজন মেয়েকে দেখতে যেতে তার নাকি ইচ্ছা করে না।

    OP দেখ তো আমার ঘর কি-না।

    জামান কপালে হাত দিয়ে জ্বর দেখল। জ্বর আছে কি-না তা বলল না। বোধহয় নেই। জ্বর থাকলে বল তো। নায়লা বলল, আজ খুব ঘুরেছি।

    কোথায়?

    নিউ মার্কেটে?

    ও আচ্ছা।

    জামান ওঠে পড়েছে। সে বাবুকে আনতে যাবে। নায়লা তীব্র অস্বস্তি নিয়ে অপেক্ষা করছে। তার ধারণা, জামান জানতে চাইবে নিউ মার্কেটে কি আলমের সঙ্গে পূরেছে? জামান কিছু বলল না। ফট করে মিথ্যা কথাটা সে কেন বলল? সে তো নিউ মার্কেটে যায়নি, সে গিয়েছে সাভারে। সত্যি কথাটা বললে জামান কি রাগ করতে? মোটেই না। নায়লার বলা উচিত ছিল–তোমার বন্ধু আজ আমাকে বিরক্ত করে মেরেছে। তার জন্যেই দেরি হয়ে গেছে, অরুণার কাছে যেতে পারিনি। আবার তার জন্যেই যেতে হয়েছে সাভার–সেখান থেকে সে নাকি বাবুর জন্যে মাটির হাতী ঘোড়া কিনবে। এই সহজ সত্য সে বলতে পারল না কেন? তার নিজের মনে কি কোন অপরাধবোধ আছে? অপরাধবোধ থাকার তো কোন কারণ নেই।

    তবে স্বামীকে যে সব কিছু খুলে বলতে হবে তাও তো না। সব মানুষের কিছু গোপন ব্যাপার থাকে যেগুলি কাউকে বলতে নেই। জামানের আগে এক বার বিয়ে ঠিক হয়েছিল–মার্চেন্টশীপের এক ইঞ্জিনিয়ারের সাথে–রফিকুল ইসলাম। লম্বাচওড়া ছেলে–সুন্দর দেখতে। সব সময় সানগ্লাস পরে বের হত। ঐ ছেলের সঙ্গে নায়লার এনগেজমেন্ট হয়ে গেলো। এনগেজমেন্টে তারা নায়লাকে একটা সবুজ রঙের কাতান, সবুজ পান্না আংটি এবং সবুজ বেল্টের এক জোড়া হিল জুতা দিল। আংটি শাড়ি না, সবুজ জুতা দেখে সবাই মুগ্ধ।

    যেহেতু এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে, কাজেই তার সঙ্গে ঘুরে বেড়াতে কোন বাধা নেই। সে মোটর সাইকেল নিয়ে এসে প্রায়ই নায়লাকে উঠিয়ে নিয়ে যেত। তার প্রধান কাজ ছিল ঘুরে বেড়ানো। মোটর সাইকেল নিয়ে কোথায় কোথায় যে চলে যেত। একবার নিয়ে গেল জয়দেবপুরে ফরেস্টের এক বাংলোতে। নির্জন বাংলো। শুধু একজন কেয়ারটেকার এবং দারোয়ান। কেয়ারটেকার ঘর খুলে দিল। কাঠের বারান্দায় চেয়ার পেতে দিল। এত নির্জন চারদিক, নায়লার ভয় ভয় করছিল। রফিকুল ইসলাম চোখ থেকে সানগ্লাস খুলতে খুলতে বলল, বলল, কি খুকী, ভয় লাগছে (লোকটা তাকে মজা করে খুকী ডাকত)?

    না।

    ভয় করার কোন কারণ নেই। স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে এসেছ! তাই না?

    হুঁ।

    আমরা এখানে রাত দশটা পর্যন্ত থাকব। তোমার বাবা-মাকে বলে এসেছি, কাজেই ওরা চিন্তা করবে না।

    ডাকবাংলোয় রাত দশটা পর্যন্ত থাকব এটা বলে এসেছেন?

    আরে না, পাগল হয়েছ? বাংলাদেশী বাবা মা ডাকবাংলো শুনলেই আঁৎকে উঠবেন। তাঁদেরকে বলেছি, তোমাকে নিয়ে আমার এক অসুস্থ খালাকে দেখতে যাব। ফিরতে দেরি হতে পারে, নস্টা-দশটা বাজবে। তাঁরা খুশি মনে বলেছেন, আচ্ছা।

    সেই ডাকবাংলোয় তারা রাত দশটা না, রাত এগারোটা পর্যন্ত ছিল। নায়লা ডাকবাংলোয় তার অভিজ্ঞতার গল্প কাউকে বলেনি। বলা সম্ভবও নয়, এবং উচিতও নয়। তবে রফিকুল ইসলাম নামের সানগ্লাস পরা ঐ লোক ডাকবাংলোর গল্প নিশ্চয়ই অনেকের সঙ্গে করেছে। ছেলেরা এই জাতীয় গল্প বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে করতে ভালবাসে। অনেকে স্ত্রীদের সঙ্গেও করে। কিছু কিছু স্ত্রী আছে স্বামীর মুখে এ জাতীয় গল্প শুনতে ভালবাসে। নায়লার দূর সম্পর্কের এক মামী আছেন–রাঙ্গামামী–তিনি সুযোগ পেলেই তাঁর স্বামীর এই ধরনের একটা গল্প শুনিয়ে দেবেন–বুঝলি নায়লা, বিয়ের আগে তোর মামা ছিল ভয়াবহ এক চীজ। মেয়েদের পটানোর সে এক হাজার একটা কৌশল জানে। কোন মেয়েকে তার মনে ধরেছে তো আর দেখতে হবে না। ঐ মেয়ের কপালে দুঃখ আছে। তোর মামা তাকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে বিছানাতে নেবেই। তবে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হল–একবার বিছানায় নেবার পর তোর মামার সব আগ্রহ শেষ। এই চ্যাপ্টার ক্লাজ–নতুন আরেক চ্যাপ্টার …।

    রফিকুল ইসলাম নামের লোকটাও কি তার স্ত্রীর কাছে ইন্টারেস্টিং গল্প হিসেবে নায়লার গল্প করেছে? করেছে বলেই মনে হয়। গল্প করার মত অনেক কিছুই সেই ডাকবাংলোয় ঘটেছিল। রফিকুল ইসলাম মজা করে ঐ গল্প করলেও নায়লা কোনদিনও কারো সঙ্গে এই গল্প করবে না। যদিও প্রায়ই তার মনে হয় জামানকে ঘটনাটা বলে! হয়ত বলবে। এখন না হলেও কোন একদিন। যখন তারা দুজনই বুড়ো হয়ে যাবে। ছেলেমেয়েদের বিয়ে হয়ে যাবে। তারা চলে যাবে দূরে দূরে। যখন নায়লার জামান ছাড়া কোন আশ্রয় থাকবে না। জামানেরও নায়লা ছোড়া কেউ থাকবে না–তখন। এই গল্প আপাতত বাক্সবন্দী থাকুক।

    সাভার স্মৃতিসৌধে বেড়াতে যাবার গল্পটাও চাপা থাকুক। এমন কিছু না যে আগ বাড়িয়ে বলে বেড়াতে হবে। নায়লার কি জ্বর আসছে? গা জ্বালা করছে–মাথায় শিরা দপদপ করছে . . .। ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে বাবুর জন্যে কেনা থার্মোমিটার আছে। জ্বরটা দেখলে হয়। ইচ্ছা করছে না।

    সামনের সোমবারে বাবুর জন্মদিন। দুবছর হবে। ঠিক দুবছরে তার দুধ ছাড়িয়ে দিতে হবে। বিশ্রী ঝামেলা করে–বাতিস দুদু, কোলা দুদু। লজ্জায় পড়তে হয়।

    আচ্ছা, বাবুর জন্মদিনে ছোটখাট ঘরোয়া ধরনের একটা অনুষ্ঠান করলে কেমন হয়? একটা কেক কেনা হল। বাসায় সে পোলাও-কোরমা রান্না করল। কয়েকজনকে খেতে বলল। তার মা-বাবা, আলম। এই সূঙ্গে অরুণাকেও বলা যেতে পারে। তাহলে জন্মদিনের আসরেই দুজনের দেখা হয়ে যায়। ঝামেলা চুকে যায়। আলমকে অবশ্যি জন্মদিনের কথা বলা যাবে না। বললেই দামী একটা কিছু কিনে নিয়ে এসে সবাইকে অস্বস্তিতে ফেলবে। অলিমকে বললে–খাবার-দাবার আরেকটু ভাল করতে হবে। বড় মাছের একটা পেট কিনে আনতে পারলে মাছের আইটেম করা যায়। বড় মাছ কি সে পছন্দ করে? ঐ দিন ছোট মাছ খুব আগ্রহ করে খেল। মাকে নিয়ে গিয়ে মেথি দিয়ে গোশত রান্না করালে কেমন হয়? আচ্ছা, সে শুধু আলমের কথা ভাবছে কেন? তার কি অন্য চিন্তা-ভাবনা কিছু নেই?

    ঘর কি ময়লা হয়ে আছে। ফিরুর মা নিশ্চয়ই আজ ঘর ঝাঁট দেয়নি। এই মহিলা আছেই শুধু ফাঁকিবাজিতে। বাবুর জন্মদিন উপলক্ষে ফিরুর মাকে একটা শাড়ি দেয়া দরকার। বাবুর জন্যে দরকার হাফহাতা একটা স্যুয়েটার…। লাল রঙের হাফহাতা সুয়েটার বাবুকে খুব মানায়। এ বছর প্রচুর সুয়েটার এসেছে–একদিন সময় করে সুয়েটার দেখে আসতে হবে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleছেলেটা – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article চৈত্রের দ্বিতীয় দিবস – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }