Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ছেলেটা – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প79 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৩. রনিদের বাড়িতে মোটামুটি হৈচৈ পড়ে গেছে

    রনিদের বাড়িতে মোটামুটি হৈচৈ পড়ে গেছে। মিটিং-এর পর মিটিং শুরু হয়েছে। সবাই আলাদা আলাদা করে রনিকে নিয়ে বসছে। প্রথমে বসলেন রনির মা। তিনি কথাবার্তা বলছেন খুব আদুরে গলায়। এমন ভাব যেন কিছুই হয় নি। ছেলের সঙ্গে গল্প করতে বসেছেন।

    বাবা, ঠিক করে বলো তো তুমি কার সঙ্গে বাড়িতে এসেছ?

    একটা লোকের সঙ্গে।

    একটা লোকের সঙ্গে তুমি যে এসেছ সেটা তো আগেই বলেছ। লোকটার নাম কী? নাম বলো।

    রনি চুপ করে গেল। নাম সে জানে। হাত আলি। কিন্তু হাব্বত আলির নাম শুনলেই মা রেগে যাবেন। মানুষটাকে আর কখনো বাড়িতে ঢুকতে দেবেন না। কাজেই নাম না বলাই ভালো।

    রনি, লোকটার নাম বলো।

    নাম মনে নেই।

    সে কি তার নাম তোমাকে বলেছিল?

    মনে নেই।

    তোমার সবকিছু মনে থাকে, এটা কেন মনে নেই? সে তোমাকে রিকশায় করে এনেছে?

    হুঁ।

    রিকশায় উঠে তোমাকে কি কিছু খেতে দিয়েছিল? শরবত জাতীয় কিছু? যেটা খাওয়ার পর তোমার আর কিছু মনে নেই।

    না।

    সে রিকশায় করে তোমাকে সরাসরি এই বাড়িতে নিয়ে এসেছে?

    না।

    তাহলে কোথায় নিয়ে গেছে?

    রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছে।

    কোথায় কোথায় ঘুরেছে মনে করতে পার?

    না।

    না কেন?

    আমি চোখ বন্ধ করে ছিলাম তো।

    কী সর্বনাশ! চোখ বন্ধ করে ছিলে কেন?

    উনি আমাকে চোখ বন্ধ করে রাখতে বললেন।

    আশ্চর্য কথা! চোখ বন্ধ করে থাকতে বলেছে কেন?

    রিকশায় চোখ বন্ধ করে থাকলে মনে হবে হাওয়ায় উড়ছি–এইজন্যে চোখ বন্ধ করে থাকতে বলেছেন।

    সে কি আবারো তোমার সঙ্গে দেখা করবে এরকম কিছু বলেছে?

    হুঁ।

    কী বলেছে?

    বলেছেন প্রতি বুধবার তার সঙ্গে দেখা হবে।

    কী বলছ এইসব? আমার তো হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে।

    রনির মা মুখ কালো করে ফেললেন। তিনি যে খুবই ভয় পাচ্ছেন এটা রনি বুঝতে পারছে। তাকে ভয় দেখাতে পেরে রনির ভালো লাগছে। এখন তার সবাইকে ভয় দেখাতে ইচ্ছা করছে।

    লোকটার সঙ্গে কী কী কথা হয়েছে আমাকে গুছিয়ে বলো। কিছুই বাদ দেবে না।

    উনি আমাকে মন ভালো করার কৌশল শিখিয়েছেন।

    কী কৌশল?

    ঘোঁৎ কৌশল।

    সালমা বানু অবাক হয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে রইলেন।

    রনির মার পর কথা বলতে এলেন রনির বাবা। তিনি কথাবার্তা বললেন কঠিন গলায়। তাকে তখন মনে হচ্ছিল গোয়েন্দা অফিসার। আর রনি হলো ভয়ঙ্কর এক অপরাধী।

    রনি শোনো, আমি তোমার স্কুলের মিসের সঙ্গে কথা বলেছি। তোমাদের প্রিন্সিপ্যালের সঙ্গে কথা বলেছি। তোমাদের মিস বলেছেন তুমি খুব আনন্দের সঙ্গে ঐ লোকের সঙ্গে গেছ। তুমি তোমার মিসকে বলেছ ঐ লোক তোমার আত্মীয়। বলেছ এমন কথা?

    না।

    তাহলে কি তুমি বলতে চাও তোমার মিস মিথ্যা কথা বলেছেন?

    হ্যাঁ।

    তুমি অচেনা একজন লোকের সঙ্গে বের হয়ে গেলে কেন?

    জানি না কেন।

    সে বলল আর তুমি সুড়সুড় করে তার সঙ্গে রিকশায় উঠে গেলে?

    হ্যাঁ।

    কেন উঠলে?

    জানি না।

    লোকটা একা ছিল, না তার সঙ্গে দলবল ছিল?

    একা ছিল। দলবল নিয়ে একটা রিকশায় করে যে যাবে কীভাবে?

    তোমার মা বলছিল সে নাকি কি তোমাকে শিখিয়েছে। কী শিখিয়েছে?

    ঘোঁৎ বিদ্যা।

    তার মানে? রনি কয়েকবার ঘোঁৎ ঘোঁৎ শব্দ করল।

    রনির বাবার চোখ কপালে উঠে গেল।

     

    রাত নটার সময় সত্যিকার একজন পুলিশ অফিসার রনির সঙ্গে কথা বলতে এলেন। তিনি আবার কারো সামনে কথা বলবেন না। কথাবার্তার সময় রনি ছাড়া আর কেউ থাকতে পারবে না। কাজেই রনি তাকে তার ঘরে নিয়ে গেল। তিনি হাসি হাসি মুখে কথা বললেন, খোকা তুমি কেমন আছ?

    ভালো আছি।

    তুমি কি সবসময় সত্যি কথা বলো, নাকি মাঝে মাঝে মিথ্যা কথা বলো?

    মাঝে মাঝে মিথ্যা কথা বলি।

    আমার সঙ্গে সত্যি কথা বলবে, নাকি মিথ্যা কথা বলবে?

    জানি না।

    না জানলে হবে না। আমার সঙ্গে সত্যি কথা বলতে হবে।

    কেন?

    কারণ আমি পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে সত্যি কথা বলতে হয়। আচ্ছা এখন লোকটা সম্পর্কে বলো। লোকটার বয়স কত?

    বয়স কত আমি জানি না। জিজ্ঞেস করিনি।

    অনুমান করে বলো।

    আমি অনুমান করতে পারি না।

    লোকটা কি তোমার বাবার বয়সী না তার চেয়ে বড়?

    কোন বাবা? আসল বাবা না নকল বাবা।

    পুলিশ অফিসার অবাক হয়ে বললেন, কী বলছ এসব! আসল বাবা নকল বাবা কী?

    আমি যে বাবার সঙ্গে থাকি তিনি নকল বাবা। আসল বাবা মারা গেছেন।

    বলো কী।

    রনি বলল, আমার যে মাকে দেখছেন উনিও নকল।

    পুলিশ অফিসার হতভম্ব গলায় বললেন, ভালো যন্ত্রণায় পড়লাম তো!

    রনির খুব মজা লাগছে। পুলিশ অফিসারকে যন্ত্রণায় ফেলে দেয়া সহজ কাজ না। সে অবশ্যি এরকম একটা সিনেমা দেখেছিল যেখানে বাচ্চা একটা ছেলে ঘাপ্ত পুলিশ অফিসারকে নানান যন্ত্রণায় ফেলে দেয়। শেষে পুলিশ অফিসারের সঙ্গে ছেলেটার খুব বন্ধুত্ব হয়ে যায়। এই পুলিশ অফিসারের সঙ্গেও হয়তো রনির বন্ধুত্ব হবে। এই পুলিশ অফিসার হাসিখুশি মানুষ। আর সবচে মজার ব্যাপার হচ্ছে, তিনি হাসতে হাসতে হঠাৎ হাসি বন্ধ করে অবাক হয়ে তাকাতে পারেন।

    রনি বলল, আপনার নাম কী?

    পুলিশ অফিসার বললেন, আমার নাম আফসার। আফসার উদ্দিন।

    আপনি কি খুব বড় অফিসার?

    আমি ছোট অফিসার। পুলিশ ইন্সপেক্টর, গোয়েন্দা বিভাগের লোক।

    গোয়েন্দা বিভাগ মানে কী?

    আমরা সাদা পোশাকে থাকি।

    সাদা পোশাকে থাকেন কেন?

    কেউ যেন আমাদের চিনতে না পারে।

    কেউ চিনতে পারলে কী হবে?

    আফসার উদ্দিন দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললেন, উফ খোকা, চুপ করো!

    চুপ করব কেন?

    আমি চুপ করতে বলছি এইজন্যে চুপ করবে।

    আপনি চুপ করতে বলছেন কেন?

    তোমার প্রশ্ন শুনতে ভালো লাগছে না, এইজন্যে চুপ করতে বলছি।

    আমার প্রশ্ন শুনতে আপনার ভালো লাগছে না কেন?

    আফসার উদ্দিন হতাশ চোখে তাকিয়ে সোফায় গা এলিয়ে দিলেন। রনির মজা লাগছে। এই পুলিশ অফিসারের সঙ্গে সে একটা খেলা খেলছে। খেলার নাম–প্রশ্ন প্রশ্ন খেলা। এই খেলাটা সে শিখেছে লুতপাইনের কাছে।

     

    রনির দাদাজান এলেন অফিসার চলে যাবার পর পর। তিনি রনিকে আড়ালে ডেকে থমথমে গলায় বললেন, ঘটনা কী?

    রনি বলল, জানি না।

    সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র হচ্ছে বুঝতে পারছিস?

    সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র কাকে বলে?

    আরে গাধা, সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্রও বুঝিস না!

    ইংরেজিতে বলো, ইংরেজিতে বললে বুঝব।

    রনির দাদা অতি বিরক্ত হয়ে বললেন, ফালতু ইংরেজি স্কুলগুলি তো বড় যন্ত্রণা করে। মাতৃভাষা কিছুই শেখায় না। এখন আমি সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্রের ইংরেজি পাব কই! মূল ব্যাপার হচ্ছে, ওরাই সাপ ওরাই ওঝা।

    কারা সাপ কারা ওঝা?

    তোর ফলস বাবা-মা। ওরাই নিজের লোক পাঠিয়ে তোকে কিডন্যাপ করিয়েছে, আবার ফেরত দিয়ে গেছে।

    কেন করেছে?

    কেন করেছে এখনো আমার কাছে ক্লিয়ার না, তবে ক্লিয়ার হয়ে যাবে। আমার জন্যে অবশ্যি সুবিধা হলো।

    কী সুবিধা?

    কাস্টডি মামলা করব। তোর ফলস বাবা-মা তোকে ঠিকমতো রাখতে পারছে না। সন্ত্রাসী কিডন্যাপ করে নিয়ে যাচ্ছে…

    রনি বলল, যিনি নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি তো সন্ত্রাসী না। আর কিডন্যাপ করেও নেন নি।

    তুই চুপ থাক। নিজ থেকে খবরদার একটি কথাও বলবি না। ব্যারিস্টার যা শিখিয়ে দেবে তাই বলবি। এর বাইরে কিছু বললে থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দেব।

    দাদাজান তুমি দুষ্ট বুড়ো।

    দুষ্টামির তুই দেখেছিস কি? আসল দুষ্টামি তো শুরুই হয়নি।

    তিনি আনন্দে হাসতে লাগলেন। পা দোলাতে লাগলেন। রনির মনটা খারাপ হলো–আবার মামলা-মোকদ্দমা শুরু হবে। আবার কোর্টে যেতে হবে। জজ সাহেব মায়া মায়া গলায় বলবেন–খোকা, তুমি কার সঙ্গে থাকতে চাও?

    রনির দাদাজান যাবার আগে রনির কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললেন, তোর ফলস পিতা-মাতা এখন বুঝবে–হাউ মেনি রাইস হাউ মেনি পেডি।

    রনি বলল, হাউ মেনি রাইস হাউ মেনি পেডির মানে কী?

    দাদাজান অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বললেন, ইংরেজি স্কুলে পড়ে তোর লাভটা কী হলো? সহজ ইংরেজিও তো জানিস না। হাউ মেনি রাইস হাউ

    মেনি পেডির মানে হলো কত ধানে কত চাল।

    রনি বলল, কত ধানে কত চালের মানে কী?

    এত কথা বলতে পারব না। এখন থেকে তোর পেছনে থাকবে ডাবল স্পাই। একটা কালো রঙের ভক্সওয়াগন গাড়ি তোকে ছায়ার মতো ফলো করবে।

    দরকার নেই দাদাজান।

    দরকার আছে কি না সেটা আমি দেখব। মোদ্দাকথা ফুটবল এখন আমার কোর্টে।

    মোদ্দাকথার মানে কী দাদাজান?

    এত মানে বলতে পারব না। তোদের স্কুলগুলি আছে কী জন্যে? এরা দেখি কিছুই শিখায় না। কাড়ি কাড়ি টাকা নেয়, পড়াশোনা লবডংকা।

    লবড়ংকা মানে কী?

    চুপ।

     

    রনি স্কুলে গেল মন খারাপ করে। স্কুলে রওনা হবার সময় দেখে, একটা কালো রঙের ভক্সওয়াগন গাড়ি সত্যি সত্যি তাদের পেছনে পেছনে আসছে।

    ক্লাসরুমে ঢুকে রনির মন আরো খারাপ হলো। লুতপাইনের জন্যে সে সুন্দর একটা সরি কার্ড বানিয়ে এনেছে। অথচ লুতপাইন আসে নি। তার সিটটা খালি। লুতপাইন কখনো স্কুলে আসে না এমন হয় না। একবার জ্বর গায়ে এসেছিল। তার নাকি বাসায় থাকতে ভালো লাগে না। তার স্কুল ভালো লাগে।

    আজ বুধবার নতুন আর্ট টিচার আসার কথা। রনির কেন যেন মনে হলো তিনি আসবেন না। তাঁর সঙ্গে হঠাৎ হঠাৎ দেখা হবে এবং সেটাই ভালো। এরকম মানুষের সঙ্গে রোজ দেখা হওয়া ভালো না। হঠাৎ হঠাৎ দেখা হওয়াই ভালো।

    থার্ড পিরিয়ড আর্ট ক্লাস। রনি দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। ক্লাসে হাব্বত আলি সাহেব ঢুকেন কি-না সেটা দেখার ইচ্ছা। হাব্বত আলি ঢুকলেন না ঢুকলেন তাদের ক্লাস টিচার।

    হ্যালো লিটল এনজেলস, তোমরা কেমন আছ?

    ক্লাসের সবাই একসঙ্গে বলল, ভালো।

    আজ থেকে তোমাদের নতুন আর্ট টিচার আসার কথা। তিনি এসেছেন। তবে একটা ছোট্ট সমস্যা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন যে, তিনি চাকরি করবেন না। কাজেই এই ক্লাস আপাতত আমি চালাব। তোমরা খুশি তো?

    সবাই যন্ত্রের মতো একসঙ্গে বলল, ইয়েস মিস।

    তোমরা ড্রয়িং খাতা বের কর। আজ তোমাদের ফ্রি চয়েস। যার যা আঁকতে ইচ্ছা করে আঁকবে। শুধু কার্টুন ছবি আঁকতে পারবে না। যে ছবিটি সবচেয়ে ভালো হবে সেটা স্কুলের বিলবোর্ডে টানিয়ে দেয়া হবে। তোমরা কি খুশি?

    ইয়েস ম্যাডাম।

    খুশি হলে এরকম করুণ গলায় ইয়েস ম্যাডাম বলছ কেন? হাসিমুখে ইয়েস ম্যাডাম বলো।

    ইয়েস ম্যাডাম।

    তোমাদের একটা ভালো খবর দেয়া হয়নি–নাজমা ম্যাডাম মারা যান নি। শুরুতে আমরা ভুল খবর পেয়েছিলাম। তিনি হাসপাতালে আছেন। যদিও কন্ডিশন ভালো না। তোমরা তাঁকে Get well কার্ড পাঠাতে পারো প্রিন্সিপ্যাল আপার অফিসে জমা দিলে আমরা পাঠাব।

    রনি লক্ষ করল ক্লাসের সব ছেলে-মেয়ে খুব খুশি হয়েছে। তবে সবচে খুশি যে হতো সে ক্লাসে আসে নি। তার নাম লুতপাইন, তবে তাকে রনি খবর দিয়েছে।

    রনি ছবি আঁকছে। এলিয়েনদের ছবি। একটা এলিয়েন তাদের প্ল্যানেটে অন্য একটা এলিয়েনের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। তাদের দুজনের হাতেই রে গান। এলিয়েনদের চেহারা ভয়ঙ্কর। সারা মুখ ভর্তি চোখ। চোখগুলি বিড়ালের চোখের মতো।

    রনি এলিয়েনদের ছবি খুব ভালো আঁকতে পারে। সে যখন ছবি আঁকে, লুতপাইন মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে। কারণ লুতপাইন ছবিই আঁকতে পারে না। আর্টে সে সবচে কম নাম্বার পায়।

    লুতপাইনের বাবা মেয়ের জন্যে আর্টের একজন টিচার খুঁজছেন, পাচ্ছেন না। আজ যদি লুতপাইন ক্লাসে থাকত, তাহলে অবাক হয়ে রনির ছবি আঁকা দেখত এবং প্রশ্ন করে করে বিরক্ত করত।

    আচ্ছা একটা এলিয়েনের নয়টা চোখ, আরেকটা এলিয়েনের দশটা চোখ কেন? তুমি ভুল করেছ নাকি এদের চোখের ঠিক ঠিকানা থাকে না। কারো নয়টা, কারো দশটা, কারোর এগারটা এরকম?

    আচ্ছা এই এলিয়েনটা ছেলে না মেয়ে?

    আচ্ছা এরা কী খায়?

    এরা কি আকাশে উড়তে পারে?

    এরা কি ভয়ঙ্কর? না-কি ফ্রেন্ডলি?

    শুধু যে প্রশ্ন করত তাই না, ছবি আঁকা শেষ হওয়া মাত্র বলত–এই ছবিটা তুমি আমাকে দেবে? আমার ঘরে টাঙিয়ে রাখব।

    রনি বলত, না।

    প্লিজ, দাও না প্লিজ। এই ছবিটা দিলে আমি তোমার কাছে আর ছবি চাইব না। কোনোদিন না। প্রমিজ বাই মাই হার্ট।

    তুমি আবারো চাইবে। বললাম তো আর চাইব না।

    লুতপাইনের এটা কথার কথা। রনি জানে লুতপাইন আবার ছবির জন্যে তার পেছনে ঘুরঘুর করবে। এই পর্যন্ত লুতপাইন রনির আটটা ছবি নিয়েছে। এটা নিলে তার হবে নয়টা ছবি। তবে এই ছবিটা তো আর সে নিতে পারছে না। সে ক্লাসেই আসে নি।

    রনির ছবি দেখে ক্লাস টিচার খুবই বিরক্ত হলেন। তিনি রাগী রাগী গলায় বললেন, এটা কী এঁকেছ কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং! এই দুটা জন্তু কী?

    এরা এলিয়েন।

    এলিয়েন মানে?

    ভিনগ্রহের মানুষ।

    ভিনগ্রহের মানুষদের পনের ষােটা করে চোখ থাকে?

    রনি কিছু বলল না। মিস বললেন, এইসব আলতু ফালতু জিনিস কেন আঁকো? নরম্যাল জিনিস আঁকতে পার না?

    সরি ম্যাডাম।

    নদীতে সূর্যাস্ত হচ্ছে, পাল তোলা নৌকা যাচ্ছে–এইসব আঁকবে।

    রনি আবারো বলল, সরি ম্যাডাম।

    রনির মন খারাপ হলো। ছবিটা ম্যাডামকে দেখানোই উচিত হয়নি। সবচে ভালো হতো ছবি আঁকার পরপরই সে যদি লুতপাইনকে ছবিটা দিয়ে দিত। ছবির সঙ্গে সরি নোট।

    রনি গাড়িতে উঠতে যাবে, পেছন থেকে গম্ভীর গলায় দাড়িওয়ালা একজন লোক ডাকল, হ্যালো খোকা। হ্যালো।

    রনি তাকিয়ে দেখে মুখভর্তি দাড়ি অচেনা এক লোক। মাথায় টুপি, মাওলানাদের মতো লম্বা পাঞ্জাবি পরা এক লোক তার দিকে এগিয়ে আসছে।

    কেমন আছ খোকা?

    লোকটা কে? হাব্বত আলি না তো? কিছুক্ষণ তাকিয়েই রনি বুঝে ফেলল, লোকটার দাড়ি-গোঁফ নকল এবং সে হাব্বত আলি না। পুলিশ ইন্সপেক্টার আফসারউদ্দিন।

    ভালো আছি কিন্তু আপনি যে নকল দাড়ি লাগিয়েছেন–এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে।

    বলো কী? তুমি কি আমাকে চিনে ফেলেছ?

    অবশ্যই। যে কেউ চিনে ফেলবে।

    বলো তো আমি কে?

    আপনি পুলিশ ইন্সপেক্টর আফসার উদ্দিন।

    তুমি তো ঠিকই চিনে ফেলেছ।

    আপনাকে যে দেখবে সে-ই চিনবে। তা ছাড়া আপনার দাড়ি কিন্তু খুলে যাচ্ছে।

    আফসার উদ্দিন ব্ৰিতমুখে হাত দিয়ে দাড়ি চেপে ধরলেন। রনি বলল, দাড়ি লাগিয়ে আপনি এখানে কী করছেন?

    তোমার বিষয়ে তদন্তে এসেছি।

    কিছু পেলেন?

    প্রথম দিনেই কিছু পাওয়া যায় না, তবে ভক্সওয়াগান নিয়ে কয়েকটা লোক বসে আছে। তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক। এর মধ্যে লক্ষ করেছি পাজেরো জিপ নিয়ে এক বুড়ো এসেছে। সে ভক্সওয়াগান লোকগুলির সঙ্গে কথা বলছে।

    ঐ বুড়ো কি খুব ফর্সা?

    হ্যাঁ ফর্সা।

    রবীন্দ্রনাথের মতো দাড়ি?

    হুঁ।

    ঐ বুড়ো আমার দাদাজান।

    এরা কি তোমাকে কিডন্যাপ করতে এসেছে?

    আসতে পারে।

    তাহলে তো মনে হয় আমার উচিত তোমার সঙ্গে যাওয়া। উঠি তোমার সঙ্গে গাড়িতে?

    উঠুন।

    আফসার উদ্দিন গাড়িতে উঠে সিটে হেলান দিয়ে আরাম করে বসলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লেন। ঘুমের মধ্যে তাঁর নকল দাড়ি খুলে পড়ে গেল। রনি সেই দাড়ি যত্ন করে তার নিজের স্কুল ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখল।

    আফসার উদ্দিনের ঘুম ভাঙল রনিদের বাড়ির সামনে এসে। তিনি রনিকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলেন আফসার উদ্দিনের একবারো মনে হলো না যে তার মুখে এখন দাড়ি নেই। রনির মানুষটাকে পছন্দ হলো। কেমন সাদাসিধা আলাভোলা মানুষ। এই ধরনের মানুষ খুব ভালো হয়।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleজীবনকৃষ্ণ মেমোরিয়াল হাইস্কুল – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article ছায়াবীথি – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }